What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (1 Viewer)

Chapter 2: অপরিজ্ঞাত যাত্রা। (#1)

কিছুদিন পরে অভি দেখলো যে ওর চোখে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চশমা নিল অভি। ওর চোখে চশমা দেখে মায়ের চিন্তা একটু বেড়ে গেল, মৃদু বকুনিও শুনতে হলো ওকে, নিজের যত্ন নেয় না খালি রাত জেগে টি.ভি দেখা। প্রথম প্রথম চশমা নিয়ে একটু অসুবিধা হতো, পরে ঠিক হয়ে গেল|

অনেক কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। বাবা মাকে কি বলে বের হবে তাঁর চিন্তা, কোথায় যাবে, কি করে যাবে তার চিন্তা, পরীকে কি করে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বার করবে তাঁর চিন্তা। ওর এক সিনিয়ার বন্ধু, সুপ্রতিমদা দিল্লীতে থাকে। নয়ডার কোন এক বড় আই.টি কম্পানিতে চাকরি করে। একদিন ওকে ফোন করলো অভি, জানালো যে ও হিমাচল ঘুরতে যেতে চায়, একটা গাড়ির ব্যাবস্থা করে দিতে হবে। সুপ্রতিমদা জানালো যে অভি ওর টাটা সাফারি নিয়ে ঘুরতে যেতে পারে, আরও জিজ্ঞেস করলো যে কাকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে, একা একা না কেউ স্পেশাল থাকবে সাথে। সুপ্রতিমদা জানতে চাইলো যে বাবা মা জানেন কিনা ওর প্রেমের ব্যাপারে। অভি বললো যে, দেখা হলে সব জানাবে, কিন্তু গাড়ি ওর কালকাতে চাই। সুপ্রতিমদা বললো, যে অনেক দিন পরে ওদের দেখা হবে সুতরাং দিল্লীতে যদি ও দেখা না করে তাহলে ও গাড়ি দেবে না।

অভি হেসে ফেললো, “ঠিক আছে বাবা আমি তোর সাথে দিল্লীতে দেখা করবো, কিন্তু গাড়ি ঠিক করে রাখিস।”

সুপ্রতিমদাঃ “তুই ব্যাটা ডুবে ডুবে কি জল খাচ্ছিস সেটা না জেনে আমি তোকে গাড়ি দেব না। গাড়ি পেতে হলে দিল্লীতে নাম তারপরে গাড়ি।”

অভিঃ “ঠিক আছে তাই হবে।”

বেশি দিন বাকি নেই, পরিকল্পনাটাকে বেশ ভাল করে ভাবতে হবে আবার। কালকা না এবারে দিল্লী যেতে হবে। একদিন রাতে খাবার টেবিলে অভি জানালো যে ও ঘুরতে যেতে চায়। একা একা আগেও ঘুরতে বেরিয়েছে ও, তাই বাবা মার কাছ থেকে অনুমতি পেতে বিশেষ অসুবিধা হলো না। বাবা জিজ্ঞেস করলেন যে কোথায় যেতে চায়। অভি জানালো যে ও হিমাচল প্রদেশে ঘুরতে যেতে চায়। বাবা প্রস্তাব দিলেন যে মানালিতে এখন বরফ পড়বে, ও যদি বরফ দেখতে চায় তাহলে মানালি, কুলু সিমলা ঘুরতে যেতে পারে। অভি বললো যে ও এমন এক জায়গায় যেতে চায় যেখানে মানুষের যাতায়াত কম। বাবা খুব ঘুরতে ভালবাসেন। বাবা আই.এ.এ.আই এর (দমদম এয়ারপোর্ট অথরিটি) উচ্চ পদস্থ অফিসার। একদিন বাবা হিমাচলের ম্যাপ নিয়ে এলেন। ম্যাপ দেখে জানালেন যে অভি সাঙলা ভ্যালিতে চিতকুল নামে এক জায়গায় ঘুরতে যেতে পারে। ওখানে মানুষের আগমন খুব কম আর শীত কালে জায়গাটা একদম খালি থাকবে। অভি এই জায়গার নাম আগে কোনদিন শোনেনি, তাও যেতে রাজি হলো এই ভেবে যে জায়গাটা একদম নিরিবিলি।

ব্যাগ গুছাতে শুরু করে দিল অভি, শীতের জামাকাপড় আর ঘুরতে যাবার সরঞ্জাম। মা প্রথমে একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন, কিন্তু অভি ওনাকে সান্তনা দিয়ে বলে, ও আগেও একা একা ঘুরতে গেছে তাই যেন চিন্তা না করে। এবারে চিন্তা হচ্ছে পরীকে কি করে কালকা স্টেশান থেকে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বের করা যায়। যাবার আগে আর দাড়ি কামালো না, গাল ভর্তি গোঁফ দাড়ি, চোখে চশমা, একদিন আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পারলো না অভি। ছদ্মবেশটা বেশ ভাল লাগল অভির। মা ওকে দেখে রেগে গিয়ে দাড়ি কাটার জন্য বললেন।

চিতকুলে একা অভি আর পরী থাকবে, হয়তো আর কোন লোকজনের দেখা পাবে না। রাত একসাথে এক ঘরের মধ্যে কাটাবে, অভির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। কামনার আগুনে পুড়ে অভি আর পরী শুধু মাত্র যে চুম্বনে বা আলিঙ্গনে থেমে থাকবে না সেটা অনুধাবন করতে অসুবিধে হলো না। অভি সেই মিলন রাতের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিল। যত দিন এগোয় অভির বুকের ধুকপুকানি বেড়ে চলে, পরীর সাথে একা একা ঘুরতে যাওয়ার কথা ভেবে, প্রথম মিলনের রাতের কথা ভেবে, কি করে প্রেমে ভালবাসায় পরীকে ভরিয়ে তুলবে সেই কথা ভেবে রাত আর কাটতে চায় না।

যাবার আগেও মা বললেন ওকে দাড়ি কাটতে, মাকে বললো যে দিল্লী নেমে ও সুপ্রতিমদার বাড়িতে যাবে; সেখানে স্নান খাওয়া দাওয়া সেরে তবে গাড়ি নিয়ে হিমাচলের যাত্রা করবে। যাবার আগে বাবা ওর হাতে একটা খাম দিয়ে বললেন যে ওতে হাজার আটেক টাকা আছে।

অবশেষে এলো ঘুরতে যাবার দিন। দুপুরের ফ্লাইটে চেপে অভি দিল্লীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। রবিবার ভোররাতেই পরী কালকা স্টেশানে পৌঁছে যাবে। অভির বিশ্বাস যে পরী ওর জন্য অপেক্ষা করবে, কিন্তু পরী যে জানেনা যে অভি প্লেনে করে দিল্লী আসছে।
দিল্লী নেমে সুপ্রতিমদার সাথে দেখা হলো। সুপ্রতিমদার বাড়ি চিত্তরঞ্জন পার্কে, ওর বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম করে নিল। গল্পের ছলে সুপ্রতিমদা ওর ভালবাসার কথা জানতে চাইলো। পরীর কথা বললো সুপ্রতিমদাকে কিন্তু অতি সতর্কতা করে অভি পরীর আর মায়ের সম্পর্ক এড়িয়ে গেল।

সুপ্রতিমদা অবিবাহিত, অভি ওকে জিজ্ঞেস করলো, “তুই আর কত দিন একা একা থাকবি? এবারে বিয়েটা করে ফেল।”

সুপ্রতিমদাঃ “ধুর বাবা বিয়ে করে কি হবে, টাইম পাসের জন্য তো পাওয়া যায় রে।” দুজনেই হেসে ফেললো।

সুপ্রতিমদাঃ “তাহলে চিতকুল যাচ্ছিস? কোথায় সেটা?”

অভিঃ “হিমাচলের এক কোনায়, সাঙলা ভ্যালি নামে এক ভ্যালিতে।”

সুপ্রতিমদাঃ “মানালি বা ডালহাউসি যেতে পারতিস।”

অভিঃ “না পরীর বান্ধবীরা মানালি যাচ্ছে, পরীর ইচ্ছে আমরা এমন এক জায়গায় যাই যেখানে কেউ থাকবে না। অনেক ভেবে চিন্তে এই জায়গাটা বেছেছি।”

সুপ্রতিমদা বললো যে ওর ড্রাইভার বলবিন্দার অভির সাথে যাবে। বেশ মিশুকে লোক, ভাল ড্রাইভার আর ঘুরতেও ভালবাসে। অভি বা পরীর কোন চিন্তা করার দরকার নেই। সুপ্রতিমদা আরোও বললো যে দিল্লী থেকে কালকা প্রায় ঘন্টা আটেকের রাস্তা, বিকেল বিকেল বেরিয়ে পড়তে পারলে মাঝ রাতের মধ্যে কালকা পৌঁছে যাবে। রাতের বেলা ড্রাইভ করাটা যদিও একটু মুশকিল হতে পারে, একে শীতকাল রাস্তায় রাতে কুয়াশা হতে পারে আর ট্রাক বা বাস তো আছেই। অভিকে জিজ্ঞেস করলো যে পর্যাপ্ত গরমের পোশাক এনেছে কিনা।

বিকেল বেলায় অজানার পানে যাত্রা হলো শুরু। দিল্লী থেকে গাড়ি ছাড়লো বিকেল ছটার মধ্যে, ঘন্টা দুয়েক পরেই গাড়ি দৌড়াতে শুরু করলো হাইওয়ে ধরে। এক মিনিট পারো হচ্ছে আর অভির ধুকপুকানি বেড়ে চলেছে, সকাল বেলায় দেখা হবে পরীর সাথে। অভি বলবিন্দর কে বললো যে ও গাড়ি চালাবে। বলবিন্দর ওকে সাবধান করে বললো যে রাতে কুয়াশা আর ট্রাক দেখে যেন গাড়ি চালায়। অভি বললো যে পাহাড়ে ও গাড়ি চালাতে পারবেনা কিন্তু সমতলে ওর হাত নিখুঁত।

সনেপত পেরোনোর পরে বলবিন্দার ওকে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসতে দিল। অভি স্টিয়ারিংয়ে বসেই গাড়ি ছুটিয়ে দিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই কাটা আশি ছাড়িয়ে একশো। বলবিন্দার বললো যে ওর শুধু মাত্র দু’ বোতল চাই তাহলেই ওর পারিশ্রমিক হয়ে যাবে। আম্বালাতে থেমে ওরা এলকোহল কিনে নেবে এই ঠিক হলো।

বলবিন্দার ওকে জিজ্ঞেস করলো, “স্যারজি, ভাভি জি কি করেন?”

“ভাভিজি” কথাটা শুনে মনে মনে হেসে ওঠে অভি, “ভাভি জি এই সবে কলেজ থেকে পাশ করেছে।”

বলবিন্দারঃ “ট্রেন কালকা স্টেশানে কখন পৌঁছাবে?”

অভিঃ “হাওড়া কালকা মেলে আসছে ভাভিজি। সম্ভবত সকাল চারটে কি সাড়ে চারটেতে পৌঁছবে।”

বলবিন্দারঃ “কালকা মেল, তাহলে লেট করবে স্যারজি, চিন্তা নেই আপনি আস্তে চালান।”

অভির মন মানে না, যদি ট্রেন আগে এসে পৌঁছে গিয়ে থাকে, যদি পরী ট্রেন থেকে নেমে ওকে দেখতে না পায়, তাহলে কি করবে। অভি বলবিন্দারকে বলে, “না আমি কোন ঝুঁকি নিতে চাই না। আমি আগেভাগে স্টেশানে পৌঁছাতে চাই, তাতে যদি আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তা আমি দাঁড়িয়ে থাকব।”

ঠাণ্ডার অন্ধকার রাত কেটে গাড়ি সোঁ সোঁ করে এগিয়ে চলে অচেনা গন্তব্য স্থলের পানে। জানে না অভি কোথায় যাচ্ছে, অভি কোনদিন হিমাচলে আগে আসেনি আর পরীও কোনদিন পাহাড় দেখেনি। সোঁ সোঁ করে ট্রাক বাসকে টপকে গাড়ি কুয়াশা আর অন্ধকার কেটে ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে। একটানা গাড়ি চালিয়ে অভির মাঝে একটু ঝিম ধরে গেল, রাত দশটা নাগাদ, মাঝখানে এক জায়গায় থেমে বলবিন্দার আর অভি একটু চা খেয়ে নিল।

গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো। কুয়াশা দেখে বলবিন্দার ওকে আস্তে চালাতে বললো। গাড়ি ধিরে ধিরে চালাচ্ছে অভি। বলবিন্দার ওকে বললো যে আম্বালা পৌঁছে যেন ফ্লাই ওভারে না চড়ে। ফ্লাই ওভারের নিচ দিয়ে শহরে ঢুকে ওরা দু বোতল এলকোহল কিনে নিল।

বলবিন্দারঃ “স্যারজি, আমরা অনেক তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাব তো। আপনি পিঞ্জোর পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যান তারপরে আমি চালাব খনে।”

অভি জানালো যে আগে কোনদিন এদিকে আসেনি তাই ও রাস্তা ঘাট চেনেনা। বলবিন্দার বললো যে সিমলা পর্যন্ত রাস্তা ওর চেনা, তারপরে না হয় লোকজনকে জিজ্ঞেস করে রাস্তা জেনে নেওয়া যাবে। আম্বালা ছাড়িয়ে গাড়ি এন.এইচ.1 ছেড়ে এন.এইচ.22 ধরলো। পিঞ্জোর ছাড়াতেই বলবিন্দার গাড়ি চালাতে শুরু করলো। পাসের সিটে বসে অভি চোখ বন্ধ করে মাথা পেছন দিকে হেলিয়ে দিয়ে একটু বিশ্রাম নিল।
 
Chapter 2: অপরিজ্ঞাত যাত্রা। (#2)

বন্ধ চোখের সামনে শুধু মাত্র প্রেমিকার কাজল কালো আঁখি যুগল। বহুদিন পরে পরীকে বুকের কাছে পাবে, অধির হয়ে ওঠে অভি। ওর ঠোঁটে এখন লেগে আছে পরীর ঠোঁটের মিষ্টি ছোঁয়া, নাকে লেগে আছে পরীর গায়ের সুমিষ্ট সুবাস। যখনি হাসতো পরী, ওর দু’গালে টোল পড়তো আর সেই টোল খাওয়া গাল দেখে পাগল হয়ে যেতো অভি, বারে বারে মনে হতো যেন ওই গালে চুমু খায়। মাঝে মাঝে যখন ওর চুলের গোছা গালের ওপরে খেলে বেড়াতো তখন আঙুল দিয়ে পরী ওই দুষ্টু চুলের গোছাটা কানের পাশে উঠিয়ে দিতো। কত মিষ্টি দেখতে লাগতো পরীকে। একবার নিজের কথা ভাবলো অভি, গাল ভর্তি দাড়ি গোঁফ, চোখে চশমা, মাথায় কালো টুপি, চিনতে পারবেতো পরী? হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই চিনে নেবে। এত শত ভাবতে ভাবতে এক সময়ে ঘুমিয়ে পড়লো অভি।

বলবিন্দার ওকে ধাক্কা মেরে জাগিয়ে তোলে, “স্যারজি স্যারজি, ট্রেন এসে গেছে।”

চোখ মুখ ডলে উঠে পড়লো অভি, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে যে, সকাল আটটা বাজে। মৃদু বকুনি দিল বলবিন্দারকে, “কি যে করো বলবিন্দার, আমাকে আগে জাগিয়ে দেবে তো।”

বলবিন্দারঃ “স্যারজি আমরা তো রাত তিনটে নাগাদ কালকা পৌঁছে গেছিলাম। আপনি ঘুমাচ্ছেন দেখে আর আপনাকে উঠালাম না। স্টেশানে গিয়ে খোঁজ নিলাম যে ট্রেন লেট।”

অভি চোখে মুখে জল দিয়ে উঠে পড়লো। মাথায় কালো টুপিটা পরে নিয়ে প্লাটফরমের দিকে পা বাড়ালো। প্লাটফরমে ঢুকে লক্ষ্য করলো যে পরী আর দু’জন মহিলার সাথে দাঁড়িয়ে। উৎসুক নয়নে অভিকে খুঁজছে, কোথায় অভি, বলেছিল যে কালকা স্টেশানে ওর জন্য অপেক্ষা করবে। একটা লম্বা সাদা জ্যাকেট গায়ে দিয়ে পরী, একটু মোটা লাগছে দেখেতো। চোখমুখ দেখে মনে হলো যেন সারা রাত ঘুমোয় নি, চোখ দুটি ফোলা ফোলা। অভি আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল পরীর দিকে। বুকের মাঝে ধুকপুকানি যেন শত গুন বেড়ে গেছে। ধরা পড়ে গেলে একদম কেলেঙ্কারি অবস্থা হয়ে যাবে। একটু পরে অভির দিকে তাকালো পরী, ওর চোখের দিকে তাকাতেই অভি ওর রুমালটা বের করে ঠোঁটের সামনে ধরলো। রুমাল দেখে পরীর মুখে যেন আর হাসি ধরে না। ধিরে ধিরে এগিয়ে এলো অভির দিকে আর জড়িয়ে ধরলো অভির হাত। ওর বান্ধবীরা আর তাদের স্বামিরা ওদের দিকে তাকালো।

অভি দাঁড়িয়ে থাকা দুই ভদ্রলোকের দিকে হাত বাড়িয়ে নিজের পরিচয় দিল, “আমি অর্জুন, বম্বে থাকেন ইন্দ্রানি বৌদি তাঁর দেওর। আমরা হয়তো আগে মিট করিনি তাই না।” খুব গম্ভির আওয়াজে পরীকে জিজ্ঞেস করলো, “তোমার জার্নি কেমন গেল?”

