What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (11 Viewers)

কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#15)

ঝলসে উঠলো রিতিকা, “না বেবি আমার হয়ে গেছে। আমাকে ছেড়ে তুমি কি করে ঘুমাতে পার আমি দেখে নেব।”

বেশ কিছুক্ষণ পরে বাথরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এল রিতিকা, পরনে ফিনফিনে একটা স্লিপ, ঠিক পাছার কাছে এসে থেমে গেছে। দু’হাত মাথার ওপরে তুলে দেবেশের দিকে মিচকি হেসে তাকিয়ে আছে রিতিকা, “হানি আই এম রেডি টু স্লীপ।”

রিতিকা স্লিপের নিচে ব্রা পরেনি। স্লিপের ভেতর থেকে পরিস্কার ভাবে সুগোল স্তনের আকার পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে ফুটে ওঠা স্তনের বোঁটা। এই দৃশ্য দেখে তোয়ালের ভেতর দেবেশের বাবাজি তো একদম শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। এক’পা এক’পা করে রিতিকা বিছানার দিকে এগোচ্ছে আর ঠোঁটে লেগে আছে অজানা আনন্দের হাসি। দেবেশ কাম জ্বালায় জ্বলে গেল, তোয়ালের ফাঁক দিয়ে দেবেশের ফুলে থাকা লিঙ্গটা বেরিয়ে পড়লো। রিতিকা চোখের সামনে তপ্ত লৌহ শলাকা দেখে কেঁপে উঠলো।

দেবেশ আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে রিতিকাকে বাহু পাশে জড়িয়ে ধরলো। রিতিকার হাত দেবেশের পিঠের ওপরে চলে গেল আর নখ দিয়ে আলতো করে আঁচড়ে দিল দেবেশের চওড়া পিঠ। দেবেশের লিঙ্গ রিতিকার ছোটো গোল পেটের ওপরে ধাক্কা মারছে। গরম শলাকার স্পর্শ পেয়ে রিতিকার সারা শরীর কেঁপে উঠছে বারে বারে। দেবেশ রিতিকার মুখ হাতের মাঝে নিয়ে ওপর দিকে করলো, মাথা নামিয়ে আনলো রিতিকার গোলাপি ঠোঁটের ওপরে। রিতিকার শ্বাস ঘন হয়ে উঠেছে, দেবেশ আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল রিতিকার মধুময় ঠোঁট জোড়ার ওপরে, সাথে সাথে রিতিকা নিজেকে ঠেলে দিল দেবেশের বুকের ওপরে, পিষে দিল নিজের কোমল তুলতুলে স্তন জোড়া। রিতিকা পাগলের মতন দেবেশের ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মধ্যে নিয়ে চুমু খাচ্ছে আর চুষছে। দেবেশের হাত চলে গেল রিতিকার নধর পাছার ওপরে, তুলতুলে নরম কচি পাছা, মসৃণ ত্বক গরম হয়ে উঠেছে প্রেমের খেলাতে। দেবেশ থাবায় করে রিতিকার পাছা ধরে কাছে টেনে নিলো যার ফলে লিঙ্গটি গিয়ে ধাক্কা মারলো রিতিকার নাভিতে। রিতিকার হাত দেবেশের কোমরে, তোয়ালে খুলে ফেললো রিতিকা। দেবেশ খামচে ধরলো রিতিকার নগ্ন পাছা, নিচে কিছুই পরেনি রিতিকা, আগে থেকে তৈরি যেন। রতিক্রীড়ায় যেন কাপড় খুলতে বিশেষ সময় না নেয় সেই প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে রেখেছিল রিতিকা। দেবেশ রিতিকার শরীর থেকে এক টানে স্লিপটা খুলে ফেললো, চোখের সামনে নগ্ন লিঙ্গ আর নগ্ন যোনি। একে অপরের সাথে মিলিত হবার জন্য উন্মুখ।

রিতিকাকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিল দেবেশ, তারপরে উঠে এল রিতিকার কোমল নধর শরীরের ওপরে। পা ফাঁক করে দেবেশকে আহ্বান জানালো রিতিকা, লিঙ্গ সোজা গিয়ে রিতিকার সিক্ত যোনি মুখে ধাক্কা খেল। রিতিকার চোখে প্রেমের জল, সারা শরীরে প্রত্যেকটি রোমকুপ খাড়া হয়ে গেছে ওর। আজ ও এক মত্ত খেলায় খেলবে দেবেশের সাথে।

দেবেশ কোমর উচু করে লিঙ্গটি চেপে ধরলো রিতিকার যোনির মুখে, সিক্ত যোনির ফোলা ফোলা পাপড়ি লিঙ্গের লাল মাথার স্পর্শে গরম হয়ে উঠেছে। বড় বড় চোখ করে তাকালো দেবেশে মুখের দিকে, ঠোঁটে কামনার আগুন, ঠোঁট দুটি আলতো করে খুলে প্রেমঘন স্বরে বললো, “নিয়ে নাও আমাকে, আমি আজ থেকে তোমার দেবেশ...”

দেবেশ আস্তে আস্তে লিঙ্গটি রিতিকার যোনি গর্ভে আমুল প্রবেশ করিয়ে দিল। ফুলে থাকা পাপড়ি আর যোনির দেয়াল যেন ফেটে উঠলো শক্ত শলাকার উত্তপ্ত ছোঁয়ায়। একটু ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো রিতিকা, নিচের ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলে নিলো। দেবেশের হাতেখড়ি ঠিক যেমন করে হয়েছিল দেবেশ বেশ পাকা পোক্ত খেলোয়াড়ের মতন করে রিতিকার কোমল শরীর নিয়ে খেলতে শুরু করে দিল। একবার দেবেশ নিচে, একবার রিতিকা নিচে, সারা রাত ধরে আস্তে আস্তে খেলে নিজেদের সর্ব শক্তিটুকু নিঃশেষ করে একে অপরের বাহুপাশে নিবিড় আলিঙ্গনে ঘুমিয়ে পড়লো।

পরপর দুই রাত তিন দিন দেবেশ রিতিকা ঘর ছেড়ে আর বের হলোনা, নিজেদের শরীর নিয়ে দিন রাত খেলে গেল।

শেষ রাতে খেলার পরে, দেবেশের চওড়া বুকের ওপরে মাথা রেখে শুয়ে আছে রিতিকা। তর্জনীর নখের ডগা দিয়ে দেবেশের বুকের ওপরে বিলি কেটে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো, “হানি, এবারে তো আর কলকাতা যাবে না।”

আদর করে জড়িয়ে ধরলো রিতিকাকে, “না বেবি তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবোনা।”

রিতিকা দেবেশকে বললো, “বাবাকে বলতে হবে, তার আগে একটা খুব বড় চাকরি পেতে হবে হানি।”

দেবেশ আস্বস্ত সুরে উত্তর দিল, “বেবি আই আই টি থেকে পাশ করে সবাই ভাল চাকরি পায়, এত চিন্তা করছো কেন।”

“উম্মম সেই জন্য তো আমি তোমাকে এত ভালবাসি।” বুকের ওপরে চুমু খেল রিতিকা।

ঠিক মঙ্গলবারে দিল্লী পৌঁছে গেল ওরা। যথারিতি নিজের নিজের কলেজে ব্যাস্ত হয়ে গেল, প্রেমের গঙ্গায় জোয়ারে এল। সারা ক্যাম্পাস জেনে গেছে যে উপাধ্যায় স্যারের হবু ছোটো জামাই দেবেশ ঘোষাল। তা নিয়ে রিতিকার বা দেবেশের কারুর বিশেষ মাথা ব্যাথা নেই।

দেখতে দেখতে এসে গেল ফাইনাল সেমেস্টার। সামনে ক্যাম্পাস শুরু হবে কয়েক দিন পরে। দেবেশ খবর নিয়ে জানল বিদেশি কিছু কম্পানি আসছে ক্যাম্পাসে। তার মধ্যে একটা ইউরোপিয়ান কম্পানি আছে।

একদিন বিকেল বেলায় দুজনে একটা রেস্টুরেন্টে বসে ছিল। কথার কথায় ক্যাম্পাসিংয়ের কথা উঠলো। রিতিকা জিজ্ঞেস করলো ওই ইউরোপিয়ান কম্পানির কথা।

দেবেশ বললো, “হ্যাঁ একটা ইটালিয়ান কম্পানি আসছে জানি, তবে তাতে কি হবে।”

রিতিকার চোখ বড় বড় হয়ে গেল, উতসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় কোথায় নেবে...”

“দুটি পোস্ট ফ্রান্সে একটা সুইজারল্যান্ড।” উত্তর দিল দেবেশ।

সুইজারল্যান্ডের নাম শুনে রিতিকার দু’চোখ চকচক করে উঠলো, “হানি, তোমাকে সুইজারল্যান্ডের চাকরিটা পেতে হবেই হবে।”

“কেন গো?” জিজ্ঞেস করলো দেবেশ।

এ যেন এক অদ্ভুত আব্দার শুরু করলো রিতিকা, “হানি আমার দিদি সুইজারল্যান্ডে থাকে তাই আমি চাই তুমি আমার জন্য ওই চাকরিটা পাও, প্লিস প্লিস হানি...”

দেবেশ হেসে বললো, “আর যদি না পাই তাহলে কি আমাকে বিয়ে করবে না।”

রিতিকার মন মুষড়ে গেল দেবেশের কথা শুনে, “না মানে, বাবাকে জানাতে হলে একটু বড় পোস্ট বা ভাল কম্পানি হওয়া চাই তাই আমি তোমার কাছে আব্দার করলাম। না হলে তুমি আমাকে যেখানে নিয়ে রাখবে সেখানে আমি থাকব।”
 
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#16)

রিতিকার শুকনো মুখ দেখে দেবেশের মন কেঁদে উঠলো। অনেক দিন আগে এই রকম আরেক জনের মন কাঁদিয়ে ছিল দেবেশ, সে তাকে ছেড়ে চির দিনের জন্য চলে গেল। তাই এবারে দেবেশ আর কোন ভুল করবে না।

রিতিকাকে আস্বস্ত করে বললো, “তোমার জন্য আমি সুইজারল্যান্ডের চাকরি যোগাড় করে নেব।”

“উম্মম...” গলা জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিল রিতিকা, “আই লাভ ইউ হানি... তুমি সুইজারল্যান্ডের চাকরিটা পেলেই আমি বাবাকে জানিয়ে দেব। বাবার আপত্তি থাকবে না তাতে।”

রাতের বেলা বড় ধন্দে পড়ে গেল দেবেশ, এত বড় পোস্ট কি করে হাতানো যায়। রিতিকাকে যদি বিয়ে করতে হয় তাহলে যেন তেন ভাবে ওই চাকরি ওর চাই, কিন্তু কি করে পাবে। বিদেশের ইন্টারভিউ আর দেশি ইন্টারভিউর মধ্যে পার্থক্য আছে। দেশি তো ও একবারে মাত করে দেবে কিন্তু বিদেশি কি করে মাত করবে।

