What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Wanted!! গেঁজো দাঁতের মেয়ে by রাখাল হাকিম। (3 Viewers)

১৯
অধরা কদিন ধরে আমার পেছনে এমন করে লেগেছিলো কেনো, সেদিনই প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম। আসলে স্কুল ম্যাগাজিনে আমার লেখা গলপোটার জন্যেই। স্রেফ একটা ভুল বুঝাবুঝি।

স্কুল ছুটির পর আমি খুব সহজভাবেই স্কুল গেইট দিয়ে বেড় হচ্ছিলাম। হঠাৎই মেয়েলী কন্ঠে একটা কবিতা কানে এলো,
রথ ভাবে আমি দেব, পথ ভাবে আমি।
মূর্তি ভাবে আমিই দেব, হাসেন অন্তর্যামী।

আমি পেছন ফিরে তাঁকালাম। দেখলাম বড় গেইটটার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুনা। মুচকি হেসেই বললো, তাহলে অধরার সাথেই যাচ্ছো? যাও!

মুনাও কি আমাকে ভুল বুঝছে নাকি? আমি স্কুল ম্যাগাজিনে যে গলপোটা লিখেছিলাম, তাতো আমার ছোট খালাকে কল্পনা করে। মুনার দাঁতও গেঁজো। মুনরা গেঁজো দাঁতও আমার প্রচণ্ড ভালো লাগে। কিন্তু গেঁজো দাঁত নিয়ে লেখা গলপোটা মুনাকে নিয়ে লিখিনি। আমি মুনার দিকেই এগিয়ে গেলাম। মুনার কথাটা আমি মুনাকেই ফিরিয়ে দিলাম। বললাম,
হেনা ভাবে আমি দেবী, মুনা ভাবে আমি,
অধরা ভাবে আমিই দেবী, হাসে জেলে কন্যি।

মুনা আমার দিকে দু পা বাড়িয়ে বললো, জেলে কন্যি? ওটা আবার কে?
আমি বললাম, গলপোটা কোন জেলে কন্যিকে নিয়েও ছিলো না। স্রেফ কল্পনা থেকে লেখা। তবে, নিশ্চিত থাকো যে, তোমাকে নিয়েও লিখিনি।
মুনা ক্ষিপ্ত হয়েই বললো, বলো কি? আমি তো অধরাকে একটা মজা দেখানোর জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। তুমি আমার সাথে ঠাট্টা করছো না তো?



অধরা সত্যিই খুব সাধারন পরিবার এর সাদারন মেয়ে। লেখা পড়াটাই তার পূঁজি। ক্লাশের ফার্ষ্ট গার্ল। সবার মধ্যমণি তার সুন্দর আচার ব্যবহার এর জন্যেই। মুনা রেফারীর মেয়ে, মানুষ নিয়েও সে খেলে। আমাকে নিয়েও অনেক খেলেছে। এমন কি রেখা দিদিকে নিয়েও। রেখা দিদি পরাজিত হয়েই, আমার কথা ভুলতে চলেছিলো। মুনা অধরাকে নিয়ে খেলুক, তা আমি চাই না। আমি মুচকি হেসেই বললাম, একটু ঠাট্টা করলাম। গলপোটা আসলে তোমাকে নিয়েই লিখেছিলাম।
মুনা খুব খুশী হয়েই বললো, আমি জানতাম, গলপোটা পড়েই বুঝেছিলাম। অথচ, বোকা মেয়ে অধরা কি খুশীটাই না হলো। তুমি দেখো, ওকে আমি কেমন মজা দেখাই।
আমি বললাম, কেমন মজা দেখাবে?
মুনা বললো, তুমি যখন বললে, গলপোটা অধরাকে নিয়ে লিখোনি, তখন অধরা খুব মন খারাপ করেছে। তুমি আবারো অধরার কাছে যাবে। গিয়ে বলবে, স্যরি অধরা। গলপোটা আসলে তোমাকে নিয়েই লিখেছিলাম। কি পারবে না?
আমি বললাম, কেনো?
মুনা এগুতে এগুতে ওপাশের সিঁড়িটার উপর গিয়েই বসলো। বললো, দরকার আছে। মেয়েটার দেমাগ একটু বেশী। ক্লাশের ফার্ষ্ট গার্ল বলে ভেবে নিয়েছে সবার মাথা কিনে নিয়েছে। কি আছে ওর? শুনেছি বাবা নাকি মিস্ত্রী। একটা মিস্ত্রীর মেয়ের এত দেমাগ?
আমি বললাম, অধরার বাবা মিস্ত্রী হলেও, খুব ভালো মেয়ে। লেখা পড়া ছাড়া কিছু বুঝে না। জানো, মাঝে মাঝে আমারও খুব তদারকী করে। ঠিক মতো বাড়ীর কাজ করতে বলে।
মুনা চোখ গোল গোল করে বললো, তাই নাকি? তাহলে তো আরো কঠিন সমস্যা! আর দেরী করা উচিৎ হবে না। ওই যে, ওই যে অধরা যাচ্ছে। তুমি গিয়ে বলো, অধরা, গলপোটা আমি তোমাকে নিয়েই লিখেছিলাম। সবাই বুঝে ফেলবে বলে, দাঁতে গেঁজো আছে বলে লিখেছিলাম।
আমি বললাম, মুনা, তুমি মানুষ নিয়ে খেলতে খুব পছন্দ করো। আমি পারি না।
মুনা বললো, আহা হা, পারো না, না? পারবে পারবে! আমি যখন তোমাকে নিয়ে খেলবো, তখন ঠিকই পারবে। স্কুল ম্যাগাজিনের গলপোটা অর্ধেক ছাত্রছাত্রীদের অনুমান অধরাকে নিয়েই লেখা। বাকী অর্ধেক ছাত্রছাত্রীদের অনুমান আমাকে নিয়েই লেখা। তাহলে বুঝতে পারছো বুদ্ধু! ফলাফলটা কেমন হবে?
আমি মুনার চোখে চোখেই তাঁকালাম। বললাম, পারবো।
মুনা বললো, তাহলে যাও। এমন ভাব করবে যে, অধরা যেনো মনে করে, সত্যি সত্যিই তুমি ওকে ভালোবাসো।
 
