What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সিরিজা - একটি উপন্যাস (1 Viewer)

।। তেত্রিশ ।।

দিবাকরের বুকে মাথা রেখে সিরিজা যখন ঘুমে অচৈতন্য, তখনই রজতের ঘুমটা গেল ভেঙে। সকাল হয়েছে অনেকক্ষণ, তবুও যেন একটু আগেই ঘুমটা ভেঙে গেছে রজতের। পাশে দোলন শুয়ে আছে উলঙ্গ অবস্থায়। পা দুটোর একটা রজতের কোমরের ওপর তুলে দিয়ে ও অঘোরে ঘুমোচ্ছে। মোবাইল ফোনটা বালিশের তলা থেকে তুলে রজত ভাবছিল, দিবাকরকে একটা ফোন করবে কিনা? যদি সিরিজার সাথে একটু কথা বলা যেত।

কাল রাতে দোলনের সাথে যৌনসঙ্গমের পরে, কি যেন একটা আশঙ্কায় মনটা অস্থির হয়ে রয়েছে তখন থেকে। দিবাকরকে বিশ্বাস করে সব বলে ফেলেছে রজত। কিন্তু সিরিজা? ও যদি সন্দেহের বশে ভুল বুঝে ফেলে রজতকে। দিবাকরের পেট থেকে রজতের ঐ ফোনে বলা কথাগুলো বের করে নিতে এক সেকেন্ডও দেরী হবে না সিরিজার। ভোলাবালা দিবাকর, সিরিজাকে সব বলে দিলে তখনই বিপত্তি। এমন সুখের সম্পর্কে চিড় ধরলে পাগল হয়ে যাবে রজত। সিরিজা রজতকে ছেড়ে চলে গেলে কাকে নিয়ে থাকবে রজত? এই দোলন ছুঁড়ীকে নিয়ে? এতো সিরিজার সিকি ভাগের যোগ্যতাও পাবে না কোনদিনও। মাগীটা এসে যেন রজতের সুখটাই দিল পন্ড করে।

রজত ঘুম থেকে উঠে দোলনকে দেখছিল। দেখলো দোলনও এবার চোখ খুলেছে। পিট পিট করে তাকাচ্ছে ওর দিকে।

উঠে বসে ন্যাকামো করে রজতের গলা জড়িয়ে দোলন বললো, "তুমি উঠে পড়েছো? আমাকে জাগালে না?"

রজত বললো, "এই তো জেগেছো। এবার উঠে পড়ে কাপড়টা জড়াও দেখি। ওনাদের আসার টাইম হয়ে গেছে। তোমাকে এ অবস্থায় দেখলে কেলেঙ্কারী বেঁধে যাবে।"

দোলন যেন কিছুই জানে না। ন্যাকামো করে রজতকে বললো, "কে আসবে গো?"

- "কেন তুমি জানো না? কাল রাতে তো অত কথা হল। সিরিজাকে তো যার জন্য পাঠিয়ে দিলাম। ওনারা আসবে বলেই তো এমনটা করতে হল, নইলে কি আর শুধু শুধু সিরিজাকে পাঠাতাম?"

দোলন বেশ বিরক্ত হল, রজতের মুখে সিরিজার নামটাই আর সহ্য হচ্ছে না। ওকে মুখ ভেঙচে বললো, "ওফঃ খালি সিরিজা আর সিরিজা। এই সিরিজা যেন তোমার ঘাড়েই চেপে বসে আছে তখন থেকে। কি পাও তুমি সিরিজার থেকে? মেয়েমানুষের কি রূপটাই সব নাকি? ওর শরীর আছে, সুন্দর মুখশ্রী আছে, তাই বলে ওই শুধু ভালো, আর বাকীরা খারাপ? আমিও খারাপ?"

সাত সকালেই রজতের মাথায় আগুন ছুটে যাচ্ছিলো, তবুও ও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, "কেন? আমি কি তোমার মন রাখিনি? কাল এ ঘরে তোমাকে আসার সুযোগ করে দিলাম। সারারাত আমার আদর খেলে। আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকলে, নিজেও চটকালে, আমাকেও চটকাতে দিলে, এরপরেও মন ভরছে না?"

দোলন রজতের দিকে ঠোঁটটা বাড়িয়ে বললো, "না মন ভরছে না, আমাকে চুমু খাও।"

একটু ঠেলা মেরে দোলনকে রজত বললো, "না আর চুমু খেতে হবে না, অনেক হয়েছে।"

দোলন বেশ নাছোড়বান্দার মতই বললো, "কেন? কি হল তোমার? কাল তো বেশ আদর করছিলে, এখন আবার করো।"

রজত বললো, "তোমাকে বললাম না, একটু পরেই ওরা এসে পরবে, সকালবেলাই চুমু চুমু করে অস্থির করছো।"

দোলন বললো, "কে আসবে গো?"

- "কাল অত করে পাখীপড়ার মতন বুঝিয়ে বললাম, সকালে উঠে না বোঝার ভান করছো, কারণটা কি জানতে পারি? তুমি জানো না, আমার বউ এসে পড়তে পারে, কিছুক্ষণের মধ্যে। তোমাকে দেখলেও কিছু হয়তো বলবে না, কিন্তু এ অবস্থায় দেখলে তোমার আর আমার কি অবস্থা হবে বুঝতে পারছো?"

দোলনের যেন খিল খিল করে হাসি রজতের কথা শুনে। ওর কাঁধে দুটো হাত রেখে বললো, "এখনও বউকে ভয়? এই বউ না তোমার দু চোখের বিষ। সিরিজার জন্য বউকে ত্যাগ করলে, আর আমাকে আদর করবে বলে বউকে তাচ্ছিল্য করতে পারছ না?"

রজত পুরো রেগে অস্থির, দোলন তবু বললো, "এসো না গো, একটু আদর করো না। আমি ঠিক উঠে শাড়ীটা জড়িয়ে নেব গায়ে, ওরা আসার আগেই পড়ে নেব, কথা দিচ্ছি।" বলেই রজতের গলায় মুখটা ঘসতে লাগলো জোড়ে জোড়ে। জিভ ঠেকিয়ে রজতের থুতনীটা দিল একটু চেটে।

রজত বললো, "এই তোমার স্বভাব। ইচ্ছে না থাকলেও জোড় করে ঘাড়ে পড়বে। রাতে আমার মাথাটা খেয়েছ, এখন সকালেও শুরু করে দিয়েছ ত্যাঁদরামি। উফ কি মেয়েছেলেই জুটেছে আমার কপালে।"

দোলন চোখখানা বেশ পাকিয়ে বললো, "কি আমি ত্যাঁদোড়?

রজত বললো, "হ্যাঁ, ত্যাঁদোড়ই তো। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই আমার মাথাটা খাচ্ছো। কোন মেয়েছেলে এমন হয় আমার জানা ছিলো না।"

দোলন বললো, "আমাকে একটা চুমু খেতেই হবে। নইলে কিন্তু কিছুতেই কাপড় জড়াবো না গায়ে।"

রজত মনে মনে বললো, সত্যি এমন বেয়াক্কেলে মেয়েছেলে দেখিনি কোনদিন। ও অনিচ্ছা সত্বেও দোলনের ঠোঁটে চুমুটা খেল। গাটা ঘিনঘিন করছিল, তবুও খেতে হল, দোলন তখন ওর ঠোঁটটা কামড়ে ধরে নিজেই প্রবল ভাবে চুষছে।

সিরিজার ঠোঁটে যে মিষ্টি স্বাদটা ছিল, দোলনের ঠোঁটে ওটা নেই। অনেক রাত অবধি চুমু খেয়ে দোলনের ঠোঁট দুটোই এখন তেতো হয়ে গেছে। তেতো ঠোঁটে জিভ বোলাতে রজতের কিছুতেই ভালো লাগছে না।

দোলন বললো, "এই শোনো, তোমাকে একটা কথা বলবো, রাগ করবে না?"

রজত বললো, "রাগের কথা হলে রাগ তো করবোই। আমাকে রাগিয়ে দিলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।"

দোলন কি যেন বলতে যাচ্ছিলো সিরিজা বলে।

রজত ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো, "আবার সিরিজা কেন? নিজেই তো বললে। যাও এখন কাপড়টা জড়াও তাড়াতাড়ি। বলছি না ওরা এক্ষুনি এসে পড়বে।"

যাচ্ছি যাচ্ছি, বলে দোলন বিছানা ছেড়ে উঠে গেল। কিন্তু সিরিজার নাম করে যে কথাটা বলতে চাইছিল, সেটা আর বলা হল না।

বিছানায় বসে রজত এবার একটা সিগারেট ধরালো। দোলন বাথরুমে ঢুকেছে। ও বেরিয়ে আসার আগেই দিবাকরকে ফোন করে সিরিজার সাথে কথাটা সেরে নিতে হবে। রজত দিবাকরকে মোবাইলে ধরার চেষ্টা করলো, দেখলো দিবাকরের মোবাইল সুইচ অফ বলছে, তার মানে ওর ঘুম এখনও ভাঙেনি।

দোলন ছুঁড়িটা এখন কাছে নেই। সাতসকালে এই সুযোগে কথাটা বলে নেওয়া যেত। নইলে রজত জানে দোলন বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলেই চেঁচামেচি শুরু করে দেবে। ওকে বাঁধা দেবে, হাত থেকে ফোনটাও কেড়ে নিতে পারে। ঐ মেয়েকে কিচ্ছু বিশ্বাস নেই।

কেন যে ঘুমটা এখনও ভাঙেনি দিবাকরের, রজত বুঝতে পারছে না। ও একটু অধৈর্য হয়েই ফোনটা পাশে রেখে সিগারেট টানতে লাগলো জোরে জোরে। ভাবছিল, দোলন ঘরে আসার আগেই আরো একবার চেষ্টা করে দেখে নিতে হবে। যদি ঘুম থেকে উঠে দিবাকর মোবাইলটা অন করে ফেলে।

সিরিজার সাথে কথাটা বলে নিতে পারলে মনটাও তখন একটু হালকা হয়ে যাবে। টেনশনে সিগারেটটা এত জোরে টানতে লাগলো যে প্রচন্ড বিষম খেয়ে এবার খুক খুক করে কাশতে লাগলো রজত।

দোলন বাথরুম থেকেই বললো, "কি হলো তোমার?"

রজত বললো, "কিছু হয়নি এমনি।"

দু তিনবার কেশে নিয়ে রজত আবার দিবাকরকে ধরার চেষ্টা করতে লাগলো। দেখলো ফোনটা এবার বাজছে, তার মানে দিবাকর ঘুম থেকে উঠেছে এইমাত্র।

দিবাকরের মাথার কাছেই ফোনটা রাখা ছিল। ফোনটা ও অন করেই শুয়েছে রাত্রে। রজত তখন চেষ্টা করে দিবাকরকে ধরতে পারেনি, সিগন্যালে কিছু প্রবলেম ছিল। ফোনটা বাজা মাত্রই দিবাকরের ঘুমটা ভেঙে গেল। কিন্তু সিরিজা চোখ খুললো না। দিবাকরকে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে রইলো বিছানার ওপরে।

কাম অন কাম অন দিবাকর। প্লীজ পিক আপ দ্য ফোন। রজত অস্থির হয়ে পড়েছে।

দিবাকর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো রজত ফোন করেছে, ও রিসিভ করলো না। দু তিনবার বাজার পর, ফোনটা কেটে দিল।

সাত সকালে রজতের চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। ফোন করছে দিবাকরকে, অথচ ও ধরছে না। এর মানে কি? বিরক্তি মুখ নিয়ে ও আবার চেষ্টা করতে লাগলো। দিবাকর এবার মোবাইলটা সুইচ অফ করে দিল।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে দোলন ঢুকেছে ঘরে। রজতকে বললো, "কাকে ফোন করছো শুনি?"

রজত বিরক্তিমাখা মুখ নিয়েই বললো, "কাউকে নয়।"

দোলন এবার একটু খেঁকিয়ে উঠে বললো, "কাকে করছো বলো। নিশ্চয়ই সিরিজাকে?"

রজত বললো, "কি হবে তোমার অত জেনে? সব সময় মাথা খাও। যাও নিজের কাজ করো গিয়ে।"

দোলন বিছানার ওপরো উঠে, ছোঁ মেরে রজতের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ছুটে পালালো পাশের ঘরে।

পেছনে ওকে তাড়া করেছে রজত। দোলনকে বললো, "ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। শীগগীর ফোনটা আমার হাতে দাও।"

দোলন কিছুতেই ওকে দেবে না। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ছুটে চলে গেছে রান্নাঘরে। রজত ওর হাত থেকে ওটা কাড়ার চেষ্টা করছে। দোলন গায়ে জড়ানো শাড়ীটা টান মেরে খুলে ফেলে আবার উলঙ্গ হয়ে গেল রজতের সামনে।

রজত বললো, "একি তুমি? এটা কি হচ্ছে?"

দোলন বললো, "কেন? এবার কেমন লাগে? নাও। নাও আমার হাত থেকে ফোনটা নাও। আমিও এই ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবো, তোমার বউ আসা না অবধি।"

একহাতে মোবাইলটা ধরে উলঙ্গ শরীরটা চিতিয়ে দোলন ফিক ফিক করে হাসছে। রজত চেষ্টা করেও ফোনটা কেড়ে নিতে পারছে না। এমন মেয়ের কপালে পড়েছে, যে ওর অবস্থা একেবারে খারাপ করে ছেড়ে দিচ্ছে।

- "তুমি শাড়ীটা আবার খুলে ফেললে?"

দোলন বললো, "তুমি যতবার সিরিজার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবে, আমি ততবারই খুলে ফেলবো।"

- "বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না দোলন। সবকিছুর তো একটা সীমা আছে। এক্ষুনি ওরা এসে পড়বে। আমি এতো করে বললাম, আবার তুমি উলঙ্গ হলে।"

দোলন দেখলো রজত আর ফোনটা নেবার চেষ্টা করছে না ওর হাত থেকে। ফোনটা হাতে ধরেই রজতকে জাপটে ধরে এবার ওর ঠোঁটে চুমু খেতে শুরু করলো। ঠোঁট কামড়ে, গাল চেটে ওর চুমু খাওয়ার বহর কিছুতেই কমছিল না। একটা পা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই রজতের কোমরের ওপর কিছুটা তুলে দিয়ে বললো, "সিরিজাকে ফোন করবে? করো না। আমি না করবো না। তার আগে আমার ভেতরে তোমার ওটা একটু ঢোকাও। আমাকে করো। আমি কাপড়ও জড়িয়ে নিচ্ছি। ফোনটাও তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি।"

- "কি? এভাবে রান্নাঘরে?

-- "হ্যাঁ কি হল তাতে? তোমার তো পাজামা পরা আছে। করতে কি অসুবিধা হবে তোমার?"

কি করবে রজত বুঝতে পারছে না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দোলন এভাবে ওকে সঙ্গম করার জন্য জোর করছে। ও পাজামাটা কিছুটা নামিয়ে লিঙ্গটা বের করে দোলনের গর্তে ঢোকাতেই যাচ্ছিলো। এমন সময় শুনলো দরজায় কলিং বেলের শব্দ। তারমানে শ্বশুর বউ দুজনেই বোধহয় এসে গেছে কাপড় চোপড় ফেরত নেবে বলে।

মাথা একেবারে খারাপ হবার জোগাড়। রজতের শ্বশুড় মনে হয় এসে পড়েছে এখনই। দোলন তখনও উলঙ্গ শরীরটা দিয়ে জাপটে ধরে রেখেছে রজতকে। মুখে চিন্তার ভাঁজ নিয়ে রজত দোলনকে খেঁকিয়ে বললো, "দেখলে তো? কি কান্ড বাধালে। এবার কি করবো আমি? শিগগীর ভেতরের ঘরে গিয়ে কাপড়টা পরে নাও। ওনারা যদি এসে থাকেন, এক্ষুনি সাংঘাতিক কান্ড বেঁধে যাবে ঘরের মধ্যে।"

কলিংবেলের শব্দ শুনে দোলনও কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে। গায়ে পড়ে পীরিত করাটা আপাতত হল না। রজতের চোখ দুটো বড় হয়ে এমন গোলগোল হয়ে গেছে, দোলন ভাবছে, এক্ষুনি বোধহয় ওকে আস্ত খেয়ে ফেলবে।

রজত আবার ওকে সাবধান করে দিয়ে বললো, "বলছি না যাও। শুনলে না কলিংবেলের শব্দ। ওরা এসে পড়েছে।"

ধ্যাতানি খেয়ে দোলন তখুনি ঘরের মধ্যে ছুটে চলে গেল। শাড়ী, ব্লাউজটা জড়িয়ে কোনরকমে পরিস্থিতিটা সামাল দেবার চেষ্টা করছে। রজত দরজাটা না খুলে আরো একটু অপেক্ষা করতে লাগলো, যতক্ষণ না দোলন শাড়ীটা আবার গায়ে জড়িয়ে না নিচ্ছে ও চুপচাপ দরজা না খুলে দাঁড়িয়ে রইলো।

বউ, শ্বশুড় দুজনে যদি একসাথে এখন এসে থাকে। ঘরে ঢুকে সটান চলে যাবে শোবার ঘরে। ও ঘরে দোলন যে অবস্থায় রয়েছে, ঠিকমত শাড়ীটা পরার সময়ও পাবে না তখন।

কলিংবেলটা আবার বাজছে। রজত ভেতরের ঘরে মুখ বাড়িয়ে দোলনকে বললো, "হয়েছে? আমি দরজা খুলতে যাচ্ছি।"

দোলন বললো, "হ্যাঁ। কাপড় পরে নিয়েছি।"

রজত বললো, "তুমি রান্নাঘরে চলে যাও এক্ষুনি। ততক্ষন চায়ের জল বসিয়ে, অন্য কিছু করতে থাকো। আমি ওদের ভেতরে ঢুকিয়ে বাকী কাজগুলো সেরে নিচ্ছি।"

দোলন, রজত দরজা খোলার আগেই আবার রান্নাঘরে চলে গেল।

শ্বশুড় মশাই তার একমাত্র কন্যাকে সাথে করে নিয়ে এসেছেন। রজত এটাই আশঙ্কা করেছিল। দরজা খোলামাত্রই দেখলো বাপ-মেয়ে দুজনে একেবারে সাত সকালেই এসে হাজির হয়েছেন।

রীতা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার পর, আবার অনেকদিন বাদে ওর মুখটাকে দেখা। রজত রীতাকে দেখেও যেন না দেখার ভান করলো। শ্বশুড়ের দিকে তাকিয়ে বললো, "আপনারা এসে গেছেন তাহলে? ভালোই হল। এবার যা নেবার নিয়ে নিন। আজ না এলে আপনাদেরই পরে অসুবিধা হত।"

ঘরে ঢুকেই রীতা একবার তাকালো শোবার ঘরের দিকে। তারপরই ওর চোখটা পড়লো রান্নাঘরের দিকে। শাড়ীপরা একটা মেয়ে কি যেন ভেতরে করছে। মুখটা একঝলক দেখে নিয়েই রীতা চিনতে পেরেছে মেয়েটাকে। বেশ কিছুদিন আগে একটা কাজের লোকের কথা বলে, তারপরই এ বাড়ী ছেড়ে চলেগেছিল রীতা। কিন্তু ও এখানে কি করছে? তবে কি.....

শোবার ঘরে না ঢুকে সোজা রান্নাঘরের দিকে গিয়ে রীতা দাঁড়ালো, দোলনের সামনে। ওকে বললো, "কি ব্যাপার? তুমি এখানে? চিনতে পারছো?"

দোলন পিছনে ফিরে রজতের বউকে দেখে বললো, "ও বৌদি। কেমন আছেন? আপনাকে কতদিন পরে দেখলুম।"

রীতা বললো, "হ্যাঁ সেটা তো ঠিকই আছে। কিন্তু তুমি এখানে কি করছো?"

প্রথমে কিছুটা আমতা আমতা করলেও সেয়ানা মেয়ের মতো নিজেকে সামলে নিয়ে দোলন বললো, "ঐ যে আপনি বলেছিলেন? কাজের লোক। তাই চলে এলাম কাজ নিয়ে।"

রীতা বললো, "সে তো অনেকদিন আগের কথা দোলন। তুমি বলেছিলে, কেউ একজন আছে। বলে দেখবে। কিন্তু এখন দেখছি তুমি নিজেই....."

দোলন বললো, "যাকে বলেছিলাম, সে তো রাজী হল না বৌদি। কি করবো? নিজেরও কাজের একটা দরকার ছিল। দাদাবাবুকে বললাম, দাদাবাবু রাজী হয়ে গেল। এসে দেখলাম, আপনিও নেই। তাই মনটা একটু খারাপ হচ্ছিল।"

রীতা এবার বেশ গম্ভীর ভাবে বললো, "তুমি কবে এসেছো এখানে?"

দোলন দেখলো অবস্থা একটু বেগতিক। প্রথমে একটু ঢোঁক গিলে, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, "আমি? এই তো কালকে। কালকে এসেছি।"

রীতার কপালে চিন্তার ভাঁজ। দোলনকে বললো, "কালকে এসেছো?"

এদিকে রীতা ভাবছে, রজত বলেছে ওর বাবাকে, সে নাকি থাকবে না অনেকদিন। ফাঁকা বাড়ীটায় দোলন একা থাকবে? হঠাৎ ওকে কাজে রাখার অর্থ কি?

শ্বশুড় মশাই সোফায় বসে পড়েছেন। মেয়েকে বললেন, "কার সাথে কথা বলছিস? কে ও?"

রীতা সামনে এসে বললো, "ওকে আমি চিনি। ওর নাম দোলন। এই আশেপাশেই থাকে। কাজের লোকের কথা বলেছিলাম, এখন দেখি নিজেই এখানে এসে হাজির হয়েছে।"

নিজের স্বামীকে রীতা যতটা চেনে, আর বোধহয় কেউ নয়। রজতের দিকে আড়চোখে তাকালো। মনে মনে বললো, "এটাই শেষ অবধি বোধহয় বাকী ছিল। যা গুল খেলালে তুমি। এখন মেয়েটাকে ঘরে এনে নিশ্চয়ই ফুর্তী মারাচ্ছো?"

রজত ওর শ্বশুড়কে বললো, "আপনারা তাহলে যা নেবার নিয়ে নিন। শোবার আলমারীতেই রীতার সব কাপড়চোপড় আছে। সযত্নে রাখা রয়েছে। আলমারী আমি খুলিও নি। যেমনকার জিনিষ, তেমনিই রয়েছে ভেতরে।"

বাপ এবার মেয়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। রজত বললো, "যা করার তাড়াতাড়ি করে নিন। আমাকে আবার বেরোতে হবে এক্ষুনি। বন্ধুর বাড়ী যাবো, ওখানে কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করছে।"

রীতা দেখলো, রজত ওর দিকে তাকাচ্ছে না, ভাবখানা এমন আপদ তাড়াতাড়ি বিদায় হলে ভালো হয়।

বাবার পাশেই সোফাটার ওপর বসে পড়লো রীতা। মেয়েকে বাবা বললেন, "কি হল বসে পড়লি? কাপড়গুলো নিবি না?"

রীতা বাবার কথার জবাব দিচ্ছে না। রজতের দিকে তাকিয়ে আছে। রজত মুখটা একটু অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে শ্বশুড়কে বললো, "আপনার মেয়েকে বলুন, একটু তাড়াতাড়ি করতে। আমার অন্য কাজ আছে।"

রীতা মনে মনে বললো, "কাজ না ছাই। তোমার কাজ মানে তো শুধু মেয়েছেলে নিয়ে ফুর্তীকরা। মেয়েটাকে বাড়ীতে কাজে রেখেছো কেন, সেকি আর আমি বুঝি না? আমি নেই, সাপের পাঁচপা দেখেছো তুমি। এরপরেও আর কত নীচে নামবে রজত? ভেবেছিলাম, নিজেকে শুধরে নিলে আবার হয়তো ফিরে আসবো। কিন্তু তুমি যা চীজ, মরে গেলে শকুনেও ছোঁবে না তোমাকে।"

রজত দেখলো রীতা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ বড় বড় করে ওকে দেখছে। মনে মনে বললো, "যাবি তো যা না, কে তোকে ধরে রেখেছে। ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়ে, আবার পীরিত পাকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।"
 
শ্বশুড় মশাই দুজনকে একপলক দেখে নিলেন, বুঝলেন, মেয়ে এখনি কোন বেফাঁস কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলেই রজত সঙ্গে সঙ্গে রিয়্যাক্ট করে উঠবে। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, "সে রজত যা ভালো মনে করেছে, তাই করেছে। ওর হয়তো কাজের দরকার ছিল, রজত তাই ওকে রেখেছে। তোর এখন এসব দেখে লাভ কি?"

রজত মুখটা আবার অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে। শ্বশুড়মশাই বললেন, "তা যাচ্ছো কোথায়? আমি তো ভেবেছিলাম কদিন বাদে আসবো। তুমি তাড়া লাগালে তাই বাধ্য হলাম আসতে।"

রজত মুখটা আবার শ্বশুড়ের দিকে ঘুরিয়েছে, কিন্তু জবাব দিতে চাইছে না। বিরক্তি আর অসহ্য লাগছে। ঠিক সেই সময় দোলন রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললো, "আপনারা চা খাবেন তো?"

শ্বশুড় মশাই দোলনের দিকে একবার তাকালেন। রীতাও তাকালো। রজত দেখলো দোলন শাড়ীটা জড়িয়েছে গায়ে, কিন্তু কোমরের ওপর গিটটা এমন ভাবে জড়িয়েছে, পেট নাভি সব দেখা যাচ্ছে। রীতা এসব দেখতে অভ্যস্ত নয়।

মেয়ের দিকে তাকিয়ে শ্বশুড় বললেন, "হ্যাঁ হ্যাঁ। খাবো। চা খেতে অসুবিধে কি? তবে আমারটা চিনি ছাড়া। সুগারের রুগী আমি। চায়ে চিনি খাই না।"

মেয়ে বললো, "আমার জন্য করতে হবে না। আমি চা খেয়েই বেরিয়েছি।"

দোলন এবার তাকালো রজতের দিকে। রজত বললো, "যাও চা করে নিয়ে এসো। আর শুধু চা নয়, বিস্কুটটাও সাথে এনো।"

ঘাড়টা নেড়ে, পাছা নাড়তে নাড়তে দোলন আবার রান্নাঘরে চলে গেল। শ্বশুড় মশাই বললেন, "আগের দিন যখন এসেছিলাম, তোমার সেই বন্ধুকে দেখলাম। স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিল। কি যেন নাম?"

রজত বললো, "দিবাকর।"

-- "হ্যাঁ হ্যাঁ দিবাকর। চলে গেছে ওরা?"

রজত বললো, "হ্যাঁ ওতো সেদিনই চলে গেছে। আমি অফিস থেকে ফিরে দেখলাম, আপনারা নেই। দিবাকর বললো, আপনারা নাকি অপেক্ষা করেননি। নইলে তো সেদিনই ঝেমেলা মিটে যেত।"

সাতসকালে যতসব বেমতলব কথাবার্তা। রজতের মেজাজ খারাপ হতে লাগলো, তারপরও শান্ত থাকার চেষ্টা করে বললো, "আপনি চা টা খেয়ে নিন। ততক্ষনে নয়, আপনার মেয়ে শাড়ীগুলো গুছিয়ে নিক। কিসে নিয়ে যাবেন? সুটকেশ, ব্যাগ কিছু এনেছেন?"

শ্বশুড় তাকাচ্ছে তার মেয়ের দিকে। রজত বললো, "আগের দিনই তো সব ঝেমেলা মিটিয়ে নিতে পারতেন। তা না, শুধু শুধু আপনাদেরই দেরী হল।"

এবার রীতা বললো, "নিয়ে যাবো বলেই তো এসেছিলাম। যা সব ন্যাকা ন্যাকা কর্তাবার্তা শুনলাম, আমার আর বসবার ভক্তি হল না। যেমন বন্ধু, তেমনি তার বউ।"

শ্বশুড় মশাই বাধা দিয়ে বললেন, "আঃ থাক না। ওসব কথা এখন তুলে কি লাভ? তুই যে জন্য এসেছিস, সেটাই করে নে বরঞ্চ গিয়ে। ও বলছে, ওকে নাকি আবার বেরোতে হবে। শুধু শুধু দেরী করিয়ে লাভটা কি বলো?"

মেয়ে সোফা ছেড়ে ওঠার নামই করছে না। রজত এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বললো, "দেখুন, আমি আগেও বলেছি, আবারো বলছি, আমার কিন্তু অত সময় নেই। ঠিক আধঘন্টার মধ্যেই বেরোতে হবে আমায়। আজ যদি এগুলো না নেন, আর কিন্তু পাবেন না সহজে। পরে তখন আমাকে দোষ দেবেন না।"

রজত কথাটা বলা মাত্রই রীতা সোফা ছেড়ে উঠে পড়লো। বাবাকে বললো, "সেই ভালো বাবা। আজ বরং ওগুলো নিয়ে লাভ নেই। উনি ফিরে এলেই, তারপর না হয় আবার আসবো। তুমি চা টা খেয়ে বাইরে আসো। আমি না হয় ততক্ষণ বাইরে অপেক্ষা করছি।"

রজতের চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। রীতাকে বললো, "এটা একটু অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে না। থেকে থেকেই আমাকে বিরক্ত করা। তারপর আবার নিজের খামখেয়ালি মত ডিসিশন চেঞ্জ করা। আমার কি অন্য কোন কাজ নেই? নাকি এই করে যাবো চিরকাল ধরে?"

রীতা যেন গায়ে পড়ে ঝগড়া করার একটা সুযোগ পেয়েছে ভালোমতন। রজতকে বললো, "কাকে কি বলছো তুমি? নিজের মুখটা আয়নায় দেখো গিয়ে একবার ভালো করে। লজ্জ্বা করেনা? বাড়ীতে মেয়ে এনে ফুর্তী করার মত জঘন্য মানসিকতার লোক তুমি, নিজের চরিত্রের কি বাকি আছে কিছু? মেয়েমানুষ নেওটা পুরুষের আবার বড় বড় কথা। কি ভাবো আমায়? আমি কি কিছু বুঝি না? কি করতে মেয়েটাকে কাজে রেখেছো, এই কদিনে কটা মেয়েছেলেকে নিয়ে ফুর্তী করেছো, সবই জানা আছে আমার। আমি কি করবো না করবো, সেটা তি তোমার হুকুমে নাকি? ওতো আমারই মর্জি। চেষ্টা করেও যাকে শুধরোতে পারলাম না, সে আবার বড়বড় কথা বলছে আমাকে। "

শ্বশুড় মশাই রীতাকে বললেন, "আঃ রীতা হচ্ছেটা কি? পুরোনো কথা তুলে আবার কেন ঝেমেলা বাড়াচ্ছিস? যে কাজে এসেছি, সেটা করে নিলেই তো সমস্যা মিটে যায়।"

রীতা ওর বাবাকে বললো, "তুমি চুপ করো। যা বলছি, ঠিকই বলছি। তুমি কি ওর হয়ে ওকালতি করছো আমার সঙ্গে?"

রজত চুপ হয়ে রয়েছে, কোন কথা বলছে না।

রীতা বললো, "বেশী কথা আমিও বলতে চাই না। এসব বাজে লোকের সাথে মুখ লাগানো আমার কাজ নয়। যে কাজে এসেছিলাম, সেটা এখন করবো না। পরে যদি সুযোগ হয়, আসবো। নইলে কাপড় পড়ে থাক এখানে। কে আসছে বারে বারে?"

রজত এবার রীতার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললো, "শোনো, যা বলার তুমি কোর্টে বোলো। এখানে এসব কথা তুলে কোনো লাভ আছে কি? ডিভোর্সের নোটিশ তো পাঠিয়েছ, আমি কি করবো না করবো, তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি? রজত কারুর চোখ রাঙানির ধার ধারে না। আমার যা ইচ্ছে তাই করবো। হু দ্য হেল আর ইউ? যে আমাকে শাসন করছো?"

