Chapter 2: অপরিজ্ঞাত যাত্রা। (#1)
কিছুদিন পরে অভি দেখলো যে ওর চোখে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চশমা নিল অভি। ওর চোখে চশমা দেখে মায়ের চিন্তা একটু বেড়ে গেল, মৃদু বকুনিও শুনতে হলো ওকে, নিজের যত্ন নেয় না খালি রাত জেগে টি.ভি দেখা। প্রথম প্রথম চশমা নিয়ে একটু অসুবিধা হতো, পরে ঠিক হয়ে গেল|
অনেক কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। বাবা মাকে কি বলে বের হবে তাঁর চিন্তা, কোথায় যাবে, কি করে যাবে তার চিন্তা, পরীকে কি করে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বার করবে তাঁর চিন্তা। ওর এক সিনিয়ার বন্ধু, সুপ্রতিমদা দিল্লীতে থাকে। নয়ডার কোন এক বড় আই.টি কম্পানিতে চাকরি করে। একদিন ওকে ফোন করলো অভি, জানালো যে ও হিমাচল ঘুরতে যেতে চায়, একটা গাড়ির ব্যাবস্থা করে দিতে হবে। সুপ্রতিমদা জানালো যে অভি ওর টাটা সাফারি নিয়ে ঘুরতে যেতে পারে, আরও জিজ্ঞেস করলো যে কাকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে, একা একা না কেউ স্পেশাল থাকবে সাথে। সুপ্রতিমদা জানতে চাইলো যে বাবা মা জানেন কিনা ওর প্রেমের ব্যাপারে। অভি বললো যে, দেখা হলে সব জানাবে, কিন্তু গাড়ি ওর কালকাতে চাই। সুপ্রতিমদা বললো, যে অনেক দিন পরে ওদের দেখা হবে সুতরাং দিল্লীতে যদি ও দেখা না করে তাহলে ও গাড়ি দেবে না।
অভি হেসে ফেললো, “ঠিক আছে বাবা আমি তোর সাথে দিল্লীতে দেখা করবো, কিন্তু গাড়ি ঠিক করে রাখিস।”
সুপ্রতিমদাঃ “তুই ব্যাটা ডুবে ডুবে কি জল খাচ্ছিস সেটা না জেনে আমি তোকে গাড়ি দেব না। গাড়ি পেতে হলে দিল্লীতে নাম তারপরে গাড়ি।”
অভিঃ “ঠিক আছে তাই হবে।”
বেশি দিন বাকি নেই, পরিকল্পনাটাকে বেশ ভাল করে ভাবতে হবে আবার। কালকা না এবারে দিল্লী যেতে হবে। একদিন রাতে খাবার টেবিলে অভি জানালো যে ও ঘুরতে যেতে চায়। একা একা আগেও ঘুরতে বেরিয়েছে ও, তাই বাবা মার কাছ থেকে অনুমতি পেতে বিশেষ অসুবিধা হলো না। বাবা জিজ্ঞেস করলেন যে কোথায় যেতে চায়। অভি জানালো যে ও হিমাচল প্রদেশে ঘুরতে যেতে চায়। বাবা প্রস্তাব দিলেন যে মানালিতে এখন বরফ পড়বে, ও যদি বরফ দেখতে চায় তাহলে মানালি, কুলু সিমলা ঘুরতে যেতে পারে। অভি বললো যে ও এমন এক জায়গায় যেতে চায় যেখানে মানুষের যাতায়াত কম। বাবা খুব ঘুরতে ভালবাসেন। বাবা আই.এ.এ.আই এর (দমদম এয়ারপোর্ট অথরিটি) উচ্চ পদস্থ অফিসার। একদিন বাবা হিমাচলের ম্যাপ নিয়ে এলেন। ম্যাপ দেখে জানালেন যে অভি সাঙলা ভ্যালিতে চিতকুল নামে এক জায়গায় ঘুরতে যেতে পারে। ওখানে মানুষের আগমন খুব কম আর শীত কালে জায়গাটা একদম খালি থাকবে। অভি এই জায়গার নাম আগে কোনদিন শোনেনি, তাও যেতে রাজি হলো এই ভেবে যে জায়গাটা একদম নিরিবিলি।
