What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made বুনোফুল 🌸🏵💮🌺🌻🌼💐 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
: এ আমার প্রথম প্রেম নয় যে, তোমাকে বলবো তুমি খুব সুন্দর!

আমি একটু অবাক হয়ে তাকালাম বক্তার দিকে। তিনি আমার স্বামী। কারণ, ঘন্টাদুয়েক আগে কবুল বলে তাকে আমি স্বামী বলে স্বীকৃতি দিয়েছি। বাসররাতে নিশ্চয়ই কেউ এমনটি আশা করে না! আমিও করিনি। বাট এটাই এখন আর এই সময় আমার জন্য সত্যি। ভাবতেই কষ্ট লাগছে। আমি হাতে ধরা মিষ্টির পিরিচটা পাশ টেবিলে আলতো করে রাখলাম। কত্ত কিছু ভেবেছি! ঘরে ঢুকতেই তাকে আমি পা ছুঁয়ে সালাম করব, জায়নামাজ রেডী রেখেছি। দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করব। তাহলে মার কথা মিথ্যে! বিয়ে করলে স্বামী ভালবাসবে কতাটা মিথ্যে ছিল। কেন এমন কথা বললে মা! আমার চোখ গড়িয়ে ফোঁটাকয়েক পানি গড়িয়ে এলো। আমি সামলে নিলাম। আমি মায়ের সাহসী মেয়ে। আমাকে নরম হলে চলবে না।

: মিষ্টিটা খেয়ে নিন।

: মিষ্টিতে কি তুকতাক করেছ? যাতে আমাকে বশ করতে পারো!

আমি লোকটার দিকে এবার ভাল করে তাকালাম। সবুজ পাঞ্জাবীতে বেশ কালো লাগছে। আমি যখন বিয়ের আগে একবার দেখেছি সেদিন কালো লাগেনি। চোখগুলো মনে হচ্ছে খুলির ভেতর ঢুকে আছে। জোড়া ভ্রু। টিকোলো নাক। গালে বসন্তের দাগ। আমার স্বামী। নাম হুমায়ুন। হুমায়ুন শেখ। আর আমি লাবণ্য। আজ থেকে লাবণ্য শেখ। কারন বিয়ের পরতো স্বামীর পদবীই স্ত্রীর পদবী হয়, তাই না! মাথা থেকে পা ভাল করে নিরীক্ষণ করলাম। ৬ ফুট উচ্চতার সুঠাম লোক। লোকটার পায়ে একটা স্পঞ্জের সেন্ডেল। বুড়ো আঙুলের নোখের মাথা মাংশে ঢুকে আছে। হাতের দিকে তাকালাম। হাতের গাঁটগুলো বেশ মজবুত আর গাঢ় কালো। চিন্তা করলাম, যদি আমাকে এ মজবুত হাতে চড় মারে! মানে বাইচান্স। আমি সামলাতে পারব কি! আমি হলাম পাঁচ ফুট, শীনকায়া মেয়ে। স্যরি। এখন আমি বিবাহিতা। মেয়ে বললে ভুল বলা হবে। এখন আমি নারী হয়ে উঠেছি সদ্য। কানের কাছে ভেসে উঠল মায়ে কান্নামিশ্রিত বাণীগুলো।

: লাবু. স্বামীই আজ থেকে তোর সব। মনে রাখবি, মহানবী(সা:)ও বলেছে, আমি যদি আল্লাহর পর কাউকে সিজদা করতে বলতাম, তবে প্রত্যেক নারীকে বলতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে। কথাটা খেয়াল রাখিস মা। হুমায়ুনই তোর সব আজ থেকে.....

: আর তুমি?

মা মুখে আঁচল চেপে চুপ হয়ে গেলেন। আমি জল ভরা নয়নে তাকালাম। সামলে নিলাম নিজেকে। কাঁদলে চলবেনা। মার জন্য আমাকে শক্ত হতে হবে। আমার মা। হ্যাঁ, আমার মা। সায়মা হাসান। উনি আমাকে মানুষ করেছেন তার সবটুকু ঢেলে। মামার সংসারে মুখ গুঁজে থেকে আমাকে মানুষ করেছেন। কত লাঞ্ছনা, কত গঞ্জনা! তবু আমার মা ভেঙে পড়েননি। কোনদিন আমাকে বাবার অভাব বুঝতে দেননি। একদিন শুধু প্রশ্ন করেছিলাম।

: মা, আমার বাবা কই?

