What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (2 Viewers)

Chapter 5: লাহুল স্পিতি ভ্রমন। (#5)

সুপ্রতিমদা ক্ষেপে গিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “বোকা... শুয়োর, কুত্তা হারামি, রাত দেড়টায় দরজায় নক করে জিজ্ঞেস করছিস যে ডিস্টার্ব করলাম নাকি? শালা তোর কি চাই এত রাতে?”

রিতিকা ওদিকে ফিকফিক করে হাসছে, সুপ্রতিমদার রাগ দেখে আর অভির অবস্থা দেখে।

মাথা চুলকায় অভি, “না মানে...”

সুপ্রতিমদাঃ “বোকা... মানে কি... তোর কি কন্ডম চাই?”

অভিঃ “না রে বোকা..., আমার বিয়ার চাই।”

সুপ্রতিমদাঃ “বিয়ারের ক্যারেট গাড়িতে।”

অভিঃ “তাহলে গাড়ির চাবি দে।”

সুপ্রতিমদাঃ “গাড়ির চাবি বলবিন্দারের কাছে। বোকা... এখন যা এখান থেকে আর আমাদের একটু শান্তিতে শুতে দে।”

অভি মুখ বাড়িয়ে রিতিকার দিকে চোখ টিপে বলে, “ডারলিং, তোমার রাতের ঘুম হয়ে গেছে।” অভির মুখে ওই কথা শুনে রিতিকা লজ্জায় লাল হয়ে গিয়ে কম্বলের নিচে মুখ ঢেকে নেয়।

সুপ্রতিমদা অভির ওপরে চেঁচিয়ে ওঠে, “বোকা... এখান থেকে যা না হলে মেরে ফেলব তোকে।”

বলবিন্দারে কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে এক ক্যান বিয়ার নিয়ে অরুনার রুমে ঢুকে গেল। একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগল আর এক হাতে বিয়ারের ক্যানে চুমুক দিতে থাকে। পরীর জন্য অধীর অপেক্ষায় সময় যেন আর কাটেনা। বেশ খানিকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও যখন দেখে যে পরী আর আসেনা, তখন রুম থেকে বেরিয়ে পরীর রুমে যায়। রুমের দরজা আলতো করে ভেজানো দেখে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ে রুমের মধ্যে।

বিছানায় একটা কম্বলের নিচে পরী শুয়ে আর একটা কম্বলের নিচে অরুনা। পরী ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে আর অরুনা ওর বুকের কাছে মাথা রেখে শান্তির নিদ্রা যাপন করছে। অরুনা পরীর বুকের কাছের জামা শক্ত করে মুঠিতে ধরে যেন ছাড়লেই যদি পালিয়ে যায় সেই ভয়ে সর্ব শক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরে পরীর রাত্রিবাস। অভি দুজনার মুখের দিকে তাকালো, পরীর স্নেহময়ি মূর্তি দেখে মন অনাবিল আনন্দে ভরে গেল। পরীর মুখের ওপরে ঝুঁকে পড়ে গালে একটা ছোট্ট চুমু খেলো আর অরুনার মাথায় কপালে হাত বুলিয়ে দিল। দরজা বন্ধ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে অরুনার রুমে ঢুকে শুয়ে পড়লো অভি।

পরের দিনের বেশির ভাগ সময়ে সবাই চিতকুল ঘুরেই কাটিয়ে দেয়। সকালে খেতে বসে কল্যাণী আর রিতিকা অভিকে প্রশ্ন করে যে কি ভাবে ও এই জায়গার কথা জানে, তাঁর উত্তরে অভি জানায় যে বেশ কিছু বই আর ম্যাপ পড়াশুনা করে ও এই জায়গার কথা জেনেছে।

অরুনার গলায় মৃদু রাগ, “এটাকে সাহসী বলে না বুঝলি, এটা পাগলামি, শুচিদিকে নিয়ে এই রকম একটা জায়গায় আসা। এই জায়গা তো মনে হয় পৃথিবী থেকে বাইরে।”

পরী সবার দিকে হেসে বলে, “আর এই জন্যেই প্রথম রাতে আমাদের ঝগড়া হয়েছিল।”

অভি পরীকে ক্ষেপানোর জন্য বলে, “আর পরেরদিন সকালে কি হয়েছিল?”