ব্যাগ গুছাতে শুরু করে দিল অভি, শীতের জামাকাপড় আর ঘুরতে যাবার সরঞ্জাম। মা প্রথমে একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন, কিন্তু অভি ওনাকে সান্তনা দিয়ে বলে, ও আগেও একা একা ঘুরতে গেছে তাই যেন চিন্তা না করে। এবারে চিন্তা হচ্ছে পরীকে কি করে কালকা স্টেশান থেকে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বের করা যায়। যাবার আগে আর দাড়ি কামালো না, গাল ভর্তি গোঁফ দাড়ি, চোখে চশমা, একদিন আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পারলো না অভি। ছদ্মবেশটা বেশ ভাল লাগল অভির। মা ওকে দেখে রেগে গিয়ে দাড়ি কাটার জন্য বললেন।
চিতকুলে একা অভি আর পরী থাকবে, হয়তো আর কোন লোকজনের দেখা পাবে না। রাত একসাথে এক ঘরের মধ্যে কাটাবে, অভির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। কামনার আগুনে পুড়ে অভি আর পরী শুধু মাত্র যে চুম্বনে বা আলিঙ্গনে থেমে থাকবে না সেটা অনুধাবন করতে অসুবিধে হলো না। অভি সেই মিলন রাতের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিল। যত দিন এগোয় অভির বুকের ধুকপুকানি বেড়ে চলে, পরীর সাথে একা একা ঘুরতে যাওয়ার কথা ভেবে, প্রথম মিলনের রাতের কথা ভেবে, কি করে প্রেমে ভালবাসায় পরীকে ভরিয়ে তুলবে সেই কথা ভেবে রাত আর কাটতে চায় না।
যাবার আগেও মা বললেন ওকে দাড়ি কাটতে, মাকে বললো যে দিল্লী নেমে ও সুপ্রতিমদার বাড়িতে যাবে; সেখানে স্নান খাওয়া দাওয়া সেরে তবে গাড়ি নিয়ে হিমাচলের যাত্রা করবে। যাবার আগে বাবা ওর হাতে একটা খাম দিয়ে বললেন যে ওতে হাজার আটেক টাকা আছে।
অবশেষে এলো ঘুরতে যাবার দিন। দুপুরের ফ্লাইটে চেপে অভি দিল্লীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। রবিবার ভোররাতেই পরী কালকা স্টেশানে পৌঁছে যাবে। অভির বিশ্বাস যে পরী ওর জন্য অপেক্ষা করবে, কিন্তু পরী যে জানেনা যে অভি প্লেনে করে দিল্লী আসছে।
দিল্লী নেমে সুপ্রতিমদার সাথে দেখা হলো। সুপ্রতিমদার বাড়ি চিত্তরঞ্জন পার্কে, ওর বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম করে নিল। গল্পের ছলে সুপ্রতিমদা ওর ভালবাসার কথা জানতে চাইলো। পরীর কথা বললো সুপ্রতিমদাকে কিন্তু অতি সতর্কতা করে অভি পরীর আর মায়ের সম্পর্ক এড়িয়ে গেল।
সুপ্রতিমদা অবিবাহিত, অভি ওকে জিজ্ঞেস করলো, “তুই আর কত দিন একা একা থাকবি? এবারে বিয়েটা করে ফেল।”
সুপ্রতিমদাঃ “ধুর বাবা বিয়ে করে কি হবে, টাইম পাসের জন্য তো পাওয়া যায় রে।” দুজনেই হেসে ফেললো।
সুপ্রতিমদাঃ “তাহলে চিতকুল যাচ্ছিস? কোথায় সেটা?”