রীতা রজতের দিকে চোখমুখ পাকিয়ে বললো, "মুখ সামলে কথা বলো, ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।"

-- "উফ, তোরা কি শুরু করলি বল দেখি।"

শ্বশুড় মশাই এবার মেয়ে জামাই দুজনকেই ঠান্ডা করার চেষ্টা করছেন। রজত বললো, "দেখলেন তো, আমি ঠিকই সন্দেহ করেছিলাম, আপনারা আমার পেছনে গোয়েন্দা লাগিয়েছিলেন। কাল যখন ছেলেটাকে হাতে নাতে ধরে ফেললাম, আপনি অস্বীকার করছিলেন। আমার পেছনে লোক লাগিয়ে আপনারা কি প্রমাণ করতে চাইছেন, জানি না। আমি খারাপ। আমার চরিত্র খারাপ। মেয়েমানুষ নিয়ে ফুর্তী করি, এসব জেনেই তো রীতা এ বাড়ী ছেড়ে চলেগেছিল। তাহলে আবার এখন এসব কথা তুলে লাভ কি? দ্য চ্যাপ্টার ইজ ক্লোজড। এন্ড দ্য ম্যাটার ইজ ফিনিজড। এবার আমাকে আমার মত থাকতে দিন, আর আপনারাও আপনাদের মত থাকুন।"

শ্বশুড় মশাই এবার বললেন, "তুমি না বুঝে অনেক কিছু করেছো রজত। সেগুলো নিয়ে আমাদেরও তো কিছু বলার থাকতে পারে। রীতা তোমাকে কিছু বলতে চাইছে। তুমি যদি শোনো, তাহলে আমিও বলতে পারি।"

রজত বেশ বিরক্ত হয়েই বললো, "কি শুনবো? কি বলবেন? সেই তো একই ঘ্যানঘ্যানানি।"

শ্বশুড় মশাই এবার একটু গম্ভীর মুখে বললেন, "সিরিজা বলে কোন মেয়ে এসে ছিল তোমার কাছে? বেশ কিছুদিন।"

রজত যেন আকাশ থেকে পড়লো। অবাক হয়ে বললো, "সিরিজা? কে সে? তাকে আপনারা চেনেন?"

শ্বশুড় মশাই বললেন, "মেয়েটা সন্মন্ধে আমরা অনেক খবর জোগাড় করেছি। তোমাকে বলতেই তো এসেছিলাম। কিন্তু তুমি যদি অবুঝ হও। তাহলে তো কিছু বলার নেই।"

রজত এবার ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, ওদের দুজনের দিকে। বউ আর শ্বশুড় দুজনেই তখন রজতকে দেখছে, সিরিজা নামটা শোনা মাত্রই রজতের মুখটা কেমন ফ্যাকাসে মতন হয়ে গেছে। দোলন ঠিক তখনই চায়ের কাপটা নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে ওদের সামনে।

রীতা বলছে, "কি হল? সিরিজার নাম শুনে মুখ যে একেবারে শুকনো হয়ে গেল তোমার? মিষ্টার রজত মল্লিক, সিরিজার নাম শুনেই তুমি কাঁপছো? নিজেকে ভীষন চালাক ভাবো, তাই না? আর বাকীরা সব বোকা? তুমি যদি চলো ডালে ডালে, তাহলে জেনে রেখো তোমার এই বউও চলে পাতায় পাতায়।"

থতমত খেয়ে গেছে দোলনও। চায়ের কাপ হাতে ধরে বোকার মত শুধু চেয়ে আছে ওদের দিকে। রীতা কি করে সিরিজার ব্যাপারটা জানলো, সেটা দোলনও বুঝতে পারছে না।

কিছুটা দুশ্চিন্তা আর বেশ কিছুটা অবাক হয়ে যাওয়া। দুটো মিলে মিশে রজত এমন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল, ভাবলো, এ আবার কি ঝামেলা। সিরিজার নাম, বাপ বেটী দুজনে এক সাথে জানলো কি করে?

সন্দেহের তীরটা গিয়ে পড়লো দোলনের দিকে। কটমট করে বেশ কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটা এসে থেকে অবধি নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। রীতাকে যদি লাগিয়ে থাকে তাহলে ওই লাগিয়েছে। সিরিজাকে রজতের জীবন থেকে এইভাবেই ও সরিয়ে দিতে চায়।

দোলন বুঝতে পারছে রজত ওকে সন্দেহ করছে। চায়ের কাপটা হাতে ধরে মাথা নেড়ে রজতকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, "আমি না, আমি না। আমি বলিনি। অন্য কেউ....."

রজতের ইচ্ছে করছিল দোলনকে এক ধাক্কা দিয়ে কাপটা চূড়মাড় করে মাটীতে ফেলে দিতে। কিছুক্ষণ রেগে মেগে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে, রীতা আর শ্বশুড়ের দিকে ফিরে বললো, "হ্যাঁ, সিরিজা আমার কাছে ছিল। তো? আপনাদের তাতে কি?"

রীতা খেঁকিয়ে উঠে বললো, "ছিলো মানে? কোথাকার একটা মেয়েকে নিয়ে ঘরের মধ্যে তুমি যা খুশীতাই করেছো। আবার বলছো তাতে কি?"

রজত এবার রীতাকে বললো, "কে বলেছে তোমাদেরকে সিরিজার কথা? দোলন?"

দোলন চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে মুখ কাচুমুচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যেন সব তড়পানি শেষ। রীতা ওর দিকে তাকিয়ে বললো, "দোলন বলতে যাবে কেন? সিরিজার কথা আমাকে অন্য একজন বলেছে।"

রজত বললো, "কে সে? নামটা একবার শুনি।"

রীতা জবাব না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।

একটু আগে দিবাকরকে ফোনে ধরার চেষ্টা করেছে রজত। দিবাকর ফোনটা ধরেনি। মনে হল ইচ্ছে করেই যেন লাইনটা কেটে দিয়েছে। কে যে শত্রুতা করছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। রজতের সেই মূহূর্তে মনে হল, সিরিজাকে নিজের ঘরে পেয়ে দিবাকর কি তাহলে এই গেমটা খেললো? শ্বশুড় মশাই আর বউয়ের কানে কথাটা তুলে দিয়ে রজতকে এমন কোনঠাসা করে দেওয়া, যাতে রজত সিরিজার দিকে আর হাত বাড়াতে না পারে।

বোকার মত রীতাকে বলে বসলো, "ও তার মানে দিবাকর বলেছে এই কথা?"

রীতা বললো, "দিবাকর? ও তোমার সেই গুনধর বন্ধু। সেদিন যে বউ নিয়ে এসেছিল? না না সে কেন বলবে? আমাকে বলেছে অন্য একজন।"

রজত বেশ অবাক হচ্ছে। সিরিজার নামটা এরা বলছে। অথচ সিরিজা যে আসলে কে? এরা এখনও কেউ ধরতে পারেনি। সেদিন সিরিজাকে, দিবাকরের সাথে বাপ মেয়ে দুজনেই তো দেখেছে। দিবাকরের সত্যিকারের বউ হিসেবেই ধরে নিল। অথচ সেই মেয়েই যে সিরিজা সেটা এখনও জানতে পারলো না।

তাহলে সিরিজার নামটা এদের কানে তুললো কে?

রজত বললো, "গোয়েন্দা লাগিয়ে ভালোই খবর জোগাড় করেছেন দেখছি। ট্যাক্সি থেকে নামবার সময় একদিন দেখলাম, ছাতা মাথায় দিয়ে একটা লোক আমার এই গলি দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সেদিন বুঝেছিলাম, আপনিই এসেছিলেন। কাল ঐ ফড়িংটার কলার ধরলাম। ওকেও আপনারা পাঠিয়েছিলেন। আমি কোন মেয়েছেলে নিয়ে এ বাড়ীতে রয়েছি, সব তথ্য জোগাড় করেছেন। নামটাও জেনেছেন। কাপড় চোপড় নেওয়ার নাম করে বারবার আমাকে তাগাদা কেন মারা, এসবতো এখন খুব ভালোমতই বুঝতে পারছি। সিরিজার জন্য গা জ্বলে যাচ্ছে আপনাদের।"

রীতা হঠাৎই বলে বসলো, "মেয়েটাকে কোথায় পাঠিয়ে দিয়েছ? ভেবেছিলাম তো, আজ সকালে এসে ওকে দেখতে পাবো। আমরা আসার আগেই গায়েব করে দিলে? লাজ লজ্জা নেই, চরিত্রহীন একটা পুরুষ তুমি, আমাদের জন্য তোমার এত ভয়? না হয় মেয়েটাকে একবার দেখতাম। সেও নিশ্চয়ই তোমার মত চরিত্রহীনা হবে।"

রজত দাঁত মুখ খেঁচিয়ে বললো, "তুমি নিজে কি?"

শ্বশুড় মশাই রীতাকে বললো, "আহ্ চুপ করো না। ওর নিজের ভালো ও নিজেই বুঝবে। তোর ওতে কি?"

রজত এবার বললো, "হ্যাঁ, এবার কাপড় চোপড় নিয়ে আপনারা এখান থেকে পাতলা হন তো। আমার অনেক কাজ আছে।"

রীতা বললো, "কেন? সিরিজাকে আনতে যাবে বুঝি? তোমার তো কাজ বলতে ওটাই।"

শ্বশুড় মশাই ঘড়ি দেখছেন, যেন কারুর আশার জন্য উনি অপেক্ষা করছেন।

রজত দোলনকে বললো, "আর সামনে দাঁড়িয়ে কি হবে? চা কেউ খাবে না। যাও, ওটা ভেতরে রেখে এসো।"

দোলন চায়ের কাপটা নিয়ে আবার ভেতরে চলে গেল।

রজত ওদের দুজনকে বললো, "আপনারা কাপড় চোপড় যখন নেবেন না। তাহলে এবার আসুন। আমি আমার কাজ সারি।"

রীতা দড়াম করে দরজাটা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বাবাকে বললো, "বাবা তুমি এসো। আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।"

রীতা বেরিয়ে যাবার পর শ্বশুড়মশাই রজতকে বললেন, "কিছু মনে কোরো না বাবা। বোঝো তো ও তো আমার একমাত্র মেয়ে। রাগে মাথার ঠিক রাখতে পারছে না। ও তো তোমায় ভালো বেসেছিল। কি করবে? দেখছে তুমি যখন ওকে চাও না, রাগ করে আমার কাছে চলে এলো। কারন না থাকলে কেউ কি ঘর ভাঙতে চায়। তুমি রীতার দিকটা একদম চিন্তা করছো না।"

রজত দেখছে শ্বশুড় মশাই এবার অন্য সুরে কথা বলছে। মেয়ের জন্য দরদ একেবারে উতলে পড়ছে। হঠাৎ এমন নরম মনোভাব নেওয়ার কারনটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। শ্বশুড়কে বললো, "আপনার মেয়ে আমার সাথে না থাকলেই সুখী হবে। ভালোই তো করেছে। আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এখানে থাকলে বরং বেশী কষ্ট পেতো। আমার চরিত্রটা যে খারাপ তাই না?"

শ্বশুড় মশাই রজতকে বললো, "তুমি কি রীতাকে এখনও ভালোবাসো?"

রজত অবাক হয়ে বললো, "কেন বলুন তো?"

শ্বশুড় বললো, "না যদি একবার ভেবে দেখতে, রীতাকে বলে আমি ডিভোর্স কেসটা উইথড্র করে নিতাম। বাপ হয়ে মেয়ের জীবন নষ্ট করতে, আমিও কি চাইতে পারি, তুমি বলো না?"

রজত বললো, "কেন, মেয়ের আবার বিয়ে দিয়ে দিন। তাহলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। আজকাল অনেকেই তো ডিভোর্সের পরেও বিয়ে করছে। এর আর এমন কি? রীতার জন্য আপনি আমার চেয়ে অনেক ভালো পাত্র পেয়ে যাবেন।"

শ্বশুড় মশাই কি যেন ভাবলেন। তারপর রজতের দিকে চোখ বড় বড় করে বললেন, "সে না হয় হলো। কিন্তু তুমি তাই বলে ঐ বিবাহিত মেয়েটার সাথে, যার কিনা একটা বাচ্চাও আছে। স্বামীকে ছেড়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছে। তাকে নিয়ে বাকী জীবনটা কাটাবে?"

টেনশনটা যতটা কেটে গিয়েছিল, এখন আবার নতুন করে মনের মধ্যে জমা হচ্ছে। রজত অবাক হয়ে শ্বশুড়মশাইকে বললো, "আপনারা ওর সন্মন্ধে এত খবর জোগাড় করেছেন। কি করে করলেন, আমি সেই ভেবেই তো অবাক হচ্ছি। এসব তথ্য জোগাড় করার জন্য প্রচুর পয়সা খরচা করেছেন বলেই তো মনে হচ্ছে। সিরিজা বিবাহিত, গ্রাম থেকে এসেছে, ওর বাচ্চা আছে। কিছুই জানতে বাকী নেই। কে আপনাদের এসব বললো বলুন তো? একমাত্র দিবাকর ছাড়া আর তো এই ব্যাপারটা কেউ জানে না। দোলনও যখন বলেনি, তাহলে কে আপনাদের বললো?"

কেমন যেন একটা ধোঁয়াশা তৈরী হচ্ছে। রজত বুঝতে পারছে না, সাত সকালে বাপ মেয়ে এসে রজতকে যেমন নাকানি চোবানি খাওয়াচ্ছে, এরা যে আদৌ কি করতে চাইছে, সেটাই তো বোঝা যাচ্ছে না। একবার বলে, ঘর করবে না, আবার এসে বলছে, ঘর করার ইচ্ছা রয়েছে। মাথামুন্ডু বাপ মেয়ের মতিগতি বোঝাই তো দায় হয়ে পড়েছে।

সন্দেহটা দূর করার জন্য ও আবার দোলনকে ডাকলো রান্নাঘর থেকে।

- "এই যে দোলন, এসো একটু এদিকে।"

দোলন সামনে এলো।

রজত দোলনের দিকে তাকিয়ে বললো, "সিরিজা সন্মন্ধে তুমি তো সবই জানো?"

দোলন বললো, "হ্যাঁ।"

- "কিন্তু ইনারা দুজনে সিরিজা সন্মন্ধে যা বলছে, সবই তো মিলে যাচ্ছে। তুমি যখন বলোনি। তখন বললোটা কে?"

দোলন ফট করে চেঁচিয়ে উঠে বললো, "ঐ তোমার বন্ধুটাই বলেছে গো, বদমাইশ, ওই সিরিজাকে এখন কব্জা করেছে।"

শ্বশুড় মশাই অবাক হয়ে বললো, "বন্ধু মানে কে? ঐ দিবাকর?"

রজত দোলনকে ধমক দিয়ে বললো, "তুমি চুপ করো। যা জানো না, কেন শুধু শুধু কথা বলো?"

দোলন চুপ করে গেল। রজত এবার ওর শ্বশুড়কে বলতে লাগলো, "দেখুন, আমি চাই না, আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে আপনারা বাবা, মেয়েতে অত বেশী মাথা ঘামান। একটা মেয়ে আমার কাছে এসেছিল, যে আমার কাছে ছিল। মেয়েটাকে আমার ভালো লেগে গেছে। এ তো হতেই পারে। তা বলে আপনাদের এত রাগ হবার কিছু নেই। সিরিজা গ্রাম থেকে এসেছে, ওর বাচ্চা আছে, স্বামী আছে। ওসব আমিও জানি। আমি তো জেনেবুঝেই সব করেছি। খামোকা একই কথা বারবার তুলে আপনারা আমার কাছে কৈফিয়ত চাইছেন? এ বিষয়টা না তুললেই ভালো হয় না? আমি তো আপনার সব কথার উত্তর দিতে বাধ্য নই। আমার যেটা ইচ্ছে সেটা করবো। এখানে আপনারও কিছু বলার নেই। আপনার মেয়েরও কিছু বলার নেই। এটা সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব ব্যাক্তিগত ব্যাপার। এখন আপনার মেয়েও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। সে কি করে বেড়াচ্ছে, আমি কি দেখতে যাচ্ছি? তাহলে আপনারাই বা শুধু শুধু সিরিজার কথা কেন তুলছেন?"

হঠাৎ রীতা ঘরের মধ্যে আবার চলে এল। এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়েছিল। ঘরে ঢুকে হঠাৎই নিজের বাবাকে বললো, "বাবা, কেন ওকে বোঝানোর চেষ্টা করছো? আগুন নিয়ে খেলছে ও। যা খুশি করুক, ওকে করতে দাও না। তোমার অত কি? যাকে বলে কোন লাভ হয় না। তাকে অত বোঝাবার চেষ্টা করতে নেই। গাড্ডায় তো পড়েছে। এবার যখন বেধরক ধোলাই খাবে, কেউ ওকে বাঁচাতে পারবে না।"

রীতিমতন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো রজত। বউকে বললো, "তুমি কিন্তু সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো রীতা। বাড়বাড়ির একটা লিমিট আছে।"

রীতা বললো, "দাঁড়াও না, দাঁড়াও। লোকটাকে একটু পরে আসতে দাও। তোমার সব তড়পানি বেরিয়ে যাবে একটু পরে।"

রজত বললো, "কে আসবে কে? কার কথা বলছো?"

রীতা বললো, "এখন বলব কেন? আর একটু অপেক্ষা করো। সব পর্দা ফাঁস হবে একটু পরে।"

রজতের শ্বশুড় বললো, "না না এসব ঝেমেলার মধ্যে আমাদের থেকে লাভ নেই। চল চল রীতা। আমরা বরং চলে যাই। ওর ঝেমেলা ওই মেটাবে।"

রীতা বললো, "আমি তো তখন থেকেই বলছি চলো। খামোকা একটা ফালতু লোকের সাথে মুখ লাগাতে গেলে কেন তুমি? চলো বাড়ীতে যাবো, আমার অনেক কাজ আছে।"

বাপ, মেয়ে দুজনেই এবার ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মুখটা কাচুমুচু করে রজত বসে আছে। কে আসবে? কার কথা বলে চলে গেল, রজত কিছুই বুঝতে পারছে না। সকালবেলা দিনটাই যেন খুব বাজে ভাবে শুরু হল। এসবের মধ্যেও দিবাকর যদি ফোনটা অন্তত ধরত, তাহলে নয় স্বস্তি পাওয়া যেত। কিন্তু ও যে দেখছি, বিশ্বাসঘাতকতা করলো। এটা একটা রহস্য। বাপ মেয়ে সিরিজার সন্মন্ধে এত কথা জানার কারণটা কিছুতেই ও ধরতে পারছে না।

দোলন একটু ন্যাকামো করে, রজতকে বললো, "দেখেছো তো? সিরিজা তোমার কত বড় বোঝা। সাধে কি বলেছিলাম? তোমাকে এখন বিপদে ফেলে দিয়ে কায়দা করে এখান থেকে সরে পড়লো।"

রজত বললো, "দোলন, আমার মাথায় কিন্তু এখন রক্ত চড়ে রয়েছে। আমাকে আর রাগিও না।"

দোলন চুপ করে গেল। রজত দেখলো, সিরিজাকে এই ব্যাপারটা জানানো দরকার। ও আবার দিবাকরকে ফোনে ধরার চেষ্টা করতে লাগলো। দিবাকরের ফোনের সুইচ যথারিতী বন্ধ। সাত সকালে যেন পীরিত হচ্ছে এখন সিরিজাকে নিয়ে। জামাটা গলিয়ে নিয়ে রজত বললো, "না, এখন আমাকে যেতেই হবে।"

দোলন বললো, "কোথায়?"

রজত বললো, "দিবাকরের বাড়ী যাবো। সিরিজাকে সব জানাতে হবে।"

দোলন মুখ ভেঙচে বললো, "এতো কিছু পরেও আবার সেই সিরিজা!"

রজত ধমকে বললো, "তুমি চুপ করো। আর আমি না আসা অবধি ঘরে অপেক্ষা করো। কেউ এলে দরজা খুলবে না। আমি ঘন্টা তিনেক পরে আবার চলে আসবো।"

দোলনকে ঘরে রেখেই বেরিয়ে গেল রজত। ট্যাক্সি ধরে তাড়াতাড়ি দিবাকরের বাসায় পৌঁছোতে হবে।

কাল রাতে দিবাকরের সাথে সিরিজা চলে যাবার পর থেকেই, মনটা উসখুস করছে। এক ঘেয়ে জীবনটা থেকে কাটানোর মুক্তি, বাঁধভাঙা যৌন স্রোতে ভেসে যাওয়ার আনন্দ, সবই যা হয়েছিল সিরিজার আবির্ভাবে, আজ যেন সবাই তাকে নিয়ে হিংসা করছে। তোয়াক্কাহীন জীবন কাটানোর যে স্পর্ধা দেখিয়েছিল রজত, আজ সেখানে মাথা গলাচ্ছে ওর শত্রুরা। রজত সিরিজাকে সারাজীবনের জন্য ভোগ করবে, এখানেই যেন তাদের প্রবল আপত্তি। কেউ চায় না এই আনন্দটুকু ওকে প্রাণভরে নিতে। সে দোলনই হোক, দিবাকরই হোক বা হোক রজতের স্ত্রী আর শ্বশুড় মশাই। নিজস্ব ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে এত চোখ রাঙানি, এও কি সহ্য হয়? সবাই যেন কোনঠাসা করে দিতে চাইছে ওকে। এখন নতুন উপদ্রব কোন এক অজানা শত্রু। যে সব ব্যাপারে লাগিয়েছে রীতা আর ওর বাবাকে।

ট্যাক্সিতে যেতে যেতে রজত ভাবছিল, সিরিজাকে তো আগে নিয়ে আসি। তারপরে এ রহস্যের সমাধান করবো।

গাড়ীতে যেতে যেতেই ও আবার দিবাকরকে ফোনে ধরার চেষ্টা করলো। দিবাকর ফোন অফ করে রেখেছে। চোয়াল শক্ত করে রজত মনে মনে বললো, "ফোন অফ করে রেখে তুই কি আমায় ফাঁকি দিতে পারবি দিবাকর? সিরিজাকে পাবার স্বপ্ন তুই ছেড়ে দে। আমি পৌঁছোচ্ছি এখুনি। হাত ধরে টেনে নিয়ে আসবো ওখান থেকে, তুই কিছুই করতে পারবি না।"

ট্যাক্সিটা অনেকদূর চলে গেছে। রজতের ফ্ল্যাটে দোলন একা। বসার ঘরে বসে বসে দোলন ভাবছে, সিরিজা যদি ফিরে আসে তাহলে ও আবার কি নাটক শুরু করবে। যাও বা লোকটাকে নিয়ে চটকাচটকি হয়েছিল কাল রাতে, সুযোগের সদ্ব্যবহারটা হতে হতেও পুরো হল না। সাতসকালে বউ আর শ্বশুড় এসে পন্ড করে দিল পুরো দিনটাই।

হাতে একটা ম্যাগাজিন তুলে দোলন উল্টে পাল্টে ভেতরের ছবিগুলো সব দেখছে। সদর দরজার কলিংবেলটা হঠাৎই বেজে উঠলো। দোলন ভেতর থেকে চেঁচালো, "কে?"

বাইরে থেকে কর্কশ গলায় একজন বললো, "দরজা খোল হারামজাদী, নইলে আমি কিন্তু ভেঙে ঢুকবো।"

দোলন ভয় পেয়ে বললো, "কে আপনি?"

লোকটা বললো, "আমি সিরিজার স্বামী। দরজা খোল। নইলে লাথী মেরে দরজা আমি ভেঙে দেবো।"
 
।। চৌত্রিশ ।।

সিরিজার ঘুমটা ভেঙেছে সবে। চোখ খুলে দেখলো দিবাকর উঠে বসে রয়েছে যেন অনেক আগে থেকেই। রাত শেষ হয়ে এখন সকাল। কিন্তু দিবাকরের চোখে মুখে সেই তৃপ্তিটুকু আর নেই। এমন আনন্দদায়ক রাত্রির পরেও দিবাকরের চোখে মুখে যেন একটা অস্বস্তি। সকালের কোন খারাপ খবর ওর মুখটাকে দিয়েছে গোমড়া করে।

সিরিজা উঠে বসে বললো, "কি হল? কখন উঠেছো? মুখটা অমন উদাস করে বসে রয়েছ কেন? কি হল? তোমার বন্ধু ফোন করেছিল?"

দিবাকর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, "হ্যাঁ। রজত ফোন করেছিল।"

সিরিজা বললো, "কি বললে তুমি রজতকে?"

দিবাকর একদৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে বললো, "আমি কিছু বলিনি, সিরিজা। ও অনেকবার আমাকে ট্রাই করেছে। বাধ্য হয়েই ফোনটাকে অফ করে দিয়েছি।"

সিরিজা দিবাকরের বুকে মাথা রেখে বললো, "কেন? কি হত বললে? তোমার বন্ধু তোমাকে গাল দিত? বলো তো সিরিজাকে তুমি ছিনিয়ে নিয়েছ কোন সাহসে?"

দিবাকর কোন জবাব দিচ্ছিল না। সিরিজা মুখটা তুলে বললো, "কি হল? কি চিন্তা করছো? তোমার বন্ধুকে নিয়ে?"

দিবাকর বললো, "ভাবছি, ও যদি এখানে এসে পড়ে?"

সিরিজা বললো, "আসলে আসবে। তাতে কি? আমি তো বলেই দিয়েছি, ও এলে ওকে যা বলার আমিই বলবো। তোমাকে এ নিয়ে কিছু ভাবতে হবে না। ও তোমাকে কিছু বলতেই পারবে না।"

দিবাকর বললো, "রজত যা জেদী ছেলে, ও কিছুতেই মানতে চাইবে না। জোর করে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে এখান থেকে। বাড়বাড়ি করলে, আমারও মাথাটা তখন যাবে গরম হয়ে।"

সিরিজা দেখলো, কথা বলতে বলতে দিবাকর চোয়াল শক্ত করে ফেলছে। মনে মনে যেন একটা প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে এখন থেকেই। রজত এলেই ওকে বাঁধা দেবে। যদি না শুনতে চায়, তখন.....

সিরিজার মুখের কাছে মুখটা নিয়ে এসে দিবাকর বললো, "চলো আমরা কোথাও চলে যাই। ও তাহলে আমাদের আর নাগাল পাবে না।"

সিরিজা বললো, "কোথায় যাবে তুমি?"

-- "একটা জায়গায় তোমাকে নিয়ে যেতে পারি সিরিজা। জায়গাটার নাম শিমূলতলা। ওখানে আমার পিসির একটা বাড়ী আছে। পিসির ছেলেপুলে নেই। পিসেমশাই মারা যাবার পর থেকে একাই থাকেন। আমাকে সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসেন। মাঝে মাঝে পিসির কাছে চলে যাই। আমাকে বলে, বিয়ে থা তো করলি না। নইলে বউ নিয়ে তোকে তাহলে বলতুম এখানেই চলে আসতে। মারা যাবার আগে বাড়ীটা তোর নামে লিখে দেবো। তখন নয় বউ নিয়ে এখানে এসে থাকিস। তোমাকে যদি শিমূলতলায় নিয়ে চলে যাই। পিসি খুব খুশি হবে।"

সিরিজা শুনে বললো, "তাই? যাবে? চলো তাহলে চলে যাই। ও যদি আসে আমাদের দেখতে পাবে না।"

দিবাকর বললো, "কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি? বেরোতে বেরোতে তো সময় লাগবে সিরিজা। তার আগেই যদি রজত চলে আসে?"

সিরিজা বললো, "দেখো না রজতকে একটা ফোন করে। ও সত্যিই ঘর থেকে বেরিয়েছে কিনা?"

দিবাকর ওর বন্ধ রাখা মোবাইল ফোনটাকে আবার অন করলো। সিরিজার সামনেই রজতকে ঘুরিয়ে কল করতে লাগলো। দেখলো রজতের ফোনটা বাজছে, তার মানেই ওর ফোন ধরবে এখুনি।

দুতিন বার বাজার পরেও রজত ফোনটা ধরলো না। দিবাকর বললো, "রজত আবার এখন আমার ফোন ধরছে না। তাহলে কি?"

সিরিজা বললো, "তাহলে কি?"

-- "ওকি তাহলে বেরিয়ে পড়েছে?

সিরিজাও এবার চিন্তাগ্রস্থ মুখে তাকালো দিবাকরের দিকে। বললো, "বেরিয়ে পড়েছে?"

দিবাকর বললো, "হ্যাঁ মনে হচ্ছে ও এখানেই আসছে। কিছু একটা আঁচ করে ফোনটা ধরছে না। যাতে আমি কিছু বুঝতে না পারি। একটু পরেই হয়তো এসে পড়বে।"

সিরিজা বললো, "আসলে আসুক। যা হবার তখন দেখা যাবে।"

বাচ্চাটা সবে মাত্র চোখ খুলেছে। সিরিজা ওকে আদর করতে করতে বললো, "কি রে, শিমূলতলা যাবি? চল তোকে নিয়ে যাবো এবার শিমূল তলায়।"

দিবাকর খাট থেকে উঠে একটু বিচলিত আর উৎকন্ঠা মুখ নিয়ে ঘরের মধ্যে পায়চারী করতে লাগলো। সিরিজা বুঝতে পারছে, দিবাকর বেশ চিন্তামগ্ন। রজত এসে পরলে, ওকে কিভাবে ঠেকাবে, সেটাই হয়তো ভাবছে।

এদিকে ট্যাক্সিতে ওঠার পরে ট্যাক্সিওয়ালা রজতকে বললো, "কোথায় যাবো স্যার?"

রজত ওকে ডাইরেকশনটা দিল। গাড়ী প্রায় দিবাকরের বাড়ীর কাছাকাছিই এসে পড়েছে। আর হয়তো বড়জোড় দশ মিনিট। দিবাকর একটু আগে ফোনটা করেছে। রজত ইচ্ছে করেই ধরেনি। বাড়ী পৌঁছে দুজনকে চমকে দেবে। চালাকী সব এবার বার করছি। সেল ফোনে দিবাকরের নম্বরটা উঠতেই, না ধরে মনে মনে বললো, "ডোন্ট ওয়ারী দিবাকর। আই অ্যাম কামিং। তোমার খেল এবার আমি ধরে ফেলেছি।"

কিছুক্ষণ পরে ফোনটা আবার বাজতে শুরু করেছে। জামার পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে রজত দেখলো, এবার আর দিবাকর নয়। দু চোখের বিষ শ্বশুড় মশাই ফোন করেছেন।

বিরক্তির স্বরে রজত বললো, "ওঃ এখন আবার এই আপদের ফোন কেন? চলে তো গেলি বাবা। আবার ফোন করেছিস কি করতে?"

ধরবো না ধরবো না করেও ধরতে হল। ফোনটা যেন বেজেই চলেছে। থামার নাম করছে না। কানের কাছে মোবাইলটা ধরে বিরক্তির স্বরে বললো, "কি হলো বলুন। আবার এখন ফোন করেছেন কেন?"

উল্টোদিকে গলাটা শ্বশুড়মশাইয়ের নয়। কে একজন কর্কশ গলায় খেঁকিয়ে উঠে বললো, "এই হতচ্ছাড়া, আমার বউকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস? কোথায় তুই? ফিরে আয় শিগগীর। আমি তোর বাড়ীতে অপেক্ষা করছি।"

অচেনা লোকের গলা শুনে মাথা খারাপ রজতের। চেঁচিয়ে উঠে ও বললো, "কে আপনি? কাকে চাই?"

লোকটা বললো, "সিরিজাকে চাই। কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস ওকে?"

রজত একটু ঘাবড়ে গেল। বললো, "মানে কে আপনি? সিরিজাকে চাই মানে?"

লোকটা বললো, "সিরিজাকে চাই মানে, বুঝতে পারছো না বাছাধন। আমি সিরিজাকে নিতে এসেছি। ওর স্বামী আমি। খুঁজে খুঁজে ঠিক তোর বাড়ী আমি চলে এসেছি।"

রীতিমতন চমকে গেল রজত। সিরিজার স্বামী ওর কাছে চলে এসেছে? কি করে এলো? ও তো.....