মা আমার গালে ঠাশ করে চড় বসিয়ে দিয়েছিলেন। আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর নিজের হাতকেই দেয়ালে মেরে মেরে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলেন সারারাত। আর আমি কেঁদেছিলাম বালিশে মুখ লুকিয়ে। এরপর কোনদিনই বাবার কথা জিজ্ঞেস করিনি। যেদিন এসএসসি পাশ করলাম, মা আমাকে ঘরে ডেকে একটা ফটো এলবাম খুলে ধরলেন। মায়ের বিয়ের ফটো। আমি জীবনের প্রথম দেখলাম আমার বাবার চেহারা। মা খুব ধীরে বললেন, বললেন অনেক কথা।

: তোর বাবা, আজিম খান। শুনেছি এখন থাকেন লন্ডনে। অনেক খ্যাতি। বিয়ের তিনমাস পরই ডিভোর্স দিয়েছেন আমাকে। আমি তার যোগ্য নই। সামান্য স্কুলের টিচার। আর তিনি পিএইচডি ডিগ্রীধারী প্রফেসর। তার সংগে আমাকে মানায়না। লন্ডনে ফিরে গেছেন। শুনেছি কোনো ম্যামকে বিয়ে করেছেন। সেখানে সুখে আছেন। কোনদিন আর খোঁজ নেননি।

আমি মার হাতে ধরা কাগজখানা টেনে নিলাম। দলিল। তালাকনামা। আমি মার দিকে তাকালাম। মার চোখে জল।

: মা, আমার কথা জানে এইলোক?

: জানে।

: একবারও খোঁজ নেয়নি?

: না।

আমি কথা বললামনা আর। মা চোখ মুছে আমায় আবার প্রশ্ন করলেন।

: তুই বিরাট একটা সময় জয় করলি। তোর বাবার সাথে কথা বলতে চাস?

আমি মাথা নেড়ে না জানালাম। মায়ে কোলে মাথা রেখে শুয়েছিলাম অনেকক্ষণ। কষ্ট হচ্ছিল। আমি জানি আমার মায়ের কষ্ট আরও বেশী, অনেক বেশী। যা হয়ত ছোট্ট আমি অনুভবই করতে পারিনি।

আর আমার বিয়েটা আমার হায়ার সেকেন্ডারী পরীক্ষার পরই হয়ে গেল। আমার সিংগেল মাদার মা নাটুকুনও করতে পারেননি তার ভাইয়ের মুখের ওপর। আর আমি? আর কত গলগ্রহ হয়ে থাকব মামার সংসারে! বিয়েটা হয়েই গেল। আর বাসর রাত! ধাক্কা খেলাম। আচ্ছা, যখন মানুষ প্রথম প্রেমে পড়ে তখন কি সুন্দর না হলেও বলতে হয় তুমি খুব সুন্দর! এরকমই কি নিয়ম? আসলে আমি জানি নাতো! তবে হ্যাঁ, আমি ভাঙার মেয়ে নই।

: রাতে মিষ্টিমুখ করে নবদম্পতি, তাই মিষ্টি দেয়া।

: তাই নাকি?

: না খেলে আমার আপত্তি নেই। আপনি দুধ খেযে অজু করে আসুন।

: কেন?

: আমরা দু'রাকাত নফল নামাজ পড়ব।

: তুমি আমাকে হুকুম দিচ্ছ?

আমি সুন্দর করে হাসলাম।

: তুমি হাসছ?

: জ্বি।

: ননসেন্স কোথাকার!

আমি তোয়াক্কা না করে জায়নামাজ বিছালাম। লোকটা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। আমি আবার হাসলাম তার দিকে তাকিয়ে।

: শুনুন। আপনার বয়স কত?

: মানে?

: মানে আপনার বয়স। হাউ ওল্ড আর ইউ?

