আমাদের সমাজে অনেক মহিলাই বাড়িতে ইতিকাফ করতে চান। কেউ কেউ তার চাইতে এক কাঠি বেড়ে বাড়িতেই মশারী টানিয়ে বসে যান ইতিকাফ করার জন্য। যেটা ধর্মীয় বিধি মোতাবেক একেবারেই ঠিক নয়। অনেকের মতে মহিলাদের হায়েযের কারনে নাপাক থাকার প্রেক্ষিতে মসজিদে অবস্থান দোষনীয় কিংবা পাপের কারন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আদতে এরকম কোন বিধান কোথাও বিবৃত হয়নি। অতএব, সে কারনেও মহিলাদের মসজিদে অবস্থানের বিপক্ষে কোন সুস্পষ্ট প্রমান নেই। যেহেতু নবী (সাঃ) এর বিবিগন মসজিদে ইতিক্বাফ করেছেন মর্মে প্রমান আছে, সেহেতু পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সহ আনুসাঙ্গিক বুবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে মহিলাদের মসজিদে ইতিকাফে কোনো বাঁধা নেই। যদি কেউ এই বিষয়ে মতপার্থক্য সৃস্টি করে তবে নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে সহিহ সনদে প্রমান উপস্থাপন পুর্বকই করা উচিৎ। অন্যথায় এই মতপার্থক্য কোনোভাবেই গ্রহণযগ্য হবে না...
প্রশ্ন: কোন বিবাহিতা মহিলা স্বামী-সন্তান ফেলে অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত অন্যের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে ঐ মহিলা পিতার সম্পদের অংশ পাবে কি? তাকে পিতার বাড়ীতে জায়গা দেওয়া যাবে কি?
উত্তর: তার উক্ত বিবাহ সিদ্ধ হয়নি। সে ব্যভিচারী এবং মহাপাপী। কিন্তু সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়নি। অতএব পিতার সম্পত্তি পেতে তার বাধা নেই। পিতার বাড়িতেও তার অংশ রয়েছে। তবে সে যেহেতু শরী‘আত বিরোধী কর্মের সাথে জড়িত হয়েছে অতএব তওবা ব্যতীত তার গোনাহ মাফ হবে না (ফুরক্বান ২৫/৬৮-৭০)।
বর্তমান সময়ে অভিবাবকদের অনুমতি ছাড়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নির্দ্ধিধায় ঘর সংসার করছেন এমন দম্পতির সংখ্যা একেবারে কম নয়। দিন দিন এই সংখ্যা শুধু বেড়েই চলেছে। এর জন্য আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা থেকে নিয়ে সাধারন মানুষের ধর্মীয় সচেতনতার অভাব বড় একটা ভুমিকা পালন করে বলেই অনেকের মত। সেই সাথে ধর্মীয় জ্ঞান তথা শরীয়ত সম্মন্ধে লোকজনের অজ্ঞতাও একটা বড় কারন। পাশাপাশি শরীয়তের জ্ঞান যাদের মাঝে আছে, তাদের বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য থাকার কারনে সাধারন মানুষের কাছে তারা তাদের সেই লব্ধ জ্ঞানটুকু সঠিকভাবে পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছেন না। সাধারন মানুষও অনেক ক্ষেত্রে তাদের দেয়া ফতোয়ায় (মতানৈক্য থাকার ফলে) ঠিক ভরসা করতে পারছে না। এহেন পরিস্থিতিতে অভিবাবকের অনুমোদন বিহীন বিবাহকে অনেকেই খুব স্বাভাবিক একটা বিষয় ভেবে নিয়েছেন। আসলে এটা কোন সাধারন বিষয় নয়। বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে যেহেতু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপনই মূল কথা নয়, বরং তাদের মাধ্যমে আগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এর সাথে জড়িত, তাই এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সাধারন বিষয় ভাবা কোনো মতেই ঠিক নয়। প্রত্যেক ধর্মেই বিবাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টিকে ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এর জন্য বেশ কিছু অবশ্য পালনীয় কর্মকান্ড বিধিভুক্ত করা হয়েছে, যাতে করে এই বিষয়টির প্রতি কেউ উদাসীন না হন। ইসলাম ধর্মে বিবাহ যায়েয বা বৈধ হওয়ার জন্য বিবাহ পূর্ব কন্যার পিতার অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পিতার বর্তমানে তার অনুমতি কিংবা অনুমোদন ব্যাতিরেকে কোনো বিবাহ বৈধ হবে না। যদি কেউ পিতার অনুমতি ছাড়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দাম্পত্য জীবনের অংশ হিসাবে স্বামী সহবাস করে, তবে সেটা ব্যাভিচারের আওতায় পড়বে। ঠিক একই কারনে তাদের মাধ্যমে জন্ম নেয়া শিশু জারজ শিশু হিসাবে জন্ম লাভ করবে।...
প্রশ্ন: স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীকে কত দিন ইদ্দত পালন করতে হবে? ইদ্দত পালনকালে সে তার পরিহিত অলংকার খুলে রাখবে কি এবং এসময়ে সে কোন আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে যেতে পারবে কি? ইদ্দত পালনকালে তাকে কি স্বামীর বাড়ীতেই অবস্থান করতে হবে?
উত্তর: ইদ্দতের সময়কাল চার মাস দশ দিন। তবে গর্ভবতী থাকলে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩২২৯-৩১; সূরা তালাক ৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ ‘ইদ্দত’ অনুচ্ছেদ)। এ সময় স্বামীর বাড়ীতে অবস্থান করবে। একান্ত যরূরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবে না। অধিক সৌন্দর্য প্রকাশক কোন পোষাক বা গহনা পরিধান করবে না। অলঙ্কার ব্যবহার করবে না। বিশেষ কারণ ব্যতীত সুগন্ধি, সুরমা, মেহেদীও ব্যবহার করবে না (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৩৩১; আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩৩৩২-৩৪)। উল্লেখ্য যে, স্বামী মৃত্যুর সাথে সাথে স্ত্রীর নাকফুল খুলে রাখার রেওয়াজ অনেকটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ের হয়ে যায়। এটি তেমন কোন সৌন্দর্য প্রকাশক অলংকার নয়। বরং স্বাভাবিক সৌন্দর্যের মধ্যে পড়ে, যা গ্রহণীয়।
অনেক পরিবারেই স্বামী মারা যাবার পরপরই স্ত্রীর নাক থেকে নাকফুল সহ অন্যান্য গহনাদি খুলে ফেলার একটা ভ্রান্ত রেওয়াজ প্রচলিত আছে। এটা অনেকটা হিন্দুয়ানী প্রচলের মতো। হিন্দু পরিবারে স্বামী মারা যাবার পর তার হাতের শাঁখা ভেঙ্গে ফেলা কিংবা খুলে ফেলা হয় সেই সাথে মৃত স্বামীর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের মাধ্যমে কপালের সিঁদুর মুছে ফেলে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের মুসলিম সমাজেও স্বামীর মৃত্যুর পর অনেকেই স্ত্রীর নাক থেকে নাকের অলঙ্কার খুলে ফেলার পক্ষে বলে থাকেন। যা ধর্মীয় কোনো নিয়মের অংশ নয়। কেউ কেউ আরেকটু বাড়াবাড়ি করে বলে থাকে যে, স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর নাকফুল ব্যবহার করা গুনাহের কাজ। আদতে এই ধরনের কোনো বিধান ধর্মের কোথাও নেই। বরং এটি একটি কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদেরকে এই ধরনের কুসংস্কার থেকে দূরে থাকতে হবে, সেই সাথে সঠিক ধর্মীয় বিধান মেনে চলতে হবে...