What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (1 Viewer)

Chapter 1: জলপরীর আগমন। (#2)

“রাগে ওর ঠোঁট কাঁপতে শুরু করে, দুচোখ রাগে চিকচিক করতে শুরু করে। তারপরে আমার দিকে চেঁচিয়ে বলে, কি করে তুই ভুলে যাস শুচিদির কাছে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলিস? শূওর, কুকুর, তুই একটা নোংরা ছোটো লোক। তোকে আমি এতদিন ধরে অনুসূয়ার কাছ থেকে আগলে রাখলাম আর তুই কিনা শেষ পর্যন্ত দুই নিচ মেয়েছেলের কবলে গিয়ে পড়লি? তোর একবারের জন্যেও শুচিদির কথা মনে পড়লোনা? তোর বুকের মধ্যে হৃদয় বলতে কিছু আছে না সেটাও নেই? শুধু মেয়েদের সাথে বিছানায় শুতে পারলে যেন তোর প্রানে শান্তি হয় তাই না? সব পুরুষ মানুষ এক তাই আমার ধারনা ছিল, কিন্তু তোকে দেখে একবারের জন্যেও মনে হয়েছিল যে আমি ভুল। কিন্তু তুই কুকুর আমার সেই বিশ্বাস ভেঙে দিলি।”

“পুবালি কিছুই বুঝতে পারছিল না কি ঘটেছে। ও হতবাক হয়ে আমাদের দুজনকে দেখে যাচ্ছে। আমার মুখে কোন কথা নেই, আমি কি উত্তর দেব অরুনাকে, আমি পাপ করেছিলাম আর তার শাস্তি আমাকে পেতেই হতো। অরুনা আমাকে বললো, তুই একবারের জন্যেও শুচিদির কথা ভাবিসনি, শুচিদির বুক ফেটে যেতে পারে সে কথাও তুই ভাবিসনি।”

“আমি মেঝের দিকে তাকিয়ে, দু চোখ দিয়ে টসটস করে জল গড়াচ্ছে আমার। আমি চোখ বন্ধ করে মনে মনে মা ধরিত্রিকে প্রার্থনা করে চলেছি যে মা ধরিত্রি দ্বিধা হও, আমাকে নিজের কোলে টেনে নাও। অরুনা আমার চিবুকে আঙুল স্পর্শ করে আমার মাথা উঠিয়ে দেয়। আমার চোখের জল দেখে রাগ কিছুটা কমে যায় ওর। আমাকে চোখ খুলে ওর দিকে তাকাতে বলে।”

“আমি জল ভরা চোখ নিয়ে ওর দিকে তাকাই। আমাকে বললো, তুই একটা মস্ত বড় কুকুর, কিন্তু খুব ভাল কুকুর যে শেষ পর্যন্ত শুচিদির মান রেখেছো, আর সেই জন্যেই আমি তোর ওপরে রাগ করেও করে থাকতে পারলাম না রে। কুত্তা, তুই তো সব পয়সা ওই নিচ মেয়েছেলেদের পেছনে খরচ করে দিয়েছিস, আমি জানি তোর কাছে চশমা ঠিক করার মতন পয়সা নেই। আমার সাথে লালবাজার চল, ওখানে অনেক চশমার দোকান আছে। ওর কথা অমান্য করার সাধ্য আমার ছিল না আর আমার নতুন চশমা হলো। বাড়িতে মা জিজ্ঞেস করলেন যে আমার চশমা কি হলো, আমি জানালাম যে কলেজে পড়ে ভেঙে গেছে তাই নতুন বানানো হয়েছে।”

পরী অভির সব কথা শুনে চুপ করে থাকে। দুজনেই অনেকক্ষণ চুপ। কিছু পরে পরী বললো, “আমি অরুনার সাথে দেখা করতে চাই, কবে দেখা করাচ্ছো?”

অভিঃ “আরে বাবা, আজ সারাদিন অরুনা আর পুবালি আমার বাড়িতেই ছিল। আমি ওকে বলেছিলাম থেকে যেতে যাতে তোমার সাথে দেখা হয়, কিন্তু ও আমাকে বললো যে ও তোমার সাথে বাইরে কোথাও দেখা করতে চায় যাতে তোমাদের দেখা হওয়া স্মরণীয় হয়ে থাকে।”

পরী মৃদু মাথা নাড়ালো, কানের সোনার দুল নড়ে উঠল আর মৃদু হলদে আলোয় ঝকমক করে উঠলো। পরী, “কি চিন্তা করছে অরুনা?”

অভি পরীর বুকে নাক ঘষে, “আমি কি করে জানব বলো।”

অভি ঠোঁট ছোটো গোল আকার করে গরম নিঃশ্বাস ছাড়ে পরীর বুকের খাঁজের ওপরে। উষ্ণ নিঃশ্বাস পরীর বুকে কম্পন জাগিয়ে তোলে, অভির শক্ত বাহু পাশে পরী কেঁপে ওঠে। ও মাথা নিচু করে অভির কপালে কপাল ঠেকিয়ে কপোত কুজনের সুরে বলে, “আমাকে কি দাঁড় করিয়েই রেখে দেবে?”

অভি ওকে আরও জোরে চেপে বলে, “না সোনা, আমি কেন তোমাকে দাঁড় করিয়ে রাখবো। আমি তোমার এ বাড়ি তোমার, তুমি যেখানে খুশি বসতে পারো।”

পরীঃ “তুমি যদি আমাকে না ছাড়ো তাহলে আমি বিছানায় বসে তোমার সাথে গল্প করবো কি করে?”

অভিঃ “বিছানায় কেন হানি, আমার কোলে বসো।”

পরী ঠোঁটে দুষ্টু মিষ্টি হাসি মাখিয়ে বলে, “আর আমি যদি তোমার কোলে বসি তাহলে তুমি আমার কি করবে?”

অভিঃ “আমি কি করবো, কিছুই করবো না।”

পরীঃ “তুমি বলতে চাও যে তুমি কিছু করবে না আর আমি তোমাকে বিশ্বাস করে নেব?”

অভিঃ “হ্যাঁ বিশ্বাস করে নাও, যদি না চাও বিশ্বাস করতে তাহলেও আমার কিছু করার নেই।”

অভি ওর বাহুপাশের বাঁধন আলগা করে। পরী একটু সরে অভির কোলের ওপরে বসে পড়ে, দুপা ডান দিকে করে আর বাঁ হাতের ওপরে পিঠ দিয়ে। অভি বাঁ হাত ওর পিঠের ওপরে দিয়ে ওর ভার নেয় আর ডান হাতে পরীর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে। পরী ডান হাতে অভির গলা জড়িয়ে ধরে থাকে আর বাঁ হাত দিয়ে ওর কাঁধে আলতো করে রেখে দিয়ে আরাম করে অভির কোলে বসে। অভির অনাবৃত জানুর ওপরে পরীর পাতলা কাপড়ে আচ্ছাদিত কোমল নিতম্ব, মৃদু চাপে দুজনেই যেন সাগরে ভেসে যায়। অভির বাঁ হাতের অবাধ্য আঙুল পরী ডান বক্ষের কোমল ঢিবির ওপরে মৃদু মৃদু চাপ দেয়। পরী গভীর চোখে অভির দিকে তাকায়, মৃদু উত্তেজনায় নাকের ডগা লাল হয়ে ওঠে।

মাথ উঁচু করে মিষ্টি লাল ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে আসে অভি। পরী চোখ বন্ধ করে নিয়ে ঠোঁট খুলে অভির ঠোঁট জোড়ার ওপরে গভীর এক চুম্বন এঁকে দেয়। অভি ওর ওষ্ঠ ঠোঁটের মধ্যে নিয়ে আলতো করে চুষতে শুরু করে, পরী অভির অধর ঠোঁটের মাঝে নিয়ে মৃদু চাপ দেয়। ঠোঁটে ঠোঁটে আগুন জ্বলে ওঠে। অভির বাহুপাশ আরো দৃঢ় করে ধরে পরীর কোমর, পরীর কোমল বুক পিষে যায় অভির অনাবৃত বুকের ওপরে। প্রবল অনুরাগে দুজনের শরীর থেকে প্রেমের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হয়। বাঁ হাতে অভির কাঁধ চেপে ধরে ঠোঁট জোড়া আর পিষে দেয় অভির ঠোঁটের ওপরে। মুখ অল্প খুলে অভির মুখের ভেতর থেকে হাওয়া চুষে নেয়। অভির মুখের ভেতর শুকিয়ে যায়, আর অভি জিব ঢুকিয়ে দেয় পরীর ঠোঁটের ভেতরে। জিবের ডগা পরীর মাড়ির ওপরে আলতো করে বুলিয়ে দেয়। সেই অদ্ভুত অনুভুতির স্পর্শে পরীর শরীর শক্ত হয়ে ওঠে। নিঃশ্বাস ধিরে ধিরে উত্তপ্ত হয়। বুকের মাঝে যেন হাঁপর টানছে কেউ।

অভি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরীকে কোলের ওপরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। পরীর নরম বুক চেপটে যায় অভির নগ্ন বুকের ওপরে। অভির মনে হয় যেন কেউ ওর বুকের ওপরে তপ্ত মাখনের প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে। অবাধ্য ডান হাতের আঙুল পরীর উন্নত বুকের নিচে চেপে ধরে। পরী অনুভব করে অভির আঙুল ওর বুকের ঠিক নিচে ধিরে ধিরে ওর বুকের কাছে এগিয়ে চলেছে। আসন্ন উত্তেজনায় ডান কাঁধের ওপরে নখ বসিয়ে দেয় পরী। চুম্বনে চুম্বনে প্রেমাবেগে উত্তপ্ত কপোত কপোতী যেন ঠোঁটের যুদ্ধে লিপ্ত হয়, কে কাকে বেশি ভাল করে চুমু খেতে পারে তার পরীক্ষা শুরু হয় যেন। কেউ কারুর ঠোঁট ছেড়ে দিতে নারাজ।

ঠোঁটের খেলা বেশ কিছুক্ষণ চলার পরে পরী চোখ খুলে ওর দিকে তাকায়, দুজনের বুকের মাঝে উত্তেজনায় শ্বাস ফুলে ওঠে। অভির কান প্রচণ্ড আবেগে লাল হয়ে যায়। প্রবল আকাঙ্খায় পরীর সারা শরীর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরী আধবোজা চোখে অভির চোখের দিকে তাকায়।

কোনোক্রমে অভি শ্বাস নিতে নিতে ফিস ফিস করে বলে, “আমি তোমাকে অনেক অনেক মিস করেছি, হানি।”

পরী মৃদুকন্ঠে উত্তর দেয়, “আমিও সোনা, তোমাকে অনেক মিস করেছি।”

অভি ওর মুখের ওপরে মৃদু উষ্ণ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “সোনা আমার ভেতরের আগুন টের পাচ্ছো কি?”

পরীর গালে প্রেমের লালিমা লেগে, মৃদু মাথা নাড়ায় পরী, হ্যাঁ, ও অভির উত্তপ্ত কঠিন আগুনের পরশ নিজের নিচে অনুভব করতে পারছে, নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মনের উচ্ছাস দমন করে নেয়।

ডান হাত পরীর হাতুর নিচে দিয়ে নিয়ে গিয়ে পরীকে পাঁজাকোলা করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় অভি। পরী ওর কাঁধে মুখ লুকিয়ে নেয়। অভি ওকে কোলে উঠিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। পরীর নরম আঙুল অভির নগ্ন বুকের ওপরে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে, আগুনের ফুল্কি নির্গত হয়ে আঙুলের ছোঁয়ায়। দুজনের চোখ নিশ্চুপ হয়ে কথা বলে, একে ওপরের মনের অবস্থা জানিয়ে দেয়, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যেন এক প্রেমাবেগের সেতু বন্ধন তৈরি হয়।

অভি ওর কোমরের দুপাসগে হাত রেখে ঝুঁকে পড়ে পরীর মুখের ওপরে, আরও একবার ওই লাল মিষ্টি ঠোঁটে চুমু দেবার জন্য। পরী দুষ্টুমি করে গড়িয়ে বিছানার আরেক পাশে চলে যায় আর পেটের ওপরে শুয়ে পরে বুকের ওপরে বালিশ চেপে ধরে। সারা মুখের ওপরে চুল ছড়িয়ে পড়ে, মনে হয় যেন মেঘে চাঁদ ঢেকে গেছে। ওর মিষ্টি হাসি যেন অভিকে উত্তক্ত করে তোলে।

পরীঃ “আমি জানতাম যে তুমি আবার আমার সাথে দুষ্টুমি শুরু করবে।”

প্রেমোচ্ছাসের ফলে শ্বাস বর্ধিত হয় পরীর, পিঠে ধিরে ধিরে ওঠা নামা করতে থাকে। অভি ওর দিকে তাকায়, উঁচু হয়ে ওঠা কাঁধ, বেকে নেমে আসে পাতলা কোমরে আর তারপরে বেঁকে ফুলে যাওয়া পুরুষ্টু নিতম্বে ঠিক যেন সারা শরীর সাগরের এক মস্ত ঢেউ। অভি পরীর দিকে চার হাত পায়ে এগিয়ে যায়, পরী বাঁ হাতের আঙুল মেলে ধরে অভির মুখের ওপরে আর ঠেলে দেয় অভিকে। অভি পরীর হাতের তালুতে ঠোঁট চেপে ধরে।

পরী ফিসফিস করে বলে, “অভি, হানি, আর আমাকে উত্যক্ত কোরো না, আমার আবেগ আর জাগিয়ে তুলো না, প্লিস।”

অভি বলে, “কেন বেবি? আমি যে বিগত তিন মাস ধরে অভুক্ত, আমার ভেতরে রক্ত টগবগ করে ফুটছে তর সাথে তোমার রক্তও ফুঠছে। কেন দুরে সরে থাকো, প্লিস কাছে এসে আমাকে বুকে টেনে নাও।”

পরীঃ “আমি তোমার অবস্থা বুঝতে পেরেছি হানি, কিন্তু...”

অভিঃ “কিন্তু কি... বেবি? তুমি আমাকে তিন মাস ধরে অপেক্ষা করিয়ে রাখলে আর আজ এতদিন পরে মিলিত হচ্ছি আর তুমি কিনা বলছো দুরে সরে থাকতে?”

অভি পরীর ওপরে শুয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে। পরী ওর বুকের ওপরে হাত রেখে নিজেকে কিঞ্চিত বাঁচানোর চেষ্টা করে। অভির শক্তির কাছে না পেরে, অভিকে জড়িয়ে ধরে উলটে যায়। অভি নিচে আর পরী ওর বুকের ওপরে। অভি পরীর কোমর শক্ত করে ধরে থাকে, উত্তপ্ত শলাকা পরীর কাপড়ে ঢাকা তলপেটের নিচে ধাক্কা মারে। পরীর শরীর গরম হয়ে ওঠে অভির কঠিন শলাকার ধাক্কায়। দাতে দাঁত পিষে নিজেকে প্রানপন সামলে নেয় পরী। অভির বাহুপাশ থেকে এক ঝটকায় নিজেকে মুক্ত করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে।

পাশে বসে অভির বুকে হাত রেখে বলে, “অভি, আমাকে পেতে হলে তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে। তোমার পড়াশুনায় ক্ষতি হোক সেটা আমি চাই না। আমি তোমার পড়াশুনা বাধা হতে আসিনি সোনা। পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুমি আমাকে ছুঁতে পর্যন্ত পারবে না। পরীক্ষা শেষ হয়ে যাক তাঁর পরে তোমার সব স্বপ্ন আমি পূরণ করে দেব।”

হেরে যায় অভি, মৃদু মাথা নাড়িয়ে হেসে বলে, “মেনকা বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভঙ্গ করেছিল, আর আমি তো এক ছোটো মানুষ মাত্র, আমি কি করে নিজেকে ঠিক রাখবো।”

পরী ওর মুখের ওপরে ঝুঁকে নাকে নাক ঘষে বলে, “অভি আজ থেকে আমি আর মেনকা নয়, আমি তোমার মা ধরিত্রি।” আলতো করে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে মাথার নিচে বালিশ টেনে অভিকে চোখ বন্ধ করতে আদেশ দেয়। অগত্যা অভি চোখ বন্ধ করে নেয়, পরী ওর চুলে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিচে নেমে যায়।
 
Chapter 2: অপ্সরা দেবাঙ্গনার সমাবেশ।

অভির সীমানার মধ্যে পরীর পদক্ষেপ অভিকে উন্মত্ত করে তোলে। পরীর ঠোঁটের মিষ্টি হাসি, চোখের চোরা চাহনি, কোমর দুলিয়ে চলন, মধুর সুরে কথন, সব যেন কেমন স্বপ্ন বলে মনে হয় অভির। কিন্তু শক্ত পরী, নিজেকে অভির দুষ্টু হাতের নাগালের বাইরে রাখতে সক্ষম হয়। প্রথম প্রথম পড়াশুনায় মন বসে না, কিন্তু পরীর কড়া শাসনের সামনে শেষ পর্যন্ত অভিকে মাথা নত করতে হয়। মাঝে মধ্যে একটু আলতো ঠোঁটের ছোঁয়া বা একটু নরম আঙুলের স্পর্শ অভির গালে। দৃঢ়সঙ্কল্প পরী, যতদিন না পরীক্ষা শেষ হচ্ছে ততদিন নিজেকে ওর হাতের নাগালের বাইরে রাখবে।

দিন কয়েক পরে, এক সকালে অরুনা অভির বাড়িতে ফোন করে। অভি বসার ঘরে বসে খবরের কাগজ পড়ছিল, আর মা স্কুল যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। পরী ফোন ধরে, অভি কান পেতে ওদের কথা শুনতে চেষ্টা করে কিন্তু শুধু হাসি আর ফিসফিস ছাড়া কিছুই কানে গেল না। মা বেরিয়ে যাবার আগে পরীকে বাড়ির কি কি করতে হবে সব নির্দেশ দিয়ে গেল আর বলে গেল অভি যেন নিজের ঘর থেকে না বের হয়।

মা বেরিয়ে যাবার পরে অভি নিজের ঘরে যাবার জন্য পা বাড়ালো। পরী সকাল সকাল উঠে স্নান সেরে পুজো দেওয়া হয়ে গেছে। পর্দা সরিয়ে বসার ঘরে ঢুকলো পরী, ঘর যেন ওর গায়ের রঙে একটু আলোকিত হয়ে উঠল। সারা চেহারায় এক বিশুদ্ধতার আলোক ছটা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। পরনে লাল পাড় হাল্কা হলুদ রঙের শাড়ি আটপৌরে ভাবে পরা গায়ে ছোটো হাতার লাল কাঁচুলি, পরীর সৌন্দর্য যেন শত গুন বর্ধিত করে তুলছে। মাথার চুল হাত খোঁপায় ঘাড়ের ওপরে বাঁধা, সদ্য স্নাত তাই ভিজে চুলের ডগা থেকে কিছু জল ওর শাড়ির পিঠের কিছু অংশ ভিজিয়ে দিয়েছে। সামনে যেন এক দেবী প্রতিমা দাঁড়িয়ে। হাতে কয়েক গাছা সোনার চুড়ি, হাত নাড়ার সময়ে টুং টাং করে বেজে ওঠে।

পরী অভির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “অরুন্ধুতি ফোন করেছিল।”

অভিঃ “হ্যাঁ তা জানি। তুমি যে রকম ভাবে কথা বলছিলে তাতে অন্য পাশে অরুনা ছাড়া আর কেউ হতে পারে না।”

পরীঃ “আমার সাথে আজ দেখা করতে চায়।”

অভিঃ “কোথায়?”

পরীঃ “আমাকে শুধু বললো যে নাগেরবাজারে যেন আমরা ওদের জন্য অপেক্ষা করি।”

অভিঃ “দাড়াও আমি ওকে কল করে জেনে নেই কোথায় নিয়ে যেতে চায়।”

পরী, “না তুমি ওকে কল করবে না, ও তোমাকে বলতে বলেছে যে আমাকে নিয়ে নাগেরবাজার যেতে, ব্যাস।”

অভিঃ “ওকি তোমাকে জানিয়েছে যে আমরা তারপরে কোথায় যাচ্ছি?”