২০
অধরার সাথে আমিও প্রতারণা করতে চাইনা। খুবই ভদ্র একটা মেয়ে। বাবার অবস্থান সামাজিকভাবে খানিকটা নীচু হলেও, খুবই সংস্কৃতিমনা, উন্নতশীল পরিবার। বিকেলে সব মেয়েরা যখন পাড়ার রাস্তাগুলোতে পায়চারী করে করে খুচুর খাচুর কিসব আলাপ করে, অধরা তখন একাকীই সময় কাটায়। মাঝে মধ্যে গত বার এর জন্মদিনে বাবার কাছ থেকে উপহার পাওয়া সাইকেলটা চালিয়ে একাকীই ঘুরে বেড়ায়।
চোখ দুটিতেও ভালোবাসার এক ধরনের সুপ্ত স্বপ্ন দেখার ছায়াও লক্ষ্য করা যায়। তবে তা কখনো মুখ ফুটিয়ে প্রকাশ করতে পারে না। কেনো যেনো মনে হয়, এই ধরনের মেয়েরা একবার কাউকে ভালোবেসে ফেললে, সহজে ভুলতে পারে না। বরং পড়ালেখা সব নষ্ট করে প্রেমের স্বপ্নঘর বাঁধার কথাই ভাবতে থাকে দিন রাত।

আমি অধরার পিছু পিছু এক পা এগুই, আর দু পা পিছাই। মুনাও আমার পেছনে পেছনে এগিয়ে আসতে থাকলো। কাছাকাছি পার্কটার ভেতর ঢুকে, বেঞ্চিটাতে ঠাই মেরে বসলো। তারপর, চোখ পাকিয়েই বললো, কি হলো বুদ্ধু?
আমি আমতা আমতা করেই বললাম, না মানে, যাচ্ছি তো।
মুনা বললো, যাও খোকা, আমার লক্ষ্মী সোনা। এমন ভাবে বলবে, যেনো অধরা সত্যি সত্যিই বিশ্বাস করে। বেশী দূরে যাবার দরকার নেই। এই পার্কের ভেতরই ফুসলিয়ে নিয়ে এসো। আমি এখান থেকে বসে বসে দেখছি।

মুনাকে কে না ভয় পায়। মুনা যাকে ধরে, তাকে একেবারে ছাগল বানিয়ে ছাড়ে। আমি আবারও এগুতে থাকলাম। মুনা পেছন থেকেই বললো, যদি পারো, তাহলে মজার একটা পুরস্কার অপেক্ষা করছে। আর যদি না পারো, তাহলে তো বুঝতেই পারছো। কদু ভর্তা! হ্যা!

