Chapter 5: পরবর্তী অভিযান। (#4)
আলিঙ্গন এবং প্রেমের আদর, এই কনকনে ঠাণ্ডায় হোটেলের ঘরের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দেয় আবার। সন্ধ্যের পরেই বিজলি চলে যায়, অগত্যা ওদের কাঠের উনুন জ্বালাতে হয় ঘর গরম করার জন্য। হলদে লাল মিশানো আলোতে সেই অন্ধকারে পরীকে যেন সোনার প্রতিমার মতন দেখতে লাগে।
রাতের খাবার পরে পরী গাউন খুলে একটা লাল রঙের নাইট ড্রেস গায়ে চড়িয়ে নেয়, লম্বা সেই নাইটড্রেস পরীর সারা অঙ্গ ঢেকে রাখে পায়ের গোড়ালি অবধি। কাপড় খুবই পাতলা থাকার দরুন পরীর অঙ্গের প্রতিটি সুন্দর বাঁক খুব নিখুঁত ভাবে প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে ওই নাইটড্রেসের নিচ থেকে। অভি ওর কমনীয় সৌন্দর্যয় মুগ্ধ হয়ে আর থাকতে পারেনা, নিস্পলক চোখে ক্ষুধার্ত শিকারির মতন পান করে পরীর কমনীয়তা মাখান নরম শরীর। পরী ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে অভি কি চায়, মিটিমিটি করে হাসে অভির দিকে আর রাতের প্রসাধনীর দিকে মন দেয়।
প্রসাধনি শেষে উঠে দাঁড়াল পরী, হাঁটু গেড়ে পরীর সামনে বসে পরে অভি, ওর আনা সেই ছোট্ট উপহার, বুদ্ধের ছোট্ট মূর্তি দেবার জন্য। পকেট থেকে বের করে ওর হাতের মধ্যে রেখে দেয় বুদ্ধ মূর্তির প্যাকেট।
পরী প্যাকেটটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “এটা আবার কি?”
অভি ওকে ইশারায় বলে, খুলে দেখতে। আস্তে আস্তে প্যাকেটের মোড়ক খুলে বের করে ব্রোঞ্জের ছোট্ট বুদ্ধ মূর্তি। মূর্তি দেখে পরী অভিভুত হয়ে যায়। অভি ওর ডান হাত নিজের হাতে নিয়ে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে বলে, “আই লাভ ইউ পরী।”
পরী হেসে উত্তর দেয়, “কিন্তু সোনা আমি যে তোমার জন্য কিছু কিনিনি।”
হাঁটু গেড়ে ওর দিকে হেঁটে যায় অভি, ওর পাতলা কোমর দুহাতে জড়িয়ে সুগভীর নাভির ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে অভি। পরী ওর মাথার চুলে বিলি কেটে দেয়। কোমল পেটের ওপরে গাল আর ঠোঁট ঘষতে ঘষতে ফিসফিস করে বলে, “আমার উপহার তো আমি অনেক আগেই পেয়ে গেছি সোনা। আমার উপহার তো আমার বাহুপাশে বদ্ধ।”
টেবিলের ওপরে অভির দাড়ি কাটার রেজর ছিল, পরী ওটা হাতে নিয়ে নিল। অভি কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, “কি করছো?”