দুই বান্ধবী পরীর দিকে তাকিয়ে হতবাক, কে এই মানুষ, কেনই বা এর কথা এতদিন লুকিয়ে ছিল ওদের কাছ থেকে? পরী অভির দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসে, ও কি জানতো যে কোন অর্জুন আসবে ওকে নিতে। পরী হাসি থামাতে না পেরে একটা জোরে চিমটি কেটে দিল অভির হাতের ওপরে।

কথা বলে জানা গেল বান্ধবীদের নাম আর পরিচয়। একজনের নাম কল্যানি তার স্বামী দিপঙ্কর, আরেক জনের নাম রানী তাঁর স্বামির নাম রামানুজ। দিপঙ্কর আর রামানুজ গ্রামে পারিবারিক ব্যাবসা করেন। অভি ওদেরকে আস্বস্ত করে বললো যে পরী ওর সাথে ভাল থাকবে।

কল্যানিঃ “শুচিস্মিতা কাল সারা রাত ঘুমোয়নি। ওর মনের ভেতরে যেন খই ফুটছিল কখন তোমার সাথে দেখা হবে। যাই হোক যেখানে তোমরা যাচ্ছো সেই জায়গাটার নাম কি? খুব রোম্যান্টিক তোমরা একা একা এক অজানা অচেনা জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছো। এক কাজ করো আমাদের সাথে ঘুরতে পারো তো?”

রানীঃ “হ্যাঁ হ্যাঁ, আমাদের সাথে চল।”

পরী দেখলো এ যে বড় বিপদ, “না না, অর্জুন নিশ্চয় কিছু না কিছু আগে থেকে ভেবে রেখেছোে।” অভির বাজুতে চিমটি কেটে বললো, “আমাদেরতো আগে থেকেই হোটেল বুক করা আছে, তাই না অর্জুন? আর দেরি কেন চলো না।”

পরীর ব্যাগ হাতে নিয়ে অভি স্টেশান থেকে বেরিয়ে পড়লো, পেছন পেছন বাকিরাও ওদের সাথে এলো। পরী, দুচোখে হাজার প্রশ্ন নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে, প্রাণপণে বুকের মধ্যে জমে থাকা হাসি টিকে দাঁতে দাঁত পিষে চেপে ধরে আছে। কথা বার্তার মাঝে জানা গেল যে কল্যাণীদের আগে থেকেই হোটেল এবং গাড়ি ঠিক করা। দিপঙ্কর অভিকে জায়গার কথা জিজ্ঞেস করতে অভি জানালো যে ওরা চিতকুলে নামে একটা জায়গায় বেড়াতে যাবে। সিমলার আগেই কান্দাঘাট নামে এক জায়গা থেকে ওরা অন্য রাস্তা নেবে না হলে ওদের সাথে সিমলা যেতে পারতো। অভি ওদের জিজ্ঞেস করলো যে ওরা কবে ফিরবে, সেই মতন আবার পরীকে স্টেশানে পৌঁছে দিতে হবে। দিপঙ্কর জানালো যে ওরা পরের রবিবার ট্রেন ধরবে, কল্যানি বার বার করে পরীকে বলে দিল যে যেখানেই যাক না কেন রবিবারের মধ্যে যেন কালকা পৌঁছে যায়। অভি ওদের আস্বস্ত করে উত্তর দিল যে ওদের বান্ধবী ঠিক হাতেই থাকবে ওর জন্যে যেন কেউ কোন চিন্তা না করে।

বলবিন্দার পরীর ব্যাগ নিয়ে গাড়িতে রাখে। গাড়ি দেখে ওর সবাই একটু অবাক হয়ে যায়। অভি জানায় যে ও প্লেনে করে আগের দিন দুপুরে দিল্লী পৌঁছে রাতের বেলা গাড়ি নিয়ে কালকা পৌঁছেছে।

রানী পরীকে একটু ধাক্কা মেরে বলে, “তুই তো মাইরি ডুবে ডুবে জল খাস। সারাটা রাস্তা আমাদের কিছুই জানালি না যে তোর অর্জুনের কাছে গাড়ি আছে।” পরী অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে, ওই বা কি জানতো কি নাম হবে, কোথায় যাবে, কি করে যাবে। কিছুই তো জানতো না, তাই তো অধির ব্যাকুলতায় সারাটা রাত ঘুমায়নি, জেগে শুধু ভেবেছে অভির কথা।

বাকিদের বিদায় জানিয়ে ওরা গাড়িতে চেপে পড়লো। বলবিন্দার পটু হাতে গাড়ি চালাচ্ছে। সিওয়ালিক পাহাড়ের সরু রাস্তা ধরে এঁকে বেঁকে গাড়ি চলেছে। পেছনে ওরা দুজনে বসে। গাড়িতে চেপেই পরী হাসিতে ফেটে পড়লো, যেন এতক্ষণ ওর বুকে ওর হাসি আর খুশি একসাথে জমা হয়ে একটা পাথর হয়েছিল।

পরীঃ “বাপরে বাপ, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে তুমি এইরকম করতে পারো। তোমার চশমা কবে হলো? এটা কি সত্যি না মিথ্যে চশমা? এত দাড়ি গোঁফ কেন? এগুল কি আসল না নকল?”

অভিঃ “তুমি থামলে আমি কিছু বলতে পারি।”

পরীঃ “ঠিক আছে বাবা, আমি চুপ, তুমি বল।”

অভি ওকে পুরো ট্রিপের পরিকল্পনা বললো, কি করে বাবা মাকে গল্প বলে বেড়ানোর ব্যাপারে রাজি করালো, কি করে সুপ্রতিমদাকে ফোন করে গাড়ির ব্যাবস্থা করলো, সব কিছু। সব শুনে পরী ওকে জড়িয়ে ধরে দাড়ি ওয়ালা গালে একটা চুমু খেল।

কিছু পরে গাড়ি কান্দাঘাট ছাড়িয়ে একটা ছোটো রাস্তা ধরে পাহাড় চড়তে শুরু করলো। চারপাশে উঁচু উঁচু পাইন, শাল, দেবদারুর বন। রাস্তা কুয়াশায় ঢাকা, বলবিন্দার খুব আস্তে আস্তে গাড়ি চালাচ্ছে। আকাবাঁকা পথ ধরে গাড়ি এগোতে থাকে, বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে, গাড়িতে হিটার চালানো।

পরী অভির বাঁ দিকে বসে ওর হাত খানি শক্ত করে বুকের কাছে ধরে রেখেছোে। একটা লম্বা সাদা জ্যাকেট গায়ে। বড় বড় চোখে জানালার বাইরে দেখছে। অভি ওর গালে আঙুল ছুঁইয়ে একটু আদর করলো।

পরীঃ “উম্মম্ম... আমি কোনদিন পাহাড় দেখিনি। আমার মনে হচ্ছে আমি যেন স্বপ্ন দেখছি। আমি এই ঘুম থেকে উঠতে চাই না, পাছে আমার স্বপ্ন ভেঙে যায়।” পরী অভির কাঁধে গাল ঘষে দেয়।

অভিঃ “এই দেখ আমি তোমার পাশেই আছি। এটা স্বপ্ন নয়, পরী, আমি সত্যি তোমার পাশে।” অভি ওকে আরও নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে, গালে গাল ঘষে দেয় অভি।

পরীঃ “উম্মম্ম... দুষ্টু ছেলে, ছাড়ো ছাড়ো, ওইরকম ভাবে গাল ঘসো না, তোমার দাড়িতে লাগছে।”

“ঠিক আছে বাবা, আমি দাড়ি কামিয়ে ফেলব খনে।” পরীর হাত হাতে নিয়ে ঠোঁটের কাছে এনে আঙুলে চুমু খায়।

পরীঃ “উফফফ আমার যে কি ভালো লাগছে না... কি বলবো” পরী অভির হাত বুকের ওপরে চেপে ধরে বলে, “দেখো দেখ বুকের ভেতরটা কেমন জোরে জোরে ধুকপুক করছে।”

অভি দুষ্টুমি করে ওর বুকের ওপরে হাত বুলিয়ে দেয়। পরী মৃদু রেগে গিয়ে হাতের ওপরে একটা আলতো থাপ্পড় মেরে বলে, “এই দুষ্টু ছেলে ছাড়ো।” কিছু পরে বলে, “একটু ফ্রেস হতে পারলে ভাল হতো।”

অভিঃ “ঠিক আছে, একটু পরে আমরা চায়েল পৌঁছে যাব সেখানে একটা রুম নিয়ে নেব। স্নান সেরে আবার বেরিয়ে পড়ব।”

কিছু পরেই গাড়ি চায়েল পৌঁছে গেল। বলবিন্দার গাড়ি থামিয়ে পরীকে বললো, “ভাভিজি চায়েল এসে গেছে।”

পরী বিশেষ হিন্দি বোঝেনা, তবে বলবিন্দারের মুখে ভাভিজি কথাটা বুঝে গেল। অভিকে জিজ্ঞেস করলো, “আমাকে ভাভিজি বলে ডাকছে কেন? আমার লজ্জা করছে।”

অভিঃ “আরে বাবা লজ্জা পেওনা। ও তোমাকে আমার সাথে দেখেছে তো ভাভি বলবে না তো কি বলবে। চিন্তা কোরো না, ও সুপ্রতিমদার অনেক দিনের ড্রাইভার, খুব বিস্বস্ত লোক।”

চায়েল পৌঁছে ওরা একটা হোটেল নিয়ে নিল। হোটেলের কামরায় ঢুকে অভি দুষ্টুমি করে পরীকে জিজ্ঞেস করে, “পরী, হাতে সময় খুব কম। চলো না একসাথে দু’জনে বাথরুমে ঢুকে স্নান সেরে নেই।”

লজ্জায় লাল হয়ে উঠল পরী, মৃদু ধমক দিল অভিকে, “না... বদমাশ কি শখ, এক লাত্থি মারব।”

স্নান সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে ওরা বেরিয়ে পড়লো। পরীকে দেখতে একদম সদ্য ফোটা তাজা গোলাপের মতন দেখাচ্ছে। সাদা একটা আঁটো সালোয়ার পরেছে, তাঁর ওপরে ওর সাদা জ্যাকেট, ঠিক যেন সাদা গোলাপ ফুল। দু’কানে দুটি মুক্তোর দুল, টলটল করে দুলছে। চায়েল ছাড়িয়ে আবার যাত্রা শুরু। কুয়াশা কেটে হাল্কা রোদের আভাস দেখা দিল। শীতকালের সূর্য যেন চাঁদের আলো ছড়াচ্ছে। অভি দাড়ি গোঁফ কামিয়ে নিয়েছে যাতে পরীর চুম্বনে কোন কষ্ট না হয়। বলবিন্দার নিপুন হাতে গাড়ি চালাচ্ছে, আঁকা বাঁকা পথ ধরে গাড়ি পাহাড়ে উঠছে।

পরী জিজ্ঞেস করলো যে কতক্ষণ লাগবে চিতকুল পৌঁছতে, অভি মাথা নাড়ালো, ঠিক জানে না। বলবিন্দার ওদের কথা শুনে উত্তর দিল যে, হোটেলের ম্যানেজারকে ও জিজ্ঞেস করে রাস্তা জেনে নিয়েছে, আরও ঘন্টা দশেক লাগবে চিতকুল পৌঁছতে। গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যে ফাগু ছাড়িয়ে আবার এন.এইচ.22 ধরলো।

পরী অভির কাঁধে মাথা রেখে জানালার বাইরে অবাক হয়ে তাকিয়ে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে চলেছে। বাম হাতে অভি ওকে জড়িয়ে ধরে, পরী ওর হাতের আঙুল নিয়ে খেলা করছে।

কারুর মুখে কোন কথা নেই, দু’জনেই চুপ করে বসে একে অপরের আদর খেয়ে চলেছে। কিছু পরে নারকান্ডা এলো, তারপরে গাড়ি নিচে নামতে শুরু করলো। কিছু দূর যাবার পরে গাড়ি একটা নদীর পাশ দিয়ে চলতে শুরু করলো। পরী পাহাড়ি নদী দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো।

“উম্ম... কি সুন্দর ছোট্ট নদী। কি নাম নদীটার” পরী অভিকে জিজ্ঞেস করলো।

অভিঃ “সম্ভবত সাটলুজ নদী।”

পরীঃ “মানে বাঙলায় শতদ্রু তাই তো?”

অভিঃ “তাই হবে।”

পরী বলবিন্দারকে গাড়ি দাঁড় করাতে বললো, নদীর পাড়ে গিয়ে নদীর জল ছুঁতে চায়। অভি বললো যে বাইরে খুব ঠাণ্ডা আর নদীর জল হিমের মতন হবে। পরী ওর কথায় কান দিলনা। জোর করে বলবিন্দারকে গাড়ি থামাতে বললো। গাড়ি থামা মাত্রই গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে এক দৌড়ে নদীর পাড়ে।

পরী ওর দিকে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি আসছো না আমি নদীতে ঝাঁপ দেব?”
 
Chapter 2: অপরিজ্ঞাত যাত্রা। (#3)

অগত্যা অভিকে ওর পেছন পেছন গাড়ি থেকে নেমে যেতে হলো। ততক্ষণে পরী, রাস্তার পাশ থেকে নদীর দিকে নেমে গেছে। বেশ পটীয়সীর মতন টাল সামলে পাথরের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তীরে চলে গেছে। ঝুঁকে পড়ে নদীর জল ছিটিয়ে দিল অভির দিকে।
হিম শীতল জল ওর হাতের আঙুল যেন জমিয়ে দিল, “বাপরে কি ঠাণ্ডা, আঙুল গুলো যেন কেটে বেরিয়ে গেল।”

অভিঃ “আমি আগেই তোমাকে সাবধান করে দিয়েছিলাম, তুমি তো আমার কোন কথা শুনবে না।”

পরীঃ “ধুর তুমি একদন রোম্যান্টিক নও।”

অভিঃ “পরী গাড়িতে ওঠো, চিতকুলেও একটা নদী আছে।”

পরী খুশিতে নেচে উঠে বললো, “তাই নাকি? আমাকে আগে বলোনি কেন। চলো তাহলে।”

অভিঃ “কিছু জিনিস ধিরে ধিরে প্রকাশ পাওয়া ভাল।”

পরী, “ঠিক আছে তুমি যদি সত্যি কথা বলছো তাহলে রাগ করবো না। কি নাম বললে যেন জায়গাটার?”

অভি মৃদু বকুনি দেয় পরীকে, “বোকা মেয়ে, চিতকুল।”

গাড়ি আবার ওদের নিয়ে ছেড়ে দিল। রাস্তার পাশ দিয়ে পাহাড়ি নদী ওদের সাথে সাথে চলতে থাকে। আকাশ নীল, মাঝে মাঝে তুলোর মতন পেঁজা পেঁজা সাদা মেঘের ভেলা। দু’পাসে সবুজে ঢাকা ছোটো বড় পাহাড়। কোথাও কোথাও আপেলের বাগান। কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা রামপুর পৌঁছে গেল। ওখানে ওরা দুপুরের খাবার সেরে নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করলো। খাবারের পরে অভির খুব ইচ্ছে করছিল একটা সিগারেট খায়, একবার পরীর দিকে তাকালো অভি, দেখতে পারলে মাথা খেয়ে ফেলবে তাও একটা সিগারেট জ্বালালো।

পরী ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললো, “আবার সিগারেট ধরেছো।” অভি কাতর চোখে অনুমতি চাইলো, এই ঠান্ডায় একটা সিগারেট। পরী কিছু না বলে, মুখ ভার করে গাড়িতে উঠে গেল। অভি দেখলো যে, সিগারেটের চেয়ে ওর মুখের হাসি অনেক বেশি মুল্যবান। আধা খাওয়া সিগারেটটা ফেলে দিয়ে গাড়িতে চেপে বসলো।

অভিঃ “দেখো আমি সিগারেট ফেলে দিয়েছি, এবারে হাসো একটু।”

গাড়ি রামপুর ছাড়িয়ে এগোতে শুরু করে। পরীর ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। অভি সিটের এক কোনায় সরে গিয়ে ওকে শুতে বললো, অভির কোলে মাথা রেখে পরী ঘুমিয়ে পড়লো। অভি নিস্পলক চোখে ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে রইল। রাস্তার অবস্থা বদলে গেছে, বলবিন্দার নিপুন হাতে খুব মন দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। অভি একবার সামনে দেখে, নিচে ঝুঁকে পরীর গালে আলতো করে একটা চুমু খেল। গালের ওপরে অভির ঠোঁটের পরশ পেয়ে আরও গুটিশুটি মেরে ওর হাতখানি বুকের ওপরে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিশ্চিন্ত হয়ে শুয়ে পড়লো। অভি পরীর গায়ের উষ্ণতা হাতের ওপরে অনুভব করলো। কিছু পরে জিওরিতে বলবিন্দার গাড়ি থামিয়ে পেট্রল ভরে নিল।

গাড়ি থামতেই পরী জেগে গেল, “আমরা দাঁড়িয়ে কেন?”

অভিঃ “তেল ভরার জন্য।”

পরীঃ “আমি কতক্ষণ ঘুমিয়েছি।”

অভিঃ “বেশিক্ষণ ঘুমোও নি তুমি আবার ঘুম লাগাতে পারো।”

পরীঃ “আর কতক্ষণ লাগবে চিতকুল পৌঁছতে?”

অভি পেট্রোল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করে যেনে নিল যে চিতকুল পৌঁছতে এখন ঘন্টা চারেক লাগবে। লোকটা আরও জানিয়ে দিল যে, সামনে কারছাম ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি তারপরে রাস্তার অবস্থা খারাপ। বলবিন্দার ওর কথা শুনে উত্তর দিল, “স্যারজি চিন্তা করবেন না একদম। আমি ঠিক আপনাদের নিয়ে যাব।”

পরী বিশেষ হিন্দি বোঝে না তাই অভিকে জিজ্ঞেস করলো যে বলবিন্দার কি বললো ওকে। অভি জানালো যে রাস্তার অবস্থা হয়তো ভাল না কিন্তু বলবিন্দার ভরসা দিয়েছে যে গাড়ি চালাতে ওর কোন কষ্ট হবে না। ঘড়ি দেখলো অভি, আড়াইটে বাজে, মানে চিতকুল পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে।

জিওরি ছাড়তেই পরী বললো আর ঘুমাবে না, জেগে থেকে এখন শুধু পাহাড় দেখবে। কারছাম পৌঁছতেই সূর্যি ডুবে গেল। পাহাড়ে তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নেমে এলো। কারছামে ওরা লক্ষ্য করলো যে দুটি নদী এসে মিশেছে। একটার জলের রঙ একটু ঘোলাটে একটা একদম পরিষ্কার তুঁতে রঙের।

পরী তুঁতে রঙের জলের নদী আগে কোনদিন দেখেনি। ওরা নদী দেখে বিস্ময়ান্বিত। অভিকে জিজ্ঞেস করলো, “এই নদীর নাম কি?”

