What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সিরিজা - একটি উপন্যাস (1 Viewer)

এমন কাহিনী এখন আর লেখা হয়না এটি বলবো না । কিন্তু খুউব কম ।
 
তৃতীয় অধ্যায়
।। সতেরো ।।


দরজা খুললো দিবাকর। চোখের সামনে রজতকে দেখবে কি? যাকে দেখলো তাকে দেখে চরম বিরক্তি ফুটে উঠলো দিবাকরের। ওফঃ আবার? এই তো সকালে এসেছিল। আবার এসেছে বুড়োটা? এ তো দেখছি জ্বালিয়ে খেল একেবারে।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রজতের শ্বশুড়। বুড়ো শ্বশুড় আবার এসেছে। আবার সাথে কাকে এনেছে? শ্বশুড় মশাইয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে এক ভদ্রমহিলা। পরণে শাড়ী। গায়ের রঙ ফর্সা। দেখতে খারাপ নয়। ইনি কে? রজতের স্ত্রী? কেলেঙ্কারী করেছে। এমন অসময়ে আগমন ঘটিয়ে ফেললো। তাও আবার দুজনে একসাথে? রজত ঘরে নেই এখন কি হবে? একটু আগে রেগে ওঠা দিবাকরের এবার দাঁতগুলো ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো। ওর মনে হলো সিরিজাকে একটু আগে রাগটা না দেখালেই ভালো হতো। ও যদি এখন মিছিমিছি দিবাকরের স্ত্রী হতে বেঁকে বসে? সর্বনাশ করেছে।

- "আপনারা?"

ভদ্রলোক বেশ কর্কশ গলায় বললেন, "আপনি কে?"

- "আমি? আমি, আমি রজতের বন্ধু।"

-- "ও তারমানে আপনি এখনও আছেন দেখছি।"

- "হ্যাঁ।"

-- "সকালে তো আমি এসেছিলাম। রজত বললো, আপনি নাকি স্ত্রী নিয়ে কাল রাতে ওর বাসায় এসেছেন। গভীর নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন আপনারা। রজত কিছুতেই আপনাদের ডিস্টার্ব করতে চাইল না। যে কাজে এসেছিলাম, সেটা না করেই আমাকে ফিরে যেতে হলো। তা সে ব্যাক্তি এখন কোথায়? তাকে ডাকুন। আমি মেয়েকে নিয়ে এসেছি। কাজটা সেরেই চলে যাবো।"

- "কিন্তু রজত তো এখন নেই।"

-- "কোথায় গেছে?"

- "অফিসে।"

-- "কখন ফিরবে?"

দিবাকর বোকার মতন বলে ফেললো, "এই একটু পরেই। আমাকে থাকতে বলেছে। তাই রয়ে গেছি।"

-- "ও তাহলে তো ঠিকই আছে। আমরা বরং রজতের জন্য ইসিলি ওয়েট করতে পারি। আপনি বরং ওকে ফোন করে খবর দিন, আমরা এসেছি।"

দিবাকর আমতা আমতা করছিল। শ্বশুড় মশাই আর কোনো সুযোগ না দিয়েই মেয়েকে নিয়ে ঢুকে পড়লো ঘরের ভেতরে।

যেন কাল থেকেই শুধু নাকানি চোবানি খেয়ে চলেছে দিবাকর। এর আর শেষ হচ্ছে না। প্রথমটা হয়েছিল নিজের দোষে। মাল খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে একটা কেলেঙ্কারী বাঁধিয়ে দিচ্ছিল। তারপরে শুরু করলো রজত। রজতের পরে সিরিজা। এখন শুরু করেছে রজতের শ্বশুড় মশাই। ওফ! এর থেকে কি আর রেহাই নেই?

দিবাকর কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললো, "আপনারা বসবেন? ঠিক আছে বসুন। আমি দেখছি রজতকে ফোনে ধরা যায় কিনা?"

শ্বশুড় মশাই সোফায় বসল। রজতের স্ত্রী গটগট করে শোবার ঘরের দিকে চলে যাচ্ছিলো। দিবাকর ওকে বাধা দিয়ে বললো, "দাঁড়ান দাঁড়ান। ওঘরে যাবেন না।"

-- "কেন?"

- "মানে....."

-- "আপনার স্ত্রী আছে তো ভেতরে? ঠিক আছে, অসুবিধার কি আছে? আমি খালি আলমারীটা খুলে কাপড় চোপড় গুলো বার করে নেব।"

দিবাকরকে পাত্তা না দিয়েই ও আবার শোবার ঘরের দিকে যাচ্ছিলো। দিবাকর কোনোরকমে পথটা আড়াল করে ওর স্ত্রীকে বাঁধা দিয়ে বললো, "একটু দাঁড়ান, একটু দাঁড়ান। ও আছে তো ভেতরে। আমি বরঞ্চ ওকে ডেকে তুলি। খোলামেলা ভাবে শুয়ে আছে হয়তো। আপনার নিজেরই খারাপ লাগবে। লজ্জা পাবে ও। তাই একটু বসুন। একটু বসুন। আমি সব ব্যাবস্থা করছি।"

রজতের বউটা দজ্জাল না হলেও বেশ বদমেজাজী। দিবাকরকে চোখ রাঙিয়ে বললো, "আর কেউ নেই তো ভেতরে? রজত?"

- "না না, ওতো অফিসে গেছে। ভেতরে আমার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই।"

কোনরকমে দিবাকরের কথাটা বিশ্বাস করে রজতের বউটা তখন ওর বাপের পাশে গিয়েই বসল। দিবাকর একবার তাকাল শোবার ঘরের দিকে। ওর গায়ের রক্ত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো। এই মূহূর্তে হূট করে কিছু না বুঝে সিরিজা যদি এঘরে চলে আসে তাহলেই মুশকিল।

রজতের বউকে ঠান্ডা করার জন্য বললো, "আপনি বসুন। আমি দেখছি, ওকে জাগিয়ে তুলছি।"

চোখে মুখে একটা টেনশন্ নিয়ে শোবার ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিলো দিবাকর। সিরিজাকে যে করেই হোক রাজী করাতে হবে।

রজতের বউ রীতা পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, "শুনুন।"

দিবাকর আবার দাঁড়িয়ে পড়লো।

-- "আপনার স্ত্রী কি সত্যি ঘুমোচ্ছেন?"

- "হ্যাঁ বোধহয়। আপনি বসুন। আমি দেখে আসছি।"

-- "ঠিক আছে, ঠিক আছে। ওনাকে জাগাতে হবে না। আমরা বরং রজতের জন্যই অপেক্ষা করছি।"

চালু আছে বউটা যেন দিবাকরকে কিছু শেখাতেও দেবে না। এমন পরিস্থিতির চাপে পড়েছে দিবাকর যেন মাথা দিয়ে কোনো বুদ্ধিও বার হচ্ছে না। ও তবু শোবার ঘরে ঢুকে গেল রজতের বউ এর কথা না শুনে। দেখলো সিরিজা বসে আছে যথারীতি খাটে। দিবাকরকে অবাক করে দিয়ে সেই তুমি তুমি করেই বললো, "আমি সব বুঝতে পেরেছি। ওর বউ এসেছে বাপ কে নিয়ে। আমি এখন ওঘরে যাবো না। বল আমি অঘোরে ঘুমোচ্ছি। ওদের বরং রজত না আসা অবধি অপেক্ষা করতে বল। রজতই এসে ওদের সামলাবে। আমি এখন সন্দেহ কাটাবার জন্য তোমার বউ সাজতে পারবো না। ওসব অভিনয় টভিনয় আমার দ্বারা হবে না।"

-- "কিন্তু সিরিজা, ওরা যদি সন্দেহ করে?"

- "করে করুক। আমি বলেছি না। এসব ঝেমেলা সামলানোর দায়িত্ব রজতের, আমার নয়।"

বেগতিক দেখে দিবাকর সিরিজাকে অগত্যা বললো, "ঠিক আছে, তুমি বরং এ ঘরে চুপটি করে শুয়ে থাক। আমি ওদের কে সামলে নিচ্ছি।"

বিছানায় পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো সিরিজা। দিবাকরকে যাবার আগে বললো, "দরজাটা হাট করে খুলে যেও না। আলতো করে ভেজিয়ে দিয়ে যাও। আর দেখ ওর বউ যেন এঘরে ঢুকতে না পারে।"

বসার ঘরে বাপ বেটি একসাথে বসে আছে। দিবাকর শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে একটা বোকার মতন হাসি দিল ওদের সামনে। মাথাটা হাত দিয়ে চুলকোতে চুলকোতে ওদের দুজনকে বললো, "সিরিজাকে ডাকলাম। ও অঘোরে ঘুমোচ্ছে। উঠলো না কিছুতেই। আপনাদের কথাটা বলতেই পারলাম না।"

-- "সিরিজা?" - রজতের বউটা দিবাকরকে বললো, "বাব্বাহ, আপনার বউ এর নামটাতো অদ্ভূত। এমন নাম শুনিনি কখনও আগে।"

বাবাও মেয়ের সাথে ফোড়ন কেটে বললো, "অসময় ঘুমোচ্ছে কেন? রাত জেগেছে নাকি? সকালেও তো এসে দেখলাম ঘুমোচ্ছে।"

- "হ্যাঁ ওর শরীরটা একটু খারাপ তো তাই।"

-- "ও আচ্ছা আচ্ছা।"

দিবাকর ওদের সামনে বসল। রজতের বউ রীতা বললো, "আপনি ওর কদিনের বন্ধু? আগে তো শুনিনি ওর মুখে।"

- "আমি? আমি অনেক দিনের? সেই ছোটোবেলা থেকে।"

-- "ছোটোবেলার বন্ধু? আপনাকে তো বিয়েতে দেখিনি।"

- "বলেছিল তো। বলেছিলো। আমিই আসতে পারিনি। আসলে ওর বিয়ের সময় আমি এখানে ছিলাম না।"

-- "আর আপনার বিয়ে?"

- "আমার বিয়ে?"

-- "হ্যাঁ। ওর আগে হয়েছে না পরে?"

টেনশন কাটানোর জন্য দিবাকরের একটা সিগারেট ধরাতে ইচ্ছে করছিল। শ্বশুড় মশাই এর অনুমতি চেয়ে ও বললো, "আমি একটা সিগারেট ধরাব?"

-- "হ্যাঁ হ্যাঁ খান। অসুবিধে নেই।"

দিবাকর সিগারেটটা ধরালো। যেন একটু স্বস্তি এল। শ্বশুড় মশাই ওকে বললো, "আপনি রজতকে ফোন করুন। দেখুন অফিস থেকে বেরিয়েছে কিনা? আমাদেরও তো কাজ সেরে ফিরতে হবে।"

- "হ্যাঁ হ্যাঁ। এই করছি।"

এক চান্সেই লাইন পেয়ে গেল দিবাকর। ফোনটা কানে নিয়ে রজতকে ও বললো, "আমি দিবাকর বলছি।"

-- "হ্যাঁ হ্যাঁ বলো।"

- "তোমার আর কত দেরী?"

-- "এই তো আসছি আর একটু পরে।"

- "অফিস থেকে বেরিয়েছো?"

-- "হ্যাঁ বেরিয়েছি। সিরিজার জন্য একটা ভালো শাড়ী কিনছি দোকান থেকে।"

- "শাড়ী?"

রজত ও প্রান্ত থেকে কিছু বলার আগেই দিবাকর বুঝতে পারলো মারাত্মক একটা ভুল করে ফেলেছে শাড়ী কথাটার উচ্চারণ করে। ও শ্বশুড় মশাই আর রজতের বউ তখন নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।

- "শোনো শোনো। তুমি তাড়াতাড়ি এখন চলে এসো।"

-- "কেন কেন কি হয়েছে?"

- "তোমার শ্বশুড় মশাই এসেছেন, তোমার স্ত্রীকে নিয়ে। ওনারা অপেক্ষা করছেন তোমার জন্য। আমি ঘরে বসিয়ে রেখেছি।"

-- "তার মানে?"

দিবাকর এবার একটু চেঁচিয়ে বললো, "তোমার শ্বশুড় মশাই আর তোমার বউ এসেছে। ওনারা ওয়েট করছেন।"

বেশ দাঁত মুখ খিঁচিয়ে রজত ও প্রান্ত থেকে বললো, "আমার সাথে ত্যাঁদরামো হচ্ছে? কালকে যাদের আসার কথা তারা চলে এল আজকে? আমি কি সবসময় ঘর জুড়ে বসে থাকব ওদের জন্য? ওদের বল চলে যেতে। আমার আসতে দেরী হবে।"

রজত তখনও চেঁচাচ্ছিল। দিবাকর হাত দিয়ে ফোনের মাউথপীসটা চেপে শ্বশুড় আর বউকে বললো, "ও বলছে আপনাদের তো কালকে আসার কথা?"

শ্বশুর মশাই বললেন, "হ্যাঁ সেই মতই তো কথা হয়েছিল। কিন্তু আমার মেয়ে শুনতে চাইল না। তাছাড়া কাল ওর সময় হবে না।"

দিবাকর মাউথ পিসের ওপর থেকে হাতটা তুলে রজতকে বললো, "ওনারা বলছেন, কাজটা আজকেই সারতে চান। কালকে ওনাদের সময় হবে না।"

-- "এ তো মহা জ্বালা দেখছি। যেমন বাপ তেমনি শালা মেয়ে। নতুন করে ঘাড়ে ঝ্যামেলা পাকাতে চাইছে। ভালো লাগে না আমার। ঠিক আছে, ঠিক আছে। বল ওদের বসতে আমি আসছি। আর শোনো?"

- "হ্যাঁ বলো।"

-- "আমি যা বলব, তুমি শুধু হ্যাঁ তে আর না তে জবাব দেবে।"

- "হ্যাঁ বলো।"

-- "আমার বউ কিছু সন্দেহ করেছে?"

- "না।"

-- "শ্বশুড় মশাই?"

- "না।"

-- "ওরা সিরিজাকে দেখেছে?"

- "না।"

-- "তুমি বলেছো তো? সিরিজা তোমার বউ?"

- "হ্যাঁ।"

-- "সিরিজা ঠিক আছে তো?"

- "হ্যাঁ।"

-- "ঠিক আছে তুমি একটু সামাল দাও, আমি আসছি।"

দিবাকর লাইনটা ছেড়ে দিল। রজতের শ্বশুড় মশাই ওকে বললেন, "কি বললো ও?"

- "আসছে আসছে। বেরিয়ে পড়েছে। আপনাদের বললো বসতে। আর বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না।"

-- "তুমি থাকো কোথায় বাপু? তোমাতে তুমি বললাম, কিছু মনে কোরো না।"

- "না না আপনি বয়জেষ্ঠ ব্যক্তি। আমাকে তুমি বলতেই পারেন।"

-- "কোথায় থাক তুমি?"

- "আমি? খুব কাছেই থাকি। এই শহরেতেই।"

-- "রজতের ব্যাপারে কিছু জানো?"

- "কি ব্যাপারে?"

-- "ও কিসব করে বেড়ায় তুমি খবর রাখো?"

দিবাকর মনে মনে বললো, বুড়োটা হারামজাদা। এখন যেই বসতে বললাম, অমনি আমাকে খুঁচিয়ে সব জানার চেষ্টা করছে। তবু বললো, "কিসের খবর?"

-- "আমার মেয়েকে বিয়ে করেও ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমি জানি ও অনেক কিছুই করে বেড়ায়।"

দিবাকর যেন কিছুই জানে না এমন ভাব করলো। রজতের শ্বশুড়কে বললো, "দেখুন মেশোমশাই, এটাতো হলো ব্যক্তিগত প্রশ্ন। তাছাড়া আমি ওর ব্যাপারে কিছুই খবর রাখি না। নিজের কাজ নিয়েই ব্যাস্ত থাকি। তাছাড়া সংসার ধর্ম আছে। স্ত্রী আছে। ঐ নিয়েই আমার সময় কেটে যায়। একটু আগে বললাম না, যার জন্য রজতের বিয়েতে আমি আসতে পারিনি।"

-- "তবু ভালো। তুমি তোমার স্ত্রীকে ভালোবাসো। আর আমার মেয়ের তো কপালটাই খারাপ। রাগ করে আমার কাছে চলে এল। এখন ডিভোর্স নেওয়া ছাড়া ওর কোনো গতি নেই।"
 
কপালের নাম গোপাল। দিবাকর মনে মনে বললো, ভালোবাসতে গিয়ে কি খেসারতটাই না দিতে হচ্ছে। ওরও দম আটকে গেছে। এখন মিছি মিছি ভালোবাসাটাকে যতদূর ধরে রাখা যায়। শ্বশুড় মশাইকে উস্কে দিয়ে ও বললো, "আমার মনে হয় মনের মিলটাই আসল। মতপার্থক্য থাকলে শুধু শুধু একজনকে জীবন দিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তার চেয়ে বরং আলাদা আলাদা হয়ে যাওয়াই উচিত। আপনার মেয়ে ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে।"

-- "তুমি ঠিকই বলেছো। সেই জন্যই তো....."

দিবাকর মনে মনে এবার একটু ওপরওয়ালাকে স্মরণ করলো। তারমানে অল লাইন ইজ ক্লিয়ার। রজতকে আর এদের দুজনের কাছ থেকে কোনো বেগ পেতে হবে না। রজত আর সিরিজার নতুন জীবন সুখময় হোক।

রজতের বউ ওর বাপের কথাই শুনছিল। মাথা নীচু করে বসেছিল। মুখ দেখে মনে হবে রজতের প্রতি বিতৃষ্ণায় মন ভরে গেছে। কথা বলছিল না কিন্তু রাগটা ভীষন ভাবে ফুটে উঠছিল। হঠাৎ এবার দিবাকর আর ওর বাবাকেও চমকে দিয়ে এমন একটা কথা বললো যে দিবাকর প্রায় আঁতকে উঠলো। একি সর্বনাশ!

রজতের বউ বললো, "আমি তো ভাবছি ওকে ডিভোর্সও দেব না। সারাজীবন এভাবেই পচিয়ে মারবো।"

চমকে উঠলো শ্বশুড় মশাইও। মেয়েকে বললেন, "কি বলছিস তুই! তোর মাথার ঠিক আছে। রজতকে তুই ডিভোর্স দিবি না মানে? তুই কি ওর সাথে ঘর করবি না কি?"

-- "ঘরও করবো না। ডিভোর্সও দেব না।"

দিবাকর রীতিমতন হকচকিয়ে গেল। ভাবলো এতো নতুন বিপদ এল। রজত তো বিপাকে জড়িয়ে পড়লো। ডিভোর্স না পেলে সিরিজাকে নিয়ে বাকী জীবনটা তো সুখেও কাটাতে পারবে না। বউটা ত্যাঁদোড় আছে তো? বেছে বেছে মাথা দিয়ে এমন বুদ্ধি বার করেছে যাতে রজত শান্তিতে না থাকে।

দিবাকর তবুও বললো, "আপনি যদি রজতকে আর পছন্দ না করেন, তাহলে ডিভোর্স দেওয়াটাই তো বুদ্ধিমানের কাজ। শুধু শুধু নিজের লাইফ নষ্ট করবেন কেন? তার থেকে আপনিও একটা বিয়ে করে নিন।"

-- "তাই বুঝি? আপনার বন্ধুও বিয়ে করছে নাকি? তা পাত্রীটি কে? একবার জানতে পারি?"

- "বিয়ে? না না ও বিয়ে করছে না?"

-- "সত্যি বুঝি?"

- "সত্যি সত্যি বিয়ে করলে আমায় বলতো। সে রকম যখন বলেনি তার মানে ওর এখন বিয়ে করার ইচ্ছে নেই।"

-- "আপনি জানলেন কি করে? ও সব পারে। তাছাড়া ও বিয়ে না করেও এমন কিছু করে যাতে ওর বিয়ে না করলেও চলে। ওর হয়ে আপনি আর সাফাই গাইতে আসবেন না প্লীজ।"

দিবাকর বুঝলো, বউটা মুখরা আছে বেশ। এটাকে বাগে আনতে বেশ সময় লাগবে। ব্যাচারা রজতের কপাল খারাপ, যা বলছে তাই যদি সত্যি হয়, তাহলে রজতকে বেশ বেগ পেতে হবে। এ মেয়ে সহজে রাজী হওয়ার মেয়ে নয়।

বাপ তখন মেয়েকে বোঝাচ্ছে, "ছেলেমানুষি করিস না রীতা। বাপ হয়ে আমিও কি চাইব তোর জীবনটা নষ্ট হোক। আমি তোর আরেকটা বিয়ে দেব।"

দিবাকরও বুদ্ধিমানের মত সাথে সাথে তাল দিয়ে যেতে লাগলো, "হ্যাঁ ঠিকই তো, ঠিকই তো।"

মেয়ে এবার এমন জোরে চেঁচিয়ে বললো, "না না আমি কোনো কথা শুনছি না। আমি ওকে উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব। ডিভোর্স আমি কিছুতেই ওকে দেব না।"

শোবার ঘরে রজতের বউ এর চিৎকারটা সিরিজার কানে গিয়ে পৌঁছোল। ও ওখান থেকেই দিবাকরকে ডাক দিল, "এই একটু শোনো এদিকে। এঘরে।"

রজতের বউ আর শ্বশুর মশাই দুজনেই ভাবল, দিবাকরের বউ এর ঘুম ভেঙেছে তাহলে। দিবাকর আবার শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ালো।

এদিক সামলাবো না ওদিক? কোনদিকে আমি যে যাই?

ঘরে ঢুকল দিবাকর। সিরিজার তখন বেশ রুদ্রমূর্ত্তি। চোখটা বেশ বড় বড় করে সিরিজা দিবাকরকে বললো, "কি বলছে কি ওরা? তখন থেকে বাপ মেয়ে খুব চ্যাঁচাচ্ছে। এবার মনে হচ্ছে আমাকে সামনে যেতে হবে।"

দিবাকর আরো টেনশনে পড়ে গেল। বললো, "এই না না তুমি যেও না। আমি দেখছি ব্যাপারটা। তাছাড়া ও কিছু নয়। তুমি চিন্তা করছো কেন? রজতও তো এক্ষুনি এসে পড়লো বলে।"

- "আমি ও ঘরে না গেলে তুমি একা সামলাতে পারবে দিবাকরদা?"

-- "ঠিক সামলে নেব। তুমি দেখে নিও। তাছাড়া তুমি ওঘরে গেলে বাপ মেয়ে বরং সন্দেহ করবে। তারপর রজত এসে আর কিছু করতে পারবে না।"

- "আমি ওদেরকে গিয়ে সব সত্যি কথাটা বলে দেব।"

-- "পাগল হয়েছ নাকি? কি সত্যি বলে দেবে?"

- "যা সত্যি তাই বলব। ক্ষমতা থাকে ওর বউ আমাকে কিছু বলে দেখাক।"

দিবাকর বুঝলো সিরিজা এবার রজতের প্রতি যেন গলে গেছে। ওদের সাথে মহরা নিতে চাইছে। ও তবু বললো, "না না তোমার ও ঘরে যাওয়ার দরকার নেই। মেয়েছেলে মেয়েছেলেতে মুখ লাগানটা ঠিক নয়। আমার সব চেষ্টা পন্ড হয়ে যাবে। সিরিজা প্লীজ তুমি ওঘরে এখন এস না।"

- "তুমি কি বলেছো? আমি তোমার বউ?"

-- "হ্যাঁ। তাছাড়া তো আর উপায় ছিল না।"

- "তাহলে আমিও গিয়ে বলব ওর বউকে, যে আমি তোমার বউ নই।"

সিরিজার এমন উক্তিতে অবাক হয়ে গেল দিবাকর। ও কি পুরো ব্যাপারটা তার মানে ঘেঁটে দিতে চাইছে? রজতকে আরো ভালো করে ফ্যাঁসাদে জড়াবে বলে? এমন আচরণ সন্দেহজনক। কি করতে চাইছে ও?

