What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made আত্মজা 🌺🏵🌺🏵🌺🏵🌺🏵 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
ফাতেমা যখন তৃতীয় বারের মত প্রেগন্যান্ট হলো এবং আলট্রাসনো করে দেখা গেলো, তিন নম্বর সন্তানটিও মেয়ে হবে তখন শাশুড়ির সাথে সাথে, ফাতেমার স্বামীও কথা বলা বন্ধ করে দিলো ওর সাথে।পরবর্তিতে অবস্থা এমন হলো যখন তিন নম্বর মেয়েটি হাসপাতালে জন্ম নিলো, সেদিন ফাতেমার স্বামী এলেন না হাসপাতালে!

ফাতেমার স্বামী পেশায় একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। ভদ্রলোকের নাম আনিস।ফাতেমার শ্বশুর মারা গিয়েছেন, ফাতেমার বিয়েরও অনেক আগে। ফাতেমার স্বামী ওর বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। আর তাই ফাতেমার শাশুড়ি ছেলের কাছেই থাকেন।

ফাতেমা নিজের ঘরে কোলের শিশুটিকে দুধ খাওয়াচ্ছিলো। হঠাৎ যেন শুনতে পেলো আজ আবারও শাশুড়ি বলছেন,
-ঐ পাড়ার ঐ তানির মায়ের আবারও একখান ব্যাডা হয়সে। আর আমার পোলার কপালে জুডসে যত্তসব মাইয়া! এ্যাগোরে কেমনে বিদায় করবো আমার পোলা? সব দুষ ঐ ফাতুর।হায়রে হায়! কিমন করি যে পোলাডার ভবিষ্যৎ আমি নিজেই নষ্ট করসি, হেই চিন্তাই করি অহন।
ফাতেমা বাচ্চাটাকে বিছানাতে শুইয়ে দৌড়ে বাহিরে এসে শাশুড়িকে বলে,
-মা কি বলেন এইগুলি আপনি? এসব শুনলে আমার মাথার মধ্যে কেমন যেন লাগে।
-চুপ করো মাইয়া। একটা কথাও কইও না বেশরম!
আমি আমার আনিসরে আবার শাদী করামু। আর তুমার যদি মাথা খারাপ হয়, তুমারে পাবনাত রাইখ্যা আসমু।

ফাতেমা ওর স্বামীর সাথে কোন বিষয়ে কথা বলতে গেলে স্বামীও পাত্তা দেয় না। ঠিক তখনই নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয় ফাতেমার।

অবশেষে এক শুভাকাঙ্খী খালাম্মার পরামর্শ মত তিন মেয়ের লেখাপড়ার পেছনে সময় দিতে থাকে ফাতেমা। কারন খালাম্মা বলেন,
-যে কোন মানুষের মুখ আটকানোর একটাই পথ! আর তা হলো লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। হোক সে ছেলে বা মেয়ে।

আজ ফাতেমার বড় আনন্দের দিন। বড় মেয়েটি ঢাকা মেডিকেলে পড়বার চান্স পেয়েছে। শুধু তাই না, পুরো দেশে ওর অবস্থান ষষ্ঠ।এতদিনে স্বামীর মুখে হাসি দেখলো ফাতেমা। রাতে আনিস ফাতেমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-ফাতেমা আজ আমার মেয়ে যে ঢাকা মেডিকেলে পড়বার সুযোগ পেলো এর পুরো কৃতিত্ব তোমার। আমিতো অফিস করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনি তোমাদের জন্য।
ফাতেমা দ্রুত নিজেকে স্বামীর বাহু থেকে সরিয়ে নিয়ে বলে,
-মেয়ে যখন ভালো রেজাল্ট করে ডাক্তারিতে পড়ার চান্স পেলো, আর অমনি তোমার মেয়ে হয়ে গেলো?

আনিস আর একটি কথাও বলেনি। আনিস বুঝেছে প্রচন্ড কষ্ট থেকেই ফাতেমা এই কথাটি বললো। কারন শুধুমাত্র পর পর তিনটি মেয়ে সন্তান জন্ম দেবার জন্য ফাতেমাকে ভয়ংকর মানসিক অত্যাচার করা হয়েছে। আর এর সাথে স্বয়ং আনিস ই সরাসরি জড়িত।

এদিকে, নাতনী ডাক্তারীতে চান্স পেয়েছে শুনে ফাতেমার শাশুড়ি আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি ফোন করে সুখবর দিচ্ছেন।

ফাতেমা রান্নাঘর থেকে শুনছে, শাশুড়ি তাঁর ছোট ভাইকে বলছেন,
-ঐ সোলেমান তরা হুনছোস? আমার আনিসের বড় মাইয়া ডাক্তার হইসে! ছুডো দুই মাইয়াও তো খুব ভালা ছাত্রী! দেহিস অরাও বিরাট কিছু হইবো।

শাশুড়ির কথাগুলো শুনে ফাতেমা মনে মনেই বলে,
-বাহ! আজ ফাতুর বড় মাইয়া ডাক্তারীতে চান্স পেয়ে হয়ে গেলো আনিসের বড় মাইয়া!

ফাতেমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।আফসোস! ফাতেমার নামটা পর্যন্ত শাশুড়ি কখনো সঠিক ভাবে উচ্চারণ করে না। বাবা মায়ের দেওয়া ফাতেমা নামটা শাশুড়ি কেমন যেনো তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের সাথে মুখকে ভেংচিয়ে বলে ফাতু! ইদানিং আর ফাতেমা এসব নিয়ে ভাবে না।নিজেই নিজেকে স্বান্ত্বনা দেয় কপালে যা লেখা ছিলো হয়তো তাই হয়েছে! ফাতেমার কষ্ট একটাই যে, তার নিজের স্বামী শিক্ষিত হওয়া সত্বেও কেন মেয়ে সন্তান হবার জন্য ফাতেমার উপরেই রাগ করে!