পরী ওর দিকে মিটি মিটি হেসে, নিজের বাঁ হাতের তর্জনীর ওপরে ফুটিয়ে দিল ব্লেড। রক্ত বেরিয়ে এলো কাটা আঙুলের ডগা থেকে। হতবাক হয়ে গেল অভি, ওর দিকে চিৎকার করে বললো, “তুমি পাগল হলে নাকি? হটাত আঙুল কাটতে গেলে কেন তুমি?” অভি রক্ত বন্ধ করার জন্য, ওর আঙুল মুখে নিয়ে চুষতে শুরু করলো।
ধিরে ধিরে অভির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো পরী, মুখের থেকে আঙুল টেনে নিল এবারে। অভির চোখে চোখ রেখে গালে আলতো করে টোকা দিয়ে বললো, “আমি এটাই চাইছিলাম অভি। আমি চাইছিলাম আমার এক ফোঁটা রক্ত তোমার রক্তের সাথে মিশে যেতে, যাতে আমি তোমার কাছে না থাকলেও আমার কিছু তোমার কাছে সবসময়ে থাকে।”
আবেগে অভি আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না, গলার কাছে যেন কান্নাটা দলা পাকিয়ে উঠলো, খনিকের মধ্যেই চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেল। পরী ওর মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে বুকের ওপরে চেপে ধরলো, অভি দুহাতে ওর কোমর জড়িয়ে ধরলো। ফুঁপিয়ে উঠল অভি, পরীর ভালবাসার ছোঁয়ায় চোখের বাঁধ ভেঙে গেল।
পরী ওর পিঠের হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে, অভি ঘন ঘন ওর বুকের ওপরে মাথা ঘষতে থাকে। পরী ওকে বলে, “এই পাগলা ছেলে এর জন্যে কাঁদে নাকি? তুমি না আমার ছোট্ট সে রাজকুমার যে আমার জন্য আমার পুতুলের ঘর বানিয়ে দেবে।” বলতে বলতে আবেগে পরীরও গলা ধরে আসে। কাঁপা গলায় বলে, “আমি তো তোমার কাছে আছি, কাঁদছো কেন। তোমার পরী তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।”
ওর বুকের কাপড়ের ওপরে চোখ মোছে অভি। পরী ওকে জড়িয়ে ওর পিঠের ওপরে হাত বোলাতে থাকে আর মাথার চুলে বিলি কাটতে থাকে। পরী মধু ঢালা সুরে বলে, “আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না অভি, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি সোনা।”
কথা শুনে বুকের মাঝের মসৃণ ত্বকের ওপরে গাল ঘষে দেয় অভি, দু’জনের ত্বকের ঘর্ষণের ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুই প্রান। পরীর কোমল বক্ষ পিষে দেয় মুখের ওপরে। নগ্ন ত্বকের ওপরে অভির উত্তপ্ত ঠোঁটের পরশে মৃদু কঁকিয়ে ওঠে পরী। ছোটো ছোটো চুমুতে পরীর উন্নত কোমল বক্ষের উপরি অংশ ভরিয়ে তোলে, ফর্সা ত্বকের ওপরে দাঁতের লাল দাগ দেখা দেয়। প্রেমে প্রজ্বালিত পরী আরও শক্ত করে অভির মাথা নিজের বুকের পরে চেপে ধরে, নিজের বুক দুটি ওর মুখের ওপরে পিষে দিতে চেষ্টা করে। পাতলা আবরনের ওপরে দিয়েই উন্নত বক্ষ যুগলের ওপরে নিপীড়ন শুরু করে দেয়। অভির বুকের মাঝে কামনার তীব্র আগুন জ্বলে ওঠে। কোমর থেকে হাত নেমে যায় পরীর কোমল নিতম্বের ওপরে, পিষে ফেলে পরীর নরম নারী মাংস নিজের থাবার মধ্যে। পরী থেমে থাকে না, মাথার ওপরে গাল ঘষতে শুরু করে আর চুলের মুঠি করে ধরে চেপে ধরে মাথা বুকের মধ্যে। যেন প্রাণপণে চাইছে ওর মাথা নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে নেবার জন্য।
কামাগ্নির জ্বালায় পরী মৃদুকন্ঠে অভিকে বলে, “অভি আমাকে তোমার করে নাও, আমি আর পারছিনা। আমাকে এত ভালবাসো যেন আজ আমাদের জীবনের শেষ রাত।”
আদর ঘনিভুত হয়ে ওঠে, উনুনের আগুন যেন ওদের শরীরের আগুনের চেয়ে ধিমে জ্বলছে। একে অপরকে প্রেম আর ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে তুললো। ধিরে ধিরে ওরা ভালবাসার ক্ষীরোদ সাগরে ডুব দেয়।