কদু ভর্তা কেমন জিনিষ কে জানে? থাক, জানার দরকার নাই।
আমি অধরাকে নিয়ে পার্কের ভেতরই ঢুকলাম। অধরাকে একটু অন্য রকমই লাগলো। নুতন নুতন প্রেমে পরলে মেয়েরা যেমন করে। ভীরু ভীরু একটা ভাব। সব সময় মুখে যে মেয়ের কথার খই ফুটে, তার মুখে কোন কথা নেই। অধরা মাথা নীচু করেই হাঁটতে থাকলো। আমিও কোন কথা বলছিলাম না।

পার্কের লেকটার ধারে এসে, তার পার্শ্ববর্তী ধাপটার উপরই বসলো। তারপর মুখটা তুলে প্রণয় এর দৃষ্টি মেলে তাঁকিয়ে বললো, কি ব্যাপার? হঠাৎ পার্কে আসতে বললে।
আমি আমতা আমতাই করতে থাকলাম।

অধরা খুবই বুদ্ধিমতী মেয়ে। সে নিজে থেকেই বললো, থাক, বলার দরকার নেই। ওসব কথা যতদিন না বলা হয়, ততদিনই ভালো।
আমি বললাম, কোন সব কথা?
অধরা বললো, এই সবুজের কাছাকাছি এসে সবাই যা বলতে চায়। মানে ধরো, ফুল, পাখি এসব নিয়ে আর কি।
আমি বোকার মতোই হাসলাম। বললাম, ও হ্যা, হ্যা, ফুল পাখির কথা।



অধরা ধাপটার উপর থেকে নেমে দাঁড়ালো। চারিদিক তাঁকিয়ে আহলাদী গলায় বললো, এত সুন্দর একটা পার্ক! প্রতিদিন এর পাশ দিয়েই তো স্কুলে যাতায়াত করি। অথচ জানো, কখনো ঢুকা হয়নি। চলো না হাঁটি।
আমি বললাম, ঠিক আছে চলো।

অধরা প্রায় আমার গা ঘেষেই হাঁটছিলো। হাঁটতে হাঁটতে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে তার ডান হাতটা আমার দিকেই বাড়িয়ে দিচ্ছিলো। আমার বাম হাতটা ছুয়ে ছুয়ে যাচ্ছিলো। ভাব সাবটা এমনি যে, আমি যেনো তার হাতটা ধরি। দুজনে হাত ধরাধরি করেই হাঁটি। আমি খানিকটা দ্বিধা দ্বন্দের মাঝেই অধরার হাতটা চেপে ধরলাম। অনুভব করলাম, অধরার দেহটা হঠাৎই কেমন শিহরিত হয়ে, হাতটাও উষ্ণ হয়ে উঠলো মুহুর্তেই।
অধরা খানিক ছটফটও করতে থাকলো। জীবনে প্রথম পুরুষ ছোয়া পেলে মেয়েরা যেমনটি করে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, খোকা চলো, ওই বেঞ্চটাতে একটু বসি।
আমি অধরার নরোম হাতটা চেপে ধরে রেখেই বললাম, চলো।

অধরা বেঞ্চটার কাছাকাছি এসে, বেঞ্চটার উপর ডান হাতটার উপর মাথা রেখে লম্বা হয়েই শুয়ে পরলো। আমার দিকে খানিকক্ষণ স্থির চোখে তাঁকিয়ে থেকে বললো, জীবন যে এমনি সুন্দর কখনো জানিনি আগে।
একি? অধরাকে তো আমার কিছুই করতে হয়নি। সে তো আগে থেকেই আমার প্রেমে হাবু ডুবু খাচ্ছিলো। এতো মহা সর্বনাশ! আমার এখন কি করা উচিৎ? আমি বললাম, আগে জানোনি কেনো?
অধরা চোখ দুটি বন্ধ করে আকাশের দিকে মুখ করে বললো, জানার সুযোগ হয়নি তাই।
অধরার চেহারা ডিম্বাকার। ঠিক ডিমের মতোই। একটা ডিমের উপর চোখ নাক, ঠোট বসিয়ে দিলে যেমন দেখাবে। আমি এক নজর অধরার বুকের দিকেও তাঁকালাম। বেঞ্চিটার উপর চিৎ হয়ে শুয়েছিলো বলে, স্কুল ড্রেসের উপর দিয়েও তার উঁচু স্তন দুটিও মনে হলো ঠিক ডিম্বাকার।
 
