What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (4 Viewers)

Chapter 3: মাতৃময়ী মূর্তি। (#2)

অভি পরীর কোমল নিতম্বের ওপরে হাত চেপে ধরে আর মৃদু মৃদু চাপ দেয়, কোমল নারী মাংসে। মাঝে মাঝে হাতের চাপ বেশ শক্ত হয়ে ওঠে, নখের আঁচড় কাটে কোমল গোলকে। পরী ওর কোমল শরীরে অভির নখের আঁচড়ের স্পর্শ পেয়ে অভির বুকে হাত চেপে ধরে।

অভি পরীকে উত্যক্ত করার জন্য বলে, “ওদের কথা মনে মনে ভেবে তুমি কি করছিলে শুনি? তোমার গাল লাল হয়ে যায়নি ওদের আওয়াজ শুনে, দুষ্টু মেয়ে।”

পরীঃ “না বাবা ওরা যা আওয়াজ করছিল, আমি শেষ পর্যন্ত টি,ভি র আওয়াজ জোরে করে দেই।”

অভিঃ “মিথ্যে বোলোনা সোনা, তুমিও ওই আওয়াজ গুলো বেশ উপভোগ করছিলে তাই না।”

পরী লজ্জায় লাল হয়ে যায়, লজ্জা ঢাকার জন্য নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে। পরীর নরম পেছনে অভির হাত যেন থেমে থাকতে পারে না, বারে বারে মুঠি মুঠি শরীরের অংশ নিয়ে হাত দিয়ে চাপে। হাতের তালুর নিচে অভি অনুভব করলো যে পরীর গায়ের কাপড়ের নিচে কিছু নেই, সেটা ভেবেই মাথার মধ্যে কামনার আগুন চাগিয়ে উঠল অভির।

অভি মৃদুকন্ঠে পরীকে বলে, “ভেরি সরি সোনা আজ আমি তোমার সাথে সিনেমা দেখতে যেতে পারিনি।”

পরীঃ “সেটা ঠিক আছে, তার জন্য তো আমি রাগ করিনি। তোমার পরীক্ষা কাছে আসছে তোমার ভাল করে পড়াশুনা করা উচিত। দেখ আড়াইটে বেজে গেছে এবারে শুয়ে পড়ো।”

অভি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে ওকে বাহুপাশে বেঁধে ফেলে। পরী ওদের দুজনের শরীরের মাঝে হাত এনে অভির বুকের ওপরে হাত রাখে, মুখ উঁচু করে অভির মুখের দিকে তাকায়। মাথা নিচু করে অভি আলতো করে পরীর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।

কানে কানে বলে, “রাতে আমার সাথে এখানে শুয়ে পড়ো।”

পায়ের বুড়ো আঙুলের ওপর ভর দিয়ে ওর কপাল ছুঁতে যায় পরী। কপালে ঠোঁট দিয়ে চুমু খাবার পরে অভির ঠোঁটের ওপরে গরম নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলে, “না সোনা, তুমি আমার কোলে মাথা রেখে বিছানায় শুয়ে পড়ো, আমি তোমার চুলে বিলি কেটে দেই, দেখবে খুব আরাম লাগবে।”

পরী হাঁটু গেড়ে বিছানার ওপরে বসে পড়ে, অভি ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। পরী খুব আদরে অভির চুলে বিলি কেটে দেয়। অভি ওর কোমর জড়িয়ে ধরে থাকে। দু’জনের বুকের ভেতর এক অনাবিল প্রেমের আলো বিচ্ছুরিত হয়, সেই প্রেমে কোন কামনার লেশ নেই, বাসনার লেশ নেই, এ যেন এক সুন্দর ধবধবে সাদা প্রেমের বন্ধন।

অভিঃ “পরী...”

পরীঃ “হুম বলো।”

অভিঃ “সুব্রত আর মৈথিলী আমার সাথে অরুনিমার সম্পর্ক তৈরি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।”

পরীঃ “আমি জানি অভি, আর এও জানি সেই জন্য তুমি আজ ওদের বাড়ি যাচ্ছো না। তোমার ওপরে যে আমার অগাধ বিশ্বাস আছে অভি।”

অভি আজ বিকেলের কথা সব পরীকে জানালো, সুব্রত ওকে কি বলেছে, মৈথিলী ওর দিকে কেমন করে তাকিয়েছিল আর যা যা কিছু ঘটেছে সব কিছু পরীকে বলে দিল। পরী ওর কথা শুনে মিষ্টি হেসে জানিয়ে দিল যে ওর নিজের হৃদয়ের ওপরে মানে অভির ওপরে অগাধ বিশ্বাস যে অভি ওকে ছেড়ে কোনদিন যাবে না। কিন্তু সুব্রতর কথা শুনে মনে একটু সংশয় জেগে উঠলো পরীর, “আমি তো ঘুণাক্ষরেও ওদের মতলব বুঝতে পারছিনা অভি, যাই হোক দেখা যাক কি করতে চায় ওরা।”

পরী ওর দিকে একটু ঝুঁকে এলো, অভি নাকের ওপরে নাক ঘষে বললো, “তুমি সত্যি অনেক সুন্দরী আর বুদ্ধিমতী, পরী।”

পরীঃ “আমি না তোমার চেয়ে দু বছরের বড়, তাই তো তোমার চেয়ে আমার মাথায় কিছুটা বেশি বুদ্ধি আছে।”

অভি ভাবলো এবারে ওকে অরুনার কথা জানানো যেতে পারে, “পরী, আমি তোমাকে একটা সত্যি কথা বলতে চাই। আমি আজ প্রাক্টিকাল ক্লাস করিনি।”

আঁতকে ওঠে পরী, “মানে? কি করেছো তাহলে?”

অভি একটু চিন্তায় পড়ে যায়, তারপরে বলে, “আজ আমি আমার সব থেকে ভাল বান্ধবীর সাথে ছিলাম, তার নাম অরুন্ধুতি ব্যানার্জি।”

পরীর হাত থেমে যায়, চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে ফেলে পরী। বুকের মধ্যে হটাত করে কেউ যেন বাড়ি মেরে দিয়েছে। অভির কথা শুনে ক্ষণিকের জন্য বুক দুরুদুরু করে কেঁপে ওঠে, কি বলতে চাইছে অভি? হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির মুখের দিকে। অভি ওর চোখের চাহনি দেখে পরীর মনে ভাব বুঝতে পারে। পরীর মনের ভেতরে এক উত্তাল তরঙ্গ আছড়ে পড়ে যেন, “কি করে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ভাল বন্ধু হতে পারে? না সেটা ঠিক নয়, অভি কেন বলেনি আগে, কেন আমাকে এত বড় একটা ভ্রান্তিতে ডুবিয়ে রেখেছোে?”

মাথা নাড়ালো অভি, “কি দেখছো ওই রকম ভাবে আমার দিকে?”

পরী কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে, “তুমি তো কোনদিন আমাকে জানাও নি যে তোমার কোন ভালো বান্ধবী আছে মানে গার্লফ্রেন্ড।”

অভিঃ “না পরী না, তুমি আমাকে ভুল বুঝেছো।” মাথা নাড়ে অভি, “অনেক বড় গল্প পরী, কিন্তু আজ তোমাকে আমি সেই গল্প বলবো।”

অভি ওর জীবন কাহিনী পরীর সামনে মেলে ধরে। মায়ের কথা, বাবার কথা, সবসময়ে ওর ওপরে বাবা মায়ের চাপ, যেন পয়সাই সব। ভালবাসা কি ঠিক যেন বুঝে উঠতে পারেনি অভি। ছোটো বেলায় চাকরদের কাছে আর তারপরে হস্টেলে জীবনের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত হয়েছে। পড়াশুনায় ভাল ছিল অভি, তাঁর সাথে সাথে ভাল আঁকতো। মনে খুব ইচ্ছে ছিল যে বড় হয়ে খুব বড় এক চিত্রকর হয়। বাবা মাকে জানিয়েছিল মনের অভিপ্রায়, কিন্তু না তাদের কথা, যে ওদের পরিবারের কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, এমত অবস্থায় অভি যদি সামান্য এক চিত্রকর হয় তাহলে কি করে সবাইকে মুখ দেখাবে বাবা মা। মা স্কুলের শিক্ষিকা, বাবা এয়ারপোর্ট অথরিটির বড় ম্যানেজার, এই অবস্থায় অভি কিছুতেই চিত্রকর হতে পারে না। এত পয়সা খরচ করে ওর বাবা মা ওকে সব থেকে ভাল স্কুলে পড়িয়েছে আর অভি যখন ভালো ফল আনতে পেরেছে তাহলে ওকে বিজ্ঞান নিয়েই পড়তে হবে। উচ্চমাধ্যমিকেও ওকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হলো শেষ পর্যন্ত। পরী চুপ করে অভির কথা শোনে, কাহিনী বলতে বলতে অভির চোখের কোল যেন একটু চিকচিক করে আসে। ভেতরটা যেন কঁকিয়ে ওঠে বেদনায়। পরী আলতো করে অভির কপালে হাত বুলিয়ে দেয়, ওর কথা শুনে পরীর চোখের কোলেও জল চলে আসে।

কম্পিত স্বরে বলে, “আমি এ সব জানি, ছোটো মা আজ আমাকে তোমার কথা বলছিল।”

অভি চমকে ওঠে, “কি? মা তোমাকে এই সব কথা বলেছে?”

পরীঃ “হ্যাঁ সোনা। ছোটো মা তোমাকে বড় করার জন্য যা করেছে সেই সব বলেছে আর তুমি ছোটো মায়ের কথা একদম শোনো না তাই বলেছে। নদীর সবসময়ে দু’ধার দেখা উচিত না হলে নদীর কথা বোঝা দায় হয়ে ওঠে, তাই না। এখন বুঝেছি আমি তোমার কষ্ট, আমি ছোটো মাকে বুঝিয়ে বলবো খনে। দেখ সোনা, মনের ঘা এমন ঘা যে ঠিক তো হয়ে যায় সময়ের সাথে কিন্তু একটা কাটা দাগ চিরদিনের জন্য রেখাপাত করে রেখে যায়। আমি আপ্রান চেষ্টা করবো তোমার সেই দাগ মুছে দেবার জন্য।” চোখের কোল মুছে অভিকে জিজ্ঞেস করে, “এবারে বলো তো যা আমি জানি না। কে এই অরুন্ধুতি ব্যানার্জি?”

অভি ওর কলেজের গল্প বলতে শুরু করে, অনুসূয়ার কথা তারপরে পুবালির কথা। সবশেষে অরুনার কথা। সব কিছু শুনে পরী একটু ঝুঁকে অভির কপালে মিষ্টি করে একটি চুমু খেয়ে বলে, “তোমার দেবী, অরুনার সাথে কবে দেখা করাচ্ছো?”

অভি মৃদু হেসে বলে, “অরুনাও তোমার সাথে দেখা করতে চায়।” ওর হাত দুটি বুকের ওপরে চেপে ধরে অভি।

পরী ঘড়ির দিকে দেখে চমকে ওঠে, “আরে সাড়ে চারটে বাজে যে।”

অভি ওর হাত টেনে বলে, “পরী, এই তোমার অভিমন্যু, তোমার সামনে খোলা বইয়ের মতন রাখা।”

পরী অভির মাথার নিচে একটা বালিশ টেনে দিয়ে ওর পাশে বসে। নরম হাতে অভির গালের ওপরের জলের দাগ মুছে দেয়। আস্তে করে চোখ থেকে চশমা খুলে ভাঁজ করে মাথার পেছনে রাখে।

আলতো করে গালে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “অতীত কখন ভুলতে নেই অভি, অতীত আমাদের ভবিষ্যতের সিঁড়ি, অতীত আমাদের অনেক কিছু শেখায়। জীবন একটি চক্রের মতন অভি, কোন একসময়ে হয়তো আমাদের অতীত আমাদের সামনে এসে দাঁড়াতে পারে, তখন আমরা দু’জনে মিলে এক সাথে তার সামনা করবো। এখন একটু বিশ্রাম করো ছোট্ট সোনা, আজকে আবার শপিংয়ে বের হতে হবে তাই না।”

অভির মাথা বুক একদম খালি হয়ে আসে, কে এই নারী? কে এই পরী, “তুমি কে?” গলা ধরে আসে অভির।

পরী ওর মুখের ওপরে ঝুঁকে পড়ে, কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে উত্তর দেয়, “আমি তোমার পরী, বুদ্ধিতে তোমার মন্ত্রি, সুন্দরী আর ধনে আমি লক্ষ্মী, আমি ধরিত্রী তোমাকে বোঝার জন্য আর আমি তোমার মা তোমাকে ভালবাসা আর স্নেহে ভরিয়ে তোলার জন্য, শয়নে আমি রম্ভা আর মেনকা, আমি তোমার পরী।”

পরী ওর খোলা চোখের ওপরে আঙুল রেখে চোখের পাতা বন্ধ করে দেয়। মিষ্টি গলায় বলে, “শুয়ে পড়ো ছোট্ট রাজকুমার আমার।”
 
Chapter 4: অনাধিকার প্রবেশ। (#1)

মা ধাক্কা মেরে অভিকে ঘুম থেকে তুলে দিলেন, “এই ছেলে ওঠ, সাড়ে নটা বাজে আর কত ঘুমাবি।”

অভিঃ “আহ মা, আর একটু শুতে দাও না, আজ ছুটির দিন, আর একটু প্লিস।”

মাঃ “তোর বাবা অফিসে বেরিয়ে গেছেন আর সুব্রত আর মৈথিলী সেই সকাল বেলায় ঢাকুরিয়া বেরিয়ে গেছে। তুই যদি আমাদের সাথে শপিংয়ে যেতে চাস তাহলে উঠে পড় না হলে তুই ঘুমতে পারিস। আমি কিন্তু তোর জন্য কোন রান্না করিনি।”

ঘুম চোখে অভির মনে পড়লো যে কেনা কাটা করতে বের হতে হবে, যদিও পছন্দ নয় তবুও যেহেতু পরী সাথে থাকবে তাই ওর যেতেই হবে। পরী পাশে না থাক কাছে তো থাকবে।

মাঃ “চা তৈরি, স্নান সেরে তাড়াতাড়ি নিচে আয়।”

অভি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো, “আর তোমার মেয়ে কি করছে? ও শুয়ে থাকলে কিছু না আর আমি শুয়ে থাকলে যেন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়।”

মাঃ “ওর কথা তোকে জিজ্ঞেস করতে হবে না। পরী অনেক সকালে উঠে স্নান সেরে পুজো দিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে গেছে, ও লুচি ভাজছে, তোর মতন নয়, খালি পড়ে পড়ে ঘুমাতে পারলে যেন বেঁচে যাস।”

অভি মায়ের কথা শুনে মনে মনে হেসে ফেললো, “আমার সোনার পরী জানে কি করে ছোটো মায়ের মন জিততে হয়। মেয়ে নয় মা, তোমার ভাবি বউমা করে আনবো আমি।”

স্নান সেরে দৌড়ে নিচে নেমে আসে, “টিং টিং টিং টিং ... পেটে আগুন জ্বলছে, ফায়ার ব্রিগেড চাই।” অভি খুব খুশি, পরী লুচি রান্না করছে।

পরী রান্না ঘর থেকে জোর গলায় বলে, “চিল্লিও না চুপ করে বসার ঘরে বসো, আমি তোমার লুচি নিয়ে এখুনি আসছি।”

বসার ঘরের পর্দা সরিয়ে পরী ঘরে ঢুকলো, মনে হলো সকালের আলো যেন ওর সদ্যস্নাত রুপের কাছে ম্লান হয়ে গেল। ভেজা চুল ঘাড়ের ওপর দিয়ে বাঁ কাঁধের ওপর দিয়ে সামনের দিকে ফেলা। পরনে ঘিয়ে রঙের শাড়ি আর লাল ব্লাউস। চেহারায় যেন দেবী প্রতিমার মতন আলোর ছটা দিচ্ছে। কপালে ছোট্ট লাল সিঁদুরের টিপ, পুজোর টিপ মনে হলো, দুই বাঁকা ভুরুর মাঝে শোভা পাচ্ছে। কানে সোনার দুল তাতে আবার দুটি ছোটো ছোটো মুক্তো ঝুলছে। বাঁ গালের ওপরে সেই ছোট্ট চুলের এক গুচ্ছ দুলে বেড়াচ্ছে। গোলাপি ঠোঁটে কোন রঙ মাখা নেই তবুও কত গোলাপি আর নরম যেন গোলাপ ফুলের কুঁড়ি। কাজল কালো নয়নে অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। পরীর ওই লক্ষ্মীর মতন রুপ দেখে অভি থমকে যায়। পরী যেন চোখের ইশারায় ওকে বলে, “অভি এই অপরূপ সুন্দরী ছোঁয়ার নয়, শুধুমাত্র দুচোখ ভরে দেখার।”

সামনে এসে টেবিলের ওপরে খাওয়ার থালা রেখে অভির মাথায় ছোট্ট চাঁটি মেরে ফিসফিস করে বলে, “আমার দিকে ওই রকম ভাবে তাকিয়ে থেকো না, তাড়াতাড়ি লুচি তরকারি শেষ করো।” অভি ওর মুখের দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে, চোখের পলক যেন পড়ে না। পরী মুখের সামনে মুখ এনে বলে “যদি ওই রকম ভাবে দেখতে থাকো যদি তাহলে কিন্তু আমি তোমার সাথে যাবো না।”

অভি যেন এতক্ষণ মোহাচ্ছন্নে ছিল, ওর কথা শুনে যেন সেই ঘোর কেটে গেল। হাঁ করে পরীকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কে?”

এক অদ্ভুত সুন্দর হাসি দেয় পরী, ফিসফিস করে বলে, “আমি তোমার পরী।” উত্তর দিয়ে পরী ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ ওরা সবাই শপিংয়ে বের হলো। পরী খুব সুন্দর একটা গাড় নীল রঙের সালোয়ার কামিজ পরে। খুব সুন্দর দেখাচ্ছে পরীকে। মায়ের সাথে যেন পরী নয় একটা সুন্দর ময়ুর হেঁটে চলেছে আর অভি ওদের পেছন পেছন হাঁটছে। পরীর চেহারায় এক অনাবিল শান্তির ছটা, ও যে ছোটো মায়ের পাশে আর ভালবাসার কাছে আছে।

শপিং জিনিসটা অভির কোনদিন ভালো লাগে না তাও আবার মায়ের সাথে। দশটা দোকান ঘুরবে, একশো খানা শাড়ি নামিয়ে দেখবে তারপরে বলবে যে না ঠিক পছন্দ হচ্ছে না বলে আরও একটা দোকানে ঢুকবে। কিন্তু ওর সেই বিরক্তি আজ নেই কেননা ওর সাথে পরী আছে। প্রথমে ওরা শ্যামবাজারে গেল পরীর জন্য শাড়ি কিনতে। তিনটে শাড়ি কিনতে পৌনে ঘন্টা, বাপরে, মেয়েদের কেনাকাটা। প্রতিবার অভি যখনি পরীর দিকে তাকায়, পরী ওর দিকে ইশারা করে, “আর পাঁচ মিনিট।” কিন্তু সেই পাঁচ মিনিট আর আসেনা, শাড়ি দেখা থামেনা। অভি মনে মনে বিরক্তি বোধ করে, আমার সাথে বের হলে আগে থেকে রঙ পছন্দ করে রাখবে তারপরে শাড়ি কিনতে বের হবে। কেনাকাটা চলতে থাকে, বিছানার চাদর, শাড়ি আরও অনেক কিছু। অভির সহ্য শক্তির আর বাহুর শক্তির যেন পরীক্ষা চলছে, শপিংয়ের ব্যাগ গুলো তো ওর হাতেই।

পরী ওর ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মাকে বলে, “দেখলেতো ছোটো মা, আমি বলেছিলাম না যে আমাদের ব্যাগ বওয়ার জন্য একটা গাধার দরকার ছিল।”

মা অভির ক্লান্ত চেহারা দিকে তাকিয়ে মিনতির সুরে বললো, “ব্যাস আর কয়েক ঘন্টা অভি।” “বাপরে আরও কয়েক ঘন্টা” মায়ের কথা শুনে অভির মাথায় যেন বাজ পড়লো।

অভিঃ “শোনো মা, তোমার মেয়ে যদি আর একবার আমাকে গাধা বলেছে তাহলে কিন্তু আমি ওকে এক লাত্থি মারব আর সব ব্যাগ ফেলে দেব। ওকে বারবার গাধা গাধা বলতে বারন করো।”

পরী অভিকে খ্যাপানোর জন্য আবার বলে, “গাধা গাধা গাধা, একশ বার বলবো গাধা।”

অভি মাকে বিরক্তি হয়ে বললো, “আচ্ছা কি দরকার পরীর জন্য অত শাড়ি কিনে? ওর তো হাজার গন্ডা কেন কয়েক লক্ষ শাড়ি আছে। তুমি না পরীকে লাই দিয়ে মাথায় তুলছো।”

অভির কথা শুনে মা বিরক্ত হয়ে ওঠেন, “তোর যদি ভালো না লাগে তাহলে তুই বাড়ি চলে যা।”

পরী দেখলো মা ছেলের মধ্যে আবার তুমুল কিছু একটা শুরু হতে দেরি লাগবে না। দু’জনের তিরিক্ষি মেজাজ। পরী ছোটো মায়ের হাত ধরে শান্ত করে দিল আর অভির দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো শান্ত হবার জন্য। বাজুতে পরীর হাতের স্পর্শ পেয়ে মা শান্ত হয়ে গেল। শ্যামবাজারে কেনাকাটা শেষ করার পরে হাতিবাগান থেকে পরীর জন্য সালোয়ার কামিজ কেনা হলো। মা মৈথিলীর জন্য একটা দামী সিল্কের শাড়ি কিনলো আর সুব্রতর জন্য রেমন্ডের সুটের কাপড়। অভি ওই দেখে একটু বিরক্ত হলো, পরীর জন্য কিনছো কেনো, সুব্রত মৈথিলীর জন্য অত দামী উপহার কেনার কি মানে।

অভি মাকে জিজ্ঞেস করলো যে সুব্রত আর মৈথিলী, ঢাকুরিয়া থেকে কখন ফিরবে, মা জানালেন যে ওরা বিকেল ছ’টার মধ্যে ফিরে আসবে আর বাবাও সম্ভবত ততক্ষণে বাড়ি ফিরে আসবেন।

অভির খুব ক্লান্ত লাগছিল, কিন্তু পরীর হাসি মুখ চোখের সামনে দেখে অভির সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। প্রায় আড়াইটে নাগাদ মা পরীকে জিজ্ঞেস করলেন যে খিদে পেয়েছে কি না। অভি ভেবে পেলোনা কি হলো, ও যে সাথে আছে সেটা যেন মা বেমালুম ভুলে গেছে, হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে পেয়ে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে অভির মনের কথা বুঝতে পারলো, একটু ব্যাথা ভরা হাসি দিয়ে মনটাকে শান্ত করতে অনুরোধ করলো পরী।

মা পরীকে জিজ্ঞেস করলো, “অনেক তো শাড়ি সালোয়ার কেনা হলো, তুই জিন্স পরবি?”