অভিও কোনদিন তুঁতে রঙের জল দেখেনি, ও বলবিন্দারকে গাড়ি থামাতে বললো। গাড়ি থামতেই ওরা নেমে নদীর পাড়ে গেল। পরী ওকে জিজ্ঞেস করলো, “এই নদীর নাম কি? এই নদী কি আমরা চিতকুলে পাব?”

অভি মাথা নাড়লো, “হ্যাঁ এই নদী তুমি চিতকুলে দেখতে পাবে। সম্ভবত এই নদীর নাম বিয়াস, চিন থেকে আসছে এই নদী।”

কারছাম ব্রিজ পার করে, এন.এইচ.22 ছেড়ে ওরা চিতকুলের রাস্তা ধরলো। রাস্তায় বড় বড় পাথর আর রাস্তাটা খুব নির্জন। আসেপাসে লোকজনের দেখা নেই, নেই কোন গাড়ি ঘোড়া। বাইরে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। অভি পরীকে জড়িয়ে ধরে বসে। বাইরের আলো কমে এসেছে আগেই তাই বলবিন্দার গাড়ির লাইট জ্বালিয়ে দিল। পরী অভির দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালো।

অভি ওকে আস্বস্ত করে বললো, “অযথা ভয় পেওনা।”

পরী ওর গালে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো, “তুমি আছো তো তাহলে আর ভয় কিসের। আমি শুধু এটা ভেবে অবাক হচ্ছি যে তুমি এই রকম জন বিরল জায়গার খোঁজ পেলে কি করে?”

অভি ওকে আদর করে উত্তর দেয়, “তুমি আমার পাশে থাকলে আমি তো বিশ্ব জয় করে নেব, সোনা।”

ওর গালে একটা চুমু খেয়ে বললো পরী, “আমার সোনার ছোট্ট রাজকুমার।”

সাঙলা পার হতেই ঘন অন্ধকার ওদের ঢেকে নিল। এবড়ো খাবড়ো রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে বলবিন্দারের একটু অসুবিধে হচ্ছিল। অভি জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দিল যে ঠিক আছে সব। পরী অভির দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালো। বাইরে কোন আলো দেখা যায় না, ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা দু’ পাস। কোথায় পাহাড় আর কোথায় রাস্তা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অভি পরীকে ভয় পেতে বারন করলো।

কিছু পরে অভিকে মৃদু বকুনি দিয়ে বললো, “আমাদের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কেউ জানতেও পারবে না।”

অভি ওকে আস্বস্ত করে, “উল্টা পালটা কিছু বোলো না, আমাদের কিছু হবে না পরী।”
পরী রেগে সিটের এককোণে সরে গিয়ে বসলো। উতকন্ঠায় পরী চুপ করে বসে, জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকার দেখতে থাকে। অভি পরিস্থিতি হাল্কা করার জন্য ওকে জিজ্ঞেস করলো, “বাইরে অন্ধকারে কি দেখছো?”

কিছু উত্তর দিল না পরী, ওর দিকে একবার কটমট করে তাকিয়ে আবার বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ভয়ে ওর মুখ শুকিয়ে গেছে, বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে গেছে। অভি প্রথম বার এই জায়গায় এসেছে, ওই বা কি করে জানবে যে রাস্তার অবস্থা ওই রকম খারাপ হবে। অভিও উতকন্ঠায় বসে, কতক্ষণে গন্তব্য স্থানে পৌঁছবে। পরী গম্ভির মুখ করে একদম চুপ করে বসে।

আরও প্রায় ঘন্টা খানেক পরে ওরা চিতকুল পৌঁছে গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশে, কিছু দুরে কিছু আলো টিমটিম করে জ্বলছে। পরীকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে অভি নেমে গেল হোটেলের খোঁজে। বাইরে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া যেন যুদ্ধ জুড়েছে। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজার পরে রাস্তার একদম শেষে একটা হোটেলের সন্ধান পেল অভি। ম্যানেজার জানালো যে হোটেল একদম ফাঁকা, এই ঠাণ্ডায় কেউ এখানে ঘুরতে আসেনা। একটা রুম ভাড়া নিয়ে নিল অভি। পরী সেই যে সাঙলা থেকে গুম মেরে বসে আছে, হোটেলে ঢোকা পর্যন্ত কোন কথা বললো না।
 
Chapter 3: অপ্রত্যাশিত রজনী।

হোটেলের রুমটা বেশ বড় সড়, দু’দিকের দেয়ালে বড় বড় কাঁচের জানালা, তার ওপরে ভারী পর্দায় ঢাকা। হোটেলের লোক ওদের জিনিস পত্র রুমে রেখে চলে যাবার পরে অভি দরজা বন্ধ করে দিল। রুমের মধ্যে দু’খানা হিটার জ্বলছে। অভি পরীকে জিজ্ঞেস করলো যে রুমটা পছন্দ হয়েছে কি না। উত্তরে পরী ওর দিকে একটু মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে ঠিক আছে। গায়ের জ্যাকেটটা খুলে এক এক ব্যাগ খুলতে শুরু করলো পরী। ব্যাগ থেকে জিনিস পত্র বের করে আলমারিতে সাজিয়ে রাখতে শুরু করলো। অভি বিছানায় বসে পেছন থেকে পরীকে একমনে দেখে চলেছে। খোলা চুল পিঠের ওপরে নাচছে। পেছন থেকে ওকে দেখতে ঠিক প্রাচিন বালি ঘড়ির মতন লাগছে, চওড়া কাঁধ সরু হয়ে নেমে এসেছে, পাতলা কোমর, তারপরে ফুলে উঠেছে প্রশস্ত নিতম্ব। ওর মূর্তিময়ী সৌন্দর্য উপভোগ দেখতে থাকলো অভি। একবার মনে হলো যেন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পরীকে। মাঝে মাঝে চুড়ির ছনছন আওয়াজ গুঞ্জরিত হচ্ছে ঘরের মধ্যে। বারে বারে বাম পাশের চুলের এক গোছা ওর গালের ওপরে এসে পড়ছে আর বাঁ হাতের তর্জনী দিয়ে বারে বারে ওই চুলের গোছাটাকে কানের পেছনে করে দিচ্ছে।

শেষ পর্যন্ত অভি আর থাকতে না পেরে চুপিচুপি পরীর পেছনে এসে দাঁড়াল। দু’হাতে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে আলতো করে ঘাড়ে একটা চুমু খেল। আচমকা অভির ঠোঁটের পরশ পেয়ে একটু কেঁপে উঠল পরী। ঘাড়ের ওপর দিয়ে শীতল চাহনি দিল অভির দিকে। অভি তাও ওকে ছেড়ে দিল না, জড়িয়ে ধরে থাকলো।

পরী ওর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ঠাণ্ডা গলায় বললো, “ছাড়ো আমাকে। আমি বাথরুম যাব।”

ওই গলার আওয়াজ শুনে অভি বুঝতে পারলো যে বিশাল একটা ঝড় আসছে। পরী একটা হাল্কা গোলাপি রঙের নাইট ড্রেস আর একটা ভারী গাউন নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। বেচারা অভি নিরুপায় হয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পড়লো। নিজের জামা কাপড় বদলে একটা ট্রাক সুট পরে নিল। কিছু পরে পরী বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে অভিকে হাত মুখ ধুয়ে নিতে বললো।

অভি ওর গম্ভির কাঁদো কাঁদো চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে তোমার? এত চুপচাপ কেন? আমার সাথে কি কথা বলতে নেই?”

পরী ওর দিকে লাল চোখে তাকিয়ে বললো, “বাথরুমে ঢোকো, তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাও আমি ততক্ষনে খাবারের অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি।”

অভিঃ “ঠিক আছে কিন্তু একটু বলবে কি কেন এত চুপচাপ তুমি?”

পরী ওকে ঠেলে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিল। হাত মুখ ধুয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখে যে পরী একটা চেয়ার নিয়ে জানালার পাশে বসে বাইরের অন্ধকার দেখছে। পুরো ঘরের বাতাস যেন পরীর সাথে কাঁদছে। ওর চেহারার গুমোট ভাব যেন ঘরের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়েছে। অভির সামনে সেই হাসি খুশি পরী নেই, কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সেই পরী। টেবিলে ওদের রাতের খাবার সাজানো। চুপ করে রাতের খাওয়া সেরে নেয় ওরা। অভির মনে ভয় ঢুকে পড়ে। পরী যদি এইরকম ভাবে গুম মেরে বসে থাকে, থাকলে তো ঘোরার আনন্দটা মাটি হয়ে যাবে।

খাবার পরে গায়ের ভারী গাউনটা খুলে বিছানায় উঠে পড়ে পরী। লেপটা বুক পর্যন্ত টেনে নিয়ে বিছানার মাথার দিকে হেলান দিয়ে কটমট চোখে তাকায় অভির দিকে।

অভি বিছানার পায়ের দিকে বসে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে তোমার, কিছু বলবে কি?”

পরী রেগে গিয়ে উত্তর দেয়, “কি হয়েছে আমার? বাইরে একবার দেখেছো? একবিন্দু আলো দেখা যায় না কোথাও, চারদিকে শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার। এখানে কিছুই নেই, না একটা রেস্টুরেন্ট আছে, না একটা দোকান আছে, না কোন বড় বাড়ি আছে। এমন কি এখানে কোন লোকজনও নেই।”

অভিঃ “দেখ পরী, আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চেয়েছিলাম। আমিও এই জায়গায় নতুন, প্রথম বার এসেছি।”

পরীঃ “এখানে একটা দোকানও নেই।”

অভিঃ “দোকান দিয়ে কি করবে তুমি?”

পরীঃ “দোকান দিয়ে মানুষে কি করে, জানো না। শপিং করবো আবার কি করবো। যারাই ঘুরতে যায় তারাই শপিং করে।”

অভিঃ “তুমি তাহলে এখানে শপিং করার জন্য এসেছো।”

পরীঃ “না মানে শুধু মাত্র শপিং নয়। কিন্তু বাইরে দেখ, কোথাও কিছু দেখতে পাওয়া যায় না শুধু অন্ধকার ছাড়া। তুমি বলেছিলে যে এখানে নাকি একটা নদী আছে, কোথায় সেই নদী?”

অভিঃ “বাইরে অন্ধকার তাই তুমি নদী দেখতে পাচ্ছো না।”

পরীঃ “অভি, তুমি এখানকার রাস্তা দেখেছো। রাস্তা আরে বাবা, রাস্তা নেই বললেই চলে। এবড়ো খেবড়ো আর পাথরে ঢাকা কি সাঙ্ঘাতিক রাস্তা এখানকার। এখানে কি মানুষে আসে?”

অভি আর মাথা ঠিক রাখতে পারে না। শেষ পর্যন্ত শুরু হলো ওদের ঝগড়া বা প্রেম রাগ। রেগে গিয়ে পরীকে বকে দেয়, “আমি কি করে জানব যে রাস্তা ওই রকম হবে?”

পরীও রেগে গিয়ে উত্তর দেয়, “অভি তুমি নিশ্চয়ই জানতে।”

অভিঃ “হা ভগবান, পরী আমি সত্যি জানতাম না।”

পরীঃ “তোমার সাথে না এসে কল্যানি আর রানির সাথে মানালি ঘুরতে গেলে ভাল হতো।”

অভিঃ “হ্যাঁ তাই করতে। কেন করোনি তাহলে?”

কেঁদে ওঠে পরী, “তুমি ভাল করে জানো আমি কেন ওদের সাথে যাইনি আর কেন আমি তোমার সাথে এসেছি। আর এখন...”

অভিঃ “এখন কি এখন...”

পরীঃ “এখন কি? দেখ কোথায় এনেছো আমাকে। কোন ক্রমে একটা হোটেল খুঁজে পাওয়া গেছে তাতে আবার কোন লোক নেই। কেউ যদি রাতে আমাদের কিছু করে দেয় তাহলে বাড়ির কেউ খবরও পাবে না। কেউ জানে না আমরা এই রকম একটা সাঙ্ঘাতিক জায়গায় ঘুরতে এসেছি, যেখানে আসেপাসে দেখার কিছুই নেই।”

অভি চিৎকার করে ওঠে, “চুপ কর পরী, আমাদের কিছুই হবে না।”

কেঁদে উত্তর দেয় পরী, “আমি শুধু চেয়েছিলাম তোমার সাথে আমার প্রথম বেড়ানোটা চিরস্মরণীয় হয়ে থাক।” বারে বারে চোখের জল মুছতে থাকে। সেই চোখের জল দেখে অভির মাথা আরও গরম হয়ে যায়।

অভি বকুনি দিয়ে বলে, “আমার সামনে কুমিরের কান্না একদম কাঁদবে না।”

চিৎকার করে ওঠে পরী, “অভি, একদম আমার সাথে ওই রকম ভাবে কথা বলবে না। কাল সকালে আমাকে সিমলা পৌঁছে দিয়ে আসবে। আমি জানি কল্যানিরা কোন হোটেলে উঠেছে, আমি কল্যাণীদের সাথে ঘুরতে যাব।”

অভিঃ “ঠিক আছে কাল সকালে আমি তোমাকে সিমলা পৌঁছে দিয়ে আসব।”

গলা পর্যন্ত লেপ টেনে নিয়ে উলটো দিকে ফিরে শুয়ে পড়লো পরী। বালিশে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিল। অভি মাথা চাপড়ালো, শেষ পর্যন্ত একি ঘটে গেল। এই রকম তো ও চায়নি।

যথাসম্ভব মিষ্টতা এনে পরীকে সান্তনা দেবার চেষ্টা করলো অভি, “প্লিস কেঁদো না। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।”

ফুঁপিয়ে উঠে বললো, “যাও যাও, আমি জানি তুমি বাইরে কেন যাচ্ছো। তুমি সিগারেট খাবে এই তো। আমাকে লুকিয়ে তুমি ব্যাগে করে সিগারেট প্যাকেট নিয়ে এসেছো আমি দেখেছি। একে বারে সবকটা সিগারেট খেয়ে মরো গিয়ে। দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে।”

অভিঃ “দোহাই চুপ করে থাকো।”

পরীঃ “আমার সামনে থেকে চলে যাও, আমাকে একটু একা ছেড়ে দাও।”

অভির সিগারেটটা খুব দরকার ছিল তাই সিগারেট ধরিয়ে বাইরে চলে এলো। বাইরে এসে ভাবতে থাকলো, কি করে জানবে যে জায়গাটা এই রকম জনবিরল স্থান হবে? অভিও প্রথম বার এসেছে এই জায়গায়, পরীও প্রথম বার।

“অভিমন্যু তোমার উচিত হয়নি শুচিস্মিতাকে কাঁদানোর। এই ভ্রমন যাত্রা বিশেষ সুখদায়ক হবে না অভিমন্যু। সব মেয়েই চায় তাঁর প্রেমিকের সাথে মিলনের প্রথম রাত চিরস্মরণীয় হয়ে থাক, কিন্তু তুমি শুচিস্মিতাকে কাঁদিয়ে ঠিক করোনি, অভিমন্যু। তোমাকে এই পরিস্থিতির সামাল দিতে হবে না হলে শুচিস্মিতা তোমাকে সারা জীবন ক্ষমা করবে না।” অভির মাথার মধ্যে থেকে কেউ ওকে এই সব কথা বলে গেল। বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া যেন তুমুল যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। হয়তো বা বাইরে তুষার পাত হচ্ছে।

ঘরে ঢুকে দেখলো যে পরী ঘুমিয়ে পড়েছে। ট্রাক সুটের জ্যাকেটটা খুলে লেপের নিচে ঢুকে গেল অভি। পরীর দিকে সরে গিয়ে একটু ঝুঁকে পরীর ঘুমন্ত মুখখানি দেখতে চেষ্টা করলো। সুন্দর মুখখানির ওর চুলের গোছার নিচে ঢেকে পড়েছে। আলতো করে আঙুল দিয়ে চুলের গোছাটা সরিয়ে দিল মুখের ওপরে থেকে। একটা সরু জলের রেখা চোখের কোন থেকে বেয়ে নাকের ডগা পর্যন্ত গিয়েছে, বুড়ো আঙুল দিয়ে আলতো করে জলের দাগটা মুছে দিল। অভির উত্তপ্ত নিঃশ্বাস পেয়ে একটু কেঁপে উঠল পরী। অভি আলতো করে ওর বাঁকা ভুরুর ওপর দিয়ে আঙুল বুলিয়ে দিল। ঝুঁকে পড়ে ওই গোলাপি নরম গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। তারপরে আদর করে ওর নরম গালের ওপরে নাকের ডগা দিয়ে ঘষে দিল। পরী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওর কোমরে হাত রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো অভি। পেটের ওপরে অভির বলিষ্ঠ হাতের স্পর্শ পেয়ে মৃদু কেঁপে উঠল পরী, ওর হাতখানি বুকের কাছে এনে আরও জোরে শক্ত করে বুকের ওপরে চেপে ধরলো। শরীরের সাথে শরীর মিলিয়ে দিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো ওরা।
 
Chapter 4: তুষারে অগ্নিপাত। (#1)

এলোমেলো রুক্ষ চুলের মধ্যে নরম আঙুলের স্পর্শে অভির ঘুম ভেঙে গেল। চোখ মেলে চেয়ে দেখলো সামনে পরীর হাসি মাখা মিষ্টি চেহারা। বিছানার ওপরে ওর পাশে বসে পরী ওর দিকে মিষ্টি হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে। অদ্ভুত এক মধুর আলোর ছটা যেন ওর সারা মুখে মাখা। বেশ খানিকটা ঝুঁকে পড়ার জন্য অভির বুকের ওপরে ওর ঘন কালো চুল খেলা করছে। পরীর মিষ্টি হাসি দেখে অভির বুকের ভেতরে গত কাল রাতের পাথরটা যেন সরে গেল। চেয়ে দেখলো ঘরের মধ্যে সকালের মিষ্টি রোদের খেলা। বিশাল জানালার পর্দা গুলো একদিকে সরানো, মনে হয় পরী বাইরের শোভা দেখছিল। ওর দিকে চেয়ে একটু হাসলো অভি। পরী ওর মুখের ওপরে ঝুঁকে ওর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। ঝুঁকে পড়ার ফলে অভির চিবুক পরীর উন্নত বক্ষে স্পর্শ করলো।

“উঠে পড়ো সোনা।” মৃদু নাকে নাক ঘষে দিল পরী তারপরে আলতো করে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে একটা সুন্দর চুমু খেল। অভি ওর মুখের ওপর থেকে চুলের গুচ্ছ সরিয়ে দিয়ে মাথাটা আরও কাছে টেনে নিল যাতে চুম্বনটা আরও নিবিড় হয়ে যায়। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রইল দুজনে কিছুক্ষণ।

পরীঃ “কাল রাতের জন্য ক্ষমা করে দাও।”

অভি বিছানায় উঠে বসলো। পরীর হাত দুটি হাতের মধ্যে নিয়ে ক্ষমা চাইলো, “না হানি, আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার উচিত হয়নি তোমার ওপরে ওই রকম ভাবে চিৎকার করার। সত্যি বলছি আমাদের এখানে আসাই উচিত হয়নি।”

পরীঃ “হ্যাঁ তুমি আমার ওপরে চিৎকার করেছিলে ঠিকই, কিন্তু এই জায়গাটার ব্যাপারে আমি ভুল ছিলাম। কাল রাতে আমি যা বলেছি তার জন্য সরি।”

অভি মজা করে জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে তোমাকে কখন সিমলা পৌঁছে দেব?”