পরের দিন থেকে লেগে পরে গেল খবর যোগাড় করতে, পয়সার কোন ঘাটতি রাখলো না দেবেশ। লোক লাগিয়ে, বিদেশে কল করে জেনে নিলো কে আসছে ইন্টারভিউ নিতে। জানা গেল যে ওদের মধ্যে যে প্যানেল হেড সে একজন ভারতীয়, সাউথ ইন্ডিয়ান, নাম এন. জে. রামাচন্দ্রন। নামটা বেশ ডাকসাইটে, শুনেই তো প্রথমে ঘাবড়ে গেল দেবেশ। এবারে মাথার মধ্যে খেলতে শুরু করে দিল যে কি করে এই বাঘা তেঁতুলকে বশে করা যায়, এর নরম জায়গায় ধাক্কা মারতে হবে। দিনে দিনে পাক্কা খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে দেবেশ।

আজকাল রিতিকা দেখছে যে দেবেশ বেশ আনমনা থাকে। একদিন জিজ্ঞেস করলো, “হানি তোমার কি হয়েছে, তুমি আজকাল এত কম কথা বলো কেন আমার সাথে? সাথে থাকলেও মনে হয় যেন তুমি নেই।” রিতিকার মনের ভেতরে ভয় ঢুকে গেল, দেবেশ অন্য কাউকে পছন্দ করে নেয়নি তো, “সত্যি করে বলো আমাকে।”

দেবেশ আর লুকাতে পারলো না, ওর মাথার মধ্যে যা কিছু চলছিল সবকিছু রিতিকাকে জানিয়ে দিল, “এবারে কি করবো বলো।”

অনেকক্ষণ ভেবে দেখলো রিতিকা, “রামাচন্দ্রন নামটা শোনা শোনা মনে হচ্ছে, দাঁড়াও আমি কালকে ড্যাডির কাছ থেকে জেনে নেব।”

পরের দিন রিতিকা খবর নিয়ে আনলো যে, রামাচন্দ্রন বম্বে আই আই টি পাশ আউট। এবারে দেবেশের চাই রামাচন্দ্রনের নাড়ির খবর যা হাতে পেলে দেবেশ রামাচন্দ্রনকে নিজের বশে করতে পারবে।

যে বছর রামাচন্দ্রন বম্বে আই আই টি থেকে পাশ করে ছিল, পয়সা আর লোক লাগিয়ে সেই বছরের সবার নাম বের করে নিলো। তার মধ্যে একজন জানাশুনা পেয়ে গেল, মিস্টার ধিলন, এখন তিনি চণ্ডীগড়ে থাকেন। ব্যাস আর পায় কে দেবেশকে। একদিন চণ্ডীগড় গিয়ে দেখা করলো মিস্টার ধিলনের সাথে, পরিচয় দিল দিল্লী আই আই টি থেকে এসেছে। নিজের আই কার্ড দেখানোর পরে বিশ্বাস করে নিলো ভদ্রলোক। বেশ যাতায়াত শুরু করে দিল দেবেশ। ধিরে ধিরে ধিলনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এল দেবেশ।

দেবেশ আজকাল বেশি কথা বলেনা রিতিকার সাথে, ওর মনের ভেতরে শুধু এখন ওই সুইজারল্যান্ডের চাকরি পাওয়া, না পেলে রিতিকাকে হয়তো পাবেনা ও।

একদিন ধিলনের সাথে কথা বলতে বলতে রামাচন্দ্রনের কথা ওঠালো দেবেশ। কথায় কথায় জেনে নিলো যে রামাচন্দ্রনের একটু মেয়ের দিকে ঝোঁক আছে। ব্যাস একটা ফাঁক খুঁজছিল দেবেশ, কি করে রামাচন্দ্রনকে বাগে আনার, কাজ হাসিল হয়ে গেল ধিলনের কাছে। যা জানতে এসেছিল সেটা জেনে নিলো। এবারে বাকি থাকে, রামাচন্দ্রনের সাথে কথা বলে পরিস্কার হয়ে নেওয়া।

একদিন ফোন লাগালো ইটালি, কথা বললো রামাচন্দ্রনের সাথে, “স্যার আমি দেবেশ ঘোষাল, আই আই টি দিল্লী থেকে বলছি।”

গম্ভির উত্তর এল, “হ্যাঁ বলো।”

জিজ্ঞেস করলো দেবেশ, “স্যার, আপনি নেক্সট সপ্তাহে দিল্লী আসছেন আমাদের ক্যাম্পাসে।”

আবার গুরু গম্ভির আওয়াজ, “হ্যাঁ আসছি।”

এবারে সোজা কোথায় এসে গেল দেবেশ, “স্যার আমার ওই সুইজারল্যান্ডের চাকরিটা চাই।”

কথা শুনে প্রথমে ঘাবড়ে গেল রামাচন্দ্রন, কি বলে ছেলেটা, “কি জিজ্ঞেস করছো তুমি জানো?”

দেবেশ একদম তৈরি ছিল উত্তর নিয়ে, “হ্যাঁ স্যার আমি জানি আমি কি চাইছি।”

রামাচন্দ্রন দেখলো যে ছেলেটা বেশ পোক্ত মনে হচ্ছে, আওয়াজ একটু নিচে করে উত্তর “হুম, পারি তো, কিন্তু একটা কিন্তু আছে।”

দেবেশ তৈরি ছিল যে কখন মাছ জালে আসে, “স্যার আপনি যা বলবেন সেটা পেয়ে যাবেন।”

হেসে ফেললো রামাচন্দ্রন, “হুম তাহলে তুমি আমার সম্বন্ধে খবর নিয়েছো।”

এদিকে দেবেশও হেসে ফেললো, “স্যার মানে আমার ফিঁয়াসের খুব সখ যে আমি সুইজারল্যান্ডে চাকরি করি তাই আমি সবকিছু দিতে প্রস্তুত।”

জিজ্ঞেস করে রামাচন্দ্রন, “ওকে তবে দেখো যেন উপহারটা খুব ভাল আর দামী হয়, আমার চয়েস একটু হাই ক্লাস, পারবে তো?”

দেবেশ বেশ কনফিডেন্ট হয়ে উত্তর দিল, “হ্যাঁ স্যার, একদম ঠিক পাবেন, যদি না পান তাহলে আমার চাকরির দরকার নেই।”

রামাচন্দ্রন ওকে বললো, “ওকে তাহলে গুড নাইট, দিল্লীতে দেখা হবে। ওখানে নেমে আমি জানিয়ে দেব আমি কোন হোটেলে উঠব।”

দেবেশ বিদায় জানালো, “ওকে স্যার, গুড নাইট।”

দেবেশ রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে, “কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে, যাক এবারে আসল হচ্ছে হাইক্লাস রমনী যোগাড় করা।”

রিতিকা একদিন দেবেশকে জিজ্ঞেস করলো, “হানি তুমি যা খবর জানতে চেয়েছিলে সেটা পেয়েছো?”

মাথা নারল দেবেশ, “বেবি তুমি এত চিন্তা কোরোনা, আমি সব কিছু ঠিক করে দেব।”

রিতিকা একটু ভয়ে ভয়ে দেবেশকে বললো, “আমার মাঝে মাঝে ভয় করে হানি।”

দেবেশ জিজ্ঞেস করলো, “বেবি কি ভয় তোমার?”

রিতিকা দেবেশকে জিজ্ঞেস করলো, “এই তুমি কি করে করবে। ওই লোকটার উইক পয়েন্ট জেনেছো কি?”

দেবেশ বিশেষ কিছু রিতিকার কাছ থেকে লুকায় না আজকাল, তবে রিতিকা ওর পুরানো কথা কোনদিন জানতে চায়নি আর দেবেশও বলেনি ওর পুরানো কথা। আজ দেবেশের মনে হলো যে রিতিকাকে জানিয়ে দেয় ও কি করতে চলেছে।

সব শুনে রিতিকা হাঁ, “কি তুমি এই করবে?”
 
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#17)

“বেবি, আমি নিজে তো করছিনা, এটা হচ্ছে একটা খেলা; হাই প্রোফাইল খেলা। জিততে হলে তোমাকে খেলতে হবে।” জানিয়ে দিল দেবেশ।

রিতিকা কি বলবে কিছু বুঝে পেলোনা, তাও জিজ্ঞেস করলো, “কোথা থেকে নিয়ে আসবে তুমি?”

উত্তর দিল দেবেশ, “এখনো ঠিক নেই তবে এতদুর যখন নিয়ে এসেছি আগেও সব কিছু করে নেব আমি।”

দেবেশ রিতিকাকে নিয়ে আগে নিয়মিত একটা ডিস্কোতে যেত, সেখানে যেতে যেতে অনেক লোকের সাথে ওর আলাপ হয়ে গেছিলো। সেখান থেকে একজনের সাথে আলাপ হলো। সে নিয়ে গেল দেবেশকে একটা অফিস ঘরের মধ্যে। একের পর এক ফটো দেখালো আর জানালো তাদের এক রাতের দাম। কোনটা বিশেষ পছন্দ এলোনা দেবেশের। সব যেন বাজারে পাওয়া যায় এই রকম দেখে মনে হলো। লোকটা দেবেশের পকেট যাচাই করার জন্য কত দিতে পারবে জিজ্ঞেস করলো। দেবেশও মরিয়া হয়ে উত্তর দিল যে এক লাখ থেকে দেড় লাখ খরচ করতে রাজি আছে। ওর কথা শুনে, লোকটা ওকে জানালো যে রাজন নামে একটা ছেলে আছে সে কিছু বলতে পারে।

একদিন রাজনকে ফোন করলো দেবেশ, “হ্যালো, মাইসেলফ দেবেশ। তোমার নাম্বার আমি মিস্টার জিমির কাছ থেকে পেয়েছি।”

ওদিকে গুরু গম্ভির আওয়াজ, “ওকে, বলুন কি চান।”

একটু আমতা আমতা করে দেবেশ বললো, “আমার সার্ভিসের দরকার।”

জানিয়ে দিল রাজন, “হুম, এখন খালি নেই।”

দেবেশ তো মরিয়া, “আরে শুনুন তো আমার কথা আগে।”

রাজন উত্তর দিল, “হ্যাঁ বলুন শুনছি। আপনার চাই কি?”

দেবেশ বললো, “না ঠিক আমার নয় তবে একটু দেখুন না প্লিস।”

রাজন উত্তর দিল, “দেখুন আগে থেকে বলে দিচ্ছি দেড় লাখ লাগবে। পঁচাত্তর আগে দিতে হবে, পঁচাত্তর অন দা স্পট। সবকিছু ক্যাশ। রাজি থাকলে জানাবেন আর ম্যাডাম শুধু শুক্রবার রাত নাহয় শনিবার রাতে ফাঁকা থাকেন, অন্য সময়ে নয়।”

দেবেশ জিজ্ঞেস করলো, “আগেভাগে আপনাকে টাকা দিয়ে দেব তারপরে আপনি টাকা নিয়ে চোট হয়ে গেলে?”

