Chapter 3: মাতৃময়ী মূর্তি। (#2)
অভি পরীর কোমল নিতম্বের ওপরে হাত চেপে ধরে আর মৃদু মৃদু চাপ দেয়, কোমল নারী মাংসে। মাঝে মাঝে হাতের চাপ বেশ শক্ত হয়ে ওঠে, নখের আঁচড় কাটে কোমল গোলকে। পরী ওর কোমল শরীরে অভির নখের আঁচড়ের স্পর্শ পেয়ে অভির বুকে হাত চেপে ধরে।
অভি পরীকে উত্যক্ত করার জন্য বলে, “ওদের কথা মনে মনে ভেবে তুমি কি করছিলে শুনি? তোমার গাল লাল হয়ে যায়নি ওদের আওয়াজ শুনে, দুষ্টু মেয়ে।”
পরীঃ “না বাবা ওরা যা আওয়াজ করছিল, আমি শেষ পর্যন্ত টি,ভি র আওয়াজ জোরে করে দেই।”
অভিঃ “মিথ্যে বোলোনা সোনা, তুমিও ওই আওয়াজ গুলো বেশ উপভোগ করছিলে তাই না।”
পরী লজ্জায় লাল হয়ে যায়, লজ্জা ঢাকার জন্য নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে। পরীর নরম পেছনে অভির হাত যেন থেমে থাকতে পারে না, বারে বারে মুঠি মুঠি শরীরের অংশ নিয়ে হাত দিয়ে চাপে। হাতের তালুর নিচে অভি অনুভব করলো যে পরীর গায়ের কাপড়ের নিচে কিছু নেই, সেটা ভেবেই মাথার মধ্যে কামনার আগুন চাগিয়ে উঠল অভির।
অভি মৃদুকন্ঠে পরীকে বলে, “ভেরি সরি সোনা আজ আমি তোমার সাথে সিনেমা দেখতে যেতে পারিনি।”
পরীঃ “সেটা ঠিক আছে, তার জন্য তো আমি রাগ করিনি। তোমার পরীক্ষা কাছে আসছে তোমার ভাল করে পড়াশুনা করা উচিত। দেখ আড়াইটে বেজে গেছে এবারে শুয়ে পড়ো।”
অভি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে ওকে বাহুপাশে বেঁধে ফেলে। পরী ওদের দুজনের শরীরের মাঝে হাত এনে অভির বুকের ওপরে হাত রাখে, মুখ উঁচু করে অভির মুখের দিকে তাকায়। মাথা নিচু করে অভি আলতো করে পরীর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।
কানে কানে বলে, “রাতে আমার সাথে এখানে শুয়ে পড়ো।”
পায়ের বুড়ো আঙুলের ওপর ভর দিয়ে ওর কপাল ছুঁতে যায় পরী। কপালে ঠোঁট দিয়ে চুমু খাবার পরে অভির ঠোঁটের ওপরে গরম নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলে, “না সোনা, তুমি আমার কোলে মাথা রেখে বিছানায় শুয়ে পড়ো, আমি তোমার চুলে বিলি কেটে দেই, দেখবে খুব আরাম লাগবে।”
পরী হাঁটু গেড়ে বিছানার ওপরে বসে পড়ে, অভি ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। পরী খুব আদরে অভির চুলে বিলি কেটে দেয়। অভি ওর কোমর জড়িয়ে ধরে থাকে। দু’জনের বুকের ভেতর এক অনাবিল প্রেমের আলো বিচ্ছুরিত হয়, সেই প্রেমে কোন কামনার লেশ নেই, বাসনার লেশ নেই, এ যেন এক সুন্দর ধবধবে সাদা প্রেমের বন্ধন।
অভিঃ “পরী...”
