What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেশ–বিদেশের চিজের গল্প (1 Viewer)

a9FrEdF.jpg


আমাদের দেশের নিজস্ব চিজ বা পনিরে খুব একটা বৈচিত্র্য নেই বললেই চলে। এ দেশের ঢাকাই পনির বা অষ্টগ্রাম চিজ আর ভারতীয় উপমহাদেশে বহুল প্রচলিত পানি বের করে নেওয়া ঘনীভূত ছানারূপী পনির অবশ্য বহুযুগ ধরে আমাদের খাদ্যসংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। এরপর আশির দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশে কিষান কোম্পানি আর ভারতে আমূল কোম্পানি প্রক্রিয়াজাত চেডার চিজ নিয়ে আসে। এখন তো বড় বড় দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানি দেশেই তৈরি করছে প্রক্রিয়াজাত চেডার স্লাইস চিজ আর প্রাকৃতিক মোজারেল্লা চিজ।

তবে কয়েক বছর হলো, বড় বড় সুপার শপ আর ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে বিশ্বের নানা দেশের বৈচিত্র্যময় সব চিজ পাওয়া যাচ্ছে। আর বিশ্বায়নের এই দিনে, ইন্টারনেটের বদৌলতে আমাদের সবারই পরিচয় হয়ে যাচ্ছে মজাদার সব চিজ ও চিজ দিয়ে বানানো নানা উপাদেয় খাবারের সঙ্গে। পুরো দুনিয়ায় এত ধরনের ঐতিহ্যবাহী চিজ পাওয়া যায়, তার ফিরিস্তি দিতে গেলে তো বইয়ের পরে বই লিখে ফেলা যায়। খাদ্যসংস্কৃতি–বোদ্ধারা যুগ যুগ ধরে দেশ থেকে দেশে চিজের রকমফের নিয়ে অনেক কাজ করেছেন।

H3Guvez.jpg


সাধারণভাবে দুধকে ছানার পানি বা হুয়েই, সিরকা, বাচ্চা গরুর অন্ত্রের ভেতরের ঝিল্লি থেকে প্রস্তুত কাফ রেনেট ইত্যাদি অম্ল উপাদানের সাহায্যে দুধের জলীয় অংশ সরিয়ে ফেলে তা বিশেষভাবে ফারমেন্ট করে বা গাঁজিয়ে তৈরি করা হয় হরেক রকমের চিজ। অনেক ক্ষেত্রেই এই দুধের সলিড অংশকে মথে, ফেটিয়ে, ঘুরিয়ে বিভিন্ন কৌশলে একেক রকম চিজের কাঙ্ক্ষিত টেক্সচার আনা হয়। এখানে বিশ্বের প্রধানতম চিজগুলোকে কয়েকটি মূল ভাগে ভাগ করে আমরা দেখে নিতে পারি।

ফ্রেশ চিজ

kcG8oOu.jpg


ঢাকাই পনির

দুধ ফেটিয়ে ছানা বা দইয়ের মতো অংশ পানি থেকে আলাদা করে ফ্রেশ চিজ বানানো হয়। এই চিজ খুব লম্বা সময় ধরে সংরক্ষণ করা হয় না। এরই একটি রূপ হচ্ছে আমাদের ঢাকাই পনির। আর খুব মসৃণ ফ্রেশ চিজ ক্রিম চিজ নামে পরিচিত, যা আমাদের দেশের হালের ক্রেজ চিজ কেক, তিরামিসু বানাতে ব্যবহার করা হয়। ইতালিয়ান ডেজার্ট তিরামিসু বানানোর ক্রিম চিজকে বলা হয় মাস্কারপনে চিজ। আমাদের দেশে এখন প্রচুর পরিমাণে মোজারেল্লা চিজ তৈরি হয়, যা কিনা পিৎজা, পাস্তা, বার্গারসহ অনেক খাবারে ব্যবহার করা হয়। এই মোজারেল্লা চিজও কিন্তু ফ্রেশ চিজ। এর জন্ম ইতালির ন্যাপলসে, মহিষের ঘন কাঁচা দুধ থেকে। গ্রিসের বিখ্যাত আরেক ফ্রেশ চিজ হচ্ছে ফেটা চিজ, যা ভেড়া বা ছাগলের দুধ থেকে তৈরি হয়। দানাদার নরম এই চিজ বিখ্যাত গ্রিক সালাদের অপরিহার্য উপাদান। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ফ্রেশ চিজ হচ্ছে রিকোটা চিজ, ফারমারস চিজ ও কটেজ চিজ।