লোকটা বিষ্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। উত্তর করল না। আমি আবার হাসলাম।

: থার্টি। আমি জানি। এ বয়সে আমি যে আপনার প্রথম প্রেম হবোনা এও জানি। তবে শেষ প্রেম নির্ঘাত। মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেন।

আমি আলমারী খুললাম। লোকটা দেখছে। একটা লুঙ্গি বের করলাম, সঙ্গে স্যান্ডো গেঞ্জি। লোকটার হাতে গুঁজে দিয়ে খানিকটা ধাক্কা দিলাম।

: যান বাথরুমে চেঞ্জ করে, অজু করে আসুন।

লোকটা ঠিক বুঝে উঠতে পারল না কি করবে। যেন ধোকার মধ্যে পড়ে গেছে। এসব তার চিন্তার বাইরে। সে ইতস্তত ভাব নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। বেরোন মাত্রই আমি আর একটি চওড়া হাসি উপহার দিলাম। লোকটা পুরাই কনফিউজ্ড। কোন কথা জোগাচ্ছে না তার মুখে। আমার পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল। অনাভ্যাসে তার খানিকটা উল্টাপাল্টা হল বটে। একটা মিষ্টিও খেলো, সাথে দুধটুকুও ঢকঢক করে খেলো। আমি তার পাশে বসে আছি। খানিকটা পা দুলিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম তার সাথে। উনি কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে আমাকে টেনে তার কোলের উপর বসিয়ে দিলেন। নিজের কথা বলতে বলতেই উনি আমাকে কোলে বসিয়ে দোল দিতে লাগলেন। ধীরে ধীরে আমি শাড়ির উপর দিয়েই নিতম্বের খাঁজে ওনার শক্ত হয়ে উঠা পৌরুষের অস্তিত্ব টের পেতে শুরু করলাম। স্পর্শেই, কল্পনায় আকার অনুমান করে বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। নিজেকে সামলে নিয়ে ঝট করে তার কোল থেকে নেমে জিজ্ঞেস করলাম

: আপনি কি যেন বলছিলেন?

: কি?

: ঐ যে, আমি সুন্দর নই...

লোকটা আশ্চর্যচোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। যেন ভুত দেখছে। আমি সুন্দরী নই তা ভুল কথা। কারণ, যদি সেই অর্থে সুন্দরী না হতাম তাহলে এই লোকটার সাথে আজ বিয়েটা হত না। আর মামাও আমাকে নিয়ে এতটা উৎকন্ঠিত থাকতেননা। আমি বেশ মিষ্টি করে হাসলাম। লোকটা আমার উপর হতে চোখ ফিরিয়ে নিল।

: কাল এযারপোর্টে তাড়াতাড়ি রওয়ানা হব। সকালেই তোমার যার যার সাথে দেখা করতে হয় করে বিদায় নিয়ে নেবে।

: লন্ডন যাব?

: তবে আর কই?

: আপনার মনে হয়নি আমি আপনার যোগ্য নই?

লোকটা ইরিটেড ফিল করছে। তবে আমি বেশ মজা পাচ্ছি তাকে বিরক্ত করে।

লন্ডনে আমি সমস্যা ফিল করিনি। বাসররাতে বিড়াল মারতে গিয়ে আমার হাতে মার খেযে বেচারা বেশ মিইয়ে গেছে। আমার সাথে খুব একটা কথা বলে না। আমি বলি। লোকটা ঘরে এলেই বকবক করে বেশ বিরক্ত করি। লোকটা হু হা ছাড়া বেশী কিছু বলে না। বা করতে চায়না। আমার খুব ইচ্ছে করে লোকটাকে আমার বাবার ধোকার গল্প বলি। কিন্তু পারি না। লোকটার চেষ্টাতেই আমি আজ ডাক্তার হয়ে উঠেছি। কিন্তু কেন যেন মনে হয় লোকটা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে বেড়ায়। আমার কণ্যা আজ আধোবোলে বাবা ডাকে, লোকটা খুব রেসপন্স করে বলে মনে হয় না। তবে সেদিন লুকিয়ে দেখে চোখ জলে ভরে এল। আঁচলকে বুকে জড়িয়ে হু হু করে কাঁদছে লোকটি।