এত করে ওকে বোঝালো দিবাকর, তাতেও সিরিজার মন টলল না। বেশ বিরক্ত হলো, সেই সাথে বেশ ভয়ও পেল দিবাকর। কিন্তু সিরিজা এবার একটা দারুন কথা বলে দিবাকরকে সব সন্দেহ থেকে মুক্তি দিয়ে দিল। বললো, "আমি তোমার বন্ধু কে ভুল বুঝেছিলাম। ও আগে হয়তো খারাপ ছিল, এখন নেই। আমাকে পেয়ে পুরো পাল্টে গেছে ও। বউটা ওর ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করছে জানি। রজতকে সুখে থাকতে ও দেবে না। আমিও দেখব এই জল কোথায় গিয়ে শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায়। আমি রজতকে ছাড়ব না। ওর বউকে আরো জ্বালিয়ে মারবো। আফসোস করবে ওর বউ। দেখবে তখন ওর কি অবস্থা হয়।"

একেবারে মনের কথা বলে দিয়েছে সিরিজা। দিবাকর এত খুশি বোধহয় জীবনে হয় নি। শুধু মাথা গরম না করে সিরিজাকে এখন রজতের সাথে প্রেম পর্বটা চালাতে হবে নির্বিঘ্নে। এমন ভাবে কাজটা করতে হবে, যাতে সাপও মরবে অথচ লাঠিও ভাঙবে না। রাগের বশে মাথা গরম করে ওর বউকে কিছু বলেদিলে সেটা বোকামোর মত কাজ হয়ে যাবে।

দিবাকর তবু বললো, "তুমি রজতকে না ছাড়লে ওর বউ এর শক্তি নেই, তোমাদের দুজনকে আলাদা করবার। শুধু একটাই অনুরোধ, তুমি এর মধ্যে নিজেকে জড়িও না। আমি দেখছি ব্যাপারটা।"

সিরিজা দিবাকরকে গুরুত্ব না দিয়ে বললো, "তুমি পারবে না। এটা আমিই পারবো। মেয়ে হয়ে মেযেকে কেমন জব্দ করতে হয় আমরা ভালোই জানি। আমি একবার ওঘরে যাই। তারপর দেখবে, বাপ মেয়ে দুজনেই একেবারে চুপ হয়ে যাবে।"

-- "ঠিক আছে, ঠিক আছে, তুমি অত উতলা হয়ো না। শান্ত হয়ে বস। আমি ওদেরকে সামলে নিচ্ছি।"

কোনরকমে সিরিজাকে শান্ত করে দিবাকর ঘর থেকে বেরিয়ে এল। সিরিজা কিন্তু ওর কথা কর্ণপাতও করলো না। দিবাকরের কথা না শুনেই ও যে সাথে সাথে বসার ঘরে চলে আসবে সেটা দিবাকরের কল্পনার বাইরে ছিল। ব্যাপারটা ঘটল একেবারে সঙ্গে সঙ্গেই। সিরিজা যা করলো এককথায় অভাবনীয়। দিবাকর চিন্তাও করতে পারবে না কোনদিন।

দিবাকর বসার ঘরে ঢুকতেই শ্বশুড়মশাই বললেন, "কি, বউ এর ঘুম ভেঙে গেল, তোমাকে ডাকছিল?"

দিবাকর কিছু বলার আগেই সিরিজাও পেছন পেছন এসে বলে উঠলো, "হ্যাঁ, ডাকছিলাম। আমার ঘুম তো ভাঙিয়ে দিলেন আপনারাই।"

চমকে উঠলো দিবাকর। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো, সিরিজা বসার ঘরে চলে এসেছে। ওর ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে।

চোখের দৃষ্টিটা সোজা রজতের বউ আর শ্বশুড়মশাইয়ের দিকে। দিবাকরকে গ্রাহ্য করছে না। যেন হঠাৎ একটা কান্ড ঘটাবে বলে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। দেখে মনে হবে গলা মিলিয়ে ঝগড়া করবে বলে ঢুকেছে ঘরে।

আচমকা সিরিজা ওভাবে ঘরে ঢোকাতে দিবাকরও ভেবে পাচ্ছে না কি করবে। তার উপর রজতের বউ আর ওর বাবাকেও অবাক করে দিয়েছে।

হাঁ করে সিরিজাকে দেখছে রজতের বউ আর শ্বশুড়। এ মেয়েটা দিবাকরের বউ? দেখে যেন আদৌ বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। বিশ্বাস করতে পারছে না ওরা দুজনে। বাপ মেয়ে দুজনের মুখ দিয়েই কথা বেরোচ্ছে না ক্ষণিকের জন্য। শ্বশুড় ভাবছে এ মেয়ে তো রূপের আগুনে হারিয়ে দেবে ওর মেয়েকেও। আর মেয়ে ভাবছে দিবাকরের স্ত্রী হিসেবে ওর অকস্মাত প্রবেশ ঘটল বসার ঘরে। কিন্তু এ মেয়েকে কোথাও যেন ও দেখেছে। ওর খুব চেনা চেনা লাগছে। ঠিক মনে করতে পারছে না।

-- "বসো না। তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন? দিবাকর ব্যাপারটা সামলে দেওয়ার জন্য সিরিজাকে বললো। কায়দা করে ওদেরও মন রাখার জন্য বুদ্ধি করে বললো, "আসলে আমিই ওকে আসতে বললাম। ওকে বললাম - আপনারা ঘরে বসে আছেন। অনেক তো ঘুমোলে। এবার একটু এঘরে এসো।"

সিরিজা একটু ঝাঁঝালো ভাবেই ওদেরকে শুনিয়ে দিবাকরকে বললো, "তুমি না বললেও আমি আসতাম। তোমার বন্ধুর স্ত্রী আর শ্বশুড়মশাই বলে কথা। না এসে থাকতে পারি? আমার তো ঘুমোতেই ইচ্ছে করছিল না।"

দিবাকর বুঝলো বেশ বড়সড় একটা যুদ্ধ বাধতে চলেছে। আর রজতকে চেষ্টা করেও বাঁচানো যাবে না। কোনো রাস্তা নেই।

কি দরকার ছিলো গায়ে পড়ে এসে ঝগড়া শুরু করার? দিবাকর ব্যাপারটা সামলে দিচ্ছিল। সহ্য হলো না? এখন কি হবে?

পরিস্থিতিটা হালকা করার জন্য দিবাকর বললো, "আসলে ওর আর আমি এখানে এসেই সব ঝ্যামেলা পাকালাম। সকাল বেলা এসে রজতকে আপনিও রাজী করীতে পারলেন না। আর এখনও তাই। বিঘ্ন ঘটানোর মূলে আমরাই।"

রজতের বউটা তখনও সিরিজাকে দেখে যাচ্ছিলো। সিরিজার শরীর যেন ভালোবাসার শরীর। প্রেমের জোয়ার আনার মতন চেহারা মেয়েটির। কপাল ভালো মেয়েটি দিবাকরের বউ। না হলে রজত নিশ্চয়ই যেন নিজের স্বামীকে ওর থেকে ভালো আর কেউ চেনে না।

সিরিজা একদম ওদের সামনে গিয়েই বসল, যে জায়গাটায় দিবাকর বসেছিল। দিবাকর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ভাবতে লাগলো - মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটবে। কপালে এবার বেজায় দূঃখ আছে। ও মনে মনে ভগবানের নাম জপ করতে লাগলো। এরপরে কি হয় সেই ভেবে ভীষন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লো। ভয়ের চোটে ওর চোখ দুটো একেবারে কাতুমুতো হয়ে গেল।

রজতের বউ সিরিজাকে বললো, "তোমার নামটা তো খুব অদ্ভুত। সিরিজা এমন নাম শুনিনি আগে। তবে তোমাকে খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে। ঠিক মনে করতে পারছি না। কোথাও যেন দেখেছি।"

- "আমি তো আপনাকে দেখিনি। এই প্রথম দেখছি। তবে আপনার কথা শুনেছি।"

-- "কে বললো?"

- "কে আবার? এই যে এখানে দাঁড়িয়ে আছে, (দিবাকরকে উদ্দশ্য করে ) ইনি।"

-- "তোমাদের বিয়ে কবে হয়েছে?"

- "আপনাদের বিয়ের অনেক আগে।"

-- "আমি তো ভেবেছি, তোমাদের সদ্য বিয়ে হয়েছে বোধহয়।"

- "না না, সদ্য কেন হবে? অনেকদিন হয়ে গেছে। এখন আমারও ওকে আর ভালো লাগছে না। তাই ভাবছি....."

দিবাকরের চোখ কপালে উঠে গেছে। শ্বশুড় মশাই গোল গোল চোখ করে সিরিজাকে দেখছে। বউটা ভাবছে এ আবার কি কথা?

রজতের বউ বললো, "ভালো লাগছে না সেকী? তোমার বর তো খুব ভালো।"

মুখটা একটু বেঁকিয়ে সিরিজা বললো, "ভালো তো আমিও জানতাম, কিন্তু এখন শুনছি বাবু রেশমী নামে কোন মেয়েকে নাকি ভালোবাসতেন।"

-- "তাতে কী?"

- "তাকে বিয়ে করলেই তো পারত। আমাকে কেন?"

দিবাকরের মতো সিরিজাও রেশমীকে ভুলতে পারছে না। কথাটা শুনে দিবাকরও অবাক হলো। সিরিজা এবার কি শুরু করেছে?

-- "বিয়ের আগে হলে ওসব কোনো ব্যাপার নয়। বিয়ের পরে হলেই মুশকিল।"

- "আমিও তো সেই কথাই বলছি। উনি তো এখনও রেশমিকে ভুলতে পারছেন না। খালি থেকে থেকে রেশমীর কথা স্মরণ করছেন।"

রজতের বউটা এবার দিবাকরকে একটু বকাঝকা দিল। - "দিবাকর বাবু এটা আপনার ঠিক নয়। এত সুন্দর বউ থাকতে আপনি আবার রেশমী কেন? আপনারা সব ব্যাটাছেলে গুলোই একরকম। রজতের সাথে আপনার তাহলে পার্থক্য রইলো কি?"

শ্বশুড় মশাই তখন কোনো কথা বলছিলেন না। ঘাড় নেড়ে মেয়ের কথায় সায় দিচ্ছিলেন।

দিবাকর কিছু বলার আগেই সিরিজা বলে উঠলো, "ভাবছি এবার আমিও কারুর সাথে প্রেম করবো।"

মাথাটা তো খারাপ হয়েই গেছে, এবার ওরা থাকতে থাকতে এ ফ্ল্যাট ছেড়ে পলায়ন করা ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই দিবাকরের। তারপর রজত যা পারে করুক। ওর দ্বারা আর কিছু করা সম্ভব নয়। ভেবেই পাচ্ছিল না, সিরিজা আসলে করতে কি চাইছে?

আড়চোখে সিরিজাকে দেখতে লাগলো। ওর আবার যখন তখন শাড়ীর আঁচল খসে বুক বেরিয়ে পড়ে। শ্বশুড় মশাই আর বউ এর সামনে বুক বেরিয়ে পড়লেই মুশকিল।

-- "না না অমন কথা বোলো না। তোমার স্বামী এমনি এমনি বলেছে। উনি অতটা খারাপ নন।"

- "আপনি কি করে বুঝলেন? আপনি কি ঘর করেছেন আমার স্বামীর সাথে?"

-- "ঘর নাই বা করলাম। মানুষ চিনতে আমার ভুল হয় না। উনি খুব ভালো। তোমার সাথে মজা করছেন।"

- "কিন্তু আমি যে সত্যি সত্যিই একজনকে ভালোবেসে ফেলেছি।"

-- "মানে?"

- "বেসেছি একজনকে। আপনাকে বলা যাবে না।"

সিরিজার স্পর্ধা দেখে দিবাকরও অবাক হয়ে যাচ্ছিলো। গ্রামের মেয়ে হলে কি হবে। রজতের বউ কে একেবারে ঘোল খাইয়ে দিচ্ছে। সামনে যে ওর বাপও বসে আছে, তাকেও ভ্রূক্ষেপ করছে না। ঘুরে ফিরে আসল জায়গায় ফিরে এসেছে। এবার যদি প্রেমিক হিসেবে রজতের নামটা বলে দেয় কি হবে? কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে। ওকে বাধা দিয়ে দিবাকর বললো, "কি যা তা বলছো?"

সিরিজা অনায়াসে বললো, "আমি ঠিকই বলছি।"

রজতের বউ এর মুখটা এবার খুব গম্ভীর হয়ে গেল। ও বুঝেই উঠতে পারলো না। এ আবার কার প্রেমে পড়লো? রজত নয় তো?

এক কথাতেই কুপোকাত। যেন সমস্ত তর্জন গর্জন শেষ। রজতের বউ এর মুখ দিয়ে আর কথা বেরোচ্ছে না। মাথা নীচু করে ফেলেছে। অপ্রস্তুতে পড়ে গেছে শ্বশুড় মশাইও। দিবাকর দাঁড়িয়ে আছে গোবেচারার মতন। আর সিরিজা মুচকী মুচকী হাসছে। যেন সব বাজীমাত করে দিয়েছে ও একাই।

রজতের বউ বাপকে বললো, "বাবা চলো, আমার আর ভালো লাগছে না।"

- "সেকী আপনারা বসবেন না?" দিবাকর তখন প্রশ্ন করছে।

-- "বসার আর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।"

-- "তা কি করে হয়? তোর জন্যই তো এখানে এলুম। নইলে আমার তো আসার কথা ছিল কাল সকালে। এখন হঠাৎ চলে যাবি বলছিস কেন?" রজতের শ্বশুড় মশাইও তখন প্রশ্ন করছে মেয়েকে।

-- "এমনি। আমার আর ভালো লাগছে না তাই।"

-- "এমনি মানে? রজতকে এখানে ডেকে পাঠানো হলো। ওতো এখানে এসে আমাদের দেখতে না পেলে চটে যাবে। খামোকা এলি কেন তুই?"

সিরিজা কোনো জবাব দিচ্ছে না। দিবাকর বললো, "হ্যাঁ হ্যাঁ। বসুন। রজত আসছে। আপনার দরকারী কাজটাও তো হয়ে যাবে।"

বউ যেন হঠাৎ সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেছে। এখন ওর দরকারী কাজটা মাথা থেকে উবে গেছে। সিরিজার মুখের দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে। কিন্তু সিরিজা খুবই স্বাভাবিক। দিবাকরের মতন চোখে মুখে বিচলিত হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। ভাবখানা এমন ওর বউটা এখন গেলে বাঁচা যায়।

রীতার বাবা ভূরু কুঁচকে বললেন, "তোর শাড়ীটাড়ী গুলোর কি হবে। আমাকে যে বললি তোর শাড়ী ছাড়া অসুবিধে হচ্ছে। এখন তাহলে কি হবে?"

-- "কেন ও বাড়ীতে কি আমার পরার কোনো শাড়ী নেই? না হয় আরেকদিন আসবো। তাতে কি আছে?"

রজতের বউ এর এমন সিদ্ধান্ত বদল করার ব্যাপারটা দেখে দিবাকরের কেমন সন্দেহ হলো। ও ধরেই নিল রজতের বউ কিছুটা না হলেও আঁচ করতে পেরেছে ব্যাপারটা। এবার ও অন্যরকম বুদ্ধি খাটাচ্ছে। সিরিজা যে কি করলো। এর খেসারত এখন রজতকে দিতে হবে।

- "আমি বলছিলাম কি, একটু বসলে ভালো হতো না? রজত তো এক্ষুনি এসেই পড়বে। আপনাদের দেখতে না পেলে তখন আমার ওপর রাগারাগি করবে। তাই বলছিলাম।"

-- "রাগারাগি কেন করবে? বলবেন আমি বসে থেকে চলে গেছি। আজ হুট করে চলে এসেছি। এরপরে যখন আসবো তখন ওকে জানিয়েই আসবো। আর তখন তো আপনি আর আপনার স্ত্রী কেউই থাকবেন না। তাই আজকের মতন ঝ্যামেলাও আপনাকে পোয়াতে হবে না। আর আপনার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জেগে উঠতে হবে না। যা ঝ্যামেলা পোয়ানোর রজতই পোয়াবে।"

দিবাকর দেখলো বাপ মেয়ে দুজনেই সোফা ছেড়ে উঠে পড়েছে। আর ওদের আটকানো যাবে না।

রজতের স্ত্রী রীতা সিরিজাকে বললো, "চলি ভাই, তোমাকে মনে থাকবে। আশাকরি আবার দেখা হবে।"

ঝড়ের মতন বাপ মেয়ে দুজনে এল। আবার চলেও গেল। দিবাকরের সব প্রচেষ্টাতে জল ঢেলে দিল সিরিজা। এখন কি হবে? বদমায়েশী অভিসন্ধি মনে মনে যদি পোষণ করে থাকে রজতের বউ তাহলে তো জ্বালিয়ে মারবে রজতকে। নিশ্চিন্তে সিরিজা কে নিয়ে সঙ্গম বিহার কি সুখের হবে তখন? দিবাকরের যেন আফসোস যাচ্ছিলো না কিছুতেই। রাগের চোটে সিরিজাকে বলেই দিল, "দেখলে তো? এই জন্যই তোমাকে বলছিলাম, এ ঘরে এসো না। এখন সব দিলে তো গন্ডগোল করে। রজত এসে তোমাকেই বকাঝকা করবে।"

সিরিজা হাসছিল। শ্বশুড়মশাই আর রজতের বউ দুজনেই তখন প্রস্থান করেছে। যেন কিছুই হয়নি এমন ভাব করে দিবাকরকে বললো, "ওর বউ বলছিল না রজতকে ডিভোর্স দেবে না। ভালোই তো। রজতকে জব্দ করতে গিয়ে এখন আমাদের প্রেম দেখে নিজেই জব্দ হবে। তোমার বন্ধুকে ডিভোর্স না দিয়ে ও থাকতে পারবে না। রজতও তখন ঝ্যামেলা থেকে মুক্তি পাবে।

তাজ্জব হয়ে যাচ্ছিলো দিবাকর। অবাক গলায় বললো, "কি বলছো তুমি? তুমি ওর বউকে দেখিয়ে দেখিয়ে রজতের সাথে প্রেম করবে?"

- "তাই যদি বলো তাহলে তাই। আচ্ছা তুমি এত ভয় পাও কেন দিবাকরদা? রজত কিন্তু এরকম নয়।"

-- "আমি জানি ও খুব ডেসপারেট। কিন্তু বউ এর ঝ্যামেলা আর কে পোয়াতে চায় বল। দেখলে না তোমাকে কেমন আমার বাসায় পাঠাতে চাইছিল রাত্রিরে। ভুলে গেলে?"

- "এবার থেকে সে সাহসটা আমি জোগাবো। আমি পাশে থাকলে ও আর ভয়ই পাবে না।"

অবাক হয়ে দিবাকর বোকার মতন তাকিয়ে রইলো সিরিজার দিকে। ওকে আর মাথা খারাপ করতে না বলে সিরিজা বললো, "এবার তাড়াতাড়ি তুমি চানে ঢোকো তো। আমাদের এবার বেরোতে হবে না? ওতো এসে পড়লো বলে। বউও নেই শ্বশুড়ও নেই। আমাদের বেড়ানোটা এখন খুব মজার হবে।"

তবু যাচ্ছে না দেখে সিরিজা নিজেই বাথরুম থেকে তোয়ালেটা নিয়ে এসে দিবাকরের হাতে ধরিয়ে দিল। বললো, "কি হলো, যাও। তুমি বেরোলে তারপর আমাকে চানে যেতে হবে না? দেরী করছো কেন? যাও।"

ঠিক ঐ মূহূর্তে তোয়ালেটা হাতে নিয়েও চানে যেতে ইচ্ছে করছিল না দিবাকরের। ওর যেন রজতকে এখন ফেস করতেই কেমন ভয় করছে। চুলোয় যাক রজত। সিরিজা যখন কথা শোনেনি, তখন রজতকে ফেস করতে হলে ওই করবে। ওর এখন এখানে থাকাটাই গোলমেলে ঠেকছে। দুজনের মাঝখানে আবার ফেউ হয়ে বেড়াতে যাবারও দরকার কি? যেতে হলে ওরা দুজন যাক। দিবাকরের তো যাবার কোনো প্রশ্ন নেই। সিরিজা ঠিক ওকে ম্যানেজ করে নেবে। ও বললো, "সিরিজা আমি বরং এখন যাই। রজতকে যা বলার তুমিই বলে দিও। আমি বরং পরে একদিন আসবো।"

- "সেকী, তুমিও চলে যাবে?"

-- "আমাকে যেতে দাও সিরিজা। আমি আমার কাজ করে দিয়েছি। বাকীটা তুমি সামলিও।"

- "চান করবে না দিবাকর দা?"

-- "না আর একদিন।"

চলে গেল দিবাকর। সিরিজা এখন ফ্ল্যাটে একা। আবার যদি সিরিজাকে পেয়ে রজতের কামনাবাসনাটা মাথা চাড়া দেয় অবাক হওয়ার কিছু নেই। হাজার হোক সিরিজাই ওর সবকিছু। কিন্তু বুলডোজার চালানোর মতন, নিঃশ্বাস ফুরিয়ে যাওয়ার মতন চুমুটা আগের মতই কি তীব্র হবে? ঘাড়ের কাছে রজতের বউ নিঃশ্বাস ফেললে তখন যে চুমু আরামদায়ক হবে না। সেদিকে খেয়াল আছে সিরিজার? ও তো বলেই খালাস হলো। এখন কি হবে?

সিরিজা একা একা বসে আপন মনে কি যেন ভাবতে লাগলো। যার শরীর ছুঁয়ে রজত ধন্য হয়ে গেছে, তাকে বুঝিয়ে দিতে ওর এত কষ্ট হবে? সিরিজা যেন হালকা মনেই ভাবতে লাগলো কথাটা। দিবাকর কেন যে ভয়ে ভয়ে চলে গেল সেটাই ওর কাছে অবাক লাগছিল।
 
।। আঠারো ।।

আপন মনে টিভি চালিয়ে একটা হিন্দী সিনেমা দেখতে লাগলো সিরিজা। বেশ কিছূক্ষণ পরে কলিংবেলটা আবার বাজল। সিরিজা ভাবল এবার রজত এসেছে। দরজাটা খুলেই ওকে সব কিছু বলতে হবে। রজতকে আর যেন কিছুতেই বিচলিত হতে দেবে না ও।

সিরিজাই যে কলিংবেলের শব্দ পেয়ে দরজাটা খুলবে সেটা রজত আঁচ করতে পারেনি। ঘরে ঢুকেই রজত সিরিজাকে প্রশ্ন করলো, "কি ব্যাপার তুমি? আর ওরা সব কোথায়? দিবাকরই বা কোথায়? কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছি না।"

- "ওরা চলে গেছে।"

-- "চলে গেছে? মানে?"

- "কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে গেছে। তারপর দিবাকরদাও চলে গেল।"

-- "সে কী? তুমি সামনে এসেছিলে? কিছু বুঝতে পারেনি ওরা?"

- "বুঝলো তো কি হলো? আমি সামনে এসেছিলাম তো।"

রজত অবাক চোখে সিরিজার দিকে তাকাল। বললো, "কিন্তু আমি তো দিবাকরকে বলেছিলাম, একটু ম্যানেজ করে নিতে। ওরা কিছু সন্দেহ করে নি তো?"

- "করলেই বা কি এসে গেল?"

অবাক হয়ে যাচ্ছিলো রজত সিরিজার কথা শুনে। সিরিজাকে বললো, "তোমাকে দেখে ওরা কিছু বলেনি?"

- "তোমার বউ এসেছিল।"

-- "কে, রীতা?"

- "হ্যাঁ। ওর বাবাকে নিয়ে।"

-- "তোমাকে দেখে কিছু বলেনি?"

- "তোমার বউ বলছিল তোমায় ডিভোর্স দেবে না।"

-- "ডিভোর্স দেবে না? কেন?"

- "তোমাকে জব্দ করতে চায়।"

-- "আমাকে জব্দ করতে চায়?"

- "হ্যাঁ। আমিও বলে দিয়েছি যে আমি তোমার সাথে ভাব করছি।"

-- "তুমি বলে দিয়েছ?" রজত যেন বিশ্বাই করছিল না সিরিজার কথা। - "কি বলেছো?"

- "কি আবার? বলে দিয়েছি আমি মনে মনে একজনকে ভালোবাসি।"

-- "তুমি? আমার বউকে?"

- "হ্যাঁ, কি হলো তাতে?"

-- "রীতা সেটা মেনে নিল? আমি তো দিবাকরকে বলেছিলাম তোমাকে ওর বউ সাজাতে।"

- "বউ হয়েই তো তোমার প্রেমিকা সাজলাম।"

দিবাকরের মতন এবার রজতেরও সবকিছু ওলোটপালোট হয়ে যাচ্ছিলো। সিরিজাকে কড়া কথা বলবে না মিষ্টি কথা বলবে, ওর সবকিছু গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছিলো। কিছু বলার আগেই সিরিজা বললো, "আমি যখন এ বাড়ীতে এসেছিলাম, তখন তোমার বউ কি ছিল?"

-- "না।"

- "আমাকে পেয়ে এতদিন একবারও তোমার বউ এর কথা মনে পড়েছে?"

-- "না।"

- "তাহলে এখন কেন এত উতলা হোচ্ছ?"

-- "উতলা তো হই নি। আমি তো রীতাকে ভুলেই গেছি। ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। ডিভোর্সও দিয়ে দেবে বলেছে। উকিল মারফত চিঠি পাঠিয়েছে। তাহলে এখন আবার ন্যাকামো কেন? আমাকে ডিভোর্স না দিয়ে ও যাবে কোথায়? তুমি যদি পাশে থাক আমার কোনো চিন্তা নেই সিরিজা।"

- "আমি পাশে নেই কে বললো?"

রজত তাকালো সিরিজার দিকে। সিরিজা হেসে বললো, "একদিনেই তোমার শ্বশুড় বউ এসে তোমার মাথা খারাপ করে দিল? আমাকে শুধু শুধু দিবাকরদার বউ সাজালে।"

একটু কাছে এল রজত। সিরিজার গালে হাত রেখে বললো, "কেন তোমার খারাপ লেগেছে?"

সিরিজা ওর চোখে চোখ রাখলো। বললো, "আমার নিজের খারাপ লাগেনি। লেগেছে দিবাকরদার জন্য।"

-- "কেন দিবাকর কি তোমায় কিছু বলেছে?"

- "কি আবার বলবে? দিবাকরদা তো ভালো লোক। সুযোগ বুঝে বন্ধুটাকে কাজে লাগালে, বন্ধুর জন্য ভেবেছ কোনোদিন?"