পরীঃ “হুম বলো।”
অভিঃ “সুব্রত আর মৈথিলী আমার সাথে অরুনিমার সম্পর্ক তৈরি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।”
পরীঃ “আমি জানি অভি, আর এও জানি সেই জন্য তুমি আজ ওদের বাড়ি যাচ্ছো না। তোমার ওপরে যে আমার অগাধ বিশ্বাস আছে অভি।”
অভি আজ বিকেলের কথা সব পরীকে জানালো, সুব্রত ওকে কি বলেছে, মৈথিলী ওর দিকে কেমন করে তাকিয়েছিল আর যা যা কিছু ঘটেছে সব কিছু পরীকে বলে দিল। পরী ওর কথা শুনে মিষ্টি হেসে জানিয়ে দিল যে ওর নিজের হৃদয়ের ওপরে মানে অভির ওপরে অগাধ বিশ্বাস যে অভি ওকে ছেড়ে কোনদিন যাবে না। কিন্তু সুব্রতর কথা শুনে মনে একটু সংশয় জেগে উঠলো পরীর, “আমি তো ঘুণাক্ষরেও ওদের মতলব বুঝতে পারছিনা অভি, যাই হোক দেখা যাক কি করতে চায় ওরা।”
পরী ওর দিকে একটু ঝুঁকে এলো, অভি নাকের ওপরে নাক ঘষে বললো, “তুমি সত্যি অনেক সুন্দরী আর বুদ্ধিমতী, পরী।”
পরীঃ “আমি না তোমার চেয়ে দু বছরের বড়, তাই তো তোমার চেয়ে আমার মাথায় কিছুটা বেশি বুদ্ধি আছে।”
অভি ভাবলো এবারে ওকে অরুনার কথা জানানো যেতে পারে, “পরী, আমি তোমাকে একটা সত্যি কথা বলতে চাই। আমি আজ প্রাক্টিকাল ক্লাস করিনি।”
আঁতকে ওঠে পরী, “মানে? কি করেছো তাহলে?”
অভি একটু চিন্তায় পড়ে যায়, তারপরে বলে, “আজ আমি আমার সব থেকে ভাল বান্ধবীর সাথে ছিলাম, তার নাম অরুন্ধুতি ব্যানার্জি।”
পরীর হাত থেমে যায়, চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে ফেলে পরী। বুকের মধ্যে হটাত করে কেউ যেন বাড়ি মেরে দিয়েছে। অভির কথা শুনে ক্ষণিকের জন্য বুক দুরুদুরু করে কেঁপে ওঠে, কি বলতে চাইছে অভি? হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির মুখের দিকে। অভি ওর চোখের চাহনি দেখে পরীর মনে ভাব বুঝতে পারে। পরীর মনের ভেতরে এক উত্তাল তরঙ্গ আছড়ে পড়ে যেন, “কি করে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ভাল বন্ধু হতে পারে? না সেটা ঠিক নয়, অভি কেন বলেনি আগে, কেন আমাকে এত বড় একটা ভ্রান্তিতে ডুবিয়ে রেখেছোে?”
মাথা নাড়ালো অভি, “কি দেখছো ওই রকম ভাবে আমার দিকে?”
পরী কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে, “তুমি তো কোনদিন আমাকে জানাও নি যে তোমার কোন ভালো বান্ধবী আছে মানে গার্লফ্রেন্ড।”
অভিঃ “না পরী না, তুমি আমাকে ভুল বুঝেছো।” মাথা নাড়ে অভি, “অনেক বড় গল্প পরী, কিন্তু আজ তোমাকে আমি সেই গল্প বলবো।”
অভি ওর জীবন কাহিনী পরীর সামনে মেলে ধরে। মায়ের কথা, বাবার কথা, সবসময়ে ওর ওপরে বাবা মায়ের চাপ, যেন পয়সাই সব। ভালবাসা কি ঠিক যেন বুঝে উঠতে পারেনি অভি। ছোটো বেলায় চাকরদের কাছে আর তারপরে হস্টেলে জীবনের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত হয়েছে। পড়াশুনায় ভাল ছিল অভি, তাঁর সাথে সাথে ভাল আঁকতো। মনে খুব ইচ্ছে ছিল যে বড় হয়ে খুব বড় এক চিত্রকর হয়। বাবা মাকে জানিয়েছিল মনের অভিপ্রায়, কিন্তু না তাদের কথা, যে ওদের পরিবারের কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, এমত অবস্থায় অভি যদি সামান্য এক চিত্রকর হয় তাহলে কি করে সবাইকে মুখ দেখাবে বাবা মা। মা স্কুলের শিক্ষিকা, বাবা এয়ারপোর্ট অথরিটির বড় ম্যানেজার, এই অবস্থায় অভি কিছুতেই চিত্রকর হতে পারে না। এত পয়সা খরচ করে ওর বাবা মা ওকে সব থেকে ভাল স্কুলে পড়িয়েছে আর অভি যখন ভালো ফল আনতে পেরেছে তাহলে ওকে বিজ্ঞান নিয়েই পড়তে হবে। উচ্চমাধ্যমিকেও ওকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হলো শেষ পর্যন্ত। পরী চুপ করে অভির কথা শোনে, কাহিনী বলতে বলতে অভির চোখের কোল যেন একটু চিকচিক করে আসে। ভেতরটা যেন কঁকিয়ে ওঠে বেদনায়। পরী আলতো করে অভির কপালে হাত বুলিয়ে দেয়, ওর কথা শুনে পরীর চোখের কোলেও জল চলে আসে।
কম্পিত স্বরে বলে, “আমি এ সব জানি, ছোটো মা আজ আমাকে তোমার কথা বলছিল।”
অভি চমকে ওঠে, “কি? মা তোমাকে এই সব কথা বলেছে?”
