What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected চোখ (The Eye) (1 Viewer)

Able31

Community Team
Elite Leader
Joined
Sep 21, 2021
Threads
25
Messages
5,640
Credits
31,899
Mosque
Automobile
Mosque
Audio speakers
Watermelon
Thermometer
গল্প: চোখ
লেখক: হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ


মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেংগে গেলো সিয়ামের। কানের ঠিক নিচের অংশে হালকা ব্যাথা করার সাথে সাথে একটু চুলকাচ্ছে তার।
নখ দিয়ে হালকা চুলকাতেই তার হাতের বেশ অনেকটা জায়গা চিটচিটে এক তরলে ভিজে গেলো।
সিয়াম শোয়া অবস্থা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসে। বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দ্রুত টর্চ জ্বালায়।
হাতের তালুতে টর্চ ফেলতেই অবাক না হয়ে পারেনা। রক্তে তার হাত মাখামাখি হয়ে আছে। তবে টকটকে লাল রক্ত নয়। অনেকটা টমেটো সস এর মত।
সিয়াম একটু অবাক হয়ে কানের নিচের অংশে আবারো হাত দেয়।সাথে সাথে আরো বেশি চুলকানি শুরু হয়। একদম সিয়ামের সহ্য ক্ষমতার বাইরে। দিগবিদিক হারিয়ে সে কানের নিচে অনেক জোরে চুলকাতে আরম্ভ করে। তার মাঝারি সাইজের নখ মাংসের ভেতরে ঢুকে যায়। ব্যাথায় কুঁকড়ে ওঠে সিয়াম। রুমের লাইট জ্বালিয়ে দৌড়ে আয়নার কাছে চলে যায়। কানের নিচের অংশটা রক্তাক্ত হয়ে আছে। টিস্যু পেপার দিয়ে রক্ত মুছে দেয়ার সাথে সাথেই ভয়ানক একটা চিৎকার করে ওঠে সিয়াম।
তার কানের নিচে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট সাদা চোখ। চোখগুলোর আকৃতি ঠিক টিকটিকির চোখের মত। ভেতরের কালো মনিগুলো যেনো সিয়ামের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। এর মাঝেই সে তার নাভীর নিচেও একই রকম চুলকানি অনুভব করে। সিয়াম নখ দিয়ে নাভীর নিচে চুলকানোর সাথে সাথে সেখানেও চামড়া ভেদ করে জন্ম নেয় একগাদা ছোট চোখ।ঘটনার অস্বাভাবিকতা মিতে না পেরে
সিয়াম মাটিতে বসে পরে। তার সমস্ত গা, নাকমুখ সবকিছুই চুলকাচ্ছে। ভীষন চুলকাচ্ছে।
.
.
.
জাকির সাহেব,খুব গম্ভীর একজন মানুষ।
তিনি একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। মাদ্রাসার শিক্ষকরা এমনিতেই মুখ ভার করে থাকেন। ইচ্ছে না-করলেও তাঁদের গম্ভীর থাকতে হয়।ফাহাদ যে বাসায় ভাড়া থাকে, তিনি সেই বাসার মালিক।ফাহাদকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। তবে পৃথিবীতে স্বার্থের বাইরে কোনো কিছুই নয়।ফাহাদের প্রতি তার অতিরিক্ত দরদের একটা কারণ আছে। দুই রুমের একটা ফ্লাট ভাড়া নিয়ে থাকলেও ফাহাদ একা মানুষ হওয়ায় একটা খালিই পরে থাকে।
ইদানীং জাকির সাহেব ফাহাদের ফ্লাটের খালি রুমটার দখল নিয়েছেন।
রুমের সাথের লাগোয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে তিনি আয়েশ করে সিগারেট টানেন।সিগারেট খাওয়ার জন্য নিরাপদ জায়গা এই রুম ব্যাতিত আর কোথাও নেই তার। আশেপাশে জাকির সাহেবের বেশ ভালো-ই নামডাক।একেবারে পরিচিত মুখ। কোথাও দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালেই তার ছাত্ররা দেখে ফেলবে বা বাসায় খবর চলে আসবে।এই ভয়ে তিনি বাইরে সিগারেট খান না।
জাকির সাহেব সিগারেট খেয়েছেন, এমন খবর যেদিন ওনার বৌ জানতে পারে সেদিন ওনার বাসা থেকে পুরুষ নির্যাতনের করুণ আওয়াজ পাওয়া যায়। বাবা মায়েরা ছোট ছেলেদের মারধোর করলে যেমন চিৎকার দিয়ে কান্না করে, বৌয়ের হাতের মার খেয়ে জাকির সাহেবও তেমনি চিৎকার করে করে কান্না করেন। করবেনই বা না কেনো! একবার শুনেছিলাম শিলপাটায় হাত রেখে আঙুলের উপর পুতা দিয়ে আঘাত করেছে আঙুলই থেঁতলে দিয়েছিলো তার বৌ।