রজত এবার একটু গম্ভীর হলো। সিরিজার কথার জবাব দিতে পারলো না। ফ্যাল ফ্যাল করে সিরিজার দিকে তাকিয়ে রইলো।

ওর মনে মনে সন্দেহটা গাঢ় হতে লাগলো। সিরিজাকে দিবাকর পুরোনো কথা কিছু বলে নি তো? হঠাৎ দিবাকরের জন্য চিন্তা শুরু করে দিয়েছে সিরিজা। কি ব্যাপার? না হলে হঠাৎ এ কথাটা ও বললো কেন? ঘুরিয়ে সিরিজাকে পাল্টা প্রশ্ন করলো, "কেন দিবাকরদা ভালো লোক, আর আমি ভালো লোক নই?"

সিরিজা সঙ্গে সঙ্গে রজতের হাতটা ওর কাঁধের ওপর রাখলো। ওর চোখের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করে একটা কথাই বললো, "দিবাকরদা তোমার খুব উপকার করতে চেয়েছে। এমন বন্ধু তুমি খুব ভাগ্য করে পেয়েছ। কিন্তু লোকটাকে দেখে আমার খুব কষ্ট লেগেছে। এত খানি বয়স হয়ে গেল। একটাও সঙ্গীসাথী নেই। একা একা কতদিন মন মরা হয়ে থাকবে ব্যাচারা? দিবাকরদার একটা বিয়ে দিতে হবে না? সত্যিকারের বউই তো দরকার। তা না আমি কিনা ওনার মিছি মিছি বউ সাজলাম।"

রজত এবার হাসতে লাগলো সিরিজার কথা শুনে। হাসতে হাসতে ওকে ছেড়ে এবার সোফার ওপরই বসে পড়লো। তখনও ওর হাসি থামছিল না।

- "তুমি হাসছো?"

রজত হাসছিল হো হো করে।

সিরিজা আবারও বললো, "তুমি হাসছো?"

রজত বললো, "শোনো শোনো, তুমি আমার কাছে এসো। একটা কথা বলছি।"

সিরিজা ওর দিকে এগিয়ে গেল। রজত ওকে পাশে বসিয়ে ওকে খুব করে জড়িয়ে ধরলো।

-- "তোমাকে খুব করে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। অনেকক্ষণ খাইনি।"

- "না খেতে হবে না ছাড়ো।"

-- "ছাড়ো বললেই হবে। খাবোই খাবো। রজত জোর করেই সিরিজার ঠোঁটে চুমু খেল। সিরিজা বিরক্ত হয়ে বললো, "এই জন্য ডাকলে কাছে?"

রজত হেসে বললো, "চুমুটা খেতে চাইলাম, খেয়েও ফেললাম। তোমার কাছে চুমুর নিবেদন করে তারপর চুমু খেলাম। প্রেম জিনিষটাও তেমনি। প্রেম করবো বললেই হয়। প্রেমটা তো নিবেদন করতে হয়। তোমার ভালোমানুষ দিবাকর তো এখনও কারুকে প্রেম নিবেদন করাও শিখল না। ও প্রেম করবে কি?"

- "মানে?"

-- "মানেটা এখনও বুঝলে না?"

- "না।"

-- "তোমায় বলি তাহলে। শোনো।" রজত বলতে লাগলো, "দিবাকর হচ্ছে এমন একজন মানুষ। সে যদি ইচ্ছে করত, আমার মতন সেও তাহলে কারুর সাথে প্রেম করে ফেলত। নিজের ব্যাপারটা না ভেবে, ও শুধু পরের ব্যাপারটাই ভেবেছে। আমি অস্বীকার করছি না, সে আমার কথাও ভেবেছে। যখনই কাউকে ভালো লেগেছে, দিবাকরই উঠে পড়ে লেগেছে, আমার সাথে তাকে মিলিয়েও দিয়েছে। আমি সেই প্রেম টিকিয়ে রাখতে পারে নি। দোষ আমার। কিন্তু দিবাকর এত মেয়েমানুষ চেনা সত্তেও নিজের ভালোলাগার কথাটা তাকে মুখ ফূটে বলতে পারেনি। বড়ই লাজুক সে নিজের ব্যাপারে। এতে আমার কি দোষ তুমি বল?"

সিরিজা খুব গম্ভীর ভাবে এবার বললো, "রেশমী বলে তুমি কোনো মেয়েকে ভালোবেসেছিলে?"

এতক্ষণ দিবাকরের পরীক্ষা নিয়ে এবার যেন রজতেরও পরীক্ষা নিতে শুরু করেদিল সিরিজা। এ কার কথা বলছে সিরিজা? এ নাম ও জানল কি করে? রজত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সিরিজার দিকে। কথাও বলতে পারছে না। প্রাণ খুলে হাসতে পারছে না। ওর মুখের হাসিটা যেন কেড়ে নিয়েছে সিরিজা।

- "কথা বলছো না? আমি রেশমীর কথা বলছি।"

রজত তবু চুপ করে রয়েছে। বসে বসে ভাবছে দিবাকরের কথা। তাহলে কি দিবাকর? এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারলো ও? আমি ছিলাম না। আর এই দু তিনঘন্টার মধ্যেই সিরিজাকে সব বলে দিয়েছে।

সিরিজা একটু গম্ভীর ভাবেই বললো, "রেশমীর কথা শুনেই তুমি চুপ করে গেলে? আমার কাছে লুকোতে চাইছো?"

রজত সিরিজাকে তখন বোঝার চেষ্টা করছে। ভেতরে ভেতরে কেমন অপরাধবোধ জেগে উঠেছে। সিরিজাকে তবু বলতে পারছে না। কারন সিরিজা আর রেশমী দুজনে ওর কাছে এক নয়। যাকে মনে ধরেছে তাকে চেষ্টা করেও মিথ্যে বলা যায় না। সিরিজা ওকে যাই বলুক ও সিরিজার কাছে কিছুই লুকোতে পারবে না। এই কদিনে রজতকে যেন অনেক পাল্টে দিয়েছে সিরিজা। শুধু রেশমী কেন? সিরিজার জন্য ভালো লাগার সব মেয়েগুলোর কথাই বলতে পারে রজত সিরিজাকে। কিন্তু ভয় একটাই। সত্যি কথা বলতে গিয়ে যদি......?

খুব আবেগ জড়িত হয়ে রজত বললো, "আমি যদি তোমাকে রেশমীর কথা বলি তাহলে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো সিরিজা?"

সিরিজা এবার রজতের মাথাটা দুহাত দিয়ে ধরে বললো, "আমি আমার জীবনের পুরোনো কথা বলিনি তোমায়? সব কিছু জেনেও তুমি আমাকে তোমার করে নিয়েছ। তাহলে আমাকে তুমি লুকোচ্ছ কেন? আমি কি তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেছি?"

সিরিজার দিকে ভালো করে তাকাতে পারছিল না রজত। সিরিজাই এবার রজতের মুখটা তুলে ওর চোখের ওপর চোখটা রাখলো। - "তাকাও আমার দিকে। এই দেখ, আমি তোমার কাছেই রয়েছি।"

ও তবু মানছে না দেখে সিরিজা এবার রজতের মুখটা ওর বুকের ওপর রাখলো। - "কি, আমাকে বলতে ভয় করছে?"

গরম একটা তাপ। রজতকে আস্বস্ত করার চেষ্টা করছে সিরিজা। বুকের মধ্যে ছটফট করতে পারছে না রজত। তবু ভাবছে সিরিজা কত ভালো। একবার যদি ওর ভুলটাকে ক্ষমা করে দেয়। জীবনে কোনদিন আর সিরিজাকে ছেড়ে অন্য কোনো নারীর কাছে যাবে না ও।

বুকের মধ্যে মুখটাকে একনাগাড়ে ঘষতে লাগলো ও। এ যেন ক্ষমার ভিক্ষা প্রার্থনা। সিরিজা রজতকে দেখছে। ওর মধ্যে একটা শিশুর মতন অপরাধবোধ। রজতের মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে আরো আস্বস্ত করতে লাগলো সিরিজা। দেখলো রজতের বলার শক্তি নেই, কিন্তু ওর চোখের ভাষা বলে দিচ্ছে যা ও শুনেছে রেশমীর ব্যাপারে। তার সবই সত্যি।

রজতের মাথাতেই হাত বুলোতে বুলোতে সিরিজা বললো, "তুমি মেয়েটা কোথায় থাকে জান?"

-- "আমি জানি না। ওটা দিবাকর জানে।"

- "দিবাকরদা তো বললো, ও নাকি এখন ওখানে আর থাকে না। বাড়ী ছেড়ে চলে গেছে।"

-- "হবে হয়তো।"

- "তোমার কাছে ওর ফোন নম্বর নেই।"

-- "আমি ফোনে সবার নম্বরই ডিলিট করে দিয়েছি সিরিজা। রেশমী কেন কারুরই নম্বর নেই।"

- "তুমি একবার মেয়েটাকে চেষ্টা করে ফিরিয়ে আনতে পারো না?"

-- "রেশমীকে? কেন? কার জন্য? রজত যেন ভাবতেই পারছে না, সিরিজা কার জন্য রেশমীর কথা বলছে।"

- "আমি তোমার জন্য বলছি থোড়িই। আমি তো দিবাকরদার জন্য বলছি।"

-- "দিবাকর?"

রজত যেন এবার আকাশ থেকে পড়লো।

- "কেন তুমি জানতে না? দিবাকরদা ঐ মেয়েটিকে ভালোবাসতো।"

রজত তখনও বুঝতে পারছে না, সিরিজা কি বলতে চাইছে।

-- "দিবাকর রেশমীকে ভালোবাসতো?"

- "হ্যাঁ।"

-- "আমাকে তো কোনোদিন বলেনি ও।"

- "তুমি বলার সুযোগ দাও নি।"

-- "আমি সুযোগ দিইনি? আমি তো কোনোদিন ভাবিই নি দিবাকর রেশমীকে ভালোবাসে। ওতো রেশমীকে শুধু চিনত। আমার সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল ব্যাস এই পর্যন্ত। কিন্তু দিবাকর রেশমীকে ভালোবাসতো, আমি তোমার মুখেই প্রথম শুনছি।"

সিরিজা বললো, "দিবাকরদা লোকটাই এরকম। নিজে থেকে কিছু বলে না। তোমার প্রেমের জন্য নিজের স্বার্থকে বলি দিতেও কসুর করে নি সে। কি লাভ হলো? যাকে তুমি নিলে না, সে দিবাকরেরও হলো না। লোকটা সেই সঙ্গী ছাড়াই রয়ে গেল।"

রজত সিরিজার বুকে এবার মুখ লুকিয়ে বললো, "আমি বুঝতে পারিনি গো। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।"

- "এই ক্ষমাটা তুমি যদি দিবাকরদার কাছে চাইতে, আরো ভালো হতো। তোমার জন্য সে অনেক করেছে।"

রজত বুঝতে পারছিলো কি ভুলটাই করেছে ও। দিবাকর হয়তো দূঃখে সিরিজাকে কথাগুলো বলেছে। নইলে সিরিজাই বা জানবে কি করে?

মোবাইলটা হাতে নিয়ে ও সঙ্গে সঙ্গে দিবাকরকে ধরার চেষ্টা করলো। দু তিনবার চেষ্টা করার পর ও দিবাকরকে লাইনে পেল। মোবাইলটা কানে নিয়ে ও দিবাকরকে বলতে লাগলো, "কি হলো তুমি চলে গেলে কেন? আমাদের তো একসাথে বেরোনোর কথা ছিল।"

- "না মানে তোমার শ্বশুড় মশাই ও চলে গেল। আমি ওনাদের আটকাতে পারলাম না। ভাবলাম, আর বোধহয় থেকে কাজ নেই তাই চলে এলাম।"

-- "কাজ নেই মানে? তুমি আমার জন্য এত করলে, আর আমাকে একটা থ্যাঙ্কস বলারও সুযোগ দিলে না।"

- "কোথায় করতে পারলাম কই।"

-- "কেন?"

- "সিরিজা তো তোমার বউকে ভয় খাইয়ে দিল।"

-- "ঠিকই তো করেছে।"

- "ঠিক করেছে?"

-- "ঠিক করেনি! আমার বউ বলেছে আমাকে ডিভোর্স দেবে না। সিরিজাও তাই মোক্ষম চালটা দিয়েছে। তুমি ধরতে পারো নি।"

- "সবই তো বুঝলাম। কিন্তু এখন যদি তোমার বউ যদি বলে ঘর করবো।"

রজত কিছুক্ষণ থেমে গিয়ে এবার বললো, "সে সুযোগ আর তাকে দিই কি করে বল। আমার তো সিরিজা ছাড়া আর কোনো বউ নেই।"

দিবাকর কথাটা শুনে বেশ খুশী হলো। বললো, "ভালো ভালো। তোমরা ভালো থাক এটাই আমি চাই।"

রজত শুনে বললো, "কিন্তু আমি আর সিরিজাও একটা জিনিষ চাই"

- "কি?"

-- "তোমার একটা বিয়ে দিতে, তোমাকেও ভালো রাখতে আর তোমার জন্য রেশমীর কাছে গিয়ে পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইতে। তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা দিবাকর।"

ফোনটা হাতে নিয়ে থ মেরে গেছে দিবাকর। তাহলে কি সিরিজা রজতকে কিছু বলেছে? মেয়েটা সত্যি পারে বটে। কখনও ওকে, কখনও রজতকে, সবাইকে যেন পাল্টে দিচ্ছে পুরোপুরি। সিরিজা সিরিজা আর সিরিজা। সত্যি যেন জবাব নেই সিরিজার। ফোনটা ধরে আবার হ্যালো হ্যালো বলছে দিবাকর। কিন্তু রজত কথা বলছে না। দিবাকর আসলে দেখতে পাচ্ছে না, ফোন ছেড়ে সিরিজার ঠোঁটের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে গেছে রজত। সিরিজা ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে। এখন যদি আবার সেই আগের মতন শরীরি ভালোবাসায় দুজনে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। বলার তাহলে কিছু নেই।

- "ছাড়ো আমাকে। যেই ক্ষমা করে দিলাম অমনি না?"

-- "আর একটু আর একটু।"

রজত আবার সিরিজার ঠোঁটের মধ্যে ঠোঁটটা চুবিয়ে দিতে যাচ্ছিলো, সিরিজা বাধা দিয়ে বললো, "আমাকে যে বললে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাবে, তার কি হলো?"

-- "যাবো তো। তোমার জন্যই তো এলাম। দেখ, তোমার জন্য একটা নতুন শাড়ী কিনে নিয়ে এসেছি।"

সুন্দর প্যাকেটে মোড়া শাড়ীটা খুলে দেখছিল সিরিজা। রজত সেই অবস্থায় আবার সিরিজার ঠোঁটের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছিল। সিরিজা যেন শাড়ীটা পেয়ে খুব খুশী হয়েছে সেটার জানান দিতে আবার রজতের ঠোঁটের সাথে ঠোঁটটা মেলালো। রজত এবার সিরিজাকে চুমু খাওয়ার জন্য দুহাতে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। এবার যে ধরলো, আর ওকে ছাড়লো না।

-- "সিরিজা আমি আগের মতন আর নেই বিশ্বাস কর।"

- "জানি আমি।"

-- "তোমার জন্য আমি সব করতে পারি, বল তো দিবাকরের পায়ে পড়ে ক্ষমাও চাইতে পারি। শুধু তুমি আমাকে ভুল বুঝো না সিরিজা। আমাকে আগের মতন আবার ভালো বাসবে তো? বলো?"

- "বাসবো বাসবো।"

-- "তুমি রাগ করবে না বলো?"

- "করবো না, করবো না। বলছি তো।"

রাগ যে একেবারেই নেই সেটা রজতও বুঝতে পারছিল, দেখলো সিরিজা ওর ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে এবার দীর্ঘচুম্বন দিতে চাইছে। রজত এই চুমু নিতে সবসময় আগ্রহী। এতবার চুমু খেয়েছে সিরিজাকে কিন্তু এই চুমু যেন ওর ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার উপহার। সিরিজা রজতের ঠোঁটটাকে গ্রহন করার আগে রজত নিজেই ওটা মেলে ধরলো। সিরিজা আসতে আসতে ওর ঠোঁটের সাথে রজতের ঠোঁটটাকে আবদ্ধ করলো। যখন করলো তখন রজত ভীষন খুশী। আবদ্ধ হতে হতে এবার মিলে মিশে এককাকর হয়ে গেল।

রজত আবেগের সাথে ওকে বলে উঠলো, "আমি তোমাকে ছাড়া আর কিচ্ছু চাই না সিরিজা। বিশ্বাস কর। সত্যি বলছি। তোমাকে আমি ভীষন ভালোবাসি।"

সিরিজা ঠোঁট ছাড়ার পরে রজত এবার নিজেই সিরিজার ঠোঁট দুটোকে কামড়ে ধরলো। হঠাৎ কামশক্তিটা ফিরে পাওয়াতে ও এবার সিরিজার বুকেও হাত দিয়ে ওর একটা বুক চেপে ধরলো।

- "দেখেছো অবস্থা! বলছি না বাইরে ঘুরতে যাবো। আবার আমাকে ছাড়তে চাইছে না। ছাড়ো বলছি। দুষ্টু, বদমাইশ।"

বলেই রজতের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সোফা ছেড়ে উঠে পড়লো সিরিজা। রজতকে চোখ বড় বড় করে বললো, "আমার চান হয়নি জানো? চান করবো না? আবার দুষ্টুমি শুরু করেছো।"

রজত সোফায় বসে হাসছিলো। বললো, "আমি চানে যাবো তোমার সাথে। নেবে না আমাকে?"

- "এমা, তুমি তো সকাল বেলাই চান করে বেরিয়েছো।"

-- "তাতে কি হয়েছে? আমার সিরিজার জন্য আমি যতবার খুশী চান করতে পারি। একবারের জায়গায় দুবার হলে মন্দ কি।"

- "একদম নয়। তুমি চুপটি করে বোসো ওখানে। আমি তাড়াতাড়িই চান সেরে আসছি। খালি যাবো আর আসবো।"
 
আপাতত সিরিজার ধমকানিতে রজত চুপ করেই বসে রইলো। ওর যেন মেনে নিতে ইচ্ছে করছিল না একদমই। সিরিজার দিকে তাকিয়ে বললো, "আমাকে নেবে না তো? ঠিক আছে আমিও বসে রইলাম এখানে চুপ করে। আর নড়বোই না এখান থেকে।"

সিরিজা মুখ ভেঙচে চলে যাচ্ছিলো বাথরুমের দিকে। যে তোয়ালেটা দিবাকরের হাতে দিয়েছিল একটু আগে, সেটা তখন ওর হাতেই ধরা ছিল। রজত মাথাটা এলিয়ে দিয়ে দিয়েছে সোফার ওপর। মাথাটা ওপরের দিকে তোলা। চোখ দুটো বোঁজা। এমন ভাব করছে যেন ও আর সিরিজাকে দেখতে পাচ্ছে না। শুধু সিরিজা পিছন ফিরলেই যদি ওর পিছু পিছু বাথরুমে ঢুকে যাওয়া যায়। চান্স একটা নেবে কিনা এমনই ভাবছিল রজত, সিরিজা কিন্তু বেশ সজাগ, রজতকে পেছনে আসতে দেবে না কিছুতেই। একবার শুধু মুখ ঘুরিয়ে বললো, "আমি সব দেখছি, তোমার সব চালাকি আমি বার করছি, দাঁড়াও, দাঁড়াও, আমি চান করে আসি তারপর তোমার মজা বার করছি।"

রজত আর উপায় না দেখে সোফাতেই বসে রইলো। সিরিজা ওকে ধমক দিলেও, আগের থেকে ও যে অনেক সহজ হয়ে গেছে সেটা রজতও বুঝতে পারছিল। শুধু বউ আর শ্বশুড় কে কিভাবে ঠেকানো যায় এই চিন্তা করতে করতে ও সোফার ওপর পড়ে রইলো।

বাথরুমে বেশ সময় নিয়ে চান করছে সিরিজা। রজত আওয়াজ মারলো, "তাড়াতাড়ি করো। বেরোতে হবে না?"

গলার আওয়াজ ভেতরে পৌঁছোচ্ছে না। রজত আবার চেঁচিয়ে বললো, "সিরিজা তাড়াতাড়ি করো। বেলা হলো যে। আমরা তো আবার বাইরে গিয়ে খাবো। দেরী করছো কেন?"

সিরিজা ভেতর থেকে একবার জোরে হ্যাঁ বললো শুধু। কিন্তু তাড়াতাড়ি আর বেরোলো না।

ঘড়ি দেখছিল রজত। সত্যি বেলা অনেক হলো। ক্ষিধেতে পেটে মোচড় দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি না বেরুলেই নয়। সিরিজাকে নিয়ে রেষ্টুরেন্টে খাওয়ার পর কোথায় ঘুরতে যাবে সেটাই ভাবছিল ও। যখন দেখলো সিরিজা তবু বেরোচ্ছে না বাথরুম থেকে। ও এবার আসতে আসতে বাথরুমের দরজাটার দিকে এগিয়ে গেলো।

দরজাটায় দুবার হাত দিয়ে জোরে টোকা মারলো রজত। বললো, "এই সিরিজা, তাড়াতাড়ি করো। দেরী হয়ে যাচ্ছে তো?"

ও সাড়া দিল না দেখে আবার দরজায় টোকা মারলো। দেখলো বাথরুমের দরজাটা দড়াম করে এবার ভেতর থেকে খুলে গেল। ভেতরে দাঁড়িয়ে সিরিজা বেশ রেগে মেগে ওকে বলছে, "কি হলোটা কি? আমাকে চানটাও করতে দেবে না?"

রজত দেখলো সিরিজার চোখে মুখে সাবানের প্রলেপ লাগানো। ওর মুখটা সাবানে ঢেকে গেছে বলে চেনাই যাচ্ছে না। সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শাওয়ারের তলায়। শাওয়ার বন্ধ। মুখটা রজতের দিকে ফেরানো। চোখ বন্ধ করে রজতকে বকা দিচ্ছে। অথচ ওর পুরো শরীরটা এখন রজতের সামনে উন্মুক্ত। রজত ইচ্ছে করলে সিরিজাকে নিয়ে পুরোনো খেলা শুরু করে দিতে পারে।

- "তুমি আসবে? না আমি দরজা বন্ধ করবো?"

রজতের চোখের সামনে সিরিজার সেই আনারসের মতন পুরুষ্ঠ দুই স্তনযুগল। পীনোন্নত সূচীমুখ। সদা উদ্ধত বুক দুটির মধ্যে যেন কোনো নতমুখীনতা নেই। মেদহীন তলপেটে সাগর সঙ্গমের কত প্রবল তাড়না। নিশিডাকের মতই অপ্রতিরোধ্য ওর শরীরের টান। মনে হয় দেহটা যেন গ্রীক ভাস্কর্য থেকে উঠে এসেছে। রজত আর তাড়া দেবে কি? ওকে ঐভাবেই দেখতে লাগলো।

সিরিজা ভেবেছে, রজত বোধহয় ভেতরে আসার জন্য দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। ওকে অনুমতি দিয়ে হুট করে দরজাটা খুলে দিয়েছে ওর সামনে। কিন্তু রজত এখন বাইরে বেরোনোর কথা বেমালুম ভুলে গেছে ওকে দেখে।

সিরিজার প্রশস্ত বুক দুটোর স্তনের বোঁটা দুটিকে ঠোঁটে বিদ্ধ করতে ভীষন মন চাইছিল রজতের। শরীরের শেষ না হওয়া যৌনতার আগুন আঁচ ওকে স্থির থাকতে দেবে না কিছুতেই। সিরিজা যেন এভাবেই ওকে পাগল করে দেবে চিরকাল।

রজত যেই ভেতরে ঢুকতে গেল, সিরিজাও চালাকী করে দরজাটা ওর মুখের ওপর বন্ধ করে দিল। রজতের নাকে লাগলো দরজার পাল্লাটা। অল্প ব্যাথা পেল। তবু হেসে বললো, "ঠিক আছে, তুমি চান করে বেরোও। এরপর আমি মজা দেখাচ্ছি!"

রজত যে সিরিজার জন্যই উন্মুখ হয়ে বসে থাকবে, এটা জানাই ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে ওর খেয়াল হলো সিরিজার জন্য দারুন একটা শাড়ী ও কিনে এনেছে, কিন্তু অফিস থেকে যে সাতদিনের ছুটিটা মঞ্জুর হয়েছে সিরিজাকে সেটা বলাই হয় নি। তালগোলে ভুলেই গেছে বলতে। শহরের বাইরে দূরে কোথাও, ওকে নিয়ে ঘুরতে আর কোনো বাধাই রইলো না।

ভয়ের চোটে আর একটা কথাও সিরিজাকে বলাই হয় নি। ও যখন আসছিল, তখন একটা স্বাস্থ্যবতী ছোটোখাটো চেহারার মেয়ে এ বাড়ীর সামনেই দরজাটার দিকে চেয়ে দাঁড়িয়েছিল। রজতকে আসতে দেখে নিমেষে চলে গেল এখান থেকে। মেয়েটা কে? আগে তো দেখিনি কোনোদিন। রজত বসে বসে ঐ মেয়েটার কথাও ভাবছিল। তবে অন্য কিছু নয়। মেয়েটা হঠাৎ ওর বাড়ীর সামনে এসে তাকাচ্ছিল কেন, সেটাই ওকে ভাবাচ্ছিল। সিরিজা কে জিজ্ঞাসা করা হয় নি। ও আসার আগে কোনো মেয়ে কি এ বাড়ীতে ঢুকেছিল? মেয়েটা সিরিজার কেউ হয় নাকি?