পরী লাজুক হেসে অভিকে আদর করে চাঁটি মারে। ওর মুখের লালিমা দেখে কারুর বুঝতে অসুবিধে হয় না যে সকালের কি ঘটেছিল।

তাও রিতিকা পরীকে ছাড়ে না, জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, কি হয়েছিল পরেরদিন সকাল বেলায়, শুনি।”

পরী অভির দিকে তাকিয়ে নিচু সুরে বলে, “নাও এবারে ম্যাও সামলাও...”

অভি রিতিকার দিকে চোখ টিপে বলে, “ডারলিং, কাল রাতে তুমি যা করছিলে, সেটাই ওর সাথে সেদিন রাতে হয়েছিল।”

রিতিকার গাল লাল হয়ে ওঠে লজ্জায়, খাবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে যেন ফাঁক খোঁজে একটু মুখ লুকানোর জন্য।

সকালের খাওয়ার পর্ব শেষে, পরী মেয়েদের নিয়ে বিয়াস নদীর দিকে যায়। ছেলেরা হোটেলের সামনের ফাঁকা জায়গায় বসে চারপাশের পাহাড় দেখে আর সিগারেট টানতে টানতে গল্প করে। হোটেলের সামনে থেকে নদীর তীর বেশ পরিস্কার দেখা যায়, দূর থেকে লক্ষ্য করে যে মেয়েরা বেশ মজা করছে। সুপ্রতিমদা আর দীপঙ্কর অভিকে পরবর্তী জায়গার কথা জিজ্ঞেস করে। অভি জানায় যে পরবর্তী স্থান, নাকো। আগামিকাল সকাল সকাল ওদের বেরিয়ে পড়তে হবে তবেই রাতের আগে নাকোতে পৌঁছে যাবে ওরা। মেয়েরা বেশ খানিকখন পরে নদীর ধার থেকে ঘুরে হোটেলে ফিরে আসে।

দুপুরের খাওয়ার সময়ে পরী অভিকে বলে, “গ্রীষ্ম কালে পাহাড় আরও সুন্দর হয়ে ওঠে, চারদিক সবুজে ঢাকা, শিতকালের চেয়ে একদম আলাদা সৌন্দর্য। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ যে আমাকে দুই ঋতুতেই এখানে এনেছো।”

অভিঃ “সব তোমার জন্য হানি, তোমার সেই অদৃশ্য চিঠি না পেলে এখানে কোনদিন আসা হতোনা।”

অরুনা ওদের কথাবার্তা শুনে অভিকে জিজ্ঞেস করে, “অদৃশ্য চিঠি? সেটা কি?”

অভি ওকে সেই চিঠির কথা বলে আর এই জায়গার আসার সেই পরিকল্পনার গল্প বলে। অভি মজা করে বলে যে ওর হবু বউয়ের শিক্ষয়িত্রী না হয়ে গোয়েন্দা হওয়া উচিত।

বিকেলে হোটেলের ম্যানেজার অভিদের জিজ্ঞেস করে যে রাতে বনফায়ার করতে চাই কিনা। বনফায়ারের কথা শুনে পরী আর রিতিকার চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে, এক কথায় সব মেয়েরাই নেচে ওঠে রাতের বনফায়ারের কথা শুনে। রাতে বনফায়ারের চারপাশে গোল করে সবাই বসে, মাঝে কাঠের আগুন জ্বলছে। পরী চেয়ারে বসে, ওর পায়ের কাছে অভি বসে ওর কোলে মাথা রেখে। পরী অভির চুলে আদর করে দেয়। পরীর একপাশে অরুনা অন্য পাশে রিতিকা। রিতিকার পায়ের কাছে সুপ্রতিমদা বসে ওর কোলে মাথা রেখে। অরুনার দিকে মাথা ঘুরিয়ে তাকায় অভি, অরুনার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে, আবার সেই পুরানো অরুনাকে দেখতে পেয়ে অভির মন আনন্দে ভরে ওঠে। অভি নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে আগুনের লাল হলদে আলোয় আলোকিত অরুনার হাসিহাসি মুখের দিকে। পরী অভির দৃষ্টি অনুসরন করে অরুনার দিকে তাকায়।

পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, “অরুনা এখন অনেকটা ভাল আছে। তবে আরও কিছু সময় লাগবে ওর মনের অবস্থা ঠিক হতে, চিন্তা কোরোনা ধিরে ধিরে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

পরীর কোলের ওপরে মুখ ঘষে বলে, “সত্যি তোমাকে যে কি করে ধন্যবাদ জানাবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।”

অভির চুলে বিলি কেটে বলে, “আমাকে কেন ধন্যবাদ জানাবে? তোমার কষ্ট কি আমার কষ্ট নয়?”