পরের দিন শনিবার, বেশির ভাগ সময় কেটে গেল রাস্তায়। সকাল সকাল নাকো থেকে বেরিয়ে পড়ছে ওরা। খাব ব্রিজ পর্যন্ত পৌঁছতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি। খাব ব্রিজ পৌঁছে পরী অভিকে জিজ্ঞেস করলো যে ও গাড়ি থেকে নেমে একটা পাথর নিয়ে যেতে পারে কিনা। অভি ওকে সম্মতি দিল, পরী নেমে গেল স্পিতি নদীর তীরে, একটা ছোটো গোল পাথর কুড়িয়ে নিল। নাকো থেকে পোয়ারি পর্যন্ত বেশির ভাগ সময়ে পরী বিশেষ কথাবার্তা বলেনি, মাঝে মধ্যে শুধু একটু এদিক ওদিককার কথাবার্তা ছাড়া। সারাটা সময় শুধু অভির হাত চেপে ধরে ছিল পরী। পোয়ারির পর থেকে রাস্তায় একটু কুয়াশা জমতে শুরু করে, আকাশ মেঘলা করে আসে। সূর্য মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে, বাইরের আবহাওয়ায় যেন বিষণ্ণতার সুর বেজে ওঠে, সেই বিষণ্ণতা পরীর আর অভির বুকের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এই পাহাড়, এই স্পিতি, বাপ্সা আর শতদ্রু নদী যেন ওদের যেতে দিতে চাইছেনা। এই আকাশ বাতাস যেন বারে বারে কেঁদে উঠছে আর বলছে, “যেওনা তোমরা।” পোয়ারি ছাড়াতেই পরী অভির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। অভি ওর ঘুমন্ত চেহারার পানে এক ভাবে চেয়ে থাকে আর দেখে ওর গোল মুখ। নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে পড়ে পরী, অভির কাছ থেকে কেউ ওকে সরিয়ে নিতে পারবেনা।
জিওরি পৌঁছতে প্রায় সাড়ে তিনটে বেজে গেল। কুয়াশা যেন আরও ঘনিভুত হয়ে পাহাড়ের কোল বেয়ে নেমে এসেছো রাস্তার ওপরে। কিছু দূর আরও চলার পরে রাস্তা আর দেখা যাচ্ছে না, এমন কুয়াশা ওদের ঘিরে এলো। অভি বলবিন্দারকে গাড়ি থামাতে বললো কেননা এই ঘন কুয়াশায় গাড়ি চালানো খুব বিপদজনক। গাড়ি থামতেই পরী ঘুম থেকে উঠে পড়ে অভিকে জিজ্ঞেস করলো যে ওরা সিমলা পৌঁছেছে কিনা। অভি জানালো যে রাস্তায় অনেক কুয়াশা সেই জন্য রাতে ওরা জিওরিতে থেকে যাবে। কাল সকালবেলা এখান থেকে সোজা কালকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে।
অভি গাড়ি থেকে নেমে আসেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলো যে এখানে থাকার কোন জায়গা আছে কিনা, জানতে পারলো যে পাহাড়ের কিছু উপরে সাহারান নামে একটা জায়গায় হোটেল পাওয়া যাবে। অভি বলবিন্দারের দিকে তাকালো, জিজ্ঞেস করলো যে এই কুয়াশায় গাড়ি চালাতে পারবে কিনা। বলবিন্দার মাথা নাড়িয়ে জানালো যে, একটু সাবধানে গাড়ি চালালে বিশেষ কোন অসুবিধা হবে না সাহারান পৌঁছতে। গাড়ির মধ্যে চেয়ে দেখলো, পরী চোখে একটু ভয় ভয় ভাব।
অভি মাথা নেড়ে অভয় দিয়ে বললো যে, “কিছু চিন্তা কোরো না।”
পরী ওর দিকে হেসে উত্তর দিল, “তুমি কাছে থাকতে আমার ভয় কি।”
গাড়ি খাড়া চড়াই চড়তে শুরু করে, চারদিকে কুয়াশা। রাস্তা খুব সঙ্কীর্ণ, দুপাসে গাছপালাতে ভর্তি, মাঝে মাঝে গাছপালা যেন রাস্তার ওপরে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। সাহারান পৌঁছতে আরও এক ঘন্টা লেগে গেল। ভিমাকালি মন্দিরের পাশেই ওরা একটা হোটেল পেয়ে গেল।
ঠাণ্ডা আর রাস্তার অবস্থার জন্য দু’জনেই বেশ ক্লান্ত। তাড়াতাড়ি রাতের খাবার শেষ করে অভি বিছানায় উঠে পড়লো। পরী ব্যাগ গুছাতে শুরু করলো। অতি সাবধানে এক একটা জিনিস আলাদা আলাদা ব্যাগে রাখতে থাকে। দুই বাড়ির কেউ জানে না ওরা একসাথে ঘুরতে এসেছে তাই একজনের জিনিস যদি আরেক জনের ব্যাগের মধ্যে পাওয়া যায় তাহলে জানাজানি হবার ভয় আছে।
পরী অভিকে জিজ্ঞেস করলো, “একখান থেকে কালকা পৌঁছতে কত সময় লাগবে?”
