What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (2 Viewers)

Chapter 7: তমসা উদ্ঘাটন। (#2)

অভির হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো, “কেন এসেছে তোমার মা?”

এই প্রশ্ন শুনে সবাই অভির দিকে তাকিয়ে। অভি কি উত্তর দেবে ভেবে পেলনা, চুপ করে থাকে।

সুব্রতঃ “আমাকে বলতে দে। আমি হলফ করে বলতে পারি যে আমাদের ফ্যামিলির মধ্যে যা কিছু ঘটেছে তার জন্য আমার দিদিরা; ইন্দ্রানিদি আর চন্দ্রানিদি দায়ী। বড় লোকের বাড়িতে বিয়ে হয়ে যাবার পরে দেমাকে ওদের পা আর মাটিতে পড়ে না। অতীতে যারা আমাদের সাহায্য করেছিল তাদের সবাইকে ওরা ভুলে গেছে। উলুপিদি যে কারনেই হোক আজ আমাদের বাড়িতে এসেছেন, আমি তার পাশে আছি।”

অগত্যা অভিকে শেষ পর্যন্ত মুখ খুলতে হলো, “মা পরীর জন্য এ বাড়িতে এসেছেন। পরী এম.এস.সি পড়তে চায় এবং মায়ের মতন টিচার হতে চায়। কিন্তু তোমার ফ্যামিলির দিক থেকে অনেক বাধা আছে বিশেষ করে তোমার দিদিদের কাছ থেকে।”

সুব্রত অভির পিঠ চাপড়ে উত্তর দেয়, “আরে কোন চিন্তা কোরোনা। পরী যা চায় তা করবে। আমি আজ পর্যন্ত চুপ করেছিলাম কিন্তু আজ আমি মুখ খুলব। আজ দিদিরা আমাকে থামিয়ে রাখতে পারবে না।”

ঠিক সেইসময়ে দুষ্টু দৌড়ে এসে জানায় যে সুব্রতর আর অভির বাড়িতে ডাক পড়েছে। বাড়িতে খাবার ঘরে কিছুর আলোচনা চলছে। ওর মুখে এই কথা শুনে সুব্রতর আর অভির নেশার ঘোর একদম কেটে গেল। দু’জনে একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে দৌড় লাগাল বাড়ির দিকে।

খাবার ঘরে ঢুকে দেখে বাড়ির সব বড়রা একত্রিত। বাবা, মা, তার পাশে দিদা, তার পাশে ইন্দ্রানি মাসি আর চন্দ্রানি মাসি। ওদের সাথে ওদের স্বামিরাও উপস্থিত। তার পরে শশাঙ্ক মামা আর মেঘনা বসে। সব শেষে বসে আছেন সুমন্ত মামা। পরী, মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।

ইন্দ্রানিঃ “দেখ উলুপিদি, আমাদের পরিবারের কেউই গ্রাজুইয়েশান করেনি তাও আমরা পরীকে পড়িয়েছি। পরীর বিয়ের বয়স হয়ে গেছে, এবারে ওর বিয়ে করা উচিত। আমরা ওর জন্যে ছেলে খুঁজছি। এতে ক্ষতি কি? দেখ আমাকে আর চন্দ্রানিকে, আমাদের বিয়ে ঠিকঠাক বাড়িতে হয়েছে।”

মাঃ “আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই যে, পরী যদি হাইয়ার পড়াশুনা করতে চায় তাতে ক্ষতি কি?”

চন্দ্রানি ঝাঁজিয়ে ওঠে, “না করবে না। ওর বয়সে আমার বিয়ে হয়ে বাচ্চা হয়ে গেছিল।”

সুব্রতল “উলুপিদি যা বলছেন ঠিক বলছেন। পরীকে হাইয়ার পড়াশুনা করতে দেওয়া উচিত।”

ওর কথা শুনে সবাই হতবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো। ইন্দ্রানি আর চন্দ্রানি হয়তো ভাবতে পারেনি যে সুব্রত এর মাঝে কথা বলতে পারে।

শশাঙ্কঃ “তুই চুপ কর সুব্রত। এই সব ব্যাপারে তুই কথা বলিস না।”

চন্দ্রানিঃ “তোর মতামত কি কেউ জানতে চেয়েছে? তুই চুপ করে থাক।”

সুব্রতঃ “কেন আমি চুপ করে থাকব কেন? আমি কি এই পরিবারে কেউ নই?”

ঘরের পরিবেশ বেশ গরম হয়ে উঠেছে। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে দেখলো, পরীর চোখে জল। দিদা এক বার পরীর দিকে তাকালো। পরী মাকে শক্ত করে ধরে আছে যেন কেউ ওর প্রানটাকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যেতে চাইছে।

দিদা সুমন্তকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোর কি মতামত?”

সুমন্ত উত্তর দিলেন, “আমার মনে হয় পরীকে পড়াশুনা করতে দেওয়া উচিত। এর মাঝে আমরা পরীর জন্য ছেলে খুঁজি, এমন ছেলে যে কিনা পরীকে বিয়ের পরেও পড়াশুনা করতে দেয় আর ও যেন ভবিষ্যতে চাকরি করতে পারে।”

পরী জোরে মাথা নাড়ায়, “না আমি বিয়ে করবো না। তোমরা সবাই চাও যে আমি এখান থেকে চলে যাই।” মা পরীকে শান্ত হতে বললেন।

ইন্দ্রানি মাকে জিজ্ঞেস করলেন, “এতদিন পরে আমাদের পারিবারিক ব্যাপারে নাক গলাতে কেন এসেছো?”

দিদা ইন্দ্রানিকে এক বকুনি দিয়ে বললেন, “তুই চুপ কর, আর কোনদিন এইরকম ভাবে উলুপির সাথে কথা বলবি না। আমি শশাঙ্ককে বলেছিলাম উলুপিকে নিমন্ত্রন করতে।”

ইন্দ্রানি থামতে নারাজ, “আমরা দুই বোন এই পরিবারের জন্য অনেক কিছু করেছি। উলুপিদি কি করেছে আমাদের জন্য যে আজ উলুপিদি সতের বছর পরে আমাদের পারিবারিক ব্যাপারে কথা বলতে এসেছে?”

ওর কথা শুনে মনে হলো যেন কেউ ঘরের মধ্যে একটা অ্যাটম বম্ব ফেলে দিয়েছে। সবাই চুপ। মায়ের দু’ চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরে পড়ছে।

গুরু গম্ভির স্বরে বলে উঠলেন মা, “আমি কি করেছি না করেছি সেটা জিজ্ঞেস করিস না। আমি এখানে শুধু মাত্র পরীর জন্য এসেছি আর আমি তোদেরকে আমার কথা মানিয়ে ছাড়বো। জানতে চাস আমি কি করেছি এই পরিবারের জন্য?”

দিদা কেঁদে উঠে মাকে থামতে বললেন, “উলুপি দোহাই আমার, তুই চুপ কর। আমি পরীকে পড়াশুনা করতে দেব, কিন্তু তুই চুপ কর।”

মা রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “তোরা কি জানিস? তোদের কি আর মনে আছে? মেসোমশাই মারা যাবার সময়ে পরী কোলের বাচ্চা আর অভি আমার পেটে। তোদের দেখার কেউ ছিলনা, তোরা সবাই ছোটো ছোটো। মাসিমা সবসময়ে কাঁদতো, কি হবে ওনার পরিবারের। সুমন্ত স্কুল ছেড়ে দেয়, ধান কলে কাজ নেয় যাতে তোদের মুখে দু' গ্রাস ভাত জোটে। আমার জীবনের সেই পাঁচ বছর আমি এই পরিবারকে দিয়েছি। আমার আয় আমার ভালবাসা সব কিছু। তোদের খাওয়া পরা তোদের জামা কাপড়। আজ তোরা একসাথে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস সেটা আমার ওই পাঁচ বছরের জন্য।”

দিদা মায়ের হাত ধরে কাতর মিনতি করেন, “দয়া করে চুপ কর, উলুপি।” পরী নিস্পলক চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে। সমানে গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে চলেছে। অভি আর সুব্রত একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। মায়ের কথা শুনে কারুর মুখে কোন কথা নেই।

মাঃ “ওই অভির সাথে, বুকের রক্ত আর দুধ দিয়ে আমি পরীকে বড় করেছি। তোরা সবাই বলতিস যে পরী অভিশপ্ত বলে দূর দূর করতিস, কেননা ওর জন্মাবার পরেই মেসোমশাই দেহ রাখেন। আমি বুক কেটে দু' টুকরো করে দিয়েছিলাম যাতে পরী বাঁচে।”

সুব্রত চুপ করে মায়ের পায়ের কাছে গিয়ে বসে পড়ে। ঘরের মধ্যে সবার চোখে জল। ইন্দ্রানি, চন্দ্রানি আর তাদের স্বামীরাও হতবাক। বাবা এর মাঝে চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে গেলেন নিজের মনের অভিব্যাক্তি লুকানোর জন্য।

মাঃ “যদি আমি বুক কেটে দেখাতে পারতাম তাহলে আজ সেটাও তোদের দেখিয়ে দিতাম আমি। পরী আমার মেয়ে নয় কিন্তু আমার মেয়ের চেয়ে অনেক বেশি। আমি এখানে তোদের জন্য আসিনি। আমি জানি তোরা সবাই এখন বড়লোক হয়ে গেছিস, পয়সার দেমাকে মাটিতে তোদের পা পড়েনা।”

পরী আর দিদা সমানে কেঁদে চলেছে, অভির ও দু’চোখ জ্বালা করছে কিন্তু ছেলে বলে সবার সামনে কাঁদতে পারছে না।

মাঃ “কাল বিয়ে বউভাত শেষ হয়ে যাবার পরে, আমি পরীকে নিয়ে কোলকাতা চলে যাব। আমি ওর এডমিশান কোলকাতা উনিভারসিটিতে করাব এবং ওর পড়াশুনার দায়িত্ব আমার। তোদের কোন পয়সা আমার চাইনা আর আমি তোদের কোন কথার ধার ধারিনা।”

মায়ের বুক থেকে এক দীর্ঘশ্বাস নিসৃত হলো। পরী মায়ের পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিল। শশাঙ্ক আর সুমন্ত দুজনেই উঠে গিয়ে মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করলো। অভির মনে হলো যেন একটা বিশাল পারিবারিক নাটক শেষ হলো এইমাত্র। চারদিকে যেন চোখের জলের ছড়াছড়ি।

অবশেষে সুমন্ত বললেন, “উলুপিদি যা বলেছেন ঠিক বলেছেন। পরীর ওপরে আমাদের চেয়ে বেশি অধিকার উলুপিদির আর তাঁর অধিকার আছে পরীকে নিয়ে যাওয়ার। আমরা সবাই ভুলে গেছিলাম যে উলুপিদি আমাদের পরিবারের জন্য কি করেছিলেন।” কিছুক্ষণ থেমে সবার দিকে একবার দেখে বললেন, “কাল বাদে পরশু, আমি এই বাড়ির ভাগ করবো। এই বাড়ি সাত ভাগে ভাগ হবে।”

ইন্দ্রানি জিজ্ঞেস করলো, “সাত ভাগে কেন? আমরাতো ছয় ভাই বোন?”

যেন একটা সিংহ গর্জে উঠল, “তুই একদম চুপ করে থাকবি। ছয় ভাগ আমাদের ছয় ভাই বোনের আর এক ভাগ মায়ের। মা যাকে ইচ্ছে তাকে দিয়ে যাবেন।” শশাঙ্ক সুমন্তর কথায় সায় দিলেন।

সুমন্তঃ “আমি চাইনা এই কথা এই চার দেওয়ালের বাইরে যাক। কাল সুব্রতর বউভাত, আমি চাইনা ওর বউভাত মাটি হোক। কথা শেষ, আর যেন এই নিয়ে বাড়িতে কোন কথা না ওঠে।”

এই সব তর্ক বিতর্কে অনেকটা সময় কেটে গেছে। অভি, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো, রাত ন’টা বাজে।
 
Chapter 8: শুভরাত্রি। (#1)

অভি আর সুব্রত দুজিনেই দাঁড়িয়ে পড়লো। ইন্দ্রানি আর চন্দ্রানি তাদের স্বামীদের নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।

সুব্রতঃ “ভাই অভি, বড় মাথা ঝিমঝিম করছে। একটু গলায় ঢাললে বড় ভাল হতো।”

সুব্রতর সাথে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো অভি। ঘরের মধ্যে শুধু দিদা, মা আর পরী। পরীর মুখে আবার হাসি ফুটে উঠেছে। মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের কোলে মাথা রেখে আদর খাচ্ছে। অভির মন পরীর মুখে হাসি দেখে আবার ভাল হয়ে গেল। বুকখানি খুশিতে নাচতে শুরু করে দিল, পরী তাহলে ওর সাথে ওর কাছে কোলকাতায় থাকবে।
অভি আর সুব্রত ছাদে উঠে গেল। ওখানে আগে থেকেই সমির আর মৃগাঙ্ক উপস্থিত ছিল, দু’জনে এক কোনে বসে মদ খাচ্ছিল। সুব্রতকে দেখে সমির জানতে চাইলো যে কি হয়েছে।

সুব্রত অভির পিঠ চাপড়ে বললো, “এর মা একজন জলজ্যান্ত দেবী।”

পানীয় গলায় ঢালতে ঢালতে ওদের কাছে সুব্রত বিকেলের পুরো ঘটনার বিবরন দিল। ঠিক সেই সময়ে নিচ থেকে কেউ খেতে ডাক দিল। অভি নিচে নেমে লক্ষ্য করলো যে বাড়ির মধ্যে যে বিষণ্ণতার ছায়া পড়েছিল সেটা আর নেই। সবার মুখে আবার হাসি ফুটে উঠেছে। চন্দ্রানি মাসি আর ইন্দ্রানি মাসিও বেশ হাসি হাসি মুখ নিয়ে বসে আছে। অভি, পরী বা মাকে কোথাও দেখতে পেল না। মেঘনাকে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারলো যে মা আর পরী নতুন বউ, মৈথিলীর ঘরে আছে।

ইন্দ্রানি মাসি অভির পিঠে হাত রেখে বললো, “আজকের বিকেলে যা ঘটেছে তার জন্য আমি দুঃখিত। রাগের মাথায় উলুপিদিকে আমি অনেক কিছু বলে ফেলেছি। মাকে বলিস পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিতে।”

সুব্রত অভির হয়ে উত্তর দিল, “দিদি, তুই নিজে উলুপিদির কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিস, সেটাই ভাল হবে। আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি যে উলুপিদি তোকে ক্ষমা করে দেবেন।”

অভি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো তারপরে বাবার কথা জিজ্ঞেস করলো। ইন্দ্রানি মাসি জানালো যে বাবাকে আগেই খেতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতক্ষনে বাবা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছেন। অভিকেও ওদের সাথে খেতে বসতে বললো। অভি ওনার কথা অমান্য করতে পারলো না। ডাইনিং টেবিলের একধারে ইন্দ্রানি মাসি, অভি আর সুব্রত খেতে বসে গেল।
এমন সময়ে সবার চোখ গেল সিঁড়ির দিকে। অভি তাকিয়ে দেখে যে মা আর পরী নতুন বউ, মৈথিলীকে সাথে নিয়ে নেমে আসছে। মৈথিলীর পরনে টকটকে লাল রঙের শাড়ি আর পরী একটা গাড় নীল রঙের সালোয়ার পরেছে। অভি মনে মনে তুলনা করতে চেষ্টা করলো যে কে বেশি সুন্দরী, পরী না মৈথিলী? না ওর পরী বেশি সুন্দরী। এই সব কোলাহল, গোলযোগের পরে পরীর ফুটফুটে মুখে হাসি দেখে অভির মন খুশিতে ভরে গেল। সেই পুরানো উচ্ছল পরী আবার ফিরে এসেছে।

অভি সুব্রতর কাঁধ চাপড়ে বললো, “ভায়া দারুন যোগাড় করেছো। মৈথিলী ব্যাপক দেখতে।”

সুব্রতঃ “হেই, আমি তোমার মামা আর সেই সম্পর্কে মৈথিলী তোমার মামি হন। ও আমার হয়ে গেছে, একদম ওর দিকে তাকাবে না।”

অভিঃ “ধুর, কে মামা? একসাথে বসে দারু গেলার সময়ে মামা ভাগ্নে মনে ছিল না?”