অভি মুখ তুলে ওর গভীর কালো চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “তাহলে কি আজ রাতে আমরা সেলিব্রেট করছি?”

চুলের মাঝে আঙুল দিয়ে আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলে, “না হানি, এখন ওর মানসিক অবস্থা ঠিক নয়। তোমার চেয়ে আমাকে ওর বেশি দরকার, একটু বুঝতে চেষ্টা করো সোনা।”

অরুনা ওদের কথা শুনে ফেলে জিজ্ঞেস করে, “এই তোরা কি বলছিস রে?”

পরী আদর করে ওর গালে চাঁটি মেরে বলে, “কিছু না, তুই আনন্দ কর, আমরা একটু আসছি।”

পরী অভিকে টেনে তুলে হোটেলের মধ্যে নিয়ে গিয়ে বলে, “গতকাল রাতে, অরুনা পুবালিকে স্বপ্নে দেখে যে ও ডাকছে। ভয়ে আঁতকে ওঠে ও, আর সেইজন্য আর ঘুম আসেনা। কাল অনেক রাত পর্যন্ত আমাকে আঁকড়ে ধরে কেঁদেছিল, আমাকে একদম ছাড়ছিল না। অনেকক্ষণ ধরে ওকে আমি সান্তনা দেই আর বুঝাই, তবে গিয়ে ওর চোখে ঘুম আসে। এমত অবস্থায় কি করে ওকে আমি একা ফেলে দেই বলো?”

অভি পরীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, সারা চেহারায় যেন এক মাতৃময়ী রুপের আলোক ছটা বিচ্ছুরিত হয়। রাতে সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চলে যায়, কারন সকাল সকাল উঠে বেরিয়ে পড়তে হবে নাকোর দিকে। পরী অরুনাকে নিয়ে ওদের ঘরে ঢুকে যায়। দরজা বন্ধ করার আগে অভির দিকে আদর করে ম্লান হেসে বলে, “ব্যাস আর কিছু দিন হানি। তোমার ওর বেশি জরুরি আমাকে কাছে পাওয়া। আমি জানি তুমি বুঝে নেবে।” অভি বুকের কাছে হাত এনে চেপে ধরে জিজ্ঞেস কর, “তুমি কে? তুমি কোন সময়ে স্নেহময়ী মাতৃ মূর্তি আবার কোন সময়ে আমার প্রেয়সী সুন্দরী। কি করে তুমি এত রুপ ধারন করো?”

পরীর গালে আদর করে অভি, “আই লাভ ইউ।”

পরী ওর ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে, “মনে আছে তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে যে এই পাহাড়ের মাঝে আমার জন্য একটা কুঁড়ে ঘর বানিয়ে দেবে।”

মাথা নাড়ায় অভি, ওর সেসব কথা বেশ ভালো করে মনে আছে।
পরদিন সকাল আটটার মধ্যে খাওয়া সেরে অভিরা বেরিয়ে পড়ে নাকোর উদ্দেশ্যে। গাড়ির চালক সুপ্রতিমদা, পাশে বসে ওর প্রেয়সী, রিতিকা। অভি, পরী আর অরুনা পেছনে বসে। একসময়ে রিতিকা সুপ্রতিমদার কোল ঘেঁসে বসে গালে আলতো করে চুমু খায়।

অভি সেই দেখে রিতিকাকে খেপিয়ে বলে, “রিতু ডার্লিং, সুপ্রতিমদার গিয়ার বদলাতে যেও না।”

সুপ্রতিমদা চেঁচিয়ে ওঠে, “বোকা... চুপচাপ পেছনে বসে থাক।”

গালাগালি শুনে সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। পরী ভাবতেই পারেনি ওদের মুখ থেকে এইরকম সব গালাগালি বের হবে। রিতিকার মুখ লাল হয়ে যায় লজ্জায়, সুপ্রতিমদার কাছ থেকে সরে, লজ্জা লুকাতে জানালার বাইরে দেখে।