মাতাল লোকটা এবার ফোনটা দোলনকে দিল। দোলন ও প্রান্ত থেকে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, "দাদাবাবুগো, তোমার শ্বশুড় মশাই আর বৌদিমনি সিরিজার স্বামীকে ধরে নিয়ে এসেছে এখানে। আমি কিছু জানি না। আমাকে শাঁসাচ্ছে। আমি কিছু জানি না। বলছে, তোর দাদাবাবু কোথায় গেছে, শিগগীর বল এক্ষুনি। তুমি তাড়াতাড়ি সিরিজাকে নিয়ে চলে এসো গো এখুনি। নইলে এ আমাকে ছাড়বে না। আমার চুলের মুঠি ধরছে, আমাকে ছাড়বে না।"

বিরক্ত রজত এবার দোলনকে বললো, "তুমি আমার শ্বশুড়কে এবার ফোনটা দাও তো। ওনারা কেন এটা করলেন, দেখি একবার জিজ্ঞেস করে।"

দোলন ফোনটা শ্বশুড়কে দেবার আগেই লাইনটা কেটে গেল। রজতের মনে হল, ইচ্ছে করেই যেন লাইনটা কেটে দিল শ্বশুড়। যাতে রজতের সাথে কথা বলতে না হয়।

বাপ মেয়ে তার মানে সিরিজার ব্যাপারে সব কথা জেনেছে ঐ লোকটার কাছ থেকেই। দোলনও বলেনি, দিবাকরও না। তাহলে সিরিজার স্বামীকেই বা বাপ মেয়ে খুঁজে বার করলো কিভাবে?

কোন সুরাহা খুঁজে পাচ্ছে না রজত। এই পরিস্থিতিতে ও কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। এখন সিরিজার স্বামী এসে উপস্থিত। তাহলে কি সিরিজাকে বাড়ীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে? দিবাকরের কাছ থেকে সিরিজা নিয়ে আসলেই তো সব শেষ। তাহলে?

রীতা ওর বাবার পাশেই দাঁড়িয়েছিল। দোলনকে বললো, "কি বললো রজত? সিরিজা কোথায়? আনছে ওকে?"

দোলন, রজতের শ্বশুড়ের দিকে তাকিয়ে বললো, "আমি তো লাইনটা ওনাকে দিলুম। উনি কথা বললেন না কেটে দিলেন।"

রীতা বললো, "কেন, তুমি জানো না সিরিজা কোথায়?"

পাশে দাঁড়িয়েছিল সিরিজার মাতাল স্বামীটা। বললো, "ও সব জানে। জেনেশুনে ন্যাকামি করছে। কেন আমার বউটাকে এই হারামিটার ঘরে পাঠিয়েছিলিস তুই? তোকে তখনই বলেছিলাম না, সিরিজা কোথায়? সিরিজা কোথায়? আমাকে বললি না। আবার নিজেই চলে এসেছিস এখানে।"

দোলন আমতা আমতা করে বললো, "আমি এখানে তুমি জানলে কি করে? আমি তো তোমাকে বলে আসিনি।"

রীতার দিকে তাকিয়ে বললো, "এই লোকটা সিরিজার স্বামী, তুমি জানলে কি করে বৌদিমনি? আমি তো ওর হাত থেকে পালিয়ে বাঁচবো বলেই এখানে এসেছি।"

রীতা বললো, "তুমি যত সহজে কাজটা করবে ভেবেছিলে, তত সহজে হয়নি দোলন। ও ঠিক খোঁজ নিয়েই এখানে এসেছে। তুমি যে এ বাড়ীতে এসেছো, ওর বুঝতে অসুবিধে হয় নি।"

দোলন বললো, "কিন্তু দরজা খুলে ওর সাথে তোমাদেরও যে দেখলাম। তাহলে কি তোমরাই ওকে ডেকে নিয়ে এসেছো?"

রীতার বাবা এবার বললেন, "তোমার ওসব জেনে কোন লাভ আছে দোলন? আমি তো রজতকে আগেই বলেছি, সিরিজার ব্যাপারে আমরা সব জানি। এই লোকটা ওর স্বামী। রজত সবাইক তোয়াক্কা না করে, মেয়েটাকে নিয়ে ফুর্তী করছে। এখন যার জিনিষ তাকে তো ফেরত দিতেই হবে। ও পাগলের মত খুঁজছে সিরিজাকে। আমি কাল একবার চুপি চুপি এসেছিলাম এখানে। রজতের বাড়ীর সামনেই ওকে দেখতে পাই। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো আপনি কে?"

আমি বললাম, "রজতের শ্বশুড় আমি।"

তখনই বললো, "আমি আমার বউকে খুঁজছি। মনে হয় ও এখানে রয়েছে।"

দোলন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। শ্বশুড়কে বললো, "কাল আপনি এসেছিলেন? সাথে এও।"

-- "হ্যাঁ এসেছিলাম।"

- "কখন?"

-- "তখন একটু রাত্রি।"

- "তার আগেই তো সিরিজা বেরিয়ে গেছে এখান থেকে।"

-- "কোথায়?"

- "দিবাকরদার বাড়ী। দিবাকরদা এসেছিল। সিরিজাকে সাথে করে নিয়ে গেছে।"

-- "দিবাকর এসেছিল? কিন্তু ও কেন আসবে? ও তো বিবাহিত। নতুন বিয়ে করেছিল। বউকে দেখলাম।"

- "কে বলেছে বিয়ে করেছে। যাকে দেখেছেন, ওই তো সিরিজা। দিবাকরদা ওকেই নিয়ে গেছে সাথে করে।"
 
।। পঁয়ত্রিশ ।।

দোলন কথাটা বলা মাত্রই, তিনজনেই চমকে উঠলো ভীষন ভাবে। রীতা বললো, "তার মানে সিরিজাকে আমি দেখেছি, ওই মেয়েটা? সেদিন খুব ঠেস মেরে কথা বলছিল আমার সামনে। স্বামীকে পছন্দ নয়। কোন এক পরপুরষের প্রতি আকর্ষিত। সিরিজা তাহলে ওই?"

রজতের শ্বশুড়ও হতভম্ব। রজত তার মানে ভালোই বুদ্ধিটা খাটিয়েছে। সিরিজাকে দিবাকরের স্ত্রী বানিয়ে ওদেরকে বোকা বানিয়েছে। চোখ কপালে তুলে শ্বশুড়ও বললো, "মেয়েটা আর দিবাকর, দুজনেই আমাদের সাথে অত কথা বললো, অথচ আমরা ধরতে পারলাম না।"

রীতা অবাক হয়ে বললো, "কিন্তু মেয়েটাকে আমি মনে হয় আগে কোথাও দেখেছি। সেদিনও আমার তাই মনে হচ্ছিল।"

মাতাল স্বামী সুখেন খেপে যাচ্ছিলো বাপ মেয়ের কথা শুনে। ওদের দুজনকে খেঁকিয়ে বললো, "কি যা তা বকছেন? সিরিজা আমার বউ। ও আমাকে ছেড়ে পালিয়ে এসেছে। আর আপনি বলছেন ওকে আগে দেখেছেন? এ কখনো হয় নাকি?"

রজতের শ্বশুড় বললো, "সিরিজা তোমার বউ যখন, ওকে ধরে রাখতে পারলে না কেন? তাহলে তো এত কান্ড হত না। কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে জুটলো, আর জামাইও পড়ে গেল তাকে নিয়ে। এই পৃথিবীতে কি আর মেয়ে নেই? সিরিজাকে নিয়ে এত কান্ড। কি আছে ওর মধ্যে?"

দোলন দেখলো যা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে, এর মধ্যে যদি রজত এসে পরে, কি যে হবে এখন থেকেই তা আঁচ করা যাচ্ছে।

মাতাল স্বামীটা বললো, "দোষ কিছুটা আমার। আমিই পারিনি ওকে কব্জা করে রাখতে। আমার বউ দেখতে ভালো বলে সবাই আমাকে হিংসে করত। কেউ কেউ তামাশাও করতো। গ্রামে অনেকেই আমাকে বলো তো, সিরিজাকে বিয়ে করেছিস তুই? দেখবি ও তোকে ছেড়ে একদিন না একদিন ঠিক পালাবে। তোর জন্য ওই বউ নয়। যাকে দেখে সবারই কিনা ভীমরতি হয়, সে থাকবে তোর কাছে? এ জীবনে আশা ছেড়ে দে। আমি কাজ কর্ম করতাম না। মদ নিয়ে সারাদিন পরে থাকতাম। তাড়াহুড়ো করে ওর পেট করে দিলাম। বাচ্চাও হল। ভাবলাম এই বার বুঝি সিরিজাকে বেঁধে রাখা যাবে। কিন্তু কোথায় কি? বাচ্চা নিয়েই ও চলে আসলো ওখান থেকে।"

রীতা সব শুনে বললো, "বাচ্চা? কই সেদিন তো বাচ্চা দেখিনি সিরিজার সাথে? কোথায় ওর বাচ্চা?"

সিরিজার স্বামী দোলনের দিকে তাকিয়ে বললো, "এই হারামীটা সব জানে। ওই তো সিরিজাকে পাঠিয়েছে এখানে।"

ভয়েতে দোলনের হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। রীতা বললো, "কি ব্যাপার দোলন? সিরিজার বাচ্চাটা কোথায়? তুমি যখন সব জানো, তখন এটাও বলে দাও।"

দোলন আমতা আমতা করে বললো, "বাচ্চা সিরিজার সাথেই আছে। আমার কাছে কিছুদিন রেখেছিল, তারপর ওর বাচ্চা ও ফেরত নিয়ে নিয়েছে।"

রজতের শ্বশুড় বললো, "স্বামীকে ছেড়ে পরপুরুষের প্রতি ওর এক আকর্ষন কেন? বাচ্চা হবার পরও সখ যায়নি। অদ্ভূত বলতে হবে।"

দোলন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। মাতালটা সেই সময় বলে উঠলো, "এও কি কম যায় নাকি? সব মাগীগুলোই একজাত।" বলে দোলনের দিকে কটমট করে তাকালো।

শ্বশুড়, রীতা দুজনেই সিরিজার স্বামী সুখেনের দিকে তাকালো। কার কথা বলছে ও? দুজনের কেউই বুঝতে পারছে না।

সুখেন বললো, "আপনারা কি জানেন? এই মাগীটারও স্বামী নেই এখন। ওকে ছেড়ে পালিয়েছে। স্বামী নেই, তাই সিরিজার মত পীরিত মারতে ইনিও চলে এসেছেন এখানে।"

দোলনের শরীরটা যেন কুঁকড়ে যাচ্ছে আসতে আসতে। সিরিজা নেই, রজত নেই, দিবাকরও নেই। তিনজন যেভাবে একা পেয়ে শাঁড়াশির মত চেপে ধরেছে ওকে। সকাল বেলা নগ্ন হয়ে রজতের সাথে ঢং করার সময় একবার কি ও এটা ভেবেছিল?

সুখেন রজতের শ্বশুড়কে বললো, "ভালো করে আমার বউটাকে কি আপনারা দেখেছেন? কামুক শরীর ওর। পুরুষমানুষকে পটাতে ওর সময় বেশী লাগে না। আপনার জামাইরে পটিয়েছে, এখন আবার কার মাথা খাচ্ছে কে জানে?"

শ্বশুড় একটু অস্বস্তি বোধ করলো সুখেনের কথা শুনে। জামাইও তো ধোয়া তুলসীপাতা নয়। একা সিরিজাকে দোষ দিয়ে কি হবে?

রীতা বললো, "সিরিজা যদি দিবাকরের বাড়ী গিয়ে থাকে, তাহলে তো ওকে আনতে ওখানেই যেতে হবে। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে দিবাকর থাকে কোথায়? রজত না আসা অবধি কিছু তো করা যাবে না।"

সুখেন রজতের শ্বশুড়কে খেঁকিয়ে বললো, "আপনি ফোনটা ধরলেন না কেন? এখন ও যদি সিরিজাকে অন্য কোথাও গায়েব করে দেয়? কি হবে? আমি কোথায় খুঁজবো তখন?"

রজতের শ্বশুড় বললো, "আগে ও আসে কিনা দেখি। তারপর যা করার করছি।"

ট্যাক্সিতে রজত চিন্তাগ্রস্ত। এমন একটা পরিস্থিতি, এই মূহূর্তে ওর মাথা কোন কাজ করছে না। একদিকে সিরিজার স্বামী, আর একদিকে দিবাকর। এই মূহূর্তে সিরিজা দিবাকরের জিম্মায়। ওকে ওখান থেকে নিয়ে এলে সিরিজা জীবনের মত হাতছাড়া। সিরিজার স্বামীকে বলাও যাবে না সিরিজা দিবাকরের কাছে আছে। বললে মাতাল লোকটা তখন দিবাকরের বাড়ী গিয়ে হানা দেবে। আবার দিবাকরকে সিরিজার ভার বহন করতে দিলে, দিবাকর তার ফায়দা লুটবে। সুযোগকে যেভাবে কাজে লাগিয়েছে দিবাকর, রজত নিশ্চিত কাল রাতে অঘটন কিছু একটা ঘটেছে।

ট্যাক্সিটা প্রায় দিবাকরের বাড়ীর দোড়গোড়ায়, রজত তখনো ভেবে কূল কিনারা করতে পারছে না কি করবে? গাড়ী থেকে নেমে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরবে সিরিজাকে। বলবে, "চলো সিরিজা এখনই আমরা কোথাও চলে যাই। আমিও আর ফিরবো না বাড়ীতে। তোমাকে অন্য কোথাও রেখে দিয়ে তারপরে ওদের মোকাবিলা করবো। এমন জায়গায় তোমাকে রাখবো, যেখানে কাকপক্ষীও টের পাবে না।"

ট্যাক্সিটা দিবাকরের বাড়ী পৌঁছোনোর পর রজত মানিব্যাগ বার করে ভাড়া দিতে যাচ্ছিলো, এমন সময় ওর মোবাইলটা আবার বেজে উঠলো।

তাড়াহুড়োতে রজত দেখেনি ফোনটা কে করেছে? ও রিসিভ করলো।

ও প্রান্ত থেকে ভেসে এল এক মহিলার গলা, "কে বলছেন?"

- "আপনি কে বলছেন?"

-- "আমি রেশমী বলছি।"

- "রেশমী?"

-- "হ্যাঁ। সিরিজা আছে?"

- "সিরিজা?"

-- "হ্যাঁ ও আমাকে ফোন করেছিল। বলেছিল রোববার দেখা করবে। কাল তো রোববার। তাই ফোন করলাম। সিরিজার সাথে কথা বলা যাবে কি?"

রজত যেন আশা করতে পারেনি রেশমী এভাবে ফোন করবে। ওর মনে পড়ে গেল। রবিবারের কথাটা। সিরিজার সাথে রেশমীর কথা হয়েছিল। হ্যাঁ ঠিকই তো। বলেছিল রেশমীর সাথে মিট করবে। কিন্তু সিরিজা যে এখন সেই দিবাকরের সাথেই?

রেশমা রজতকে বললো, "আপনি কে?"

রজত আমতা আমতা করছে। নামটা বললেই তো সব মাটি হয়ে যাবে। ও গলাটা একটু কেঁপে বললো, "আমি....."

রেশমী বললো, "রজত?"

রেশমী রজতের গলার স্বর শুনে এতোক্ষনে বুঝতে পেরেছে। ফোনেও বুঝতে অসুবিধে হয় নি।

বেশ রেগেমেগে বললো, "এটা তোমার ফোন? আমি আগে তো বুঝতে পারিনি। তাহলে ঐ মেয়েটা কে? সিরিজা, যে আমাকে ফোন করেছিল?"

রজত কিছুক্ষণ চুপ করে বললো, "সিরিজা, আমার স্ত্রী।"

রেশমী বললো, "সিরিজা তোমার স্ত্রী? কি ব্যাপার বলো তো রজত? এতদিন পরে রেশমীকে মনে পড়লো। তাও আবার নিজের স্ত্রীকে দিয়ে ফোন করালে। ব্যাপারটা কি? আমি তাহলে ভুল জায়গায় ফোন করেছি, ঠিক আছে রাখলাম।"

বিরক্ত হয়ে ফোনটা রেখেই দিতে যাচ্ছিলো। রজত সঙ্গে সঙ্গে রেশমীকে বাধা দিয়ে বললো, "রেশমী প্লীজ প্লীজ তুমি ফোন ছেড়ো না। তোমাকে আমার ভীষন দরকার।"

-- "কেন?"

- "তোমার দিবাকরকে মনে নেই রেশমী?"

-- "দিবাকর?"

- "হ্যাঁ। দিবাকর। যার জন্য আমি অপরাধী। দিবাকর তোমাকে ভালোবেসেছিল। আমি শুধু তোমাদের দুজনকার কথা ভাবি। কি দোষে আমি সেদিন তোমাকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম। অথচ দিবাকর তোমাকে ভালোবাসতো। আমার একবারও ওর কথা মনে হয় নি। আজও দিবাকর তোমাকে কত চায়। আমি আর সিরিজা দিবাকরের জন্যই তোমার খোঁজে সেদিন গেছিলাম। মনে হয়েছিল একবার তোমাকে শুধু যদি রাজী করাতে পারি। আমি তো বলছি ভুল আমার। আমিই যদি সেদিন আগ বাড়িয়ে তোমাদের দুজনের মাঝখানে না আসতাম....."

রেশমী রজতের কাছ থেকে পুরোনো কথাগুলো শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর ভারী গলায় বললো, "দিবাকর কোথায় এখন? ওর ওই পুরোনো বাসায়? বোলো, আমি তাহলে কালই যাবো ওখানে। লোকটাকে আমিও বুঝতে পারিনি সেদিন। আজও ভাবি, তোমাকে ভালোবেসে আমিও তো ভুল করেছিলাম। দিবাকর যে আমাকে এত চায়, সেটা আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল।"

রজত প্রফুল্ল হয়ে বললো, "তুমি আসছো তাহলে?"

রেশমী বললো, "হ্যাঁ আসছি, কালকেই আসছি। দিবাকরকে বোলো, যাকে ও ভালোবাসতো, সে আসছে ওর কাছে।"

ট্যাক্সি থেকে নামার পরে রজতের মুখে হাসির ঝিলিকটা খেলে গেল। ভাড়া মিটিয়ে ও দিবাকরের ঘরের দরজার দিকে এগোচ্ছে। অকল্পনীয় ভাবে, রেশমীর ফোনটাও এই মূহূর্তে এসেছে। দিবাকরকে খুশীর খবরটা অবশ্যই দিতে হবে। সেই সাথে সিরিজার ঠোঁটে একটা চুমু......

দিবাকর যেন রজতকে নিয়ে একটু বেশী চিন্তা করছে। ফোনটা ধরেনি বলেই চিন্তাটা হয়তো বেশী। এই মূহূর্তে যদি এসে পরে, মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বলা যায় না, ও হয়তো কিছু নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আসছে। সিরিজাকে নিয়ে টানাটানি করলেই, বাঁধা দিতে হবে। ওর প্ল্যানটাকে পুরো ভেস্তে দিতে হবে।

সিরিজা বললো, "কি চিন্তা করছো? এখনও ওকে নিয়ে?"

দিবাকর বললো, "ফোনটা তো ধরলো না। মনে হচ্ছে ও এখুনি এসে পড়বে। আমার হাত পা সব শক্ত হয়ে যাচ্ছে। রজতকে কিভাবে আটকাবো, সেটাই আমি....."

উদ্বিগ্ন হয়ে তখনো পায়চারী করছিল। সিরিজা বললো, "শোন এখানে।"

দিবাকর ওর দিকে তাকালো।

সিরিজা বললো, "এসো একটু আমার কাছে।"

দিবাকর সিরিজার সামনে গেল।

সিরিজা বললো, "বসো একটু আমার পাশে।"

দিবাকর বসলো।

সিরিজা বললো, "তাকাও একটু আমার দিকে।"

সিরিজা ঠোঁটটা দিবাকরের ঠোঁটের দিকে নিয়ে গেল।

দিবাকর বললো, "কি বলছো?"

সিরিজা বললো, "সব চিন্তা দূর করতে চাও?"

দিবাকর বললো, "কিভাবে?"

সিরিজা বললো, "আমার ঠোঁটে একটা চুমু খাও। চিন্তা দূর হয়ে যাবে।"

দিবাকর ভাবছিল কি করবে? চুমু খেতে তো আপত্তি নেই। কিন্তু.....

সিরিজা ঠোঁটটাকে আরও কাছে নিয়ে বললো, "কি হলো, খাও।"

ওর গাল দুটো ধরে দিবাকর বললো, "সিরিজা কাল থেকে তুমি আমার মনে শক্তি জোগাচ্ছো। মাঝে মাঝে ভাবছি, রজতকে নিয়ে আমি শুধু চিন্তা করছি। ও কোন হরিদাস পাল? যে আমাকে ভয় দেখাবে। আমার কাছে তুমি আছো, তখন আর চিন্তা কি? কিন্তু তারপরই আবার ভাবছি, ব্যাটা ঝেমেলা না করে বসে। বউ নিয়ে অনেক অস্বস্তিতে ফেঁসে আছে। ওর কাছ থেকে সিরিজাকে ছিনিয়ে নেওয়া মানে, মাথায় রক্ত উঠে যেতে পারে। ওর এখন করনীয় শুধু একটাই। আমি যেমন ভাবছি তোমাকে নিয়ে কোথাও দূরে চলে যাবো। রজতও হয়তো সেটাই ভাবছে। দূরে কোথাও চলে গেলে ওকেও ঝেমেলা পোয়াতে হবে না। বউও নেই, দোলনেরও চাপাচাপি নেই। এখান থেকে অনেক দূর। যেখানে কেউ ওকে খুঁজে পাবে না। সিরিজাকে নিয়ে জীবনের বাকী দিনগুলো উদযাপন। একবার তোমার মনটা যদি ও দূর্বল করে দিতে পারে তাহলেই তো রজতের জিৎ হবে। আর আমি মেনে নেব হার।"

সিরিজা বললো, "আমি তোমাকে হারতে দেব না। তাকাও আমার দিকে।"

দিবাকর মনটা একটু খচখচ করে বললো, "কিন্তু....."

সিরিজা বললো, "কোন কিন্তু নয়।"

সিরিজা টুপ করে দিবাকরের ঠোঁটে চুমুটা খেয়ে বসলো।

দিবাকরের মাথাটা এমন ভাবে দুহাতে আঁকড়ে ধরলো, যাতে চুমুর দাপটটা ওর সব চিন্তাটাকে দূর করে দেয়। ঠোঁটের মধ্যে যেন আঠালো এক শক্তি। মিষ্টি স্বাদ, চট করে ঠোঁট সরানো যায় না। শিরা উপশিরা গুলো সব নড়ে চড়ে উঠে বসে। চুমুতে কত যে শক্তি তা শুধু গভীর ভাবে আবদ্ধ হয়েই অনুভব করা যায়। দিবাকর সিরিজার ঠোঁটের সাথে এমন ভাবে আবদ্ধ হয়ে রইলো, যে খেয়াল নেই, ইতিমধ্যে রজত একবার দরজাটায় কড়া নাড়িয়েছে বাইরে থেকে।

ভাগ্যিস কলিংবেলটা দুবার টিপেও বাজেনি। রজত বুঝতে পারছিল না সুইচটা খারাপ হয়ে গেল কিনা? লোডশেডিং হয়ে থাকলেও কলিংবেল বাজবে না। একবার দরজাটায় কড়া নাড়লো। সাড়া শব্দ নেই। সিরিজার ঠোঁটের সাথে আবদ্ধ হয়ে দিবাকরের প্রবল উদ্দীপনা ফিরে আসছে। সিরিজার দুটো গাল ধরে ও নিজেই প্রতিদানের চুমু দিতে লাগলো। গভীর চুমুতে যদি গভীরতা ভরা আবেগ মেশানো থাকে, চট করে চাইলেও অত সহজে ঠোঁট ছাড়া যাবে না। দম নেওয়ার জন্য শুধু ঠোঁটটা মাঝে মাঝে আলগা করেই আবার আঁকড়ে ধরতে হবে উজাড় করে। দিবাকর তাই করতে লাগলো। কখনও উপরের ঠোঁট কখনও নিচের ঠোঁট। সিরিজার মিষ্টি ঠোঁট দুটো থেকে যতটা মধু চুষে নেওয়া যায়, ও তাই করতে লাগলো। এই মূহূর্তে রজত ছাড়া যদি অন্য কেউ ওখানে যেত, তাহলে বোধহয় আধঘন্টা ওকে অপেক্ষা করতে হত বাইরে দাঁড়িয়ে চুমু লীলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত।

সিরিজার ঠোঁট চুষতে চুষতে দিবাকর বললো, "তোমাকে অনেক চুমু খেয়েছে ও, এতোদিন। তাই না সিরিজা?"

সিরিজা চোখ দুটো বুঁজে দিবাকরের চুমুতে সাড়া দিতে দিতে বললো, "হ্যাঁ।"

দিবাকর বললো, "আর খেতে পারবে না ও। অনেক হয়েছে, এটা শুধু এখন আমার।"

চোখ বোজা অবস্থাতেই সিরিজা বললো, "আমার ঠোঁটটাকে রজত অনেক চুষেছে। আমার সারা শরীরটাকে স্বেচ্ছায় তুলে দিয়েছিলাম ওর হাতে। এই ঠোঁট, আমার বুক। সব কিছু উজাড় করে দিয়েও কি পেলাম? ও আমাকে ঠুকড়ে দোলনকে কাছে রাখলো। কি জন্য? আমি তাহলে ওকে সবকিছু কেন তুলে দিলাম। বলো তো দিবাকরদা?"

দিবাকর চুমু খেতে খেতেই সিরিজার বুকে হাত রেখে বললো, "অনেক দিয়েছো তুমি ওকে। আর দিও না সিরিজা। তাহলে কিন্তু আমি মরে যাবো।"

সিরিজা চট করে দিবাকরের মুখটা নিজের বুকের খাঁজে চেপে ধরে বললো, "তোমাকে ছাড়া আর কাউকেই কিছু দেব না দিবাকরদা। এই সিরিজা শুধু তোমার।"

দিবাকর বুকের ব্লাউজটা খুলতেই যাচ্ছিলো। সেই সময় দরজায় একটা জোরে কড়া নাড়ার শব্দ পেল।

দিবাকর ভাবলো, সিরিজার স্তনটা মুখে নেবার একটা চরম সুযোগ এসেছিল, হঠাৎই কে যেন এসে স্তন খাওয়াটাকে মাটি করে দিল।

রজত বাইরে থেকে এবার চেঁচাতে শুরু করে দিয়েছে, "এই দিবাকর, দিবাকর..... বাড়ী আছ? দরজা খুলছো না কেন? দিবাকর....."

চট করে সিরিজার বুক থেকে মুখ তুলে দিবাকর সিরিজার দিকে তাকিয়ে বললো, "রজত?"

সিরিজা দিবাকরের ঠোঁটে হাত রাখলো। আসতে করে বললো, "চুপ। তুমি একদম ঘাবড়াবে না। ওকে আসতে দাও। আমি ঠিক সামলে নেব।"

দিবাকর বিছানা থেকে উঠতে যাচ্ছিলো। সিরিজা বাঁধা দিয়ে বললো, "আর শোনো?"

দিবাকর দেখলো সিরিজা ওর শাড়ীর আঁচল দিয়ে ওর ঠোঁটটা মুছিয়ে দিচ্ছে ভালো করে। ওকে বললো, "ও খুব চালাক। এখনই যেন না বোঝে, তাই তোমার ঠোঁটটাকে মুছে দিলাম। কিছু বলবে না। বলবে, সিরিজা স্নানে গেছে। আমি ততক্ষনে বাথরুমে ঢুকছি।"

আঁচল শুদ্ধু শাড়ীটা ঠিক করে সিরিজা একটা তোয়ালে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে গেল। দিবাকর দরজার দিকে এগিয়ে গেল আস্তে আস্তে।

দরজাটা খুলেছে দিবাকর। রজত বললো, "কি ব্যাপার? আমার বন্ধুটা যে দেখি একদিনেই পাল্টে গেল অনেক।"

দিবাকর বললো, "কেন?"

রজত বললো, "ফোনে পাচ্ছি না, দরজা নেড়েও সাড়াশব্দ নেই। তুমি কি জীবিত আছো? না, আমি ভাবলাম রেশমীর শোকে, প্রানটাই দিলে বেঘোরে। অকালে মৃত্যু ঘটলে ব্যাচারা রেশমীর কি হবে?"

দিবাকর অবাক হয়ে বললো, "রেশমী?"

রজত একটু ঠেস মেরে বললো, "হ্যাঁ রেশমী। তোমার ডারলিং। কি ব্যাপার? রেশমীকেও মনে করতে পারছো না? এত ন্যাকা সাজছো ব্যাপারটা কি?"

দিবাকর বললো, "রেশমী আবার কোথায় এলো?"

রজত বললো, "আসবে তো। কালকে। আমায় বলেছে। তোমার জান আবার ফিরে আসছে তোমার কাছে। তুমি রেশমীকে নিয়ে ঘর করবে আর আমি সিরিজাকে নিয়ে।"

রজত হেঁয়ালি করছে কিনা দিবাকর বুঝতে পারছে না। ও বললো, "রেশমী কাল আসবে? তুমি কি করে জানলে?"

রজত বললো, "ওটাই তো কথা। কেন, তুমি খুশি নও?"

দিবাকর ভেবে পাচ্ছিলো না কি বলবে? রজতকে বললো, "আমাকে আগে বলো, আসলে কি হয়েছে।"

দিবাকরের ঘরে ঢুকে চেয়ারটায় বসে রজত মহা আনন্দে একটা সিগারেট ধরালো। দিবাকরকে বললো, "তুমি খুব লাকি। জানো তো দিবাকর।"

দিবাকরও একটু দূরে বসেছে। রজতকে বললো, "কেন?"

রজত বললো, "এই তোমার কোন ঝেমেলা নেই। কোন হেডেক নেই। কাল রেশমী এলেই তুমি টুপ করে ওর গলায় মালা দিয়ে দেবে। আর যত চিন্তা আমারই। শালা....."

দিবাকর বললো, "কেন?"

-- "ঐ শালা হারামজাদাটা এখানে এসেছে।"

- "কে?"

-- "সিরিজার স্বামী। ওকে খুঁজতে খুঁজতে আমার বাড়ী এসে চড়াও হয়েছে।"

- "সিরিজার স্বামী?"

-- "হ্যাঁ আমার শ্বশুড় আর আমার বউও আছে এই চক্রান্তের পেছনে। ওরাই পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছে।"

দিবাকর বললো, "কেন? কি করে হলো এসব?"

রজত বললো, "সেটাই তো ভাবছি। বুড়ো আর শয়তান মাগীটা যে আমায় সুখে থাকতে দেবে না, আমি আগেই জানতাম। ওরা তলে তলে অনেক বুদ্ধি খাটাচ্ছিল। কিভাবে আমাকে ফাঁসানো যায়। রীতার তো একটা প্রবল রাগ রয়েছে আমার প্রতি। তাই না?"

-- "কিন্তু তুমি যে বললে দোলন ব্যাপারটা সামলে দিয়েছে। ওকে ওখান থেকে চলে আসতে সিরিজার স্বামী দেখেনি।"

রজত বললো, "আমার তো মনে হয় দোলনের এর মধ্যে কোন কারসাজি নেই। ও কিছু করেনি। করেছে ওই হারামজাদা বুড়োটাই। মেয়ের জন্য এখন উঠে পড়ে লেগেছে আমাকে বিপাকে ফেলতে।"

দিবাকর বললো, "তুমি চলে এলে। সিরিজার স্বামী এখন কোথায়?"