ইন্দ্রানি মাসি কথাটা শুনতে পেয়ে অভির কান ধরে টান দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি! তোমরা দু’জনে ছাদে বসে মদ খাচ্ছিলে?”

অভিঃ “না না মাসি, আমরা শুধু কফি খাচ্ছিলাম।”

ইন্দ্রানিঃ “হুম আমার নাক কিন্তু খুব শার্প বুঝলে...”

মা মৈথিলীকে চেয়ার টেনে খাবার টেবিলে বসতে বললেন। মা, পরী আর মৈথিলী ঠিক অভির উলটো দিকে বসে। সুব্রতর সামনে মৈথিলী, অভির সামনে পরী আর মায়ের সামনে ইন্দ্রানি মাসি। বসতে গিয়ে সামনের দিকে একটু ঝুঁকে পড়ে পরী, অভির নজর চলে যায় পরীর উন্নত বুকের খাঁজের মাঝে। কোমল বুকের খাঁজ দেখে অভির বুকটা ধক করে ওঠে। গলা শুকিয়ে যায় কয়েক মুহুর্তের জন্য। ফর্সা ত্বকের ওপরে ঘরের আলো যেন পিছল খেয়ে যাচ্ছে।

মা সুব্রতর দিকে তাকিয়ে বললো, “আজকে রাতে তোরা দু’জনে একসাথে শুবি না। কাল থেকে তোদের দিন শুরু।”

খাওয়া দাওয়া শুরু। কিছু পরে অভি ওর পায়ের ওপরে কারুর পায়ের নখের আঁচড় অনুভব করলো। থালা থেকে পরীর দিকে মুখ তুলে তাকালো অভি, পরী ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছে। টেবিলের নিচে, নখ দিয়ে অভির পায়ে গভীর আঁচড় কাটতে থাকে। সেই আঁচড়ের স্পর্শে অভির সারা শরীরে বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে বেড়ায়। পরীর চোখে মুখে দুষ্টুমির হাসি। পরীর নখ পা ছাড়িয়ে হাঁটুর কাছে এসে ঘোরাফেরা করছে। অভি দাঁতে দাঁত পিষে কোন রকমে নিজেকে সংবরণ করে রেখেছোে। অগত্যা অভির চুপ করে খাবার গেলা ছাড়া আর কিছু করার শক্তি নেই।

সুব্রত বললো, “কাল অভিকে ধুতি পাঞ্জাবিতে খুব হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছিল। আমার তো একসময়ে ভয় ধরে গেছিল যে বর কে, আমি না অভি? মৈথিলী না ওর গলায় মালা দিয়ে দেয়।”

নতুন বউ, মৈথিলী ওই কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। অভির কান লাল হয়ে গেল ওর কথা শুনে। মৈথিলী মায়ের দিকে লাজুক চোখে তাকালো।

পরী হেসে মৈথিলীকে আলতো ধাক্কা মেরে বললো, “বিয়ে হয়ে গেছে আর সেই উপায় নেই, বুঝলে। গত পরশু পর্যন্ত উপায় একটা ছিল ওর গলায় মালা দেবার, এখন সে গুড়ে বালি। আর অভির দিকে নজর দিও না যেন।”

পরীর কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো। মৈথিলীর লজ্জা দেখে মা ওকে মৈথিলীকে ক্ষেপাতে বারন করলো। রাতের খাবার পর্ব অনেক হাসি অনেক কথা নিয়ে শেষ হলো। সবাইকে পুনরায় খুশি দেখে অভির মন ভাল হয়ে গেল। এতক্ষণ যেন বাড়িতে এক গুমোট হাওয়া বইছিল। মা আর ইন্দ্রানি মাসিকে একসাথে দেখে খুশি হলো অভি। খাবার পরে ইন্দ্রানি মাসি মাকে একটা ঘরে ডেকে নিয়ে গেল। অভি বুঝতে পারলো যে আরেক চোট কান্না কাটির পালা শুরু হবে। এই বঙ্গ মহিলাদের চোখে যেন মা গঙ্গা বসবাস করেন।

খাবার পরে অভি হাত ধোয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকে গেল আর ঠিক পেছন পেছন পরীও ঢুকলো হাত ধুতে। পরী ওর কানে কানে বললো, “আধ ঘন্টা পরে ছাদে থেকো।” একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নিল অভি, ওদেরকে কেউ দেখছে কিনা। তারপরে হটাত করে পরীকে জড়িয়ে ধরলো। এক হাত দিয়ে ঘাড়খানি নিজের মুখের কাছে টেনে নিল আর এক হাতে কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিল অভি। ওর এই অকস্মাৎ আচরনে ঘাবড়ে গেল পরী। বুকের ওপরে হাত রেখে ঠেলে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে, কিন্তু অভির আলিঙ্গন বড় দৃঢ়, নিজেকে ছাড়াতে পারলো না পরী।

ডান হাতে ওর কোমর জড়িয়ে আরও নিবিড় করে নিয়ে বললো, “প্লিস প্লিস প্লিস, একটা ছোট্ট কিসি দাও না। অনেক ক্ষণ থেকে আমি তোমার গন্ধ পাইনি সোনা।”

আঁতকে উঠলো পরী, “কি করছো তুমি? ছাড় আমাকে, যে কেউ চলে আসতে পারে।”

অভি অনুনয় সুরে বলে, “পরী শুধু একটা ছোট্ট কিস।”

পরীঃ “না না এখন নয়, প্লিস ছেড়ে দাও। বলেছি তো আধ ঘন্টা পরে ছাদে থেকো।”

অভিঃ “আধা ঘন্টা অনেক বেশি পরী। অতক্ষণ আমি বেঁচে থাকতে পারব না। শুধু একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে যাও।”

পরীঃ “তুমি না একদম যাকে বলে, বল্গাহীন গরু। দেখ সোনা, সবুরে মেওয়া ফলে, তাই আমাকে এখন যেতে দাও, কথা দিচ্ছি আমি আধ ঘন্টার মধ্যে ছাদে তোমার সাথে দেখা করবো।”

দু’হাতে পরীর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে আরও কাছে টেনে নেয়। পরী দুহাতে অভির গলা জড়িয়ে ধরে। কোমল বক্ষ আলতো করে চাপ দেয় অভির প্রশস্ত বুকের ওপরে। পরীর হৃদয়ের ধুকপুকানি অনুভব করতে পারে নিজের বুকের ওপরে। পরীর বুকের মাঝে যেন এক ঝড় উঠেছে, কাজল কালো চোখ তুলে তাকায় অভির দিকে। সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। নাকের ডগায় নিজের নাক ঘষে দিল পরী। মুখখানি উঁচু করে নিজের ঠোঁট নিয়ে আসে অভির ভিজে ঠোঁটের কাছে। অভি ওই লাল ঠোঁটের আহ্বান উপেক্ষা করতে পারেনা, নিজের ঠোঁট দিয়ে ছুঁতে যায় পরীর ভিজে ঠোঁট।

ঠিক সেই সময়ে মেঘনা ডাক দেয়, “পরী, কোথায় তুমি?”
 
Chapter 8: শুভরাত্রি। (#2)

দু’জনে ওপরে যেন বিদ্যুৎ ঠিকরে পড়লো। ঝট করে একে অপরের আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে সরে দাঁড়াল। বাথরুম থেকে বেরিয়ে যাবার আগে অভির হাতের মধ্যে একটা রুমাল গুঁজে দিয়ে ফিসফিস করে বললো, “আমি না আসা পর্যন্ত আমার গন্ধ নিও।” পরী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাঙা হাসি দিল আর ইশারা করলো যেন ছাদে থাকে। আলতো করে মাথা নেড়ে সায় দিল অভি।

পরী মেঘনাকে বললো, “এইতো আমি, কি হয়েছে, ডাকছো কেন?”

অভিকে পরীর পেছন পেছন বেরিয়ে আসতে দেখে, ভ্রুকুটি নিয়ে ওদের দিকে তাকায় মেঘনা। পরী মেঘনার চোখের চাহনি দেখে বুঝতে পেরে বলে, “ওই রকম ভাবে দেখছো কেন? বাথরুমে কি করে মানুষে। আমরা হাত ধুতে গেছিলাম আবার কি।”

মেঘনা পরীকে মৈথিলীকে সঙ্গে নিয়ে ওর ঘরে যেতে বলে গেল। অভি কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে সুব্রতকে খোঁজার চেষ্টা করলো, কিন্তু সুব্রতর দেখা পাওয়া গেলনা। অভি চন্দ্রানিকে সুব্রতর কথা জিজ্ঞেস করতে, চন্দ্রানি জানালো যে মৃগাঙ্ক এসে সুব্রতকে ওদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে গেছে। চারদিকে তাকিয়ে দেখলো অভি, বাড়ির বেশির ভাগ লোকজন শুয়ে পড়েছে।

কিছু যখন আর করার নেই তখন কি করে অভি, এই ভেবে ছাদের দিকে পা বাড়ালো। একতলার সিঁড়ি দিয়ে যাবার সময়ে যে ঘরে মৈথিলী রাতে থাকবে সেই ঘরের দিকে চোখ পড়লো অভির। পা টিপে টিপে পর্দার আড়ালে এসে দাঁড়িয়ে ঘরের মধ্যে দেখতে চেষ্টা করলো অভি। ঘরের মধ্যে পরিকে দেখতে পেল আর কাউকে পেল না। পরী একবার দরজার দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করলো যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে কিনা। একবারের জন্য ওর মনে হলো কেউ যেন দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে ওদের কথাবার্তা শুনছে। বিছানা থেকে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে এলো। অভি দেখলো এ যে ধরা পড়ে যাবার উপক্রম, তাড়াতাড়ি ছাদে পালিয়ে গেল।

ছাদে উঠে এককোণের রেলিংয়ের ওপরে বসে পড়লো অভি। মাথার ওপরে শীতকালের ঘন নীল আকাশ। ঠান্ডা হিমেল হাওয়া বইছে দূর মাঠের দিকে থেকে। বাড়ির পেছনের আমের বাগান যেন অনেক গুলো ভুতের মতন একা একা দাঁড়িয়ে আছে। দুরে তাল আর নারকেল গাছ গুলো যেন হাওয়াতে মাথা দুলিয়ে ওকে কাছে ডাকার হাতছানি দিচ্ছে। আকাশের দিকে তাকালো অভি, ঘন নীল আকাশ যেন একটা বিশাল পর্দা আর তার ওপরে কেউ যেন সহস্র কোটি হীরের টুকরো ছড়িয়ে দিয়েছে। কিছুদিন আগেই অমাবস্যা গেছে, আকাশে বাঁকা এক চিলতে চাঁদ।

রেলিংয়ে বসে বাইরের দিকে পা করে দিগন্তের দিকে মুখ করে চুপচাপ বসে থাকে অভি। ঘন কালো অন্ধকারের মধ্যে ওর চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরীর সুগভীর বক্ষ বিভাজন। মন আনচান করে উঠল সেই দৃশ্য মনে করে, মনে হলো যেন হাত দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দেয় ওই বক্ষ বিভাজন, নাক মুখ ঢুকিয়ে দিয়ে ঘষে দেয় পরীর বুকে। অন্ধকারের বুক চিরে যেন পরীর গভীর কালো চোখ ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।
চুপিচুপি ছাদে উঠে আচমকা অভির কাঁধে হাত রাখে পরী। মধুঢালা গলায় বলে, “কি ভাবছে আমার ছোট্ট রাজকুমার?”

পেছন দিকে মাথা হেলিয়ে দেয় অভি, কাঁধের দুপাশ থেকে হাত গলিয়ে অভির মাথা নিজের বুকের ওপর চেপে ধরে পরী। পাতলা পাতলা আঙুল দিয়ে অভির মাথার চুলে বিলি কাটতে থাকে আর কপালে ছোটো চুমু খায়।

ফিসফিস করে বলে অভি, “তোমার কথা ভাবছিলাম আমি।”

কাঁধে মাথা নামিয়ে গালে গাল ঘষে দেয় পরী। অভির মনে হলো যেন কেউ ওর গালে চন্দনের প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে। কানের কাছে ভ্রমরের মতন গুঞ্জন করে, “আমার রাজকুমার আমাকে সারা রাত ঠিক এইরকম ভাবে জড়িয়ে ধরে থাকে যেন। আমি চাই না এই রাত কখন শেষ হোক।”

অভি ওর দিকে ঘুরে পা ফাঁক করে বসলো। দু’পায়ের ফাঁকে পরীকে টেনে নিল। পরী ওর গলা জড়িয়ে ধরে অভির মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরলো। অভির চিবুক পরীর কোমল বক্ষের ওপরে চেপে গেল। বুক ভরে টেনে নিল পরীর মাদকতাময় ঘ্রান। নিবিড় করে পরীর কোমর জড়িয়ে ধরলো অভি। জামা কাপড় বদলে নিয়েছে পরী, ওর পরনে একটা সিল্কের নাইটড্রেস, গায়ে অভির শাল।

পরীর বুকের ধুকপুকানি কান পেতে শুনল অভি। কোমল আঙুল দিয়ে মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে জিজ্ঞেস করে পরী, “আমার বুকের মাঝে কি শুনছো?”