রজত ভাবল সিরিজা চান সেরে বেরোলেই ওকে জিজ্ঞাসা করবে কথাটা। ও সিরিজার বেরিয়ে আসায় সময় গুনতে লাগলো বসে বসে।

সিরিজা বেরোলো একটু পরেই। রজতকে বললো, "তোমার জন্য চানটাও ভালো করে করা হলো না। তুমি এমন ধাক্কা দিলে, আমি তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে এলাম।"

রজত হেসে বললো, "তাড়াহূড়ো? কতক্ষণ সময় নিলে দেখলে? পাক্কা চল্লিশ মিনিট!"

- "মেয়েদের চান করতে একটু বেশী সময় লাগেই।"

-- "তাই বুঝি?"

- "হ্যাঁ তাই। তার ওপর তুমি ঢুকলে ওটা দুঘন্টা হয়ে যেত।"

-- "আমাকে আর ঢুকতে দিলে কোথায়? মুখের ওপর দরজাটা লাগিয়ে দিলে। আমার নাকে লেগে গেল।"

- "বেশ হয়েছে। ঠিক হয়েছে।"

সিরিজা যেন মজা পাচ্ছিল। রজত আর কিছু করার নেই দেখে মুখটা গোমরা করে বসে রইলো। সিরিজা কাছে এসে রজতের দিকে তাকিয়ে বললো, "শাড়ীটা দাও। ওটা পড়বো।"

সিরিজার বুকের ওপর তোয়ালেটা জড়ানো। একটু নীচু হয়ে রজতের দিকে হাত বাড়ালো। তোয়ালেটা একহাত দিয়ে ধরে রেখেছে, ছেড়ে দিলেই খসে পড়বে। রজত তবু শাড়ীটা ওর হাতে দিচ্ছে না দেখে বিরক্ত হয়ে বললো, "দেখেছো তো? কি এবার দেরী হচ্ছে না। খুব যে আমায় তাড়া লাগাচ্ছিলে?"

রজত বেশ রসিয়ে মজা করে সিরিজাকে বললো, "তুমি তোমার তোয়ালেটা গা থেকে খুলে আমার হাতে দাও। আর আমিও শাড়ীটা তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি।"

- "কি শয়তানি বুদ্ধি। দেখেছো, ঠিক বসে বসে একটা বুদ্ধি বার করেছে মাথা খাটিয়ে!" রজতকে মিষ্টি কড়া সুরে ধমক লাগাচ্ছিল সিরিজা। তবুও জেদ ধরে বললো, "দাও বলছি। ভালো হবে না কিন্তু।"

রজত হেসে বললো, "আমিও তো বলছি। তুমি ওটা আমার হাতে দাও। আমিও দিচ্ছি তোমাকে শাড়ীটা।"

রজত কিছুতেই দেবে না শাড়ীটা। সিরিজাও নাছোড়বান্দা। কোনোরকমে রজতের হাত থেকে শাড়ীটা ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে দৌড় লাগালো শোবার ঘরের দিকে। রজতও পেছন পেছন ওকে ধাওয়া করে শোবার ঘরে চলে এল।

পেছন থেকে সিরিজাকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করছিল রজত। তোয়ালে শুদ্ধু সিরিজার বুক দুটো ওর হাতের তালুতে ঘসাঘসি হচ্ছে। গলার কাছটায় এমন আগ্রাসী চুমু খেতে শুরু করলো রজত, সিরিজা বললো, "আমাকে ছেড়ে দাও না গো। দেখো কি শুরু করলে তুমি। আমি এবার তৈরী হব কেমন করে?"

রজত তবুও ছাড়ছে না দেখে বললো, "এই, বেরোতে হবে না আমাদের?"

রজত সিরিজার গলায়, ঘাড়ে একটার পর একটা চুমু খেয়ে যাচ্ছিলো। সিরিজা হাল ছেড়ে দিয়ে বললো, "দেখেছো কি করছে? আমি এখন কি করি তোমাকে নিয়ে?"

ঘাড়ে একনাগাড়ে চুমু খেতে খেতে রজত বললো, "আমাকে চানে যেতে দাও নি। এই জন্য এটা এখন আমার প্রাপ্য।"

সিরিজা রজতের দিকে মুখটা ঘোরানোর চেষ্টা করছিল, রজত এমন আষ্ঠেপৃষ্ঠে ওকে জড়িয়ে রেখেছে যে ও পারছিল না। কোনোরকমে মুখটা একটু পিছন দিকে ঘুরিয়ে ও রজতকে বললো, "আমাকে একবার ছাড়ো। তারপর দেখ আমি তোমায় কি করছি।"

রজত যেই ওকে ছেড়ে দিল, সিরিজা এবার ঘুরে দাঁড়ালো। রজতের মুখের দিকে তাকিয়ে যেই কিছু বলতে যাবে রজত অমনি ওর ঠোঁটটা সিরিজার ঠোঁটের কাছে নিয়ে এল।

-- "কি শাস্তি দেবে আমাকে? বলো মাথা পেতে নিচ্ছি।"

সিরিজা কিছু বলতে পারলো না। রজত এবার আগ্রাসী চুম্বন দিয়ে ওর ঠোঁট দুটোকে সিরিজার ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে দিল। চুমুটাকে গাঢ় করে ও সিরিজার ঠোঁট দুটোকে চুষছিলো। সিরিজা ছাড়াতে পারছিল না নিজেকে। শুধু অস্ফুট স্বরে বললো, "তুমি আমাকে এবার আর ছাড়বে না, বুঝতেই পারছি।"

রজত তৃপ্তি করে সিরিজার ঠোঁটের স্বাদ নিচ্ছিল। ওকে প্রবল ভাবে চুমু খেতে খেতে বললো, "আমার মুখের ওপর দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছিলে না? তাই এটা এখন আমার প্রাপ্য।"

রজত থেকে থেকেই একবার করে সিরিজার ঠোঁট দুটোকে অল্প সময়ের জন্য মুক্তি দিচ্ছিলো, আবার পরক্ষনেই নিজের লোভী ঠোঁট দিয়ে সিরিজার ঠোঁট দুটোকে গ্রাস করে নিচ্ছিল। একবার শুধু সিরিজার ঠোঁটের ওপর নিজের আঙুলটা রেখে ওকে বললো, "তোমার এটা কি জানো?"

সিরিজা বললো, "কি?"

-- "এটা একটা অনবদ্য চোষার জিনিষ!

বলেই সিরিজার ঠোঁটের ওপর নিজের লালাসিক্ত জিভ দিয়ে অরিগামি কারুকাজ এঁকে দেওয়ার কাজ শুরু করে দিল রজত। চুষতে লাগলো ঠোঁটটা। মনের আনাচে কানাচে জমে থাকা তিয়াসটা তখন অসম্ভব ভাবে মিটে যাচ্ছে সিরিজার ঠোঁট দুটোকে কেন্দ্র করে। সিরিজা চোখ বন্ধ করে শুধু রজতকে মিনতি করছে, "আর খেয়ো না গো। দেখো কেমন করে চুমু খাচ্ছে আমায়। আবার শুরু করেছে কালকের মতন।"

-- "এটাই তো ভালো না সিরিজা? তোমার আর আমার। এক হয়ে যাওয়া দুটি ঠোঁট। সবসময় মিলে মিশে থাকা। যেন কত ভালো।"

চুমু খেতে খেতে সিরিজার সেক্সটাকেও তোলার চেষ্টা করছিল রজত। ওর বুকে জড়ানো তো্য়ালেটা আসতে আসতে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে, রজত হাত দিয়ে ওটাকে টেনে মাটিতে ফেলে দিয়ে সিরিজাকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে দিল। আচমকা ঠোঁট থেকে মুখটা তুলে নিয়ে এবার সিরিজার একটা স্তন খুব তাড়াতাড়ি মুখে পুরে নিল রজত। সিরিজা চোখ বন্ধ করে রজতকে বারবার অনুরোধ করছে, রজত শুনছে না। একবার শুধু বলে উঠলো, "দোহাই আর কোরো না। এবার কিন্তু আর বেরোতে পারবো না আমরা।"

-- "পারবো পারবো সিরিজা। পারবো। শুধু আর একটু। পারি না গো, তোমায় এভাবে না পেলে পারি না।"

সিরিজার স্তনের বোঁটা মুখে নিয়ে চুষতে চুষতে কাতর অনুরোধ জানাচ্ছিল রজতও। বোঁটাটায় জিভ ঠেকিয়ে প্রবল টান দেওয়ার চেষ্টা করছিল, যেন মুখে নিলেই স্পেশাল কিছু পান করার আলাদা ইচ্ছা মনের মধ্যে দানা বেধে বসে। দুটো বুক দু হাতে মুঠোর মধ্যে ধরে রজত শুধু বোঁটা দুটো পালা করে চুষতেই লাগলো না। সেই সাথে বাতাবী বুক দুটো হাতের তালুতে ভালো করে পিষতেও লাগলো। সিরিজার বুকে যেন দুটো জোড়া মিসাইল। এখন শুধু উৎক্ষেপনের অপেক্ষায়। রজত চুষতে চুষতেই সিরিজার বুক জোড়া থেকে দুধ বের করে আনল অনায়াসেই। মুখে নিল দুধ। গড়িয়ে আসা দুধ জিভে ভরিয়ে নিল। দুই বুকের নিসৃত দুধ নিজের ঠোঁটে মাখিয়ে নিয়ে প্রবল তৃপ্তিতে এবার সিরিজার বাকী দুধটাও চোখ বন্ধ করে বোঁটা চুষে চুষে পান করতে লাগলো।

- "আহ্। ছেড়ে দাও আমাকে। খেয়ো না রজত। আর খেয়ো না। দেখ কেমন করছে আমার ভেতরটা।"

-- "একটি বার তোমাকে শুধু এখন করতে চাই সিরিজা। ব্যাস। তারপরেই আমরা বেরোবো। তুমি না কোরো না দোহাই।"

সিরিজার দুধটা চুষতে চুষতেই রজত এবার হাত লাগিয়ে নিজের প্যান্টটা খুলতে লাগলো। খুলে টেনে নামিয়ে দিল নিচের দিকে। রজতের কাঁধে দু হাত রেখে সিরিজা মাথাটা করে দিয়েছে পেছন দিকে। রজত প্যান্ট খুলে নিজের লিঙ্গটাকে হাতে ধরে একবার টান টান করে নিল। সিরিজার ফুটোতে ঢোকানোর আগে আবার কিছুক্ষণ সিরিজার বুকের দুধ চোষার দিকেই মনোযোগ দিল।

রজতের জেগে ওঠা কামনা সিরিজার সারা শরীরটাকে থরথর করে কাঁপিয়ে তুলছে। সিরিজা বুঝতে পারছে রজত যেভাবে ওকে ধরেছে, সহজে ছাড়বে না। হঠাৎ ই বুক দুটোকে প্রবল ভাবে চুষতে চুষতে রজত যেন এক তৃষ্ণার্ত প্রেমিক। মাথা থেকে উবে গেছে সিরিজাকে নিয়ে বাইরে বেরোনোর ব্যাপারটা। পাগল হয়ে যাচ্ছে ও। এত সুন্দর, এত মনোরম, এত আরামদায়ক, সিরিজার স্তন জোড়ার ওপর নিজের অধিকার প্রয়োগ করে সুখতৃপ্তিটাকে সম্বল করে রোমাঞ্চিত হতে চাইছে ভীষন ভাবে। সিরিজা ওকে থামাতে চাইছে কিন্তু ও থামতে চাইছে না।

রজত উদ্দাম হয়ে ওর বুক দুটোকে চুষতে চুষতে শুধু একবারই বললো, "আমি তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করিনি কোনোদিন। শুধু একবার চাই, তুমিও আমাকে উত্তপ্ত কর। যেমন আগে করতে, প্লীজ।"

আদর সোহাগ শৃঙ্গারে উদ্রিক্ত করলে রজত আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে, সিরিজাও বুঝতে পারছিল। তবুও ঐ অবস্থায় সিরিজা রজতকে চুমু না খেয়ে পারলো না। আপোষে মিলন না হলে যেন সুখ নেই। কয়েক ঘন্টার মনোমালিন্য। সিরিজার রজতকে ভুল বোঝা, রজতের ভয় সিরিজাকে হারানোর, সবই ধুয়ে মুছে গেল একটা মূহূর্তের মধ্যে। সিরিজা রজতকে চুমুর পর চুমু খেতে লাগলো। রজতও সেই সুযোগটা নিল পুরোদমে। ও সিরিজার বর্তুল স্তন থেকে দ্বিগুন উৎসাহে আবার পান করতে লাগলো।

স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফুর্ত মিলন রজত সিরিজার কাছ থেকে প্রবল ভাবে আশা করছিল, সিরিজা নিরাশ করলো না রজতকে। বিছানায় দুজনেই জড়াজড়ি করে এবার শুয়ে পড়লো। রজত ওর প্যান্টটাকে মাটিতে ফেলে রেখেই সিরিজার শরীরের ওপর চড়াও হয়ে ঝড় বওয়াতে চাইছে। সিরিজার ঠোঁটে চুমু খেয়ে রজত বললো, "কি, দেহ মন উজাড় করে দেবে না এবার আমাকে? মিলনের যে শান্তি আছে, সিরিজা, সে শান্তিতো কোথাও নেই। আজ সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দাও।"

সিরিজার কাছ থেকে চরম সুখ লাভ করার উদ্দেশ্য সাধন করতে চাইছিল রজত। ওর উদ্দেশ্য এবার সার্থক হলো। এতটা পারদর্শী রজত, সিরিজার প্রিয় পুরুষ ও ছাড়া যেন সত্যি কেউ নেই। নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই, এমন ভাবেই সিরিজার বুকের ওপর শরীর চাপিয়ে ওর স্তন তখনও চুষতে চুষতে রজত লিঙ্গ ঢোকাতে শুরু করলো সিরিজার যোনীর মধ্যে। লিঙ্গটা পুরোটা প্রবেশের পর সিরিজাও রজতের ঠোঁট গ্রাস করে ওকে ভেতরে সঞ্চালনের জন্য আহবান করছে। ভীষন ভাবে উজ্জীবিত তখন রজত।

সিরিজা শুধু একবার বললো, "তোমার যেমন ইচ্ছে তেমন কর। কখনও ভেবো না, এই সুখটুকু তোমাকে আমি পেতে দেব না। সিরিজা তোমার জন্য আছে, থাকবে। সে কোথাও কারও কাছে কোনও দিন যাবে না।"

রজত আস্তে আস্তে সিরিজাকে ধাক্কা দিচ্ছে, একটা রমন-সুখের গুঞ্জনধ্বনি বেরোতে লাগলো সিরিজার মুখ দিয়ে। আঘাতটা দৃঢ় হতেই অস্ফুট শব্দটা সিরিজার ক্রমশই বাড়তে লাগলো। কামোত্তেজনা দুজনেরই বৃদ্ধি পাচ্ছে, আঘাতের দিকে আর ভ্রুক্ষেপ নেই সিরিজার। দুজন দুজনকে নিজ প্রয়োজনে নিজ খুশী মতন উপভোগ করে নিচ্ছে। আবেগের সাথে রজতের ঠোঁটে চুমু খেতে খেতে ও ধাক্কাটাকে ক্রমশই আঘাত থেকে আরামে পরিণত করতে লাগলো। সিরিজার শরীরে চুমু খাওয়ার যে কটা উপযুক্ত স্থান আছে, রজত ওকে গাঁথুনি দিতে দিতে সবকটাতেই অনুরাগের চিহ্ন দিয়ে যেতে লাগলো।

কামপ্রকৃতি রজতকে সীমা লঙ্ঘন করায় বারেবারে। ও এবার হঠাৎই লিঙ্গটাকে সিরিজার যোনীর ভেতর থেকে বার করে সেখানে মুখ দিয়ে বসল।

- "কি হলো?"

কামান্ধ হয়ে রজত সিরিজার যোনী চুষতে আরম্ভ করেছে হঠাৎই। অধৈর্য হয়ে পড়েছে প্রচন্ড। সিরিজাও উপায় না দেখে যোনীটা মেলে ধরলো রজতের সামনে। রজতের মাথায় একটা হাত রেখে ও রজতকে বললো, "ভীষন উতলা হয়ে পড়েছ তুমি।"

বর্ধিত কামনা তখন যেন দ্বিগুণ আকার ধারণ করেছে। রজত নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাইছিল যোনী চোষার আনন্দে। অতিমাত্রায় সুখ এবার ও পেতে লাগলো। ক্লিটোরিসটা যতই জিভ দিয়ে নড়াচড়া করছিল, সিরিজা ততই কামোত্তেজিত হচ্ছিল। তৃপ্তিদায়ক মিলনের আগে সিরিজার যোনী থেকে রসক্ষরণ হলে রজত ওর দুজনেরই সুবিধে। অপার সুখ চরম শান্তিতে রজতকে এবার ভরিয়ে দিতে লাগলো সিরিজা।

ওর যে তখন কি হচ্ছিল ভেতরটা ও নিজেই বুঝতে পারছিল। রসক্ষরণ শুরু হওয়া মাত্রই ও একটা পা তুলে দিল রজতের কাঁধে। নিজেকেও সামাল দিতে পারছে না। রজতের লোভ এদিকে বেড়ে যাচ্ছে।

সিরিজা বাধ্য হয়ে বললো, "এই, আর পারছি না।"

রজত যোনী চোষার ফাঁকে বললো, "আমিও"

হৃৎপিন্ডের গতি চঞ্চল। গভীর একটা অনুভূতি। রজত তবু যোনী চোষা ছাড়ছে না দেখে সিরিজা অনীহা প্রকাশ করলো না। ওর শরীরের উত্তাপ রজতের থেকেও বেড়ে যাচ্ছে। সারা অঙ্গে উত্তেজনা। পাপড়ি জল ক্ষরণ হয়ে মত্ত করে দিচ্ছে রজতকে। এবার ও জিভ তুলে সিরিজার যোনীতে আঙুলের অগ্নিবলয়ের খেলা খেলতে শুরু করলো। বিবরের মধ্যে একবার ঢুকে যাচ্ছে আঙুল। কখনও জিভ আবার ওঠানামা করছে। শরীরের রক্তটা দেহের উত্তাপে টগবগ করে ফুটতে লাগলো রজতের। চানের পরে সিরিজাকে এভাবে পাবে ও যেন আশা করেনি।

উত্তাপ তুঙ্গে উঠে গেছে সিরিজারও। দেহের অগ্নিকুন্ড থেকে কামনার জারক রস বেরিয়ে আসছে। রজত সেই রস পান করছে আবার। সিরিজা ওকে অনুরোধ করে বললো, "আর খেয়ো না। এবার উঠে এস ওপরে। আমি পারছি না।"

রজত এবার লিঙ্গ পুনরায় প্রবেশ করালো। সিরিজার মধ্যে ডুবে যেতে লাগলো আসতে আসতে। রতিসুখ তীব্র ভাব উপভোগ করতে লাগলো দুজনেই। দেহমনের কানায় কানায় প্রত্যাশা বেড়ে যাচ্ছে দুজনেরই। প্রবল সঙ্গমে সুখ তৃপ্তির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে গেছে রজত আর সিরিজা। প্রায় আধ ঘন্টা ওরা এভাবে মত্ত হয়ে রইলো। যৌনতার কেরামতি দেখাতে রজত সিরিজাকেও প্রবল সুখ দিল।

বীর্যটা নিঃক্ষেপ করার আগে শুধু একবার সিরিজাকে রজত বললো, "ভগবান তোমাকে আমার কাছে পাঠিয়েছে সিরিজা। আমার জীবনকে ধন্য করার জন্য। ভগবানের এ ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারবো না।"

একদিকে সিরিজার শরীরের সব উত্তাপ ঝড়ে পড়ছে রজতের লিঙ্গরাজের ওপর। আর একদিকে রজতও বীর্যরস উদগীরণ করে দিচ্ছে সিরিজার অভ্যন্তরে। দুজনের অভ্যন্তরেই সুখের লাভা গলে গলে পড়ছে। সিরিজা রজতকে জড়িয়ে রেখেছে। চুমু খাচ্ছে রজতের ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে।

নিজেকে পুরো সিরিজার মধ্যে নিঃশ্বেস করে রজত সিরিজার ঠোঁটের ওপর থেকে এবার নিজের ঠোঁটটা আলগা করে নিল। ওকে নিজের শরীরের তলায় শুইয়ে রেখে গালে দু-দুটো চুমু খেয়ে একটা কথাই বললো, "জোর গলায় তুমি আমাকে বলেছিলে সিরিজা, এই সুখ তুমি আমাকে চিরকাল দেবে। আমি কোনদিন বঞ্চিত হবো না তোমার কাছ থেকে। আজ তোমার কাছে এই কামনাটাই আবার রাখলাম। তুমি যা বলবে, আমি তাই করবো। এতোদিন বিভিন্ন ফুলে আমি মধু আহরণ করে বেরিয়েছি। কিন্তু আজ তোমাকে পাবার পর যে ফুলের মিষ্টি সুবাস পেয়েছি, তার ঘ্রাণই আমাকে চরম আনন্দ দিয়েছে। আমি তোমাকে হারাতে চাই না সিরিজা।"

সিরিজা মুচকী মুচকী হাসছিল। বললো, "ভালোবাসার নমুনা আর কি দেখতে চাও বলো?"

-- "আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না সিরিজা। আজ সকালে বেরোনোর সময় থেকেই মনে হচ্ছিল, তুমি যেন আমায় অপছন্দ করছো।"

- "আর এখন যে তোমায় আদর করলাম?"

-- "এই আদরটাই তো চেয়েছিলাম তোমার কাছ থেকে।"

- "এবার তাহলে আমাকে ছাড়ো। তৈরী হয়ে নিই তাড়াতাড়ি।"

পরিতৃপ্ত রজত সিরিজাকে শেষবারের মতন চুমু খেয়ে বললো, "তোমাকে সাজিয়ে দেব সিরিজা? তোমাকে সাজাতে আমার দারুন লাগবে।"

- "কেন আমি কি সাজতে পারি না নাকি?"

-- "সাজো না সিরিজা? তোমাকে নিয়ে আজ বেরোবো। সবাই দেখবে আমার নতুন বউ যাচ্ছে।"

- "আমাকে তুমি বিয়ে করেছো এখনও? যে আমাকে তোমার বউ বললে?"

-- "চলো আজই বিয়ে করবো তোমাকে।"

- "ও মা কোথায়?

-- "চলো মন্দিরে যাই।"

- "না না মন্দিরে নয়।"

-- "কেন?"

- "আমি চাই, তুমি সবাইকে ডাকবে। সবাই আমাকে দেখবে। তোমার নতুন বউয়ের সাথে তুমি সবাইকে পরিচয় করাবে।"

-- "দূর বোকা মেয়ে। আমার আবার তুমি ছাড়া কেউ আছে নাকি? কে আসবে আমাদের বিয়েতে? হ্যাঁ যদি বলো, দিবাকরকে নিশ্চয়ই ডাকতে পারি।"

- "আর দিবাকরদার বিয়েটা?"

-- "দিবাকরের বিয়ে?"

- "হ্যাঁ রেশমীর সাথে যদি....."

রজত হাসতে হাসতে বললো, "বুঝেছি, তুমি দিবাকরের বিয়েটা এবার তাহলে দিয়েই ছাড়বে। বেশ তবে তাই হোক।"
 
।। উনিশ ।।

রজতের কেনা নতুন শাড়ীটা সিরিজা যখন পড়ছিল রজত ওর সামনেই বসেছিল। মাথায় একটা ঘোমটা টেনে দিলেই নতুন বউ বউ দেখাবে। রজত বললো, "দাও না ঘোমটাটা। দেখি তোমাকে কেমন লাগে?"

উপভোগ্য যৌনসঙ্গমের পর নতুন বউ হিসেবে সিরিজাকে দেখতে ভীষন উসখুস করছিল মনটা। নীল রঙের লাইলন শাড়ী পড়ে সিরিজাকে পরীর মতন সুন্দর দেখাচ্ছে। রজতের দেওয়া উপহার সিরিজা বেশ সময় নিয়ে পড়ছিল। সিরিজা রজতকে বললো, "ইস, একদম বেছে বেছে পাতলা শাড়ীটাই কিনেছো? আমার আঁচলের তলা দিয়ে বুকের ওঠানামাটা তো দূরের লোকেদেরও চোখে পড়বে।"

-- "এমন শাড়ীতেই তো তোমাকে মানায়।"

- "আর কেউ যদি আমার দিকে খালি তাকায়?"

রজত হেসে বললো, "দূর, আমি তো তোমাকে ট্যাক্সিতে নিয়ে ঘুরবো। দূর থেকে তোমাকে দেখবে, এমন কার সাধ্যি?"

- "কেন? আমি বুঝি পায়ে হেঁটে ঘুরবো না?"

-- "এই ভর দুপুরবেলা পায়ে হেটে কোথায় ঘুরবে? শহর দেখতে হলে ট্যাক্সিটাই তো বেস্ট।"

- "তোমার যদি একটা গাড়ী থাকতো, খুব ভালো হতো। তোমার পাশে বসে আমি গাড়ী করে ঘুরতাম।"

-- "কিনবো, কিনবো। আগে আমার পুরোনো ঝেমেলাটা মিটতে দাও। তারপর দেখো তোমার জন্য আমি কি কি কিনি।"

শাড়ী পড়ে সেজেগুজে সিরিজা এবার রজতের দিকে পুরোপুরি মুখ ঘোরালো। বললো, "আর কি কিনবে আমার জন্য?"