রজত বললো, "বললাম তো বাড়ীতে। সিরিজাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ও অপেক্ষা করছে। আমি গেলেই আমাকে চেপে ধরবে। আর দোলনও যদি কিছু বলে দেয়, তাহলে তো আরো মুশকিল। দোলন তো জানে, সিরিজা এখানেই রয়েছে কাল থেকে।"

বলেই দিবাকরের ভেতরের ঘরের দিকটায় একবার তাকাল রজত। ওকে বললো, "সিরিজা কোথায়?"

দিবাকর বললো, "বাচ্চাটাকে ঘুম পাড়িয়ে বাথরুমে ঢুকেছে। স্নান করে বেরোবে একটু পরে।"

রজত নির্লজ্জ্বের মতন বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল। বাইরে থেকে দরজাটায় দুবার টোকা মেরে বললো, "সিরিজা, ও সিরিজা। আমি এসে গেছি ডার্লিং।"

পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দিবাকরের চোয়ালটা আবার শক্ত হয়ে যাচ্ছে।

সিরিজা ভেতর থেকে কোন সাড়া দিল না। ও বুঝতে পেরেছে রজত টোকা মারছে বাইরে থেকে।

রজত সাড়া না পেয়ে আবার চেয়ারটায় এসে বসল। দিবাকরকে বললো, "মনে হয় কল খুলে রেখেছে। জলের শব্দে আওয়াজ শুনতে পারছে না। দেখি বেরোক, আমি তো সামনেই বসে রয়েছি।"

দিবাকর বললো, "রেশমীর সাথে তোমার কিভাবে কথা হল?"

রজত বললো, "এইসব ঝেমেলার মধ্যেই রেশমী ফোন করেছে আমাকে। ও আসলে সিরিজাকে খুঁজছিল। সেদিন ফোনে কথা হয়েছিল না? সবই তো তোমার জন্য দিবাকর।"

রজত আবারো বললো, "ইউ আর ভেরী লাকি গাই।"
 
দিবাকর এদিকে ভাবছে, তাহলে কি সিরিজা আর রেশমী দুজনকে নিয়েই ওকে ঘর করতে হবে? রেশমী তো আগেই সম্পর্ক ছিন্ন করেছে রজতের সাথে। এখন আবার কামব্যাক করছে দিবাকরের জন্য। আর সিরিজা রজতকে ছেড়ে এখন দিবাকরের শরনাপন্ন। ভালোবাসার খেলা জমে উঠেছে। দুজনকে ভালোবাসা কি একসাথে দিতে পারবে দিবাকর? রজত না হয় সিরিজার স্বামী, দোলন আর শ্বশুড় বউকে সামাল দিক। আর সেই সুযোগে দিবাকর সিরিজা আর রেশমী দুই সঙ্গিনীকে নিয়ে দূরে সেই শিমূলতলাতে। দোতলা বাড়ী। অনেকগুলো ঘর। একটা ঘরে সিরিজা আর একটা ঘরে রেশমী। পালাবদলের মতন দুঘরে দিবাকরের অবাধ প্রবেশ। ওফ্, সত্যি যদি এমন হত?

রজত ভূরূটা কুঁচকে বললো, "মনে হচ্ছে রেশমীর খবরটা শুনে তুমি খুশি হও নি।"

দিবাকর বললো, "না, তা কেন?"

-- "তাহলে মুখটা অমন ব্যাজার মতো করে ফেললে? পুরোনো বান্ধবী ফিরে আসছে, আমি তো তোমার জায়গায় থাকলে নাচতে শুরু করে দিতুম।"

দিবাকর বললো, "না, আসলে ঠিক তা নয়, আমি আসলে তোমার কথা ভাবছি।"

রজত বললো, "আমার কথা ভাবছ? কি কথা?"

- "এই তুমি এখন নানা সমস্যায়। একদিকে বউ শ্বশুড় তো আছেই, দোলনকে নয় এখন বাদই দিলাম। কিন্তু সিরিজার স্বামী যে আবার জুটে এসে বসেছে।"

রজত একটা সিগারেট ধরিয়ে বললো, "শালার পাছায় মারবো এক লাথি। যেখান থেকে এসেছে, ওখানে আবার ফেরত পাঠিয়ে দেব। মাতালের আবার বউকে নিয়ে কত দরদ। যাকে কিনা সিরিজা কোনদিনই পচবে না। সে এখন সিরিজা সিরিজা করে মাথা খারাপ করছে।"

দিবাকর বললো, "সবই তো বুঝলাম। কিন্তু লোকটাকে তো তাড়ানো দরকার। কিভাবে তাড়াবে, সেটাই তো ভাবছি।"

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রজত বললো, "ভেবেছিলাম, তোমাকে আর সিরিজাকে কোথাও পাঠিয়ে দেবো। কিন্তু সেটা তো এখন আর সম্ভব নয়। কাল যে রেশমী আসছে।"

রজত কথাটা সত্যি বলছে কিনা দিবাকর বোঝার চেষ্টা করছিল। ও একবার তাকালো রজতের মুখের দিকে। দেখলো রজতও তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তারমানে দিবাকরকে রজতও পরীক্ষা করার চেষ্টা করছে।

একটু গম্ভীর হয়েই রজত এবার বললো, "আচ্ছা দিবাকর। তোমার ফোনটা তো বাজছিল সকালে। তারপরই আবার বন্ধ হয়ে গেল কেন? তুমি কি তখন অন্য কিছুতে ব্যস্ত ছিলে?"

একটু অপ্রস্তুতে পড়ার মতন, দিবাকর বললো, "মনে হয় মোবাইলে চার্জ ছিল না। আমি তো অন করে তোমাকে আবার ফোন করলাম। দেখলাম বাজছে তোমার ফোনটা, অথচ তুমিও ধরলে না।"

রজত বললো, "আমি তখন তোমার বাড়ীর কাছাকাছিই এসে পড়েছিলাম। দেখলাম শুধু শুধু তোমার ব্যালেন্স খরচা হবে। সিরিজার জন্য পাগল হয়ে ছুটতে ছুটতে যখন চলে এসেছি, তখন তোমার ঘরে এসেই নয় চেহারাটা দেখাই। একটা সারপ্রাইজ তো দিতে হবে। না কি?"

দিবাকর এবার একটু গম্ভীর হয়ে বললো, "কিসের সারপ্রাইজ?"

রজত বললো, "এক রাত সিরিজাকে কাছে পাইনি। অভাবটা ফিল করেছি। আমার অভাব কিসে দূর হবে তুমি জানো না? সিরিজাকে কয়েকটা চুমু খাবো, ওর ঠোঁটে, গালে বুকে। তবেই তো অভাবটা দূর হবে। আমি এলাম, অভাবটা পূরণ করলাম, এটাই তো সারপ্রাইজ।"

দিবাকরের মনে হল, "রজতের ঠোঁট দুটোয় এখনি একটা সেলোটেপ জাতীয় কিছু মেরে দেয়, যাতে ও চুমু খাবার জন্য হাঁ করতে না পারে। শালার কত সখ? একরাতে দোলনকে চুদে আবার এসেছে সিরিজার ঠোঁট চুষতে। কাল যখন মাগীটার জন্য সিরিজাকে ভাগিয়ে দিলি, তখন তোর এটা মনে ছিল না?"

রজত বললো, "সিরিজা রাত্রে শুলো কোথায়?"

দিবাকর শোবার ঘরটা দেখিয়ে দিল। বললো, "ও ঘরে।"

রজত বললো, "আর তুমি?"

দিবাকর বললো, "আমি এ ঘরে।"

-- "ঘুমিয়েছিলে না জেগেছিলে?"

দিবাকর একটু অস্বস্তি অনুভব করলো, রজতকে বললো, "কেন, জেগে থাকবো কেন? আমিও ঘুমিয়েছি।"

অনেক রাত জাগা চোখ দুটো দেখলে মানুষের যেমন সন্দেহ হয়, রজত তেমনি বললো, "তোমার চোখ দেখে মনে তো হচ্ছে না ঘুমিয়েছ? রাত জেগে বুঝি রেশমীর স্বপ্ন দেখছিলে?"

দিবাকর বোকার মতন বলে উঠলো, "হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই বলেছো। আমি রেশমীর কথা কালকেই খুব ভাবছিলাম।"

রজত মনে মনে একটু গাল দিল দিবাকরকে। বললো, "শালা ন্যাকামি কম জানে না। সিরিজা ঘরে রয়েছে, আর উনি রেশমীর কথা চিন্তা করেছেন? আমাকে উজবুকটা যেন বানাতে পারলেই হল। তোর মনের ইচ্ছা যেন আমি বুঝি না?"

সিগারেটটা এমন ভাবে মনের সুখে টানছিল, দিবাকরের মনে হল, এত কিছু হবার পরও রজতের যেন কোন টেনশন নেই। শুধু অপেক্ষা করছে, সিরিজা কখন বাথরুম থেকে বেরোবে। বেরোলেই খপ করে ধরবে। যেন শিকারীর মতন বসে আছে চেয়ারে।

ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তেই রজত বললো, "আমি অবশ্য এসব নিয়ে ভাবছি না।"

দিবাকর বললো, "কোনটা?"

রজত বললো, "ঐ বাড়ীতে যা এখন হচ্ছে। এগুলো দুতিনদিন খুব হবে। তারপরই সব চুপসে যাবে, রজতের কেরামতি দেখলে। আমাকে তো চেনে না ওরা। এমন জায়গায় সিরিজাকে নিয়ে চলে যাবো। জন্ম জন্মান্তরেও আর হদিশ পাবে না।"

দিবাকর বললো, "কোথায় যাবে?"

রজত বললো, "তোমাকে বলেছিলাম না, চলো কদিন বেড়িয়ে আসি। তুমিও গা করলে না। আর সিরিজাও তাই। ও পরে রইলো রেশমীকে নিয়ে। রেশমী আর তোমার পুনর্মিলন ঘটাবে। সেই রেশমীই যখন আসছে। তখন আর চিন্তা কি? চলো, এবার আমরা চারজনেই কোথাও চলো চলে যাই। অনেক দূর। যেখানে আমরা থাকব। নতুন একটা বাসা বাধবো। দুটো ছেলে আর দুটো মেয়ে, জোড়া অন্তর্ধান। কেমন হবে বলো তো?"

দিবাকর মনে মনে ভাবছে, "শালা এক দোলনকেই সামাল দিতে পারলো না। নাকানি চোবানি আর হিমশিম খেয়ে নাকাল। আর এখন বাবুর ভ্রমণের সখ হয়েছে। যেন উনি চাইলেই সিরিজা অমনি এক কথায় রাজী হয়ে যাবে, সঙ্গে যেতে।"

রজত দিবাকরকে একটু ধ্যাতানি দিয়ে বললো, "সিরিজা তো এক কথায় যাবে। এবার তুমি যাবে কিনা বলো? তবে তো প্ল্যানটা ওরকম ভাবে সাজাই। রেশমীকেও তো রাজী করানোর ব্যাপারটা আছে। যা করার আমাদের আজকেই ঠিক করে নিতে হবে, সময় হাতে কিন্তু বেশী নেই।"

দিবাকর বুঝতে পারছিল, একটু পরে সিরিজা বাথরুম থেকে বেরোলে, কি অবস্থাই না হবে রজতের। নেহাত সিরিজা ওকে মানা করে রেখেছে। নইলে এতক্ষনে মুখের ওপর বলেই দিত। আশা ছেড়ে দাও। এ জন্মে সিরিজা আর তোমার হল না।

বলতে পারছে না। কারন সিরিজার স্বামীটাও তালে গোলে এমন সময় এসে হাজির হয়েছে, যে রজত সব দোষ দিবাকরের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারে। বলা যায় না, স্বামীটাকেও সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারে এ বাড়ীতে। ভালোমানুষ সেজে ঐ মাতালটাকে বলবে, সিরিজার সাথে আমি তো কিছু করিনি, যা করার ঐ লোকটাই করেছে। সুতরাং ওকে পাকড়াও। তোমার বউ এর মাথা খাওয়ার মূলে ওই। আমি তো নিতান্তই সাধুপুরুষ।

দিবাকরকে চমকে দিয়ে রজত বললো, "এতো নাটক কেন করো? আসল কথাটা বলে দিলেই তো হয়?"

দিবাকর যেন আকাশ থেকে পড়লো, বললো, "কিসের নাটক? কি করেছি আমি?"

রজত বললো, "এই যে, রেশমীকে নিয়ে তুমি হয়তো আমার আর সিরিজার সাথে ভিড়তে চাও না। নির্জনে প্রেম করবে। তা সেটা তো বললেই হয়। অত ন্যাকামোর কি আছে?"

দিবাকর বললো, "দাঁড়াও দাঁড়াও, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।"

রজত বললো, "কি?"

- "সিরিজ আর রেশমী দুজনকে নিয়েই আমি না হয় গায়েব হয়ে যাচ্ছি। তোমার এই মূহূর্তে গা ঢাকা দেওয়াটা ঠিক হবে না।"

রজত বেশ চেঁচিয়ে উঠে বললো, "ওয়াট?"

এতক্ষণ ওর চোয়ালটা শক্ত হয় নি। এবার সত্যি সত্যি শক্ত হল। মনে মনে দিবাকরকে গাল দিয়ে বললো, "শালা, তোর পেটে পেটে এত? একটার বদলে এখন দুটো? তোর ঐ নিচের আখাম্বাটার জোর আছে? দুজনকে সামাল দিতে পারবি তুই? সে ক্ষমতা তোর আছে?"

দিবাকর বললো, "তুমি যতই অন্যকিছু ভাবো, আমি কিন্তু তোমার জন্যই....."

রজত বললো, "মানে?"

- "মানে তুমি বুঝতে পারছো না? এখন যদি ঐ বাড়ীতে জোর করে কদিন একাই থাকতে পারো, তাহলেই তো মুশকিল আসান। ওর বরটাকে বলবে, সিরিজা তো আমার কাছে নেই। ওকে অন্য কেউ নিয়ে পালিয়ে গেছে। আর কোথায় গেছে তুমিও জানো না। ওর বরটা হন্যে হয়ে কদিন ঘুরবে, তারপর হতাশ হয়ে গ্রামে ফিরে যাবে। আর তুমিও তখন আবার ফিরে আসবে আমাদেরই কাছে।"

কি বুদ্ধি! রজত মনে মনে বললো, "শালা তোর পেটে পেটে এত? একটাকে নয়, দুটোকেই চাই? সিরিজাকেও চাই আবার রেশমীকেও চাই? জীবনে কোনদিন, মেয়েমানুষের গা ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখলি না। একবার সিরিজার আর আমার ভালোবাসা দেখে তুই শুকনো ডাঙায় আছাড় খেলি। তোর পেটে পেটে এখন এতো?"

দিবাকরও বুঝতে পারছিল, কথাটা রজতের হজম করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে, ও মনে মনে বললো, "কেন, এখন কদিন না হয় দোলনকে নিয়েই তুমি ফূর্তী করো। রেশমী সিরিজা কেউ যখন তোমার সাথ দেবে না। তখন ওদেরকে যা বোঝার আমাকেই তো সব বুঝে নিতে হবে, তাই না? আগে তুই সিরিজার বরটাকে কিভাবে সামল দিবি, সেটা নিয়েই বেশী চিন্তা করো।"

এক নারীকে নিয়ে টানাপোড়েন, আর দ্বন্দ। কি অবস্থাই হয়েছে এখন দুজনের মধ্যে। কেউ সিরিজাকে ছাড়ার পক্ষপাতী নয়। পারলে যেন, এই মারে কি সেই মারে। আর কি?

রজত বললো, "সিরিজা এত দেরী করছে কেন? কখন ঢুকেছে বাথরুমে? কুড়ি মিনিট তো হয়ে গেল বসে আছি। বেরুবার নামই করছে না।"

দিবাকর, রজতের অস্থির হওয়াটা দেখে বেশ মজা পাচ্ছিল। এখন সিরিজা রজতের আর ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। মায়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে দিবাকরকেই সঙ্গী করেছে। কাল রাতে সিরিজাকে অবজ্ঞা করার মজাটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে রজত। বলা যায় না ও হয়তো ইচ্ছে করেই বেরোচ্ছে না। রজত যাতে আরো ব্যতিব্যস্ত হয়। ছটফট করে মরে যাবে রজত। জানে না কি ভুলই ও কাল করেছে।

ঠিক তার দু মিনিট পরেই বাথরুম থেকে স্নান সেরে বেরোলো সিরিজা। রজত দিবাকর দুজনেই ওকে দেখে বেশ অবাক হল। দেখলো সিরিজা ভিজে শাড়ীটা গায়ে জড়িয়েছে। কিন্তু শাড়ীটা এমন ভাবে চেপে বসেছে, শরীরর উঁচু নিচু খাঁজগুলো সব শাড়ীর তলাতেও স্পষ্ট। স্তনের বোঁটার চারপাশে কালো আর খয়েরী মেশানো অংশটা, যেটা একটা কালো আধার তৈরী করেছে। ভিজে শাড়ীর তলা থেকেও ওটা স্পষ্ট বিদ্যমান। ফুলে থাকা বোঁটাদুটো যেন বিকশিত হচ্ছে ভেতর থেকে। এত উন্নত আর দৃঢ় সিরিজার স্তন। সেঁটে থাকা শাড়ীটা যেন জৌলুস আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বুকদুটোর। রজত ঠোঁটদুটো একটু হাঁ করে ফেললো। কিন্তু দিবাকর হাঁ করলো না। ওর জিভটা দাঁতের ফাঁকে কোথায় যেন আটকে গেল। মনে হল, সিরিজার ওই শক্তিশালী বুক দুটো দেখে জিভ এমনভাবে জড়িয়ে গেছে, ওটাকে এখন স্বাভাবিক করা বেশ শক্ত।

রজত আত্মহারার মতন বলে উঠলো, "সিরিজা তুমি বেরিয়েছো? আমি তো কখন থেকে এসে বসে আছি তোমার জন্য।"

সিরিজা, দিবাকরের দিকে একবারও তাকালো না। রজতকে বললো, "আমি বাথরুমের ভেতর থেকে সবই শুনছিলাম, তোমার কথা। ঐ সুখেনটা এসেছে বুঝি? ও আমাকে নিয়ে যাবে? জোর করে? আমিও যাবো ওর সঙ্গে? এতদিন বাদে, আবার আমার জন্য তার এত দরদ কেন? পারে তো অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করে নিক। সুন্দরী মেয়ের তো অভাব নেই ঐ গ্রামেতে। ও যা অপদার্থ লোক। কে বিয়ে করবে ওকে? ভেবেছে, আমিই বুঝি, সারাজীবন ওর গলায় মালা দিয়ে থাকবো? আমার নিজস্ব কোন শখ আল্লাদ নেই? স্বাধীনতা নেই।"

রজত কিছু বলতে যাচ্ছিলো, সিরিজা বাধা দিয়ে বললো, "তোমাকে সেই থেকে কত ঝেমেলা পোয়াতে হচ্ছে। অথচ আমিই বলেছিলাম, আমাকে নিয়ে তোমার কোন সমস্যা নেই। এখন সব জোট হয়েছে এক সাথে।"

রজত উঠে দাঁড়িয়ে তখনই জড়িয়ে ধরে সিরিজাকে চুমু খেতে যাচ্ছিলো, সিরিজা একটু চালাকী করলো, রজতকে বললো, "একটু বসো, আমি এক্ষুনি আসছি, কাপড়টা ছেড়ে।"

এই বলে শোবার ঘরে ঢুকলো। আর দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিল। রজতের আর ভেতরে ঢোকা হলো না।

সিরিজার আচরণটা ঠিক বোধগম্য হল না দিবাকরের। রজত বললো, "আসলে তুমি সামনে রয়েছ তো, তাই একটু লজ্জ্বা পেল মনে হয়।"

বলেই আপন মনে হাসতে লাগলো রজত। আবার একটা সিগারেট ধরালো। মনটা বেশ খুশি খুশি লাগছে। দিবাকরকে নিয়ে একটা সন্দেহ করেছিল ও। সিরিজা ওভাবে রজতের প্রতি দরদ দেখাতে সন্দেহটা এখন কেটে গেছে।

বেশ খুশি মনেই দিবাকরকে বললো, "দিবাকর কিছু যদি মনে না করো, সিরিজা বেরোলেই, আমি ওঘরে একটু ঢুকবো। ওর সাথে কিছু কথা আছে আমার। তাছাড়া, ওকে নিয়ে একটু খুনসুটি, আর সাথে কিছু আদর। বোঝো তো সব। তুমি যদি এক ঘন্টা এঘরে একটু একা থাকো, আপত্তি নেই তো তোমার?"

রজতের কথাটা দিবাকরের মাথায় যেন বাজ পড়ার মতন হল। বুঝতেই পারছিল, ভয়ঙ্কর একটা পরিস্থিতি তৈরী হতে যাচ্ছে একটু পরে। এতবড় সাহস ওর? বলে কিনা, এক ঘন্টা আমি সিরিজাকে আদর করবো, আর তুমি ততক্ষণ এঘরে একদম এসো না। আমি উজবুক? আমি নির্বোধ? শালা খচ্চর একটা, দম থাকে তো, সিরিজাকে আদর করে দেখা দেখি ওঘরে? তোর ক্ষমতায় কুলোবে না। সিরিজা তোকে.....

বলতে বলতেই শোবার ঘরের দরজাটা খুলে সিরিজা এসে দাঁড়ালো সামনে। দিবাকরকে অবাক করে সিরিজা রজতকে বললো, "এঘরে আসবে নাকি? দিবাকরদা ততক্ষণ, না হয় এঘরেই বসুক। আমার কাপড় ছাড়া হয়ে গেছে। এসো তাহলে।"

সিরিজার ওই এক কথাতেই রজতের মনে হল, আগের সিরিজা যেন আগের মতই আছে। কোন পরিবর্তন নেই, ঠিক যেন চেনাপরিচিত সেই ঢং। সেই আকুতি, সেই শরীরের টান, রজতকে কাছে পাবার জন্য যে নিজেও ছটফট করে মরে।

রজত চেয়ার ছেড়ে পুরো লাফিয়ে উঠলো, ভাবলো, "এই তো আমার জান নিজে থেকেই ডেকেছে আমাকে। যেন এখুনি ঘরে ঢুকে সিরিজার শরীরটা ওপর থেকে নিচ অবধি, মন মাতানো সুখে চাটবে। আদরে আদরে ভরিয়ে দেবে শরীর। ওকে পাওয়া মানে, সব বাঁধাকে হেলায় তুচ্ছ করা। সিরিজা কাছে থাকলে, টেনশন বলে পৃথিবী কিছু আর থাকে না।"

দিবাকর পুরো হতভম্ব। সিরিজার হঠাৎ রজতকে এভাবে ঘরে ডেকে নেবার উদ্দেশ্য কি, ওর কিছুই মাথায় ঢুকলো না। কিছুক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। তারপর দেখলো, সিরিজা, রজত দুজনেই ওকে প্রায় কলা দেখিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল।

চেয়ারে একা একা বসে রইলো দিবাকর। দেখলো, শোবার ঘরের দরজাটাও আসতে আসতে বন্ধ হচ্ছে। তারমানে এই মূহূর্তে ওর ঘরে ঢোকারও আর কোন অধিকার নেই।

কেন এমন করলো সিরিজা? তাহলে কি রেশমীর ব্যাপারটাই ওকে সম্পূর্ণ বদলে দিল? রজত এতক্ষণ চেয়ারে বসে রেশমীর কথাগুলো জোরে জোরে এমন ভাবে বলেছে, সিরিজা বোধহয় সবই শুনেছে বাথরুম থেকে। রেশমী আসছে, এই শুনেই কি সিরিজা তাহলে সরে যেতে চায় দিবাকরের জীবন থেকে? আবার সেই রজতকেই মেনে নেওয়া। রজতের হাজার দোষ থাকা সত্ত্বেও? সিরিজার দেওয়া প্রতিশ্রতি, রজতের প্রতি তার তীব্র অভিমান, সব দিবাকরের মনে হচ্ছিল, মনগড়া সব কথা। পুরুষের মনকে আকৃষ্ট করতে সিরিজা এসবে দক্ষ। সাধে কি সবাই ওর জন্য পাগল হয়? রজত পাগল হয়েছে এমনি এমনি?

মুখটা এমন ভাবে ব্যাজার করে বসে রইলো দিবাকর, যেন দেখে মনে হবে একটু আগে শ্মশান থেকে উঠে এসেছে। মনে মনে ভাবল, না সিরিজা নয়, এখন মনে হচ্ছে রেশমীই আমার জীবনে ঠিক নারী। কথায় কথায় এমন পাল্টি খেতে রেশমী জানে না। ভালোবাসাটা ওর কাছে স্বচ্ছ। সিরিজার মত মেকী ভালোবাসা নয়। দেহগত ভালোবাসা ছাড়া সিরিজা মনে হয় আর কিছুই জানে না।

একটু কান খাড়া করে শোনবার চেষ্টা করলো দিবাকর, ওদের দুজনের মধ্যে কি কথা হচ্ছে। কিন্তু ও দেখলো, দরজাটা ভেতর থেকে সিরিজা বা রজত যেই হোক না কেন, এমন ভাবে লাগিয়েছে, টু শব্দটিও শোনা যাচ্ছে না ভেতর থেকে। যেন ওরা দুজনে খুব আস্তে আস্তে কথা বলছে। বাইরে থেকে দিবাকর শুনুক, সেটা দুজনের কেউ চায় না।

সিরিজাকে ঘরের মধ্যে পেয়ে রজত প্রথমেই ওর ঠোঁটে একটা জোরালো চুমু খেতে যাচ্ছিলো, সিরিজা বললো, "এই দাঁড়াও, দাঁড়াও। পাশের ঘরে দিবাকরদা আছে, সেটা খেয়াল আছে তোমার?"

রজত বললো, "কে দিবাকর? আমি চিনি না ওকে।" বলেই সিরিজাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত দুহাতে।

- "কি করছো তুমি?"

-- "আমার সিরিজাকে এখন একটা চুমু খাবো।"

- "কেন? কাল বুঝি চুমু খাওয়ার ব্যাপারটা মনে পড়েনি?"

-- "কাল তো আমি দোলনের শুধু মন রেখেছি সিরিজা, তুমি বুঝতে পারো নি?"

- "খুবই পেরেছি। দোলনকে নিয়ে তোমার অত পীরিত।"

-- "পীরিত? ঐ পাজী মেয়েটাকে নিয়ে পীরিত? কখনই নয়।"

- "তাহলে কি?"

-- "ওটা সিরিজাকে চিরকাল পাওয়ার জন্য।"

- "আমাকে চিরকাল পাবে বলে, তুমি এখানে পাঠিয়ে দিলে? তাই বুঝি?"

রজত সিরিজার ঠোঁটের কাছে ঠোঁটটা নিয়ে গিয়ে বললো, "কেন? তুমি বোঝো না? আমি তোমাকে কতটা চাই? সারা পৃথিবী একদিকে, আর তুমি আমি একদিকে। এত লড়াই করছি কার জন্য? শুধু তোমাকে পাব বলেই তো....."

সিরিজা বললো, "আমাকে পেতে তোমার কত কষ্টই সহ্য করতে হচ্ছে তাই না?"

রজত বললো, "দূর, এ আর এমন কি কষ্ট? কষ্টটা মনে করলেই কষ্ট। তোমার জন্য আমি সব বাঁধা অতিক্রম করতে পারি। কেউ তোমাকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না আমার কাছ থেকে।"

সিরিজা বললো, "দোলন তোমাকে বুঝি কাল অনেক জ্বালিয়েছে? সারারাত শুতে দিয়েছিল তোমাকে? না কি....."

রজত বললো, "কি যে বলো সিরিজা। ওর কি এমন ক্ষমতা যে আমাকে জ্বালিয়ে মারবে? দোলনকে শুধু রেখেছিলাম এক রাতের জন্যই। আমি তো জানতাম না, সকালে এমন কান্ডটা হবে। শ্বশুড় আসতে পারে সেটাই জানতাম। তোমাকে যারজন্য ওখান থেকে সরিয়ে দিলাম। সকাল হতে দেখি, বুড়োটা আবার তোমার স্বামীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছে।"

সিরিজা বললো, "আমি সব জানি। সব শুনেছি, বাথরুম থেকে।"

রজত বললো, "দিবাকরের তো হিল্লে হয়ে গেল। সেটা কি শুনেছো?"

সিরিজা বললো, "হ্যাঁ রেশমী আসছে, শুনেছি, তাই তো?"

-- "কি অবাক ব্যাপার তাই না? ও নিজে থেকেই ফোন করলো আমাকে। আমি সব খুলে বললাম। রেশমী আমাকে বললো, দিবাকরের জন্য ও অনুতপ্ত। ভালোবাসাটা তাই ফিরিয়ে দিতে চায়।"

সিরিজা মুখে কিছু না বলে মুখটা একটু করুন মত করে রজতের দিকে তাকিয়ে রইলো। রজত বললো, "কিন্তু দিবাকর এরকম আচরণ করলো কেন?"

সিরিজা বললো, "কি?"

-- "রেশমীর কথাটা শুনে ও খুশি হল না। যাকে ও এত ভালোবাসতো, তার কথা শুনে মুখে একটুও হাসির ঝিলিকটা দেখতে পেলাম না। কারণটা কি?"

সিরিজা বললো, "ও রেশমী এলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। দিবাকরদা একটু চাপা স্বভাবের, তাই খুশীটা দেখাতে পারছে না তোমাকে। কাল যখন রেশমী আসবে, দেখবে দিবাকরদার কি অবস্থা হয়।"

রজত বললো, "রেশমীকে দিবাকরের সঙ্গে ভিড়িয়ে দিয়ে এবার আমার শান্তি কি বলো?"

সিরিজা চুপ।

রজত বললো, "দিবাকর কোনদিন রেশমীকে চুমুটাও খেতে পারেনি। আমি ওকে শেখাবো, কিভাবে মেয়েদের দিকে ঠোঁট বাড়িয়ে দিতে হয়।"

সিরিজা বললো, "কিভাবে? তুমি কি রেশমীর ঠোঁটে চুমু খাবে নাকি?"

রজত বললো, "পাগল? আমার সিরিজার এত সুন্দর ঠোঁট থাকতে আমি রেশমীকে চুমু খেতে যাবো কোন দুঃখে? ওকে শুধু সাহস আর ভরসা জোগাবো এই আর কি....."

