What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (2 Viewers)

Chapter 5: পরবর্তী অভিযান। (#4)

আলিঙ্গন এবং প্রেমের আদর, এই কনকনে ঠাণ্ডায় হোটেলের ঘরের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দেয় আবার। সন্ধ্যের পরেই বিজলি চলে যায়, অগত্যা ওদের কাঠের উনুন জ্বালাতে হয় ঘর গরম করার জন্য। হলদে লাল মিশানো আলোতে সেই অন্ধকারে পরীকে যেন সোনার প্রতিমার মতন দেখতে লাগে।

রাতের খাবার পরে পরী গাউন খুলে একটা লাল রঙের নাইট ড্রেস গায়ে চড়িয়ে নেয়, লম্বা সেই নাইটড্রেস পরীর সারা অঙ্গ ঢেকে রাখে পায়ের গোড়ালি অবধি। কাপড় খুবই পাতলা থাকার দরুন পরীর অঙ্গের প্রতিটি সুন্দর বাঁক খুব নিখুঁত ভাবে প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে ওই নাইটড্রেসের নিচ থেকে। অভি ওর কমনীয় সৌন্দর্যয় মুগ্ধ হয়ে আর থাকতে পারেনা, নিস্পলক চোখে ক্ষুধার্ত শিকারির মতন পান করে পরীর কমনীয়তা মাখান নরম শরীর। পরী ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে অভি কি চায়, মিটিমিটি করে হাসে অভির দিকে আর রাতের প্রসাধনীর দিকে মন দেয়।

প্রসাধনি শেষে উঠে দাঁড়াল পরী, হাঁটু গেড়ে পরীর সামনে বসে পরে অভি, ওর আনা সেই ছোট্ট উপহার, বুদ্ধের ছোট্ট মূর্তি দেবার জন্য। পকেট থেকে বের করে ওর হাতের মধ্যে রেখে দেয় বুদ্ধ মূর্তির প্যাকেট।

পরী প্যাকেটটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “এটা আবার কি?”

অভি ওকে ইশারায় বলে, খুলে দেখতে। আস্তে আস্তে প্যাকেটের মোড়ক খুলে বের করে ব্রোঞ্জের ছোট্ট বুদ্ধ মূর্তি। মূর্তি দেখে পরী অভিভুত হয়ে যায়। অভি ওর ডান হাত নিজের হাতে নিয়ে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে বলে, “আই লাভ ইউ পরী।”

পরী হেসে উত্তর দেয়, “কিন্তু সোনা আমি যে তোমার জন্য কিছু কিনিনি।”

হাঁটু গেড়ে ওর দিকে হেঁটে যায় অভি, ওর পাতলা কোমর দুহাতে জড়িয়ে সুগভীর নাভির ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে অভি। পরী ওর মাথার চুলে বিলি কেটে দেয়। কোমল পেটের ওপরে গাল আর ঠোঁট ঘষতে ঘষতে ফিসফিস করে বলে, “আমার উপহার তো আমি অনেক আগেই পেয়ে গেছি সোনা। আমার উপহার তো আমার বাহুপাশে বদ্ধ।”

টেবিলের ওপরে অভির দাড়ি কাটার রেজর ছিল, পরী ওটা হাতে নিয়ে নিল। অভি কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, “কি করছো?”

পরী ওর দিকে মিটি মিটি হেসে, নিজের বাঁ হাতের তর্জনীর ওপরে ফুটিয়ে দিল ব্লেড। রক্ত বেরিয়ে এলো কাটা আঙুলের ডগা থেকে। হতবাক হয়ে গেল অভি, ওর দিকে চিৎকার করে বললো, “তুমি পাগল হলে নাকি? হটাত আঙুল কাটতে গেলে কেন তুমি?” অভি রক্ত বন্ধ করার জন্য, ওর আঙুল মুখে নিয়ে চুষতে শুরু করলো।

ধিরে ধিরে অভির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো পরী, মুখের থেকে আঙুল টেনে নিল এবারে। অভির চোখে চোখ রেখে গালে আলতো করে টোকা দিয়ে বললো, “আমি এটাই চাইছিলাম অভি। আমি চাইছিলাম আমার এক ফোঁটা রক্ত তোমার রক্তের সাথে মিশে যেতে, যাতে আমি তোমার কাছে না থাকলেও আমার কিছু তোমার কাছে সবসময়ে থাকে।”

আবেগে অভি আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না, গলার কাছে যেন কান্নাটা দলা পাকিয়ে উঠলো, খনিকের মধ্যেই চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেল। পরী ওর মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে বুকের ওপরে চেপে ধরলো, অভি দুহাতে ওর কোমর জড়িয়ে ধরলো। ফুঁপিয়ে উঠল অভি, পরীর ভালবাসার ছোঁয়ায় চোখের বাঁধ ভেঙে গেল।

পরী ওর পিঠের হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে, অভি ঘন ঘন ওর বুকের ওপরে মাথা ঘষতে থাকে। পরী ওকে বলে, “এই পাগলা ছেলে এর জন্যে কাঁদে নাকি? তুমি না আমার ছোট্ট সে রাজকুমার যে আমার জন্য আমার পুতুলের ঘর বানিয়ে দেবে।” বলতে বলতে আবেগে পরীরও গলা ধরে আসে। কাঁপা গলায় বলে, “আমি তো তোমার কাছে আছি, কাঁদছো কেন। তোমার পরী তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।”
ওর বুকের কাপড়ের ওপরে চোখ মোছে অভি। পরী ওকে জড়িয়ে ওর পিঠের ওপরে হাত বোলাতে থাকে আর মাথার চুলে বিলি কাটতে থাকে। পরী মধু ঢালা সুরে বলে, “আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না অভি, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি সোনা।”

কথা শুনে বুকের মাঝের মসৃণ ত্বকের ওপরে গাল ঘষে দেয় অভি, দু’জনের ত্বকের ঘর্ষণের ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুই প্রান। পরীর কোমল বক্ষ পিষে দেয় মুখের ওপরে। নগ্ন ত্বকের ওপরে অভির উত্তপ্ত ঠোঁটের পরশে মৃদু কঁকিয়ে ওঠে পরী। ছোটো ছোটো চুমুতে পরীর উন্নত কোমল বক্ষের উপরি অংশ ভরিয়ে তোলে, ফর্সা ত্বকের ওপরে দাঁতের লাল দাগ দেখা দেয়। প্রেমে প্রজ্বালিত পরী আরও শক্ত করে অভির মাথা নিজের বুকের পরে চেপে ধরে, নিজের বুক দুটি ওর মুখের ওপরে পিষে দিতে চেষ্টা করে। পাতলা আবরনের ওপরে দিয়েই উন্নত বক্ষ যুগলের ওপরে নিপীড়ন শুরু করে দেয়। অভির বুকের মাঝে কামনার তীব্র আগুন জ্বলে ওঠে। কোমর থেকে হাত নেমে যায় পরীর কোমল নিতম্বের ওপরে, পিষে ফেলে পরীর নরম নারী মাংস নিজের থাবার মধ্যে। পরী থেমে থাকে না, মাথার ওপরে গাল ঘষতে শুরু করে আর চুলের মুঠি করে ধরে চেপে ধরে মাথা বুকের মধ্যে। যেন প্রাণপণে চাইছে ওর মাথা নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে নেবার জন্য।

কামাগ্নির জ্বালায় পরী মৃদুকন্ঠে অভিকে বলে, “অভি আমাকে তোমার করে নাও, আমি আর পারছিনা। আমাকে এত ভালবাসো যেন আজ আমাদের জীবনের শেষ রাত।”

আদর ঘনিভুত হয়ে ওঠে, উনুনের আগুন যেন ওদের শরীরের আগুনের চেয়ে ধিমে জ্বলছে। একে অপরকে প্রেম আর ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে তুললো। ধিরে ধিরে ওরা ভালবাসার ক্ষীরোদ সাগরে ডুব দেয়।

পরের দিন শনিবার, বেশির ভাগ সময় কেটে গেল রাস্তায়। সকাল সকাল নাকো থেকে বেরিয়ে পড়ছে ওরা। খাব ব্রিজ পর্যন্ত পৌঁছতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি। খাব ব্রিজ পৌঁছে পরী অভিকে জিজ্ঞেস করলো যে ও গাড়ি থেকে নেমে একটা পাথর নিয়ে যেতে পারে কিনা। অভি ওকে সম্মতি দিল, পরী নেমে গেল স্পিতি নদীর তীরে, একটা ছোটো গোল পাথর কুড়িয়ে নিল। নাকো থেকে পোয়ারি পর্যন্ত বেশির ভাগ সময়ে পরী বিশেষ কথাবার্তা বলেনি, মাঝে মধ্যে শুধু একটু এদিক ওদিককার কথাবার্তা ছাড়া। সারাটা সময় শুধু অভির হাত চেপে ধরে ছিল পরী। পোয়ারির পর থেকে রাস্তায় একটু কুয়াশা জমতে শুরু করে, আকাশ মেঘলা করে আসে। সূর্য মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে, বাইরের আবহাওয়ায় যেন বিষণ্ণতার সুর বেজে ওঠে, সেই বিষণ্ণতা পরীর আর অভির বুকের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এই পাহাড়, এই স্পিতি, বাপ্সা আর শতদ্রু নদী যেন ওদের যেতে দিতে চাইছেনা। এই আকাশ বাতাস যেন বারে বারে কেঁদে উঠছে আর বলছে, “যেওনা তোমরা।” পোয়ারি ছাড়াতেই পরী অভির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। অভি ওর ঘুমন্ত চেহারার পানে এক ভাবে চেয়ে থাকে আর দেখে ওর গোল মুখ। নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে পড়ে পরী, অভির কাছ থেকে কেউ ওকে সরিয়ে নিতে পারবেনা।

জিওরি পৌঁছতে প্রায় সাড়ে তিনটে বেজে গেল। কুয়াশা যেন আরও ঘনিভুত হয়ে পাহাড়ের কোল বেয়ে নেমে এসেছো রাস্তার ওপরে। কিছু দূর আরও চলার পরে রাস্তা আর দেখা যাচ্ছে না, এমন কুয়াশা ওদের ঘিরে এলো। অভি বলবিন্দারকে গাড়ি থামাতে বললো কেননা এই ঘন কুয়াশায় গাড়ি চালানো খুব বিপদজনক। গাড়ি থামতেই পরী ঘুম থেকে উঠে পড়ে অভিকে জিজ্ঞেস করলো যে ওরা সিমলা পৌঁছেছে কিনা। অভি জানালো যে রাস্তায় অনেক কুয়াশা সেই জন্য রাতে ওরা জিওরিতে থেকে যাবে। কাল সকালবেলা এখান থেকে সোজা কালকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে।

অভি গাড়ি থেকে নেমে আসেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলো যে এখানে থাকার কোন জায়গা আছে কিনা, জানতে পারলো যে পাহাড়ের কিছু উপরে সাহারান নামে একটা জায়গায় হোটেল পাওয়া যাবে। অভি বলবিন্দারের দিকে তাকালো, জিজ্ঞেস করলো যে এই কুয়াশায় গাড়ি চালাতে পারবে কিনা। বলবিন্দার মাথা নাড়িয়ে জানালো যে, একটু সাবধানে গাড়ি চালালে বিশেষ কোন অসুবিধা হবে না সাহারান পৌঁছতে। গাড়ির মধ্যে চেয়ে দেখলো, পরী চোখে একটু ভয় ভয় ভাব।

অভি মাথা নেড়ে অভয় দিয়ে বললো যে, “কিছু চিন্তা কোরো না।”

পরী ওর দিকে হেসে উত্তর দিল, “তুমি কাছে থাকতে আমার ভয় কি।”

গাড়ি খাড়া চড়াই চড়তে শুরু করে, চারদিকে কুয়াশা। রাস্তা খুব সঙ্কীর্ণ, দুপাসে গাছপালাতে ভর্তি, মাঝে মাঝে গাছপালা যেন রাস্তার ওপরে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। সাহারান পৌঁছতে আরও এক ঘন্টা লেগে গেল। ভিমাকালি মন্দিরের পাশেই ওরা একটা হোটেল পেয়ে গেল।

ঠাণ্ডা আর রাস্তার অবস্থার জন্য দু’জনেই বেশ ক্লান্ত। তাড়াতাড়ি রাতের খাবার শেষ করে অভি বিছানায় উঠে পড়লো। পরী ব্যাগ গুছাতে শুরু করলো। অতি সাবধানে এক একটা জিনিস আলাদা আলাদা ব্যাগে রাখতে থাকে। দুই বাড়ির কেউ জানে না ওরা একসাথে ঘুরতে এসেছে তাই একজনের জিনিস যদি আরেক জনের ব্যাগের মধ্যে পাওয়া যায় তাহলে জানাজানি হবার ভয় আছে।

পরী অভিকে জিজ্ঞেস করলো, “একখান থেকে কালকা পৌঁছতে কত সময় লাগবে?”

অভিঃ “মনে হয় ছয় ঘন্টা লেগে যাবে।”

পরীঃ “কাল দুপুরের খাওয়ার পরে তাহলে আমরা বেরিয়ে পড়ব কি বলো?”

অভিঃ “ঠিক আছে।”

পরী খিলখিল করে হেসে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি রানী আর কল্যানির সামনে আমাকে কি করে ছাড়তে আসবে? সেদিন তো তোমার মুখে দাড়ি গোঁফ ছিল আজ তো নেই। কাল ওরা তো তোমাকে দেখে চিনতে পেরে যাবে, তখন কি করবে?” অভি মাথা চুলকায়, এ কথা তো ও একবারের জন্য ভেবে দেখেনি। পরী, “আমার কাছে একটা উপায় আছে। ওরা হয়তো কালকা পৌঁছবে বিকেল ছ’টা কি সাতটা, আর ট্রেন রাত সাড়ে এগারোটায়। ওরা হয়তো ওয়েটিং রুমে থাকবে।” অভি ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে ওর মতলব। পরী, “তুমি গাড়ি স্টেশান থেকে অনেক দুরে দাঁড় করাবে যাতে ওদের নজর গাড়িতে না পড়ে। আমি তোমার আগে স্টেশানে ঢুকে যাবো আর ওদের বলবো যে অর্জুন আমাকে স্টেশানের বাইরে ছেড়ে চলে দিল্লীর দিকে রওনা হয়ে গেছে। তুমি স্টেশানের বাইরে কোন চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে থেকো। কিছুক্ষণ পরে আমি কিছু একটা হোক বলে ওদেরকে নিয়ে বেরিয়ে আসব আর আমাদের দেখা হবে।”

অভি হতবাক হয়ে শোনে পরীর মতলব, উচ্ছসিত হয়ে বলে, “পরী, তুমি তো খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে, বাপরে। তুমি টিচার না হয়ে স্পাই হয়ে যাও সেটা আরও ভালো হবে।”

পরী নিজের মাথায় টোকা মেরে বলে, “তোমার পরীর মাথায় অনেক বুদ্ধি আর সেই জন্য আমি তোমার প্রেমে পড়েছি।”

অভি ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পেটের ওপরে হাত বোলাতে শুরু করে দেয়, পরী বুঝতে পারে যে অভির দুষ্টু হাত বেশিক্ষণ নরম পেটের ওপরে থেমে থাকবে না, কিছু না কিছু বদমাশি শুরু করে দেবে। হাত চেপে ধরে বলে, “আমার পেট না হাতিয়ে বাকি মতলবটা শোনো। তুমি কালকা এসেছো একটা আই.টি কম্পানির ইন্টারভিইউ দিতে...”

অভি হেসে বলে, “সোনা পরী, কালকাতে কোন আই.টি. কম্পানি নেই। তুমি এটা বলতে পারো যে আমি চণ্ডীগড়ে একটা ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলাম আর তারপরে কিছু সময় হাতে ছিল তাই আমি সিমলা ঘুরতে আসি। সিমলা থেকে ফেরার পথে আমি কালকাতে চা খাওয়ার জন্য দাঁড়াই আর সেখানে তোমার সাথে দেখা হয়ে যায়।”

পরী পেছনে হাত দিয়ে অভির মাথা নিজের কাঁধের ওপরে নিয়ে আসে আর গালে গাল ঘষে উত্তর দেয়, “দেখলে তো আমার সাথে থাকতে থাকতে তোমার মাথার বুদ্ধি খুলে গেছে। আমার সাথে থাকো তাহলে দেখবে তোমার মাথার মধ্যে যত গোবর আছে সব বুদ্ধিতে বদলে যাবে। বেবি এটাকে বলে ইন্ডাক্সান বলে, যেমন জল গরম হয় ঠিক সেই ভাবে, ফিসিক্স বেবি।”

অভি ওর গালে গাল ঘষে বলে, “পরী এখন অন্তত ফিসিক্স শুরু করে দিও না।”

পরীঃ “ঠিক আছে, ফিসিক্স না হয় শুরু করছি না কিন্তু তুমি যেন আদর করতে করতে শুরু হয়ে যেও না। আমার অনেক কাজ বাকি।”
 
Chapter 5: পরবর্তী অভিযান। (#5)

পরীর কথায় কান দিল না অভি, আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো পেছন থেকে। নরম তুলতুলে পেট আরও জোরে চেপে ধরলো নিজের ওপরে। নাক ঘষে দিল পরীর ঘাড়ের ওপরে, ছোটো ছোটো চুমুতে ভরিয়ে দিল পরীর ঘাড় আর কানের লতি। আদর করতে করতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অভি, পরী ওর উত্তেজনা টের পায়। প্রেমাবেগের বশে অভি বলে, “তুমি আমার মিষ্টি সোনা, তোমার পায়ের ধুলো নিতে ইচ্ছে করে আমার।”

পরী ওর হাত পেটের ওপরে চেপে ধরে যাতে ওর শয়তান হাত বেশি নিচে নামতে না পারে, ফিসফিস করে কানে বলে, “হ্যাঁ সত্যি তো আমার পায়ের ধুলো নেওয়া উচিত তোমার, আমি না তোমার থেকে দু বছরের বড়।”

অভি ওর কানেকানে বলে, “সত্যি তুমি আমাকে তোমার পায়ের ধুলো নিতে চাও? মনে আছে তো...”

সঙ্গে সঙ্গে পরীর নাকোর কথা মনে পড়ে যায়, পা দিয়েই শুরু করেছিল অভি আর শেষমেষ কি হয়েছিল ওরা দু’জনেই জানে। পরী চিৎকার করে ওঠে, “ছাড়ো ছাড়ো, শয়তান ছেলে, না আমার পা ধরতে হবে না।”

পরী ওর আলিঙ্গনের পাশে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে আর অভি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকে। এই ছাড়ানো আর জড়ানোর খেলায় অভি নিজেকে চেপে ধরে পরীর পেছনে।

পরী মৃদু সুরে বলে, “প্লিস ছেড়ে দাও সোনা আমার, দেখ আমাকে ব্যাগ গুছাতে হবে।”

দু’জনেই আদরের মারামারি করে হাঁপিয়ে ওঠে। অবশেষে অভি ছেড়ে দেয় পরীকে কেননা সত্যি ওকে ঠিক করে মন দিয়ে ব্যাগ গুছাতে হবে না হলে জানাজানি আর তারপরে এক বিশাল যুদ্ধ। এত তাড়াতাড়ি কোন রকমের সমস্যার সম্মুখিন হতে চায় না ওরা। এখন ওরা ভবিষ্যতের সমস্যার কথা ভেবে দেখেনি বা ভেবে দেখার সময় পায়নি।

সারাদিনের যাত্রার ক্লান্তি আর তারপরে ব্যাগ গুছিয়ে আর ওদের শরীরে শক্তি থাকেনা। কোনো রকমে বিছানায় পড়ে দু’জনে ঘুমিয়ে পড়ে।

মধ্যরাতে একটা মৃদু কান্নার আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে যায় অভির। মাথার কাছে রাখা হাত ঘড়িতে দেখে রাত চারটে বাজে। ঘরের মধ্যে মৃদু নীল আলো জ্বলছে, ঘুম চোখে কিছু ঠাহর করে উঠতে পারেনা যে কান্নার আওয়াজটা কোথা থেকে আসছে। পাশ ফিরে দেখে পরী ওর দিকে পিঠ করে শুয়ে আছে আর ওর পিঠ ক্রমাগত কাঁপছে। বুঝতে অসুবিধে হলনা অভির যে কান্নার আওয়াজটা পরীর বুকের মধ্যে থেকে আসছে।

পরীর দিকে ফিরে একটু উঠে ওর কাঁধ ছুঁলো অভি, মুখের ওপরে ঝুঁকে দেখে দু চোখে বন্যা নেমেছে। কানের কাছে মুখ নামিয়ে জিজ্ঞেস করে পরীকে, “কাঁদছো কেন সোনা?”