বিয়েটা প্রেমের হলেও তিনি তার বউকে এখন একদম ই সহ্য করতে পারেন না৷
ফাহাদের কাছে এসে বৌ এর বহুমাত্রিক বদনামে লিপ্ত হন তিনি। তার কথা ফাহাদ মনোযোগ দিয়ে শোনে৷
তার ভাষ্যমতে ফাহাদ খুবই চালাক এবং বুদ্ধিমান।তিনি যেমনটা ভাবেন, অত না হলেও ফাহাদ একটু চালাক এবং বুদ্ধিমান তো অবশ্যই। জাকির সাহেবের মেয়ে রিয়ার সাথে যে ফাহাদের বেশ অনেকদিনের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে সেটা খুব কাছাকাছি থেকেও টের পান নি জাকির সাহেব।
অবশ্য জাকির সাহেব এখন নিজেকে নিয়ে খুব ব্যস্ত।
মাঝে মাঝে মহাজাগতিক চিন্তায় পরে যায় ফাহাদ।
রিয়া যদি ওর মায়ের মত স্বভাবের হয়,বিয়ের পর হয়ত তাকেও পুরুষ নির্যাতন সহ্য করতে হবে।
.
.
.
.
.
ডাঃ স্যামুয়েলের সাথে দেখা করার জন্য লম্বা লাইনের শেষ মাথায় বসে আছে সিয়াম। তার কান একটা মাফলার দিয়ে প্যাঁচানো। এই গরমেও মাফলার পেঁচিয়ে রাখতে দেখে সিয়ামের দিকে অনেকেই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। সিয়ামের কাছে বিষয়টি খুব ই খারাপ লাগছে। তবে এই গরমে সিয়াম যদি মাফলার পেঁচিয়ে কান পর্যন্ত ঢেকে না আসতো, তবে লোকজন আরো অদ্ভুত দৃষ্টিতে সিয়ামের দিকে তাকাতো।
একে একে সব রোগী দেখা হয়ে গেলে ডাঃ স্যামুয়েলের পি এ সিয়ামকে তলব করে।চেম্বারে ঢোকার পরে সিয়ামকে দেখে অন্য সবার মত ডাঃ স্যামুয়েল অবাক হননি।নাম-করা চর্মরোগের ডাক্তার তিনি।
বেশ কয়েকবছরের অভিজ্ঞতায় অনেক অদ্ভুত সব ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। মুখমণ্ডল চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়াটা খুব জটিল বিষয়। মানুষ মুখ দেখাতে লজ্জা পায়।
একবার তো এক লোক বোরকা পড়ে নিকাব বেঁধে এসেছিলো তার চেম্বারে। চেহারা ঘেমে ঘুমে একদম নাজেহাল অবস্থা।ডাঃ স্যামুয়েল সেদিন দোটানায় পরে যান, হাসবেন! নাকি দুঃখ প্রকাশ করবেব।
যাই হোক, সিয়াম এসে বসে ডাঃ স্যামুয়েলের সামনের চেয়ারে।
ডাঃ স্যামুয়েল - কি নাম আপনার?
- সিয়াম।
- পুরো নাম?
- সিয়াম মেহরাব।
- বয়স?
- একুশ।
- কি সমস্যা নিয়ে এসেছেন?
- কাল মাঝরাতেই হঠাৎ আমার ঘুম ভেংগে যায়৷ কানের নিচে ব্যাথার সাথে সাথে চুলকাচ্ছিলো। আমি সেখানে হাত দিয়ে চুলকাতেই অনেকগুলো ছোট চোখ গজিয়ে ওঠে।
কথাটা শুনে ডাঃ স্যামুয়েল তেমন কোনো রিয়েকশন দিলেন না। তিনি ধারণা করেছিলেন ফোঁড়া টাইপ কিছু হবে। যেটাকে সিয়াম চোখ বলছে..
তিনি স্বভাবিক গলায় বললেন, কোথায় দেখি!
সিয়াম বললো- স্যার, প্রথমে শুধু কানের নিচে চুলকানি ছিলো। এরপর নাভীর নিচে, এরপর আমার পুরো নাকমুখ চুলকাতে শুরু করে। আমি নখ দিয়ে চুলকাতেই সেখানে চোখ উঠে যায়৷
ডাঃ স্যামুয়েল হালকা বিরক্ত হয়ে বললেন,মাফলার সরিয়ে ক্ষতস্থানটা দেখাও।
সিয়াম মাফলার খুলে ফেললো। তার দিকে তাকিয়ে ডাঃ স্যামুয়েলের চোখ যেন বিস্ফোরিত হয়ে গেলো। বুকের ভেতরে কাঁপন ধরেছে তার।
তার সামনে এমন একজন মানুষ বসে আছে,
যার গালের বিভিন্ন জায়গায় কয়েক ইঞ্চি জুড়ে শুধু ছোট ছোট গোল গোল চোখ আর চোখ, কিলবিল করছে, নড়াচড়া করছে।
যেন চামড়া ফুঁড়ে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে, আসতে পারছে না।
ডাঃ স্যামুয়েল এমন দৃশ্য কখনো কল্পনাও করেন নি৷ হঠাৎ করেই তার ভেতর অজানা একটা ভয় কাজ করতে শুরু করলো।
সিয়াম বললো আমার পেট, বুক, রান, পা সব জায়গাতেই এমন চোখ জন্ম নিয়েছে।
