What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected আশার আস্থার আধার নিজেই মানুষ – জীবনানন্দ দাশ (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,073
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
এ পৃথিবী বড়, তবু তার চেয়ে ঢের বেশি এই
সময়ের ঢেউগুলো—অনিঃশেষ সমুদ্রের থেকে
অন্তহীন সাগরের অভিমুখে কোথায় চলেছে।
রাত্রি আসে—রাত্রি শেষ হয়ে গেলে আলো;
আলো আরো মৃদু হ'লে তার চেয়ে বেশি
স্নিগ্ধ অন্ধকার সব—আকাঙ্ক্ষিত মেয়েটির হাতের মতন
কাছে এসে, সংবরণ ক'রে তবু, যেন নেপথ্যের
ওপারের থেকে তার কথা বলে।

অগাধ আয়ুর শিশু এরা সব : এই দিন, এই রাত্রি,
বাতাসের আসা-যাওয়া, নীল নক্ষত্রের ফুটে ওঠা,
শিশির ঝরার শব্দ, আশ্চর্য পাখির
ডিম প্রসবের সাড়া; আবার রোদের দিন মাঘ ফাল্গুনের;
সহসা বৃষ্টির রাত্রি,—হেমন্তের ঠাণ্ডা নিঃশব্দতা;
কবের আয়ুর শিশু এরা সব;—ম্যামথ দেখেছে।

শতাব্দীর সন্ধিপথে আজ মানুষের
আধো-আলো আধো-আশা অপরূপ অধঃপতনের
অন্ধকারে অবহিত অন্তর্যামীদের মতন ভোরের সূর্য;
দূরতর সমুদ্রের হাওয়া এসে ছুঁয়ে কিছু ভালো ব'লে যেতে চায়;
নগরীর বিদগ্ধ লোকেরা কথা ভেবে—ব'লে
প্রেরণা জাগাতে চায়;
সহজ ত্যাগীরা কাজ করে;
রক্তে দেশ অন্ধকার হয়ে পড়ে;
কথা ভাষা স্বপ্ন সাধ সংকল্পের ব্যবহারে
মানুষেরা মানুষের প্রিয়তর না হ'য়ে শুধু দূরতর হয়;
হৃদয় মলিন হ'য়ে যেতে থাকে;
নিয়ন্ত্রিত জ্ঞানেরও আকাশ ঢেকে কুয়াশা বাড়ছে;
মুক্ত হতে গিয়ে সুধী কেবলি রোমাঞ্চকর রূঢ় সায়েন্সের
জন্ম দেয়; চারিদিকে অগণন মানুষের মৃত্যু তার বড় কাহিনীর
যবনিকাপতনের প্রাক্কালে ক্লান্তির মতো;
তখন শতাব্দী অন্ধ—অবসন্ন—ব্যর্থ।—
হয়তো এ পৃথিবীতে মানবের অনন্ত চারণ
লোভ থেকে লোভে শুধু—ব্যথা থেকে ব্যথার ভিতরে,
ভুল থেকে উল্লোল ক্ষমতাময় ভুলের গহ্বরে;
চাঁদের কুয়াশা থেকে অঘ্রাণ রাতের
নক্ষত্রের অন্ধকারে;—
তারপর নক্ষত্রেরা নেই।

নবীন প্রয়াণে স্পর্শে মানুষেরা একদিন চীন পিরামিড
গড়েছিল; সূর্যঘড়ি চিনেছিল; প্রিয়তর উজ্জ্বল সূর্যকে
দিব্য দিয়ে নগরীর ভাঙা হাড়ে কেবলি গড়েছে
নতুন খিলান স্তম্ভ কুশলতা কল
সময়ের থেকে দূর বড় সময়ের কাছে
মানুষের যেই পরিচয় রেখে যায়
তা' তার আবেগ বুদ্ধি উৎকণ্ঠার;—
যেন তা' কল্যাণ সত্য চায়—তবু অবাধ হিংসার—
রিরংসার পাকে ঘুরে—ঘুরে ঘুরে শূণ্য হয়ে যায়;
অন্ধকার থেকে মৃদু আলোর ভিতরে
আলোর ভিতর থেকে আঁধারের দিকে
জ্ঞানের ভিতর থেকে শোকাবহ আশ্চর্য অজ্ঞানে
বারে-বারে আসা-যাওয়া শেষ ক'রে।

চিরকাল ইতিহাসবাহনের পথে
রক্ত ক্ষয় নাশ ক'রে সে এক জগতে
মানুষের দিকচিহ্ন মাঝে মাঝে মুক্ত হ'য়ে পড়ে;
তা' কোনো প্রশান্তি নয়, মৃত্যু নয়, অপ্রেমের মতো নয়,
কোনো হেঁয়ালির শেষ মীমাংসার বার্তা নয়,
অচিহ্নিত সাগরের মতন তা', দূরতর আকাশের মতো;
পেছনের পার্শ্বের দ্রুতগতি চিহ্ন ও বলয়
অন্তর্হিত হ'য়ে গেলে কূলহীন পটভূমি জেগে ওঠে;
ব্যক্তি ও জাতির নাম সময়ের দিগন্তরে শেষ হ'লে
শূন্য নীল আকাশের—মহাসাগরের শূন্যে মেশে;
চিনে নিতে পারে তার হৃদয়ের অসীম ভূগোলে
আরো শুদ্ধ আরো গাঢ় অনির্বচনীয় সম্মিলন
মানুষ ও মানুষের : চারিদিকে গ্লোবমাস্টারের শব্দে
অন্তহীন অন্ধকারে হাঙর মকর মৃত্যু কুজঝটিকায়
মৃত মূঢ় এরিয়েল ও বেতারের ব্যর্থতায়
যদিও প্রত্যাশা সব সর্বস্বান্ত ব'লে মনে হয়—
আশার আস্থার আধার তবু নিজেই মানুষ
মহাকাশ কিংবা মহাসাগরের চিহ্নগুলো নয়।

(জীবনানন্দের অগ্রন্থিত কবিতা থেকে।)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top