ওর আওয়াজ শুনে পরী আরও ডুকরে কেঁদে ওঠে। দু’হাত মুখের কাছে মুঠি করে ধরা, আঙুল কামড়ে কান্নাটাকে কোনো রকমে সামলে নিয়ে ধরা গলায় ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “সত্যি আজ তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?”

অভি ওর হাতে, পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত করতে চেষ্টা করে, আস্বস্ত করার জন্য ওকে বলে, “আরে পাগলি মেয়ে, ছোট্ট বাচ্চার মতন কাঁদে নাকি? আমি কি সত্যি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি কোথাও? এপ্রিল মাসের শেষে, বাসন্তি পুজোর পরে আমার কাছেই চলে আসবে। আর তো মোটে দু’মাস বাকি।”

পরী কান্না ভেজা গলায় বলে, “দু’মাস মানে ষাট দিন বাকি, মানে এক হাজারেরও বেশি ঘন্টা, আমি কি করে তোমাকে ছেড়ে বাঁচবো?”

পরীর গোনা শুনে অভি হাসি থামাতে পারে না, ওকে বলে, “বেবি তুমি সত্যি একদম পাগলি মেয়ে। এত রাতে তুমি কি ঘন্টা গুনতে বসেছিলে যে কতদিন পরে আবার দেখা হবে?”

পরী ওর হাত বুকের ওপরে চেপে ধরে বলে, “তুমি আমার বুকের ব্যাথা বুঝতে পারছোনা অভি।”

অভি ওর মুখের ওপরে নিজের মুখ এনে নাকের ডগায় নাক ঘষে আলতো করে তারপরে নাকের ডগা দিয়ে ওর গালের ওপরে জলের দাগ মুছে দেয়। পরী ওর বুকের ওপরে হাত রাখে, অভির প্রশস্ত বুকের নিচে আলতো করে পিষে যায় পরীর উন্নত বক্ষ যুগল। অভি ওকে জড়িয়ে ধরে আলতো করে আর নিজেকে নামিয়ে আনে পরীর বুকের ওপরে। পরী চোখ বন্ধ করে নিয়ে অভির গালে হাত বোলাতে শুরু করে।

অভি ওর কানে কানে বলে, “থ্যাঙ্ক ইউ পরী, আমার জীবনে আসার জন্য।”

পরী ভালো ভাবে লেপটা ওদের ওপরে জড়িয়ে নেয়, ওর বুঝতে কষ্ট হয় না যে এই সকাল ওদের ভ্রমণের শেষ সকাল, এই ক্ষণ ওদের কাছে অনেক অনেক দামী। মিলনের ইচ্ছুক দুই প্রান একে অপরকে প্রাণপণে জড়িয়ে ধরে। অভির হাত নেমে যায় পরীর জানুর ওপরে। পরী জানু ভাঁজ করে অভিকে সাদর আহ্বান জানায় গ্রহন করার জন্য। পরীর ঘাড়ের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে অভি। উতপ্ত ত্বকের ওপরে ভেজা ঠোঁট যেন আগুনের ফুল্কি উদ্গিরন করে।

মৃদু শীৎকার করে ওঠে পরীর আধা খোলা ঠোঁট, “ম্মম্মম্মম্মম্ম... সোনা আমার... আমাকে পাগল করে দিচ্ছো তুমি...”

পরীর হাতের দশ নখ অভির কাঁধে বসে যায়, শিরদাঁড়ার ওপরে পরীর হাত বিচরন করতে শুরু করে, আবেগের বশে মাঝে মাঝে নখ বসিয়ে দেয় অভির কঠিন পিঠের পেশিতে।

অভি ওর জানুর ভেতরে নখ দিয়ে আঁচড় কাটে, হাঁটু থেকে নখের দাগ জানুর সন্ধিক্ষন পর্যন্ত নিয়ে যায় অভি। শীৎকার করে ওঠে পরী, “আআআআআআ... মেরে ফেললে আমাকে সোনা......”

অদ্ভুত শিহরণ খেলে যায় পরীর সারা শরীরে আর থাকতে পরী নখ বসিয়ে দেয় অভির কাঁধে। অভির ঠোঁট নেমে আসে পরীর উপরি বক্ষে, জিবের ডগা দিয়ে গোল গোল দাগ কাটে ওর নগ্ন ত্বকের ওপরে। চিবুক দিয়ে সরিয়ে দেয় বুকের ওপরের কাপড়, অনাবৃত পীনোন্নত বক্ষ যুগল ঘরের হাল্কা নীল আলো মনে হয় এই প্রথম দর্শন করলো। পরী লজ্জা পেয়ে লেপটা আরও ওপরে টেনে ধরে যাতে অভি ওর নগ্নতা দেখতে না পারে। শত চেষ্টা করেও অভি লেপটাকে গা থেকে সরাতে পারে না।

পরীর হাত নেমে আসে অভির কোমরে, ঠেলে নিচে নামিয়ে দেয় ট্রাক প্যান্ট। দু’হাতের থাবার মধ্যে শক্ত করে ধরে ফেলে অভির শক্ত নিতম্ব, টেনে ধরে অভির নিম্নাঙ্গ নিজের সিক্ত নারীত্বের ওপরে। সাপের মতন ফিসফিসিয়ে ওঠে পরী, “অভি আমাকে তোমার করে নাও, আমি তোমার আলিঙ্গনে আজ মরতে রাজি আছি, অভি।”

অভির কোমর একটু মোচড় দেয়, দুহাত পরীর শরীরের দুপাশে দিয়ে ঊর্ধ্বাঙ্গ একটু উঁচু করে কামাগ্নি ভরা চোখে পরীর মুখের দিকে তাকায়। ওর মুখের উপরে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে, “মরার সময় নেই পরী, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি সোনা।”

হোটেলের রুমের আবহাওয়া উত্তপ্ত হয়ে ওঠে প্রেমিক যুগলের নগ্ন ত্বকের ঘর্ষণে আর মৃদুকন্ঠে। থেকে থেকে গুঞ্জরিত হয় ওদের মিলিত শীৎকার আর আদরের আওয়াজ। অভি নিজেকে নামিয়ে নিয়ে আসে পরীর সিক্ত গহ্বরে। মিলিত হয়ে যায় দুই ভালবাসায় ভরা প্রান।
 
Chapter 6: বাঁধা চোখের জল।

নবীন ভোরের নবীন ঊষা এক নতুন পরী আর অভিকে সাদর আহ্বান জানায়। দু’জনের মনে আর কোন পরিতাপ নেই। পরীর মুখের মিষ্টি হাসি আর উচ্ছলতা অভিকে যেন নিয়ে যায় এক নতুন দিগন্তে। দুপুরের খাওয়া একটু তাড়াতাড়ি শেষ করে নেয় ওরা, এবারে ফেরার পালা। সারাটা রাস্তা দু’জনে এদিক ওদিকের গল্প, ভ্রমণের গল্প করে কাটিয়ে দেয়। বলবিন্দার ফেরার সময়ে সেই একই রাস্তা ধরে, ফাগু থেকে চায়েল হয়ে ছোটো রাস্তা।

পরী ওকে জিজ্ঞেস করে, “কালকে তোমার ফেরার ফ্লাইট কটায়?”

অভিঃ “আমি যদি আজ রাতে শুরু করি তাহলে কাল সকালের মধ্যে দিল্লী পৌঁছে যাব, দেখি যদি সকালের ফ্লাইটটা ধরতে পারি তাহলে দুপুরের মধ্যে বাড়ি, না পেলে দুপুরের ফ্লাইট ধরব।”

পরীঃ “এই দুমাসে তুমি আমার বাড়ি আসবে?”

অভিঃ “কেন আসব না, নিশ্চয় আসবো।”

পরীঃ “বাসন্তি পুজোর পরে আমাকে নিতে তুমি আসবে?”

অভিঃ “সেটা ঠিক বলতে পারছি না পরী। আমার ফাইনাল পরীক্ষা মে মাসের শেষে। তোমার ছোটো মা আমাকে ছাড়বে কি না সন্দেহ আছে।”

পরীঃ “ছোটো মা কে আমার প্রনাম জানাবে তো?”

অভিঃ “সোনা মেয়ে, আমাদের যে দেখা হয়নি সেটা ভুলে যাচ্ছো কেন।”

পরী ওর গালে চিমটি কেটে বলে, “ওঃ, দেখ আমি তো সব গুলে খেয়েছিলাম। আমি তো ঘুরতে গেছি আমার বান্ধবীদের সাথে আর তুমি তো একা একা পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো তাই না, দুষ্টু ছেলে?” তারপরে নাক কুঁচকে অভিকে খ্যাপানোর জন্য জিজ্ঞেস করে, “কি গো অভি, শীতের রাতে কাকে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছো তুমি?”

অভি ওর দিকে হেসে বলে, “তোমাকে একটা ভাল গল্প বানাতে হবে কল্যানির জন্য আর তোমার মায়ের আর ছোটো মার জন্য। সেটা ফেরার আগে ভেবে রেখো।”

পরীঃ “তার জন্য ভাবতে হবে না। আমি খুব সুন্দর গল্প বলতে পারি, ওদেরকে এমন গল্প বলবো যে ওরা মুগ্ধ হয়ে যাবে।”

অভিঃ “হ্যাঁ তোমার গল্পের কথা আর তোমার মাথার বুদ্ধি আমার চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না।”

পরীঃ “ওই দেখ তোমাকে তো আমি একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি।”

অভিঃ “বাপরে আরও কিছু বলার বাকি আছে নাকি তোমার?”

পরীঃ “না বাবা না, তুমি না সবসময়ে খালি খালি ওই সব কথাই ভাবো। তোমার মৃগাঙ্কের কথা মনে আছে, সুব্রতদার বন্ধু, এক সময়ে ও হাত ধুয়ে আমার পেছনে পড়ে ছিল জানো।”

অভি মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ জানি।”

পরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি জানলে কি করে?”

অভিঃ “মনে আছে বউভাতের আগের দিন রাতে তোমার ছোটো মা আর বাকিদের মধ্যে তুমুল বাকবিতন্ডা লেগেছিল। সেদিন রাতে আমরা মদ খেয়েছিলাম আর মদের নেশায় মৃগাঙ্ক আমাদের ওর মনের কথা বলে ফেলেছিল।”

ওরা তাড়াতাড়ি ছ’টার মধ্যেই কালকা পৌঁছে যায়। কালকা পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসে। অভি বলবিন্দারকে দুরে গাড়ি রাখতে নির্দেশ দেয়, যাতে কারুর চোখে ওর গাড়ি না পড়ে। বলবিন্দার ওদের স্টেশানের সামনে নামিয়ে দিয়ে স্টেশান চত্তর থেকে বেশ কিছু দুরে গাড়ি দাঁড় করায়।

গাড়ি থেকে নেমে সব থেকে আগে অভি মাকে ফোন করে জানায় যে ও কালকা পৌঁছে গেছে, কাল সকালের মধ্যে ও দিল্লী পৌঁছতে পারলে সকালের ফ্লাইট ধরবে না হলে দুপুরের ফ্লাইট ধরে বাড়ি ফিরবে। তারপরে সুপ্রতিমদাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ফেরার পথে ওর সাথে আর দেখা হবে না কেননা অভি সোজা এয়ারপোর্ট চলে যাবে।
পরীর ব্যাগ হাতে নিয়ে ওরা হাঁটতে শুরু করে স্টেশানের দিকে। সারাক্ষণ পরী অভির হাত নিজের হাতের মধ্যে করে রাখে, মনে হয় যেন ছাড়লেই যদি পালিয়ে যায় অভি। স্টেশানের গেটে এসে অভি পরীর ব্যাগ পরীর হাতে ধরিয়ে দেয়। পরীর দু’চোখ ছলছল করে ওঠে।

অভি তর্জনী দিয়ে কপালে আলতো টোকা মেরে বলে, “বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন। তাড়াতাড়ি ভেতরে যাও আর কল্যাণীদের সাথে দেখা করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসো। আমি ওই চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে তোমার অপেক্ষা করবো।”

শেষ বারের মতন দু’জনের আঙুল এঁকে অপরকে ছুঁলো। পরীর যেন পা আর চলছে না, অভি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে গেটের সামনে, যতক্ষণ না পরী ওই গেটের মধ্যে দিয়ে হারিয়ে গেল স্টেশানের ভিড়ে।

তিরিশ মিনিট যেন তিরিশটা বছর, অধির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে অভি, কখন ফিরে আসবে পরী। মনের মধ্যে এক অজানা আলোড়ন চলছে, ভেতরে কি হচ্ছে? কল্যানি ওকে কি জিজ্ঞেস করছে? পরী ওর বান্ধবীদেরকে কি বলে বের হবে? আদৌ বের হতে পারবে কিনা? শেষ দেখা কি একবারের জন্য হবে না।

কিছুক্ষণ পরে অভি দেখতে পেল যে তিন জন মহিলা গেটের বাইরে হেঁটে আসছে, ভাল করে দেখে বুঝল যে ওর মধ্যে একজন পরী। অভির তৃষ্ণার্ত প্রানে যেন জল এলো। আনমনে এদিক ওদিকে তাকালো পরী, একবার ওদের চারচোখ এক হলো কিন্তু পরী ওর দিকে পাত্তা না দিয়ে আবার কল্যানির সাথে গল্প করতে শুরু করে দিল। ওই দেখে অভির বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটা যেন দুমদুম করে বাজতে শুরু করে দিল। উৎকণ্ঠায় গলা শুকিয়ে এলো অভির, কি হতে চলেছে এবারে? আদৌ পরী ওর সাথে দেখা করবে তো?

বেশ কিছু সময় আরও চলে গেল, অভি ওদের দিকে আর চোখে তাকিয়ে থাকে, পরী কি করছে। পরী আড় চোখে একবার অভির দিকে তাকালো, চাহনি যেন বলছে, “সোনা একটু অপেক্ষা করো।” কল্যাণীদের সাথে গল্প করতে করতে পরী হটাত করে কল্যানিকে ওর দিকে আঙুল দিয়ে দেখালো। ওরা সবাই অভির দিকে এগিয়ে এলো। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে অবাক চোখে যেন ভুত দেখেছে। পরী ওর চোখের চাহনি দেখে হাসি থামাতে পারে না, শেষ পর্যন্ত ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসিটিকে প্রাণপণে বুকের ভেতরে চেপে দেয়। পরী ওর দিকে চোখ টিপে অবাক সুরে জিজ্ঞেস করে, “আরে অভিমন্যু যে, এখানে কি করে?”

কল্যানি আর রানী ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে যেন ওরা কোনো ভুত দেখেছে। পরীর ঠোঁটে ওর পুরো নাম শুনে দাঁতে দাঁত চেপে নিজের হাসিটিকে সংবরণ করে। অভিকে পরী যেমন শিখিয়ে দিয়েছে ঠিক সেই রকম উত্তর দিতে হবে না হলে রানী রাগ করবেন।

অভি উত্তর দেয়, “শুক্রবার চণ্ডীগড়ে একটা ইন্টারভিউ ছিল, সেটা সেরে দেখলাম যে হাতে বেশ সময় আছে তাই সিমলা ঘুরতে চলে এলাম। এই এখন দিল্লী ফিরব তা মাঝ পথে একটু বিশ্রাম নেবার জন্য এখানে চা খাওয়া।” তারপরে পরীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “শুচিস্মিতা, তুমি এখানে কি করে?”

পরী হাসি চেপে নেয়, মনে মনে বুঝতে পারে যে যেহেতু ও ওর পুরো নাম ধরে ডেকেছে তাই অভিও ওর পুরো নাম নিয়েছে।

পরী কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু কল্যানি ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে উত্তর দিল, “আমরা সিমলা কুল্লু মানালি ঘুরতে এসেছিলাম আমাদের বরের সাথে আর শুচিস্মিতাও আমাদের সাথে এসেছিল। আজ রাতে ফিরে যাচ্ছি।” পরী কল্যানির দিকে কৃতজ্ঞ দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। ওখানে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক জন জানে যে কে কে মিথ্যে বলছে, তাও পরী আর অভি প্রাণপণে বুকের এক কোনে চেপে রাখে ফুটন্ত হাসি।

রানী অভিকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি উলুপি ম্যাডামের ছেলে তাই না?”

মাথা নাড়ায় অভি, “হ্যাঁ।” বুকের মাঝে ধুকপুকানি বেড়ে যায় অভির, রানী আর কল্যানী কি করে মাকে চেনে? “তোমরা আমার মাকে চেনো?”

কল্যানি উত্তর দেয়, “হ্যাঁ চিনি। আমরা তো সেই ছোটো বেলা থেকে বন্ধু, আমি আর পরী একই স্কুলে পড়েছি যেখানে উলুপি ম্যাডাম পড়ান।”

পরী দেখলো যে এবারে হয়তো ওরা অভিকে প্রশ্নের জালে জড়িয়ে ধরবে, ও কল্যাণীকে চুপ করতে বলে, “কি রে তুই, ওকে কি তোরা হিটলারের মতন প্রশ্ন জালে বিদ্ধ করবি নাকি?” তারপরে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার হাতে কি একটু সময় আছে? তুমি কি আমাদের ট্রেন ছাড়া পর্যন্ত থাকতে পারবে?”

রানী পরীকে বলে, “ও থাকতে যাবে কেন? ওর দেরি হয়ে যেতে পারে। আমাদের ট্রেন ছাড়তে ছাড়তে সেই মাঝ রাত, ও কি করে অত সময় আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে? ওকে যেতে দে।”

পরী অল্প বিরক্তি হয়ে উঠল, অভির পাশে এসে দাঁড়িয়ে রানীকে বলে, “আমার ছোটো মা’র ছেলে, অনেকদিন পরে এই অচেনা জায়গায় দেখা হয়েছে। আমি যা বলবো ও তাই করবে।”

রানী ওর কথা শুনে মৃদু রেগে গেল, “যা ভালো বুঝিস তাই কর, আমি তো শুধু ওর ভালোর জন্যে বলছিলাম। ওর যদি কোনও অসুবিধে না থাকে তাহলে আমার কি অসুবিধে হতে পারে?”

অভির বুঝতে দেরি হলো না যে পরী রানীর কথায় আঘাত পেয়েছে, তাই কথা ঘুরিয়ে ওদের কে জিজ্ঞেস করলো যে ওদের বরেরা কোথায় গেছে। কল্যাণী উত্তর দিল যে ওদের ওয়েটিং রুমে ব্যাগ দেখার দায়িত্ব দিয়ে দু’জনে মিলে কোথাও আড্ডা মারতে বেরিয়েছে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জানিয়ে দিল যে, “আমাকে একা ফেলে যদি কোথাও যাও তাহলে দেখে নিও আমি কি করি।” অভি ওর চোখের চাহনি দেখে ওর মনের ভাব বুঝতে পেরে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় যে, “আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না।”

কিছুক্ষণ পরে কোথা থেকে দিপঙ্কর আর রামানুজ উদয় হলো। পরীকে দেখে দিপঙ্কর জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার, অর্জুন বাবুর সাথে হানিমুনে কোথায় কোথায় যাওয়া হয়েছিল?”