পরীঃ “হ্যাঁ সোনা। ছোটো মা তোমাকে বড় করার জন্য যা করেছে সেই সব বলেছে আর তুমি ছোটো মায়ের কথা একদম শোনো না তাই বলেছে। নদীর সবসময়ে দু’ধার দেখা উচিত না হলে নদীর কথা বোঝা দায় হয়ে ওঠে, তাই না। এখন বুঝেছি আমি তোমার কষ্ট, আমি ছোটো মাকে বুঝিয়ে বলবো খনে। দেখ সোনা, মনের ঘা এমন ঘা যে ঠিক তো হয়ে যায় সময়ের সাথে কিন্তু একটা কাটা দাগ চিরদিনের জন্য রেখাপাত করে রেখে যায়। আমি আপ্রান চেষ্টা করবো তোমার সেই দাগ মুছে দেবার জন্য।” চোখের কোল মুছে অভিকে জিজ্ঞেস করে, “এবারে বলো তো যা আমি জানি না। কে এই অরুন্ধুতি ব্যানার্জি?”
অভি ওর কলেজের গল্প বলতে শুরু করে, অনুসূয়ার কথা তারপরে পুবালির কথা। সবশেষে অরুনার কথা। সব কিছু শুনে পরী একটু ঝুঁকে অভির কপালে মিষ্টি করে একটি চুমু খেয়ে বলে, “তোমার দেবী, অরুনার সাথে কবে দেখা করাচ্ছো?”
অভি মৃদু হেসে বলে, “অরুনাও তোমার সাথে দেখা করতে চায়।” ওর হাত দুটি বুকের ওপরে চেপে ধরে অভি।
পরী ঘড়ির দিকে দেখে চমকে ওঠে, “আরে সাড়ে চারটে বাজে যে।”
অভি ওর হাত টেনে বলে, “পরী, এই তোমার অভিমন্যু, তোমার সামনে খোলা বইয়ের মতন রাখা।”
পরী অভির মাথার নিচে একটা বালিশ টেনে দিয়ে ওর পাশে বসে। নরম হাতে অভির গালের ওপরের জলের দাগ মুছে দেয়। আস্তে করে চোখ থেকে চশমা খুলে ভাঁজ করে মাথার পেছনে রাখে।
আলতো করে গালে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “অতীত কখন ভুলতে নেই অভি, অতীত আমাদের ভবিষ্যতের সিঁড়ি, অতীত আমাদের অনেক কিছু শেখায়। জীবন একটি চক্রের মতন অভি, কোন একসময়ে হয়তো আমাদের অতীত আমাদের সামনে এসে দাঁড়াতে পারে, তখন আমরা দু’জনে মিলে এক সাথে তার সামনা করবো। এখন একটু বিশ্রাম করো ছোট্ট সোনা, আজকে আবার শপিংয়ে বের হতে হবে তাই না।”
অভির মাথা বুক একদম খালি হয়ে আসে, কে এই নারী? কে এই পরী, “তুমি কে?” গলা ধরে আসে অভির।
পরী ওর মুখের ওপরে ঝুঁকে পড়ে, কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে উত্তর দেয়, “আমি তোমার পরী, বুদ্ধিতে তোমার মন্ত্রি, সুন্দরী আর ধনে আমি লক্ষ্মী, আমি ধরিত্রী তোমাকে বোঝার জন্য আর আমি তোমার মা তোমাকে ভালবাসা আর স্নেহে ভরিয়ে তোলার জন্য, শয়নে আমি রম্ভা আর মেনকা, আমি তোমার পরী।”
পরী ওর খোলা চোখের ওপরে আঙুল রেখে চোখের পাতা বন্ধ করে দেয়। মিষ্টি গলায় বলে, “শুয়ে পড়ো ছোট্ট রাজকুমার আমার।”