রাজন রেগে গেল দেবেশের কথা শুনে, “ধুর মশাই আপনাকে আমার নাম্বার কে দিয়েছে, আপনি ফোন রাখুন। ফালতু লোকেদের সাথে আমি কথা বলিনা।”

দেবেশ রাজনকে শান্ত করার জন্য বললো, “আরে না না, আপনি রেগে গেলেন কেন। টাকা আমি দেব তবে আপনার ম্যাডামের একটা ছবি না দেখলে আর প্রোফাইল না জানলে কি করে জানব যে দেড় লাখ আমার জলে যাবেনা।”

রাজন একটু শান্ত হয়ে বললো, “দেখুন ম্যাডাম এই সব করেন না, খুব হাই প্রোফাইল ক্লায়েন্ট ছাড়া ম্যাডাম কিছু করেন না।”

দেবেশ জিজ্ঞেস করলো, “নাম কি? বয়স কত?”

রাজন উত্তর দিল, “মনীষা শর্মা, বয়স সাতাশ, খুব সুন্দরী আর শিক্ষিতা। স্মোক করেন না, ড্রিঙ্কস শুধু ক্যাভিয়ার বা রেড ওয়াইন তাও মাঝে মধ্যে। হ্যাঁ আর এক কথা ফাইভ স্টার হোটেল চাই, ম্যাডামের নামে রুম বুক করা থাকবে, ম্যাডাম নিজের সময় মতন চলে আসবেন।”

রাজনের কথা শুনে তো দেবেশের মাথা ঘুরে গেল, যাক দেখা যাক কি হয় শেষ পর্যন্ত, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।

ফাইনাল সেমেস্টারের ক্লাস শেষ হতে চলেছে। ক্যাম্পাসিং শুরু। এর মাঝে একদিন রামাচন্দ্রনের সাথে দেখা করে জেনে নিলো যে রামাচন্দ্রন, নেহেরু প্লেসের কাছে একটা পাঁচ তারা হোটেলে উঠেছেন। দাবার প্রত্যেক চাল একদম ঠিক ঠিক ভাবে এগোচ্ছে।
এর মাঝে একদিন রাজনের সাথে দেখা করে দেবেশ পঁচাত্তর হাজার টাকা দিয়ে দিল। রিতিকা নাছোড়বান্দা, টাকা দেবার দিনে ওর সাথে গেছিলো তবে দুরে দাঁড়িয়ে ছিল রিতিকা।

টাকা হাতে নিয়ে রাজন দেবেশের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না যে আপনি...”

দেবেশ হেসে উত্তর দিল, “না রাজন, আমি না, আমার এক বস আছে তার জন্য...”

হেসে দিল রাজন, “কি করে বস, ভাল লোক না হলে ম্যাডাম যাবেন না। আপনি পয়সা ফেরত নিয়ে যেতে পারেন।”

দেবেশ হাসতে হাসতে উত্তর দিল, “আরে না না, আমার বস ফ্রান্স থাকে, আই আই টি পাশ করা।”

রাজন টাকা নিয়ে ওর সাথে হাত মিলিয়ে চলে গেল, “বেশ তো, তাহলে হোটেলের লবিতে দেখা হবে এই ফ্রাইডে, কি বলেন।”

দেবেশ ফিরে এল রিতিকার কাছে। রিতিকা ওকে জিজ্ঞেস করলো, “হানি সব কিছু ঠিক?”

মাথা নাড়লো দেবেশ, “হ্যাঁ বেবি সব কিছু ঠিকঠাক, দাবার ঘুঁটি একদম জায়গা মাফিক পড়ছে।”

আর এক সপ্তাহ বাকি, তার পরের সপ্তাহে দেবেশের ইন্টারভিউ। শুক্রবার দিন ঠিক করা হলো রামাচন্দ্রনের সাথে কথা বলে। দেবেশ মনীষা শর্মার নামে একটা রুম বুক করলো ওই পাঁচ তারা হোটেলে। শুক্রবার ঠিক সময়ে বাকি টাকা নিয়ে হটেলের লবিতে পৌঁছে গেল। লবিতে ঢুকে দেখলো যে রাজন ওর জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে।

ওকে দেখে রাজন হাসল, “কি মিস্টার দেবেশ, কেমন আছেন?”

দেবেশ জিজ্ঞেস করলো, “মনীষা কোথায়?”

রাজন উত্তর দিল, “ম্যাডাম চেক ইন করে নিয়েছেন। এখন কফি শপে বসে আছেন। আপনি আমাকে বাকি টাকা দিয়ে দিলে ব্যাস আপনার কাজ শেষ, ম্যাডামের কাজ শুরু।”

দেবেশ মুখ নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “একবার কি ম্যাডামকে দেখা যায়।”

রাজন ওর কথা শুনে হেসে উঠলো, “আরে নিশ্চয়ই দেখা যায়।” তারপরে দেবেশের হাত থেকে টাকার খামটা নিয়ে কফি শপের দিকে আঙুল দিয়ে এক মহিলাকে দেখিয়ে দিল। দেবেশ চোখ তুলে দেখলো ওই মহিলাকে, চোখে বড় বড় কালো চশমা, নিজের পরিচয় লুকানোর জন্য নিশ্চয়। বেশ ফর্সা আর গোলগাল চেহারা, শরীরে কোথাও এতটুকু টোল খায়নি। পরনে কালো রঙের শাড়ি ওপরে রুপালি সু্তোর কাজ, শাড়িটা বেশ দামী মনে হচ্ছে, আর হাত কাটা আঁটো ব্লাউস গায়ে। দূর থেকে মুখখানি ভাল দেখা গেল না কিন্তু মনে হলো ভীষণ সুন্দরী।
 
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#18)

রাজন ফোন করলো মনীষাকে, “ম্যাডাম ডান।”

কফি মাগে চুমুক দিয়ে উঠে পড়লো মনীষা, রাজনের দিকে তাকিয়ে একটু মাথা নাড়লো। তারপরে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দেবেশের দিকে চোখ গেল মনীষার। দেবেশকে দেখে মনীষার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো, এই রকম সুবিধাবাদী ক্লায়েন্ট দেখলে যেন গা জ্বলে যায় ওর। কিছু না বলে মাথা নিচু করে হেঁটে চলে গেল লিফটের দিকে। দেবেশ হাঁ করে তাকিয়ে থাকলো মনীষার দিকে। এত দূর থেকে মুখখানি ঠিক করে দেখা যাচ্ছে না, যেটুকু দেখা যাচ্ছে তাতে দেবেশ ভাবল, “কি সুন্দরী লাস্যময়ী এই মনীষা।” ওর চলনে কেমন যেন একটা মাদকতা লেগে আছে।” হাঁটাটা বেশ মনে ধরে গেল দেবেশের। “এইরকম ভাবে কি কেউ হাঁটতো?” চিন্তা করে খুঁজে পেলোনা দেবেশ।

সকাল বেলা রামাচন্দ্রনের ফোন এল, “হ্যালো দেবেশ, ইউ হ্যাভ ডান এ গুড জব। আমি দেখবো আমি কি করতে পারি।”

তিন দিন পরে দেবেশের ইন্টারভিউ হলো আর রামাচন্দ্রন স্যারের দৌলতে সুইজারল্যন্ডের চাকরিটা হয়ে গেল।

রিতিকা এবং দেবেশ দুজনে বেশ খুশি, আজ অনেক দিন পরে মনটা খুব হাল্কা লাগছে দেবেশের। রিতিকাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে, মুখে, বুকে চুমু খেয়ে নিলো দেবেশ। এত দিনের সাধ ছিল আই আই টি পড়বে, তারপরে সাধ ছিল মনিদিপাদির সোনার হারের জন্য একটা গলা খোঁজার, সেটার সময় হয়ে এসেছে। রিতিকার গলায় পরাবে জেঠিমার দেওয়া সোনার হার।

একদিন বাড়িতে ফোন করলো দেবেশ, বাবা মাকে জানালো এই সুখবর। বাড়ির সবাই খুব খুশি ওর চাকরি পেয়েছে শুনে, তবে তার সাথে সাথে একটু মনে দুঃখ যে ছেলে বাড়ি ছেড়ে দেশ ছেড়ে বিদেশ চলে যাবে। এই তো বিধাতার বিধান, ডিম ফুটে পাখীর ছানা বের হবার পরে, যতক্ষণ না উড়তে শেখে ততক্ষণ সে মায়ের কোল ছাড়েনা, যেদিন পাখি উড়তে শেখে সে দিন পাখি নিজের বাসা বানানোর জন্য উড়ে চলে যায়।

একদিন দেবেশ রিতিকাকে বললো, “ডার্লিং এবারে আমাদের সেলিব্রেট করা উচিত।”

রিতিকা জিজ্ঞেস করলো, “কি রকম সেলিব্রেট হানি?”

দুষ্টু হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “বাঃ রে, সারিস্কার কথা বেমালুম ভুলে গেছো।”

ফর্সা মুখখানি লাল হয়ে গেল রিতিকার, চোখ নামিয়ে দেবেশের বুকের ওপরে মাথা রেখে উত্তর দিল, “কবে সেলিব্রেট করবে হানি?”

চিবুকে আঙুল দিয়ে মুখ তুলে ধরলো দেবেশ, “শুক্রবার রাতে, এবারে এক ফাইভ স্টার হোটেলে কাটাবো। সেদিন আমার তোমাকে কিছু দেবার আছে।”

রিতিকা খুব খুশি, “কি দেবে তুমি আমাকে?”

দেবেশ ওকে জড়িয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে বললো, “একটা সারপ্রাইস দেব তোমাকে, আমার জীবনের সব থেকে বড় আশীর্বাদ বা ভালবাসা দেব তোমাকে।”

কথাটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না রিতিকা, তাও খুশি এই শুনে যে, অবশেষে দেবেশ ওর বাবাকে মানিয়ে নিতে পারবে।

রিতিকা বাড়িতে বলে বের হলো যে ও কোন বান্ধবীর বাড়িতে রাত কাটাবে, এদিকে দেবেশ রুম বুক করে রেডি।

শুক্রবার এল, যথা সময়ে দেবেশ আর রিতিকা রুমে ঢুকে পড়লো। ধিরে ধিরে এক প্রস্থ আদর খাওয়া হয়ে গেল। বিছানার ওপরে এলিয়ে শুয়ে আছে নগ্ন রিতিকা। দেবেশ ভাবল একবার রাজনকে ফোন করে, একবার তো ওকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।

দেবেশ, “হ্যালো রাজান ভাই, কেমন আছেন?”

রাজন, “কে দেবেশ নাকি? আরে বাঃবা অনেক দিন বাঁচবেন আপনি। বেশ কয়েক দিন ধরে আপনার ফোন লাগাচ্ছি কিন্তু আপনাকে পাচ্ছি না।”

দেবেশ ওর কথা শুনে থমকে গেল, “কেন আমাকে আপনি খুঁজছেন কেন?”