দিপঙ্করের কথা শুনে পরীর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। কল্যানির দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে। কল্যাণী দিপঙ্করকে মৃদু ধাক্কা মেরে জানিয়ে দিল যে অভি ওখানে উপস্থিত। দিপঙ্কর অভিকে দেখে একটু অপ্রস্তুত বোধ করলো। রামানুজ হাত বাড়িয়ে দিল অভির দিকে।

অভি ওদেরকে জিজ্ঞেস করলো যে ওরা এই কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে চায় না কোথাও গিয়ে বসতে চায়। সবাই মাথা নেড়ে সায় দিল যে কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসা যেতে পারে। সবাই রেস্টুরেন্টের দিকে হাঁটতে শুরু করে, পরী আর অভি বাকিদের পেছন পেছন হাঁটতে থাকে। পরীর মুখ গম্ভির, বুকের কাছে হাত আড় করে নিজেকে সামলে নিয়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে অভির পাশাপাশি চুপ করে হাঁটতে থাকে।

পরীর মনের অবস্থা দেখে অভি একটু ঘাবড়ে যায় যে আবেগের বশে পরী কিছু না উলটোপালটা করে ফেলে। বুকটা টনটন করতে শুরু করে অভির, পরী এত কাছে থেকেও কত দুরে মনে হয়। সবার সম্মুখে ওকে জড়িয়ে সান্তনা দিতে পারছেনা অভি। বড় কষ্ট হয় পরীর ব্যাথিত চেহারা দেখে।

রেস্টুরেন্টে বসে সবাই গল্প করে কে কি রকম ভাবে ঘুরলো। কিছু পরে অভি কল্যাণীকে জিজ্ঞেস করলো, “আমরা যখন এত খোলা মেলা হয়ে গেছি তো একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি কি?”

কল্যাণী ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, “হ্যাঁ।”

পরীর দিকে চোরা চাহনিতে দেখে কল্যাণীকে জিজ্ঞেস করলো, “এই অর্জুনটি কে?”

ওর প্রশ্ন শুনে কল্যাণী আর রানী একটু থমকে গেল, পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে দু’জনে মনের মধ্যে চলতে থাকে যে সঠিক উত্তর দেবে কি দেবে না। পরী হাল্কা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে ওরা অভিমন্যুকে অর্জুনের কথা বলতে পারে।

কল্যাণী, “সত্যি বলতে শুচিস্মিতা আমাদেরকে অর্জুনের ব্যাপারে বিশেষ কিছু তো জানায় নি তবে ওর মুখ থেকে যা শুনেছি তাতে মনে হলো ও তোমার ইন্দ্রানি মাসির দেওর, পরীর খুঁজে পাওয়া ভালবাসার মানুষ। আমি তো এটা ভেবে অবাক হচ্ছি যে আমরা এত ভাল বান্ধবী তাও কেন আমাদের কাছ থেকে অর্জুনের কথা ও চেপে গেল।”

রানী পরীকে জিজ্ঞেস করলো, “পরীকেই অর্জুনের কথা জিজ্ঞেস করতে দোষ কি।”

পরী অস্বাভাবিক ভাবে চুপ, বুকের মধ্যে যেন ছেড়ে যাওয়ার ব্যাথা কঁকিয়ে উঠছে বারে বারে। খুব ধির স্বরে উত্তর দিল, “আমরা দুজনে বেশ ভালো ঘুরেছি, ব্যাস এইটুকু এখন বলতে পারি। বাকি পরে শুনে নিস তোরা।”

গল্প করতে করতে অনেকটা সময় কেটে যায়। দিপঙ্কর ঘড়ি দেখে, “আরে দশটা বাজে যে।” ওরা রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে স্টেশানের দিকে পা বাড়ায়। পরী ওদের বলে যে ও কিছুক্ষণ আরও অভির সাথে কাটাতে চায়। কল্যাণী ওকে বাধা দেয় না। বাকিরা স্টেশানে ঢুকে পড়ে, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে পরী আর অভি।

দুজনে চুপচাপ হাইওয়ের দিকে হাঁটতে থাকে। পরীর মুখের ওপরে ছেড়ে যাওয়ার ব্যাথার ছবি। মাঝ রাস্তায় অভি ওকে দাঁড় করিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি হলো এত চুপ করে কেন আছো?”

পরী ওর দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে বলে, “তুমি চলে যাও।”

অভি ওর কাঁধে হাত রেখে ওকে বুকের কাছে টেনে আনে। অভির হাতের ছোঁয়া পেয়ে পরী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলে পরী। অভি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু পরীর কান্না আর থামতে চায় না।

কান্না ভেজা গলায় অভিকে বলে, “সোনা তুমি চলে যাও, প্লিস। এই ঠাণ্ডার রাতে আমার ট্রেন ছেড়ে দেবে আর তুমি একা একা স্টেশানে দাঁড়িয়ে থাকবে। এই দৃশ্য আমার সহ্য হবে না, আমি ভেঙে পড়ব অভি। আমাকে শান্ত করার জন্য আমার বান্ধবীরা আমার সাথে থাকবে কিন্তু তুমি? আমি চলে যাবার পরে তুমি কি করে থাকবে? আমি তোমার বুকের ওই ব্যাথা সহ্য করতে পারব না অভি, প্লিস তুমি এখুনি চলে যাও।”

অভি ওর মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে বলে, “আমার জন্য চিন্তা কোরোনা, আমি ঠিক থাকব।”

পরীঃ “না তুমি চলে যাও। তুমি একা একা দাঁড়িয়ে আমার দিকে হাত নাড়াবে সেই দেখে আমি আরও ভেঙে পড়ব অভি, প্লিস চলে যাও।”

অভিঃ “ঠিক আছে, দেখছি কি করা যায়।”

অভি ওর চোখের জল মুছে ওকে শান্ত হয়ে অনুরোধ করে। তারপরে ওরা দু’জনে স্টেশানের দিকে হাঁটা দেয়। স্টেশানের বাইরে এসে দেখে যে কল্যাণী আর রানী ওদের পথ চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরীর চোখের পাতা ভিজে দেখে কল্যাণী উৎসুক হয়ে অভির দিকে তাকায়। অভি কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না, কিছুক্ষণ মাথা চুলকে উত্তর দেয় যে পরী ওর ছোটো মার কথা মনে করে মন খারাপ হয়েছে তাই চোখে জল।

কল্যাণী ওর কথা ঠিক বিশ্বাস করতে পারলো না। অভির দিকে একভাবে চেয়ে থাকে কল্যাণী। অভি বুক দুরদুর করে ওঠে, কল্যাণী কি কিছু বুঝতে পেরে গেছে? ওরা যা ভয় পাচ্ছিল সেটা ঘটে যায়। কল্যাণী অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “মনে হচ্ছে কিছু অঙ্ক আমি মেলাতে পারছি না।” অভির দিকে আঙুল তুলে বলে, “আজ বিকেলে তোমাকে এখানে দেখে ঠিক অঙ্ক মেলেনি আমার। তোমার চশমা, ঠিক এই চশমা ছিল অর্জুনের চোখে তাই না। খুলে যদি বলি তাহলে অর্জুন নামে কেউ নেই, তুমি ছিলে শুচিস্মিতার সাথে। কি আমি ঠিক বলছি কি না?”

ওই কথা শুনে অভির মনে হলো যেন কেউ ওর মাথার ওপরে গরম লাভা ঢেলে দিয়েছে। বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটা যেকোনো সময়ে ফেটে বেরিয়ে আসবে এমন জোরে ধুকপুক করতে শুরু করে। পরী ওর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, ওরা যে ধরা পড়ে গেছে। দু’চোখে বন্যা নামে, পরী ওর হাত শক্ত করে ধরে নেয়, কি হবে এবারে।

কল্যাণী পরীর মুখ দেখে সব বুঝতে পেরে যায়। পরীকে জিজ্ঞেস করে, “তোর সাথে অভিমন্যু ছিল তাই তো?”

পরী ওর দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে তাকায়। সারা চেহারায় ফুটে ওঠে কাতর আবেদন।
কল্যাণী ওর মুখ দেখে মৃদু হেসে বলে, “চিন্তা নেই তোর। একথা কেউ জানবে না পরী।”

ওরা সবাই মিলে ওয়েটিং রুমের দিকে হাঁটা দিল। কল্যাণীর কথা শুনে দু’জনের বুকের ওপরে এতক্ষণ যে পাথর চাপা ছিল সেটা সরে যায়। ওয়েটিং রুমে বসা দিপঙ্কর আর রামানুজ ওদের দেখে একটু ঘাবড়ে যায়। রানী ওদেরকে সব কথা বলে। কথা শুনে সবাই চুপ। অভির আর পরীর ধুকপুক করতে থাকে, কি হবে কি হবে।

রানী পরীর চিবুক আঙুল দিয়ে নেড়ে হেসে বলে, “অরে মেয়ে চিন্তা করিস না। এই খবর আমাদের কাছে গোপনই থাকবে।” সবাই মাথা নেড়ে সায় জানায় যে এই কথা ওরা কাউকে জানাবে না।

কল্যাণী পরীর পাশেই বসে ছিল, ওর জড়িয়ে ধরে বললো, “তুই এত চিন্তা করছিস কেন? ওকে ভালবাসিস বলে চিন্তা করছিস না তুই ওর চেয়ে বড় বলে চিন্তা করছিস। তুই সুন্দরী বুদ্ধিমতী মেয়ে আর ও একটা বুদ্ধিমান ছেলে। তোরা একে অপরকে ভালবাসিস, এতে পাপ কোথায়? তুই ওর সম্পর্কের মাসি হোস তাই ভয়? তোদের কোন রক্তের সম্পর্ক নেই। ও তোর কে হয়? তোর মায়ের মামাতো দিদির, সেজ মেয়ের ছেলে। তোদের সম্পর্ক অনেক অনেক দুরের, কেউ কাউকে চিনতিসও না। ওটা হয়েছে কেননা উলুপি ম্যাডাম তোর বাড়ির কাছের স্কুলে পড়ান বলে তোদের পরিরবারে সাথে সম্পর্ক, তা না হলে তোরা কেউ কাউকে চি্নতিসও না।”

দিপঙ্কর অভির পিঠ চাপড়ে বললো, “ব্রাদার এত ভয় পাবার কি আছে? তুমি তো ভায়া আমার সব থেকে সুন্দরী শালিটাকে হাত করে নিলে আর তার সাথে একা একা কোন এক দুর্গম স্থানে ঘুরেও এলে। তোমার সাহসের বলিহারি।”

পরীর ওদেরকে মন থেকে কৃতজ্ঞতা জানালো, “তোদের কি করে যে ধন্যবাদ জানাব আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না রে।”

রানী ওদের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোরা দুটি শয়তান, সময় কেমন কাটালি?” অভির দিকে চোখ মেরে জিজ্ঞেস করে, “তুমি আমার বান্ধবিকে বেশি ব্যাথা দাওনি তো?”

ওর কথা শুনে লজ্জায় পরীর মুখ লাল হয়ে গেল, অভির দিকে লাজুক মুখে তাকিয়ে মিটি মিটি করে হেসে ফেললো পরী। পরীর পুনরায় হসি মুখ দেখে অভির মন থেকে চিন্তার পাথর সরে যায়।

কল্যাণী পরীর গাল টিপে জিজ্ঞেস করে, “তোরা তাহলে বেড়াতে গিয়ে অনেক মজা করেছিস তাই না? আমি তোর চোখের হাসি দেখে বুঝতে পেরে গেছি সুতরাং আমার কাছে লুকিয়ে বিশেষ লাভ হবে না পরী।”

চিন্তার মেঘ কেটে গেছ, ওরা সবাই আবার ঘোরার গল্পে মেতে উঠল, কে কি রকম কোথায় কোথায় ঘুরেছে তাঁর বর্ণনা করতে শুরু করে দিল। পরীর মুখে চিতকুলের বর্ণনা শুনে ওরা চারজনে অভিভুত। পরী অভির কাঁধে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে থাকে ওর হাত। সময় খুব দ্রুত বয়ে চলে। স্টেশানের লাউডস্পিকারে ট্রেনের আগমনের ঘোষণা শুনে ওদের সময়ের কথা মনে পড়ে যায়।

দিপঙ্কর আর রামানুজ ট্রেনে উঠে ওদের সিটে নিজেদের ব্যাগ পত্র রাখে। পরী অভির হাত শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে প্লাটফরমের ওপরে, ওকে ছাড়তে একদম মন চাইছে না। অভি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কবে আবার দেখা হবে পরীর সাথে, কি করে ছেড়ে যাবে পরীকে। বুকের ভেতর টনটন করে ওঠে আসন্ন বিরহ বেদনায়। কল্যাণী পরীর কাঁধে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে ট্রেনে উঠতে। পরী অভির হাত ছাড়তে চায় না।

কান্না ভেজা চোখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি তোমাকে বলেছিলাম তুমি চলে যাও, তুমি আমার কথা শুনলে না। আমি তোমাকে বলেছিলাম। আমি তোমাকে একা ফেলে কি করে যাব অভি। আমি তোমাকে বার বার বলেছিলাম চলে যেতে, অভি।”

কল্যাণী পরীকে জড়িয়ে ধরে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে। অভি ওর মুখ আঁজলা করে নিয়ে বুড়ো আঙুল দিয়ে গালের ওপরের জলের দাগ মুছিয়ে দেয়। গালে অভির হাতের পরশ পেয়ে আরও যেন ডুকরে কেঁদে ওঠে পরী।

অভিঃ “প্লিস ছোটো বাচ্চার মতন কাঁদে না সোনা, আমি ঠিক আছি সোনা।”

কল্যাণী অভিকে জানায় যে ও পরীকে সামলে নেবে। অভি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসে, বুকের ভেতরে বিরহের সুর বেজে ওঠে। ওর ভয় করে আবার যেন পরী অজ্ঞান না হয়ে যায়।

অভিঃ “আমি কথা দিচ্ছি যে এই দু’মাসে তোমার সাথে কিছু করে হোক আমি দেখা করবো।”

কল্যাণী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “দু’মাস অনেক লম্বা সময়।” মাথা নাড়ায় অভি, “হ্যাঁ কিন্তু কি করা যাবে।”

কল্যাণী পরীকে নিয়ে ট্রেনের দিকে হাঁটা লাগায়। কল্যাণী ট্রেনে উঠে পড়ে। অভি একমনে দেখতে থাকে পরীকে। এমন সময় কল্যাণীর হাত ছাড়িয়ে পরী ঘুরে দাঁড়ায়, আর দৌড়ে এসে অভির বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অভি দুহাত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে পরীকে, যেন পৃথিবীর কোন শক্তি ওদেরকে বিচ্ছিন্ন করেত না পারে। পরীর মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে অভি। অভির বুকের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে পরী।

ট্রেনের হুইসেল বেজে ওঠে। পরীকে কোন মতে আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে। পরী দৌড়ে ওর বান্ধবীদের কাছে চলে যায়। ট্রেন ছেড়ে দেয়, পরী ওর দিকে জল ভরা চোখ আর ঠোঁটে হাসি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। কল্যাণী ওকে জড়িয়ে ধরে থাকে। পরী ওর ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটের কাছে এনে, তাঁর ডগায় একটা ছোট্ট চুমু খেয়ে অভির দিকে ছুঁড়ে দেয়। অভি পরীর ছোড়া সেই চুমুটা লুফে নিয়ে বুকের মধ্যে চেপে ধরে।

অভি ডান হাতের তর্জনী উঠায় ইশারা করে “আই” তারপরে বুড়ো আঙুল আর তর্জনী মেলে ধরে, ইশারা করে “এল” শেষে মধ্যমা আর অনামিকা ফাঁক করে ইশারা করে “ইউ”।

ট্রেন ঘন কালো অন্ধকারে মিলিয়ে যায় কিছুক্ষণে মধ্যেই। অভি একা দাঁড়িয়ে থাকে খালি প্লাটফরমের ওপরে, বুকটা হুহু করে ওঠে। বাকি রাস্তা ওকে একা একা ফিরতে হবে, সাথে থাকবে না পরী। পকেট থেকে রুমালটি বের করে একবার পরীর গায়ের গন্ধ মুখে মেখে গাড়ির দিকে পা বাড়ায়।

End of Part 2
 
Part 3: গঙ্গাবক্ষে জোয়ার ভাঁটা।

Chapter 1: জলপরীর স্বপ্ন। (#1)

অভিমন্যু তালুকদারের পরিবার বেশ সচ্ছল। দমদমে ওদের বিশাল দু’তলা বাড়ি। একতলায় একটা মারোয়াড়ি পরিবার ভাড়া থাকে। দু’তলায় তিনটে শোবার ঘর, একটি খাবার ঘর আর একটি বসার ঘর। তিন তলায় একটি শোবার ঘর আছে। মায়ের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে, পরীর জন্য, অভিকে ওর দুতলার ঘর ছেড়ে দিতে হয়। মায়ের মেয়ের চেয়ে ভাবি বউমা বলা ভাল, যদিও অভির মনে সংশয়ের দানা বাঁধা যে মা বাবার সম্মতি পাওয়া অনেক অনেক কষ্টকর হবে। বাবার আদেশ অমান্য করা যায় না, দু’তলায় ঘর খালি থাকলেও অভিকে তিন তলার ঘর বরাদ্দ করা হয়।

কলেজের পরীক্ষা সামনে, পড়াশুনায় ডুবে যায় অভিমন্যু। রোজ রাতের বেলা পরীর কাজল কালো চোখ ওর খোলা বইয়ের পাতায় ফুটে ওঠে। গালে পরীর ঠোঁটের পরশ অনুভব করে তখন। মন যেন কেমন করে ওঠে অভির। কালকাতে পরী যে চুমু ছুঁড়ে দিয়েছিল তাঁর কথা অভির বারে বারে মনে পড়ে যায়, সেই চুমুটাকে নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখে অভি। পড়তে বসে পড়ার দিকে মন থাকে না। রুমাল বের করে মাঝে মাঝে ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে পরীর স্পর্শ নিতে চেষ্টা করে, মুখের ওপরে মেলে ধরে রুমাল, অনুভব করতে চেষ্টা করে পরীর হাতের মিষ্টি ছোঁয়া। গ্রামের মেয়ে লাজুক পরী, মিলনের সময়েও একবারের জন্য নিজেকে অভির চোখের সামনে উন্মুক্ত করতে পারেনি।

দিনটা ছিল বৃহস্পতি বার, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে। কোলকাতায় ঠাণ্ডা বেশ কমে এসেছে। আকাশে বেশ ঝলমলে রোদ উঠেছে। হাওয়ায় যেন ভালবাসা ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্কুলে যাবার আগে মা অভিকে জানালো যে বিয়ের পরে সুব্রত আর মৈথিলীকে নিমন্ত্রন করে খাওয়ানো হয়নি তাই আজ মা ওদেরকে বাড়িতে ডেকেছে। অভির মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, একবারের জন্য জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে যে পরী সাথে আসবে কিনা। কিন্তু কিন্তু করেও শেষ পর্যন্ত মাকে জিজ্ঞেস করে যে পরী সাথে আসছে কি না। মা জানালেন আসতেও পারে নাও আসতে পারে পরী। পরীর আসার ঠিক নেই শুনে অভির মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কলেজে সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে অভির। বারে বারে পরীর চোখ বইয়ের পাতার ওপরে ভেসে ওঠে।

রাতে ফিসিক্স পেপারের কোচিং ক্লাস ছিল তাই অভির বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। মনমরা হয়ে বাড়ি ফিরে কলিং বেল বাজায় অভি। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে মা বারন্দা থেকে দেখলেন যে কে এসেছে।

দরজা খুললো কেউ, সামনে পরীকে দেখে হাঁ হয়ে গেল অভি। বাঁ পা চৌকাঠের ভেতরে কিন্তু তারপরে আর পা ওঠে না অভির।

অভির বিস্ময়ান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে পরী। চিবুকে আঙুল দিয়ে ওর খোলা মুখ বন্ধ করে দিল, হেসে বললো, “মাছি ঢুকে যাবে যে।” অভি হাঁ করে তাকিয়ে পরীর রুপ দেখে। অনেক দিন পরে পরীকে যে নতুন করে দেখছে অভি। ফর্সা কপালে, দুই বাঁকা ভুরুর মাঝে নীল রঙের টিপ। লম্বা ঘন কালো চুল খোলা, বাঁ কাঁধের ওপরে থেকে সামনের দিকে নেমে এসেছে। চুলের কিছু অংশ মুখখানি কিছুটা ঢেকে রেখেছোে যেন চাঁদ লুকিয়ে আছে কালো মেঘের আড়ালে। পরনে আঁটো গাড় নীল রঙের কামিজ, বুকের নিচ থেকে ফুলে উঠে একদম হাঁটু পর্যন্ত নেমে গেছে ঘাগরার মতন। হাসিতে গালে টোল পড়েছে আর অভির ওই হাসি দেখে মনে হলো যেন এখুনি পরীকে জড়িয়ে ধরে ওর লাল লাল গালে চুমু খায়।

পরী ওর মুখ বন্ধ করে চোখের পাতার ওপরে আঙুল রেখে বলে, “আমার দিকে ওইরকম ভাবে তাকিয়ে থেকো না, আমার ভেতরটা কেমন করে উঠছে অভি।” অভি দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পরীকে জড়িয়ে ধরতে যায়। পরী ওকে আলতো ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে, “কি করছো? বাড়িতে সবাই আছে যে। দেরি দেখলে এখুনি ছোটো মা ডাক দেবে।”

চালে মত্ত ছন্দ এনে অভির কবল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় পরী। অভি কিছুক্ষণ ওকে পেছন থেকে দেখে, তারপরে আবার হাত বাড়িয়ে ধরতে চেষ্টা করে। পরী দৌড়ে ওর হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। বার বার পেছনে তাকিয়ে হাসে আর দুচোখ যেন ওকে হাতছানি দিয়ে ডেকে বলে, “ধরতে পারলে আমি তোমার।”

বসার ঘরে ঢুকে অভি দেখলো যে বাবা মা সুব্রত মৈথিলী বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে।

সুব্রত ওকে দেখে বলে উঠল, “কি মামা কেমন আছো?”