মায়ের কথা শুনে পরী আর অভি দু’জনেই হতবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। বুঝতে চেষ্টা করে যে মা কি বলতে চাইছে। পরী যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না, ওর ছোটো মা ওকে জিন্স কিনে দেবে?

মা ওদের হতবাক মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “ওই রকম ভাবে তোরা আমাকে দেখছিস কেন? আজকালকার ফ্যাসান এটা, সব মেয়েরাই জিন্স টপ পরে। কিছুদিন পরে তুই ইউনিভারসিটি যাবি তখন তুই পরতে পারিস।”

রাস্তার মাঝে পরী মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে, “তুমি সত্যি আমার আদরের ছোটো মা। কিন্তু ছোটো মা, আমি তো কোনদিন জিন্স পরিনি? আমি জানি না আমাকে জিন্স পরলে মানাবে কি না।”

মাঃ “আরে বোকা মেয়ে, সবকিছুর একটা প্রথম বার বলে কিছু আছে তো। আর তোকে ভালোই লাগবে দেখতে। তুই চাস কি না তাই বল।”
 
Chapter 4: অনাধিকার প্রবেশ। (#2)

পরী অভির দিকে তাকায়, মায়ের চোখ লুকিয়ে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি গো কিনবো?” অভি ওর দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে ইশারায় জানায় যে জিন্স টপ পরলে পরীকে দারুন দেখাবে, একদম যাকে বলে সেক্সি। পরীর চোখে লজ্জার লালিমা লাগে, চোখ নিচু করে নেয়।

মাঃ “ঠিক আছে তাহলে। বউবাজার আবার অন্যদিনে হবে। আজ চল নিউমার্কেট না হলে ট্রেসার আইলান্ড, সেখানে তোর জিন্স টপ কেনা যাবে।”

পরী মায়ের দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে বললো, “ছোটো মা আমার খুব খিদে পেয়েছে।”

অভির আর পরীর দিকে তাকিয়ে মা বললেন, “ঠিক আছে চল, আমিনিয়ায় আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নেব খানে তারপরে ট্রেসার আইলান্ডে যাব।”

আমিনিয়ার মাটন বিরিয়ানি খেতে খেতে মা অভি আর পরীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোদের দুজনকে আমার কিছু বলার আছে। আজ দেখলাম একটু সময় আছে তাই বলি।”

দুজনেই একে ওপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। বুকের ভেতর একটু দুরুদুরু শুরু হয়ে যায়, মা কি বলতে চলেছেন সেই ভেবে। পরীর চোখ যেন বলতে চাইছে অভিকে, “কি বলবে?”

মাঃ “পরী, অভি, আমাদের যা আছে তা আমাদের পরে তোদের দু’জনের হবে। মানে তোদের দুজনের মধ্যে সমান ভাগ হবে।”

মায়ের কথা শুনে অভির মাথা গরম হয়ে গেল, “এখন বলার কি দরকার ছিল?”

মাঃ “না মানে তোকে জানিয়ে রাখলাম এই আর কি। পরে বিস্তারিত কথা বলবো তোদের সাথে। তুই হয়তো ভেবে বসবি যে মা পরীকে সব দিয়ে দিচ্ছে তাই একটু বলা আর কিছু না।”

অভি রেগে গেল, “তোমার সম্পত্তি তুমি নিজের কাছে রাখো। খুব সম্পত্তি আর পয়সার জোর দেখাও তাই না।”

মাঃ “ওই রকম ভাবে কেন বলছিস তুই, আমি শুধু তোদেরকে জানিয়ে রাখলাম।”

পরী দেখলো যে অভির আর ছোটো মায়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হতে চলেছে, কেউ একজনকে শান্ত না করতে পারলে মহা মুশকিলে পড়ে যাবে। অভির দিকে মিনতির দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে শান্ত হতে অনুরোধ করে আর মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে, “ছোটো মা, এই সব কথা এখন থাক, এই সব কথা বলার অনেক সময় পড়ে আছে।”

অভি বিরক্তি ভরা দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেল। পরী ওকে ইশারা করলো “রেগে যেও না প্লিস।”

ট্রেসার আইলান্ডে ঢুকে পরী অভিকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি সত্যি আমাকে জিন্স পরা দেখতে চাও?”

অভি পরীকে একবার জিন্স আর টপে মনের আঁখিতে দেখে নিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলে, “তোমাকে টাইট জিন্সে আর টপ পরলে যা দেখাবে না, কি যে বলবো, একদম দারুন সেক্সি লাগবে।”

পরী লাজুক হেসে মায়ের চোখ এড়িয়ে অভির হাতে চাঁটি মারে, “ধুত শয়তান!”

পরীর জন্য খান চারেক জিন্স আর বেশ কিছু টপ কেনা হলো। ট্রেসার আইলান্ড থেকে যখন ওরা বের হলো ততক্ষণে সূর্য পশ্চিমে অস্ত গেছে। ট্যাক্সির পেছনে বসে মা আর পরী গল্প করছে। অভি চুপ করে সামনে বসে, মাঝে মাঝে আয়নায় পরীর চোখের সাথে চোখাচুখি হয়ে যাচ্ছে।

বাড়িতে ওদের জন্য কিছু অজ্ঞাত বিস্ময় অপেক্ষা করেছিল। বাড়িতে ঢুকেই পরী আর অভি অরুনিমাকে দেখে চমকে যায়। লম্বা সোফায় অরুনিমা মৈথিলীর পাশে বসে চা খাচ্ছিল। ওদের দেখে অরুনিমা লাফিয়ে উঠে পরীকে জড়িয়ে ধরে। ক্ষণিকের জন্য অভির মনে বিরক্তি ভাব জাগে। পরীর মাথা ক্ষণিকের জন্য গরম হয়ে যায় অরুনিমাকে দেখে কিন্তু খুব সংযত ভাবে মনের ভাব লুকিয়ে মিষ্টি হেসে অরুনিমাকে জড়িয়ে ধরে।

পরীঃ “বাপরে অনেক দিন পরে দেখা, সেই যে সুব্রতদার বিয়ের সময়ে এসেছিলে তারপরে তো আর দেখাই দিলে না।”

অরুনিমার দৃষ্টি অভির মুখের দিকে নিবদ্ধ।

অরুনিমা পরীকে বলে, “আমি যখন চুর্ণিদির মুখে শুনলাম যে তুমিও এসেছো তাই আর থাকতে পারলাম না, চলে এলাম তোমার সাথে দেখা করতে।”

অভি মনে মনে ভাবলো, “কি শয়তান মেয়েরে বাবা, অকাট মিথ্যে কথা বলে দিল।”

অরুনিমা অভির দিকে ঠোঁটে এক সুন্দর হাসি মাখিয়ে মৃদু মাথা হেলালো। মাও দেখি অরুনিমাকে দেখে খুব খুশি, মৈথিলীকে ধন্যবাদ জানালো যে অরুনিমাকে সাথে এনেছে বলে। অভির মনে যেন খই ফুটছে, বাড়িতে তিন তিনটে সুন্দরী, সন্ধ্যে মাটি যাবে না হয় রাত রঙিন হবে, কিছু একটা তো হবেই।

অভি ওদেরকে বললো যে ও খুব ক্লান্ত সারাদিন কেনা কাটা করে তাই নিজের ঘরে যাচ্ছে। পরী আগেই নিজের ঘরে ঢুকে পড়েছে ওর জিনিস পত্রের ব্যাগ নিয়ে। বসার ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার আগে অভি একবার অরুনিমার দিকে তাকালো। অরুনিমার দৃষ্টি অভির দিকে নিবদ্ধ যেন একটু কাতর আশা নিয়ে বসে আছে।

অরুনিমার পাতলা গঠন, মৈথিলীর মতন সুখবর্ধক নধর কাঠামো নয় বা পরীর মতন অত সুন্দরী নয় তবুও সারা শরীরে এক অদ্ভুত লাবন্য ছড়িয়ে আছে, যা কারুর নজর সহজে এড়ায় না। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চড়ার সময়ে অভি ভাবে, আজ রাতে এই ছাদের নিচে যেন চাঁদের হাট বসেছে, একজন তন্বী প্রনয়কৌতুকী, একজন আবেদনময়ী, একজন জলপরীর ন্যায় সুন্দরী। অভি নিজের মাথায় চাঁটি মারলো, কি উলটো পাল্টা ভাবছে অভি, পরীর চোখে ও ঈর্ষার আগুন দেখেছে।

হাত মুখ ধুয়ে নিচে এসে মাকে বললো যে ওর চা যেন ওপরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মা জানালেন যে কেউ ওর চা নিয়ে ওপরে দিয়ে আসবে। ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার আগে পরীর দিকে তাকালো, পরী ডিভানে বসে কেনা কাটার গল্পে ব্যাস্ত। ক্ষণিকের জন্য অভির সাথে চোখাচুখি হয়ে গেল, চোখ যেন বলে উঠল, সাবধান অভি।

অভি নিজের ঘরে ঢুকে প্রাক্টিকাল খাতা খুলে বসে পড়লো। অনেক কিছু লেখার বাকি, ওদিকে যদি সোমবারে না নিয়ে যায় খাতা তাহলে অরুনা ওর মাথা খেয়ে ফেলবে। ঠিক সেই সময়ে দরজায় টোকা পড়ে। অভি ভাবলো যে হয়তো মা বা পরী ওর জন্য চা এনেছে তাই হসি মুখ নিয়ে দরজার দিকে তাকায়, কিন্তু মৈথিলীকে ট্রে নিয়ে ঢুকতে দেখে অবাক হয়ে যায়।
অভি হাঁ করে মৈথিলীর নধর অবয়ব দেখতে থাকে, দু’চোখে এক অদ্ভুত হসি, সে হাসির মানে অভি খুঁজে পায় না। মৈথিলী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, অনুধাবন করতে চেষ্টা করে অভির মনের অভিপ্রায়। অভির দৃষ্টি মৈথিলীর পীনোন্নত বুকের ওপরে নিবদ্ধ হয়ে যায়। মৈথিলীর পরনে গত রাতের টু-পিস নাইটড্রেস। ইচ্ছে করে যেন ঘরে ঢোকার আগে কোমরের বাঁধন খুলে দিয়েছে মৈথিলী। ভেতরের স্লিপ যেন বুকের ওপরে এঁটে বসে, উপরি বক্ষের অধিকাংশ অনাবৃত, বুকের বিভাজন পরিষ্কার অভির চোখের সামনে মেলে ধরা। ভেতরের স্লিপটা ওর শরীরের সাথে লেপটে আছে, যেন ওর কমনীয় শরীরে এক রঙের প্রলেপ মাখান। ফোলা গোল পেটের মাঝে সুগভীর নাভি ফুলের মতন ফুটে রয়েছে, সরু কোমরের পরেই ফুলে রয়েছে ইন্দ্রিয়ঘন পুরুষ্টু নিতম্ব। ভেতরের স্লিপ, জানুর মাঝে এসে শেষ হয়ে গেছে, পেলব মসৃণ জানুর ওপরে ঘরের আলো পেছল খেয়ে পড়ছে। অভির কান মাথা জৈবিক ক্ষুধায় গরম হয়ে উঠল। মৈথিলী টেবলের ওপরে চায়ের ট্রে রেখে ওর চুলের ওপরে আলতো বিলি কেটে দেয়। অভি ওর আচরনে হতবাক হয়ে যায়, কে এই নারী, কি তার অভিপ্রায়, নিচে তাঁর স্বামী বসে আর সে অভির সামনে এমন ভাবে মেলে ধরেছে নিজেকে, কেন? উত্তর খুঁজে পায় না অভি।

কানের কাছে মুখ এনে মৈথিলী জিজ্ঞেস করে, “আমি কি এখানে একটু বসতে পারি?” অভির নাকে মৈথিলীর গায়ের সুবাস যায়, অভি যেন এক স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে রয়েছে। মাথা নাড়ায় অভি, গলা শুকিয়ে এসেছে ওর, কথা বলার শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছে।

মৈথিলী বিছানায় উঠে ওর দিকে ফিরে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো। শরীরে যেন ঢেউ খেলে উঠেছে। জানুর মাঝে স্লিপটা খুব নিষ্ঠুর ভাবে মৈথিলীর নারীত্বের সাথে লেপটে রয়েছে। মৈথিলী যেন ইচ্ছে করেই নিজেকে ঢেকে রাখার কোন প্রবণতা দেখালো না। হাঁটুর মাঝ থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত অনাবৃত। সারা অঙ্গে একবার চোখ বুলিয়ে নিল অভি, ত্বকের সাথে লেপটে থাকা পাতলা কাপড়ের নিচে কোথাও কোন দাগ দেখতে পেল না। অভির মানসচোখ বুঝে নিল যে মৈথিলী কাপড়ের নিচে কোন অন্তর্বাস পরেনি। একবারের জন্য মনে হয় যে ঝাঁপিয়ে পড়ে মৈথিলীর কামোত্তেজক নধর শরীরের ওপরে আর ছিঁড়ে কুটে খেয়ে নেয় ওর যৌবন রস। মন বলছে যে, যদি অভি ওর দিকে হাত বাড়ায় তাহলে মৈথিলী থেমে থাকবে না, হয়তো নিজেকে সঁপে দেবে অভির বাহু পাশে। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সংবরণ করে অভি।

মৈথিলী ওকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কি অরুনিমাকে এড়িয়ে যাচ্ছো?”

অভি মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল, “কই না তো, আমি কাউকে এড়িয়ে যাচ্ছি না। আজ আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম আর সোমবারে প্রাক্টিকাল আছে তাই আমি ঘরে চলে এসেছি।”

মাথা নাড়ালো মৈথিলী, “ঠিক আছে।” মৈথিলীর চোখ অভির চোখের দিকে নিবদ্ধ, অনাবৃত মসৃণ জানুর ওপরে হাত বোলাতে থাকে আর ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে থাকে। মাঝে মাঝে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে এক অদ্ভুত হাসি দেয় অভির দিকে তাকিয়ে। অভির বুকের মাঝে আলোড়ন শুরু হয়ে যায়।

মৈথিলী ওকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার নাকি এক বান্ধবী আছে?”

অভিঃ “হ্যাঁ আছে।”

মৈথিলীঃ “কি নাম?”

অভিঃ “আমার কলেজের বান্ধবী, নাম জেনে কি করবে?”

মৈথিলী চোরা হাসি দিয়ে বলে, “ধ্যাত দুষ্টু ছেলে, মিথ্যে কথা বলছো, কলেজে তোমার কোন বান্ধবী নেই।”

শেষ পর্যন্ত ওর দেবীকে এই ঘোলা জলের মধ্যে টেনে আনতে হবে ভেবে মাথা গরম হয়ে যায়। দাতে দাঁত পিষে উত্তর দেয় অভি, “অরুন্ধুতি, আমার বান্ধবীর নাম।”

মৈথিলীঃ “প্রোপোস করোনি কেন?”

“অরুনা আমি খুবই দুঃখিত রে, আমি তোকে এই ঘোলা জলে টেনে এনেছি” অভির মন কেঁদে ওঠে, অভি গম্ভির সুরে উত্তর দেয়, “সময় চাই, এখন সময় আসেনি তাই প্রোপোস করিনি।”

মৈথিলীঃ “তোমার মনে হয় না যে তোমার ভবিতব্য তোমাকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারে?”

অভিঃ “মানে?”

মৈথিলীঃ “মানে, তুমি তোমার বান্ধবীকে এখন প্রোপোস করোনি আর আমার বোন তোমার জীবনে চলে এলো, তাহলে?”

অভি, “তাহলে?”

মৈথিলীঃ “তাহলে কি, অরুনিমার সাথে কথা বলে দেখ, ভাল মেয়ে আমার বোন।”

অভিঃ “আর তারপরে?”

মৈথিলীঃ “তারপরে আর কি নিজেকে ছেড়ে দাও নদীর সাথে, দেখো নদীর জল কোথা থেকে কোথায় গড়ায়।” চোখ দুটি জ্বলজ্বল করে ওঠে মৈথিলীর, ঠোঁটে কামনার এক চিলতে হসি লেগে।

নিজেকে বাঁচানোর জন্য অভি প্রশ্ন করে, “সুব্রত জানে যে তুমি আমার ঘরে এসেছো?”

দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে, নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মাথা নাড়ায় মৈথিলী, “হ্যাঁ, সুব্রত জানে আমি এখানে এসেছি। এমন কি বাড়ির সবাই জানে যে আমি তোমাকে চা দিতে এসেছি।”

অভি ভাবলো যে, অরুনিমা বা পরী যদি ওর ঘরে চা দিতে আসতো তাহলে হয়তো বাবা মায়ের একটু খটকা লাগতো, কিন্তু কেউ মৈথিলীকে সন্দেহ করবে না।

অভি মনে মনে ভাবলো, দেখা যাক এই আগুনের খেলা কোথায় নিয়ে যায়, ঠোঁটে এক শয়তানি হাসি দিয়ে বলে, “আমি তোমার বোনের সাথে দেখা নিশ্চয়ই করবো।”

মৈথিলী অভির কথা শুনে, বিছানা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে। টেবিলের একদম পাশে এসে ওর গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে সামনে ঝুঁকে পড়ে। নরম তুলতুলে বক্ষ অভির ঘাড়ের ওপরে চেপে যায়, ঝুঁকে পড়ার জন্য, নিতম্ব পেছনের দিকে ফুলে ওঠে। অভি নিজেকে আয়ত্তে রাখে, মনের গভিরে ওই নিতম্বে হাত দিয়ে পিষে ফেলার ইচ্ছেটাকে দমন করে দেয়। ঘাড়ের কাছে চেপে থাকা বুকের বিভাজনে যেন মুখ ঘুরালেই চেপে যাবে, অভির মনে হয় ওই নরম বক্ষ দুটি হাতের মধ্যে নিয়ে চিপে পিষে নিংড়ে নেয়, ওর কামনার শরীরটিকে মেঝের ওপরে চেপে ধরে সব রস পান করে নেয়। অভির সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলা করে চলেছে। মৈথিলী অভির চুলে বিলি কাটে। অভির সারা শরীরের পেশি শক্ত হয়ে যায়, কোনক্রমে নিজেকে প্রাণপণে আয়ত্তে রাখতে আপ্রান চেষ্টা করে যায়।

মৈথিলী ওর মুখ অভির কানের কাছে এনে ফিসফিস করে বলে, “মনে থাকে যেন, আমাকে কথা দিয়েছো যে তুমি অরুনিমার সাথে দেখা করবে।”

কথা বলার সময়ে মৈথিলীর নাকের ডগা অভির কানের লতি ছুঁয়ে যায়, অভির বুকের ভেতরে কামনার আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে, চিৎকার করে যেন বলতে চায়, “চুর্ণি, তোমার লাল কোমল ঠোঁট আমি চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিতাম, আমি তোমার পরনের কাপড় ছিঁড়ে কুটিকুটি করে, তোমার দুই নরম তুলতুলে স্তন চেপে পিষে একাকার করে দিতাম আর তোমার নধর পুরুষ্টু নিতম্বে চাঁটি মেরে পিষে লাল করে দিতাম। তোমাকে মেঝেতে শুইয়ে তোমার জানু ফাঁক করে তোমার সব মধু পান করে নিতাম আর তোমার কমনীয় শরীরটাকে নিয়ে আছড়ে পিছড়ে মত্ত খেলায় খেলতাম আমি। ততক্ষণ খেলে যেতাম যতক্ষণ আমাদের দুজনের শরীরের সব রস একে অপরকে ধুয়ে না দিতো, তোমাকে শেষ করে দিতাম আর নিজেও তোমার মধুর আলিঙ্গনে শেষ হয়ে যেতাম।” কিন্তু অভির গলা অস্বাভাবিক রকমে শুকিয়ে গেছে, কোন আওয়াজ বের হলো না গলা থেকে।

কোমরে এক মত্ত ছন্দ তুলে অভির মাথা আর মন নিয়ে খেলা করে বেরিয়ে গেল মৈথিলী। দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবার আগে, অভির দিকে তাকিয়ে বললো, “তুমি মনের মধ্যে যা যা বলেছো, আমি সব শুনে ফেলেছি মিস্টার অভিমন্যু তালুকদার।” অভি হতবাক হয়ে চেয়ারে বসে থাকে, নড়ার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছে অভি।
 
Chapter 5: মেনকার রথ।

সকালের রোদ বড় মিষ্টি, মৃদু মন্দ বাতাসে বইছে, বাতাসে ঠাণ্ডার লেশ নেই। সকালের খাওয়ার পরে বাড়ির মধ্যে যেন কান্নার আভাস ওঠে। পরী আর তার ছোটো মা, দু’জনের চেহারায় ভারী বেদনার ছায়া। মা পরীকে নিয়ে নিজের ঘরে বসে, পরী চুপ করে ব্যাগ গুছাচ্ছে আর মাঝে মাঝে চোখের কোল মুছছে।

অভি ওদের পেছনে দাঁড়িয়ে দেখে কিছুক্ষণ, তারপরে মায়ের আর পরীর কাঁধে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে বলে, “এত দুঃখ কিসের জন্যে?”