২১
অধরা যে আমার একটি ডাকে, এতটা দুর্বল হয়ে পরবে, তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি বললাম, অধরা চলো, ফিরে যাই। দেরী করলে তোমাদের বাসায় আবার দুশ্চিন্তা করবে।
অধরা উঠে বসলো। বললো, কি ভাবছো খোকা? আমি তোমার প্রেমে পরে গেছি? মুনা যদি গাছের ডালে ডালে থাকে, তাহলে আমি থাকি পাতায় পাতায়। তুমি নিজ ইচ্ছায় আমাকে পার্কের ভেতর নিয়ে আসোনি। এনেছো মুনার ইশারায়। আমি জানি, মুনাকে তুমি ভয় পাও। তাই মুনার কাছে তোমাকে জয়ী করে দিলাম। চলো।
অধরা বিদায় নেবার সময়, আমার গালে একটা চুমু দেবার ভাব করে, কানে কানে বললো, মুনাকে বলবে তুমি আমাকে এমন পটিয়েছো যে, আমি একেবারে তোমার প্রেমে পরে রাতারাতি লাইলী হয়ে গেছি।
এই বলে অধরা অধরার পথেই চলে গেলো।

একি এক যন্ত্রনার মাঝে পরলাম। আমি খানিকক্ষণ রাস্তার পাশে স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর মুনাও ছুটে এলো। চোখে মুখে আনন্দের একটা আভা নিয়ে আমার সামনে এসেই দাঁড়ালো। বললো, এত দূর এগিয়ে গেলে? অধরা তোমাকে চুমুও দিলো?
তারপর, আহলাদী গলায় বললো, না না, এত বেশী এগুনো ঠিক হবে না। তোমাকে অবশ্য ব্যাখ্যা করে বলিনি। দোষটা আমারই। অভিনয়টা করতে এমনই যে, ধরি মাছ না ছুই পানি। চুমু দেয়া যাবে না। হাত ধরলেও ধরতে পারো।
আমি আর মুনা রেল ক্রসিংটা পর্য্যন্ত এগুলাম। হরবর করে মুনা অনেক ব্যাখ্যাই করলো। আমি বললাম, বলেছিলে কি পুরস্কার দেবে?
মুনা বললো, হুম চোখ বন্ধ করো।
আমি চোখ বন্ধ করলাম। আমার ঠোটে নরোম একটা স্পর্শই অনুভব করলাম। আমি জিভটা বের করে, সেই নরোম এর স্বাদটা নিতে চাইলাম। আমি অনুভব করলাম, ভেজা একটা স্পর্শ। আমি চুষতে থাকলাম, মুনার ভেজা জিভটা, আর তার ঈষৎ ফুলা নরোম ঠোটগুলো।
অপূর্ব মুনার ঠোট, মুনার জিভের স্বাদ। মুনার কাছ থেকে এর চাইতে বড় পুরস্কার আর কি আশা করা যেতে পারে?


একটা দীর্ঘ চুমুর পর, মুনাও বিদায় নিতে চাইলো। ফিরে যাবার আগে, পেছন ফিরে আবারো বললো, যা যা বলেছি, ঠিক ঠিক মনে থাকে যেনো। নইলে, বুঝতেই তো পারছো। একেবারে কদুর ভর্তা।
আমি মনে মনে বললাম, না জানি কোন শনির দুর্দশা আছে আমার কপালে! তবে, মুখে বললাম, হ্যা মনে থাকবে।

মুনা বাড়ী ফিরতে থাকলো চঞ্চলা পায়ে, আনন্দে লাফাতে লাফাতে। অন্যদিকে আমি ফিরছিলাম উদাস মনে।
আমি উদাস মন নিয়ে বাড়ী ফিরে না গিয়ে, এগুলাম সেই জেলে পাড়ার দিকে। চোখ দুটি তীক্ষ্ম করে করে এদিক সেদিক তাঁকাতে থাকলাম।
সেদিন এই পথেই মেয়েটি ফিরে গিয়েছিলো। এদিকটাতেই কোন একটা বাড়ী হবে। আমি গলির ভেতর ঢুকে প্রতিটি বাড়ীতেই উঁকি দিতে থাকলাম, যদি সেই মেয়েটির দেখা আবারো পাই।

তিনটি বাড়ীর পরই বেড়ার ফাঁকেই দেখলাম, বেড়াটা ধরে হাঁটু গেড়ে বসে চুপি দিয়ে তাঁকিয়ে আছে সেই মেয়েটি। ভীরু ভীরু চোখ। মেয়েটিকে দেখা মাত্রই আমার মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। নিজের অজান্তেই বললাম, এই তো তুমি! তোমাকেই তো খোঁজছি!
মেয়েটি ঘাড় কাৎ করে এক দৃষ্টিতেই আমার দিকে তাঁকিয়ে থাকলো বিস্ময় নিয়ে। কি সুন্দর চোখ! আর কি সুন্দর ঠোটের গড়ন! আমি বললাম, কি নাম তোমার?
মেয়েটি ভীরু ভীরু গলায় বললো, চান্দা।
আমি বললাম, খুব সুন্দর নাম। তুমিও ঠিক চাঁদের মতোই সুন্দর!