পরী খিলখিল করে হেসে ফেলে, “কেন নিজের এত সুন্দরী বান্ধবীর ওপরে এতটুকু বিশ্বাস নেই তোমার?” পরী তখনো পর্দা ধরে দাঁড়িয়ে, অভির দিকে তাকিয়ে হাসছে।

অভিঃ “তুমি পর্দার পেছনে কেন নিজেকে লুকিয়ে রেখেছো, বেরিয়ে এসো পুরোটা।”

পরীঃ “আমার কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি, যে তোমার সামনে বেরিয়ে আসব। তুমি কখন কি করে বস তার কোন ঠিক আছে নাকি।”

অভি কপাল চাপড়ে বলে, “যাঃ বাবা, একদম বদমাশ মেয়ে তুমি।” কিন্তু অভি উঠে দাঁড়ায়, এবারে সত্যি পরীর দিকে এগোনোর জন্য।

পরী দৌড়ে নিজের ঘরে চলে যায় আর দরজা বন্ধ করে দরজার ফাঁক দিয়ে অভির দিকে দেখতে থাকে।

পরীঃ “তুমি স্নান সেরে জামা কাপড় পরে আসো তাড়াতাড়ি। অরুনা বলেছে দশটা নাগাদ ও নাগেরবাজারে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে। আমি চাই না তোমার জন্য আমাদের দেরি হোক।”

অভি জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কি পরবে।”

পরী উত্তর দিল, “কেন, সবসময়ে যা পরি তাই পরবো, শাড়ি।”

তাড়াতাড়ি স্নান সেরে বেরিয়ে এলো অভি। পরী শাড়ি পরবে তাই ওকে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পায়জামা পাঞ্জাবী পরে নিল না হলে ঠিক ভালো দেখাবে না। প্রেয়সীর চলন বলন আর পোশাকের রুচিশীলতায় কেউ বলতে পারবে না যে পরী গ্রাম থেকে আসা এক মেয়ে। পরীর পরনে সবুজ পাড়ের ঘিয়ে রঙের তাঁতের শাড়ি, আঁচলে ছোটো ছোটো ফুল আঁকা। শাড়ির সাথে মিলিয়ে সবুজ রঙের ছোটো হাতার গায়ের কাঁচুলি। চেহারায় প্রসাধনির চিহ্ন নেই তা সত্তেও গোলাপি ঠোঁটে জোড়া বেশ মিষ্টি দেখাচ্ছে আর গালে গোলাপি লালিমা মাখা। কপালে দুই বাঁকা ভুরুর মাঝে একটা ছোট্ট সবুজ রঙের টিপ, চোখের কোলে কাজল। গলায় একটা সরু সোনার হার ঠিক উপরে গলার নিচ পর্যন্ত নেমেছে। ডান দিকের এক চুলের গুচ্ছ গালের ওপরে দোল খায়। পরীর অপরূপ সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে তাকিয়ে থাকে অভি, যেন লক্ষ্মী প্রতিমা।

এই বিশুদ্ধতার প্রতিমার রুপ চোখ দিয়ে দেখার। অভি ওর কাছে এসে দাঁড়িয়ে ওর মুখ আঁজলা করে হাতে ধরে মুখে নিজের দিকে তুলে ওর গভীর চোখের দিকে তাকায়। ছোট্ট করে কপালে একটা চুমু খায় অভি, প্রেমের আবেগে নয়, সস্নেহের চুম্বন এঁকে দেয়।

পরী লাজুক হেসে বলে, “আমরা কি যেতে পারি?”

অভি মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ মা ধরিত্রি, সর্বদা আপনার পেছন পেছন আছি।”
অরুনার কথা মতন অভি আর পরী ট্যাক্সি করে নাগেরবাজার পৌঁছে যায়। ওদের জন্য যেন আরও এক চমক অপেক্ষা করে ছিল।

গত তিন বছরে প্রথম বার অভি অরুনাকে শাড়ি পরতে দেখে। অরুনার পরনে হাল্কা সবুজ রঙের শাড়ি। নাকে সোনার ফ্রেমের চশমা, মুখে কোনদিনই প্রসাধনী করে না, তাই সেদিনও ছিল না বিশেষ। অভি একটু দুরে দাঁড়িয়ে ওর সেই দেবী প্রতিমা দেখতে থাকে। অভি পরীর দিকে তাকায় অরুনাকে দেখে। পরীকে দেখে অরুনা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। একে অপরকে এর আগে কোনদিন দেখেনি তাও কেন জানিনা মনে হলো অভির যে দুজন যেন দুজনকে আগে থেকেই চিনতো। পরী অরুনাকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা ছোট্ট চুমু খায়। অভি কিছু দুরে দাঁড়িয়ে দেখে ওর জীবনের দুই দেবী সমান প্রতিমা, একজন অভির চোখের মণি আরেক জন ওর হৃদয়। পুবালি চুপ করে দাঁড়িয়ে ওদের দেখে আর মিটিমিটি হাসে। অভি পুবালিকে জিজ্ঞেস করে যে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে অরুনা, পুবালি মাথা নাড়িয়ে হেসে অরুনাকে দেখিয়ে বলে যে সেটা একটা চমক।

অরুনা পরীকে দেখে হেসে বলে, “শুচিদি আমার অভিকে ঈর্ষা করতে ইচ্ছে করছে গো। আমি যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতাম তাহলে নিশ্চয় তোমার প্রেমে পড়তাম।”

পরী একটু লাজুক হেসে আদর করে ছোট্ট একটা চাঁটি মারে অরুনার গালে। অভি অরুনাকে জিজ্ঞেস করে যে ওরা কোথায় যাচ্ছে। অরুনা উত্তর দেয় যে দক্ষিণেশ্বর কালি মন্দির।

অভি অবাক হয়ে যায়, “কি? শেষ মেশ দক্ষিণেশ্বর? না।”

অরুনাঃ “তুই যেতে না চাইলে যাস না, কিন্তু আমরা মেয়েরা ওখানেই যাবো।” এই বলে পরীর হাত ধরে হাটা দিল।

অগত্যা অভি, পুবালির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে ওদের পেছন পেছন চলতে শুরু করলো।

ট্যাক্সির পেছনের সিটে বসে মেয়েরা পাখীর মতন কিচিরমিচির শুরু করে দিল। পুবালি যথারীতি চুপ মাঝে মধ্যে একটু আধটু কথা বলছে, আর অভি অগত্যা চুপ, ওকে কেউ কথা বলতে দিলে তো বলবে।

অরুনা পরীকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা শুচিদি, তুমি এই পাগলটার প্রেমে পড়লে কি করে?”

পরী আয়নায় অভির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে উত্তর দেয়, “ব্যাস যেন হয়ে গেল, যেদিন প্রথম এক দুজনকে দেখেছিলাম সেদিন কেন জানিনা মনে হয়েছিল যে ও শুধু আমার জন্যে এই পৃথিবীতে এসেছে।”

অভি চুপ করে সামনের শিতে বসে ওদের কথা শুনে যায়, পেছন থেকে পরী ওর মাথার পেছনে এক ছোট্ট চাঁটি মারে।

অরুনা খিলখিল করে হেসে বলে, “উম, কি রোম্যান্টিক ব্যাপার। ও পাগলের অনেক সাহস যে তোমাকে নিয়ে একা একা ওই দুর্গম পাহাড়ে ঘুরতে গেছে, বাপরে ভাবলেই যেন গায়ে কাঁটা দেয় আমার। কেউ তো ভাবতেই পারেনা একা একা যাবার কথা, তায় আবার এমন এক জায়গায় যেখানকার নাম আমি আগে তো শুনিনি। তুমি ওই পাগলের সাথে গেলে কি করে?”

পরী হেসে অরুনাকে জিজ্ঞেস করে, “কেন সমুদ্রনীল তোকে কোথাও নিয়ে যায় না?”

অরুনা একটু ম্লান হেসে উত্তর দিল, “না গো শুচিদি, ও পুবালির মতন একটু মুখচোরা স্বভাবের, অভিমন্যুর মতন পাগল বা দুঃসাহসী ছেলে নয়। এ পাগলা তো যেখানে সেখানে ভিড়ে যায়। তুমি ওকে সামলাও কি করে?”

পরী কিছু উত্তর দেয় না, শুধু একটু হাসে অরুনার দিকে তাকিয়ে।

অরুনাঃ “জানো, যখন কলেজে এসেছিল, তখন যেন পাথরের মূর্তি ছিল। আমরা সবাই ওকে একটু এড়িয়ে চলতাম কেননা খুব গম্ভির ছিল আর আমরা সবাই ওকে নাক উঁচু বলে ভাবতাম। যেদিন আমার বোনকে বাঁচালো সেদিন আসল বিহারী বেরিয়ে পড়লো ওই গম্ভির মুখোশের পেছন থেকে।”

পরী হেসে অরুনাকে বলে, “তোর মুখে ওই পাগলটার জন্য এত প্রশংসা কেন রে? ওর কথা ছাড় সমুদ্রনীলের কথা বল।”

ওদের কিচিরমিচির চলতে থাকে অনবরত। দক্ষিণেশ্বর পৌঁছে দেখে যে সেদিন মন্দির বেশ খালি। সপ্তাহের মাঝে এসেছে বলে মন্দির প্রাঙ্গনে ভিড় বিশেষ নেই। অভি ভাবলো পুজোটা তাহলে একটু ভালো করেই দেওয়া যাবে। পুজো শেষে ওরা সবাই আবার গল্পে মেতে ওঠে।

অভি ওদেরকে পেছন থেকে দেখে, একজন ওর ভালবাসা আরেক জন ওর বান্ধবী। অভি আর পুবালি ওদের পেছন পেছন হাঁটছিল। অভি পুবালিকে ওর নাকের ব্যাথার কথা জিজ্ঞেস করে।

পুবালি অভির মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে, “মাঝে মাঝে জানিস খুব ব্যাথা করে, মাথাটা যেন খুব ভার হয়ে আসে। মাঝে মাঝে মনে হয় যেন আমি মরে যাব।”

অভিঃ “ডাক্তার কি বলছে।” এর মাঝে অরুনা ওদের দিকে পেছন ফিরে তাকায়, অভি ওকে দেখে একটু হাসে।

পুবালিঃ “ডাক্তার আমাকে পরীক্ষা দিতে বারন করেছে, বলেছে মাথায় যেন কোন রকমের চাপ না নেই। একটা এম.আর.আই স্ক্যান করাতেও বলেছে, আমার কিছু যেন মনে হচ্ছে।”

অভি চমকে ওঠে, “এত সব কবে ঘটে গেল? একবারের জন্য আমাকে জানাসনি তো?”

পুবালিঃ “দুদিন আগে আমি বাথরুমে পড়ে যাই আর নাক থেকে আবার রক্ত বের হতে শুরু করে।”

অভিঃ “আমাকে জানাসনি কেন?”

পুবালিঃ “তোকে কেন আবার জ্বালাতন করা, বাড়িতেই তো ছিলাম সবাই কাছে ছিল তাই আর তোকে জানান হয়নি।”

অভির বুকে থেকে এক দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে পড়ে। পুবালি মাথা নিচু করে মন্দির প্রাঙ্গনের লাল মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকে। অভি লক্ষ্য করে যে পুবালির নাকের ওপরে একফোঁটা চোখের জল। অভি চমকে যায় পুবালির চোখে জল দেখে। অভি একবার পরী আর অরুনার দিকে তাকায়, দুজনেই হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর এগিয়ে গেছে, দুজনেই গল্পে মশগুল।

পুবালি কান্না ভেজা গলায় অভিকে বলে, “আমাকে একটা কথা দিবি? অরুনাকে বলিস না যেন।”

অভি ওর কাঁধে হাত রাখে, “তোর কি হয়েছে?” পুবালির গলার আওয়াজ শুনে বুকের ভেতর কঁকিয়ে এক অজানা ব্যাথা শুরু হয়ে যায় অভির।

পুবালি অভির দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে বলে, “ডাক্তার জানিয়েছে যে আমার নাকের আর চোখের শিরাগুলো যেগুলো মাথার সামনের দিকের সাথে কানেক্টেড সেগুলোর অবস্থা ভালো নয়।” ঠোঁট কেঁপে ওঠে পুবালির, “আমার হাতে খুব কম সময়, অভি। আমার কিছু হয়ে গেলে, সমুদ্রনীলকে বলিস অরুনাকে দেখার জন্য।”

পুবালির কথা শুনে মনে হলো যেন একটা বিশাল ঢেউ অভির বুকের ওপরে আছড়ে পড়লো আর তছনছ করে দিল ওকে। পরী আর অরুনার দিকে তাকালো অভি, ওরা হাঁটতে হাঁটতে অনেক দুরে চলে গেছে। অভি নিরুপায় হয়ে মন্দির প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে, ভাগ্য বিধাতার একি পরিহাস। দুহাতে পুবালিকে জড়িয়ে ধরে, মনে হয় যেন ওর সব ব্যাথা বেদনা যদি নিতে পারতো তাহলে নিয়ে নিতো নিজের বুকে। পুবালি পাথরের মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে ওর বুকের ওপর মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলে।

অভির সম্বিৎ ফেরে যখন অরুনা ওর পিঠের ওপরে আলতো করে এক চাঁটি মারে।

পরী অভির জল ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “কি হয়েছে তোমার?”

অভি পুবালিকে কথা দিয়েছে অরুনাকে বলা বারন তাই কথা ঘুরিয়ে বললো, “ও কিছু না, পুবালি সেই প্রথম দিনের কথা মনে করে একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েছিল এই যা।”

অরুনা কিছুই বুঝতে পারলো না ওদের মনের ব্যাথা, পুবালিকে হেসে বললো, “এই পাগলি, ওই কথা চিন্তা করে তোরা ইমোশনাল হয়ে পড়লি?” অরুনা অভির দিকে তাকালো কিন্তু ওর মনের মধ্যের যে ঝড় বইছে সেটা অনুধাবন করতে পারলো না। পরী অভির চোখে ঝরের পূর্বাভাস দেখে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ওই চোখের আড়ালে যেন অনেক কিছু লুকিয়ে রেখেছে অভি। পরী চোখের ইশারায় ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করাতে অভি চোখ টিপে পরীকে চুপ করে যেতে ইশারা করে।

অরুনাঃ “ওই বারো শিবের মন্দিরের এক কোনায় একটা গাছ আছে। লোকেরা বলে ওখানে গিয়ে যদি সুতো বাঁধে তাহলে নাকি মনস্কামনা পূরণ হয়। চল না আমরাও গিয়ে আমাদের মনের কথা চেয়ে ওখানে সুতো বাঁধি?”

পরী অরুনার কথায় হেসে ফেল আর ওরা সবাই মিলে যায় ওই গাছের দিকে। জীবনে প্রথম বার অভির যেন এক ভিখারির মতন নিজেকে মনে হলো, ভগবানের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে অভি নিজের জন্য কিছু চাইবে।

অনেকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকার পরে অভি মনে মনে চাইলো, “আমি অরুন্ধুতি আর পুবালিকে আমার আর শুচিস্মিতার বিয়ের সময়ে সবার মাঝে যেন হেসে খেলে বেড়াতে দেখতে পারি।” অভি জানেনা ভগবান ওর মনের কথা শুনলেন কিনা, কিন্তু অভি প্রানপন চাইলো যাতে ওর সেই ইচ্ছে পূরণ হোক।
 
Chapter 3: অশ্রুহীন বিদায়। (#1)

বি.এস.সি ফাইনাল পরীক্ষা গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে। বিগত দুমাস ধরে প্রেয়সী পরী যেন মা ধরিত্রির রুপ ধারন করেছিল। সর্বদা চোখে চোখে রেখেছিল অভিকে। ওকে নিজের ঘর ছেড়ে রাতের বেলায় বসার ঘরে পড়তে বসতে নির্দেশ দিয়েছিল, যাতে চোখে চোখে রাখতে পারে। সেই কয়দিন পরী নিজেকে এক নিয়ন্ত্রিত মহিলা বানিয়ে তুলেছিল ঠিক তাঁর ছোটমায়ের মতন। অনেক রাত কেটে গেছে যে অভি পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়তো আর পরী ওর মাথার নিচ থেকে বই নিয়ে গুছিয়ে রেখে দিতো আর গায়ের ওপরে চাদর ঢেকে দিতো। অনেক রাত কেটে গেছে, পরী ওর সামনে বসে এক নয় খবরের কাগজ পড়তো না হলে কোন উপন্যাস নিয়ে বসে থাকতো। যাতে অভির ঘুম না পায় সেই জন্য সময়ে সময়ে কফি বানিয়ে আনতো। কফি খাইয়ে দিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিতো, কিন্তু একবারের জন্যেও গায়ে হাত লাগাতে দিতো না। অভি মাঝে মাঝেই বকা খেতো অপটিক্সের বা মেকানিক্সের জন্য। মা প্রথম কয়েকদিন ওদের ওপরে একটু নজর রেখেছিলেন, মনে হয় মা কিছু আঁচ করেছিলেন। কিন্তু যখন দেখলেন যে পরী শুধু সামনে বসে উপন্যাস পড়ে আর টেবিলে কফির সরঞ্জাম তখন মায়ের সন্দেহ দূর হয়ে যায়। পরীর আর অভির ভেতরের কথা মা টের পায়না।

পরী সেই প্রথম রাতের চুম্বনের পরে নিজের চারদিকে এক উঁচু দেয়াল গড়ে তোলে, অভির সাধ্য ছিলনা সেই কঠিন দেয়াল টপকে প্রেয়সী পরীর কাছে পৌঁছানোর, সামনে সবসময়ে যেন মাতৃময়ী মূর্তি শুচিস্মিতা দাঁড়িয়ে থাকতো। পরী একেবারে বঞ্চিত করেনি অভিকে, মাঝে মাঝে সস্নেহে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতো কিম্বা ঘুম ঘুম পেলে মাথায় চাঁটি মেরে জাগিয়ে দিতো কিম্বা রাতে ঘুম না আসলে মাথার চুলে বিলি কেটে ঘুম পাড়িয়ে দিতো। অভির বুঝতে কষ্ট হয়না যে ওকে অনেক কিছু করতে হবে জীবনে যদি পরীকে নিজের করে নিতে হয়। এই পৃথিবী টাকা চেনে আর চেনে সামাজিক পদমর্যাদা, এই দুটি না পেলে অভি পরীকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না ওর কঠোর বাবা মায়ের শৃঙ্খলা থেকে। শেষ পর্যন্ত মা ধরিত্রি জয় লাভ করেন মেনকার কাছে।

দিনটা 22শে মে, 2001. বাড়ির সবার খাওয়া দাওয়া শেষ। অভি বসার ঘরে বসে টি.ভি. তে ওর প্রিয় সিনেমা “Gone with the wind” দেখছে। বাড়ির কারুর ইংরাজি সিনেমা বিশেষ পছন্দ নয় তাই অভি একা একা বসে সিনেমা দেখছিল। গ্রীষ্মকাল কোলকাতায় প্যাচপেচে গরম, মাথার ওপরের পাখা বনবন করে ঘুরছে। পরী মায়ের সাথে রান্না ঘরে কিছু কাজে ব্যাস্ত আর বাবা রাতের শোয়ার জন্য বিছানা তৈরি করছিলেন।
রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে, তখন ফোন এলো। বাবা ফোন তুলে কথা বললেন। কিছু পরে ফোন রেখে বাবা বসার ঘরে ঢুকলেন। বাবার থমথমে মুখ দেখে অভির বুকের মাঝে এক সংশয়ের উদ্রেক হয়। অভি বাবাকে জিজ্ঞেস করে যে কার ফোন এসেছিল।

বাবাঃ “ব্যানার্জি কাকু তোকে এখুনি বেল ভিউ ক্লিনিকে ডেকেছে।”

ব্যানার্জি কাকু মানে অরুনার বাবার ফোন, সেই শুনে অভির আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না। এক পলকের মধ্যে পুবালির কান্না ভেজা চোখের কথা মনে পড়ে গেল। পা থেকে মাথা পর্যন্ত কেঁপে উঠল অভি। পরী আর মা বাবার কথা শুনে রান্না ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে বাবার পেছনে দাঁড়িয়ে। পরী অভির দিকে তাকালো, অভির চোখ দেখে পরীর বুঝতে বাকি রইল না যে ঘটনা কি ঘটে গেছে।

কোনোরকমে জামা কাপড় পরে অভি বেরিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত, এমন সময়ে বাবা অভিকে ডাক দিয়ে বললেন যে পরীও যেতে চায়। অভি মায়ের দিকে তাকালো, পরী জামাকাপড় পরে তৈরি যাবার জন্য। ও ওর ছোটমায়ের দিকে জল ভরা করুন চোখে তাকিয়ে অনুরোধ করে অভির সাথে যাবার জন্য। মা পরীর চোখ দেখে বুঝলেন যে পরীকে আটকানো সম্ভব হবে না।

ট্যাক্সিতে পরীকে জড়িয়ে ধরে থাকে অভি, পরীর অনুধাবন করতে অসুবিধে হয় না যে একটা বিশাল বড় ঝড় আকাশের কোনায় জমে এসেছে। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ ওরা নারসিং হোমে পৌঁছায়। ভেতরে ঢুকে দেখে ব্যানার্জি কাকু, কাকিমা, পুবালির বাবা, মা আর অরুনা দাঁড়িয়ে। পরীকে দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে অরুনা। পরী অরুনাকে জড়িয়ে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।