মৈথিলীর দিকে তাকিয়ে মাথা নোয়ায় অভি। মৈথিলীর চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয়, “মামা আমি ভাল, তোমার খবর বল?”

নতুন বউ মৈথিলীকে দেখতে ভারী সুন্দর লাগছে, পরনে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি। এই বার বেশ কাছ থেকে দেখছে মৈথিলীকে, বিয়ের সময়ে তো ঠিক করে দেখে ওঠা হয়নি নতুন বউকে। গায়ের রঙ পরীর মতন অত ফর্সা না হলেও ফর্সা বলা চলে মৈথিলীকে। বেশ খানিকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে অভি। সুব্রত ওর কাঁধ চাপড়ে ওর কলেজের খবরাখবর জিজ্ঞেস করে। অভি মাথা নেড়ে উত্তর দেয় যে সব ঠিক চলছে।

মা জানালেন যে ওদের আনতে গিয়ে পরীও বায়না ধরে যে আসবে তাই মা ওকেও সাথে নিয়ে আসে। মায়ের কথা শুনে পরী চোরা চাহনিতে অভির দিকে তাকায়, “দেখলে তো আমার বুদ্ধি।” সামনে পরী মায়ের সাথে বসে। পরী মাকে জড়িয়ে ধরে আদর খাচ্ছে। পরীর মুখে অনাবিল আনন্দ, যেন অনেক দিন পরে ও হারিয়ে যাওয়া খেলনা খুঁজে পেয়েছে।

মা ওদেরকে শোনাতে লাগলেন যে পরীর ঘরটাকে মা কি রকম করে সাজিয়েছেন। সব ঘরের জন্য নতুন পর্দা কেনা হয়েছে, পরীর যে রঙ ভালো লাগে সেই রঙের বিছানার চাদর কেনা হয়েছে। এমনকি ঘরের দেয়ালের রঙ পর্যন্ত পরীর পছন্দের রঙে রঙ করেছে মা। অভির সেই কথা ঠিক সহ্য হলো না, মায়ের যেন সব কিছু বাড়িয়ে বলার স্বভাব। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে দেখলো, ধিরে ধিরে পরী জানতে পারবে ওর ছোটো মা কি রকম মানুষ। অভি মাথা ব্যাথার ছল করে ওখান থেকে উঠে, তিন তলায় নিজের ঘরে চলে এলো।

মায়ের সবকিছু যেন বাড়াবাড়ি করে বলার স্বভাব। নিজে কি করেছে না করেছে যেন সবাইকে ঢাক পিটিয়ে না বললে শান্তি হয় না মায়ের। অভির প্রতি ভালবাসা বা স্নেহ যেন মা সবসময়ে পয়সা দিয়ে মাপে। মাঝে মাঝেই শোনাতে ছাড়ে না যে যেহেতু বাবা মা ওর পড়াশুনার জন্য অনেক পয়সা খরচ করেছে সুতরাং ওকে ভাল রেসাল্ট করতেই হবে। জয়েন্ট পায়নি বলে ওর মুন্ডুপাত করতে ছাড়েনি মা। এই সব ভাবতে ভাবতে চুপ করে টেবিলের পাশে বসে থাকে অভি। এমন সময়ে দরজায় কেউ টোকা মারে।

অভি ভাবে পরী হয়তো দেখা করতে এসেছে, কিন্তু ঘুরে দেখে যে দরজায় সুব্রত দাঁড়িয়ে। সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি মামা কি ব্যাপার? সব কিছু ঠিক তো।”

অভি ওর দিকে হেসে উত্তর দেয়, “মামা সব ঠিক।”

সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করলো, “আজ রাতে পার্টি করা যাবে কি?”

অভি উত্তর দিল, “হ্যাঁ মামা, করা যাবে। কিন্তু তুমি কি এনেছো না আমাকে নিয়ে আসতে হবে?”

সুব্রত, “না মামা আমি আনিনি, তোমাকে যোগাড় করতে হবে।”

অভি, “ঠিক আছে যোগাড় হয়ে যাবে চিন্তা কোরো না।”

সুব্রত, “উলুপিদি জানতে পারবে না তো? জানতে পারলে...”

অভি ওকে আস্বস্ত করে, “না মামা জানতে পারবে না। রাতের বেলা কেউ উপরে আসে না। আমরা চাইলে সারা রাত ধরে গল্প করতে পারি। এইটুকু স্বাধীনতা মা আমাকে দিয়েছে যে আমার ঘরে কোন বন্ধু এলে মা আমার ঘরে আসেন না। আর যাই হোক, সকালে কলেজে যাবার সময়ে আমি সব বোতল নিয়ে বাইরে ফেলে দেব।”

অভি মাকে বললো যে ও আর সুব্রত একটু বাইরে যাচ্ছে। মৈথিলী আর পরী ওদের দু’জনার দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকালো।

মৈথিলী সুব্রতর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় যাওয়া হচ্ছে? যেখানেই যাচ্ছো বেশি দেরি করবে না, খাওয়ার আগেই চলে আসবে।”

সুব্রতর হয়ে অভি উত্তর দিল, “চিন্তা কোরো না আমি তোমার বরকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি না। আমরা খাওয়ার আগেই ফিরে আসব।”

পরী মৈথিলীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে অভির দিকে তাকিয়ে বললো, “আমি জানি তোমরা কোথায় যাচ্ছো।”

অভি বুঝতে পারলো যে পরী বুঝে গেছে তাই চুপ করার জন্য ওকে ধমকের সুরে বললো, “ঠিক আছে হয়েছে, এবারে ভেতরে যাও তুমি।”

অ্যালকোহল কিনতে বেরিয়ে গেল ওরা। বাস স্টান্ডের কাছে একটা দোকানে পেয়ে যেতে পারে না পেলে খান্না না হয় দমদম স্টেশানের কাছে যেতে হবে।

সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা মামা তুমি অরুনিমার ওপরে কি জাদু করেছো? বারবার তোমার কথা জিজ্ঞেস করে।”

অভি মাথা চুলকায়, অরুনিমা কে অরুনিমা? তারপরে মনে পড়ে, হ্যাঁ সুব্রতর শ্যালিকা অরুনিমা, দক্ষিণ কোলকাতায় থাকে, বউভাতের দিন দেখা হয়েছিল।

সুব্রত ওর মুখ দেখে বলে, “কি মামা, অরুনিমাকে ভুলে গেলে? আমার সেই সুন্দরী শ্যালিকা, বউভাতের দিনে দেখা হয়েছিল তোমার সাথে।”

অভি, “হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, অরুনিমার কথা।”

সুব্রত, “কি মামা, তুমি আমার অমন সাধের শালিকাকে ভুলে গেলে। ও তোমার কথা কত জিজ্ঞেস করেছিল।”

অভির এসব কথা ঠিক পছন্দ হয় না, তাই কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে, “মামা তুমি বলো তোমার হানিমুন কেমন গেল। হানিমুনে গিয়ে চুর্ণির সাথে কি কি খেলা করলে।”

সুব্রত, “মামা গোয়া দারুন জায়গা। শীতকালে তো আরও সুন্দর মামা। ওইসব রোদে ঢাকা বিচ আর তার ওপরে বিকিনি পরা মেয়েছেলেরা। মামা কি যে বলবো, চোখের যে কি সুখ, বলে বুঝাতে পারব না।”

অভিঃ “তো তুমি বউকে ছেড়ে ওই বিকিনি পরা মেয়েদের দেখছিলে?”

সুব্রতঃ “মামা, বিউটি দেখা ভাল, টাচ না করলেই হলো।”

অভিঃ “তাঁর মানে কি চুর্ণি সুন্দরী নয়?”

সুব্রতঃ “না না না, আমার মানে সেটা নয়...”

সুব্রত শুরু করলো ওদের হানিমুনের গল্প। দমদম থেকে ওরা অ্যালকোহল কিনে নিয়ে বাড়ির দিকে ফেরা শুরু করলো। ফেরার পথে আবার সুব্রতর মুখে অরুনিমার কথা।

সুব্রতঃ “অরুনিমা আমাকে বলেছিল যে ও নাকি তোমাকে ওর ফোন নাম্বার দিয়েছে আর তুমি নাকি একবারও ফোন করোনি?”

অভিঃ “মামা আমি একদম ভুলে গেছিলাম ওর কথা তো আমি কি করে ওকে ফোন করবো। যাই হোক ও অত বার করে আমার কথা কেন জিজ্ঞেস করছিল?”

সুব্রতঃ “আরে মামা, না জানার ভান কোরোনা একদম। তুমি ওকে কি জল খাইয়েছ সেটা তুমি জানো।”

অভি ওকে মজা করে বললো, “মামা আর একবার অরুনিমার সাথে পরিচয় করিয়ে দাও তারপরে দেখো তোমার শালির অবস্থা কি করি।”

সুব্রত জোরে হেসে ফেললো, “মামা অরুনিমা তোমার সাথে দেখা করার জন্য পাগল। আমি তোমার ফোন নাম্বার ওকে দেইনি এই ভেবে যে তুমি কি ভাববে তাই। যাই হোক আমি তোমার কথা অরুনিমার কাছে পৌঁছে দেব।”
 
Chapter 1: জলপরীর স্বপ্ন। (#2)

বাড়ি ফিরে দেখলো, যে খাবার তৈরি। মা জানালেন যে পরী মায়ের সাথে শোবে। পরীর ঘরে সুব্রত আর মৈথিলী, বাবার জায়গা গেষ্ট রুমে। খাবার পরে সুব্রত আর অভি তিন তলায় অভির ঘরে চলে যায়, ড্রিঙ্ক পার্টি শুরু করার জন্য।

অভি আর সুব্রত মুখমুখি বিছানার ওপরে বসে। অভি বিছানার ওপরে খবরের কাগজ পেতে দেয়, তার ওপরে বোতল আর গ্লাস রাখে। সুব্রত প্রথম পানের গ্লাস তৈরি করে অভির হাতে ধরিয়ে দেয়।

অভিঃ “চিয়ারস ফর হানিমুন, মামা।”

সুব্রতর কিছুক্ষণ পরেই নেশা চড়ে যায়, “কি জায়গা মামা, কি যে বলবো।”

অভিঃ “তুমি মামা শুধু বিচ আর বিউটি দেখেছো? তোমার চুর্ণির বিউটি দেখোনি?”

সুব্রতঃ “চুর্ণি চুর্ণি চুর্ণি... আমার স্বপ্নের সেক্সি বউ।”

অভিঃ “আমি জানি তোমার সেক্সি বউ, তারপর কি হলো?”

সুব্রতঃ “মামা হানিমুনে তুমিও গোয়া যেও।”

অভি মনে মনে বলে, “আমার জান সমুদ্র সৈকত পছন্দ করে না, পাহাড় পছন্দ করে। হানিমুন তো আমরা পাহাড়ে কাটিয়ে এসেছি।” অভি ওকে বলে, “না মামা, আমার পাহাড় পছন্দ, আমি আমার বউকে নিয়ে হানিমুনে পাহাড়েই যাবো।”

গল্প চলতে থাকে, রাত এগারোটা বেজে যায় গল্প করতে করতে। কলকাতার ফেব্রুয়ারি মাসের শীত বড় মিষ্টি। কিন্তু আজ মদের নেশায় আর মৈথিলীর রুপ যেন ওর শরীর গরম করে দিয়েছে। গ্লাসের শেষ পানীয়টুকু গলায় ঢেলে দেয় অভি। চোখের সামনে এক কমনীয় নারী মূর্তি ভেসে ওঠে, কে ও পরী না মৈথিলী?

সুব্রত আর অভি দুজনের নেশা আজ ঠিক ঠাক, নিজেদের আয়ত্তে আছে এখন, বউভাতের আগের দিনের রাতের মতন চুড়ান্ত অবস্থায় এখন পৌঁছায়নি ওরা। কিছুক্ষণ পরে দুজনেই চুপ, যেন আর কিছু বলার নেই। এক এক চুমুক গ্লাসে দিতে দিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে লাল লাল চোখে।

ঠিক সেই সময়ে দরজায় আওয়াজ হয়। মৈথিলী দরজার পাল্লা ঠেলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে, পেছন পেছন পরী।

মৈথিলী বোতল আর গ্লাস দেখে আঁতকে ওঠে, “কি হচ্ছে এ সব। আমি তো ভাবছিলাম যে তোমরা এমনি গল্প গুজব করছো, ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি যে তোমরা দারুর বোতল নিয়ে বসবে, সেই রাতের কথা মনে নেই তোমাদের?”

নেশায় ঢুলু ঢুলু অভির চোখের সামনে দুই সুন্দরী নারী দাঁড়িয়ে। মৈথিলীর পরনে একটা হাল্কা বেগুনি রঙের টু’ পিস নাইটড্রেস। কোমরের কাছে বেল্ট দিয়ে বাঁধা থাকার দরুন উন্নত বুক দুটি যেন ফুলে উঠেছে। ভেতরের নাইটড্রেসটা মনে হয় হাতকাটা এবং ছোটো। মাঝে মাঝে উপরের অংশের ফ্লাপ খুলে যাওয়ার দরুন মসৃণ পা বেরিয়ে পড়ছে। মাথার চুল খোলা, চোখে যেন আগুন। কটমট করে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে আছে। পরী ওর পেছনে দাঁড়িয়ে পরনে সাদা রঙের পাতলা একটা নাইট ড্রেস। পরীর পেলব শরীরের সাথে লেপটে রয়েছে গায়ের কাপড়। পরী পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে মৈথিলীর কোমর আর ওর কাঁধের ওপরে থুতনি রেখে মিটিমিটি করে অভির দিকে তাকিয়ে হাসছে। অভির নেশার চোখে ঠাহর করতে পারছে না যে এই রাতে কাকে বেশি সুন্দরী দেখাচ্ছে, পরী না মৈথিলী। পরী মত্ত চোখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দেয় আর জিব দিয়ে ওপরের ঠোঁট চেটে নেয়। অভির হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে পরীর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। সুব্রত মৈথিলীর দিকে ক্ষুধার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে, সুযোগ পেলে যেন ঝাঁপিয়ে পড়বে মৈথিলীর ওপরে আর কুটিকুটি করে ছিঁড়ে খাবে ওর কমনীয়তা। পরী যেহেতু মৈথিলীর বুকের নিচে হাত দিয়ে থাকে তাই মৈথিলীর বুক দুটি অস্বাভাবিক রুপে সামনের দিকে ঠেলে ওঠে। সুব্রত আর অভির দু’জনের সেই উন্নত বক্ষ দেখে শিরায় শিরায় উত্তেজনার আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

অভি ওদের রুপ লাবন্য দেখে আর থাকতে পারে না। পরীর হাসি যেন ওর বুকের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এত কাছে থাকা সত্তেও পরীকে জড়িয়ে ধরতে পারছেনা অভি, ওর ওই লাল লাল গালে চুমু খেতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত অভি ওদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে দু’হাত মৈথিলীর দিকে ছড়িয়ে দিয়ে, দু’চোখ পরীর চোখের ওপরে নিবদ্ধ করে গান গেয়ে ওঠে “এয়সে না মুঝে তুম দেখো...
সিনে সে লগা লুঙ্গা...
তুমকো মেয় চুরা লুঙ্গা তুমসে...
দিল মে ছুপা লুঙ্গা...”

ওর গান শুনে মৈথিলী একটু থমকে যায়। দুজনেই লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। পরী বুঝতে পারে যে গানটা অভি ওর জন্য গেয়েছে, কিন্তু লজ্জায় মৈথিলী নিজের মুখ দুহাতে ঢেকে নেয়। সুব্রত লাফিয়ে নেমে পড়ে বিছানা থেকে আর অভির কান ধরে উঠিয়ে দেয়।

সুব্রতঃ “আবে কুত্তা, আমার বউকে লাইন মারা হচ্ছে?”

অভি মনে মনে বলে, “মামা আমি তোমার বউকে কেন লাইন মারতে যাব। আমার বউ যে তোমার পেছনে দাঁড়িয়ে, আমি গান তো আমার বউয়ের জন্য গেয়েছি।” কিন্তু সুব্রতর সাথে মজা করার জন্য বলে, “মামা চুর্ণিকে দেখে আর থাকতে পারলাম না মামা, আচমকা গানটা বুক থেকে বেরিয়ে গেল।”

সবাই হেসে ওঠে ওর কথায়। তারপরে সবাই বসে পড়ে বিছানার ওপরে। মৈথিলী সুব্রতর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে আর সুব্রত মৈথিলীকে জড়িয়ে ধরে থাকে। জড়াজড়ি করার ফলে মৈথিলীর পরনের কাপড় হাঁটুর ওপরে উঠে আসে আর মসৃণ বাঁকা পায়ের গুচ্ছ নেশাগ্রস্ত অভির চোখের বেরিয়ে পড়ে। সেই দৃশ্য দেখে অভির গলার কাছে উত্তেজনা দলা পাকিয়ে যায়। সুব্রতর আদরের চোটে মৈথিলীর চোখ কিঞ্চিত বন্ধ হয়ে আসে। পরী আর অভি জানে যে ওদের সামনে ওরা প্রেমিক প্রেমিকা নয় তাই ওরা দুজনে একটু দুরে দুরে বসে। পরীর মনে অভির মুখ দেখে বড় কষ্ট হয়, এত কাছে থাকা সত্তেও ও ওর কোলে মাথা রেখে শুতে পারছে না। হৃদয়ের ভেতরটা যেন কেঁদে ওঠে পরীর। শুধু দুজন দুজনার দিকে চোরা চাহনিতে প্রেম নিবেদন ছাড়া আর কিছু করতে পারে না।

মৈথিলী অভিকে বলে, “অভিমন্যু তুমি আমার বরকে মাতাল বানিয়ে ছাড়লে।”

অভিঃ “আরে চুর্ণি, আমার সাথে দেখা হওয়ার আগে থেকে তোমার বর ড্রিঙ্ক করে।”

মৈথিলী ওর কথা শুনে সুব্রতর দিকে কটমট করে তাকায়, এই যেন খেয়ে ফেলবে। সুব্রত বিব্রত বোধ করে, মৈথিলীকে শান্ত করার জন্য বলে, “না গো, আমি একদম ড্রিঙ্ক করি না, এই শুধু বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান হলে করে ফেলি।”

মৈথিলীঃ “আজ বিশেষ কোন অনুষ্ঠান আছে শুনি?”