-- "এই পৃথিবীতে যা আছে, সব কিনে নেবো। আমার সিরিজার জন্য আমি সব কিনতেও রাজী।"

একটু কাছে এসে সিরিজা রজতের কাঁধের ওপর দুই হাত রাখলো। ওর দিকে তাকিয়ে বললো, "অত সোজা নয় বুঝলে? আমি গ্রামের মেয়ে তো, তাই আমার মন রাখার জন্য এসব বলছো।"

-- "কেন? কিনতে পারি না নাকি? ছেলেরা ইচ্ছে করলে সব পারে। আমিও পারি। আমার সিরিজার জন্য আমি সব পারি।"

বলেই রজত একটা চুমু খেতে যাচ্ছিলো সিরিজার ঠোঁটে। ওকে বাধা দিয়ে সিরিজা বললো, "এই এখন আর নয়। এরপরে কিন্তু আমাদের আর বেরোনোই হবে না।"

একটা হালকা লিপস্টিক লাগিয়েছে সিরিজা ঠোঁটে। তাতেই মনে হচ্ছে আগুন জ্বলছে ওর ঠোঁটে। রজত চাইছিলো ওর আগুন ঠোঁটেই চুমুটা খেতে। লিপস্টিক খারাপ হয়ে যাবে বলে সিরিজা বললো, "এদিকে আমাকে সাজাবে বলছিলে, আর এখন আমার সাজ নষ্ট হয়ে গেলে বেরোতে পারবো? তখন তুমি একাই যেও।"

-- "আচ্ছা আচ্ছা ভুল হয়ে গেছে।"

রজত তখন মাথা নীচু করে সিরিজার কাছে ক্ষমা চাওয়ার ভাব করছে। সিরিজা বললো, "সেই থেকে দুষ্টুমি করছো, আমাদের কতো দেরী হয়ে গেল বলো তো। কখনই বা খাবো, আর কখনই বা ঘুরবো?"

রজত বললো, "আমি একটা ট্যাক্সি ডেকে নিয়ে আসি। একদম বাড়ীর সামনে। তারপর তুমি আর আমি, ট্যাক্সিতে চড়ে....."

- "না না, এই প্রথম তোমার সাথে ঘরের বাইরে বেরুচ্ছি। একটু তো হাঁটি। ট্যাক্সি তো মোড় থেকেও পেয়ে যাবে।"

রজত সিরিজার কথার আপত্তি করলো না। ওকে পাশে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাবে। কেউ যদি তাকায়। ওর বুকটা দূর থেকে দেখে দেখুক না। সিরিজা ওদেরকে না দেখলেই হলো।

রজত সিরিজার হাতটা ধরে বললো, "চলো তাহলে যাই।"

সিরিজা হেসে বললো, "এবার ঘোমটাটা দেবো?"

এই প্রথম রজতের সাথী হয়ে বাড়ীর বাইরে বেরোলো সিরিজা। দুর্লভ মূহূর্তগুলো ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো এতদিন। সুখের সহবাসে সিরিজাকে নিয়ে যৌনমিলন করতে করতে চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে রজত ওকে বাইরে নিয়ে বেরোতেই ভুলে গেছে। আজ সেই ইচ্ছাটাও পূরণ হলো।

সিরিজার হাতটা ধরে রজত বললো, "ধ্যাত, এখন ঘোমটা দিতে হবে না। ওটাতো তোমাকে বউ হিসেবে কেমন লাগে সেটা দেখার জন্যই বলেছিলাম।"

ঘর থেকে বেরিয়ে গলিটা দিয়ে রজতের পাশে পাশে হাঁটছিলো সিরিজা। রজত হেসে বললো, "রাস্তায় তোমাকে যদি একটা চুমু খেতে পারতাম, দারুন হতো।"

- "এই তুমি কিন্তু খেয়ো না। তাহলে সবাই কি ভাববে?"

রজত জানে লিপষ্টিক ঘসা সিরিজার ঠোঁটে চুমু খেতে পুড়িয়ে দিলে ভালোই লাগবে। কিন্তু এই রাস্তার মধ্যে কি করে তা সম্ভব? ও বললো, "ট্যাক্সিতে উঠি। তারপর তোমার ঠোঁটে চুমু খাবো।"

সিরিজা বললো, "খাওয়াচ্ছি দাঁড়াও!"

-- "বারে? ট্যাক্সির মধ্যে খেলে আর কি দোষ?"

রাস্তার ওপরে হঠাৎই দাঁড়িয়ে সিরিজা বললো, "তাহলে এক্ষুণি খাও।"

-- "এই না। তা খাওয়া যায় নাকি? তোমার সাজগোজ নষ্ট হয়ে গেলে? কেউ যদি দেখে ফেলে?"

মুখে বলাটা যত সহজ, করাটা তত সহজ নয়। ঘরের জিনিষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে করলে পাড়ার লোকেরা টিটকিরি মারবে। পাড়ায় টিকতে দেবে না। রজত তবু বললো, "এখনও দুপুর গড়িয়ে বিকেলটা হয় নি। সন্ধে হলে চুমুটা অনায়াসে খেতে পারতাম।"

সিরিজা বললো, "আর চুমু খেতে হবে না। এবার চলো তো।"

গলিটা পেরিয়ে রাস্তার মোড়ে এসেও রজত দেখলো একটাও খালি ট্যাক্সি নেই। দুপুরবেলা লোকজন বিশেষ চলছে না রাস্তা দিয়ে। একটা ট্যাক্সি বিকট আওয়াজ করতে করতে ওদের সামনে দিয়ে চলে গেলো। কিন্তু ট্যাক্সিটা খালি নয়। রজত বললো, "ট্যাক্সি না পেলে এই দুপুরবেলা তোমাকে নিয়ে আর কত হাঁটাই বলো তো?"

হাত ঘড়িতে টাইমটা দেখে রজত বললো, "নাহ সত্যিই অনেক দেরী হয়ে গেলো। তোমাকে নিয়ে আর একটু আগে বেরোলেই ভালো হতো।"

খালি একটা ট্যাক্সি ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। রজত ট্যাক্সিওয়ালাকে বললো, "ধর্মতলা যাবেন?"

-- "হ্যাঁ যাবো, উঠুন।"

ড্রাইভারটা আড়চোখে সিরিজাকে একবার দেখলো। চোখের দৃষ্টিতে মুগ্ধতা। এমন চোখ ধাঁধানো নারী এই প্রথম উঠছে ওর ট্যাক্সিতে। সিরিজার মনে হলো, গাড়ীটা বোধহয় ওকে দেখেই দাঁড় করালো ড্রাইভারটা।

রজত সিরিজাকে পাশে নিয়ে শরীরে শরীর ঠেসে বসলো।

- "চলুন তাড়াতাড়ি। আমাদের খুব দেরী হয়ে গেছে।"

-- "ধর্মতলায় কোথায় যাবেন?"

- "যাবো কোনো ভালো রেষ্টুরেন্টে। দুপুরের খাওয়াটা ওখানেই সারতে হবে।"

ধর্মতলা কোথায়? সিরিজা রজতকে বললো, "তুমি ধর্মতলায় যাবে?"

-- "হ্যাঁ। ধর্মতলা হলো, এই শহরের হার্ট অব দ্য সিটি। আর একটু এগিয়ে চৌরঙ্গী তারপরে পার্কস্ট্রীট। কলকাতার সাহেবি পাড়া। তুমি তো দেখো নি। চলো আজ তোমায় সব দেখাবো।"

ড্রাইভারটা মুখ ঘুরিয়ে একবার তাকালো। যেন ওরও অবাক লাগছে। এই মহিলাটি বোধহয় অন্য জায়গা থেকে এসেছে।

রজত ভাবছে সিরিজাকে চুমুটা এবার খাবে কিনা। ওর কাঁধে পেছন দিক দিয়ে হাতটা রেখে বললো, "এই কাছে এসো না একটু।"

- "আর কত কাছে আসবো বাবা, এই তো কাছেই রয়েছি।"

রজত সিরিজাকে চুমুটা খেতেই যাচ্ছিলো, সিরিজা বললো, "এই, এখন না। লোকটা কি ভাববে?"

-- "সবাই তার নিজের বউকে চুমু খায়। আমি খাচ্ছি তো কার কি?"

- "তাহলেও বলছি না পরে। আচ্ছা আচ্ছা ফেরার সময়। রাত্রিবেলা।"

রজত তাও মুখটা বাড়িয়ে দিচ্ছিলো সিরিজার দিকে। হঠাৎ ছন্দোপতন হলো, ড্রাইভারটা একটা কথা জিজ্ঞেস করাতে।ও বললো, "আচ্ছা, আমি কি পার্কস্ট্রীট যাবো?"

চুমু খাওয়াতে ব্যাঘাত ঘটালেই বিরক্তি এসে যায়। রজত বললো, "আমি তো পার্কস্ট্রীট বলিনি। ধর্মতলাতেই চলুন।"

ধর্মতলায় অম্বর রেষ্টুরেন্টটা বেশ ভালো। একতলা, দোতলা, তিনতলা। তিনটে তলাতেই রেষ্টুরেন্ট। মনে আছে একবার রেশমিকে নিয়ে রজত এসেছিলো ডিনার করতে। সাথে দিবাকরও ছিলো। ফেরার সময় সে কি বৃষ্টি। রেশমি খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো সেদিন। - "এমা, এতো বৃষ্টি! আমি বাড়ী যাবোও কি করে?"

- "কেন? তোমাকে ট্যাক্সীতে পৌঁছে দিচ্ছি আমি।"

রজত তখন রেশমির জন্য পাগল।

গাড়ীতে প্রবল ইচ্ছা থাকলেও রেশমিকে চুমুটা খাওয়া হয় নি সেদিন। কারন পাশে দিবাকর ছিলো। বারবার মুখ ঘুরিয়ে ড্রাইভারটাও দেখছিলো ওদের তিনজনকে। আজ যেন এই ড্রাইভারটাও একই জিনিষ করছে। রজত বিরক্ত হয়ে বললো, "আপনাকে বারবার জিজ্ঞাসা করতে হবে না। সোজা ধর্মতলাতেই চলুন।"

সিরিজার দিকে মুখ ঘুরিয়ে রজত দেখলো, সিরিজা হাসছে। রজত চুমুটা খেতে পারেনি বলে ওর বোধহয় মজা লেগেছে।

ড্রাইভারটি তখনও চমকে ওঠেনি। সুন্দরী মহিলাটিকে নিয়ে লোকটা যেন কি শুরু করেছে। ও আর তাকালোই না পেছন ফিরে।

রজত বললো, "তোমার আগুন ঠোঁটে একটা চুমু খেতে দাও না সিরিজা?"

- "দিতে পারি, কিন্তু আমার লিপস্টিক কিন্তু নষ্ট হয়ে যাবে।"

তাও তো বটে। রজত বললো, "তাহলে থাক। আমি বরং পরে। তবে গালে তো এখন একটা খেতে পারি।"

সিরিজার গালে চুমু খাওয়ার সময় গাড়ীটা একটা ঝাঁকুনি খেলো। রজত বললো, "আস্তে চালান।"

ড্রাইভারটা বললো, "কি করবো? বড় একটা গর্ত পড়ে গিয়েছিলো।"

অম্বর বার এন্ড রেষ্টুরেন্টে পৌঁছোতে সময় লাগলো পাক্কা চল্লিশ মিনিট। ঘড়িতে বিকেল চারটে বাজে। সিরিজা বললো, "এখানে খাবার পাবে এখন?"

রজত বললো, "এখানে সবসময়ই খাবার পাওয়া যায়। ভেতরে ঢুকি চলো। দেখবে কি দারুন রেষ্টুরেন্ট।"

একতলাটা পুরো ভর্তি। রজত বললো, "চলো তোমাকে নিয়ে আমি দোতলায় যাই।"

সিঁড়ির ওপরে কার্পেট পাতা। ওঠার সময় সিরিজা বললো, "কি দারুন। আমি কোনোদিন ভাবিনি। এতো দামী রেষ্টুরেন্টে এসে খাবো।"

দুটো লোক নামছিলো দোতলা থেকে। সিরিজার দিকে তাকিয়ে ওরা দেখছিলো। রজত বললো, "তুমি এমনই। সবাই খালি তোমার দিকে তাকায়। ভেতরে যখন ঢুকবো। তখনও দেখবে সবাই তোমার দিকে কেমন সবাই তাকাচ্ছে।"

দোতলায় বড় একটা হলঘর। রজত সিরিজাকে নিয়ে একটা টেবিলের মুখোমুখি বসলো। একতলার থেকে দোতলায় ভীড়টা কম। অল্প কিছু লোক বসে খাবার খাচ্ছে। দুটো ফ্যামিলি এসেছে। সাথে দুটো করে বাচ্চা।

এক ভদ্রলোক কিছুটা দূরে বসে ড্রিংক করছে একা একা। গ্লাসটা মুখে তুলে একবার সিরিজার দিকে তাকালো। সিরিজা বললো, "এখানে মদও পাওয়া যায়?"

-- "হ্যাঁ এটা তো বার কাম রেষ্টুরেন্ট। ইচ্ছে করলে ড্রিংকও করা যায় আবার খাবারও খাওয়া যায়।"

খাবারের মেনু কার্ডটা হাতে নিয়ে রজত বললো, "কি খাবে বলো? অর্ডারটা দিই।"

- "তুমি যা খাবে, আমিও তাই খাবো।"

-- "চিকেন খাবে চিকেন? না ভাত আর মাছের ঝোল?"

ওয়েটার অর্ডার নিতে এসে সিরিজাকেই দেখছিলো, রজত তখন মেনুকার্ড এ চোখ বোলাচ্ছে। ওয়েটার এর নজর ঘুরিয়ে বললো, "এই যে এদিকে। দু জায়গায় রাইস, আর সাথে ডাল ফ্রাই দাও। পনীর মশালা আর চিকেন কারী। তাড়াতাড়ি। বড্ড খিদে লেগেছে।"

খাবারের অর্ডার নিয়ে ওয়েটার চলে গেলো। রজত বললো, "দেখেছো? সবাই তোমাকে কেমন দেখছে। এতোদিন তোমায় শুধু আমি দেখেছি, এখন বাকীরা দেখছে।"

সিরিজা বললো, "এখান থেকে খাবার খেয়ে কোথায় যাবে?"

রজত বললো, "যাবার জায়গা তো অনেক আছে। ধর্মতলা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পার্কস্ট্রীট। তারপরে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। যদি বলো নিউমার্কেটেও নিয়ে যেতে পারি।"

- "মার্কেট?"

-- "হ্যাঁ অনেক জিনিষ কিনতে পাওয়া যায়। যাবে?"

- "আমি আর কি কিনবো?"

-- "তুমি যেটা কিনতে চাইবে। সেটাই কিনে দেবো।"

সিরিজা বললো, "না না, আজ কিছু কিনবো না। আজ শুধু ঘুরবো। এখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে তুমি যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে। তুমি না বলেছো আজ আমাকে নিয়ে ঘুরবে?"

-- "বলেছি তো। চলো কোথায় যাবে? তুমি যেখানে যেতে চাইবে, আমি সেখানেই নিয়ে যাবো।"

সিরিজা বললো, "আমি ধর্মতলা ঘুরবো।"

রজত বললো, "আসলে এই জায়গাটা শুধু লোকে গিজগিজ করছে। তোমাকে নিয়ে একটু ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো।"

- "কেন?"

-- "নিরিবিলিতে তোমাকে বসে আদর করতাম। তোমার বুকে মুখ রাখতাম, তোমার ঠোঁটে চুমু খেতাম। আর....."

- "আর কি করতে?"

রজত মিটিমিটি হাসছিলো। সিরিজা ওকে ধমকে বললো, "তাহলে আমায় ধর্মতলায় নিয়ে এলে কেন? তোমার নিরিবিলি জায়গায় রেষ্টুরেন্ট ছিলো না?"

-- "আচ্ছা বাবা আচ্ছা। আমি তো এমনি ইয়ার্কি মারছি তোমার সঙ্গে।"

- "হ্যাঁ তোমার ইয়ার্কি মারা বার করছি!"

রজত তখনও হাসছিলো। হঠাৎ দিবাকরের কথা তুলে সিরিজাকে বললো, "দিবাকরটা কি বোকা। বললাম থাকতে, একসঙ্গে ঘুরতাম। তা না কি না চলে গেলো।"

সিরিজা মুখটা নিচু করলো, বললো, "আমিও তো বলেছিলাম থাকতে। শুনলো না দিবাকরদা। চলে গেলো।"

খাবারটা একটু পরে সার্ভ করলো ওয়েটার। রজত বললো, "চামচে ধরে খেতে না পারলে হাত দিয়েই খাও। এখানে কেউ দেখবে না। আমিও হাত দিয়েই খাচ্ছি।"

সিরিজা বললো, "দেখি না একটু চেষ্টা করে। পারি কিনা?"

রজত চামচেটা হাতে ধরে সিরিজাকে বললো, "প্রথম গ্রাসটা তাহলে আমি তোমার মুখে পুরে দিই।"

চামচেটা মুখে দিয়ে সিরিজাকে ডাল মাখানো ভাতটা খাইয়ে দিচ্ছে রজত। পাশ থেকে একা বসা ঐ লোকটা আপন মনে উঠলো, "ওহ্ লাভলী!"

সিরিজা মুখ ঘুরিয়ে তাকালো লোকটার দিকে। বললো, "লোকটা কি রকম করে উঠলো দেখলে?"

রজত বললো, "সঙ্গে করে যাকে নিয়ে এসেছি, সবাই দেখছে আর প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। এরপরে আমি কোথায় যাই?"

সিরিজাও রজতের দেখাদেখি চামচে করে ওর প্লেট থেকে একটু ভাত তুললো। চামচেটা রজতের মুখের সামনে ধরলো, বললো, "দেখি এবার আমিও তোমাকে খাইয়ে দিই।"

রজত মুখ বাড়িয়ে চামচেটা মুখে পুরে নিল। চোখ ঘুরিয়ে দেখলো, লোকটা তখনও ওদের দেখছে। বিশেষ করে সিরিজাকে। যেন মোহিত হয়ে গেছে। সিরিজার ম্যাজিক বলে কথা। আবার একটা কিছু বলে উঠলে সিরিজাও চমকে উঠবে।

রজত লোকটাকে অত পাত্তা না দিয়ে সিরিজার দিকেই তাকালো। খেতে খেতে দিবাকরের নামটা আবার উল্লেখ করলো। বললো, "তোমাকে যাবার আগে কিছু বলে গেছে দিবাকর? ওকে বলেছিলাম, তিনজনে মিলে ঘুরতে যাবো। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আসছি। ছুটিটাও তো মঞ্জুর হয়ে গেল। এখন বাবু যে কেটে পড়লো, আমাদের যাওয়াটা তাহলে কি হবে?"

- "আসলে দিবাকরদা তোমার শ্বশুর আর বউ এর ভয়ে চলে গেছে। তুমি তো দিবাকরদাকে তখন ফোন করেই সব জানতে পারলে। আমিও ভয়ডর না রেখে তোমার বউকে সোজা সাপ্টা বলে দিয়েছি। দিবাকরদা চেয়েছিল আমি চুপচাপ থাকি। উনিই ব্যাপারটা সামলে নেবেন। মাঝখানে আমি তোমার বউ আর শ্বশুরের মাঝখানে এসে পড়াতে উনি একটু ভয় খেয়ে গেছেন। তুমি ব্যাপারটা কিভাবে নেবে? তাই অপেক্ষা করলো না, চলে গেল।"

রজত হেসে বললো, "ওকে একবার মোবাইলে ধরার চেষ্টা করবো নাকি? দেখি ব্যাটা কি করছে?"

সিরিজা রজতের হাতে হাত রেখে ওকে বাধা দিয়ে বললো, "না এখন থাক। আমরা এখন ঘুরবো, ফিরবো। একবারতো কথা বলেছো, তুমি বরং ঘরে ফিরে দিবাকরদার সাথে কথা বোলো।"

রজত সেলফোনটা টেবিলের ওপরই রাখলো। সিরিজার দিকে তাকিয়ে বললো, "আচ্ছা সিরিজা, তোমার কি মনে হয় না, কাল রাতে দিবাকর যেন একটু অন্যরকম হয়ে গেছিলো।"

- "কি রকম?"

-- "এই হঠাৎই রাত বিরেতে আমাদের ঘরে চলে এল। তারপর মাথা ঘুরে পড়ে গেল। তোমার কি ওগুলো সত্যি মনে হয়?"

সিরিজা খেতে খেতে রজতের মুখের দিকে ভালো করে তাকালো। বললো, "তোমার কি মনে হয়?"

-- "আমার তো মনে হয় সত্যিই। তবুও কেমন যেন খটকা লাগে মাঝেমধ্যে।"

সিরিজা ঘুরিয়ে রজতকে বললো, "তুমি তোমার বন্ধুকে বিশ্বাস করো?"

-- "বিশ্বাস তো করি।"

- "তাহলে আবার খটকা কিসের?"

রজত বললো, "তাও কেমন জানি....."

- "আসলে দিবাকরদার কোনো দোষ নেই। সবই ওর কপালের দোষ। ভালোবাসার জন্য কাউকে পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।"

-- "সব ঠিক হয়ে যাবে?"

- "হ্যাঁ। ঐজন্যই তো তোমাকে বললাম, রেশমির কথা। দিবাকরদার এখন ঐ মেয়েটাকে খুব দরকার।"

রজত মনে মনে বললো, "আমিই বা রেশমিকে এখন কোথায় পাই? সিরিজা যে দেখি থেকে থেকেই এখন রেশমির কথা বলছে। দিবাকরকে সাথে নিয়ে যদি রেশমিকে খুঁজতে পারতাম খুব ভালো হতো।"

খাবার খেয়ে অম্বর রেষ্টুরেন্ট থেকে ওরা বেরোলো দুজনে একসাথে। রজত বললো, "সত্যিই তুমি নিউমার্কেট যাবে না তো?"

সিরিজা বললো, "না।"

-- "কিছু কিনবে না তো?"

- "না কিনবো না। আমি এখন শুধু ঘুরবো।"

ধর্মতলাটা লোকে লোকারণ্য। এই ভীড়ের মধ্যে সিরিজাকে নিয়ে হাঁটতেও রজতের ইচ্ছে হচ্ছিল না। তার থেকে নিরিবিলিতে কোথাও গিয়ে বসলে কত ভালো হতো। রেষ্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সিরিজাকে নিয়ে কিছুটা পায়ে হেঁটে রজত দুম করে আবার একটা ট্যাক্সি ধরে বসলো।

- "একি আবার কোথায় যাবে? ট্যাক্সি ধরলে যে?"

-- "ওঠো না বলছি।"

সিরিজাকে তাড়াতাড়ি ট্যাক্সিতে তুলে রজত ওর পাশে উঠে বসল। একটু বিরক্ত হয়েই সিরিজা বললো, "তোমাকে বললাম, আমি ঘুরবো, আর তুমি কিনা আমাকে ট্যাক্সিতে ওঠালে?"

রজত বললো, "কেন এবার আমরা ট্যাক্সিতে করে ঘুরব।"

- "দূর। ট্যাক্সি করে ঘোরার মধ্যে কোন আনন্দ আছে নাকি?"

-- "তোমাকে এবার এমন জায়গায় নিয়ে যাবো, তোমার ওখানে গেলেই দারুন লাগবে, আনন্দও পাবে।"

- "কোথায়?"

-- "চলোই না বলছি"

রজত কিছু বললো না সিরিজাকে। একটু পরে ড্রাইভারটাও জিজ্ঞাসা করলো, "কোথায় যাবো স্যার?"

রজত ওকেও কিছু না বলে শুধু বললো, "সোজা চলুন, আমি একটু পরে বলছি।"

বেশ অবাক হলো সিরিজা। রজত ড্রাইভারকেও কিছু বলছে না। অথচ ওকে ট্যাক্সি করে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?
 
।। উনিশ ।।

রজতের কেনা নতুন শাড়ীটা সিরিজা যখন পড়ছিল রজত ওর সামনেই বসেছিল। মাথায় একটা ঘোমটা টেনে দিলেই নতুন বউ বউ দেখাবে। রজত বললো, "দাও না ঘোমটাটা। দেখি তোমাকে কেমন লাগে?"

উপভোগ্য যৌনসঙ্গমের পর নতুন বউ হিসেবে সিরিজাকে দেখতে ভীষন উসখুস করছিল মনটা। নীল রঙের লাইলন শাড়ী পড়ে সিরিজাকে পরীর মতন সুন্দর দেখাচ্ছে। রজতের দেওয়া উপহার সিরিজা বেশ সময় নিয়ে পড়ছিল। সিরিজা রজতকে বললো, "ইস, একদম বেছে বেছে পাতলা শাড়ীটাই কিনেছো? আমার আঁচলের তলা দিয়ে বুকের ওঠানামাটা তো দূরের লোকেদেরও চোখে পড়বে।"

-- "এমন শাড়ীতেই তো তোমাকে মানায়।"

- "আর কেউ যদি আমার দিকে খালি তাকায়?"

রজত হেসে বললো, "দূর, আমি তো তোমাকে ট্যাক্সিতে নিয়ে ঘুরবো। দূর থেকে তোমাকে দেখবে, এমন কার সাধ্যি?"

- "কেন? আমি বুঝি পায়ে হেঁটে ঘুরবো না?"