অভি ব্যানার্জি কাকুর কাছে গিয়ে পুবালির কথা জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে, বিকেল বেলা সবাই চা খেতে ব্যাস্ত ছিল। পুবালি নিজের ঘরে নিজের আলমারি গুছাতে ব্যাস্ত ছিল। আলমারির মাথায় কোন জিনিস ছিল যার জন্য ও একটা টুলের ওপরে দাঁড়িয়ে সেটা নামাতে চেষ্টা করছিল। কোথা থেকে একটা মাকড়সা দেখে পুবালি আঁতকে ওঠে আর টুল থেকে পড়ে যায়। আলমারির হাতল মাথায় লাগে আর নাক থেকে রক্ত বের হতে শুরু হয়। প্রথমে পাশের ডাক্তার ডেকে রক্ত থামানোর ব্যাবস্থা করে, কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না। ডাক্তার রক্তের সাথে পুঁজ বের হতে দেখে পুবালিকে নারসিং হোমে ভরতি করতে বলেন। নারসিং হোমে নিয়ে আসা হয় পুবালিকে আর সঙ্গে সঙ্গে অপারেশান শুরু করে দেওয়া হয়।

অভি বাড়িতে ফোন করে বাবা মাকে সব জানায়। বাবা খুব চিন্তিত কেননা ব্যানার্জি কাকু বাবার বন্ধু। বাবা পরীকে আর অরুনাকে দেখার জন্য বলেন। অভি লক্ষ্য করে যে ওয়েটিং হলের এক কোনায় সমুদ্রনীল দাঁড়িয়ে। অরুনার বাবা মা জানেন না সমুদ্রনীলের ব্যাপার তাই সমুদ্রনীল ওদের সামনে আসতে পারছিল না আর অরুনার সাথে দেখা করতে পারছিল না। অভি ধিরে ধিরে সমুদ্রনীলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে যে ও ব্যাপারটা জানল কি করে। সমুদ্রনীল জানায় যে অরুনা ওকে ফোন করে জানিয়েছে, কিন্তু এখানে এসে বাড়ির সবাইকে দেখে ও আর অরুনার কাছে যেতে পারছে না।

অভি পরীর দিকে তাকিয়ে অরুনাকে নিয়ে আসতে বলে। অরুনা অনেক আগেই সমুদ্রনীলকে লক্ষ্য করেছিল কিন্তু বাবা মায়ের জন্য কাছে যেতে পারেনি। পরী অরুনাকে নিয়ে ওদের কাছে আসে। অরুনা সমুদ্রনীলকে জড়িয়ে ধরে ভেঙে পড়ে।

পরী অভিকে বলে, “এখান থেকে চলে এসো, ওদেরকে কিছুক্ষণ একা ছেড়ে দাও।”

অভি উত্তর দেয়, “তুমি অরুনাকে একা ছেড়ে যেওনা, সেটা ঠিক হবে না। এখানে কেউ সমুদ্রনীলের কথা এখনো জানেনা তাই ওকে একা ছেড়ে গেলে হিতে বিপরিত হতে দেরি হবে না। তুমি ওদের কাছেই থাক আমি যাই কাকুর কাছে।”

প্রত্যকে মুহূর্ত যেন এক এক বছর মনে হচ্ছিল অভির, সময় যেন আর কাটতে চায় না। উৎকণ্ঠায় সবাই দাঁড়িয়ে। পুবালির বাবা মা খুব চিন্তিত, তাদের একমাত্র মেয়ে আজ অপারেশান টেবিলে শুয়ে, প্রহর গুনছে।

সমুদ্রনীল কিছু পরে অভিকে ডেকে বললো যে ও সারা রাত হস্পিটালে থাকতে পারবে না কারন কেউ ওকে দেখে ফেললে অরুনা মুশকিলে পড়ে যেতে পারে। অভির সেই কথা ঠিক বলে মনে হলো, অভি জানালো যে কিছু খবর থাকলে সমুদ্রনীলকে জানিয়ে দেবে। পরী অরুনার পাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিতে চেষ্টা করে।

ধরা গলায় পরী অরুনাকে সান্তনা দেয়, “আরে তুই এত কাঁদছিস কেন, পুবালির কিছু হবে না, চিন্তা নেই। শুধু নাক থেকে রক্ত পড়ছে সেটা অপারেশান করলে ঠিক হয়ে যাবে।”

অভি মনে মনে ভগবানকে ডেকে ওর মনের কথা জানায়, জানেনা ভগবান ওর কথা শুনলেন কিনা তাও শেষ বারের মতন হাত জোড় করে প্রার্থনা জানায় তাঁর কাছে। ব্যানার্জি কাকু সবাইকে এক বার জিজ্ঞেস করলেন যে কেউ চা খাবে কি না, কেউই অপারেশান থিয়েটারের সামনে থেকে নড়তে নারাজ। অভি পুবালির মায়ের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, কিন্তু ওর মা জানালেন যে মেয়ের যতক্ষণ না কোন খবর আসছে ততক্ষণ তিনি নড়বেন না।

প্রায় সকাল চারটের সময়ে ডাক্তার বেরিয়ে এলো অপারেশান থিয়েটার থেকে। সবাই উন্মুখ হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে, কি খবর দেন ডাক্তার। অরুনা চোখ বন্ধ করে পরীর হাত শক্ত মুঠির মধ্যে ধরে বসে থাকে।

ডাক্তার জানালেন, “ব্রেনের সামনের দিকের ভেইন্সগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি ঠিক করার জন্য কিন্তু এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। পুবালি ধিরে ধরে কোমায় চলে যাচ্ছে। জ্ঞান ফেরা না পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। পরের বাহাত্তর ঘন্টা আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ, আমরা কিছু পরে ওকে আই.সি.ইউ তে নিয়ে যাব।”

পরীর দিকে তাকালো অভি, পরীর চোখে জল, অরুনা পরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে যেন পরী ওর শেষ সম্বল। অভি ওদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে অরুনার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়। পরী অরুনার পিঠের ওপরে হাত বুলিয়ে সান্তনা দেবার চেষ্টা করে।

অরুনা ব্যাথায় কঁকিয়ে ওঠে, তিরতির করে কেঁপে ওঠে ঠোঁট জোড়া। ওর মুখে দেখে প্রায় ভেঙে পড়ে অভি, কিন্তু ভাঙলে চলবে না ওকে।

অরুনা ধরা গলায় অভির কাছে কাতর মিনতি করে, “একবার, একবার তুই আমার বোনকে ফিরিয়ে এনেছিলিস। কথা দে আবার ওকে ফিরিয়ে আনবি।” দাতে দাঁত পিষে নিজেকে সামলে নেয় অভি।

পরী মৃদু বকুনি দেয় অরুনাকে, “কি যা তা বলছিস তুই, পুবালির কিছু হবে না। তুই ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারবি আর কিছু দিনের মধ্যেই।” অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি গাধার মতন চুপ করে আছো কেন? কিছু বলো?”

অরুনাকে কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই সময়ে ব্যানার্জি কাকু এসে জিজ্ঞেস করলেন যে ওরা বাড়ি যেতে চায় কিনা। অভি জানালো যে ও হস্পিটালে পুবালির বাবার সাথে থাকবে আর বাকি মেয়েদের নিয়ে বাড়ি চলে যেতে।

পরী অভিকে বলে, “তোমার মনে হয় যে অরুনা এখান থেকে নড়বে?”

অরুনা দিকে তাকায় অভি, অরুনা মাথা নাড়ে, হস্পিটাল থেকে যেতে নারাজ যতক্ষণ না পুবালি চোখ খুলে তাকায়। অভি পুবালির মায়ের কাছে যায়, মায়ের মন বাঁধ মানে না, তিনি কিছুতেই নড়বেন না।

অভি পরীর দিকে তাকিয়ে বললো, “তোমার দায়িত্ব যে ব্যানার্জি কাকুর সাথে বাড়ির মেয়েদের নিয়ে বাড়ি ফেরা। আমি আর পুবালির বাবা এখানেই থাকছি। তোমরা স্নান সেরে খাওয়া দাওয়া করে পরে এসো। তুমিও সারা রাত জেগে, কিছুই খাওনি।”

পরী কেঁদে ওঠে, “আমাকে তো বলে দিলে, কিন্তু আমি কি করে পুবালির মাকে নিয়ে যাব সেটা একবার বলে দাও। ওই মায়ের একমাত্র মেয়ে যে আই.সি.ইউ তে।”

অভি পরীকে এক কোনায় নিয়ে গিয়ে বলে, “প্লিস ওদের নিয়ে যাও এখান থেকে। আমি জানি কি ঘটবে।”

পরী হাজার প্রশ্ন নিয়ে অভির মুখের দিকে তাকায়, “কি বলতে চাও তুমি?”
 
Chapter 3: অশ্রুহীন বিদায়। (#2)

অভিঃ “পুবালি আগে থেকে জানতো যে ওর হাতে আর বেশি দিন নেই। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কথা মনে আছে তোমার? আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল পুবালি? সেদিন ও আমাকে বলেছিল যে ওর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি যেন ওর হয়ে সমুদ্রনীলকে বলি অরুনাকে দেখতে।”

পরী অভির হাত শক্ত করে ধরে বলে, “তুমি আমাকে এত দিন এই কথা জানাও নি কেন?”

অভিঃ “আমি ওকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি ওই কথা কাউকে জানাব না, তাই বলিনি।”

পরীঃ “আজ তাহলে সেই প্রতিজ্ঞা তুমি ভেঙে দিলে? কি মানুষ তুমি?”

অভিঃ “পরী, আমি শুধু এই দুঃসময়ের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে চাইছি আর কিছু না।”

পরী অভিকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে কেঁদে ফেলে। ওকে সান্তনা দেবার মতন ভাষা খুঁজে পায়না অভি।

কিছু পরে পরী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি খুব শক্ত তাই না, কোন দিন চোখের জল ঝরাও না যে?”

অভিঃ “পরী, আমার এখন চোখের জল ঝরানোর মতন সময় নেই।”

পরীঃ “অরুনা আর পুবালির মাকে কি করে সামলাবে?”

অভিঃ “সময়ের সাথে সব কিছু সামলে নেয়, পরী। সময় খুব বড় মলমের কাজ করে।”

পরী অভির জামা ছেড়ে অরুনা আর পুবালির মায়ের কাছে গিয়ে বসে। অভি ওদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে পুবালির মায়ের হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়। পুবালির বাবা, ব্যানার্জি কাকু অভির দিকে তাকিয়ে থাকে।

অভিঃ “পুবালি এখন আই.সি.ইউ তে, সেমত অবস্থায় এখানে বসে থাকাটা বোকামো। আমি আর কাকু এখানে আছি, তুমি মেয়েদের নিয়ে ব্যানার্জি কাকুর সাথে বাড়ি যাও, স্নান সেরে খেয়ে দেয়ে চলে এসো। এর মাঝে পুবালির জ্ঞান ফিরে এলে তোমাকে জানিয়ে দেব তুমি চলে এসো।”

অভির কথায় পুবালির বাবা আর ব্যানার্জি কাকু সায় দিলেন। ব্যানার্জি বললেন যে যাবার পথে পরীকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যাবেন। ব্যানার্জি কাকু মেয়েদের নিয়ে চলে যাবার পরে সমুদ্রনীলকে ফোন করে ডেকে নিল অভি। পুবালি বাবা মাথা নিচু করে বসে, অভির কাছে তাকে সান্তনা দেবার মতন কোন ভাষা নেই। সময় যেন থেমে গেছে ওদের সামনে।

অভি বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দিল যে ব্যানার্জি কাকুর সাথে পরী বাড়ি ফিরছে। বাবা জিজ্ঞেস করলেন যে যদি পরী আবার নারসিং হোমে যেতে চায় তাহলে কি করবে? অভি জানালো যে যদি পরী আসতে চায় তাহলে ও বাবাকে ফোন করে দেবে আর বাবা যেন কোন গাড়ির বন্দোবস্ত করে দেয় যাতে পরী নারসিং হোমে আসতে পারে। বাবা জানালেন যে তিনি ব্যানার্জি কাকুর সাথে কথা বলে নেবেন পরীর যাওয়ার ব্যাপারে।

পরের ছয় ঘন্টা যেন ওদের কাছে ছয় যুগের মতন মনে হয়। অভি আর পুবালির বাবা অতি উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করে থাকে কিছু ভাল খবরের জন্য। বিকেল প্রায় চারটে নাগাদ, বাড়ির সবাই নারসিং হোম পৌঁছে যায়। অরুনাকে দেখতে না পেয়ে অরুনার দাদাকে অভি ওর কথা জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে, ব্যানার্জি কাকু অরুনাকে নিয়ে অভিদের বাড়িতে গেছে পরীকে নিয়ে আসতে।

কিছু পরে অভি লক্ষ্য করে যে অরুনা আর পরী নারসিং হোমে ঢুকছে, পেছনে ব্যানার্জি কাকু। অরুনার মুখ থমথমে যেন ওর ওপর দিয়ে এখুনি বিশাল এক ঝড় বয়ে গেছে। পরী অভির কাছে এসে পুবালির খবর জিজ্ঞেস করে, অভি মাথা নাড়িয়ে জানায় যে এখন কোন খবর ডাক্তার জানায় নি। অরুনা ওর মায়ের পাশে গিয়ে চুপ করে বসে থাকে, পরী অরুনার পাশে বসে যায়। অরুনা একবার পরীর দিকে তাকায় থমথমে চোখ নিয়ে।

ঠিক সাড়ে পাঁচটা নাগাদ, আই.সি.ইউ থেকে ডাক্তার বেরিয়ে এসে পুবালির বাবাকে ডাকেন। সবাই ডাক্তারের দিকে উৎকণ্ঠায় তাকিয়ে থাকে। শেষ খবর আসে, পুবালি ব্যানার্জি, এক নিস্পাপ ফুল, খুব লাজুক মেয়ে, জীবনে হয়তো একটা মাছিও মারেনি পুবালি, সেই মিষ্টি মেয়ে যে কোনদিন কলেজে কারুর সাথে উঁচু গলায় কথা পর্যন্ত বলেনি, ঝগড়া করা তো দুরে থাক; শুভঙ্কর ব্যানার্জি আর মালা ব্যানার্জির একমাত্র কন্যা সন্তান আর এই পৃথিবীতে নেই।

চাপা ক্রন্দনের রোল জেগে ওঠে চার পাশে। বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসে মায়ের বুক থেকে। পরীর চোখে জল, অরুনাকে জড়িয়ে ধরে। অরুনা পরীকে প্রাণপণে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজে পড়ে থাকে।

অভি চোয়াল শক্ত করে, হাত মুঠি করে কপালে জোরে এক কিল মারে। বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে ভগবানের দিকে তাকিয়ে, “শেষ পর্যন্ত আমার কথা রাখলে না তুমি।” বার বার জিজ্ঞেস করে ভগবানকে “এই পৃথিবীতে অনেক দুস্কর্মিরা আছে, তাদের ছেড়ে কেন এক ফুলের মতন নিস্পাপ মেয়েকে কোলে ডেকে নিলে? তোমার যদি সত্যি কান থাকে তাহলে তুমি আমার কাতর প্রার্থনা শুনতে পারতে, কিন্তু হায় বিধাতা, আমার প্রার্থনা শোনার কেউ নেই।”

পরী কিছু পরে অভির পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে, “অরুনার দিকে তাকাও।”

অরুনার দিকে তাকায় অভি, অরুনা পাথরের মতন বসে নিস্পলক চোখে মেঝের দিকে তাকিয়ে। চেহারা ভাবলেশহীন, চোখে কোন ভাষা নেই, দু’চোখ যেন কাঁচের তৈরি।

বাবাকে ফোন করে খবর দেয় অভি, বাবা তখন অফিস থেকে বের হবেন। অভি বাবাকে সোজা নারসিং হোমে এসে পরীকে বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য অনুরোধ করলো, “তুমি ওকে বাড়ি নিয়ে যাও, এখানে থাকাটা ওর ঠিক হবে না। ভাগ্যের পরিহাস যা ঘটবার সেটা তো ঘটেই গেছে। ওকে বাড়ি নিয়ে যাও বাড়িতে মায়ের কাছে ঠিক থাকবে।”

বাবা জিজ্ঞেস করলেন অভিকে, “তোর কি খবর, কাল রাত থেকে তো কোথাও যাসনি। বাড়ি ফিরবি কখন?”

অভিঃ “এখুনি কিছু বলতে পারছি না, দেখি কাল সকালে বাড়ি ফিরব।”
অভি পরীকে বললো, “তোমার বাবু কিছুক্ষণের মধ্যে এখানে আসছে, তাঁর সাথে তুমি বাড়ি ফিরে যাও।”

পরী অভির কলার চেপে ধরে বলে, “আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।”

অভিঃ “বুঝতে চেষ্টা করো পরী। আমার বাড়ি যাবার এখন কোন ঠিক ঠিকানা নেই। সত্যি কথা বলতে এখন অনেক কাজ আছে এইখানে।”

পরীঃ “তাহলে আমি অরুনার সাথে থাকব।”

অভিঃ “না তুমি ওর সাথে থাকবে না।”

পরী চেঁচিয়ে ওঠে, “কেন?”

অভিঃ “কাল রাত থেকে অনেক কান্নাকাটি করেছো তুমি, আর নয়। তুমি যদি ওর সাথে ওদের বাড়িতে যাও, সেখানে গিয়েও আবার কান্নার রোল শুরু হবে, তাঁর থেকে ভালো কথা বলছি তুমি বাড়ি যাও। তুমি একটু বিশ্রাম নাও বাড়ি গিয়ে তোমার ছোটমায়ের কাছে।”

পরী চাপা স্বরে বলে, “অরুনাকে দেখেছো? চোখের পাতা পড়ছে না ওর, পাথর হয়ে গেছে মেয়েটা। ও যদি না কাঁদে তাহলে খুব বড় আরেকটা বিপদ হবে। আমাকে ওর কাছে থাকতে দাও।”

অভিঃ “আমি দেখি কি করতে পারি, কিন্তু তুমি এখন বাড়ি যাবে। অরুনার সাথে ওর বাবা মা আছেন ওকে দেখার জন্য, এখানে আমি কিছু পরে ব্যাস্ত হয়ে যাব তখন তোমাকে দেখার কেউ থাকবে না।”

সবার সামনে এক নতুন সমস্যা দেখা দিল, অরুনা। ও যদি না কাঁদে বা কিছু না বলে তাহলে আরেক বিপদ ঘনিয়ে আসতে দেরি হবে না।

কিছু পরে অভি আর অরুনার দাদা একটা গাড়ির ব্যাবস্থা করে ফিরে এলো। বাড়ির দিকে পুবালির শেষ যাত্রা।

পুবালির দেহ যখন ওদের সামনে আনা হয়, তখন অরুনা চুপ করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ধিরে ধিরে পুবালির গালে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, মনে হয় যেন ডাকছে পুবালিকে চোখ খোলার জন্য, কিন্তু ওর গলা থেকে কোন আওয়াজ বার হয় না। একবারের জন্যেও অরুনার চোখের পাতা পড়ে না বাঁ ঠোঁট কাঁপে না। নিস্পলক ভাবে চেয়ে থাকে পুবালির বন্ধ চোখের দিকে। ধিরে ধিরে পুবালির মুখের ওপরে ঝুঁকে পড়ে, কপালে ছোটো একটা চুমু খায় আর গলায় হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। পাথরের মতন গলা জড়িয়ে পড়ে থাকে অরুনা। অরুনার এই ব্যাবহার দেখে সবার বুকের ভেতরে এক নতুন ভয় জাগে। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে ইশারা করে অরুনাকে উঠানোর জন্য। পরী অরুনার পাশে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে ওর পিঠে হাত রাখে। পরীর হাতের ছোঁয়া পেয়ে অরুনা ভাবলেশহীন চাহনি নিয়ে তাকায় পরীর দিকে। চোখে জল নেই, চেহারায় কোন বিকার নেই, অরুনা যেন এক পাথরের মূর্তি হয়ে গেছে। পরীর সাথে চুপ করে উঠে গিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে।

কিছু পরে বাবা পৌঁছে যান নারসিং হোমে আর পরীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। ব্যানার্জি কাকু বললেন যে এবারে ওদের বাড়ির দিকে যাত্রা করা উচিত।