পরী দু’ হাতে অভির গলা জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বললো, “আমি অন্য কোন জায়গার কথা জানিনা কিন্তু পৃথিবীতে যদি কোথাও স্বর্গ বলে কিছু থাকে তাহলে সেটা এখানে আছে।”

অভি ওর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে কোলের ওপরে টেনে নিল। অভির জানুর ওপরে পরীর কোমল নিতম্বের স্পর্শে ওর সারা শরীরে শিহরণ খেলে গেল। পরী ওর অর্ধশায়িত বুকের ওপরে নিজেকে সঁপে দিল। পরনে রাতের হাল্কা গোলাপি হাত কাটা নাইট ড্রেস। বক্ষের অধিকাংশ অনাবৃত, অভির চোখ গেল পরীর গভীর বক্ষ বিভাজনের দিকে। পরীর নরম গালে নাক ঘষে দিল অভি।

পরী মৃদু স্বরে বললো, “উম্মম্মম্ম... এই জায়গাটা দারুন সুন্দর।”

অভিঃ “আমি জায়গাটার কথা তো জানি না হানি, কিন্তু তোমার গালের লালিমা আমাকে পাগল করে তুলেছে। তোমার ঠোঁট দুটি ভারী মিষ্টি খেতে।”

অভির বাঁ হাত পরীর নরম গোল পেটের ওপরে বিচরন করতে থাকে। আঙুল দিয়ে নাভির চারদিকে আলতো করে আঁচড় কেটে দেয় অভি। পরীর কোমল নিতম্ব অভির তলপেটের ওপরে চেপে বসে। সেই নরম উষ্ণ স্পর্শে অভির সিংহ মাথা উঁচু করতে শুরু করে। পরীর পীনোন্নত বক্ষ যুগল পিষ্ট হয়ে যায় অভির প্রশস্ত বুকের ওপরে। অভির মুখের ওপরে পরীর গরম শ্বাসের ঢেউ খেলে বেড়ায়। আদর খাওয়ার ফলে পরীর শ্বাসে আগুন লাগে, প্রেমের আগুন ধিকিধিকি করে জ্বলতে শুরু করে দিয়েছে পরীর বুকের মাঝে। অভি ওর কাঁধের মাঝে মুখ গুঁজে ঘাড়ের ওপরে ঠোঁট আর জিব দিয়ে আলতো করে চেটে দেয়। আস্তে আস্তে অভির ঠোঁট, ঘাড় ছাড়িয়ে কানের লতির ওপরে চাটে। মুক্তোর কানের দুলের সাথে কানের একটা লতি ঠোঁটের মাঝে নিয়ে আলতো করে চুষে দেয় অভি। পরী ঘনঘন কেঁপে ওঠে কানের ওপরে ঠোঁটের স্পর্শে। অভির হাত পরীর পেটের ওপরে বিচরন করতে করতে ধিরে ধিরে উপরের দিকে উঠতে শুরু করে। পরী বুঝতে পারে যে অভির হাত আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর পীনোন্নত বক্ষ পিষ্ট করে দেবে। তীব্র বাসনার ফলে চোখ বন্ধ করে নেয় পরী, আধ খোলা ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে অস্ফুট এক শীৎকার দেয়। বুকের মাঝে যেন বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়েছে, পরীর উন্নত বক্ষ যুগল বারে বারে ঢেউয়ের মতন ওঠা নামা করতে শুরু করে। অভির হাত ঠিক পরীর বক্ষের নিচে পৌঁছে যায়। পরী আসন্ন বক্ষ পেষণের আশঙ্কায় আধ খোলা চোখ অভির মুখের দিকে তাকালো। হাত দুটি শক্ত করে ধরে রইল যাতে অভি ওর বুকের ওপরে হাত দিতে না পারে। মৃদু মাথা দোলালো পরী, “না” কিন্তু ঠোঁটে লেগে তীব্র কামনার হাসি। অভি ওর দিকে প্রশ্ন নিয়ে তাকালো।

লাজুক হেসে ফিসফিস করে বললো, “আমার লজ্জা করছে।”

শক্ত করে জড়িয়ে ধরে উত্তর দিল অভি, “এখানে আমি আর তুমি ছাড়া আর কেউ নেই।”

ঘাড়ের ওপরে মুখ গুঁজে, গলা জড়িয়ে মাথা নাড়িয়ে ফিসফিস করে বললো, “না না না... এই দিনের আলোতে তোমার ওই আগুনে চোখের সামনে আমার খুব লজ্জা করছে...”

অভি ওর কথা শুনে হেসে ফেললো, “আমার সামনে তোমার লজ্জা কিসের?”

পরীঃ “আমি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি আর তুমি হাসছো? তুমি না খুব বদমাশ ছেলে জানো।”

অভিঃ “ওকে, তুমি লজ্জা পেলে আর কি কি হলো মনের মধ্যে, সেটা একটু খুলে বলবে না।”

পরী মাথা না উঠিয়ে ফিসফিস করে বললো, “তুমি না ভীষণ শয়তান। আমি কিছুতেই বলবো না আমার বুকের ভেতরে কেমন লাগছিল।”

অভি ওর পিঠের ওপরে হাত বোলাতে বোলাতে আবার জিজ্ঞেস করলো, “একবার বলো না সোনা, শুনি না তোমার কেমন লাগছিলো?”

পরী ওর কথা শুনে মৃদু চিৎকার করে উঠল, “যাও বলবো না, তুমি না একটা মস্ত শয়তান আর কিছু না।”

অভির আঙুল পরীর পিঠের ওপরে ওর শিরদাঁড়ায় আঁচড় কাটতে থাকে। আঙুল দিয়ে ঘাড় থেকে পিঠের নিচে কোমর পর্যন্ত বারে বারে আঁচড় কেটে দেয়। থেকে থেকে পরীর সারা শরীর কেঁপে ওঠে বারংবার। অভির ঘাড় থেকে কিছুতেই মাথা ওঠায় না পরী।
কানে কানে বলে, “অভি, আমার খুব খিদে পেয়েছে।”

দুষ্টুমি করে উত্তর দেয় অভি, “এত যদি খিদে পেয়েছে তাহলে আমাকে খেয়ে নাও না কেন।”

অভির মাথার পেছনে আলতো করে থাপ্পড় মেরে বলে, “সত্যি বলছি আমার খিদে পেয়েছ, আর দুষ্টুমি কোরোনা।”

এই বলে অভির তীব্র আলিঙ্গন থেকে নিজেকে কোন রকমে মুক্ত করে উঠে পড়লো পরী। কামনার এক সুন্দর হাসি সারা মুখে লেগে আছে, চোখ দুটি যেন প্রেমের আগুনে জ্বলছে ধিকিধিকি করে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বুকের মাঝের আগুনটাকে প্রাণপণে যেন দমিয়ে রেখেছোে। অভিকে হাত ধরে টেনে উঠিয়ে দিল বিছানা থেকে, ব্রাসে পেষ্ট লাগিয়ে দিয়ে বাথরুমের মধ্যে ঠেলে ঢুকিয়ে দিল। অভির অনুধাবন করতে বিশেষ বেগ পেতে হলো না যে সকালের রোদ এই ঘরের মধ্যে কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দেবে।

তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো অভি, ওর যে আর তর সইছে না পরীকে কাছে পাওয়ার। কাল রাতের ঝড় আজ সকালের রোদে সম্পূর্ণ ভাবে মুছে গেছে। বেরিয়ে এসে লক্ষ্য করলো যে পরী বিশাল কাঁচের জানালার পাশে বসে বাইরের দিকে একমনে তাকিয়ে পাহাড়ের অকৃত্রিম সৌন্দর্য উপভোগ করছে। ওর গায়ে অভির শাল। অভিকে দেখে কাপে চা ঢেলে দিল পরী। ওর পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে পরীকে ওর কোলের ওপরে বসিয়ে দিল। পরী আরাম করে অভির কোলের ওপরে বসে এক হাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরলো। অভি এক হাতে পরীর কোমর জড়িয়ে ধরে বসলো। অভির নচ্ছার হাত খানি পরীর কোমল পেটের পাশে আলতো করে কাতুকুতু দিল।

পরী ওর দিকে মিষ্টি রেগে তাকিয়ে বললো, “এখন নয় অভি, তুমি না সত্যি একটা শয়তান।”

অভিঃ “ছোট্ট একটা কিস ব্যাস...”

পরী অভির কপালে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে বলে, “তোমাকে ছোটো বেলায় যেই রকম করে খাইয়ে দিতাম সেই রকম করে খাইয়ে দেই।”

অভি ওর নরম বুকের কাছে মুখ ঘষে জিজ্ঞেস করে, “কি খাওয়াবে আমার পরী?”

একটু নড়ে বসলো পরী, মৃদু রেগে গিয়ে বললো, “ধুত ছেলে আগে খাও তারপরে দেখা যাবে”, এই বলে ওর মুখের সামনে স্যান্ডউইচ এনে ধরলো।

স্যান্ডউইচ খেতে খেতে পরী জানালার বাইরের দিকে আঙুল দিয়ে দেখালো। এই প্রথম বার জানালার বাইরে, দিনের আলোয় ভালো করে জায়গাটাকে দেখলো অভি। হোটেলের সামনে অনেকখানি খালি জায়গা, সাদা বরফে ঢাকা। বাঁ দিকে একটি উঁচু পাহাড় উঠে গেছে, সেখানে কোন গাছ পালা নেই শুধু ছোটো ছোটো ঘাস আর বরফ। সামনের বরফে ঢাকা জায়গাটার একদম শেষে একটা সুবিশাল তুষারে ঢাকা পর্বত শিখর। ডান দিকে বেশ কয়েকটা উঁচু উঁচু পাহাড়, অনেক গাছ সেখানে। প্রায় সব গাছের মাথা বরফে ঢাকা। দুই পর্বত শ্রেণির মাঝ খান দিয়ে কুলু কুলু শব্দে একটি ছোট্ট পাহাড়ি নদী বয়ে চলেছে। নদীর নাম বাপ্সা। অভি এবং পরী দু’জনেই জীবনের প্রথম বরফ দেখলো আর বরফে ঢাকা পাহাড় দেখলো।

পরী দূর তুষারে ঢাকা শৃঙ্গটিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো, “খুব সুন্দর জায়গা তাই না।”

অভিঃ “কাল রাতে এই জায়গার কত গুণগান করেছিলে তার কি হলো।”

পরীঃ “শুধু আমি, তুমিও তো জানতে না জায়গাটা কি রকম দেখতে।”

অভিঃ “হ্যাঁ তা বটে, কিন্তু...”

পরী মিষ্টি হেসে বললো, “রাতে কথা ভুলে যেতে চাই অভি। এক নতুন সকালের সাথে এক নতুন শুরু।”

গল্প করতে করতে ওরা সকালের খাওয়া শেষ করলো। পরী ওর কোলে বসে ওকে খাইয়ে দিল আর নিজে খাবারের সাথে অভির মিষ্টি আদর খেতে থাকলো। ওর মুখে শুধু চিতকুলের সৌন্দর্যের জয়গান। খাওয়ার শেষে পরীর কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিল, পরী ওর মুখ খনি আঁজলা করে নিয়ে আলতো করে নাকে নাক ঘষে দিল।

মিষ্টি করে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো, “আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য খুব বড় একটা থ্যাঙ্ক ইউ।”

অভি ওর ডান হাত হাতে নিয়ে, কোমল আঙুলের ওপরে ঠোঁট ছোঁয়ালো, এক এক করে আঙুল গুলো মুখে পুরে চুষে দিল। একদম আঙুলের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত।

পরী মৃদুকন্ঠে বলে উঠল, “আবার দুষ্টুমি শুরু করে দিয়েছো।”

আঙুল চোষার ফলে পরীর কমনীয় শরীর বারে বারে শিহরিত হয় যেন শরতের বাতাসে ধানের মাথা আন্দোলিত হচ্ছে। অভি ওর গায়ের শালখানি খুলে ফেললো, পরী বাঁ হাতে অভির গলা জড়িয়ে ধরে ওর মাথা বুকের ওপরে টেনে নিল। কোমল বুকের উষ্ণতায় মুখ ডুবিয়ে দিল অভি। হাত ছেড়ে পরীর পেটের ওপরে হাত দেয়, বৃত্তাকারে বারে বারে গোল পেটের মসৃণ ত্বকের ওপরে হাত বোবলাতে থাকে। মাঝে মাঝে কিঞ্চিত টিপে ধরে নরম মাংস। অশান্ত ডান হাত পরীর পিঠের ওপরে বিচরন করে, ঘাড় থেকে নিতম্বের কাছে। মাঝে মাঝে ওর বাঁকা শিরদাঁড়ার ওপরে নখের আঁচড় দেয় অভি। অভি মাথা নিজের বুকের ওপরের থেকে উঠিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে পরী। প্রথমে আলতো ঠোঁটের ছোঁয়া ক্রমশ তীব্র চুম্বনে পরিনত হয়। জিবের ডগার সাথে জিব লাগে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে পরী, অভির সারা শরীরে কাঁটা দেয়।
 
Chapter 4: তুষারে অগ্নিপাত। (#2)

অভি পরীর জানুর ওপরে হাত রাখে, হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত হাত বুলাতে থাকে মসৃণ পেলব জানুর ওপরে। জানু ধরে ভাল করে টেনে নেয় কোলের ওপরে। পরীর কোমল পুরুষ্টু নিতম্ব অভির তলপেটে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরী ওর কোমল নিতম্বের মাংসের ওপরে অভির উত্তপ্ত সিংহের ছোঁয়া বুঝতে পারে। আদরের গতি ক্রমশ বেগ পায়, পরীর শ্বাসে কামনার আগুনের হল্কা। অভি পরীর জানুর ওপরে হাত চেপে ধরে, ছুঁতে চেষ্টা করে জানু মাঝে নারী সুধার কাছে। পরী চুম্বনটিকে বন্ধ করে ওর চোখের দিকে তীব্র বাসনাময় চাহনি নিয়ে তাকায়।

এই প্রথম বার অভি তাঁর প্রেম নিবেদন করলো, “আমি তোমাকে ভালবাসি, পরী।”

পরীর কামাগ্নিতে ঝলসানো চাহনি অভির বুকের মাঝে হিল্লোল শুরু করে দেয়, “এত দিন আমি শুধু এই শোনার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম অভি।” প্রেমঘন মৃদুকন্ঠে বলে, “এই তিনটে শব্দ বলতে এত দেরি করলে কেন অভি?”

অভি ওর মুখের ওপরে আগুনের হল্কা ছড়িয়ে দিয়ে বলে, “আমি তোমাকে কাছে পাবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছি পরী। আমি তোমাকে বড্ড ভালবেসে ফেলেছি।”

চোখের কোন চিকচিক করে ওঠে পরীর, নিচু কম্পিত সুরে বলে, “অভি, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না অভি।”

অভি জিব বের করে পরীর অধরের ওপরে আলতো করে বুলিয়ে দেয়।

পরীঃ “আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো অভি, আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না।”

ওর কথা শুনে অভির মনের ভেতরে প্রেমের আগ্নেয় গিরি গুরগুর করে উঠল। দু’জনেই বুঝতে পারলো যে সম্ভবিত মিলনের সময় কাছে এসেছে। অভি পরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো যেন পৃথিবীর অন্তিম কাল নিকটে আর পরী একমাত্র মানুষ যে অভিকে ওই অন্তিম সময় থেকে বার করতে পারবে। পরী ওর বলিষ্ঠ বাহুপাশে নিজেকে সম্পূর্ণ রুপে সঁপে দিল।

অভি ওর কানে কানে বললো, “আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না পরী।”

পরীঃ “কথা দাও আমাকে যে আমাকে ছেড়ে দেবে না, আমাকে এই বিশাল নিষ্ঠুর পৃথিবীর মাঝে একা ছেড়ে যাবেনা। কথা দাও অভি।”

অভিঃ “আমি কথা দিচ্ছি পরী, আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না।”

দুজনে একে অপরেকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে, একজন আরেকজনকে মিষ্টি আদর করতে থাকে।

অভি মৃদুকন্ঠে পরীর কানে কানে বলে, “তুমি কি এইরকম ভাবে সারা দিন আমার কোলে চুপ করে বসে থাকবে, কিছুই কি বলবে না?”