অভিঃ “হুম্মম্ম...” বুকের মাঝে দুষ্টুমি করে নাক ঘষে দিল অভি।

পরীঃ “প্রত্যেক হার্টবিট শুধু তোমার নাম বলছে।”

অভি জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা একটা কথা বলবে, সবসময়ে আমার শালটা গায়ে জড়িয়ে থাক কেন বলতে পারো?”

পরীঃ “তোমার গায়ের গন্ধ পাই। মনে হয় যেন তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছো। শালটা গায়ে থাকলে আমার বড় নিরাপদ লাগে মনে হয় যেন তুমি আমার কাছে আছো, তাই এটা আমি সবসময়ে কাছে রাখি।”

অভি লক্ষ্য করলো যে পরীর গলায় একটা মোটা সোনার হার। হার খানি দেখে চিনতে পারলো অভি, ওটা ওর মায়ের হার। পরীর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এই হার তুমি কোথায় পেলে?”

কালো চোখের গভীর চাহনি অভির বুকের ভেতর পর্যন্ত পুড়িয়ে দিল, “ছোটোমা দিয়েছে আমাকে।”

ছোটোমা, শেষ পর্যন্ত ওর মাকে পরী ছোটোমা বলে ডাকতে শুরু করেছে।

অভির করতল পরীর পিঠের ওপরে ঘুরতে থাকে, আদর করতে থাকে পরীর মসৃণ পিঠ। দু’হাতে আঁজলা করে তুলে ধরে অভির মুখ। প্রেমের গভীর চাহনি পরীর দুচোখে মাখা।

প্রেমঘন স্বরে বলে, “অনেক অনেক দিন পরে আজ মনে হচ্ছে যেন আমাকে ভালবাসার কেউ আছে। শক্ত করে জড়িয়ে ধর আমাকে, অভি। আমি তোমার কাছ থেকে কোথাও যেতে চাইনা।”

অভিঃ “এই রকম করে কেন বলছো। বাড়ির সবাই তোমাকে খুব ভালবাসে।”

পরীঃ “আর বুঝিয়ে কি হবে আমাকে। আজ আমি আমার সত্যিটুকু যেনে ফেলেছি যে কে কত ভালবাসে আমায়।”

অভিঃ “আমি তোমার জন্য থাকব, পরী।”

ওর কথা শুনে কেঁপে উঠল পরী, “আমি জানিনা ভবিষ্যতে কি হবে। আমাকে মিথ্যে কথা বলে ভুলাতে চেষ্টা কোরোনা।”

কপালে কপাল ঠেকাল পরী, নাকের ডগার সাথে নাকের ডগা। চোখ দুটি একটু ভাসাভাসা। আলতো করে ভিজে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল অভির ঠোঁটের ওপরে। একত্রিত হলো দুই জোড়া ঠোঁট, কোন কামাগ্নির জ্বলায় নয়, এ যেন এক অনাবিল আনন্দের ঢেউ। কিছুটা যেন শান্তির হিমেল বাতাস, চিরন্তন প্রেমের আভাস। ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে কতক্ষণ ওরা ওই ভাবে ছিল তাঁর ইয়ত্তা নেই। সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে ওদের চারপাশে। ধিরে ধিরে যেন ওরা নিজেদের খুঁজে পায়, পরী ওর কাঁধে মাথা গুঁজে দেয়, ফুঁপিয়ে ওঠে। অভি ওর পিঠের ওপরে হাত বোলাতে শুরু করে।

কান্না থামানোর জন্য পরীকে আস্বস্ত করে বলে, “কাঁদছো কেন সোনা? কেঁদো না প্লিস। দেখ কাল তুমি আমাদের সাথে, তোমার ছোটোমায়ের সাথে আমাদের বাড়ি যাচ্ছো। সেখানে আমি থাকব, তোমার ছোটোমা থাকবে।”

কিছুক্ষণ পরে মাথা উঠাল পরী, গোলাপি গাল বেয়ে সরু জলের দাগ। মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে, বুড়ো আঙুল দিয়ে জলের দাগ মুছিয়ে দিল অভি।

পরীঃ “আমার মা, মৈথিলী, মেঘনা বৌদি সবাই মিলে ছোটোমাকে অনুরোধ করেছে যাতে আমি আরও কিছু দিন ওদের সাথে থাকি। আমি কাল তোমার সাথে যেতে পারছিনা, অভি।”

অভিঃ “ঠিক আছে। কয়েক মাস পর থেকে তো তুমি আমার সাথে থাকবে। এ নিয়ে চিন্তা কোরোনা আর মন খারাপ করেনা। দেখ এখন তুমি তোমার ছোটো মাকেও পেয়ে গেছ।”
বিষণ্ণ চেহারায় আবার হাসি ফুটে উঠল।

অভিঃ “এই তো সোনা মেয়ে।”

বুকের ওপরের অনাবৃত অংশে নাক ঘষে দিল অভি। বক্ষ বিভাজনের মাঝে নাক ডুবিয়ে জোরে নিঃশ্বাস নিল, বুক ভরে পরীর গায়ের গন্ধ বুকের মধ্যে টেনে নিল। আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল বুকের ওপরে। উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে ওঠে পরী।

বারংবার কেঁপে মৃদুকন্ঠে বলে, “উম্মম্মম্মম্মম... কি করছো তুমি?” অভির মাথা নিজের বুকের ওপরে শক্ত করে চেপে ধরে থাকে। অভির জিব বুকের অনাবৃত অংশে চেটে দেয়। কম্পিত স্বরে কঁকিয়ে ওঠে পরী, “আমার কাতুকুতু লাগছে যে, থামো না প্লিস...”
নাইট ড্রেসের ওপর দিয়ে সারা পিঠের ওপরে হাত বুলাতে থাকে অভি, পিঠ থেকে কোমর পর্যন্ত। রুক্ষ চুলের ওপরে গাল ঘষতে থাকে পরী। সারা শরীরে প্রেমের আগুন জ্বলে ওঠে। অভির হাত নেমে আসে পরীর কোমল নিতম্বের ওপরে। একটি গোল নিতম্ব হাতের থাবায় নিয়ে পিষে দেয় অভি। নাক দিয়ে তখন আগুন ঝরে পড়ছে।

উষ্ণ শীৎকার করে ওঠে পরী, “উম্মম্মম্ম... অভি, প্লিস ছাড়, কেউ এসে যাবে সোনা।”

অভিঃ “কেউ ছাদে আসবে না, সোনা।”

পরীঃ “ছোটো মা চলে আসবে।”

অভিঃ “তোমার ছোটো মা এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।”

পরীঃ “মেঘনা আমাকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে আসবে।”

অভিঃ “মেঘনাও এতক্ষণে শুয়ে পড়েছে সোনা।”
 
Chapter 8: শুভরাত্রি। (#3)

পরী, “বাড়ি ভর্তি লোক জন, অভি। কেউ না কেউ আমাদের দেখে ফেলতে পারে। প্লিস বেবি ছেড়ে দাও আমাকে।”

পরী কাতর স্বরে মিনতি করে কিন্তু অভির মাথা নিজের আলিঙ্গনের কবল থেকে মুক্ত করে না, শক্ত করে চেপে রাখে বুকের ওপরে। অভির নিষ্ঠুর হাতের থাবা, পরীর কোমল গোলগাল নিতম্ব দুটিকে পিষে ফেলতে থাকে। পাগলের মতন অভির মাথার ওপরে গাল ঘষে পরী। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হয় পরীর নিঃশ্বাস, প্রেমের আগুন ঝরে নিঃশ্বাসে।

কঁকিয়ে ওঠে পরী, “বেবি প্লিস আমাকে ছেড়ে দাও, আমি আর পারছিনা।”

অভির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায়, বক্ষ বিভাজনের মাঝে মুখ ঢুকিয়ে চুমু খাবার চেষ্টা করে। বক্ষের কোমল তুলতুলে নারী মাংসের ছোঁয়ায় অভির শরীরে যেন বিদ্যুৎ তরঙ্গ প্রবাহিত হয়।

পরীঃ “সোনা না...... কোরো না এই রকম... আমি মরে যাব সোনা... কি যে হচ্ছে না, সারা শরীরে...”

প্রগাড় আলিঙ্গনে বদ্ধ এক জোড়া কপোত কপোতী, সময়ের বাঁধ যেন ওদের কাছে নেই। আশেপাশের ব্যাপারে অবিদিত, দুজন দুজনাকে জড়িয়ে ধরে ভেসে চলেছে প্রেমের ভেলায়। অভির কামুক হাতের তালু পরীর নিতম্বদ্বয় পেষণ করে চলেছে। নিতম্ব হাতে নিয়ে বুঝতে পারে যে নাইট ড্রেসের নিচে পরীর নিম্নাঙ্গে কোন বস্ত্র নেই। অভির সিংহ কেশর ফুলিয়ে উঠেছে, পরী সিংহের অবয়ব নিজের পেটের ওপরে উপলব্ধি করতে পেরে কেঁপে ওঠে। অভির শয়তানি একটু বেড়ে যায়, ক্ষিপ্ত সিংহটিকে পরীর জানু মাঝে চেপে ধরে। নিজের জানু মাঝে অভির ক্ষিপ্ত সিংহের ধাক্কা অনুভব করে পরী মৃদু শীৎকার করে ওঠে। কামাগ্নিতে জ্বলে ওঠে দুই প্রান। মাথার চুল ছিঁড়ে দেবার পালা, এমন ভাবে খামচে ধরে অভির মাথা।

পরীঃ “আমাকে পাগল করে দিচ্ছো অভি। আমার বুকের মাঝে কি যেন হচ্ছে... উফফফ... না... আর পারছিনা সোনা...”

ঠিক যেই সময়ে দুই তৃষ্ণার্ত প্রান প্রেমের খেলায় মগ্ন, সেই সময়ে মেঘনা নিচে থেকে পরীকে ডাক দেয়। মেঘনার গলা শুনে দুজনে একে অপরকে ছেড়ে দাঁড়ায়। দুজনেই হাঁপাতে থাকে, বুকের মাঝে যেন কামারের হাঁপর টানছে।

পরী দুষ্টুমি মাখানো হাসি দিয়ে বলে, “দেখলে তো, আমি বলেছিলাম না যে মেঘনা বৌদি আমাকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে আসবে।” তারপরে গলার স্বর উঁচু করে উত্তর দেয় মেঘনাকে, “হ্যাঁ কি হয়েছে, আমি ছাদে।”

মেঘনা ছাদে উঠে এসে দুজনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এই অন্ধকার রাতে, একা একা ছাদে কি করছো?”

পরীঃ “কিছু না। অনেক দিন পরে দেখা পেলাম তাই দু’জনে গল্প করছিলাম।”
সিঁড়িতে আরও একজনের পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। কিছু পরে সুব্রত এসে মেঘনার পেছনে দাঁড়াল।

সুব্রত অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি ভায়া, ছাদে কি করছো? আমি তোমাকে সারা বাড়ি খুঁজে খুঁজে হন্যে হয়ে গেলাম আর তুমি ছাদে?”

মেঘনা পরীকে বললো, “বদমাস মেয়ে, নিচে যাও। মৈথিলীর ঘুম পেয়েছে, তোমাকে ওর সাথে শুতে হবে।” মেঘনা পরীকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল। যাবার আগে চোরা চাহনিতে এক চোরা হাসি ছুঁড়ে গেল অভির দিকে।

সুব্রত অভির কাঁধে হাত রেখে বল, “ভায়া, দু বোতল ওল্ড মঙ্ক যোগাড় করেছি। উঠোনে বসে চলবে নাকি রাতে?”

অভি উত্তরে বলে, “ধুর কি যে বলো, কেউ দেখে ফেললে?”

সুব্রতঃ “আরে বাবা মাঝ রাতে কে আর আমাদের দেখবে। সবাই খেয়ে দেয়ে টেঁসে গেছে।”

উঠোনে বউভাতের মেরাপ বাঁধা, দুজনে ছাদ থেকে নেমে উঠোনের প্যান্ডেলে ঢুকে পড়লো। বাড়ির অধিকাংশ লোকজন শুয়ে পড়েছে, সারা বাড়ি নিস্তব্ধ, গুটিকয়েক আলো ছাড়া সারা বাড়ি অন্ধকারে ঢেকে।

সুব্রত গ্লাসে রাম ঢেলে একটা গ্লাস অভির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “আজ যেন বেশ একটু ফুরফুরে লাগছে। এই দুই দিন যেন ঝড় বয়ে গেল।”

অভি মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করলো, “তো তুমি কি করে খুঁজে পেলে তোমার স্বপ্নের সুন্দরীকে।”

সুব্রত জানালো যে এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে ওদের দেখা হয়েছিল, সেইখানে থেকে দুজনের মধ্যে প্রেম শুরু হয়। একদিকে রাম এক দিকে গল্প, সমান তালে চলতে থাকে। ও আগে মৈথিলীকে প্রপোস করতে চেয়েছিল, কিন্তু বড়দার ভয়ে আর করেনি।

অভিঃ “তা ম্যানেজ করলে কি করে?”