রাজন, “আরে আপনার জন্য একটা মেসেজ আছে, আপনি কোথায় আছেন বলুনতো? ম্যাডামের মেসেজ খুব জরুরি, আপনাকে দেবার কথা তো অনেক আগেই ছিল কিন্তু আপনাকে না পেয়ে আমি তো মহা মুশকিলে পড়ে গেছিলাম।”

দেবেশ ওর কথা শুনে অবাক হয়ে গেল, মনীষা ওকে কি মেসেজ দিতে পারে। ভেবে কূলকিনারা পেলো না দেবেশ। রাজনকে হোটেলের নাম আর রুম নাম্বার জানিয়ে দিয়ে চুপ করে রিতিকার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে বসে গেল। ব্যাগ থেকে বের করে নিলো সেই সোনার হার, আজ রাতে রিতিকাকে গলায় পরিয়ে দেবে দেবেশ আর কাল উপাধ্যায় স্যারের সাথে কথা বলবে।

রিতিকা ফোনে ওর কথা শুনে জেগে উঠেছে। ঘুম ঘুম চোখে ওর দিকে তাকিয়ে দু হাত বাড়িয়ে ডেকে নিলো কাছে, “হানি কাছে এসো না প্লিস এত দুরে কেন আজ?”

কি করবে দেবেশ, মাথার মধ্যে ঘুরছে মনীষার মেসেজ। রাতের ডিনারের পরে রিতিকার গলায় সোনার হার পরিয়ে দেবে।

ঠিক এমন সময়ে দরজায় কেউ ঠকঠক করলো, রিতিকা ঘাবড়ে গিয়ে নিজেকে চাদরে ঢেকে নিলো। দেবেশ ওর দিকে তাকিয়ে আস্বস্ত করে বললো “বেবি ভয় পেও না আমি আছি।”

দরজা খুলে সামনে দেখলো রাজন দাঁড়িয়ে, হাতে একটা ঝকমকে কাগজে মোড়া একটা বেশ বড় বাক্স। দেবেশের হাতে বাক্সটা দিয়ে রাজন জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কি মনীষা ম্যাডামকে চিনতেন?”

“না,” মাথা নাড়লো দেবেশ, “কোথাও দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না।”

ওর দিকে চোখ মেরে হেসে রাজন বললো, “যাই হোক, বেস্ট অফ লাক আপনি যার জন্য হস্টেল ছেড়ে হোটেলে আছেন।”

দেবেশ হেসে উত্তর দিল, “ধন্যবাদ।”

রাজন একটু বেশ তাড়াহুড়ো করে চলে গেল। দেবেশ কূলকিনারা পাচ্ছে না যে এই বাক্সে কি থাকতে পারে। একটানে খুলে ফেললো বাক্স, ভেতরের জিনিস দেখে দেবেশের মুখ হাঁ হয়ে গেল। এটাকি কোন রকমের ঠাট্টা নাকি। একটা লাল ছোটো প্যান্টি। প্যান্টিটা হাতে নিয়ে দেখলো যে ওটা মনীষার যোনি রসে ভিজে শুকিয়ে গেছে। মাথা গরম হয়ে গেল দেবেশের, তারপরে বাক্সের ভেতরে চোখ গেল, দেখলো একটা কাগজ আর একটা বেশ বড় প্যাকেট।

কাগজটা বের করে চোখের সামনে মেলে ধরলো দেবেশ। ওই কাগজে যা লেখা সেটা পড়ে দেবেশের মাথা ঘুরে গেল, মনে হলো যেন কেউ সপাটে ওর গালে এক থাপ্পড় মেরেছে। দেবেশ কোন রকমে দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে নিজেকে সামলে নিলো।
 
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#19)

ওই কাগজে লেখা, “উইথ লাভ ফর এভার ইওরস, মনিদিপা চৌধুরী।”

প্যাকেটটা খুলে দেখলো যে ওতে কড়কড়ে হাজার টাকার নোটের তাড়া, দেড় লাখ টাকা। কিছুই ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছে না দেবেশ। চোখের সামনে মনীষার মুখ আর তার সাথে মনিদিপার মুখ কিছুতেই মিলিয়ে নিতে পারছে না। কিন্ত এই কাগজ মিথ্যে নয়, ওই হাতের লেখা ও ভাল ভাবে চেনে। ওই হাতের লেখা দেখে চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এল দেবেশের, একি করলো সে। একজনকে পেতে গিয়ে আরেক জনের শরীরের সাহায্য নিলো। সামনে রিতিকা, যে ওকে বিয়ে করবে, হাতে মনিদিপার ফেরানো টাকা, সেই ভালবাসার পাত্রি মনিদিপা, যে এমনকি টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে আর রিতিকাকে বরন করে নেবার সুযোগ দিয়েছে। রিতিকা ওর রজনীগন্ধা, সুন্দর কোমল নির্মল ফুল আর মনিদিপা ওর হাসনাহেনা, মাদকতায় ভরা এক ভালবাসা।

না আর ভাবতে পারছে না দেবেশ, হাতের মুঠিতে কাগজটা প্রাণপণে শক্ত করে ধরে আরেক হাতের মুঠিতে সোনার হার। নিজের কপালে করাঘাত করলো দেবেশ। হৃদয় ফাটিয়ে আর্তনাদ করে উঠলো, “মনিদিপআআআআআ...” না সে নাম ঠোঁটে এলোনা ওর, বুকের আর্তনাদ, বুকের মাঝেই রয়ে গেল। মেঝের ওপরে বসে পড়লো দেবেশ।

রিতিকা দেবেশের জল ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো খুব বড় একটা অঘটন ঘটে গেছে। বিছানার চাদর জড়িয়ে নেমে এল দেবেশের পাশে, বুকের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে রিতিকার, কি হলো দেবেশের।

রিতিকা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে, হানি?”

রিতিকার গলা শুনে পৃথিবীতে ফিরে এল দেবেশ। কি বলবে রিতিকাকে, ভাষা হারিয়ে ফেলেছে দেবেশ। রিতিকা ওর হাত থেকে কাগজটা নিয়ে দেখলো ওতে কি লেখা আছে। লেখা পড়ে রিতিকার চোখ ফেটে জল বেরিয়ে গেল। বুকের মাঝে কেউ যেন দুমদাম করে হাতুড়ি মারতে শুরু করে দিল।

কান্না ভেজা গলায় জিজ্ঞেস করলো রিতিকা, “এটা কি দেবেশ?”

কি উত্তর দেবে রিতিকাকে, কাঁপতে কাঁপতে দেবেশ বললো, “আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না রিতিকা?”

দেবেশের কথা শুনে রিতিকার মুখ শুকিয়ে গেল, কেউ যেন ওর সারা শরীরের রক্ত শুষে নিয়েছে। বুক ফাটিয়ে আর্তনাদ করে উঠলো রিতিকা, “কি হয়েছে তোমার দেবেশ, আমাকে বলো।”

রিতিকার দিকে তাকিয়ে দেবেশ জিজ্ঞেস করলো, “আমি খুব বড় পাপী রিতিকা। আমায় বিয়ে করলে তুমি সুখী হবে না। তুমি চলে যাও আমাকে ছেড়ে।”

রিতিকা জড়িয়ে ধরলো দেবেশকে, “কি যা তা বলছো তুমি, তোমার চোখ দেখে আমার ভয় করছে হানি। কি হয়েছে তোমার?”

দেবেশ দাঁতে দাঁত চিপে রিতিকার হৃদয় ভেঙে দিল। চেঁচিয়ে উঠলো দেবেশ, “আই হেট ইউ রিতিকা, তুমি সুবিধাবাদি মেয়ে। আমি সুইজারল্যান্ডের চাকরি পেলে তবে তুমি আমাকে বিয়ে করবে না হলে তুমি আমাকে করতে না। এই রকম সুবিধাবাদি তুমি। আই হেট ইউ রিতিকা।” কথাগুল বলতে দেবেশের বুক ফেটে যাচ্ছিল কিন্তু ওকে ওর মনিদিপাকে খুঁজতে হবে, এই হার মনিদিপার গলার, এই হার আর কাউকে ও পরাতে পারবে না, মরে গেলেও পারবেনা।

দেবেশের কথা শুনে রিতিকা জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো, “না হানি আমার সুইজারল্যান্ড চাই না, প্লিস ওই রকম ভাবে আমাকে ফেলে দিও না। তুমি আমাকে যেখানে রাখবে সেখানে থাকতে আমি রাজি। তোমার সাথে আমি কলকাতা যেতেও রাজি।”

দেবেশ দেখলো রিতিকাকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না, বুক ফেটে যাচ্ছে দেবেশের। নিরুপায় হয়ে দেবেশ শেষ পর্যন্ত হাতের মুঠি খুলে ওকে সোনার হারটা দেখালো।

রিতিকার চোখে জল নিয়ে দেবেশের হাত থেকে সোনার হারটা নিয়ে নিলো।
কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো “এটা কি?”

দেবেশ কান্না জড়িত স্বরে উত্তর দিল, “এটা আমার ভালবাসা। আমার জেঠিমা আমাকে দিয়েছিল আর বলেছিল যে আমি যেন আমার বউয়ের গলায় পরিয়ে দেই। আজ রাতে এই হার তোমার গলায় পরিয়ে চিরকালের জন্য নিজের করে নিতে চেয়েছিলাম আমি। এই হার আমার প্রথম ভালবাসা, মনিদিপার। মনিদিপা সুইসাইড করে আর আমাকে ওর এই হার দিয়ে যায়। আজ আমি আমার মনিদিপাকে খুঁজে পেয়েছি। রামাচন্দ্রনের সাথে যে মনীষা রাত কাটিয়ে ছিল সে আমার মনিদিপা। মনিদিপা বেঁচে আছে, আমি ওর হার আর কারুর গলায় দিতে পারবো না। এই হার আমি তোমাকে পরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারলাম না, রিতিকা। রিতিকা আমি পাপী আমাকে ক্ষমা করো।”

রিতিকার পায়ে লুটিয়ে পড়লো দেবেশ। সোনার হার হাতে নিয়ে পাথর হয়ে গেল রিতিকা। ওর গা হাত পা, ঠান্ডা হয়ে গেছে দেবেশের কথা শুনে। হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে রিতিকার। দু’চোখে যেন অশ্রু নয়, রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অনেকক্ষণ পরে চোখের জল মুছে রিতিকা সোনার হারটা দেবেশের হাতে দিল। দেবেশ তাকিয়ে রইলো রিতিকার লাল চোখের দিকে।

হৃদয় ভাঙা এক হাসি দিয়ে রিতিকা দেবেশকে বললো, “আজ রাতের জন্য একবারটি এই হার আমার গলায় পরিয়ে দাও, হানি। আমি কাল সকালে তোমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যাবো।”

কাঁপা হাতে দেবেশ রিতিকার গলায় ওই সোনার হার পরিয়ে দিল। দুজন দুজনাকে জড়িয়ে ধরে নরম বিছানায় উঠে গেল। শেষ বারের মতন প্রান ঢেলে নিজেকে উজাড় করে দিল রিতিকা। চোখে জল নিয়ে, দেবেশ নিজেকে সঁপে দিল রিতিকার প্রেমঘন বাহু পাশে। যেন এই রাতের আর শেষ নেই।