পরীঃ “তোমার ভালবাসা আর আদর দিয়ে আমার হৃদয়টা পরিপুর্ণ করে নিতে চাই আমি।”

অভির বুকের ওপরে তর্জনীর নখের আঁচড় কেটে লিখে দেয় পরী, “আই লাভ ইউ।” অভি পরীর কানে কানে বলে, “আই লাভ ইউ টু হানি।” পরী তারপরে ওর বুকের ওপরে নখ দিয়ে নিজের নাম লিখে দেয়, “শুচিস্মিতা।” নিজের বুকে পরীর নামের দাগ অনুভব করে শিহরিত হয় অভিমন্যু।

“উম্মম কি মিষ্টি লাগছে তোমাকে...” অভি পরীর ঘাড়ে হাত রেখে ওর মুখখানি আবার নিজের মুখের কাছে টেনে নেয়, চেপে ধরে ঠোঁট জোড়া পরীর কোমল অধর ওষ্ঠের ওপরে। কামড় বসিয়ে দেয় পরীর ঠোঁটের ওপরে, কেঁপে ওঠে পরী, অভির দাঁত ওর ঠোঁট জোরে কামড়ে ধরে। উন্নত বক্ষ পিষ্ট হয়ে যায় অভির প্রশস্ত বুকের ওপরে, কোমল উত্তপ্ত বক্ষের নরম মাংস লেপ্টে যায় অভির বুকের সাথে। পরীর ঘাড়ের থেকে সারা পিঠে হাত বোলাতে থাকে অভি, পাতলা গায়ের কাপড় পরীর শরীরের কোমলতা আর উষ্ণতাকে ঢেকে রাখতে পারেনা। কামনার স্ফুলিঙ্গ যেন পাতলা কাপড় ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করে। আধাখোলা ঠোঁটের মাঝে পরী ওর জিব বের করে অভির জিব চেটে দেয়, জিবের ডগা ঠোঁট ছাড়িয়ে নাকের ওপরে বিচরন করতে থাকে।

অভি মৃদুকন্ঠে বলে, “আমি তোমার সকাল প্রেমের আগুনে ভরিয়ে তুলবো।”

পরী ওর দিকে কাজল কালো নয়নে তাকিয়ে যেন জিজ্ঞেস করলো, “আর কি করে ভরিয়ে তুলবে অভি?”

অভি পরীকে পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে নিল, পরী ওর গলা জড়িয়ে ধরে থাকলো। একবারের জন্য প্রেমের আলিঙ্গনে কোন ভাঁটা পড়তে দিল না দুজনে। অভি পরীকে যেই না বিছানার ওপরে বসিয়ে দিল, দুষ্টু পরী মিষ্টি হেসে পেছনে সরে গিয়ে নাক পর্যন্ত লেপটা টেনে নিজেকে ঢেকে নিল। এক টানে গায়ের গেঞ্জি খুলে ফেললো অভি। অভির প্রশস্ত ছাতি দেখে কেঁপে উঠল পরী। বুকের মাংসপেশি যেন পরীকে হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে। অভি পায়ের দিকে লেপ টেনে পরীকে লেপ থেকে বের করে নিতে চেষ্টা করে। পরী জোরে মাথা নাড়ায়, চোখ মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে, নাকের ফুটো বড় হয়ে গেছে পরীর, নাকের থেকে গরম নিঃশ্বাস নির্গত হতে থাকে। প্রেমের আগুনে দু চোখ চিকচিক করছে।

মৃদু শীৎকার দিয়ে অভির নাম ডেকে উঠল পরী, “অভিইইইই... না...”

“কি হলো?” আবার লেপ টানতে চেষ্টা করে অভি। পরী মাথা নাড়ায়, “না লেপ ছাড়বো না, আমার লজ্জা করছে অভি। তুমি কেন গেঞ্জি খুলে ফেলেছো অভি, কি করবে আমার সাথে?”

অভি ওর পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে, লেপের ভেতরে হাত দিয়ে পরীর বাঁ প্যে হাত রাখে, আস্তে আস্তে করে পায়ের পাতার ওপরে হাত বোলায়। মসৃণ কোমল ত্বকের ওপরে উত্তপ্ত হাতের ছোঁয়ায় পরীকেঁপে কঁকিয়ে ওঠে। আস্তে আস্তে লেপটা টেনে গায়ের থেকে সরিয়ে দেয় অভি। হাত জোড়া করে বুকের কাছে নিয়ে আসে পরী, প্রেমের আগুনে ঝলসানো চোখে দেখে অভিকে। অভি ওর পায়ের পাতা বুকের ওপরে চেপে ধরে, আলতো করে বুকের ওপরে যেখানে হৃদপিন্ডটি আছে সেখানে চেপে ধরে। তারপরে পায়ের ফর্সা বুড়ো আঙুলটিকে মুখের মধ্যে নিয়ে চুষে দেয়। পায়ের ওপরে অভির ভেজা ঠোঁটের পরশে আর চুপ করে থাকতে পারেনা পরী।

বুকের ওপরে হাত চেপে শীৎকার করে ওঠে পরী, “সোনা আমাকে মেরে ফেললে যে... অভি উফফফ...”

বাঁ হাত দিয়ে পরীর পায়ের ওপর থেকে কাপড় সরিয়ে দিল অভি, ধিরে ধিরে ফর্সা পায়ের মসৃণ বাঁকা পায়ের গুলি দিনের আলোতে বেরিয়ে পড়লো। পরী অভির কবল থেকে নিজের পা বাঁচানোর চেষ্টায় পা খানি টানতে চেষ্টা করলো, কিন্তু অভি শক্ত করে পা খানি ধরে রয়েছে। অভি হাতের পাতা দিয়ে পায়ের গুলি আস্তে আস্তে করে আদর করতে থাকে, হাতের পাতায় অনুভব করে যে পরীর গায়ে কাঁটা উঠেছে, উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরীর মসৃণ ত্বক। শরতের মিষ্টি হাওয়ায় দোলা খাওয়া গাছের পাতার মতন কাঁপতে থাকে পরী। থেকে থেকে মৃদু শীৎকার করে ওঠে পরী। দু’চোখ চেপে বন্ধ করা, লজ্জায় সারা মুখ লাল, বুকের কাছে দুহাত জোড়া করে চেপে ধরা।

পরী শীৎকার করে বলে ওঠে, “অভি প্লিস এবারে যদি তুমি আমার পা না ছাড়ো তাহলে আমি মরে যাবো সোনা।”

অভি ওর কথায় কান না দিয়ে ঝুঁকে পড়ে পায়ের পাতার ওপরে ঠোঁট ছোঁয়ায়, জিব বের করে চেটে দেয় আঙুল থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত। আর থাকতে না পেরে, বিছানায় শুয়ে পড়ে পরী, পেটের ওপরে শুয়ে বালিসে মুখ গুঁজে দেয়। পিঠ ওঠা নামা করতে থাকে ভীষণ ভাবে, বুকের মাঝে যেন বিশাল ঢেউ বারংবার আছড়ে পড়ছে যেন। অভি বিছানায় উঠে ওর পাশে শুয়ে পড়ে।

ধিরে ধিরে পিঠের ওপর থেকে লেপ সরিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে। লম্বা চুল পরীর চওড়া পিঠের ওপর থেকে সরিয়ে দেয়। পরী বালিশটাকে খামচে ধরে তার ওপরে মুখ গুঁজে পড়ে থাকে, আসন্ন ভালবাসার আশঙ্কায়। অনাবৃত পিঠের ওপরে নখের আঁচড় কেটে দেয় অভি, কাঁধের গোলায় আঙুল রেখে পরীর গায়ের কাপড়ের পাতলা স্ট্রাপটা সরিয়ে দেয়। সরু স্ট্রাপ কাঁধ থেকে নেমে আসে বাজুর ওপরে কিন্তু শুয়ে থাকার জন্য জামা খুলতে পারেনা অভি।

মাথা উঁচু করে পরী, চিবুক বালিশের ওপরে, দু’চোখ বন্ধ, হাত দুটি মাথার দুপাশে ভাঁজ করে রাখা। অভি ওর মসৃণ পিঠের ওপরে ঝুঁকে পড়ে শিরদাঁড়ার ওপরে চুমু খায়। উত্তপ্ত ত্বকের ওপরে ভিজে জিবের ডগা দাগ কেটে দেয়। অভির মনে হয় যেন ফুটন্ত ত্বকের ওপরে ওর জিব লেগেছে।

পরী ভেজা জিবের ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে উঠে মৃদুকন্ঠে বলে, “আমাকে মেরে ফেললে যে সোনা। আমার সারা শরীরে কিছু হচ্ছে যেন সোনা...”

অভির তলপেটের নিচ থেকে আগ্নেয় গিরির লাভা ফুটতে শুরু করে দেয়। অভির সিংহ মাথা উঁচু করে নিজের অস্তিতের জানান দেয়। পরীকে নিজের ওপরে টেনে তোলে অভি। অভির বুকের ওপরে উঠে নিজেদেরকে লেপের নিচে ঢেকে নেয় পরী। দিনের আলোতে ওর চোখ খুলতে প্রচন্ড লজ্জা করে। পরীর সামনের সারা শরীর অভির শরীরের ওপরে, বুকের সাথে বুক লেপটে গেছে, পেটের সাথে পেট, জানুর সাথে জানু আর অভির সিংহ থেমে থাকতে পারেনা। অভির মাথার দু দিকে হাত ছড়িয়ে মুখের ওপরে মুখ নিয়ে আসে পরী। অভি নিচের দিক থেকে ওর কাপড় উঠিয়ে দেয় হাঁটু পর্যন্ত।

পরী দুই জানু ফাঁক করে অভির কোমরের দুপাশে ফেলে দেয়। নরম তলপেটের ওপরে অভির পুরুষ সিংহের মৃদু ধাক্কা ওর সারা শরীরে কামনার তীব্র আলোড়ন তোলে।

কনুয়ের ওপরে ভর দিয়ে পরী নিজের ঊর্ধ্বাঙ্গ চেপে ধরে অভির বুকের ওপরে, মুখখানি অভির মুখের সামনে, চোখ বন্ধ। অভি ওর জিব বের করে পরীর ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে দেয় আবার। কপাল নামিয়ে কপালের সাথে ঠেকায় পরী, নাকের ডগার সাথে নাক ঘসা খায়, চিবুকের সাথে চিবুক। অভির নখ পরীর পিঠে গেঁথে দেয়।

অভি ওকে চোখ খুলতে বলে, মৃদু মাথা নাড়ায় পরী, “না... অভি... আমার লজ্জা করে...”

সারা মুখে কামনার তীব্র ছটা। বুকের মধ্যে তিব্র আলোড়ন, নরম বক্ষ পিষে যায় অভির নগ্ন ছাতির মাংস পেশির ওপরে। মাথার পেছনের চুল মুঠি করে ধরে মাথা তুলে ধরে অভি, মরালির ন্যায় গলার ওপরে ঠোঁট আর আলতো করে দাঁত বসিয়ে দেয় অভি।
পরী শীৎকার করে ওঠে, “পারছিনা... অভি... সোনা আমার...”

ফিসফিস করে অভি বলে, “আই লাভ ইউ পরী।”

ধিরে ধিরে চোখ খোলে পরী, যেন পদ্ম ফুল পাপড়ি মেলে ধরেছে। ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কাঁপছে, থেকে থেকে কাঁপছে চোখের পাতা, দু’চোখ চিকচিক করছে প্রেমের বন্যায়, “কি করছো অভি, এত শয়তানি লুকিয়ে ছিল তোমার মধ্যে...”

অভি দুষ্টুমি সুরে বলে, “আর অবুঝের মতন কথা বোলো না সোনা, যেন তুমি কিছুই জানো না!”

পরীঃ “তোমার শয়তানি আমাকে পাগল করে তুলেছে অভি। আমার হৃদয়টা এখুনি ফেটে পড়বে অভি।”

বুকের ওপরে পরীর বুকের ধুকপুক বুঝতে পারে, মনে হয় যেন খুব জোরে একটা রেল গাড়ি দৌড়চ্ছে। অভি ওকে বলে, “আমার বুকের ওপরে তোমার বুকের শব্দ শুনতে পাচ্ছি সোনা। তুমি আমার কি বুঝতে পারছো বলো?”

তলপেটের ওপরে অভির সিংহ গর্জন করে চলেছে বারে বারে, সেটা অনুভব করে পরী বলে, “শয়তান ছেলে বলবো না।”

অভি ওর মাথা ছেড়ে হাত নামিয়ে আনে পরীর পুরুষ্টু নিতম্বের ওপরে, থাবার মধ্যে পিষে ফেলে দুই নিতম্বের কোমল নারী মাংস, চেপে ধরে পরীর তলপেট নিজের লৌহ কঠিন সিংহের ওপরে।

একটা উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ওর মুখ থেকে বেরিয়ে পড়ে, “আহাহাহাহ...”

নিতম্বের ওপরে অভির হাত বারে বারে খিমচে ধরে, শক্ত হয়ে ওঠে অভি, সিংহ বড় জ্বালাতন করছে তাঁর সাথে হাতের মাঝে পরীর কোমল নিতম্ব। আগুন নির্গত হতে থাকে দুজনার ক্ষুধার্ত শরীর থেকে। প্রেমের ক্ষীরোদ সাগরে দুজনে সম্পূর্ণ রুপে নিমজ্জিত। ধিরে ধিরে পরীর কাপড় উঠিয়ে দিল কোমরের ওপরে, চেপে ধরলো সিংহকে পরীর কোমল জানু মাঝে। কেঁপে উঠল পরী, নারী সুধার দোরগোড়ায় অভির সিংহের পরশ পেয়ে। সেই ভীষণ ঠাণ্ডায় দুজনের শরীর থেকে ঘাম ছুটছে। গায়ের কাপড় কিছুক্ষণের মধ্যে আর শরীরের ওপরে থাকে না, কোথাও যেন উধাও হয়ে যায়।

ওকে জড়িয়ে ধরে পালটি খায় অভি, পরী নিচে আর অভি তার ওপরে। পেলব মসৃণ জানু ফাঁক করে পরী আহ্বান জানায় অভিকে, পা দুটি উঠে আসে অভির পায়ের ওপরে। দুহাতে খিমচে ধরে অভির মাথার চুল।

ধিরে ধিরে দু’জনে প্রবেশ করে প্রেমের স্বর্গোদ্যানে। বিয়াস নদীর তীরে মিলন ঘটে দুই তৃষ্ণার্ত কপোত কপোতীর। কেউই যেন সেই মিলনটাকে শেষ করতে চায় না, বারে বারে রকে অপরকে ঠেলে নিচে করে দেয়। ঘুরতে থাকে সারা বিছানার ওপরে। প্রথম মিলনের ক্ষণ একে অপরকে ভরিয়ে দিতে প্রয়াস করে। এই মধুর মিলন ওদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কিছু মিষ্টি ব্যাথা আর প্রচুর অনির্বচনীয় সুখের রেশ টেনে একে অপরকে ভালবাসায় ভরিয়ে দেয়।
 
Chapter 4: তুষারে অগ্নিপাত। (#3)

বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে আর ঘরের ভেতরে সবে মাত্র আগ্নেয় গিরি থেকে লাভা নির্গত হয়েছে। জানালার নিচে বরফে ঢাকা। বাইরে সূর্যের মিষ্টি রোদ সারা আকাশে নেচে বেড়াচ্ছে। ঘরের ভেতরে, বিছানার ওপরে শীতকালের মিষ্টি রোদ খেলে বেড়াচ্ছে।

অভির ডান পাশে শুয়ে পরী, দুজনের গায়ের ওপর লেপ। ধবধবে সাদা বিছানার ওপরে শুয়ে আছে দু’জনে। অভির বুকের ওপরে পরীর মাথা, অভির পা আটকে আছে পরীর দুই জানুর মাঝে। অভি আদর করে পরীর পিঠে হাত বোলাতে থাকে। পরী ওর বুকের ওপরে নখ দিয়ে আদর করে আঁচড় কাটতে থাকে, মাঝে মাঝে ও নিজের নাম আর অভির নাম লিখে দেয় অভির প্রশস্ত বুকের ওপরে। পরীর মাথার চুলে নাক ডুবিয়ে বুক ভরে পরীর ঘ্রান নিয়ে নেয়। সারাটা সময়ে পরী একটি বারের জন্যও লেপটাকে ওদের শরীর থেকে সরাতে দেয় নি।

অনেকক্ষণ পরে মৃদু সুরে পরী বলে, “তুমি না একদম যা তা... খুব শয়তান ছেলে, আমাকে আছড়ে পিষ্টে পাগল করে তুলেছিলে...”

অভিঃ “কেন কি হলো?”

পরী মুখ না উঠিয়েই বলে, “তুমি জানতে এই সব হবে তাই তুমি আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলে তাই না?”

অভি ওর কথা শুনে হেসে ফেললো, পরী আলতো করে একটি থাপ্পড় মারে ওর বুকের ওপরে। আবার অভি ওর পিঠের ওপরে আঁচড় কাটে। পরী মৃদু কেঁপে ওঠে, “আবার শয়তানি... কোরো না প্লিস... এই তো করলে। আবার সুড়সুড়ি দিচ্ছো।”
কিছু পরে পরী বলে, “জানো অভি, জায়গাটা সত্যি খুব সুন্দর।”

অভিঃ “হ্যাঁ, তবে তোমার চেয়ে সুন্দর এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই সোনা। তুমি কত নরম, কত তুলতুলে আর কত সিক্ত, আমি তো প্রায় মরে গেছিলাম তখন...”