-- "এই ভর দুপুরবেলা পায়ে হেটে কোথায় ঘুরবে? শহর দেখতে হলে ট্যাক্সিটাই তো বেস্ট।"

- "তোমার যদি একটা গাড়ী থাকতো, খুব ভালো হতো। তোমার পাশে বসে আমি গাড়ী করে ঘুরতাম।"

-- "কিনবো, কিনবো। আগে আমার পুরোনো ঝেমেলাটা মিটতে দাও। তারপর দেখো তোমার জন্য আমি কি কি কিনি।"

শাড়ী পড়ে সেজেগুজে সিরিজা এবার রজতের দিকে পুরোপুরি মুখ ঘোরালো। বললো, "আর কি কিনবে আমার জন্য?"

-- "এই পৃথিবীতে যা আছে, সব কিনে নেবো। আমার সিরিজার জন্য আমি সব কিনতেও রাজী।"

একটু কাছে এসে সিরিজা রজতের কাঁধের ওপর দুই হাত রাখলো। ওর দিকে তাকিয়ে বললো, "অত সোজা নয় বুঝলে? আমি গ্রামের মেয়ে তো, তাই আমার মন রাখার জন্য এসব বলছো।"

-- "কেন? কিনতে পারি না নাকি? ছেলেরা ইচ্ছে করলে সব পারে। আমিও পারি। আমার সিরিজার জন্য আমি সব পারি।"

বলেই রজত একটা চুমু খেতে যাচ্ছিলো সিরিজার ঠোঁটে। ওকে বাধা দিয়ে সিরিজা বললো, "এই এখন আর নয়। এরপরে কিন্তু আমাদের আর বেরোনোই হবে না।"

একটা হালকা লিপস্টিক লাগিয়েছে সিরিজা ঠোঁটে। তাতেই মনে হচ্ছে আগুন জ্বলছে ওর ঠোঁটে। রজত চাইছিলো ওর আগুন ঠোঁটেই চুমুটা খেতে। লিপস্টিক খারাপ হয়ে যাবে বলে সিরিজা বললো, "এদিকে আমাকে সাজাবে বলছিলে, আর এখন আমার সাজ নষ্ট হয়ে গেলে বেরোতে পারবো? তখন তুমি একাই যেও।"

-- "আচ্ছা আচ্ছা ভুল হয়ে গেছে।"

রজত তখন মাথা নীচু করে সিরিজার কাছে ক্ষমা চাওয়ার ভাব করছে। সিরিজা বললো, "সেই থেকে দুষ্টুমি করছো, আমাদের কতো দেরী হয়ে গেল বলো তো। কখনই বা খাবো, আর কখনই বা ঘুরবো?"

রজত বললো, "আমি একটা ট্যাক্সি ডেকে নিয়ে আসি। একদম বাড়ীর সামনে। তারপর তুমি আর আমি, ট্যাক্সিতে চড়ে....."

- "না না, এই প্রথম তোমার সাথে ঘরের বাইরে বেরুচ্ছি। একটু তো হাঁটি। ট্যাক্সি তো মোড় থেকেও পেয়ে যাবে।"

রজত সিরিজার কথার আপত্তি করলো না। ওকে পাশে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাবে। কেউ যদি তাকায়। ওর বুকটা দূর থেকে দেখে দেখুক না। সিরিজা ওদেরকে না দেখলেই হলো।

রজত সিরিজার হাতটা ধরে বললো, "চলো তাহলে যাই।"

সিরিজা হেসে বললো, "এবার ঘোমটাটা দেবো?"

এই প্রথম রজতের সাথী হয়ে বাড়ীর বাইরে বেরোলো সিরিজা। দুর্লভ মূহূর্তগুলো ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো এতদিন। সুখের সহবাসে সিরিজাকে নিয়ে যৌনমিলন করতে করতে চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে রজত ওকে বাইরে নিয়ে বেরোতেই ভুলে গেছে। আজ সেই ইচ্ছাটাও পূরণ হলো।

সিরিজার হাতটা ধরে রজত বললো, "ধ্যাত, এখন ঘোমটা দিতে হবে না। ওটাতো তোমাকে বউ হিসেবে কেমন লাগে সেটা দেখার জন্যই বলেছিলাম।"

ঘর থেকে বেরিয়ে গলিটা দিয়ে রজতের পাশে পাশে হাঁটছিলো সিরিজা। রজত হেসে বললো, "রাস্তায় তোমাকে যদি একটা চুমু খেতে পারতাম, দারুন হতো।"

- "এই তুমি কিন্তু খেয়ো না। তাহলে সবাই কি ভাববে?"

রজত জানে লিপষ্টিক ঘসা সিরিজার ঠোঁটে চুমু খেতে পুড়িয়ে দিলে ভালোই লাগবে। কিন্তু এই রাস্তার মধ্যে কি করে তা সম্ভব? ও বললো, "ট্যাক্সিতে উঠি। তারপর তোমার ঠোঁটে চুমু খাবো।"

সিরিজা বললো, "খাওয়াচ্ছি দাঁড়াও!"

-- "বারে? ট্যাক্সির মধ্যে খেলে আর কি দোষ?"

রাস্তার ওপরে হঠাৎই দাঁড়িয়ে সিরিজা বললো, "তাহলে এক্ষুণি খাও।"

-- "এই না। তা খাওয়া যায় নাকি? তোমার সাজগোজ নষ্ট হয়ে গেলে? কেউ যদি দেখে ফেলে?"

মুখে বলাটা যত সহজ, করাটা তত সহজ নয়। ঘরের জিনিষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে করলে পাড়ার লোকেরা টিটকিরি মারবে। পাড়ায় টিকতে দেবে না। রজত তবু বললো, "এখনও দুপুর গড়িয়ে বিকেলটা হয় নি। সন্ধে হলে চুমুটা অনায়াসে খেতে পারতাম।"

সিরিজা বললো, "আর চুমু খেতে হবে না। এবার চলো তো।"

গলিটা পেরিয়ে রাস্তার মোড়ে এসেও রজত দেখলো একটাও খালি ট্যাক্সি নেই। দুপুরবেলা লোকজন বিশেষ চলছে না রাস্তা দিয়ে। একটা ট্যাক্সি বিকট আওয়াজ করতে করতে ওদের সামনে দিয়ে চলে গেলো। কিন্তু ট্যাক্সিটা খালি নয়। রজত বললো, "ট্যাক্সি না পেলে এই দুপুরবেলা তোমাকে নিয়ে আর কত হাঁটাই বলো তো?"

হাত ঘড়িতে টাইমটা দেখে রজত বললো, "নাহ সত্যিই অনেক দেরী হয়ে গেলো। তোমাকে নিয়ে আর একটু আগে বেরোলেই ভালো হতো।"

খালি একটা ট্যাক্সি ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। রজত ট্যাক্সিওয়ালাকে বললো, "ধর্মতলা যাবেন?"

-- "হ্যাঁ যাবো, উঠুন।"

ড্রাইভারটা আড়চোখে সিরিজাকে একবার দেখলো। চোখের দৃষ্টিতে মুগ্ধতা। এমন চোখ ধাঁধানো নারী এই প্রথম উঠছে ওর ট্যাক্সিতে। সিরিজার মনে হলো, গাড়ীটা বোধহয় ওকে দেখেই দাঁড় করালো ড্রাইভারটা।

রজত সিরিজাকে পাশে নিয়ে শরীরে শরীর ঠেসে বসলো।

- "চলুন তাড়াতাড়ি। আমাদের খুব দেরী হয়ে গেছে।"

-- "ধর্মতলায় কোথায় যাবেন?"

- "যাবো কোনো ভালো রেষ্টুরেন্টে। দুপুরের খাওয়াটা ওখানেই সারতে হবে।"

ধর্মতলা কোথায়? সিরিজা রজতকে বললো, "তুমি ধর্মতলায় যাবে?"

-- "হ্যাঁ। ধর্মতলা হলো, এই শহরের হার্ট অব দ্য সিটি। আর একটু এগিয়ে চৌরঙ্গী তারপরে পার্কস্ট্রীট। কলকাতার সাহেবি পাড়া। তুমি তো দেখো নি। চলো আজ তোমায় সব দেখাবো।"

ড্রাইভারটা মুখ ঘুরিয়ে একবার তাকালো। যেন ওরও অবাক লাগছে। এই মহিলাটি বোধহয় অন্য জায়গা থেকে এসেছে।

রজত ভাবছে সিরিজাকে চুমুটা এবার খাবে কিনা। ওর কাঁধে পেছন দিক দিয়ে হাতটা রেখে বললো, "এই কাছে এসো না একটু।"

- "আর কত কাছে আসবো বাবা, এই তো কাছেই রয়েছি।"

রজত সিরিজাকে চুমুটা খেতেই যাচ্ছিলো, সিরিজা বললো, "এই, এখন না। লোকটা কি ভাববে?"

-- "সবাই তার নিজের বউকে চুমু খায়। আমি খাচ্ছি তো কার কি?"

- "তাহলেও বলছি না পরে। আচ্ছা আচ্ছা ফেরার সময়। রাত্রিবেলা।"

রজত তাও মুখটা বাড়িয়ে দিচ্ছিলো সিরিজার দিকে। হঠাৎ ছন্দোপতন হলো, ড্রাইভারটা একটা কথা জিজ্ঞেস করাতে।ও বললো, "আচ্ছা, আমি কি পার্কস্ট্রীট যাবো?"

চুমু খাওয়াতে ব্যাঘাত ঘটালেই বিরক্তি এসে যায়। রজত বললো, "আমি তো পার্কস্ট্রীট বলিনি। ধর্মতলাতেই চলুন।"

ধর্মতলায় অম্বর রেষ্টুরেন্টটা বেশ ভালো। একতলা, দোতলা, তিনতলা। তিনটে তলাতেই রেষ্টুরেন্ট। মনে আছে একবার রেশমিকে নিয়ে রজত এসেছিলো ডিনার করতে। সাথে দিবাকরও ছিলো। ফেরার সময় সে কি বৃষ্টি। রেশমি খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো সেদিন। - "এমা, এতো বৃষ্টি! আমি বাড়ী যাবোও কি করে?"

- "কেন? তোমাকে ট্যাক্সীতে পৌঁছে দিচ্ছি আমি।"

রজত তখন রেশমির জন্য পাগল।

গাড়ীতে প্রবল ইচ্ছা থাকলেও রেশমিকে চুমুটা খাওয়া হয় নি সেদিন। কারন পাশে দিবাকর ছিলো। বারবার মুখ ঘুরিয়ে ড্রাইভারটাও দেখছিলো ওদের তিনজনকে। আজ যেন এই ড্রাইভারটাও একই জিনিষ করছে। রজত বিরক্ত হয়ে বললো, "আপনাকে বারবার জিজ্ঞাসা করতে হবে না। সোজা ধর্মতলাতেই চলুন।"

সিরিজার দিকে মুখ ঘুরিয়ে রজত দেখলো, সিরিজা হাসছে। রজত চুমুটা খেতে পারেনি বলে ওর বোধহয় মজা লেগেছে।

ড্রাইভারটি তখনও চমকে ওঠেনি। সুন্দরী মহিলাটিকে নিয়ে লোকটা যেন কি শুরু করেছে। ও আর তাকালোই না পেছন ফিরে।

রজত বললো, "তোমার আগুন ঠোঁটে একটা চুমু খেতে দাও না সিরিজা?"

- "দিতে পারি, কিন্তু আমার লিপস্টিক কিন্তু নষ্ট হয়ে যাবে।"

তাও তো বটে। রজত বললো, "তাহলে থাক। আমি বরং পরে। তবে গালে তো এখন একটা খেতে পারি।"

সিরিজার গালে চুমু খাওয়ার সময় গাড়ীটা একটা ঝাঁকুনি খেলো। রজত বললো, "আস্তে চালান।"

ড্রাইভারটা বললো, "কি করবো? বড় একটা গর্ত পড়ে গিয়েছিলো।"

অম্বর বার এন্ড রেষ্টুরেন্টে পৌঁছোতে সময় লাগলো পাক্কা চল্লিশ মিনিট। ঘড়িতে বিকেল চারটে বাজে। সিরিজা বললো, "এখানে খাবার পাবে এখন?"

রজত বললো, "এখানে সবসময়ই খাবার পাওয়া যায়। ভেতরে ঢুকি চলো। দেখবে কি দারুন রেষ্টুরেন্ট।"

একতলাটা পুরো ভর্তি। রজত বললো, "চলো তোমাকে নিয়ে আমি দোতলায় যাই।"

সিঁড়ির ওপরে কার্পেট পাতা। ওঠার সময় সিরিজা বললো, "কি দারুন। আমি কোনোদিন ভাবিনি। এতো দামী রেষ্টুরেন্টে এসে খাবো।"

দুটো লোক নামছিলো দোতলা থেকে। সিরিজার দিকে তাকিয়ে ওরা দেখছিলো। রজত বললো, "তুমি এমনই। সবাই খালি তোমার দিকে তাকায়। ভেতরে যখন ঢুকবো। তখনও দেখবে সবাই তোমার দিকে কেমন সবাই তাকাচ্ছে।"

দোতলায় বড় একটা হলঘর। রজত সিরিজাকে নিয়ে একটা টেবিলের মুখোমুখি বসলো। একতলার থেকে দোতলায় ভীড়টা কম। অল্প কিছু লোক বসে খাবার খাচ্ছে। দুটো ফ্যামিলি এসেছে। সাথে দুটো করে বাচ্চা।

এক ভদ্রলোক কিছুটা দূরে বসে ড্রিংক করছে একা একা। গ্লাসটা মুখে তুলে একবার সিরিজার দিকে তাকালো। সিরিজা বললো, "এখানে মদও পাওয়া যায়?"

-- "হ্যাঁ এটা তো বার কাম রেষ্টুরেন্ট। ইচ্ছে করলে ড্রিংকও করা যায় আবার খাবারও খাওয়া যায়।"

খাবারের মেনু কার্ডটা হাতে নিয়ে রজত বললো, "কি খাবে বলো? অর্ডারটা দিই।"

- "তুমি যা খাবে, আমিও তাই খাবো।"

-- "চিকেন খাবে চিকেন? না ভাত আর মাছের ঝোল?"

ওয়েটার অর্ডার নিতে এসে সিরিজাকেই দেখছিলো, রজত তখন মেনুকার্ড এ চোখ বোলাচ্ছে। ওয়েটার এর নজর ঘুরিয়ে বললো, "এই যে এদিকে। দু জায়গায় রাইস, আর সাথে ডাল ফ্রাই দাও। পনীর মশালা আর চিকেন কারী। তাড়াতাড়ি। বড্ড খিদে লেগেছে।"

খাবারের অর্ডার নিয়ে ওয়েটার চলে গেলো। রজত বললো, "দেখেছো? সবাই তোমাকে কেমন দেখছে। এতোদিন তোমায় শুধু আমি দেখেছি, এখন বাকীরা দেখছে।"

সিরিজা বললো, "এখান থেকে খাবার খেয়ে কোথায় যাবে?"

রজত বললো, "যাবার জায়গা তো অনেক আছে। ধর্মতলা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পার্কস্ট্রীট। তারপরে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। যদি বলো নিউমার্কেটেও নিয়ে যেতে পারি।"

- "মার্কেট?"

-- "হ্যাঁ অনেক জিনিষ কিনতে পাওয়া যায়। যাবে?"

- "আমি আর কি কিনবো?"

-- "তুমি যেটা কিনতে চাইবে। সেটাই কিনে দেবো।"

সিরিজা বললো, "না না, আজ কিছু কিনবো না। আজ শুধু ঘুরবো। এখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে তুমি যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে। তুমি না বলেছো আজ আমাকে নিয়ে ঘুরবে?"

-- "বলেছি তো। চলো কোথায় যাবে? তুমি যেখানে যেতে চাইবে, আমি সেখানেই নিয়ে যাবো।"

সিরিজা বললো, "আমি ধর্মতলা ঘুরবো।"

রজত বললো, "আসলে এই জায়গাটা শুধু লোকে গিজগিজ করছে। তোমাকে নিয়ে একটু ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো।"

- "কেন?"

-- "নিরিবিলিতে তোমাকে বসে আদর করতাম। তোমার বুকে মুখ রাখতাম, তোমার ঠোঁটে চুমু খেতাম। আর....."

- "আর কি করতে?"

রজত মিটিমিটি হাসছিলো। সিরিজা ওকে ধমকে বললো, "তাহলে আমায় ধর্মতলায় নিয়ে এলে কেন? তোমার নিরিবিলি জায়গায় রেষ্টুরেন্ট ছিলো না?"

-- "আচ্ছা বাবা আচ্ছা। আমি তো এমনি ইয়ার্কি মারছি তোমার সঙ্গে।"

- "হ্যাঁ তোমার ইয়ার্কি মারা বার করছি!"

রজত তখনও হাসছিলো। হঠাৎ দিবাকরের কথা তুলে সিরিজাকে বললো, "দিবাকরটা কি বোকা। বললাম থাকতে, একসঙ্গে ঘুরতাম। তা না কি না চলে গেলো।"

সিরিজা মুখটা নিচু করলো, বললো, "আমিও তো বলেছিলাম থাকতে। শুনলো না দিবাকরদা। চলে গেলো।"

খাবারটা একটু পরে সার্ভ করলো ওয়েটার। রজত বললো, "চামচে ধরে খেতে না পারলে হাত দিয়েই খাও। এখানে কেউ দেখবে না। আমিও হাত দিয়েই খাচ্ছি।"

সিরিজা বললো, "দেখি না একটু চেষ্টা করে। পারি কিনা?"

রজত চামচেটা হাতে ধরে সিরিজাকে বললো, "প্রথম গ্রাসটা তাহলে আমি তোমার মুখে পুরে দিই।"

চামচেটা মুখে দিয়ে সিরিজাকে ডাল মাখানো ভাতটা খাইয়ে দিচ্ছে রজত। পাশ থেকে একা বসা ঐ লোকটা আপন মনে উঠলো, "ওহ্ লাভলী!"

সিরিজা মুখ ঘুরিয়ে তাকালো লোকটার দিকে। বললো, "লোকটা কি রকম করে উঠলো দেখলে?"

রজত বললো, "সঙ্গে করে যাকে নিয়ে এসেছি, সবাই দেখছে আর প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। এরপরে আমি কোথায় যাই?"

সিরিজাও রজতের দেখাদেখি চামচে করে ওর প্লেট থেকে একটু ভাত তুললো। চামচেটা রজতের মুখের সামনে ধরলো, বললো, "দেখি এবার আমিও তোমাকে খাইয়ে দিই।"

রজত মুখ বাড়িয়ে চামচেটা মুখে পুরে নিল। চোখ ঘুরিয়ে দেখলো, লোকটা তখনও ওদের দেখছে। বিশেষ করে সিরিজাকে। যেন মোহিত হয়ে গেছে। সিরিজার ম্যাজিক বলে কথা। আবার একটা কিছু বলে উঠলে সিরিজাও চমকে উঠবে।

রজত লোকটাকে অত পাত্তা না দিয়ে সিরিজার দিকেই তাকালো। খেতে খেতে দিবাকরের নামটা আবার উল্লেখ করলো। বললো, "তোমাকে যাবার আগে কিছু বলে গেছে দিবাকর? ওকে বলেছিলাম, তিনজনে মিলে ঘুরতে যাবো। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আসছি। ছুটিটাও তো মঞ্জুর হয়ে গেল। এখন বাবু যে কেটে পড়লো, আমাদের যাওয়াটা তাহলে কি হবে?"

- "আসলে দিবাকরদা তোমার শ্বশুর আর বউ এর ভয়ে চলে গেছে। তুমি তো দিবাকরদাকে তখন ফোন করেই সব জানতে পারলে। আমিও ভয়ডর না রেখে তোমার বউকে সোজা সাপ্টা বলে দিয়েছি। দিবাকরদা চেয়েছিল আমি চুপচাপ থাকি। উনিই ব্যাপারটা সামলে নেবেন। মাঝখানে আমি তোমার বউ আর শ্বশুরের মাঝখানে এসে পড়াতে উনি একটু ভয় খেয়ে গেছেন। তুমি ব্যাপারটা কিভাবে নেবে? তাই অপেক্ষা করলো না, চলে গেল।"

রজত হেসে বললো, "ওকে একবার মোবাইলে ধরার চেষ্টা করবো নাকি? দেখি ব্যাটা কি করছে?"

সিরিজা রজতের হাতে হাত রেখে ওকে বাধা দিয়ে বললো, "না এখন থাক। আমরা এখন ঘুরবো, ফিরবো। একবারতো কথা বলেছো, তুমি বরং ঘরে ফিরে দিবাকরদার সাথে কথা বোলো।"

রজত সেলফোনটা টেবিলের ওপরই রাখলো। সিরিজার দিকে তাকিয়ে বললো, "আচ্ছা সিরিজা, তোমার কি মনে হয় না, কাল রাতে দিবাকর যেন একটু অন্যরকম হয়ে গেছিলো।"

- "কি রকম?"

-- "এই হঠাৎই রাত বিরেতে আমাদের ঘরে চলে এল। তারপর মাথা ঘুরে পড়ে গেল। তোমার কি ওগুলো সত্যি মনে হয়?"

সিরিজা খেতে খেতে রজতের মুখের দিকে ভালো করে তাকালো। বললো, "তোমার কি মনে হয়?"

-- "আমার তো মনে হয় সত্যিই। তবুও কেমন যেন খটকা লাগে মাঝেমধ্যে।"

সিরিজা ঘুরিয়ে রজতকে বললো, "তুমি তোমার বন্ধুকে বিশ্বাস করো?"

-- "বিশ্বাস তো করি।"

- "তাহলে আবার খটকা কিসের?"

রজত বললো, "তাও কেমন জানি....."

- "আসলে দিবাকরদার কোনো দোষ নেই। সবই ওর কপালের দোষ। ভালোবাসার জন্য কাউকে পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।"

-- "সব ঠিক হয়ে যাবে?"

- "হ্যাঁ। ঐজন্যই তো তোমাকে বললাম, রেশমির কথা। দিবাকরদার এখন ঐ মেয়েটাকে খুব দরকার।"

রজত মনে মনে বললো, "আমিই বা রেশমিকে এখন কোথায় পাই? সিরিজা যে দেখি থেকে থেকেই এখন রেশমির কথা বলছে। দিবাকরকে সাথে নিয়ে যদি রেশমিকে খুঁজতে পারতাম খুব ভালো হতো।"

খাবার খেয়ে অম্বর রেষ্টুরেন্ট থেকে ওরা বেরোলো দুজনে একসাথে। রজত বললো, "সত্যিই তুমি নিউমার্কেট যাবে না তো?"

সিরিজা বললো, "না।"

-- "কিছু কিনবে না তো?"

- "না কিনবো না। আমি এখন শুধু ঘুরবো।"

ধর্মতলাটা লোকে লোকারণ্য। এই ভীড়ের মধ্যে সিরিজাকে নিয়ে হাঁটতেও রজতের ইচ্ছে হচ্ছিল না। তার থেকে নিরিবিলিতে কোথাও গিয়ে বসলে কত ভালো হতো। রেষ্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সিরিজাকে নিয়ে কিছুটা পায়ে হেঁটে রজত দুম করে আবার একটা ট্যাক্সি ধরে বসলো।

- "একি আবার কোথায় যাবে? ট্যাক্সি ধরলে যে?"

-- "ওঠো না বলছি।"

সিরিজাকে তাড়াতাড়ি ট্যাক্সিতে তুলে রজত ওর পাশে উঠে বসল। একটু বিরক্ত হয়েই সিরিজা বললো, "তোমাকে বললাম, আমি ঘুরবো, আর তুমি কিনা আমাকে ট্যাক্সিতে ওঠালে?"

রজত বললো, "কেন এবার আমরা ট্যাক্সিতে করে ঘুরব।"

- "দূর। ট্যাক্সি করে ঘোরার মধ্যে কোন আনন্দ আছে নাকি?"

-- "তোমাকে এবার এমন জায়গায় নিয়ে যাবো, তোমার ওখানে গেলেই দারুন লাগবে, আনন্দও পাবে।"

- "কোথায়?"

-- "চলোই না বলছি"

রজত কিছু বললো না সিরিজাকে। একটু পরে ড্রাইভারটাও জিজ্ঞাসা করলো, "কোথায় যাবো স্যার?"

রজত ওকেও কিছু না বলে শুধু বললো, "সোজা চলুন, আমি একটু পরে বলছি।"

বেশ অবাক হলো সিরিজা। রজত ড্রাইভারকেও কিছু বলছে না। অথচ ওকে ট্যাক্সি করে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?
 
ধর্মতলা পেরিয়ে চৌরঙ্গী। তারপরে পার্কস্ট্রীট। ডানদিকে ময়দান। একটু দূরে সামনের দিকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল। রজত জানালার কাঁচ দিয়ে সিরিজাকে দেখালো, "ঐ দেখ ভিক্টোরিয়া।"

- "এ মা, তুমি নামবে না?"

-- "আজ নয় সিরিজা, আর একদিন।"

- "তাহলে তুমি এখন আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?"

রজত এখনও জায়গাটার কথা বলছে না। সিরিজা অবাক হচ্ছে, সেই সাথে ড্রাইভারও। একটা সিগারেট ধরিয়ে এবার সিরিজার দিকে হেসে বললো, "কেন, আমাকে বিশ্বাস হচ্ছে না?"