সংরক্ষণযোগ্য চিজ

চিজের সমঝদারদের কাছে পুরোনো 'অ্যাইজিং' করা বা সংরক্ষিত চিজ এক অনন্যসাধারণ অনুভূতির নাম। নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় অভিজ্ঞ চিজশিল্পীদের হাতে লম্বা সময় ধরে অ্যাইজিং করা চিজে স্বাদ, সুবাস গাঢ়তর হয়। চিজের মধ্যে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্নভাবে চিজকে করে তোলে দানাদার, মসৃণ, শক্ত অথবা স্থিতিস্থাপক টেক্সচারের। এই ধরনের চিজের মধ্যে দেশ ও অঞ্চলভেদে রয়েছে বৈচিত্র্য।

দৃঢ়তা অনুযায়ী বিভিন্ন চিজ

কাঠিন্য বা দৃঢ়তা অনুযায়ী নানা রকমের চিজ আছে পৃথিবীতে। একেবারে শক্ত চিজগুলোতে পানির পরিমাণ নেই বললেই চলে। এই চিজগুলো সহজেই গুঁড়া গুঁড়া হয়ে যায়। সবচেয়ে শক্ত চিজগুলোর মধ্যে পারমেজান চিজ সারা বিশ্বে সুপরিচিত। পাস্তার ওপরে ছড়িয়ে, নিরামিষ বা আমিষ ডিশে, বিশেষত টমেটোর সঙ্গে পারমেজান চিজের রসায়নটা খুবই চমৎকার। বানানোর অন্তত দুই মাস পর এই চিজ খাওয়া হয়। আর রাখা যায় বেশ কয়েক বছর।

X3SDwHp.jpg


পারমেজান চিজ, ছবি: উইকিপিডিয়া

কঠিন চিজের পাঁচালিতে ভেড়ার দুধের শক্ত সলিড মানচেগো চিজের কথাও বলতে হয়। শুধু স্পেনের লা মাঞ্চা অঞ্চলেই এই চিজ তৈরি হয়। এরপরই আসে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেমি-সলিড বা প্রায় শক্ত চিজগুলোর উপাখ্যান। কিছুটা নমনীয় আর স্থিতিস্থাপক এই চিজগুলোতে নোনতা আর অম্ল স্বাদের অপরূপ মিশেল দেওয়া থাকে। একটু বেশি দিন ধরে সংরক্ষণ করলে এই সেমি-সলিড চিজগুলোর স্বাদে আসে পরিপূর্ণতা। তবে এই সংরক্ষণের আছে বিশেষ কলাকৌশল, যা শুধু বিশেষজ্ঞ চিজ প্রস্তুতকারীরাই জানেন।

দেখা যায়, দেশে দেশে একেকটি পরিবার, অঞ্চল আর চিজ প্রস্তুতকারী ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলো এই কলাকৌশল যুগ যুগ ধরে গোপন রেখেছে। এই চিজগুলো সুন্দর ও নিখুঁতভাবে স্লাইস করে কাটা যায়, কুরিয়ে বা গ্রেট করে নেওয়া যায় অনায়াসে। এগুলোর মধ্যে আছে চেডার, গোউডা, গ্রুইয়ের ইত্যাদি। চেডার চিজের কথা তো সবাই জানে। ব্রিটিশ এই চিজের আছে হালকা, কড়া, মধ্যম কড়া ফ্লেভারের রকমফের। টম অ্যান্ড জেরি কার্টুনে ইঁদুর জেরি যে ফুটো ফুটো চিজের টুকরা নিয়ে দৌড়ে পালায়, সেই গৌডা চিজের আদিভূমি হলো হল্যান্ডের গৌডা অঞ্চল। কিছুটা মৃদু আর মিষ্টিভাবের এই খুবই জনপ্রিয় চিজ রান্না না করে কাঁচা অবস্থাতেই স্লাইস করে কেটে খাওয়ার জন্য খুবই উপাদেয়।

মোল্ড যুক্ত নানা রকমের চিজ

q8rAzaa.jpg


ক্যামেম্বার্ট চিজ, ছবি: উইকিপিডিয়া

চিজ গাঁজানোর কাজে ব্যাকটেরিয়া মূল ভূমিকা রাখলেও কোনো কোনো বিশিষ্ট চিজে কারিকুরি করে মোল্ড বা ছত্রাক। শুনতে একটু অদ্ভুত হলেও সত্য, সাদা মোল্ডের কারসাজি ছাড়া বিশ্বখ্যাত ক্রিমি, মসৃণ লোভনীয় ব্রেয়ি চিজ কোনো দিনও বানানো যেত না। অন্তত এক মাস ধরে অ্যাইজিং করা কিছুটা মাখন মাখনভাবের এই সাদা মোল্ডের চিজগুলোর মধ্যে আরও উল্লেখ করা যায় নরম্যান্ডির মাঠে চরে বেড়ানো ফ্রেঞ্চ গরুর দুধে সযত্নে তৈরি ক্যামেম্বার্ট চিজ। শুঁটকির মধ্যে যেমন শিদল্ বা চ্যাপা শুঁটকি, চিজের মধ্যে তেমনই নীল মোল্ডযুক্ত চিজগুলো। অত্যন্ত কড়া, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ফ্লেভারে ভরপুর ব্লু চিজ এগুলোর অন্যতম।