সুব্রতঃ, “বাঃ রে, আজকে তো বেশ বড় দিন। উলুপিদি আমাদের নেমন্তন্ন করেছে, অভিমন্যুর সাথে দেখা হলো, আমাদের হানিমুন ভাল কেটেছে... আরও কত কিছু আছে বেবি।”

অভিঃ “পিনেওয়ালে কো পিনে কা বাহানা চাহিয়ে... মাতালের শুধু মাত্র একটা ফাঁক দরকার, চুর্ণি।”

পরী আর মৈথিলী দুজনেই অভির কথা শুনে হেসে ফেললো। মৈথিলী সুব্রতকে বললো, “আর গলায় না ঢেলে আমার সাথে শুতে এসো তাড়াতাড়ি।”

মৈথিলীর দিকে দেখলো অভি, মৈথিলী একটু বিরক্তি ভরা চোখে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে।

অভি ওকে খ্যাপানোর জন্য বললো, “রাতের জন্য তর সইছেনা চুর্ণি? রাতে শোবে না জেগে কাটাবে?” ওর কথা শুনে মৈথিলীর মুখ আবার লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। পরী বিরক্ত হয়ে অভিকে বকে, “তুমি চুপ করবে না হলে আমি কিন্তু তোমাকে মেরে ফেলব।”

অভি পরীর দিকে ফিরে মাথা নুইয়ে ইশারায় জানায়, “তোমার হাতে মরার জন্য আমি কবে থেকে তৈরি।”

সুব্রত মৈথিলীকে অনুনয় করে, “প্লিস প্লিস প্লিস, আর একটা গ্লাস, ব্যাস তারপরে আমি তোমার বাহুতে।”

পরী অভিমান করে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমরা গিলবে ওই সব আর আমরা কি আঙুল চুষব?”

সুব্রতঃ “আরে না না, তোরা কোক খেতে পারিস।”

কোকের বোতলের দিকে তাকিয়ে দেখলো যে বোতল খালি। পরী খালি বোতলটা ওদের নাকের সামনে নাড়িয়ে বললো, “আমরা কি খালি জল খাব? তা হবে না।”

সুব্রত অভিকে জিজ্ঞেস করলো, “মামা কি করা যায়, এই রাতে এদের জন্য কিছু যোগাড় করতে হবে যে না হলে আমি তো রাতে শুতে পারব না মামা।”

অভি আবার গেয়ে উঠল, “কভি নেহি পর শকতা মেয়খানে মে তালা...
কভি নেহি পর শকতা মেয়খানে মে তালা...
এক দো চার নেহি সারা শহর হ্যায় পিনে ওয়ালা...”

কবিতা শুনে সুব্রত বলে উঠল, “ওয়াহ ওয়াহ... কেয়া বাত হ্যায়, তাহলে যাও মামা এক লিটার কোক নিয়ে এসো।”

রাত সাড়ে বারোটা বাজে, অভি একবার ঘড়ি দেখলো একবার পরীকে দেখলো। তারপরে দৌড়ে বেরিয়ে গিয়ে বাস স্টান্ডের কাছে একটা দোকান থেকে এক বোতল কোক কিনে আনলো।

হাঁপাতে হাঁপাতে সিঁড়ি চড়ে ছাদে উঠে লক্ষ্য করে যে পরী খালি ছাদের দাঁড়িয়ে, আকাশের দিকে মুখ করে একমনে তারা দেখছে। আকাশে বাঁকা চাঁদ, মেঘের আড়ালে মাঝে মাঝে লুকোচুরি খেলছে।

পরীর হাত বুকের কাছে ভাঁজ করা। সেই অন্ধকার রাতের মৃদু আলোতে পরীকে যেন স্বর্গের অপ্সরার মতন দেখাচ্ছে। পরনের পাতলা কাপড় ওর ত্বকের সাথে লেপ্টে রয়েছে, কাঁধ অনাবৃত। হাত আর কাঁধের মসৃণ ত্বকের ওপরে রাতের মৃদু আলো পিছলে যাচ্ছে যেন। চওড়া পিঠের পরে পরীর পাতলা কোমরের দিকে অভির ক্ষুধার্ত চোখ গেল। ঠিক পাতলা কোমরের নিচে ফুলে উঠেছে কোমল নিতম্ব। পরনের কাপড় এত পাতলা যে পরীর শরীরের প্রতিটি বাঁক ফুটে উঠে ওর ক্ষুধার্ত চোখের সামনে উন্মুক্ত। মাথার চুল খোলা, হাওয়ায় উড়ে মাঝে মাঝে ওর সুন্দর মুখের ওপরে চলে আসছে। পরীর কোমল শরীর দেখে অভির মাথার মধ্যে কামনার আগুন জ্বলে ওঠে। বুকের মাঝে প্রবল ইচ্ছে জাগে যে এখুনি ওকে বাহুপাশে নিয়ে মত্ত খেলায় রত হয় অভি।

পা টিপে টিপে পরীর পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় অভি। হৃদয় ওকে সাবধান করে, “কি করতে চলেছো অভি, সময় ঠিক নয়।” পরী রাতের আকাশ দেখতে এত বিভোর ছিল যে টের পায় না যে অভি ওর পেছনে দাঁড়িয়ে। অভির মাথা ওকে থামতে বারন করে, বলে, “কি বোকা তুমি। তোমার প্রেমিকা একা একা দাঁড়িয়ে তোমার সামনে আর তুমি বোকার মতন চেয়ে দেখছো? যাও জড়িয়ে ধর।”

অভি ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ নামিয়ে গোল কাঁধে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। আচমকা কারুর ঠোঁটের পরশে পরী চমকে ওঠে, তারপরে পেছনে মাথা হেলিয়ে অভিকে জিজ্ঞেস করে, “কখন এলে?”

অভি ওর পেটের ওপরে হাত রাখে, আর আলতো করে পেটের নরম মাংসে চাপ দেয়। ধিরে ধিরে অভির হাত পেটের নিচে নামতে শুরু করে। তলপেটের ঠিক নিচে আর জানুসন্ধির ঠিক ওপরে বাঁ হাত রাখে অভি। ডান হাত পরীর বুকের মাঝখান থেকে নিয়ে গলা ধরে পেছন দিকে চেপে নেয় যাতে ওর গাল অভির গালে লাগে। পরী ওর উত্তপ্ত বাহুপাশে বদ্ধ হয়ে প্রেমের আবেগে কেঁপে ওঠে।

অভি মৃদুকন্ঠে ওর কানে কানে বলে, “অনেকক্ষণ আগে সোনা। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমাকে দেখছিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না সোনা।”
 
Chapter 1: জলপরীর স্বপ্ন। (#3)

পরী মৃদু শীৎকার করে ওঠে, “ম্মম্মম্মম... কি করছো কি? সুব্রতদা আর মৈথিলী তোমার রুমে আছে।” ধরা পড়ে যেতে পারে এই ভয়টা যেন অভিকে আরও পাগল করে তোলে। আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরীকে আর কানের লতিতে চুমু খেতে শুরু করে। ধিরে ধিরে ওর নরম গালে গাল ঘষতে থাকে অভি, ত্বকের ঘর্ষণের ফলে দু’জনের শরীর থেকে আগুনের ফুলকি বের হয়ে শুরু করে দেয়। অভির শয়তান হাত পরীর পুরুষ্টু নিতম্বের ওপরে খেলা করতে শুরু করে। কাপড়ের ওপর থেকে ছুঁয়ে বুঝতে পারে যে পরীর নাইটড্রেসের নিচে কিছুই পরেনি। সেটা ভেবেই অভির মাথার মধ্যে বাসনার রক্ত টগবগ করে ফুটে ওঠে। হাতের মধ্যে পিষে ফেলে একটা নিতম্ব বলয়। পরী থাকতে না পেরে চোখ বন্ধ করে নেয়, হাত পেছনে নিয়ে অভির চুলে মুঠি করে ধরে। অভি ওর নিতম্বের খাঁজের মধ্যে নিজের কঠিন সিংহটিকে চেপে ধরে। পরী উত্তপ্ত সিংহের স্পর্শে কেঁপে ওঠে বারংবার।

অভি পরীর কানে কানে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি বলতো, তুমি আমার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে ছিলে, তাই না?”

পরী প্রেমঘন মৃদুকন্ঠে উত্তর দেয়, “অভি আমার সারা শরীর কিছু হচ্ছে, অভি আমাকে ছেড়ে দাও প্লিস। ওরা যদি বেরিয়ে আসে তাহলে আমরা খুব বিপদে পড়ে যাব।”

অভিঃ “তাহলে একা একা এখানে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?”

পরীঃ “তুমি চলে গেলে, আমার খুব একা লাগছিল। ওরা দুজনে প্রেম শুরু করে দিল তাই ওদের ছেড়ে দিয়ে আমি বাইরে চলে এলাম।”

অভি পরীর বুকের কাছে হাত রেখে আলতো চেপে জিজ্ঞেস করে, “চাঁদের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছিলে তুমি?”

পরীঃ “সেই প্রথম চুম্বনের কথা মনে পড়ে গেছিল আমার। এখন আমার কপালে তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া লেগে আছে।”

অভির বাঁ হাত তলপেটের নিচে নেমে যায়, জানুসন্ধির মাঝে নিয়ে যায় আঙুল। চেপে ধরতে চেষ্টা করে পরীর নারীত্বের দ্বার। পরী বুঝতে পারে অভির বদ মতলব, ঠিক সময়ে হাত চেপে উঠিয়ে নিয়ে আসে পেটের ওপরে।

সাপের মতন ফোঁস করে ওঠে পরী, “শয়তান ছেলে, প্লিস কোরো না ওই রকম।” অভি ছাড়তে চায়না পরীকে আর পরী কাকুতি মিনতি করে অভির কাছে, “প্লিস ছেড়ে দাও সোনা, মৈথিলী চলে আসবে... ম্মম্মম্মম... আহ... কি করছো কি... ছাড়ো না প্লিস...”

অভি কাকুতি করে, “একটা ছোটো চুমু দিলে আমি ছেড়ে দেব।”

পরীঃ “এখন না প্লিস, কিন্তু কথা দিচ্ছি যে তোমার স্বপ্ন পূরণ করবো।”

অভির হাত পরীর উন্নত বুকের ওপরে উঠে আসে, আলতো করে আঙুল বুলিয়ে দেয় পরীর নরম বুকের ওপরে।

পরী আবার ফোঁস করে ওঠে, “তুমি শুনবে না তাই না। কেউ যদি বাইরে এসে আমাদের এই রকম অবস্থায় দেখে ফেলে না তখন জানবে কি বিপদ হবে।”

অভিঃ “আমি তোমাকে ছেড়ে দেব, কিন্তু কথা দাও যে আমার গুডনাইট কিস খুব মিষ্টি হবে।”

পরীঃ “কথা দিচ্ছি অভি... এবারে ছাড়ো।”

পরী কোনোরকমে অভির উত্তপ্ত আলিঙ্গন থেকে অনিচ্ছা সত্তেও নিজেকে মুক্ত করে চুল আর কাপড় ঠিক করে নেয়। অভির দিকে তাকায় দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে। অভি নিজেকে সামলে নেয়। পরী বন্ধ দরজায় আলতো টোকা মারে আর গলা খাঁকরে জানান দেয় যে ওরা উপস্থিত।

পরীঃ “আমরা আসতে পারি কি?”

সুব্রতঃ “আরে এসো এসো, অভি এত তাড়াতাড়ি চলে এলো যে?”

সুব্রতর কাঁপাকাঁপা গলার আওয়াজ শুনে ওদের বুঝতে বিশেষ অসুবিধে হলো না যে সুব্রত আর মৈথিলী বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল আদরের খেলায়। ঘরের মধ্যে ঢুকে দেখে যে, মৈথিলী সেই সুব্রতর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আর টুপিস নাইটড্রেসের ওপরের অংশটি মাটিতে লুটিয়ে। গায়ে ভেতরের পাতলা নুডল স্ট্রাপ স্লিপ হাঁটু পর্যন্ত নেমে এসেছে কোনোরকমে। মৈথিলীর শরীরের কমনীয় বাঁকের সাথে এমন ভাবে লেপ্টে আছে গায়ের কাপড় যেন দেখে মনে হচ্ছে যে কিছুই পরেনি মৈথিলী, ত্বকের ওপরে যেন হাল্কা বেগুনি রঙ করা। অভির দৃষ্টি চলে যায় উন্নত বুকের ওপরে। ঊর্ধ্বাংশ অনেকটা অনাবৃত, দু’বুকের মাঝের বিভাজন অনেকটা দেখা যাচ্ছে, দৃষ্টি নেমে গোল পেটের ওপরে, সুগভীর নাভির অবয়ব বেশ ভালো ভাবে ফুটে উঠেছে পাতলা স্লিপের ভেতর থেকে। সরু কোমরের পরে ফুলে উঠেছে পুরুষ্টু নিতম্ব, আর তারপরে পেলব জানুদ্বয়। স্লিপটা এতই পাতলা যে অভির বুঝতে একটুও কষ্ট হলনা যে মৈথিলী ওই স্লিপের ভেতরে কিছুই পরেনি।

সুব্রত অভিকে জিজ্ঞেস করলো, “কোক পেয়েছো?”

অভি মাথা নাড়লো, “হ্যাঁ মামা কোক পেয়েছি, এখন কি?” অভি একবার মৈথিলীর মুখের দিকে তাকালো আর একবার সুব্রতর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “গল্প করতে চাও না শুতে যেতে চাও?”

মৈথিলী নিচু গলায় উত্তর দেয়, “একটু কোক খেলে ভাল হতো।”

অভি পরী আর মৈথিলীকে দু গ্লাসে কোক ঢেলে দিল। সুব্রতকে জিজ্ঞেস করলো, “মামা আরও এক পেগ হয়ে যাবে নাকি?”

সুব্রতঃ “মামা খুব বলছো, আমার তো একটা চাইই চাই।”

মৈথিলীর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হেসে অভি বলে, “আজ রাতে তোমার কপালে ভীষণ দুঃখ আছে চুর্ণি।” সুব্রতকে জিজ্ঞেস করে, “ঠিকঠাক আছো তো নাকি?”

সুব্রত মৈথিলীর নরম পেটের ওপরে হাত বুলিয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ মামা একদম ঠিক, ব্যাস শোয়ার আগে এক পেগ মারব।”

অভিঃ “জো হুকুম জাঁহাপনা।” এই বলে গ্লাসে মদ ঢালতে শুরু করে অভি। একটা গ্লাস ধরিয়ে দেয় সুব্রতকে, নিজে ছোটো ছোটো চুমুক দেয় গ্লাসে।

সুব্রতঃ “হ্যাঁ তা আমাদের গল্প কোথায় থেমে ছিল।”

অভিঃ “সেটা ঠিক মনে নেই আমার।”

সুব্রতঃ “অহ হ্যাঁ, আমাদের হানিমুনের কথা। তুমি মামা গোয়া যেও কিন্তু।”

পরী ওর কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায় কিন্তু বুদ্ধিমতী মেয়ের মতন নিজের লজ্জাটাকে আড়াল করে লাজুক দৃষ্টিতে অভির দিকে তাকায়। অভি ওর গালের লালিমা দেখে বুঝতে পারে যে পরীর মনে সেই পুরানো চিতকুলের ছবি ভেসে উঠেছে আর হৃদয় সিক্ত হয়ে উঠেছে। অভি দেখলো যে সুব্রত একবার হানিমুনের কথা শুরু করলে থামতে চাইবে না আর পরী আরোও লজ্জা পাবে। কিন্তু শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল অভির মাথায়, একটু মৈথিলীকে নিয়ে মজা করার জন্য।

অভিঃ “হ্যাঁ মামা গোয়া কেন, অন্য জায়গা কেন নয়?”

সুব্রতঃ “আরে মামা গোয়ায় সুন্দর সুন্দর রোদে ঢাকা বিচ, বিশাল নীল সমুদ্র। সমুদ্র তীরে লম্বা লম্বা নারকেল গাছ, অপরূপ সুন্দর মামা, গোয়ার সমুদ্র সৈকত।”

অভিঃ “আর কি আছে?”

মৈথিলী সুব্রতর দিকে দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকায়, সুব্রতর নেশা যেন একটু চড়ে গেছে বউয়ের গালের ছোঁয়ায়, “মামা আর কি বলবো, বিকিনি পরা সব মেয়ে, সমুদ্রে স্নান করছে, সেই দৃশ্য আর কি ভোলা যায় মামা... উফফফ...”

মৈথিলী লজ্জা পেয়ে সুব্রতর জানুতে থাপ্পড় মেরে বলে, “তুমি কি ফরেনারদের দেখছিলে?”

সুব্রতঃ “সত্যি বলছি মামা, ফরেনারদের যা গঠন ভারতীয়দের মানায় না বিকিনিতে। আর ভারতীয়রা খুব কম বিকিনি পরে ঘুরে বেড়ায় মামা।”

পরীর দিকে তাকালো অভি, লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেছে। লুকিয়ে লুকিয়ে অভির হাতের কাছে হাত এনে আলতো করে আঙুলে আঙুল ঠেকায় পরী। অভির হাতে পরীর আঙুলে পরশ পেয়ে যেন ঝলসে ওঠে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে চোখের ভাষায় মিনতি করে, “দয়া করে থামাও ওকে না হলে কিন্তু আমি চলে যাব।”

মৈথিলী উঠে বসে আর আদর করে এক থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় সুব্রতর গালে। গালে থাপ্পড় খেয়ে সুব্রত মিউমিউ করে ওঠে কিন্তু বলতে ছাড়ে না, “আরে বাবা আমি কি ভুল বলছি নাকি? ভারতীয় মহিলাদের সাহস নেই ওইরকম সব বিকিনি পরে সি বিচে ঘুরে বেড়ানোর।”

পরী মৈথিলীর চোখ দেখে বুঝতে পারে যে মৈথিলী কিছু লুকাচ্ছে তাই ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার মৈথিলী, তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে যে তোমার কিছু বলার আছে?”

মৈথিলী জোরে মাথা নাড়িয়ে বলে, “না না আমার কিছু বলার নেই, ও বড় লজ্জার ব্যাপার আমি বলতে পারব না।”

সুব্রত মৈথিলীর সরু কোমর জড়িয়ে আদর করে ওর কানে কানে বলে, “ডারলিং তুমি না বললে কি আমি বলে দেব?”

অভি বুঝতে পারলো যে ওরা গোয়ায় কিছু একটা করেছে যার জন্য মৈথিলী এত লজ্জা পাচ্ছে বলতে। অভি উৎসুক হয়ে উঠলো ঘটনা জানার জন্য আর মৈথিলীকে জিজ্ঞেস করলো, “আরে বাবা আমরা এখন বন্ধুর মতন হয়ে গেছি আর লুকিয়ে কি হবে চুর্ণি, বলে ফেল।”

মৈথিলী জোরে মাথা নাড়ায় আর সুব্রতর কাঁধের পেছনে চেহারা লুকিয়ে নেয়, “না না আমি বলতে পারব না।”

সুব্রত ওর মদের গ্লাস মৈথিলীর ঠোঁটের কাছে এনে বলে, “এক সিপ নিয়ে নাও সোনা দেখবে সব গলগল করে বের হচ্ছে।”

পরী অভির দিকে চোরা চাহনি নিয়ে তাকায় আর মিটিমিটি হাসে।

মৈথিলী সুব্রতর চোখের পানে গভীর ভাবে তাকিয়ে হটাত করে গেয়ে ফেলে, “আরে দো ঘুট মুঝে ভি পিলা দে সরাবি
দেখ ফির হোতা হ্যায় কেয়া...
আরে দো ঘুট মুঝে ভি পিলা দে সরাবি...”

পরী ওর দিকে চোখ টিপে জিজ্ঞেস করে, “কি দুষ্টুমি করেছো তোমরা?”