অভি পরীর কোমল নিতম্বের ওপরে হাত চেপে ধরে আর মৃদু মৃদু চাপ দেয়, কোমল নারী মাংসে। মাঝে মাঝে হাতের চাপ বেশ শক্ত হয়ে ওঠে, নখের আঁচড় কাটে কোমল গোলকে। পরী ওর কোমল শরীরে অভির নখের আঁচড়ের স্পর্শ পেয়ে অভির বুকে হাত চেপে ধরে।
অভি পরীকে উত্যক্ত করার জন্য বলে, “ওদের কথা মনে মনে ভেবে তুমি কি করছিলে শুনি? তোমার গাল লাল হয়ে যায়নি ওদের আওয়াজ শুনে, দুষ্টু মেয়ে।”
পরীঃ “না বাবা ওরা যা আওয়াজ করছিল, আমি শেষ পর্যন্ত টি,ভি র আওয়াজ জোরে করে দেই।”
অভিঃ “মিথ্যে বোলোনা সোনা, তুমিও ওই আওয়াজ গুলো বেশ উপভোগ করছিলে তাই না।”
পরী লজ্জায় লাল হয়ে যায়, লজ্জা ঢাকার জন্য নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে। পরীর নরম পেছনে অভির হাত যেন থেমে থাকতে পারে না, বারে বারে মুঠি মুঠি শরীরের অংশ নিয়ে হাত দিয়ে চাপে। হাতের তালুর নিচে অভি অনুভব করলো যে পরীর গায়ের কাপড়ের নিচে কিছু নেই, সেটা ভেবেই মাথার মধ্যে কামনার আগুন চাগিয়ে উঠল অভির।
অভি মৃদুকন্ঠে পরীকে বলে, “ভেরি সরি সোনা আজ আমি তোমার সাথে সিনেমা দেখতে যেতে পারিনি।”
পরীঃ “সেটা ঠিক আছে, তার জন্য তো আমি রাগ করিনি। তোমার পরীক্ষা কাছে আসছে তোমার ভাল করে পড়াশুনা করা উচিত। দেখ আড়াইটে বেজে গেছে এবারে শুয়ে পড়ো।”
অভি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে ওকে বাহুপাশে বেঁধে ফেলে। পরী ওদের দুজনের শরীরের মাঝে হাত এনে অভির বুকের ওপরে হাত রাখে, মুখ উঁচু করে অভির মুখের দিকে তাকায়। মাথা নিচু করে অভি আলতো করে পরীর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।
কানে কানে বলে, “রাতে আমার সাথে এখানে শুয়ে পড়ো।”
পায়ের বুড়ো আঙুলের ওপর ভর দিয়ে ওর কপাল ছুঁতে যায় পরী। কপালে ঠোঁট দিয়ে চুমু খাবার পরে অভির ঠোঁটের ওপরে গরম নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলে, “না সোনা, তুমি আমার কোলে মাথা রেখে বিছানায় শুয়ে পড়ো, আমি তোমার চুলে বিলি কেটে দেই, দেখবে খুব আরাম লাগবে।”
পরী হাঁটু গেড়ে বিছানার ওপরে বসে পড়ে, অভি ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। পরী খুব আদরে অভির চুলে বিলি কেটে দেয়। অভি ওর কোমর জড়িয়ে ধরে থাকে। দু’জনের বুকের ভেতর এক অনাবিল প্রেমের আলো বিচ্ছুরিত হয়, সেই প্রেমে কোন কামনার লেশ নেই, বাসনার লেশ নেই, এ যেন এক সুন্দর ধবধবে সাদা প্রেমের বন্ধন।
অভিঃ “পরী...”
