বর্তমান দুনিয়ায় সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে চলেছেন নারীরা। তবে নারীদের জন্য সব পথই বন্ধুর। বিশেষ করে উদ্যোক্তা হতে গেলে সেই বাধাবিঘ্নের পরিমাণ যেন আরও বেড়ে যায়। যদিও গত দুই দশকে বিশ্বজুড়েই নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এ দেশেও চিত্র একই ধরনের। তবে নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার ইতিহাস অনেক পুরোনো। সপ্তদশ শতাব্দীর শুরু থেকেই নারীরা উদ্যোক্তা হওয়ার পথে পা বাড়িয়েছিলেন। এবার তেমনই কয়েকজন নারী উদ্যোক্তার বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
অ্যানি টার্নবো ম্যালোন
অ্যানি টার্নবো ম্যালোন
ম্যাডাম সি জে ওয়াকারকে সাধারণত প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী মিলিয়নিয়ার বলা হয়ে থাকে। তবে অনেক ঐতিহাসিক এ ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করে থাকেন। তাঁদের মতে, এই অভিধা আসলে অ্যানি টার্নবো ম্যালোনের প্রাপ্য। ওয়াকারকে নিজ প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়েছিলেন ম্যালোন। ওয়াকারের কাজ ছিল সেইন্ট লুইসে চুলের প্রসাধনী বিক্রি করা। পরে সি জে ওয়াকার নিজের প্রতিষ্ঠান খুলে সফল হয়েছিলেন। ওয়াকারের মতো ম্যালোনের মা-বাবাও একসময় দাস ছিলেন। ম্যালোনের বয়স যখন অনেক কম, তখনই তাঁরা মারা যান। বড় বোনের কাছে মানুষ হয়েছিলেন ম্যালোন। দুজনে মিলে একসময় কেশসজ্জার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছিলেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের চুলের প্রসাধনী প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করা হতো না। অনেক ক্ষেত্রে এসব ব্যবহারে চুলের ক্ষতিও হতো। ম্যালোন এমন কিছু প্রসাধনী প্রস্তুত করেছিলেন, যেগুলো ছিল ব্যবহারের জন্য নিরাপদ। পরে ১৯০২ সালে সেইন্ট লুইসে এসে ক্রেতাদের ঘরে ঘরে প্রসাধনপণ্য বিক্রি শুরু করেছিলেন ম্যালোন। তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানকে বেশ সম্প্রসারিত করেছিলেন এবং তাঁর কোম্পানির বিজ্ঞাপনও প্রকাশিত হতো স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে। ১৯০৬ সালে 'পোরো' নামে নিজের তৈরি পণ্যগুলো আইনিভাবে নিবন্ধিত করেছিলেন ম্যালোন। নিজের পণ্য বিক্রির জন্য প্রধান কার্যালয় তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্র্যাঞ্চাইজি দোকানও চালু করেছিলেন ম্যালোন। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও ফিলিপাইনেও ফ্র্যাঞ্চাইজি চালু করেছিলেন তিনি।
ম্যালোনের কোম্পানির আর্থিক মূল্য ছিল কয়েক মিলিয়ন ডলার। আয়ের একটি অংশ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজেও ব্যয় করতেন ম্যালোন। তাঁর তৈরি এ ধরনের জনকল্যাণমূলক কিছু প্রতিষ্ঠান আজও চালু আছে।
এসটে লডার
এসটে লডার
১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের কুইন্সে জন্ম এসটে লডারের। তখন তাঁর নাম ছিল জোসেফিন এস্থার মেন্টজার। বাবার হার্ডওয়্যারের দোকানে কাজ করে প্রাথমিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন তিনি। পরে রসায়নবিদ চাচার উৎসাহে ব্যবসায় নাম লিখিয়েছিলেন লডার। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এসটে লডার কোম্পানি। এই প্রতিষ্ঠান লডারের চাচা উদ্ভাবিত ত্বকের প্রসাধনপণ্য বিক্রি করতে শুরু করে। বিভিন্ন স্যালন ও হোটেলে এসব পণ্য বিক্রি শুরু করেছিল এসটে লডার কোম্পানি। পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর ক্ষেত্রে লডার ছিলেন অত্যন্ত কুশলী। ১৯৪৮ সালে নিউইয়র্কে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। আর মার্কিন মুলুকের বাইরে প্রথম লন্ডনে এসটে লডার কোম্পানি পা রাখে, ১৯৬০ সালে।
এর পর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এসটে লডারকে। তাঁর মৌলিক বিপণনকৌশল কোম্পানির বিক্রি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে লডারের নামও ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ধীরে ধীরে নিত্যনতুন আরও ব্র্যান্ড বাজারে নিয়ে আসতে থাকে তাঁর কোম্পানি। ২০০৪ সালে লডার মারা যান। তবে তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি থেমে যায়নি। বর্তমানে এটি একটি বৈশ্বিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, যার বার্ষিক বিক্রি সাত বিলিয়ন ডলারের বেশি।