দুজনেই অভির দিকে ব্যাথা ভরা দৃষ্টিতে তাকায়, দুজনেই বাক্যহীন। মাকে বললো, “মা, তোমার পরী তোমাকে ছেড়ে তো যাচ্ছে না, এই বাসন্তি পুজোর পরে ও তো তোমার কাছেই আসছে। আর তুমি তো যখন ইচ্ছে দিদার বাড়ি যেতে পারো।”

মা অভির গালে আদর করে বলে, “বাবা, এখন বাবা হওনি তো তাই বলছো। বাবা মা হলে বুঝতে আমার কষ্ট।”

পরী মায়ের দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে, “তুমি আমাকে কথা দিয়েছো যে স্কুলের পরে আমাদের বাড়ি আসবে আমার সাথে দেখা করতে।”

মা পরীর মুখ আঁজলা করে নিয়ে মাথায় চুমু খেয়ে বললো, “হ্যাঁ মা আমি তোর সাথে দেখা করতে যাব।”

সারা বাড়িতে যেন এক ব্যাথার ছায়া। মৈথিলীর আচরন আমূল বদলে গেছে কাল রাত্রের ঘটনার পরে। অভি যত বার ওর দিকে তাকায়, মৈথিলী ওর সাথে চোখ মেলায় না।

সুব্রত অভির কাছে এসে বলে, “মামা আসছি, আমাদের বাড়িতে এসো।”

অভি উত্তর দিল, “দিদাকে আমার প্রনাম দিও”, পরীর দিকে তাকিয়ে সুব্রতকে বললো, “আর আমাকে যেতে তো হবেই।”

মা অভিকে ওদেরকে বাস স্টান্ডে ছেড়ে আসতে বললেন, আর তারপরে অরুনিমাকে ওর বাড়ি ছেড়ে আসতে বললেন। অরুনিমা মায়ের কথা শুনে অভির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।

বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে আছে অভি আর পরী, দু’জনে নিরুপায়, সর্বসমক্ষে কেউ কাউকে ঠিক ভাবে বিদায় পর্যন্ত জানাতে পারছে না। বড় ব্যাথা নিয়ে দুজনে একে অপরকে দেখে যায়। পরীর চোখ ছলছল, বাস এসে গেল।

শেষ পর্যন্ত পরী ওর কাছে এসে নিচু গলায় চোখ টিপে বললো, “ভাল ভাবে পড়াশুনা কোরো, তোমার জন্য না করলেও আমার জন্য ভালো রেসাল্ট কোরো, আর অপ্টিক্সের বইটা ভাল করে দেখবে।”

বাসে উঠে পড়ার আগে বাকিদের চোখ এড়িয়ে হটাত করে বাঁ হাতের তর্জনী ঠোঁটে ভিজিয়ে অভির গালে লাগিয়ে দিল। অভি হাত বাড়িয়ে পরীকে ছুঁতে চেষ্টা করলো, কিন্তু ততক্ষণে পরী বাসে উঠে পড়ে। বুকের ভেতরটা কেমন যেন কেঁদে ওঠে অভির। নিজের গালে পরীর লালা লেগে, বড় মধুর সেই অনুভব। সুব্রতদের পেছনের সিটে জানালার ধারে বসে পরী, বাস ছেড়ে দেওয়ার আগে বাঁ হাতের তর্জনী ঠোঁটের কাছে এনে, ডগায় একটা আলতো চুমু খেয়ে অভির দিকে ছুঁড়ে দেয়। বাস ছেড়ে দেয়, অভি ওর ছুঁড়ে দেওয়া চুমুটা হাওয়া থেকে টেনে নিয়ে পকেটের মধ্যে পুরে নেয়।

বাড়ি ফিরে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে অপ্টিক্সের বই খোলে। পরীর চোখ টেপার ইশারা, অভি নিশ্চিত যে পরী অপ্টিক্সের বইয়ের পাতায় কিছু রেখে গেছে। বইয়ের ভেতর পনের নাম্বার পাতায় খুব ছোটো অক্ষরে লেখা।
“মিস ইউ, ছোট্ট রাজকুমার। কল্যাণীর ফোন নাম্বার xxx-xxxx। ফোন কোরো, আমি অপেক্ষা করে থাকব।”

সেই একটা ছোটো লাইন অনেক কিছু অভির কাছে, সারা ঘরের মধ্যে যেন পরীর গন্ধ আর ছোঁয়া খুঁজে পেল অভি।

অরুনিমা ফিরে যাবার জন্য তৈরি। মা অভিকে বললেন যে ওদের বাড়ি গিয়ে যেন ও ভদ্রতার খাতিরে ওর বাবা মায়ের সাথেও দেখা করে আসে।

ট্যাক্সিতে পাশাপাশি বসে, অভি অরুনিমার দিকে তাকালো। পরনে একটা হাঁটু পর্যন্ত সাদা জিন্স আর গাড় নীল রঙের টাইট টপ। জিন্সটা যেন অত্যধিক ভাবে ওর কোমরের নিচের অঙ্গের সাথে আঠার মতন লেপটে আছে আর টপের অবস্থাও সেই একই রকমের। গোলাপের কুঁড়ি যেন অভির পাশে বসে। মাঝে মাঝে অভির চোখ চলে যায় ওর ফুটন্ত শরীরের দিকে, অরুনিমা ওর পাশে বসে ওর দিকে অমায়িক হাসে। অনেকক্ষণ দুজনে চুপ চাপ, অভির মনে পরীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেদনা যেন এক দমকা হাওয়ায় উড়ে গেল।

অরুনিমাঃ “তুমি কি আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছো?”

অভি ওর দিকে তাকিয়ে বললো, “কই না তো।”

অরুনিমাঃ “তাহলে এত দিনে আমাকে ফোন কেন করলে না?”

অভিঃ “হুম, তোমার দেওয়া কাগজটা আমার সুটের পকেটে ছিল, আর বিয়ে থেকে আসার পরে মা সুটটা ড্রাই ক্লিনিংয়ে দিয়ে দিল তাই তারপরে কাগজটা হারিয়ে গেল। কিন্তু...”

অরুনিমাঃ “কিন্তু কি?”

অভিঃ “কিন্তু তুমি আমার ফোনের অপেক্ষায় কেন ছিলে?”

অরুনিমাঃ “কেন ভদ্রতার খাতিরে কি একবার ফোন করতে নেই? তুমি কেমন ভদ্রলোক অভিমন্যু! কেমন করে মহিলার মন জয় করতে হয় তাও জানো না?”

অভি মনে মনে বলে, “আমাকে শিখাতে যেও না, কেমন করে মেয়েদের মন জয় করতে হয়।” অভি ওর দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসলো। অরুনিমা ওর পাশে সরে এসে বসলো। কাঁধে কাঁধ ছুঁয়ে গেল, বাজুর সাথে ওর বাজু। দু’হাত কোলের ওপরে জড় করে রাখা। অরুনিমা ওর দিকে তাকিয়ে হাসে, অভি ওই হাসি দেখে হেরে যায়।

অভিঃ “আচ্ছা বাবা তুমি জিতলে।”

অরুনিমার চোখে আহবানের মৃদু হাসি, “কি জিতলাম, শুধু একটা ফোন কল, তাও ভদ্রতার জন্য?”

অভিঃ “তুমি আমাকে চেনো না, আমি কে, আমি কি।”

মিষ্টি হেসে অরুনিমা অভির দিকে হাত বাড়িয়ে বললো, “সবকিছু কখনো না কখনো জীবনে প্রথম বার হয়, তাই না। আমাদের চেনা পরিচয় হতে দোষ কি? আমি অরুনিমা, আমাকে তুমি তুলি বলে ডেকো।”

অভি ওর হাত হাতে নিয়ে করমর্দন করলো। অরুনিমার যেন হাতটা টেনে নেওয়ার ইচ্ছে নেই, রেখে দেয় অভির হাতের ওপরে। অভির মাথায় শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল, দেখা যাক এই সেদিনের মেয়ে কি করতে পারে। একটু অভিনয় করেই দেখা যাক, জল কত দূর গড়ায়।

অভিঃ “তুমি আমার নাম ভাল করে জানো।” কিছুক্ষণ ওর চোখের দিকে একভাবে তাকিয়ে বললো, “তুলি আমি জানি তুমি গতকাল কেন আমার বাড়িতে এসেছিলে।” অরুনিমা ধরা পড়ে গেছে এমন ভান করে একটু লজ্জা পেয়ে গেল। অভির দৃষ্টি অরুনিমার ঠোঁটে, নাকে আর মুখের দিকে নিবদ্ধ।

অরুনিমা কিছুক্ষণ পরে অভিকে জিজ্ঞেস করে, “কাল রাতে খাওয়ার সময়ে তুমি খুব চুপচাপ ছিলে, কেন কারন কি?”

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অভি, “মা আর পরীকে কাঁদতে দেখে মন একটু খারাপ হয়ে গেছিল তাই চুপচাপ ছিলাম আমি।”

অরুনিমার পরের প্রশ্ন বান অভিকে বিঁধে দিল, “কাল রাতে তোমার ঘর থেকে ফেরার পরে চুর্ণিদি খুব চুপচাপ ছিল? কি ব্যাপার।”

অভি অরুনিমার চোখের দিকে তাকালো, বুঝতে চেষ্টা করলো যে অরুনিমা কি জানে গত কাল রাতের ঘটনা। গম্ভির আওয়াজে উত্তর দিল, “ওকে জিজ্ঞেস করে নিও, আমি কি করে বলবো।”

অরুনিমা নিচের ঠোঁট কামড়ে দুষ্টুমি হাসি দিয়ে বললো, “আমি আমার দিদিকে চিনি।” অভি অবাক হয়ে গেল উত্তর শুনে, এবারে ওর কি কর্তব্য। অরুনিমা বললো, “আমার বড়দি, আমি বিগত আঠার বছর ধরে চুর্ণিদিকে চিনি।”

চিবুকে হাত রেখে ভাবতে শুরু করে অভি, দুই বোনে মিলে কি করতে চলেছে। ট্যাক্সি তখন শিয়ালদা রেল স্টেশান পার করে এ.জে.সি বোস রোড ধরে এগোচ্ছে।

অরুনিমাঃ “গত পাঁচ বছরে আমি চুর্নিদিকে খুব ভাল ভাবে চিনেছি, বিশেষ করে সুব্রত জিজুর সাথে দেখা হওয়ার পরে। আমাদের মধ্যে বয়সের ব্যাবধান থাকতে পারে, চুর্ণিদি পঁচিশ আর আমি উনিশ কিন্তু আমরা দুজনে খুব কাছের মানুষ। আমার দিদি সত্যি খুব মিষ্টি আর সুন্দরী আর জিজুর তো কথাই আলাদা। ওরা দুজনেই আমাকে খুব ভালবাসে।”

না অভি ওর কথার কোন মাথামুন্ডু খুঁজে পাচ্ছে না, কি বলতে চাইছে অরুনিমা।

অরুনিমাঃ “ওরা দুজনেই আমার সম্পর্কের ব্যাপারে খুব চিন্তিত, ওরা চাইতো যে এমন কারুর সাথে আমার সম্পর্ক হোক যে ওদেরও খুব কাছের আর চেনা জানা লোক হবে।”

অভি এতক্ষণে কিছু বুঝে উঠতে পারলো, “আচ্ছা তাই আমাকে নিয়ে টানাটানি।”

গাল লাল হয়ে গেল অরুনিমার, হেসে ফেললো, “হ্যাঁ তাই।”

অভি ওকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি তোমার দিদির ব্যপারে আর কিছু বলতে চাও আমাকে?”

অরুনিমাঃ “আগে তুমি বলো যে গতকাল রাতে কি হয়েছে? চুর্ণিদি কেন চুপ ছিল, ওর চোখ দেখে মনে হচ্ছিল যে মনের মধ্যে খই ফুটছে? তুমি যদি আমাকে বলো তাহলে আমি জানাবো চুর্ণিদির ব্যাপারে।”

“হুম তাহলে খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে, সাপ আর বেজির খেলা। দেখা যাক এই খেলায় কে জেতে আর কে হারে” আপনমনে বললো অভি, “আমি সাধারন বাঙালি ছেলে নই যা তুমি ভাবছো। আমি কিন্তু আগুনে ঝাঁপ দেবার জন্য সবসময়ে তৎপর, সুতরাং আমার সাথে খেলার আগে যাচাই করে নেবে একটু যে আগুনের খেলা কার সাথে খেলছো।” না অভি অরুনিমাকে সাবধান করে নি, নিজের মনে বলেছে। দাতে দাঁত পিষে অরুনিমাকে গম্ভির স্বরে উত্তর দিল, “এত জানার ইচ্ছে থাকলে তোমার চুর্ণিদিকে জিজ্ঞেস করে নিও।”

গাড়ি ঢাকুরিয়ার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। অভির আর ইচ্ছে করলো না যে অরুনিমার বাড়িতে যায়, তাই ওর দিকে তাকিয়ে বললো, “যদি কিছু মনে না করো তাহলে আজ আর তোমার বাড়ি যাব না, তোমাকে বাড়ির সামনে ছেড়ে দিয়ে আমি ফিরে যাব।”

একটা দুষ্টু মিষ্টি হাসি হেসে অরুনিমা বলে, “তুমি যদি আমার বাড়ি না আসো তাহলে আমি তোমার মাকে ফোন করে বলে দেব যে তুমি আমাকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেছো। সেটা কি ভাল হবে?”

উত্তরে অভি হেসে বলে, “ব্ল্যাকমেল করছো আমাকে?” “দেখা যাক কি হয়, হাত না পুড়লে হলো।” মনে মনে ভাবলো অভি।

বাড়িতে গিয়ে ছাড়তে হলো অরুনিমাকে, দেখা করতে হলো অরুনিমার বাবা মায়ের সাথে। অরুনিমার পরিবার বেশ স্বচ্ছল আর রুচিসম্পন্ন। চা খেতে খেতে গল্পের মাঝে জানা গেল যে অরুনিমার এক ভাই, অরুনাভ ক্লাস এইটে পড়ে। অরুনিমার বাবা রাইটার্সে চাকরি করেন আর মা গৃহবধু। মৈথিলী অরুনিমার জেঠুর মেয়ে, কলেজের পড়াশুনা ঢাকুরিয়া থেকে করেছে আর সেই সময়ে তুলি আর চুর্ণি একে ওপরের কাছাকাছি এসেছে। চুর্ণি তুলিকে নাকি খুব ভালবাসে।

বিদায় নেবার সময়ে, তুলি অভিকে ছাড়তে রাস্তা পর্যন্ত আসে। অভি ট্যাক্সিতে চড়ার আগে তুলিকে বলে, “এবারে খুশিতো, এই যে আমি তোমার বাড়ি এসেছি।”

তুলি মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ খুশি, কিন্তু এটা নিশ্চয় আমাদের শেষ দেখা নয়, তুমি চুর্ণিদিকে কথা দিয়েছো।”

অভিঃ “সত্যি কথা বলতে কি জানো, আমি তোমার মন ভাঙতে চাই না।”

তুলি হটাত করে ওর হাত ধরে ফেলে, “কে বলেছে যে তুমি আমার মন ভেঙে দেবে? আমি তো শুধু একটা সুযোগ চাই তোমার কাছে নিজেকে মেলে ধরার জন্য।”

ট্যাক্সিতে চেপে গেল অভি, জানালার কাছে এসে তুলি ফিসফিস করে বললো, “তোমার জন্য অনেক কিছু লুকিয়ে রেখেছোি আমি, তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করে দেব।”

শেষের কথা ঠিক অনুধাবন করতে পারলো না অভি, গাড়ি ছেড়ে দিল। মনের মধ্যে উত্তাল তরঙ্গ দোলা দিচ্ছে, চুর্ণি তুলি, তুলি চুর্ণি, কি করতে চলেছে ওর সাথে। না বেশি কিছু ভাবতে পারছে না অভি, শেষমেষ হাল ছেড়ে দিয়ে ভাবলো, আগুন যখন সামনে জ্বলছে তাতে ঝাঁপ দিয়েই দেখুক না জ্বলে কি না।
 
Chapter 6: রম্ভার বাঁশি।

দু’দিন পরে সকাল বেলায় এক অপ্রত্যাশিত ফোন এলো। বাবা মা দুজনেই কাজে বেরিয়ে গেছেন, অভি কিছুক্ষণের মধ্যে কলেজের জন্য বের হবে। ঠিক এমন সময়ে ফোন বেজে ওঠে।

ওপার থেকে তুলির গলা, “একদম ভুলে গেছো না আমাকে?”

অভিঃ “না ভুলবো কেন, সবে মাত্র দু’দিন কেটেছে।”

তুলিঃ “তুমি আমার সাথে দেখা করতে পারো?”

অভিঃঃ“মানে? কোথায়?”

তুলি, “মানে বাইরে কোথাও। তুমি ভবানিপুর মেট্রো স্টেশানে আসতে পারো, ঠিক দুটো নাগাদ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকব গেটের কাছে।”

অভি, “ঠিক আছে, আসবো।”

কলেজে গিয়ে অরুনাকে অরুনিমার কথা বললো। সব শুনে অরুনা রেগে গেল অভির উপরে, “তুই একটা শয়তান কুত্তা। তোর কোন বোধ জ্ঞান নেই, শুচিস্মিতার কি হবে?”

অভি মজা করে বললো, “ওয়ান ডে ম্যাচ দেখা যাক না কি হয়। ক্রিকেটে যারা টেস্ট ম্যাচ খেলে তারা কি ওয়ান ডে খেলে না?”

অরুনা রেগে গিয়ে বললো, “অভি, জীবন কিন্তু ক্রিকেট খেলা নয়, একটু সিরিয়াস হ।”

অভি ওর দিকে চোখ টিপে বললো, “আরে বাবা দাবার ছক সাজানো, ঘুঁটি এগিয়ে গিয়েছে, পরের চাল আমার। আমাকে দেখতে হবে এই খেলার শেষ কোথায় কেননা আমি বুঝতে পারছি যে এর পেছনে অন্য কোন গুঢ় মতলব আছে আমি তাঁর শেষ দেখতে চাই।” বিশেষ কিছু খোলসা না করে বলে বললো, “সাপ আর ঈগলের খেলা, অরুনা, দেখা যাক কে জেতে।”

অরুনা জিজ্ঞেস করে, “কে সাপ আর কে ঈগল?”

অভিঃ “অবশ্যই আমি ঈগল।”

তর্জনী তুলে ওকে সাবধান করে বলে অরুনা, “অভি, আগুন নিয়ে খেলিস না। খুব সাঙ্ঘাতিক কিছুর গন্ধ পাচ্ছি আমি। তুই যদি হাত পুড়িয়ে আমার কাছে আসিস তাহলে কিন্তু আমি তোর পিঠের চামড়া নামিয়ে দেব, তারপরে অবশ্য ওই পিঠে আবার বার্নল লাগিয়ে দেব।”

দাবার ছকে ঘুঁটি বসানো, চাল একদিকে চেলে দিয়েছে, এখন অভির অপেক্ষায়। অভি ঠিক সময়ে মেট্রো স্টেশানে পৌঁছে যায়। তুলি ওর জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে সাদা জিন্স নীল টপ, জিন্সটা যেন তুলির কোমরের নিচে চামড়ার সাথে লেপটে আছে, টপের অবস্থা সেই রকম। কাঁধে একটা ব্যাগ, দেখে মনে হলো কলেজ পালিয়ে এসেছে।

অভি ওকে জিজ্ঞেস করলো, “কি কলেজ পালানো হয়েছে নাকি? তা কোথায় যেতে চাও?”

তুলি ওকে দেখে হেসে বললো, “রবীন্দ্র সরোবর যাবে?”

অভিঃ “নাহ, ওসব জায়গায় আমি যাই না, শুধু জোড়ায় জোড়ায় ছেলে মেয়েরা বসে থাকে ওখানে, আমার কেমন বিরক্ত বোধ হয় ওই সব জায়গায়।”

তুলিঃ “তো বন্ধুদের সাথে তুমি কোথায় যাও?”

অভিঃ “কফি হাউস না হলে এস্প্লানেড না হলে ফ্লুরিস। তুমি কোথায় যেতে চাও বল?”

তুলিঃ “নন্দন যাবে?” সারাটা বিকেল ওরা দু’জনে নন্দনে গল্প করে কাটিয়ে দিল। অভি খুব সন্তর্পণে নিজের কথা চেপে গেল, গল্প কিছু এদিক ওদিক বিষয়ে চললো।

ঘন্টা থেকে দিন কেটে গেল। অভির আর তুলির মাঝে এক নতুন সম্পর্ক তৈরি হলো। রাতে অভি চিন্তা করে যে কি চায় তুলি, কিন্তু তুলি যেন খুব সতর্ক মেয়ে, ওর চাল অভিকে বুঝতে দেয় না আর অভিও নাছোড়বান্দা, পন করেছে যে এই সম্পর্কের শেষ কি। তুলির বাঁশির সুর অভিকে মোহিত করে দিয়েছে, অভি অজান্তেই কখন যে নিজেকে ধরা দিয়ে দিয়েছে সেটা আর টের পায়না। অভি ওর ব্যাপারে বেশ কিছু কথা জানতে পারলো, যেমন তুলি গান শুনতে খুব ভালবাসে, সমুদ্র আর বিচ ভালবাসে, ইংরাজি রোম্যান্টিক সিনেমা ভালবাসে। অভিরও গান ভাল লাগে, সেই শুনে একদিন তুলি ওকে একটা সোনি ওয়াকম্যান উপহার দিল। মান্না দের গান অভির খুব প্রিয়, অভি বেশির ভাগ সময়ে ওয়াকম্যানটা কলেজের ব্যাগে রেখে দিতো।

কলেজে অরুনার সাথে দেখা হলেই অরুনা হেসে জিজ্ঞেস করতো ওর কথা। অরুনা দিনে দিনে অভির চালচলনে পরিবর্তন দেখে মনক্ষুণ্ণ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে অরুনার অভির ওপরে খুব রাগ হয়, কিন্তু অভির মেজাজ দেখে কিছু বলে না।

একদিন অভি অরুনাকে বুঝাতে চেষ্টা করে, “দেখ ভাই, আমি অরুনিমার পেছনে পড়ে নেই, চিন্তা করিস না।”

অরুনা ওর দিকে প্রশ্ন ভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুই নিজেকে জিজ্ঞেস করে উত্তর দিচ্ছিস তো?” অরুনার চোখের চাহনি যেন অভিকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিল, “তুই বুকের ওপরে হাত রেখে আমাকে উত্তর দে, আমি বিশ্বাস করে নেব।”

অভি পারেনা বুকে হাত রেখে উত্তর দিতে, তাও অরুনাকে শান্ত করার জন্য বলে, “দেখ আমি পরীকেই ভালবাসি। পরীর প্রতি আমার ভালবাসায় কোন ভাঁটা পড়েনি। আমি শুধু এই খেলার শেষ দেখতে চাই, আমি জানতে চাই ওদের মাথায় কি চলছে।”

অরুনাঃ “কেন তোর জেনে কি হবে?”

