মানুষের মনে কত রকমের দুঃখ থাকে কে জানে? কেউ মন খুলে না বললে, হয়তো কখনো জানাও হয় না। আমি বললাম, স্যরি হেনা, আর কখনো তোমাকে হাসতে বলবো না। বিরক্তও করবো না।
হেনা বললো, না খোকা, তুমি হঠাৎ করেই আমার মনে দোলা জাগিয়ে দিয়েছো। আমি মায়ের মতো না। খুব সহজে ছেলেদের খুব একটা পাত্তা দিইনা।
হেনা আমার চোখে চোখেই তাঁকালো। বললো, বললাম না, কুইনান সারাতে কেউ পারে না? আমার কাছে এসে, তোমার জ্বর ভালো হয়ে গেলো, অথচ, আমার কথা একটিবারও ভাবলে না? আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি, ওসব মন থেকে নয়।
আমার মনটা হঠাৎই আবেগ আপ্লুত হয়ে উঠলো। আবেগ আপ্লুত গলাতেই ডাকলাম, হেনা!
হেনা বললো, হ্যা খোকা, আমিও আর দশটা মেয়ের মতো হাসতে চাই। কিন্তু পারি না। ক্লাশে যখন মুনাকে দেখি, কি চঞ্চল, কি হাসি খুশী! তখন আমারও ইচ্ছে করে ওর মতোই ছুটাছুটি করি, দুষ্টুমী করি। কিন্তু পারি না।
আমি হেনার ফুলা ফুলা গাল দুটি চেপে ধরলাম। বললাম, দুঃখ কষ্ট সবার জীবনেই আছে। তুমি তো বললে, তোমার মা থেকেও নেই। আমার তো মা ই নেই। বড় বোনও পালিয়ে বিয়ে করেছে। কত কষ্ট হয় মাঝে মাঝে জানো?
হেনা হঠাৎই আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। বিড় বিড় করেই বললো, আমার মায়ের কথা কাউকে বলবে না প্লীজ! তোমাকে খুব ভালো লেগেছে বলেই বলে ফেললাম। আমি আর বাবা এক রকম এখানে আত্ম গোপন করেই আছি, মানুষের নিন্দা থেকে বেঁচে থাকার জন্যে।
আমি আবারো হেনার ফুলা ফুলা আপেলের মতো গাল দুটি চেপে ধরে, তার অদ্ভূত কারুকার্য্যময় ঠোট দুটিতে চুমু দিয়ে বললাম, না হেনা, সব কিছু বলে ভালোই করেছো। নইলে আমিও তোমাকে ভুল বুঝতে চলেছিলাম।
হেনা বললো, কেমন ভুল?
আমি সত্যি কথাটাই বললাম। বললাম, ভেবেছিলাম, তুমি খুব অহংকারী একটা মেয়ে।
হেনা আমার বুকে হাতের আঙুলে আঁচর কেটে কেটে বললো, এখন কেমন মেয়ে মনে হচ্ছে?
আমি বললাম, তোমার বুকে বুক ভরা ভালোবাসা।
হেনার সাথে একটা আপোষ মীমাংসা হতে, মনটা আরো বেশী আনন্দে ভরে উঠেছিলো। মনে হয়েছিলো, হেনার দাঁত দেখার কোন প্রয়োজন নেই। মেয়েদের দাঁতে কি আর তেমন আসে যায়? হেনার ফুলা ফুলা গাল আর ফুলা ফুলা ঠোট আমার খুব পছন্দের।
বাজারটার উপর দিয়ে আনমনেই বাড়ী ফিরছিলাম। হঠাৎই ফলের দোকানটার দিক থেকেই মেয়েলী কন্ঠ শুনতে পেলাম, খোকা ভাই!
আমি ঘুরে তাঁকালাম। শরমিন, আমাদের এক ক্লাশ জুনিয়র। আমার প্রথম প্রেম উর্মির খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। কারন, উর্মির ছোট বোন শর্মির নামের সাথে মিল আছে বলেই, শরমিনকে উর্মি তার খুব আপন বন্ধু করেই নিয়েছিলো। উর্মির সাথে আমার প্রেমের কথা, স্কুলে শুধুমাত্র শরমিনই জানে। উর্মি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে, মাঝে মাঝে উর্মির খোঁজ খবর আমার কাছ থেকেই নিয়ে থাকে। তাই শরমিনকে আমি কখনোই এড়িয়ে যেতে পারি না।
আমি শরমিন এর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম, কি ফল কিনছো নাকি?
শরমিন বললো, এই সামান্য আর কি। এই বাজারে কি আর ভালো ফল পাওয়া যায়?
শরমিন আহলাদী গলাতেই বললো, একটু দাম দরটা করে দিন না। আমি ফলের দাম ভালো বুঝিনা।
আমি বললাম, দাম দর না জেনেই ফল কিনতে চলে এলে?
শরমিন বললো, কি করবো? মায়ের জন্যে ফল খুব জরুরী।
আমি বললাম, কি হয়েছে তোমার মায়ের?
শরমিন বললো, তেমন কিছু না, জণ্ডিস। কিছুই মুখে দিতে পারে না।
আমি বললাম, ও আচ্ছা, তো কি কিনবে?
শরমিন বললো, তেমন কিছুই তো নেই। এক টুকরি আম দেখছি। বলছে একশ টাকা। আম এত দাম হয় নাকি? আমি তো মাত্র পঞ্চাশ টাকা নিয়ে এসেছি।
আমি বললাম, আস্তে বলো, পঁচিশ টাকাতেই তোমাকে কিনে দেবো। তুমি একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াও।
শরমিন আমার কথা মতোই একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। আমি দোকানটার কাছে গিয়ে, আমগুলো টিপে টিপে বললাম, কিরে, দাম কত।
ছেলেটা বললো, এক দাম, একশ টাকা!
আমি বললাম, এই টক আম একশ টাকা? দশ টাকায় দিবি?
দোকানী ছেলেটা অন্যত্র তাঁকিয়ে বললো, এক দাম, একশ টাকা।
আমি বললাম, আম কি তোদের গাছের আম? নাকি চুরি করা? এগুলো কার গাছের আম, আমি তো চিনি।
ছেলেটি হঠাৎই ভয় পেয়ে বললো, পঞ্চাশ টাকায় নেবেন?
আমি বললাম, ধূর ব্যাটা, চুরি করা আম কি কেউ পঞ্চাশ টাকায় কিনবে?
ছেলেটি বললো, ঠিক আছে, এক দাম পঁচিশ টাকা। আমি চুরি করিনি। ওই বজইল্যা চুরি করে আমার কাছে বিক্রি করেছে। আমি বিশ টাকায় কিনছি। পাঁচ টাকা লাভ না হলে, দোকান বসাইয়া লাভ কি?