মৈথিলী সুব্রতর গাল দু’ আঙুল দিয়ে টিপে বলে, “এই দুষ্টু শয়তানটা আমার জন্যে একটা ছোট্ট লাল রঙের বিকিনি কিনেছিল, আর আমাকে জোর করে একদিন পরিয়েছিল ওই বিকিনি। আমি বিকিনি পরে বিচে গেছিলাম।” কথাটা বলেই মৈথিলী লজ্জায় লাল হয়ে যায় আর সুব্রতর কাঁধে মুখ লুকিয়ে নেয়। সুব্রতর হাত উঠে আসে মৈথিলীর চওড়া পিঠের ওপর, মৃদু ভাবে হাত বোলাতে থাকে পিঠের ওপরে। সুব্রত ওর বউয়ের লাজুক মুখ দেখে হাসিতে ফেটে পড়ে, অভির দিকে তাকিয়ে যেন বলতে চায়, “মামা তোমার বউকেও ওইরকম বিকিনি পরিও, দারুন লাগবে মামা।”

অভি পরীর দিকে তাকায়, পরী বুঝতে পারে অভির মনের ভাব। লজ্জায় পরীর মুখ লাল হয়ে ওঠে। অভি জানে যে পরী মরে গেলেও কোনদিন সর্বসম্মুখে ওই রকমের ছোট্ট পোশাক পরে বের হবে না।

অভি যেন ওর নেশাগ্রস্ত চোখের সামনে মৈথিলীর কমনীয় পেলব শরীরটিকে লাল বিকিনি পরে দেখতে পায়। দুই উন্নত সুগোল বক্ষ যেন সেই ছোটো পোশাকের মধ্যে থেকে ফেটে বেরিয়ে আসছে। পুরো পেট অনাবৃত, গোল পেটের মাঝে সুগভীর নাভিদেশ, তারপরে ফুলে উঠেছে তলপেটে আর পুরুষ্টু নিতম্বদ্বয়। ছোটো লাল রঙের কটি আভরন মৈথিলীর নারীত্বের দোরগোড়ায় এঁটে বসে আছে। সুডৌল নিতম্ব বিভাজনের মাঝে ওই ছোটো আভরন হারিয়ে গেছে আর নরম নিতম্ব যেন ওর চোখের সামনে অনাবৃত। খোলা চোখের সামনে এই ছবি অভিকে পাগল করে তোলে। একবারের জন্য ভাবতে চেষ্টা করে যদি ও নিজে মৈথিলীকে ওই পোশাকে দেখতে পেত তাহলে কি করতো। আর ভাবতে পারে না অভি।

সুব্রতর গ্লাস খালি হয়ে এসেছে, সাথে সাথে অভিও গ্লাসের বাকি পানীয়টুকু গলায় ঢেলে নেয়। সুব্রত অভির ফাঁকা গ্লাস দেখে জিজ্ঞেস করে যে আর একটা গ্লাস হবে নাকি, সেই শুনে পরী আর মৈথিলী দু’জনে চেঁচিয়ে ওঠে, না।

সুব্রত অভিকে জিজ্ঞেস করে, “মামা কাল আমরা একটা সিনেমা দেখতে যাব, তুমি আমাদের সাথে যাবে নাকি?”

অভি মাথা নাড়ায়, “না মামা কাল আমার ইলেক্ট্রিকালের প্রাক্টিকাল আছে আমি যেতে পারব না মামা। আমি গেলে আমার প্রাক্টিকাল পার্টনার আমাকে মেরে ফেলবে।”

অভি পরীর দিকে তাকিয়ে মৃদু মাথা নাড়িয়ে ইশারায় জানায় যে, ও দুঃখিত যে ওদের সাথে সিনেমা দেখতে যেতে পারবে না বলে।
 
Chapter 1: জলপরীর স্বপ্ন। (#4)

মৈথিলী ওকে বলে, “ঠিক আছে সেটা না হয় হলো না, কিন্তু শনিবার আমরা ঢাকুরিয়ায় অমল কাকুর বাড়ি যাব, সেখানে তোমাদের দু’জনকেই যেতে হবে।”

অভি জিজ্ঞেস করে, “কে অমল কাকু?”

মৈথিলীঃ “অরুনিমার বাবা, আমি কিছু জানিনা, তুমি আমাদের সাথে যাচ্ছো।”

পরী ওর দিকে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আর মৈথিলী ওর দিকে উৎসুক ভাবে তাকিয়ে। বড় দো’টানার মাঝে পড়ে যায় অভি, কিছু একটা বলে খান্ত করতে হবে মৈথিলীকে আর পরীকে পরে বোঝানো যাবে।

অভিঃ “ঠিক আছে, শনিবারের কথা শনিবারে দেখা যাবে।”

রাত অনেক হয়ে গেছে, সুব্রত মৈথিলীকে সঙ্গে করে বেরিয়ে যায় অভির ঘর থেকে। পরী ওদের পেছন পেছন বেরিয়ে যেতে থাকে। অভি দেখলো পরী যে ওর কথা রাখছে না তাই পেছন থেকে পরীর কাঁধে হাত রাখে, ইশারায় বলতে চায় যে তুমি তোমার কথা রাখছো না। পরী কাঁধের ওপর থেকে ওর দিকে মিষ্টি করে তাকায়। সুব্রত আর মৈথিলী কিছুটা এগিয়ে গেল। পরী একটু দাঁড়িয়ে রইল তারপরে ওর দিকে তাকিয়ে ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটের সামনে এনে ডগায় আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওর দিকে নাড়ে, অভি সেই ছুঁড়ে দেওয়া চুম্বনটাকে বুকের ওপরে মেখে নেয়।
ভগ্ন হৃদয়ে পরীর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে চোখের ইশারায় বলে, “তুমি কথা দিয়েছিলে পরী।”

পরী মাথা নেড়ে চোখের ইশারায় জানায়, “এটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো সোনা।” এই বলে পরী ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

অভি বিছানার ওপরে শুয়ে পড়ে, গায়ের ওপরে লেপ টেনে নেয়। ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকে অভি, চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরীর লাল ঠোঁট আর মিষ্টি হাসি। চোখ বন্ধ হয়ে যায় অভির।

কিছু নরম জিনিস যেন ওর কপালে ছুঁয়ে যায়। ঘুম ঘুম চোখ খুলে তাকায় অভি, চারদিকে তাকিয়ে দেখে যে ও একটা বিশাল কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে বসে আছে। গাছের সবুজ পাতা রক্ত লাল ফুলের নিচে ঢেকে গেছে, পাতার জায়গায় শুধু লাল ফুল দেখা যাচ্ছে। গাছ থেকে একটা ফুল ওর কপালের ওপরে এসে পড়ে। ওর চারদিকে কৃষ্ণচুড়ার লাল ফুল ছড়িয়ে। চারদিকে তাকিয়ে দেখে অভি, গাছটা একটা ছোটো পাহাড়ের ওপরে, আর সবুজ ঘাসে ঢাকা সেই পাহাড়। সামনের দিকে চোখ যায় অভির, ঘাসে ঢাকা পাহাড় নেমে গেছে সমুদ্র তীরে। ঘন নীল সমুদ্র অবিশ্বাস্যভাবে শান্ত, এসে মিশেছে পাহাড়ের পাদদেশে। মাথার ওপরের আকাশের রঙও ঘন নীল, এক ফোঁটা মেঘের দেখা নেই। দিগন্তের দিকে তাকায় অভি, কোথায় যে সমুদ্র শেষ হয়েছে আর কোথায় যে আকাশ শুরু হয়েছে সেটা ঠিক বোঝা যায় না। অভি নিজের দিকে তাকায়, পরনে ওর প্রিয় ঘিয়ে রঙের তসরের পাঞ্জাবী আর ধাক্কা পাড়ের ধুতি। ওর সেই ডায়রিটা ওর বুকের ওপরে আধা খোলা অবস্থায় রাখা আর ওপর হাত সেই ডায়রির ওপরে। দিগন্ত থেকে একটা তীব্র সাদা আলো ওর দিকে ধেয়ে আসে। আলোর রশ্মি সমুদ্র তীরে এসে থেমে যায়। সেই আলোর ছটা থেকে একটা ছয় ঘোড়ায় টানা একটা বাঁকা চাঁদ বেরিয়ে আসে। ঘোড়া গুলো অদ্ভুত সুন্দর দেখতে, সবার মাথার ওপরে একটা শিঙ। একটা সুন্দরী জলপরী ওই বাঁকা চাঁদের ওপরে বসে, ওর লম্বা ঘন কালো চুল হাওয়ায় উড়ছে। চুলের দু’গোছা কাঁধের ওপর দিয়ে সামনে এসে জলপরীর উন্নত বুক দুটি ঢেকে রেখেছোে। সেই উন্নত বক্ষের নিচে চোখ যায় অভির, সুন্দর নরম গোল পেটের মাঝে সুগভীর নাভিদেশ, তার নিচে ফুলে উঠেছে সুডৌল নিতম্ব। কোমরের নিচে পায়ের জায়গায় মাছের লেজ। কোমরের নিচে শরীরের নিম্নাঙ্গ সোনালি আর রুপলি রঙের মাছের আঁশে ঢাকা। ছয় ঘোড়া বাঁকা চাঁদটিকে টেনে নিয়ে আসে অভির কাছে।
জল পরীর মুখের দিকে লক্ষ্য করলো অভি, এযে তাঁর প্রেমিকা পরীর মুখাবয়ব। পরী ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে, দু’হাত ওর দিকে বাড়িয়ে দেয়, আলিঙ্গনে আহ্বান জানায় অভিকে। কাজল কালো চোখ দুটি বড় বড় হীরের মতন জ্বলজ্বল করছে। হাসিতে গালে টোল পড়েছে। চুলের এক গোছা ওর বাঁ গালের ওপরে এসে পড়েছে, দেখে মনে হলো যেন চাঁদ এক চিলতে মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলে বেড়াচ্ছে। অভি জলপরী, পরীর দিকে তাকিয়ে হাসলো আর উঠে চলে গেল ওর দু’বাহুর মাঝে। অভিকে জড়িয়ে ধরলো পরী, পরীর প্রেমের আলিঙ্গনে অভি হারিয়ে গেল।
 
Chapter 2: দেবীকথা-অরুন্ধুতি। (#1)

অভির কলেজ ওর বাড়ি থেকে বেশি দুরে নয়। কলেজে সবার একটা ডাক নাম থাকে, অভির ডাক নাম “বিহারী”। তাঁর কারন অভি ওর পড়াশুনার বেশির ভাগ সময় বিহারে কাটায়। দেওঘরে হস্টেলে থেকে অভি স্কুল আর হাইস্কুল পড়েছে।

অভির কলেজ পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়, প্রথম পিরিওড অপ্টিক্সের, করতে পারেনা অভি। লাঞ্চ ব্রেকের পরে প্রাক্টিকাল ক্লাস। প্রাক্টিকাল ক্লাসে ঢুকে পড়ে অভি, বই খুলে একমনে পড়তে শুরু করে। এখনো কেউ আসেনি ক্লাসে। খোলা বইয়ের পাতায় পরীর চোখ আর হাসি দেখতে থাকে অভি। অভির গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে যায়, কেমন জলপরীর মতন পরী ওর বাহুপাশে কাঁপছিল, আর অভি ওর কোমল শরীরটাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে ছিল। বারে বারে নিজের গাল ঘষে অভি, যেখানে পরী গাল ঘষে দিয়েছিল।

এমন সময়ে ওর বাঁ বাহুতে টান পড়ে, “কিরে ওর নাম কি?”

অভির মুখ থেকে আপনা হতেই পরীর নাম বেরিয়ে যায়, “পরী।”

নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে অভির ঘোর কাটে, মাথা ঘুরিয়ে দেখে ওর দিকে মিটিমিটি করে হাসছে ওর সব থেকে ভাল বান্ধবী, অরুন্ধুতি, ওর প্রাক্টিকাল পার্টনার আর ক্লাসের সব থেকে ভাল মেয়ে।

অরুন্ধুতি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “শেষমেশ বিহারী প্রেমে পড়লো। হুম গাধা ছেলে” মৃদু ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “পরীর সাথে কত দিন থেকে প্রেম চলছে? আর আমাকে একবারও জানাস নি তুই?”

অরুন্ধুতি ব্যানার্জি, অভি ওকে মিষ্টি করে ডাকে অরুনা। অরুনা ওর হতবাক বোকা বোকা মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। অভি অনেক সযত্নে পরীর নাম বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছোিল, কিন্তু আজ ধরা পড়ে গেল ওর প্রিয় বান্ধবীর হাতে।

অভি মাথা নাড়ায়, “না না না, কে পরী, আমি কোন পরীকে চিনি না।”

মাথার পেছনে আলতো করে একটা থাপ্পড় মারে আরুনা, “আমার কাছে মিথ্যে কথা বলছিস? তোর চোখ বলছে যে তুই প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস আর তুই কিনা চিনিস না পরীকে?”

ধরা পড়ার পরেও অভি মানতে নারাজ, “না রে সত্যি বলছি আমি কোন পরীকে চিনি না।”

অরুনাঃ “মানতেই পারলাম না যে অভি প্রাক্টিকাল ক্লাসে এই রকম ভাবুক হয়ে বসে থাকতে পারে।”

শেষমেশ অভিকে স্বীকার করতে হয়, “আচ্ছা বাবা আমি তোকে প্রাক্টিকাল ক্লাসের পরে সব বলবো।”

অরুনা মৃদু চিৎকার করে ওঠে, “না, আমি এখুনি সব শুনতে চাই।” জামা ধরে টানতে শুরু করে অরুনা, “চল না ক্লাস বাঙ্ক করি।”

অভিঃ “মানে? আমি তোর জন্য শুধু প্রাক্টিকাল ক্লাস করতে এসেছি আর তুই কিনা ক্লাস বাঙ্ক করার কথা বলছিস।”

অরুনা ওর জামা টেনে তুলে দেয়, “অহ, তুই আমার জন্যে যখন প্রাক্টিকাল ক্লাস করতে এসেছিস তাহলে আমি তোকে যেখানে নিয়ে যাব সেখানে চল। আর সত্যি যদি তুই না যাস তাহলে কিন্তু আমি সত্যি রাগ করবো।”

অগত্যা অভি দাঁড়িয়ে পড়ে, কিন্তু তাও অরুনাকে জিজ্ঞেস করে, “প্রাক্টিকালের কি হবে?”

অরুনাঃ “ধুর বাবা প্রাক্টিকাল নিয়ে চিন্তা করিস নাতো। আমার বাড়িতে ব্রেড বোর্ড আর মাল্টিমিটার সব আছে। আমরা পরে করে নেব। তুই চল আমার সাথে, আমার আর তর সইছেনা।” অরুনা অভির জামা টানতে টানতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল। ওদের দিকে বাকিরা তাকিয়ে, বিশেষ করে সুকোমল আর অনুসুয়া।

পুবালি দৌড়ে অরুনার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, “এই তোরা কোথায় যাচ্ছিস রে? প্রাক্টিকাল ক্লাস করবিনা তোরা?”

অরুনা একবার অভির দিকে তাকিয়ে পুবালিকে উত্তর দিল, “না রে আমরা একটু বের হচ্ছি। আমি তোকে সবকিছু বাড়িতে গিয়ে বলবো আর তুই ঠিক করে প্রাক্টিকাল ক্লাসটা করিস।”

কলেজ থেকে বেরিয়ে অরুনা ওকে জিজ্ঞেস করলো, “কি রে কোথায় যেতে চাস?”

অভিঃ “আর কোথায় যাব বল, চল কফি হাউসে গিয়ে বসি আর কি।” দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করলো।

অরুন্ধুতি ওর বাবা মার দ্বিতীয় সন্তান, দমদম এয়ারপোর্টের কাছে ওদের বাড়ি। অরুনার বাবা আর অভির বাবা দু’জনেই এয়ারপোর্ট অথরিটিতে চাকরি করেন। অরুনাদের একান্নবর্তি পরিবার বাবা কাকা সবাই মিলে এক বিশাল বাড়িতে থাকে। পুবালি অরুনার খুড়তুতো বোন, একই বয়স। অরুনা বেশ মিষ্টি দেখতে, চোখে চশমা আর চোখ দুটো যেন সবসময়ে কথা বলে। খুব চঞ্চল আর হসিখুসি প্রকৃতির মেয়ে অরুনা; কোন সময়ে বুকের ভেতরে কোন কথা লুকিয়ে রাখে না, যা মনে আসে তাই লোককে বলে দেয়। এই জন্যে যেমন ওর বন্ধুর সংখ্যা বেশি তেমনি শত্রুর সংখ্যাও বেশি। পুবালি ঠিক উল্টো প্রকৃতির মেয়ে, খুব চুপচাপ আর সংযত, একটু লাজুক। কারুর সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলে না। সারাদিনে হয়তো দুটো কি তিনটে কথা বলে অন্যদের সাথে।

হাঁটতে হাঁটতে ওরা শিয়ালদা পৌঁছে গেল। অরুনা অর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল, “কিরে গাধা, চুপ করে কেন আমি তোর পরীর কথা সব শুনতে চাই, যদি তুই চুপ করে থাকিস তাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করে লোক জড়ো করে বলবো যে এই ছেলেটা আমার সাথে অপব্যাবহার করছে।”

অভি ওর দিকে মিনতির সুরে বললো, “প্লিস ওই রকম করিস না, আমি তোকে সব বলছি।”

অভি ওর গল্প শুরু করলো, কি করে পরীর সাথে সুব্রতর বিয়েতে দেখা হয়েছিল, কপালে প্রথম চুম্বনের কথা, পরী আর ওর সম্পর্কের কথা। মায়ের সাথে পরীর সম্পর্কের কথা। ওকে জানালো যে পরী কিছুদিন পরে ওদের বাড়িতে থাকতে আসছে।

সব শুনে অরুনা আঁতকে ওঠে, “বলিস কি রে? তিন মাস ধরে তোদের প্রেম চলছে আর আমি কিছু জানি না। শয়তান ছেলে কেন তুই এত কথা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে ছিলিস বলতো। কুত্তা, শূওর...” মাঝ রাস্তায় অরুনা অভিকে মারতে শুরু করে।

রাজাবাজার থেকে বাঁ দিকে বাঁক নিয়ে ওরা শিয়ালদা স্টেশানের দিকে হাঁটতে শুরু করে। সামনে ফুচকা ওয়ালা দাঁড়িয়ে, তাকে দেখে অরুনা ওকে জিজ্ঞেস করে যে ফুচকা খাবে কিনা। অভি মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ।”
অরুনাঃ “ঠিক আছে বাকি গল্প কফি হাউসে গিয়ে শুনবো।” অরুনার সারা মুখে একটা দুষ্টু মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে থাকে। অভিকে একটু আনমনা দেখে জিজ্ঞেস করে, “আজ কি প্রব্লেম তোর যে তুই এত আনমনা?”

অভিঃ “কাল পরী আমার বাড়িতে এসেছে।”

অরুনা, “তুই একটা বড় কুত্তা। পরীকে ছেড়ে তুই প্রাক্টিকাল ক্লাস করতে এসেছিস? যাই হোক তুই না এলে আমি তো জানতেও পারতাম না তাই না।” তারপরে ওর দিকে প্রশ্নের জাল ছুঁড়ে দেয় অরুনা, “আচ্ছা, পরীকে দেখতে সুন্দরী? কি পড়াশুনা করেছে? তুই কবে ওর সাথে আমার দেখা করাবি?”

অভি ওর মাথায় চাঁটি মেরে উত্তর দেয়, “আরে বাবা দাঁড়া দাঁড়া। বাসন্তি পুজোর পরে পরী যখন আমার বাড়িতে থাকতে আসবে তখন তোর সাথে দেখা করাবো, চিন্তা নেই তোর।”

তর্জনী উঁচিয়ে বলে অরুনা, “কথা দিচ্ছিস?”

অভিঃ “হ্যাঁ বাবা কথা দিচ্ছি, তোকে না দেখিয়ে আমি কোথায় যাব রে।”

ওরা ফুচকা খাওয়ার পরে আবার হাঁটতে শুরু করে, ফ্লাইওভার পার করে কলেজ স্ট্রিটের দিকে চলতে থাকে।

অরুনাঃ “তাহলে বিহারী শেষ পর্যন্ত প্রেমে পড়লো।” খিলখিল করে হেসে বলে, “আমি এক সময়ে ভাবতাম তোর কপালে কোন মেয়ে জুটবে না। তোর যা তিরখি মেজাজ আর যা মুখ।”

“তিরখি মেজাজ, হ্যাঁ তা বটে” ম্লান হাসি হেসে অরুনাকে বললো, “এই মেজাজ আমাকে আমার চার পাশের পৃথিবী দিয়েছে রে।”

অরুনা দেখলো অভি আবার ভাবুক হয়ে উঠেছে, “এই ছেলে, ওসব কথা ছাড়। তোর চোখে জল দেখলে আমার খুব কান্না পায়। তোর মুখে হাসি দেখে আমি সত্যি খুব খুশি। আমি সত্যি পরীর সাথে দেখা করে ওকে অনেক বড় ধন্যবাদ জানাবো যে তোর মুখে আবার হাসি ফুটিয়ে তুলেছে।”

অভিঃ “এই সমুদ্রনীলকে ডেকে নেব কফি হাউসে?”