অভিঃ “মনে হয় ছয় ঘন্টা লেগে যাবে।”
পরীঃ “কাল দুপুরের খাওয়ার পরে তাহলে আমরা বেরিয়ে পড়ব কি বলো?”
অভিঃ “ঠিক আছে।”
পরী খিলখিল করে হেসে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি রানী আর কল্যানির সামনে আমাকে কি করে ছাড়তে আসবে? সেদিন তো তোমার মুখে দাড়ি গোঁফ ছিল আজ তো নেই। কাল ওরা তো তোমাকে দেখে চিনতে পেরে যাবে, তখন কি করবে?” অভি মাথা চুলকায়, এ কথা তো ও একবারের জন্য ভেবে দেখেনি। পরী, “আমার কাছে একটা উপায় আছে। ওরা হয়তো কালকা পৌঁছবে বিকেল ছ’টা কি সাতটা, আর ট্রেন রাত সাড়ে এগারোটায়। ওরা হয়তো ওয়েটিং রুমে থাকবে।” অভি ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে ওর মতলব। পরী, “তুমি গাড়ি স্টেশান থেকে অনেক দুরে দাঁড় করাবে যাতে ওদের নজর গাড়িতে না পড়ে। আমি তোমার আগে স্টেশানে ঢুকে যাবো আর ওদের বলবো যে অর্জুন আমাকে স্টেশানের বাইরে ছেড়ে চলে দিল্লীর দিকে রওনা হয়ে গেছে। তুমি স্টেশানের বাইরে কোন চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে থেকো। কিছুক্ষণ পরে আমি কিছু একটা হোক বলে ওদেরকে নিয়ে বেরিয়ে আসব আর আমাদের দেখা হবে।”
অভি হতবাক হয়ে শোনে পরীর মতলব, উচ্ছসিত হয়ে বলে, “পরী, তুমি তো খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে, বাপরে। তুমি টিচার না হয়ে স্পাই হয়ে যাও সেটা আরও ভালো হবে।”
পরী নিজের মাথায় টোকা মেরে বলে, “তোমার পরীর মাথায় অনেক বুদ্ধি আর সেই জন্য আমি তোমার প্রেমে পড়েছি।”
অভি ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পেটের ওপরে হাত বোলাতে শুরু করে দেয়, পরী বুঝতে পারে যে অভির দুষ্টু হাত বেশিক্ষণ নরম পেটের ওপরে থেমে থাকবে না, কিছু না কিছু বদমাশি শুরু করে দেবে। হাত চেপে ধরে বলে, “আমার পেট না হাতিয়ে বাকি মতলবটা শোনো। তুমি কালকা এসেছো একটা আই.টি কম্পানির ইন্টারভিইউ দিতে...”
অভি হেসে বলে, “সোনা পরী, কালকাতে কোন আই.টি. কম্পানি নেই। তুমি এটা বলতে পারো যে আমি চণ্ডীগড়ে একটা ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলাম আর তারপরে কিছু সময় হাতে ছিল তাই আমি সিমলা ঘুরতে আসি। সিমলা থেকে ফেরার পথে আমি কালকাতে চা খাওয়ার জন্য দাঁড়াই আর সেখানে তোমার সাথে দেখা হয়ে যায়।”
পরী পেছনে হাত দিয়ে অভির মাথা নিজের কাঁধের ওপরে নিয়ে আসে আর গালে গাল ঘষে উত্তর দেয়, “দেখলে তো আমার সাথে থাকতে থাকতে তোমার মাথার বুদ্ধি খুলে গেছে। আমার সাথে থাকো তাহলে দেখবে তোমার মাথার মধ্যে যত গোবর আছে সব বুদ্ধিতে বদলে যাবে। বেবি এটাকে বলে ইন্ডাক্সান বলে, যেমন জল গরম হয় ঠিক সেই ভাবে, ফিসিক্স বেবি।”