ওর কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে পরী, বুকের ওপরে মুখ গুঁজে ছোটো একটি চুমু খেয়ে বলে, “চুপ করবে তুমি, একদম ওইসব কথা বলবে না। আমার খুব লজ্জা করে অভি।”

ওর কথা শুনে বুকের আরও কাছে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরীকে। পরী ফিসফিস করে বলে, “কত সুন্দর হতো, ওই রকম উঁচু উঁচু গাছের মাঝে আমাদের একটা ছোট্ট বাড়ি হতো। সামনে একটা ছোট্ট বাগান থাকতো, সেই বাগানে আমি গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা ফুলের গাছ লাগাতাম। উঠানে একটা দোলনা থাকতো আর রোজ বিকেল বেলায় সন্ধ্যের সূর্যকে বিদায় জানাতে জানাতে আমরা দু’জনে দোলনায় ঝুলতাম।”

অভিঃ “খুব সুন্দর পরী।”

পরীঃ “রোজ সকালে আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসতাম আর সকালে সূর্যকে আহ্বান জানাতাম ওই বাগানে বসে। পায়ের নিচে বিয়াস নদীর জল খেলে বেড়াতো।”

অভিঃ “চা খেতে হলে টাকার দরকার পরী।”

পরী মৃদু রেগে বুকে নাক ঘষে বলে, “যাও তুমি না একদম রোম্যান্টিক নও, আমি তোমার সাথে কথা বলবো না।”

অভিঃ “সরি পরী, আমি তোমার সুখের স্বপ্নটাকে ভেঙে দিলাম বলে।”

আবার কিছুক্ষণ দু’জনে চুপ, খালি একে অপরের আদর খেয়ে চলেছে। পরী ওকে জিজ্ঞেস করে, “অভি আমরা কি পুরোটা সময় এখানে থাকব না আর অন্য কোথাও বেড়াতে যাবো।”

অভি দুষ্টুমি করে উত্তর দেয়, “এই সাত দিনের কথা তো জানিনা সোনা, তবে আমি তোমার আলিঙ্গনে এই রকম ভাবে শুয়ে থাকতে চাই আর তোমাকে নিয়ে সারাক্ষণ খেলা করতে চাই।”

পরী এবারে আর বুকের ওপরে থাপ্পড় না মেরে সোজা গালের ওপরে আলতো করে থাপ্পড় মেরে বলে, “যাও শয়তান, আমি তোমার সাথে একদম কথা বলবো না। আমাকে ছেড়ে দাও এবারে, তুমি সবসময়ে দুষ্টুমি করতে থাক।”

পরী যত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে অভি ওকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরে। জড়াজড়িতে আবার মনে হলো যেন দুজনের শরীরে আগুন ধরে গেল। পরী অভির সিংহের অস্তিত্ব নিজের জানুর ওপরে অনুভব করতে পারলো।

অভি পরীকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কি অন্য কোথাও যেতে চাও না এখানে থাকতে চাও?”

পরীঃ “এই জায়গাটা বড় সুন্দর অভি। কিন্তু আসেপাশে যদি আরও কোন জায়গা থাকে তাহলে যেতে অসুবিধা কোথায়?”

অভিঃ “হুম... তাহলে দেখতে হবে এর আসেপাসে আর কি দেখার জায়গা আছে।”

পরীঃ “আই রিয়ালি লাভ ইউ অভিমন্যু।”

অভিঃ “উম্মম সোনা আই লাভ ইউ টু মাচ হানি।”

আবার দু’জনে জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকলো, কিছুক্ষণ পরে পরী মাথা তুলে বললো, “অভি...”

অভিঃ “কি?”

পরীঃ “এবারে আমাকে ছাড়, আমি স্নান করবো।”

অভিঃ “যাও কে বারন করেছে।”

পরীঃ “না এই রকম ভাবে নয়।” পরী হাত বাড়ায় নিজের জামার দিকে, অভি ওর জামা হাতের মধ্যে নিয়ে টেনে ধরে।

পরীঃ “প্লিস দিয়ে দাও সোনা।”

অভিঃ “রুমে আর কেউ নেই, এই রকমে চলে যাও।”

পরীঃ “আমার লজ্জা করে অভি, প্লিস আমার জামা দিয়ে দাও।”

অভিঃ “না দেব না।”

পরী ওর গালে থাপ্পড় মেরে বলে, “সোনা প্লিস দিয়ে দাও না হলে...”

অভিঃ “না হলে কি...”

পরীঃ “না দিলে আমি কিন্তু আর আমাকে ছুঁতে পর্যন্ত দেব না।”

অভিঃ “আমি ছিনিয়ে নিতে জানি আমার জিনিস...”

পরীঃ “আর কি ছিনিয়ে নেবে তুমি, আমি তো সেইদিন থেকে শুধু তোমার হয়ে গেছিলাম।”

অভিঃ “কোন দিন?”

পরীঃ “বিয়ের রাতে বাসে আমার কপালে চুমু খেলে সেদিন থেকে, সেই ক্ষণ থেকে...”

অভি মিটিমিটি করে হাসতে থাকে, পরী আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে গেল। নেমে যাবার আগে লেপের ভেতরেই পরী গায়ে জামা গলিয়ে নিল। অভি উঠে বসলো বিছানার ওপরে, পরী ওর মুখের ওপরে ঝুঁকে কপালে একটা ছোটো চুমু খেল। তারপরে চলায় মত্ত ছন্দ তুলে নিজের জামাকাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। বাথরুমে ঢোকার আগে, ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটের কাছে এনে, তর্জনীর ডগায় আলতো চুমু খেয়ে, অভির দিকে নাড়িয়ে দিয়ে চলে গেল।
 
Chapter 5: পরবর্তী অভিযান। (#1)

সাঙলা উপত্যকার একদম শেষ প্রান্তে একটি ছোট্ট গ্রাম চিতকুল। চিতকুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কোন মানুষকে বিমুগ্ধ করে দেবে। হোটেলের সামনে খালি ঘাসের মাঠ, তারপরে তুষারের ছিটে। বিয়াস নদীর বাঁ দিকের তীরে উঠেছে কিছু ছোটো ছোটো পাহাড়, সারা পাহাড়ের গায়ে বিশাল বিশাল পাইন দেবদারু আর শাল গাছ। মাথার ওপরে সূর্য কিন্তু রোদে যেন তেজ নেই, কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে নদীর দিক থেকে। সামনে কিছু দুরে বরফে ঢাকা একটি উঁচু পর্বত শৃঙ্গ। নদীর ডান দিকে উঠে গেছে একটি ঘাসে ঢাকা ন্যাড়া পাহার, পাহাড়ের মাথায় একটি গাছ যেন কঠোর পাহাড়ের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। চিতকুলে বিশেষ বড় কোন হোটেল নেই, কিছু ছোটো ছোটো কাঠের বাড়ি আর কিছু ছোটো ছোটো দোকান। গরম কালে এখানে কিছু পর্যটক ঘুরতে আসে কিছু শীতকালে এই দুর্গম স্থানে কেউ ঘুরতে আসে না। আই.টি.বি.পি. র একটি ছাওনি আছে চিতকুলে। চিতকুল গ্রাম থেকে অনেক দুরে চিনের সীমানা শুরু, তার ওপরে তিব্বত শুরু। পর্যটক শুধু মাত্র ওই ছাওনি পর্যন্ত যেতে পারে তার আগে আর কাউকে যেতে দেওয়া হয় না।

অভি আর পরী বিয়াস নদীর তীরে হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াতে থাকে। পরীর পরনে তুঁতে রঙের শাড়ি, গায়ে ভারী সাদা জ্যাকেট আর গলায় শাল জড়িয়ে। কানে সোনার দুল, তাতে আবার দুটো পান্না জড়ানো। পরী ওর হাত বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে ওর দিকে মিটিমিটি করে হাসে। হাসিতে দু’গালে টোল পড়ে, আর সেই টোল দেখে অভির মনে হয় পরী যেন ঠিক স্বর্গের এক অপ্সরা। বারে বারে একটি চুলের গোছা ওর বাঁ গালের ওপরে চলে আসে আর বারে বারে পরী, বাঁ হাতের তর্জনী দিয়ে গোছাটাকে কানের ওপরে করে দেয়।

দুপুরের খাওয়ার সময়ে পরী নিরামিষ খেল। অভি ভাবলো যে হয়তো জার্নির জন্য পরী নিরামিষ খেয়েছে, খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ কিছু জিজ্ঞেস করলো না অভি। গল্প করতে করতে ওরা একে অপরের ব্যাপারে অনেক কিছু জেনে নিল। পরীর প্রিয় রঙ তুঁতে। রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়তে আর শরৎচন্দ্রের ছোটো গল্প পড়তে খুব ভালবাসে। অভির প্রিয় লেখক শরৎচন্দ্রে। পরীর প্রিয় উপন্যাস শরৎচন্দ্রের “শ্রীকান্ত”। গান ভালবাসে পরী, সেটা অভি বিয়ের দিনে দেখেছে যে পরী বেশ ভাল গান গায়। অভি ওর মুখের দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে আর পরী ওর গল্প বলতে থাকে। অভি লক্ষ্য করলো যে চিবুকে একটা ছোটো কাটা দাগ। অভি ওকে দাগটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করাতে পরী জানায় যে ছোটো বেলায় একবার আম গাছে আম পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে যায় আর ওর চিবুক কেটে যায়। আরও অনেক গল্প করলো দু’জনে মিলে।

বলবিন্দার ওদেরকে জিজ্ঞেস করলো যে ওরা আর কোথাও যাবে কিনা। অভি জানালো যে সেইদিন ওরা আর কোথাও বের হবে না। হোটেলের ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারলো যে, বেশ কিছু দুরে কারছাম ব্রিজ, তারপরে একটি জায়গা আছে নাম কল্পা। কল্পার নিচে রেকং পিওতে ওরা কেনাকাটি করতে পারে। পরীর চোখ চিকচিক করে উঠলো কেনাকাটির নাম শুনে। রেকং পিওর পরে স্পিতি উপত্যকা, হিমালয়ের মাঝে একটি হিমশীতল মরুস্থান। রাস্তা ঠিক থাকলে ওরা নাকো যেতে পারবে। পরী ওর দিকে তাকালো, অভি বুঝতে পারলো যে পরী নাকো যেতে চায়। নাকো সমুদ্রতল থেকে প্রায় বারো হাজার ফুট উঁচুতে, সেখানে হিমের মতন ঠাণ্ডা পড়বে জানিয়ে দিল ম্যানেজার। পরীর নাক যেন কোন দুঃসাহসিক অভিযানের গন্ধ পেল, অভিকে আলতো ধাক্কা মেরে বুঝিয়ে দিল যে নাকো যেতে চায়।

খাবার পরে আবার ওরা নদীর তীরে গিয়ে বসে। পরীকে কোলে করে একটা বড় পাথরের ওপরে বসে অভি। অভির হাত বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে থাকে।

পরীঃ “নদিটা যেন গান গাইছে, জানো?”

অভি ওর মুখের দিকে চেয়ে বলে, “ধরো আমরা যদি আর ফিরে না যাই। কেউ জানেনা আমরা এখানে আছি, সবাই ভাববে যে আমরা কোথাও হারিয়ে গেছি।”

বুকের ওপরে মাথা রেখে উত্তর দিল, “জীবন কোন পটে আঁকা ছবি নয় অভি। আমাদের দু’জনেরই পরিবার আছে, যারা অধির উৎকণ্ঠায় আমাদের ফেরার পথ চেয়ে বসে আছে।”

অভি একটু ম্লান সুরে বলে, “মাঝে মাঝে আমার মনে হয় যে মা আমাকে একদম ভালবাসে না।”

চোখ তুলে ওর ম্লান মুখের দিকে তাকায় পরী, জিজ্ঞেস করে, “এই রকম কথা কেন বলছো?”

অভিঃ “মা বাবা আমার প্রতি সারা জীবন ভীষণ কড়া, তারপরে তুমি এলে মায়ের জীবনে। আজকাল তো মা সবসময়ে শুধু তোমার কথাই বলে।”

মিষ্টি হেসে পরী ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে, “সব মা তার সন্তানকে ভালবাসে অভি। আমার ছোটো মা খুব ভাল, অভি, আর তুমি আমাকে ঈর্ষা করো?”

অভিঃ “আমি জানি উনি তোমার ছোটো মা, কিন্তু মা সবসময়ে যেন ভালবাসাকে পয়সা দিয়ে বিচার করে। সবসময়ে আমাকে শোনাতে ছাড়ে না যে আমার পেছনে কত খরচ করেছেন। আমার পেছনে যেহেতু উনি টাকা খরচ করেছেন সেহেতু আমি ওদের কথা সর্বদা শুনবো এই চান তারা।”

পরী বুঝতে পারলো অভির মনের কষ্ট, সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যেটাকে নষ্ট করতে মন চাইলো না পরীর। ও কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা অভি, আমরা পুরো সময়টাকি এখানে ঘুরে কাটিয়ে দেব?”

ওর কথা শুনে অভি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিল, “মহারানী যেখানে আজ্ঞা করবেন সেখানে যাওয়া যাবে। আপনি যদি আগে যেতে চান তাহলে তাই হবে। আজ সোমবার, আমরা এখানে দুই রাত আরও কাটাতে পারি, মাঝে একদিন রেকংপিওতে গিয়ে তোমার কেনাকাটাও সারা যাবে। তারপরে বুধবার নাগাদ আমরা বেরিয়ে পড়ব নাকোর উদ্দেশ্যে। সেখানে শুক্রবার পর্যন্ত কাটিয়ে, শনিবার ফিরে আসব। কালকা পৌঁছনোর আগে মাঝে কোথাও রাত কাটিয়ে দেব। রবিবার আমরা কালকা পৌঁছে যাব ঠিক তোমার ট্রেন ছাড়ার আগে। কেমন লাগল আমার পরিকল্পনা।”

পরী ওর কথা শুনে হাতের ওপরে চুমু খেয়ে বলে, “উম্মম্ম দারুন পরিকল্পনা। তোমার মাথা সত্যি দারুন।”

কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্য ডুবে গেল, শীতের সন্ধ্যে আর পাহাড়ের কোলে অন্ধকার, খুব তাড়াতাড়ি ওদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেললো। নদীর তির ছেড়ে ওরা হোটেলে ঢুকে পড়লো। হোটেলের রুমে কোন টি.ভি. নেই তাই বিকেল বেলা চুপ করে বসে গল্প করা ছাড়া আর কিছু করার থাকেনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাপমান শূন্যর নিচে চলে গেল, রুমের ভেতরে দু দুটি হিটার জ্বলছে তা সত্তেও ঠাণ্ডা যেন বেড়েই চলেছে। পরীর ঠোঁটে হাসি লেগে আর চিতকুলের কথা।

কিছু পরে ম্যানেজার ওদের রুমে এসে রাতের খাবারের কথা জিজ্ঞেস করলো, রাতে কি খাবে ওরা, চিকেন না মাটন। পরী জানালো যে ও নিরামিষ খাবে। সকালে নিরামিষ খেয়েছে আবার রাতে নিরামিষ খাবে শুনে অভির কেমন যেন খটকা লাগল।

পরীকে জিজ্ঞেস করলো অভি, “দুপুরে নিরামিষ খেয়েছ সেটা না হয় বুঝলাম যে জার্নির ধকল গেছে তাই, কিন্তু রাতে নিরামিষ?”

পরী সুন্দর একটি হাসি দিয়ে উত্তর দিল, “তোমার জন্য অভি। সোমবার শিবের ব্রত রাখবো আজ থেকে, সেই দিন পর্যন্ত রাখবো যেদিন...” কথাটা বলতে গিয়ে গলা ধরে এলো পরীর, দু’চোখ একটু জলে চিকচিক করে উঠলো।

অভি ওকে জড়িয়ে ধরে বললো, “যাঃ বোকা মেয়ে, এর জন্য কাঁদে নাকি... ধুর আমি তো তোমার পাশে আছি।”

রাতের খাওয়ার শেষে পরী একটা হাল্কা নীল রঙের স্লিপ পরে নিল, ঠাণ্ডার জন্য গায়ে ভারী গাউনটা চড়িয়ে নিল। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে মুখে রাতের প্রসাধনি মাখতে থাকে আর মাঝে মাঝে আয়নায় অভির দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। অভি পেছন থেকে দেখে পরীর নধর শরীরটিকে। পিঠের ওপরে ঢেউ খেলা কালো চুলের রাশি নেমে এসেছে কোমর পর্যন্ত। চওড়া পিঠ ক্রমশ সরু হয়ে আসে পাতলা কোমরে তারপর ফুলে ওঠে। ত্বকের সাথে যেন লেপটে আছে পাতলা স্লিপটা। পরীর অঙ্গের প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি রেখা যেন ফুটে উঠেছে কাপড়ের ভেতর থেকে। ওই দৃশ্য দেখে বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল অভির, মনে হলো যেন দৌড়ে গিয়ে ওই পিঠের ওপরে চুমু খায়। ঠোঁট দুটি চুম্বনের ইশারা করে একটা ছোট্ট চুমু ছুঁড়ে দেয় ওর দিকে আর অভি সেটা লুফে নিয়ে বুকের ওপর চেপে ধরে। আঙুল নাড়িয়ে পরীকে তাড়াতাড়ি শুতে আসতে আহ্বান জানায়। পরী মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, “সোনা একটু সবুর কর।”

এমনিতে অভি ডায়রি লেখে না, তবে ওর কাছে একটা খুব পুরানো ডায়রি আছে যেটাতে ও ছোটো বেলায় কবিতা বা ছোটো ছোটো গল্প লিখতো। অভি সেই ডায়রিটা সঙ্গে এনেছিল, ভেবেছিল পরীর সাথে এই ভ্রমন কাহিনী লিখে রাখবে ওই ডায়রিতে। যখন ওরা বুড়ো হয়ে যাবে, তখন দুজনে মিলে একসাথে বসে পড়বে ওই ডায়রি আর এই সব সুন্দর দিন গুলোর স্মৃতিচারন করবে।

প্রসাধনি শেষে, গায়ের গাউনটা খুলে ওর পাশে শুতে চলে এলো পরী। অভির বাঁ দিকে শুয়ে ওর বুকের ওপরে মাথা রেখে ওর বাজু জড়িয়ে ধরলো। বাজুর ওপরে অভি পরীর কোমল বুকের পরশ অনুভব করলো।

পরী ওকে লিখতে দেখে জিজ্ঞেস করলো, “কি লিখছো অভি?”