: মা, আমি তোকে কোনদিন ছেড়ে যাব না।

আমি সরে এলাম সেখান থেকে। তারমানে লোকটা আমার গল্প জানে! বেশ তাড়াহুড়ো করেই চেম্বারে এলাম। রোগীকে দেখে চমকালাম। বেশ চেনা চেনা। কোথায় দেখেছি! চোখে জল এল। মায়ের ফটো এলবামে। বেশ বুড়োটে। চেহারা একই আছে। শুধু গালের চামড়াতে ভাঁজ পড়েছে। মাথার চুল পেকেছে, ভ্রুটা সাদাটে হয়েছে।

: নাম?

: আজিজ খান।

: আপনার সংগে কেউ এসেছে?

লোকটা একবার তাকাল আমার দিকে। তারপর বেশ বিষন্নগলায় বলল।

: কে আসবে?

: আপনার বাচ্চারা।

: বাচ্চা! দে আর ভেরী বিজি পারসন নাউ। বাপকে দেখার সুযোগ কই!

আমি সামলে নিলাম।

: আপনার ওয়াইফ?

: সি ইজ নো মোর।

বুকের ভিতর আঘাত লাগলো। কতটা অসহায়! আমি খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম লোকাটর দিকে। আমার মেয়ের বাবার কথা মনে পড়ল। কম কথার মানুষ, তবে সন্তানকে অস্বীকার করেনি। আমাকে অস্বীকার করেনি। আমি ঘচঘচ শব্দে প্রেসক্রিপসন লিখে দিলাম। লোকট যাবার জন্য দরজার কাছে পৌঁছে গেছে। আমার বুকে কোথায় যেন চিনচিন করছে। হঠাৎ বৃদ্ধ লোকটা ঘুরে দাঁড়াল। ম্রিয়মান কন্ঠ।

: আমি কি পে করে তোমার নাসিংহোমে থাকতে পারি! আফটার অল তুমি বাংলাদেশী।

: ঠিক আছে।

লোকটা কাছে এসে পেশেন্টের সিটে আবার বসে পড়ল।

: জানো, বাংলাদেশে আমার একটা মেয়ে আছে। আমি তার খোঁজ জানিনা। তবে তোমার বয়সী হবে...

আর কি বলেছে আমি শুনতে পাইনি। খুব বাবা ডাকাতে ইচ্ছে করছিল। তবে পারিনি।

আমি দু'হাত মুখে চেপে কাঁদলাম খানিকক্ষণ। আমার মাথাটা কোলে নিয়ে আছে হুমায়ুন শেখ। আর আমি লাবণ্য শেখ। তার স্ত্রী। কোনদিন এই কালো লোকটাকে এত কাছের মনে হয়নি। আজ বেশ মনে হচ্ছে। ঐ কোটরের চোখ, গালে বসন্তের দাগ, জোড়া ভ্রু আমার বেশ লাগছে। লোকটা আমার দিকে ঘোলাটে চোখে তাকিয়ে আছে।

: লাবণ্য, একটা কথা বলব?

: বলো।

: বাবার কাছে পরিচয় দিতে চাও?

: না। যে বাবা কোনদিন আমাকে চায়নি আজ কেন মিছেমিছি আমি যাব তার কাছে...

: বড্ড অভিমান তোমার, ঠিক বুনোফুলের মতন। আর একটা কথা বলব?

: বলো।

: বিয়ের রাতে আসলে বলতে চেয়েছিলাম।

: কি?

: তুমি খুব সুন্দরী

: কার মতন?

: ঠিক বুনোফুলের মতন।

আমি আজ অবাক চোখে চেয়ে আছি লোকটার দিকে। আকাশে হয়ত আজ চাঁদ উঠেছে। সে চাঁদটা আজ খুব সুন্দর হবে, খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা, তোমরা কখনো বুনোফুল দেখেছো? কেমন দেখতে? আমাকে কেউ একগোছা এনে দেবে। দেখতাম আমার মতন কিনা!


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top