অভি ওর গালে গাল ঘষে বলে, “পরী এখন অন্তত ফিসিক্স শুরু করে দিও না।”
পরীঃ “ঠিক আছে, ফিসিক্স না হয় শুরু করছি না কিন্তু তুমি যেন আদর করতে করতে শুরু হয়ে যেও না। আমার অনেক কাজ বাকি।”
আলিঙ্গন এবং প্রেমের আদর, এই কনকনে ঠাণ্ডায় হোটেলের ঘরের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দেয় আবার। সন্ধ্যের পরেই বিজলি চলে যায়, অগত্যা ওদের কাঠের উনুন জ্বালাতে হয় ঘর গরম করার জন্য। হলদে লাল মিশানো আলোতে সেই অন্ধকারে পরীকে যেন সোনার প্রতিমার মতন দেখতে লাগে।
রাতের খাবার পরে পরী গাউন খুলে একটা লাল রঙের নাইট ড্রেস গায়ে চড়িয়ে নেয়, লম্বা সেই নাইটড্রেস পরীর সারা অঙ্গ ঢেকে রাখে পায়ের গোড়ালি অবধি। কাপড় খুবই পাতলা থাকার দরুন পরীর অঙ্গের প্রতিটি সুন্দর বাঁক খুব নিখুঁত ভাবে প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে ওই নাইটড্রেসের নিচ থেকে। অভি ওর কমনীয় সৌন্দর্যয় মুগ্ধ হয়ে আর থাকতে পারেনা, নিস্পলক চোখে ক্ষুধার্ত শিকারির মতন পান করে পরীর কমনীয়তা মাখান নরম শরীর। পরী ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে অভি কি চায়, মিটিমিটি করে হাসে অভির দিকে আর রাতের প্রসাধনীর দিকে মন দেয়।
প্রসাধনি শেষে উঠে দাঁড়াল পরী, হাঁটু গেড়ে পরীর সামনে বসে পরে অভি, ওর আনা সেই ছোট্ট উপহার, বুদ্ধের ছোট্ট মূর্তি দেবার জন্য। পকেট থেকে বের করে ওর হাতের মধ্যে রেখে দেয় বুদ্ধ মূর্তির প্যাকেট।
পরী প্যাকেটটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “এটা আবার কি?”
অভি ওকে ইশারায় বলে, খুলে দেখতে। আস্তে আস্তে প্যাকেটের মোড়ক খুলে বের করে ব্রোঞ্জের ছোট্ট বুদ্ধ মূর্তি। মূর্তি দেখে পরী অভিভুত হয়ে যায়। অভি ওর ডান হাত নিজের হাতে নিয়ে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে বলে, “আই লাভ ইউ পরী।”
পরী হেসে উত্তর দেয়, “কিন্তু সোনা আমি যে তোমার জন্য কিছু কিনিনি।”
হাঁটু গেড়ে ওর দিকে হেঁটে যায় অভি, ওর পাতলা কোমর দুহাতে জড়িয়ে সুগভীর নাভির ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে অভি। পরী ওর মাথার চুলে বিলি কেটে দেয়। কোমল পেটের ওপরে গাল আর ঠোঁট ঘষতে ঘষতে ফিসফিস করে বলে, “আমার উপহার তো আমি অনেক আগেই পেয়ে গেছি সোনা। আমার উপহার তো আমার বাহুপাশে বদ্ধ।”
টেবিলের ওপরে অভির দাড়ি কাটার রেজর ছিল, পরী ওটা হাতে নিয়ে নিল। অভি কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, “কি করছো?”