অভিঃ “আমাদের এই ভ্রমন কাহিনী লিখছি।”

পরীঃ “তুমি সাধারণত তো ডায়রি লেখো না, তাহলে?”

অভিঃ “হ্যাঁ আমি ডায়রি লিখি না ঠিকই, কিন্তু কেন জানিনা মনে হলো এই ভ্রমন কাহিনীটা লেখা দরকার। মনে হলো যে যখন আমাদের বয়স হয়ে যাবে, তখন হয়তো আমরা এই ডায়রি পরে এই সুন্দর ভ্রমনের কথা স্মৃতিচারণ করবো।”

“তুমি খুব মিষ্টি” কিছু থেমে, বুকের ওপরে আঁচড় কেটে বলে, “আচ্ছা আমার যখন বুড়ো হয়ে যাব, তখন আমাকে নিয়ে এখানে আসবে তুমি? আমি যদি তখন তোমাকে বলি যে এখানে আমার জন্য একটা কুঁড়ে ঘর বানিয়ে দাও তাহলে তুমি সেটা বানিয়ে দেবে?”
 
Chapter 5: পরবর্তী অভিযান। (#2)

ডায়রি লেখা শেষ করে অভি ওকে জড়িয়ে ধরলো। স্লিপের সামনের অংশ অনেকটা কাটা থাকার ফলে পরীর উন্নত বক্ষ যুগলের অধিকাংশ অনাবৃত ছিল, আর অভি ওর বাজুতে উষ্ণ ত্বকের স্পর্শ অনুভব করছিল। হাত দিয়ে পরীর কোমরের কোমলতা নিয়ে আদর করছিল অভি আর মাঝে মাঝে ওর নরম নারী মাংস টিপে দিচ্ছিল। মৃদু পেষণে পরীর শরীরের উত্তাপ ধিরে ধিরে বেড়ে উঠছিল। পরী ওর খালি বুকের ওপরে নখের ডগা দিয়ে আঁচড় কাটতে থাকে, মাঝে মাঝে নাম লিখতে থাকে বুকের শক্ত পেশির ওপরে।
পরীঃ “মাঝে মাঝে আমার ছোটো বেলার কথা মনে পড়ে। তুমি হামাগুড়ি দিয়ে সারা বাড়ি বেড়াতে আর আমি তোমার পেছন পেছন দৌড়াতাম। তারপরে যখন একটু বড় হলে তখন আমি তোমাকে টেনেটেনে নিয়ে যেতাম আমার সাথে।”

চুলের মধ্যে নাক গুঁজে বুক ভরে পরীর গায়ের গন্ধ নিল অভি। চুলের কিছু গোছা ওর মুখের ওপরে পড়েছিল, আঙুল দিয়ে সরিয়ে দিল অভি যাতে চাঁদটাকে আরও ভাল করে দেখা যায়।

পরীঃ “একদিনের কথা আমার খুব মনে আছে। তুমি সবে হাঁটতে শিখেছো আর আমি তোমাকে নিয়ে সারা বাড়ি খেলে বেড়াতাম, তোমার সাথে যেন আমার কত গল্প হতো। সেই সব মাথামুণ্ডু হীন গল্প। একদিন আমি তোমাকে টানতে টানতে নিয়ে গেছিলাম পুকুর পারে, আমি একটা পুতুলের ঘর বানিয়েছিলাম সেটা তোমাকে দেখাব বলে। তুমি তখন ছোটো ছিলে, কিছুই বুঝতে না, তুমি এক লাথি মেরে আমার সেই পুতুলের ঘর ভেঙে দিলে। আমি তারস্বরে চেঁচিয়ে কান্না শুরু করে দিলাম আর তোমাকে মারতে শুরু করলাম। তুমিও মাটিতে বসে কান্না জুড়ে দিয়েছিলে। ইন্দ্রানিদি আমাদের কান্না শুনে দৌড়াতে দৌড়াতে পুকুর পাড়ে আসে আর তোমাকে কোলে তুলে আমাকে খুব বকতে শুরু করে দেয়। আমাকে ছেড়ে দিয়ে তোমাকে কোলে নিয়ে ইন্দ্রানিদি বাড়ির মধ্যে চলে যায়, আমি একা একা ওখানে বসে কাঁদতে থাকি। ছোটো মা সেই দিন স্কুল যাননি, আমার কান্না শুনে দৌড়ে আমার কাছে আসে আর আমাকে কোলে তুলে নেয়। আমাকে সান্তনা দিয়ে বলেন যে যখন আমরা দু’জনে বড় হব আর বুঝতে শিখবো, তখন তুমি আমার জন্য একটা পুতুলের ঘর বানিয়ে দেবে। আমি কান্না থামিয়ে ছোটো মাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খাই।”

অভিঃ “হুম বুঝলাম যে তোমার ছোটো মা তোমাকে খুব ভালবাসে।”

পরী গলা একটু ধরে আসে, চোখ তুলে অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “অভি আমাকে আমার সেই পুতুলের ঘর বানিয়ে দেবে, যেখানে শুধু আমরা দু’জনে থাকব?”

পরীকে জড়িয়ে ধরে উত্তর দিল, “আমি তোমার সেই পুতুলের ঘর বানিয়ে দেব।” অভি জানেনা এই প্রেমের কি পরিণতি হবে, কিন্তু পরীর কাজল কালো চোখে জল দেখে অভি কথা দিয়ে দিল। ইঁট কাঠ পাথর দিয়ে মানুষ বাড়ি বানাতে পারে কিন্তু ঘর বানাতে মানুষের ভালবাসার দরকার পড়ে আর অভির বুকের কাছে ওর ভালবাসা শুয়ে। দু’জনে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।

পরের দু’দিন কেটে গেল চিতকুলে ঘুরে আর একে অপরের বাহু পাশে। বিনা বাধায় ওরা প্রেমের উদ্যানে কপোত কপোতীর মতন উড়তে থাকে। দু’জনের মনে মিলনে কোন বাধা থাকে না। লাজুক পরী কিন্তু একবারের জন্যেও অভিকে ওর সুন্দর শরীর দর্শন দেয়নি। প্রত্যেক মিলনের সময়ে গায়ে লেপ ঢাকা থাকতো, অভি কোনমতেই পরীর লজ্জা খন্ডন করতে পারেনি। সময়ের সাথে দু’জনের মনে হলো যেন দুজনের বুকের মাঝে হৃদয়ের মধ্যে এক আত্মা বইছে, শরীর আলাদা কিন্তু এক প্রান। অভি তৈরি সারা পৃথিবীর সাথে লড়াই করে পরীকে জিতে নেবার জন্য। প্রত্যেক সকালে যেন এক নতুন পরী বিছানা থেকে ওঠে। প্রত্যেক বার যখন পরী ওর দিকে তাকিয়ে হাসে তখন যেন মনে হয় যে হাসিটা কত নতুন কত মিষ্টি। চোখের চাহনি যেন আগের চেয়ে বেশি করে প্রেম ঝরিয়ে ওর দিকে তাকায়। আদর যেন আগের চেয়ে বেশি নিবিড় বেশি ঘন। বারে বারে যখন ওরা মিলন সাগরে ডুব দেয় তখন মনে হয় যেন পরীর আগের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত আর বেশি সিক্ত। অভি যেন প্রত্যেক বার আগের চেয়ে বেশি কঠিন আর বেশি উত্তপ্ত হয়ে যায়। চুম্বনে যেন আগের চেয়ে বেশি তিব্রতা, কামনার আগুন যেন প্রত্যেক বার নতুন করে জ্বলে ওঠে। বারে বারে পরীকে জড়িয়ে ধরে যেন পিষে ফেলে বুকের সাথে মিশিয়ে নিতে চায়। শরীরের থেকে নির্গত ঘাম আর মধু মিশে একাকার হয়ে যায়।

বৃহস্পতি বার সকাল বেলা ওরা চিতকুল থেকে রওনা দেয় নাকোর পথে। অভি পরীকে বলে দিল যে নাকোতে হয়তো চিতকুলের চেয়ে বেশি ঠাণ্ডা পড়তে পারে, কিন্তু পরী নাছোড়বান্দা, নাকো সে যাবেই। কিছু পরে গাড়ি কারছাম ব্রিজে পৌঁছে গেল। বিয়াস নদীর তুঁতে রঙের জল দেখে পরী অভিভুত, আগের বার যখন দেখেছিল তখন সন্ধ্যে নেমে এসেছিল। এবারে দিনের আলোতে নদীর জল দেখে পরী বেশ খুশি।

সূর্যের আলোয় একটু যেন তেজ। বলবিন্দার তাঁর পটু হাতে গাড়ি চালাচ্ছে। আঁকা বাঁকা পথে গাড়ি পাহাড়ের গা বেয়ে এগিয়ে চলেছে। কিছু পরে ওরা পোয়ারি পৌঁছে গেল। পোয়ারিতে জানতে পারলো যে ওটাই শেষ পেট্রল পাম্প সুতরাং বলবিন্দার গাড়ি থামিয়ে তেল ভরে নিল। দুপুর এগারোটা নাগাদ ওরা রেকং পিও পৌঁছে গেল। রেকং পিও পাহাড়ের কোলে বেশ সাজান গোছান একটি ছোটো শহর। দোকান পসার দেখে পরীর মন চঞ্চল হয়ে উঠল, ওর অনেক কেনাকাটা করতে হবে। বিশেষ করে ছোটমা’র জন্য আর দিদার জন্য কিছু কিনবে।

একটি দোকানে দাঁড়িয়ে কিছু স্টোল দেখতে দেখতে পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, “এইটা কেমন দেখতে?”

মাথা নাড়ালো অভি, “হ্যাঁ ভালো দেখতে, তোমার গায়ের রঙের সাথে বেশ মানাবে।” স্টোলটা গাড় নীল রঙের ওপরে সোনালি সুতোর কাজ করা ছিল। পরীর সেটা দেখে হয়তো ঠিক পছন্দ হলো না, মাথা নেড়ে নাক কুঁচকে বললো, “না গো ভাল নয়।” তারপরে আরও কিছু স্টোল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো সেগুলো কেমন। বেচারা অভি প্রত্যেকটি দেখে আর মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয় যে ভালো দেখতে। মেয়েদের কেনা কাটার ব্যাপারে ও অনভিজ্ঞ।

পরী ওর দিকে রেগেমেগে তাকিয়ে বলে, “তুমি একদম আমার দিকে দেখছো না। যা দেখাই তাতেই খালি গাধার মতন মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলছো। কিছু একটা বল কোনটা কিনব।”

অগত্যা অভি একটা স্টোল দেখিয়ে বলে, “এটা কেনো।”

সেটাও পরীর পছন্দ হয় না, অভি শেষ পর্যন্ত রেগে গিয়ে বলে, “কিনবে তুমি, পরবে তুমি। আমি কি করে তোমার মনের কথা জানব, কোনটা তোমার ভাল লাগবে আর কোনটা মন্দ? যা ইচ্ছে হচ্ছে কিনে নাও নিজের জন্য।”

পরী একটু রেগে যায়, কোন রকমে একটা স্টোল কিনে নেয় নিজের জন্য। অভিকে বলে মায়ের জন্য কিছু কিনতে। অভি জানায় যে ওর কেনা কাটা বিশেষ ভাল লাগে না। যে কবার ও বেড়াতে গেছে কোন বার কারুর জন্য কিছু কিনে নিয়ে যায়নি।

পরী ওকে বলে, “অভি স্বভাব পাল্টাও, এবারে আমি এসে গেছি। কোথাও বেড়াতে গিয়ে যদি আমার জন্য কিছু না নিয়ে আসো তাহলে কিন্তু ঘরে ঢুকতে দেব না।”

হেসে ফেলে অভি, “ওকে বাবা, তোমার কথা আলাদা। তোমার জন্য কিনব না সেটা কি হতে পারে।”

পরীঃ “হ্যাঁ হ্যাঁ, অনেক হয়েছে, এখুনি তার একটা ছোটো নমুনা দেখিয়ে দিলে।”

কেনা কাটা সেরে পরীকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে বসতে বলে কোথাও চলে গেল। পরীর জন্য একটা ছোটো বুদ্ধের মূর্তি কিনলো আর সেটা নিজের জ্যাকেটের পকেটে লুকিয়ে রাখল। নাকো পৌঁছে ওকে অবাক করে দেবে অভি।

রেকং পিওতে দুপুরের খাবার সেরে ওরা যাত্রা শুরু করলো নাকোর দিকে। বলবিন্দার জানালো যে ঘন্টা তিন চার লাগবে রেকং পিও থেকে নাকো পৌঁছতে। কিছু পরে স্পিলো নামে একটি জায়গার পরে পাহাড়ের রঙ বদলে গেল। আগে দুপাশের পাহাড় ছিল সবুজে ঢাকা, কোথাও ঘাস কোথাও গাছ। কিন্তু এখন দুপাসের পাহাড় ন্যাড়া, ধুসর রঙ। রাস্তার অবস্থা বিশেষ ভালো নয়। রাস্তার বড় পাথুরে আর ভঙ্গুর, কোথাও কোথাও রাস্তা একপাস ভেঙে নিচে শতদ্রু নদীতে মিশে গেছে। একদিকের পাহাড় থেকে ঝুরঝুর করে নুড়ি পাথর আর বালি ঝরে পড়ছে। বলবিন্দার খুব সাবধানে সেই ভঙ্গুর সাঙ্ঘাতিক রাস্তা দিয়ে অতি সাবধানে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

পরী সিটের উপরে পা তুলে আমার করে অভির গা ঘেঁসে বসে আছে আর জানালার বাইরের অদ্ভুত সৌন্দর্য দেখে চলেছে। নিচের পাহাড় আর এখানকার পাহাড়ে অনেক বিসম্যতা। কিছু পরে ওদের গাড়ি খাব ব্রিজে পৌঁছে গেল। সেখানেও দুটি নদীর মিলন দেখে পরী অবাক হয়ে গেল।

অভিকে জিজ্ঞেস করলো, “এই নদীর নাম কি?”

যে নদীটা শতদ্রুতে এসে মিশেছে সেই দিকে দেখিয়ে অভি জানালো, “ওটা স্পিতি নদী।”

অবাক হয়ে প্রশ্ন করে পরী, “তুমিতো আগে এখানে কোন দিন আসোনি, তাহলে এত সব জানলে কি করে? সত্যি বল, তুমি আগে এসেছিলে কিন্তু আমাকে জানাচ্ছো না।”

অভিঃ “না সোনা, আমি এখানে আগে কখন আসিনি, বিশ্বাস করো। আমি জানতাম যে তুমি আমাকে কয়েক হাজার প্রশ্ন করবে তাই আগে থেকে এই জায়গার ব্যাপারে পড়াশুনা করে এসেছিলাম।”

গালে চুমু খেয়ে বললো, “তুমি ভাবলে কি করে যে আমি তোমাকে বিশ্বাস করবো না। আমি নিজের চেয়ে বেশি তোমাকে বিশ্বাস করি ছোট্ট রাজকুমার।”

ওর আদরের ডাক শুনে অভি একটু রেগে যায়, “আমি এখন বড় হয়ে গেছি, আর আমি তোমার সেই ছোটো রাজকুমার নই। আমাকে ওই নামে আর ডাকবে না।”

পরীঃ “তুমি বুড়ো হয়ে গেলেও আমি তোমাকে ওই নামে ডাকবো ছোট্ট রাজকুমার।”

অভি ওকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, “রাতের ওই খেলার পরেও তুমি আমাকে ছোট্ট রাজকুমার নামে ডাকতে চাও?”

পরী ওর গালে আলতো করে থাপ্পড় মেরে বলে, “যাও তোমার সাথে কথা বলবো না।”

আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অভি, “তুমি না সত্যি খুব মিষ্টি। এত মিষ্টি খেতে খেতে আমি বুড়ো হয়ে যাব তাও যেন শেষ হবে না।”

পরী লজ্জায় লাল হয়ে গেল, “তুমি শয়তানি করা ছাড়বে না আমি নদিতে ঝাঁপ দেব।”

অভি ওর ঠোঁটের সামনে ঠোঁট এনে বলে, “উম্মম... আমার পরী দেখি লজ্জা পায়।”

পরী ওর দিকে বড় বড় লাজুক চোখে তাকিয়ে বলে, “থামো অভি, আমরা গাড়িতে।”

অভিঃ “ওকে আমি থামবো, কিন্তু তার বদলে কি পাব?”