yvlIdxn.jpg


স্টিল টন চিজ, ছবি: উইকিপিডিয়া

বিশ্ববিখ্যাত এই ব্লু চিজগুলোর মধ্যে নাম নিতেই হয় স্টিল টন, রক ফোর্ট আর গর্গঞ্জোলা চিজের। এই চিজগুলো বেশ কিছু রান্নার অপরিহার্য উপকরণ। সেই সপ্তম শতাব্দী থেকে প্রচলিত এই ছত্রাকপূর্ণ ব্লু চিজের আছে এক মজার ইতিহাস। মুখে মুখে ফেরা গল্পে আছে, ফ্রান্সের রক ফোর্টের এক গুহায় এক রাখাল ছেলে তার চিজ–রুটি ভুলে ফেলে গিয়েছিল। কয়েক মাস পর সে ফিরে এসে দেখে নীল বর্ণ ছত্রাকে তার চিজের ফুটোগুলো ভরে গেছে। সেই থেকেই নাকি ব্লু চিজের উৎপত্তি। অত্যন্ত কড়া স্বাদ গন্ধযুক্ত বলে ব্লু চিজগুলো একবারে অল্প পরিমাণে খাওয়া হয় এবং তা–ও রুটি, ক্র্যাকারের সঙ্গে বা কোনো রান্নার উপাদান হিসেবে।

চিজের সাতকাহন সাত রাতেও ফুরানোর নয়। দেশে দেশে একই চিজের একেবারে বিভিন্ন স্বাদ, গন্ধ, টেক্সচার পাওয়া যায়। একেক অঞ্চলভেদে বিভিন্ন পশুর দুধ থেকে চিজ বানানো হয়। গরু, মহিষ, চমরি গাই, ভেড়া, ছাগল—এই বিভিন্ন পশুর দুধে বিভিন্ন ফ্লেভার পাওয়া যায় রংবেরঙের চিজে। আবার অ্যাইজিং বা বিশেষ কায়দায় সংরক্ষণের সময়, স্থান, নিয়মকানুন—এসবের ওপর নির্ভর করে চিজের স্বাদ অনেকাংশে। প্রায় সময়েই দেখা যায়, চিজের বাইরে প্রাকৃতিকভাবেই ব্যাকটেরিয়ার বদৌলতে একটি শক্ত আবরণ তৈরি হয়ে যায়। আবার কখনো বা মোমে জড়িয়ে সুরক্ষাকারী প্রলেপ দেওয়া হয় চিজকে।

N5yIfLd.jpg


মোজারেল্লা চিজ, ছবি: উইকিপিডিয়া

চিজের আবেদন সারা বিশ্বের খাদ্যপ্রেমীদের কাছেই অসম্ভব রকমের বেশি। বিভিন্ন রান্নায়, বেকিংয়ে চিজ অপরিহার্য। চিজে জড়ানো পাস্তা, পিৎজা, লাজানিয়া তো আমাদের দেশে এখন বহুল পরিচিত। গ্রিক, ইতালিয়ান, ফ্রেঞ্চ খাদ্যে চিজের কোনোই বিকল্প নেই। সালাদ, স্যান্ডউইচ, বার্গার হোক আর চিজ কেক, প্রিয় ডিশটি বানাতে আমরা এখন বিশেষ ধরনের সব চিজ আমাদের দেশেও ব্যবহার করছি। আর পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে তো চিজ এমনভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, যে তাদের দেশভেদে সংস্কৃতি বুঝতে গেলেই তাদের চিজের ভান্ডার ঘেঁটে দেখতে হবে।

Mi3DWbl.jpg


ব্রেয়ি চিজ, ছবি: উইকিপিডিয়া

এসব প্রাকৃতিক চিজ ছাড়াও ফাস্ট ফুডের চেইন আর জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টগুলোতে সারা বিশ্বেই দেদার ব্যবহার করা হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত বা প্রক্রিয়াজাত চিজ। বড় বড় বৈশ্বিক কোম্পানি প্রচুর পরিমাণে চিজ তৈরি করে সারা বিশ্বে বাজারজাত করছে অবিরাম। এই প্রক্রিয়াজাত চিজে কিন্তু প্রাকৃতিক গুণাগুণের ছিটেফোঁটাও নেই। আছে হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ আর মরবিড স্থূলতার বিপজ্জনক হাতছানি। আজকের আন্তর্জাতিক চিজ লাভারস ডেতে ব্যাপারটি আমাদের সবার মনে রাখতে হবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top