পোয়ারিতে থামে গাড়িতে তেল ভরানোর জন্য। ইনোভা ওদের গাড়ির ঠিক সামনে। রেকংপিও পার হবার পরেই পাহাড়ের রঙ বদলাতে শুরু করে। এতক্ষণ দুপাশে সবুজ ঘাসে বা গাছে ঢাকা পাহাড় ছিল, পিওর পরে পাহাড়ের রঙ হয়ে যায় ধুসর। ব্রিজ পার হবার পরেই চারপাশে ন্যাড়া পাহাড়, কোথাও ঝুরঝুরে পাথর রাস্তার ওপরে পরে। সুপ্রতিমদার গাড়ি চালাতে একটু অসুবিধে হচ্ছিল, এবড়োখেবড়ো রাস্তার ওপরে গাড়ি যেন ঢেউয়ের মতন দোল খায়। শতদ্রু নদী রাস্তার একপাশ দিয়ে নিজের মনে বয়ে চলে। পরী অভির কাঁধে মাথা রেখে বসে, অভি একহাতে পরীর কোমর জড়িয়ে ধরে থাকে। অরুনা চুপ করে জানালার বাইরে তাকিয়ে ভয়ঙ্কর কঠিন সৌন্দর্য দেখে।

অরুনা কিছু পরে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁরে একটা কথা বলবি আমাকে? পঞ্চাশ ক্যান বিয়ার আর পাঁচ বোতল ভদকা এনেছিস। তোরা দুজনে কি সারাটা রাস্তা গলায় ঢালতে ঢালতে যাবি?”

অভি নির্লজ্জের মতন মাথা নাড়িয়ে বলে, “হ্যাঁ।”

অরুনা বিরক্ত হয়ে ওঠে, “যাচ্ছেতাই মানুষ তোরা...”

সুপ্রতিমদা অরুনা কথা শুনে ফেলে চেঁচিয়ে ওঠে, “আরে, আমি তো বিয়ারের কথা একদম ভুলে গেছিলাম, তোমার কথা শুনে মনে পড়ে গেল। এবারে তো এক এক ক্যান মারতেই হয়।” অভিও মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ।”

পরী ওকে আদর করে মারতে শুরু করে দেয়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা খাব ব্রিজ পৌঁছে যায়। ইনোভা সামনে দাঁড়িয়ে, কল্যাণী আর রানীরা গাড়ি থেকে নেমে চারপাশের পাহাড় দেখছে। একদিক দিয়ে শতদ্রু নদী একদিকে স্পিতি নদী এখানে মিশেছে। রিতিকা ওদের দেখে সুপ্রতিমদাকে গাড়ি দাঁড় করাতে অনুরোধ করে।

সুপ্রতিমদা গাড়ি দাঁড় করাতেই গাড়ি থেকে সবাই নেমে পড়ে। সামনে রাস্তার অবস্থা দেখে সুপ্রতিমদা একটু থমকে যায়। ব্রিজের ওপারে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি, মাথার ওপরে ছাদের মতন ঝুলে আছে পাহাড়, একপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে উত্তাল তরঙ্গিণী স্পিতি নদী। ব্রিজের নিচে, স্পিতির আর শতদ্রুর জল মিলেমিশে যেন যুদ্ধে রত। অভি গাড়ির পেছনে গিয়ে দুটি ক্যান বিয়ার নিয়ে একটা সুপ্রতিমদার হাতে ধরিয়ে দেয়। পরী মেয়েদের নিয়ে স্পিতির দিকে হেঁটে নেমে যায়। দুরে দেখা যায়, নাকোর খাড়া রাস্তা। পাহাড়ের গা বেয়ে এঁকে বেঁকে উঠে গেছে। সুপ্রতিমদা পরীর কাছে গিয়ে রাস্তার কথা জিজ্ঞেস করে। দুরে দাঁড়িয়ে অভি পরীকে দেখে, বেশ ভালো ভাবে রাস্তার ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়।
 
Chapter 5: লাহুল স্পিতি ভ্রমন। (#6)

সুপ্রতিমদা অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “গুরু এই রাস্তায় আমি গাড়ি চালাচ্ছি না, এক নয় তুই না হয় বলবিন্দারকে বল।”

