What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made দোলা 🌹💔💢💫🌻🌺🌼🏵 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
আজ ছুটির দিন,দোলার খুব ইচ্ছা ছিলো বেলা করে ঘুম থেকে উঠবে কিন্তু প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা অভ্যাস ঠিক সেই সময় ঘুম ভেঙে গেলো।দোলা ভাবলো পানি খেয়ে আবার একটু ঘুমাবে, পানি খাওয়ার উদ্দেশ্যে ডাইনিং রুমে এসে রান্নাঘরে চোখ পড়তেই দোলার হাত পা জমে বরফ,এ কি দেখছে! নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না।কাজের মেয়েটা রুটি বেলছে আর দোলার স্বামী ফয়সাল পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ ঘষছে।



রাগে দুঃখে অপমানে দোলার সমস্ত শরীর জ্বলে যাচ্ছে ইচ্ছা করছে রান্না ঘরে যেয়ে দু'জনের গালে কষে চড় মারে, কিন্তু মন বললো মাথা ঠান্ডা কর দোলা রেগে যেয়ে কোনরকম সিন তৈরি করিস না।

চুপচাপ ঘরে এসে শুয়ে পড়লো,দোলা মনে মনে ভাবছে যে স্বামীকে এতো বিশ্বাস করি ভালবাসি আমার দুই মেয়ের বাবা আর সে কিনা! দোলা একদম সহ্য করতে পারছে না কিন্তু দোলাকে সাত দিনের জন্য সহ্য করতেই হবে তার দুই মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে।



দোলা একটা ব্যাংকে চাকরি করে আর ফয়সাল একটা কোম্পানিতে চাকরি করে, কোম্পানিটা ওর বন্ধুর। দু'জনে টাকা সঞ্চয় করে একটা ফ্লাট কেনার কথা হচ্ছে আর সাতদিন পর রেজিষ্ট্রি হবে দোলার নামে, দোলা ভাবছে এখন যদি কোনরকম চিৎকার চেচাঁমেচি করি তাহলে হয়ত আমার নামে আর ফ্লাট কেনা হবে না। আগে আমার হাতে ফ্লাটের কাগজপত্র আসুক তারপর ফয়সালের মজা দেখাবো।



ফয়সালের চরিত্র যে এতটা নোংরা এটা দোলার কল্পনার বাইরে।



দোলা আর ফয়সালের এগারো বছরের বিবাহিত জীবন, বড়ো মেয়ে সারা যখন গর্ভে তখন মাঝবয়সী এক মহিলা কাজে আসে দোলা তাকে খালা বলে ডাকতো তারপর ছোট মেয়ে রিয়ার জন্ম দীর্ঘ দশবছর কাজ করার পর খালার ছেলে এসে খালাকে নিয়ে গেছে মা'কে আর লোকের বাড়িতে কাজ করতে দেবে না। খালা চলে যাওয়ার পর আজ তিন মাস হলো কমলা নামে এই অল্প বয়সী মেয়েটি কাজে ঢুকেছে কাজেকর্মে বেশ চটপটে। ফয়সাল ইদানিং দোলা ব্যাংক থেকে বাড়ি ফেরার আগেই বাড়ি চলে আসে। ফয়সালের আগে আগে বাড়ি ফেরার মূল আকর্ষণ কমলা।



মৃদু পায়ের শব্দ পেয়ে আস্তে করে চোখ মেলে দোলা দেখে ফয়সাল ঘরে, দোলার মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে আলতো চুমু খেয়ে ফয়সাল বললো, ওঠো জানু অনেক বেলা হয়েছে নাস্তা খাবে।



অন্য দিন হলে দোলা ভাবতো ফয়সাল তাকে কতো ভালবাসে! কিন্তু আজ ওর স্পর্শে মনে হচ্ছে সারা গায়ে কেউ বিছুটি পাতা ডলে দিয়েছে। একটু মেকি হাসি দিয়ে বললো, তুমি টেবিলে বসো আমি পাঁচ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে আসছি সারা রিয়াকে ও ডাক দেও।