অভিঃ “দেখ, আমি আগেই সুব্রত আর মৈথিলীকে জানিয়েছিলাম যে আমি একজনকে ভালবাসি। সেটা জানার পরেও ওরা আমাকে তুলির সাথে দেখা করতে বলে। আমি হলফ করে বলতে পারি যে তুলিও জানে যে আমি একজনকে ভালবাসি। সবকিছু জানার পরেও যে তুলি আমার সাথে খেলে যাচ্ছে তার আমি শেষ দেখবো না? এর পেছনে সুব্রত বা মৈথিলীর হাত আছে, সেটা আমি জানতে চাই।”

অভি খুব চেষ্টা করে মৈথিলীর ব্যাপারে জানার জন্য, কিন্তু চালাক মেয়ে তুলি, ঘুণাক্ষরেও অভিকে ওদের অভিপ্রায় জানায় না। একদিন অভি আর থাকতে না পেরে সোজা তুলিকে চুর্ণির কথা জিজ্ঞেস করে।

অভিঃ “তুলি, তোমাকে যখনি আমি চুর্ণির কথা জিজ্ঞেস করি, তখনি তুমি এড়িয়ে যাও আমার প্রশ্ন। কেন?”

তুলিঃ “তুমি দিদির ব্যাপারে কেন জানতে চাও? ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে।”
অভি একবার ভাবে যে তুলিকে বলে সেই রাতের ঘটনা কিন্তু চেপে যায় অভি।

তুলি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে এক দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার কি দিদিকে খুব পছন্দ হয়েছে।”

একি প্রশ্ন করলো, জোরে মাথা নাড়ায় অভি, “না না না... একদম না।”

তুলি চোখ টিপে বলে, “সত্যি করে বলো, দিদিকে তোমার খুব পছন্দ?”

অভিঃ “এই প্রশ্ন কেন করছো? আমি এমনি চুর্ণির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছি, আর কিছু না। যেদিন তোমাকে তোমার বাড়িতে ছেড়ে এসেছিলাম সেদিন তুমি বলেছিলে যে তুমি আর চুর্ণি খুব ক্লোস রিলেসান শেয়ার করো, তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম।”

তুলিঃ “তাহলে তুমি আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানতে চাও?” চোখ টিপে তুলি উত্তর দিল, “হ্যাঁ আমাদের দুজনে মাঝে খুব কাছের এক সম্পর্ক আছে। আমরা দুজনে সব কিছু ভাগ ভাগ করে নেই।”

চশমার পেছন থেকে অভি ওদের মাঝের সম্পর্কের ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করে।

তুলিঃ “ওইরকম করে কেন দেখছো। বললাম তো চুর্ণি আমার দিদি আর ও আমাকে ওর সব কথা বলে আর আমি ওকে আমার সব কথা বলি। দুজনের মাঝে আমরা কিছুই লুকিয়ে রাখি না।”

অভিঃ “হুম বেশ ভাল কথা, জেঠতুতো খুড়তুতো বোনেদের মধ্যে এই রকম সম্পর্ক খুব কম দেখেছি।”

তুলি এর চেয়ে বেশি আর কিছু জানায় না অভিকে।

অভি সামনে বসা গোলাপের কুঁড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। দৃষ্টি বারে বারে ওর বুকের দিকে চলে যায়, পাতলা হলেও বেশ সুন্দর গঠন তুলির। দেখে মনে হয় যেন, নব্য অঙ্কুরিত এক ধানের শিষ, এখন দলিত হয়নি কারুর ছোঁয়ায়। ঠোঁটে সর্বদা এক মিষ্টি হাসির প্রলেপ লাগানো থাকে, দু’ চোখ যেন অত্যধিক কথা বলে।

চুর্ণিকে দেখতে অনেক আলাদা। চুর্ণির চেহারা অনেক বেশি নধর আর কামনাময়ী। অভি ওর কামুক চিন্তায় চুর্ণিকে নগ্ন করে পরিয়ে দেয় সুব্রতর দেওয়া সেই লাল রঙের বিকিনি। খোলা চোখের সামনে চুর্ণির ছোট্ট লাল বিকিনি পরিহিত আকর্ষণীয় শরীর দেখতে পায়। মাথার মধ্যে যেন কামনার আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। না অভির মনে চুর্ণির প্রতি কোন ভালবাসা নেই আছে শুধু কামনার আগুন, চুর্ণিকে নিংড়ে নেবার প্রচন্ড লিপ্সা।

হটাত তুলি অভিকে জিজ্ঞেস ক্করে, “আচ্ছা একটা কথা আমাকে বলবে?”

অভিঃ “কি কথা।”

তুলিঃ “আমাকে তোমার কেমন মনে হয়?”

অভি ওদের দু বোনের কাউকেই ভালবাসে না, মনের মধ্যে একটা প্রচন্ড ক্ষিদের উদ্রেক হয়, এই দুই কামতাড়িত নারীর যৌবন সুধা পান করার জন্য। মনের ভাব অতি সন্তর্পণে লুকিয়ে নেয় অভি।

চোখে চোখ রেখে মিথ্যে বলে অভি, “হুম মানে হ্যাঁ একটু, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা জানি না।”

ওর কথা শুনে হাসি ফুটে ওঠে তুলির ঠোঁটে, “বর্তমানটার আনন্দে বাঁচো অভি, ভবিষ্যৎ কে দেখেছে।”

ওদিকে অরুনা বুঝতে পারে অভির আর তুলির মাঝের সম্পর্ক। নিজেকে ধিরে ধিরে অভির কাছ থেকে দুরে সরিয়ে নেয় অরুনা। অভিকে দেখে খুব কষ্ট হয় ওর, কিছুতেই কথা শুনছে না অভি। পরী রাতের বেলা স্বপ্নে দেখা দেয় কিন্তু আজকাল সেই স্বপ্ন যেন অনেক দুরের মরিচিকার মতন মনে হয় অভির।

তুলির সাথে দেখা হওয়ার প্রায় দিন বারো কেটে গেছে। এক মঙ্গলবারে তুলি রাতে অভিকে ফোন করে।

তুলিঃ “হ্যালো অভি।”

অভিঃ “হ্যাঁ বলো, কিছু জরুরি আছে নাকি?”

তুলিঃ, “না মানে হ্যাঁ। কাল বিকেলে আমি বাড়িতে একটা ছোট্ট পার্টি দিচ্ছি। তাই আমি চাই যে তুমিও এসো আমার পার্টিতে।”

অভি, “কি খুশিতে পার্টি?”

তুলি, “কিছু না, এমনি এমনি পার্টি। তুমি আমি আর আমার কিছু কাছের লোকজন।”

কেন তুলি একা নয় বাড়িতে, কেন তুলিকে একা পেতে পারেনা, একবার একবার একা পেলে কি করবে অভি। না আর ভাবতে পারে না অভি, ও যেন এক অতল অন্ধকার গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে।

অভিঃ “তুমি একা নিশ্চয় থাকবে না, তাই তো?”

তুলির হাসি কানে আসে, “তুমি কি চাও আমি বাড়িতে একা থাকি?”

অভিঃ “না মানে আমি চাই না, এমনি জিজ্ঞেস করলাম।”

তুলিঃ “তাহলে গুড নাইট, ভালো থেকো। কাল বিকেলে ঠিক পাঁচটায় আমার বাড়িতে। তোমাকে আমি নিরাশ করবো না, তোমার স্বপ্ন পূরণ হবে।”

রাতের খাবার পরে ছাদে একা একা দাঁড়িয়ে থাকে অভি। একমনে আকাশ দেখে, বসন্তের আকাশে মেঘ কিছু কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দূর আকাশের কোলে একটা ছোট্ট নৌকা দেখতে পেল, নৌকাটি একটা ছোট্ট দ্বীপের দিকে বেয়ে আসছে। সেই দ্বীপের তীরে এক মোহময়ী নারী একটা গাছের গুঁড়ির ওপরে বসে খুব সুন্দর বাঁশি বাজাচ্ছে। বাঁশির সুর ওকে যেন এক অদ্ভুত মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছোে। যে নৌকা চালাচ্ছে সে অভির দিকে তাকালো, অভি অবাক হয়ে গেল নিজেকে নৌকায় দেখে। দিগন্তের দিকে তাকালো অভি, আকাশে চাঁদ এবং সূর্য দুটোই পশ্চিম আকাশে দিগন্তের কোলে হারিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুটো খগোল বস্তুর আলো বড় ম্লান, অভির নৌকা যত ওই দ্বীপের কাছে যায়, আলো যেন আরও ম্লান হয়ে আসে।
 
Chapter 7: সর্পকন্যের হাতছানি। (#1)

বাস থেকে নামল অভি, বুকের মাঝে যেন দুমদুম করে কেউ কিল মারছে। তুলির বাড়ির দিকে যত এগোয় ততো যেন ওর হৃদপিন্ড কিল মারে ওর বুকের পাঁজরে। মাথা ঝিনঝিন করে অভির, একটা সিগারেট ধরায়, লম্বা একটানে আগা থেকে অনেকটা জ্বলে ওঠে। বুক ভরে ধোঁয়া নিয়ে কিছুক্ষণ বুকের মধ্যে রেখে ছেড়ে দেয়। মাথার ঝিম ভাব যেন একটু কম মনে হয়। সূর্য অনেক আগে পশ্চিমে ঢলে গেছে। রাস্তার আলো একে একে করে জ্বলে উঠছে। রাস্তায় ধিরে ধিরে লোকের ভিড় বাড়ছে, কারুর বাড়ি ফিরে যাবার তাড়া, কারুর বিকেলের বেড়ানোর পালা, কেউ দোকানে যাচ্ছে। কল্লোলিনী কোলকাতা নিজের মহিমায় রুপের ছটা বিচ্ছুরন করছে।

কলিং বেল বাজাতেই তুলি এসে দরজা খুললো। তুলিকে সামনে দেখে অভি থ। গাড় বাদামি রঙের ঠোঁটে এক অনির্বচনীয় কামনার হাসি। আজ যেন ওকে আগের থেকে বেশি সুন্দরী আর লাস্যময়ী দেখাচ্ছে। পরনের পোশাক ওর ফুটন্ত শরীরকে ঢেকে রাখার চেয়ে যেন বেশি করে উন্মুক্ত করে তুলে ধরেছে। পরনে একটা ছোটো নীল রঙের স্কার্ট, জানুর মাঝে এসে ফুরিয়ে গেছে। পায়ের গোড়ালি থেকে দৃষ্টি উঠতে শুরু করলো অভির, বাঁকা পায়ের গুলি যেন চকচক করছে, তারপরে মসৃণ পেলব জানু স্কার্টের নিচে ঢুকে পড়েছে। নাভির অনেক নিচে বাঁধা স্কার্টের বেল্ট, পেটের পাশে একটু মেদের মতন ফুলে উঠেছে, আর তার জন্য নাভির চারপাশের গোল পেট যেন একদলা মাখনের মতন দেখাচ্ছে। নিতম্ব বেশ পুরুষ্টু কিন্তু একটু ছোটো, বয়সের সাথে সাথে বেড়ে উঠবে। ঊর্ধ্বাঙ্গে হাতকাটা বুকে আঁটা সাদা রঙের গেঞ্জি, নরম বুকের সাথে লেপ্টে আছে আর সুগোল বক্ষ দুটিকে যা ফুলয়ে দিয়েছে; দুই বক্ষ যেন ছোটো দুই শৃঙ্গ এবং তার ওপরের নুড়ি পাথরের মতন অঙ্গটি বেশ ভালো ভাবে বোঝা যাচ্ছে। মানস চক্ষে অভি দেখতে পায় যে ওর ঊর্ধ্বাঙ্গে ওই গেঞ্জির নিচে কোন অন্তর্বাস নেই। চাপা গেঞ্জি ওর বুকের সাথে এঁটে বসার দরুন বক্ষ বিভাজন যেন ঠিকরে সামনের দিকে বেরিয়ে পড়েছে। তুলির গায়ের মাদকতাময় ঘ্রান অভিকে মাতাল করে তুলেছে।

তুলি এই মোহময়ী রুপ দেখে অভির ভেতরের সিংহ পুরুষটি মাথা চাগিয়ে উঠল। এক হাত কোমরে আর এক হাতে একটা গ্লাস নিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে তুলি, ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

তুলিঃ “ওইরকম ভাবে আমাকে কি দেখছো? ভেতরে আসবে না আমাকে এখানে দাঁড়িয়েই গিলবে?”

তুলির গলার আওয়াজ পেয়ে অভি যেন জেগে উঠল, এতক্ষণ কি ও স্বপ্ন দেখছিল? না ওই তো তুলি ওর সামনে, কোমর দুলিয়ে চালে এক ছন্দ তুলে হেঁটে চলেছে। হাঁটার তালে তালে, স্কার্টটা ফুলে ফুলে উঠছে আর কোমল নিতম্বের ওপরে দুলছে। অভির বুকের ভেতর টনটন করে উঠল ওই দৃশ্য দেখে, থাকতে পারছে না অভি, মনে হলো এই যেন তুলিকে জড়িয়ে ধরে দু’হাতে, নিংড়ে নেয় ওর কোমল অধরা যৌবন আর পিষে ফেলে নিজের নিচে। খাবলে, পিষে, নিংড়ে, চুষে একাকার করে দেয় ওর কোমল শরীরটাকে। স্কার্ট বার বার নিতম্বের ওপরে দুলছে, অভির একবার মনে হলো যেন দুই নিতম্ব দুই হাতের থাবায় নিয়ে টিপে দেয়। গলার কাছে যেন কামলিপ্সা দলা পাকিয়ে উঠল অভির।

অভি কি করছে, রম্ভার বাঁশির তালে তালে এক কালো অন্ধকার গুহার মধ্যে প্রবেশ করছে। মোহাবিষ্ট অভির মাথায় কি ঠিক কি ভুল কিছুই বোঝার ক্ষমতা থাকে না।

বসার ঘরে ঢুকে তুলি ওকে সোফার ওপরে বসতে বলে, হটাত করে ওর দিকে ঘুরে তাকায় তুলি আর হাত নিয়ে যায় অভির বুকের ওপরে। অন্য হাতে যে গ্লাস থাকে তাঁর পানীয় ছলকে ওঠে আর অভির জামা ভিজিয়ে দেয়।

তুলি আঁতকে ওঠে, “ইস আমি বড় দুঃখিত। উফ একি হয়ে গেল। দাঁড়াও দাঁড়াও, তুমি শার্ট খুলে দাও আমি ধুয়ে আয়রন করে দিচ্ছি তোমার শার্ট।”

অভি ওর বাঁশির তালে তালে দুলছে। বসার ঘরের চারদিকে চোখ বুলিয়ে নেয় অভি, পন্ডিত শিব কুমার শর্মার সন্তুর বাজছে। ঘরের মধ্যে নীলাভ আলো জ্বলছে। গলা শুকিয়ে গেছে অভির, তুলির মোহময় মাধুর্য দেখে।
ঠোঁট লালায় ভিজিয়ে তুলিকে জিজ্ঞেস করলো অভি, “তুমি তো বলেছিলে যে তুমি একা নও, কিন্তু কাউকে তো দেখছি না। আমার সাথে কি খেলা খেলছো তুমি?”

তুলি ওর দিকে জিব বের করে এক মাদকতাময় হাসি দিয়ে উত্তর দেয়, “তুমি ভীতু নও নিশ্চয়ই, তাই না অভিমন্যু। আমি তোমাকে বলেছিলাম যে আমি একা থাকব না, সুতরাং আমাকে ভয় কিসে, সাথে কেউ আছে চিন্তা নেই। জামা খুলে সোফায় বসো, অভিমন্যু।”

জামা খুলে তুলির হাতে ধরিয়ে দিল অভি। তুলির কামতাড়িত দৃষ্টি যেন অভির বুকের পরে আগুনের ছেঁকা দিয়ে দিল। অভির ঊর্ধ্বাঙ্গে শুধু হাতকাটা গেঞ্জি। সোফায় হেলান দিয়ে বসে পড়লো অভি। শার্টটা হাতে নিয়ে ধিরে ধিরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল তুলি। বেরিয়ে যাবার আগে, ওর দিকে ফিরে তাকালো তুলি, তর্জনী ঠোঁটের কাছে এনে একটা ছোট্ট চুমু ছুঁড়ে দিল অভির দিকে। চোখের ভাষা যেন ওকে পুড়িয়ে দিচ্ছে বাসনার আগুনে।

তুলিঃ “চমকের জন্য তৈরি থাকো অভিমন্যু।”

অভি ঘরের চারদিকে চোখ বুলায়। বসার ঘরখানি বেশ সাজানো গুছানো, দেওয়ালে বেশ কয়েকটা পেন্টিং ঝুলছে, এক দিকের দেওয়ালে একটা বিশাল কাঁচের আলমারি, তাঁর মধ্যে বই থাকে থাকে সাজানো। বেশ কিছু কাপ প্লেট সাজানো, বসার ঘরের একদিকে খাবার ঘর, খাবারের টেবিলের ওপরে একটা ফলের ঝুড়ি রাখা, তাঁর মধ্যে বেশ কিছু ফল রাখা। অভি বসে আছে লম্বা সোফার এক দিকে, দুদিকে ছোটো সোফা রাখা। সোফার সামনে একটা ছোটো কাঁচের টেবিল। কাঁচের টেবিলের নিচে কারপেট পাতা। অভি যেখানে বসে আছে তার ঠিক সামনে একটা ঘর, ঘরের দরজায় একটা পর্দা ঝুলছে, মৃদু মন্দ বাতাসে সেই পর্দা দুলছে। মনে হয় তুলির ঘর ওটা।

মাথা ঘুরিয়ে অন্য দিকে দেখলো অভি, ঠিক যেখানে বসে আছে তাঁর পেছনে আর একটা ঘর। সেই ঘরের দরজায় একটা পর্দা ঝুলছে। বাকি ঘরে আলো জ্বলছে না কিন্তু পেছনের ঘরের ভেতর থেকে এক ধিমে আলোর আভাস আসছে। সামনের টেবিলে, তিনটে গ্লাস আর এক বোতল ভদকা। পাশে একটা কাঁচের বাটিতে কাজু, কিসমিস, খেজুর আখরোট রাখা। পাশে একটা ছোটো থালায় আদা আর লেবু, তাঁর সাথে স্যালাড সাজানো।

অভি চুপ করে একের পর এক ঘটনাবলি অনুধাবন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু পরে আরেকটা সিগারেট ধরালো অভি, বুক ভরে একটান দিল সিগারেটে, যতটা ধোঁয়া এক বারে নেওয়া যায় ফুসফুসের মধ্যে সব নিয়ে নিল। ধোঁয়া ছাড়তেই দেখতে পেল যে তুলি ওর দিকে ধিরে ধিরে হেঁটে আসছে।

অভি হাতের মুঠি করে মুখের সামনে নিয়ে এক শয়তানি হাসি হাসলো। তুলির চোখেও দুষ্টুমির হসি যেন ওকে তারিয়ে বেড়াচ্ছে।

অভি তুলিকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি বাড়িতে একা, তাই তো। বাড়িতে আর কেউ আছে বলে আমার মনে হয় না। তোমার বাবা মা কোথায়, অরুনাভ কোথায়?”

তুলি কিছু না বলে অভির সামনে কাঁচের টেবিলের ওপরে বসে পড়ে। পাদুটি জড়ো করে অভির পায়ের ফাঁকে ঠেলে দেয়। অভির পুরুষ সিংহ মাথা চাগিয়ে টনটন করে ওঠে, নাভির কাছে চিনচিন করে ওঠে। তুলির স্কার্ট আরও উপরে উঠে গেছে, জানুর অধিকাংশ অভির চোখের সামনে মেলে ধরা। দুই পেলব জানু একত্রিত। সামনে ঝুঁকে তুলি অভির জানুর ওপরে হাত রাখে। তুলির তন্বী শরীরের থেকে যেন কামনার আগুনের হল্কা নির্গত হয়, অভি টের পায় সেই আগুনের তাপ। অভির ঠিক চিবুকের নিচে তুলির অনাবৃত বক্ষ বিভাজন, অভি চোখ সরাতে পারছে না ওই নরম বলয়ের ওপর থেকে।

তুলি ফিসফিস করে অভির ঠোঁটের ওপরে উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে উত্তর দেয়, “বাবা মা মামার বাড়ি গেছে, আজ রাতে কেউ বাড়ি ফিরবে না।”

তুলি অভির জানুর ওপরে হাত বুলাতে শু্রু করে, হাঁটু থেকে জানুর মাঝখান অবধি। অভির নাভির তলদেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, সারা শরীরে কেউ যেন জ্বলন্ত লাভা ঢেলে দিয়েছে।

অভির কি করা উচিত, ঠোঁটের সামনে যে মদিরা মাখা ঠোঁট মেলে রয়েছে, সেখানে কি চুমু দেবে অভি, না নিজেকে সংবরণ করে খেলার পরিণতি দেখবে। অভি শেষ পর্যন্ত নিজেকে সামলে নিল, ওই গাড় বাদামি রসভরা ঠোঁটে চুমু দিল না।

হটাত করে তুলি ওর ডান হাতের পাঁচ আঙুল মেলে ধরলো অভির মুখের ওপরে আর ধিরে ধিরে আঙুল বুলিয়ে দিল সারা চেহারায়। কোমল আঙুলের স্পর্শে অভির শিরায় উপশিরায় কামাগ্নির দাবানল দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। অভির সিংহ যেন মাথা ফুঁড়ে বন্ধনের ভেতর থেকে প্রবল ভাবে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।

তুলি মধু ঢালা স্বরে বলে, “এক বার বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো।”

নিজের অজান্তেই অভি বুক চিৎকার করে উঠল, “হ্যাঁ তুলি হ্যাঁ, সত্যি তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে।” কিন্তু কই, অভির ঠোঁটতো নড়লো না, গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হলো না। অভি হতবাক হয়ে সোফায় বসে রইল, গলা যে ওর শুকিয়ে গেছে, কথা বলার ক্ষমতাটুকু হারিয়ে ফেলেছে।

তুলিঃ “কি চাও তুমি আমার কাছ থেকে? একটা ড্রিঙ্ক বানিয়ে দেব কি?”

স্থানুর মতন মাথা নাড়লো অভি, হ্যাঁ, ওর গলা শুকিয়ে কাঠ, গলায় পানীয় ঢালতেই হবে। কান মাথা কামের তাড়নায় উত্তপ্ত। প্যান্টের সামনের দিক ফুলে উঠেছে, পরিষ্কার ভাবে সিংহের অবয়ব পরিস্ফুটিত হয়ে উঠেছে।

তুলি কাঁচের টেবিল থেকে উঠে পড়ে কারপেটের ওপরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। অভি দুহাত মুঠো করে সামনে ঝুঁকে, মাথা হাতের ওপর দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে। ভাবতে থাকে যে ও কেন নিজেকে এত টেনে ধরে রেখেছোে, ওর সামনে উন্মুক্ত মদিরার পেয়ালা তাও অভি কেন সেই সুরা পান করছে না, কে ওকে সেই সুরা পান করতে বিরত করছে। বন্ধ চোখের সামনে অভির কামুক মন ধিরে ধিরে তুলিকে নগ্ন করলো আর সুধা পান করলো।

অভি এই খেয়ালে ডুবে, এমন সময়ে এক অতি পরিচিত সুরেলা আওয়াজ কানে এলো, “হাই, কেমন আছো?”