অভিঃ “হিমাচলের এক কোনায়, সাঙলা ভ্যালি নামে এক ভ্যালিতে।”
সুপ্রতিমদাঃ “মানালি বা ডালহাউসি যেতে পারতিস।”
অভিঃ “না পরীর বান্ধবীরা মানালি যাচ্ছে, পরীর ইচ্ছে আমরা এমন এক জায়গায় যাই যেখানে কেউ থাকবে না। অনেক ভেবে চিন্তে এই জায়গাটা বেছেছি।”
সুপ্রতিমদা বললো যে ওর ড্রাইভার বলবিন্দার অভির সাথে যাবে। বেশ মিশুকে লোক, ভাল ড্রাইভার আর ঘুরতেও ভালবাসে। অভি বা পরীর কোন চিন্তা করার দরকার নেই। সুপ্রতিমদা আরোও বললো যে দিল্লী থেকে কালকা প্রায় ঘন্টা আটেকের রাস্তা, বিকেল বিকেল বেরিয়ে পড়তে পারলে মাঝ রাতের মধ্যে কালকা পৌঁছে যাবে। রাতের বেলা ড্রাইভ করাটা যদিও একটু মুশকিল হতে পারে, একে শীতকাল রাস্তায় রাতে কুয়াশা হতে পারে আর ট্রাক বা বাস তো আছেই। অভিকে জিজ্ঞেস করলো যে পর্যাপ্ত গরমের পোশাক এনেছে কিনা।
বিকেল বেলায় অজানার পানে যাত্রা হলো শুরু। দিল্লী থেকে গাড়ি ছাড়লো বিকেল ছটার মধ্যে, ঘন্টা দুয়েক পরেই গাড়ি দৌড়াতে শুরু করলো হাইওয়ে ধরে। এক মিনিট পারো হচ্ছে আর অভির ধুকপুকানি বেড়ে চলেছে, সকাল বেলায় দেখা হবে পরীর সাথে। অভি বলবিন্দর কে বললো যে ও গাড়ি চালাবে। বলবিন্দর ওকে সাবধান করে বললো যে রাতে কুয়াশা আর ট্রাক দেখে যেন গাড়ি চালায়। অভি বললো যে পাহাড়ে ও গাড়ি চালাতে পারবেনা কিন্তু সমতলে ওর হাত নিখুঁত।
সনেপত পেরোনোর পরে বলবিন্দার ওকে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসতে দিল। অভি স্টিয়ারিংয়ে বসেই গাড়ি ছুটিয়ে দিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই কাটা আশি ছাড়িয়ে একশো। বলবিন্দার বললো যে ওর শুধু মাত্র দু’ বোতল চাই তাহলেই ওর পারিশ্রমিক হয়ে যাবে। আম্বালাতে থেমে ওরা এলকোহল কিনে নেবে এই ঠিক হলো।
বলবিন্দার ওকে জিজ্ঞেস করলো, “স্যারজি, ভাভি জি কি করেন?”
“ভাভিজি” কথাটা শুনে মনে মনে হেসে ওঠে অভি, “ভাভি জি এই সবে কলেজ থেকে পাশ করেছে।”
বলবিন্দারঃ “ট্রেন কালকা স্টেশানে কখন পৌঁছাবে?”