লেখক: অর্ণব সান্যাল, ঢাকা
* তথ্যসূত্র: দ্য আটলান্টিক, এন্ট্রাপ্রেনিউর ডটকম, উইমেন হিস্ট্রি ব্লগ ডটকম, সিএনএন, র্যাডক্লিফ ডট হার্ভার্ড ডট এডু, মেন্টাল ফ্লস, স্লেট ডটকম, হিস্ট্রি ডটকম, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস, স্যালন ডটকম ও ফোর্বস
অ্যানি টার্নবো ম্যালোন
অ্যানি টার্নবো ম্যালোন
ম্যাডাম সি জে ওয়াকারকে সাধারণত প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী মিলিয়নিয়ার বলা হয়ে থাকে। তবে অনেক ঐতিহাসিক এ ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করে থাকেন। তাঁদের মতে, এই অভিধা আসলে অ্যানি টার্নবো ম্যালোনের প্রাপ্য। ওয়াকারকে নিজ প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়েছিলেন ম্যালোন। ওয়াকারের কাজ ছিল সেইন্ট লুইসে চুলের প্রসাধনী বিক্রি করা। পরে সি জে ওয়াকার নিজের প্রতিষ্ঠান খুলে সফল হয়েছিলেন। ওয়াকারের মতো ম্যালোনের মা-বাবাও একসময় দাস ছিলেন। ম্যালোনের বয়স যখন অনেক কম, তখনই তাঁরা মারা যান। বড় বোনের কাছে মানুষ হয়েছিলেন ম্যালোন। দুজনে মিলে একসময় কেশসজ্জার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছিলেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের চুলের প্রসাধনী প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করা হতো না। অনেক ক্ষেত্রে এসব ব্যবহারে চুলের ক্ষতিও হতো। ম্যালোন এমন কিছু প্রসাধনী প্রস্তুত করেছিলেন, যেগুলো ছিল ব্যবহারের জন্য নিরাপদ। পরে ১৯০২ সালে সেইন্ট লুইসে এসে ক্রেতাদের ঘরে ঘরে প্রসাধনপণ্য বিক্রি শুরু করেছিলেন ম্যালোন। তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানকে বেশ সম্প্রসারিত করেছিলেন এবং তাঁর কোম্পানির বিজ্ঞাপনও প্রকাশিত হতো স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে। ১৯০৬ সালে 'পোরো' নামে নিজের তৈরি পণ্যগুলো আইনিভাবে নিবন্ধিত করেছিলেন ম্যালোন। নিজের পণ্য বিক্রির জন্য প্রধান কার্যালয় তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্র্যাঞ্চাইজি দোকানও চালু করেছিলেন ম্যালোন। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও ফিলিপাইনেও ফ্র্যাঞ্চাইজি চালু করেছিলেন তিনি।
ম্যালোনের কোম্পানির আর্থিক মূল্য ছিল কয়েক মিলিয়ন ডলার। আয়ের একটি অংশ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজেও ব্যয় করতেন ম্যালোন। তাঁর তৈরি এ ধরনের জনকল্যাণমূলক কিছু প্রতিষ্ঠান আজও চালু আছে।
এসটে লডার
এসটে লডার
১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের কুইন্সে জন্ম এসটে লডারের। তখন তাঁর নাম ছিল জোসেফিন এস্থার মেন্টজার। বাবার হার্ডওয়্যারের দোকানে কাজ করে প্রাথমিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন তিনি। পরে রসায়নবিদ চাচার উৎসাহে ব্যবসায় নাম লিখিয়েছিলেন লডার। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এসটে লডার কোম্পানি। এই প্রতিষ্ঠান লডারের চাচা উদ্ভাবিত ত্বকের প্রসাধনপণ্য বিক্রি করতে শুরু করে। বিভিন্ন স্যালন ও হোটেলে এসব পণ্য বিক্রি শুরু করেছিল এসটে লডার কোম্পানি। পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর ক্ষেত্রে লডার ছিলেন অত্যন্ত কুশলী। ১৯৪৮ সালে নিউইয়র্কে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। আর মার্কিন মুলুকের বাইরে প্রথম লন্ডনে এসটে লডার কোম্পানি পা রাখে, ১৯৬০ সালে।
এর পর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এসটে লডারকে। তাঁর মৌলিক বিপণনকৌশল কোম্পানির বিক্রি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে লডারের নামও ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ধীরে ধীরে নিত্যনতুন আরও ব্র্যান্ড বাজারে নিয়ে আসতে থাকে তাঁর কোম্পানি। ২০০৪ সালে লডার মারা যান। তবে তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি থেমে যায়নি। বর্তমানে এটি একটি বৈশ্বিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, যার বার্ষিক বিক্রি সাত বিলিয়ন ডলারের বেশি।
লেখক: অর্ণব সান্যাল, ঢাকা
* তথ্যসূত্র: দ্য আটলান্টিক, এন্ট্রাপ্রেনিউর ডটকম, উইমেন হিস্ট্রি ব্লগ ডটকম, সিএনএন, র্যাডক্লিফ ডট হার্ভার্ড ডট এডু, মেন্টাল ফ্লস, স্লেট ডটকম, হিস্ট্রি ডটকম, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস, স্যালন ডটকম ও ফোর্বস