সুব্রতঃ “আমি মেঘনা বউদিকে সব জানাই। তারপরে একদিন দুষ্টুর জন্মদিনে ওদের ডাকা হয়। সেখানে বড়দা মৈথিলীকে দেখে পছন্দ হয়। তারপরে মেঘনা বৌদি আর শশাঙ্কদা মৈথিলীর বাবা মাকে বিয়ের প্রস্তাব জানায়।”

অভিঃ “হুম বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার।” রক্তে ততক্ষণে মদের নেশা। “কাল রাতে বিড়াল মারছো তাহলে। তো হানিমুনে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”

সুব্রতঃ “হুম কাল রাত্রি...” হেসে ফেললো সুব্রত “হানিমুনে গোয়া যাব ঠিক করেছি।”

অভিঃ “হ্যাঁ গোয়া হানিমুনের জন্য একদম ভাল জায়গা।” সুব্রতর কাঁধ চাপড়ে বলে, “মৈথিলীকে দারুন দেখতে।”

সুব্রতঃ “খালি সুন্দরী? আর কিছু না? বলো আমার বউ দারুন সেক্সি।” শিরায় শিরায় রক্তের চেয়ে বেশি যেন সুরা চলাচল করছে। গলার আওয়াজ জড়িয়ে আসছে দুজনারই, “এটা আমাদের সেকেন্ড হানিমুন। আসল হানিমুন তো কবেই সেরে ফেলেছি আমরা।”
অভিঃ “তাই নাকি?”

সুব্রত, “হ্যাঁ ভাই। আমার বউ খুব মিষ্টি আর খুব সেক্সি। তুমি তোমার কথা বল, কেউ আছে নাকি মনে মনে?”

অভিঃ “না আমার মনে কাউকে নেই। তবে হ্যাঁ আমার স্কুলের ফিসিক্স ম্যাডামকে আমার খুব ভাল লাগতো। সেও দারুন সেক্সি, একটু শর্ট হাইটের কিন্তু খুব সুন্দরী ছিলেন। আমি ওনার ক্লাসে ঠিক ভাবে পড়াশুনা করতে পারতাম না, খালি ওনাকে দেখে যেতাম।”

সুব্রতঃ “তারপরে কি হলো?”

অভিঃ “তারপরে কি হবে?”

সুব্রতঃ “ধুর পাগলা, আমি শুনেছি কলকাতার ম্যাডামরা ছাত্রদের সাথে অনেক কিছু করে।”

অভিঃ “না না, ওই রকম কিছু ঘটেনি বাবা। তবে হ্যাঁ ওনার রুপ দেখে আমার ফিসিক্স পড়া বেড়ে যায় আর আমি গ্রাজুয়েশানে ফিসিক্স নিয়ে পড়াশুনা শুরু করি। তা তোমাদের প্রথম হানিমুন কোথায় হয়?”

সুব্রতঃ “আমরা শান্তিনিকেতন ঘুরতে গেছিলাম।”

মদের নেশায় চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে দুজনেরই, কিন্তু গলায় রাম ঢালা ছাড়েনা কেউ। অভির চোখ বুজে আসে। সুব্রত ওর পিঠে থাপ্পড় মেরে বলে, “আজ আমার জীবনের সব থেকে বড় দিন আর তুমি ঝিমিয়ে পড়ছ? তুমি আমার সব থেকে ভাল বন্ধু।”

অভি চিৎকার ওঠে, “ধুর শালা, আমার মাথা ঘুরছে।”

সুব্রতঃ “আজ আমি পাগলা ঘোড়া, আমার ঘোড়ি চাই, আমার ঘোড়ি ওই ওপরে ঘুমুচ্ছে।” সুব্রত টলতে টলতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো, চিৎকার করে উঠল, “আমি যাচ্ছি আমার প্রেমিকার কাছে।”

অভি হাত বাড়িয়ে সুব্রতকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিল, “আজ রাতে নয়, বসে পড়ো ভায়া।”

ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো সুব্রত, “চূর্নিকে আমার কাছে নিয়ে আসো।”

অভিঃ “এই চূর্নিটা আবার কে?”

সুব্রতঃ “আমার সুন্দরী বউয়ের ডাক নাম চূর্নি। আমাকে ছেড়ে দাও আমি চুর্নির কাছে যাব।”

অভিঃ “না একদম নড়বে না।”

টলতে টলতে আবার সুব্রত চেয়ার ছেড়ে উঠতে চেষ্টা করে, অভি আবার এক ধাক্কা মেরে ওকে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।

অভিঃ “ভাই একরাতের ব্যাপার, কোন রকমে কাটিয়ে দাও, কাল থেকে তোমার চূর্নি তোমার কাছে।”

“ঠিক আছে” এই বলে হেঁড়ে গলায় গান ধরে সুব্রত, “মেরি জান মেরি জান মুরগিকে অন্ডে...”

অভিঃ “ধুর শালা, এ আবার গান নাকি। আমার গান শোনো তবে।”

“সেদিন দুজনে হেগে ছিনু বনে, ছুচোবার জল ছিল না
বিচুটি পাতায় পোঁদ মুছেছিনু সে জ্বলুনি আজ গেল না গেল না...”

সুব্রতঃ “উরি বাস... দারুন গান গুরু... জ্বলুনি আজ গেল না...”
উঠে দাঁড়িয়ে সুব্রত বললো, “এবারে আমার রামায়ন শোনাব......”

অতঃ রামচন্দ্র কথা...”

ওরা দুজনে হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, তারপরে কারুর কিছু মনে নেই কি হলো।
 
Chapter 9: খুঁজে পাওয়া বাল্যকাল।

দু’জনে কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল তাঁর ঠিকানা নেই। অভির চোখ খলে যখন কেউ ওর মাথার পেছনে সজোরে এক চাঁটি মারে। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে যে ইন্দ্রানি মাসি ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। পায়ের দিকে কিছু দুরেই মাটিতে পড়ে আছে সুব্রত।

ইন্দ্রানি মাসি ওদের দিকে রেগে বলে, “শূওর কোথাকার। তোদের কোন হুঁশ জ্ঞান নেই? সবাই তোদেরকে হন্যে হয়ে খুঁজছে আর তোরা এখানে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস?”

অভি পা দিয়ে ঠ্যালা মেরে সুব্রতকে জাগিয়ে দেয়। সুব্রত মাথা চুল্কাতে চুল্কাতে চোখ খুলে দেখে যে ইন্দ্রানি মাসি ওর দিকে রেগে মেগে তাকিয়ে।

অঃ “সরি মাসি। মানে আমরা কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।”

চেয়ারে রাখা মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ যায়। তাড়াতাড়ি গায়ের শালটা চেয়ারের ওপরে ফেলে দিয়ে ওগুলো ঢেকে দেয়। ওদিকে মন্ডপের দিকে পায়ের আওয়াজ শোনা যায়, কেউ আসছে। ইন্দ্রানি মাসি জানিয়ে দেয়, “অভি আর সুব্রত সারা রাত প্যান্ডেলে রাত কাটিয়েছে।”

মা, দিদা, পরী, মৈথিলী সবাই প্যান্ডেলের দিকে দৌড়ে আসে। মা আর দিদা দু’জনকে বেশ ভাল বকুনি দেবার পরে চলে যায়। মৈথিলী সুব্রতকে টানতে টানতে বাড়ির মধ্যে নিয়ে যায়।

পরী অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, “এই ঠাণ্ডার রাতে এখানে কি করছিলে তোমরা?”
সদ্যস্নাত পরীকে দেখতে ঠিক শিশিরে ভেজা জুঁই ফুলের মতন দেখাচ্ছে, সারা গা থেকে মন মাতান এক সুবাস বের হচ্ছে।

অভিঃ “না কিছু না, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল এই আর কি...”

আড় চোখে দেখলো অভি, ইন্দ্রানি মাসি কাজের লোককে ডেকে বোতল আর গ্লাস পরিষ্কার করে নিতে বললো।

বাড়িতে ঢোকা মাত্রই যেন হাজার চোখ অভিকে খেয়ে ফেলার জন্য উদগ্রীব। বাবা আর সুমন্ত মামা যেন পারলে ওকে খেয়ে ফেলে।

পরী ওকে টানতে টানতে একটা ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল। ঠেলে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়াল। অভির এলোমেলো চুলে বিলি কাটতে থাকে পরী। ঘরের পর্দা যে দেওয়া নেই সেদিকে কারুর খেয়াল নেই। অভি ওর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে।
ক্ষমা চায় অভি, “সরি পরী। কাল রাতের জন্য ভেরি সরি।”

মমতা মাখান হাসি দিয়ে উত্তর দেয়, “ঠিক আছে, আমি তো কিছু বলিনি। ছেলেরা দুষ্টুমি করবে না তো কে করবে।”

অভিঃ “তুমি তাহলে আমার ওপরে রাগ করোনি, আমার সুইট পরী।”

মায়ের দেওয়া হারটা অভির হাতে দিয়ে বলে, “এটা আমাকে পরিয়ে দেবে কি?” এই বলে অভির দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে পড়লো। ঘাড়ের ওপরে হাত খোঁপাটাকে আলতো করে ঘাড় থেকে সরিয়ে দিল অভি। মরালী গ্রিবার মতন ফর্সা ত্বক, অভির হাত কিঞ্চিত কেঁপে ওঠে। হার পরানোর আগে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় ওই ঘাড়ের ওপরে।
উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে ওঠে, “কি করছো? আবার দুষ্টুমি। কেউ এসে পড়বে, এসটাকে ঠিক করে লক করে দাও।”

ঘাড়ের কাছে এস টাকে লক করে মসৃণ ত্বকের ওপরে হাত বুলিয়ে দিল অভি। বেড়াল ছানার মতন মিউ মিউ করে উঠল পরী। অভি আবার দু’হাতে ওকে জড়িয়ে ধরলো।
জিজ্ঞেস করলো, “রাতের বেলায় কি পরছো?”

মাথা নাড়ালো পরী, “জানি না, তুমি বলে দাও কি পরবো।”

অভিঃ “তুমি অনেক সুন্দরী, তুমি যা পরবে তাতেই তোমাকে সুন্দরী দেখাবে। তুমি যে আমার সত্যিকারের পরী।”

পরী ঠেলে অভিকে বাথরুমের দিকে ঢুকিয়ে দেয়, “যাও তাড়াতাড়ি স্নান সেরে আসো। তোমার গা থেকে বোঁটকা গন্ধ বের হচ্ছে।”

ঠিক সেই সময়ে ইন্দ্রানি মাসি ঘরের মধ্যে ঢোকে। ইন্দ্রানি মাসিকে দেখে দু’জনে একটি তফাত দাঁড়ায়। ইন্দ্রানি মাসি পরীকে বলে যে অভির মা নাকি ওকে খুঁজছে। পরী ইন্দ্রানি মাসিকে জিজ্ঞেস করলো যে কেন ওর ছোটো মা ওকে ডেকেছে। মাথা নাড়িয়ে ইন্দ্রানি মাসি জানালো যে কারন জানেন না। পরী কিছু পরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বেরিয়ে যাবার আগে, ঘাড় ঘুরিয়ে অভির দিকে তাকালো। ডান হাতের তর্জনীটা ঠোঁটের কাছে এনে, আঙুলের ডগায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে, একটা ছোট্ট চুমু ছুঁড়ে দিয়ে চলে গেল।

ইন্দ্রানি মাসিঃ “দিদি জামাই বাবু তোমার ড্রিঙ্কসের কথা জানে?”

অভি সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ, “না গো জানে না।” তারপরে বলে, “সরি মাসি, তবে থ্যাঙ্কু ওই সময়ে যা করেছো।”

ইন্দ্রানি মাসিঃ “যাও বাথরুমে ঢুকে স্নান সেরে নাও।”

তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে পড়লো অভি। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নিতে হবে। আজ একটা মাত্র দিন, পরীকে কাছে পাওয়ার, আজ বিকেল বেলায় অভিকে কোলকাতা ফিরে যেতে হবে। কোনো রকমে স্নান সেরে নিচে নেমে দেখে যে মা অথবা পরী কেউই নেই। বাড়ির লোকজনকে জিজ্ঞেস করে মায়ের কথা, একজন উত্তর দিল জানেনা। বারান্দার দিকে হেঁটে গিয়ে দেখে যে দিদা ইন্দ্রানি মাসিকে আর মেঘনাকে কিছু নির্দেশ দিচ্ছে। পাশে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে অভি। ওদের কথা শেষ হয়ে যাবার পরে দিদাকে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। ওর মন বলছে, মা যেখানে থাকবে পরীও সেখানেই থাকবে। পরীও চাইছে ওর বেশির ভাগ সময় ওর ছোটো মার কাছে কাটুক।

দিদা অভিকে বললো, “তোর মা পরীকে জিজ্ঞেস করেছিল যে পরী বিকেল বেলায় কি জামা কাপড় পরবে। পরী জানায় যে হয়তো শাড়ি বা সালোয়ার। তোর মায়ের ঠিক পছন্দ হয়নি তাই তোর মা আর বাবা পরীকে নিয়ে বারাসাত গেছে শপিং করতে। ফিরতে ফিরতে বিকেল চারটে বেজে যাবে।”

অভির খুব রাগ হলো, পরী ওকে না জানিয়ে চলে গেল? একবার হাতের কাছে পেলে হয়।

দিদা অভিকে পাশে বসতে বলে ওর ছোটো বেলার কথা শুনাতে লাগল, “তুই ছোটো বেলায় খুব দুষ্টু ছিলিস। সারা বাড়ি হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াতিস আর পরীও তখন অনেক ছোটো, ও তোর পেছন পেছন ঘুরে বেড়াতো। সুব্রত তোদের থেকে কিছু বড়, তোকে নিয়ে সুব্রত বাড়ির পেছনের পুকুর পাড়ে নিয়ে গিয়ে মাছ ধরতো। তোরা দু’জনে ছোটো ছোটো ছিপে মাছ ধরতিস আর তারপরে সেই মাছ গুলো আবার পুকুরের জলে ছেড়ে দিতিস। চল আমার সাথে তোকে কিছু দেখানোর আছে আমার।”

গল্পের মাঝে অভি লক্ষ করলো যে একটা গড়ি এসে উঠানে দাঁড়িয়েছে। গাড়ি থেকে বেশ কিছু মহিলারা নামলেন। দিদা আর অভি ওদেরকে লক্ষ না করে বাড়ির পেছন দিকে হাঁটা দিল। বহু বছর পরে অভি সেই বাল্যকালের খেলার জায়গায় ফিরে এসেছে। দু’পাশে আম কাঁঠালের বাগান, তার মাঝে পায়ে হাঁটার সরু রাস্তা এঁকে বেকে এগিয়ে চলেছে।
কিছু দূর যাবার পরে দিদা ওকে পুকুর দেখিয়ে বলে, “এই সেই পুকুর, তোর হয়তো কিছুই মনে নেই।”

মাথা নাড়ায় অভি, “না গো দিদা, আমার কিছুই মনে নেই।”

অভির হাত ধরে পুকুরের এক কোনায় নিয়ে যায়। একটা আমের গাছ দেখিয়ে অভিকে ছুঁতে বলে গাছের গুঁড়ি।

দিদাঃ “এই গাছটা দেখছিস। তুই তখন কথা বলতে শিখেছিস। একদিন সকাল বেলা আমি পুজো সেরে উঠেছি আর তুই দৌড়াতে দৌড়াতে আমার কাছে এসে আমাকে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসিস এখানে। গাছ দেখিয়ে বলিস যে তুই একটা আমের গাছ পুঁতেছিস।” দিদা অভির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “ছুঁয়ে দ্যাখ, কত বড় হয়ে গেছে তোর পোঁতা আম গাছ। আজও আমার বাগানের সেরা আম গাছ এটা।” অশ্রু ভরা চোখে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “আমারও বয়েস হয়েছে, তোর মায়েরও বয়স হয়েছে। তোর মা এতদিন কি করে এই সব বুকের মাঝে লুকিয়ে রেখেছোিল জানিনা।”

পুকুর পাড়ে বসে পড়ে দিদা আর অভিকে পাশে বসতে বলে, “উলুপি আমাদের জন্য অনেক করেছে। আমরাই ওকে ভুল বুঝলাম রে।”

অভি দিদাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “দিদা, আবার কেন ওই সব কথা শুরু করছো?”