এক সময়ে ক্লান্ত হয়ে রিতিকার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো দেবেশ। সারা রাত দেবেশকে জড়িয়ে কেঁদে গেল রিতিকা। পুব আকাশে সূর্য উঠছে, ঘরের মধ্যে নতুন সূর্যের আলো, কিন্তু রিতিকার হৃদয় আজ কালো মেঘ। খুব সাবধানে, আস্তে আস্তে কপালে চুমু খেল, ঠোঁটে চুমু খেল, বুকে চুমু খেল রিতিকা, পাছে দেবেশ জেগে যায়। গলা থেকে খুলে নিলো সোনার হার আর পরিয়ে দিল দেবেশের গলায়। ঠিক বাঁ বুকের ওপরে যেখানে হৃদয় খানি ধুকপুক করছে, সেখানে চুমু খেল রিতিকা।

একটা কাগজে লিখলো, “আই উইল রিমেম্বার ইউ ফর এভার। আমার শুভেচ্ছা আর ভালবাসা তোমার সাথে থাকবে। আমার সামনে আর কোনদিন এসো না। নিজের ভালবাসার খোঁজে যাও হানি।”

তারপরে আর পেছন ফিরে তাকালো না, নিজের জামা কাপড় পরে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
 
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#20)

সকালে উঠে দেখে বিছানায় রিতিকা নেই, ওর গলায় ঝুলছে সোনার হার। ফাঁকা বুক নিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়লো দেবেশ। হাতে রিতিকার ছোট্ট চিঠি। অনেক্ষন পরে রাজনকে ফোন করলো দেবেশ, কিন্তু রাজন ফোন উঠালো না, বারে বারে ফোন করলো। কিন্তু রাজন আর ফোন ধরলো না। কিছুদিন পরেও ফোন করে দেখলো যে নাম্বারটা আর চলছে না। এত কাছে এসেও মনিদিপাকে হারিয়ে ফেললো দেবেশ।

সারা দিল্লী তোলপাড় করে খুঁজতে চেষ্টা করলো মনীষাকে, কিন্তু এ নারী যে অধরা। কোন নাইট ক্লাব বা ডিস্কোতে কেউ ওই নামের কোন মেয়েকে চেনেনা। রাজনের ফোন আর পেলোনা দেবেশ।

একদিন বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে আছে দেবেশ, পাশে একটা বইয়ের দোকানে একটা মেয়েদের পত্রিকায় দেখলো মনীষা শর্মার নাম। নামটা দেখে চমকে গেল দেবেশ, যাক একটা কিছু পেয়েছে অবশেষে। এবার মনীষা ওরফ মনিদিপাকে খুঁজে বের করবেই। ফোন করলো সেই পত্রিকার অফিসে। সেখানে গিয়ে জানতে পারলো যে মনীষা শর্মা কিছুদিন আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন। দেবেশ ঠিক বুঝে গেল যে মনিদিপা আবার ওর হাতের নাগাল থেকে বেরিয়ে চলে গেছে। এতদিন পরে ও বুঝলো যে জার্নালিস্ট মনীষা কেন নিজেকে এত ঢেকে রেখেছিল সেই রাতে।

সুইজারল্যান্ডের চাকরি নিলোনা দেবেশ তবে ফ্রান্সের একটা খুব বড় কম্পানিতে চাকরি পেয়ে গেল।

গলায় আজও সোনার হারটা ঝুলছে। আজও দেবেশের বুকের কাছে জানান দেয় যে মনিদিপা কোথাও লুকিয়ে আছে। এখন থেকে দিন গোনার পালা শুরু আর লুকোচুরির খেলা শুরু। আবার কবে দেখা হবে মনিদিপার সাথে। কিন্তু আর দেখা হয় না। দেবেশ বিদেশে চলে গেল।

দেখতে দেখতে তিন বছর কেটে গেল। প্রত্যেক বছরে একমাস ছুটি নিয়ে দেবেশ বাড়ি যায়।

মা প্রত্যেক বার জিজ্ঞেস করে, “কিরে বিয়েটা কবে করবি? এবারে তো করে ফেল।”
প্রত্যেক বার একই উত্তর দেয় দেবেশ, “আরে মা, এখনো যাকে খুঁজছি তাকে পাইনি।”

তিন বছর পরে একদিন, দেবেশের আই-আই-টি র বন্ধু অনির্বাণের ফোন এল। জানালো যে, বেশ কয়েক জন মিলে দিল্লীতে একটা গেট টুগেদার করবে। ওকে আসতেই হবে। অনেক নাছোড়বান্দা করার পরে দেবেশ রাজি হলো গেটটুগেদারে যাবে। ভালোই হবে এবছরের বাড়ির ট্রিপটাও একসাথে সারা হয়ে যাবে।

তিন বছর পরে, দিল্লী ফিরে সেই পুরানো আই.আই.টি ক্যাম্পাসে ঢুকে অনেক দিন পরে ভাল লাগলো দেবেশের। দেখা হলো অনেক পুরানো বন্ধুদের সাথে। অনির্বাণ, ভিশাল, নিলাঞ্জন আর ধিমান। অনির্বাণ এখন বাসেল থাকে, ভিশাল লন্ডনে, ধিমান কায়রো আর নিলাঞ্জন দিল্লীতেই থাকে। দেবেশকে দেখা মাত্রই ভিশাল ওকে জড়িয়ে ধরলো।

দেবেশ একটু অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে কি হলো তোর?”

ভিশাল একটু হেসে উত্তর দিল, “না ইয়ার কিছু না, আসল কথা হচ্ছিল যে তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই।”

অনির্বাণ প্রস্তাব দিল যে হৃষীকেশ যাবে র‍্যাফটিং করতে। বেশ হইহুল্লোড় হবে এই ভেবে সবাই এক কথায় রাজি হয়ে গেল।

একদিন আগেই ওরা পৌঁছে গেছিলো হৃষীকেশে। রাতের বেলা গঙ্গা নদীর তীরে বসে পাঁচ বন্ধু হাতে বিয়ারের বোতল নিয়ে বসে। বেশ হাসি ঠাট্টা মজা চলছে।

অনির্বাণ ওকে জিজ্ঞেস করলো, “মাল কবে বিয়ে করবি, সাতাশ তো হলো। আমাদের তো সবার বিয়ে হয়ে গেল শুধু তুই বাকি।”

কাষ্ঠ হাসি হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “আমার মনে হয় না বিয়ে হবে?”

অনির্বাণ ওকে একটু ধাক্কা মেরে জিজ্ঞেস করলো, “কেন রে? রিতিকা ডিচ করেছে তাই আর বিয়ে করবি না।”

গম্ভির আওয়াজে উত্তর দিল দেবেশ, “না রিতিকা আমাকে ডিচ করেনি। রিতিকা অনেক অনেক ভাল মেয়ে। আমার নিজের কিছু প্রবলেম ছিল যার জন্য আমি আর রিতিকা আলাদা আলাদা পথে চলে যাই।”

ওর গলার আওয়াজ শুনে সবাই চুপ করে গেল। ভিশাল বললো, “আরে ইয়ার, পুরানো কথা ঘেঁটে আর কি হবে। চলো চলো ওসব কথা ছাড়, কাল সকালে উঠে র‍্যাফটিংয়ে যেতে হবে চলো সবাই শুয়ে পড়ি।”

সকালবেলায় ওরা বেরিয়ে পড়লো র‍্যাফটিং করতে। দুপুরবেলা পর্যন্ত গঙ্গায় র‍্যাফটিং করে সবাই ক্লান্ত হয়ে ফিরলো। সবাই নিজের নিজের ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়েছে। দেবেশ ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও ঘুমতে পারলো না। অনেকদিন পরে ওর রিতিকার কথা মনে পড়ে গেল আর তার সাথে মনে পড়ে গেল গলায় ঝোলা মনিদিপার সোনার হার।

একটুখানি মনমরা হয়ে গেল দেবেশ, “আর কি আমি মনিদিপাকে খুঁজে পাবো না?”

কাউকে কিছু না জানিয়ে ও গঙ্গার ঘাটের দিকে হাঁটা দিল। পশ্চিম আকাশে সন্ধ্যে হয় হয়। দেবেশ চুপ করে বসে রইলো গঙ্গার ঘাটে, এক মনে বয়ে চলা গঙ্গার জলের দিকে তাকিয়ে আছে। কতো লোকে কতো রকমের মানত করে এই মা গঙ্গার কাছে, অনেকের সেই মনকামনা পূরণ হয় অনেকের হয় না। দেবেশ বুক ভরে বড় একটা নিঃশ্বাস নিলো, না ওর ভাগ্য অত ভাল নয় যে মা গঙ্গা ওর কথা শুনবে।

ঠিক এমন সময়ে ওর চোখ গেল কিছু দুরে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলার দিকে। মহিলা ওর দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে তাই ওই মহিলার মুখ দেখতে পাচ্ছে না দেবেশ। মহিলার পরনে একটা ঘিয়ে রঙের দামী ঢাকাই জামদানি শাড়ি। মাথার চুল এলো খোঁপা করে ঘাড়ের কাছে এলিয়ে আছে। মহিলার গায়ের রঙ বেশ ফর্সা আর বেশ সুন্দরী দেখতে। মহিলার হাতে একটি পুজোর থালা। মহিলাটি পুজো সেরে একটু ঝুঁকে গঙ্গার জল নিজের মাথায় ছিটিয়ে নিলো।

দেবেশ একমনে মহিলাকে দেখে চলেছে। দেখতে তো বাঙালি বলেই মনে হচ্ছে দেবেশের। মহিলার রুপ আর সাজ যেন দেবেশকে টেনে ধরে রেখেছে, চোখের পলক যেন পড়ছে না দেবেশের।

মহিলাটি ধিরে ধিরে পেছন ফিরলো আর দেবেশের চোখ সোজা মহিলার মুখের ওপরে। দেবেশ স্থানুর মতন দাঁড়িয়ে পড়লো। বুকের ধুকপুকানি থেমে গেছে, এই মুখ সে চেনে, এই চোখ সে চেনে। বড় কাছ থেকে দেখেছে ওই কাজল কালো চোখ। সামনে দাঁড়িয়ে মনীষা ওরফে মনিদিপা। বুকের মাঝে তোলপাড় করে উঠলো। এক পা এগিয়ে যে মনিদিপার দিকে যাবে সেই শক্তিটুকু নেই।
 
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#21)

মনিদিপা মাথা তুলে এগিয়ে যাবার জন্য পা বাড়ালো, হটাত করে চোখাচুখি হয়ে গেল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দেবেশের সাথে। পা বাড়াতে ভুলে গেল মনিদিপা। কেউ যেন ওর পায়ের পাতার ওপরে পেরেক দিয়ে মাটির সাথে গেঁথে দিয়েছে। নড়বার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছে মনিদিপা। ঠোঁট দুটি তিরতির করে কেঁপে উঠলো মনিদিপার, আস্তে আস্তে করে দুটি চোখ জলে ভরে গেল। পৃথিবীটা ওর দুই ভেজা চোখের সামনে বনবন করে ঘুরছে। মনিদিপার মাথা ঘুরতে শুরু করলো, আর যেন দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা।