পরী ওর দিকে মিটি মিটি হেসে, নিজের বাঁ হাতের তর্জনীর ওপরে ফুটিয়ে দিল ব্লেড। রক্ত বেরিয়ে এলো কাটা আঙুলের ডগা থেকে। হতবাক হয়ে গেল অভি, ওর দিকে চিৎকার করে বললো, “তুমি পাগল হলে নাকি? হটাত আঙুল কাটতে গেলে কেন তুমি?” অভি রক্ত বন্ধ করার জন্য, ওর আঙুল মুখে নিয়ে চুষতে শুরু করলো।
ধিরে ধিরে অভির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো পরী, মুখের থেকে আঙুল টেনে নিল এবারে। অভির চোখে চোখ রেখে গালে আলতো করে টোকা দিয়ে বললো, “আমি এটাই চাইছিলাম অভি। আমি চাইছিলাম আমার এক ফোঁটা রক্ত তোমার রক্তের সাথে মিশে যেতে, যাতে আমি তোমার কাছে না থাকলেও আমার কিছু তোমার কাছে সবসময়ে থাকে।”
আবেগে অভি আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না, গলার কাছে যেন কান্নাটা দলা পাকিয়ে উঠলো, খনিকের মধ্যেই চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেল। পরী ওর মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে বুকের ওপরে চেপে ধরলো, অভি দুহাতে ওর কোমর জড়িয়ে ধরলো। ফুঁপিয়ে উঠল অভি, পরীর ভালবাসার ছোঁয়ায় চোখের বাঁধ ভেঙে গেল।
পরী ওর পিঠের হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে, অভি ঘন ঘন ওর বুকের ওপরে মাথা ঘষতে থাকে। পরী ওকে বলে, “এই পাগলা ছেলে এর জন্যে কাঁদে নাকি? তুমি না আমার ছোট্ট সে রাজকুমার যে আমার জন্য আমার পুতুলের ঘর বানিয়ে দেবে।” বলতে বলতে আবেগে পরীরও গলা ধরে আসে। কাঁপা গলায় বলে, “আমি তো তোমার কাছে আছি, কাঁদছো কেন। তোমার পরী তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।”
ওর বুকের কাপড়ের ওপরে চোখ মোছে অভি। পরী ওকে জড়িয়ে ওর পিঠের ওপরে হাত বোলাতে থাকে আর মাথার চুলে বিলি কাটতে থাকে। পরী মধু ঢালা সুরে বলে, “আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না অভি, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি সোনা।”
কথা শুনে বুকের মাঝের মসৃণ ত্বকের ওপরে গাল ঘষে দেয় অভি, দু’জনের ত্বকের ঘর্ষণের ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুই প্রান। পরীর কোমল বক্ষ পিষে দেয় মুখের ওপরে। নগ্ন ত্বকের ওপরে অভির উত্তপ্ত ঠোঁটের পরশে মৃদু কঁকিয়ে ওঠে পরী। ছোটো ছোটো চুমুতে পরীর উন্নত কোমল বক্ষের উপরি অংশ ভরিয়ে তোলে, ফর্সা ত্বকের ওপরে দাঁতের লাল দাগ দেখা দেয়। প্রেমে প্রজ্বালিত পরী আরও শক্ত করে অভির মাথা নিজের বুকের পরে চেপে ধরে, নিজের বুক দুটি ওর মুখের ওপরে পিষে দিতে চেষ্টা করে। পাতলা আবরনের ওপরে দিয়েই উন্নত বক্ষ যুগলের ওপরে নিপীড়ন শুরু করে দেয়। অভির বুকের মাঝে কামনার তীব্র আগুন জ্বলে ওঠে। কোমর থেকে হাত নেমে যায় পরীর কোমল নিতম্বের ওপরে, পিষে ফেলে পরীর নরম নারী মাংস নিজের থাবার মধ্যে। পরী থেমে থাকে না, মাথার ওপরে গাল ঘষতে শুরু করে আর চুলের মুঠি করে ধরে চেপে ধরে মাথা বুকের মধ্যে। যেন প্রাণপণে চাইছে ওর মাথা নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে নেবার জন্য।
কামাগ্নির জ্বালায় পরী মৃদুকন্ঠে অভিকে বলে, “অভি আমাকে তোমার করে নাও, আমি আর পারছিনা। আমাকে এত ভালবাসো যেন আজ আমাদের জীবনের শেষ রাত।”
আদর ঘনিভুত হয়ে ওঠে, উনুনের আগুন যেন ওদের শরীরের আগুনের চেয়ে ধিমে জ্বলছে। একে অপরকে প্রেম আর ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে তুললো। ধিরে ধিরে ওরা ভালবাসার ক্ষীরোদ সাগরে ডুব দেয়।