বাড়ি নিয়ে যাওয়া হলো পুবালির দেহ। সাদা ফুলে আর মভ রঙের শাড়িতে সাজান হলো পুবালিকে। পুরো সময়টা অরুনা চুপ করে পুবালির দেহের পাশে বসে থাকে। পুবালির প্রাণহীন হাত নিজের হাতে নিয়ে আঙুলে হাত বুলিয়ে দেয়। দেখে মনে হয় যেন এই ওর বোন আবার জেগে উঠে ওর সাথে কথা বলবে। কিন্তু হায় বিধাতা, পুবালি যে চির নিদ্রায় মগ্ন।

বাড়ি থেকে যখন ওকে নিয়ে বের হবে সবাই, তখন অভি লক্ষ্য করে কলেজের বন্ধুদের। বিদায়ের শেষ ক্ষণ উপস্থিত। পুবালির অন্তিম যাত্রা। বাড়ি জুড়ে কান্নার রোল জেগে ওঠে, অরুনাকে জড়িয়ে ধরে অরুনার মা কেঁদে ওঠেন। কিন্তু অরুনা নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে পুবালির মুখের দিকে, চোখে জল নেই, অতি শিতল সেই চোখের চাহনি। অভি এবং বাকিরা পুবালিকে কাঁধে করে বাইরে নিয়ে আসে। অরুনা চুপ করে বাড়ির গেট পর্যন্ত ওদের সাথে আসে তারপরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে যতক্ষণ পুবালিকে গাড়িতে তোলা না হয়। তারপরে অরুনা ফিরে যায় বাড়ির মধ্যে, নিজের ঘরে ঢুকে পড়ে, বিছানায় শুয়ে পড়ে। বাড়ির বেশির ভাগ মহিলাদের নিমতলা শ্মশান ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় না।

নিস্পাপ ফুলের কুঁড়ি, পুবালি ব্যানার্জির নশ্বর আগুনে জ্বলে পঞ্চভুতে বিলীন হয়ে যায়। সেইদিন অভি তাঁর জীবনের সবথেকে মর্মস্পর্শী দৃশ্য চোখের সামনে দেখে, স্নেহ ভরা বুকে নিয়ে এক পিতা তাঁর চোখের মণি একমাত্র কন্যের মুখাগ্নি করছেন। ভগবানের কাছে কাতর আবেদন জানায় অভি, যেন কোন পিতাকে তাঁর কন্যার মুখাগ্নি না করতে হয়।
সমুদ্রনীল আর অভি চুপচাপ দুজনে গঙ্গার তীরে বসে রাতের আকাশের তারা দেখতে থাকে।

সমুদ্রনীল অভিকে জিজ্ঞেস করে, “অরুনা যদি কিছু প্রতিক্রিয়া না দেখায় তাহলে কি হবে? ও তো পাগল হয়ে যাবে, আরও বড় কোন বিপদ ঘটবে।”

অভিঃ “তুই ওকে ভালোবাসিস, তোকেই কিছু করতে হবে।”

সমুদ্রনীলঃ “আমি কি করতে পারি, তুই ওকে আমার চেয়ে ভাল করে চিনিস। পুবালির পরে শুচিদি ওর সব থেকে কাছের মানুষ। যদি কিছু করতে পারিস সেটা তোরাই করতে পারিস।”

অভি চারদিকে একবার তাকিয়ে দেখে যে ওদের কেউ দেখছে কিনা। পরিবারের বাকি লোকজন, কিছু দুরে একটা ছাওনির তলায় বসে। একটা সিগারেট ধরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে ওঠে অভি...
“তুমি আমার জীবনের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছো, আমার আঁকা, আমার কবিতা, আমার লেখা। তুমি আমার জীবনের সব থেকে ভাল বন্ধুর বোনকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছো। তুমি আমার কাছ থেকে আর কি চাও? শেষ বারের জন্য তোমার সামনে প্রার্থনা করছি যে আমার ভালোবাসা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিওনা। যদি সেটাও চলে যায় তাহলে আমি জানব যে এই জগতে ভগবান বলে কিছু নেই, আছে শুধু পাথরের এক মূর্তি। শুধু একবারের জন্য প্রমান করো যে তুমি সত্যি আছো।”
 
Chapter 4: সুকৌশল প্রতিজ্ঞা। (#1)

যত দিন যায়, অরুনার শারীরিক অবস্থার অধঃপতন হয়। সেই দিনের পর থেকে অরুনা কারুর সাথে কথা বলেনি, একদম চুপ করে গেছে, ভাবলেশহীন চেহারা, দুচোখ যেন কাঁচের তৈরি। দিন রাত পুবালির ঘরের মধ্যে কাটায়, প্রকাশহীন নয়নে চেয়ে থাকে টেবিলে ছড়ানো বই গুলোর দিকে, পুবালির আলমারির দিকে যেখানে পুবালি জামা কাপড় রাখতো, ফটোর অ্যালবাম হাতে নিয়ে ওদের ছোটো বেলার ছবি দেখে। অরুনা পুবালির চেয়ে মাত্র তিন মাসের বড়, ছোটো বেলা থেকে হরিহর আত্মা ওরা দু’জনে, যেখানেই যেতো বা যা কিছু করতো, দু’জনে একসাথে করতো। শুধু একজন একটু চঞ্চল আরেকজন শান্ত প্রকৃতির মেয়ে ছিল।

অভি মাঝে মাঝেই ওদের বাড়ি গিয়ে অরুনার খবরা খবর নিতো। পরীর সাহসে কুলায় না যে অরুনার অভিব্যাক্তিহীন চোখের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর। পরী নিজেই এত আঘাত পেয়েছিল যে নিজেকে একটা কচ্ছপের খোলের মধ্যে লুকিয়ে নিয়েছিল, ওর ছোটো মা ওর পাশে না থাকলে একদম ভেঙে পড়তো।

পুবালির কাজের দিনে অভিদের যাওয়ার কথা। পরী কান্না শুরু করে, যে ও কিছুতেই ওই বাড়ি যাবে না, কিছুতেই ও অরুনার সামনে দাঁড়াতে পারবে না। মা আর অভি অনেক বুঝাতে চেষ্টা করে পরীকে কিন্তু পরী অটল, ও যাবে না।

শেষ পর্যন্ত বাবা ওকে বললেন, “দেখ সোনামা, আমাদের জীবন একটা নদীর মতন, নদী যেমন চলতে চলতে অনেক বাঁক অনেক বাধার সম্মুখিন হয়, তেমনি আমাদের জীবনেও অনেক বাধা বিপত্তি আসে, কিন্তু নদীর জল কি আর থেমে থাকে মা, সেতো নিজের খেয়ালে বয়ে চলে সাগরের পানে। আমি তোকে পুবালিকে ভুলে যেতে বলছি না, আমি তোকে শুধু একটা অনুরোধ করবো যে জীবন কারুর একার জন্য থেমে যায় না। ইংরাজিতে একটা কথা আছে সোনামা, Rolling stone gather no moss. তুই যদি জীবনের সাথে পা মিলিয়ে না চলিস তাহলে তুই পিছিয়ে পড়বি। সেই দিনের পর থেকে তুই অরুনার সাথে একবারের জন্যেও দেখা করিস নি। ভালো মেয়ের মতন চোখের জল মুছে আমাদের সাথে ওদের বাড়ি চল সোনামা।”

পরী দরজা বন্ধ করে বুক ফাটিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “আমি বুঝি না কেন এই সব আদিখ্যেতা দেখানো? পুবালির চলে যাওয়ায় কেন লোক খাওয়ানো? কোন বৃদ্ধ যদি যেতেন তাহলে আমি নিজেকে বুঝাতে পারতাম। কিন্তু ফুলের মতন নিস্পাপ, নিস্কলঙ্ক মেয়ের চলে যাওয়ায় এই সব কেন?”

বাবাঃ “দেখ মা, আমরা মানুষ, আমরা সামাজিক প্রাণী। এই সমাজের কিছু নিয়ম কানুন আছে, এই সমাজে থাকতে হলে আমাদের সেই নিয়ম, কানুন মেনে চলতে হয় নাহলে আমরা মানুষ বলে গন্য হব না।”

বাবার কথা শুনে, পরী দরজা খোলে, মা ওকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দেয়। বেশ কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা সবাই ব্যানার্জি কাকুর বাড়ি পৌঁছে যায়। এক মুহূর্তের জন্যেও পরী ওর ছোটমায়ের কাছ ছাড়ে না।

ওদের বাড়ি পৌঁছানোর পরে, অভি ওপরে উঠে পুবালির ঘরের মধ্যে ঢোকে। যথারীতি, অরুনা চুপচাপ শুয়ে পুবালির বিছানার ওপরে। চুপ করে দরজায় দাঁড়িয়ে অভি ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, ভেতরে গিয়ে ওকে কিছু বলার সাহস পায় না অভি। কিছু পরে, অরুনার মা ওকে ডেকে নিয়ে যান নিচে। বলেন যে অভির সাথে ওদের কিছু কথা আছে।

নিচে নেমে এসে দেখে যে একটা ঘরে বাড়ির সব লোক জন জড়ো হয়েছে। ব্যানার্জি কাকু, কাকিমা, বাবা মা, পরী, পুবালির বাবা মা। অভি ঘরের মধ্যে ঢুকতেই সবাই ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।

ব্যানার্জি কাকু একবার বাবার দিকে তারপর অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “অরুনার শারীরিক আর মানসিক স্বাস্থের দিনের পরদিন অধঃপতন হয়ে চলেছে, আর আমরা খুব চিন্তিত তাঁর জন্য। আমরা ওকে সাইকিয়েট্রিস্ট দেখিয়েছি, ওষুধও দেওয়া হচ্ছে কিন্তু ও কোন কথা না বলা পর্যন্ত বা কোন কিছু প্রকাশ না করা পর্যন্ত ডাক্তার জানিয়েছেন যে মানসিক অবস্থা আরও ভেঙে পড়বে।”

অভি হাঁ করে সবার দিকে চেয়ে থাকে, ওরা সবাই অভিকে এই সব কথা কেন বলছে, কিছুই বুঝতে পারছে না অভি। পুবালির মায়ের গলা ধরে আসে কান্নায়, “অভিমন্যু আমি এক মেয়ে হারিয়েছি, আমার আর শক্তি নেই আরেক মেয়ে হারানোর।”

অভি পরীর দিকে তাকায়, ইশারায় জিজ্ঞেস করে যে কি চলছে? পরী ইশারায় উত্তর দেয় যে এসব ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

অরুনার মা অভির দিকে তাকিয়ে বলেন, “অভিমন্যু, আমরা সবাই জানি যে তুমি অরুন্ধুতিকে ভালোবাসো।” অরুনার মায়ের কথা যেন অভির বুকে এক শক্তিশেল বানের মতন এসে গেঁথে। কান মাথা গরম হয়ে যায় অভির, ভাবাবেগে চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসে। চোয়াল শক্ত করে নিজেকে সামলে পরীর দিকে তাকায়। পরী মায়ের চেয়ারে পেছনে দাঁড়িয়েছিল, প্রানপন শক্তি দিয়ে চেয়ারের পেছনটা ধরে থাকে। বুক ফেটে যায় ওর, ওই কথা শুনে।

অরুনার মাঃ “তুমি যদি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে পারো, তাহলে তুমি যা চাইবে তাতে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না।”

অভির পায়ের তলার মাটি যেন সরে গেল, চোয়াল শক্ত করে, চোখ বন্ধ করে বুকের মাঝের উত্তাল তরঙ্গটাকে শান্ত করার প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে গেল। কেউ যেন ওর মাথায় তরল আগুন ঢেলে দিয়েছে, “কি বলছে কাকিমা? এটা কি করে সম্ভব? দুঃস্বপ্নেও এই পাপের কথা ও চিন্তা করেনি। হ্যাঁ, সবার মনের ভেতরে এক ভ্রান্তি ছিল আর সেটা ওরা একদিন কাটিয়ে দেবে তাও ঠিক করেছিল, কিন্তু তাঁর আগেই এই সব?”

ও জানে যে পরী এই কথা শুনে, মরমে মরে যাচ্ছে। চোখ খুলে পরীর দিকে তাকিয়ে দেখে যে পরী নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে প্রাণপণে নিজের মনকে সামলানোর প্রবল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পরী, চেহারায় ফুটে উঠেছে এক অব্যক্ত বেদনার ছাপ, সেই বেদনা ওই ঘরের কেউ টের পেলোনা শুধু একমাত্র অভি ছাড়া। পরীর বুকের মধ্যে যেন এক স্টিম ইঞ্জিন দৌড়াচ্ছে যেন, চোখের বাঁধ ভেঙে গেছে। দুঃখে বেদনায় কান নাকের ডগা লাল হয়ে উঠেছে পরীর।

পরী ছাড়া বাকি সবাই অভির উত্তরের প্রতীক্ষায়। অভি সবার মুখের দিকে একবার তাকায়, নিরুপায় আজ বীর অভিমন্যু, জানেনা ওর প্রতিজ্ঞার ফল ওদের জীবনটাকে কোথায় নিয়ে যাবে, কিন্তু অভি সবার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবে যে কিছু একটা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সবার আশা ভরসা এভাবে ভেঙে দেওয়া ঠিক হবে না। অভিমন্যুর অভি বুকের ভেতর থেকে বলে ওঠে, “ভেবে চিন্তে পদক্ষেপ নেবে অভিমন্যু, তোমার ভালোবাসা আর তোমার স্নেহ আজ দুজনের পরীক্ষা, আজ দুজনেই তোমার সামনে হাত পেতে দাঁড়িয়ে।”

হাঁটু গেড়ে অরুনার মায়ের সামনে বসে পড়ে অভি, অরুনার মায়ের হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে, “আমি কথা দিচ্ছি যে আমি তোমার মেয়েকে তোমার কোলে ফিরিয়ে দেব।”

আড় চোখে পরীর দিকে তাকায় অভি। পরীর দুচোখ শক্ত করে বন্ধ, মাথা নিচু। মুখে দেখে মনে হচ্ছে যেন বুক এখুনি ফেটে যাবে। প্রাণপণে চোখের জল আর বুকের অভিব্যাক্তি লুকিয়ে রেখেছে পরী। অভি যেন ঘরের মধ্যে পরীর হৃদয় ভাঙার আওয়াজ শুনতে পায়। সবার চোখে, পরী অরুনার জন্য চোখের জল ঝরাচ্ছে, কিন্তু একমাত্র অভি ওর মনের অবস্থা জানে, কেন পরীর বুকের মধ্যে এই উত্তাল তরঙ্গ আছড়ে পড়ছে। রাগে, দুঃখে বেদনায়, পাথরের মতন দাঁড়িয়ে থাকে পরী।

অভি একবার মাথা নিচু করে মেঝের দিকে দেখে অরুনার মাকে বলে, “আমাকে কথা দাও যে আমি যা চাইব তাই যেন তোমরা মেনে নাও।”

ব্যানার্জি কাকু ওর কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বলে, “তুমি যা চাইবে সেটা তুমি পাবে, আমরা সবাই মেনে নেব। আমি আজ সবার সামনে তোমাকে কথা দিচ্ছি।”

সবার সামনে অভি প্রতিজ্ঞা করে দিল কিন্তু জানেনা যে সেই প্রতিজ্ঞার ফলাফল, ওদের দুজনের জীবনকে কোন মোড়ে নিয়ে যাবে। নদী কোন খাতে বইতে চলেছে, কিছুই জানে না, পরীর আর অভির সম্পর্কের কি হবে জানে না, সবকছুই এক বিশাল অনিশ্চয়তার মধ্যে যেন ডুবে গেল। পুবালিকে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে সমুদ্রনীল যেন অরুনাকে দেখে, সেই প্রতিজ্ঞা অভি কি করে পূরণ করবে, জানে না।

বাড়ি ফিরে যাবার আগে অভি পুবালির ঘরে যায় অরুনাকে দেখার জন্য। অরুনা এক রকম ভাবে বিছানায় শুয়ে এমন কি পাশ ফিরে দেখেওনি যে কে এলো কে গেল। বুক ফেটে কাঁদতে ইচ্ছে করে অভির, কিন্তু সেই ভাঙা বুকের কান্না কেউ শুনতে পায় না।

বাড়ি ফেরার সময়ে সারা রাস্তা কারুর মুখে কোন কথা ছিল না, বাবা মা অভি পরী, সবাই চুপ। সবার মনের মধ্যে এক সংশয়ের দানা বেঁধে উঠেছে, বাবা মায়ের চিন্তা অন্য খাতে। অভির মাথায় অন্য চিন্তা, কি করে পরীর প্রতি ওর ভালোবাসা রক্ষা করবে আর একদিকে ব্যানার্জি কাকু দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে।

বাড়ি ঢুকেই পরী নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্ধ করে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। বাবা মা শুতে চলে যান, অভি নিরুপায় হয়ে কিছুক্ষণ বসার ঘরে বসে থাকে তারপরে ছাদে নিজের ঘরে চলে যায়।

ঘুম আসে না অভির, ছাদের মেঝেতে বসে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে তারার মিটিমিটি চাহনি দেখতে থাকে। মাথা যেন খালি হয়ে গেছে, কিছুই ভাবার শক্তি নেই যেন। কয়েক দিনে আগে পূর্ণিমা ছিল তাই চাঁদ বেশ বড় দেখাচ্ছিল। সেই চাঁদও যেন ওর কাছে কাঁদছে, আকাশের তারার ঝিকিমিকি যেন ম্লান হয়ে এসেছে ওর বুকের বেদনার সামনে। অভির মনের মধ্যে উদ্দাম ঝড় বয়ে চলে, “এ আমি কি করেছি? কি করে আমি আমার প্রতিশ্রুতি আর ভালোবাসা রক্ষা করবো? আমি পরীর কাছে কথা দিয়েছি যে ওকে ছেড়ে আমি যাবো না, ওদিকে পুবালিকেও কথা দিয়েছি যে সমুদ্রনীলের হাতে অরুনার হাত তুলে দেব। আবার ব্যানার্জি কাকুর কাছেও প্রতিজ্ঞা করেছি যে অরুনাকে ফিরিয়ে দেব ওদের বুকে। কিন্তু কি করে হবে, একসাথে এত গুলো প্রতিশ্রুতি রক্ষা।”

মাথার নিচে দুহাত ভাঁজ করে ছাদের ওপরে শুয়ে পড়লো অভি। অল্পক্ষণ না অনেকক্ষণ জানে না, ওর চিন্তনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় মৃদু পদক্ষেপের শব্দে। পরী ওর পাশে এসে বসে, জল ভরা ব্যাথা মাখানো চোখ নিয়ে তাকায় অভির মুখের দিকে। কেঁদে কেঁদে পরীর কাজল কালো চোখ দুটি জবা ফুলের মতন লাল হয়ে গেছে।

কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে অভিকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি ওইরকম একটা কথা দিতে গেলে কেন?” অভি চুপ, উত্তর দেবার ভাষা নেই অভির কাছে। পরী ওর বুকের ওপরে লুটিয়ে পড়ে চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, “অভি কথা বলো, কেন এই প্রতিজ্ঞা করতে গেলে তুমি? আমার ভালোবাসা কি কিছুই নয় তোমার কাছে? কেন আমার বুক ভেঙে দিলে?” অভি পরীকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে। পরী মুখ তুলে ওর বেদনা ভরা চোখের দিকে তাকায়, “তুমি কি একটি বারের জন্যেও আমার কথা ভেবে দেখলে না? আমি তোমাকে ছেড়ে কি করে থাকব, অভি?”

অন্ধকার আকাশের মাঝে পুবালির চোখ ভেসে ওঠে। পুবালি নেমে এসে অভির কানে কানে বলে, “তুই আমাকে কথা দিয়েছিলিস আর শুচিদিকেও কথা দিয়েছিলিস। তুই কারুর হৃদয় ভেঙে দিতে পারিস না, অভি। তুই আজ মহাভারতের অভিমন্যুর মতন চক্রবুহ্যের মাঝে পড়ে গেছিস। কুরুক্ষেত্রর যুদ্ধে মহাভারতের অভিমন্যুর হার হয়েছিল, কিন্তু আমার অভিমন্যু হারতে পারে না। উঠে দাঁড়া অভি, যুদ্ধ কর নিজের সাথে আর ততক্ষণ যুদ্ধ কর তুই যতক্ষণ তোর কার্যে সফলতা প্রাপ্তি ঘটে।”

অভি পরীর মুখ হাতের মাঝে আঁজলা করে নিয়ে কপালে ছোটো একটা চুমু খায়। পরী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির মুখের দিকে, বুঝতে চেষ্টা করে যে অভির বুকের ভেতরে কি চলছে।

অভিঃ “তুমি কি ভেবেছিলে? যে আমি অরুনাকে বিয়ে করবো?”
 