লুটিয়ে পড়ে যাবার আগেই দৌড়ে গিয়ে দেবেশ দু হাতে জড়িয়ে ধরলো মনিদিপাকে। পুজোর থালা মাটিতে পড়ে গেল, ঝনঝন শব্দে গড়াতে গড়াতে পুজোর থালা গঙ্গার জলে ভেসে গেল। দেবেশ মনিদিপার জলে ভরা কাজল কালো চোখের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে। কিছুক্ষণ পরে ধিরে ধরে চোখ খুললো মনিদিপা, ঝাপসা চোখে তাকিয়ে রইলো দেবেশের মুখের দিকে। একটু অপ্রস্তুত লাগলো নিজেকে অত লোকের সামনে একজনের বাহুর মধ্যে নিজেকে পেয়ে, আস্তে করে দেবেশের আলিঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। দু’চোখে বন্যা নেমেছে মনিদিপার। বারে বারে চোখ মুছছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।

বুক ফাটিয়ে আর্তনাদ করার ইচ্ছে হচ্ছে মনিদিপার, “কেন এসেছো আমার সামনে আবার আমাকে ব্যাথা দিতে। কেন আমার জীবন থেকে চলে যেতে পারো না তুমি, দেবেশ?” না মনিদিপা ওই কথা ওর ঠোঁটে আনতে পারেনি। চোখের জল মুছে ম্লান হাসি হেসে জিজ্ঞেস করলো দেবেশকে, “কেমন আছো দেবেশ? তিন বছর আগে যা ছিলে তার থেকে একটু যেন রোগা হয়ে গেছো।”

এতদিন পরে ওই আওয়াজ শুনে দেবেশের বুক কেঁপে উঠলো। চোখের জ্বালা করছে কিন্তু কাঁদতে পারছে না। হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “তুমি অনেক বদলে গেছো মনি।”

মনিদিপা ঠোঁট কামড়ে ধরলো, সাত বছর পরে ওই নামে আবার কেউ ওকে ডাকলো আজ। সত্যি অনেক বদলে গেছে, মাথা নাড়িয়ে বললো, “হ্যাঁ, আমার জীবনটাই এইরকম। তোমার খবর বলো, আজকাল তো মনে হয় সুইজারল্যান্ডে আছো তাইতো?”

দেবেশ মনিদিপার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে উত্তর দিল, “অনেক কিছু খবর রাখো দেখছি।”

মনিদিপা তাচ্ছিলের হাসি হেসে বললো, “কেউ কেউ রাখে কেউ কেউ রাখে না।”

দেবেশ মাথা নেড়ে জানালো, “না মনি, আমি সুইজারল্যান্ডে থাকিনা, আমি বোরদে, ফ্রান্সে থাকি।”

এবারে অবাক হবার পালা মনিদিপার, একভাবে তাকিয়ে রইলো দেবেশের মুখের দিকে কতবছর পরে একে অপরকে এত কাছ থেকে দেখছে। মনিদিপার হাত ধরলো দেবেশ, হাতের ছোঁয়া পেয়ে যেন গলে যাবে মনিদিপা, একটু কেঁপে উঠলো ওর হাতের পরশ পেয়ে। দেবেশ বললো, “এসো আমার সাথে।”

জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে মনিদিপা, “কোথায় যাবো?”

দেবেশ হেসে জবাব দিল, “একটু হাঁটতে আপত্তি নেই নিশ্চয়?”

মাথা নাড়লো মনিদিপা, “না তা নেই।” বলেই হেসে ফেললো। সেই মুক্তো সাজানো দাঁতের পাটি দেখে দেবেশের মন খুশিতে ভরে গেল।

দু’জনে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। কারুর মুখে কথা নেই, দুজনের বুকে এক অজানা শূন্যতা আর ভাললাগা দুটোই ভর করে রয়েছে। দুজনেই যেন ভাবছে কে আগে কিছু বলবে।

অনেকক্ষন পরে দেবেশ ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “দিল্লীতে কোথায় থাকো?”

মনিদিপা মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল, “আমি তিন বছর হলো দিল্লী ছেড়ে দিয়েছি।”

দেবেশ জিজ্ঞেস করলো, “কেন? তুমি তো একটা পত্রিকায় লিখতে তাই না?”

মনিদিপা উত্তর দিল, “হ্যাঁ লিখতাম। কিন্তু আর থাকতে পারলাম না তাই দিল্লী ছেড়ে আমাকে চলে যেতে হলো।”

দেবেশ জিজ্ঞেস করলো, “এখন কোথায় থাকো তুমি?”

“কেন আমাকে শেষ করে দিয়েও তোমার এখনো শান্তি হয়নি।” না কথাটা বললো না মনিদিপা, কাষ্ঠ হাসি হেসে উত্তর দিল, “আমি যেখানে আছি ভাল আছি তুমি আর জেনে কি করবে?”

উত্তরটা দেবেশের মনে বড় ব্যাথা দিল। মনিদিপার অধিকার আছে সে ব্যাথা দেবার। আবার দুজনেই চুপ। নিজেদের মাঝে একটু ব্যাবধান রেখে হাঁটতে থাকলো। দেবেশ ভাবছে যে কি কথা বলা যায়, কি প্রশ্ন করবে মনিদিপাকে, কি হয়েছিল মনিদিপার এই প্রশ্ন করবে? ওদিকে মনিদিপা ভাবছে যে, কেন আবার দেবেশের সাথে দেখা হলো, ভাল তো ছিল মনীষা হয়ে এক নতুন জীবন নিয়ে। কিন্তু দেবেশ এখানে কি করছে? এতদিনে নিশ্চয়ই বিয়ে করেছে।

মনিদিপা দেবেশকে জিজ্ঞেস করলো, “তা হৃষীকেশে কেন?”

মনিদিপার আওয়াজ শুনে দেবেশের ধড়ে প্রান ফিরে এল, “অনেক দিন পর পুরানো বন্ধুদের সাথে দেখা হলো আর এই বন্ধুদের সাথে র‍্যাফটিং করতে এখানে আসা।”

হাসি থামাতে পারলো না মনিদিপা, “ফ্রান্স থেকে এখানে র‍্যাফটিং করতে আসা? বাপরে তোমার ফ্রান্সে নদী নালা নেই নাকি?”

হাসি শুনে খুব ভাল লাগলো দেবেশের, ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল দেবেশ, “না, সেই রকম নয়, আমার বন্ধুরা সবাই বিদেশে থাকে। একটা গেট টুগেদার হয়ে গেল আর র‍্যাফটিংও হয়ে গেল।”

আবার দুজনেই চুপ, কে কাকে কি জিজ্ঞেস করবে এই নিয়ে দুজনেই মনের মধ্যে প্রশ্নের অভিধান খুলে বসেছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে দেবেশ জিজ্ঞেস করলো, “মনি যাবে আমার সাথে?” জিজ্ঞেস করার পরেই দেবেশের হৃদয়ের ধুকপুকানি বেড়ে গেল, মনিদিপা কি উত্তর দেবে এই ভেবে।

মনিদিপার বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে গেল। আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় নিয়ে যাবে?”

দেবেশ উত্তর দিল, “আমার হোটেলে চলো একটু বসে গল্প করবো।”

হেসে জবাব দিল মনিদিপা, “গল্প করার জন্য তো অন্য কোথাও বসা যেতে পারে, কিন্তু হোটেলে কেন নিয়ে যেতে চাও আমাকে?”

দেবেশ হেসে উত্তর দিল, “ভয় নেই খেয়ে নেবো না আমি।”

মনিদিপা বললো, “আচ্ছা চলো, তবে বেশিক্ষণ বসবো না। আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরে জিনিস গুছাতে হবে। কাল সকাল বেলা আমি চলে যাব তাই।”
 
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#22)

মনিদিপার চলে যাবার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল দেবেশের। একপা এগিয়ে এল মনিদিপার দিকে। ওই সুন্দর ফর্সা কপালে ঠোঁট ছোঁয়াতে ইচ্ছে করছে খুব, ইচ্ছে করছে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে। দেবেশ সামলে নিয়ে হেসে বললো, “ঠিক আছে, রুমে তো আগে চলো, এত দিন পরে দেখা একটু গল্প করবে না আমার সাথে।”

দুজনেই পা বাড়াল হোটেলের দিকে। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, এই বিশাল তীর্থস্থলে চারদিকে লোকের বন্যা। এই ভিড় ভর্তি রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনিদিপার খুব ইচ্ছে করছিল দেবেশের বাহু জড়িয়ে ধরে, আর দেবেশ ভাবছিল একবার মনিদিপার হাতটা ধরে, কিন্তু দুজনের মনে ইতস্তত ভাব, মনিদিপা চুপচাপ দেবেশের পেছন পেছন হাঁটতে লাগলো।
রুমে ঢুকতে গিয়ে ভিশালের সাথে দেখা হলো। কেউই কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না, শুধু চোখে চোখে একটু কথা হয়ে গেল।

হোটেলের রুমে ঢুকে দেবেশ মনিদিপাকে বসতে বললো। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে থাকার পরে দেবেশকে জিজ্ঞেস করলো, “এতদিনে বিয়ে করেছো নিশ্চয়।”

এতক্ষণ নিস্পলক চোখে মনিদিপাকে দেখছিল দেবেশ। সেই মাদকতাময় রুপের বদলে এক স্নিগ্ধা রূপবতী মহিলা ওর সামনে বসে। সেই চোখ, সেই ঘন কালো চুল, গায়ের রঙে যেন একটু আলতা লাগানো। ওর কথা শুনে যেন সম্বিৎ ফিরে পেল।

মনিদিপার কথার উত্তর না দিয়ে পালটা জিজ্ঞেস করলো, “তোমার কথা শুনি, মনি। কেন মরার ভান করলে তুমি আর কেন এত দিন লুকিয়ে ছিলে আমাদের কাছ থেকে?”