দোলার নামে ফ্লাটের রেজিষ্ট্রি হয়ে গেছে দলিল এখন দোলার হাতে আগামী কাল থেকে নতুন ফ্লাটে সংসার সাজাবে।এই সাতদিন দোলা দোজখের আজাব ভোগ করেছে সারারাত ঘুম হয়না তন্দ্রার মতো আসে চমকে জেগে ওঠে কোন খাবার গলা দিয়ে নামতে চায় না, ব্যাংকে যেয়ে কাজ করেও শান্তি পায়না বুকের ভেতর খচখচ করতে থাকে, সবসময় মনে হয় ফয়সাল হয়তো অফিস বাদ দিয়ে বাড়ি চলে এসেছে।দোলা যে ফয়সালের কুকর্মের কথা জেনে গেছে এটা যেন ফয়সাল কোনভাবেই বুঝতে না পারে তারজন্য দোলা খুব সচেষ্ট থেকেছে।



নতুন ফ্লাটে তিনটা বেডরুম। ফয়সাল বললো,দোলা একটা রুম খালি না থেকে কমলা থাক কোন মেহমান আসলে ও তখন রান্নাঘরে অথবা সারাদের ঘরে থাকবে।



মনে মনে দোলা ভাবলো একটা ঘরে কমলা থাকলে তোমারই তো সুবিধা ।মুখে বললো, ঠিক আছে তুমি যা বলো।



গভীর রাতে দোলার তন্দ্রা ছুটে গেলো বিছানায় হাত দিয়ে দেখে ফয়সাল নেই বুকের ভেতর ছ্যাঁত করে উঠলো বাথরুমে উঁকি দিলো খালি। পা টিপে টিপে গেষ্ট রুমের বন্ধ দরজায় কান পাতলো ভিতর থেকে ওদের দু'জনার হালকা গলার আওয়াজ পাচ্ছে। ঘরে এসে চাবি নিয়ে গেষ্টরুমের দরজায় তালা লাগিয়ে দিলো।



দোলার সমস্ত শরীর রাগে ঘৃণায় জ্বলছে বাথরুমে যেয়ে ভাল করে শাওয়ার নিয়ে, ঘরে এসে ঠান্ডা মাথায় পরবর্তী কাজের প্লান করলো।



ফয়সাল গেষ্টরুম থেকে বের হতে যেয়ে দেখে কিভাবে যেন দরজা লক হয়ে গেছে ,নব ধরে মোচড়াচ্ছে কিন্তু কিছুতেই দরজা খুলছে না। ফয়সালের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো এখন উপায়! কিভাবে দোলাকে ম্যানেজ করবে? অনেক চিন্তা করে ঠিক করলো দোলাকে বলবে রাতে কমলার গোঙানির আওয়াজ পেয়ে এই ঘরে আসে ও ঢোকার সাথে সাথে বাতাসে দরজা বন্ধ হয়ে অটো লক হয়ে গেছে। কমলা ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো ম্যাডাম জানতে পারলে কি যে হবে? হয়তো মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেবে।



সকাল হতেই, ঢাকায় ফয়সালের বোন দুলাভাই থাকে তাদেরকে ফোন করে দোলা বললো, আপা আপনারা এক্ষুণি আমাদের নতুন ফ্লাটে আসেন খুব জরুরি।দোলার ভাইয়া ভাবিকে জরুরি ভিত্তিতে আসতে বললো।ফয়সালের বন্ধু প্লাস বস রাকিব সাহেবকে ফোন করে ফ্লাটের ঠিকানা দিয়ে বললো,রাকিব ভাই প্লিজ তাড়াতাড়ি আমাদের ফ্লাটে আসেন।এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে দেখা করে বললো, আপনি দু একজন কে সাথে নিয়ে আমাদের ফ্লাটে আসেন খুবই জরুরি ।



এর ভিতর কতবার যে ফয়সাল দরজায় ধাক্কা দিয়েছে বারবার দোলার নাম ধরে ডাকছে আর বলছে দরজা কেন যে এভাবে লক হয়ে গেল! দোলা দরজা খুলে দেও প্লিজ।দোলাএকটাও কথা বলিনি শুধু মিচমিচ করে হেসেছে আর মনে মনে ভাবছে একটু অপেক্ষা করো চান্দু তোমার প্রেমলিলার সাধ আমি মেটাবো।



সকাল নয়টার ভিতর সবাই এসে উপস্থিত সবারই চোখে মুখে উৎকণ্ঠা সবাই প্রশ্নবাণে দোলাকে জর্জরিত করছে, কি হয়েছে দোলা? সাত সকালে এতো জরুরি তলব কেন? ফয়সাল কোথায় ওকে দেখতে পাচ্ছি না কেন?