Chapter 4: সুকৌশল প্রতিজ্ঞা। (#2)

মাথা নাড়ায় পরী, “হ্যাঁ, আমি তোমার কথা শুনে তাই ভেবেছিলাম। তুমি অরুনার মুখ দেখে আর সবার চাপের সামনে মাথা নত করে শেষ পর্যন্ত হয়তো অরুনাকে কাছে টেনে নেবে। আমি জানি যে এক সময়ে অরুনার প্রতি তোমার কিছু দুর্বলতা ছিল।”

অভিঃ “পরী, আমি তোমাকে আর শুধু তোমাকেই ভালবাসি। তুমি ছাড়া এই বুকে আর কেউ স্থান নিতে পারে না পরী।”

পরীঃ “তাহলে তুমি ওই রকম কথা দিলে কেন?”

অভি মৃদু হেসে বলে, “আমার মাথায় এক পরিকল্পনা এসেছে, যাতে করে সবার মন রক্ষা হবে।” পরী অবাক হয়ে অভির মুখের দিকে চেয়ে থাকে। অভি বলে, “অরুনাকে নিয়ে বেড়াতে যাবো আমরা, আমাদের সেই পুরানো জায়গায়। একটা নতুন পরিবেশ, নতুন জায়গায় আশা করি অরুনা ভালো হয়ে যাবে। ওকে শুধু ওর চারপাশের চাপা অবস্থা থেকে বের করা দরকার আর একটু স্নেহের ছোঁয়া দরকার যাতে ওর বুকের ভেতরে যে ব্যাথার পাথর জমে আছে সেটা গলে যায়।” অভির কথা শুনে পরী চোখ বড় বড় করে অভির দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে ওর পরবর্তী পদক্ষেপ। অভি বলে, “আমার যতদূর ধারনা যে আমাদের সাথে গেলে ওর মনের অবস্থা ফিরে আসবে। ওকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার পরে আমি ব্যানার্জি কাকুকে ওর আর সমুদ্রনীলের সম্পর্কের কথা বলবো। ব্যানার্জি কাকু আমাকে কথা দিয়েছেন যে আমার কথা তিনি শুনবেন, সুতরাং আশা করি তিনি মর্মাহত হবেন না এবং আমার কথা রাখবেন। এই ভাবে সবার কাছে করা প্রতিজ্ঞা রক্ষা হবে। শুধু একটা কথা, আমাদের সম্পর্কের কথা কাউকে এখুনি জানানো হবে না, কেননা এটা ঠিক সময় নয়। আমার হাতে আরো সময় দরকার পরী, আমাকে চাকরি পেয়ে দাঁড়াতে হবে যাতে আমি বাবা মায়ের সমকক্ষ হয়ে তাদের সম্মুখিন হতে পারি, আর যা আমার নিজের তা আমি দাবি করতে পারি।”

প্রায় একপক্ষ কাল পরে, পরীর মুখে হাসি দেখে অভি অভিভূত হয়ে গেল। এতদিন পরীর মনে শুধু অরুনার জন্য চিন্তা ছিল আর আজ অভির প্রতিজ্ঞা ওকে মৃতপ্রায় করে দিয়েছিল। অভির ঠোঁটের ওপরে আলতো করে ঠোঁট চেপে ধরে বলে, “তুমি কে?” পরীর মধুঢালা স্বর পুনরায় শুনে অভির মন গলে গেল, ক্ষণিকের জন্যে ওর মনে হয়েছিল যে পরীকে হারিয়ে ফেলছে।

অভি ওর কোমর জড়িয়ে বুকের কাছে টেনে নিল, পরী যেন ওর উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে অভির বুকে গলে গেল। অভি ওর কানে কানে বলে, “মনে আছে একদিন তুমি আমাকে বলেছিলে যে তুমি আমার মন্ত্রী বুদ্ধিদাত্রি। আজ আমি তোমাকে বলছি, যে আমি তোমার মন্ত্রী, তোমার বুদ্ধিদাতা, আমি তোমার কার্ত্তিক, আমি বটবৃক্ষ তোমাকে ছায়া দেবার জন্য আর আগলে রাখার জন্য, আমি তোমার সস্নেহময় পিতা আর রতিক্রিয়ায় আমি কামদেব।”

পরীর চোখ ভাবাবেগে চিকচিক করে ওঠে। অভি ওকে জড়িয়ে ধরে নিজের শরীরের ওপরে টেনে নেয়। একে অপরের আলিঙ্গন বদ্ধ হয়ে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকে। ওদের নিবিড় প্রেমালিঙ্গনের সাক্ষী হয় আকাশের চাঁদ আর ঝকমকে তারা।

একটু চিন্তা করার পরে অভি বললো, “কিন্তু এর মধ্যে একটা সমস্যা আছে, পরী।”

পরীঃ “কি সমস্যা আবার উদয় হলো?”

অভিঃ “আমি অরুনাকে নিয়ে বেড়াতে যাব সেটা ঠিক আছে কিন্তু আমাদের সাথে যদি তুমি যাও তাহলে তোমার সন্দেহ বাতিক ছোটো মায়ের মনে সন্দেহের উদ্রেক হবে আর তোমাকে বাড়িতে আটকে রাখবে। সেই সমস্যার একটা সমাধান আছে আমার কাছে, তুমি কল্যাণী আর রানীকে ফোন করে বল, আমাদের সাথে ঘুরতে যেতে। তারপরে তুমি তোমার ছোটো মাকে জানাও যে তুমি রানী আর কল্যাণীদের সাথে হিমাচল প্রদেশ ঘুরতে যেতে চাও এবং সাথে অরুনাকে নিয়ে যেতে চাও। তাহলে তোমার ছোটমা তোমাকে বারন করবে না এবং ব্যানার্জি কাকুও তোমাকে বারন করবে না কারন তিনি জানেন যে তুমি অরুনাকে খুব স্নেহ করো। যখন অরুনা তোমার সাথে যাবে তখন সবাই আমাকেও তোমাদের সাথে যেতে বলবে, ব্যাস সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”

নাকের ওপরে নাক ঘষে পরী মৃদুকন্ঠে বলে ওঠে, “আমি যে তোমাকে কত ভালবাসি বলে বুঝাতে পারব না অভি...”

অভি দেখলো যে পরী হয়তো ভাবাবেগে এখুনি চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করে দেবে তাই ঝট করে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ওর ভাবাবেগ প্রেমের আবেশে বদলে দেয়। কিছু পরে নিজেকে অভির ঠোঁট থেকে মুক্ত করে লাজুক হেসে বলে, “তুমি না খুব শয়তান ছেলে।”

মাথা হেলায় অভি, “উম্মম হানি, আমি তোমার বুদ্ধিদাতা মন্ত্রী।”

মাথা নাড়িয়ে অভির সারা মুখে চুলের পরশ ছড়িয়ে দেয় পরী। মখমলের মতন চুলের পরশে প্রেমাবেগে চেপে ধরে পরীকে নিজের বুকের কাছে। পরীর কোমল বুক জোড়া অভির নগ্ন বুকের ওপরে পিষ্ট হয়ে যায়। পরীর কোমল পিঠের ওপরে হাত বুলাতে শুরু করে দেয় অভি, শিরদাঁড়ার ওপর দিয়ে নখের আলতো আঁচড় কেটে দেয় মাঝে মাঝে। ওর ছোটো নরম গোল পেট অভির নগ্ন পেটের ওপরে মাখনের মতন লেপে যায়। দু' জানু জোড়া করে অভির জানুর ওপরে রেখে দেয় পরী। অভি ধিরে ধিরে হাত নিয়ে যায় সুগোল নিতম্বের ওপরে, আলতো করে চেপে ধরে কোমল নারী মাংস। উত্তপ্ত হাতের চাপে পরীর বুকের মাঝে কামনার আগুন জ্বলে ওঠে, শরীর গরম হয়ে ওঠে প্রেমের নিবিড় আলিঙ্গন পাশে।

তপ্ত নিঃশ্বাসে অভির মুখ ঝলসে যায় প্রায়, পরী মাথা নিচু করে অভির কাঁধে মুখ গুঁজে দিয়ে ঘাড়ে কানে চুমু দিতে থাকে। গালে গাল ঘষে বারবার। মৃদু ঘর্ষণের ফলে দুই শরীরে আগুনের ফুল্কি ছিটকে যায়। অভির বুকে কামনার উত্তাল তরঙ্গ দোল খায়, প্রেয়সীর কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। বাম হাতে পরীর মাথার চুল মুঠি করে ধরে মাঝে মাঝে আঁচড়ে দেয়। বুকে যেন কামনার বিশাল ঝড় শুরু হয়ে যায়।

অভি দুই পা একটু ফাঁক করে দেয়, পরীর জানু অভির মেলে ধরা পায়ের ফাঁকে গলে যায় আর অভি চেপে ধরে পরীর শরীর। প্রেমের আলিঙ্গনে এতই বিভোর দুই কপোত কপোতী যে ওরা ভুলেই গেছে যে ওরা তখন খোলা আকাশের নিচে।

গ্রীষ্ম কালের মৃদুমন্দ বাতাস ওদের বুকের আগুন যেন আরও জ্বালিয়ে তোলে। মিলে মিশে একাকার হয়ে থাকে দুই শরীর।

অভি ওর কানে কানে বলে, “বেবি...”

পরী ফিসফিস করে বলে, “ম্মম্মম্মম...... কি হলো!”

অভি ওর সুগোল নরম নিতম্ব চেপে ধরে বলে, “আমারা কি সেলিব্রেট করবো?”

নিতম্ব চেপে ধরে পরীর নিম্নাঙ্গ টেনে ধরে নিজের তপ্ত কঠিন সিংহের ওপরে। পরী নিজের নিচে অভির তপ্ত শলাকার স্পর্শ পেয়ে মোচড় দেয়। শরীরের মোচড়ের ফলে বারে বারে অভির সিংহ গিয়ে ধাক্কা মারে পরীর নারীত্বের দোরগোরায়। পরীর বক্ষোপরি তপ্ত নুড়ি অভির নগ্ন বুকে আঁচড় কাটতে থাকে, পুড়িয়ে দেয় যেন অভির ত্বক। অভি থাকতে না পেরে চেপে ধরে ওর পুরুষ সিংহটিকে পরীর ঢাকা নারীত্বের দোরগোড়ায়। পরী মৃদুসুরে কঁকিয়ে ওঠে। প্রেমের দুধ সাগরে ডুব দেবার প্রস্তুতি আসন্ন। অভির মোচড় আর চাপের ফলে পরী সিক্ত হয়ে ওঠে, কিছুটা ঘামে কিছুটা প্রেমে।

অভি আবার জিজ্ঞেস করে, “সোনা, আমার এবারে সেলিব্রেট করি?”

পরী ওর কাঁধ থেকে মাথা না উঠিয়ে কানে কানে বলে, “এত কিছু করে, আমার ভেতরে আগুন জ্বালানোর পরেও তুমি জিজ্ঞেস করবে, শয়তান ছেলে।”

অভি দুষ্টুমি করে বলে, “ভদ্রলোকেরা সবসময়ে জানান দিয়ে ঘরে ঢোকে সোনা, আর তুমি তো আমার স্বর্গের অপ্সরা, তোমাকে না জানিয়ে কি করে...”

পরীঃ “উম্মম... কত আমার ভদ্রলোক। কিন্তু খোলা আকাশের নিচে নয়।”

অভিঃ “আমাদের কেউ দেখতে পাবে না বেবি।”

পরীঃ “শয়তান ছেলে, আমার কি লজ্জা করেনা নাকি। এই রকম খোলা জায়গায় কি মানুষে এসব... ধুত তুমি না...”

পরী মাথা তুলে তাকায় অভির বাসনা তাড়িত চোখের দিকে। চিবুকের ওপরে চিবুক রাখে পরী, আলতো করে জিব বের করে চেটে দেয় অভির ঠোঁট। আধবোজা ঠোঁটের ভেতর থেকে উষ্ণ নিঃশ্বাস স্নান করিয়ে দেয় অভির সারা মুখ।

অভি সিংহটিকে মোচড় দিয়ে পরীর জানুসন্ধিতে পিষে দিয়ে বলে, “আমি আর থাকতে পারছিনা বেবি। আমাকে তুমি তোমার আলিঙ্গন থেকে অনেক দিন হতে বঞ্চিত করে রেখেছো। আমার ভেতরে বাঁধ আজ যেন ভেঙে যাবে তোমার কোমল ছোঁয়ায়, তোমাকে আমার সাথে মিলিয়ে নেব আজ এই রাতে।”

অভির হাত নিচে নেমে যায়, পরীর গায়ের কাপড় ধিরে ধিরে টেনে উঠাতে শুরু করে। গ্রীষ্মের মৃদু বাতাস পরীর নগ্ন পায়ের গুলির ওপরে বয়ে যায়। আরও ওপরে টানে পরীর রাত্রিবাস, জানুর মাঝে মৃদু বাতাস ছুঁয়ে যায়।

পরী চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, “শয়তান ছেলে... এখানে নয়।” অভি ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুরে যেতে চেষ্টা করে, কিন্তু পরী সর্ব শক্তি দিয়ে অভিকে ছাদের মেঝের সাথে চেপে ধরে থাকে। পরী মৃদু সুরে বলে, “তুমি যদি আমার সাথে এই খোলা আকাশের নিচে... তাহলে কিন্তু আমি তোমার সাথে কোনদিন কথা বলবো না।”

আস্তে করে পরীকে জড়িয়ে ধরে উঠে পড়ে অভি, পরী ক্ষণিকের জন্যেও অভির গলা ছাড়েনা। পরীকে কোলের ওপরে উঠিয়ে নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।

আলো জ্বালাবার জন্য হাত বাড়ায় অভি, পরী চেঁচিয়ে ওঠে, “একদম আলো জ্বালাবে না কিন্তু।”

অভিঃ “কেন কি হলো? আমি আমার পরীকে একবার পুরো দেখতে চাই।”

বিছানার চাদরে নিজেকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে নেয় পরী, ঠিক যেন মিশরের মমির মতন দেখায় ওকে। দুষ্টু হেসে পরী অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “হ্যাঁ এবারে আলো জ্বালাতে পারো তুমি, আমি এই বিছানার চাদর গা থেকে নামাব না।”

দু’চোখ প্রেমের আবেগে চিকচিক করে ওঠে, ঠোঁটে লেগে কামনার তপ্ত আগুন। অভির সারা শরীরে ঘাম দেয়, সিংহ মাথা উঁচু করে নিজের জানান দেয়, বারে বারে ভেতর থেকে গর্জে ওঠে। গালের টোল যেন উত্তপ্ত লাভার ছোঁয়া পেয়ে লাল হয়ে উঠেছে।

অভি আলো জ্বালিয়ে পরীর দিকে এগিয়ে যায়, “তুমি তাহলে আমার সাথে খেলা করতে চাও, দুষ্টু মেয়ে।”

অভি ওর পায়ের দিক থেকে বারে বারে চাদর টেনে নিতে চেষ্টা করে আর বারে বারে পরী পা ছুঁড়ে ওকে আটকে দিতে চেষ্টা করে। অভি বিছানার ওপরে চড়ে যায় আর পরী ঘুরে শুয়ে পড়াতে গায়ের থেকে চাদর সরে যায়। সুযোগ বুঝে শয়তানি করে পরীর কাপড় জানু ওপরে উঠিয়ে দেয়, পেলব মসৃণ জানুর ওপরে অভির উত্তপ্ত চোখের চাহনি যেন ফোস্কা ফেলে দিতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে পা ঢেকে দিয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে পরী। অভি আর থাকতে পারেনা আর শেষ পর্যন্ত ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রেয়সীর ওপরে, পরী সঙ্গে সঙ্গে হাত বাড়িয়ে আলো নিভিয়ে দেয় আর সারা ঘর অন্ধকারে ঢেকে যায়। জানালা দিয়ে চাঁদের নির্মল আলো ওদের বিছানার ওপরে খেলা করে ওদের উষ্ণ শরীর স্নান করিয়ে দেয়।

ঘামে নাকের ডগা চাঁদের আলোয় চিকচিক করে, পরীর মুখ দেখে অভি নিজেকে আর দুরে সরিয়ে রাখতে পারে না। ওর ওপরে উঠে গিয়ে, দেহের দুপাশে হাত রেখে শরীরের নিচের অংশ পরীর ওপরে চেপে ধরে। পরীও শয়তানি করে জানু চেপে ধরে যাতে অভি ওর পায়ের ফাঁকে নিজেকে নিয়ে যেতে না পারে। অভি ঝুঁকে পড়ে পরীর মুখের ওপরে, পরীর দু হাত উঠে আসে অভির কাঁধের ওপরে আর ওর মাথা টেনে নিচে নামিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে। ঠোঁটের মধুতে ভরিয়ে দেয় অভি পরীর সারা মুখ, জিবের ডগা ঢুকিয়ে দাঁতের পাটির ওপরে আলতো করে বুলিয়ে দেয়। পরী আর যেন নিজেকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারেনা অভির কামাগ্নির পরশ থেকে, ধিরে ধিরে জানু মেলে ধরে আহবান জানায় অভিকে। অভি নিম্নাঙ্গ চেপে ধরে পরীর নারীসুখের ওপরে। চুম্বনটিকে না থামিয়ে পরী চাদর টেনে দেয় ওদের গায়ের ওপরে। ওর যে ভীষণ লজ্জা। একে অপরকে বাহু পাশে বেঁধে ফেলে ওরা।

শরীরের যত রোমকুপ ছিল সবকটা উন্মুক্ত হয়ে ওঠে প্রেমের আগুনে, ধিরে ধিরে একে অপরের হাত ধরে সুখের সাগরে ডুব দেয়। প্রেমের সেই সুন্দর স্বর্গ উদ্যানে ঘুরে বেড়ায়। রতিক্রীড়া শেষে অভির মনে একটা বেদনা থেকেই যায় যে প্রেয়সীর সম্পূর্ণ রুপ দর্শন সে আজও মন ভরে দেখতে পারলো না।
 
Chapter 5: লাহুল স্পিতি ভ্রমন। (#1)

অভির সুকৌশল পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওরা দুজনে একদম মেপে মেপে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়। সর্বপ্রথম পরী কল্যাণী আর রানীকে ফোন করে পরিকল্পনার কথা জানায়। ওদের যেহেতু এখন কোন সন্তান নেই তাই ওরা সব শুনে পরীদের সাথে যেতে রাজি হয়। তারপরে পরী ব্যানার্জি কাকুকে বাড়িতে ডাকে। ইচ্ছে করেই অভি সেই দিন বাড়িতে থাকে না। পরী ব্যানার্জি কাকুকে বুঝিয়ে রাজি করে যে ও অরুনাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চায়, যাতে অরুনার মনের পরিবর্তন হয়। বাবা মা ওর কথায় খুব খুশি হয়ে মত দেন। অভি বাড়ি ফেরার পরে বাবা ওকে সব ঘটনা জানিয়ে বলেন যে মেয়েদের সাথে যেতে, যেহেতু বাড়ির কেউ পরীর বান্ধবীদের ভাল ভাবে চিনতো না। সবকিছু অভির আর পরীর সুকৌশল পরিকল্পনার মতন হতে থাকে।

অভি ঠিক করে যে এবারে ও আরও দুরে যাবে। পুরো লাহুল স্পিতি উপত্যকা ঘুরবে, পরীকে নিজের অভিপ্রায় জানাতে পরী খুশিতে নেচে ওঠে। সবকিছু ঠিক হয়, যাবার দিন ঠিক হলো যে ওরা জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে বেরিয়ে পড়বে। পুরো ট্রিপ করতে প্রায় চোদ্দ দিনের মতন লেগে যাবে। যাবার আগে অভি ভালো করে সেই জায়গার বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করে দেয়, কোথায় কি ভাবে যাবে, কোথায় থাকবে সব খুঁটিনাটি তথ্য যোগাড় করে ফেলে। পরীকে পুরো ঘোরার রাস্তা এবং সব কিছু তথ্য জানায়। ওরা নিউ দিল্লী থেকে কালকা হয়ে সারাহান, রেকংপিও হয়ে সোজা নাকো চলে যাবে। তারপরে নাকো থেকে এবারে আগে যাবে ওরা, তাবো, কাজা হয়ে কুনযুম পাস। তারপর রহতাং পাস হয়ে মানালি ঢুকে, মান্ডি হয়ে দিল্লী ফিরবে। পরীকে ভালো করে বুঝিয়ে দেয় ভ্রমণের পরিকল্পনা যাতে ও দিপঙ্করকে বুঝিয়ে বলতে পারে। কেননা, অভির বাবা মা দিপঙ্করকে জিজ্ঞেস করবে যে ওরা কোথায় যাচ্ছে এবং সেই জায়গার সম্বন্ধে আরও তথ্য জিজ্ঞেস করতে পারে।

লোকজনকে কথা বুঝানোর ক্ষেত্রে পরী খুব পটু তাই দিপঙ্করকে বুঝিয়ে উঠতে ওর বেগ পেতে হলো না, এবং সাথে সাথে ছোটো মাকেও হাতের মুঠিতে করে নিল।

ওদিকে অরুনার স্বাস্থ্য কিছুটা উন্নতি হয়েছে, কিন্তু মনের ভাব সেই এক, কেউ ওকে কথা বলাতে পারলো না বা পুবালির ঘর থেকে বের করতে পারলোনা। ব্যানার্জি কাকু যখন ওকে জানালেন যে পরী ওকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চায় তখন শুধু মাত্র মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় অরুনা। সেই ভাবলেশ হীন অভিব্যাক্তি দেখে পরীর হৃদয় কেঁদে ওঠে।

অভি ওর পুরানো বন্ধু সুপ্রতিমদাকে ফোন করে, “এই সুপ্রতিমদা কেমন আছিস?”