ঠিক তখনই মেয়েটা হাসলো দাঁত বেড় করে। কি অপরূপ এক হাসি। আমার মাথাটাই খারাপ করে দিলো মেয়েটির অপরূপ সেই গেঁজো দাঁত। আমি আবেগ আপ্লুত হয়েই বললাম, হাসলে তোমাকে ঠিক চাঁদের মতোই লাগে। খুব সুন্দর দাঁত তোমার। আমার বন্ধু হবে?
মেয়েটি কিছুই বললো না। ফ্যাল ফ্যাল করেই তাঁকিয়ে রইলো আমার দিকে। আমি বললাম, না হতে চাইলে নাই। আমার নাম খোকা। এই সমুদ্র পার ধরে, ওই যে পাহাড়টা দেখছো, ওটার অপর পাশেই আমাদের বাড়ী। আমি আবারো আসবো। তাহলে আজকে আসি।
মেয়েটি বললো, খালি মুখে গেলে অমঙ্গল হবে। একটা নাড়ু খেয়ে যাও।
আমি বললাম, নাড়ু? ঠিক আছে।
মেয়েটি দৌড়েই বাড়ীর ভেতর ঢুকে, নাড়ুর ভর্তি প্লাষ্টিক এর একটা মোটা বোতল নিয়ে হাজির হলো আমার সামনে।
 
২২
জেলে পাড়ার সেই মেয়েটির সাথে দেখা হতে, এত আনন্দ লেগেছিলো যে, আমি খুশীতে পাখির মতোই উড়তে উড়তে ফিরছিলাম। তবে, মনের মাঝে একটা প্রতিশোধ এর আগুনও জ্বলছিলো। তা হলো হেনাকে নিয়ে। ডাক্তার এর মেয়ে। কি এত অহংকার তার? আমাকে কি অপমানটাই না করলো সেদিন। হেনাকে আমি এমন ফাঁদে ফেলবো যে, সারা জীবন শুধু আমার কথাই স্মরণ করবে।

আমি ফেরার পথে হেনাদের বাড়ীতেই ঢুকলাম। খুবই ফ্যাশন প্রিয় হেনা। সেদিনও তার পরনে দামী ব্র্যাণ্ডের পোশাক। পোশাক বুঝি মেয়েদের আরো বেশী সুন্দরী করে তুলে। হেনাকেও আরো বেশী সুন্দরী লাগছিলো। চুলগুলোও সুন্দর করে গুছিয়ে মাথার ইষৎ উপরের দিকেই খোপা বাঁধা।
উঠানেই বসেছিলো। কামিজটার গল ঈষৎ প্রশস্তই। স্তন দুটির ভাঁজ আবছা আবছা চোখে পরছিলো। আমাকে দেখা মাত্রই ফোশ করে উঠলো সাপের মতোই। বললো, আবারো তুমি?
আমি বললাম, তোমার কাছে আসিনি, এসেছি তোমার বাবার কাছে।
হেনা অবাক হয়ে বললো, হুয়াট? বাবার কাছে? বিয়ের প্রস্তাব দেবে নাকি?
আমি বললাম, কি যে বলো? হঠাৎই গা টা গরম গরম লাগছে। জ্বর টর হয়েছে কিনা কে জানে? তোমার বাবা তো ডাক্তার, তাই আর কি।