- "বিশ্বাস হবে না কেন? আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করছি তোমায়। আমায় বলতে কোনো অসুবিধে?"

আরো খানিকটা এগিয়ে এসে ড্রাইভার বললো, "স্যার এবার অন্তত বলুন, কোথায় যাবো? ডানদিকে না বাঁদিকে?"

রজত বললো, "সোজা নিন, একেবারে হাজরার মুখ থেকে মনোহরপুকুর ধরবেন।"

মনোহরপুকুর? সিরিজা রজতকে প্রশ্ন করলো, "সেখানে কে আছে?"

রজত বললো, "কেন রেশমি?"

- "রেশমি? তুমি যে বললে ওর বাড়ী তুমি চেনো না।"

-- "বাড়ী আমি সত্যিই চিনি না। তবে মনোহরপুকুরে ও থাকতো সেটা জানতাম। ওখানে তোমাকে নিয়ে পৌঁছে দিবাকরকে একটা ফোন করবো। বলবো সিরিজাকে নিয়ে খুঁজতে এসেছি তোমার রেশমীকে? কোন বাড়ীটায় থাকতো সেটা এখন বলো।"

রজত যে তড়িঘড়ি সিরিজার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে শুরু করে দেবে, সিরিজা কল্পনাও করতে পারেনি। অবাক হয়ে যাচ্ছিলো রজতের হঠাৎই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া দেখে। একেবারে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে রজতকে বলে বসলো, "তুমি সত্যি রেশমীকে খুঁজতে বেরিয়েছো, আমি ভাবতেই পারিনি।"

রজত বললো, "কেন তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না?"

- "সত্যি?"

-- "হ্যাঁ সত্যিই তো। রেশমীকে খুঁজতেই তো যাচ্ছি।"

একেবারে মোহিত হয়ে সিরিজা কিছুক্ষণ রজতের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। মুখে কোনো কথা নেই। রজত বললো, "কি, এবারে খুশী তো?"

- "খুশী।"

-- "তাহলে একটা চুমু খাই।"

সিরিজা বললো, "কি?"

-- "বলছি তাহলে একটা চুমু খাই।"

- "তুমি কি বলছো টা কি? এই গাড়ীর মধ্যে?"

-- "হ্যাঁ গাড়ীর মধ্যে। অসুবিধাটা কি?"

- "যাঃ। দুষ্টু কোথাকার!"

-- "বাঃ। যেই চুমু খেতে চাইলাম অমনি দুষ্টু হয়ে গেলাম। ঘরে খেতে পারি, আর গাড়ীতে খেলেই যত দোষ। ট্যাক্সিতে তো অনেকেই চুমু খায়,আমিও খাই না একটা।"

ট্যাক্সি ড্রাইভারটা এবার রজতের কথা শুনে মুচকী মুচকী হাসছিল। সিরিজা রজতকে বাধা দিয়ে আসতে আসতে বললো, "এই না এখন না, লোকটা কি ভাববে।"

-- "ভাবুক।"

রজত সিরিজার ঠোঁটে যেই চুমুটা খেতে যাচ্ছিলো অমনি সিরিজা এবার বললো, "দাঁড়াও। আগে রেশমী, তারপরে চুমু।"

বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হতাশ হয়ে গেল রজত, সিরিজাকে বললো, "আশ্চর্য, রেশমীর খোঁজার সাথে চুমু খাওয়ার শর্তের কি আছে? রেশমী তো দিবাকরের জন্য। রজতের জন্য যে, তাকে চুমু খেতে পারবো না কেন? এমন শর্তের কোনো মানে হয়?"

সিরিজা মুচকী মুচকী হাসছিল জানালার দিকে মুখ করে, রজত যেন টাইট খেয়ে গেছে সিরিজার কাছে। বললো, "সিরিজা তুমি এমন শর্ত আরোপ করে বসলে, আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।"

সিরিজা মুখ ঘুরিয়ে তাকালো রজতের দিকে। যেন বুঝতে পারেনি রজতের কথাটা। বললো, "কেন?"

-- "আমি তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম, যে বাড়ীটায় ও থাকতো, সেখানে ও এখন থাকে না। দিবাকরকে এখন ফোন করলে দিবাকরও সেই কথাই বলবে, তবুও বাড়ীটা খোঁজার জন্য যাচ্ছি, শুধু তোমার জন্য। যদি ওর কোন হদিশ পাওয়া যায়। জানি ওকে পাব না, তবুও যাচ্ছি, তোমার মনটা রাখবো বলে। আর তুমি কিনা বললে আগে রেশমী, তারপরে চুমু। তাহলে আমার কি হবে?"

কথাটা বলে এবার রজতও জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। সিরিজা বুঝলো রজত বেশ সিরিয়াস হয়ে গেছে। ও রজতের মুখ ঘোরানো অবধি অপেক্ষা করতে লাগলো, কিছুক্ষণ পরে নিজেই রজতকে খুশী করার জন্য বললো, "এই শোনো।"

রজত মুখ ঘোরালো।

সিরিজা বললো, "চুমুটা খাবে বলছিলে। খাও।"

হঠাৎ এমন মত পরিবর্তন। রজত তবু বললো, "চুমু খাওয়ার জন্য এত কষ্ট, আগে কখনও পাইনি তোমার কাছ থেকে।"

মনে মনে বললো, "দেখো দিবাকর, তোমার রেশমীর জন্য আমার কি দশা হয়েছে!"

গাড়ীতে সিরিজার দিকে জানালার কাঁচটা পুরোটা খোলা, রজত কাঁচটা একটু ওপরে তুলে দিয়েই মুখটা বাড়ালো সিরিজার ঠোঁটের দিকে। গাড়ীর মধ্যে চুমু খাওয়ার সাধ পূর্ণ হতে চলেছে, ওদিকে ট্রাফিক সিগনালে আটকে গেছে গাড়ী। এদিকে সিরিজার কাছ থেকে গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে রজত তখন মাতোয়ারা। পাশাপাশি একটা লাল মারুতী গাড়ী দাঁড়িয়ে পড়েছে সিগন্যালে। জানালার কাঁচ দিয়ে মুখ বার করে একটা বাচ্চা ছেলে পাশে দাঁড়ানো রজতের ট্যাক্সিটাকে দেখছে। রজত অপেক্ষা করছিল, গাড়ীটা ছেড়ে দিলেই ঝপ করে চুমুটা খেয়ে নেবে সিরিজার ঠৌঁটে। বাচ্চাটা তখন চোখ বড় বড় করে ওদের দুজনকে দেখছিল। ছেলেটার গায়ের রঙ ধবধবে সাদা, ফুটফুটে বাচ্চা।

সিরিজা রজতকে বললো, "দেখ কি সুন্দর ঐ বাচ্চাটা। আমাদের দুজনকে দেখছে।"

বলে ও নিজেও তাকিয়ে দেখতে লাগলো বাচ্চাটাকে। ট্যাক্সির মধ্যে থেকে বাচ্চাটার সাথে অঙ্গভঙ্গী করতে লাগলো সিরিজা। দূর থেকে বাচ্চাটাকে চুমু ছুঁড়ে ওর সাথে কথাও বলতে লাগলো ও।

আর এদিকে বিরক্ত হতে লাগলো রজত। এতক্ষণ রেশমীর জন্য ওর সিরিজাকে চুমু খাওয়া হচ্ছিল না, এবার আবার একটা বাচ্চা এসে চুমু খাওয়াটাকে আরো বিলম্ব করে দিচ্ছে। গাড়ীটা এবার ছাড়তেই রজত যেন স্বস্তি পেল, বাচ্চাটার দিকে ও নিজেও হাত নেড়ে টা টা করে দিল। তারপর সিরিজার শরীরটাকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটের একদম কাছে ঠোঁটটা নিয়ে এসে বললো, "এবার?"

সিরিজা চোখ বুঁজে বললো, "তাড়াতাড়ি খাও।"

রজত যেই সিরিজার ঠোঁটে ঠোঁটটা ছোঁয়াতে গেল, ড্রাইভারটা সঙ্গে সঙ্গে বললো, "দাদা মনোহরপুকুর এসে গেছে। এবার কোথায় যাবেন?"

এতো মহা জ্বালায় পড়া গেছে দেখছি। যখনই চুমু খেতে যাবো, তখনই বিপত্তি। সবাই এমন চুমু খাওয়ার সাথে শত্রুতা করছে কেন? রজতের আর চুমু খাওয়া এ যাত্রায় হলো না। ও ভীষন আপসেট হলো। সিরিজা মজা পেয়ে এমন হাসি দিল, যেটা রজত অনেকদিন মনে রাখবে।

ড্রাইভারকে গাড়ীটা রাস্তার একপাশে দাঁড় করাতে বললো রজত। তআরপর বললো, "দাঁড়ান দাঁড়ান, আমি একজনকে ফোন করে নিই। বাড়ীটা আসলে ঠিক কোথায় এই লোকই বলতে পারবে।"

দিবাকরকে মোবাইলে ধরার চেষ্টা করলো রজত।

-- "হ্যালো কে দিবাকর?"

- "বলছি।"

-- "আমি রজত বলছি। এখন আমি ঠিক মনোহরপুকুরে ট্যাক্সি নিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছি। সিরিজাও আছে আমার সাথে।"

- "তোমরা ঘুরতে বেরিয়েছো?"

-- "না তোমার রেশমীকে খুঁজতে বেরিয়েছি।"

- "রেশমীকে? কি বলছো টা কি?"

-- "ঠিকই বলছি। বাড়ীটা এক্সাক্টলি কোথায় বলতে পারবে?"

- "কিন্তু রজত সে বাড়ীতে তো ও এখন থাকে না। আমি অনেকদিন আগে একবার গিয়েছিলাম, পাইনি।"

রজতকে যেন সিরিজার মন রক্ষা করতে হবে। ও সেভাবেই দিবাকরকে বললো, "সে তো আমিও জানি। তবুও সিরিজাকে নিয়ে একবার অন্তত যেতে চাই। ও খুব করে বলছে রেশমীর কথা। চোখের দেখা না পেলেও একবার যদি কোন হদিশ পাই।"

দিবাকর রজতের কথার উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলো। ভেবে পাচ্ছিল না রজত হঠাৎ এত উতলা হয়ে পড়েছে কেন রেশমীকে পুনরায় পাওয়ার জন্য। বুঝলো এসবই সিরিজার জন্য হচ্ছে। রজতের ফ্ল্যাটে সিরিজার সাথে ওর ঐ ঘটনা ঘটার পর থেকে সিরিজা বুঝতে পেরেছে দিবাকরের মনের ব্যাথাটা। এরকম ভাবে একা একা থাকতে আর কার ভালো লাগে? সত্যি যদি রেশমীর হদিশ একবার পাওয়া যায়?

সেটা ভেবে দিবাকর রজতকে বললো, "তুমি মনোহরপুকুরের ঠিক কোন জায়গাটায় এখন রয়েছ বলতে পারবে? আমি তাহলে বলে দিচ্ছি বাড়ীটা ঠিক কোথায়?"

রজত বললো, "আমি এখন চলে এসেছি ঠিক দেশপ্রিয় পার্কের কাছে। ট্যাক্সিটা পার্কের একটু আগে দাঁড় করিয়ে রেখেছি। এবার বলো কি করবো?"

- "তুমি তো বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছ। ওটা ল্যান্সডাউন রোড। ট্যাক্সিটাকে ঘুরিয়ে নিয়ে তোমাকে ব্যাক করে আসতে হবে। বাঁদিকে ধরে একটু এলেই বাঁহাতে মনোহরপুকুর রোড পড়বে। ট্যাক্সিটা ঘুরিয়েই দেখবে, একটা সরু গলি ঢুকেছে, ডানহাতে ঠিক দুনম্বর বাড়ীটায় একতলায় ও থাকতো।"

রজত বললো, "ইস তুমি থাকলে কত ভালো হতো। আমি কি এতো মনে রাখতে পারবো?"

সিরিজা এতক্ষণ পাশে বসে ওদের কথা শুনছিল। বললো, "মনে না রাখার কি আছে? চল না আমিও ঠিক খুঁজে নেব।"

অবাক হয়ে গেল রজত। গ্রামের মেয়ে সিরিজা একদিনেই ট্যাক্সিতে বেরিয়ে শহর চিনে নিল। ওকে বললো, "বেশ, তাহলে তো আমার চিন্তা নেই।"

ড্রাইভারকে ট্যাক্সিটা ঘুরিয়ে নিতে বললো রজত। দিবাকরকে বললো, "ঠিক আছে রাখো। আমি পরে তোমাকে আবার ফোন করছি।"

যেতে যেতে রজতের একটা চিন্তা মাথায় কিন্তু ভালোমতন এল। সিরিজাকে নিয়ে ও যাচ্ছে রেশমীর বাড়ীতে। যদিও রেশমী ওখানে এখন থাকে না। শুনেছে ও নাকি ভাড়া থাকতো ওখানে। দোতলায় নিশ্চয়ই বাড়ীওয়ালা থাকেন। তিনিই যদি কোনো হদিশ দিতে পারেন। যদি বলে দিতে পারেন রেশমীর নতুন ঠিকানাটা। কিন্তু সত্যিই রেশমী যদি ঐ বাড়ীতে থাকতো, তাহলে সিরিজাকে রজতের সাথে দেখে রেশমী কি ভাবতো? রজত কি জবাব দিহি করতো রেশমীর কাছে? কি পরিচয় দিত সিরিজার? বলো তো এককালে তুমি ছিলে আমার পুরোনো সঙ্গিনী। আর এখন আমার নতুন সঙ্গিনী হচ্ছে সিরিজা। আজ তাকে সাথে করে নিয়ে এসেছি, তোমায় দেখাবো বলে?

কি ভাবতো রেশমী? ভালোবাসার ছল করেও সাধ মেটেনি? আবার নতুন করে এসেছ কাটা ঘায়ে নুনের ছেটা দিতে? সত্যি কথাটা বলতে চেষ্টা করেও রজত হয়তো থমকে যেত রেশমীর কাছে। দিবাকরের জন্য হঠাৎ তার এত বন্ধু প্রীতি? রেশমী হয়তো বিশ্বাসই করতো না। রজত মনে মনে ভাবছিল সিরিজার চাপে পড়ে সত্যিই কেমন যেন দূঃসাহসিক কাজ করে ফেলেছে ও।

ট্যক্সিওয়ালা বললো, "বাঁ দিকে মনোহরপুকুর রোড। এবার গাড়ীটা ঘোরাবো?"

- "হ্যাঁ ঘোরান ঘোরান। বাঁদিকেই একটা গলি পড়বে।"

ঠিক গলির মুখটাতে ট্যাক্সিওয়ালাকে গাড়ীটা দাঁড় করাতে বললো রজত। সিরিজাকে বললো, "তুমি বসো, আমি দেখে আসছি।"

সিরিজা হেসে বললো, "কেন, আমি যাবো না?"

-- "না না, তোমায় যেতে হবে না। আমিই দেখে আসছি। আমি শুধু দেখব বাড়ীওয়ালা আছে কিনা? রেশমীর খোঁজ যদি কেউ দিতে পারে তাহলে উনিই দিতে পারবেন। তুমি ট্যাক্সিতেই বসে থাকো, আমি এক্ষুনি আসছি।"

রজত গাড়ী থেকে নেমে গেল। সিরিজা ট্যাক্সিতে একা বসে। দুটো এলাকার ছেলে সামনের চায়ের দোকানটায় বসে সিরিজাকে বিস্ময় সহকারে দেখছে। সিরিজা একবার ওদেরকে দেখেও খুব একটা ভ্রুক্ষেপ করলো না। ও আপন মনে ট্যাক্সিতে বসে রইলো। রজত তখন গলির ভেতরে ঢুকে পড়েছে। গলিতে ঢুকেই ডানদিকের দু নম্বর বাড়ীটা। সাদা রঙের দোতলা বাড়ীটা। এখানে থাকতো রজতের একসময়ের সঙ্গিনী রেশমী।

একজন পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো। রজতকে জিজ্ঞেস করলো, "কাকে খুঁজছেন?"

- "না এখানেই একজন থাকতো"

-- "কে?"

- "আপনি চিনবেন কি তাকে?"

-- "কেন চিনবো না? আমি এ পাড়াতে বাস করছি তিরিশ বছর হলো। আপনি স্বচ্ছন্দে আমাকে বলতে পারেন।"

- "একটি মেয়ে।"

-- "মেয়ে? কি নাম?"

- "রেশমী।"

-- "রেশমী? ও সে তো অনেকদিন আগেই চলে গেছে এখান থেকে।"

- "কোথায় গেছে সেটা বলতে পারবেন?"

-- "সে তো আমি বলতে পারবো না দাদা। আপনি বরং দোতলায় বাড়ীওয়ালা থাকেন। ওনাকে জিজ্ঞাসা করুন।"

রজত মনে মনে বললো, "সে তো আমিও জানি। দিবাকর একটু আগে এই কথাটাই ওকে ফোনে বলেছে। এখন বাড়ীওয়ালাই একমাত্র সহায়। তাছাড়া কোনো উপায় নেই।"

রজত লক্ষ করলো সিরিজা ট্যাক্সি থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে ওকে দেখছে। রেশমীর হদিশ পাওয়া গেল কিনা সেটাই হয়তো অনুমান করার চেষ্টা করছে। রজতকে কে ও যে কতটা কর্তব্য পরায়ণ করে ফেলেছে সেটা রজত ভালো করেই জানে।

বাড়ীর সামনে গিয়ে দরজার সামনে কলিংবেল টিপলো রজত। এই বিকেলবেলা ভদ্রলোক এখন বাড়ী আছে কিনা কে জানে? বাড়ীওয়ালা সামনে এলে রজত কি বলবে সেটাও মনে মনে ঠিক করে নিল। এখন শুধু রেশমীর খোঁজটা ওকে নিতে হবে।

একতলার ফ্ল্যাটটায় সামনে একটা বারান্দা। ঢোকার প্রবেশ পথ ওখান দিয়েই। দেখে মনে হচ্ছে একতলাটা খালি পড়ে আছে। রেশমীরা চলে যাবার পর হয়তো নতুন কোনো ভাড়াটে আসেনি এই ফ্ল্যাটে। রজত খেয়াল করলো দোতলাতেও একটা বারান্দা রয়েছে। কলিংবেলের শব্দ শুনে হয়তো ওখান দিয়ে কেউ মুখ বাড়াবে। ঠিক তাই হলো। আর একবার কলিংবেলের বাজানোর পরেই একজন বারান্দা দিয়ে নিচের দিকে মুখ বাড়ালেন। জিজ্ঞেস করলেন কে? তবে তিনি কোনো ভদ্রলোক নন। একজন মহিলা। মনে হয় বাড়ীওয়ালার স্ত্রী।

-- "কাকে খুঁজছেন?"

- "আমার নাম রজত।"

-- "কোথা থেকে আসছেন?"

- "আমি কলকাতাতেই থাকি। রেশমীদের আত্মীয়। ওরা এখানে থাকতো না? এখন কোথায় আছে বলতে পারবেন? আমি ঠিকানাটা জানি না। তাই এসেছিলাম।"

ভদ্রমহিলা একটু ভূরু কূঁচকালেন। বললেন, "রেশমী? আচ্ছা দাঁড়ান। আমি নিচে আসছি।"

হঠাৎ যেন রেশমীর নাম শুনে ভদ্রমহিলা একটু বিরক্ত হলেন। রজত ভাবলো, কি হলো ব্যাপারটা? হঠাৎ রেশমীর নাম শুনে অস্বস্তি কেন? কিছু প্রবলেম হলো নাকি?

নিচে এসে মহিলা দরজা খুললেন। রজত তখন সামনে দাঁড়িয়ে। মহিলাটি বললেন, "কি ব্যাপার বলুন তো? আপনি আত্মীয়। কলকাতায় থাকেন। অথচ ওরা কোথায় গেছে সেটা জানেন না? আমাকে ঠিকানা জিজ্ঞাসা করছেন?"

একটু থতমত খেলো রজত। ইতস্তত করে বলতে চেষ্টা করলো, "না মানে......"

-- "রেশমী আমাকে ঠিকানা দিয়ে যেতে বারণ করে গেছে। বলেছে ওর যাকে যা দরকার। ওই জানিয়ে দেবে তাকে। বলেছে ওর খোঁজে কেউ এলে আমি যেন তাকে ঠিকানা না দিই। আমাকে বারণ করে গেছে রেশমী।"

- "বারণ করে গেছে?"

-- "হ্যাঁ কি করবো বলুন? আমি তো কাউকে চিনি না। উটকো কোনো লোক। কেউ এলেই তাকে বিশ্বাস করে ঠিকানা কি করে বলবো? ও যখন থাকতো, তখন একটা ছেলে তো খুব আসতো। কি যেন নাম ছেলেটার? হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, দিবাকর। রেশমী চলে যাবার পরও ও অনেকবার এখানে এসেছে। আমাকে অনেকবার ঠিকানা জিজ্ঞেস করেছে। আমি দিই নি। কারন রেশমী আমাকে বারণ করে গেছে ওকেও ঠিকানা না বলার জন্য। সেই যে আপনাকে পাঠায় নি? আমি কি করে বিশ্বাস করবো?"

রজত মনে মনে বললো, এ তো মহা ফ্যাসাদে পড়া গেল। মহিলাটি একবারে ঝানু মহিলা। সহজে পটানো যাবে না মনে হচ্ছে।

- "কিন্তু আপনি যা ভাবছেন, তাতো আমি নই।"

-- "আপনি কে?"

- "বললাম তো আমি রেশমীর আত্মীয়।"

-- "ঠিক আছে আত্মীয় যখন, আপনি আপনার ফোন নম্বরটা দিয়ে যান, আমি রেশমীকে বলব, আপনাকে ফোন করে নিতে।"

- "আপনার কাছে রেশমীর নম্বর আছে?"

-- "আছে কেন?"

- "নম্বরটা দিন না? তাহলে আমি ফোন করে কথা বলে নেব।"

-- "তাহলে সেই একই ব্যাপার হলো, রেশমী যদি আমাকে পরে কিছু বলে, যে তুমি ফোন নম্বর কেন দিয়েছ? আমার কোনো আত্মীয় নেই। আমি কেন কথা শুনব? তার থেকে আপনিই ফোন নম্বরটা দিয়ে যান, সেটাই বরং ভালো হবে।"

রজত বুঝতে পারছিল, ভদ্রমহিলা বেশ চালু মহিলা। খুব সহজে রেশমীর হদিশ বার করতে পারবে না ওনার থেকে। আমতা আমতা করে কি যেন বলতে যাচ্ছিলো মহিলাটিকে। হঠাৎ দেখলো ট্যাক্সি থেকে সিরিজা এবার নেমে এগিয়ে আসছে ঐ বাড়ীটারই দিকে।
 
।। বিশ ।।

মহিলাটি যেন আশাই করতে পারেনি যে এই উটকো লোকটির সাথে আবার কোন মহিলা এসেছে। সিরিজা কাছে এসে দাঁড়াতেই উনি বেশ অবাক হয়ে গেলেন। যেন ভাবখানা এমন এ আবার কে? সিথিঁতে সিদূঁর নেই, হাতে শাঁখা নোওয়াও নেই অথচ মেয়েটাকে দেখে তো এই লোকটার বউ মনে হচ্ছে। মেয়েটা বেশ মনোরমা, রেশমির চেয়ে কোন অংশে সুন্দরী কম নয়।

সিরিজা বেশ সুন্দর করে নিজের পরিচয় দিল, "মাসীমা আমি সিরিজা। ওনার স্ত্রী আর রেশমির বন্ধু। আপনি ভালো আছেন?"

এবার আরও অবাক হলেন মহিলাটি। অবাক গলায় বললেন, "তুমি রেশমির বন্ধু? কোনদিন শুনিনি তো তোমার নাম? ইনি বলছেন উনি নাকি রেশমির আত্মীয়, আর তুমি বলছো বন্ধু। কি ব্যাপার বলো তো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।"

- "আসলে আপনি আমাদের আগে দেখেননি তো? তাই ঠিক ধরতে পারছেন না। রেশমি কোথায় আছে বলুন না? ঠিকানাটা দিন। আমরা ঠিক খুঁজে চলে যাবো।"

অবাক হয়ে যাচ্ছিলো রজত। সিরিজা কেমন স্মার্টলি উত্তর দিচ্ছে। যেন যে কোনো লোককে কথা দিয়েও বশ মানাতে পারে ও।

মহিলাটি বললেন, "আমি তো একটু আগেই ওনাকে বললাম, রেশমিকে ফোন করে ওনার নম্বর দিয়ে দেব। রেশমিই কথা বলে নেবে। আপনাদের অত টেনশন নিতে হবে না।"

সিরিজা এবার রজতকে আরও অবাক করে ভদ্রমহিলাকে একটা সাংঘাতিক আবদার করে বসলো। বললো, "তাহলে ওকে ফোনটা এখনই করুন, আমি কথা বলছি।"

টেনশনে রজতের গায়ের লোমগুলো সব খাড়া হয়ে যাচ্ছিলো। কি বলছে টা কি সিরিজা? ও রেশমির সাথে কথা বলবে? মাথা খারাপ হয়ে গেছে? সব গুবলেট হয়ে যাবে তাহলে। সিরিজাকে যেন ইশারায় মানা করতে গিয়েও পারলো না। এক্ষুনি যদি ফোনটা করে বসে মহিলা। তাহলে এতদূর রেশমির খোঁজে আসা সব জল হয়ে যাবে।

- "ঠিক আছে তুমি যখন রেশমিকে ফোনটা করতে বলছো। তখন ফোনটা তোমাদের সামনেই করি।"

ভদ্রমহিলা মোবাইল আনতে আবার ওপরে যাচ্ছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে সিরিজা রজতের হাত থেকে মোবাইলটা ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে বললো, "এইটা থেকেই করুন না? আবার কষ্ট করে উপরে যাবেন কেন?"