কান্না ভেজা চোখে দিদা বললো, “নাঃ রে। একটি মেয়ে, দুই মায়ের মাঝে, সময়ের ব্যাবধানে দূর হয়ে গেল।”

ঠিক সেই সময়ে ইন্দ্রানি মাসি এসে পড়লো। ওদের দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। দিদা ইন্দ্রানি মাসিকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে? উত্তর ইন্দ্রানি মাসি বললো যে মেয়ের বাড়ি থেকে লোকজন এসেছে আর দিদাকে খুঁজছে।

বাড়ি পৌঁছাতেই দিদাকে সব আত্মীয় স্বজনেরা ঘিরে ধরলো। অভি আবার সেই ভিড়ে একা হয়ে পড়লো।
 
Chapter 10: নতুন মুখ।

অভির খুব একা একা লাগছিল, থেকে থেকে রাগ হচ্ছিল মায়ের ওপরে, কেন পরীকে নিয়ে শপিংয়ে চলে গেছে, কেন একবার ওকে জানালো না। শপিং ওর ভাল লাগেনা তবুও পরীর সঙ্গ তো পেত। ঠিক সেই সময়ে দুষ্টু ডাক দেয়, বলে যে সুব্রত ওকে ওর ঘরে ডাকছে।

ঘরে ঢুকে দেখে যে একটি নতুন মুখ। একটি তন্বি তরুণী মৈথিলীর পাশে বসে। সুব্রত ওকে দেখে কাছে ডেকে মেয়েটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। মেয়েটি ওর খুড়তু্তো শালি, অরুণিমা। অরুণিমা দক্ষিণ কোলকাতায় থাকে, বি.এ ফার্স্ট ইয়ার পড়ছে। কথাবার্তা শুনে মনে হলো যেন, অভির সাথে অরুনিমার পরিচয় কোন এক গুঢ় কারনে করাতে চাইছে ওরা।

অরুনিমার দিকে তাকালো অভি, সবে মাত্র গোলাপের কুঁড়ি, বয়স আন্দাজ এই উনিশ কি কুড়ি, দেখতেও ভাল। ওর দিকে বড় বড় চোখ নিয়ে তাকালো। অভি সুব্রতর কাঁধে হাত রেখে বললো, “মামা আমার এখন ঠিক ভাল লাগছে না, আমি একটু একা থাকতে চাই।”
মৈথিলীর দিকে তাকালো অভি, মাথা নিচু করে শ্রদ্ধা জানালো। মৈথিলী ওর এই আচরনে হেসে ফেললো। অভি মজা করে বললো, “চুর্নি, তোমাকে দারুন দেখতে। তোমার সাথে আমার আগে দেখা হওয়ার দরকার ছিল।”

ওর কথা শুনে মৈথিলীর লজ্জায় কান লাল হয়ে গেল, রেগে মেগে সুব্রতর দিকে তাকালো। চুর্নি নামে শুধু মাত্র সুব্রতই ওকে ডাকে। অভি সুব্রতকে আস্বস্ত করে বললো, “ভায়া তোমার বউয়ের দিকে আমি নজর দিচ্ছি না চিন্তা নেই।”

অভি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে গেল। এক কাপ কফি নিয়ে আবার ছাদে উঠে গেল। খালি ছাদে দাঁড়িয়ে নীল আকাশের দিকে চেয়ে থাকলো অভি। এক কোনায় দাঁড়িয়ে দু’হাত ছড়িয়ে বুক ভরে গ্রামের শুদ্ধ বাতাস ভরে নিল বুকের ভেতরে।

কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবতে থাকে ওর আর পরীর সম্পর্ক। পরী ওর কে হয়? মায়ের দুর সম্পর্কের বোন। হ্যাঁ, সত্যি, কিন্তু রক্তের তো কোন সম্পর্ক নেই, মায়ের নিজের বা কাছের বোনও নয়। মায়ের ছোটো দাদুর, ছোটো মেয়ের, ছোটো মেয়ে হচ্ছে পরী। কেনই বা ওদের প্রেম এই সমাজ বা ওর বাবা মা মেনে নেবে না? শুধু মাত্র এই কারনে যে পরী ওর থেকে দু’ বছরের বড় বলে? বয়সের ব্যাবধান কি এতই বড় যে ওর বাবা মা ওদের সম্পর্ক মেনে নেবে না? কিছুতেই মনকে সান্তনা দিতে পারলনা অভি, এই ভালবাসা অবৈধ হতে পারেনা। ওরা দু’জনেই প্রাপ্ত বয়স্ক, দু’জনের বুকের মাঝে একটি হদপিন্ড আছে। কেই বা বুঝবে? মা না দিদা? এ ভালবাসা যে বড় মধুর। ভালবাসা মানুষের মনে কি দরজায় টোকা মেরে আসে? না জানিয়ে আসে। প্রেমে মন মজে গেলে, বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়, রাতে ঘুম আসে না, সবসময়ে খোলা চোখের সামনে শুধু প্রেমিকার কাজল কালো দু’ নয়ন খেলে বেড়ায়। এইসব ভাবনা চিন্তায় ডুবে যায় অভি।

ওর চিন্তনের রেশ কাটলো এক মিষ্টি আওয়াজ শুনে, “তোমাকে নিচে খেতে ডেকেছে।” ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো অভি, পেছনে অরুনিমা দাঁড়িয়ে।

অভি, “হুম চল, আমি তো খাবার কথা একদম ভুলে গেছিলাম। তো কে তোমাকে পাঠাল আমাকে ডাকতে? তোমার দিদি না জামাইবাবু?”

অরুনিমাঃ “দিদি জামাইবাবু খেতে বসবে তাই তোমাকে ডাকতে বললো।”

নিচে নামতে নামতে অরুনিমা ওকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কলকাতার কোথায় থাকো?”

অভিঃ “আমি উত্তর কোলকাতায় থাকি, তুমি তো মনে হয় দক্ষিণ কোলকাতায় থাকো, তাই না?”

অরুনিমাঃ “হ্যাঁ, ঢাকুরিয়া।”

অভি একনজর দেখলো অরুনিমাকে, পাতলা গঠন গায়ের রঙ ফর্সা। পোশাক আশাক বেশ রুচিশীল। টকটকে লাল রঙের শাড়ি পরেছে, পিঠ বিহীন ব্লাউস গায়ে, পিঠের ওপরে দুটি সুতো দিয়ে বাঁধা।

অরুনিমাঃ “তুমি কলেজের ফাইনাল ইয়ারে?”

অভিঃ “হ্যাঁ।”

অরুনিমাঃ “তারপরে?”

অভিঃ “তারপরে মানে?”

অরুনিমাঃ “না মানে কলেজের পরে কি? হাইয়ার স্টাডিস করবে না চাকরি করবে?”
মাথা চুলকায় অভি, এই মেয়েটা ওকে এতশত প্রশ্ন কেন করছে। উত্তর দিল, “আমাকে চাকরি করতে হবে। আমি একটা প্রাইভেট সংস্থা থেকে কম্পিউটার শিখছি।”

অভি অরুনিমাকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি ভবিষ্যতে কি করতে চাও?”

অরুনিমা একটু ভাবুক হয়ে বললো, “আমি কিছু করতে চাই না।” পরীর একদম উলটো স্বভাবের মেয়ে অরুনিমা।

খাবার টেবিলে শুধু মাত্র দুটি চেয়ার খালি, অগত্যা অভিকে অরুনিমার পাশেই বসতে হলো। মৈথিলী আর সুব্রত ওদের উলটো দিকে বসে। ওদেরকে পাশাপাশি বসতে দেখে, মৈথিলী সুব্রতর কানে কানে কিছু বললো, সুব্রত একবার অভির দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। ওই হাসি দেখে অভি বুঝতে পারলো যে ওরা কি করতে চাইছে। নিজের মনে হেসে ফেললো অভি, “কি অদ্ভুত প্রস্তাব।” খাবার সময়ে খুব চুপচাপ ছিল অভি, ওর মনটা পড়ে আছে কখন পরী আসবে সেই চিন্তায়।

খাবার পরে সুব্রত অভিকে ডেকে এক কোনায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো যে ওর কি হয়েছে, ও এত চুপচাপ কেন। অভি চেপে গেল যে, পরীকে খুব মনে পড়ছে, উত্তর দিল যে, দিদা ওকে ওর ছোটো বেলার কথা মনে করিয়ে দেওয়াতে ওর মন খারাপ লাগছে।
সুব্রতঃ “তুমি অরুনিমাকে নিয়ে একবার বাগানে বা পুকুর পাড় থেকে ঘুরে আসতে পারতো? অরুনিমা বেশ সুন্দরী মেয়ে, হয়তো তোমার মনে ভাল লেগে যেতে পারে।”

অভি ম্লান হেসে উত্তর দিল, “কেন চেষ্টা করছো?”

সুব্রতঃ “কেন কি হলো? এইরকম একটা সুন্দরী মেয়েকে দেখে তোমার মনের ভেতরে কিছু হচ্ছে না? আমি যদি এই কথা আমার কোন বন্ধুকে বলতাম ওরা তো হুমড়ি খেয়ে পড়তো অরুনিমার ওপরে। এক কাজ করো, তুমি ছাদে যাও আমি ওকে ছাদে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
 
Chapter 11: বিস্ময়

ছাদে উঠে অভি চেয়ে থাকে দুরের মাঠের দিকে, ধানের খেতের ওপরে নির্মল বাতাসে কচি কচি ধান হাওয়াতে মাথা দোলাচ্ছে। মাথার ওপরে শীতকালের সূর্যি, ধিরে ধিরে পশ্চিম আকাশের দিকে পা এগিয়ে দিয়েছে। পরীর কোন দেখা নেই। বুকের মাঝে এক অনির্বচনীয় ব্যাথা জেগে উঠল, গত তিনদিন ওর জীবনের সব অঙ্ক গুলিয়ে দিয়েছে। খালি হাতে এসেছিল এই বিয়ে বাড়িতে, কিন্তু ফিরে যাবার সময়ে নিয়ে যাচ্ছে বুক ভরা ভালবাসা। ভগবানের কাছে এর থেকে বেশি আর কিছু চাওয়ার নেই ওর। কিছু পরে বিয়ে বাড়ি আবার আত্মীয় স্বজনের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠবে। কোলকাতা ফিরে যাবার আগে হয়তো পরীর সাথে আর একা একা দেখা করা যাবেনা। রাতের খাবার পরে, ওরা ফিরে যাবে কোলকাতা। কেন মরতে রাতে রাম খেতে গেল। যদি না খেত তাহলে ও পরীর সাথে, মায়ের সাথে শপিংয়ে যেতে পারত। এই সব ভাবতে ভাবতে এক সময়ে চোখে জল চলে আসে অভির। ঝনঝন করে উঠল মাথা, মনে হলো যেন কানের কাছে কেউ কাঁচের গ্লাস ভেঙে দিয়েছে।

“কি হয়েছে তোর?” মনে হলো যেন অনেক দূর থেকে কেউ ডাক দিচ্ছে অভিকে। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে তাকিয়ে দেখলো যে মা ওকে ডাকছে। চোখের জল লুকিয়ে তাকালো মায়ের দিকে, লক্ষ্য করলো পরী মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। মা অভির কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে আবার জিজ্ঞেস করলো, “তোর কি হয়েছে?” কোন উত্তর দিতে পারলো না অভি। ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে পরীর দিকে। ওই চোখ দেখে পরীর চোখ ফেটে জল চলে আসে, ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলে নেয়। বুঝতে পারে অভির মনের বেদনা। মা বললেন, “নিচে সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করছে যে কি হয়েছে তোর?”

পরী ধিরে ধিরে মায়ের কাছে এগিয়ে এসে বললো, “ছোটোমা তুমি নিচে যাও, আমি ওকে দেখছি।”

মাঃ “হ্যাঁ দ্যাখ কি হয়েছে ওর, আর তাড়াতাড়ি নিচে চলে আয় তোরা।”

অভি জিজ্ঞেস করলো মাকে, “তোমরা শপিংয়ে গেলে আমাকে বলে যেতে পারতেতো?”

পরী বুঝতে পারে যে প্রশ্নটা ওর ছোটো মাকে নয়, অভি প্রশ্নটা ওকে করেছে। মা উত্তর দিলেন, “তুইত কোনদিন শপিংয়ে যাস না তাই তোকে বলা বৃথা। যাই হক, পরীর জন্য কিছু কেনা হয়েছে আর পরীও তোর জন্য কিছু কিনেছে, নিচে এসে একবার দেখিস। হয়তো তোর ভাল লাগবে।”

মা নিচে যাবার আগে জিজ্ঞেস করলেন, “রাতে কি আবার ধুতি পাঞ্জাবী পরবি না স্যুট?”

পরী ওর কানে কানে বললো, “রেমন্ডের সুটটা পোরো, আমি তোমার জন্য একটা টাই কিনে এনেছি।”

মা চলে যাবার পরেই, পরী ওর মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে বললো, “সরি বাবা, আমি কি বুঝেছিলাম যে তোমার এত কষ্ট হবে?” কপালে চুমু খেয়ে বললো, “বাচ্চা ছেলের মতন কাঁদে। শক্ত কবে হবে? তুমি এইরকম হলে আমার কি হবে? একবারও ভেবে দেখেছো?” হাত ধরে নিচে টেনে নিয়ে গেল পরী, “একদম সেই ছোট্ট বাচ্চার মতন, এতদিনে একদম বড় হওনি। চোখ মোছো আর তাড়াতাড়ি জামা কাপড় পরে নাও। খুব বড় সারপ্রাইস দেব তোমাকে।”

অভি ওর দেওয়া সেই সিল্কের রুমালটা বের করে চোখ মুছে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “সারপ্রাইসটা কি?”