পরীঃ “বর্তমানে কিছু না, তবে পরে আমি ভেবে দেখব।”

খাব ব্রিজ পারো করে গাড়ি একটি সরু রাস্তা দিয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে শুরু করে। রাস্তা বড় খাড়া, পাহাড়ের কোল কেটে তৈরি সেই রাস্তা। কোন কোন জায়গায়, মাথার ওপরে পাহাড়ের ছাদ তার নিচ দিয়ে রাস্তা। ওই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায় পরী, এ কিরকমের রাস্তা, অভির বুকের ধুকপুকানিও একটুর জন্য বেড়ে যায়। কিন্তু পরীর মুখ দেখে নিজেকে শান্ত করে পরীকে জড়িয়ে ওকে ভয় পেতে বারন করে। পরী ওর বুকের কাছে এসে জড়সড় হয়ে বসে। কিছু দূর যাবার পরে রাস্তা খাড়া চড়াই চড়তে শুরু করে। পরীর সারা গায়ে কাঁটা দেয়।

পরীঃ “অভি, একি সাঙ্ঘাতিক সুন্দর রাস্তা। আমরা কি পাহাড়ে চড়ে একবার থামব প্লিস, আমি নিচে দেখতে চাই একবার।”

বলবিন্দার পরীর ভয় বুঝতে পেরে উত্তর দেয়, “ভাভিজি, বলবিন্দার যতক্ষণ সাথে আছে ততক্ষণ চিন্তা করবেন না।”

পরী শুধু ভাভিজি কথাটা বুঝতে পারলো, বলবিন্দারের দিকে লাজুক চোখে তাকিয়ে হেসে দিল। পাহাড়ের ওপরে উঠে বলবিন্দার গাড়ি থামাল। ওরা গাড়ি থেকে নেমে একদম ধারে গিয়ে নিচে স্পিতি নদীর দিকে দেখলো। অনেক নিচে সরু একটা ময়াল সাপের মতন এঁকে বেকে বয়ে চলেছে স্পিতি নদী, জলের রঙ বড় ঘোলাটে। পরীর চোখ বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে উঠেছে, সাথে সাথে অভি বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে কত নিচ থেকে ওরা উঠেছে।
 
Chapter 5: পরবর্তী অভিযান। (#3)

পরী ওকে বললো, “জানো আমার কি মনে হয়, এখানে কোন টুরিস্ট আসে না বা লোকজন থাকে না।”

অভি মাথা নাড়লো, হ্যাঁ তাই মনে হচ্ছে। এতক্ষণ গাড়ি চললো কিন্তু রাস্তায় অন্য কোন গাড়ির দেখা পায়নি ওরা, না সামনে থেকে না পেছন থেকে। একবারের জন্য হলেও অভির মনে ভয় ভর করলো, যদি এই নির্জন দুর্গম জায়গায় ওদের সাথে কিছু অঘটন ঘটে তাহলে কোন বাড়ির কেউ খোঁজ পাবেনা এমন কি হয়তো শরীরের শেষ অংশটুকুও খুঁজে পাবে না।

নাকো ঢোকার আগে রাস্তার দুপাসে বেশ উঁচু উঁচু কাঠের থামে অনেক রঙ বেরঙের পতাকা বাঁধা, হাওয়ায় পতাকা গুলো পত পত করে উড়ছে। পরী জিজ্ঞেস করলো যে ওই পতাকা গুলো কিসের, অভি জানতো না ওই পতাকা গুলো কিসের জন্য বাঁধা, পরে হোটেলের লোককে জিজ্ঞেস করে জেনেছিল যে পতাকা গুলো বৌদ্ধ ধর্মের মানুষের জন্য। ওই পতাকা গুলোর ওপরে বুদ্ধের বানী লেখা আছে।

নাকো পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় বিকেল চারটে বেজে গেছিল। নাকো অনেক উঁচুতে, চারপাসের পাহাড় যেন নাকোর পাশে বাচ্চা, ওরা যেন খুব উঁচু একটা ছাদে উঠে আসে পাশের পাহাড় দেখছে। দিনের পড়ন্ত আলোর সাথে সাথে চারপাসের কন কনে ঠান্ডা হাওয়া ওদের কাঁপিয়ে দিল। নাকোর উচ্চতায় চারপাশে গাছ পালা খুব কম, ওখানকার মানুষ কিছুটা কৃষি নির্ভর আর কিছুটা পরিব্রাজকের ওপরে নির্ভর। পরে ওরা জানতে পারে যে ওখানকার মানুষ মটরশুঁটি, ফুলকপি, আলু ইত্যাদির চাষ করে।

শীতকালের সেই সময়ে হোটেল পেতে ওদের কোন আসুবিধা হলো না, খুব সহজেই ওরা রুম পেয়ে গেল কেননা ওটা ভ্রমণের মরশুম নয় এবং এই জায়গায় খুব কম পর্যটক ঘুরতে আসে। অভি জিজ্ঞেস করলো যে নাকোতে বরফপাত হয় কিনা, ম্যানেজার জানালো যে বছর বছর বৃষ্টি হয় না এখানে তো বরফ কি করে পড়বে। কিন্তু শীতের সময়ে এখানে তাপমান শূন্যের চেয়ে অনেক নিচে নেমে যায়। ওদেরকে সাবধান করে দিল যে রাতে যেন বাইরে না বের হয়, ঠান্ডার চোটে শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে। রুমের মধ্যে একটা কাঠের ফায়ারপ্লেস ছিল আর অনেক জ্বালানি কাঠ। এখানে বিজলি বাতির বেশ সমস্যা। একবার বিজলি চলে গেলে আসতে বেশ কয়েক দিন লেগে যায়।

অভি ঠিক করলো যে রাতের খাবার পরে পরীকে সেই বুদ্ধের মূর্তিটা উপহার দিয়ে চমকে দেবে। কিন্তু এই উচ্চতা আর লম্বা রাস্তা পরী খুব ক্লান্ত করে দিয়েছে। বেচারা পরী রাতে ঠিক ভাবে কিছু না খেয়ে শুয়ে পড়লো। অভির মনে একটু ভয় ঢুকলো, একদম কাছের শহর রেকং পিও, নাকো থেকে প্রায় ঘন্টা চারেকের রাস্তা, পরীর কিছু হলে বেশ মুশকিলে পড়তে হবে। অভি ওর সাথে প্রাথমিক কিছু ওষুধ পত্র এনেছিল, গায়ে ব্যাথার ওষুধ খেয়ে খেয়ে পরী লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।

পরীর দাঁত ঠান্ডায় কাঁপতে লাগল, “অভি, আমার খুব শীত করছে।”

অভির একবার দুষ্টুমি করার মন হলো, “দাড়াও আমি তোমাকে আবার গরম করে দিচ্ছি।”

পরী ওর মনোভাব বুঝতে পেরে চিৎকার করে ওঠে, “অভি না, আমি খুব ক্লান্ত, আমার শরীর খারাপ লাগছে। তুমি না ভীষণ শয়তান ছেলে।”

অভিঃ “দেখ আমি তো শয়তানি এখনো করিনি কিন্তু তোমার মাথায় শুধু দুষ্টুমির কথা ঘুরে বেড়ায়। তাহলে কে বেশি দুষ্টু মিষ্টি খেলা করতে ভালবাসে?”

“তোমার মাথায় সবসময়ে শুধু শয়তানি বুদ্ধি ঘোরে।” পরী ওর দিকে মৃদু রেগে গিয়ে, “তুমিই তো সবসময় ফাঁক খুঁজতে থাক কখন আমার সাথে একটু বদমাশি করবে। খালি আদর খাবার জন্য মন আনচান করে তোমার তাই না।”

পরীর শরীরে এই অবস্থা দেখে অভির একটু কষ্ট হলো। ম্যানেজারকে বলে একটু সরসের তেল চাইলো, মোমবাতির আলোতে তেল গরম করে ওর পায়ের পাতার ওপরে মালিশ করে দিতে শুরু করলো।

অভিঃ “দেখ পরী, আমি কত ভালো, আমি তোমাকে কি শুধু ওই ভাবে গরম করার কথা বলেছি?”

হাতে তেল দেখে আর পায়ের ওপরে তেল মালিশ পেয়ে পরীর বেশ আরাম লাগল। আর পা ছাড়ালো না পরী, ওর কোলে পা দিয়ে বললো, “তুমি তো আমার ছোট্ট রাজকুমার আমি জানি যে তুমি আমার খেয়াল রাখবে।”

অভিঃ “তোমার পায়ের পাতা গুলো কি নরম আর ফর্সা।”

অভি পা মালিশ করার পরে পরীকে বললো যে জামা খুলে শুয়ে পড়তে যাতে ও ওর পিঠের ওপরে তেল মালিশ করে দিতে পারে। পরী লজ্জা পেয়ে বললো যে, না ও জামা কাপড় খুলবে না, অভিকে ডাক দিল ওর পাশে এসে শুতে। অভি যত বার বললো যে ও কোন শয়তানি করবে না, কিন্তু পরী শুনলো না। অগত্যা অভি লেপের মধ্যে ঢুকে পড়লো। পরী ওর গায়ের ওপরে লেপ টেনে দিয়ে ওর মাথা নিজের বুকের ওপরে রেখে শুয়ে পড়লো। অভি পরীর বুকে মুখ গুঁজে গায়ের গন্ধ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

শুক্রবার সকাল, আগের দিনের থেকে রোদে খানিকটা তেজ বেড়েছে। পরিষ্কার আকাশে, ঝলমলে রোদের সাথে পরীর রাতের ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। সকালের খাওয়া সারার পরে অভি ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিল যে নাকোতে একটা সুন্দর বৌদ্ধ ধর্মের মন্দির আর মঠ আছে আর একটা ছোটো হ্রদ।

সারা সকাল ওরা নাকো ঘুরে বেড়াল। খুব ছোটো গ্রাম নাকো, ঘুরতে বেশি সময় লাগে না। নাকো হ্রদ বেশ ছোটো আর খুব সুন্দর। জলের রঙ সবুজ আর চারপাশে ছোটো ছোটো গাছে ভরা। দূর পাহাড়ের কোলে বেশ কিছু সাদা রঙের স্তুপ দেখে পরী অভিকে জিজ্ঞেস করলো ওগুলোর ব্যাপারে। অভি অনেকক্ষণ তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলো যে ওই স্তুপ গুলো কি, তারপরে মনে পড়লো যে স্কুল থেকে একবার ওরা সাঁচি গেছিলো ঘুরতে সেখানে ও বৌদ্ধদের স্তপ দেখেছে। অভি উত্তর দিল যে ওগুলো হয়তো বৌদ্ধ ধর্মের স্তুপ। পরী ওর কথা শুনে অবাক হয়ে গেল, ছেলেটা কি না জানে।

মিষ্টি হেসে বললো, “তুমি আমার অভিধান, তুমি এত খবর রাখো কোথায় সোনা।”

অভি পরীর বুকে আলতো করে টোকা মেরে বলে, “এখানে রাখি আর দরকার পড়লে বের করে নেই।”

বৌদ্ধদের মঠ খানি গ্রামের এক প্রান্তে, পাহাড়ের কোলে একটি সমতল ভুমির ওপরে স্থাপিত। অনেক ছোটো মঠ কিন্তু বেশ সুন্দর সাজানো গোছানো। অনেক পুরানো এই মঠ, নতুন মঠের তাঁর পাশে, নতুন মঠের জন্য অস্ট্রিয়া সরকার টাকা দান করেছে। মঠের একদম শেষে নেমে গেছে খাড়া পাহাড়, নিচে স্পিতি নদীর তীরে। পাহাড়ের কোলে স্থিত নাকো গ্রাম ঘুরে ওদের মন হলো যেন পটে আঁকা একটি ছোটো গ্রাম। এই রুক্ষ ভুমির মাঝে একটা ছোটো মরুদ্যান এই গ্রাম। আশেপাশের কোন পাহাড়ে কোন গাছ পালা নেই কিন্তু এই গ্রামে কিছু গাছ পালা আছে।

অভি দুরে উঁচুতে ওই স্তুপ গুলোর দিকে দেখিয়ে পরীকে জিজ্ঞেস করলো যে ওখানে যেতে চায় কিনা। পরী বললো যে যেখানে অভি ওকে নিয়ে যেতে চায় সেখানে নিশ্চিন্ত মনে ও যেতে রাজি। আবার কবে এখানে আসা হবে জানেনা তাই ওরা ঠিক করলো যে জায়গাটা পুরো ঘুরে দেখবে।

পাহাড় চড়তে চড়তে পরী ওকে জিজ্ঞেস করলো, “আগামি গরমের ছুটিতে এখানে আবার আসব, তখন লম্বা ছুটি নিয়ে আসব।”

অভি ওকে জড়িয়ে ধরে বললো, “ঠিক আছে আসা যাবে।”

ওরা সমতলের মানুষ, পাহাড়ে এর আগে কোনদিন আসেনি, তাই দু’জনেই বেশ হাঁপিয়ে ওঠে। স্তুপ অনেক উঁচুতে, মাঝখানে একটু থামে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। চারপাশে চেয়ে দেখে, ন্যাড়া পাহাড়, কিছু কিছু জায়গায় ছোটো ছোটো ঘাসে ভর্তি আর বাকিটা ধুসর পাথর। এদিকে বৃষ্টি বিশেষ হয় না, আর নাকো যেন এই ঠাণ্ডা মরুভুমির মাঝে একটা মরুদ্যান। পরীকে হাঁপাতে দেখে শেষ পর্যন্ত অভি ওর হাত ধরে টানতে শুরু করে।
অবশেষে স্তুপার কাছে পৌঁছে গেল। অভি আকাশের দিকে মুখ করে দু’হাত মুঠি করে মাথার ওপরে ছুঁড়ে চিৎকার করে উঠলো, “আই লাভ ইউ পরী...”

পরী অভিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো, পিঠের ওপরে মাথা রেখে গাল চেপে ধরলো পিঠে। জ্যাকেটের ওপরে ঠোঁট চেপে ফিসফিস করে বললো, “আই লাভ ইউ অভিমন্যু।”

অভি ওর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওকে দুহাতে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে, ওর গোল মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি সত্যি ভাগ্যবান পরী। এই ট্রিপে তুমি আমার পাশে আছো, এই ট্রিপটা আমার চিরকাল মনে থাকবে।”

পরী মুখ তুলে ওর দিকে তাকালো, অভি ওর মুখখানি আঁজলা করে হাতে নিয়ে ঠোঁট নামিয়ে আনলো ওর লাল নরম ঠোঁটের ওপরে। পরী ওর জ্যাকেটের কলার মুঠোর মধ্যে নিয়ে, বুড়ো আঙুলে ভর দিয়ে ঠোঁট নিয়ে গেল অভির ঠোঁটের কাছে। অভি পরীর পেছনে হাত দিয়ে চেপে ধরে, ওকে মাটি থেকে তুলে ধরলো। অভির কাঁধে হাত রেখে নিজেকে আরও উঁচুতে উঠিয়ে নিল পরী। মাথা নিচু করে অভির ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট চেপে ধরলো পরী। এক হাতে মাথার পেছনের চুল খামচে ধরলো পরী। প্রেমের চুম্বন ক্রমে ঘনিভুত হয়ে ওঠে, প্রথমে শুধু ঠোঁট নিয়ে খেলা তারপরে পরী ওর জিবের ডগা দিয়ে আলতো করে চেটে দেয় অভির অধর। দু’হাতে পরীকে প্রাণপণে চেপে ধরে অভি, চুম্বনটিকে কেউ যেন আর থামাতে চায়না। হিমশীতল হিমালয়ের ক্রোড়ে দু’জনের ঠোঁটের মাঝে যেন আগুন জ্বলে ওঠে।

বেশ খানিকক্ষণ পরে পরী শ্বাস নেবার জন্য নিরুপায় হয়ে ঠোঁট ছেড়ে দেয়। অভি ওকে তখন কোলের ওপরে উঠিয়ে, পরী ওর দিকে লাজুক হেসে মিনতি করে মাটিতে নামাতে। অভি ওর কথায় কান না দিয়ে বুকের মাঝে চেপে ধরে মুখ, উত্তপ হয়ে ওঠে পরী। অভির মাথায় উষ্ণ নিঃশ্বাস ঢেউ খেলে বেড়ায়, দুহাতে ওর মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে।

অভি দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে, “রুমে ফিরতে চাও?”

পরী ওর চোখের দুষ্টু শয়তানি চাহনি দেখে বুঝতে পারে ও কি বলতে চাইছে, লাল হয়ে ওঠে পরীর মুখ, মাথা নাড়ায় পরী, “না, তোমার কি সব সময়ে চুমু খাবার পরে ফুটবল খেলার ইচ্ছে জাগে নাকি?”

অভি ওর বুকের মাঝে নাক ঘষে বলে, “তুমি এত নরম যে আমি কিছুতেই নিজেকে সংবরণ করে রাখতে পারিনা। সবসময়ে মনে হয় তোমাকে নিয়ে...”

পরীঃ “ধুর... নামাও এবারে আমাকে, তোমার হাত ব্যাথা করবে।”

পাহাড় থেকে নিচে নামার সময়ে অভি ওর পেছনে হাত দিয়ে আলতো থাপ্পড় মারে, পরী ওর দিকে মৃদু রেগে তাকিয়ে বলে, “তুমি না সত্যি একদম যা তা। যেন কিছুতেই সবুর নেই, আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি নাকি? এই দিনের আলোতে এইরকম না করলে পারতে। আমি আর তোমার সাথে কথা বলবো না।” এই বলে পরী হাসতে হাসতে এক দৌড়ে পাহাড় থেকে নিচে নেমে গেল। দুচোখ যেন ওর দিকে বলে গেল, “ধরতে পারলে ধরো আমাকে।”

দুপুরের খাবার পরে দুজনে হোটেলের বারান্দায় বসে রোদের তাপ নেয়। অভি ওকে জিজ্ঞেস করলো যে গ্রামে আর একবার হাঁটবে কিনা, পরী মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল না, ও এখন আর ঘুরতে চায় না, চুপচাপ অভির পাশে বসে থাকতে চায়।

পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, “কাল আমরা কোথায় যাব?”

অভিঃ “কাল সকালে আমরা ফেরার পথ ধরবো। কালকের মধ্যে আমরা মনে হয় না সিমলা বা কালকা পৌঁছতে পারব তাই মাঝপথে কোথাও আমরা থেকে যাবো।”

ফিরে যাবার কথা শুনে পরীর মুখ শুকিয়ে গেল, চেয়ার থেকে উঠে অভির কোলে গিয়ে বসে পড়লো। দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে থাকে পরী।

হাল্কা হেসে ভাবাবেগে অভির কানে কানে বলে, “জানো, আমার এই সব এখনো কেন জানি না, সব স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। আমি যদি তোমাকে না পাই তাহলে কি হবে?”

অভি বুঝতে পারলো যে পরী আবেগের বশে আবার না কান্না জুড়ে দেয় তাই কথা ঘুরিয়ে দিয়ে বলে, “আবার এই সব নিয়ে কথা কেন বলতে শুরু করলে। আবার যদি শুরু কর তাহলে কোলে তুলে লেকের মধ্যে ফেলে দেব।”

পরী হেসে ফেলে, “না আমাকে আর ফেলতে হবে না”, অভির মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে মাথার চুলে গাল ঘষে দেয়। সারা বিকেল দু’জনে আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়ে সূর্য ডোবা দেখে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top