সুপ্রতিমদাঃ “কিরে শয়তান, এত দিন পরে মনে পড়লো। তুই শালা কাজ না থাকলে মনে করিস না। বল এবারে আবার কাকে নিয়ে কোথায় প্লান করেছিস। শালা এবারে যদি দিল্লী এসে উড়ে পালিয়ে যাস তাহলে তোকে আর আস্ত রাখবো না।”

অভিঃ “নারে ভাই, এত রেগে যাস না। এবারে আমরা সাত জনের একটা গ্রুপ সেই হিমাচলে ঘুরতে যাব ভাবছি। তাই তোকে ফোন করে জানালাম। তুই আমাদের জন্য একটা ছোটো বাসের যোগাড় করে দিতে পারিস? এবারে কারন একটু অন্য ধরনের, এবারে আমি আমার এক বন্ধুকে নিয়ে যাচ্ছি আর তার অবস্থা আমি তোকে পরে জানাব।” অভি সুপ্রতিমদাকে অরুনার পুরো ঘটনা জানাতে, ও রাজি হয়ে যায়।

শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় যে অরুনা, অভি আর পরী প্লেনে করে দিল্লী পৌঁছাবে আর দিপঙ্কর, কল্যাণীরা রাজধানি এক্সপ্রেসে করে দিল্লী পৌঁছে যাবে।

সুপ্রতিমদা দিন তিনেক পরে অভিকে ফোন করে, “শোন ভাই, আরও দুজন যদি তোদের সাথে যেতে চায় তাহলে কি নিবি?”

অভি জিজ্ঞেস করে, “কে কে যাবে?”

সুপ্রতিমদা হেসে উত্তর দেয়, “আমি আর আমার বান্ধবী।”

সুপ্রতিমদার কথা শুনে অভি অবাক, যে ছেলে শুধু চরে খেতো আজ সে ছেলের মুখে অন্য কথা, “তুই যাবি আর আমি না করতে পারি নাকি। তা শেষ পর্যন্ত তুই টেস্ট ম্যাচ খেলার পিচ পেয়েই গেলি বল। তোর বউ কি দেখতে সেক্সি রে?”

সুপ্রতিমদাঃ “শালা নিজের একটা ব্যাটিং পিচ আছে না সেখানে গিয়ে ব্যাটিং কর না, আমার পিচের কথা তোর জেনে কি হবে।”

অভিঃ “রেগে যাচ্ছিস কেন রে তুই।”

সুপ্রতিমদাঃ “আচ্ছা শোন এবারে, আমি একটা ইনোভা ঠিক করেছি আর আমার তো টাটা সাফারি আছে। আমাদের কাছে তাহলে দু দুটো ড্রাইভার থাকবে, আর আমার ড্রাইভার বলবিন্দারকে তো তুই আগে থেকে চিনিস। এবারে আমি ভাবছি কি যে আমি আর তুই আমার টাটা সাফারিতে আমাদের বউ নিয়ে যাব, বাকিরা ইনোভাতে যাবে। তুই ড্রাইভ করতে জানিস আমিও জানি সুতরাং গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যেতে বিশেষ অসুবিধে হবে না। আর তুই যে সব জায়গার কথা আমাকে শুনালি সেসব জায়গায় আমি কোনদিন যাইনি, রিতিকা তো সব কথা শুনে খুব খুশি। তোর বউয়ের সাথে আমার বউয়ের দেখা হয়ে যাবে।”

অভিঃ “হুম্মম্ম... তাহলে তোর বউয়ের নাম রিতিকা, বেশ মিষ্টি নাম রে। তা তোর মনের মতন তো?”

সুপ্রতিমদাঃ “বোকা... এসে দেখে যা একবার। আর শালা একবার যদি কিছু কমেন্ট মেরেছিস রিতিকাকে দেখে তাহলে তোরটা কেটে তোর হাতে ধরিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেব।”

অভিঃ “গুরু বিয়ে হয়নি আর এখন থেকেই এত আগলে রাখছিস।”

সুপ্রতিমদাঃ “বোকা... ছাড় ওসব কথা, এবারে বল কবে দিল্লী আসছিস।”

অভিঃ “পরের রবিবার, সকালের ফ্লাইট, ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স আই.সি.264।”

যাবার দিন কাছে চলে আসে। ব্যাগ গুছানোর পালা প্রায় শেষ। ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া গরম জামাকাপড় নেওয়া হয়। যে জায়গায় যাচ্ছে সেখানে ঠাণ্ডা ভীষণ। অভি পরীকে জিন্স নিতে বলে, পরী প্রথম প্রথম নারাজ হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত অভির কাতর মিনতির সামনে হেরে যায়। এরই মাঝে পরী অরুনার বাড়ি গিয়ে ওর ব্যাগ গুছিয়ে দিয়ে আসে, অরুনার মানসিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। অরুনা যেমন চুপ ছিল সেইরকমই আছে, আর সেটাই সবার চিন্তার বিষয়। ব্যানার্জি কাকু পরীর ব্যাবহারে ভীষণ খুশি। পরী জানতে চায় যে অভি কি করে অরুনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করাবে, অভির কাছে উত্তর দেবার মতন কোনো পরিকল্পনা থাকে না, শুধু এইটুকু জানায় যে কিছু একটা হয়ে যাবে, হয়তো নতুন জায়গায় গিয়ে বা অচেনা মানুষদের সাথে মিশে অরুনার মানসিক পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে অভির ধারনা।

কল্যাণী দীপঙ্কররা একদিন আগেই ট্রেনে চেপে দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়।

বাবা আর ব্যানার্জি কাকু অনেক চেষ্টা চরিত্র করে প্লেনের টিকিট এক্সিকিউটিভ ক্লাসে কাটে। যাবার দিন বাড়ির সবাই এয়ারপোর্টে ওদের ছাড়তে এসেছিলেন। অরুনা নিজের খেয়ালেই ছিল, পাথরের পুতুলের মতন নড়াচড়া করছিল। অরুনার মা আর অভির মা দুজনের চোখে জল এসে গেছিল অরুনার অবস্থা দেখে। ব্যানার্জি কাকু অভিকে আবার মনে করিয়ে দেন ওর প্রতিজ্ঞার কথা, এবারে অভি হেসে জানায় যে ও ওর কথা রাখবে, এবং অরুনাকে ঠিক করেই ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।

প্লেনে অরুনা আর পরী পাশাপাশি বসে, করিডোরের অন্য দিকে অভি। অরুনা জানালার ধারের সিটে বসে হাতের ওপরে মাথা রেখে একমনে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। পরী একটা সুন্দর সবুজ রঙের সালোয়ার পরেছিল। পরী প্রথম বার প্লেনে চাপে কিন্তু সেই উৎসাহ ছাপিয়ে ওর মনের ভেতরে অরুনার চিন্তা বেশি করে ভর করে। সকালের খাবার দিয়ে যায় এয়ারহোস্টেস, পরী খাবারের বহর দেখে অভির দিকে তাকায়। অভি ওকে জানায় যে ওরা এক্সিকিউটিভ ক্লাসে ভ্রমন করছে। পরী অরুনার দিকে তাকায়, অরুনা ভাবলেশহীন চোখে জানালার বাইরে তাকিয়ে মেঘ দেখতে থাকে। পরী ওর কাঁধ ছুঁয়ে আলতো করে নাড়া দিতে, অরুনা পরীর দিকে খালি চোখ নিয়ে তাকায়। সেই চোখের চাহনি দেখে পরীর আত্মা যেন কঁকিয়ে কেঁদে ওঠে। পরী পাউরুটির এক টুকরো ছিঁড়ে তাতে মাখন লাগিয়ে ওর ঠোঁটের কাছে ধরে। অরুনা একটু খানি মুখ খুলে মুখের মধ্যে পাউরুটির টুকরো নিয়ে নেয়। পরী ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কোনোরকমে চোখের জল সংবরণ করে আরও একটা টুকরো খাওয়াতে যায়।

অরুনার ঠোঁট কেঁপে ওঠে, “শুচিদি, ঠাণ্ডা লাগছে।”

অরুনার ঠোঁটের ওই তিনটি শব্দ যেন অভির আর পরীর কানে মধুর মতন মনে হয়। পরী নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মমতাময়ী হৃদয়ের খুশির জল চেপে রাখে। জল ভরা চোখ নিয়ে একবার অভির দিকে তাকায়। অভির দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, এয়ারহোস্টেসকে অনুরোধ করে একটা কম্বলের ব্যাবস্থা করে। পরী দুই সিটের মাঝের হাতল উঠিয়ে দিয়ে, অরুনার মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। পরীর মমতাময়ী স্পর্শে অরুনার চোখে জল চলে আসে।

দুহাতে পরীকে জড়িয়ে ধরে বলে, “শুচিদি আমার খুব ঠাণ্ডা লাগছে।”

পরী ওর গালে হাত রেখে সান্তনা দিয়ে বলে, “অরুনা আমি তোর কাছে আছি। তোর আর ঠাণ্ডা লাগবে না।”

এয়ারহোস্টেস কম্বল দিয়ে গেলে, অভি অরুনার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেয়। পরী ওকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে। অরুনা পরীর বুকে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে, বুকের মাঝের অন্তহীন বেদনা দুগাল বেয়ে বয়ে চলে অবিরাম ধারায়। ওর চোখের জলে পরীর বুক ভিজে যায়, কিন্তু একবারের জন্যেও পরী ওকে কাছছাড়া করে না।

পরী অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি খেয়ে নাও।”

অভি বলে, “ওকে কিছু বলো?”

পরীঃ “না, ওকে কাঁদতে দাও। ওর ভেতরের সব জমানো ব্যাথা সব দুঃখ চোখের জল হয়ে বেরিয়ে যাক। তাতে ওর মন অনেক হাল্কা হবে। যে অরুন্ধুতি দিল্লী পৌঁছাবে সেই অরুন্ধুতি অনেক বদলে যাবে কোলকাতার অরুন্ধুতির থেকে।”

অরুনা কেঁদে কেঁদে শেষ পর্যন্ত পরীর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। পরী ওর ঘুমন্ত মাথা কোলের ওপরে নিয়ে আস্তে আস্তে মাথা গালে হাত বুলিয়ে দেয়। অরুনা পরীর কোলে ঠিক একটা বাচ্চা মেয়ের মতন ঘুমিয়ে থাকে, চেহারায় এক অনাবিল শান্তির ছায়া।

প্লেন ধাক্কা মেরে দিল্লী এয়ারপোর্টে নামে। ঝাঁকুনির জন্য অরুনার ঘুম ভেঙে যায় আর পরীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দেয়। পরী ওর মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আবেগে প্রায় চোখে জল চলে আসে। আঙুল দিয়ে অরুনার গালে জলের দাগ মুছিয়ে দিয়ে কপালে ছোটো একটা চুমু খায়। প্লেন থামলে ব্যাগ হাতে নিয়ে নামার উদ্যোগ করে অভি, পেছনে অরুনা আর পরী।

অরুনা অভির কাঁধ আলতো করে ছোঁয়, অভি পেছন দিকে তাকায়। অরুনার ঠোঁট মৃদু কেঁপে ওঠে, “এই বিহারী আমরা কোথায় যাচ্ছি রে?” শেষ পর্যন্ত অভির অনুপম দেবী প্রতিমা কথা বললো। অভির বুকের বাঁধ ভেঙে গেল ওর গলার আওয়াজ শুনে। ওর মনে হলো যেন হারিয়ে যাওয়া বহুমুল্যবান রত্ন আবার ফিরে পেয়েছে। অরুনার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথার ওপরে চুমু খায়। অভিকে সান্তনা দেবার জন্য পরী আলতো করে পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়।

অরুনার ঠোঁটে আবার হাসি দেখে পরী আর অভি যেন স্বস্তির শ্বাস নেয়। পরীকে পেয়ে অরুনা যেন সেই পুরানো দিন ফিরে পেল। দুজনেই মেতে ওঠে গল্পে, অভি বিশেষ কান দেয়না মেয়েদের গল্পে। পরীকে বললো যে বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিতে যে ওরা দিল্লী ঠিক ভাবে পৌঁছে গেছে। পরী জিজ্ঞেস করে যে ব্যানার্জি কাকু যদি ওর কথা জিজ্ঞেস করে তো কি উত্তর দেবে পরী, সেই শুনে অভি বললো যে ব্যানার্জি কাকুকে বলে দিতে যে ও পরে বাড়িতে ফোন করবে। অভি চলে গেল কনভেয়র বেল্ট থেকে বাকি ব্যাগ নিতে, আর পরী আর অরুনা চলে গেল ফোন করার জন্য। বারবার মাথা ঘুরিয়ে অভি ওদের দিকে লক্ষ্য রাখে যাতে কোথাও হারিয়ে না যায়। অরুনার জন্য এটা প্রথম বার নয় যে ও দিল্লী এসেছে, কিন্তু অরুনার মানসিক অবস্থা এখন সেই পুরানো অবস্থায় নেই ও এখন পরীর ওপরে নির্ভরশীল।
 
Chapter 5: লাহুল স্পিতি ভ্রমন। (#2)

ব্যাগ নিয়ে তৈরি অভি, কিছু পরে পরী আর অরুনা ফোন সেরে ওর কাছে চলে আসে। অভি জিজ্ঞেস করাতে পরী জানায় যে ও দুই বাড়িতে ফোন করে সব জানিয়ে দিয়েছে। বাড়ির সবাই খুব খুশি যে অরুনা আবার কথা বলছে। অরুনা পরীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে আর অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসে।

অভি অরুনাকে জিজ্ঞেস করে, “কাকুর সাথে কথা বলেছিস?”

অরুনা ওকে হেসে উত্তর দেয়, “জানিনা তুই বাবা মাকে কি বলছিস, কিন্তু আমার কথা শুনে ওরা খুব খুশি। শুচিদিও মায়ের সাথে কথা বলেছে, সবাই তোর কথা খুব জিজ্ঞেস করছিল।”

অভিঃ “ঠিক আছে, এবারে চল। এতক্ষণে হয়তো রাজধানি এক্সপ্রেস দিল্লী পৌঁছে গেছে আর সুপ্রতিমদাও হয়তো আমাদের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছে।”

বাইরের দিকে হাঁটতে শুরু করে ওরা। অরুনা পরীকে জিজ্ঞেস করাতে, পরী ওকে পুরো ঘটনার বিবরন দেয় যে কি ভাবে অভির সুকৌশল পরিকল্পনায় এই সব সম্ভব হয়েছে। সব কথা শুনে অরুনা অবাক হয়ে যায়।

অরুনা অভির কাছে এসে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, “তুই আমার জন্য এত সব করেছিস?”

অভি হেসে ফেলে, ওর মাথায় ছোট্ট চাঁটি মেরে উত্তর দেয়, “ধুর তোর জন্য করতে যাবো কেন আমি। আমি তিন জনের কাছে তিনটে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার জন্য এই সব পরিকল্পনা।”

পরী ঠোঁট জোড়া ছোটো গোল করে অভির দিকে একটা চুম্বন ছুঁড়ে দেয়। অরুনা তর্জনী দিয়ে চোখের কোল মুছে পরীর হাত জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ক্ষণিকের জন্যেও যেন ও পরীকে কাছ ছাড়া করতে চায় না।

ওরা বাইরে বেরিয়ে দেখলো যে সুপ্রতিমদা একজন সুন্দরী মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে, ওদের জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। মেয়েটির বেশ সুন্দরী দেখতে, পরনে সাদা জিন্স আর বাদামি রঙের টপ, গায়ের সাথে এঁটে আছে পরনের পোশাক। শরীরের প্রতিটি বাঁক পোশাকের নিচে ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। চুল ঘাড় পর্যন্ত, মাথার পেছনে বাঁধা একটা ছোট্ট পনি টেলের মতন। চোখ মুখ বেশ মিষ্টি, কালো কালো চোখ দুটি একটু ছোটো, পরীর মতন অত বড় নয় কিন্তু বেশ চঞ্চল। অভি দেখে মৃদু হেসে দেয়, এটা হয়তো দিল্লীর ফ্যাসান। অভি একবার পরী আর মেয়েটিকে মনে মনে তুলনা করে কে বেশি সুন্দরী, কিন্তু অভির মনের ভেতরে পরীর বাস, তাই আর বেশি কিছু ভাবতে পারলো না অভি।

সুপ্রতিমদা ওদেরকে দেখে অভির দিকে এগিয়ে এসে হাত মেলায়। পরী আর অরুনা উৎসুক চোখে সুপ্রতিমদাকে দেখে। সুপ্রতিমদা অভির পাশে দুটি মেয়েকে দেখে বিভ্রান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “এর মধ্যে কে শুচিস্মিতা?”

পরী আর অরুনা দুজনেই ওর প্রশ্ন শুনে হেসে ফেল। অভি হেসে কিছু উত্তর না দিয়ে সুন্দরী মেয়েটার দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দেয়, “আমি অভিমন্যু তালুকদার আর তুমি নিশ্চয় রিতিকা চতুর্বেদী।”

রিতিকা হেসে বলে, “হ্যাঁ আমি জানি তোমাদের কথা। আমি ওর কাছে থেকে তোমাদের হস্টেলের কথা অনেক শুনেছি। গত বার তুমি দিল্লী এসেই পালিয়ে গেলে দেখা না করে। ও আমাকে বলেছে যে তুমি নাকি তোমার বান্ধবীকে নিয়ে একা একা কোন এক দুর্গম পাহাড়ি জায়গায় বেড়াতে গেছিলে। হুম তুমি শুধু মাত্র সাহসী বললে ভুল হবে, তুমি দুঃসাহসী ছেলে। এবারে বলতো এদের মধ্যে কে শুচিস্মিতা?”

অভি পরীদের দিকে হেসে রিতিকাকে উত্তর দেয়, “আন্দাজ করো, তবে তোমার কাছে একটাই সুযোগ।”

রিতিকা পরীকে দেখিয়ে অভির দিকে হেসে বলে, “ওই যে সবুজ রঙের সালোয়ার পরে আছে সেই শুচিস্মিতা।”

রিতিকা এগিয়ে যায় পরীর দিকে। তিন জনে মেয়ে একে অপরকে সম্বর্ধনা জানিয়ে মিশে যায়। মেয়েদের নিজেদের মধ্যে মিশতে বেশি সময় লাগেনা আর ওদের গল্প শুরু হয়ে যায়। সুপ্রতিমদা অভির দিকে তাকিয়ে হেরে যাওয়ার হাসি দেয়। অরুনার চেহারায় পুরানো হাসি দেখে পরী একবার অভির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে, মাথা নাড়ায়।

সুপ্রতিমদার গাড়ি চেপে ওরা সবাই সি.আর.পার্কের ওর বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করলো। সুপ্রতিমদা গাড়ি চালাচ্ছে আর অভি পাশে বসে, মাঝখানের সিটে বসে তিন জন মেয়ে যেন পাখীর মতন কিচিরমিচির শুরু করে দিয়েছে।

সুপ্রতিমদা অভিকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে আমরা কখন দিল্লী থেকে রওনা দেব?”

অভি সুপ্রতিমদাকে জিজ্ঞেস করে, “আরে তুই নিউ দিল্লী রেলস্টেশানে কাউকে পাঠিয়েছিস কল্যাণীদের বাড়ি আনার জন্য।”

সুপ্রতিমদাঃ “হ্যাঁ রে বাবা, বলবিন্দার ওদের আনতে চলে গেছে। আমি ওর হাতে একটা প্লাকার্ডে দিপঙ্করের নাম লিখে দিয়েছি, খুঁজতে কোন অসুবিধে হবে না।”

অভিঃ “ভাবছিলাম তো যে দুপুরে খাওয়ার পরেই বেরিয়ে পড়বো কিন্তু এখন ভাবছি কিছু তাঁবু আর বাকি সরঞ্জাম নিয়ে গেলে হয়।”

সুপ্রতিমদা আঁতকে ওঠে, “শয়তান ছেলে, আগে বলতে পারিস না। বোকা... এখন দুপুরে কি করে হবে?”