অভি চালকের সিটে বসে পড়ে। গাড়ি অতি সন্তর্পণে আঁকা বাঁকা চড়াই চড়তে শুরু করে। সুপ্রতিমদা অভির পাশে বসে বারেবারে জানালার বাইরের দৃশ দেখে আর থমকে যায়। বুকের মাঝে দুরুদুরু নিয়ে রিতিকা আর অরুনা পরীর হাত চেপে ধরে দম বন্ধ করে বসে থাকে।

সুপ্রতিমদা অভিকে জিজ্ঞেস করে, “এই জায়গা কি করে খুঁজে বের করেছিস তুই? এই জায়গাতো মনে হয় পৃথিবীর বাইরে।”

নাকোতে ওরা দুই দিন থাকে, সবাই নাকোতে বেশ আনন্দ করে। শুধু অভির রাত কাটে সিগারেট আর বিয়ারের ক্যান নিয়ে, ইচ্ছে থাকলেও অরুনার মুখ দেখে পরীর কাছে যেতে পারেনা।

অভিরা নয় জন ছাড়া নাকোতে কোন ভারতীয় পর্যটকের দেখা পাওয়া যায়নি, বেশির ভাগ পর্যটক বিদেশি। কিছু ভারতীয় ছিল তারা বাইকে করে লাহুল স্পিতি ঘুরতে বেরিয়েছিল।

একদিন বিকেল বেলায়, অভিরা সবাই মিলে নাকোর বৌদ্ধ মঠের মাঠে বসে সবাই সূর্যাস্ত দেখছিল। পরী ওর পাশে কাঁধে মাথা রেখে চুপচাপ বসে থাকে, আনমনা হয়ে যায় দুজনেই, সূর্যাস্তের লাল কিরন ওদের যখন স্নান করিয়ে দেয়। পরী ফিসফিস করে ওর কানে মনে করিয়ে দেয় সেই রাতের উপহারের কথা। সেই স্মৃতির রোমন্থনে অভির গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, সুমধুর সেই স্মৃতি, পরীকে জড়িয়ে ধরে সারা মুখে তপ্ত চুম্বন এঁকে দেয়।

নাকোর শেষ রাতে, অভি আর সুপ্রতিমদা আকাশ দেখতে বের হয়, হাতে ভদকার বোতল, ভেবেছিল দুরে হেলিপ্যাডের কাছে গিয়ে, দুজনে মিলে একটু নিরিবিলিতে সুখে পান করবে। ঠিক সেইসময়ে রিতিকা দৌড়াতে দৌড়াতে ওদের সাথে এসে যোগ দেয়। অভিকে জিজ্ঞেস করে যে সুপ্রতিমদাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে, অভি আকাশের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, আকাশ গঙ্গা দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে। মেঘহীন, দূষণহীন স্বচ্ছ আকাশে লক্ষ কোটি তারার সমাবেশ, আকাশগঙ্গা তারামন্ডল দেখে ওরা অবাক হয়ে যায়। অভি দেখলো যে এর পরে রিতিকাকে নিয়ে গেলে ওদের ভদকা পানে ব্যাঘাত ঘটবে তাই একবার রিতিকাকে ফিরে যেতে অনুরোধ করে। রিতিকা জানায় যে সব মেয়েরা ঘুমিয়ে পড়েছে, পরী অরুনাকে নিয়ে অনেক আগেই ঘরে ঢুকে পড়েছে, ওর একা একা কি করবে তাই অগত্যা ওদের সাথে। সুপ্রতিমদা অভির দিকে একটু কটমট করে তাকায়, সেই রাতে বেচারা ভদকা বোতলেই বন্ধ থেকে যায়।