পরীঃ “বাঃ রে, বলে দিলে কি আর সারপ্রাইস থাকে! বলবো না যাও, যখন দেব তখন দেখে নিও।”

নিচে নেমে দেখলো যে বাড়ির সবাই সাজতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। মায়ের ঘরে দু’জনে ঢুকে গেল। ওর মা আগে থেকেই বিছানার ওপরে ধুসর রঙের সুটটা বের করে রেখেছোিল, আর তার ওপরে একটা নীল স্ট্রাইপ দেওয়া টাই রাখা। নীল রঙ অভির পছন্দের রঙ, টাই দেখে খুব পছন্দ হলো অভির। মনে হলো একবার পরীকে জড়িয়ে ধরে ওর টোপাটোপা গালে চুমু খায়, কিন্তু ঠিক সেই সময়ে মা ঘরে এসে পড়াতে ওর আর চুমু খাওয়া হলো না। মা পরীকে বললেন মৈথিলীর ঘরে যেতে ওকে সাজাতে লোক এসেছে, তার তদারকি করতে। ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার আগে পরী ওকে একটা চোরা চুমু ছুঁড়ে দিয়ে যায়, চোখের ভাষায় যেন বলে গেল, “আমার জন্য নিচে অপেক্ষা কোরো।”

সন্ধ্যে নেমে এসেছে, সানাই বাজতে শুরু করেছে। বউভাতের বাড়িতে সাজ সাজ রব, আলোয় আলোকিত বাড়ি। সুট পরে কিছুক্ষণের মধ্যে বেরিয়ে পড়ে অভি। অনেক লোকের চোখ আবার ওর দিকে। সুব্রত কাছে এসে কানে কানে বলে, “গুরু আবার কি দিয়েছো।” সুব্রতকে খুব বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল ওর কালো পাঞ্জাবীতে।

অভি সুব্রতর কাঁধ চাপড়ে বলে, “মামা, আজ রাত তোমার রাত কিন্তু চুর্নির ওপরে যেন বেশি চাপ দিও না। বেস্ট উইসেস ফর হানিমুন। আমি সত্যি ভাগ্যবান যে তোমার বিয়ে এটেন্ড করতে পেরেছি।”

সুব্রতঃ “না, আমি সত্যি ভাগ্যবান যে তোমরা আমার বিয়েতে এসেছো।”

অভিঃ “এই তিন দিনে, এখানে এসে অনেক কিছু ফিরে পেলাম আর অনেক কিছু নতুন করে পেলাম। হারিয়ে যাওয়া আমাদের ছেলেবেলা, আমার পোঁতা আম গাছ, পুকুর পাড় যেখানে আমি আর তুমি মাছ ধরতাম আর তারপরে সেই মাছ গুলো আবার জলে ছেড়ে দিতাম।”

সুব্রতঃ “কবি কবি ভাব, তুমি কবি না টেকনিকাল?”

ঠিক সেই সময়ে অরুনিমা অভির কাছে এসে বললো, “হুম, দারুন দেখাচ্ছে তোমাকে। অনেক মেয়ের মাথা ঘুরে যাবেতো।”

ওর কথা শুনে সুব্রত হেসে ফেললো, অভিকে ওর সাথে যেতে বললো।

অরুনিমাঃ “তোমাকে খাওয়ার পরে কত খুঁজলাম কোথাও দেখতে পেলামনা।”

অভিঃ “কেন খুঁজছিলে আমাকে?”

অরুনিমাঃ “এমনি খুঁজছিলাম। কি করবো আমার বয়সের কেউ ছিল না তাই খুব বোর ফিল করছিলাম।”

অভি জিজ্ঞেস করলো, “হাঁটবে নাকি?”

অরুনিমাঃ “আপত্তি নেই।”

অভিঃ “ভিড় অনেক সময় বড় বোরিং হয়ে যায় তাই না?” দু’জনে উঠোনের দিকে হাঁটতে শুরু করলো। ওদেরকে একসাথে হাঁটতে দেখে অনেকের চোখ গেল ওদের দিকে। ইন্দ্রানি মাসির ওদের দিকে তাকিয়ে হেসে বুঝিয়ে দিল, “ভাল ভাল।”

অরুনিমাঃ “তুমি বড় চুপচাপ প্রকৃতির ছেলে, তাই না?”

অভিঃ “হ্যাঁ তা বটে। ব্যাপারটা হচ্ছে ঠিক মতন লোক না পেলে ঠিক কথা বলতে ইচ্ছে করেনা।”

অরুনিমাঃ “ঠিক বলেছো, মনের মতন মানুষ না পেলে ঠিক কথা বলে আনন্দ হয় না।”

অভিঃ “তাঁর মানে আমি তো অনারড, তুমি আমার সাথে কথা বলছো।”

অভির কথার পরে দুজনেই হেসে ফেললো। কথা বার্তায় ওই জানতে পারলো যে, অরুনিমার একটা ছোটো ভাই আছে, স্কুলে পড়ে। ওর বাবা সরকারি চাকুরিরত, রাইটার্স বিল্ডিংয়ে চাকরি করেন। গল্প করতে করতে ওরা অনেক দূর চলে এসেছিল, অভি পেছনে তাকিয়ে বললো যে ওদের এবারে ফেরা উচিত।

অরুনিমাঃ “আর একটু হাঁটলে হতো না?” কিছু দূর আরও এগিয়ে যেতেই অরুনিমা জিজ্ঞেস করলো, “আমি তোমাকে একটা পারসোনাল কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?”

অভিঃ “হ্যাঁ জিজ্ঞেস করতে পারো।”

অরুনিমাঃ “না মানে, তোমার নিশ্চয় কোন গার্লফ্রেন্ড নেই তাই না?” অভি ঠিক এটাই ভয় পাচ্ছিল।

অভি মনের ভাব লুকিয়ে উত্তর দিল, “না মানে আমার কোন ফুল টাইম গার্লফ্রেন্ড নেই।”

অরুনিমাঃ “হুম তার মানে খালি ফ্লারটিং করা হয়।”

অভিঃ “না না, আমার অত সময় নেই যে ফ্লারটিং করবো। আমার অনেক বন্ধু বান্ধবী আছে তবে বিশিষ্ট কোন বান্ধবী নেই আমার।”

ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অরুনিমা, মনে হলো যেন বুকের মাঝে এতক্ষণ কিছু চেপে ধরে ছিল, অভির কথা শুনে সেই পাথরটা বুকের ওপর থেকে সরে গেল। অভি মনে মনে হাসতে থাকে, “পাগলি মেয়ে, আমি আমার ভালবাসা পেয়ে গেছি।”

দুজনেই চুপচাপ বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে অরুনিমা বললো, “আমরা দুজনেই কোলকাতায় থাকি, একবার দেখা করা যায় কি?”

মাথা নাড়লো অভি, যাবে কোনদিন ওর বাড়িতে। চলে যাবার আগে অভির হাতে একটা কাগজ গুঁজে দিয়ে ইশারা করলো যেন ফোন করে। কাগজটা দেখে মাথার চুলে আঙুল দিয়ে আঁচড়ালো অভি, মনে মনে হেসে ফেললো, “কি যে হচ্ছে।”

পরী পেছন থেকে এসে ওর কাঁধে একটা টোকা দেয়, “কি ব্যাপার কি চলছে? কিছুর গন্ধ পাচ্ছি মনে হচ্ছে যেন?”

অভি পরীর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে অবাক হয়ে গেল। পরীর পরনে একটি সুন্দর তুঁতে রঙের লেহেঙ্গা তার ওপরে রুপোলি সুতোর ভারী কাজ, ফর্সা গায়ের রঙের সাথে বেশ মানিয়েছে ওর লেহেঙ্গার রঙ। চুল খোঁপা করে বাঁধা, কিছু জুঁই ফুল গোঁজা খোঁপায়। ললাটে একটি বড় তুঁতে রঙের টিপ, কানে লম্বা সোনার দুল, গলায় মায়ের দেওয়া সোনার হার। কবজিতে ছনছন করছে দু গাছা তুঁতে আর গাড় নীল রঙের কাঁচের চুড়ি। দু’ গালের টোল দেখে মনে হলো যেন এখুনি গালে চুমু খায়। কাঁচুলি আর কোমরের মাঝে অনাবৃত ছোটো গোল পেট আর তাঁর মাঝে সুগভীর নাভিদেশ। বড় বড় কালো চোখে অভির অবাক মুখের দিকে তাকিয়ে পরী।

একটু নেচে ঘুরে অভিকে জিজ্ঞেস করলো, “কেমন দেখাচ্ছে আমাকে?”

অভি মন্ত্রমুগ্ধের মতন পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে, “আমি যে এখন হার্ট ফেল করবো সোনা।”

ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো পরী, “অরুনিমার চেয়েও সুন্দরী?”

“হুম, কোথাও কিছু জ্বলছে মনে হচ্ছে?” গালে আলতো করে টোকা মেরে বলে অভি।

একটা ধাক্কা মেরে উত্তর দেয় পরী, “আমি ছাড়া কারুর দিকে তাকালে আমি কিন্তু চোখ গেলে দেব, বুঝলে।”

তর্জনীর ডগায় ছোট্ট চুমু খেয়ে বলে, “পাগল নাকি।”

পরীঃ “এই কি করছো, ছোটো মা আসছে, দেখতে পাবে যে।”

অভিঃ “সরি।”

মা কাছেই ছিলেন, পরীকে দেখে ডাক দিলেন। পরী দৌড়ে মায়ের কাছে চলে গেল। মা ওকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু খেল। অভি দূর থেকে মা আর পরীকে দেখতে থাকে। ইন্দ্রানি মাসি ওর কাছে এসে বলে, “আজ পরীকে শান্ত করতে মুশকিল হবে।”

অভি ইন্দ্রানি মাসিকে একটা ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ওর পায়ের কাছে বসে পড়ে। ইন্দ্রানি মাসির হাত দুটো হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, “তুমি তো ওর বড়দি, তোমার চোখে যদি জল আসে তাহলে ওকে কি করে আটকাবে তুমি?”

ফুঁপিয়ে ওঠে ইন্দ্রানি মাসি, “এত বছর শুধু ওকে দোষ দিয়ে গেছি আমরা।” এই বলে কাঁদতে শুরু করে ইন্দ্রানি মাসি।

অভি ইন্দ্রানি মাসির চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললো, “চোখ মোছো মাসি। আজ না তোমার ভাইয়ের বউভাত, এই রকম আনন্দের দিনে কেউ কাঁদে নাকি?”

ঠিক সেই সময়ে মেঘনা ঘরে ঢুকে ওদেরকে দেখে বললো, “সারা বাড়িতে হচ্ছে টা কি, এক জায়গায় পরী, মা আর উলুপিদি কাঁদছে আর একদিকে তোমার। আমি তো পাগল হয়ে যাব।”

অভি ইন্দ্রানি মাসিকে শান্ত করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। অনুরিমা এসে ওকে ডেকে নিয়ে যায় বলে যে ওর জামাইবাবু, সুব্রত ফটো তলার জন্য ওদের ডেকেছে। লোকেরা খেতে বসে গেছে, ধিরে ধিরে রাত গভীর হচ্ছে।

পরীর মুখে হাসি দেখে আস্বস্ত হলো অভি, যাক কান্না কাটির পালা তাহলে শেষ। ওকে দেখতে পেয়ে ডাক দিল পরী। দুই বান্ধবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। দু’জনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। অভি ওকে জিজ্ঞেস করলো, “ঠিক আছো?” কোন উত্তর দিল না, শুধু একটু ম্লান হাসলো।

অভিঃ “দেখি বাবা মা কোথায়, খেতে বসতে হবে।”

পরীঃ “এত তাড়াতাড়ি? আমার সাথে খেতে বসবে না?”

সুব্রত ওদেরকে ফটো তুলতে ডেকে নিয়ে গেল।
 
Chapter 12: বিদায় চুম্বন।

ফটো তোলার পরে পরী ওকে বললো, “একটু হাঁটবে আমার সাথে?”

পরী অভিকে নিয়ে বাড়ির পেছন দিকে চলে এলো। দু’জনে হাত ধরাধরি করে আম বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটতে শুরু করে। গভীর কালো অন্ধকার ওদের চারপাশে। পরী অভির বাঁ হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে, বাঁকা চাঁদের আলোয়, পরীকে দেখে মনে হলো যেন স্বর্গের অপ্সরা মাটিতে নেমে এসেছে।

অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পরে পরী জিজ্ঞেস করলো, “আজকেই তোমাকে চলে যেতে হবে?”

মাথা নাড়ায় অভি, “হ্যাঁ, সোনা।”

পরীঃ “আর একটা দিন থেকে গেলে হতো না?”

অভিঃ “একটা দিন থাকলেও কোন পরিবর্তন হতো না। কালকেও তুমি এই কথাই বলতে।”

রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে পরী ওর দিকে ঘুরে ওর গলা জড়িয়ে ধরে। বুকের ওপরে মাথা রেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়ে। অভি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর মাথার ঘ্রান বুকে টেনে নেয়।

পরীঃ “এতদিন কাছে ছিলে না, অনেক কিছু জানতাম না, ভাল ছিলাম আমি। দু’দিনে এসে আমার জীবনটাকে...”