ধিরে ধিরে মাথা তুললো অভি, এই আওয়াজ চেনা কিন্তু কার? তুলির নয় বা পরীর নয়।

সামনের দরজার দিকে চোখ গেল অভির। দরাজায় অভির জন্য আরও কিছু চমক প্রতীক্ষা করছিল। হাঁ করে তাকিয়ে থাকে অভি, চোখের সামনে চুর্ণির নধর কামোত্তেজক শরীর। পরনে একটা হাফ হাতা সাদা শার্ট, সামনের অধিকাংশ বোতাম খোলা, গায়ে আর কিছু নেই।

হতবাক অভি হাত মুঠি করে কামড়ে ধরে, স্বপ্নেও ভাবেনি যে চুর্ণি এখানে থাকতে পারে। ধিরে ধিরে ও পুরো মতলবটা বুঝতে পারলো। এই দুই কামনাতাড়িত নারী, ওকে ওদের রুপের জালে জড়িয়ে নিয়েছে। ওদের বাজানো বাঁশির তালে অভির পা পড়ছে। অভি যেন নিরুপায় স্থানুর মতন বসে হাঁ করে চুর্ণির দিকে তাকিয়ে।

চুর্ণির পরনে শার্ট খানা জানুর খাঁজ পর্যন্ত এসে নেমেছে। কোমরের থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সম্পূর্ণ অনাবৃত, পেছনে সুডৌল নিতম্ব সম্পূর্ণ অনাবৃত। লাস্যময়ী রুপে দাঁড়িয়ে চুর্ণি, একপায়ে পুরো ভর দিয়ে আরেক পা একটু আগে বাড়িয়ে। ডান হাত মাথার ওপরে তোলা, দরজার কাঠ ধরে নিজেকে হেলান দিয়ে রেখেছোে, আর বাঁ হাত ভাঁজ করে কোমরে রাখা। মাথার চুল খোলা, বাঁ কাঁধের ওপর দিয়ে সামনে এসে নরম বুকের ওপরে দোল খাচ্ছে। উন্নত বুক দুটি জামার ভেতরে যেন মারামারি করছে, নিজেদের ওই বস্ত্রের বাঁধন থেকে ছাড়ানোর জন্য। পীনোন্নত বুকজোড়া অর্ধ অনাবৃত, বক্ষ বিভাজনের মসৃন ত্বকের ওপরে ঘরের আলো পেছল খেয়ে পড়ছে যেন। জামার ভেতর থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসা উন্নত বুকের ওপরে কোন অন্তর্বাস নেই, বুকের ওপরে দুটি নুড়ি পাথর যেন জামা ফুঁড়ে ওর দিকে তাকিয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। অভির দৃষ্টি নেমে আসে সরু কটিদেশে, তাঁর পরে ফুলে ওঠা নিতম্বদেশ। সবকিছু যেন ওর হাতের তালুর মতন মেলে ধরা ওর চোখের সামনে। অভির শরীরে বারংবার তড়িত প্রবাহ বয়ে চলে। কামুকতার চরম দাবানলে ঝলসানো চুর্ণি এক জানুর সাথে আরেক জানু মৃদু মৃদু ঘষে দেয়। ঘর্ষণের ফলে জামা আরও কিছু ওপরে উঠে আসে জানুসন্ধির কাছে। অভির কামুক চোখ যেন দেখতে চেষ্টা করে যে চুর্ণি নিচে কোন অন্তর্বাস পরেছে কিনা।

দু’চোখ ছোটো করে চুর্ণি অভির দিকে তাকায়, অভির ক্ষুধার্ত দৃষ্টি চুর্ণির প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি রোঁয়া যেন খুবলে নিতে চায়।

তুলি গ্লাসে ভদকা ঢালা থামিয়ে অভির দিকে হেসে জিজ্ঞেস করে, “চমক কেমন লাগলো হানি?”

অভি নিজেকে সামলানোর জন্য হাতের মুঠি কামড়ে ধরলো। খুব ধিরে ধিরে মত্ত চালে চুর্ণি অভির দিকে এগিয়ে এলো, যেন একটা সারস পাখি অতি সন্তর্পণে মাছের দিকে হেঁটে এগোচ্ছে। জামার নিচের অংশ জানুসন্ধির কাছে দোল খায়, চলার তালে তালে সুডৌল নিতম্ব কেঁপে ওঠে। জামার নিচের ছায়া, চুর্ণির পরনের লাল অন্তর্বাস আর ঢেকে রাখতে পারেনা। অভির কাছে এসে, অভির পাশের ছোটো সোফার ওপরে বসে পড়ে চুর্ণি।

অভি তাকায় চুর্ণির মুখের দিকে, ঠোঁটে চোখে যেন মদিরা ঢালা হাসি মাখা। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে চেহারা মাদকতা যেন কয়েক গুন বাড়িয়ে দেয়।

“এটা কি হতে চলেছে?” চুর্ণির মুখের দিকে তাকায় অভি।

পাশে বসে চুর্ণি, এক জানুর ওপরে আরেক জানু উঠিয়ে দেয়। অভি হাঁ করে মসৃণ পেলব জানু দেখে, মসৃণ ত্বক যেন অদ্ভুত আলোর ছটা বিচ্ছুরিত করছে। দুই জানুর সন্ধিক্ষণের ফুলে ওঠা অংশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। দুই নরম নিতম্ব যেন অভির হাতের পেষণের অপেক্ষা করছে আর কাতর আহ্বান জানাচ্ছে অভিকে, ওই কোমল নিতম্ব নিয়ে খেলা করতে। ঘন অন্ধকারময় নিতম্বের বিভাজনে চুর্ণির লাল অন্তর্বাস হারিয়ে গেছে, আর ফুলে ওঠা কোমল নারী সুধার দোরগোড়ায় ত্রিকোণ কাপড় ভাঁজে ভাঁজে জড়িয়ে গেছে।
 
Chapter 7: সর্পকন্যের হাতছানি। (#2)

অভির দৃষ্টি চুর্ণির বুকের দিকে গেল, যেখানে অভি বসে সেখান থেকে চুর্ণির উন্নত বুকের একদিক পুরো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। পীনোন্নত শৃঙ্গের ওপরে হাল্কা বাদামি রঙের বলয়ের মাঝের গাড় বাদামি রঙের নুড়ি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। উত্তপ্ত সেই নুড়ি ফুটে উঠেছে ফুলের কুঁড়ির মতন জামা ভেদ করে। অভির লালসা পূর্ণ দৃষ্টি চুর্ণির প্রতি অঙ্গে লিপ্সার তরল আগুন মাখিয়ে দিচ্ছে যেন।

এক জানুর ওপরে কনুইয়ে ভর দিয়ে থুতনি রাখে চুর্ণি, আরেক হাত হাঁটুর কাছে এনে গোল গোল করে হাঁটুর ওপরে হাত বোলায়। জানুর ফর্সা ত্বকের নিচে, হাল্কা নীল শিরা দেখা যাচ্ছে। অভির দিকে লালসা মাখানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিব বের করে ওপরের ঠোঁটে বুলিয়ে নিল চুর্ণি। বাঁ কাঁধের ওপরে দিয়ে যে চুলের গুচ্ছ সামনে এসে পড়েছে, সেটা একটু দুলে উঠলো আর নগ্ন ত্বকের ওপরে আদর করে দিল।

অভি এমন ভাবে তাকিয়ে ছিল চুর্ণির দিকে যে ও ভুলে গেছে যে তুলিও ওই ঘরের মধ্যে উপস্থিত।

চুর্ণি ওর দিকে লিপ্সা মাখানো চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “আমাকে দেখে কি অবাক হয়ে গেছো, মিস্টার অভিমন্যু তালুকদার?”

শয়তানি হাসি হেসে অভি উত্তর দেয়, “তা সত্যি চুর্ণি, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে তুমি এখানে থাকতে পারো।”

চুর্ণিঃ “তোমার ওই লিপ্সা মাখানো দৃষ্টি আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিচ্ছে যে। তুমি কি আমাকে তোমার চোখ দিয়েই পুড়িয়ে ছাই করে দেবে, হানি?”

কিছু শক্তি সঞ্চয় করে অভি উত্তর দেয়, “এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না চুর্ণি।”

চুর্ণিঃ “কি ঠিক হচ্ছে না অভি? তুমি আমাকে সেদিন থেকে অবশ করেছো যেদিন থেকে তুমি আমার রুপের মোহে পড়েছো। সেই প্রথম রাতে তুমি আমার সামনে হাঁটু গেড়ে গেয়ে উঠলে, আমি তোমার আচরনে কেঁপে উঠেছিলাম। তোমার ওই দুই বলিষ্ঠ বাহুর মাঝে নিজেকে হারিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। সত্যি কথা বলো আমাকে, তুমি কি এক বারের জন্যও চাওনি আমাকে তোমার আলিঙ্গনে নিতে, একবারের জন্য মনে করোনি আমাকে জড়িয়ে ধরতে?”

উফফ একি ভ্রান্তি, অভি যে ওই গান ওই আচরন প্রান প্রেয়সী পরীর জন্য গেয়েছিল।

গলা খাঁকরে অভি বলে, “না চুর্ণি ওই গান আমি তোমার জন্য গাইনি।”

চুর্ণিঃ “মিথ্যে কথা বোলোনা অভিমন্যু। আমি সে রাতে তোমার চোখে প্রেমের আগুন দেখেছিলাম, আর সেই প্রেমের আগুন অন্তত শুচিস্মিতার জন্য তো হতে পারেনা কখনো।”

অভি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, যাক তাহলে চুর্ণি ওর আর পরীর সম্পর্কের বিষয়ে কিছুই সন্দেহ করেনি।

চুর্ণি তুলির দিকে তাকিয়ে দেখলো যে ওর ছোটো বোন ওর প্রলুব্ধকর খেলা দেখছে এক মন দিয়ে।

চুর্ণি অভিকে জিজ্ঞেস করলো, “আমার এক গ্লাস চাই, তোমার ড্রিঙ্ক করতে তো কোন বাধা নেই, তাই তো?”

অভি সোফার ওপরে হেলান দিয়ে সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসে পড়লো। ওর বসার ভঙ্গিমায় পুরুষ সিংহের অবয়ব কাপড়ের নিচ থেকে ফুলে উঠল সবার চোখের সামনে। শরীরের দুপাশে হাত মেলে ধরে সোফার মাথার দিকে ছড়িয়ে দিল অভি। চুর্ণির আর তুলির চোখ অভির পুরুষালি বুকের ছাতি আর বলিষ্ঠ বাহুর ওপরে বিঁধে গেল। অভি তখন খালি গেঞ্জি পরে।

চুর্ণিঃ “আমার বোনকে ভাল লাগে তোমার?”

অভি গম্ভির স্বরে উত্তর দেয়, “না, ভাল লাগে না।”

চুর্ণিঃ “মিথ্যে কথা বোলোনা অভিমন্যু। তোমার চোখ পরিষ্কার বলছে যে তোমার আমাদের দুজনকেই একসাথে চাই।”

অভিঃ “না তুমি যা ভাবছো সেটা ভুল ভাবছো।”

চুর্ণি ওর দিকে একটা গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বললো, “এক ঢোঁক গলায় ঢালো অভিমন্যু। পেষা আদা, একটু লেবুর রস, কিছুটা সোডা আর ভদকা। তোমার মনের কথা এখুনি তোমার ঠোঁটে চলে আসবে।”

গ্লাস ধরিয়ে দেবার সময়ে যেন একটু বেশি সময়ের জন্য চুর্ণির আঙুল অভির হাতের ওপরে থেকে গেল। কোমল আঙুলের স্পর্শ অভিকে যেন আরও মত্ত করে তুললো।

অভি গ্লাসের দিকে তাকিয়ে চুর্ণিকে প্রশ্ন করলো, “রানাঘাটের এক মেয়ে, কি করে এত সুন্দর ড্রিঙ্ক বানাতে শিখলো?”

চুর্ণি এক গ্লাস ভদকা নিয়ে, লাল ঠোঁটের নিচে গ্লাসের গোল অংশে ঠোঁট বুলিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “তুমি ভুলে যাচ্ছো অভিমন্যু, আমি কলেজের পড়াশুনা কাকুর বাড়ি থেকে করেছি। আমার ফুটন্ত যৌবনের পাঁচ বছর আমি কোলকাতায় ছিলাম। আমি হোটেল হিন্দুস্তানের ডিস্কোথেকে গেছি।”

বিস্ময়ে হতবাক হয়ে অভি মাথা নাড়লো, একটা মেয়ে কত আকর্ষণীয় হতে পারে আর এখন সে যেন এক সুন্দরী বিষাক্ত সর্পকন্যে।

তুলি হাতে একটা গ্লাস নিয়ে দিদির পাশে সোফার হাতলের ওপরে গিয়ে বসেছে। চুর্ণির হাত ওর পেলব জানুর ওপরে, স্কার্ট উঠে গেছে জানুসন্ধির কাছে, দুই জানুর মাঝের অঙ্গ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। পরনের আঁটো কাঁচুলি তুলির বুক ঢেকে রাখতে পারছেনা।

চোখের সামনে দুই নারীর লাস্যময়ী রুপ যেন অভিকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। ওরা যেন ক্ষুধার্ত অভির জন্য অপেক্ষা করছে, কখন ওই শয়তান হায়না ওদের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওদের যৌবন সুধা নিংড়ে নেবে।

চুর্ণির দৃষ্টি অভির ফুলে ওঠা সিংহের ওপরে নিবদ্ধ, জিব বের করে নিচের ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে নিল চুর্ণি।

চুর্ণিঃ “তুমি তোমার মনের ভাব আমাদের কাছ থেকে লুকাতে পারবে না অভিমন্যু।”

অভি গ্লাসের সব পানীয়টুকু গলায় ঢেলে দিয়ে মাথার চুলের মধ্যে আঙুল দিয়ে আঁচড়ে নিল। অভি দৃষ্টি চুর্ণির জানুর ওপরে, মৃদু মৃদু জানু ঘষছে চুর্ণি, আর ঘর্ষণের ফলে ফর্সা ত্বক উত্তপ্ত হয়ে লালচে রঙ ধরেছে।

চুর্ণি ওর দিকে চোখ টিপে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি দেখতে চাইছো যে আমি নিচে কি পরেছি?” অভি হেসে ফেলে যেন ধরা পড়ে গেছে। চুর্ণি মৃদু মাথা নাড়িয়ে বলে, “ঠিক ধরেছো অভিমন্যু। আমি সেই লাল ছোটো বিকিনি পরে আছি যেটা আমাকে সুব্রত গোয়াতে কিনে দিয়েছিল। তোমার ভাসাভাসা চোখের চাহনি আমাকে অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছিল যে তুমি চাও আমি ওই লাল বিকিনি পরে তোমার সামনে আসি।” অভি সোফার অন্যদিকে দেখলো, সেখানে ওর কলেজের ব্যাগ পড়ে আছে। চুর্ণি থামলো না, “অন্য দিকে দেখে কি হবে অভিমন্যু। তুমি যদি ফুলের কুঁড়ির মধু খেতে চাও তাহলে তোমাকে এই গোলাপের রসও পান করতে হবে।”

চুর্ণির হাত তুলির জানুর মাঝে চলে গেছে, অল্প অল্প চাপ দিয়ে আদর করছে তুলির জানুর মাঝের অঙ্গ। থেকে থেকে কেঁপে উঠছে তুলি। তুলি ঝুঁকে পড়ে চুর্ণির মুখখানি তুলে ধরে অভির চোখের সামনে চুর্ণির ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে। দুজনা কিছুক্ষণ নিজেদের ঠোঁট আর জিব নিয়ে খেলা করে। তুলির চুর্ণির জামার ভেতরে ডান হাত ঢুকিয়ে দিয়ে কোমল বুক চেপে ধরে, আর অল্প অল্প চাপ দিয়ে চুর্ণিকে অস্থির করে তোলে। তুলির হাতের তালুর সুখের স্পর্শে চুর্ণির বুক কাঁপতে থাকে। অভি দেখতে পায় যে তুলি ওর বুকের ওপরে নুড়ি পাথর দুই আঙুলের মাঝে নিয়ে গোল গোল ঘুরিয়ে দেয়, চুর্ণি আর থাকতে না পেরে তুলির জানু মাঝে হাত জোরে চেপে ধরে।

সেই দৃশ্য দেখে অভির কান লাল হয়ে যায়, হাত পা শক্ত হয়ে আসে, অভি চিৎকার করে, “স্টপ দ্যাট নাও।”

চুর্ণি চুম্বনটিকে ভেঙে দিয়ে ফোঁস করে ওঠে অভির দিকে, “কেন? তুমি কি ভীতু যে আমাদের দিকে হাত না বাড়িয়ে বসে আছো?”

তুলির হাত নিজের বুকের ওপরে। দুই হাতে নিজের কোমল বুক নিয়ে খেলা করতে শুরু করে দিয়েছে তুলি। আধবোজা চোখ দিয়ে যেন তরল আগুন ঝরে পড়ছে। অল্প অল্প চাপ দিয়ে গোল গোল করে বুকের ওপরে হাত বোলাচ্ছে তুলি, মাঝে মাঝে কাপড়ের ওপর দিয়েই ফুটে ওঠা উত্তপ্ত নুড়ি আঙুলে নিয়ে ঘুরিয়ে চাপ দিচ্ছে। আধা খোলা ঠোঁট থেকে মৃদু শীৎকার নির্গত হচ্ছে।

আস্তে আস্তে চুর্ণি সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, অভির সামনে দুলকি চালে হেঁটে আসে। অভির ছড়ানো পায়ের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ে। ওর লালসা মাখানো চোখ যেন চুর্ণির শরীর ঝলসে দিতে চায়। পরনের শার্ট আর চুর্ণির অন্তর্বাস লুকিয়ে রাখতে পারে না। লাল সেই ত্রিকোনা পাতলা অন্তর্বাস, চুর্ণির নারী গহ্বরের দোরগোড়ায় আঠার মতন লেপটে। অভির নাকে চুর্ণির গা থেকে বের হওয়া এক তীব্র মাদকতাময় গন্ধ ভেসে আসে। ওর চোখের সামনে উন্মুক্ত চুর্ণির গোল নরম পেট। চুর্ণি সোজা অভির চোখের দিকে তাকায়, অভির চোখ চুর্ণির লাল অন্তর্বাসের ওপরে নিবদ্ধ। দুই জানু এতই পুরুষ্টু আর মাংসল যে জানুসন্ধির মাঝে যেন এক দানা সরষে যাবার জায়গা নেই।

একটানে চুর্ণি গা থেকে জামা খুলে ফেলে, সারা গায়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম। লালসার লেলিহান শিখা ওকে অনেক আগেই উত্তপ্ত করে দিয়েছে, এখন শুধু তৃষ্ণা নিবারনের অপেক্ষায়। পেলব নধর শরীরে সম্পূর্ণ নগ্ন, শুধু মাত্র ছোটো লাল অন্তর্বাস চুর্ণির নারীত্বের দোরগোড়ায় অতি কষ্টে লেপটে আছে। মাথা তুলে তাকালো অভি, বুকের দুই নরম শৃঙ্গের দিকে, তুলতুলে সেই উদ্ধত শৃঙ্গ যেন লিপ্সার হাতছানি দিয়ে অভির দুই হাতকে ডাকছে। গাড় বাদামি রঙের বোঁটা যেন দুটি রসালো আঙুর ফল। বোঁটার চারদিকে হাল্কা গোলাপি বৃত্ত আর অতি ক্ষুদ্র রোম লক্ষ্য করলো। লম্বা লম্বা শ্বাস নেওয়ার ফলে ঢেউ খেলে যায় উদ্ধত বক্ষ যুগলের ওপরে দিয়ে। অতি পাতলা হাল্কা লাল এবং নীল রঙের শিরা বোঁটার চারদিকের বৃত্তের থেকে বেরিয়ে বুকের গোলাকারের নিচ পর্যন্ত চলে এসেছে। নরম ত্বক যেন মাখনের মতন।

অভি দৃষ্টি থেমে থাকেনা, নেমে আসে চুর্ণির তুলতুলে নরম পেটের ওপরে। গোল পেটের মাঝে সুগভীর নাভিদেশ মনে হয় যেন এক সুন্দর মসৃণ মালভূমির মাঝে এক গভীর কুয়ো। অভির কামুক দৃষ্টি লক্ষ করলো যে নাভির নিচ থেকে অতি ক্ষুদ্র রোমের এক অতি ক্ষুদ্র রেখা নেমে গেছে তলপেটের দিকে, হারিয়ে গেছে ঠিক অন্তর্বাসের কাছে এসে। তলপেট একটুখানি মাংসল, উত্তেজনায় কাঁপছে তলপেট আর সেই কাঁপুনির ফলে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র রোমগুলি দুলছে।

অভির দৃষ্টি নেমে আসে জানুমাঝের নারী অঙ্গের ওপরে, লাল ত্রিকোণ কাপড়ে ঢাকা চুর্ণির সুখের গহবর। লাল ত্রিকোণ কাপড় আঠার মতন লেপটে নারী অঙ্গে, কোমরের দুপাশে দড়ি দিয়ে বাঁধা, একটু উঁচু করে বাঁধার ফলে, পাতলা কাপড় দুই পাপড়ির আর গহ্বরের রুপরেখা মেলে ধরেছে। নিচের সেই পাপড়ি দুটি বেশ ফোলা ফোলা আর পাপড়ির চেরায় কাপড় একটু ঢুকে গেছে, চোখের সামনে চুর্ণির গহ্বরের ছবি দেখে অভি যেন আর থাকতে পারেনা।

সেই গভীর নারী অঙ্গ থেকে এক মাদকতাময় ঘ্রান অভির নাকে এসে লাগে। অভি দেখতে পায় যে লাল ছোটো ত্রিকোণ কাপড়টি নারীগুহার রসে ভিজে লাল রঙটাকে একটু গাড় করে তুলেছে। কাপড়টি এত ছোটো যে অভির বুঝতে অসুবিধে হলোনা যে ওর নারী অঙ্গের চারপাশ একদম কামা্নো, মসৃণ।