-- "তোমার ফোন থেকে ওকে লাইন মেলাবো বলছো? ওকি ধরবে?"

- "ঠিক ধরবে। আপনি কথা বলুন না।"

ভদ্রমহিলা রজতের মোবাইল হাতে নিয়ে কথা বলছে। নম্বরটা মোবাইলে উঠে যাচ্ছে। সিরিজা ইশারা করছে রজতকে, যেন কথা হয়ে গেলেই তুমি নম্বরটা সেভ করে রাখবে। ওদিকে রজত বুঝতে পারছে না সিরিজা রেশমির সাথে কি কথা বলবে? রেশমিকে কি পরিচয় দেবে নিজের? রজতের বউ? সব তো তাহলে মাঠে মারা যাবে।

- "কে রেশমি বলছো?"

-- "হ্যাঁ কে?"

- "আমি মাসীমা বলছি। তোমার পুরোনো বাড়ী থেকে। দোতলার মাসীমা।"

-- "ও মাসীমা? বলো। কেমন আছো?"

- "ভালো আছি, এই দেখ না তোমার খোঁজে দুজন এসেছেন। বলছেন তোমার আত্মীয়। একজন আবার তোমার বন্ধু। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তাই তোমার সাথে কথা বলার জন্য ফোন মেলালাম।"

অপর প্রান্ত থেকে অবাক হয়ে রেশমি বলছে, "আত্মীয়? বন্ধু? মাসীমা আপনি কার কথা বলছেন?"

রজত পুরো টেনশনে কাঠ। কথা বেরোচ্ছে না মুখ দিয়ে। সিরিজা ঝট করে হাতটা বাড়িয়ে দিল, মোবাইলটা মহিলার হাত থেকে নেবার জন্য। বললো, "মাসীমা আমাকে দিন না? আমি কথা বলছি।"

এবার ফোনের এ প্রান্তে সিরিজা, আর অপর প্রান্তে রেশমি। রজত একটু দূরে সরে গেল যদি কিছু অঘটন ঘটে। মহিলাটি কৌতূহলের সাথে শোনার চেষ্টা করছেন, সিরিজা কি কথা বলে এবার রেশমির সাথে, সেটাই দেখার।

ফোনটা কানে নিয়ে সিরিজা বললো, "রেশমি, আমি সিরিজা বলছি।"

-- "সিরিজা? কে আপনি?"

- "বিয়ের আগে যাকে মনে ছিল এতদিন? বিয়ের পরেই তাকে ভুলে গেলে?"

-- "কার বিয়ে? আমি তো ঠিক মনে করতে পারছি না।"

- "এই হয়। কাছের বন্ধুকে সবাই এভাবেই ভুলে যায়। কতদিন দেখা হয়নি আমাদের। আমি তো সেই থেকে তোমার সঙ্গে দেখা হবে বলে ছটফট করছি।"

-- "আপনি কে বলছেন আমি এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। এই নামে আমার তো কোনো বন্ধু নেই।"

- "আগে বলো তোমার সাথে কোথায় দেখা হবে? তাহলেই প্রিয় বন্ধু কে তুমি মনে করতে পারবে।"

কিছুক্ষণ চুপ করে রেশমি বললো, "আপনি কে বলছেন সত্যি করে বলুন তো। আমি এখনও বলছি এই নামে আমার সত্যি কোনো বন্ধু নেই।"

- "ঠিক আছে রেশমি, তোমার কথাও আমি মেনে নিলাম, তোমার সাথে দেখা হলেই তো সব পরিষ্কার হয়ে যাবে, তখন তুমিই বলবে, আমি যা বলেছি তা ঠিক বলেছি কিনা? এখন বলো, তোমার সাথে কোথায় দেখা হবে?"

মাথামুন্ডু ভেবে না পেয়ে রেশমি কি জবাব দেবে বুঝতে পারছিল না। সিরিজাকে বললো, "ঠিক আছে, আপনারা যেখানে আমার খোঁজে এসেছেন, সেইখানেই আসুন। আমি দেখা করবো।"

- "কবে?"

-- "আগামী রবিবার।"

ফোনটা মহিলাটিকে একবার দেওয়ার আগে সিরিজা কায়দা করে বললো, "ঠিক আছে তুমি বরং মাসীমার সাথেও একবার কথা বলে নাও। ওনাকে বুঝিয়ে দাও, নয়তো উনি চিন্তা করবেন।"

ফোনটা মহিলাটির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, "নিন, আপনিও কথা বলে নিন। আসলে আমাকে অনেকদিন দেখেনি তো। তাই মনে করতে পারছে না।"

রেশমীর বাড়িওয়ালি কিছু না বুঝেই ফোনটা আবার ধরলো।

- "হ্যাঁ রেশমি। বলো। কথা হয়েছে?"

-- "হ্যাঁ হয়েছে। ঠিক বুঝতে পারছি না। হয়তো আমার কলেজের কোনো পুরোনো বন্ধু হবে। ঠিক আছে মাসীমা, তোমাকে আর একদিন একটু কষ্ট দেব। আমি বলেছি রবিবার তোমার ওখানেই ওকে আসতে। তুমি থাকবে তো?"

- "হ্যাঁ থাকবো। তুমি আসবে?"

-- "হ্যাঁ আসবো। তুমিও ওকে আসতে বলে দাও। সামনা সামনি দেখি, তাহলে হয়তো চিনতে পারবো।"

লাইনটা অপরপ্রান্ত থেকে ছেড়ে দিল রেশমি। সিরিজা মহিলাটিকে বললো, "কি মাসীমা এবার চিন্তা দূর হলো তো? বলেছিলাম না? দেখবেন, রবিবারই ও আমাকে দেখতে পেয়ে কেমন আনন্দ করবে।"

-- "এটাই ভালো হলো গো। নইলে আমি আবার দোষের ভাগীদার হয়ে যেতাম। সামনা সামনি কথা বলে তোমরা নিজেরাই পরিষ্কার হয়ে নাও।"

মোবাইলটা আবার হাতে ফেরত নিয়ে সিরিজা বললো, "এটাই তো ভালো হলো। আপনারও আর কিছু চিন্তা রইলো না। আমি রবিবার আসছি। রেশমিকে বলবেন, আমি বিকেল চারটেয় আসছি।"

অবাক হয়ে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে রজত। সিরিজা বললো, "ট্যাক্সিটা দাঁড়িয়ে আছে যে। এবার চলো।"

রজত ট্যাক্সিতে উঠে হাঁ করে চেয়ে রইলো সিরিজার দিকে। যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না, একটা অসাধ্য সাধন করেছে সিরিজা। অবাক হয়ে ওকে বললো, "তোমার তারিফ না করে পারছি না সিরিজা। এমন কঠিন কাজটা তুমি করলে কি করে? রেশমিকে রাজী করিয়ে নিলে? আমি তো এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না।"

মুচকী মুচকী হাসছিল সিরিজা। রজতকে বললো, "সবই তো দেখলে। তোমার চোখের সামনেই করলাম। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না?"

কৌশলে রেশমির মতন স্মার্ট মেয়েকেও কথাচ্ছলে রাজী করিয়ে নিয়েছে সিরিজা, এর থেকে খুশির সংবাদটা আর কি আছে? এক্ষুনি খবরটা দিবাকরকে দিতে হবে। শুনে ও খুশ হয়ে যাবে।

রজত সিরিজাকে বললো, "তুমি সত্যিই বু্দ্ধিমতী। এটা তোমার জন্যই সম্ভব হলো। একেবারে জাদু জানো তুমি।" মনে মনে একটা খটকা এখনও রয়েছে। ও তবু বললো, "কিন্তু সিরিজা?"

- "কি?"

মনে যেন একটা নয়, হাজারটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে রজতের মনে। সিরিজাকে বললো, "তোমার সাথে রবিবারই রেশমির সামনাসামনি দেখা হবে। তখন তুমি ওকে কি বলবে, সেটাই ভাবছি।"

- "সত্যি কথাটাই বলবো।"

রজত আরও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সিরিজার দিকে। সিরিজা বললো, "আমি কিন্তু ওকে বোকা বানাইনি। শুধু ওর সামনাসামনি হতে চেয়েছিলাম। আমার কাজ সফল। এবার সত্যি কথাটাই বলবো ওকে।"

ট্যাক্সিওয়ালা গাড়ী আবার পেছন দিকে ঘুরিয়ে ধর্মতলার দিকে যাওয়া শুরু করেছে, রজতের ওদিকে হুঁশ নেই। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সিরিজার দিকে। রেশমির সাথে দেখা হলে সিরিজা কি সত্যি কথাটা বলবে, সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।

-- "রেশমিকে কি বলবে তুমি সিরিজা?"

- "ভয় হচ্ছে? মাটি করে দেব সব? দিবাকরদার জন্য এত চেষ্টা সব বৃথা হয়ে যাবে, তাই ভাবছো?"

কবীরের মুখে তখন উদ্বেগের ভাবটা স্পষ্ট। সিরিজাকে বেশ টেনশন নিয়েই বললো, "আমি যা ভাবছি, তুমি নিশ্চয়ই তাই ভাবছো না। তবে তুমি কি ভাবছো, আমার ভীষন জানতে ইচ্ছে করছে।"

সিরিজা গাড়ীর মধ্যেই রজতের একটা হাত নিজের বুকের ওপর নিলো। হাতটা বুকে চেপে ধরে রজতকে বললো, "তোমার জীবনে রেশমি আগে এসেছে না সিরিজা?"

রজত ওর মুখের দিকে তাকিয়ে চটপট উত্তর দিল, "রেশমি।"

- "আর যদি সিরিজা তোমার জীবনে আগে আসতো? তাহলে কি করতে?"

-- "তাহলে সিরিজাই থেকে যেত জীবনে। রেশমি আর কোনওদিন আসতো না জীবনে।"

- "আর যদি ধরে নাও, উল্টোটা হয়?"

-- "উল্টোটা মানে?"

- "মানে আগেরটা পরে, আর পরেরটা আগে।"

-- "কি বলতে চাইছো সিরিজা? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।"

- "ধরো আমি যদি রেশমিকে বলি, তোমার সাথে আমার অনেক আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল, তোমার সাথে রেশমির দেখা হওয়ার অনেক আগে থেকেই। ওকি সেটা তখন মেনে নেবে না?"

-- "অবাস্তবকে বাস্তব করার চেষ্টা করছো সিরিজা। এ বড়ই কঠিন কাজ।"

রজতের হাতটা নিজের বুকের সাথে আরও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে নিয়ে সিরিজা বললো, "তুমি তোমার বন্ধুর জন্য স্বার্থত্যাগ করেছো, এটা বললেও কি সে মেনে নেবে না?"

-- "কে, দিবাকর?"

- "তুমি তোমার বন্ধু দিবাকরদার জন্য স্বার্থত্যাগ করেছে। বলিদান দিয়েছ, ভালোবাসার। এটা বললেও কি রেশমির মন তাতে গলবে না? নাকি তোমারই ভালোবাসার দাম বোঝে সে। দিবাকরদার নয়?"

বাকরুদ্ধ হয়ে ট্যাক্সির মধ্যেই সিরিজাকে জড়িয়ে ধরলো রজত। এই মূহূর্তে নিজেকে যেন স্থির রাখতে পারছে না রজত, সিরিজাকে একটু আদর না করে।

- "এই কি করছো? ছাড়ো ছাড়ো। দেখেছো কি করছে? গাড়ীর মধ্যে এরকম কেউ করে?"

রজত শুনছে না সিরিজার কথা। অল্প একটু আদর করে ফেলেছে সিরিজার গালে। ঠোঁটটায় স্পর্শ করতে পারেনি ঠোঁট দিয়ে। একেবারে মুখের কাছে মুখটা রেখে রজত ওকে বললো, "আচ্ছা সিরিজা সত্যি করে বলো তো? আমার নিজের মনকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে। তুমি কি সত্যি গ্রাম থেকে এসেছ? না অন্য কোথাও?"

হাসছিল সিরিজা। বললো, "গ্রামের মেয়েদের একদম বুদ্ধি হয় না, তাই না? শহুরে মেয়েরা অনেক চালাক হয়। আমি তো সরলই। সরল মনেই বলবো রেশমিকে। তারপর ও যদি মেনে নেয়।"

-- "ওফ দিবাকর ব্যাপারটা শুনলে দারুন খুশি হবে। দাঁড়াও, ওকে ফোনটা করি।"

ট্যাক্সিতে যেতে যেতে রজত লাইন মেলালো দিবাকরকে। ফোনের ও প্রান্তে তখন দিবাকর।

রজত খুশি চেপে রাখতে পারছে না। দিবাকরকে শুধু বললো, "আসছে আসছে সে আসছে। আর চিন্তা নেই।"

- "কে আসছে?"

-- "তোমার রেশমি। আবার কে?"

- "বলো কি? কোথায় পেলে রেশমিকে?"

-- "রেশমি ঐ বাড়ীতেই আসছে রবিবার, সিরিজার সাথে দেখা করতে।"

- "রেশমি সিরিজার সাথে দেখা করতে আসছে? কি করে করলে ব্যাপারটা?"

-- "আমি করিনি। যা করার সিরিজাই করেছে। ওই তো অসাধ্য সাধন করেছে।"

- "সিরিজা করেছে!"

দিবাকর আনন্দে কথা বলতে পারছে না। অবাক হয়ে গেছে ও।

-- "এই তো সিরিজা আমার পাশে আছে। কথা বলো।"

সিরিজার হাতে ফোনটা দিয়ে রজত একদৃষ্টে চেয়ে আছে ওর দিকে। দিবাকরের সাথে কথা বলছে সিরিজা। যেন খুশিতে ডগমগ হয়ে ফুটছে রজত। ওদিকে দিবাকরকে ফোনে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে সিরিজা, "সবই ঠিকঠাক হয়ে যাবে। চিন্তার কিছু নেই। দেখবেন, আপনার রেশমি ঠিক আপনার কাছেই ফিরে আসবে। রেশমিকে রাজী করাবই আমি। এটা আমি কথা দিলাম আপনাকে।"

ফোনটা সিরিজার হাত থেকে ফেরত নিয়ে রজত দিবাকরকে বললো, "কি এবার খুশি তো? সিরিজা আর আমার জন্য বাড়ীতে এবার একটা পার্টি দিও। আর রেশমি যদি রাজী হয়ে যায়, তাহলে আমাদের বাইরে বেড়াতে যাবার ব্যাপারটা চারজনে একসাথেই হবে কি বলো? মজা হবে প্রচুর।"

কথা বলতে বলতেই হঠাৎই বৃষ্টি নেমেছে রাস্তায়। জানালার কাঁচ দিয়ে জলের ছিটে লাগছে সিরিজার শাড়ীতে। রজত বললো, "আমি তোমাকে পরে ফোন করছি দিবাকর। খুব জোরে বৃষ্টি নেমেছে এখন। আমরা দুজনে ট্যাক্সিতেই আছি।"

কলকাতার রাস্তায় ভর সন্ধেবেলা বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতে সিরিজাকে নিয়ে একসাথে ভিজলে যেন কত ভালো হতো। ট্যাক্সির কাঁচটা ইচ্ছে করে তুলছিল না রজত। হঠাৎই বৃষ্টির ছাঁট এসে ভিজিয়ে দিয়েছে সিরিজার বুক।

রজত মজা পাচ্ছে। সিরিজা বললো, "দাও না তুলে কাঁচটা। দেখ কেমন ভিজিয়ে দিল আমাকে।"

রজত বললো, "থাক না একটু। তুমিও ভেজো, আর সেই সাথে আমিও।"

ট্যাক্সিওয়ালা বললো, "স্যার কোথায় যাবে বলুন? বৃষ্টি তো খুব জোরে পড়ছে, ধর্মতলায় তো আবার চলে এলুম। এবার?"

রজতের কারুর কথাই কানে যাচ্ছে না। হঠাৎই ট্যাক্সির মধ্যে সিরিজার ঠোঁট দুটোকে আঁকড়ে ধরেছে ঠোঁট দিয়ে। বৃষ্টির ছাঁট তোয়াক্কা না করে সিরিজার সাথে অনেকক্ষণ পরে রোমান্স, এই প্রথমবার ট্যাক্সিতে। রজতের জোরালো চুমুটা সিরিজার ঠোঁটের ওপর পুরো আছড়ে পড়ছিল। আচমকা সিরিজাও বুঝতে পারেনি। নিজেকে নিয়ে নড়াচাড়াও করতে পারছে না, বৃষ্টির ছাঁটকে উপেক্ষা করে রজত আরও গভীর ভাবে আঁকড়ে ধরেছে ওর ঠোঁট। ট্যাক্সিওয়ালাও যেন দেখেও দেখছে না। রজতেরও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই ওদিকে। গাড়ীর মধ্যে সিরিজার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট আবদ্ধ করে থাকাটা রজতের কাছে কোনো ব্যাপার নয়, শুধু আদর করার জন্য সিরিজার অনুমতিটা পেলেই হলো।

সিরিজা ওকে আটকানোর প্রবল চেষ্টা করছিল, কিন্তু রজতের মন প্রাণ তখন ছেয়ে ফেলেছে সিরিজার এই অসাধারণ কৃতিত্ব। যেভাবে রেশমিকে রাজী করিয়ে নিয়েছে ও, সেটা একপ্রকার কেরামতি ছাড়া আর কিছুই নয়।

চুমুটা ওকে ভালোমতন খেয়ে রজত বললো, "থ্যাঙ্ক ইউ। আজ থেকে আমি তোমার কেনা গোলাম হয়ে গেলাম। সত্যি মানতে হবে তোমার মধ্যে কিছু আছে। নইলে, আমি তো ভেবেছিলাম, গেল বোধহয় সব মাটি হয়ে।"

বৃষ্টিটা তুমুল জোরে পড়ছে। বৃষ্টির ছাঁট এসে সিরিজার পিঠ ভালোমতই ভিজিয়ে দিচ্ছে। রজত ওকে তখনও জড়িয়ে রেখেছে, শরীরের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে সিরিজা জানালার দিকে যেতেও পারছে না। কারন তখনও জল আসছে তেড়ে।

ট্যাক্সিওয়ালা এবার বললো, "আপনারা জানালার কাঁচটা তুলে দিন, নয়তো পুরো ভিজে যাবেন।"

রজত সিরিজাকে বললো, "সরি সরি। এই তো আমি এবার কাঁচ তুলে দিচ্ছি, তুমি রিল্যাক্স করে বসো।"

সিরিজা ওকে বললো, "পকেট থেকে তোমার রুমালটা বের করো দেখি। আমার পিঠটা মুছে দাও রুমাল দিয়ে, একদম ভিজে গেছে।"

রজত পকেট থেকে রুমালটা বের করার সময় সিরিজা হাসছিল।

রজত বললো, "কি হলো, হাসছো কেন?"

সিরিজা তবু হাসছিল, এবার বললো, "তোমার ঠোঁটের নিচে আমার লিপস্টিক লেগে গেছে। দাও ওটা আমি মুছে দিই।"

-- "থাক না, ভালোই তো।"

- "ধ্যাত, খালি চ্যাংড়ামো মারে শুধু।"

ট্যাক্সি বৃষ্টির মধ্যেই ধর্মতলা চলে এসেছ অনেকক্ষণ। ট্যাক্সিওয়ালা আবার কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই সিরিজা বললো, "কোথায় যাবে এখন?"

-- "এই বৃষ্টিতে তোমাকে নিয়ে আর কোথায় ঘুরবো? চলো বাড়ীই ফিরে যাই। বেশ তো ভালোই কাটছিল সময়টা। হঠাৎই প্রকৃতি দেবতার কি যে হলো? বৃষ্টিটা এসে সব ঝামেলা পাকিয়ে দিল, নইলে তোমাকে নিয়ে তো আরও কিছুক্ষণ ঘোরা যেত।"

রজতের মুখের দিকে তাকিয়ে সিরিজা বললো, "দিবাকরদার ওখানে একবার গেলে হতো না?"

-- "দিবাকর?"

- "হ্যাঁ, চলো না যাই।"

-- "কিন্তু সিরিজা, বৃষ্টি যেভাবে পড়ছে, মনে হচ্ছে আরও অনেকক্ষণ চলবে। তারপর যদি ওখানেই আটকা পড়ে যাই? আর ফিরতে না পারি?"

- "ভালোই তো, রাত্রে ওখানেই থেকে যাবো।"

রজত কি যেন ভাবছিল। সিরিজা আবার বললো, "তুমিই তো আমাকে ওখানে পাঠানোর প্ল্যান করেছিলে, দিবাকরদার সাথে রাত্রে থাকার জন্য, এখন তো তুমি থাকবে সাথে, অসুবিধা কি?"

-- "না অসুবিধা কিছু নয়। আসলে....."

কি যেন বলতে থেমে গেল রজত। সিরিজা বললো, "আসলে কি?"

রজত যেন বলতে গিয়েও বলতে পারলো না সিরিজাকে। ওর ইচ্ছায় সাড়া দিতে ইচ্ছে করছে না, মন সায় দিচ্ছে না। তবু যেন বলতে পারছে না সিরিজাকে। কাল থেকে রেশমিকে নিয়ে যা টানাপোড়েন চলছে, এবারে যেন একটু হাঁপিয়ে পড়েছে রজত। দিবাকরের উপস্থিতি যেন ওর অবাধ যৌন স্বাধীনতাকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে।

রজতের গালে একটা হাত রেখে সিরিজা বললো, "কি ভাবছ?"

-- "কই কিছু না তো?"

- "তুমি না বললেও আমি সব বুঝতে পারি।"

-- "কি?"

- "অনেক জোরাজুরি করছি না তোমাকে?"

-- "কই না তো?"

- "রেশমিকে নিয়ে আমি একটু বেশিই মাথাব্যাথা করে ফেলেছি। তোমার আর ভালো লাগছে না?"

-- "না না, তা কেন হবে। রেশমির সমস্যা তো তুমিই সমাধান করে ফেলেছে। আমি শুধু দিবাকরের ঐ করুন মুখটা আর দেখতে চাই না। ওর ওখানে গেলেই তো আবার সেই রেশমিকে নিয়ে আলোচনা। তার থেকে বরং রেশমি ফিরে আসুক। দিবাকরের একাকীত্ব ঘুচুক, তাহলে আমরা সবাই স্বস্তি পাবো।"

সিরিজার মন রাখার জন্য রজত তবু বললো, "তুমি যখন যেতে চাইছো, চলো। তুমি বললে আমি কখনও না করবো না।"

ট্যাক্সিওয়ালাকে গাড়ীটা অন্যদিকে ঘোরাতে বলতে যাচ্ছিলো রজত। সিরিজা বাধা দিয়ে বললো, "না থাক, বাড়ীই ফিরে চলো।"

-- "তুমি রাগ করলে আমার ওপর?"

- "ওমা, রাগ কেন করবো?"

-- "আমি তো যেতে চাইছি, চলো না। আমি বরং দিবাকরকে আর একটা ফোন করে দিচ্ছি। ও শুনে খুশিই হবে।"

ফোনটা দিবাকরকে আবার করতে যাচ্ছিলো রজত। সিরিজা ওর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললো, "বলছি না যাবার দরকার নেই। বাড়ীই ফিরে চলো। তাছাড়া বৃষ্টিটা প্রচন্ড জোরে পড়ছে। আমরা ওখানে গেলে সত্যিই ফিরতে পারবো না আজকে।"

ট্যাক্সিওয়ালা বুঝতে পারছে না গাড়ী কোনদিকে নিয়ে যাবে। গাড়ীটা আবার দাঁড় করিয়ে দিয়েছে রাস্তার একপাশে। মুখ ঘুরিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে ওদের দুজনের দিকে। সিরিজা রজতকে বললো, "ওনাকে বলে দাও, বাড়ী কিভাবে যেতে হবে। উনি জানতে চাইছেন।"

রজত গাড়ীটা ঘোরাতে বললো, "নর্থ এর দিকে। চলুন উল্টোডাঙা হয়ে দমদম ক্যান্টনমেন্ট। ওখানেই আমার বাড়ী।"

গাড়ীতে বাকী রাস্তাটুকু যেতে যেতে, সিরিজা তখন রজতের বুকে মুখ রেখে চোখটা একটু আধবোজা করে ফেলেছে। ট্যাক্সি তখন ভি আই পি রোড ধরে সাঁ সাঁ করে ছুটছে। সিরিজার কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে রজত বললো, "একটা কথা বলবো সিরিজা?"

- "কি?"

-- "আমার যেটা মন বলছে, যদি মিথ্যা না হয়, তাহলে তুমি অন্তত আমাকে সত্যি কথাটা বলবে কি? আমি কিন্তু কিছু লুকোয় নি তোমার কাছে?"

রজতের বুকেই মাথা রেখে সিরিজা বললো, "কি জানতে চাইছো বলো?"

-- "আমি যখন ঘরে ছিলাম না, দিবাকর কি কোনো দূর্বলতা দেখিয়েছিল তোমার প্রতি?"


তৃতীয় অধ্যায় সমাপ্ত
 

Users who are viewing this thread

Back
Top