কথা শেষ করতে পারলোনা পরী, অভি ওর মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরলো। দু’জনের কেউই সেই চুম্বনটিকে খন্ডন করতে নারাজ। বেশ কিছুক্ষণ পরে পরী ওর বড় বড় চোখ খুলে তাকালো অভির মুখের দিকে। অভি ওর ঠোঁট ছেড়ে প্রথমে ওর চোখের পাতায় আলতো করে চুমু খেল, তারপরে ধিরে ধিরে ওর গালে, কানের লতিতে চুমু খেল। দু’হাতে ওর উন্মুক্ত পিঠের ওপরে বিচরন করছে, শিরদাঁড়ার ওপরে নখ দিয়ে আঁচড় কেটে দিল অভি। নখের আঁচড়ে কেঁপে ওঠে পরী। নিঃশ্বাস ঘনিভুত হতে থাকে। কাঁধ ছেড়ে পরীর হাত অভির মাথার ওপরে, দশ আঙুল দিয়ে আঁচড়ে দেয় অভির চুল। গলায়, চিবুকে শত সহস্র চুম্বনের বন্যা বইয়ে দেয় পরী। পীনোন্নত বক্ষ অভির প্রশস্ত বুকের ওপরে পিষ্ট হয়ে যায়। ওর কোমলতা অনুভব করে অভি, সারা শরীরে বিদ্যুৎ তরঙ্গ প্রবাহিত হতে থাকে।

দুষ্টু অভি মুখ নামিয়ে আনে পরীর বুকের ওপরে। বুকের ওপরের অনাবৃত অংশে চুম্বনে ভরিয়ে দেয়। পরীর শ্বাসে প্রেমের আগুন ঝরতে থাকে, শক্ত করে অভির মাথা চেপে ধরে বুকের ওপরে। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বুকে ভরে টেনে নেয় পরীর শরীরে মধুর সুবাস। পরীর পেছন দিকে মাথা হেলিয়ে দেয়, বুকের মাঝে যেন বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে, উন্নত বক্ষ যুগল থেকে থেকে ওঠা নামা করছে। অভির নচ্ছার হাত পরীর পুষ্ট নিতম্বের কোমল বলয়ের ওপরে, পিষ্ট করতে থাকে। পরী চোখ বন্ধ করে অস্ফুট শীৎকার করে ওঠে। ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে অভি। পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে, সুগভীর নাভির ওপরে আলতো করে চুমু খায়। উষ্ণ ত্বকের ওপরে অভির ভেজা ঠোঁটের পরশ পেয়ে কেঁপে ওঠে পরী। অভি তাও থামেনা, ওর পেটের ওপরে নাভির চারদিকে সহস্র চুম্বনে ভরিয়ে তোলে।

পরী প্রেমে কঁকিয়ে ওঠে, “আমি পাগল হয়ে যাব অভি। আর ওইরকম ভাবে চুমু খেও না সোনা।” অভি ওর কথায় কোন কান দেয়না। ঠোঁট নাভির নিচে নামতে চায়, পরী বুঝতে পেরে ভীষণ ভাবে কেঁপে ওঠে। আরও জোরে শীৎকার করে ওঠে, “না...... সোনা...”

দু’ পা জবাব দিয়ে দেয়, ধপ করে অভির কোলে বসে পড়ে পরী। বুকের ওপরে মাথা গুঁজে বলে, “আর পারছিনা সোনা, আর পাগল কোরোনা প্লিস...”

দু’জনে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ বসে রইল আম বাগানের ভেতরে। চারদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ আর রাতের ঘন অন্ধকার। আকাশে বাঁকা চাঁদ যেন ওদের দেখে মিষ্টি মিষ্টি হাসছে। এই প্রথম পরীর মনে হলো যে নিস্তব্ধতাও কত মধুর প্রেমময় হতে পারে।

কতক্ষণ ওরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বসেছিল জানা নেই, পরী অভিকে বললো, “আমাদের হয়তো কেউ খুঁজতে পারে এবারে বাড়ি যেতে হয়।”

অভিঃ “হুম... কিন্তু আর একটি চুমু...”

পরীঃ “না একদম দুষ্টুমি নয়, তুমি আমাকে পাগল করে ছেড়ে দিয়েছিলে।”

হাতে হাত রেখে বাড়ির দিকে রওনা দিল দুজনে। পেছন দরজা দিয়ে চুপচুপ বাড়ি ঢুকে পরী আগে দেখে নিল কেউ আছে কিনা, কাউকে না দেখতে পেয়ে অভিকে ভেতরে আসতে বললো। তারপরে ওর দিকে চোখ টিপে পরী ওর বান্ধবীদের কাছে চলে গেল।
 
Chapter 13: অশ্রুভরা বিদায়।

সময় খুব তাড়াতাড়ি এগিয়ে চলেছে। বাবা অভির কাছে এসে খেতে ডেকে নিয়ে গেলেন। দিদা ওদের জন্য আলাদা করে খাবার ঘরে খাবারের ব্যাবস্থা করেছিলেন। ওদের খাবার সময়ে সবাই ওদের চারপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। ইন্দ্রানি মাসি এসে মাকে একবার অনুরোধ করলো আর এক রাত কাটিয়ে যেতে। মা জানালেন যে কাল মায়ের স্কুল আছে, বাবাকে অফিস যেতে হবে।

খাবার পরে দিদা মাকে ডেকে নিয়ে গেল ঘরের মধ্যে। অভি বুঝতে পারলো যে কান্নার পালা শুরু। বাবা ওকে ডেকে নিয়ে গেল বারান্দার দিকে।

বাবা জিজ্ঞেস করলেন, “বিয়ে কেমন কাটলো?” অভি মাথা নাড়লো শুধু।

বাবাঃ “তুই ওপরের রুমে শিফট হয়ে যাস কাল থেকে, পরী আমাদের পাশের রুমে থাকবে।” অভি আবার মাথা নাড়লো, “ঠিক আছে।”

ধিরে ধিরে রাত বাড়ছে, আত্মীয় স্বজন অনেকে চলে গেছেন। বাবা জানালেন যে উঠানে ওদের জন্য গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ঘড়ির দিকে তাকালেন বাবা, রাত প্রায় এগারটা বাজে। ওকে বললেন ভেতর থেকে ওদের মালপত্র নিয়ে এসে গাড়িতে রাখতে। মাথা নিচু করে পায়ের দিকে তাকালো অভি, পরীকে ছেড়ে যেতে হবে এবারে ভেবে বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠল। কিছু পরে ভেতর দিকে পা বাড়ালো।

খাবার ঘরে দিদা মায়ের হাত দুটি ধরে বসে আছে, দু’জনার চোখে জল। ইন্দ্রানি মাসি আর মেঘনা পাশে দাঁড়িয়ে, ওদের চোখেও জল। সুব্রত ওদের মালপত্র কাজের লোককে দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিল। মৈথিলী চুপ করে দিদার পাশে দাঁড়িয়ে দিদার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এর মাঝে পরীর কোথাও দেখা নেই। এমন সময়ে চন্দ্রানি এসে অভিকে জানালো যে পরী ওপরের রুমে নিজেকে বন্ধ করে দিয়েছে, দরজা খুলছে না। দিদা ওর কথা শুনে আবার মাকে থেকে যেতে বললো।

মা বললেন, “আজ না হয় কাল আমাকে যেতেতো হবেই। কাল গেলেও তুমি কাঁদবে তো আজ কেন নয়।”

মাকে চন্দ্রানি বললো যে, পরী দরজা খুলছে না। মা ইন্দ্রানি মাসিকে নিয়ে দৌড়ে গেল ওপরে। সাথে সাথে সুব্রত আর অভিও দৌড়ে গেল। মা দরজায় টোকা দিয়ে পরীকে দরজা খুলতে বললেন, কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়া শব্দ নেই।

মা আবার ডাক দিলেন, “পরী, সোনা মা আমার দরজা খোল।”

তাও দরজা খোলে না পরী। দু’জনেই ভয়ে অভি আর সুব্রতর দিকে তাকালো।

ওদিকে দিদা এসে গেছেন, দিদাও দরজায় ধাক্কা দিয়ে পরীকে দরজা খুলতে বলে, কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়া না পেয়ে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।

দিদা কেঁদে অথেন, “পরী, দোহাই মা আমার, দরজা খোল।”

সুব্রত আর অভি একে ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। দরজার পেছনে পরী না কিছু অঘটন ঘটায়। সুব্রত দৌড় দিল ছাদের দিকে, পেছন পেছন অভি। অভিকে জিজ্ঞেস করলো সুব্রত যে পাইপ বেয়ে নিচে নামতে পারবে কিনা। অভির মাথায় তখন রক্ত চড়ে গেছে, কিছু আর ভাবতে পারছে না। মাথা নেড়ে বললো ও সব কিছু করতে রাজি। পাইপ বেয়ে দু’জনে জানালার কার্নিশে নেমে গেল। জানালো দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে যা দেখলো তাতে অভির রক্ত জল হয়ে গেল। বিছানার ওপরে সংজ্ঞাহীন লুটিয়ে পরী।
অভি দৌড়ে গিয়ে পরীর মাথা কোলে তুলে নিল, পরী নড়ছে না। থমকে গেল অভি, বুকের কাছে কান নিয়ে এসে দেখলো যে বুকটা ধুকপুক করছে। অভি হাতের কাছে একটা গ্লাসে জল ছিল, সেটা পরীর মুখের ওপরে ছিটিয়ে দিল। সুব্রত তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল। মা দিদা সবাই ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়লেন। দু’জনের মধ্যে কারুর কান্না আর থামেনা।

কিছু পরে পরী চোখ খুলে চারপাশে তাকায়। ওকে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে। মা ওকে কোলে নিয়ে চোখের বাঁধ ভেঙে দিলেন।

মাঃ “পাগলি মেয়ে, এইরকম কেউ করে। কোনদিন আমার সামনে দরজা বন্ধ করবি না।”

মাকে জড়িয়ে ভেঙে পড়লো পরী, “প্লিস যেও না...”

মা ওর মুখ আঁজলা করে নিয়ে সান্তনা দিলেন, “তুই আমার সোনা মা না? বোকা মেয়ের মতন কেউ এই রকম করে কাঁদে নাকি? একটু হাস মা, আজ আমাকে ছেড়ে দে।”

কান্না কাটির পালা আরেক প্রস্থ শুরু হবে দেখে অভি আর সুব্রত ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। নিচে নেমে দেখে যে মৈথিলী আর অরুনিমা বসে আছে। কিছু পরে মায়ের সাথে পরী নিচে নেমে আসে। পরী তখন মায়ের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

অভি সুব্রত আর মৈথিলীকে জড়িয়ে ধরে বললো, “মামা চুর্নি কে দেখো। আর বেস্ট উইসেস ফর হানিমুন। পরে গল্প শুনব।”

মায়ের কান্না দেখে মনে হলো যেন কেউ ওনার বুকের একটুকরো কেটে রেখে দিয়েছে। বাবা মাকে ধরে গাড়িতে উঠে গেলেন। অভি ইন্দ্রানি মাসিকে প্রনাম করতে গেল, ইন্দ্রানি মাসি ওকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে বললো, “ভাল থাকিস।” অভি একবার পরীর দিকে তাকালো, ওর চোখ দুটি লাল হয়ে গেছে, মৈথিলী ওকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে। অভি বুক ভরা শূন্যতায় একবার সবার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে গেল।

গাড়ি ছেড়ে দিল। ঠাণ্ডার রাত কেটে গাড়ি এগিয়ে চললো। পেছনের সিটে মা চুপ করে বাবার হাত ধরে বসে। অভি চুপ করে সামনের সিটে বসে। কিছু পরে চোখ বন্ধ করে নিল অভি। বন্ধ চোখের সামনে পরীর অশ্রুভরা লাল দু’নয়ন ভেসে উঠল। ওই দু’চোখ যেন ওকে বলছে, “আমি আজ থেকে প্রত্যেক মুহূর্তে তোমার কথা মনে করবো।” কাঁদতে পারলো না অভি।

End 0f Part - 1
 
Part 2: হিম-আঁচলের ছায়ায়।

Chapter 1: অদৃশ্য চিঠি।

দিন চলে যায়, সবাই নিজের নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। অভির মন থেকে পরীর কথা মুছে যায় না, কলেজে, বাড়িতে সবসময়ে ওর শুধু পরীর কথা মনে পড়ে। মা জানালেন যে পরী বাসন্তি পুজোর পরে, মানে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে বাড়ি আসবে। এর মধ্যে অভি ঘর বদলে নিয়েছে, ছাদের ঘরে ওর বর্তমান বাসস্থান। নিচের ঘর ছেড়ে দিয়েছে পরীর জন্য। মা পরীর ঘরটাকে সাজাতে ব্যাস্ত, অনেকদিন পরে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে বুকে পাবে। অভির কোন বোন নেই তাই পরীকে দিয়ে মা সেই কন্যের সাধ মিটিয়ে নিতে চায়।

মা বাবা দু’জনেই অভির ওপরে বেশ কড়া। হয়তো বা মা একটি মেয়ে চেয়েছিলেন কিন্তু তার পরিবর্তে ভগবান ওদেরকে একটি ছেলের জন্ম দিয়েছে। খাবার টেবিলেও মায়ের মুখে পরীর কথা। মাঝে মাঝে মায়ের পরীর প্রতি অতিরিক্ত ভালবাসা দেখে অভির মনে জ্বালা ধরে যেতো কিন্তু সেই জ্বালা মিটে যেতো যখন ভাবতো যে কিছু দিন পরে পরী ওর কাছে থাকবে।

অনেক দিন দেখা হয়নি পরীর সাথে, গ্রামের বাড়িতে কোন টেলিফোন নেই যে পরীর সাথে কথা বলবে। মাঝে মাঝে অন্ধকার রাতে যখন পরীর কথা মনে পড়তো তখন ও পরীর দেওয়া সিল্কের রুমালটা বের করে নাকের সামনে ধরতো, চেষ্টা করতো পরীর গায়ের গন্ধ শোঁকার। মুখের ওপরে রুমাল বুলিয়ে নিয়ে অনুভব করতো পরীর হাতের মিষ্টি ছোঁয়া।

একদিন বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে মা ওকে জিজ্ঞেস করেন যে দিদার বাড়িতে বিয়ের সময়ে কিছু ছেড়ে এসেছে কিনা। মাথা নাড়ালো অভি, ওর মনে নেই কিছু ছেড়ে এসেছে কিনা। মা ওর হাতে একটা জামা ধরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন যে এটা কি ওর জামা নাকি। জামা দেখে চিনতে পারে অভি। মা জানালেন যে, পরী ওনার সাথে দেখা করতে স্কুলে এসেছিল আর এই জামাটা আর একটা খাম মায়ের হাতে দিয়েছিল। মা জানালেন যে খামটা খালি।

রাতের বেলা অভি জামাটা পরে নিল এই ভেবে যে পরীর হাতের ছোঁয়া আছে ওর জামার ওপরে। হাতে নিয়ে খামটা দেখলো অভি, পুরানো ভারতীয় ডাকের হলদে রঙের খাম, ভেতরটা খালি।