চুর্ণি অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁ হাত নারীগুহার ওপরে নিয়ে আসে। মধ্যমা আর তর্জনী দিয়ে সিক্ত পাপড়ির মাঝে চেপে ধরে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত বুলিয়ে দেয়। আলতো চাপের ফলে পাতলা কাপড় পাপড়ির মাঝে হারিয়ে যায় আর গোলাপি সিক্ত পাপড়ি দুটি বেরিয়ে পড়ে অভির কামার্ত দৃষ্টির সামনে।

অভির সারা শরীরে কামনার আগুন, উত্তেজনায় অভি শক্ত হয়ে সোফার ওপরে বসে। কেন জানে না অভি নিজেকে এখনো পর্যন্ত ধরে রেখেছোে, হাত বাড়িয়ে একবারের জন্য ছুঁতে চেষ্টা করেনি চুর্ণির কামতাড়িত পেলব শরীরটিকে।

মৃদু ঘর্ষনের ফলে, রসের গতি যেন বেড়ে যায় চুর্ণির গুহাতে। আঙুল ভিজে ওঠে আর দুই পাপড়ি চকচক করে রসে। ঠোঁটের কাছে দু আঙুল এনে চুষে নেয় নিজের কামরস।

লালসা মাখানো মৃদুকন্ঠে বলে চুর্ণি, “উম্মম্মম্মম আমার রসের স্বাদ কি মিষ্টি, উম্মম আমি যেন পাগল হয়ে যাচ্ছি অভি।”

চুর্ণি অভির মেলে ধরা পায়ের ফাঁকে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। হাতের তালু অভির জানুর ওপরে ভর করে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। জিন্সের ওপর দিয়ে জানুর ওপরে নিজের কোমল উদ্ধত বুক চেপে ধরে চুর্ণি। উত্তেজনায় অভির পুরুষ দন্ড ভেতর কাঁপতে থাকে। উত্তপ সেই লৌহ দন্ড যেন ফেটে পড়ছে। তরল আগুন যেন নাভিদেশ থেকে গলগল করে নিচে নেমে যাচ্ছে। চুর্ণির চোখের কামনার তরল আগুন অভির শরীরের প্রতি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঝলসে দিচ্ছে যেন। চুর্ণি ওর হাত চেপে ধরে অভির জানুর ওপরে আর দলে দেয় অভির কোমর পর্যন্ত। কোমল তুলতুলে বুক জোড়া পিষে ধরে অভির জানুর ওপরে। দুপাশ থেকে যেন ফেটে পড়ছে উদ্ধত বুক, উত্তপ্ত আগুন চুর্ণির শরীর থেকে ছড়িয়ে পড়ে অভির শরীরে।

অভির উত্তপ্ত পুরুষ শলাকা উঁকি মারে বেল্টের কাছে থেকে, জানান দেয় নিজের অস্তিত্ব।
 
Chapter 7: সর্পকন্যের হাতছানি। (#3)

চুর্ণি মাথা দুলিয়ে মাথার চুল অভির জানুর ওপরে নিয়ে আসে। এক মাতানো গন্ধে ভরে যায় অভির নাক, বুকের মাঝে এক উত্তাল তরঙ্গ দলা পাকিয়ে উঠে আসে।

অভির প্রচন্ড ইচ্ছে করে চুর্ণিকে টেনে কোলের ওপরে তুলে, একটান মেরে কোমরের কাপড় খুলে ফেলে নিজের শরীরের নিচে পিষে ফেলে ঠাণ্ডা মেঝের ওপরে। ঝুঁকে থাকার জন্য চুর্ণির নিতম্ব একটু লাস্যময়ী রুপে পেছনে উঁচু হয়ে থাকে। চুর্ণির ফর্সা ত্বক ঘামে চিকচিক করছে, সারা শরীরের কোটি কোটি রোমকুপ উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে।

অভির খেয়াল নেই যে ঘরের মধ্যে আরোও এক ক্ষুধার্ত কামতাড়িত বাঘিনী উপস্থিত। চুর্ণি ওর কোমরের নিচ থেকে বাকি অঙ্গ বুকের নিচে চেপে ধরে, অসহায় অভি পুরোপুরি ওই ক্ষুধার্ত নারীর কাছে সমর্পিত।

বুক চেপে ধরে এগিয়ে যায় চুর্ণি, বুকের বিভাজন অভির উত্তপ্ত পুরুষাঙ্গর ওপরে চেপে ধরে। অভি সারা শরীর চুর্ণির নরম বুকের ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে ওঠে। হাত মুঠি করে নেয় অভি, চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে।

চুর্ণি ওর নরম বক্ষ বিভাজনে উত্তপ্ত পুরুষাঙ্গের ছোঁয়া পেয়ে কঁকিয়ে ওঠে, “উম্মম... কি শক্ত আর গরম গো। আমি যেন তোমার কাছে হেরে যাচ্ছি অভিমন্যু। যখন তুমি আমাকে গ্রহন করবে তখন যে আমি সুখের জোয়ারে মরে যাব। তুমি যে আমাকে দুভাগ করে দেবে, উম্মম... এটা যে এখুনি আমার পেটের মধ্যে ঢুকে ধাক্কা মারছে অভিমন্যু।”

মাথার চুল অভির কোলে দোল খায়। চুর্ণি ওর কোমল আঙুল নিয়ে আসে অভির গেঞ্জির নিচে, উঠিয়ে দেয় গেঞ্জি, উন্মুক্ত করে অভির পেশি বহুল পেট। থরথর করে কেঁপে ওঠে অভি, সারা গায়ে অস্বাভাবিক ভাবে ঘাম ঝরছে, চুর্ণিও উত্তেজনার তাড়নায় দরদর করে ঘামছে।

চুর্ণির থুতনি অভির পুরুষাঙ্গের মাথার খুব কাছে, চুর্ণি যেন অভির রসে ভেজা পুরুষাঙ্গের মাথা খোলা চোখে দেখতে পায়, নাকে যেন অভির কামনার ঘ্রান ভেসে আসে।

হটাত করে অভি চুর্ণির মাথার চুল মুঠি করে ধরে পেছনে ঠেলে দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু চুর্ণি শক্ত করে ধরে থাকে অভির বেল্ট আর সেই জন্য চুর্ণির নগ্ন নরম বুক পিষে যায় অভির খালি পেটের ওপরে। একে অপরের নগ্ন ত্বক প্রথম বার ঘষা খায় আর যেন আগুনের স্ফুলিঙ্গ বার হয় দুজনার শরীর থেকে। চুর্ণি ইচ্ছাকৃতভাবে তার ঊর্ধ্বাঙ্গ অভির পেটের ওপর দিয়ে ঘষে বুকের ওপরে নিয়ে আসে। অভির বুকের ওপরে চুর্ণির ফুটন্ত বুকের তপ্ত বোঁটা যেন পুড়িয়ে দেয় অভির বুক। চুর্ণি অভির কঠিন তপ্ত শলাকা পেটের ওপরে অনুভব করে।

অভির কলার মুঠি করে ধরে কাঁধের পেশির ওপরে নখ বসিয়ে দেয় চুর্ণি, ফোঁস করে বলে ওঠে, “আমার দেহের আগুন কি তুমি বুঝতে পারছো না অভিমন্যু? কেন নিজেকে বেঁধে রেখেছো, ছেড়ে দাও নিজেকে।” অভির চিবুকের সাথে চুর্ণি চিবুক দিয়ে স্পর্শ করে। জিব বের করে ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে বলে, “আমাকে গ্রহন করো অভিমন্যু, আমাকে সুখের সাগরে নিয়ে চলো। আমাকে পিষে নিংড়ে নিজের বুকে করে নাও।”

চুর্ণির চুলের গোছা বাঁ হাতে মুঠি করে ধরে থাকে অভি। সারা মুখের ওপরে চুর্ণির তপ্ত নিঃশ্বাস বইতে থাকে, যেন লাভা দিয়ে ওর মুখে লেপে দিচ্ছে চুর্ণি। অভি ওর ঝলসানো দুই চোখের দিকে তাকায়, উত্তেজনায় অভির শ্বাস ফুলে উঠেছে। চুর্ণির উদ্ধত নরম বুকের মাংস অভির প্রশস্ত বুকের পেশির ওপরে মাখনের মতন লেপে গেছে।

আর থাকতে না পেরে অভি চোখ বন্ধ করে মাথা পেছন দিকে হেলিয়ে দেয়। চুর্ণি অভির অনাবৃত বুকের ওপরে তপ্ত ভিজে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। চুর্ণির হাত ওদের দুজনের শরীরের মাঝে এসে, অভির বেল্টের ওপরে চলে আসে। চেষ্টা করে অভির বেল্ট খোলার জন্য। অভি দুচোখ চেপে বন্ধ করে থাকে, সারা গা শিরশিরিয়ে ওঠে যখন অভি ঠাণ্ডা হাওয়া ওর পুরষাঙ্গের লাল সিক্ত মাথার ওপরে অনুভব করে।

আর থাকতে না পেরে চোখ খোলে অভি, তাকিয়ে দেখে ছাদের দিকে। আচমকা সেই ছাদের থেকে দুটি সুন্দর কাজল কালো নয়ন ওর দিকে তাকায়। সেই দুচোখে জল টলটল করেছে। অভির প্রান প্রেয়সীর চোখ, জলে ভরা, গোলাপি গাল বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়ছে। প্রেয়সীর লাল ঠোঁট তিরতির করে কাঁপছে এক তীব্র বেদনায়। দুহাত বাড়িয়ে অভির প্রেয়সী ওকে নিজের কোলে ডাকে। ডান হাতের তর্জনীতে এক ফোঁটা রক্ত, সেই রক্তের ফোঁটা যা ওর প্রেয়সী ওকে উপহার দিয়েছিল নাকোতে।

কোনরকম অভি হাত বাড়ায় কলেজের ব্যাগের দিকে। মনে পড়ে যায় যে কলেজের ব্যাগে সেই ক্যাসেট রেকর্ডারটা আছে আর তার মধ্যে একটা খালি ক্যাসেট আছে যেটা ও ভেবেছিল এক বন্ধুর কাছে থেকে কিছু জ্ঞান রেকর্ড করবে। অতি সন্তর্পণে অভি ক্যাসেট রেকর্ডারের টেপ বাটন টিপে দেয়। লাস্যময়ি চুর্ণি নিজে কার্যকলাপে এতই মগ্ন থাকে যে অভির টেপ চালানো টের পায়না।

শরীরের শেষ শক্তিটুকু সঞ্চয় করে অভি চুলের মুঠি ধরে চুর্ণিকে মাটিতে ঠেলে ফেলে দেয়। ডান হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চুর্ণির গালে সপাটে এক চড় মারে। চুর্নি মাটিতে ধপ করে পড়ে গিয়ে ক্ষুধার্ত বাঘিনির মতন অভির দিকে ক্ষুব্ধ চোখে তাকায়। রাগের ফলে শ্বাস বেড়ে যায় আর তার ফলে নগ্ন বুক জোড়া জোরে জোরে ওঠা নামা করতে থাকে অভি ক্ষুধিত চোখের সামনে। চুর্ণির ডান গালে চড়ের দাগ লাল হয়ে ওঠে, রাগে আর হেরে যাওয়ার দুঃখে সারা শরীর ঘামছে।

দিদিকে পড়ে যেতে দেখে দৌড়ে আসে তুলি, দুহাতে জড়িয়ে ধরে চুর্ণিকে। অনেকক্ষণ পরে অভি টের পায় যে ঘরের মধ্যে ওরা দুজন ছাড়া তুলিও উপস্থিত ছিল।

কোমরের বেল্টটা ঠিক করে গর্জে ওঠে অভি, “ইউ বিচ। তোমার এত সাহস হলো কি করে আমাকে নিয়ে খেলা করার? তুমি জানতে যে আমি একজনকে ভালবাসি সেটা জেনেও তুমি থেমে থাকোনি, কেন?”

চুর্ণি ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মতন ঝলসে ওঠে অভির দিকে, “তোমার চোখের তপ্ত চাহনি আমাকে পুড়িয়ে খাক করে দিয়েছে, সেটা কেন? তুমি যখন একজনকে ভালবাসতে তাহলে আমার দিকে ওইরকম ভাবে তাকিয়ে ছিলে কেন?”

অভিঃ “সেটা পুরুষের বীর্যের ধর্ম। তাই বলে আমি রাস্তার যে কাউকে যদি দেখি তার মানে এই নয় যে তাকে নিয়ে আমি বিছানায় শুতে চাই।”

চুর্ণিঃ “যখন তুমি কাউকে ভালোই বাসতে, তুমি তাহলে তুলিকে নিয়ে ঘুরেছিলে কেন?”

অভিঃ “আমার জানার খুব দরকার ছিল তোমাদের মতলব। কিন্তু আমাকে একটা কথা বলো, তুমি তো বিবাহিতা আর তা সত্বেও আমার সাথে কি করে এইসব করতে পারলে? তোমার বর, সুব্রত এই সব জানে?”

অভিকে অবাক করে চুর্ণি উত্তর দিল, “হ্যাঁ আমার বর সব জানে। আমার বর জানে তুমি আমার দিকে কি চোখে তাকাও, আমার বর জানে আজ রাতে আমি এখানে।”

মাথার চুল ধরে সোফার ওপরে বসে পড়ে অভি। ওর চিন্তা ভাবনা সব যেন মাথার মধ্যে গুলিয়ে যাচ্ছে “হা ভগবান, তোমরা স্বামী স্ত্রী কি ধরনের মানুষ? তোমার এই নোংরা কার্যকলাপের জন্য আমি তোমাকে সত্যি মেরে ফেলব।”

চুর্ণি ফোঁস করে ওঠে, “তোমার অরুন্ধুতি কি আমাদের চেয়েও সুন্দরী আর লাস্যময়ী?”

এই নোংরা মেয়ের ঠোঁটে অরুনার নাম শুনে অভি দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অভি আরেক চড় কষিয়ে দেয় চুর্ণির গালে, এবারে আরও জোরে। চুর্ণির ফর্সা গালের ত্বক লাল হয়ে ওঠে আর গালের ওপরে চার আঙুলের দাগ বসে যায়।

কেঁদে ফেলে চুর্ণি, তুলি দিদিকে জড়িয়ে ধরে অভিকে কিছু বলতে যায়। অভি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে গর্জে ওঠে, তুই চুপ করে বসে থাক যেখানে আছিস নাহলে তুইও চড় খাবি।” চুর্ণির দিকে তাকিয়ে বলে, “তোমার ওই জঘন্য ঠোঁটে আমার দেবীর নাম আনবে না। আমি তোমাকে কেটে কুটিকুটি করে কুকুরদের খাওয়াবো।” তুকির দিকে আঙুল তুলে বলে, “তুই জানতিস আমি একজনকে ভালবাসি তারপরেও তোর সাহস হলো কি করে যে আমার সাথে খেলা করিস?”

চোখ ফেটে জল বের হয় চুর্ণির, হেরে যাওয়ার জল। আহত সাপের মতন ফোঁস করে ওঠে, “তোমাকে এই চড়ের দাম দিতে হবে অভিমন্যু।”

অভি চিৎকার করে ওঠে, “তুমি আমার কি করে নেবে?”

চুর্ণিঃ “আমি উলুপিদিকে, আমার শাশুড়িকে, সবাইকে বলে দেব যে আমাকে একা পেয়ে তুমি আমার শ্লীলতাহানি করেছো।”

অভিঃ “তোমার মতন নোংরা মেয়েছেলেকে কেউ বিশ্বাস করবে না।”

চুর্ণিঃ “ওদের সামনে আমি নোংরা মেয়েছেলে নই অভিমন্যু। ওদের সামনে আমি সুন্দরী সতী বউমা। ওরা সবাই আমাকে বিশ্বাস করবে অভিমন্যু, তোমার কথা নয়।”

অভি হাসে, “আমি অনেক আগে থেকে বুঝতে পেরেছিলাম যে তোমরা আমার সাথে কিছু সাংঘাতিক খেলা খেলবে। যে দেবীর নাম তুমি নিয়েছো, সে আমাকে অনেক আগে সাবধান করেছিল, কিন্তু আমি মস্ত গাধা, আমি তার কথায় কান দেইনি আর তাঁর খেসারত এখন দিচ্ছি।”

মাটিতে পড়া জামাটা চুর্ণির দিকে ছুঁড়ে দেয় অভি আর তুলিকে বলে ওর জামা নিয়ে আসতে।

চুর্ণির দু চোখ দিয়ে জল পড়ে চলেছে, অভির দিকে লাল চোখে ফোঁস করে ওঠে, “আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে আমি এই চড়ের বদলা নেব।”

অরুন্ধুতির গম্ভির স্বর অভির মাথার মধ্যে আদেশ দেয়, “পারসিয়াস তুমি মেডুসার ঘন অন্ধকার গুহায় ঢুকে পড়েছো। তোমাকে লড়ে যেতে হবে না হলে তুমি পাথরের মূর্তি হয়ে যাবে। তোমার তরোয়াল বার কর পারসিয়াস আর কেটে ফেল মেডুসার মাথা।”

চুর্ণি জামাটা কোনোরকমে গায়ে জড়িয়ে ছোটো কাঁচের টেবিলের একপাসে বসে পড়ে। এর মাঝে তুলি অভির জামা নিয়ে আসে, অভি ছিনিয়ে নেয় জামা আর গায়ে গলিয়ে নেয়।

অভি ব্যাগের ভেতর থেকে ওয়াকম্যান বের করে চুর্ণির চোখের সামনে দোলায়। ভয়ে চুর্ণির সারা সারা মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। অভি বলে, “আমার কাছে প্রমান আছে চুর্ণি। আমাদের সব কথা এই ওয়াকম্যানে টেপ করা। আমি জানতাম আমার সাথে এই রকম কিছু একটা হতে পারে তাই তৈরি হয়ে এসেছিলাম আমি।”

কথা শুনে চুর্ণি স্থম্ভিত হয়ে যায়, গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে ভয়ে। কাতর চোখে অভির দিকে তাকিয়ে থাকে চুর্ণি। হাত দিয়ে চোখ মুখ মুছে নেয়।

অভিঃ “চুর্ণি নিজেকে পাল্টাও নাহলে তুমি বাজারি মেয়েছেলে হয়ে যাবে আর তার পরিণতি হবে বেশ্যালয়ে।”

অভি কথা শেষ করে, ব্যাগ কাঁধে ফেলে দরজার দিকে পা বাড়ায়, কারপেটের ওপরে পড়ে থাকে দুই আহত, বিক্ষিপ্ত নারী। দরজা খুলে বাইরে বের হয় অভি।

পেছন থেকে চিৎকার করে ওঠে চুর্ণি, “অভিমন্যু, তুমি কি জানো তুমি কে? তুমি অর্জুনের সব থেকে বীর পুত্র, যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে প্রান হারিয়েছিল। তুমি সাহসী হতে পারো, তুমি বীর হতে পারো কিন্তু শেষ পর্যন্ত তোমার হার নিশ্চিত, অভিমন্যু। এটা আমার অভিশাপ।”

পেছনে তাকায় না অভি, দরজা বন্ধ করে তুলির বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।
 
Chapter 8: অপরাধ স্বীকার।

মর্মাহত, পরাজিত অভি একাকী রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে, কি করনীয় কিছু বুঝে উঠতে পারে না। চোখ জ্বালা করছে কিন্তু সে চোখে জল আসে না, সব জল যেন শুষে নিয়েছে ওর বিবেক। কি পাপ করে ফেলেছে অভি, প্রেয়সীর প্রেম সরিয়ে রেখে এক বিষকন্যার হাতছানির ডাকে সাড়া দিয়েছে। কোথায় গেলে নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারবে সেই কথা ভাবে।

ঘড়ি দেখলো, রাত সাড়ে আটটা বাজে, বাড়ি ফেরার মন নেই। সারা রাত যেন এই রাস্তায় কাটিয়ে দিলে ভাল হয়। বুকের ভেতরে সেই সাহসটুকুও নেই যে অরুন্ধুতি বা শুচিস্মিতার সম্মুখিন হতে পারে। নিজের ওপরে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে অভি, এতদিন মা ওকে বলতেন যে তুই তো একটা অকাঠ মূর্খ ছেলে, আজ সেই কথা যেন সত্যি হয়ে দাঁড়ালো। পরী কি কোনদিন ওকে ক্ষমা করতে পারবে?

বাড়িতে ফোন করলো অভি, মাকে জানালো যে রাতে দেবাশিসের বাড়িতে থেকে যাবে, প্রক্টিকালের কিছু কাজ বাকি। মায়ের কাছে দেবাশিসের ফোন নাম্বার নেই, তাই মা খবর নিতে পারবেন না যে অভি রাতে কোথায় ছিল। ঢাকুরিয়া থেকে বাসে চেপে এস্প্লানেড চলে এলো।

এস্প্লানেড এসে শহিদ মিনারের নিচে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইল। রাতের অন্ধকার ঘনিভুত হয়ে আসে অভির চারপাশে। লোকজনের কোলাহল যেন অভির কাছে বিষাক্ত হয়ে ওঠে। আসে পাশের সব লোকজন যেন অভির চেয়ে অনেক খুশি আর শান্তিতে দিন যাপন করছে, সব ব্যাথা সব বেদনা যেন অভির একার। না অভি বাকিদের কথা চিন্তা করলো না, নিজের কথা চিন্তা করলো অভি। কত বড় নিচ আর হীন প্রকৃতির ছেলে সে। সেই অন্ধকার রাতে ওর পশ্চাত্তাপ শোনার জন্য ওর পাশে কেউ নেই।

একটা সিগারেট ধরিয়ে পাশের একটা চায়ের দোকান থেকে চা খেল। ট্রাম স্ট্যান্ড থেকে হাঁটতে হাঁটতে বাস স্ট্যান্ডের দিকে এগোতে থাকে। রাস্তা পার করার পরে অভি লক্ষ করে যে ফুটপাথে একটা লোক বসে আছে, গায়ে ছেঁড়া জামা মাথার চুল উস্কো খুস্কো। অভির ওকে দেখে মনে হলো যেন ওই লোকটা পাগল অথবা ভিখারি। হয়তো অতীত জীবনে কোন পাপের শাস্তি পেয়ে ওই লোকটার বর্তমান অবস্থা পাগলের মতন। অভির মনে হলো যেন চোখের সামনে নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে। কিছু দুরে দাঁড়িয়ে অভি একমনে লোকটাকে দেখতে থাকে। ওই পাগল প্রকৃতির লোকটা অভিকে লক্ষ্য করে।

হাত বাড়িয়ে ভিখ চায় অভির কাছে, “আল্লাহর নামে কিছু দিয়ে দে বাবা, আল্লাহ তোর ভলা করবেন।”

অভি ধিরে ধিরে লোকটার দিকে এগিয়ে একটা দশ টাকার নোট বের করে ওর হাতে দেয়। লোকটা নোটের দিকে তাকায় একবার আর একবার অভির মুখের দিকে তাকায়। কিছু পরে লোকটা অভিকে বলে,
“তু বদর নেহি জো শামস সে রোশন হো। (তুই চাঁদ নয় যে সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়)
তু বদর নেহি জো শামস সে রোশন হো। (তুই চাঁদ নয় যে সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়)
তু উন সিতারো মে হ্যায় (তুই আকাশের সবথেকে উজ্জ্বল নক্ষত্র )
জো ভটকে রুহ কো রাহ দিখায়ে (যে হতাশা পূর্ণ লোকেদের পথ দেখায়)
রেহেনুমা বন আউর আপনে কলব কি পুকার সুন” (নিজের ভেতরের আওয়াজ শুনে জেগে উঠে অন্যদের পথ দেখা)

ওই লোকটা এবারে মনে হলো না যে উনি কোন পাগল লোক। মাথা নত করলো অভি ওনার সামনে, হাত তুলে আশীর্বাদ করলেন সেই ফকির।

ফকিরের কথা শুনে অভি চিন্তা করে দেখলো, না ওকে পরাজিত সৈনিকের মতন পালিয়ে গেলে চলবে না, লুকিয়ে থাকলে চলবে না, ওর প্রেয়সীর ডাক ওকে সেই বিষকন্যার কবল থেকে মুক্ত করেছে। দেরি হয়ে যাবার আগেই ওকে ওর প্রেয়সীর সামনে নিজেকে আত্ম সমর্পণ করতে হবে, জানাতে হবে সব ঘটনা। বুকের ভেতরের ঘা থেকে একমাত্র ওর প্রেয়সী পারবে ওকে মুক্ত করতে।

বাইরের এক পি.সি.ও থেকে কল্যাণীকে ফোন করলো অভি, ঘড়িতে তখন রাত ন’টা।

অভিঃ “হ্যালো আমি অভিমন্যু? আমাকে চিনতে পারছো?”