অভিঃ “হাওড়া কালকা মেলে আসছে ভাভিজি। সম্ভবত সকাল চারটে কি সাড়ে চারটেতে পৌঁছবে।”
বলবিন্দারঃ “কালকা মেল, তাহলে লেট করবে স্যারজি, চিন্তা নেই আপনি আস্তে চালান।”
অভির মন মানে না, যদি ট্রেন আগে এসে পৌঁছে গিয়ে থাকে, যদি পরী ট্রেন থেকে নেমে ওকে দেখতে না পায়, তাহলে কি করবে। অভি বলবিন্দারকে বলে, “না আমি কোন ঝুঁকি নিতে চাই না। আমি আগেভাগে স্টেশানে পৌঁছাতে চাই, তাতে যদি আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তা আমি দাঁড়িয়ে থাকব।”
ঠাণ্ডার অন্ধকার রাত কেটে গাড়ি সোঁ সোঁ করে এগিয়ে চলে অচেনা গন্তব্য স্থলের পানে। জানে না অভি কোথায় যাচ্ছে, অভি কোনদিন হিমাচলে আগে আসেনি আর পরীও কোনদিন পাহাড় দেখেনি। সোঁ সোঁ করে ট্রাক বাসকে টপকে গাড়ি কুয়াশা আর অন্ধকার কেটে ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে। একটানা গাড়ি চালিয়ে অভির মাঝে একটু ঝিম ধরে গেল, রাত দশটা নাগাদ, মাঝখানে এক জায়গায় থেমে বলবিন্দার আর অভি একটু চা খেয়ে নিল।
গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো। কুয়াশা দেখে বলবিন্দার ওকে আস্তে চালাতে বললো। গাড়ি ধিরে ধিরে চালাচ্ছে অভি। বলবিন্দার ওকে বললো যে আম্বালা পৌঁছে যেন ফ্লাই ওভারে না চড়ে। ফ্লাই ওভারের নিচ দিয়ে শহরে ঢুকে ওরা দু বোতল এলকোহল কিনে নিল।
বলবিন্দারঃ “স্যারজি, আমরা অনেক তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাব তো। আপনি পিঞ্জোর পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যান তারপরে আমি চালাব খনে।”
অভি জানালো যে আগে কোনদিন এদিকে আসেনি তাই ও রাস্তা ঘাট চেনেনা। বলবিন্দার বললো যে সিমলা পর্যন্ত রাস্তা ওর চেনা, তারপরে না হয় লোকজনকে জিজ্ঞেস করে রাস্তা জেনে নেওয়া যাবে। আম্বালা ছাড়িয়ে গাড়ি এন.এইচ.1 ছেড়ে এন.এইচ.22 ধরলো। পিঞ্জোর ছাড়াতেই বলবিন্দার গাড়ি চালাতে শুরু করলো। পাসের সিটে বসে অভি চোখ বন্ধ করে মাথা পেছন দিকে হেলিয়ে দিয়ে একটু বিশ্রাম নিল।
কিছুদিন পরে অভি দেখলো যে ওর চোখে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চশমা নিল অভি। ওর চোখে চশমা দেখে মায়ের চিন্তা একটু বেড়ে গেল, মৃদু বকুনিও শুনতে হলো ওকে, নিজের যত্ন নেয় না খালি রাত জেগে টি.ভি দেখা। প্রথম প্রথম চশমা নিয়ে একটু অসুবিধা হতো, পরে ঠিক হয়ে গেল|
অনেক কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। বাবা মাকে কি বলে বের হবে তাঁর চিন্তা, কোথায় যাবে, কি করে যাবে তার চিন্তা, পরীকে কি করে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বার করবে তাঁর চিন্তা। ওর এক সিনিয়ার বন্ধু, সুপ্রতিমদা দিল্লীতে থাকে। নয়ডার কোন এক বড় আই.টি কম্পানিতে চাকরি করে। একদিন ওকে ফোন করলো অভি, জানালো যে ও হিমাচল ঘুরতে যেতে চায়, একটা গাড়ির ব্যাবস্থা করে দিতে হবে। সুপ্রতিমদা জানালো যে অভি ওর টাটা সাফারি নিয়ে ঘুরতে যেতে পারে, আরও জিজ্ঞেস করলো যে কাকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে, একা একা না কেউ স্পেশাল থাকবে সাথে। সুপ্রতিমদা জানতে চাইলো যে বাবা মা জানেন কিনা ওর প্রেমের ব্যাপারে। অভি বললো যে, দেখা হলে সব জানাবে, কিন্তু গাড়ি ওর কালকাতে চাই। সুপ্রতিমদা বললো, যে অনেক দিন পরে ওদের দেখা হবে সুতরাং দিল্লীতে যদি ও দেখা না করে তাহলে ও গাড়ি দেবে না।