সিরিজা বুঝতেই পারছিল, রজত ওর ঠোঁট দুটোকে কামড়ে ধরার জন্য একেবারে উসখুস করছে। শুধু সিরিজার চোখের সাথে দৃষ্টিটা একাকার করার চেষ্টা করছে। সিরিজার ঠোঁট যতক্ষণ রজতের ঠোঁটের কাছাকাছি রয়েছে, ততক্ষণই রজতের সারা শরীরে একটা তীব্র শিহরণ হচ্ছে। একবার সিরিজার ঠোঁটের মধ্যে রজত ঠোঁটটা চুবিয়ে দিলেই তখন আর ওকে সামলানো যাবে না। চুমু খেতে খেতে সিরিজার বুকে হাত দিয়ে টেপাটেপি শুরু করে দেবে। ঠোঁট থেকে শুরু করে তারপর সারা শরীরটায় চুমু খাবে। সিরিজাকে নগ্ন করবে, বিছানায় ফেলবে, উন্মুক্ত স্তন মুখে নিয়ে শিশুর মতন দুধ পান করবে। তারপর এমনই বাঁধভাঙা শ্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দেবে, দিবাকরের এই বিছানাতেই শুরু হবে তখন তীব্র রতিক্রীড়া। পাশের ঘরে বসে দিবাকর তখন যতই যন্ত্রণা আর ব্যাথা অনুভব করুক, সিরিজা বুঝলেও রজত কিছুতেই সেটা বুঝবে না। উন্মাদের মতন তান্ডব শুরু করবে সিরিজাকে নিয়ে। ঝড়ের গতিতে আঘাত করতে করতে শেষ পর্যন্ত কামনার সঙ্গম যখন স্তব্ধ হবে, ততক্ষনে দিবাকরের না প্রানটাই চলে যায়। সিরিজার দূঃখে দিবাকর কিছু করে বসলে, সিরিজার একটা আফসোস হবে। কিন্তু রজতের তাতে বিন্দুমাত্র আফসোস হবে না।

এত কিছু জেনেও সিরিজা রজতকে খুশি করতে দ্বিধা করলো না। চোখ বুজে রজতকে বললো, "খাও। কিন্তু বেশীক্ষণ ধরে চুষবে না। যদি দিবাকরদার এটা বাড়ী না হত, তাহলে তোমাকে আমি মানা করতাম না।"

সিরিজার অনুমতি আর সাড়া পেয়ে রজত যেন এবার ধরাকে সরা দেখতে লাগলো। দিবাকরকে নিয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, সেভাবেই সিরিজার ঠোঁট চুষে তীব্র কামনা মেটাতে লাগলো। চোষার রসনাটা যেন ক্রমশই বাড়তে শুরু করেছে। এত আরাম আর এত তৃপ্তি যেন কোনকিছুর মধ্যেই আর নেই।

মাথার মধ্যে কিলবিল করছে যেন কামনা আর ভূখটা। তীব্র আশ্লেষে চুমু খেতে খেতে রজত বললো, "আমি শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই সিরিজা, একেবারে জীবনের শেষ পর্যন্ত।"

জিভ আর ঠোঁটের ভরপুর খেলা চলছে। রজত বললো, "এই কাঙালটা যখন তোমাকে পেতে এত ছটফট করে, তুমি কি চাওনা বুক চিতিয়ে আমি ওদের সাথে লড়াই করি? কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না তোমাকে আমার কাছ থেকে। পৃথিবীর এমন কোন শক্তি নেই।"

সিরিজা ওই চোষার ফাঁকেই কিছু বলার চেষ্টা করছিল, রজত ওকে সুযোগ না দিয়ে আরও পাগলের মতন চুষতে লাগলো। ঠোঁটকে যেভাবে চুষছিল, যেন এক পিপাসু, লোভী। উপায় না দেখে সিরিজা পুরোপুরি সঁপে দিল। রজতের মনে হল, স্বর্গসুখ পেতে ও যখন এখানে ছুটে এসেছে, তখন সেই প্রাপ্তিযোগটা ঘটতে আর বেশী দেরী নেই। সিরিজা হয়তো নিজে থেকেই এবার রজতকে আহবান করে নেবে, বিছানায় শোবার জন্য।

-- "তোমার এই আবেদন, উজাড় করা ভালোবাসা কি ভোলা যায়?"

সিরিজার ঠোঁটের মধ্যে নিজের জিভটা ঢোকাচ্ছে আর বার করছে, রজত বললো, "আমি খুব উত্তপ্ত হয়ে যাচ্ছি সিরিজা। তোমাকে ছেড়ে এক্ষুনি আমি যেতে পারবো না, আজ আমি সারাদিন এখানেই থাকবো। তোমাকে আদর করবো। দিবাকর কিছু ভাবলেও আমার কিছু এসে যায় না।"

সিরিজা বললো, "এরকম ভাবে বোলো না। দিবাকরদা যদি মেনে নিতে না পারে?"

রজত ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলো, আবার সিরিজার ঠোঁট কামড়ে ধরে বললো, "কেন পারবে না? আমার যে তোমাকে ছেড়ে থাকা কষ্টকর। আমি পারবো না। আমি আজ এখানেই থাকব। কোথাও যাবো না।"

সিরিজা বুঝতে পারছিল রজতের হাত এবার ওর বুকে থাবা বসিয়েছে। আসতে আসতে ব্লাউজ সমেত করায়ত্ব করার চেষ্টা করছে সিরিজার ভারী স্তনের একটাকে। কামলীলায় মত্ত হওয়ার মতন ওর বুক টিপছে আর আয়েশ করে চুমু খাচ্ছে ঠোঁটে। যেভাবে ক্ষেপে উঠেছে রজত, ওকে থামানো এবার সত্যিই মুশকিল। রজত যেন আর অপেক্ষা করতে পারছে না।

মরীয়া হয়ে ও সিরিজাকে বললো, "চলো না সিরিজা, আমরা একটু খাটে যাই, তোমার বাচ্চাটা তো ঘুমোচ্ছে। আমরা একপাশে একটু জড়াজড়ির খেলা খেলব। দিবাকর ওঘরে বসে আছে। ও কিচ্ছু এখন মনে করবে না।"

সিরিজা বললো, "দিবাকরদা কিছু মনে করবে না, সে আমিও জানি। কিন্তু এর বেশী আর কিছু কোরো না এখন। আমাদের সুখেনের ব্যাপারটা নিয়ে একটু বেশী ভাবতে হবে এখন।"

রজত সিরিজার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বললো, "ইস তুমি ঐ হতভাগাটার নাম নিলে, আর আমার সুখে আবার এখন বাঁধা পড়লো।"

সিরিজা রজতের গালে হাত রেখে বললো, "কি হয়েছে তাতে? আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি? আমি তো আছিই। তুমি ওকে কিভাবে তাড়াবে, সেটা একবারও চিন্তা করেছো?"

রজত বললো, "চিন্তা আবার কি? ওকে গিয়ে বলব, তোমার বউ দিবাকরের সাথে ভেগে গেছে।"

সিরিজা অবাক হয়ে বললো, "সত্যি?"

রজত বললো, "সত্যি তো নয়। কিন্তু এমন ভাবে কথাটা বলতে হবে, যাতে সত্যি মনে হয়।"

সিরিজা বললো, "সেটা কিরকম?"

রজত বললো, "আমি এখান থেকে চলে যাবার পর, তোমরা খুব বেশী সময় নেবে না। দিবাকরকে বলে দিচ্ছি, ও তোমাকে নিয়ে কোন হোটেলে চলে যাক। আমি বাড়ী গিয়ে বলব, দিবাকরের বাড়ীতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখলাম তালা মারা। মনে হয় দিবাকর সিরিজাকে নিয়ে পালিয়েছে।"

সিরিজা বললো, "তারপর?"

রজত বললো, "তারপর আবার কি? ও যদি বিশ্বাস না করে, ওকে বলব, চলো আমার সাথে। তাহলেই বুঝে যাবে আমি সত্যি বলছি কিনা? তোমার ঐ সুখেনটা তখন আমার সাথে আসবে। এখানে এসে দেখবে, সত্যি তোমরা নেই। ও তখন ফিরে যাবে।"

- "আর তুমি?"

-- "আমি আগে তোমার বরটাকে সাইজ করবো। তারপর দোলনকে ভাগাবো ওখান থেকে।"

- "কিভাবে?"

-- "ওকে বলবো, দেখেছো তো কত ঝেমেলা। তুমি সিরিজাকে নিয়ে এত হিংসে করছিলে, আর দেখো সিরিজাই শেষ পর্যন্ত আমাকেই ছেড়ে চলে গেল। আর কি ওকে ফিরে পাব আমি? সিরিজাকে ছাড়া আমার জীবন যে একেবারে অচল হয়ে গেল। এবার তুমিও তাড়াতাড়ি বিদায় হও। অনেক আমার মাথা খেয়েছ, এবার আমাকে মুক্তি দাও। কারণ আমি এখন এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবো।"

সিরিজা বললো, "দোলন যদি শেষ পর্যন্ত না মানে?"

রজত বললো, "তাহলে ওর কপাল মন্দ। কারণ ঐ বাড়ীতে ও তো আর একা থাকতে পারবে না। আর রীতাও চাইবে সেটা। এতক্ষনে মনে হয় সব জেনে গেছে।"

সিরিজা বললো, "আর রেশমী এলে?"

রজত বললো, "রেশমী আবার আমাকে ফোন করবে। কাল যখন ও আসবে, আমরা চারজনে একজায়গায় মিট করবো। তুমি আমি রেশমী আর দিবাকর। তারপরে ঠিক করে নেবো, কোথায় আপাতত যাওয়া যায়। রেশমীকেও ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতে হবে।"

সিরিজা বুঝলো রজত খুব অল্পসময়ের মধ্যেই খাটিয়েছে বুদ্ধিটা। রজতকে বললো, "দিবাকরদাকে এখুনি ব্যাপারটা বলো, যা করার তাহলে তাড়াতাড়িই করতে হবে।"

রজত সায় দিল। সিরিজা ঘরের দরজাটা খুললো। পাশের ঘরে মুখটা বাড়ালো। দেখলো দিবাকর যেখানটায় বসেছিল, সেখানে আর নেই।

রজত বললো, "এই তো একটু আগে ছিল। তাহলে গেল কোথায়?"

ওরা দেখলো সদর দরজাটাও বাইরে থেকে বন্ধ। যেন ভেতরে ওদের তালাবন্দী করে রেখে দিবাকর ভ্যানিস হয়ে গেছে ওখান থেকে।
 
।। ছত্রিশ ।।

কিছুক্ষণ আগেও যে লোকটা এখানে ঠায় বসেছিল, দুম করে এভাবে উধাও হয়ে যাওয়াতে রজত বেশ অবাক হল। দরজার কড়াটা দুহাতে ধরে টানাটানি করার অনেক চেষ্টা করলো। দেখলো কিছুতেই দরজা খুলছে না। মনে হচ্ছে বাইরে থেকে তালা মেরে দিয়ে ভেগে গেছে দিবাকর।

প্রবল ভাবে টানাটানি করেও যখন রজত দরজাটা খুলতে পারলো না ও হতভম্ব হয়ে তাকালো সিরিজার দিকে। দেখলো সিরিজার মুখেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। ভাবছে, কি জানি সামনে মনে হয় কোন বিপদ আসতে চলেছে এবার। অবাক হয়ে রজত সিরিজাকে বললো, দিবাকর এভাবে আমাদের ভেতরে আটকে রেখে চলে গেল কেন? ওর কি সমস্যা? এটা তো ঠিক করলো না।

সিরিজা বললো, "আমি জানি ও কেন আমাদের এভাবে আটকে রেখে গেছে।"

রজত বললো, "তুমি জানো? কারনটা কি?"

সিরিজা জবাব দিল না। রজতকে বললো, "তুমি ওকে ফোনটা করবে? মোবাইল নিশ্চয়ই কাছে আছে। কোথায় গেছে, তাহলে বোঝা যাবে।"

রজত বুঝলো, সিরিজা একদম ঠিক কথা বলেছে। এখুনি দিবাকরকে ফোনটা করা দরকার। তাহলেই সব বোঝা যাবে। ও তাড়াতাড়ি মোবাইলটা পকেট থেকে বার করে দিবাকরকে ধরার চেষ্টা করলো। দেখলো, দিবাকরের ফোন বেজেই চলেছে, কিন্তু ও ফোন ধরার নামই করছে না।

দুবার, তিনবার এভাবে অনেকবার ট্রাই করলো রজত। কিন্তু প্রতিবারেই নো রেসপন্স। ফোন বেজে যায়, অথচ দিবাকর ফোন ধরে না।

মাথায় যেন খুন চেপে যাচ্ছে, রজত বললো, "শালা আমার সাথে নখরা করছে নাকি? আরে ফোনটা তো ধর উজবুক। কেন এভাবে আমাদের আটকে রেখে গেলি, সেটা জানতে হবে তো?"

সিরিজা দেখলো রজতের চোখমুখ ঘামতে শুরু করেছে। যেন সাংঘাতিক একটা কিছু কান্ড ঘটাতে চলেছে দিবাকর। রজত সেই আশঙ্কাই করছে।

সিরিজা বললো, "কি হল? তুমি খুব ভয় পাচ্ছো, তাই না?"

রজত বললো, "ভয় ঠিক নয়, সিরিজা। তবে দিবাকরের এমন আচরণটা সন্দেহজনক। কাল রাতের পর থেকেই ও এরকম করছে। সকালেও আমার ফোন ধরলো না। আবার এখনও তাই করছে। কি ব্যাপারটা কি? তুমি সব জানো, তাই বলছিলে। কি হয়েছে? কি ব্যাপার?"

সিরিজা বললো, "দিবাকরদা আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে।"

কথাটা শুনে একেবারে থম মেরে গেল রজত। সিরিজার মুখ থেকে ও এই কথাটা শুনছে, বিশ্বাসই করতে পারছে না। চোখ দুটো বড় বড় করে বললো, "কি বলছো তুমি? দিবাকর তোমাকে....."

সিরিজা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে, রজত বললো, "তুমি মেনে নিতে পারলে এটা? ও তোমাকে ভালোবাসতে চাইল, আর তুমি?"

সিরিজা বললো, "আমাকে তুমি বাধ্য করেছো।"

রজত বললো, "কি বলছো তুমি সিরিজা? আমি তোমাকে বাধ্য করবো? কেন? কেন? কেন? মনে নেই? এই দিবাকরকেই তুমি একদিন ঘৃণার চোখে দেখেছিলে। আমার ঘরে মদ খেয়ে সেদিন লোলুপ দৃষ্টিতে দেখেছিল তোমাকে। তুমিই বলেছিলে, তোমার বন্ধু লোভী হয়ে গেছে আমাকে দেখে। আজ তুমি বলছো, দিবাকর তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে? তোমার প্রচ্ছন্ন মদত, সায়, সবই তাহলে কাজ করেছে বলো? দিবাকরকে সকালে এসে তাহলে আমার চিনতে ভুল হয় নি। ও আমতা আমতা করছিল। রেশমীর খবরটা ওকে শুনিয়ে মনে হল, ঠিক খুশি করতে পারলাম না।"

রজত কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, "আমারই জানকে মন দিয়ে বসে আছে, তাহলে রেশমী এখানে এসে কি করবে? শুধু শুধু। ওকে তাহলে না করে দিই।"

রজত যেন হঠাৎই ভীষন আপসেট। ও তখনই আবার ফোন মেলাতে যাচ্ছিলো। সিরিজা বললো, "কাকে করছো?"

রজত বললো, "রেশমীকে।"

- "কেন?"

-- "ওকে মানা করে দিতে হবে না? দিবাকরের যে রেশমীতে মন নেই,সেটাতো জানিয়ে দেওয়া দরকার।"

রজত চেয়ারের ওপর দুম করে বসে পড়ে রেশমীকে লাইন মেলানোর চেষ্টা করছে। সিরিজা ছুটে গেল ওর কাছে। মোবাইলটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বললো, "তোমার কি মাথা খারাপ?"

রজত বললো, "কেন?"

- "আমার কথাটা তুমি পুরো শুনলে না। আর এখনি রেশমীকে ফোন মেলাতে চাইছো? কি হবে এসব করে?"

এই প্রথম রজত মুখ থেকে একটা হাসি বের হল, যেটা খুব কষ্ট করে ওকে হাসতে হচ্ছে। ভেতরে জমাট বাঁধা একটা বেদনা। দিবাকর কি করতে চাইছে তার জন্য ও বিচলিত নয়, দূঃখটা যেন সিরিজার জন্য হচ্ছে। দিবাকরের ওকে ভালোলাগাটা সিরিজা মেনে নিল? কি করে? কেন? হাসতে হাসতেই বললো, "আমি কি আর এমনি এমনি করতে চাইছি সিরিজা, আমার সব জানা হয়ে গেছে।"

সিরিজা বললো, "সত্যি করে বলো তো? আমাকে কেউ মনে প্রানে চাইলে তুমি কতটা কষ্ট পাও?"

রজত বললো, "অনেক। আমি ছাড়া তোমাকে কেউ মনে প্রানে চাইতে পারে না।"

সিরিজা বললো, "আর আমি যদি দেখি, তুমি আমাকে ভুলে দোলনকেই খুশি করতে চাইছো, তাহলে কি আমার কষ্ট হয় না?"

রজত বুঝতে পারছিল, কাল থেকে সিরিজার মনটাও কেন তেতো হয়ে রয়েছে ওর প্রতি। দিবাকরের প্রতি একটা টান অনুভব করেছে সিরিজাও, এর জন্য দায়ী রজতই।

রজত বললো, "বিশ্বাস করো সিরিজা। আমি দোলনকে সেভাবে মাথায় চড়তে দিই নি। আমি তোমার জায়গায় দোলনকে কিছুতেই বসাতে পারি না। ওর কি আছে বলো? না আছে রূপ, না আছে গুণ। ও তো এখানে এসেছে, আমাকে আর তোমাকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য। সব জেনেই ও এখানে এসেছে। ওকে খুশি করার জন্য আমি তোমাকে দিবাকরের কাছে পাঠাই নি। আমার শ্বশুড় যাতে আজ সকালে এসে তোমাকে দেখতে না পারে, তার জন্যই এই বন্দোবস্ত করেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে দেখছি সব কিরকম অন্যরকম। তুমিও তাই। দিবাকরও তাই..... তাই ভাবছিলাম রেশমীকে।"

সিরিজা বললো, "দোলনকে তুমি কাল পাশে নিয়ে শুয়েছিলে? কি করলে ওকে নিয়ে?"

রজত পুরো হতভম্ব। মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। গলার স্বর আটকে গেছে। সিরিজা এমন ভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে, যেন একটা ঘৃণা, বিদ্বেষ ফুটে উঠছে ওর ভেতর থেকে। রজতকে বললো, "তুমি এটা করতে পারলে?"

রজত আমতা আমতা করে বলতে চাইছিল, "না সিরিজা..... আমি....."

সিরিজা বললো, "আমি সব জানি। তুমি কাল দোলনের সাথে কি করেছো।"

রজত চুপ। সিরিজা বললো, "ভাবছো কি করে জানালাম? তাই তো? "

-- "নিশ্চয়ই দিবাকর তোমাকে কিছু বলেছে। ও তো চাইবেই আমাকে তোমার কাছে খারাপ করতে। তোমাকে যে মন দিয়ে বসে আছে। তোমার মন পেতে হবে না?"

সিরিজা বললো, "আমি সব জানি। দিবাকরদা আমাকে কিছু বলেনি। কিন্তু তুমি যে এটা করবে, আমার জানাই ছিল।"

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে সিরিজার কাঁধ দুটো ধরে একবার ঝাঁকিয়ে রজত বলার চেষ্টা করলো, "না না সিরিজা। আমি সেই রজত আর নেই। কাল যা করেছি, শুধু তোমার জন্য। দোলনকে খুশি করার কোন ইচ্ছাই ছিল না আমার। আমি শুধু চেয়েছিলাম ওর পাপী মন, কামনা এবার শেষ হোক। দোলনকে চিরতরে বিদায় করে দেবো। আর তোমাকেও ফিরিয়ে নিয়ে আসবো নিজের ঘরে। শুধু তো একরাতের অপেক্ষা। সকাল হতেই ছুটে এসেছি তোমার জন্য। ও অনেক বাঁধা দেবার চেষ্টা করেছিল আমায়। আমি শুনিনি। দোলনকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। তুমি তো দেখেছো, ওকে চড় মারতেও দ্বিধা করিনি আমি। তবে কেন এত বিরূপ মন সিরিজা তোমার? সত্যি করে বলো না। তুমি কি দিবাকরকে মন থেকে চাও? না দিবাকরই তোমাকে উল্টোপাল্টা বলে, তোমার মন বিষিয়ে দিয়েছে।"

সিরিজা কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে তারপর রজতকে বললো, "ও যদি তোমার ফোন না ধরে, তাহলে ওকে একটা মেসেজ পাঠাও। লেখো, কোথায় তুমি? যদি আমার সাথে কথা বলতে না চাও। তাহলে অন্তত সিরিজার কথা ভেবে ফোনটা ধরো। ও তোমার সাথে কথা বলতে চায়।"

রজত সিরিজার কথা মতন তাই করলো। একটা মেসেজ পাঠালো দিবাকরকে। লিখলো, "প্লীজ দিবাকর। অন্তত সিরিজার কথা ভেবে ফোনটা ধরো।"

ঠিক যেন তারপরেই ম্যাজিকের মতন কাজটা হল। রজত দেখলো, এবার দিবাকরই ঘুরিয়ে ফোনটা করেছে, সিরিজার সাথে কথা বলার জন্য।

রজতের হাত থেকে ফোনটা আবার কেড়ে নিয়ে সিরিজা বললো, "তুমি কথা বোলো না। আমি কথা বলছি।"

- "হ্যালো।"

-- "হ্যাঁ সিরিজা, বলো শুনছি।"

- "কোথায় তুমি?"

-- "এই একটু বেরিয়ে এসেছিলাম আর কি?"

- "আমাদের কে এভাবে বন্ধ করে রেখে গেলে?"

-- "না সিরিজা। তোমরা ভেতরে কথা বলছিলে, আমি দুবার দরজাটা ধাক্কা দিলাম, খুললো না। ভাবলাম, ব্যস্ত আছো মনে হয়। আমার একটু বেরুবার দরকার ছিল। তোমাদের না বলেই বেরোতে হল। দরজাটা লাগিয়ে এলাম, যাতে বাইরের কেউ ঢুকে পড়তে না পারে।"

- "তুমি এভাবে আমাদের আটকে রেখে কেন গেলে দিবাকরদা? একবার বলেও তো যেতে পারতে?"

সিরিজা দেখলো দিবাকর চুপ। উল্টোদিক থেকে কোন সাড়া দিচ্ছে না। রজতও হাঁ করে শুনছে। দেখছে সিরিজা দিবাকরকে কি বলে।

ফোনটা কানে ধরে শোবার ঘরে আবার চলে এল সিরিজা। দরজাটা আলতো করে ভেজালো। তারপর দিবাকরকে বললো, "বিশ্বাস করতে পারো নি আমাকে তাই না?"

দিবাকর জবাব দিচ্ছে না।

সিরিজা বললো, "ওকে যদি আমি না বলে দিতাম, মুখের ওপর। কি হত বুঝতে পারছ? সটান চলে যেত বাড়ীতে। ওখান থেকে সুখেনকে ধরে নিয়ে চলে আসতো এখানে। তারপরে? আমি কোথায় যেতাম? কে পেত আমাকে? তুমি না রজত? তুমি কি এতই বোকা? এটুকুও বোঝো না। আমি তো বাথরুম থেকে সব শুনেই ঠিক করলাম, রজতকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না। তাহলে ওর রাগ হবে। শোধ তুলতে পারে আমার ওপর। আর তুমি অবুঝের মতন চলে গেলে? ভাবলে না, কেন তোমাকে ওঘরে বসিয়ে আমি রজতকে ভেতরে টেনে নিলাম? তুমি ভাবলে, সিরিজা তোমার সাথে প্রতারণা করেছে। যা বলেছে, মিথ্যে বলেছে। দিবাকরদা তুমি?....."

ফোনটা রাখার আগে সিরিজা বললো, "তুমি যেখানেই থাকো, শিগগীর এসো। ও এখনও কিছু বুঝতে পারেনি। এরপরে কি করা যায়, আমাদেরকে তিনজনে বসেই ঠিক করতে হবে। আমি তোমারই থাকবো সিরিজা, রজতের কাছে আমি আর ফিরে যাবো না।"

- "কি গো, তুমি আসছো তো? আমার কথার উত্তর দিচ্ছো না?"

ওপ্রান্ত থেকে দিবাকর বললো, "হ্যাঁ, আমি আসছি।"

ট্যাক্সিটা রজতের বাড়ীর খুব কাছাকাছি এসে পড়েছিল। দিবাকর হঠাৎ ট্যাক্সিওয়ালাকে বললো, "আপনি গাড়ীটা ঘুরিয়ে নিন।"

ট্যাক্সি ওয়ালা বললো, "কেন? যেখানে যাবার যাবেন না?"

দিবাকর বললো, "না, আমি যেখান থেকে এসেছি, সেখানেই ফিরে যাবো।"

-- "সেকি কেন?"

- "আমি মত পাল্টে ফেলেছি।"

ট্যাক্সিওয়ালা অগত্যা গাড়ীটা ঘুরিয়ে নিল। দিবাকর নিশ্চিন্ত মনে একটা সিগারেট ধরালো। ওদিকে রীতা ঘনঘন পায়চারী করছে রজতের ফ্ল্যাটের ভেতরে। শ্বশুড় মশাই বসে আছেন। সুখেন মাটিতে বসে একটা বিড়ি ধরিয়েছে। ফুক ফুক করে টানছে। দোলন দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু তখনও জবুথবু। চারজনের কেউই বুঝতে পারলো না। রজত নয়, একটু আগে দিবাকরই আসছিল ঐ ফ্ল্যাটের দিকে। যাস্ট পাঁচ মিনিট সবে হয়েছে। দিবাকর আবার গাড়ীটা ঘুরিয়ে রওনা দিয়েছে নিজের বাড়ীর দিকে। এখন আর ও কান ভাঙাতে আসবে না। কিন্তু রজত যে আদৌ আসবে কিনা, সেটাও বোঝা যাচ্ছে না।
 
।। সাঁইত্রিশ ।।


রীতা ওর বাবাকে বললো, "আমার তো মনে হচ্ছে না রজত এখন আসবে। লোকটার সাথে যে কদিন ঘর করেছি, তাতে ওর চরিত্রটা বুঝতে আমার বাকী নেই। ও কি বুঝছ? জেনে বুঝে সিরিজাকে এই লোকটার হাতে তুলে দেবে? সিরিজাও যদি সেরকম মেয়ে না হয়, ও কিছুতেই আসবে না এখানে। হয়তো অন্য কোথাও পালিয়ে যাবে।"

শ্বশুড়মশাই মেয়ের কথা শুনে একবার সুখেনের দিকে তাকালেন। সুখেনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "আমারও তো তাই মনে হচ্ছে। শুধু শুধু বউয়ের ওপর মায়া করে লাভ নেই সুখেন। সিরিজার আশা তুমি ছেড়ে দাও।"

সুখেন ভুরু কুঁচকে তাকালো শ্বশুড় মশাইয়ের দিকে। বিড়িতে একটা টান দিয়ে বললো, "পালিয়ে যাবে কোথায়? যেখানেই যাবে, আমি ঠিক পিছু নেবো। খুঁজে ঠিক বার করবো। যদি পাতালে থাকে তাও।"

হতভাগা স্বামীর কপালে সিরিজা যে আর নেই, সেটা ওকে কে বোঝাবে? শ্বশুড় মশাই তাও বললেন, "রজত যদি ওকে এখানে নিয়ে আসে, তাহলে তো তোমার কপাল খুবই ভালো বলব। কিন্তু আমার জামাইটিকে তুমি তো চেনো না। ও তোমার ভয়ে ঘাবড়াবার লোক নয়। আমার মেয়ে ওর সাথে ঘর করেছে, রজতকে ও খুব ভালো করেই চেনে।"

সুখেন বললো, "আমার বউটাই তো যত নষ্টের গোড়া। আপনার জামাইরের মাথা খেয়েছে, এখন কার মাথা খাচ্ছে কে জানে? ওর খুব কুটকুটানি। সব পুরুষমানুষগুলোকে জালে ফাসাতে চায়। আমাকে ফেলে পালিয়ে আসলো। তারপর আপনার জামাইকে পাকড়াও করলো। এখন দেখেন, আবার কাকে ধরেছে কে জানে?"

রীতা বললো, "মেয়েটাকে সেদিন দেখেই বুঝেছি, ওর মধ্যে একটা আলাদা চটক আছে। রজতকে বশে আনতে ও বেশী সময় নেয় নি এরজন্য। সেদিন ওর কথা শুনেই আমার কেমন একটা সন্দেহ হয়েছিল। আর তুমিও বাপু। করলেই যখন ধরে পেতে অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করতে পারলে না? সিরিজাকে তো দেখলাম। ও থোরি থাকবে তোমার সাথে? কি আছে তোমার? বউ তো তোমার অনেক সুন্দরী। ওর কপালে ঠিক অন্যপুরুষ জুটে যাবে।"

সুখেন একটু খেঁকিয়ে বললো, "মুখ সামলে কথা বলেন, দিদিমনি। আমার বউয়ের স্বভাব আমি জানি বলেই তো ওকে বেঁধে রাখতে চাই। এবারে যদি পাই, আর ছাড়ছি না। সোজা নিয়ে গিয়ে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে দেবো।"

দোলন ওখানে চুপ করে দাঁড়িয়েছিল। ওদের কথা শুনে মনে মনে সুখেনকে বললো, "সিরিজাকে খাঁচায় বন্দী? এ জীবনে তোমার আর সে আশা পূরণ হচ্ছে না। পাখী পালিয়ে যাবে এবার ফুরুত করে।"

শ্বশুড় মশাই এবার মেয়েকে বললেন, "রীতা, আমাদের আর এখানে বসে থেকে কোন লাভ নেই। রজত আসুক। সুখেন ওর ঝেমেলা মেটাক। সিরিজা কি করবে, সেটা সিরিজাই বুঝুক। তুই আমি চল, এর মধ্যে থেকে আর কোন লাভ নেই।"

রীতা বললো, "বাপী দাঁড়াও। ওর দশাটা কি হবে, সেটা একবার দেখবে না? আমিও তো দেখতে চাই, সিরিজাকে ও কোথায় রেখে আসে।"

শ্বশুড়মশাই বললেন, "কি হবে আর এর মধ্যে পড়ে থেকে? তোর জন্য আমি শুধু চোরের মতন আসছি বারেবারে। রজত মুখ ঝামটা দিয়ে কথা বলে। আমারও ভালো লাগে না। শুধু শুধু তুইও ওকে শুধরাবার জন্য পড়ে আছিস। যে নিজেকে পাল্টাতে চায় না। তাকে কি জোর করে পাল্টানো যায়?"

রীতা বললো, "বাবা, আমি ভাবছি, আর তোমার কাছে ফিরবো না। আজ থেকে এখানেই থেকে যাবো।"

শ্বশুড়মশাই পুরো হতভম্ব মেয়ের কথা শুনে। রীতাকে বললেন, "কি বলছিস তুই? তোর মাথা ঠিক আছে?"

রীতা বললো, "ঠিকই তো বলছি। আমি ওকে ছেড়ে চলে গেছিলাম। আজ থেকে ভাবছি, কষ্ট হলেও সব মেনে নেব। আমি যেচে না গেলে ও তো জোর করে তাড়াতে পারবে না এখান থেকে। দেখি না শেষপর্যন্ত কি হয়?"

দোলন ভালোমতই বুঝতে পারছিল এ সবই সিরিজার কেরামতি। করিশমা একেই বলে। প্রতিদ্বন্দীতা করবে বলে ও নিজেও এখানে এসেছিল। এখন দাদাবাবুর বউ রীতাও আবার আসরে নামতে চাইছে কোমর বেঁধে। সিরিজাকে সত্যিই হারাতে বৌদিমনি কি পারবে? না এত কষ্ট সবই বৃথা যাবে।

রজত দেখলো ভেতরের ঘর থেকে সিরিজা বেরোলো। হাতে ওর রজতের মোবাইলটা। দিবাকরের সাথে শেষমেষ কি কথা হয়েছে রজত জানে না। কিন্তু সিরিজার মুখের ভাব দেখে স্পষ্ট। দিবাকরকে মনে হয় ও রাজী করাতে পেরেছে।

রজত বললো, "কি কথা হলো?"

সিরিজা বললো, "হ্যাঁ। বললো, আসছি এখুনি।"

-- "কোথায় গিয়েছিল, জিজ্ঞেস করলে না?"

- "করেছিলাম। বললো, একটু দরকারে বেরিয়েছি। তুমি ফোন না করলেও আমি চলে আসতাম এখুনি। তোমাদেরকে আমি আটকে রেখে আসিনি। একটু নিরিবিলিতে রেখে এসেছিলাম যাতে সুযোগটা পুরোপুরি নিতে পারো।"

রজতের যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। সিরিজাকে বললো, "সত্যি দিবাকর একথা বললো? না তুমি আমার মন রাখতে এ কথা বলছো।"

সিরিজা বললো, "কই না তো। আমাকে তো তাই বললো।"

মাথায় হাত দিয়ে যেন চুল ছেঁড়ার মত অবস্থা রজতের। সিরিজাকে বললো, "ও পাগল হয়ে গেছে তোমার জন্য। আমি বুঝতেই পারছি। এবার দিবাকরেরও একটা ব্যবস্থা আমাকে করতেই হবে। কখনও বলে, আমি তোমাকে ভালোবাসি, আবার কখনও বলে তুমি রজতকে নিয়েই সুখে থাকো। একি মস্করা হচ্ছে না কি আমার সাথে? সত্যি কথা বলোতো, তোমরা দুজনে মিলে কি চাইছো? আমি ফিরে যাই তাহলে বাড়ীতে। সুখেনকে বলি, সিরিজা নেই আমার কাছে। ও অন্য কাউকে ভালোবেসে, তার সাথে চলে গেছে।"

মোবাইলটা হাতে নিয়ে সিরিজা একদৃষ্টে চেয়ে আছে রজতের দিকে। শেষ মূহূর্তে, দুই পুরুষের কাকে ডেকে নেবে কাছে যেন মনস্থির করতে পারছে না। একদিকে দিবাকর, আর একদিকে রজত। মাঝখানে সিরিজা। কি করবে ও? তাহলে কি.....