কল্যাণী এত রাতে অভির ফোন পেয়ে খুব অবাক হয়ে যায়। গ্রামের দিকে বেশির ভাগ লোকজন তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে, ওরাও শুয়ে পড়েছিল। কল্যাণী, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তোমার কথা কি করে ভুলবো। তুমি তো এখন বেশ তাজা, পরী তো সবসময়ে তোমার কথা বলে। তা এত রাতে ফোন করেছো, কি ব্যাপার?”

অভি কাতর সুরে বলে, “আমার পরীর সাথে কথা বলা খুব দরকার, কিন্তু ফোনে নয়।”

কল্যাণীঃ “তাহলে কি করে?”

অভিঃ “তুমি দিদাকে কিছু একটা বলে ওকে তোমার বাড়িতে ডেকে আনতে পারো?”

কল্যাণী দুষ্টু হেসে উত্তর দেয়, “কেন কেন, বাসন্তি পুজো পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাচ্ছে না, যে এখুনি পরীকে চাই? শয়তান ছেলে...”

অভির গলার আওয়াজ ভারী হয়ে আসে, “না কল্যাণী ওইসব নয়। দয়া করে পরীকে ডেকে আনতে পারো?”

কল্যাণী অভির গলার আওয়াজ শুনে বুঝতে পারে ওর মনের ব্যাথা, “তুমি এখন কোথায়?”

অভিঃ “আমি এখন এস্প্লানেড বাসস্টান্ডে, আমি শেষ বাসে তোমার বাড়ি আসছি।”

কল্যাণীঃ “ঠিক আছে আমি দেখি কি করে পরীকে নিয়ে আসতে পারি। সাবধানে এসো আর দিপঙ্কর বাসস্টান্ডে তোমার জন্য অপেক্ষা করবে খনে।”

অভি ওকে প্রান থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাসে উঠে পড়ে। অন্ধকার রাত কেটে বাস এগোতে শুরু করে। বসিরহাট যত কাছে আসে, অভির বুকের আলোড়ন যেন ততো চাগিয়ে ওঠে। কানের মধ্যে মাথার মধ্যে যেন কেউ দামামা বাজায়। চিন্তা করে পায় না যে ওর সব কথা শুনে পরীর প্রতিক্রিয়া কি হবে।

রাত প্রায় বারোটা নাগাদ অভি বসিরহাট পৌঁছায়। দিপঙ্কর ওর জন্য দুটি সাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিল। ওকে দেখে একটু চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “ব্যাপার কি বলতো, এত রাতে শুচিস্মিতাকে ডেকে পাঠালে?”

অভির কথা বলার মতন মনের অবস্থা ছিল না, “আমি কিছু অসুবিধায় পড়েছি আর তাই পরীর সাথে একটু সেই ব্যাপারে কথা বলার দরকার তাই পরীকে চাই।”

কল্যাণীদের বাড়ি পৌঁছে অভি লক্ষ্য করলো যে পরী আর কল্যাণী উৎসুক নয়নে ওর পথ চেয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে। অভিকে দেখেই পরী দৌড়ে এসে ওর জামার কলার খামচে জল ভরা চোখে জিজ্ঞেস করে, “ছোটো মায়ের কি হয়েছে?”

ছোটমায়ের প্রতি ওর এত ভালবাসা দেখে, অভির চোখ ফেটে জল আসে, “তুমি কে?”

অভি নিজেকে সামলে উত্তর দেয়, “তোমার ছোটো মা আর বাবু ভালো আছেন।”

বুকের ভেতর থেকে যেন এক বড় পাথর নেমে যায় পরীর।
পরীঃ “তাহলে তোমার কি হয়েছে? অরুন্ধুতির সাথে কি ঝগড়া হয়েছে?”
মাথা নাড়ায় অভি, না ওর সাথে ঝগড়া হয়নি, অরুনা ভাল আছে। পরী হেসে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে কি চুরি ডাকাতি করেছো নাকি না কাউকে খুন করেছো?” গালের ওপরে হাত বুলিয়ে পরী ওর মুখের দিকে ভাল করে তাকায়। পরী লক্ষ্য করে যে অভির দু’চোখ ছলছল করছে আর ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কাঁপছে। পরী ওই চোখ দেখে বুঝতে পারে যে অভির মনের মধ্যে এক বিশাল ঝড় দানা বেঁধে আছে।

পরী ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, “আমার কথা খুব মনে পড়ছিল তাই তুমি আমার সাথে দেখা করতে এসেছো তাই না?”

অভিঃ “আমি তোমার সাথে একটু একা কথা বলতে চাই।”

অভি ধরা গলার আওয়াজ শুনে পরী বুঝতে পারে যে, যাই ঘটেছে সেটা বেশ সঙ্গিন। অভির মনের ভেতরে যে এক বিশাল ঝড় দানা বেঁধেছে আর সেটা যে অভিকে কুরে কুরে শেষ করে দিচ্ছে সেটা বুঝতে পরীর দেরি হয়না। পরী কল্যাণীর দিকে তাকালো। কল্যাণী বললো যে ওরা ওদের শোবার ঘরে যেতে পারে, কেউ ওদের কিছু বলবে না। কল্যাণীরা অন্য ঘরে শুয়ে পড়বে।

পরী অভিকে টেনে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। অভির দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে থাকে পরী। সামনে এসে বুকের কাছে হাত জড়ো করে দাঁড়িয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে যে কি হয়েছে অভির। অভি কলেজের ব্যাগ বিছানার ওপরে ছুঁড়ে ফেলে পরীর সামনে হাঁটু গেড়ে মাথা নিচু করে বসে পড়ে।

ধরা গলায় বলে ওঠে, “আমি পাপ করেছি পরী।”

পরী বিশ্বাস করতে পারে না অভির কথা, আঁতকে ওঠে, “কি?” পরী ওর চুলের মুঠি ধরে অভির মুখ ওপর দিকে করে, সোজা চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “কি বলতে চাইছো?”

অভির দুগাল দিয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে, চাপা সুরে বলে,“অরুনিমা...”

পরী যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা। চুলের মুঠি ছেড়ে দিয়ে চিবুকে আঙুল স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করে, “অরুনিমা কি? কি করেছো ওর সাথে?”

অভিঃ, “মৈথিলীও ছিল...”

আঁতকে ওঠে পরী, “না” ধুপ করে বিছানার ওপরে বসে পড়ে। বুকের মধ্যে এক বিশাল ঝড় শুরু হয়ে যায়, “আমি বিশ্বাস করি না।”

ঘরের মধ্যে নিস্তব্ধতা নেমে আসে। পরীর চোখে দুঃখের নয়, রাগে চোখ ফেটে জল আসে। কান আর গাল গরম হয়ে যায় ওর, রাগে কাঁপতে থাকে পরী।

চিৎকার করে ওঠে অভির দিকে, “ওদের সাথে কি করেছো তুমি?”

অভি, “আমি কিছু করিনি...”

চিৎকার করে ওঠে পরী, “একদম মিথ্যে কথা বলবে না আমার সামনে, কি করেছো ওদের সাথে সত্যি করে বল? কিছুই যদি করোনি তাহলে এত রাতে আমার কাছে কেন এসেছো?” তারপরে বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসে পরীর, “হাঁ ভগবান, আমি যাকে ভালবাসি সেই কেন আমার সাথে এই রকম করে? আমি ছোটো ছিলাম আমার বাবাকে ভগবান নিয়ে নেন। আমার দিদিরা আমাকে সারা জীবন কষ্ট দিয়ে গেছে, আমার মা আমাকে ছোটো বেলায় ঠিক করে দেখেনি। ছোটো মা যে আমাকে দেখেছিল, তাকেও ভগবান আমার থেকে দুরে সরিয়ে নেয়। চব্বিশ বছর পরে আমি আমার ভালবাসা খুঁজে পেলাম তোমার কাছে আর? পরের সপ্তাহে তোমার জন্মদিন, আমি কত স্বপ্ন দেখেছিলাম যে তোমাকে আমি চমক দেব। আমার ভালবাসা কি এত কম, এত ছোটো, যে এক বারের জন্যেও তোমার আমার কথা মনে পড়েনি?”

পরীর প্রশ্নের উত্তর অভির কাছে নেই। প্রথম পদক্ষেপ অভি নিয়েছিল সেই বিষকন্যের দিকে। অরুনা বারবার করে বারন করা সত্তেও অভি কান দেয়নি ওর কথায়। ঘরের প্রচন্ড নিস্তব্ধতা দুজনকেই কুরে কুরে খেয়ে চলেছে।
ধরা গলা অভি জিজ্ঞেস করে, “আমার ওপরে কি তোমার আস্থা আছে?”

বিভ্রান্ত পরী ওর ভেজা চোখ নিয়ে অভির চোখের দিকে তাকায়, “তোমার ওপরে আস্থা... কিন্তু মৈথিলী আমার বৌদি।”

পরী বিছানা থেকে নেমে এসে অভির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। অভির মুখ হাতের মধ্যে আঁজলা করে নিয়ে, চোখে চোখ রেখে বলে, “অভি আমার ভালবাসা একদিনে, এক মুহূর্তে এসেছে। সুব্রতদার বিয়ের রাতে, উঠানে তোমাকে প্রথম বার দেখে কেন জানিনা আমার মনে হয়েছিল যে তুমি সেই মানুষ।”

অভি কলেজের ব্যাগের দিকে দেখিয়ে বলে, “ওর মধ্যে একটা ওয়াকম্যান আছে, ওটা চালাও সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।”

পরী ওয়াকম্যান হাতে নিয়ে একবার চালায়, পুরোটা শোনে, নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা পরী, বার বার চালিয়ে শোনে।

কপালে করাঘাত করে মাথা নাড়িয়ে অভিকে বলে, “এটা কি, অভি? আমি যা শুনছি সেটা কি ঠিক শুনছি?”

অভিঃ “এটাই সত্যি।”

দু’জনে অনেকক্ষণ ধরে চুপ করে বসে থাকে। অভির বুকের মধ্যে ধুকপুকানি বেড়ে চলে, পরী সব শুনে কি প্রতিক্রিয়া করবে। পরী ওয়াকম্যান শুনে থ হয়ে বসে, বাড়ির নতুন বউ, ওর ছোটো বৌদি শেষমেষ এই রকম এক নিচ নারী?

মাথা নাড়ায় পরী, “আমার বৌদি শেষ পর্যন্ত আমার সাথে এই রকম করতে পারলো? বিয়ের পরেও কি করে তোমার সাথে ওই রকম ব্যাবহার করতে সাহস করে? আমি কিছুতেই কিছু বিশ্বাস করতে পারছি না।”

অভি পরীর বিভ্রান্ত জল ভরা চোখের দিকে ম্লান হেসে বললো, “চুর্ণি জানে না যে আমি তোমাকে ভালবাসি।”

অবশেষে পরী চোখের জল মুছে হেসে দিল, “তুমি না একটা মস্ত গাধা, কিন্তু তুমি আমার গাধা।” অভির গালের ওপরে আলতো করে চাঁটি মেরে দেয়।

অভি পরীর হাত ধরে ফেলে, “আউচ, আমাকে মারলে কেন?”

পরীঃ “এই চাঁটি ওদের দিকে পা বাড়ানোর জন্য।”

হাত ছাড়িয়ে অভির গালে আরেক থাপ্পড় মারে পরী, এবারে আগের চেয়ে জোরে। অভি চমকে যায়, পরীর দিকে তাকায়।

পরী একটু রেগে গিয়ে বলে, “এটা অরুন্ধুতির নাম নেওয়ার জন্য। তুমি অন্য কারুর নাম নিতে পারতে।”

মাথা চুলকে মাথা নিচু করে উত্তর দিল অভি, “তখন আমার মাথায় কিছু আর আসছিল না পরী।”

পরী অভির মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে আস্তে করে কপালে চুমু খায়, “এটা আমার ভালবাসা আর আস্থার জন্য যে তোমাকে আমি আবার কাছে ফিরে পেয়েছি।”

অভি পরীর কোমর জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে নেয়। অভির মনের ভেতরে এক অনাবিল শান্তি, শেষ পর্যন্ত পরী ওকে ক্ষমা করে দিতে পেরেছে। পরী ওর মাথার চুলে হাত বুলিয়ে আদর করতে থাকে।

কিছু পরে পরী ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি বিকেল থেকে কিছু খাওনি, তোমার খিদে পেয়ে থাকবে নিশ্চয়।”

অভি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কে? তুমি কেন আমাকে এত ভালোবাসো?”

অভির চোখ থেকে চশমা খুলে গালের ওপরে জলের দাগ মুছে উত্তর দেয়, “তুমি যে আমার সেই ছোট্ট রাজকুমার। দেখি কিছু খাবার পাওয়া যায় কিনা।”

পরীকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অভি বলে, “আমার খিদে নেই পরী, শুধু তুমি আমার কাছে থাকো তাহলেই হবে।” বুকের মাঝে, গলায় আলতো করে নাক ঘষতে শুরু করে দেয় অভি। পরী ওর পিঠের ওপরে আদর করে হাত বুলিয়ে দেয়, মাথার চুলে আঙুল দিয়ে আঁচড়ে দেয়, ঠিক যেন মা তার ছেলেকে সস্নেহে আদর করছে।

কিছুক্ষণ অভিকে আদর করার পরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, “খিদে পেয়েছে, খেয়ে নাও নাহলে এবারে সত্যি সত্যি মার খাবে, আর অরুন্ধুতির ফোন নাম্বার আমাকে দাও, আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।”

অভিঃ “কেন?”

পরীঃ “তুমি আবার জিজ্ঞেস করছো কেন? যেন তুমি জানো না তুমি কি করেছো। আমি ওকে ফোন করে সব জানাব তুমি কি কি করেছো।”

অভি কাতর মিনতি করে পরীর সামনে, “প্লিস অরুনাকে বোলো না। ও আমাকে মেরে ফেলবে তাহলে।”

পরীঃ “তোমার একটু মার খাওয়া প্রয়োজন। ওই ঠিক করবে তোমাকে, আমি নয়।”

পরী দরজা খুলে অভির জন্য খাবার আনতে বেরিয়ে গেল। চুপ করে বসে থাকলো অভি। কিছু পরে কল্যাণীর সাথে পরী খাবারের থালা নিয়ে ঘরের মধ্যে ঢোকে। কল্যাণীকে দেখে অভির বুক কেঁপে উঠল, ওর মান সন্মান সব যেন মাটিতে মিশে গেছে।

কল্যাণী ওকে দেখে হেসে বললো, “তুমি কি রকম মানুষ...”

পরী ভাতের থালা নিয়ে অভির পাশে মাটিতে বসে পড়ে। আলু সিদ্ধ ভাত আর ডাল দিয়ে ভাত মেখে অভিকে ঠিক বাচ্চা ছেলের মতন খাওয়াতে শুরু করে।

কল্যাণী পরীর খাওয়ানো দেখে হেসে বলে, “পরী, তুই ওকে আদরে বাঁদর করে দিবি।”

পরী ওর দিকে হেসে উত্তর দেয়, “আমি ওর খেলার পুতুল আর ও আমার ছোট্ট রাজকুমার।”

অভিকে খাওয়ানোর পরে, অভির মুখ আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেয়।

কল্যাণী জিজ্ঞেস করে অভিকে, “ঠিক কি হয়েছে?”

পরী অভিকে বিছানায় উঠে যেতে বলে আর কল্যাণীর দিকে তাকিয়ে ওদের একটু একা ছেড়ে দিতে অনুরোধ করে।

পরীঃ “প্লিস, সব কথা জানতে চাস না। যেটুকু বলেছি সেটাই ঠিক। আমাকে ভুল বুঝিস না কল্যাণী, আমি চাইনা ও হেনস্থা হোক। অনেক ঝড় গেছে ওর উপর দিয়ে, একটু শুতে দে ওকে।”

কল্যাণী ওদের দিকে দুষ্টু হেসে বলে, “তোদেরকে একা ছেড়ে তো যাচ্ছি। এত কান্না আর এত আদর খাওয়ার পরে আবার যেন কিছু করে বসিস না।”

কল্যাণীকে ঠেলে ঘর থেকে বের করে দেয় পরী, অনুরোধ করে যে ওদেরকে যেন সাঁড়ে পাচটায় উঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রথম বাসে অভিকে ফিরে যেতে হবে, বাড়ির কেউ অভিকে যদি দেখে ফেলে তাহলে বিপদ হয়ে যাবে। কল্যাণী বললো যে ও দিপঙ্করকে বলে দেবে যাতে অভিকে সকাল বেলায় বাসস্টান্ডে ছেড়ে আসে।

পরী ঘরের লাইট বন্ধ করে ছোটো লাইট জ্বালিয়ে অভির পাশে শুয়ে পড়ে। ওর দিকে ফিরে, অভির মাথা বুকের কাছে নিয়ে আদর করে। অভি পরীর কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়।

পরী ওর কানে কানে বলে, “এবারে আমাকে পুরো ঘটনা একদম প্রথম থেকে বলো তো।”

মুখ উঁচু করে পরীর গভীর কালো চোখের দিকে দেখে অভি, কপালে কপাল ঠেকিয়ে অভির মুখের দিকে দেখলো পরী। অভি পরীর কাছে কিছুই লুকালো না, সব কথা সত্যি সত্যি করে বলে দিল। সব কথা শুনে পরী বিস্ময়ে মাথা নাড়ায়। দুজনে অনেকক্ষণ চুপ করে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে। একে অপরকে জড়িয়ে আলিঙ্গনের উষ্ণতায় নিজেদেরকে ডুবিয়ে দেয়।

অভির নাকের ওপরে পরী ওর নাক ঘষে কানে কানে বলে, “মহাভারতের অভিমন্যু অনেক বীর এবং সাহসী ছিলেন, কিন্তু কেন হেরে গেছিলেন জানো? কেননা মহাভারতের অভিমন্যুর কাছে এই শুচিস্মিতা ছিল না। আমার ছোট্ট সোনার কাছে সর্বদা তার পরী আছে, সে কখন হেরে যেতে পারে না।”

আবেগে দুচোখ বন্ধ করে নিয়ে অভির ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে পরী। প্রেমের নিবিড় আলিঙ্গনে একে অপরকে প্রাণপণে জড়িয়ে ধরে। সারা রাত দুজনে দুজনকে চুপচাপ জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে, আদরের যেন শেষ নেই আর। পরীর গভীর কালো চোখের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দেখে অভি।

পুব আকাশে নতুন ঊষার ছটা। বাইরে পাখিদের কিচির মিচির কিছু পরে আকাশ বাতাস মাতিয়ে তোলে। এক নতুন সকাল এক নতুন দিন নিয়ে আহ্বান জানায় পরী আর অভিকে। দূর থেকে এক বাউল ভিখারি গান গায়, সেই গানের মিঠে সুর ঘরের মধ্যে ভেসে আসে...
“রাই জাগো রাই জাগো শুক সারি বলে
রাই জাগো রাই জাগো শুক সারি বলে
কত নিদ্রা যাও গো রাধে শ্যাম নায়রের কোলে।
রাই জাগো রাই জাগো শুক সারি বলে...”