পরের দিন শনিবার, বেশির ভাগ সময় কেটে গেল রাস্তায়। সকাল সকাল নাকো থেকে বেরিয়ে পড়ছে ওরা। খাব ব্রিজ পর্যন্ত পৌঁছতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি। খাব ব্রিজ পৌঁছে পরী অভিকে জিজ্ঞেস করলো যে ও গাড়ি থেকে নেমে একটা পাথর নিয়ে যেতে পারে কিনা। অভি ওকে সম্মতি দিল, পরী নেমে গেল স্পিতি নদীর তীরে, একটা ছোটো গোল পাথর কুড়িয়ে নিল। নাকো থেকে পোয়ারি পর্যন্ত বেশির ভাগ সময়ে পরী বিশেষ কথাবার্তা বলেনি, মাঝে মধ্যে শুধু একটু এদিক ওদিককার কথাবার্তা ছাড়া। সারাটা সময় শুধু অভির হাত চেপে ধরে ছিল পরী। পোয়ারির পর থেকে রাস্তায় একটু কুয়াশা জমতে শুরু করে, আকাশ মেঘলা করে আসে। সূর্য মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে, বাইরের আবহাওয়ায় যেন বিষণ্ণতার সুর বেজে ওঠে, সেই বিষণ্ণতা পরীর আর অভির বুকের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এই পাহাড়, এই স্পিতি, বাপ্সা আর শতদ্রু নদী যেন ওদের যেতে দিতে চাইছেনা। এই আকাশ বাতাস যেন বারে বারে কেঁদে উঠছে আর বলছে, “যেওনা তোমরা।” পোয়ারি ছাড়াতেই পরী অভির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। অভি ওর ঘুমন্ত চেহারার পানে এক ভাবে চেয়ে থাকে আর দেখে ওর গোল মুখ। নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে পড়ে পরী, অভির কাছ থেকে কেউ ওকে সরিয়ে নিতে পারবেনা।
জিওরি পৌঁছতে প্রায় সাড়ে তিনটে বেজে গেল। কুয়াশা যেন আরও ঘনিভুত হয়ে পাহাড়ের কোল বেয়ে নেমে এসেছো রাস্তার ওপরে। কিছু দূর আরও চলার পরে রাস্তা আর দেখা যাচ্ছে না, এমন কুয়াশা ওদের ঘিরে এলো। অভি বলবিন্দারকে গাড়ি থামাতে বললো কেননা এই ঘন কুয়াশায় গাড়ি চালানো খুব বিপদজনক। গাড়ি থামতেই পরী ঘুম থেকে উঠে পড়ে অভিকে জিজ্ঞেস করলো যে ওরা সিমলা পৌঁছেছে কিনা। অভি জানালো যে রাস্তায় অনেক কুয়াশা সেই জন্য রাতে ওরা জিওরিতে থেকে যাবে। কাল সকালবেলা এখান থেকে সোজা কালকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে।
অভি গাড়ি থেকে নেমে আসেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলো যে এখানে থাকার কোন জায়গা আছে কিনা, জানতে পারলো যে পাহাড়ের কিছু উপরে সাহারান নামে একটা জায়গায় হোটেল পাওয়া যাবে। অভি বলবিন্দারের দিকে তাকালো, জিজ্ঞেস করলো যে এই কুয়াশায় গাড়ি চালাতে পারবে কিনা। বলবিন্দার মাথা নাড়িয়ে জানালো যে, একটু সাবধানে গাড়ি চালালে বিশেষ কোন অসুবিধা হবে না সাহারান পৌঁছতে। গাড়ির মধ্যে চেয়ে দেখলো, পরী চোখে একটু ভয় ভয় ভাব।
অভি মাথা নেড়ে অভয় দিয়ে বললো যে, “কিছু চিন্তা কোরো না।”
পরী ওর দিকে হেসে উত্তর দিল, “তুমি কাছে থাকতে আমার ভয় কি।”
গাড়ি খাড়া চড়াই চড়তে শুরু করে, চারদিকে কুয়াশা। রাস্তা খুব সঙ্কীর্ণ, দুপাসে গাছপালাতে ভর্তি, মাঝে মাঝে গাছপালা যেন রাস্তার ওপরে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। সাহারান পৌঁছতে আরও এক ঘন্টা লেগে গেল। ভিমাকালি মন্দিরের পাশেই ওরা একটা হোটেল পেয়ে গেল।
ঠাণ্ডা আর রাস্তার অবস্থার জন্য দু’জনেই বেশ ক্লান্ত। তাড়াতাড়ি রাতের খাবার শেষ করে অভি বিছানায় উঠে পড়লো। পরী ব্যাগ গুছাতে শুরু করলো। অতি সাবধানে এক একটা জিনিস আলাদা আলাদা ব্যাগে রাখতে থাকে। দুই বাড়ির কেউ জানে না ওরা একসাথে ঘুরতে এসেছে তাই একজনের জিনিস যদি আরেক জনের ব্যাগের মধ্যে পাওয়া যায় তাহলে জানাজানি হবার ভয় আছে।
পরী অভিকে জিজ্ঞেস করলো, “একখান থেকে কালকা পৌঁছতে কত সময় লাগবে?”