অভিঃ “না না দুপুরে নয়, রাতে বের হব আমরা। এদের বাড়িতে রেখে, আমি আর তুই টেন্টের খোঁজে বের হয়ে যাব।”

সুপ্রতিমদাঃ “হটাত করে তোর মাথার প্লান বদলে কেন গেল!”

অভি পিছনে ঘুরে একবার অরুনার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “অরুনা যখন প্লেনে উঠেছিল তখন ওর মানসিক অবস্থা এখন যা দেখছিস, এই রকম ছিলনা। ওকে হাসতে দেখে আমি ভাবলাম কি আছে আবার কবে যাওয়া হবে ঠিক নেই, চল হ্যাম্পিং করে আসি।”

সুপ্রতিমদাঃ “এখানে কেউ কিন্তু ক্যাম্পিং করতে জানে না।”

অভির মুখে ক্যাম্পিংয়ের কথা শুনে পরী আর রিতিকা পেছন থেকে চেঁচিয়ে ওঠে, “এটা কি রকম হলো? আগে থেকে কিছু বলা নেই কওয়া নেই, হটাত করে তোমরা সব প্লান বদলে দেবে কি করে হবে, আমরা খেলবো না।”

অভি ঘাড় ঘুরিয়ে ওদের দিকে দেখে বলে, “আরে ভদ্রমহিলারা, ঘুরতে গিয়ে যদি কিছু আডভেঞ্চার না হয় তাহলে মজা কি?”

রিতিকা পরীকে জিজ্ঞেস করে যে ওরা কোথায় ঘুরতে যাচ্ছে। পরী ওকে পুরো পরিকল্পনা জানায় আর জায়গার বিবরন দেয়। পরীর নাকো পর্যন্ত ঘোরা তাই সেই পাহাড়ের বিবরন দিতে বিশেষ অসুবিধে হয় না। পরীর মুখে স্পিতির গল্প শুনে অরুনা আর রিতিকা দুজনেই খুব উত্তেজিত হয়ে ওঠে।

সুপ্রতিমদার বাড়িতে কল্যানিরা আগেই পৌঁছে যায়, পরী গাড়ি থেকে নেমে ওদের দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কল্যাণীকে। বাড়িতে পাঁচটা মেয়ে যেন গল্পে মেতে ওঠে, ওদের দেখে মনে হলো যেন একদল সুন্দরী পাখি একসাথে বসে কিচির মিচির শুরু করে দিয়েছে। খাওয়ার পরে অভি দীপঙ্কর আর রামানুজকে বাড়িতে বিশ্রাম নিতে অনুরোধ করে ওরা দুজনে বেরিয়ে যায় ক্যাম্পিংয়ের সরঞ্জাম ভাড়া করতে।

ক্যাম্পিংয়ের সরঞ্জাম যোগাড় করতে করতে প্রায় ঘন্টা তিনেক লেগে যায়। দুটি বড় টেন্ট নেওয়া হয় আর একটা ছোটো টেন্ট নেওয়া হয়, সাথে নেওয়া হয় স্লিপিং ব্যাগ, দড়ি, মাদুর ইত্যাদি। সরঞ্জাম গাড়ির পেছনে রেখে বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করে।

অভিঃ “বস, একটু ওষুধের দোকানে দাঁড়াতে হবে আর বেশ কিছু সিগারেট কিনতে হবে।”

ওষুধের দোকানে দাঁড়ানোর কথা শুনে সুপ্রতিমদা বুঝতে পারে যে অভি কি কিনবে, হেসে বলে “বোকা... না নিয়েই বেরিয়ে পড়েছিস?”

অভি হেসে ফেলে, “শালা এত ঝামেলার মধ্যে কিনতে ভুলে গেছি।”

সুপ্রতিমদাঃ “আবে শুওর, চিন্তা করিস না, আমার কাছ থেকে ধার নিয়ে নিস।”

অভিঃ “বোকা... মাঝ পথে যদি ফুরিয়ে যায় আর আমরা কন্ট্রোল না করতে পারি তাহলে শালা ন’ মাস নিয়ে ফিরতে হবে কিন্তু।” দুজনেই হেসে ফেলে।

সুপ্রতিমদাঃ, “তোর বউ খুব সুন্দরী আর তোর বান্ধবী, দুজনকেই দেখতে বেশ সুন্দরী।”

অভিঃ “নজর দিস না যেন, দুজনেই এনগেজড কিন্তু।”

সুপ্রতিমদাঃ “তোর তো শালা ওখানে মাথা, সুন্দরীকে সুন্দরী বলেছি তাতেই গা জ্বলে গেল যেন তোর।”

অভিঃ “রিতিকাকে কোথায় পেলি?”

সুপ্রতিমদাঃ “আরে নেহেরু প্লেসে একটা টেকনিকাল কনভেনশান ছিল, সেখানে ওর সাথে দেখা হয়। ওখানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে ছিল, ব্যাস আর কি, তিন মাস প্রেম আর তারপর সব ঠিকঠাক।”

ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ আর বাকি জিনিস কিনে বিকেল পাঁচটার মধ্যে বাড়ি ঢুকে যায়। মেয়েরা জামা কাপড় বদলে বেশ আরাম করে বসে গল্প করছিল। রিতিকার পোশাক দেখে দীপঙ্কর আর রামানুজের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। রিতিকার পরনে হাল্কা গোলাপি রঙের আঁটো স্ল্যাক্স আর সাদা হাত কাটা গেঞ্জি। ওর গায়ের কাপড় যেন ওর পেলব কমনীয় শরীরের একপ্রস্থ রঙের প্রলেপের মতন সেঁটে। সুগোল নিতম্বের ওপরে অন্তর্বাসের স্পষ্ট দাগ বোঝা যাচ্ছে। অভি ওই দেখে একবার দিপঙ্করদের দিকে আড় চোখে তাকায় আর সুপ্রতিমদাকে চোখ টিপে ইশারা করে। পরী অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে কি এত মন দিয়ে দেখছে। পরী, দীপঙ্কর আর রামানুজের দিকে তাকিয়ে ওদের চোখের চাহনি দেখে মৃদু রেগে যায়। একটু বিরক্ত হয়ে মেয়েদের নিয়ে অন্য ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে।

অভি আর সুপ্রতিমদা শেষ বারের মতন বেড়াতে যাবার পুরো পরিকল্পনা একবার পুনরালোচনা করে নেয়। অভি পরীকে ডাক দেয় ওদের সাথে বসে বেড়াতে যাবার কথা বলার জন্য। এবারে ঠিক করা হয় যে কে টিম লিডার হবে, সবাই এককথায় অভির নাম নেয়, তারপরে ক্যাশিয়ারের কথা ওঠে, সবার চোখ পরীর দিকে।

পরী চেঁচিয়ে ওঠে, “না না, আমি পয়সার হিসেব রাখতে পারব না।”

সুপ্রতিমদা পরীকে মজা করে বলে, “রানীরা সুখে দুঃখে সর্বদা রাজার পাশে থাকে, তাহলে এখন কেন পিছিয়ে যাচ্ছো? এর পরে তো সপ্তপদী বাকি আছে, তখন কি করবে?”

লাজুক হেসে সুপ্রতিমদার দিকে তাকায় পরী। রিতিকা সুপ্রতিমদাকে বলে, “ঠিক আছে অনেক হয়েছে ওর পেছনে লাগা, ওই ক্যাশিয়ার হবে।”

গাড়ির ব্যাপারে কথা উঠলে অভি জানায় যে কল্যাণীদের জন্য ইনোভা আর সুপ্রতিমদার গাড়িতে ওরা যাবে। কল্যাণীদের গাড়ি বলবিন্দার আর আরেক ড্রাইভার চালাবে, আর অভি আর সুপ্রতিমদা নিজেদের গাড়ি চালাবে।

অরুনা অভির কথা শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কিরে তুই আবার গাড়ি চালাতে কবে থেকে শিখলি?” পরী ওকে গত বারের কথা জানায়।

অভি দিপঙ্করের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমরা কি ড্রিঙ্ক করো?”

দুজনেই ওদের বউয়ের দিকে তাকায়। কল্যাণী বিরক্তি ভরা চোখ নিয়ে দিপঙ্করকে ইশারায় বারন করে। পরী একবার কটমট করে অভির দিকে তাকায়, অভি সেদিকে দেখেও না দেখার ভান করে। পরী ওর ভাব দেখে হাল ছেড়ে দেয়।

সুপ্রতিমদা ওদের দিকে হেসে বলে, “আরে ভাই, ঘুরতে গিয়ে এই রকম বাঁধনে থাকতে কি কারুর ভালো লাগে নাকি।” তারপরে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “বোতল কোথায়? কিনেছিস নাকি তুই?”

অভি মাথা নাড়ায়, “না রে কিনিনি, যাবার পথে আম্বালা থেকে কিনে নেব।”

সুপ্রতিমদা বিরক্ত হয়ে বলে, “বোকা... শূওর, তুই একবারে সব কথা বলতে পারিস না।”

অরুনা অভির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুই কবে থেকে ড্রিঙ্ক করা শুরু করলি রে?”
 
Chapter 5: লাহুল স্পিতি ভ্রমন। (#3)

পরী ওকে সুব্রতর বিয়ের সময়ের অভির কান্ডকারখানা শুনায়, ওই শুনে সবাই হেসে ফেলে। গল্প আবার চলতে শুরু করে। সুপ্রতিমদা আর অভি বিয়ারের ক্যান নিয়ে গলায় ঢালতে থাকে আর বাকিরা কোল্ডড্রিঙ্কস হাতে নিয়ে নেয়।

কিছু পরে পরী অভিকে বাইরে ডেকে বলে, “বাড়ি ফিরে ছোটোমা, বাবু আর ব্যানার্জি কাকুকে কি বলবে কিছু ভেবেছো কি?” পরীর কথা শুনে অভি ওর কাঁধে হাত দেয়। পরী থাকতে না পেরে অভিকে জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে মুখ গুঁজে ভয়ে কেঁপে ওঠে, “আমার জানো মাঝে মাঝে খুব ভয় করে, জানি না কি হবে।”

অভি ওর মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে বলে, “কিছু হবে না, ভয় নেই, আমি আছি।”

অরুনা পরীকে বেরিয়ে যেতে দেখে কিছু পরে কল্যাণীকে নিয়ে বাইরে আসে। এসে দেখে যে পরী অভিকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। পরী ওদের দেখে অভিকে ছেড়ে দাঁড়ায় আর চোখের কোল মুছে নেয়। অরুনা প্রশ্নভরা চাহনি নিয়ে পরীর দিকে তাকায়। পরী মাথা নাড়িয়ে জানায় যে কিছু হয়নি। অরুনার সে কথা বিশ্বাস হয় না, পরীকে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি যদি কোন কিছু না হয়ে থাকে তাহলে তুমি কাঁদছো কেন?”

অভি ওকে নিশ্চিন্ত করে বলে, “তুই এসব চিন্তা ভাবনা ছেড়ে আনন্দ কর, বুঝলি।”

রাত ন’টা নাগাদ ওরা সবাই সেই দূর পাহাড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সবাই বেশ হাল্কা জামাকাপড় পরে, রিতিকা একটু বেশি হাল্কা জামা কাপড় পরে। সুপ্রতিমদা আর অভি বারমুডা আর টিশার্ট গায়ে গলিয়ে নিয়েছে। দিল্লী ছাড়ার আগে ওরা পাঁচ বোতল ভদকা আর পাঁচ ক্যারেট বিয়ারের ক্যান কিনে নিয়েছিল, পরী তাতে একটু বিরক্ত হয়ে উঠেছিল, কিন্তু যেহেতু সবাই আনন্দে মেতে তাই অল্প সাবধান করে দিয়েছে অভিকে। সুপ্রতিমদার গাড়িতে মাঝের সিটে রিতিকা আর অরুনা বসে আর ওরা দুজনে বিয়ার নিয়ে পেছনে বসে, নতুন ড্রাইভার আমজাদ গাড়ি চালাচ্ছিল। পরী অভিকে বলে যে ও রাতটুকু কল্যাণী আর রানীদের সাথে ইনোভায় যাবে যাতে ওরা নিজেদের পৃথক না ভাবে। পরীর কথায় বলবিন্দার ওদের গাড়ি চালায়।

অরুনা যথারীতি চুপচাপ বসে, রিতিকা আর ওরা বেশ গল্পে মেতে ওঠে। দিল্লী ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়তেই গাড়ি দ্রুত গতিতে ধেয়ে চলে, সামনে ইনোভা আর পেছনে সাফারি। বিয়ারের ফলে অভি আর সুপ্রতিমদার নেশা লাগে, বেশ একটু ঝিমঝিম পায়। অভি সুপ্রতিমদাকে বলে যে একটা সিগারেট দরকার। কিছু দূর গিয়ে গাড়ি থামায় বলবিন্দার। দু’জনেই গাড়ি থেকে নেমে একটা করে সিগারেট ধরিয়ে টান দেয়।

অরুনা এর মধ্যে নেমে এসে অভিকে বলে, “আমার ঘুম ঘুম পাচ্ছে। আমাকে ওই ইনোভায় পাঠিয়ে দিবি, প্লিস?”

অভিঃ “তোর ঘুম পাচ্ছে তো এখানে ঘুমিয়ে পড় না।”

অরুনা অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার ভালো লাগছে না, আমি শুচিদির কাছে যাবো।”

একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে অরুনার ঝাপসা হয়ে আসা চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “ঠিক আছে আমি ওকে এই গাড়িতে আসতে বলবো খানে।”

বলবিন্দার গাড়ি ছুটিয়ে দিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা সামনের গাড়িকে ধরে ফেললো। গাড়ি থামিয়ে অভি পরীকে ওদের গাড়িতে আসতে বলে।

পরী কারন জিজ্ঞেস করাতে অভি একটু বিরক্ত হয়ে বলে, “আমাদের গাড়িতে এসে অরুনাকে সামলাও, ওর আবার মন কেমন করছে। ওকে সামলানোর দায়িত্ব তোমার, আমাকে যদি এই রকম অবস্থায় ফেলে যাও তাহলে দেখে নিও।”

পরী গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ওদের গাড়িতে চেপে যায়। অরুনাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে, অরুনা চুপ করে ওর মুখের দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। পরীর বুঝতে দেরি হয় না যে ওর মনে আবার সেই পুরানো বেদনা জেগে উঠেছে। পরী ওর মাথা জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে, কিছুক্ষণের মধ্যেই অরুনা ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

অভি দুই ড্রাইভারকে সোজা চায়েল নিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়। সুপ্রতিমদা আর অভি সাফারির পেছনের সিটে বসে ঘুম লাগায়।

সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ওরা চায়েল পৌঁছে যায়। ছোট্ট শহর চায়েলের উচ্চতা বেশি নয়, চারদিকে সবুজে ঢাকা পাহাড়। চায়েলের আবহাওয়া বেশ মনোরম, চারদিকে উঁচু উঁচু পাইন, কেদার, শাল দেবদারুর বন। হোটেলে ওরা দুটো রুম নিয়ে নেয় একটু বিশ্রাম নেবার জন্য। সারা রাত ধরে ড্রাইভাররা গাড়ি চালিয়েছে তাই ঠিক করা হলো যে দুপুরে খাওয়ার পরে ওর চায়েল ছেড়ে বের হবে।

দুপুরে একটু তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে আবার বেরিয়ে পড়ে সবাই। এবারে অভির হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং, পাশে পরী। সুপ্রতিমদা, রিতিকা আর অরুনা পেছনের সিটে বসে। পরীর মুখে সবাই সেই জায়গার গল্প শুনছে মন দিয়ে। পরীর বর্ণনা শুনে সবাই মুগ্ধ, রাস্তা ঘাট যেন পরীর এত চেনা যে মনে হয় ও এখানে সবসময়ে ঘুরতে আসে।

পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা আমরা কি শতদ্রু নদীর তীরে দাঁড়াবো?”

অভিঃ “না এবারে নয়, কল্পা বা রেকং পিও পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে, বেবি।”

পরীঃ “ভিমাকালি মন্দিরে নিয়ে যাবে না?”

অভিঃ “বেবি, কি করে হবে? আমাদের হাতে সময় কম।”

পরী একটু মনমরা হয়ে বলে, “কেন সময় কম, আমাদের হাতে তো অনেক সময় আছে। তাহলে চলো না আজ রাতে চিতকুলে থেকে যাই আমরা।”

কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাতে অসুবিধে হচ্ছিল অভির, চেঁচিয়ে ওঠে পরীর দিকে, “তুমি কি আবার চিতকুলে গিয়ে গতবারের মতন ঝগড়া করতে চাও?”

পরী খিলখিল করে হেসে অভির গালে টোকা মেরে বলে, “না সোনা, এবারে আর ঝগড়া করবো না। কিন্তু বাকিদের কথা বলতে পারছিনা অভি।”

সুপ্রতিমদা অভিকে জিজ্ঞেস করে, “কিরে, আমরা কি শেষ পর্যন্ত চিতকুল যাচ্ছি নাকি?”

পরী অভির হয়ে উত্তর দিল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা চিতকুল যাচ্ছি। আমাদের হাতে অনেক সময় আছে আমরা আরামসে চিতকুলে দুই দিন কাটাতে পারি।” পরী অভির দিকে মিষ্টি হেসে চোখ টেপে।

রিতিকা আর সুপ্রতিমদা একসাথে বলে ওঠে, “কিন্তু চিতকুল তো আমাদের পথে ছিলো না, তাহলে?”

পরীঃ “কেন তোমরা ছেলেরাই তো বলেছিলে যে, ঘুরতে গিয়ে যদি এডভেঞ্চারের গন্ধ না পাও তাহলে ঘোরা আর ঘোরা কি। চলো এক নতুন দুর্গম জায়গায়, সেটাও এক রকমের এডভেঞ্চার বইকি।”

অরুনা অভিকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, তোরা কেন চিতকুলে গিয়ে ঝগড়া করেছিলিস?”

পরী পেছনে অরুনার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে উত্তর দেয়, “ধৈর্য ধর আর দেখ। চিতকুল পৌঁছে সব বুঝতে পারবি আমরা কেন ঝগড়া করেছিলাম।” পরীর সেই শয়তানি হাসি আর চোখের ভাব দেখে অভির যেন ভেতরটা গলে গেল। সেই দুষ্টু হাসি ওকে মনে করিয়ে দিল সেই পুরানো দিনের কথা।

গাড়িতে তেল ভরানোর জন্য ওরা জিওরিতে থামে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে একটু হাঁটাহাটি করে, এতক্ষণ বসে বসে সবার পা ধরে গেছে। সবাই পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে যায়। হাইওয়ের পাশ দিয়ে শতদ্রু নদী বয়ে চলেছে। গতবারের চেয়ে এবারে রাস্তার অবস্থা একটু যেন ভালো। তেল ভরানোর পরে সুপ্রতিমদার সাথে গিয়ে, পরী পয়সা মিটিয়ে দিল।

অরুনা আর রিতিকা অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে সত্যি কি আমরা চিতকুলে যাচ্ছি?”

অভি ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “আমাকে জিজ্ঞেস করে কি লাভ আছে। তোমরা কি জানো না যে প্রানীদের মধ্যে মানুষ হচ্ছে সব থেকে বিপদজনক আর মানুষের মধ্যে তোমরা, মেয়েরা সব থেকে মারাত্মক। তোমাদের কথা না মানলে তো মহাভারত উলটে দেবে, তাই না।”

সুপ্রতিমদা পরীকে জিজ্ঞেস করে যে কখন ওরা চিতকুল পৌঁছাবে, পরী অভির দিকে তাকায়। অভি ঘড়ি দেখে অনুমান করে যে চিতকুল পৌঁছাতে ওদের রাত আটটা বেজে যাবে।

পরীকে বলে, “তুমি রাস্তার অবস্থা জানো, তা সত্তেও কেন ওদের নিয়ে চিতকুল যাবার জন্য জেদ করছো সোনা?”

পরী অভির একদম কাছে এসে, বুকের ওপরে হাত রেখে মুখ উঁচু করে নেয়। ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস অভির সারা মুখের ওপরে বয়ে যায়, মিষ্টি লাল ঠোঁটের কাতর আহবান অভি প্রত্যাখান করতে পারে না। পরীর কোমর জড়িয়ে ঠোঁট নামিয়ে নিয়ে আসে আর পরী ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মধুর সুরে বলে, “আমার একটা কথা রাখবে না সোনা?”