ফাতেমা ভাবে মানুষ এত দ্রুত কি ভাবে পারে নিজের রুপ বদলাতে?

ফাতেমা স্মরণ করেন সেই শুভাকাঙ্খী খালাম্মার কথা। উনিই বলেছিলেন, ছেলে হোক বা মেয়ে লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হলে সবাই সমান আর মানুষের মুখ আটকানোর একটাই পথ, সন্তানকে সু শিক্ষায় শিক্ষিত করা। সন্তান তো তার মায়ের কাছেই সব শিখবে!

ফাতেমার চোখে এখনও ভাসে প্রথমদিন বড় মেয়ের সাদা এ্যাপ্রোন পরে ঢাকা মেডিকেলে যাবার দৃশ্যটা। দেখতে দেখতে এক বছর পার হয়ে গেলো।

এদিকে মেজো মেয়েটির খুব শখ বাবার মত ইন্জিনিয়ার হবে। মেজোটি বড়টির মত মেধাবী নয়। তবে রাতদিন পড়ে পড়ে ঠিকই সে ভালো রেজাল্ট করে। বইয়ের প্রতিটা পাতা সে ভাজা ভাজা করে ফেলে। এই নিয়ে অবশ্য ছোট বোনের কাছে মাঝে মাঝেই কথা শুনতে হয় ওর। ছোটজন বেশ ভাব নিয়ে বলে,
-বুঝলিরে আপা তোর মাথায় আসলে তেমন কিছুই নেই!
-এই জানিস তুই কার মত হয়েছিস? তুই আমাদের দাদীর মত। দেখতেও অমন আবার কথার ছিরিও অমন।
-তা তুই যাই বল না কেন, সত্যি রে তোর মাথায় যদি কিছু থাকতো তবে কি আর এত পড়তে হতো, বল আপা?
এ ভাবেই চলতে থাকে দু'বোনের খুনসুটি। ইদানিং মেডিকেলে পড়ার চাপে ওদের বড় বোন খুব একটা সময় দিতে পারে না।

অবশেষে মেজো মেয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় চলে এলো। জান প্রাণ দিয়ে খেটেছে মেয়েটা। এই মেয়েটা হয়েছে অন্য দুবোনের থেকে একটু আলাদা। মা বাবা দাদী বোনেদের প্রতি ওর মায়া বেশি। সবার প্রতি ওর নজর থাকে। দাদীর ঔষধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে মায়ের সাথে রান্নায় সাহায্য করা, সবই করে মেজো মেয়ে।

ফাতেমার মেজো মেয়ে ইন্জিনিয়ারিং পড়ার চান্স পেয়েছে বটে! তবে চুয়েটে ( CUET)। বুয়েট রুয়েট কুয়েট তিনটার কোথাওই সে টেকেনি।

আবারো এক বছর পর ফাতেমার বাড়িতে আনন্দের বন্যা বইছে। ফাতেমা মনে মনে একটু কষ্টই পাচ্ছে চিরচেনা শহর ঢাকা ছেড়ে মেয়েটাকে এখন সেই পাহাড় সমুদ্রের দেশে চলে যেতে হবে। কিন্তু নিজের মনকে শক্ত করে ফাতেমা ওর মেয়েকে বলে,
-আমাদের ছেড়ে এতদুর চলে যাবি মা, পড়তে?
মেয়ে সাথে সাথে জবাব দেয়,
-মা সরকারী প্রতিষ্ঠানে পড়তে যাবো এটাই তো আল্লাহর কাছে কোটি শুকরিয়া। আর এখন আবার দুরে কাছে বলে কিছু আছে নাকি মা? সবাই আমরা কাছাকাছি আছি থাকবো। সরকারী প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুবিধা অনেক মা। বেশ লম্বা ছুটি পাওয়া যায়। রোজায় তো পুরো একমাস ছুটি। এরকম কত্ত ছুটি!

দুদিন থেকে ফাতেমার শাশুড়ির প্রচন্ড পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে।ডাক্তারের পরামর্শে খাওয়ানো হচ্ছে ঔষধ স্যালাইন। কিন্তু বয়সের কারনেই হয়তো, বৃদ্ধার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। অবশেষে ফাতেমার ডাক্তারী পড়ুয়া মেয়ের পরামর্শে ফাতেমার শাশুড়িকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সেখানে দাদীর ভালো চিকিৎসার জন্য হবু ডাক্তার নাতনী কোন কিছুরই ত্রুটি রাখেনি।

ফাতেমার শাশুড়ি মৃত্যুর আগের রাতে ফাতেমার হাত দুটো ধরে ক্ষমা চান।নিজের ছেলে আনিসকে ডেকেও বলেন,
-আনিস, মাইয়্যা হওনের লাইগ্যা মনে কুনো কষ্ট রাহিস না বাপ। তোর মাইয়ারা পোলাগোর চাইতে কুনু অংশেই কম না। তর বউডার লগে ভালা ব্যবহার করিস। অরে আর মাইয়া হওনের লাইগ্যা খোঁটা দিস না।

ফাতেমা মনে মনেই বলে, মেয়ে হবার জন্য সারাটা জীবন শুধু কষ্টই দিয়ে গেলেন মা। আর এখন ক্ষমা চান! এ কেমন কথা!

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top