চেয়ার ছেড়ে আবার উঠে দাঁড়ালো রজত। এবার সিরিজাকে জড়িয়ে ধরলো দুই বাহু দিয়ে প্রবল শক্তিতে। দিবাকরের প্রতি ওর বিশ্বাস নেই। কিন্তু সিরিজাকে শেষবারের মতন বিশ্বাস করতে চায়। বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে সিরিজাকে চুমুর প্রলেপে ভরিয়ে দিতে চাইছে। প্রথমে গলাতে বেশ কয়েকবার চুমু খেয়ে সিরিজাকে অস্থির করলো রজত। দুহাত দিয়ে ইচ্ছে থাকলেও রজতকে ছাড়াতে পারছে না সিরিজা। রজতের চোখে মুখে তৃপ্তির রেশ। ভাবছে, প্রতিদানে যদি জড়তা আসে, তাহলে বুঝতে হবে সিরিজা ওকে আর চায় না। এক একটা চুমু দিয়ে ও দেখছে, সিরিজা কিভাবে আচরণ করে। প্রথমে গলায় বেশ কয়েকটা চুমু খেলো রজত।

সিরিজা শুধু বললো, "কি করছো? দিবাকরদা কিন্তু এসে পড়বে এখুনি।"

-- "আসুক না, আসুক। সিরিজাকে আমি চুমু খাচ্ছি, দিবাকর এসে পড়লেই বা ক্ষতি কি?"

ঠোঁটটা মুখের মধ্যে পুরে এমন ভাবে চুষতে শুরু করলো, সিরিজা চোখ বন্ধ করে শুধু দাঁড়িয়ে রইলো। ঠোঁটটা ঠোঁটের মধ্যে পাগলের মতন খেলাতে চাইছে রজত। সিরিজা স্থির। কিন্তু রজত চাইছে ঠোঁটে ঠোঁট নিয়ে সিরিজাও একটু নড়াচড়া করুক। দুহাত দিয়ে রজতের মাথাটা ধরুক। পাল্টা চুমুর তাগিদটা সিরিজা সেভাবে না দেখালে যেন রজতেরও মন ভরছে না। যেভাবে সিরিজা চুমু খায় রজতকে, এটা ঠিক সেভাবে নয়। যেন একপেশে হয়ে যাচ্ছে রজতের কাছে।

-- "কি হল সিরিজা? তুমি কি সত্যি চাওনা আর আমাকে?"

রজত ঠোঁটের ফাঁকটা আলগা করে দেখলো, সিরিজা সেই চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু কোন আবেগ বা উত্তেজনার রেশ যেন অবশিষ্ট নেই।

ধরা পড়ার ভয়ে সিরিজা বললো, "না..... আমি....."

-- "কি আমি?"

- "আমি একটা কিছু চিন্তা করছিলাম।"

-- "কি চিন্তা করছিলে?"

- "তুমি রাগ করবে না বলো।"

-- "কেন রাগ করবো? কি হয়েছে?"

- "দিবাকরদা আমাকে বলেছিল, শিমূলতলায় নিয়ে যাবে। ওখানে দিবাকরদার আত্মীয়ের এক বাড়ী আছে। আজই আমরা চলে যেতাম, তুমি না আসলে।"

কিছুক্ষণ চুপ করে হতভাগার মতন দাঁড়িয়ে রইলো রজত। মুখটা গম্ভীর করে সিরিজাকে বললো, "দিবাকর তোমাকে শিমূলতলায় নিয়ে যাবে। কেন? আমাকে না জানিয়ে নিয়ে যাবে। কেন? কারণটাই তো আমি বুঝতে পারছি না।"

সিরিজা বললো, "ভালোই তো হয়। এখান থেকে যদি দূরে কোথাও চলে যাই। তুমিও তো বলছিলে।"

রজত বললো, "তা বলে শিমূলতলায় কেন যেতে হবে? আর কি যাবার জায়গা নেই? আমি দিবাকর এলে জিজ্ঞাসা করবো। কেন তুমি সিরিজাকে শিমূলতলায় নিয়ে যাবে বলেছো?"

সিরিজা রজতের ঠোঁটের ওপর হাতটা রাখলো। ইশারা করে বললো, "না, তুমি কিছু বলবে না। আমার দিব্যি খেয়ে বলো।"

রজত দিব্যি না খেয়ে ঠোঁটের ওপর রাখা সিরিজার আঙুল গুলো চুষতে লাগলো মনের আনন্দে। সিরিজাকে বললো, "গেলে আমিও তো যাবো নিশ্চয়ই। এক কাজ করলে হয় না? চলো আমরা বরং চারজনেই ওখানে যাই। তুমি, আমি, দিবাকর আর রেশমী।"

সিরিজা বললো, "না, তুমি না। শুধু আমি, দিবাকরদা আর রেশমী।"

রজত অবাক হয়ে গেল। বললো, "মানে?"

সিরিজা বললো, "তুমি কয়েকদিন ঐ ফ্ল্যাটেই থাকবে। ওখান থেকে নড়াচড়া করবে না। দুদিন পরে ব্যাপারটা থিতিয়ে যাবে তখন তুমি আসবে।"

রজত বললো, "বারে? আমি বসে বসে ফ্ল্যাটটাকে একা পাহাড়া দেবো নাকি? আর তুমিই বা ওখানে গিয়ে কি করবে? দিবাকর বরং রেশমীকে নিয়ে যাক।"

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সিরিজা বললো, "আমি না গেলে এখন কোথায় থাকবো? তোমার ফ্ল্যাটে তো আর ফিরতে পারবো না। তাহলে ওখানে ধরা পড়ে যাবো। দোলনকেও ভাগাতে তোমার দু তিনদিন সময় লাগবে। তারপর তুমি না হয় শিমূলতলায় চলে আসবে।"

কথাগুলো কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছিল না রজতের। সিরিজাকে বললো, "সিরিজা তোমার মনে কি আছে স্পষ্ট করে বলো। আমি কিছুতেই এগুলোর মানে উদ্ধার করতে পারছি না। একবার ভাবছি, তুমি যা বলছো তা ঠিক। কখনও ভাবছি সিরিজা আর আগের মত নেই। কখনও ভাবছি, জেনেশুনেই তুমি আমাকে সত্যি কথাটা লুকোচ্ছো। যার কারণটা আমি এখনও ধরতে পারছি না।"

সিরিজার কাছ থেকে বেশ কিছুটা দূরে সরে গিয়ে রজত আবার একটা সিগারেট ধরালো। সিরিজার দিকে ফিরে বললো, "না, এবার আমার কাছে সব স্পষ্ট। আমি বুঝতে পেরেছি, তোমার মনে কি আছে। তুমি দিবাকরকে মন দিয়ে বসে আছো।"

সিরিজার দিকে এমন ভাবে তাকালো রজত, যেন সন্দেহটা দানা বাঁধতে বাঁধতে এবার শরীরে পুরোপুরি জাঁকিয়ে বসেছে। মনে মনে একবার হতাশ ভাবে বললো, "তাহলে কি মনের সাথে শরীরটাও তুমি দিবাকরকে দিয়ে বসে আছো সিরিজা?"

সিরিজা দেখছে রজত ওর দিকে একবার তাকিয়ে আর ভালো করে তাকাতে পারছে না। বিশ্বাস পুরোপুরি চলে গেলে যেমন মানুষ মুখ ঘুরিয়ে নেয়। রজত ওভাবেই মুখটা এবার ঘুরিয়ে নিয়েছে অন্য দিকে। চোখে মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। সিরিজার দিকে ভালো করে তাকাতে যেন ঘেন্না হচ্ছে রজতের। ভাবছে, সিরিজা এখন আর রজতের নেই। পুরোপুরি দিবাকরের হয়ে গেছে।

রজতের সিগারেটটা অন্যমনস্কতার দরুন হাত থেকে পড়ে গিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। রজত ওটা মাটি থেকে তোলার চেষ্টা করতে লাগলো। দেখলো, সিরিজা এবার ছুটে চলে এসেছে ওর দিকে। রজতকে সিগারেট তুলতে না দিয়ে, এবার আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো সিরিজা। রজত মুখ ঘোরানো মাত্রই সিরিজা বললো, "কি ভাবছো তুমি? "

রজত কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। সিরিজা এবার রজতের একটু আগে খাওয়া চুমুগুলোর প্রতিদান দিতে লাগলো। রজতের ঠোঁটটা ঠোঁটে নিয়ে সুরুত সুরুত করে টানতে লাগলো। চোষাটা এমন তীব্র করলো, রজত দেখলো ঠোঁট চুষে প্রায় দম বন্ধ করে দিচ্ছে সিরিজা। এবার ওর হাতের আঙুলগুলো রজতের চুলে খেলা করছে। চুম্বনের স্বাদকে আবেগ আর উত্তেজনা দিয়ে ভরিয়ে তুলছে সিরিজা। চুমু খেতে খেতেই নিজের ব্লাউজটা খুলে ফেললো সিরিজা। রজতকে বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরতে চায়। রজত বুঝতে পারছে না, সিরিজা হঠাৎ কেন এমন করছে?

বুকের খাঁজের মধ্যে রজতের মুখটাকে চেপে ধরে সিরিজা বললো, "আদর করতে চাইছিলে না আমাকে? নাও এবার করো। বিশ্বাস করতে পারছ না আমাকে। তাই না? কে বলেছে আমি তোমাকে ছেড়ে দিবাকরদার হয়ে গেছি? সিরিজা তোমারই ছিল, আর তোমারই থাকবে।"

উত্তেজনার রেশ কমে গেলে শরীরটা কেমন শিথিল হয়ে যায়। রজত দেখলো ওর শিরা উপশিরাগুলো আবার টানটান হয়ে যাচ্ছে। রক্ত চলাচল আসতে আসতে বাড়তে শুরু করেছে। সামনে সিরিজার উন্মুক্ত স্তন। বাদামী রঙের বোঁটাদুটো যেন হাতছানি দিয়ে ওকে ডাকছে। বলছে, "রজত, দেরী করছো কেন? এবার আমাকে মুখে নাও।"

যেন আচমকা সিরিজার আচরনে বিস্মিত রজত। ঘোরটা তখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সিরিজাকে বললো, "কি বলছো সিরিজা তুমি?"

- "হ্যাঁ আমি।"

সিরিজা এবার জোর করেই স্তনের একটা বোঁটা ঢুকিয়ে দিল রজতের ঠোঁটের ভেতরে। জিভে ছোঁয়া লাগতেই রজতের ভেতরটা কেমন চনমন করে উঠলো। দেখলো সিরিজা ওর মাথায় হাত বোলাচ্ছে, আর ইশারায় বলছে, "এখন আর কোন কথা নয়। চুপটি করে, এভাবেই.....

রজত প্রথমে কিছুটা দাঁত দিয়ে কামড়ে, তারপর জিভ বুলিয়ে চুষতে শুরু করলো বোঁটাটাকে। একটা বিশাল বড় বুক, আর ছুচোলো একটা মুখ। মুখে পুরে নিলে যা হয়। চুষতে চুষতে প্রায় পাগলের মতন হতে লাগলো রজত। মুখ দিয়ে আওয়াজ করলো চুকচুক। সিরিজা বললো, "আঃ, এই আস্তে।"

হঠাৎই বাইরে থেকে লাগানো দরজাটা খুলে গেছে সেই সময়। দিবাকর তালাটা খুলে প্রবেশ করেছে ঘরে। দেখলো সিরিজা রজতকে বুকে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে পেছন ফিরে। রজতের হাত দুটো নেমে এসেছে নিচের দিকে। সিরিজার কোমরটা জড়িয়ে বুকটাকে যেন প্রানপনে চুষছে রজত। পেছন ফিরলেও, সিরিজার ব্লাউজটা যে খোলা, সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। রজতকে নিজের স্তন খাওয়াতে সিরিজা এতই ব্যস্ত। তালেগোলে যে দিবাকর ঢুকে পড়েছে ঘরে সেটা ওর একেবারেই খেয়াল নেই। রজতের ঐ একই অবস্থা। সিরিজার বুক চোষা ছাড়া ওরও কোনদিকেই আর খেয়াল নেই।

দুজনকে ওভাবে দেখে পুরো স্তম্ভিত হয়ে গেল দিবাকর।

চোখের সামনে যা দেখছে, নিজের মনকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না ও। কি করে সিরিজা রজতকে এতটা প্রশ্রয় দিচ্ছে? কাল রাতে এতো কিছু কথা বললো, অথচ আজকে সিরিজার মধ্যে এই পরিবর্তন? একটু আগে ফোনেও তো বোঝালো দিবাকরকে। তাও নির্লজ্জ্বের মতন দেহটাকে এভাবে বিলিয়ে দেওয়া। এতটা বাড়াবাড়ি কিসের জন্য? রজতকে কি তাহলে ও এখনো ভুলতে পারছে না? না সিরিজার স্বভাবটাই এরকম। পুরুষমানুষের দেহ পেলেই সে সব ভুলে যায়।

দরজাটা আলতো করে ভেজিয়ে আবার বাইরে চলে এলো দিবাকর। চুপ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করতে লাগলো। তারপর ভাবলো, রেশমীর আসার খবরটাই কি তাহলে সিরিজাকে এমন বদলে দিলো? দিবাকর তার পুরোনো প্রেমিকাকে ফিরে পাচ্ছে, রেশমী যদি দিবাকরের জীবনে ফিরে আসে, তাহলে সিরিজাই বা কি করবে? দিবাকরকে সুখ দেবার যে প্রতিশ্রুতিটা দিয়েছিল সিরিজা, রেশমীকে পুরোপুরি দিবাকরের জীবন থেকে সরিয়ে দিয়ে সেটা তো সম্ভব নয়। দুটো মেয়েকে একসাথে নিয়ে প্রেম ভালোবাসা বা শরীরি সুখ একসাথে উপভোগ করা যায় না। রজত ঠিক সময় বুঝে চালটা খাটিয়েছে, রেশমীর কথা তুলে। দিবাকরের বিশ্বাস হচ্ছে না। রেশমী কি আদৌ ফোন করেছে রজতকে? না রজত নিজে থেকেই.....

মনে মনে একটা পরিকল্পনা করে নিলো দিবাকর। যা ও ঘরে ঢুকে আচমকাই দেখে ফেলেছে, ওদের দুজনকে কিছুতেই বুঝতে দেবে না দিবাকর। সিরিজা যদি দিবাকরের সাথে খেলতে পারে, তাহলে খেলাটা দিবাকরও খেলবে। দেখাই যাক না এভাবে কতদিন চলে। কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। মনের মধ্যে একটা জেদ চেপে যাচ্ছে। এতো কিছু দেখার পরেও, সিরিজাকে রজতের হাতে তুলে দিতে ইচ্ছে করছে না। রেশমী এলেও, সিরিজাকে যাতে রজত ভোগ করতে না পারে, তার ব্যবস্থা এখনই করতে হবে।

বাইরে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে লম্বা লম্বা টান দিতে লাগলো দিবাকর। একটু পরেই ও ভেতরে ঢুকবে। সিরিজা আর রজতকে কি বলবে, সেটাই চিন্তা করতে লাগলো মনে মনে। ধোঁয়ায় মুখটা কেমন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে দিবাকরের। এতদিন ধরে যে গোবেচারা, সরলতা ভাবটা ওর মধ্যে ছিল, সেটা আর নেই। ভালোবাসা, টান ওসব তো কিছু নেই। কেমন যেন প্রতিহিংসায় ভরা কামনা আর লালসার টান জাগছে শরীরে। মনে হচ্ছে, রজত চলে গেলেই সিরিজার শরীরটা, টেনে হিচড়ে, খুবলে খাবোলে খেতে। ওর শরীর থেকে রসটুকু নিংড়ে ভোগ লালসা মেটাবে দিবাকর। বুঝুক সিরিজা দুই নৌকায় পা দিয়ে চলার মজাটা কেমন। দিবাকর ওর সাথে যা শুরু করবে, সিরিজা কিছুক্ষণ পরেই মজাটা টের পাবে হাড়ে হাড়ে।

সিগারেটটা অর্ধেক খেয়ে মাটিতে ফেলে, পা দিয়ে দুমড়ে মুচড়ে সিগারেটের মাথাটা থেতো করে দিলো দিবাকর। আসতে আসতে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজায় কান পেতে শুনলো ভেতরে তখনো রজত বেহায়াপনা করছে সিরিজার সাথে। সিরিজা অস্ফুট স্বরে বলছে, "এই, এবার ছেড়ে দাও। দিবাকরদা এখুনি এসে পড়বে। এভাবে দেখলে খারাপ ভাববে আমাদের।"

রজত শুনছে না সিরিজার বুক চেটে যাচ্ছে, মনে হয়। অমূল্য সম্পদটাকে পেয়েছে। এত সহজে কি ছাড়বে রজত? উগ্রবাসনা নিয়ে এখনো মনে হয় সিরিজার বুক থেকে মধু শুষে নিচ্ছে রজত।

সিরিজা বললো, "এই, ছাড়ো না বলছি, এখুনি দিবাকরদা এসে পড়বে। কি হবে তখন বলো তো?"

রজত বললো, "আমার ভেতরটা তোলপাড় হচ্ছে সিরিজা, আমি নিজেকে থামাতে পারছি না।"

- "না তুমি ছাড়ো।"

-- "আজ আমি উন্মত্ত সিরিজা। আমি কিছুতেই ছাড়বো না তোমাকে।"

- "পাগলামী কোরো না। ছাড়ো। বলছি এখুনি দিবাকরদা এসে পড়বে।"

উগ্রতা যেন ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। সিরিজার বুক চুষতে চুষতেই ওর দেহটাকে দু হাতে তুলে নিল রজত।

সিরিজা বললো, "একি, কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?"

রজত বললো, "শোবার ঘরে।"

- "না না, ওরকমটি কোরো না। আমি বলছি না এখুনি দিবাকরদা এসে পড়বে। তালা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লে যাচ্ছেতাই ব্যাপার হবে।"

রজত সিরিজার কথা শুনলো না। জোর করে ওকে নিয়ে গেল শোবার ঘরে। ঠোঁট দিয়ে ঠোঁটটা কামড়ে ধরলো সিরিজার। - "তুমি কি আমাকে সুখ দিতে ইতস্তত বোধ করছো সিরিজা? কামকলায় বিশ্বশ্রেষ্ঠ নারী তুমি। তুমি যদি এরকম করো, কি করে চলবে আমার সিরিজা।"

যেন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবার রজতের। কাম চরিতার্থ করার জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। প্রবল কামে জর্জরিত হয়ে উঠেছে শরীর।

রজত বললো, "দিবাকর আসার আগে যেটুকু সময় আছে, আমি একমূহূর্ত সেটা নষ্ট করতে চাই না। আমাকে পুরোমাত্রায় তুমি একবার অন্তত গ্রহন করো। একটু খুশি করো আমাকে। ও সিরিজা....."

অপার স্বর্গসুখের সমুদ্রে ভাসতে চাইছে, অথচ একবারও ভেবে দেখছে না, দিবাকর এসে পড়লো বলে। হয়তো এতক্ষণে এসেও পড়েছে মনে হয়।

সিরিজা মানা করা সত্ত্বেও রজত শুনলো না। এবার ও যেটা করলো, সেটা রজতই একমাত্র করতে পারে। একটু আগে শোবার ঘরের দরজাটা লাগিয়েছিল সিরিজা। এবার রজতই ওটা লাগিয়ে দিল।

সিরিজা বললো, "একি করছো তুমি?"

রজত বললো, "দিবাকরকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিলে তো? দেখো, এবার আর কোনো ভয় নেই।"

- "মানে?"

-- "মানেটা পরিষ্কার। ও আমাদেরকে ভেতরে থাকতে দেখে, সদর দরজাটা বাইরে থেকে লাগিয়ে গিয়েছিল তো? এবার এসে যখন ঢুকবে, দেখবে আমরা সেই ভেতরেই আছি। বাইরে যেমন বসেছিল ও। সেরকমই বসে থাকবে।"

অদম্য এক উৎসাহে টগবগ করে ফুটছে রজত। যেন চুটিয়ে একটু সেক্স করে নেবে সিরিজার সাথে এই সময়। শরীরি খেলায় মেতে ওঠার জন্য ও নিজেই জামা প্যান্টটা খুলতে লাগলো এবার। সিরিজা হাঁ করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। দেখছে রজত নিজেকে কিভাবে নিমেষে উলঙ্গ করে ফেললো নিজেকে। এবার ঐ নগ্ন শরীরটা নিয়ে সিরিজার শরীরের মধ্যে হারিয়ে যাবার চেষ্টা করবে। যৌনতাকে পরিপূর্ণ রূপ দেবার জন্য এখন পুরোপুরি তৈরী রজত।

যে শরীরটার মধ্যে যৌনতার কোনো খাদ নেই, সেই সিরিজাও চিন্তা করতে লাগলো ওকে নিয়ে, কি করবে এখন? ও যেভাবে উন্মত্ত হয়ে পড়েছে, তাতে রজতকে রোখার সাধ্য নেই সিরিজার। নইলে হয়তো সিরিজার আসল মনোভাবটাই বুঝতে পেরে যাবে রজত। বুঝে যাবে রজতের পরে, দিবাকরকেই সবকিছু দিয়ে বসে আছে এখন সিরিজা। একটু স্তন বিলিয়ে কিছুক্ষণের জন্য রজতের মনটাকে ঘোরাতে চেয়েছিল সিরিজা। কিন্তু আসলে ওই শরীর বিলোনোটা কিচ্ছু নয়। রজত যাতে বিগড়ে না যেতে পারে, তার জন্যই সিরিজা এমনটি করেছে। এটাতো ভাবিনি, স্বামী সুখেনও আবার চলে আসবে এই কঠিন সময়ে। নইলে রজতকে তো ও ফিরিয়েই দিতে পারতো।

রজত সিরিজার জিভটা মুখের মধ্যে নিয়ে এমন ভাবে চুষতে লাগলো, এই প্রথম দিশাহারার মতন হয়ে যাচ্ছিলো সিরিজা। সিরিজাকে বললো, "আমার শরীরে এখন কামের জোয়ার বইছে সিরিজা। এই শ্রোতে একটু গা না ভাসালে আমার চলবে কি করে সিরিজা।"

সিরিজা একটু করুন ভাবে আবার বললো, "কিন্তু দিবাকরদা?"

রজত বললো, "আরে ছাড়ো তো দিবাকরদা? দিবাকরদা কি বাঘ না হাতি? যে ওকে খালি ভয় পাচ্ছো?"

ব্লাউজটা তো আগেই খোলা ছিল। রজত এবার সিরিজার শাড়ীটাও টান মেরে খুলতে লাগলো। বিছানায় নিজের শরীরটাকে পুরোপুরি সঁপে দিতে পারছিল না সিরিজা। রজত সিরিজার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো, "স্বপ্নের স্বর্ণপুরীতে নিয়ে যাবে না আমাকে? শুধু শুধু দিবাকরের কথা ভেবে অত চিন্তা করছো। নাও, এসো....."

কাল রাতে দোলনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যৌনসঙ্গম করেছে রজত। এবার সেটাকেই একবার মনে করে নিয়ে মনে মনে শুধু আওড়ালো রজত, "তোমার দেহের মধ্যে যা আনন্দ আছে, তার কণামাত্রও আমি পাইনি কাল দোলনের কাছ থেকে। সিরিজার সাথে কি আর অন্য কারুর তুলনা হয়?"

শরীরে যেন কত কামনা এখনো জমাট বেঁধে আছে। ভোগবাসনা অন্তহীন। এক রাতে সিরিজাকে না পাওয়ার বাসনাটাকে পূরণ করে নিতে হবে। তারপর সিরিজাকে নিয়ে রজত চলে যাবে অনেকদূর, যেখানে কেউ কোনদিন নাগাল পাবে না। এ জন্মে তো নয়।

যেভাবে রজতের পুরো শরীরটাকে গরম করে দিত সিরিজা। সোহাগ দিয়ে জাগিয়ে তুলতো ওকে। যৌনতার মাল মশলাগুলো প্রয়োগ করে ভরিয়ে তুলতো রজতকে। চোখে মুখে লাবণ্য লাস্যে এক অপ্সরী। চোখের তারায় সিরিজার ঝিলিকের পর ঝিলিক। ঠোঁটে কামনার উদ্বেল। কামনার আগুন, সিরিজারও শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে ছড়িয়ে পড়েছে, রজত যে আগুন দেখে চনমন করে উঠেছিল, সিরিজার শরীরের জেল্লা দেখে মূগ্ধ হয়ে পড়েছিল, সেই সিরিজা আজ কোথায়? নিজে থেকে কোনো ভূমিকা না নিয়ে শরীরটা কেমন জবুথবু করে শুয়ে আছে। দেখে মনে হবে, রজতের আহ্বানে সাড়া দেবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছাটা আর নেই। যেটুকু ছিল, পুরোপুরি তা চলে গেছে।

রজত ওই অবস্থাতেই সিরিজার শায়াটাকেও টান মেরে খুলে ফেললো। ঘন ঘন ঠোঁটে চুমু খেয়ে যাচ্ছে। আদর সোহাগ কতবার করার চেষ্টা করছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই।

-- "আমাকে একটু স্বাদটা পেতে দেবে না সিরিজা?"

সিরিজা কোনো কথা বলছে না। শুধু অস্ফুট স্বরে উহুঁ উহুঁ করছে।
 
রজতের মত দামাল পুরুষকে যে চিবিয়ে খেয়ে নিতে পারে, যৌবনের জোয়ারের স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে ওর মত সেয়ানা সাঁতারুকেও। সেই সিরিজা যখন নিজে থেকে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না, রজত এবার একটু মুশড়ে পড়লো। ভাবছিল না, এভাবে তাহলে আর নয়। সিরিজা যখন মন থেকে চাইছে না। তখন জোর করে ওকে শুধু শুধু.....

সিরিজার নগ্ন শরীরটাকে ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়তেই যাচ্ছিলো রজত। এমন সময় শুনলো, দড়াম করে বাইরের দরজাটা খোলার একটা শব্দ হল।

সিরিজা, রজত দুজনেই বুঝলো, দিবাকর তার মানে এবার এসে গেছে। ওরা তাড়াতাড়ি উঠে বসে নিজেদের নগ্ন শরীরটাকে ঢাকা দেবার চেষ্টা করতে লাগলো।

সিরিজা বললো, "দেখলে তো, আমি বলছিলাম, ঠিক দিবাকরদা এসে পড়বে।"

রজত কোনো কথা না বলে, জামাপ্যান্টটা আবার পড়ে নিল। সিরিজা তখন বুকের ব্লাউজটা লাগাচ্ছে সবে। দিবাকর ঘরে ঢুকে ইচ্ছে করেই এবার শোবার ঘরের দরজাটা ধাক্কা দিতে লাগলো। চমকে উঠলো সিরিজা। তাহলে কি দিবাকর বুঝে গেল কিছু?

রজত বললো, "অত ভয় পাচ্ছো কেন? শাড়ীটা পড়ো। আমি দরজাটা খুলছি।"

সিরিজা শাড়ীটা জড়িয়েছে কোনমতে, কিন্তু দেখে মনে হবে, পরিপাটি করে শাড়ী পড়া নয়। তাড়াহূড়ো করে বুকের ব্লাউজটাও লাগাতে পারছে না ঠিক করে। রজত দরজা খোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

সিরিজা বললো, "দাঁড়াও, ব্লাউজটা ভালো করে আগে লাগিয়ে নিই, এই অবস্থায় দরজা খুলবে নাকি?"

পেছনে ফিরলো, রজত। সিরিজাকে বললো, "তুমি কি ভয় পাচ্ছো? কাকে ভয় তোমার? কিসের ভয়?"

সিরিজা বললো, "তাহলেও এই অবস্থায় দরজাটা খোলাটা ঠিক হবে না।"

এদিকে দুম দুম করে আরো দুবার ঘা পড়েছে বাইরে থেকে। রজত বললো, "এই দিবাকরটার হলটা কি? এরকম করছে কেন? সিরিজা কি তোর কেউ হয় নাকি? শালা....."

এমন ভাবে জামার হাতাটা গুটিয়ে দরজাটা খুলতে গেল, সিরিজা বললো, "তুমি কিন্তু ওকে কিছু বলবে না। তাহলে ও অন্যরকম ভাববে।"

দরজাটা শেষমেষে খুললো রজত। দেখলো, দিবাকর বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ ওর চোখ মুখে কি ভীষন হাসি।

- "কি গো রজত? আমি ভাবছি কি না কি? এতক্ষণ হয়ে গেল। সেই গেছি, তখন থেকে তোমরা ঘরের ভেতরে। আমি ভাবছি, কিছু আবার হল নাকি।"

-- "কি আবার হবে? এই সিরিজা পেয়েছে আমাকে। ছাড়েই না।"

দিবাকর দেখলো, সিরিজা বিছানাতেই বসে রয়েছে। কিন্তু চোখ মুখের আদল দেখেই বোঝা যাচ্ছে, একটু আগেই বিশ্বাসটা ভঙ্গ করেছে ও। যে কথাটা দিবাকরকে সিরিজা দিয়েছিল কাল রাতে। রজত আসার পর থেকেই সিরিজা কেমন যেন অন্যরকম। দুটো আচরণের মধ্যে বিস্তর ফারাক। এই সিরিজা কালকের সিরিজা নয়। একেবারেই বদলে গেছে সিরিজা।

দিবাকর বললো, "তা আমি ভেতরে আসতে পারি?"

রজত বললো, "এসো এসো। তুমি আসবে না তো কে আসবে? এটা তো তোমারই বাড়ী।"

সিরিজা তখনো বিছানায় কেমন আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে। ভাবছে, দিবাকর ওকে কি না কি বলে। কিছু আবার রজতের সামনে করে না বসে।

রজতও কম সেয়ানা নয়। দিবাকরকে ভেতরে ঢুকতে দিয়েও পরক্ষণেই আবার বলে উঠলো, "চলো না দিবাকর। আমরা বরং ওঘরে গিয়ে একটু বসি। সিরিজার সমস্যাটা তো আমাদের দুজনকেই মেটাতে হবে। আলোচনা একটু করি। সুখেনকে কিভাবে তাড়ানো যায়....."

দিবাকর বললো, "কিছু যদি মনে না করো রজত, একটা কথা বলবো?"

রজত বললো, "হ্যাঁ বলো।"

- "সিরিজার সাথে আমার কিছু পার্সোনাল কথা আছে। তুমি যদি ওঘরে গিয়ে একটু বসো....."

রজত যেন আশা করেনি। দিবাকর ওকে এসব কি বলছে?

অবাক হয়ে বললো, "তোমার সাথে সিরিজার পার্সোনাল কথা? মানে? আমি থাকতে সিরিজার আলাদা পার্সোনাল বলে তো কিছু নেই। তোমার আবার কি পার্সোনাল কথা থাকতে পারে সিরিজার সঙ্গে?"

দিবাকর বললো, "আমি কিছু কথা বলতে চাই। সেটা তোমার সামনে বলা যাবে না।"

রজতের ইচ্ছে করছিল দিবাকরকে টেনে একটা চড় কসায়। মাথায় যেন আগুন ছুটে যাচ্ছে। এই সিরিজাকে নিয়ে এত ঝামেলা? ওদিকে সুখেন, দোলন, শ্বশুড়, বউ মাথা চিবিয়ে খাচ্ছে। অসময় বন্ধুটাকে পাশে পাবে, তা না। এও এখন রঙ দেখাতে শুরু করেছে?