মনি ওর চোখে চোখ রেখে উত্তর দিল, “সত্যি তুমি শুনতে চাও?” মাথা নাড়লো দেবেশ, “হ্যাঁ।”

মনিদিপা বুক ভরে এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো, “আমার কলঙ্কিত বস্তাপচা কাহিনী নাই বা শুনলে।”

দেবেশ বললো, “একা বয়ে বেড়াতে চাও নিজের কষ্ট, আমাকে সাথেও নেবে না।”

তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে জিজ্ঞেস করলো, “আমি এক রকম মরেই আছি দেবেশ। দাদা বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেল, ফিরে তাকালো না আর। বাবার অসুখের সময়ে দাদা একবারের জন্যও কাছে এসে দাঁড়ালো না। আমি কাকুর কাছে টাকা চাইতে যেতে পারলাম না, পাছে তোমার সামনে পড়ে যাই আর টাকা দেবার ছলে আমি যদি তোমার কেনা বাঁদি হয়ে যাই। তোমার ওপরে আমার প্রচন্ড ঘৃণা জন্মে গেছিলো, সেই ভেবে আমি আর গেলাম না।” বলতে বলতে মনিদিপার চোখে জল চলে এল। কথা শুনে দেবেশের কান লাল হয়ে গেল।

“বাবার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার ছিল। নার্সিং হোমের খরচ, ডাক্তারের খরচ, তারপরে পেসমেকার কিনে লাগানোর খরচ। বাড়ি বিক্রির সব টাকা শেষ, আমি হাঁপিয়ে উঠেছিলাম টাকা যোগাড় করতে করতে কিন্তু ভেঙে পড়িনি। এদিকে ওদিকে, এর কাছে, তার কাছে হাতে পায়ে ধরে টাকা যোগাড় করেছি। সবাইকে কথা দিয়েছিলাম যে টাকা আমি শোধ করে দেব।”

ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলো মনিদিপা, “কিন্তু বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন, আমি আর থাকতে পারলাম না। আগে তুমি তারপরে বাবা, আমি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছিলাম। এই জীবনের প্রতি মন বিষিয়ে গেছিলো। প্রতিদিন পাওনাদারদের খোঁচা থেকে বাঁচতে গিয়ে ভাবলাম যে আমি আত্মহত্যা করবো। মা যদি গড়িয়াহাটে থাকতো তাহলে পাওনাদাররা মাকে ছেড়ে দিত না তাই ভাবলাম যে মাকে তোমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেব। নরেশ কাকু আর বাবা এক মায়ের পেটের ভাই নয় কিন্তু আমি জানতাম যে মাকে কাকু ফেলতে পারবেনা। দু এক বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করছিলাম আমি কিন্তু মরতে পারলাম না। শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম যে পাওনাদারদের সব পাওনা শোধ করতে হবে আর মেয়েদের পয়সা আয় করার রাস্তা হচ্ছে শরীর। আমি নেমে গেলাম নিজের চোখে আর নিজের আত্মহত্যার ভান করে পালিয়ে গেলাম সবার কাছ থেকে।”

দেবেশের বুক ফেটে যাচ্ছিল ওর এই কথা শুনে। মনে হলো যেন একবার বলে, “কেন মনি কেন, একবারের জন্যও আমার কাছে আসোনি কেন মনি।” গলা শুকিয়ে গেছে দেবেশের, কথা বের হলোনা। চোয়াল শক্ত করে শুনে যেতে লাগলো মনিদিপার কথা।

“চাকরি ছেড়ে দিলাম, দু’ বছর কলকাতায় ছিলাম। এক বান্ধবী আমাকে রাস্তা দেখালো, আমি পয়সা রোজগার করে বেশ কিছু পাওনাদারদের টাকা মিটিয়ে দিলাম। তারপরে একদিন চলে এলাম দিল্লী, এখানে নাকি অনেক টাকা। একটা চাকরি নিলাম এখানে। প্রথমে ছোটো ছোটো পত্রিকায় লিখতাম। তারপরে কাজ পেলাম এক নামি পত্রিকায়। প্রথমে ভাবলাম যে আর এই কাজ করবনা, কিন্তু অতীত পেছন ছাড়ল না আমার। একবার দেখা হয়ে যায় এক পুরানো ক্লায়েন্টের সাথে, অনেক টাকার অফার দিল। না ব্ল্যাকমেল করেনি আমায়, পাওনাদারদের কিছু টাকা তখনো বাকি ছিল। খুব হাই প্রোফাইল ক্লায়েন্ট না হলে যেতাম না, আর যে দেড় লাখ টাকা দিতে পারে সে আশা করি ভালোই হবে। রাজন অনেক সাহায্য করেছে আমাকে, নিজের দিদির মতন দেখতো আমায়। অনেক ক্লায়েন্ট ও ফিরিয়ে দিতো যদি কথা বলে পছন্দ না হতো। এমনকি টাকাও ফিরিয়ে দিয়েছে অনেক বার। পাওনাদারদের সব টাকা মিটে গেল, কিন্তু আমি সার্কিট ছেড়ে যেতে পারলাম না।”

“তিন বছর আগে, সেই রাত, আমার শেষ কাজ ছিল। রাজন তোমার কথা আমাকে বলেনি, বলেছিল একজন টাকা দেবে আর আমাকে তার বসের সাথে যেতে হবে। বসের ব্যাপারে তুমি রাজনকে যা বলেছিলে তাই আমাকে জানালো। সব শুনে আমি রাজি হয়েছিলাম। হোটেলে তোমাকে দেখে আমি থমকে যাই। আমি রামচন্দ্রনকে কথার ছলে তোমার সব কথা জেনে নেই। তারপরে রাজনকে বলেছিলাম যে আমি আর কাজ করবোনা। তোমাকে যেন টাকা ফিরিয়ে দেয়। তোমার কাছে আমার শুরু আর তোমার কাজের জন্য নিজের শেষ। আমি দিল্লী ছেড়ে দিয়ে উত্তরকাশি চলে এলাম, সেখানে এক ছোটো স্কুলে পড়াতে শুরু করলাম। অনেকদিন পরে যেন নিজের ছায়া থেকে একটু অব্যাহতি পেলাম আমি।”

মনিদিপার কথা শুনে দেবেশ কি করবে ভেবে পেলো না। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো মনিদিপার সামনে।

মনিদিপার বাজুতে হাত রেখে টেনে দাঁড় করালো নিজের সামনে। মনিদিপা দেবেশের এই আচরনে অবাক হয়ে গেল। জিজ্ঞাসু চোখ নিয়ে দেবেশের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। এক এক করে জামার বোতাম খুললো দেবেশ। মনিদিপা হাঁ করে তাকিয়ে আছে দেবেশের দিকে আর ভাবছে যে কি করতে চলেছে দেবেশ, কিছুই বুঝতে পারছেনা। হটাত করে জামা কেন খুলছে, একা পেয়ে কি আবার সেই লম্পট পুরানো দেবেশ ফিরে এসেছে। আসন্ন উৎকণ্ঠায় কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো মনিদিপা।

জামার ভেতর থেকে বেরিয়ে এল সোনার হার। ঠোঁট কেঁপে উঠলো মনিদিপার, খুব ইচ্ছে করলো যে দেবেশকে জড়িয়ে ধরে আর ওই বুকে মাথা রেখে কাঁদে। মনিদিপা ছুঁয়ে দেখলো হারটা। দেবেশ গলা থেকে হারটা খুলে মেলে ধরলো মনিদিপার সামনে।
 
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#23)

দেবেশ বললো, “না মনি আমি বিয়ে করিনি।”

কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো মনিদিপা, “কেন করোনি দেবু? আমি তো মরেই গেছিলাম।”
দেবেশ কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে মনিদিপার কপালে কপাল ঠেকালো। ঠোঁট কাপছে মনিদিপার, চোখে জল টলমল।

মনিদিপার চোখে চোখ রেখে ওর গলায় সোনার হারখানি পরিয়ে দিয়ে বললো, “এই হার তোমার মনি, এই হার আর কারুর গলায় শোভা পেতে পারেনা মনি। তুমিই তো বলেছিলে মনি, যেদিন আমি আমার ভালবাসা খুঁজে পাব সেদিন যেন তাকে আমি এই হার পরিয়ে দেই। আজ তাকে পরিয়ে দিলাম মনি।”

দু’হাতে খামচে ধরলো দেবেশের জামা। অস্ফুট চিৎকার করে উঠলো মনিদিপা, “না দেবু, একি করলে তুমি। আমি পতিতা কলঙ্কিনী নারী, সমাজে তোমার পাশে দাঁড়ানোর শক্তিটুকু আমি হারিয়ে ফেলেছি। আমি লুকিয়ে আছি অনেক ভাল আছি দেবু।”

দুহাতে আঁজলা করে তুলে নিলো মনিদিপার মুখ, গাল বেয়ে বয়ে চলেছে চোখের জল। দেবেশ ওর কম্পিত ঠোঁটের কাছে ঠোঁট এনে ফিসফিস করে বললো, “না মনি ওই কথা বোলো না। আমি তোমার পাপী, আমাকে ক্ষমা করে দাও মনি। আমি কোনদিন তোমাকে দুঃখ দেবো না। তুমি কে সেটা আমি জানি। এই পৃথিবী যা জানে বা যা দেখেছে সেটা মিথ্যে।”

মনিদিপার বুক ভেঙে ভালবাসার কান্না এসে গেল, প্রাণপণে জড়িয়ে ধরলো দেবেশকে, “এতদিন পরেও তুমি আমাকে কাঁদাতে এসেছো।”

“না মনি না, আর আমি তোমাকে কাঁদাবো না।” দেবেশ বারে বারে মনিদিপার কপালে গালে চুমু খেতে খেতে বললো।

দুজনাই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রইলো। দেবেশের আলিঙ্গনের মাঝে বদ্ধ হয়ে মনিদিপা একটু খানি কেঁপে উঠলো। মুখ উঁচু করে দেবেশকে জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু তুমি আমার অতীত থেকে আমাকে কি করে লুকিয়ে রাখবে?”

দেবেশ ঠিক এই প্রশ্নের জন্য তৈরি ছিল। মনিদিপাকে বিছানার ওপরে বসিয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর হাত দুটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে উত্তর দিল, “বুকের মাঝে মনি। আমি ফ্রান্সে থাকি, সেখানে তোমাকে কেউ চিনবে না।”

মনিদিপার মনের ভেতরে নতুন ভয় ভর নিলো, “আমার মা, কাকিমা কাকু? তারা তো জানে আমি মরে গেছি, তারা যখন জানতে পারবে তাদের কি বলবে তুমি?”

দেবেশ বললো, “আমার সাথে কলকাতা চলো আমি সব সামলে নেব।”

মনিদিপা আঁতকে উঠলো, “না দেবেশ না, আমি কলকাতা যাবোনা। কি মুখ নিয়ে যাবো আমি ওদের সামনে, দেবেশ?”

দেবেশ বললো, “মনি, তোমার পাশে আমি আছি। আজ থেকে তোমার সব ভয়, সব দুঃখ কষ্ট আমার। কেউ তোমাকে ছুঁতে পর্যন্ত পারবে না মনি। কিন্তু একবার তোমাকে কলকাতা যেতেই হবে। সাত বছর আগে তোমার সাথে সাথে জেঠিমাও মারা গেছিলেন। তোমাকে দেখে জেঠিমা মা সবাই বেঁচে উঠবে।”

মনিদিপা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু দেবু, ওরা যদি আমাদের সম্পর্ক না মেনে নেয়?”

দেবেশ অভয় দিয়ে বললো, “মনি, সে চিন্তা তোমার নয় আমার। আমার ওপরে আস্থা আছে তোমার?”