পরীঃ “হুম বলো।”
অভিঃ “সুব্রত আর মৈথিলী আমার সাথে অরুনিমার সম্পর্ক তৈরি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।”
পরীঃ “আমি জানি অভি, আর এও জানি সেই জন্য তুমি আজ ওদের বাড়ি যাচ্ছো না। তোমার ওপরে যে আমার অগাধ বিশ্বাস আছে অভি।”
অভি আজ বিকেলের কথা সব পরীকে জানালো, সুব্রত ওকে কি বলেছে, মৈথিলী ওর দিকে কেমন করে তাকিয়েছিল আর যা যা কিছু ঘটেছে সব কিছু পরীকে বলে দিল। পরী ওর কথা শুনে মিষ্টি হেসে জানিয়ে দিল যে ওর নিজের হৃদয়ের ওপরে মানে অভির ওপরে অগাধ বিশ্বাস যে অভি ওকে ছেড়ে কোনদিন যাবে না। কিন্তু সুব্রতর কথা শুনে মনে একটু সংশয় জেগে উঠলো পরীর, “আমি তো ঘুণাক্ষরেও ওদের মতলব বুঝতে পারছিনা অভি, যাই হোক দেখা যাক কি করতে চায় ওরা।”
পরী ওর দিকে একটু ঝুঁকে এলো, অভি নাকের ওপরে নাক ঘষে বললো, “তুমি সত্যি অনেক সুন্দরী আর বুদ্ধিমতী, পরী।”
পরীঃ “আমি না তোমার চেয়ে দু বছরের বড়, তাই তো তোমার চেয়ে আমার মাথায় কিছুটা বেশি বুদ্ধি আছে।”
অভি ভাবলো এবারে ওকে অরুনার কথা জানানো যেতে পারে, “পরী, আমি তোমাকে একটা সত্যি কথা বলতে চাই। আমি আজ প্রাক্টিকাল ক্লাস করিনি।”
আঁতকে ওঠে পরী, “মানে? কি করেছো তাহলে?”
অভি একটু চিন্তায় পড়ে যায়, তারপরে বলে, “আজ আমি আমার সব থেকে ভাল বান্ধবীর সাথে ছিলাম, তার নাম অরুন্ধুতি ব্যানার্জি।”
পরীর হাত থেমে যায়, চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে ফেলে পরী। বুকের মধ্যে হটাত করে কেউ যেন বাড়ি মেরে দিয়েছে। অভির কথা শুনে ক্ষণিকের জন্য বুক দুরুদুরু করে কেঁপে ওঠে, কি বলতে চাইছে অভি? হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির মুখের দিকে। অভি ওর চোখের চাহনি দেখে পরীর মনে ভাব বুঝতে পারে। পরীর মনের ভেতরে এক উত্তাল তরঙ্গ আছড়ে পড়ে যেন, “কি করে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ভাল বন্ধু হতে পারে? না সেটা ঠিক নয়, অভি কেন বলেনি আগে, কেন আমাকে এত বড় একটা ভ্রান্তিতে ডুবিয়ে রেখেছোে?”
মাথা নাড়ালো অভি, “কি দেখছো ওই রকম ভাবে আমার দিকে?”
পরী কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে, “তুমি তো কোনদিন আমাকে জানাও নি যে তোমার কোন ভালো বান্ধবী আছে মানে গার্লফ্রেন্ড।”
অভিঃ “না পরী না, তুমি আমাকে ভুল বুঝেছো।” মাথা নাড়ে অভি, “অনেক বড় গল্প পরী, কিন্তু আজ তোমাকে আমি সেই গল্প বলবো।”
অভি ওর জীবন কাহিনী পরীর সামনে মেলে ধরে। মায়ের কথা, বাবার কথা, সবসময়ে ওর ওপরে বাবা মায়ের চাপ, যেন পয়সাই সব। ভালবাসা কি ঠিক যেন বুঝে উঠতে পারেনি অভি। ছোটো বেলায় চাকরদের কাছে আর তারপরে হস্টেলে জীবনের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত হয়েছে। পড়াশুনায় ভাল ছিল অভি, তাঁর সাথে সাথে ভাল আঁকতো। মনে খুব ইচ্ছে ছিল যে বড় হয়ে খুব বড় এক চিত্রকর হয়। বাবা মাকে জানিয়েছিল মনের অভিপ্রায়, কিন্তু না তাদের কথা, যে ওদের পরিবারের কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, এমত অবস্থায় অভি যদি সামান্য এক চিত্রকর হয় তাহলে কি করে সবাইকে মুখ দেখাবে বাবা মা। মা স্কুলের শিক্ষিকা, বাবা এয়ারপোর্ট অথরিটির বড় ম্যানেজার, এই অবস্থায় অভি কিছুতেই চিত্রকর হতে পারে না। এত পয়সা খরচ করে ওর বাবা মা ওকে সব থেকে ভাল স্কুলে পড়িয়েছে আর অভি যখন ভালো ফল আনতে পেরেছে তাহলে ওকে বিজ্ঞান নিয়েই পড়তে হবে। উচ্চমাধ্যমিকেও ওকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হলো শেষ পর্যন্ত। পরী চুপ করে অভির কথা শোনে, কাহিনী বলতে বলতে অভির চোখের কোল যেন একটু চিকচিক করে আসে। ভেতরটা যেন কঁকিয়ে ওঠে বেদনায়। পরী আলতো করে অভির কপালে হাত বুলিয়ে দেয়, ওর কথা শুনে পরীর চোখের কোলেও জল চলে আসে।
কম্পিত স্বরে বলে, “আমি এ সব জানি, ছোটো মা আজ আমাকে তোমার কথা বলছিল।”
অভি চমকে ওঠে, “কি? মা তোমাকে এই সব কথা বলেছে?”