বৃহস্পতিবার সকাল বেলায় খাওয়াদাওয়া করে অভিরা বেরিয়ে পড়ে কাজার উদ্দেশ্যে। গাড়ির চালক আবার সুপ্রতিমদা। নাকো থেকে বেরিয়েই রাস্তা বেশ সুন্দর দেখে সুপ্রতিমদার আর অভির মন খুশিতে ভরে যায়। কিছুদুর গিয়েই আসে মালিং টপ, সমুদ্রতল থেকে বারো হাজার ফুট উচ্চতায়, আশেপাশের পাহাড় যেন ওর নিচে পড়ে রয়েছে। রাস্তা অতি সঙ্কীর্ণ, সামনে থেকে দুটি বিদেশি পর্যটক সাইকেলে চেপে ওদের দিকে আসে। সুপ্রতিমদা ওদের থামিয়ে সামনের রাস্তার কথা জিজ্ঞেস করে। রাস্তার অবস্থা মোটামুটি, ওরা ঘুই নামে একটা ছোটো গ্রামে ঘুরতে গেছিল, সেখান থেকে আসছে ওরা। সেই গ্রামটা নাকি অনেক সুন্দর, ঠিক যেন পাহাড়ের কোলে পটে আঁকা ছবির মতন আর মাঝখান থেকে একটা অতি ক্ষুদ্র জলধারা বয়ে চলেছে। সেই শুনে সব মেয়েরা উৎফুল্ল হয়ে চেঁচিয়ে ওঠে যে ওরা ঘুই যাবে। অভি আর সুপ্রতিমদা ম্যাপ খুলে ঘুইয়ের অবস্থান দেখে নেয়।

তারপরে সুপ্রতিমদা জানায়, “আমরা সবাই ঘুই যাবো, তারপরে কাজা।” সেই কথা শুনে রিতিকা সুপ্রতিমদার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলে, “মেরা দিল কা রাজা, অনেক ধন্যবাদ।”

মালিং ছাড়িয়েই কিছু দূর যেতে সামনে রাস্তার ওপরে দিয়ে একটা ছোটো ঝরনা বয়ে যেতে দেখে। সেই দেখে সবাই ভয়ে আঁতকে ওঠে, একপাশে গভীর খাদ, খাড়া হয়ে নিচে নেমে গেছে স্পিতি নদীর তীরে, অন্য পাশে ধুসর পাহাড়ের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে জলধারা। একটাই রাস্তা সামনে।
সুপ্রতিমদা গাড়ি থামিয়ে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “গুরু আমি গাড়ি চালাচ্ছি না, এটা অসম্ভব ব্যাপার। বারো হাজার ফিটের ওপরে রাস্তায় এই জল, তাঁর ওপর দিয়ে গাড়ি? মাথা খারাপ নাকি?”

মেয়েরা গাড়ির ভেতরে ভয়ে চুপ করে বসে। অরুনা আঁতকে ওঠে, “আমি আর আগে যাবো না, তুই আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে চল।”

পরী আদর করে বকুনি দেয় অরুনাকে, “ধুর, এইরকম ভয় পেলে হয় নাকি, আমরা সবাই আছি তোর সাথে।” অভির দিকে একটু ভয় নিয়ে কিন্তু মনে প্রবল সাহস নিয়ে তাকিয়ে বলে, “অভি, গাড়ি চালাও।”

বুক দুরদুর করে ওঠে অভির, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। দাঁতে দাঁত পিষে, পরীর দিকে তাকিয়ে মনের শেষ শক্তিটুকু সঞ্চয় করে চালকের সিটে বসে পড়ে অভি।

রিতিকা আর অরুনা ভয়ে কুঁকড়ে গেছে। রিতিকা বললো, “আমরা গাড়ি থেকে নেমে গেলে ভাল হবে, অন্তত কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে চালাতে পারবে অভি। আমরা পায়ে হেঁটে ঝরনা পার করে নেই, ও সাবধানে গাড়ি চালিয়ে আসুক।”

পেছনে ইনোভার থেকেও সবাই নেমে গেছে। আমজাদ অভির কাছে এসে একবার জিজ্ঞেস করে যে গাড়ি চালাতে পারবে কিনা। মাথা নাড়ায় অভি, গাড়ি চালাবে। বলবিন্দার আর অভি ছাড়া দুই গাড়ি থেকে সবাই নেমে পায়ে হেঁটে ঝরনা পার করে দাঁড়ায়।

অভির বুকের মাঝে দামামা বাজতে শুরু করে, চোখ বন্ধ করে বুক ভরে এক শ্বাস নিয়ে গাড়ি চালু করে দেয়। গাড়ি প্রথম গিয়ারে নিয়ে, অতি সন্তর্পণে ঝরনার ওপরে নামিয়ে দেয় অভি, কপালের ঘাম নাক বেয়ে নেমে আসে। অবশেষে গাড়ি ঝরনা পার হয়ে যায় আর সবার সবাই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাঁচে।