পরের সারাদিন মাথার মধ্যে খালি খামের ব্যাপার চিন্তা করে গেল, কি পাঠাতে পারে খালি খামে। রাতের বেলা আবার খাম খানি হাতে নিয়ে এদিক ওদিক করে দেখতে চেষ্টা করলো, যে খালি খাম ওকে কি বলতে চাইছে। কিন্তু কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না অভি। নাকের কাছে ধরলো খাম খানি, একটু যেন জুঁই ফুলের গন্ধ মাখা। হ্যাঁ, এটা পরীর গন্ধ কিন্তু তাঁর সাথে আর একটা গন্ধ নাকে এলো অভির, লেবুর গন্ধ।

মাথায় বিজলি খেলে গেল অভির, ওর হাতে পরীর লেখা এক অদৃশ্য চিঠি। অভি খাম খানি ঠোঁটে ছোঁয়ালো, পরী সত্যি অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে, এমনি এমনি কি আর ফিসিক্স নিয়ে পড়েছে। ওর তো স্পাই হওয়া উচিত, টিচার নয়। সযত্নে খামের চারপাশ খুলে ফেললো, তারপরে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে খাম খানি মোমবাতির আলোর সামনে ধরলো। চিঠির লেখা আস্তে আস্তে ফুটে উঠল,

“আমার বুকের ধুকপুক...
ছোট্ট সোনা রাজকুমার।
তোমার শাল গায়ে দিলে এখন আমি তোমাকে আমার চারপাশে খুঁজে পাই। শীতের রাত গুলো বড় নিষ্ঠুর আর খুব লম্বা মনে হয়। তোমার কথা চিন্তা করতে করতে রাতে ঘুম আসেনা চোখে। তোমার সেই প্রথম চুম্বনটি এখন আমার কপালে লেগে আছে। একদিন এলে আমার সাজানো বাগানে আর আমাকে উপড়ে দিয়ে তছনছ করে চলে গেলে।
আমি এমন একটা জীবন চাই যেখানে শুধু তুমি থাকবে আমার পাশে, আর কেউ না।
আমি ভবিষ্যৎ দেখতে চাইনা, শুধু তোমার পাশে থেকে একটু বাঁচতে চাই। জীবনের প্রতি মুহূর্ত তোমার পাশে, তোমার আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়ে কাটিয়ে দিতে চাই আমি। আমার অতীতকে ভুলে, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে শুধু বর্তমানে তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই।
আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকব, কাল বাদে পরশু, দুপুর এগারটায় আমার সাথে বারাসাত রেল স্টেশানে দেখা কর।
গুড বাই হানি।
ফর এভার ইওরস, তোমার বুকের পাঁজর, পরী।”

কাল বাদে পরশু, মানে কালকে। অভি অধির ব্যাকুলতায় সারা রাত ঘুমাতে পারলো না। অনেক দিন পরে পরীর সাথে দেখা হবে।

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ, কোলকাতায় ঠাণ্ডা বেশ ভাল ভাবে পড়েছে। প্রাতরাশের টেবিলে চুপচাপ খেয়ে নিল অভি। মা ওকে জিজ্ঞেস করলেন যে পরীকে কিছু বলতে হবে কিনা, কেননা মা আজ দিদার সাথে দেখা করতে যাবেন। মায়ের কথা শুনে মাথায় বাজ পড়লো অভির। আজ যে পরী ওর সাথে দেখা করতে বারাসাত আসবে। মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে কাউকে কিছু বলার নেই।

সময়ের বেশ কিছুক্ষণ আগেই অভি রেল স্টেশানে পৌঁছে গেছিল। অধির ব্যাকুলতায় দাঁড়িয়ে অভি, কখন ওর পরী আসে। থাকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত প্লাটফরমের ওপরে পায়চারি শুরু করে দিল। বুকের মাঝে হৃদপিন্ডটি যেন দুমদুম করে কিল মারছে পাঁজরের ওপরে। বারে বারে শুধু ঘড়ি দেখে, সময় যেন আর কাটেনা। মনে মনে একবার ভাবে, পরী আসবে তো?

বেশ কিছুক্ষণ পরে লক্ষ্য করলো যে, পরী ওর দিকে দৌড়ে আসছে। ওকে দেখতে পেয়ে যেন চাতকের প্রানে জল চলে এলো।

পরীর পরনে আকাশী নীল রঙের শাড়ি আর একটা লম্বা জ্যাকেট গায়ে। চুলের কিছু অংশ গালের ওপরে নাচছে। মাথা নাড়লো অভি, কি মেয়ে সবসময়ে শুধু শাড়ি পরে থাকে।

দৌড়ে আসার ফলে পরী হাঁপাচ্ছিল, তাঁর ফলে ওর উন্নত বক্ষদ্বয় বারে বারে ফুলে উঠছিল। ওকে দেখে শান্ত হতে বলে অভি, “কি হলো দৌড়াচ্ছিলে কেন?”

পরী, “সরি বাবা, একটু দেরি হয়ে গেল।”
পরী ওর হাত জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো, “ছোটো মা কেমন আছে?”

অভি মাথা নেড়ে জানালো যে ওর ছোটো মা ভালোই আছেন। আজকে ওর সাথে দেখা করার কথা।

পরীঃ “যাঃ ছোটমা আজকে আমার বাড়ি যাবে? আমার সাথে তো দেখা হবে না।”

অভিঃ “কি করে হবে? আচ্ছা কি বলে বাড়ি থেকে এসেছো?”

পরীঃ “আমি বলেছি যে আমি এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।” অভির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো পরী, “আমার সাধের বান্ধবী... হে হে...”

অভি ওকে জানালো যে মা ওর জন্য ঘর ঠিক করে রেখেছোে। মা খুব খুশি যে পরী ওনার সাথে থাকতে আসছে।

পরী অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “যাক বাবা তুমি তাহলে শেষ পর্যন্ত আমার চিঠিটা পেয়েছ। আমি তো তোমার সাথে দেখা করার জন্য মরে যাচ্ছিলাম। তুমি সত্যি অনেক ব্রিলিয়ান্ট, সোনা।”

অভিঃ “আমি না তুমি? চিঠিটা কে লিখেছে? আমি তো স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি যে তুমি আমাকে এই রকম একটা চিঠি লিখবে। বাপরে তোমার তো টিচার নয় স্পাই হওয়া দরকার।”

পরীঃ “তাহলে বল তোমার হার্ট কত ইন্টেলিজেন্ট।”

পরীর হাসি মুখ দেখে অভির মনে হলো যেন এখুনি ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়, কিন্তু দিনের আলোয় আর রেল স্টেশানে এই রকম ব্যাবহার বাঞ্ছনীয় নয়।

অভিঃ “কোথাও যেতে চাও?”

পরীঃ “হ্যাঁ, চলো না একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি। তোমার সাথে অনেক কথা বলার আছে।”

অভিঃ “হুম, ইন্টারেস্টিং, কি আবার ভুত মাথায় চাপালে?”

রেস্টুরেন্টে ঢুকে একটা কোনার টেবিলে বসে পড়লো ওরা। অভি জানালো ওর কাছে বেশি পয়সা নেই। পরী বললো, ও থাকতে অভি যেন পয়সার চিন্তা না করে, যখন সময় আসবে তখন চিন্তা কোরো, তাহলেই হবে।

পরীঃ “এই তোমার মনে আছে, বউভাতের দিনে আমার দুই বান্ধবীর সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলাম?”

অভি মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ মনে আছে।”

পরীঃ “ওরা জানুয়ারির লাস্ট উইকে মানালি যাচ্ছে পুরো এক সপ্তাহের জন্য, আমিও যাবো ওদের সাথে।”

অভিঃ “তো কি বলতে চাও?”

পরীঃ “তোমাকেও আমার সাথে যেতে হবে।”

অভিঃ “ঠিক আছে, আমি বাবা মাকে কিছু করে ম্যানেজ করে নেব। আমার যেতে বিশেষ অসুবিধা হবে না, কিন্তু তোমার বান্ধবীরা জানে যে আমি তোমার দিদির ছেলে, আর একবার তোমার ছোটো মা বা দিদা জানতে পারলে আমাদের অবস্থা কি হবে সেটার ধারনা আছে কি?”

“না না সেটা নয়। আমি শুধু তোমার সাথে যেতে চাই, যেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকব।” কাতর চাহনিতে তাকালো অভির দিকে, “প্লিস সোনা না কোরো না।”

মাথা চুলকে অভি বললো, “ঠিক আছে, হাওড়া স্টেশান থেকে আমি তোমাকে তুলে নেব তারপরে দেখা যাবে কোথায় যেতে পারি।”

পরীঃ “না গো, সে গুড়ে বালি। সুব্রতদা আমাদের সবার টিকিট কেটেছে। সেই জন্য আমরা সবাই হাওড়া কালকা মেলে চেপে একদম কাল্কালকা যাচ্ছি।”

অভিঃ “ওকে দেখি হিমাচলে কোন কোন জায়গায় যাওয়া যায়।”

পরীঃ “আমি জায়গার কথা জানিনা, সেটা তোমার ব্যাপার। আমি শুধু তোমার পাশে থাকতে চাই, ব্যাস।”

কিছু পরে খাবার চলে আসে, পরী ওর মুখের মধ্যে চামচ দিয়ে খাবার ঢুকিয়ে দেয়।

অভিঃ “আমি কি এখনো বাচ্চা ছেলে নাকি?”

পরীঃ “চুপ একদম, এখন তুমি আমার কাছে বাচ্চা। সেই ছোট্ট রাজকুমার আমার।”

অভি দুহাত জোড় করে বলে, “হয়েছে মা জননি।”

পরীঃ “এবারে বল কি করে ট্রিপ প্লান করবে?”

অভিঃ “দাড়াও কিছুক্ষণ ভাবতেতো দেবে নাকি? এই বললে এই যেন হয়ে গেল।”

পরীঃ “ঠিক আছে ঠিক আছে, ভাবো ভাবো...”

অভি, “আমি তোমার জন্য কালকা স্টেশানে দাঁড়িয়ে থাকব, তারপরে কি হবে সেটা দেখা যাবে। তুমি কি করে তোমার বান্ধবীদের টুপি পরাবে সেটা তুমি ভেবে নিও। বাকি প্লান, এখন আমার মাথায় কোন প্লান নেই।”

পরীঃ “উফফফফ... ভেবেই আমার সারা গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আমি আর তুমি, একসাথে এক অজানা অচেনা জায়গায়।”

অভি ওর চিবুকে আঙুল দিয়ে নাড়িয়ে বলে, “সোনা, তোমার বান্ধবীরা জানে কি যে তুমি প্রেমে পড়েছো?”

পরীঃ “হ্যাঁ ওরা একটু একটু ধরে ফেলেছে, কিন্তু কেউ জানে না যে ছেলেটা কে আর তুমি ওদের সামনে এসো না যেন। তোমাকে ওরা চেনে আর ছোটো মাকেও চেনে। আমাদের একসাথে দেখে ফেললে কিন্তু... আমি যদি বলি যে আমি কালকা থেকে অন্য দিকে যাব, তাহলে ওরা জানতে চাইবে আমি কোথায় যাচ্ছি আর কার সাথে যাচ্ছি। সেই সব ভেবে চিন্তে কাজ কোরো কিন্তু।”

অভি ওর কাঁধে আলতো করে ধাক্কা মেরে জিজ্ঞেস করলো, “তোমার মাথায় কি কিছু আসছে?”

পরীঃ “আমি তোমাকে রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছি, এবারে তুমি কি করে আমাকে নিয়ে যাবে সে চিন্তা তোমার।”

অভি পরীকে বললো যে সেই সময়ে হিমাচল প্রদেশে অনেক ঠাণ্ডা পড়বে, ও যেন ভাল শিতের জামাকাপড় নিয়ে বেড়াতে বের হয়। সবসময়ে যেন শাড়ি পরে না, শীতের দেশে শাড়ি চলেনা। পরী জানালো যে ওর কাছে ভাল জ্যাকেট আছে আর ও তো আর জিন্স পরে না তাই সালোয়ার নিয়ে যাবে।

নুডুলস খেতে খেতে অভি জিজ্ঞেস করলো যে সুব্রতর হানিমুন কেমন কাটলো। ওদের হানিমুন ভালোই কেটেছে, পরী আরও জানালো যে, ইন্দ্রানি মাসি ওকে বম্বে যেতে বলেছে। অভি জিজ্ঞেস করলো যে পরী বম্বে যেতে চায় কিনা, তার উত্তরে পরী বললো সেটা পরের কথা, ভবিষ্যতে দেখা যাবে পরী বম্বে যাবে কিনা। ওর মাথায় এখন শুধু ছোটমা আর ও এম.এস.সি করতে চায় তারপরে ওর ছোটমার মতন স্কুলে পড়াতে চায়। এইসব গল্প করতে করতে অনেক সময় চলে গেল।

পরী ঘড়ি দেখে বললো, “এবারে আমাকে যেতে হবে যে।”

অভিঃ “একটা গুডবাই কিস দেবে না?”

পরীঃ “না সোনা, আমি তোমাদের মতন শহুরে লোক নই যে দিনের আলোতে রাস্তার মাঝে সবার সামনে তোমাকে কিস করবো।” একটা দুষ্টু মিষ্টি হেসে বললো, “তোমাকে এই গ্রামের মেয়েকে নিয়ে থাকতে হবে।”

রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে ওরা বাস স্টান্ডে পৌঁছে গেল। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে ওরা।

অভি ওকে জিজ্ঞেস করলো, “আমাকে বিশ্বাস করো?”

ওর প্রশ্ন শুনে চমকে গেল পরী, “হটাত এই রকম প্রশ্ন?”

অভিঃ “আমি বেড়াতে যাবার জন্য কিছু না কিছু ব্যাবস্থা করবো, যাতে এই ট্রিপটা সারা জীবন মনে থাকে।”

পরী ওর হাত জড়িয়ে বলে, “আমি জানি অভি। আমি তোমার জন্য কালকা স্টেশানে অপেক্ষা করে থাকব।”

ওর বাস এসে গেল। বাসে উঠে পড়লো পরী। জানালার পাশে সিট পেয়ে গেল। বাস ছেড়ে দেবার আগে, পরী তর্জনীটা ঠোঁটের কাছে এনে, একটা ছোটো চুমু খেয়ে অভির দিকে নাড়িয়ে দিল। বাস ছেড়ে দিল। বাসটাকে যতক্ষণ দেখা গেল ততক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল অভি তারপরে উলটো দিকের বাসে চেপে বাড়ি ফিরে এলো।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top