অভি ঠোঁট নিচে নামিয়ে বলে, “এটা কিন্তু ব্ল্যাক মেল করা হচ্ছে বেবি।”

অভি পরীর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে যায়, পরী সবার দিকে চেঁচিয়ে বলে ওঠে, “আমরা চিতকুল যাচ্ছি।” বলেই অভির হাতের বাঁধন ছেড়ে বেরিয়ে যায়। অভির দিকে মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে ইশারায় বলে, “ওই চুমুটা পাওয়ার জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে সোনা।”

গাড়িতে উঠে অভি চিতকুলের হোটেলের ম্যানেজারের ফোন নাম্বার খুঁজে তাকে ফোন করে জানিয়ে দিল পাঁচটা রুম বুক করার কথা। ম্যানেজার রাতের খাবারের কথা জিজ্ঞেস করাতে অভি বাকি সবাইকে জিজ্ঞেস করে রাতের খাওয়ার ব্যাপারে। সবাই আঁতকে ওঠে যে বিকেল বেলায় রাতের খাবার। পরী ওদের জানায় যে চিতকুল পৌঁছতে পৌঁছতে অনেক রাত হয়ে যাবে আর যেখানে যাচ্ছে সেখানে গিয়েই বুঝতে পারবে কেন রাতের খাবারের কথা এত তাড়াতাড়ি অর্ডার দেওয়া হচ্ছে।

রকছাম ব্রিজ পৌঁছতে সন্ধ্যে নেমে এলো। অভি মনে মনে একটু ভয় নিয়েই পরীর দিকে তাকালো, পরী হেসে ওকে আস্বাস দেয় যে এবারে ও আর রাগবে না। অরুনা গাড়ি দাঁড় করাতে অনুরোধ করে নিচে নেমে নদী দেখতে চায়। গাড়ি দাঁড়াতেই সবাই নেমে নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে থাকে। এর মাঝে সুপ্রতিমদা অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে যে ওর গাড়ি চালাতে অসুবিধে হচ্ছে কিনা। অভি হেসে বলে যে পরী যতক্ষণ ওর পাশে আছে ততক্ষণ ওর শরীরে ক্লান্তি আসতে পারেনা।

সুপ্রতিমদা ওর মাথায় চাঁটি মেরে বলে, “শালা, আজ রাতে তাহলে এক প্যাকেট কন্ডম শেষ করবি।”

অভিঃ “এমন বলছিস যেন তুই হাতে ধরে নাড়াবি। শালা তুই কি থেমে থাকবি নাকি?” সিগারেট জ্বালিয়ে দুজনেই হেসে ফেলে।

বলবিন্দার এর মাঝে এসে জিজ্ঞেস করে অভিকে যে ওই রাস্তায় চালাতে পারবে কিনা। রাত ঘনিয়ে আসে, অভি বড় এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলে যে ও চালাতে পারবে। চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে, অভির পাশে সুপ্রতিমদা বসে। খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে শুরু করে অভি, সঙ্কীর্ণ পাহাড়ি রাস্তায় রাতের অন্ধকারে গাড়ি ধিরে ধিরে উঠতে শুরু করে। কিছু দুরে দুরে অন্ধ বাঁক, সামনে থেকে কোন গাড়ি না আসাতে গাড়ি চালাতে বিশেষ অসুবিধে হয় না। পাথুরে রাস্তায় গাড়ি দোল খায়, অরুনা আর রিতিকার ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসে। পরীর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকায় দুই মেয়ে, জিজ্ঞেস করে যে ওরা ঠিক রাস্তায় যাচ্ছে কি না। পরী ওদের অভয় প্রদান করে, আয়নায় অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে, মনে পরে যায় প্রথম বার যখন পরী এখানে এসেছিল তখন ও ঝগড়া করেছিল অভির সাথে।

রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ওর সবাই চিতকুল পৌঁছে যায়। গাড়ি সোজা হোটেলে নিয়ে যায় অভি। ম্যানেজার পরী আর অভিকে দেখে চিনতে পেরে যায় আর ওদের থাকার জন্য রুম দেখিয়ে দেয়। ম্যানেজার জানায় যে রাতের খাবার একদম তৈরি, ওরা যেন খাওয়ার আগে একটু খবর দেয়।
 
Chapter 5: লাহুল স্পিতি ভ্রমন। (#4)

সবার মুখে একই কথা, ঠিক জায়গায় এনেছেতো ওদের? হোটেলের বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার, কোথাও আলোর চিহ্ন মাত্র নেই, কিছুই দেখা যায় না, চারদিকে শুধু উঁচু উঁচু কালো পাহাড় আর দুরে কয়েকটা ছোটো ছোটো কুঁড়ে ঘরের থেকে আসা আলো। রানী আর কল্যাণী অভিকে জিজ্ঞেস করে যে ও ঠিক জায়গায় এসেছে কিনা। পরী ম্যানেজারের সাথে রুম নিয়ে দরদাম করছিল, ওদের কথা শুনে অভির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। সেই হাসি অভিকে নিয়ে যায় পুরানো স্মৃতিতে, পরীর মুখেও গতবার সেই একই প্রশ্ন ছিল। অভি কল্যাণীকে অভয় দিয়ে বলে, সকাল হলেই বুঝতে পারবে জায়গার আসল মর্ম। রাতের খাওয়া একটু দেরি করেই শেষ হয়। অরুনার জন্য আলাদা রুম নেওয়া হয়, পরী তাতে একটু চিন্তিত।

পরী অরুনাকে জিজ্ঞেস করে, “কিরে একা শুতে পারবি তো?”

অরুনা হেসে উত্তর দেয়, “ঠিক পারব, আমি আর কচি খুকি নই।”

পরী অরুনাকে ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ের ওপরে চাদর টেনে দেয়। অরুনা চোখ বন্ধ না করা পর্যন্ত পরী ওর পাশে বসে থাকে। অরুনা ঘুমিয়ে পড়ার পরে পরী আর অভি নিজেদের রুমে চলে আসে।

অভি কাপড় বদলে নিয়ে বিছানার ওপরে ডায়রি খুলে বসে পড়ে সারা দিনের খরচ খরচা লেখার জন্য। পরী জামা কাপড় বদলে নেবার জন্য বাথরুমে ঢুকে পড়ে। কিছু পরে পরী বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে আর ওকে দেখে অভির সব অঙ্ক গুলিয়ে যায়।

পরী ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “মনে আছে প্রথম রাতের কথা আর প্রথম ঝগড়া।”

অভির মুখ হাঁ, পরীর পরনে গোলাপি রঙের পাতলা রাত্রিবাস। যদিও পরনের কাপড় গোড়ালি পর্যন্ত কিন্তু ওর কাঁধ অনাবৃত আর ওর পেলব দেহের সাথে লেপটে থাকে কাপড়। প্রেয়সীর শরীরের প্রত্যেক বাঁক ওর লুব্ধ চোখের সামনে উন্মুক্ত যেন, উন্নত বক্ষের মাঝে ছোটো নুড়ি পাথর শোভা পায়। সুগোল বক্ষ জোড়া যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে। বক্ষ বিভাজনের অধিকাংশ অনাবৃত আর ঘরের মৃদু আলো যেন ফর্সা মসৃণ ত্বকের ওপরে পিছলে যাচ্ছে। দু বাহু আর কাঁধ অনাবৃত, মাথার চুল খোলা, ঠোঁটে মাখা দুষ্টু মিষ্টি হাসি। পীনোন্নত বক্ষ যুগলের পরে দেহের আকার পাতলা হয়ে নেমে আসে নরম গোল পেট, তাঁর মাঝে সুগভীর নাভিদেশ পরিষ্কার বোঝা যায়, পাতলা আভরনের নিচে। গোল পেটের নিচে তলপেট একটু ফুলে উঠে বেঁকে নেমে যায় জানুসন্ধির দিকে। অভির চোখ আটকে যায় জানুসন্ধির দিকে, দুই জানু যেন মসৃণ গাছের গুঁড়ি। পরী আয়নার সামনে বসে পড়ে, অভির দিকে তাকায় আর হাসে। অভির মাথার সব অঙ্ক গুলিয়ে যায় পরীর অপরূপ ভুগোলের সামনে। অভির সিংহ কেশর ফুলিয়ে ওঠে, পরীর নজর চলে যায় ঢেকে থাকা কঠিন সিংহের দিকে। গাল লাল হয়ে ওঠে পরীর, রাতের কথা ভেবে। বুকের মাঝে উত্তাল প্রেমের ঝড় বইতে শুরু হয়। অভি পাগল হয়ে যায় দেখে যে পরীর ওই রাত্রিবাসের নিচে কোন অন্তর্বাস নেই।

মধু ঢালা সুরে অভির দিকে চোরা চাহনি দিয়ে বলে, “ওখানে বসে বসেই কি আমাকে মেরে ফেলবে? কিছু কি বলবে না?”

পরীর গলার সুর শুনে সম্বিৎ ফেরে অভির, “উফ, তুমি না একদম রসে ভরা পরী। আমি তো আজ রাতে তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মরেই যাব।”

পরী লাজুক হেসে বলে, “মনে আছে সেই রাতে ঝগড়ার কথা।”

অভি মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, “রাতের ঝগড়ার কথা তো মনে নেই কিন্তু সকালের সেই মিলনের ছবি আমার বুকে আঁকা আছে।”

বিছানার একদিকে সরে গিয়ে পরীর ঠিক পেছনে এসে বসে অভি। পা ফাঁক করে পরীকে নিজের কোলের ওপরে টেনে নেয়। পরীর কোমল নিতম্ব অভির জানুর ভেতরের দিকে স্পর্শ করে, অভি জানু চেপে ধরে পরীর দুপাশে। কোমরের দুপাশে হাত দিয়ে পরীকে জড়িয়ে ধরে পেটের ওপরে চেপে ধরে হাত। নরম পেটে অভির হাতে গলে যায়। অভি ওর ডান কাঁধে মাথা রেখে গালে গাল ঘষে। পরী আয়নায় নিজেদের আলিঙ্গন দেখে আবেগে কেঁপে ওঠে, চোখে চোখ রেখে পরী মিষ্টি হাসি দেয় অভির দিকে।

চুল আঁচড়ানোর পরে সামনে ঝুঁকে ক্রিম নেয় হাতে মাখার জন্য, আর পরীর ঝোঁকার ফলে ওর সুগোল নিতম্বের নিচে পিষে যায় অভির সিংহ। পরী ওর কোমল নিতম্বের খাঁজে অভির তপ্ত শলাকার স্পর্শ পেয়ে কামনার আগুনে মৃদু কেঁপে ওঠে। কোমরে মোচড় দেয় আর তাঁর ফলে অভির সিংহ গেঁথে যায় ওই দুই কোমল নিতম্বের খাঁজে। পরী আর যেন থাকতে পারে না, সারা শরীরে কামনার আগুন ধিকধিক করে জ্বলে ওঠে। অভির তপ্ত শ্বাস ওকে পুড়িয়ে দেয় আর নিচে চেপে থাকা তপ্ত শলাকা ওর শরীরে যেন ফোস্কা ফেলে দেয়। অভি আয়নায় ওর চোখের দিকে কামনার আগুন নিয়ে তাকায়।

পরী ওর চোখে কামনার আগুন দেখে আর পিছিয়ে থাকতে না পেরে বলে, “এত তাড়াহুড়ো কেন করছো? আমাকে লোশান লাগাতে দাও তারপরে আমি তোমার।”

অভির হাত উঠে আসে পরীর উন্নত বক্ষের নিচে, আলতো করে চাপ দেয় বুকের নিচের ভাঁজ। গালে গাল ঘষে অভি, উষ্ণ ত্বকের ঘর্ষণের ফলে প্রেমের আগুনের ফুল্কি ছুটতে দেরি হয় না। গাল লাল হয়ে যায় পরীর।
অভি ওর কানে কানে বলে, “লোশান লাগিয়ে কি করবে? আমি তো আজ তোমার সারা শরীরে চুমু খাব বেবি।”

পরী মৃদু রাগ ব্যাক্ত করে বলে, “শয়তান ছেলে, আমি তোমাকে আমার ঠোঁট আর গাল ছাড়া কোথাও চুমু খেতে দেব না। ভুলেও ভেবো না যে তুমি যেটা করতে চাইছো সেটা পেয়ে যাবে।”

অভির লিপ্সা আরও বেড়ে যায়, আঙুল দিয়ে চাপ দেয় পরীর বুকের নিচের বাঁকে। কাঁধের ওপরে থেকে সামনে ঝুঁকে বুকের মাঝের গভীর খাঁজ দেখে পাগল হয়ে যায় অভি। অপরূপ বক্ষ বিভাজন যেন উপচে পড়ছে পরনের জামার ওপর থেকে। কামনাতাড়িত অভির চোখের সামনে দোল খায় পরীর বক্ষ। আরও জোরে দুবাহু মাঝে পরীর দেহ চেপে ধরে টেনে নেয় যেন এবারে নিজের দেহের সাথে মিলিয়ে নেবে ওর মাখনের মতন নরম শরীর। সিংহ এবারে নিজের জানান দেয় আর নিতম্ব বিভাজনের মাঝে আটকে যায়। ওদের সারা শরীরে কামনার আগুন কিলবিল করতে শুরু করে দেয়। অভির ডান হাত নিচে নেমে যায় তলপেটের ওপরে, মৃদু চেপে ধরে নরম তুলতুলে তলপেটের মাংস। শ্বাসের গতি বেড়ে যায় আর পরীর উন্নত বুক জোড়া সাগরের ঢেউয়ের মতন ওঠা নামা করে।

পরী ওর খোলা পিঠের ওপরে অভির পেশি বহুল নগ্ন ছাতির পরশ অনুভব করে। ভুলে যায় হাতে পায়ে লোশান লাগাতে। পীনোন্নত বুক জোড়া উপচে প্রায় বেরিয়ে আসে রাত্রিবাসের ওপরের দিক থেকে। মাথা পেছিন দিকে হেলিয়ে অভির গালে গাল ঘষতে শুরু করে। দুহাত পেছনে এনে, অভির মাথার পেছনে নিয়ে চুল মুঠি করে ধরে নেয়। ঠোঁট জোড়া অল্প ফাঁক করা আর সেই ফাঁকের ভেতর থেকে তপ্ত শ্বাসের ঝড় বয়। অভি বাম হাতে পরীর এক বক্ষ নিয়ে আলতো আলতো চাপ দেয়া শুরু করে, অন্য হাতে পরীর তলপেটে ওপরে ঠিক জানু সন্ধির কাছে চেপে ধরে। প্রেমের তপ্ত আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়ে কঁকিয়ে ওঠে পরী।

অভি ওর ডান কানের লতি ঠোঁটের মাঝে নিয়ে আলতো করে চুষে দেয়। অভি মনপ্রানে চায় যে আজ রাতে প্রেয়সীর উন্মুক্ত যৌবন সুধা চোখ দিয়ে পান করবে আর পরী যখন আলো বন্ধ করতে বলেনি তাহলে পরীর মনেও সেই ইচ্ছে আছে যে অভি ওর রুপসুধা দেখুক দুচোখ ভরে। বুভুক্ষু অভি চেপে ধরে পরীর নরম তুলতুলে বুক, পিষে দেয় নারী মাংস কঠিন থাবার মাঝে। অন্য হাত পৌঁছে যায় নারীত্বের দোরগোড়ায়, আলতো করে আঙুল দিয়ে চাপ দেয় সেই গুহার ওপরে।

পরী শক্ত করে চোখ বন্ধ করে শীৎকার করে ওঠে। অভি ফিসফিস করে পরীকে অনুরোধ করে, “সোনা আমার একটা কথা রাখবে?”

পরী থাকতে না পেরে মৃদু সুরে বলে, “তোমার কোন কথা আমি রাখিনি সোনা।”

অভি আঙুল নিয়ে যায় পরীর জানুমাঝে আর আলতো করে চাপ দিয়ে বলে, “এখানের বাগান ছেঁটে ফেল সোনা।”

পরী মৃদু চেঁচিয়ে ওঠে, “না আআআআআ...... শয়তান ছেলে কোথাকার।”পরী দুজানু চেপে ধরে যাতে অভি আর ওর জানু মাঝে আঙুল দিয়ে খেলা করতে না পারে। পরীর কোমল নিতম্বের চাপে অভির সিংহের অবস্থা যায় যায়। তলপেটে থেকে আগুন নিচে নেমে, বারে বারে গর্জে ওঠে সিংহ।
অভি জিজ্ঞেস করে, “কেন বেবি?”

পরীঃ “কেন মানে? এইসব কেউ করে নাকি?”

অভিঃ “কে বলছে যে এইসব করে না?”

পরীঃ “তুমি জানলে কি করে যে মেয়েরা করে।”

অভিঃ “আমি ছবিতে আর ওইসব সিনেমাতে দেখেছি।”

লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে পরী, “ছাড়ো আমাকে, তুমি ভীষণ শয়তান।”

পরীকে আরও আঁকড়ে ধরে অভি, আর বারংবার দেহের মোচড়ের ফলে অভির সিংহ বারে বারে নিতম্বের খাঁজের মাঝে ঘর্ষণ খায়।

ঠিক সেই সময়ে দরজায় আওয়াজ হয়। থতমত খেয়ে ওঠে অভি আর পরী। সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে অভির আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে উঠে বসে। কাপড় আর অবিন্যস্ত চুল ঠিক করে নেয়। অভি কোনোরকমে মাথা উঠিয়ে থাকা সিংহটিকে শান্ত করার চেষ্টা করে। পরী ওর দিকে একটা তোয়ালে ছুঁড়ে দেয় নিজেকে ঢাকার জন্য। অভি পরীর দিকে পরাজিত প্রেমিকের মতন তাকিয়ে হাসে, পরী ওর দিকে দুষ্টু হেসে ইশারা করে, তোমার যেমন শয়তানি ইচ্ছে, ঠিক হয়েছে এবারে।

অভি শ্বাস সামলে আর নিজেকে ঢেকে পরীকে প্রশ্ন করে, “এত রাতে কে হতে পারে?”

পরী গায়ে একটা ওড়না জড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়, “অরুনা হতে পারে না কেননা আমি ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে এসেছিলাম।”

অভি কোমরে তোয়ালে জড়িয়ে দরজা খুলে অবাক হয়ে যায় সামনে অরুনাকে দেখে। ওর দুচোখ জলে ভরা লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। সারা মুখ থমথমে, বুকের ভেতরে যেন এক ঝড় বইছে। পরী ওর থমথমে মুখ দেখে অভিকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে অরুনাকে ঘরের মধ্যে টেনে নেয়।
জিজ্ঞেস করে অরুনাকে, “কি হয়েছে তোর?”

পরীর হাতের ছোঁয়া পেয়ে গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে অরুনার, “তোমার কাছে শুতে দেবে, শুচিদি?”

পরী অভির দিকে হতাশার চাহনি দিয়ে মৃদু হাসে, অভি বোকার মতন দাঁড়িয়ে মাথা চুলকায়। অরুনাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ের ওপরে কম্বলটা ভাল করে টেনে দেয়। অভির দিকে ফিরে একটা শার্ট হাতে দিয়ে অনুরোধ করে যে অরুনার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়তে।

অভি পরীকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি আসবে?”

পরী ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “আগে অরুনার অবস্থা দেখি তারপরে ভেবে দেখবো সোনা।”

অরুনা ওদের দিকে ঝাপসা চোখে তাকিয়ে ছিল, কাঁপা গলায় পরীকে বলে, “আমি জানি আমি তোমাদের অনেক অসুবিধায় ফেলছি, কেন তুমি আমাকে তোমাদের সাথে এনেছো? আমাকে না আনলেই পারতে।”

পরী ওর পাশে বসে আদর করে গালে চাঁটি মেরে বলে, “একদম এই সব কথা বলবি না।” অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “দাঁড়িয়ে আছো কেন, যাও।”

বুকের মাঝে একটু হতাশা নিয়ে ম্লান হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল অভি। ভাবছে যে, একটা সিগারেটের সাথে এক ক্যান বিয়ার হলে ভাল হতো। সুপ্রতিমদার রুমের দরজায় টোকা মারল অভি। কিছু পরে সুপ্রতিমদা দরজা খোলে, ওর অবস্থা অভির মতন, ঊর্ধ্বাঙ্গ খালি, কোমরে তোয়ালে জড়ানো, তোয়ালের নিচ থেকে সিংহ বাবাজি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের মধ্যে ইচ্ছে করেই উঁকি মারে অভি, লক্ষ্য করলো যে রিতিকা কম্বলে নিজেকে নাক পর্যন্ত ঢেকে নিয়েছে। মাথার চুল অবিন্যস্ত, চোখ জোড়া প্রেমের আগুনে চিকচিক করছে, গাল লাল।

অভি দেঁতো হাসি হেসে জিজ্ঞেস করলো, “তোদের কি ডিস্টার্ব করে দিলাম নাকি?”
 

Users who are viewing this thread

Back
Top