পরীঃ “হ্যাঁ সোনা। ছোটো মা তোমাকে বড় করার জন্য যা করেছে সেই সব বলেছে আর তুমি ছোটো মায়ের কথা একদম শোনো না তাই বলেছে। নদীর সবসময়ে দু’ধার দেখা উচিত না হলে নদীর কথা বোঝা দায় হয়ে ওঠে, তাই না। এখন বুঝেছি আমি তোমার কষ্ট, আমি ছোটো মাকে বুঝিয়ে বলবো খনে। দেখ সোনা, মনের ঘা এমন ঘা যে ঠিক তো হয়ে যায় সময়ের সাথে কিন্তু একটা কাটা দাগ চিরদিনের জন্য রেখাপাত করে রেখে যায়। আমি আপ্রান চেষ্টা করবো তোমার সেই দাগ মুছে দেবার জন্য।” চোখের কোল মুছে অভিকে জিজ্ঞেস করে, “এবারে বলো তো যা আমি জানি না। কে এই অরুন্ধুতি ব্যানার্জি?”
অভি ওর কলেজের গল্প বলতে শুরু করে, অনুসূয়ার কথা তারপরে পুবালির কথা। সবশেষে অরুনার কথা। সব কিছু শুনে পরী একটু ঝুঁকে অভির কপালে মিষ্টি করে একটি চুমু খেয়ে বলে, “তোমার দেবী, অরুনার সাথে কবে দেখা করাচ্ছো?”
অভি মৃদু হেসে বলে, “অরুনাও তোমার সাথে দেখা করতে চায়।” ওর হাত দুটি বুকের ওপরে চেপে ধরে অভি।
পরী ঘড়ির দিকে দেখে চমকে ওঠে, “আরে সাড়ে চারটে বাজে যে।”
অভি ওর হাত টেনে বলে, “পরী, এই তোমার অভিমন্যু, তোমার সামনে খোলা বইয়ের মতন রাখা।”
পরী অভির মাথার নিচে একটা বালিশ টেনে দিয়ে ওর পাশে বসে। নরম হাতে অভির গালের ওপরের জলের দাগ মুছে দেয়। আস্তে করে চোখ থেকে চশমা খুলে ভাঁজ করে মাথার পেছনে রাখে।
আলতো করে গালে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “অতীত কখন ভুলতে নেই অভি, অতীত আমাদের ভবিষ্যতের সিঁড়ি, অতীত আমাদের অনেক কিছু শেখায়। জীবন একটি চক্রের মতন অভি, কোন একসময়ে হয়তো আমাদের অতীত আমাদের সামনে এসে দাঁড়াতে পারে, তখন আমরা দু’জনে মিলে এক সাথে তার সামনা করবো। এখন একটু বিশ্রাম করো ছোট্ট সোনা, আজকে আবার শপিংয়ে বের হতে হবে তাই না।”
অভির মাথা বুক একদম খালি হয়ে আসে, কে এই নারী? কে এই পরী, “তুমি কে?” গলা ধরে আসে অভির।
পরী ওর মুখের ওপরে ঝুঁকে পড়ে, কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে উত্তর দেয়, “আমি তোমার পরী, বুদ্ধিতে তোমার মন্ত্রি, সুন্দরী আর ধনে আমি লক্ষ্মী, আমি ধরিত্রী তোমাকে বোঝার জন্য আর আমি তোমার মা তোমাকে ভালবাসা আর স্নেহে ভরিয়ে তোলার জন্য, শয়নে আমি রম্ভা আর মেনকা, আমি তোমার পরী।”
পরী ওর খোলা চোখের ওপরে আঙুল রেখে চোখের পাতা বন্ধ করে দেয়। মিষ্টি গলায় বলে, “শুয়ে পড়ো ছোট্ট রাজকুমার আমার।”