গ্লাভস পড়ে কাঁপা কাঁপা হাত তিনি সিয়ামের গালের দিকে নিয়ে গেলেন। চোখ যেখানে যেখানে জন্মেছে তার আশপাশের মাংসে হালকা চাপ দিয়ে দেখতে লাগলেন। গল গল করে কিছু রক্তযুক্ত পুঁজ বের হয়ে বেয়ে বেয়ে পড়তে লাগলো। সিয়ামের চোখ থেকে পানি ঝড়ছে। স্যামুয়েল সাহেব আর নিতে পারলেন না বিষয়টি। তিনি সিয়ামকে বললেন তুমি নখ দিয়ে আর কোথাও চুলকানোর চেষ্টা করো না। আজ বাসায় চলে যাও। কাল তোমার এ সমস্যার চিকিৎসা শুরু করব। তবে তুমি আমার চেম্বারে না। বাসায় এসো।
একটা কাগজে ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর লিখে দিলেন ডাঃ স্যামুয়েল।
সেদিন আর তিনি কোনো রোগী দেখলেন না। চেম্বার থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা চলে গেলেন বাসার উদ্দেশ্যে।
যাওয়ার পথে তিনি রোজ একটা জায়গায় গাড়ি থামান। গাড়ি থেকে নেমে একটা সিগারেট, একটা চা খান৷ আজও নামলেন।
যে সিগারেট বিক্রি করে তার নাম জগলু। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। জীবনে এমন কোনো পাপ কাজ নেই যে জগলু করেনি। এখনো সুঠাম দেহের অধিকারী। দারাজ কন্ঠস্বর। হুংকার দিলে সুন্দরবনের বাঘের মত শুনায়৷তাকে আজ বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। মুমূর্ষু দেখাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে তার ভেতরটা মরে গেছে,বাহিরটা জীবিত আছে। সিয়ামের চেহারা দেখার পরে ডাঃ স্যামুয়েল তখনো স্বাভাবিক হননি। তবুও স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে তিনি কাঁপা কাঁপা গলায় জগলুকে বললেন, কি ব্যপার জগলু? তোমার মন খারাপ কেনো?
- জগলু আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
ভাইজান, জীবন আর জীবন নাই।
কেনো কি হয়েছে জগলু?
ভাবছিলাম আর পাপ কাম করমু না। কিন্তু একটা পাপ কাম কইরা ফালাইছি ভাই। এই পাপের ধকল থাইক্যা আর উঠতে পারমু না।
- কি করেছো তুমি?
- আমার পোলাডারে এতিম বানাইয়া দিলাম ভাই।
- মানে?
জগলু নিশ্চুপ হয়ে গালে হাত দিয়ে বসে থাকে।
ডাঃ স্যামুয়েল জানেন এখন জগলুকে প্রশ্ন করেও আর লাভ হবেনা। সে উত্তর দিবেনা। বড় কোনো অপরাধ করার পরে সে মাঝে মাঝেই এমন উদাস হয়ে বসে থাকে। কি করেছে জিজ্ঞেস করলেই আর উত্তর দেয়না। তবে তার ছেলেকে এতিম বানিয়ে দিয়েছে এটুকু তো বলেছে, এর মানে কি সে তার বৌ কে খুন টুন করে ফেললো নাকি!
ডাঃ স্যামুয়েলের খুব আগ্রহ জাগে জানার। কিন্তু তার এখন মাথা ঘুরাচ্ছে। দোকানের বিল দিয়ে সে দ্রুত তার গাড়িতে চেপে বাসায় এসে পড়ে।
অনলাইনে সিয়ামের সমস্যাটা নিয়ে প্রচুর ঘাটাঘাটি করে সে।
কিন্তু তেমন কোনো সুরাহা করতে পারে না। বই পুস্তক নিয়ে ঘাটতে ঘাটতে বেশ রাত হয়ে যায়৷ ক্ষুধা লাগে ডাঃ স্যামুয়েলের। কর্মজীবনের ব্যস্ততায় বিয়েটা আর করা হয়ে ওঠেনি তার।
মাঝে মাঝে একজন স্ত্রীর প্রয়োজন বোধ করেন তিনি।
ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে
ফ্রীজে রাখা খাবার গরম করে খেতে বসে যান।
খাওয়ার অর্ধেক পথে হঠাৎ করে মনে পড়ে যায় সিয়ামের গালে কিলবিল করতে থাকা চোখের কথা,গাল চাপ দেয়ার সাথে সাথে বের হওয়া পুঁজের সাথে রক্তের কথা।
গলা উগড়ে বমি আসে তার। কয়েকবার ওক ওক করে বমি করে দেন ডায়নিং টেবিলের উপরেই।
নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ডাঃ স্যামুয়েল ।
রক্তবমি হয়েছে তার। বমির সাথে বের হয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট চোখ।

#পর্ব: ১
 

Users who are viewing this thread

Back
Top