অভিঃ “মনে হয় ছয় ঘন্টা লেগে যাবে।”
পরীঃ “কাল দুপুরের খাওয়ার পরে তাহলে আমরা বেরিয়ে পড়ব কি বলো?”
অভিঃ “ঠিক আছে।”
পরী খিলখিল করে হেসে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি রানী আর কল্যানির সামনে আমাকে কি করে ছাড়তে আসবে? সেদিন তো তোমার মুখে দাড়ি গোঁফ ছিল আজ তো নেই। কাল ওরা তো তোমাকে দেখে চিনতে পেরে যাবে, তখন কি করবে?” অভি মাথা চুলকায়, এ কথা তো ও একবারের জন্য ভেবে দেখেনি। পরী, “আমার কাছে একটা উপায় আছে। ওরা হয়তো কালকা পৌঁছবে বিকেল ছ’টা কি সাতটা, আর ট্রেন রাত সাড়ে এগারোটায়। ওরা হয়তো ওয়েটিং রুমে থাকবে।” অভি ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে ওর মতলব। পরী, “তুমি গাড়ি স্টেশান থেকে অনেক দুরে দাঁড় করাবে যাতে ওদের নজর গাড়িতে না পড়ে। আমি তোমার আগে স্টেশানে ঢুকে যাবো আর ওদের বলবো যে অর্জুন আমাকে স্টেশানের বাইরে ছেড়ে চলে দিল্লীর দিকে রওনা হয়ে গেছে। তুমি স্টেশানের বাইরে কোন চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে থেকো। কিছুক্ষণ পরে আমি কিছু একটা হোক বলে ওদেরকে নিয়ে বেরিয়ে আসব আর আমাদের দেখা হবে।”
অভি হতবাক হয়ে শোনে পরীর মতলব, উচ্ছসিত হয়ে বলে, “পরী, তুমি তো খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে, বাপরে। তুমি টিচার না হয়ে স্পাই হয়ে যাও সেটা আরও ভালো হবে।”
পরী নিজের মাথায় টোকা মেরে বলে, “তোমার পরীর মাথায় অনেক বুদ্ধি আর সেই জন্য আমি তোমার প্রেমে পড়েছি।”
অভি ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পেটের ওপরে হাত বোলাতে শুরু করে দেয়, পরী বুঝতে পারে যে অভির দুষ্টু হাত বেশিক্ষণ নরম পেটের ওপরে থেমে থাকবে না, কিছু না কিছু বদমাশি শুরু করে দেবে। হাত চেপে ধরে বলে, “আমার পেট না হাতিয়ে বাকি মতলবটা শোনো। তুমি কালকা এসেছো একটা আই.টি কম্পানির ইন্টারভিইউ দিতে...”
অভি হেসে বলে, “সোনা পরী, কালকাতে কোন আই.টি. কম্পানি নেই। তুমি এটা বলতে পারো যে আমি চণ্ডীগড়ে একটা ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলাম আর তারপরে কিছু সময় হাতে ছিল তাই আমি সিমলা ঘুরতে আসি। সিমলা থেকে ফেরার পথে আমি কালকাতে চা খাওয়ার জন্য দাঁড়াই আর সেখানে তোমার সাথে দেখা হয়ে যায়।”
পরী পেছনে হাত দিয়ে অভির মাথা নিজের কাঁধের ওপরে নিয়ে আসে আর গালে গাল ঘষে উত্তর দেয়, “দেখলে তো আমার সাথে থাকতে থাকতে তোমার মাথার বুদ্ধি খুলে গেছে। আমার সাথে থাকো তাহলে দেখবে তোমার মাথার মধ্যে যত গোবর আছে সব বুদ্ধিতে বদলে যাবে। বেবি এটাকে বলে ইন্ডাক্সান বলে, যেমন জল গরম হয় ঠিক সেই ভাবে, ফিসিক্স বেবি।”
অভি ওর গালে গাল ঘষে বলে, “পরী এখন অন্তত ফিসিক্স শুরু করে দিও না।”
পরীঃ “ঠিক আছে, ফিসিক্স না হয় শুরু করছি না কিন্তু তুমি যেন আদর করতে করতে শুরু হয়ে যেও না। আমার অনেক কাজ বাকি।”