End of Part 3
 
Part 4: দিবস রজনীর গল্প।

Chapter 1: জলপরীর আগমন। (#1)

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ শেষ। বসন্তের বাতাসে খুশির আমেজ। আজ বাসন্তি পুজোর দশমী। গত কয়েকদিন ধরে মা বেশি খুশি, বাবাও বেশ খুশি, পরী বাড়ি আসছে। বুকের ভেতরে এক কোনে অভি নিজের খুশি দমন করে রেখেছে, ভেতরে খই ফুটলেও সেটা জাহির করার ক্ষমতা নেই। খুশিতে বুক ফেটে গেলেও জানানোর অধিকার নেই অভির। শেষ পর্যন্ত সেই দিন এসে গেল, পরী সবসময়ের জন্য ওর কাছে, ওর পাশে থাকবে।

গত সপ্তাহে ওর জন্মদিন ছিল, কিন্তু কোন চমক ছিল না যেটা অভি ভেবেছিল। হ্যাঁ অরুনা মাঝ রাতে ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিল আর দুপুরে পরী ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। কোন চমক না পাওয়াটাই যেন সব থেকে বড় চমক ছিল অভির জন্য।

কলেজ শেষ, এপ্রিলের পুরো মাসটাই ফাইনাল পরীক্ষার পড়ার জন্য ছুটি। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফাইনাল পরীক্ষা শুরু। পড়াশুনা বেশ জোর কদমে চলছে। বাবা মা অফিসে বেরিয়ে যাবার পরে, অরুনা আর পুবালি ওর বাড়িতে আসে পড়ার জন্য। একসাথে পড়ার মজা আলাদা, কিছুটা গল্প কিছু পড়া কিছু আড্ডা মারা। অরুনার অভির সাথে যে নিকট সম্পর্ক বাবা মায়ের তাতে কোন আপত্তি নেই কেননা অরুনার বাবা, ব্যানার্জি কাকু বাবার বন্ধু। বাবা মা এই ভ্রান্তিতে আছেন যে অরুনা, তালুকদার বাড়ির বউমা হয়ে আসছে। এই কথা অভি আর অরুনা দুজনেই ভাল ভাবে জানে এবং এখুনি সেই ভ্রান্তি ভাঙার জন্য কেউই তৈরি নয়। অরুনা সমুদ্রনিলকে ভালবাসে আর অভি পরীকে। ওদের দুজনের বাড়ির কেউই জানে না সেই কথা।

মা স্কুলে বেরিয়ে যাবার আগে অভিকে জানিয়ে যায় যে বিকেলে মায়ের সাথে পরী আসছে তাই অভি যেন বিকেল বেলা বাড়িতেই থাকে। অরুনার আর পুবালির সাথে যেন কোথাও বেরিয়ে না যায়। না বললেও হতো, অভি মনে মনে বললো। মা বেরিয়ে যেতেই তিন জনে হেসে কুটোকুটি।

অরুনা অভির দিকে চোখ টিপে বলে, “কিরে আজ শুচিদি আসছে, শেষমেশ কুত্তাটা তার কুত্তি পেয়েই গেল কি বল।”

অরুনা পরীকে শুচিদি বলে ডাকতো কেননা পরী অরুনার চেয়ে চার বছরের বড়। অরুনা প্রথমে বলেছিল যে অভির বউকে ও নাম ধরেই ডাকবে কিন্তু যেহেতু পরী ওর চেয়ে বড় তাই সন্মান বলে একটা কথা আছে আর সেই জন্য অরুনা শুচিদি বলে ডাকে।

অরুনাঃ “কি করবি আজ রাতে?”

অভিঃ “তোর কি মাথা খারাপ নাকি রে? এক ছাদের নিচে থেকে আমি কি খাল খুঁড়ে কুমির আনব? বাবা মা টের পেয়ে গেলে আমাদের দুজনকে আস্ত রাখবে না।”

অরুনাঃ “হুম সেটা বুঝলুম। আমাদের বাবা মাও যে ভ্রান্তিতে আছে সেটা এখুনি ভাঙার দরকার নেই রে। আমিও বাবাকে বলতে ভয় পাচ্ছি সমুদ্রনিলের কথা, জানিনা বললে কি হবে।”

পুবালি যথারীতি চুপচাপ মেয়ে, ওদের কথা শুনে শুধু হাসি ছাড়া আর কিছু বিশেষ কথাবার্তা বলে না।

অভি ওকে জিজ্ঞেস করলো, “তোর নাকের ব্যাথা কি রকম আছে রে?”

পুবালিঃ “আছে ওই একরকম। তবে মাঝে মাঝে কপালের মাঝখানটা বেশ ব্যাথা করে।”

অরুনা ওর মাথায় টোকা মেরে হেসে বলে, “এই মেয়ে যতদিন না কারুর সাথে ঠিক করে মিশবে ততদিন ওর মাথার ব্যাথা সারবে না।”

আড্ডায় মেতে ওঠে অভি আর অরুনা, সেই দেখে পুবালি একটু রেগে যায়। পুবালি ওদের বলে, “তোরা যদি আড্ডা মারিস তাহলে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আয়।”

অরুনা নাক কুঁচকে বলে, “আরে বাবা একটু মজাও করতে দিবি না। দেখ আজ শুচিদি আসছে আর সেইজন্য ও কত খুশি।”

সেদিন আর পড়াশুনা হলো না, সারাদিন ধরে আড্ডা মেরে টি.ভি দেখে কাটিয়ে দিল। অভি অরুনাকে থেকে যেতে বলেছিল যতক্ষণ না পরী আসে। অরুনা বলে যে পরীর সাথে এই রকম ভাবে দেখা করবে না, ও পরীর সাথে বাইরে কোথাও দেখা করতে চায়।

বিকেলে অরুনা আর পুবালি চলে যাবার পরে, অভি নিজে চা বানিয়ে টি.ভি র ঘরে বসে মা আর পরীর জন্য অপেক্ষা করে। কলিং বেল বাজতেই অভি দৌড়ে নিচে নেমে যায়। দরজা খুলে দেখে যে মা আর পরী দাঁড়িয়ে।

বুদ্ধিমতী পরী মায়ের সামনে মনের খুশি লুকিয়ে মাথা নিচু করে হেসে অভিকে অভিবাদন জানায়, “কেমন আছো অভিমন্যু? পড়াশুনা ঠিকঠাক চলছে তো?”

মাথা নত করে অভিবাদন জানায় অভি, বুকের মধ্যে খুশির বান ডেকেছে, কিন্তু মায়ের সামনে ঠিক করে প্রকাশ করা যাচ্ছে না, দুজনেই দুজনার মনের অবস্থা বুঝে নিয়ে মুখ টিপে হাসে। সিঁড়ি দিয়ে চড়ার সময়ে অভি পরীর দিকে তাকায়। পরীর প্রিয় পোশাক শাড়ি, শাড়ি ছেড়ে পরী যেন আর কিছু পরতে জানে না। আকাশী রঙের শাড়িতে পরীকে বেশ সুন্দরী দেখাচ্ছে। সিঁড়ি চড়ার সময়ে অভি লক্ষ্য করলো যে পরীর পায়ে রুপোর নুপুর, হাঁটার সময়ে মৃদু ছনছন আওয়াজ করছে আর সেই আওয়াজ যেন অভির বুকে এসে মাতিয়ে তুলছে। পরী মাঝে মাঝে পেছনে তাকায় আর মুখ টিপে হাসে, বুঝতে পারে যে অভি ওর দিকে দেখে পাগলের মতন হয়ে যাচ্ছে, এত কাছ থেকেও যে পরীকে জড়িয়ে ধরতে পারছেনা। মাঝে মাঝে অভির চোখ দেখে লজ্জা করছে কেননা অভি ওর চলন আর ওর কোমরের দোলা দেখে পাগল হয়ে যাচ্ছে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে পরী লজ্জাটাকে কোনরকমে বুকের ভেতরে লুকিয়ে নেয়।

অভি ওর ব্যাগ আর সুটকেস পরীর ঘরের মধ্যে নিয়ে যায়, পরী ওর পেছন পেছন ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। ঘরে ঢুকেই পরী হাত বাড়িয়ে অভিকে কাছে ডাকে। অভির মুখে হাসি যেন আর ধরে না। পরী প্রায় অভিকে জড়িয়ে ধরতে যাবে এমন সময়ে মা ডাক দেয়, “অভি শোন, দুধ আনতে একটু বাজার যা। পরী রাতে দুধ খাবে।”

অভি দাঁত দাঁত চিপে পরীর দিকে তাকায়, মাথা নাড়িয়ে ইশারা করে যে, কি ভুল সময়ে মা ডাক দিলেন।

পরীর কানে কানে এসে বলে, “তোমার দুধের কি দরকার শুনি তোমার নিজের থাকতে...”

লজ্জায় পরীর কান নাক লাল হয়ে যায়। আলতো করে অভিকে এক থাপ্পড় মেরে বলে, “একদম শয়তানি করবে না। ছোটো মার কথা শুনে তাড়াতাড়ি বাজার যাও নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করে ছোটমাকে বলে দেব যে তুমি আমাকে খেপাচ্ছো।”

অভি আরও খেপিয়ে তোলে পরীকে, “কি বলবে ছোটো মাকে?”

পরী যেন আরও রেগে যায় ওর কথা শুনে, “বের হও ঘর থেকে আমি জামা কাপড় বদলাবো।”

অভি ওকে খেপাতে ছাড়ে না, “আমার জন্য তৈরি হয়ে থেকো কিন্তু।”

শেষমেশ পরী থাকতে না পেরে চেঁচিয়ে ওঠে, “ছোটো মা, অভি বাজার যাচ্ছে না আমাকে খেপাচ্ছে...” অভির দিকে ভুরু নাচিয়ে ইশারা করে, বেশ হয়েছে, ঠিক হয়েছে।

মা ওদিকে চেঁচিয়ে অভিকে বললেন, “কি রে মেয়েটা এই এসেছে আর তুই ওর পেছনে লেগেছিস। তাড়াতাড়ি বাজার যা।”

অভি বাজারে বেরিয়ে গেল, একরকম যেন হাওয়ায় উড়ছে অভি। বাজার থেকে দুধ কিনে একরকম দৌড়তে দৌড়তে বাড়ি ফিরলো।

বাড়িতে ঢুকে দেখে পরী জামা কাপড় বদলে নিয়েছে। অভি হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়িতে ঢুকে মাকে দুধের প্যাকেট দিয়ে পরীর দিকে তাকায়। গায়ে একটা হাল্কা গোলাপি রঙের নাইট গাউন, ফর্সা ত্বকের সাথে বেশ মানিয়েছে। মা পরীর জন্য আগে থেকেই কিনে রেখেছিল। পরীকে বেশ তরতাজা দেখাচ্ছিল, রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে মায়ের সাথে চা বানাচ্ছিল। রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে পরীর রুপ সুধা পান করে অভি। একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে, চোয়াল শক্ত করে নিজেকে সামলে নেয় আর মনে মনে হাসে, কি সুন্দরী দেখাচ্ছে একবার নিরিবিলিতে পেলে হয়। পরী মাঝে মাঝে কাঁধের ওপর দিয়ে অভির দিকে তাকায় আর হাসে। বুঝতে কষ্ট হয় না যে নির্লজ্জের মতন অভি ওর যৌবন পান করছে। অভির চোখ দেখে নাকের ডগা লাল হয়ে ওঠে, মায়ের চোখ লুকিয়ে ঠোঁট কামড়ে সামলে নেয়।

মা অভির দিকে তাকিয়ে বললেন, “এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস? তোর ঘরে যা গিয়ে পড়াশুনা কর। কিছুদিন পরে পরীক্ষা আর তোর কোন হুঁশ জ্ঞান নেই নাকি। খাওয়ার সময়ে গল্প করা যাবে। চা হয়ে গেলে পরী তোকে দিয়ে আসবে খনে।”

মায়ের কথা শুনে অভি একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে পরে। পরী ওর মুখে দেখে বুঝতে পারে ওর মনের অবস্থা।

পরীঃ “তুমি পড়তে যাও আমি কিছু পরে চা দিয়ে আসব।”

অভিঃ “না আমার চা এখুনি চাই তারপরে আমি পড়তে যাব।”

মা বললেন, “ঠিক আছে বসার ঘরে গিয়ে বস চা দিচ্ছি।”

বসার ঘরে গিয়ে টি.ভি চালিয়ে বসলো অভি, কিন্তু টি.ভির কিছুই ভাল লাগছে না। টি.ভি প্রোগ্রামের জায়গায় বারে বারে পরীর মুখ ভেসে আসছে। কিছু পরে পরী ওর জন্য চা নিয়ে বসার ঘরে ঢোকে। একটু ঝুঁকে চা দিতে গিয়ে অভির চোখের সামনে ওর বক্ষ বিভাজন অনাবৃত হয়ে পড়ে। অভির নির্লজ্জ দৃষ্টি পরীর বক্ষ বিভাজনে কেন্দ্রীভূত। পরী ওর চোখের চাহনি দেখে মাথা নাড়ায়, কি নির্লজ্জের মতন তাকিয়ে আছে।

চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই চেঁচিয়ে ওঠে অভি, “চায়ে এক ফোঁটা চিনি হয়নি।”

মা ওদিকে রান্না ঘর থেকে বলেন যে চায়ে চিনি দিয়েছেন।

পরীও থেমে থাকে না, “একদম মিথ্যে কথা বলবে না, চায়ে আমি নিজে চিনি দিয়েছি।”

অভি পরীর দিকে চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “এক চুমুক দিয়ে দেখ বুঝতে পারবে কত চিনি দিয়েছো।”

পরী অভির মুখ দেখে বুঝতে পারে যে অভি কি চায়। লাজুক হেসে অভির হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে চায়ে চুমুক দেয়। ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি মাখিয়ে চায়ের কাপ অভিকে ধরিয়ে দিয়ে নিচু সুরে বলে, “এবারে চিনি হয়েছে। এখন পড়তে যাও।”

পরীর ঠোঁটের সেই দুষ্টু মিষ্টি হাসি অভির হৃদয় তোলপাড় করে তোলে, এক অদ্ভুত অনুভুতির পরশ মাখিয়ে চলে যায়। সামনে বই খোলা কিন্তু অভির পড়ায় মন নেই, খোলা বইয়ের পাতায় শুধু পরীর কাজল কালো চোখ আর ঠোঁটের দুষ্টু মিষ্টি হাসি ভেসে আসে। পায়ের নিচে মেঝে আর তার নিচেই পরী এই কথা চিন্তা করে যেন অভির মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। চুলের এক গুচ্ছ বারে বারে পরীর বাঁ গালের ওপরে এসে চুমু খায় আর বাঁ হাতের আঙুল দিয়ে পরী সেই চুলের গুচ্ছ সরিয়ে দেয় গালের ওপর থেকে, সেই মনোরম দৃশ্য বারে বারে অভির বইয়ের পাতার ওপরে ভেসে আসে আর ওর পড়াশুনা শিকেয় ওঠে। এত কাছে থাকা সত্তেও পরীকে নিজের মতন করে জড়িয়ে ধরতে পারছে না, ওর গায়ের মিষ্টি গন্ধ বুকের মধ্যে নিতে পারছে না। প্রেমের এই ব্যাথা যেন অভিকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলে।

রাতে খাবার টেবিলেও বিশেষ কথা বার্তা হয় না, পরী ওর সামনে বসে তাও দুজনের মধ্যে অনেক দুরত্ব। দুজনের বুকের মধ্যে উত্তাল তরঙ্গ দোলা খায় কিন্তু ওদের এবার থেকে অনেক অনেক বেশি সাবধান হয়ে পা ফেলতে হবে। বাবা মা দুজনেই এক ভ্রান্তির মধ্যে আছেন যে অভি অরুনাকে ভালবাসে আর সেই ভ্রান্তিটাকে ঢাল বানিয়ে রাখতে হবে যতদিন না ঠিকঠাক ভাবে অভি নিজের পায়ে দাঁড়ায় আর তার কঠিন বাবা মায়ের সম্মুখিন হতে পারে।

রাতের খাওয়ার পরে অভি তিন তলায় নিজের ঘরে চলে যায়। এপ্রিল মাসে, কোলকাতায় একটু গরম পড়তে শুরু করেছে। শুতে যাবার আগে জামা কাপড় ছেড়ে শুধু একটা হাফ প্যান্ট পরে হাত মুখ ধুয়ে নিল। বিকেলে পড়া হয়নি, কিছু বাকি আছে সেটা ভাবছে রাতে শেষ করে নেবে। বই খুলে টেবিলে বসে পড়লো, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আবার পরীর লাল ঠোঁটের মিষ্টি হাসি ওকে পাগল করে দিল।

বেশ কিছুক্ষণ পরে মাথার মধ্যে এক ঝিমুনি ভাব চলে আসে। বাইরে ঘন কালো রাত, আসে পাশের বেশির ভাগ বাড়ির আলো বন্ধ হয়ে গেছে। রাত সাড়ে বারোটা বাজে, জানালা দিয়ে বাইরের রাতের আকাশের দিকে তাকালো, আকাশে বাঁকা চাঁদ, ঠিক যেন পরীর হাসি। টিউব লাইট নিভিয়ে দিয়ে টেবিলে ল্যাম্প জ্বালিয়ে নিল অভি। ল্যাম্পের মৃদু হলদে আলো যেন ঘরের মধ্যে এক স্বপ্নরাজ্য বানিয়ে তোলে।

এমন সময়ে পরী চুপিচুপি ওর ঘরের মধ্যে ঢুকে অভির গলার দুপাস থেকে হাত বাড়িয়ে খালি বুকের ওপরে রাখে, আর সেই মিষ্টি পরশে অভির স্বপ্নের শৃঙ্খলা ভেঙে যায়। নাকে ভেসে আসে পরীর গায়ের মিষ্টি গন্ধ, জুঁই ফুলের সুবাস। চোখ বন্ধ করে বুক ভরে পরীর আঘ্রান বুকে টেনে নেয়, ঘাড়ের পেছনে পরীর নরম উষ্ণ বুকের স্পর্শে ধিরে ধিরে অভির শিরা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভির মাথার ওপরে পরী মৃদু গাল ঘষতে শুরু করে। পরীর অনাবৃত উপরি বক্ষ অভির ঘাড়ে ঘষা খেয়ে আগুনের ফুল্কি বের হয়ে যায় যেন। পরী অভির তপ্ত ত্বকের অনুভুতি বুকের ওপরে অনুভব করে মৃদু কেঁপে ওঠে। অভি পরীর হাত হাতে নিয়ে ঠোঁটের কাছে এনে চুমু খায়। দু জনে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকে একে অপরকে। প্রেমের নিস্তব্ধতা বেশ মধুর মনে হয় ওদের।

মৃদুকন্ঠে পরী ওর কানে কানে বলে, “আই মিসড ইউ।”

ঘোরানো চেয়ার ঘুরিয়ে পাতলা কোমর দুহাতে জড়িয়ে পরীকে কাছে টেনে নেয় অভি। কাঁধের ওপরে হাত রেখে মাথার চুল আঁকড়ে ধরে অভির মাথা নিজের নরম বুকের ওপরে চেপে ধরে। অভি ওকে আরও নিবিড় করে নিজের কাছে টেনে নেয়। পরীর গোল নরম পেট অভির নগ্ন বুকের ওপরে পিষে যায়, চিবুক চেপে ধরে কোমল বুকের খাঁজে। মাথা উঁচু করে অভি ওর গভীর আবেগ মাখানো চোখের দিকে তাকায়। সারা শরীরের শক্তি দিয়ে পিষে দেয় পরীর নরম শরীর, যেন পারলে পরীকে নিজের ভেতরে করে নেবে। ঠোঁটে লেগে থাকে এক অনির্বচনীয় মিষ্টি হাসি, আধ খোলা ঠোঁটের মাঝে মুক্ত বসানো দাঁতের পাটি উঁকি মারে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে থাকে আর অভির তপ্ত হাতের পরশে নিজেকে সমর্পণ করে দেয়। সারা মুখে পরীর উষ্ণ নিশ্বাসের ঢেউ খেলে বেড়ায়। নিস্বাসের ফলে, পরীর বুক আর পেট কেঁপে ওঠে আর অভির বুকের ওপরে যেন ঢেউ খেলে যায়।

অভি ফিসফিস করে পরীকে জানায়, “তুমি যখনই আমাকে এই রকম ভাবে জড়িয়ে ধরো তখনি আমি পাগল হয়ে যাই তোমার জন্য।”

পরী ফিসফিস করে উত্তর দেয়, “রতনে রতন চেনে আর শূওরে চেনে কচু।” বলেই হেসে ফেলে।

অভিঃ “মানে আমি স্বর্ণকার তাই তো?”

পরীঃ “না তুমি আমার ছোট্ট শূওর ছানা।”

অভিঃ “আর তাঁর মানে তুমি একটা কচু।”

দুজনেই হেসে ফেলে। পরী চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে যে অভির চোখের চশমা পালটে গেছে।

পরীঃ “তোমার আগের চশমার কি হলো? এটা দেখি নতুন।”

অভি দুষ্টুমি করে পরীর বুকে নাক ঘষে বলে, “তোমার জন্য তো আমার নতুন চশমা নিতে হলো।”

পরী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “আমার জন্য? মানে, আমি কি করলাম?”

অভিঃ “বাঃ রে যেন তুমি কিছু জানো না। সেই রাতের ঘটনার পরে তুমি অরুনাকে ফোন করে সব বলে দিলে। আর সেইদিন কলেজে আমার চশমা গিয়ে পড়লো মেঝেতে।”

পরী উৎসুক হয়ে অভিকে জিজ্ঞেস করে, “কলেজে কি হয়েছিল?”

অভিঃ “সে অনেক কথা।”

পরীঃ “বলো আমাকে তাহলে।”

অভিঃ “হুম, তুমি সকাল সকাল অরুনাকে ফোন করে সব জানিয়ে দিলে। আমি কলেজে পৌঁছলাম, দেখি অরুনা খুব চুপচাপ। একদম আমার সাথে কথা বলছে না, গম্ভির মুখ করে মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছে। লাস্ট পিরিওড পর্যন্ত আমার সাথে কোন কথা বললো না, আমি খুব মর্মাহত হলাম ওর ব্যাবহার দেখে। শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে আমি পুবালিকে জিজ্ঞেস করলাম যে অরুনার কি হয়েছে, কেন ও আমার সাথে কথা বলছে না। পুবালি মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল ওর কাছে কোন খবর নেই, আমি চুপ। লাস্ট পিরিওড শেষ। পুবালি আমাকে চুপ করে বসে থাকতে বললো, আমিও চুপ করে বসে থাকি নিরুপায় হয়ে। অরুনা বারে বারে আমার দিকে কটমট করে তাকায় আর চোখ দেখে মনে হয় যেন এই আমাকে গিলে ফেলবে। ক্লাস থেকে সবাই বেরিয়ে গেল, ক্লাসে শুধু আমরা তিন জন বসে। অরুনা আমার দিকে তাকালো, সিট ছেড়ে উঠে আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমার বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে গেছে।”

“পুবালিকে বললো ক্লাসের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিতে। পুবালি কিছু না বুঝতে পেরে হতবাক হয়ে অরুনার দিকে তাকিয়ে থাকে, অরুনা চেঁচিয়ে ওকে দরজা বন্ধ করতে বলে। ওর গলায় ওই বাঘিনীর মতন আওয়াজ শুনে আমার তো হয়ে গেছে আত্মারাম খাঁচা ছাড়া। আমার সামনে ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মতন দাঁড়িয়ে অরুনা, আমাকে কড়া গলায় বললো উঠে দাঁড়াতে। আমি নিরুপায় হয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কিছু না বলেই আমার গালে সপাটে এক চড় কষিয়ে দিল অরুনা। চড় খেয়ে আমার গাল লাল হয়ে যায়, কান মাথা গরম হয়ে যায়। নাকের ওপর থেকে চশমা মাটিতে পড়ে কাচ ভেঙে যায়। আমি গালে হাত বোলাতে থাকি, গাল খুব জ্বালা করছিল। আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি যে অরুনা আমাকে অত জোরে চড় মারতে পারে।”
 

Users who are viewing this thread

Back
Top