রজত রীতিমতন বাধা দিয়ে বললো, "না আমাকে বাদ দিয়ে সিরিজার সাথে তোমার কোনো পার্সোনাল কথা থাকতে পারে না। তুমি ভুল করছো দিবাকর। সিরিজা তোমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়।"

চোয়ালগুলো শক্ত হয়ে যাচ্ছিলো দিবাকরের। মনে মনে বললো, "আজ শালা তুই যতই কর। সিরিজাকে আমি তোর সাথে আর ছাড়ছি না।"

দিবাকর দেখছিল, সিরিজা কি বলে? মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। তার মানে রজতকে বাদ দিয়ে দিবাকর ওকে কিছু বলবে, সেটা সিরিজারও ইচ্ছা নয়।

কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে থেকে, এবার নিজেই সিরিজাকে বললো, "তুমি কি রজতকে বাইরে যেতে বলবে সিরিজা? না আমি....."

রজত পুরো তাজ্জব। এই দিবাকরটা বলে টা কি? এতবড় সাহস ওর?

চোখটা বড় বড় করে রজতও সিরিজার দিকে তাকালো। দেখলো, সিরিজার মুখটা বড়ই করুন। এমন পরিস্থিতিতে ও বোধহয় জীবনে পড়েনি।

রজত অস্ফুট স্বরে বললো, "সিরিজা তুমিও? তুমিও তাই চাইছো?"

দিবাকর বললো, "সিরিজা কি চাইবে? আমি বলছি না তোমাকে বাইরে যেতে। বাইরে যাও।"

যেন যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে এবার। কে কাকে হারাবে, তারই পরীক্ষা এবার।

সিরিজা এবার কাতর অনুনয় করলো রজতকে। চোখ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলো, একটু মেনে নাও।

দিবাকর বললে হয়তো শুনতো না। কিন্তু যেহেতু সিরিজা ওকে অনুরোধটা করেছে, রজত সটান বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে।

যেভাবে দিবাকরের মুখের ওপর দরজাটা বন্ধ করেছিল, সিরিজা। দিবাকর ওভাবেই দরজাটা বন্ধ করলো রজতের মুখের ওপর।

- "তুমি দরজা লাগিয়ে দিচ্ছ দিবাকর?"

-- "হ্যাঁ একটু। জাস্ট পাঁচ মিনিট।"

সিরিজা দেখছে, দরজাটা লাগিয়ে দিবাকর একদৃষ্টে চেয়ে আছে সিরিজার দিকে। চোখ দিয়ে গেলার মতন সিরিজার সারা শরীরটাকে নিরীক্ষণ করছে। ভাবখানা এমন, কোথা থেকে ও শুরু করবে?

দিবাকর বললো, কি করছিলে তুমি রজতকে নিয়ে?

সিরিজার মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ নেই। ভেবে পাচ্ছে না দিবাকরকে ও কি বলবে।

-- "দরজা লাগিয়ে এতক্ষণ? কি হলো সিরিজা? আমার কথার জবাব দাও।"

সিরিজার মুখে তখনো কথা নেই।

-- "চুপ করে থেকো না সিরিজা আমার কথার জবাব দাও। কাল রাতে তুমি এতো কিছু আমাকে বললে, আর রজত আসতে না আসতেই তোমার এতো পরিবর্তন? কি করেছে ও তোমার সাথে?"

সিরিজা জবাব দিচ্ছে না দেখে, দিবাকর এক লাফে খাটের ওপর উঠে সিরিজার বুকের ওপর হুমড়ী খেয়ে ওর ঠোঁট দুটোকে কামড়ে ধরলো।

তীব্র এক প্রতিহিংসার মতন চুম্বন। ঠোঁট চুষতে চুষতে সিরিজার স্তনদুটোকে দলাই মালাই করে টিপতে লাগলো দিবাকর। ব্লাউজের মধ্যে হাত ঢুকে গেল, সেখান থেকে আরো ভেতরে। স্তনের ডগায় দিবাকর আঙুল। চিমটি করে ধরেছে শক্ত করে। ঠোঁট চুষে আয়েশ মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে বোঁটাটাকেও আঙুল দিয়ে নিষ্পেষন করতে লাগলো ভালো করে।

সিরিজা বললো, "আঃ লাগছে।"

দিবাকর বললো, "কেন রজত আদর করলে লাগে না বুঝি? দরজা বন্ধ করে কি করছিল তোমাকে? আদর?"

বাতাবী স্তন দুটোকে পুরো ময়দা মাখার মতন চটকাতে লাগলো দিবাকর। সিরিজার ঠোঁট কামড়ে দিল। যেন রক্ত চুষে পান করবে এবার।

সিরিজা বললো, "আঃ ছাড়ো। লাগছে।"

দিবাকর বললো, "কেন ছাড়বো? কেন তুমি চিল্লাবে? রজতকে ডাকবে?"

উন্মাদের মতন ঠোঁট চুষতে চুষতে সিরিজার ব্লাউজটাকে প্রায় ছিঁড়েই ফেললো দিবাকর। চোখের সামনে বড় বড় এবার রাজকীয় দুটি স্তন। দিবাকর ভাবছে কোনদিকের বোঁটাটা আগে মুখে নেবে? ডানদিকের টা না বাঁদিকের টা?

সারাজীবনে যার কোনদিন কামই জাগেনি। আজ তার শরীরে কামক্রোধ। সিরিজার শরীরটা ছিঁড়ে খেতে এবার মরীয়া দিবাকর। কোনরকমে ওকে ঠেকানোর জন্য সিরিজা বললো, "আমি তো আছি দিবাকরদা। আমি তো আছি। তুমি রজতকে একবার এখান থেকে শুধু চলে যেতে দাও।"

কোনো কথা শুনলো না দিবাকর। ঠোঁটটাকে নিয়ে আছড়ে পড়লো এবার সিরিজার বুকে। বোঁটাটা মুখে নিয়ে দানবের মতন চুষতে লাগলো। সিরিজা অসহায়ের মতন দেখছে, দিবাকর ওর স্তন কামড়ে বুক থেকে দুধ শুষে নিচ্ছে। বাঁধা দিতে গিয়েও বাঁধা দিতে পারলো না। শুধু মুখে বললো, তুমি বিশ্বাস করো। আমি সত্যি বলছি।

কাল রাতেও সিরিজার বুকের দুধ পান করেছে দিবাকর। কিন্ত আজ যেন ওর মধ্যে এক শয়তান ভর করেছে। নিজে থেকেই যে শরীরটা বিলিয়ে দিবাকরকে সুখ প্রদান করেছে, তার কথা একবারের জন্যও মনে হল না দিবাকরের। ও আরো তীব্র গতিতে চুষতে লাগলো। চুষে চুষে সিরিজার বোঁটটাকে লাল করে দিল দিবাকর।

- "ছাড়ো না দিবাকরদা। বলছি তো। তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।"

অস্ফুট স্বরে কঁকিয়ে উঠলো সিরিজা।

দিবাকর বললো, "আমি চাই রজতকে তুমি ডাকো। যদি না ডাকো, তাহলেই বুঝবো, তুমি সত্যি না মিথ্যে বলছো আমাকে।"

যেন অগ্নিপরীক্ষা। সিরিজা সেভাবেই মেনে নিল দিবাকরের হূঙ্কারটাকে। ও কোনো প্রতিরোধ করলো না। আর দিবাকরও আরো দাপিয়ে চুষতে লাগলো সিরিজার স্তনটাকে।

দুধ চুষে প্রায় গাল ভরিয়ে ফেলেছে দিবাকর। বিছানার ওপর সিরিজার ছেঁড়া ব্লাউজটা এবার গড়াগড়ি খাচ্ছে, আর মনের আনন্দে শোধ তুলছে দিবাকর।

- "উঃ উঃ উহু।"

উত্তেজনায় দাঁত দিয়ে দিবাকর এবার কামড় লাগাতে কেঁপে উঠলো সিরিজা। দিবাকর যেভাবে রাক্ষসের মতন বুক চুষে খাচ্ছে, আর সহ্য হচ্ছে না লোকটাকে। একটা ধাক্কা দিয়ে দিবাকরকে বলে উঠলো, "সরে যাও। সরে যাও। আর আসবে না এখানে।"

দিবাকর সিরিজার ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়লো, খাটের এক কোনাতে। গায়ে ব্লাউজ নেই, শাড়ী লন্ডভন্ড। সিরিজা ওই অবস্থাতেই দরজা খুলে বেরিয়ে এলো বাইরে।

রজত পাশের ঘরটায় চিন্তিত ভাবে পায়চারী করছে। সিরিজাকে ওই অবস্থায় বেরোতে দেখে রজত পুরো হতভম্ব। সিরিজা ছুট্টে গিয়ে রজতকে জড়িয়ে ধরলো। বুকে মুখ রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। রজত বললো, "কি হয়েছে?"

সিরিজা কথা বলতে পারছে না, রজত দেখছে দিবাকরও এসে দাঁড়িয়েছে দরজার সামনে। যেন প্রতিহিংসায় জর্জরিত দিবাকরের সারা শরীরটা। রাগে ঠকঠক করে দিবাকরও দাঁড়িয়ে কাঁপছে। রজতকে চেঁচিয়ে বলে উঠলো, "নিয়ে যাও ওকে। আমি চাই না সিরিজা তোমাকে ঠকিয়ে আমার মনটাকে নিয়েও খেলুক। যে কিনা তোমাকে ঠকাতে পারে, তার আমাকে ঠকাতে আর কতক্ষণ?"

রজত কিছু বুঝতে পারছে না। দেখছে সিরিজাও মুখটা তুলেছে সবে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলছে, "আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে তুমি? নইলে এ লোকটা আমাকে....."


সপ্তম অধ্যায় সমাপ্ত
 
অষ্টম অধ্যায়
।। আটত্রিশ ।।


দিবাকরের মুখের ওপর সজোরে রজতের ঘুষিটা এমন জোরে পড়ল, দিবাকরের মনে হল, যাঃ দাঁতটাই বোধহয় গেল ভেঙে। সিরিজাকে ছেড়ে দিয়ে রজত এবার দিবাকরের কলার চেপে ধরেছে। খাবার টেবিলটার ওপর দিবাকরের শরীরটা পুরো বেঁকে গিয়েছে, রজত ওর ওপর চড়াও হয়েছে। দিবাকর পুরো ধরাশায়ী। রজত আবার ওকে মারবে বলে উদ্যোগ নিয়েছে, ঠিক তখনই টেবিলের ওপর একটা ছুরী রাখা ছিল। ওটা হাতে নিয়ে দিবাকর রজতের পেট চিরে দিলো ক্ষতবিক্ষত করে।

-- "আঃ।" রজত কঁকিয়ে উঠলো।

রক্তে ভেসে যাচ্ছে সারা ঘরটা। চোখের সামনে রজতের দেহটা কাঁপতে কাঁপতে স্থির হয়ে গেল। সিরিজা দিবাকরকে চেঁচিয়ে বলে উঠলো, "তুমি ওকে খুন করে ফেললে? রজত..... রজত....."

মৃতদেহটাকে জড়িয়ে ধরে হাপুস নয়নে কাঁদতে লাগলো সিরিজা। দিবাকর রক্তমাখা ছুরীটা হাতে নিয়ে পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে পারছে ওর হাতে শেষ পর্যন্ত খুন হয়ে গেছে রজত। হাত দুটো দিয়ে মুখটাকে চেপে ধরে দিবাকর বললো, "এ আমি কি করলাম? না না আমি তোমাকে খুন করতে পারি না রজত। সিরিজা তো তোমারই। প্লীজ আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও, চোখ খোলো। রজত..... রজত....."

হঠাৎই যেন হুঁশ ফিরলো দিবাকরের। বুঝতে পারলো, পুরো দৃশ্যটাকেই ও এতক্ষণ মনে মনে কল্পনা করছিল। রজত সিরিজা কারুরই কিছু হয় নি। ওরা অক্ষত। দিব্যি ঘরের মধ্যে কথা বলছে ওরা দুজনে। রজতের কথাটা পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে। সিরিজাও কথা বলছে মাঝে মাঝে।

দরজা থেকে সরে গিয়ে দিবাকর চেয়ারটায় আবার বসে পড়লো। প্যাকেট থেকে সিগারেট বার করে আর একটা সিগারেট ধরালো। মনে মনে বললো, "না, এ আমি কি করতে যাচ্ছিলাম? নিজের বাসনার তাগিদে শেষ পর্যন্ত রজতকে খুন করতে যাচ্ছিলাম? পশুর মতন আচরণ করতে যাচ্ছিলাম সিরিজার সঙ্গে? কি লাভ হত এসব করে? জোর করে সিরিজাকে হাসিল করে, কোনো লাভ হত কি? ও হয়তো রজতকে দেখে মন পাল্টে ফেলেছে। সিরিজা চায় না রজত ওর জন্য কষ্ট পাক। দিবাকরের জীবনে সিরিজা না থাকুক, রেশমী তো আছেই। যে মেয়েটা এতদিন বাদে ভুল বুঝে ওর কাছে ফিরে আসছে, দিবাকরকে তার কথাই চিন্তা করতে হবে, সিরিজার কথা নয়।"

চেয়ারে বসে ও সিগারেট টানতে লাগলো, আর মনে মনে ঠিক করে নিল, দরজা খুলে রজত বেরোলে একদম স্বাভাবিক থাকবে। মনের মধ্যে যে ক্ষোভ আর হিংসাটা জেগে উঠেছিল, সেটা কিছুতেই ওকে বুঝতে দেবে না। সিরিজাকেও নয়।

রজত বন্ধ ঘরের মধ্যে সিরিজাকে বললো, "আজ কিন্তু আমার মন ভরলো না সিরিজা। তুমি আমাকে কিছুই করতে দিলে না।"

সিরিজা বিছানার ওপর বসে, ব্লাউজটা লাগাতে লাগাতে বললো, "আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি? তোমারই তো আছি, সেটা তুমি বুঝতে পারো না?"

রজত সিরিজার গালে একটা চুমু খেলো। বললো, "পারি পারি। ঠিকই পারি। আজ তুমি একটু জড়োসড়ো হয়ে রয়েছো। দিবাকরের বাড়ী বলেই হয়তো তোমার অসুবিধে হচ্ছে।"

সিরিজা বললো, "হ্যাঁ।"

তারপরেই বললো, "দেখো হয়তো দিবাকরদা এসেও পড়েছে। পাশের ঘরেই বসে আছে। কি ভাবছে কে জানে?"

রজত বললো, "দাঁড়াও। আমি দেখছি, দিবাকর এসে পড়েছে কিনা?"

খাট থেকে উঠে দরজা খুললো রজত। দেখলো দরজাটার ঠিক পাশেই দিবাকর ঐ চেয়ারটাতে বসে। আপনমনে সিগারেট টানছে।

রজত বললো, "কখন এসেছো?"

দিবাকর বললো, "এই তো এলাম। তোমাদের ডাকতেই যাচ্ছিলাম। তারপরে ভাবলাম, কথা বলছো হয়তো। তাই বিরক্ত করিনি।"

রজতের পেছন পেছন বেরিয়ে এসেছে সিরিজাও। দিবাকর দেখলো, সিরিজা বুকের ব্লাউজটা লাগানো। একটু আগেই ওই ব্লাউজ খোলা বুকে মুখ ঘষছিল রজত। একপ্রকার বুক দুটোকে সিরিজাই নিবেদন করেছিল রজতের কাছে। ঠিক সেই মূহূর্তে দিবাকরও তখন তালা খুলে ঢুকে পড়েছে ঘরের ভেতরে। রজত, সিরিজা দুজনেই কেউ টের পায়েনি। দিবাকর ওই দৃশ্য দেখে স্থির থাকতে পারেনি। রজত, সিরিজাকে বুঝতে না দিয়ে দিবাকর ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পরই রজত আবার সিরিজাকে নিয়ে আবার ঢুকে পড়ে শোবার ঘরে। দিবাকর ঘরে ঢুকে দেখছে, সিরিজা রজত দুজনেই কেউ বসার ঘরটাতে নেই। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কান পেতে শুনছিল ওদের কথোপকথন। তারপরেই যেন কিসব ঘটে গেল। সবই কল্পনায়। কোনোটাই সত্যি নয়।

রজত বললো, "দিবাকর, তুমি আমাদেরকে ফেলে হঠাৎ চলে গেলে? কোথায় গিয়েছিলে?"

দিবাকর বললো, "একটা জায়গা ঠিক করতে গিয়েছিলাম। এখানে সিরিজাকে রাখা তো আর নিরাপদ হবে না। তাই....."

সিরিজা কেমন অবাক হয়ে তাকালো দিবাকরের দিকে।

রজত বললো, "এই না হলে তুমি আমার বন্ধু। সিরিজাকে তো ঠিক এই কথাটাই বলছিলাম।"

দিবাকর বললো, "তুমি এক কাজ করতে পারো। সিরিজাকে নিয়ে কোথাও চলে যেতে পারো। আমি বরং এদিকটা সামলে নিচ্ছি।"

রজত বললো, "না, না, তুমি সামলাতে পারবে না। আমার ঝামেলা আমাকেই মেটাতে হবে। ওর বরটাকে ভাগাতে গেলে, আমার এখানে থাকা দরকার। আমি চলে গেলে ওরা আরও সন্দেহ করবে।"

দিবাকর বললো, "কিন্তু সিরিজার তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে। ওকে এখানে রেখে যদি শেষপর্যন্ত ঝামেলা আরও বাড়ে।"

রজত বললো, "আর একটা দিন দিবাকর। কষ্ট করে একটা দিন। কাল রেশমী আসলেই আমরা চারজনে অন্য কোথাও চলে যাবো।"

দিবাকর বললো, "কিন্তু....."

রজত বললো, "কোনো কিন্তু নয়। আমি ঠিক করে নিয়েছি। তবে আমার মনে হয়, এখানে না থেকে তোমাদের দুজনের কোনো হোটেলে চলে যাওয়া ভালো। একটা রাত্রির। তুমি সিরিজাকে সঙ্গ দাও। তারপরে আমি আবার আসছি।"

দিবাকর দেখলো, সিরিজা পুরো সায় দিচ্ছে রজতের কথাটায়। ঘাড় নেড়ে বলছে, "হ্যাঁ ঠিকই তো। ঠিকই তো।"

ওর ঠিক বোধগম্য হল না। বুঝতে পারছে না, সিরিজা আসলে কি চাইছে?

রজত বললো, "শোনো, আমি আর দেরী করবো না। আর হ্যাঁ, তোমার মোবাইলে রেশমীর ফোন নম্বরটা সেভ করে নাও। আজ রাতে তুমি রেশমীকে একটা ফোন করবে। কাল ওর আসার ব্যাপারটা কনফার্ম করে নেবে। তারপর আমাকে ফোন করে জানিয়ে দেবে। আমি ওখানে গিয়ে ওদের একটা ব্যবস্থা করছি। সেই সাথে দোলনেরও।"

দিবাকর বললো, "তুমি দোলনকে কি করে ভাগাবে?"

রজত বললো, "সে যা করার আমি করবো। উপায় আমি ঠিক করে নিয়েছি। জায়গা মত প্রয়োগ করবো। সিরিজার জন্য কিছু তো আমাকে করতে হবে। আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না।"

রজত দিবাকরের সামনেই সিরিজাকে একবার জড়িয়ে ধরলো পাশ থেকে। ওর ঘাড়ে পিঠে গলায় চুমু খেতে লাগলো। দিবাকর মুখটা নিচু করে নিলো। সিরিজা আরও অস্বস্তিতে পড়ে গেল।

-- "নাও, ফোন নম্বরটা নাও।"

রজত, দিবাকরকে রেশমীর ফোন নম্বরটা দিলো। দিবাকর বললো, "কিন্তু রেশমীকে আমি আসতে বলবো কোথায়?"

রজত বললো, "কেন? তোমার বাড়ীতে।"

দিবাকর বললো, "বাড়ীতে তো আমি থাকবো না। আমি তখন হোটেলে।"

রজত বললো, "রেশমীর জন্যই তো তুমি আবার হোটেল ছেড়ে বাড়ীতে আসবে।"

দিবাকর যেন কিছুই বুঝতে পারছে না। চোখ দুটো কাচু মাচু মতন করে রজতের দিকে তাকালো। রজত বললো, "সিরিজার কথা ভাবছো তো?"

দিবাকর বললো, "হ্যাঁ।"

রজত বললো, "তুমি যখন রেশমীকে রিসিভ করতে বাড়ীতে আসবে। তখন সিরিজাকে হোটেলে রেখে আসবে। সিরিজা কয়েকঘন্টার জন্য ওখানে একা থাকবে। তারপরে আমিও চলে আসবো।"

দিবাকর ভালোমতন বুঝতে পারছে, এতোদিন ধরে রজতের জন্য অনেক উপকার ও করে এসেছে। এবারে শেষ উপকারটুকু করে, সিরিজাকে রজতের হাতেই তুলে দিতে হবে। যার জিনিষ, তার কাছেই ওকে ফিরিয়ে দিতে হবে শেষ পর্যন্ত।

ওর কথায় সায় দিয়ে দিবাকর বললো, "ঠিক আছে, তাই হবে তাহলে। আমি সিরিজাকে নিয়ে একটু পরে বেরোচ্ছি। কোন হোটেলে আছি। তোমাকে বলে দিচ্ছি ফোনে।"

রজত বললো, "আমাকে তুমি ফোন কোরো না। ফোন আমি তোমাকে করবো। নইলে ওরা বুঝে যাবে। বুদ্ধি করে সব কাজ করতে হবে।"

দিবাকর ঘাড় নাড়লো। রজতকে বললো, "তুমি চিন্তা কোরো না। তোমার কথা মতই সব কাজ হবে।"

সিরিজাকে আবার জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল রজত। দিবাকর দেখলো, সিরিজা ওর দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু ওর এই তাকানোতে মনের মধ্যে ঝড়টা আর বইছে না। কাল রাতে সিরিজা একটা ঝড় বইয়ে দিয়েছিল দিবাকরের শরীরে। কিন্তু আজ ওই ঝড়টা আর নেই। দিবাকরের ভেতরের পৃথিবীটা এখন অনেক শান্ত হয়ে গেছে।

দিবাকর সিরিজাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো, "ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন? তৈরী হয়ে নাও। আমাদেরকে তো হোটেলের জন্য এবারে বেরোতে হবে।"

সিরিজা দিবাকরের চোখের ওপর থেকে চোখ সরাচ্ছে না। একনাগাড়ে ওভাবে তাকিয়ে থাকাটা দিবাকরের মনে কোনো প্রভাব ফেলছে না। দিবাকর একটু বিরক্ত হয়েই বললো, "বেশী দেরী করে ফেললে কিন্তু মুশকিল হয়ে যাবে। ওদিকে রজত কিভাবে ব্যাপারটা সামলাবে, আমি এখনো জানি না। তারপরে ওরা আবার যদি জেনে যায়, তুমি এখানে আছো। তখন আমি পড়ে যাবো আরো অস্বস্তিতে। কেউ কিছু সন্দেহ করার আগেই আমাদের চলে যেতে হবে হোটেলে। তুমি তো স্নানটা বোধহয় সেরে নিয়েছো। এবারে পুরোপুরি তৈরী হয়ে নাও। আমি ততক্ষণ স্নান সেরে রেডী হয়ে নিচ্ছি।"

সিরিজা তবু এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে পাথরের মতন। দিবাকরকে কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু সেভাবে বলার মতন শক্তিটা অর্জন করতে পারছে না।

দিবাকর বললো, "কি হয়েছে? কিছু বলবে?"

অনেক কষ্টে সিরিজা এবার মুখ দিয়ে দুটো কথা বের করলো। - "তুমি খুব রেগে আছো। তাই না দিবাকরদা?"

দিবাকর মুখটা নিচু করে নিলো। এখন ওর রেগে যাওয়াতে আর কি যায় আসে?

- "আমার কিছু করার ছিলো না, দিবাকরদা। ও, যেভাবে এসে বললো, বাড়ীতে সুখেনও নাকি চলে এসেছে। আমাকে ধরার জন্য বসে আছে। এই মূহূর্তে আমি দেখলাম, তোমার বন্ধুকে যদি মুখের ওপরে আমি না করে দিই, তাহলে হয়তো সে খারাপটা কিছু করে বসতে পারে। আমি তাকে সবই বলেছি, তুমি যে আমাকে ভালোবাসো, তাও বলেছি। কিন্তু তবু আমি ওকে কিছু বুঝতে দিই নি। পাছে রজত চটে না যেতে পারে। আমি তো ওকে শুধু সামাল দিচ্ছিলাম। একটু ঠেকনা দিচ্ছিলাম। যাতে ও কিছু সন্দেহ করতে না পারে।"

সিরিজা দেখলো, এতো কিছু বলার পরেও দিবাকর সেই মুখ নীচু করেই বসে আছে। সিরিজার কথাটায় ওর মনের কোনো পরিবর্তন হয় নি। যেন আর আগ্রহই নেই এসব ব্যাপারে। এখন শুধু রজতের কথামতন বাকী কাজটুকু ও সেরে নিতে প্রস্তুত।

সিরিজা এবার বললো, "ঘরের মধ্যে ওকে আমি ডেকে নিয়ে গিয়েছিলাম, তার জন্যও তুমি আমার ওপর চটে আছো, তাই না দিবাকরদা?"

দিবাকর এবারও চুপ।

সিরিজা বলতে লাগলো, "বিশ্বাস করো। ও আমার সাথে অনেক কিছু করতে চেয়েছিলো। আমাকে বিছানায় নিয়ে....."

দিবাকর ওকে বাধা দিয়ে বললো, "থাক না সিরিজা। কেন এসব কথা তুমি তুলছো? রজত তোমার সঙ্গে ঘরের দরজা বন্ধ করে কি করেছে বা কি করতে চেয়েছে, আমি কি দেখেছি? না তোমাকে আমি এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন করেছি?"

সিরিজা বললো, "তোমার কাছে আমি অনেক খারাপ হয়ে গেছি, তাই না দিবাকরদা?"

দিবাকর বললো, "দুনিয়ায় সবাই ভালো। আমিই শুধু খারাপ। খারাপ বলেই আমাকে এত কষ্ট সহ্য করতে হয়। আমি আবার যখন অন্যের ভালো করতে যাই, তখনো আমি খারাপ হই।"

চেয়ারটায় বসেছিল দিবাকর। ওর আর একটু কাছে এগিয়ে এলো সিরিজা। দিবাকরকে বললো, "আমি তো খারাপই। নইলে কি আর নিজের মরদটাকে ছেড়ে চলে আসতাম? দুনিয়ায় সবাই ভালো। তুমি ভালো, তোমার বন্ধুও ভালো। খারাপ শুধু আমিই। না আমি তোমার কাছে ভালো হতে পারছি, না তোমার বন্ধুর কাছে।"

দিবাকর বললো, "আমার কাছে তোমাকে ভালো হতে হবে না। তুমি রজতের কাছেই ভালো থাকো। তাহলেই হবে।"

হঠাৎই দিবাকরের পায়ের কাছে বসে পড়লো সিরিজা। দিবাকরের পা দুটো জড়িয়ে বললো, "আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি।"

দিবাকরের পা ধরে হাঁটুর ওপর মাথা রেখে সিরিজা এমন কাকুতি মিনতি করতে লাগলো, দিবাকর ভীষন অস্বস্তিতে পড়ে গেলো।

-- "এই কি করছো, কি করছো? ছাড়ো বলছি।"

দিবাকর সিরিজার কাঁধ দুটো ধরে ওর পা টাকে সরানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

মাথা সরাচ্ছে না সিরিজা। দিবাকরের পা টাকে হাত দিয়ে জাপটে ধরে রেখেছে সিরিজা। দিবাকর বললো, "শোনো শোনো, আমার কথা শোনো। আমি বুঝেছি, তুমি কি বলতে চাইছো। তুমি যেটা করেছো, সেটা না করলে রজত বিগড়ে যেতো। ও তক্ষুনি, প্রতিহিংসার বশে তোমার ক্ষতি করে দিতে পারতো। আমি তো রজতকে এই কটা দিন ধরে দেখে আসছি। তোমাকে না পেলে ও কাউকেই সেই সুযোগ পেতে দেবে না। আমাকে রজত শুরুতেই আজ এসে একটু সন্দেহ করেছে। সকালে ওর আমি ফোনটা ধরিনি। মনে মনে তখুনি রজত সন্দেহ শুরু করে দিয়েছিল আমাকে নিয়ে। এক দিক দিয়ে তুমি ওকে খুশি করেছো, এখন ও কিছুটা শান্ত।"

সিরিজা বললো, "আমি সেভাবে ওকে কোনো খুশী করিনি। তুমি বিশ্বাস করো।"

দিবাকর বিশ্বাস করলো না। কারণ ওর চোখের সামনে তখন সেই ছবিটা ভেসে উঠছে। তালা খুলে ঘরে ঢুকেছে দিবাকর। আর দেখছে, সিরিজাকে জাপটে ধরে রজত ওর বুক চুষছে। সিরিজা, রজত কেউ ওকে দেখতে পায়নি। তাই সিরিজা এখন এ কথা বলছে। কিন্তু দিবাকর তো জানে। ঘরের বাইরেই সিরিজা রজতকে যেভাবে খুশি করছিল, ঘরের মধ্যে না জানি আরো কত কিছু করেছে।

তবু ও বললো, "ঠিক আছে, ঠিক আছে, তুমি এবার তৈরী হবে কি? আমাদের কে কিন্তু এবার বেরোতেই হবে।"

দিবাকরকে অবাক করে দিয়ে সিরিজা বললো, "চলো না, হোটেলে না গিয়ে আমরা অন্য কোথাও চলে যাই। যেখানে কেউ আমাদের খুঁজে পাবে না।"

-- "মানে?"

- "মানে, তুমি আর আমি শুধু। কেউ ওখানে আর থাকবে না।"

-- "সেকী, রজত তো তাহলে তোমাকে খুব মিস করবে। পাগল হয়ে যাবে তোমার জন্য।"

- "আমি রজতকে আর চাই না দিবাকরদা, আমি শুধু তোমার সাথেই থাকতে চাই।"

-- "কি বলছো কি সিরিজা? তোমার মাথার ঠিক আছে?"

- "ঠিকই বলছি তো। কাল রাত থেকে আজ অবধি, সবকিছু একই আছে। সব ঠিক আছে। মাঝের একঘন্টা তোমার বন্ধু খালি এসেছিল। ওই সময়টুকু বাদ দিয়ে তুমি ধরে নাও, কালকের সিরিজা এখনো কালকেরই আছে। সিরিজার মন পাল্টে যায়নি।"

কিছু বুঝতে পারলো না দিবাকর। থতমত খেয়ে বললো, "কিন্তু সিরিজা, রজতকে তাহলে ঠকানো হয়ে যাবে না? ও এতো আশা নিয়ে গেছে। কি হবে তাহলে রজতের?"

সিরিজা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। যেন দিবাকর শেষ মূহূর্তে সিরিজা পরীক্ষা করে দেখে নিচ্ছে, রজতের প্রতি ওর কোনো দূর্বলতা আছে কিনা?

কিছুটা আমতা আমতা করেই ও বললো, "তুমি কি ভাবো, তোমার বন্ধু এই ঝামেলা সামাল দিতে পারবে?"

দিবাকর বললো, "কেন সামাল দিতে পারবে না কেন?"

সিরিজা বললো, "আমার মন বলছে, এই ঝেমেলা থেকে ও বেরোতে পারবে না।"

দিবাকর এবার চুপ করে রইলো। কঠিন এক পরিস্থিতি। যেন মাথা কাজ করছে না। ব্রেন অবশ হয়ে যাচ্ছে। সিরিজাকে বললো, "তুমি সত্যি বলছো?"