দেবেশের মুখের দিকে তাকালো মনিদিপা, না এবারে ওর চোখ সত্যি কথা বলছে। মনিদিপা নির্ভয়ে দেবেশের সাথে যেতে পারে। দেবেশের মাথা নিজের বুকের ওপরে জড়িয়ে ধরে উত্তর দিল, “তোমার সাথে আমি যমের বাড়ি যেতেও রাজি আছি।”

দেবেশ একটু মজা করে মনিদিপার বুকে নাক ঘষে জিজ্ঞেস করলো, “রাতের ডিনার কি বাইরে খাবে না রুম সার্ভিস ডেকে নেব।”

সাত বছর পরে মনিদিপা যেন আবার নিজেকে খুঁজে পেলো। দুম করে একটা কিল মেরে বললো, “তোমার দুষ্টুমি আর গেল না, বলো। তোমার বন্ধুরা কি বলবে আর আমার হোটেল থেকে জিনিস পত্র তো আনতে যেতে হবে নাকি?”

দেবেশ উত্তর দিল, “ধুর বাবা, ঠিক আছে চলো।” কিছুক্ষণ পরে দেবেশ বললো, “আমিও নিজের জিনিস গুছিয়ে নেই।”

তারপরে দেবেশ নিজের জিনিস গোছাতে সুরু করলো, সেই দেখে মনিদিপা ওকে জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার, তুমি কেন জিনিস গোছাচ্ছো?”

দেবেশ উত্তর দিল, “আজ রাতেই আমরা বেরিয়ে পড়ি। কাল সকালের মধ্যে দিল্লী পৌঁছে যাব তারপর সকালের ফ্লাইট ধরে কলকাতা।”

চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে মনিদিপা, “মানে? এখুনি।”

দেবেশ মনিদিপার হাত ধরে অনুরোধ করলো, “হ্যাঁ মনি, এখুনি। আমার আর দেরি করতে মন চাইছে না। চলো মনি, কলকাতা চলো।”

মনিদিপা কাতর চোখে তাকিয়ে উত্তর দিল, “দেবু, আমার কিন্তু খুব ভয় করছে, কি হবে দেবু...”

ওকে আস্বস্ত করে উত্তর দিল, “মনি আর চিন্তা কোরোনা, প্লিস।”

ওরা দুজনে বেরিয়েই দেখলো যে রুমের সামনে বাকি চারজন দাঁড়িয়ে আছে। দেবেশকে দেখে অনির্বাণ বলে উঠলো, “কিরে ভাই বৌদিকে পেয়ে আমাদের কথা বেমালুম ভুলে গেলি? একবার বউদির সাথে আলাপ করিয়ে দিবি না।”

ভিশাল মনিদিপার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো, “আমি ভিশাল, এই গাধাটার সাথে আইআইটিতে পড়তাম” তারপরে বাকিদের সাথেও আলাপ করিয়ে দিয়ে বললো, “আপনাদের দুজনের একটা ছবি তুলবো আমি, প্লিস একটা রোম্যান্টিক পোজ দেবেন।”

মনিদিপা লজ্জায় লাল হয়ে দেবেশের দিকে তাকিয়ে রইলো। দেবেশ প্রথমে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল তারপরে মনিদিপাকে জড়িয়ে ধরে বললো, “মনি, লজ্জা পেও না।”

দেবেশের হাতে ব্যাগ দেখে অনির্বাণ ওকে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে কোথাও যাচ্ছিস নাকি?”

মনিদিপার দিকে তাকিয়ে দেবেশ উত্তর দিল, “হ্যাঁ রে আমাকে কলকাতা যেতে হবে, তাই রাতেই বেরিয়ে যাবো।”

নিলাঞ্জন একটু ক্ষুণ্ণ হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “যাঃ মাল, ভাবলাম কিনা আজ রাতে একটু মজা হবে। আবার তোদের সাথে কবে দেখা হবে তার নেই ঠিক।”

দেবেশ বললো, “না ভাই আবার দেখা হবে তোদের সাথে, নাহলে এবারে আমার বাড়িতে, বোরদেতে সবার নিমন্ত্রন রইলো।” দেবেশ ওর বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পরে বেরিয়ে পড়লো।

হোটেল থেকে মনিদিপার জিনিস পত্র নিয়ে একটা গাড়ি ভাড়া করে রওনা দিলো দিল্লীর দিকে। রাতের অন্ধকার কেটে গাড়ি এগিয়ে চলেছে দিল্লীর দিকে। ল্যাপটপ বের করে অনলাইন প্লেনের টিকিট কেটে নিলো দেবেশ। সারাটা রাত দেবেশের কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে চোখ বন্ধ করে থাকলো মনিদিপা। অনেকদিন পরে বুকের মাঝে অনেক হাল্কা লাগছে ওর।

মনিদিপার মুখের দিকে তাকিয়ে দেবেশ ওর মনের সব কথা বুঝে ফেললো, মনিদিপাকে কাছে টেনে বললো, “মনি চিন্তা কোরো না আর।”

মিষ্টি হাসি হেসে জবাব দিল মনিদিপা, “না আর ভয় নেই আমার, তুমি আছো তো আমার সাথে।”
 
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#24)

*******
“দেবু, শুতে আসবে, না টি.ভি গিলবে? আর একবার ডাকবো, না এলে রাতে কিন্তু কাউচে শুতে হবে।”

“ডারলিং ব্যাস আর একটুখানি। দেপারদিউর মুভি, প্লিস।”

“সেসব আমি জানি না, তোমার কাছে টি.ভি. আগে না বিবি আগে?”

“অবভিয়াসলি তুমি, তাও একটা বার প্লিস।”

“আমাকে একদম ভালোবাসো না তুমি, আমি তো এখন পুরানো হয়ে গেছি তাই না।”

“কি আবার হলো, এই রাতে কি আবার শুরু করবে নাকি!”

“আমি বলেছিলাম আমার অলিভ অয়েল চাই... মনে নেই তো...”

“ওঃ একদম ভুলে গেছি।”

“দেখলেতো, ভালবাসলে ভুলতে না। বউয়ের কথা মনে থাকে না তাই বউয়ের জিনিস আনার প্রয়োজন বোধ করো না।”

“উফফ... বাবা একটা অলিভ অয়েল আনতে কি ভুলে গেছি তাই নিয়ে মহাভারত শুরু করে দিলে?”

“আমি মহাভারত শুরু করিনা সোনা, তুমি এক একটা যা কাজ করো তাতে তো আর চুপ করে থাকা যায় না।”

“আবার কি করলাম আমি!”

“গত উইক এন্ডে বলেছিলাম যে আমাকে নিয়ে একটু রু ক্যাথেরিনে যেও। নিয়ে গেছিলে? না, তোমার তো ওয়াইন পার্টি ছিল, সেটা বেশি ইম্পরট্যান্ট ছিল।”

“আরে বাবা বোঝো না কেন, দিউদোনের পার্টি না গেলে আবার...”

“তোমার সব পার্টিতে আমাকে যেতে হবে আর আমি যখন বলি আমার কিছু একটা করে দিতে তখন তোমার কাজ পড়ে যায়, সেটা কি ঠিক?”

“তোমার কোন পার্টিতে আমি যাইনি, বলো।”

“সবসময়ে শুধু পার্টি মাথায় ঘোরে তাই না। ফ্রিতে মদ গিলতে পেলেই হলো।”

“সোনামনি আমার, আমি কোথায় ড্রিঙ্ক করি?”

“তুমি করোনা, ওই সব বোতলগুলো যেন আমি শেষ করেছি। আচ্ছা, আমি তোমাকে বলেছিলাম অফিস ফেরত একবার ফ্লেউরেতকে দেখে আসতে, গেছিলে তুমি?”

“যাঃ বাবা তুমি গেছিলে তো হসপিটালে, আবার আমি গিয়ে কি করবো।”

“বাঃবা একটা বাচ্চাকে দেখতে যেতে পারোনা তুমি? অদ্রে তোমার কথা খুব জিজ্ঞেস করছিল।”

“আচ্ছা তাই নাকি। ঠিক আছে কাল না হয় যাব।”

“আর গিয়ে কাজ নেই, কাল সকালে ওরা লিওন চলে যাবে।”

“কেন? কি হলো আবার?”

“না না, বেশি কিছু না। কাল সকালে হসপিটাল থেকে ছুটি পেয়ে যাবার পরে ওরা লিওন যাচ্ছে।”

“অঃ তাই বলো। তা ফিরছে কবে।”

“তোমাকে আগেই জানিয়েছিলাম, হপ্তা দুই পরে ওরা ফিরবে। মরন আমার, কিছুই মাথায় থাকে না।”

“উম্মম... তুমি আছো তো আমাকে মনে করিয়ে দেবার জন্য।”

“হ্যাঁ বিনা পয়সার বাঁদি পেয়েছো তো আমাকে।”

“না ডার্লিং... আই রিয়ালি লাভ ইউ।”

“হয়েছে অনেক হয়েছে, এবারে টি.ভি.টা বন্ধ করে শুতে আসো, সকাল চারটেতে উঠতে হবে। মা, মামনি আসছে, সেটা খেয়াল আছে তো নাকি সেটাও ভুলে খেয়েছো।”

“না না... সেটা ভুলিনি।”

“কাল অফিস ফেরত একবার রু রেমিতে গিয়ে দেখো তো লবস্টার পাও কিনা। এখানে তো মামনিকে আর চিংড়ি মাছ খাওয়াতে পারবো না, তা লবস্টার খেয়ে দেখুক।”

“পারলে একটু ওয়াইন দিয়ে রান্না কোরো, বেশ দারুন লাগবে।”

“পাগল হলে! ওয়াইন! ওরা খেতে পারবে না। আর মামনি জানতে পারলে তোমার মাথা ফাটিয়ে দেবে।”

“আর তুমি একটা কিস কোরো তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।”

“অনেক হয়েছে প্রেমালাপ, এবারে এক লাত্থি মারব।”

“ওকে বেবি, আসছি...” (টি.ভি অফ) “আবার আজকে পায়ের দিকের জানালাটা খুলে রেখেছো?”

“উম্মম্মম্মম্ম...... ছাড়ো ছাড়ো... ইসসস... করো কি তুমি... না তোমার সাথে সত্যি পারা গেলো না আর...”

“একবার ব্যাস প্লিস, একটা ছোট্ট কিসি...”

“এই দেখ, প্যালাসের, ওই ডান দিকের তৃতীয় লাইটটা ওরা ঠিক করে দিয়েছে।”

“যা বাবা, তুমি রোজ রাতে কি লাইট গোনো নাকি?”

“হ্যাঁ গো, খুব ভাল লাগে। ওর রিফ্লেক্সানটা যখন গারওননের জলের ওপরে পড়ে তখন খুব সুন্দর লাগে, ঠিক মনে হয় গঙ্গার পাশে আছি।”

“তুমি পারো বটে, মনি।”

“হুম্ম... চলো আজ সারারাত ধরে দুজনে মিলে প্যালেসের লাইট গুনি।”

“খুব রোম্যান্টিক মুডে আছো আজ, কি ব্যাপার? একটু আগে তো শুতে যাবার কথা বলছিলে।”

“ওকে হানি... চলে এসো...”
************************

দুজনে মিলে গারওননের তীরে সেই প্যালেসের আলো আবার গুনতে লাগলো...

এটা মনে হয় পঞ্চাশ বার ...
 

Users who are viewing this thread

Back
Top