সমুদ্রনীল, অরুনার বন্ধু, অরুনার প্রেম। কোলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে রসায়নে মাস্টার্স করছে। গত বছর অক্টোবরে ওদের দেখা হয় কোন কলেজ অনুষ্ঠানে আর তারপর থেকে প্রেম। সমুদ্রনীল বেশ ভাল ছেলে। যেদিন সমুদ্রনীল অরুনাকে প্রোপোস করে, সেদিন অভি সমুদ্রনীলকে বলেছিল যে যদি কোন দিন অরুনার চোখে জল দেখে তাহলে ও সমুদ্রকে আস্ত রাখবে না, কেটে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেবে ওকে।

ওরা দু’জনে কফি হাউসের দিকে হাঁটতে থাকে। অভির মনে পুরানো স্মৃতি জেগে ওঠে, অরুন্ধুতির স্মৃতি আর ওর নিজের জীবনের কথা। কলেজে দেরিতে ঢোকে অভিমন্যু তাই বাকিদের চেয়ে ও বছর দুই বড়। ছোটো বেলায় হস্টেলে মানুষ, স্কুলের পড়াশুনা ও দেওঘরের এক স্কুল থেকে পড়েছে। ক্লাস ইলেভেনে একবার ফেল করে আর এক বছর নষ্ট হয় জয়েন্ট আই.আই.টি পরীক্ষা দেবার প্রস্তুতি নেবার সময়ে। বাবা মায়ের খুব চাপ ছিল যে ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবে। সবসময়ে অভিকে কথা শুনাতো যে যেহেতু ওর পড়াশুনার পেছনে বাবা মা অনেক টাকা খরচ করছে তাই ওকে জয়েন্ট পেতেই হবে, ভালো রেসাল্ট করতেই হবে। ছোটো বেলা থেকে অভিমন্যুর খুব শখ ছিল যে বড় হয়ে ও একজন নামী চিত্রকর হবে। ক্লাস টেন পাশ করার পরে ও শান্তিনিকেতনে পড়তে চেয়েছিল, কিন্তু বাবা মা বাধ সেধেছিলেন। বলেছিলেন যে এত পয়সা ওরা অভির পেছনে খরচ করেছে শুধু ওকে চিত্রকর বানানোর জন্য নয়, ওকে জয়েন্ট পেয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবার জন্য। বহু রাত কেটে গেছে, বাবা মায়ের সাথে ঝগড়া করে অভি রাতে ঘুমায়নি। ক্লাস ইলেভেনে ওকে একরকম জোর করে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হয়েছে, যেটা ওর বিশেষ ইচ্ছে ছিল না। টুয়েলভ পাশ করার পরে অভি আই.আই.টি আর আই.এস.এম এ পায় কিন্তু অভির মাথায় রোখ চেপে যায় যে ও ইঞ্জিনিয়ার হবে না। অনেক লড়াই যুদ্ধ করার পরে ও শেষমেশ ফিসিক্স নিয়ে কলকাতার এক কলেজে ভর্তি হয়।

আড়াই বছর আগে অভি যখন কলেজে পড়তে আসে, তখন কোলকাতা শহর ওর কাছে এক নতুন জায়গা। হ্যাঁ কোলকাতায় জন্ম ওর হয়েছিল কিন্তু পড়াশুনার জন্য ওকে বাইরে থাকতে হয়েছিল। প্রথম প্রথম ওর কলকাতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে একটু অসুবিধে হয়েছিল। কথাবার্তা বলার ঢঙে বেশি হিন্দি আর ইংরাজি শব্দ বের হতো, যার জন্য ওর ক্লাসের বাকিরা ওকে বাইরের মানুষ বলে গন্য করতো। বন্ধু বলতে কম ছিল, বিশেষ কোন দরকার না থাকলে কেউ ওর সাথে কথা বলতো না বা অভিও কারুর সাথে বিশেষ কথা বলতো না।

কলেজে দেখা হয় অনুসূয়া চ্যাটার্জি, এক সুন্দরী মেয়ে খুব ভাল নাচতো অনুসূয়া। নাচ শেখার জন্য অনুসূয়ার শরীরের গঠন বেশ পাতলা আর দেখতে ভারী মিষ্টি লাগতো। অভি অনুসূয়ার রুপ দেখে ওর প্রেমে পড়ে যায়। ওদের দুজনার মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। অভি অনুসূয়াকে ওর জীবনের অনেক কথা বলে, ওর হেরে যাওয়ার কথা, মনের ব্যাথা, সব কিছু বলে আর সেটাই সে জীবনের সব থেকে বড় ভুল করে ফেলে একজনকে বিশ্বাস করে মনের কথা বলার। সুন্দরী অনুসূয়াকে ওর পাশে দেখে অনেকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় অভির দিকে। কলেজের প্রথম বছরের ডিসেম্বরে অভি অনুসূয়াকে প্রোপোস করে, কিন্তু অনুসূয়া ওকে প্রত্যাখান করে দেয়, কারন বলে যে ও হেরে যাওয়া মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় না, ও ভীতু তাই আই.এস.এম পেয়েও ছেড়ে দিয়েছে। আরোও জানায় যে ওর কথাবার্তা বাঙালীর মতন নয় তাই ওদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের বেশি কিছু হতে পারে না। ভেঙে পড়ে অভি, আবার একা এই চেনা মুখের ভিড়ে, নিজেকে আর খুঁজতে চেষ্টা করে না। পেছনের বেঞ্চে বসে থাকতো অভি আর ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে তাকিয়ে থাকতো অনুসূয়ার দিকে।

অরুন্ধুতি আর পুবালি খুব অধ্যয়নশীল আর বুদ্ধিমতী, তাদের অনেক বন্ধু বান্ধবী ছিল। আর অরুন্ধুতি যেহেতু খুব হাসিখুশি মেয়ে তাই ওর চারপাশে অনেক লোকেরা জড় হয়ে থাকতো। অনুসূয়া অভির কথা ক্লাসে বলে বেড়ায়, অভিকে সবার সামনে নিচে নামিয়ে দেয়। অভিমন্যু খুব অসহায় বোধ করে, পাশে কোন বন্ধু না থাকার জন্য। অভি অনুসূয়াকে বোঝাতে চেষ্টা করে যে ওর জন্ম কোলকাতায় কিন্তু পড়াশুনার জন্য বাইরে থাকতে থাকতে ওর কথাবার্তার সুর বদলে গেছে। অনুসূয়া মানলো না আর, বললো যে হেরে যাওয়া মানুষের সাথে ও কোনরকমের সম্পর্ক রাখতে চায় না। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেয় অভি। কিছুদিন পরে ওই অনুসূয়া ওর ক্লাসের এক বন্ধু সুকোমলের সাথে ঘুরে বেড়ায়, হতে পারে অভিকে ঈর্ষার বাণে জর্জরিত করার জন্য। অভি প্রথম প্রথম ঈর্ষান্বিত হয়, কিন্তু পরে মনকে প্রবোধ দেয় যে অনুসূয়ার মতন সুবিধাবাদী মেয়ে ওর জন্য নয়। ধিরে ধিরে স্বাভাবিক হয়ে যায় সবকিছু কিন্তু অনুসূয়ার সাথে ওর সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয় না।
 
Chapter 2: দেবীকথা-অরুন্ধুতি। (#2)

কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ, সেপ্টেম্বরের একদিন। লাঞ্চের সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে, ক্লাসে অরুন্ধুতি আর পুবালি বসে আছে। অভি ওদের অনেক পেছনে বসে একটা বাংলা উপন্যাস পড়ছে। হটাত করে সবাই চুপ, একটা কান্নার মতন গোঙানি আওয়াজ গেল অভির কানে। অভি বই থেকে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে যে অরুন্ধুতি পুবালির পিঠে হাত বোলাচ্ছে আর পুবালি মাথা নিচু করে কাঁদছে। পুবালির নাক থেকে অসম্ভব রকমের রক্ত বের হচ্ছে। পুবালি যন্ত্রনায় কঁকিয়ে উঠছে, বারে বারে আসে পাশের ছেলেরা শুধু দেখা ছাড়া আর নির্দেশ দেওয়া ছাড়া কিছু করছে না। সত্যি বাঙালীর রক্ত, মাথা গরম হয়ে গেল অভির। অভি দৌড়ে যায় অরুন্ধুতির কাছে, গিয়ে জিজ্ঞেস করে যে পুবালির কি হয়েছে। অরুন্ধুতি ওর দিকে চোখে জল নিয়ে তাকায়। পুবালির মাথা উঁচু করে ধরে অভি, গায়ের জামা খুলে চেপে ধরে পুবালির নাক। বাকিদের চিৎকার করে একটা এ্যাম্বুলেন্স ডাকতে বলে। পুবালিকে পাঁজাকোলা করে হাতের মধ্যে তুলে নেয় অভি, জামা আর গেঞ্জি রক্তে ভেসে যাচ্ছে। পুবালি ওর কোলে অজ্ঞান হয়ে যায়। অরুন্ধুতির চোখে জল, পুবালির মাথাটা কোনরকমে ধরে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এম্বুলেন্স এসে পৌঁছয়, অভি ওদেরকে নিয়ে এম্বুলেন্সে উঠে হস্পিটাল নিয়ে যায়। সবার মুখে এক কথা যে কি হয়েছে পুবালির, ওদের দিকে তাকিয়ে অভি বলে যে পুবালির বাড়িতে খবর দিতে।

হস্পিটালে গিয়ে জানা যায় যে পুবালির নাকের আর কপালের মাঝে একটা ছোট্ট টিউমার আছে আর সেটা ফেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে পুবালিকে অপারেশান থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। অরুন্ধুতি আর অভি উৎকণ্ঠায় অপারেশান থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। অরুন্ধুতি সমানে কাঁদতে থাকে, অভির কাছে ওকে সান্তনা দেবার মতন কোন ভাষা থাকে না। মনে মনে অভি কলেজের বন্ধুদের মুন্ডপাত করে যাচ্ছিল, কেউ একবারের জন্য এগিয়ে এসে পুবালিকে হস্পিটাল নিয়ে যাবার কথা ভাবেনি, তাঁর চেয়ে কিনা জ্ঞান দিতে ব্যাস্ত ছিল সবাই। অরুন্ধুতিকে একটা চেয়ারে বসিয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অভি, ওর হাত দুটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে সান্তনা দেবার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণের মধ্যে ওদের কলেজের বন্ধুরা হস্পিটাল পৌঁছে যায়, সাথে সাথে পুবালির বাবা মাও হস্পিটাল পৌঁছে যায়। কলেজের সবাই ওদেরকে জিজ্ঞেস করে যে পুবালির কি হয়েছিল, অরুন্ধুতি সবার দিকে একটু রেগে তাকিয়ে থাকে তারপরে কাকু কাকিমাকে সব কথা বলে। অভি খালি গেঞ্জি পরে বসে, গেঞ্জির বেশির ভাগ রক্তে ভিজে গেছে। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে অভির, ছেলেরা ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করে যে পুবালির কি হয়েছে। অভি উত্তরে জানায় সব ঘটনা।

অপারেশান থিয়েটারের সামনে সবাই দাঁড়িয়ে, কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার এসে জানায় যে, পুবালি বর্তমানে বিপদমুক্ত, কিছু দেরি হলে হয়তো টিউমারের রক্ত ওর মাথার ভেতরে চলে যেতো আর মাথার শিরা উপশিরাগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দিতো। পুবালির বাবা মা আর অরুন্ধুতির বাবা মা অভির দিকে কৃতজ্ঞ ভরা চোখে তাকায়। অরুন্ধুতি দৌড়ে এসে অভিকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সেই কান্না বেদনার কান্না ছিল না, সেই কান্না কৃতজ্ঞতার কান্না ছিল, যেহেতু অভি ওর প্রানের বোন পুবালিকে আবার ওর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে তাই। অভির মনে হলো বিগত চোদ্দ বছরে কেউ ওকে ভালবাসায় বা কৃতজ্ঞতায় ওই রকম ভাবে জড়িয়ে ধরেনি। সারা জীবন ধরে বাবা মার কাছে ধিক্কার শুনে গেছে যে ও জীবনে কিছু করতে পারলো না। অভির চোখে জল এসে যায়। অরুন্ধুতির বাবা ওকে বাড়িতে আসতে বলে কিন্তু অভি ওদের জানায় যে অন্য কোনদিন ওদের বাড়িতে আসবে সেদিন আর যায় না। খুব ক্লান্ত লাগছিল অভির। অরুন্ধুতির বাবা ওকে একটা টিশার্ট কিনে দেয়, কেননা তখন পর্যন্ত অভির গায়ে রক্ত মাখা গেঞ্জি ছিল।

হস্পিটাল থেকে অভি মাথা উঁচু করে বেরিয়ে এলো, মনে হলো যেন জীবনে খুব বড় কাজ করেছে, ও আর সেই ভীতু হেরে যাওয়া অভি নয়। সেই প্রথম বার অভির মনে হলো যে ওর চারপাশের পৃথিবীটা কত অন্ধকারময় আর কত সুবিধাবাদী মানুষে ভরা। বাকি কলেজের বন্ধুরাও ওর পেছন পেছন হস্পিটাল থেকে বেরিয়ে আসে। অভিকে ডাকে কফি হাউসে যাবার জন্য। অভি ওদের মানা করে দেয়। অভি হটাত করে দেখে যে অনুসূয়া ওর দিকে দৌড়ে আসছে আর হাতের ইশারায় ওকে দাঁড়াতে বলছে। অভি ওর দিকে তাকায় মাথা নাড়িয়ে ওকে ক্ষমা করে দেবার ইশারা করে, সামনে যে বাস আসে তাতে অভি উঠে পড়ে। একসময়ে অভির চোখে যে হেরে যাওয়ার চাহনি ছিল সেটা ও অনুসূয়ার চোখে দেখতে পায়। ভগবানকে মাথা তুলে ধন্যবাদ জানায় অভি, তিনি যা করেন সবার ভালোর জন্য করেন।

তারপরে বেশ কিছুদিন অরুন্ধুতি আর পুবালি কলেজে আসেনা, অভিরও আর ওদের বাড়ি যাওয়া হয় না কেননা ও চেনেনা ওদের বাড়ি বা ওর কাছে অরুন্ধুতির ফোন নাম্বারও নেই যে ফোন করে পুবালির খবর জেনে নেবে। এমন একদিনে, অভি চুপ করে ক্লাসে বসে। অরুন্ধুতি ক্লাসে ঢোকে, সবার চোখ অরুন্ধুতির দিকে চলে যায়, সবার মুখে এক প্রশ্ন পুবালি কেমন আছে। অরুন্ধুতি বিরক্তি ভরা চোখে সবার দিকে তাকায়, যেন বলতে চায় যে তোদের জানা কোন অধিকার নেই।

অভির দিকে হেঁটে এসে কাঁধ নাড়িয়ে বলে, “এই বিহারী, আমার সাথে চল।”

অভি ওকে জিজ্ঞেস করে, “কোথায়।”

অরুন্ধুতিঃ “বাবা তোকে বাড়িতে ডেকেছে।” এই বলে ওর জামা ধরে টানতে টানতে ক্লাস থেকে বের করে নিয়ে আসে।

অরুন্ধুতির বাড়ি যাবার পথে অভি পুবালির কথা জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে পুবালি এখন ভালো আছে আর গতকাল বিকেলেই হস্পিটাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে এসেছে। তাই ও অভিকে বাড়ি নিয়ে যেতে কলেজে এসেছে। অভি ওকে জিজ্ঞেস করে যে ও ওকে ফোন কেন করেনি।

অরুন্ধুতি জবাবে বলে, “আমার কাছে তো তোর ফোন নাম্বার নেই।”

অভিঃ “তুই কোনদিন চাসনি।”

অরুন্ধুতিঃ “জীবনের এই প্রথম আমি সব থেকে বড় ভুল করেছি।”

অভিঃ “কি ভুল?”

অরুন্ধুতিঃ “মানুষ চিনতে ভুল করেছি, বন্ধু চিনতে ভুল করেছি।”

অভিঃ “ধুর বোকা, সবাই কিছু না কিছু ভুল করে ফেলে, ছাড় ওসব কথা।”

অরুন্ধুতি কিছু পরে ওকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে তোর বাবার নাম কি অর্জুন তালুকদার?”

অভি চমকে যায়, “হ্যাঁ কিন্তু তুই কি করে জানলি?”

অরুন্ধুতিঃ “আমি এইটুকু জানতাম যে কাকু এয়ারপোর্ট অথরিটিতে চাকরি করেন আর আমার বাবাও করেন। আমার বাবা যখন তোর নামধাম আমাকে জিজ্ঞেস করলো তখন আমি বললাম যে আমি তো কাকুর নাম জানিনা। বাবা আমকে তোর কাছে কাকুর নাম জিজ্ঞেস করতে বলেছে।”

অভি, “হুম... আচ্ছা তোর বাবা মানে ব্যানার্জি কাকু। ও,কে এবারে বুঝেছি।”

দিন যায় ওদের বন্ধুতক প্রগাঢ় হয়ে ওঠে। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কলেজ স্ট্রিটে ঘোরা, গ্লোবে সিনেমা দেখা, এস্প্লানেড বা পার্ক স্ট্রিটে কোন রেস্টুরেন্টে খাওয়া বা নন্দনে আড্ডা মারা। পুবালি খুব শান্ত প্রকৃতির মেয়ে তাই বেশির ভাগ দিন ওরা দু’জনে ঘুরে বেড়াতো এদিক সেদিক। কোলকাতায় অভি নতুন, অরুন্ধুতি ওর গাইডের কাজ করতো যেন। কলেজের বাকিরা ওদের এই বন্ধুত্বটাকে অন্য চোখে দেখে, সবার মুখে এক কথা, অরুন্ধুতি অভির প্রেমে পড়েছে আর সেই কথা ওদের কানে আসে, ওরা দু’জনে খুব উপভোগ করে বাকিদের সংশয়। কেউ ভাবতে পারে না যে একটা ছেলের আর একটা মেয়ের মধ্যে প্রেম প্রিতির থেকেও ভালবাসা এক অন্য ধরনের হতে পারে, বন্ধুত্বের ভালবাসা থাকতে পারে।

অভির বাবা যেহেতু অরুন্ধুতির বাবার অফিস কলিগ তাই ওদের বাড়িতে অভির যেতে কোন বাধা থাকেনা। অভির বাবা মা আর অরুন্ধুতির বাবা মায়ের মধ্যেও সেই একই ধারনা জাগে যে অভি অরুন্ধুতিকে ভালবাসে আর ওর মায়ের কোন বাধা থাকে না অরুন্ধুতিকে বউমা করে ঘরে আনতে। অভি আর অরুন্ধুতি দু’জনে ওদের চারদিকের ভুল ধারনাটাকে খুব উপভোগ করে আর হাসে।

পুবালি আর অরুন্ধুতি সবসময়ে অভিকে অনুসূয়ার কাছ থেকে আগলে রাখতো, কিছুতেই অনুসূয়াকে অভির কাছে আসতে দিতো না। একদিন ওরা তিনজনে মিলে পার্ক স্ত্রিটের ফ্লুরিসে বসে খাচ্ছিল তখন পুবালি অরুন্ধুতিকে বলে, “জানিস, কাল অনুসূয়া তোর কথা আর অভিমন্যুর মাঝের সম্পর্কের কথা জিজ্ঞেস করছিল।” ওরা দু’জনে হেসে উঠে জিজ্ঞেস করে যে পুবালি কি উত্তর দিয়েছে।

পুবালিঃ “আমি বলেছি যে তোরা খুব ভাল বন্ধু ব্যাস আর কিছু না।”

অরুন্ধুতি পুবালিকে আলতো করে চাঁটি মেরে বলে, “বোকা মেয়ে ওকে বলবি তো যে আমরা প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি। ধুত বোকা, এখন আবার অনুসূয়া ওর পেছন পেছন আসতে চাইবে।” অরুন্ধুতি অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “মাগিটার পেছনে আর গেছিস তো আমি তোর ঠ্যাং ভেঙে দেব।”
হেসে ওঠে অভি, মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে ন্যাড়া বেলতলায় একবার যায়।

ঠিক দুর্গাপুজার আগে, অরুনা আর অভি আউট্ট্রাম ঘাটের, স্কুপে বসে গল্প করতে থাকে। দুজনে আইস ক্রিম খেতে খেতে সামনের কাঁচের জানালা দিয়ে পড়ন্ত সূর্যের আলোয় আলোকিত লাল নদীর জল দেখতে দেখতে হারিয়ে যায়। অভি একমনে অরুনার দিকে তাকিয়ে থাকে, সেই প্রথম বার অভির মনে হয় যে অরুনা ওর কত কাছের মানুষ। অরুনার চোখ দুটি খুশিতে চকচক করছে যেন। খুব বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে অভি অরুনার কাঁধে হাত রাখে।

অরুনা অভির হাতের স্পর্শে আইসক্রিম খাওয়া থামিয়ে অভির মুখের দিকে তাকায়, চোখের চাহনি দেখে অভির মনের ভাব বুঝতে পারে অরুনা, কিন্তু তাও জিজ্ঞেস করে, “কিরে আমার দিকে ওই রকম ভাবে দেখছিস কেন রে?”