অভি হেসে ফেললো, “ঠিক আছে বাবা আমি তোর সাথে দিল্লীতে দেখা করবো, কিন্তু গাড়ি ঠিক করে রাখিস।”
সুপ্রতিমদাঃ “তুই ব্যাটা ডুবে ডুবে কি জল খাচ্ছিস সেটা না জেনে আমি তোকে গাড়ি দেব না। গাড়ি পেতে হলে দিল্লীতে নাম তারপরে গাড়ি।”
অভিঃ “ঠিক আছে তাই হবে।”
বেশি দিন বাকি নেই, পরিকল্পনাটাকে বেশ ভাল করে ভাবতে হবে আবার। কালকা না এবারে দিল্লী যেতে হবে। একদিন রাতে খাবার টেবিলে অভি জানালো যে ও ঘুরতে যেতে চায়। একা একা আগেও ঘুরতে বেরিয়েছে ও, তাই বাবা মার কাছ থেকে অনুমতি পেতে বিশেষ অসুবিধা হলো না। বাবা জিজ্ঞেস করলেন যে কোথায় যেতে চায়। অভি জানালো যে ও হিমাচল প্রদেশে ঘুরতে যেতে চায়। বাবা প্রস্তাব দিলেন যে মানালিতে এখন বরফ পড়বে, ও যদি বরফ দেখতে চায় তাহলে মানালি, কুলু সিমলা ঘুরতে যেতে পারে। অভি বললো যে ও এমন এক জায়গায় যেতে চায় যেখানে মানুষের যাতায়াত কম। বাবা খুব ঘুরতে ভালবাসেন। বাবা আই.এ.এ.আই এর (দমদম এয়ারপোর্ট অথরিটি) উচ্চ পদস্থ অফিসার। একদিন বাবা হিমাচলের ম্যাপ নিয়ে এলেন। ম্যাপ দেখে জানালেন যে অভি সাঙলা ভ্যালিতে চিতকুল নামে এক জায়গায় ঘুরতে যেতে পারে। ওখানে মানুষের আগমন খুব কম আর শীত কালে জায়গাটা একদম খালি থাকবে। অভি এই জায়গার নাম আগে কোনদিন শোনেনি, তাও যেতে রাজি হলো এই ভেবে যে জায়গাটা একদম নিরিবিলি।
ব্যাগ গুছাতে শুরু করে দিল অভি, শীতের জামাকাপড় আর ঘুরতে যাবার সরঞ্জাম। মা প্রথমে একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন, কিন্তু অভি ওনাকে সান্তনা দিয়ে বলে, ও আগেও একা একা ঘুরতে গেছে তাই যেন চিন্তা না করে। এবারে চিন্তা হচ্ছে পরীকে কি করে কালকা স্টেশান থেকে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বের করা যায়। যাবার আগে আর দাড়ি কামালো না, গাল ভর্তি গোঁফ দাড়ি, চোখে চশমা, একদিন আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পারলো না অভি। ছদ্মবেশটা বেশ ভাল লাগল অভির। মা ওকে দেখে রেগে গিয়ে দাড়ি কাটার জন্য বললেন।
চিতকুলে একা অভি আর পরী থাকবে, হয়তো আর কোন লোকজনের দেখা পাবে না। রাত একসাথে এক ঘরের মধ্যে কাটাবে, অভির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। কামনার আগুনে পুড়ে অভি আর পরী শুধু মাত্র যে চুম্বনে বা আলিঙ্গনে থেমে থাকবে না সেটা অনুধাবন করতে অসুবিধে হলো না। অভি সেই মিলন রাতের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিল। যত দিন এগোয় অভির বুকের ধুকপুকানি বেড়ে চলে, পরীর সাথে একা একা ঘুরতে যাওয়ার কথা ভেবে, প্রথম মিলনের রাতের কথা ভেবে, কি করে প্রেমে ভালবাসায় পরীকে ভরিয়ে তুলবে সেই কথা ভেবে রাত আর কাটতে চায় না।