হেনা চোখ দুটি বন্ধ করে খানিকক্ষণ ঝিম মেরে রইলো। তখন হেনার ঠোটগুলো আরো বেশী অপূর্ব লাগে। বিশেষ করে নীচ ঠোটটা। ঈষৎ ফুলা, গোলাপী। মনে হয় খুব স্বাদ এর রসে ভরপুর। হেনা হঠাৎই ঝিণ্ডি মেরে বললো, খোকা, তোমার নিন্দা করার ভাষাও আমার নেই। বাবা কি বাড়ীতে বসে ডাক্তারী করে? হয় হাসপাতালে যাও, না হয় কোন ডাক্তার এর চ্যাম্বারে যাও। আমাদের বাড়ীতে কেনো?
আমি খানিকটা অপ্রস্তুতই হয়ে গেলাম। বললাম, না মানে তাই উচিৎ ছিলো। ভাবলাম, তোমার বাবাও তো ডাক্তার। ডাক্তার এর মেয়ে হিসেবে তুমিও তো ডাক্তারীর কিছু কিছু জানতে পারো। তাই আর কি?
হেনা রাগে ফুলতে থাকলো। কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে রইলো। তারপর বললো, ডাক্তার এর মেয়ে আমি, আমিও ডাক্তারী জানি। তরে কইছে? আয়, আমার কাছে আয়।
আমি এক পা পিছিয়ে গিয়ে বললাম, মানে? মারবে না তো?
হেনা বললো, না আদর করবো। পারলে একটা চুমুও দেবো। আয় না। ডাক্তারী কেমন পারি, তোকে একটু দেখিয়ে দিই।
আমি আমতা আমতা করেই বললাম, না মানে, স্যরি। আমার জ্বর ভালো হয়ে গেছে। এখন আসি?

হেনা হঠাৎই শান্ত গলায় বললো, খোকা, কুইনাইন জ্বর সারায়, কিন্তু কুইনাইন কেউ সারাতে পারে না। তোমার জ্বর ভালো হয়ে গেছে বুঝলাম। কিন্তু প্রতিদিন আমার কাছে আসো, নিশ্চয়ই তোমার একটা মতলব আছে।


আমি বোকার মতোই হাসলাম। বললাম, মতলব? মতলব থাকবে কেনো? আসলে, তোমার দাঁত কেমন খুব জানতে ইচ্ছে করে। কখনো হাসো না তো, তাই দেখার সুযোগটা হয়নি।
হেনা বললো, যদি দাঁত বেড় করে হাসি, তাহলে কি খুশী হবে? আমাকে আর এমন করে বিরক্ত করবে না তো? তুমি যদি খুশী হও, তাহলে জোড় করে হলেও জীবনে একবার হাসবো। শুধু তোমার জন্যে।
আমি অবাক হয়েই বললাম, আমার জন্যে হাসবে? তাও আবার জীবনে একবার?
হেনা মন খারাপ করেই বললো, জানো না, আমি কেনো হাসতে পারি না।
বাইরে থেকে একটা মানুষকে দেখে, অনেক কিছুই বুঝা যায় না। হেনাকেও আমি বুঝতে পারি না। হেনা উঠে দাঁড়ালো। উঠানের অপর প্রান্তের দিকেই এগুতে থাকলো। হঠাৎই থেমে দাঁড়িয়ে বললো, আমার মা নেই। না মানে, থেকেও নেই।
আমি বললাম, স্যরি, আমি জানতাম না।
হেনা বললো, লেখিকা শবনম রোজীর নাম শুনেছো? অনেক দুর্নাম আছে। তারপরও এক শ্রেণীর পাঠক পাঠিকার কাছে খুবই সমাদৃত। উনি আমার মা।

লেখিকা শবনম রোজীর নাম শুনবো না কেনো? অনেক দুর্নাম যে আছে তাও মিথ্যে নয়। এক নামকরা ধনীর যুবক ছেলে তো তার লেখা পড়ে প্রেমে পরে গিয়েছিলো। প্রেম নিবেদনও করেছিলো। শবনম রোজীও ছেলেটিকে ভালোবেসেছিলো। অথচ, শবনম রোজী শুধু সেই ছেলেটিকেই নয়, আরো একজন তরুন কবির প্রেমেও পরেছিলো। শেষ পর্য্যন্ত ধনীর যুবক ছেলেটি আত্মহত্যা করেছিলো। এসব পত্রিকার শিরোনাম আর সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন এ পড়া।
আমি বললাম, স্যরি হেনা, এসব এর আমি কিছুই জানতাম না।
হেনা বললো, বাবার মতো এমন নামকরা ডাক্তার কত কষ্টে এমন এক সমুদ্র এলাকায় ডাক্তারী করছে কেনো, তা তুমি বুঝবে না। রাজধানীতে বিশাল বাড়ীতেই আমরা থাকতাম। সব কিছুর মায়া ছেড়ে দিয়ে, আমি আর বাবা এখানে চলে এসেছি। তারপরও কি তুমি আমাকে হাসতে বলবে?
 

Users who are viewing this thread

Back
Top