হাত সরিয়ে নেয় অভি, হেসে ফেলে, “কিছু না এমনি।”

গভীর ভাবে অভির দুচোখের দিকে তাকায় অরুনা, “আমার কাছে থেকে কিছু লুকাতে পারবি না রে। তুই চুপ থাকলে কি হবে তোর চোখ দুটো যে অনেক কথা বলে।”

অভি ওকে হেসে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা তাহলে তুই বল আমার চোখ কি বলছে?”

অরুনা ওর গাল টিপে বলে, “তুই যা ভাবছিস আমিও সেটাই ভাবছি।” অভি ওর দু’হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়। অরুনা বলতে থাকে, “আমি চাই না আমাদের সম্পর্ক একটা বাঁধনের জোরে নষ্ট হোক। বহু দিন পরে আমাদের মনে হবে যে আমাদের কোন বন্ধু হতো যাকে আমরা আমাদের মনের কথা বলতে পারি, যেগুলো হয়তো আমরা আমাদের সাথিকে বলতে পারব না সেগুলো আমরা একে অপরকে বলবো। আমি আমার সব থেকে ভাল বন্ধুকে হারাতে চাই না অভিমন্যু।”

এইসব ভাবতে ভাবতে ওরা কফি হাউসে পৌঁছে যায়। অরুনা ওর বাজুতে চাঁটি মেরে বলে, “কিরে সারা রাস্তা এত চুপ মেরে গেলি কেন? তুই কি পরীর খেয়ালে আবার হারিয়ে গেলি নাকি?”

অভি মাথা চুলকে বলে, “নারে, আমি তো তোর কথা আর আমাদের বন্ধুত্বের কথা ভাবছিলাম।”

অরুনা ওকে আলতো করে থাপ্পড় মেরে বলে, “আহা, ছেলের ভাব দেখ, ভেতরে যেন টালা ট্যাঙ্ক ভরে উঠেছে। হ্যাঁ রে তোর পরীর কথা আমাকে বলতে হবে সেটা মনে থাকে যেন নাহলে কিন্তু আমি তোকে ছিঁড়ে খাবো। যাই হোক পরীর ভাল নাম কি?”

অভিঃ “শুচিস্মিতা মন্ডল।”

অরুনা, “শুচিস্মিতা, মানে যার হাসি শুদ্ধ, বাহ রে নিশ্চয় পরীর হাসি খুব সুন্দর হবে।”

লাজুক হেসে অভি উত্তর দেয়, “হ্যাঁ রে পরীর হাসি খুব মিষ্টি। ও যখন হাসে তখন দু’গালে টোল পড়ে আর হাসিটা যেন আরও বেশি মিষ্টি হয়ে যায়।” অভি যেন ওর চোখের সামনে পরীর হাসি মাখা মুখ দেখতে পায়।

কফিহাউসে বসে অভি পরীর গল্প শুরু করে, কি করে অভি ওকে নিয়ে হিমাচলে ঘুরে এসেছে। সব শুনে অরুনা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির দিকে, বাবা ছেলের কি সাহস।

অরুনা কফির কাপে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তো অসুবিধেটা কোথায়?”

অভি মাথা নাড়ে, “আমাদের মধ্যে তো কোন অসুবিধে নেই।”

অরুনা, “ধুর বোকা ছেলে, আমি জানি যে তোদের মধ্যে কোন অসুবিধে নেই, কিন্তু তোর মনের ভেতরে একটা গভীর সংশয় বা ভয় দানা বাঁধছে তাই না।”

অভি অবাক হয়ে অরুনার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুই জানলি কি করে।”

অরুনা ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “আমি তোকে তোর চেয়ে বেশি জানি বুঝলি রে। তুই ভাবছিস যে কাকু কাকিমা তোদের সম্পর্ক মেনে নেবে না, কেননা পরী তোর চেয়ে দু’বছরের বড় আর কাকিমার সাথে পরীর সম্পর্ক। কাকিমাকে বুঝাতে অনেক কষ্ট হবে কেননা কাকিমা খুব কড়া প্রকৃতির মহিলা।”

অসহায় ভাবে অভি ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, “আমি জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি। এই নিষ্ঠুর পৃথিবী আমাকে অনেক কঠিন করে দিয়েছে। পরীকে পাওয়ার জন্য আমি আকাশ পাতাল এক করে দেব।”

অরুনা, “অত শত ভাবিস না। আমি কাকু কাকিমাকে বুঝাতে আপ্রান চেষ্টা করবো। তুই শুধু বসে কফি খা কুত্তা।”

অভি অরুনার হাসি মুখ দেখতে থাকে, অরুন্ধুতি ওর কাছে যেন দেবী প্রতিমা, ওর সব থেকে ভাল বন্ধু। জীবনের কিছুর বিনিময়ে ও অরুনার হসি মুখ হারাতে চায় না।
 
Chapter 3: মাতৃময়ী মূর্তি। (#1)

কফি হাউস থেকে বাড়ি ফিরতে অভির দেরি হয়ে যায়। বাড়ি ফিরে দেখে যে সবাই বসার ঘরে বসে চা খাচ্ছে। বাবা নিজের ঘরে বসে অফিসের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত। মা পরীর মাথা কোলে করে নিয়ে ডিভানের ওপরে বসে আছে আর পরীর চুল আঁচড়ে দিচ্ছে। পরী ছোট্ট বিড়ালের মতন মায়ের আদর খাচ্ছে। লম্বা সোফায় মৈথিলী আর সুব্রত বসে। অভি ঘরে ঢুকে ছোটো সোফার ওপরে গিয়ে বসে পড়ে। মা ওকে জিগ্যেস করলেন যে দেরি কেন। উত্তর অভি জানালো যে প্রাক্টিকাল ক্লাসের জন্য দেরি হয়ে গেছে। মা ওকে বললেন যে আগামি কাল সুব্রত আর মৈথিলী ঢাকুরিয়া যাবে মৈথিলীর কাকার বাড়িতে, অভিকেও সঙ্গে নিয়ে যেতে চায়। মায়ের কথা শুনে অভি পরীর দিকে তাকায়, পরীর চোখ ইশারায় বলে ওঠে “প্লিস যেও না।” অভি মাকে জিজ্ঞেস করে যে কালকে মা আর পরী কোথায় যাবে। মা জানালেন যে পরীকে নিয়ে মা একটু কেনাকাটা করতে শ্যামবাজার হাতিবাগান যাবে তারপরে পরীর জন্য গয়না কিনতে বউবাজারে যাবে।

মৈথিলী অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি আজকে আমাদের সাথে সিনেমা দেখতে গেলে না, কাল কিন্তু না করতে পারবে না।”

অভি দেখলো মাও চাইছে অভি ওদের সাথে ঢাকুরিয়া যাক, কিন্তু বাধ সাধছে প্রেয়সী পরীর চোখ।

সুব্রত ওকে বললো, “মামা আমি কোন কথা শুনব না, কাল তোমাকে আমাদের সাথে যেতেই হবে।”

অভি দেখলো যে বড় ফাঁফরে পড়ে গেছে, কিছু একটা বলে ওদেরকে ক্ষান্ত না করলে অভির যে স্বস্তি নেই।

অভি পরীর দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে একটু কথা বলে বাকিদের জানালো, “ঠিক আছে, শনিবার আসুক আমি জানাব আমি কি করবো।” পরী ওর কথা শুনে মৃদু হেসে জানিয়ে দিল যে ও খুব খুশি।

মা পরী আর মৈথিলীকে নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে যায়। অভি নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। সুব্রত জিজ্ঞেস করে যে ও সাথে যেতে পারে কিনা। মাথা নাড়ায় অভি, জানিয়ে দেয় যে সুব্রতর জন্য ওর দরজা সবসময়ে খোলা।

সুব্রত ওর ঘরে ঢুকেই জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার বলতো মামা, তুমি কি অরুনিমার প্রতি ইন্টারেস্টেড নও?”

মাথা চুলকালো অভি, কিছু একটা উত্তর দিতে হবে যাতে সাপ মরে কিন্তু লাঠি ভাঙবে না। অভি বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে উত্তর দেয়, “মামা আসল কথা হচ্ছে যে আমি একজনার প্রতি একটু ঝুঁকে আছি।”

সুব্রত চমকে গিয়ে বলে, “কি বলছো মামা, এ কথা তো আমাকে জানাও নি। কে সে? তুমি নাকি অরুনিমাকেও বলেছিলে যে তোমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই তাহলে?”

অভি, “মামা প্রেম কি আর বলে কয়ে আসে, এত হয়ে যায় হটাত করে। কার সাথে কি ভাবে হবে কেউ জানেনা। মামা প্রেম তো আর অঙ্ক নয় যে দুয়ে দুয়ে চার হবে। তুমিও তো প্রেম করে বিয়ে করেছো, তুমি তো বুঝবে মনের কথা।”

সুব্রত, “কিন্তু মামা, একতরফা প্রেম হলে যে মুশকিল। তা তুমি কি প্রোপোস করেছো?”

অভি দেখলো সত্যি কথা বলা বিপদ, অগত্যা অভিকে অরুন্ধুতিকে টেনে নিয়ে আসতে হলো। অভি বললো, “না মামা আমি এখনো প্রোপোস করিনি তবে আমি জানি যে মেয়েটা আমাকে ভালবাসে।”

সুব্রত, “কে সে?”

অভি, “আমার কলেজের এক বান্ধবী।”

সুব্রত, “কবে প্রোপোস করবে?”

অভি, “দেখি, ওর জন্মদিনে ভাবছি প্রোপোস করবো।”

সুব্রত মনে হলো যেন একটু মনক্ষুণ্ণ হয়ে গেল অভির কথা শুনে, “অরুনিমা একটু আঘাত পাবে এই কথা শুনে। বিগত দু’মাস ধরে ও তোমার ফোনের আশায় বসে আছে। যাই হোক একবার ফোন করে দেখ, তুমি তো তোমার বান্ধবিকে এখন মনের কথা বলোনি তাই তো। হয়তো অরুনিমার সাথে দেখা করলে তোমার মনের ভাব বদলে যেতেও পারে।”

অভি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলো, “ঠিক আছে আমি কথা দিচ্ছি যে আমি অরুনিমার সাথে দেখা করবো, কিন্তু কাল হবে না। একটা কথা বলো মামা, তুমি আর চুর্ণি কেন আমার পেছনে অরুনিমার জন্য পড়ে আছো?”

সুব্রত ওর দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি হেসে বললো, “ধিরে ধিরে সব জানতে পারবে মামা।”

অভি ঠিক বুঝতে পারলো না যে সুব্রত হটাত করে এই রকম কথা কেন বললো, কি জানতে পারবে অভি, কি মতলব চলছে সুব্রতর মাথার মধ্যে? সুব্রতর হাসির মধ্যে যেন একটু শয়তানি বদ মতলবের ছোঁয়া রয়েছে।

ঠিক সেই সময়ে মৈথিলী দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে জানালো যে খাবার তৈরি আর মা ওদেরকে খেতে ডাকছে। সুব্রত মৈথিলীকে দেখে বললো যে ও অভিকে অরুনিমার সাথে দেখা করার কথা বলেছে আর অভি রাজি হয়েছে যে অরুনিমার সাথে দেখা করবে, কিন্তু কাল দেখা করতে পারবে না, পরে দেখা করবে। সুব্রত আরো জানালো যে অভির কলেজে একটি বান্ধবী আছে যাকে অভি ভালবাসে আর ভবিষ্যতে প্রেম নিবেদন করতে চায়। মৈথিলী লাজুক নয়নে অভির দিকে তাকিয়ে খুব মিষ্টি করে একটা হাসি দিল, বাঁ হাতের কড়ে আঙুল দিয়ে দাঁতের মাঝে চেপে ধরলো। অভি ওর মন মাতানো হসি দেখে চঞ্চল হয়ে উঠল, বুকের মধ্যে যেন ওই মত্ত হাসিটা একটা গভীর রেখাপাত করে গেল।

অভি মৈথিলীকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি আমার দিকে ওই ভাবে তাকিয়ে হাসছো কেন?”

“কিছু না, এমনি হাসছি।” অভিকে আপাদ মস্তক চোখ বুলিয়ে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি বলেছো ওকে?”

সুব্রত ওর দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি হেসে বললো, “আরে না না ডার্লিং, চিন্তা কোরো না। ও বলেছে তো যে অরুনিমার সাথে দেখা করবে, ব্যাস তারপর যা হবার সেটা সময়ের ওপরে ছেড়ে দাও।”

“খাবার তৈরি, নিচে এসো” এই বলে মৈথিলী ওর সুডৌল নিতম্ব মাছের মতন দুলিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। অভির চোখ মৈথিলীর মত্ত চলনের ওপরে নিবদ্ধ হয়ে থাকলো, চোখের সামনে মৈথিলীর সুডৌল নিতম্বের লয় যেন বুকের ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে চলে গেল। ইচ্ছাকৃত ভাবে কি মৈথিলী ওই রকম ভাবে কোমর দুলিয়েছে? কি জানি। দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবার ঠিক আগে, মৈথিলী ওদের দিকে ঘুরে তাকালো, চোখে যেন কামনার আগুন জ্বলছে, কিছু একটা বলতে চাইছে দু’চোখ ঠিক বুঝতে পারছে না অভি। অভির চোখ ওর মত্ত ছন্দময় নিতম্বের ওপরে, একটু যেন কেঁপে উঠল মৈথিলী, অভির চোখ যেন ওর পিঠ কোমর আর নিতম্ব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিচ্ছে। সুব্রতর দিকে চোখ টিপলোও মৈথিলী। অভি একি করছে, বরের সামনে তার নতুন বিয়ে করা বউয়ের মত্ত চলন লম্পটের মতন দেখছে।

অভি যেন ধরা পড়ে গেল সুব্রতর কাছে, ওর কান গরম হয়ে ওঠে, কি করছে ও? মৈথিলী কেন ওই রকম ভাবে কোমর দুলিয়ে গেল? সুব্রতর কি মতলব? কি জানে কি আছে ভবিষ্যতে।

খাবার সময়ে পরীর সাথে বিশেষ কথাবার্তা হলো না, সবার সামনে একটু দুরত্ব রেখে কথা বলতে হয়েছে দুজনকে। পরীর মন খুব আনচান করতে থাকে, সামনে অভি বসে কিন্তু কিছুতেই ছুঁতে পারছে না, একি বিড়ম্বনা বিধাতার। সামনে সুধার ভাণ্ডার তাও ভালবাসার পাত্র খালি, বারে বারে আড় চোখে পরীর দিকে তাকায় অভি। মা জানালেন যে ওরা কাল দুপুরে শপিং করতে বের হবে। অভি ওদেরকে বললো যে ও ঢাকুরিয়া যাবে না। অভির কথা শুনে পরীর মনে যেন খুশি আর ধরে না, চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে পরীর, বুকের মধ্যে খুশির জোয়ার আসে।

পরী শয়তানি করে মাকে বলে, “আচ্ছা ছোটো মা, আমাদের তো একটা গাধা লাগবে ব্যাগ ধরার জন্য, তাই না।”

অভি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো, “দেখ তোমার পরী আমাকে কি সব বলছে।”

পরী, “দেখ দেখ একটা গাধা কিনা মাংস খাচ্ছে।”

অভির খুব ইচ্ছে করছিল ওই গোলাপি গালে চিমটি কাটার জন্য। নিজেকে কোন মতে সামলে নিয়ে, “কুকুর, ভেড়া, ঢেঁড়স, কাক, হাড়গিলে...”

ওদের ঝগড়া দেখে সবাই হেসে ফেললো, মা ওদের দু’জনকে মৃদু বকুনি দিল, “তুই খেয়ে শুতে যা”, পরীর দিকে তাকিয়ে বললো “আর তুই তাড়াতাড়ি কর, কাল সকাল সকাল উঠতে হবে।”

অভি খাওয়া শেষ করে মাকে বললো, “আমার শুতে দেরি হবে প্রাক্টিকালের কিছু কাজ বাকি আছে আমার।” পরীর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে ইশারায় বলে, “আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো কিন্তু।”

প্রাক্টিকাল খাতা লিখতে লিখেত অনেক রাত হয়ে গেল, ঘড়ি দেখলো অভি, রাত একটা বাজে। চোখ দুটো জ্বালা জ্বালা করছে, মাথাও একটু ব্যাথা ব্যাথা করছে। আঙুল দিয়ে মাথায় আঁচড় কাটে অভি, মনে পরে কতকাল পরীর ছোঁয়া পায়নি মাথার ওপরে, কি সুন্দর চুলে বিলি কাটে পরী আর অভি ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়তো। পরী আর এলোনা তাহলে, এই ভেবে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে থাকলো। কিছুতেই প্রেয়সিকে কাছে পাওয়া যাচ্ছে না, তবে এটা ভেবে মন খুশিতে ভরে গেল যে কাল মা আর পরীর সাথে কেনাকাটা করতে বের হবে। হ্যাঁ, পাশে হয়তো হাঁটতে পারবে না বা জড়িয়ে ধরতে পারবে না, কিন্তু চোখের সামনে তো থাকবে পরী। পরীর গায়ের ঘ্রান কতদিন বুকের মধ্যে নিতে পারেনি, টেবলের ড্রয়ার থেকে রুমাল বের করে মুখের ওপরে মেলে ধরে অভি, গায়ের গন্ধ কিছু যেন এখন লেগে আছে রুমালে। এত কাছে পরী তবুও এত দুরে পরী, হাতের নাগালের বাইরে।

এমন সময়ে অভির অরুন্ধুতির কথা মনে পড়ে যায়, পরীকে জানানো হয়নি অরুন্ধুতির ব্যাপারে। মনে ভেতরে একটা সংশয় জেগে ওঠে, অরুনার কথা শুনলে পরী কি ভাবে গ্রহন করবে অরুনাকে। অরুনা এই পৃথিবীতে ওর একমাত্র বন্ধু। পরীর কাছে থেকে অরুনাকে লুকিয়ে রাখা মস্ত বড় ভুল হবে, পরীকে জানাতে হবে অরুনার কথা কিন্তু সাবধানে।

দরজায় খুব মৃদু আওয়াজ হয়, হাওয়ায় মনে হয়, বাইরে বেশ মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। ঠিক তারপরে কপালে ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকালো অভি। ওর চোখের সামনে পরীর হাসি মুখ, কখন যে চেয়ারের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে টের পায়নি। দু’ কাঁধের ওপর দিয়ে হাত গলিয়ে বুকের ওপরে হাত রাখল পরী। মাথা পেছনে হেলিয়ে দিল অভি, পরী ওর কপালে চিবুক রেখে আবার একটা ছোট্ট চুমু খেলো কপালে। পেছনে হাত বাড়িয়ে পরীর কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নেয়, ঘাড়ের ওপরে পরীর বুকের উষ্ণতা অনুভব করে।

পরী মৃদুকন্ঠে বলে, “আমার ছোট্ট রাজকুমার কি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে?”

অভিঃ “হ্যাঁ সোনা, তা তোমার এত দেরি কেন হলো?”

পরীঃ “তুমি তো বললে...”

অভিঃ “তোমার ছোটো মা কি ঘুমিয়ে পড়েছে?”

পরীঃ “হ্যাঁ বাবা অনেক আগে ঘুমিয়ে পড়েছে।”

অভিঃ “তাহলে এত দেরি কেন?”

পরীঃ “সুব্রত আর মৈথিলী জেগে ছিল তাই।”

অভি, “ওরা দুজনে কেন জেগেছিল সেটা তো বেশ জানো আর তুমি কি করছিলে তাহলে?”

পরীর গাল লাল হয়ে ওঠে, “ধ্যাত বাবা, ওরা কেন জেগেছিল সেটা যেন তুমি জানো না।” পরী বুকের ওপরে আলতো করে চাঁটি মেরে বলে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top