যাবার আগেও মা বললেন ওকে দাড়ি কাটতে, মাকে বললো যে দিল্লী নেমে ও সুপ্রতিমদার বাড়িতে যাবে; সেখানে স্নান খাওয়া দাওয়া সেরে তবে গাড়ি নিয়ে হিমাচলের যাত্রা করবে। যাবার আগে বাবা ওর হাতে একটা খাম দিয়ে বললেন যে ওতে হাজার আটেক টাকা আছে।
অবশেষে এলো ঘুরতে যাবার দিন। দুপুরের ফ্লাইটে চেপে অভি দিল্লীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। রবিবার ভোররাতেই পরী কালকা স্টেশানে পৌঁছে যাবে। অভির বিশ্বাস যে পরী ওর জন্য অপেক্ষা করবে, কিন্তু পরী যে জানেনা যে অভি প্লেনে করে দিল্লী আসছে।
দিল্লী নেমে সুপ্রতিমদার সাথে দেখা হলো। সুপ্রতিমদার বাড়ি চিত্তরঞ্জন পার্কে, ওর বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম করে নিল। গল্পের ছলে সুপ্রতিমদা ওর ভালবাসার কথা জানতে চাইলো। পরীর কথা বললো সুপ্রতিমদাকে কিন্তু অতি সতর্কতা করে অভি পরীর আর মায়ের সম্পর্ক এড়িয়ে গেল।
সুপ্রতিমদা অবিবাহিত, অভি ওকে জিজ্ঞেস করলো, “তুই আর কত দিন একা একা থাকবি? এবারে বিয়েটা করে ফেল।”
সুপ্রতিমদাঃ “ধুর বাবা বিয়ে করে কি হবে, টাইম পাসের জন্য তো পাওয়া যায় রে।” দুজনেই হেসে ফেললো।
সুপ্রতিমদাঃ “তাহলে চিতকুল যাচ্ছিস? কোথায় সেটা?”
অভিঃ “হিমাচলের এক কোনায়, সাঙলা ভ্যালি নামে এক ভ্যালিতে।”
সুপ্রতিমদাঃ “মানালি বা ডালহাউসি যেতে পারতিস।”
অভিঃ “না পরীর বান্ধবীরা মানালি যাচ্ছে, পরীর ইচ্ছে আমরা এমন এক জায়গায় যাই যেখানে কেউ থাকবে না। অনেক ভেবে চিন্তে এই জায়গাটা বেছেছি।”
সুপ্রতিমদা বললো যে ওর ড্রাইভার বলবিন্দার অভির সাথে যাবে। বেশ মিশুকে লোক, ভাল ড্রাইভার আর ঘুরতেও ভালবাসে। অভি বা পরীর কোন চিন্তা করার দরকার নেই। সুপ্রতিমদা আরোও বললো যে দিল্লী থেকে কালকা প্রায় ঘন্টা আটেকের রাস্তা, বিকেল বিকেল বেরিয়ে পড়তে পারলে মাঝ রাতের মধ্যে কালকা পৌঁছে যাবে। রাতের বেলা ড্রাইভ করাটা যদিও একটু মুশকিল হতে পারে, একে শীতকাল রাস্তায় রাতে কুয়াশা হতে পারে আর ট্রাক বা বাস তো আছেই। অভিকে জিজ্ঞেস করলো যে পর্যাপ্ত গরমের পোশাক এনেছে কিনা।
বিকেল বেলায় অজানার পানে যাত্রা হলো শুরু। দিল্লী থেকে গাড়ি ছাড়লো বিকেল ছটার মধ্যে, ঘন্টা দুয়েক পরেই গাড়ি দৌড়াতে শুরু করলো হাইওয়ে ধরে। এক মিনিট পারো হচ্ছে আর অভির ধুকপুকানি বেড়ে চলেছে, সকাল বেলায় দেখা হবে পরীর সাথে। অভি বলবিন্দর কে বললো যে ও গাড়ি চালাবে। বলবিন্দর ওকে সাবধান করে বললো যে রাতে কুয়াশা আর ট্রাক দেখে যেন গাড়ি চালায়। অভি বললো যে পাহাড়ে ও গাড়ি চালাতে পারবেনা কিন্তু সমতলে ওর হাত নিখুঁত।
সনেপত পেরোনোর পরে বলবিন্দার ওকে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসতে দিল। অভি স্টিয়ারিংয়ে বসেই গাড়ি ছুটিয়ে দিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই কাটা আশি ছাড়িয়ে একশো। বলবিন্দার বললো যে ওর শুধু মাত্র দু’ বোতল চাই তাহলেই ওর পারিশ্রমিক হয়ে যাবে। আম্বালাতে থেমে ওরা এলকোহল কিনে নেবে এই ঠিক হলো।
বলবিন্দার ওকে জিজ্ঞেস করলো, “স্যারজি, ভাভি জি কি করেন?”