সিরিজা বললো, "এই তোমার শরীর ছুঁয়ে বলছি।" বলেই দিবাকর হাতের ওপর হাতটা রাখলো সিরিজা।

সিরিজার মুখের মধ্যে আবার সেই আকুতিটা ফুটে উঠেছে। দিবাকরকে পাওয়ার জন্য সিরিজা যে ছটফটানিটা দেখিয়েছিল কালকে। শেষমেশে দিবাকরও তাল মিলিয়েছিল সিরিজার সাথে। এখন আবার যেন ভেতরে ভেতরে কামনাটা জাগছে। শুধু মনে একটা প্রশ্ন, রজতের তাহলে কি হবে? কাল রেশমী আসছে। রেশমীর কি হবে?

দিবাকরের মুখ দিয়ে রেশমীর নামটা বেরিয়েও পড়লো। সিরিজাকে বললো, "কিন্তু কাল যে রেশমী আসছে, তাহলে কি হবে?"

সিরিজা বললো, "রেশমীর আসার সত্যিই কি কোনো দরকার আছে? তুমি ফোন করে ওকে না করে দিলে হবে না?"

দিবাকর বুঝতে পারছে সিরিজা ওকে পাওয়ার জন্য এতটাই আকূল যে রেশমীর প্রতিও ওর কোনো সহানুভূতি নেই। রেশমী দিবাকরের জীবনে আবার ফিরে আসুক, সেটা বোধহয় সিরিজা আর মন থেকে চাইছে না।

- "তুমি কি রেশমীকে এখনো চাও দিবাকরদা? ও আসুক ফিরে, তুমি চাও?"

দিবাকর কোনো জবাব দিতে পারছে না।

সিরিজা আবার বললো, "রেশমীকে কি তুমি এখনো ভালোবাসো?"

কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো, দিবাকর। তারপর হঠাৎই সিরিজাকে জড়িয়ে ওর ঠোঁটে, গালে, কপালে পাগলের মত চুমু খেতে লাগলো। মূহূর্তে নিজের ঠোঁটটা এক করে দিলো সিরিজার ঠোঁটের সাথে। পাগলের মত সিরিজার ঠোঁট চুষতে চুষতে বললো, "না, আমি রেশমীকে চাই না সিরিজা। আমি শুধু তোমাকেই এখন চাই।"

সিরিজা দিবাকরকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। চুম্বনের খেলা চলতে লাগলো বেশ কিছুক্ষণ ধরে। ঠিক তখনই দিবাকরের মোবাইলে রজতের ফোন এলো। দিবাকর ফোন ধরতেই রজত বললো, "কি গো? বেরিয়েছো তোমরা? তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ো। হোটেলে পৌঁছে আমাকে একটা মিস কল দিও। সময় কিন্তু হাতে বেশী নেই।"
 
।। উনচল্লিশ ।।

রজত ট্যাক্সিটা নিয়ে বাড়ীর সামনে এসে গেছে। গলির মুখে ট্যাক্সিটা ছেড়ে দিয়ে ও একটা সিগারেট ধরালো। সিগারেটটা মুখে নিয়ে স্মার্টলি টানতে টানতে ও বাড়ীর দিকে এগোতে লাগলো। যেন মনে কোনো দুশ্চিন্তা নেই, ভয় নেই। ঘরের ভেতরে এখনো যারা আছে, তাদের নিয়ে ওর কোনো মাথাব্যাথা নেই।

ঘরের সামনে এসে দেখলো দরজাটা খোলা। ভেতরে কারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, বউ রীতার গলা শোনা যাচ্ছে। আর কে একটা লোক কথা বলছে, তার গলাটা রজত আগে কোনোদিন শোনেনি। বুঝেই গেল, ওটা নিশ্চয়ই সিরিজার স্বামী সুখেনের গলা। সিরিজার শোকে গলা ফাটাচ্ছে, হয়তো রজতকেও গাল পাড়ছে।

সিগারেট মুখে নিয়েই ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ঘরে ঢুকলো রজত। সামনেই সোফার ওপরে শ্বশুড় বসে। রজতের মুখে সিগারেট দেখে ওনার কিছুটা অস্বস্তি। সিগারেটটা না ফেলেই হাতে ধরে, শ্বশুড়কে বললো, "কি ব্যাপার? আপনারা তো এখনো যান নি দেখছি। সেই থেকে বসে আছেন? আর এই লোকটিই বা কে?"

বলে রজত, সুখেনের দিকে তাকালো।

-- "আমি সিরিজার স্বামী। সিরিজাকে আমি নিতে এসেছি।"

- "কে সিরিজা?"

-- "এমন ভাব করছেন, যেন সিরিজাকে চেনেন না আপনি। কোথায় রেখে এসেছেন তাকে? বলুন শীগগীর। নইলে ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি।"

রজত ঠিক শশুড় মশাইয়ের উল্টোদিকে বসলো। একপাশে রীতা আর একপাশে দোলন তখন দাঁড়িয়ে ঠিক উল্টোদিকেই। সুখেন মাটিতে বসে আছে। রজত ওকে বললো, "তুমি যে সিরিজার স্বামী, তার প্রমান কি? সিরিজা তো বলেছে ওর কোনো স্বামী নেই।"

-- "কি বলেছে সিরিজা? ওর কোনো স্বামী নেই? বাচ্চাটাকে তাহলে কে পয়দা করলো? ভূতে? বাচ্চা সমেত এখানে পালিয়ে এসেছে। ওকে আমার চাই।"

রজত বললো, "চাই তো আমি কি করবো? ম্যাজিক করে সিরিজাকে তোমার সামনে এনে দেবো?"

রীতা ভালোমতনই বুঝতে পারছে, সিরিজাকে রজত কোথাও গায়েব করে দিয়ে এসেছে। দিবাকরের কাছেও লুকিয়ে আসতে পারে। রজতকে বললো, "সত্যি কথাটা বলে দাও না? তুমি সিরিজাকে তোমার ওই বন্ধুর বাড়ীতে রেখে এসেছো। একটা বিবাহিত মেয়েছেলে কে নিয়ে তুমি যা খুশী তাই করেছো। এখনও শখ মেটেনি তোমার?"

বলেই সুখেনের মন রেখে রজতকে, রীতা বললো, "ও কিন্তু সত্যিই সিরিজার স্বামী। তুমি যদি দিবাকরের কাছে ওকে রেখে আসো, তাহলে কিন্তু ও দিবাকরের বাড়ীও যাবে। যতক্ষণ সিরিজাকে ও কাছে না পাচ্ছে, এখান থেকে কিন্তু ও নড়বে না।"

রজত বললো, "যাক না ওখানে। কে মানা করেছে। আমি কি বাঁধা দিচ্ছি? সিরিজা যার সাথে পালিয়েছে, ও সেখানে যাক, শুধু শুধু আমার পেছনে পড়ে থাকা কেন?"

এবার শ্বশুড় মশাইয়ের ওপর চড়াও হল, রজত। রীতার বাবাকে বললো, "ভালোই লোক আপনি? খামোকা লোকটাকে এখানে ডেকে নিয়ে এসেছেন, আমাকে জব্দ করবেন বলে তাই না? এবার কিন্তু থানায় গিয়ে ডায়েরী করবো আপনাদের নামে। আপনার মেয়ে আর আপনি মিলে এসব ঝামেলা পাকাচ্ছেন, কোথাকার একটা মেয়ে, সে কিনা এসেছিলো আমার বাড়ীতে কাজ করতে। তাকে নিয়ে যেন আমারই সব মাথাব্যাথা। তার কটা পুরোনো স্বামী ছিলো, নতুন করে আবার কার সাথে সে ভেগেছে, সেটা কি আমার দেখার কথা? সিরিজা হয়তো কাউকে পছন্দ করেছে, এখন তার সাথেই ভেগে গেছে। যতসব উটকো ঝেমেলা এখন আমার ঘাড়ে।"

রীতা বললো, "সিরিজা কারুর সাথে ভাগে নি, তুমিই ওকে দিবাকরের সাথে ভাগিয়ে দিয়েছো। জানো এখানে সিরিজার স্বামী সুখেন এসে বসে আছে।"

রজত সুখেনের দিকে একবার তাকালো। ওকে বললো, "তোমারই নাম সুখেন নাকি? সিরিজা তো তোমার কথা আমাকে বেশ কয়েকবার বলেছে।"

রীতা, দোলন আর শ্বশুড়মশাই কিছুই বুঝতে পারছে না, রজত আবার মনে মনে কি চাল খাটাচ্ছে। সিগারেটের শেষ টান দিয়ে শ্বশুড়কে আবারো অস্বস্তিতে ফেলে রজত শেষবারের মতন বললো, "না, আমাকে দেখছি, এবার থানাতে যেতেই হবে, নইলে আপনারা আমার পিছু ছাড়বেন না।"

শ্বশুড়মশাই অপমানিত বোধ করছেন। একক্ষণ লাজ লজ্জ্বা ভুলে উনিও এখানে পড়েছিলেন, এবার সোফা ছেড়ে সোজা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, "আমি রীতাকে নিয়ে এখন চলে যাচ্ছি। আর তোমার কাছে আমি আসবো না, এই আমি কথা দিয়ে গেলাম। আর রীতাকেও আমি তোমার কাছে কোনোদিন ফিরতে দেবো না। এই আমি বলে গেলাম।"

মেয়েকে প্রায় হিড় হিড় করে টেনে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। রীতাকে বললেন, "এই চল, অনেক হয়েছে, আর এইসব নোংরামী আমার সহ্য হচ্ছে না।"

রীতাও বাধ্য মেয়ের মতন বাবার পিছু পিছু ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। রজত দেখলো সুখেন এখন ঘরে একা বসে। শুধু দোলন হতভম্বের মতন একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। রজত সুখেনকে আরো কাছে ডাকলো। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে ওকে বললো, "খাবে নাকি একটা? খাও। আমি দেখছি, তোমার ব্যাপারে কিছু করা যায় কিনা?"

সুখেন মুখটা এখনো খচ্চরের মতন করে রয়েছে। সিরিজার ভূত মাথায় চেপে রয়েছে, রজতের ওপর থেকেও রাগটা যায় নি। তবুও ও হাত বাড়িয়ে রজতের থেকে সিগারেটটা নিলো। মাটিতে পাছা ঘসতে ঘসতে রজতের দিকে আরো কিছুটা এগিয়ে এলো।

- "সিরিজাকে চাই?"

-- "অবশ্যই চাই। না চাইলে কি আর এখানে আসতুম? আমি সিরিজাকে আবার নিজের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই।"

- "কিন্তু ধরো, সিরিজা যদি যেতে না চায় তোমার কাছে। ফিরতে না চায়....."

-- "কে আটকাবে ওকে? তুমি? তারমানে সিরিজার সাথে তুমিই খেলাটা খেলেছো এতদিন। সত্যি কথাটা এবারে বললে।"

- "আমি তোমার বউয়ের সাথে কোনো খেলা খেলিনি সুখেন। তোমার বউই আমার সাথে খেলেছে।"

-- "তার মানে?"

- "তোমার বউ আমার বন্ধু দিবাকরের সাথে ভেগে গেছে। দিবাকর আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, সেই সাথে তোমার বউও।"

-- "বাজে কথা। তোমার এসব কথা আমি বিশ্বাস করি না। বলো, সিরিজাকে তুমি কোথায় লুকিয়ে রেখেছো?"

রজত বললো, "আমি তোমার বউকে আনতেই দিবাকরের বাড়ী গিয়েছিলাম। কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখলাম, তোমার বউ নেই। দিবাকরের সাথে ও কোথায় কেটে পড়েছে।"

দোলন যেন বিশ্বাস করতে পারছে না রজতের কথাটা। সুখেনও তাই। চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে দেখছে, রজত কত মিথ্যে কথা ওকে বলতে পারে।

রজত বললো, "বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা? তাই না? ঠিক আছে তোমার যদি বিশ্বাস না হয়, আমি তোমাকে দিবাকরের বাড়ীর ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি। ওখানে চলে যাও, দেখো, তোমার বউ সিরিজা ওখানে নেই। সত্যি সে দিবাকরের সাথে ভেগে পড়েছে।"

সুখেন দাঁতমুখ খিচিয়ে রজতকে বললো, "আমি ছাড়বো না তোমার বন্ধুকে দেখে নিও। ওরা যেখানেই পালাক, ওদের ঠিক আমি খুঁজে বার করবোই।"

রজত বললো, "খুঁজে যদি নিতে পারো, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। তবে আমি বলবো, বেকার তুমি সিরিজার পেছনে পড়ে রয়েছো। যার একপুরুষের প্রতি কখনো টান নেই। কখনো সে তোমাকে ঠকাচ্ছে, আবার আমাকেও ঠকাচ্ছে, তাকে নিয়ে তুমি এত উতলা কেন হচ্ছো? আমি তো বলবো, সিরিজাকে তুমি ভুলে যাও। আর যদি দিবাকর আর সিরিজা ওদের দুজনকে তুমি খুঁজে পাও, তাহলে দিবাকরের কাছ থেকে কিছু টাকা খিঁচে নাও। এতে তোমারই লাভ। আপদও দূর হল, আর তোমার ক্ষতিটাও কিছুটা পূরণ হল।"

সুখেন কি বলবে, কিছু ভেবে পাচ্ছে না। রজতকে বললো, "টাকা খিঁচে নেবো মানে? ওদের পেলে তবে তো?"

রজত বললো, "দেখেছো তো? এতোক্ষনে তোমার ঘটে কিছু এসেছে। আরে বাবা, সিরিজাকে পাবার জন্য তোমার হাতে যদি কেউ দশ বিশ হাজার টাকা তুলে দেয়, ক্ষতি কি? তোমার তো আরামে কয়েকমাস নিজের জীবনটা চলে যাবে। যে মেয়ে তোমার কাছে, নিজে থেকে ফিরে আসবে না। তার জন্য তোমার পকেটে যদি কেউ টাকা দিয়ে ভরিয়ে দেয়, মন্দ কি? সিরিজাকে হারানোর যন্ত্রনাটা তো কিছুদিনের জন্য হলেও তুমি ভুলতে পারবে।"

সুখেন সিগারেটটা মুখে নিয়ে কিছু চিন্তা করতে লাগলো। তারপর রজতকে বললো, "বউকে বেচে দেবো?"

রজত বললো, "বউকে তুমি বেচছো না। ধরে নাও, তোমার মুখ চেয়ে কেউ তোমার হাতে ওই টাকাটা তুলে দিচ্ছে। তুমি জানো, সিরিজা তোমার কাছে ফিরে আসবে না। কিন্তু তুমি তাকে কিছু বুঝতে দিচ্ছো না। নিজের ঘাটতি মেটাতে তুমি টাকাটা জোর করেই প্রায় তার কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছো।"

কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে সুখেন বললো, "কিন্তু আমার ওই দশ বিশ হাজারে হবে না। আমার আরো বেশী চাই।"

রজত বললো, "কত চাই?"

-- "কম করে পঞ্চাশ হাজার তো বটেই।"

মনে মনে সুখেনকে এবারে গালাগাল দিলো রজত। শালা খেতে পেলে শুতে চায়। এই একটু আগেই বলছিলো, সিরিজার জন্য ও কত কষ্টে আছে। আর টাকার কথা শুনেই, অমনি এখন দরাদরি শুরু করে দিয়েছে।

সুখেন বললো, "দেবে না পঞ্চাশ হাজার? তাহলে কিন্তু তোমার ওই বন্ধুর কপালে বেশ দুঃখ আছে।"

রজত বললো, "বেশী টাকা চাইলে কিন্তু তোমার এ কূল ও কূল দুকূলই যাবে। দিবাকর তো টাকাটা দেবেই না। উপরন্তু তুমিও ওদের কোনোদিন খুঁজে পাবে না।"

সুখেন বললো, "তুমি কি এসব তোমার বন্ধুর সাথে শলাপরামর্শ করে এসেছো না কি গো? আমি তো তোমার কথাটা ঠিক ঠাওর করতে পারছি না।"

রজত বললো, "দেখো, আমার বন্ধুর প্রতি একটা রাগ তো আছে আমার। আমি যে ভুলটা করেছি, আমার বন্ধুও সেই ভুলটাই করেছে। আর সিরিজা যে বেশীদিন ওর কাছে থাকবে না, সেটাও আমি ভালোকরে জানি। কাল যদি সিরিজা দিবাকরকে ছেড়ে অন্যকারুর কাছে চলে যায়, তুমি কার কাছে যাবে? তার জায়গায় এই ভালো নয় কি? ও তোমাকে কিছু টাকা দিচ্ছে। আর তোমারও ক্ষতিটা কিছু পূরণ হচ্ছে। বেশী টাকা চেয়ে বসলে তোমারও তাতে লোকসান। দিবাকরও তোমাকে দিতে রাজী হবে না। আর সুযোগ বুঝে সিরিজাও ওখান থেকে পালিয়ে যাবে। তোমাকে বসে বসে তখন কলা চুষতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো গতি নেই।"

সুখেন বুঝলো বেশ কোনঠাসা অবস্থায় পড়ে গেছে ও। রজতকে বললো, "কিন্তু তোমার বন্ধুকে আমি পাচ্ছি কোথায়? তুমি তো বলছো, সিরিজাকে নিয়ে ও নাকি কোথাও ভেগে পড়েছে। তাহলে সে আমার সামনে আসবে কি করে? নাকি সিরিজাকে তুমি কাছে রেখে, এই খেলাটা তুমি খেলতে চাইছো। আমাকে বন্ধুর নাম করে তুমি মিথ্যে কথা বলছো।"

রজত বললো, "তুমি এক কাজ করো, পরপর বেশ কিছুদিন তুমি এ বাড়ীতে এসো। আমাকে রোজই পাবে তুমি। কিন্তু সিরিজাকে দেখতে পাবে না। ও যার সাথে যাবার, তার সাথেই ও চলে গেছে।"

মাথায় দু হাত রেখে সুখেন বললো, "আমার তাহলে কি হবে?"

রজত বললো, "দিবাকরের যতক্ষণ না কোনো খোঁজ পাচ্ছি, তোমাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আমার মনে হচ্ছে, দিবাকর একদিন না একদিন আমাকে ঠিকই ফোন করবে।"

সুখেনের মাথা কাজ করছে না। রজতকে বললো, "আমি কি তাহলে এখন চলে যাবো?"

রজত বললো, "তুমি দুদিন বাদে ঠিক আমার কাছে একবার এসো। আমি যদি তার মধ্যে সিরিজা আর দিবাকরের কোনো খোঁজ পাই, তোমাকে নিশ্চয়ই আমি জানাবো।"

যেভাবে হম্বিতম্বী করে গলা ফাটিয়ে সিরিজার খোঁজে সুখেন এখানে এসেছিলো। রজতের মোক্ষম চালে একেবারে কুপোকাত হয়ে গেলো। সুখেন তো কিছু বুঝতেই পারলো না। উপরন্তু দোলনও বুঝলো, রজত মনে হয় সত্যি কথাটাই এবার বলছে। কারন কথা বলতে বলতে বারে বারে দোলনের দিকে তাকাচ্ছে রজত। যেন সিরিজার মায়া ত্যাগ করে এবার দোলনের প্রতি পুরোপুরি আকর্ষিত হচ্ছে রজত। বলা যায় না, ফ্ল্যাটটা পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে গেলে দোলনকে নিজে থেকে একটা চুমুও খেতে পারে রজত। ওকে একটু বিছানায় নিয়ে মস্তি পর্ব সারতে পারে রজত। দোলন তো এটাই রজতের কাছ থেকে আশা করেছিলো।

সিগারেটের শেষ টানটা মেরে সুখেন রজতকে বললো, "তুমি কি আমাকে টাকা দেবে কিছু? তাহলে একটু সুবিধে হতো আমার।"

রজত অবাক চোখে চেয়ে আছে সুখেনের দিকে। শালা জাতে মাতাল অথচ সেয়ানা কম নয়।

রজত জানে এক বোতল বিদেশী মদের পয়সা দিলে এক্ষুনি সুরসুর করে রজতের পায়ের ওপরে এসে পড়বে সুখেন। সিরিজা প্রিয়, না মদ প্রিয় সেটা একবার যাচাই করে নেবার জন্য রজত সুখেনকে বললো, "তুমি তো খুব মদ খাও শুনেছি। তা এখন কি সিরিজার দূঃখে মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছো? না ওটাও চলছে সাথে সাথে।"

সুখেন বললো, "ওই মেয়ের জন্য মদ খাওয়া ছাড়ব কোন দূঃখে? এহ,সিরিজাই যেন আমার জীবনের সব! ওরকম মেয়ে চাইলে আরো জোটাতে পারি আমি। আমি তো শুধু জেদ ধরে বসে আছি। নইলে কবেই ওর মতন আর একটা জুটিয়ে নিতুম।"

রজত বললো, "সেটাই করো না তাহলে। বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আমি এখন তোমাকে দু বোতলের দাম দিচ্ছি। পরে দেখছি, দিবাকরের কাছ থেকে যদি কিছু আদায় করা যায়।"

মানিব্যাগ থেকে পাঁচশ টাকার একটা নোট বার করে সুখেনের হাতে দিল রজত। দোলন তখন পাশে দাঁড়িয়ে। সবই দেখছে, সুখেনের মুখের আদলটা কেমন পরিবর্তন হয়ে গেল, দোলন ওটাও লক্ষ্য করলো।

সুখেন টাকাটা নিল, পকেটে ঢোকালো। রজতকে বললো, "তুমি তাহলে খবর কি করে দেবে? আমি কি করে জানতে পারবো?"

রজত বললো, "তুমি এক হপ্তাহ পরে এসো। আমি ততদিনে তোমার জন্য একটা ব্যবস্থা করে রাখছি।"

সুখেন বললো, "তুমি সত্যি বলছো তো? আমাকে ঝোলাবে না তো?"

রজত বললো, "এক হপ্তাহ পরে এসো, তাহলেই বুঝতে পারবে, আমি তোমাকে ঝোলাচ্ছি কিনা? আমি সত্যি বলছি না মিথ্যে বলছি, সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। সিরিজার উপর রাগ তো তোমার একার নেই। রাগ আমারো আছে। বিশেষ করে আমার ওই বন্ধু দিবাকরের ওপরেও। সিরিজার সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমার সঙ্গে ওই তো খেলাটা খেলেছে। আমি কি নইলে এতো কষ্ট পেতাম? না তুমিও আফসোসটা করতে?"

সুখেন বললো, "দাও না তোমার ওই বন্ধুকে দুই থ্যাবড়া। আমার বউকে নিয়ে ফুর্তী বেরিয়ে যাবে।"

রজত বললো, "আবার তুমি ভুল করছো সুখেন। বন্ধুকে শত্রু বানিয়ে আমি হয়তো আমার রাগ মেটাতে পারি। কিন্তু তাতে হরে দরে লাভ আমারো কিছু হবে না, তোমারো কিছু হবে না। মাঝখান থেকে সিরিজাও বেগতিক দেখে আমার বন্ধুর কাছ থেকে সরে পড়বে। আর তোমার টাকাটা নেওয়াও তখন হবে না।"

ঘাড় নেড়ে সুখেন এবার রজতের কথাটায় সায় দিল। এতক্ষণ মেঝেতে বসেছিল, "এবার উঠে দাঁড়িয়ে বললো, এবার তাহলে আমি যাই। কয়েকদিন পরে না হয় আবার আসছি।"

রজত বললো, "কয়েকদিন পরে নয়। ঠিক এক হপ্তাহ পরে তুমি আসবে, তারমধ্যেই আমি একটা ব্যবস্থা করে রাখছি।"

সুখেন ঘাড় নেড়ে ঘর থেকে এবার বেরিয়ে গেল। যাবার আগে দোলনের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখে গেল। মুখে বললো, "এ যাত্রা বেঁচে গেলি তুই। শালা সব মাইয়া গুলো একরকম। পরপুরুষ দেখলেই, নিজের ঘর ভাঙতে এক মূহূর্ত দেরী করে না।"

রজত জানে, সুখেনকে ও সাইজ করেছে। এবার দোলনকেও ঠিকমতন সাইজ করতে হবে। কিন্তু দোলনকে সাইজ করার পদ্ধতিটা একটু অন্যরকম ভাবে নিতে হবে। যাতে ও কিছু বুঝতে না পারে।

ঠিক এই মূহূর্তে দোলন যেটা আশা করছে, ওর ঠোঁটে একটু চুমুর ফুলঝুড়ি, দুষ্টু মিষ্টি শরীরি আদর, সিরিজাকে রজত যেভাবে করত, নগ্ন শরীরটাকে বিছানায় টেনে নিয়ে গিয়ে উপর থেকে নীচ অবধি সমানে চেটে যেত। বিছানায় রতিসঙ্গমের জোয়ার চলত, রজত ঠিক সেভাবেই শুরু করবে এবার খেলাটা। দোলন ওরকমই কিছু একটা ভাবছে। শুধু সোহাগ আদরের নারীটা কেবল বদলে গেছে। আগে সিরিজা যে জায়গাটায় ছিল, এখন ওখানে শুধু দোলন এসে গেছে।

সুখেন বেরিয়ে যাবার পর রজত কিন্তু অন্য কথা বললো দোলনকে। দোলন বুঝতে পারছে, এবার ওর তড়পানি সব শেষ। রজতকে ভয় দেখিয়ে দোলন যে কাজটা করবে বলে ঠিক করেছিল, রজত নিজেই এখন সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে গেছে।

সুখেন বেরিয়ে যাবার পর, প্রথমে দোলনের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো রজত। আপাদমস্তক, দোলনের উপর থেকে নীচ অবধি পুরো শরীরটাকে নিরীক্ষণ করলো, অনেকক্ষণ ধরে। দোলন যেটা ভাবছে তা নয়, রজতের কোন লোলুপ বাসনা নেই, অথচ দোলনের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, ব্যাচারা কি হবে এখন মেয়েটার? এত আশা করে এখানে এসেছিল, সব যে জলে চলে গেল।

রজত দোলনকে বললো, "নাও, তোমার মনোস্কামনা এবারে পূর্ণ হল। তুমি তো এটাই চেয়েছিলে, আমাকে জব্দ করবে, আমার স্ত্রী আর শ্বশুড়ের কাছে, সিরিজা আর আমার সম্পর্ক নিয়ে কান ভারী করবে। ওদিকে সুখেনও তোমার হাতের মুঠোয়। তাকে সব লাগাবে। এক ঝটকায় আমাকে বিপদে ফেলতে তোমার একমূহূর্ত দেরী হবে না। এখন কেমন? আর কিন্তু আমার কোন বিপদ নেই। সব হালকা হয়ে গেছে। সিরিজাই আমাকে হালকা করে দিয়েছে। এবারে যদি গলা ধাক্কা দিয়ে তোমাকে এই ফ্ল্যাট থেকে বার করে দিই, তুমি কি করবে?"

দোলন চুপ। রজতের কথা শুনে ওর মুখ দিয়ে আর আওয়াজ বেরুচ্ছে না।

রজত বললো, "এক কাজ করো। পোঁটলাপুঁটলি সব গুছিয়ে নাও। এবার তাহলে বিদেয় হও।"

দোলন মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে আছে।

রজত বললো, "কি হল? আমার কথা কানে ঢুকেছে?"

দোলন বললো, "কোথায় যাবো আমি? আমার তো যাবার কোন জায়গা নেই।"

রজত বললো, "কোথায় যাবে মানে? তুমি কি এখানে সারাজীবন কাটাবে বলে এসেছিলে নাকি? কি কথা হয়েছিল তোমার সঙ্গে?"

দোলন একটু কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, "সিরিজা তো এখন নেই। আমি থাকি না তোমার কাছে? তোমার কাজকর্ম সব করে দেবো। ফাইফরমাস খেটে দেবো। তোমার কাজের জন্যও তো কাউকে দরকার।"

রজত বললো, "না না, কাউকে আমার দরকার নেই। সিরিজা গেছে, এবার তুমিও যাও।"

দোলন বেশ হতাশ হয়ে মাথাটা নিচু করে ফেললো।

রজত বললো, "আমি অবশ্য তোমাকে দুদিন টাইম দিচ্ছি। এক্ষুনি যেতে বলছি না।"

দোলন বললো, "দুদিন সময় কেন?"

রজত বললো, "দুদিন পরে আমি তো বাইরে যাবো ঘুরতে। তখন তো তোমাকে যেতেই হবে।"

দোলন বললো, "তবে যে সুখেনকে তুমি আসতে বললে এক হপ্তাহ পরে। ও এলে কি হবে?"

রজত বললো, "কিছুই হবে না। আমি তার আগেই আবার ঠিক ফিরে চলে আসবো। তোমাকে এই খালি ফ্ল্যাটে কিভাবে রেখে দিয়ে যাবো বলো? তোমার নিজের ব্যবস্থা নিজেকেই তো করে নিতে হবে, তাই না?"

দোলনের মুখ এখন প্রচন্ড ফ্যাকাসে। ভেতর থেকে উৎসাহ, উদ্দীপনা সব একে একে চলে যাচ্ছে। ঠিক যেন কামনার বাতি নিভে যাবার মতন রজত ওর এই হাল করে ছেড়েছে। শরীর থেকে সব বাসনা উধাও। হতাশা ক্রমশ ঘিরে ধরছে দোলনকে। রজতও বুঝতে পারছে, দোলন এবার কেমন কোনঠাসা হয়ে পড়েছে।

রজতের প্রায় পায়ের ওপর এসে হুমড়ি খেয়ে পড়লো দোলন। এবার আর শরীর দেখিয়ে রজতকে উস্কানো নয়, রীতিমতন কাকুতি মিনতি করে রজতের দয়া ভিক্ষা করে বললো, "আমাকে দয়া করো। এক্ষুনি আমাকে এখান থেকে তাড়িয়ে দিও না।"

দোলনকে মাটি থেকে তুলে নিজের পাশে বসালো রজত। কি হয়েছে?

-- "আমার কোন যাবার জায়গা নেই। কোথায় যাবো আমি? কি খাবো আমি? দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার জন্যও তো কাজটাজ করা একটা দরকার। তুমি তো জানো আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, এ অবস্থায় আমার যে তাহলে ভীষন বিপদ হয়ে যাবে গো।"

রজত মনে মনে বললো, "এবার পথে এসো ছুঁড়ী! কেমন মজা?"

তবু ও দোলন কে বললো, "তা, আমি কি করবে তাহলে?"

-- "তুমি আমাকে আরও কিছুদিন সময় দাও।"

- "কতদিন?"

-- "অন্তত হপ্তাহ খানেক।"

- "সুখেন আবার এলেই তখন ঠিক চলে যাবে তো তুমি?"

-- "হ্যাঁ ঠিক চলে যাবো।"

- "কিন্তু এই খালি বাড়ীতে তোমাকে তো একা থাকতে হবে, কয়েকটা দিন। তুমি পারবে তো?"

দোলন বললো, "হ্যাঁ পারবো। আমার অসুবিধে হবে না।"

রজত বুঝলো, দোলন এখন নিরুপায়। রাজী না হয়ে এখন ওর উপায় নেই। মনে মনে যেটা ভেবেছিল, সবকিছু সেভাবেই এগোচ্ছে। একদম পারফেক্ট মিলে গেছে প্ল্যানটা। সুখেন ফিরে আসা পর্যন্ত দোলনকে এই ফ্ল্যাটে একা রাখলেও অসুবিধে নেই। ফাঁকা বাড়ীতে ও একা থাকবে। বসে বসে ওর ফ্ল্যাট পাহাড়া দেবে। আর রজত তখন সিরিজাকে নিয়ে.....

রজত বললো, "তাহলে ওই কথাই রইলো। তুমি আজ থেকে ঠিক সাত দিন সময় পাচ্ছো। মনে মনে প্রস্তুত হয়ে নাও।"

দোলন এবার রজতকে একটু সহানুভূতি দেখানোর মতো করে বললো, "সিরিজা তো নেই। তাহলে তোমার কাটবে কি করে?"

রজত একবার ভূরু কূঁচকে তাকালো দোলনের দিকে। বললো, "মানে?"

দোলন বললো, "না..... মানে..... আমি এমনিই বলছি।"
 

Users who are viewing this thread

Back
Top