প্লিজ আপনারা একটু চুপ করুন। আসুন আমার সাথে সব প্রশ্নের জবাব পাবেন। এই বলে দোলা সবাই কে সাথে নিয়ে গেষ্ট রুমের তালা খুললো।এতেো লোক দেখে ফয়সাল হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কমলা এক কোণায় দাঁড়িয়ে থর থর করে কাঁপছে।



গলা খাঁকারি দিয়ে দোলা বললো, এদের কে এভাবে দেখে আপনারা সবাই অবাক হচ্ছেন? কিছুদিন ধরে এদের প্রেম লিলা চলছে অনেক কষ্টে মুখ বুজে সহ্য করেছি কিন্তু আমি আর পারছি না আজকে হাতে নাতে ধরে আপনাদের খবর দিলাম। আমি আর ফয়সালের সাথে থাকবো না এখনই ইমাম সাহেব এবং আপনাদের সামনে ওকে আমি তিন তালাক দিচ্ছি খুব তাড়াতাড়ি কাগজ পত্রেও তালাক দেবো। আমি কোন অবৈধ সম্পর্ক পছন্দ করি না, আমি চাই ফয়সাল কমলাকে বিয়ে করে বউ সাথে নিয়ে এই বাড়ি থেকে চলে যাবে।এইটাই ওর বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি।



ফয়সাল আর্তচিৎকার করে উঠলো, না দোলা আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করে দেও। আমি তোমাকে, আমার মেয়েদের ভালবাসি।



দোলার ঘৃণায় নাক মুখ কুঁচকে উঠলো একদলা থুতু ফেলে বললো খবরদার ভালবাসার কথা মুখে নেবে না ঐ বাক্য তোমার মুখে মানায় না। ইমাম সাহেব বিয়ের কাজ শুরু করুন।



অসম্ভব আমি কিছুতেই কমলাকে বিয়ে করবো না।



দোলা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো, বিয়ে করবে না মানে কি ! একটা গরীব মেয়ের সর্বনাশ করবে আর আমি তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবো? স্বেচ্ছায় যদি বিয়েতে রাজি না হও আমি এক্ষুণি থানায় ফোন করবো কমলার অভিবাবক হয়ে তোমার নামে ধর্ষণের মামলা করবো।আমি যে এটা করতে পারি সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো।



আধাঘন্টার মধ্যে কমলার সাথে ফয়সালের বিয়ের কাজ সুসম্পন্ন হলো ফ্রিজে মিষ্টি ছিল দোলা সবাইকে মিষ্টি মুখ করালো সবাই দোলার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।



দোলা শান্তভাবে বললো, অবাক হওয়ার কিচ্ছু নেই দুষ্টু গরুর থেকে শূন্য গোয়াল ভাল।লম্পট স্বামীর সাথে সংসার করার চেয়ে বিধবা হয়ে থাকা অনেক বেশি সম্মানের আর আমার সন্তানদের চরিত্রহীন বাপের পরিচয়ের থেকে পিতৃহীন হওয়া অনেক বেশি ভাল।



ফয়সালের বোন বললো, তুমি যে আমার ভাই এই পরিচয় দিতে আমার ঘৃণা করছে।



দোলার ভাই দোলার সাহসের প্রশংসা করলো, খুব ভাল কাজ করেছিস দোলা তুই আমার বোন এটা ভেবে আমার গর্ব হচ্ছে।



ফয়সালের বস রাকিব সাহেব বললেন, তুই যে আমার বন্ধু এইটা ভাবতে আমার খারাপ লাগছে আমার অফিসে অনেক মহিলা কর্মি আছে তোর মতো চরিত্রহীন কে আমার অফিসে আর রাখবো না।



দোলা ফয়সাল কে বললো, এবার তুমি তোমার বউ কমলা সুন্দরী কে সাথে নিয়ে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও আর কোনদিনও তোমার ঐ নোংরা মুখ আমাকে দেখাবে না।



বাড়ি থেকে সবাই একে একে বিদায় হয়ে গেলে দোলা বিছানায় এলিয়ে পড়লো আজ সাতদিন দোলা ঘুমাইনি এখন একটু পরম শান্তিতে পরম নিঃশ্চিতে ঘুমাবে।


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top