“ভাভিজি” কথাটা শুনে মনে মনে হেসে ওঠে অভি, “ভাভি জি এই সবে কলেজ থেকে পাশ করেছে।”
বলবিন্দারঃ “ট্রেন কালকা স্টেশানে কখন পৌঁছাবে?”
অভিঃ “হাওড়া কালকা মেলে আসছে ভাভিজি। সম্ভবত সকাল চারটে কি সাড়ে চারটেতে পৌঁছবে।”
বলবিন্দারঃ “কালকা মেল, তাহলে লেট করবে স্যারজি, চিন্তা নেই আপনি আস্তে চালান।”
অভির মন মানে না, যদি ট্রেন আগে এসে পৌঁছে গিয়ে থাকে, যদি পরী ট্রেন থেকে নেমে ওকে দেখতে না পায়, তাহলে কি করবে। অভি বলবিন্দারকে বলে, “না আমি কোন ঝুঁকি নিতে চাই না। আমি আগেভাগে স্টেশানে পৌঁছাতে চাই, তাতে যদি আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তা আমি দাঁড়িয়ে থাকব।”
ঠাণ্ডার অন্ধকার রাত কেটে গাড়ি সোঁ সোঁ করে এগিয়ে চলে অচেনা গন্তব্য স্থলের পানে। জানে না অভি কোথায় যাচ্ছে, অভি কোনদিন হিমাচলে আগে আসেনি আর পরীও কোনদিন পাহাড় দেখেনি। সোঁ সোঁ করে ট্রাক বাসকে টপকে গাড়ি কুয়াশা আর অন্ধকার কেটে ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে। একটানা গাড়ি চালিয়ে অভির মাঝে একটু ঝিম ধরে গেল, রাত দশটা নাগাদ, মাঝখানে এক জায়গায় থেমে বলবিন্দার আর অভি একটু চা খেয়ে নিল।
গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো। কুয়াশা দেখে বলবিন্দার ওকে আস্তে চালাতে বললো। গাড়ি ধিরে ধিরে চালাচ্ছে অভি। বলবিন্দার ওকে বললো যে আম্বালা পৌঁছে যেন ফ্লাই ওভারে না চড়ে। ফ্লাই ওভারের নিচ দিয়ে শহরে ঢুকে ওরা দু বোতল এলকোহল কিনে নিল।
বলবিন্দারঃ “স্যারজি, আমরা অনেক তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাব তো। আপনি পিঞ্জোর পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যান তারপরে আমি চালাব খনে।”
অভি জানালো যে আগে কোনদিন এদিকে আসেনি তাই ও রাস্তা ঘাট চেনেনা। বলবিন্দার বললো যে সিমলা পর্যন্ত রাস্তা ওর চেনা, তারপরে না হয় লোকজনকে জিজ্ঞেস করে রাস্তা জেনে নেওয়া যাবে। আম্বালা ছাড়িয়ে গাড়ি এন.এইচ.1 ছেড়ে এন.এইচ.22 ধরলো। পিঞ্জোর ছাড়াতেই বলবিন্দার গাড়ি চালাতে শুরু করলো। পাসের সিটে বসে অভি চোখ বন্ধ করে মাথা পেছন দিকে হেলিয়ে দিয়ে একটু বিশ্রাম নিল।