পরী দৌড়ে এসে গাড়িতে উঠে অভিকে জড়িয়ে প্রাণপণে ধরে বলে, “আমার সাহসী ছোট্ট রাজকুমার।”

তারপর গাড়ি নিচে নামতে শুরু করে।

অরুনা অভিকে বলে, “অনেক ঘোরা হয়েছে, আমি কোনদিন এখানে আসব না। এটা ঘোরার জায়গা নাকি? কি সাঙ্ঘাতিক আর ভয়ঙ্কর রাস্তা ঘাটরে বাবা। জায়গায় জায়গায় আবার রাস্তার ওপর দিয়েই ঝরনা বয়ে চলেছে।”

রিতিকা সুপ্রতিমদাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “হানি, আমরা হানিমুন করতে এখানে আসব।”

পরী হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, “এখন কি হানিমুন করছো না?” সবাই পরীর কথা শুনে হেসে ফেলে, রিতিকা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

কিছুদুর চলার পরে ওরা ঘুই যাবার রাস্তা দেখতে পায়। রাস্তা অতি সঙ্কীর্ণ, একটা গাড়ি যেতে পারে, একপাশে উঁচু খাড়া পাহাড়, অন্য পাশে একটা সরু নামহীন পাহাড়ি নদী, বড় বড় পাথরের ওপর দিয়ে নেচে নেচে এগিয়ে চলেছে মোহনার পানে। দুপুর প্রায় একটা নাগাদ ওরা ঘুই পৌঁছে যায়। খুব ছোটো একটি গ্রাম, চারদিকে উঁচু খাড়া পাহাড়ে ঘেরা।

ওদের গাড়ি ঢুকতে দেখে কোথা থেকে একটা ছোটো ছেলে দৌড়ে আসে। অভিদের জিজ্ঞেস করে যে ওরা মামি দেখতে এসেছে কিনা। ছেলেটার কথা শুনে সবাই অবাক, এই রকম এক জন বিরল জায়গায় মামি? সুপ্রতিমদা গাড়ি থেকে নেমে ছেলেটাকে মামির কথা জিজ্ঞেস করাতে জানা যায় যে গ্রামের শেষ প্রান্তে একটা ছোটো মন্দির আছে। সেখানে এক বৌদ্ধ মুনির মমি রাখা আছে। সেই মমি নাকি ছয় হাজার বছরের পুরানো আর প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষিত। ওদিকে ইনোভা থেকে দীপঙ্কর নেমে এসে সুপ্রতিমদাকে জিজ্ঞেস করে জায়গার ব্যাপারে। সুপ্রতিমদা ওকে মমির ব্যাপারে জানায়। সবাই সেই মমির কথা শুনে তা দেখতে উৎসুক হয়ে ওঠে।

গ্রামের শেষ প্রান্তে সেই বৌদ্ধ মুনির মন্দিরে হলুদ আর সাদা সিল্কের কাপড়ে ঢাকা কাঁচের বাক্সে রাখা মমি। সেই মমি দেখে সবাই বিস্ময়ান্বিত হয়ে যায়। সবাই কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আনন্দ নেয়। অভির শরীরে যেন আর শক্তি নেই তাই বলবিন্দারকে অনুরোধ করে গাড়ি চালানোর জন্য।

ফিরে যাবার কথা শুনে অরুনা ছাড়া সব মেয়েরা চেঁচিয়ে ওঠে, “এখান থেকে আমরা কোথাও যাব না, আজ রাতে এখানে থাকব।”

দীপঙ্কর আর সুপ্রতিমদা মেয়েদের বুঝাতে চেষ্টা করে যে ঘুই খুবই ছোটো জায়গা, এখানে হোটেল বা থাকার কোন জায়গা নেই, এমনকি এখানে খাবার জায়গাও নেই, সেই মত অবস্থায় এখানে থাকা যেতে পারেনা।

অভিকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পরী বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে?” বাকিদের দিকে দেখে বলে, “আমরা আজ রাতে এখানে থাকব।”

অভি ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে এখানে থাকার বা খাওয়ার কোন ব্যাবস্থা নেই। অভি হতাশা নিয়ে সবার দিকে তাকায়।

কল্যাণী অভিকে কিছু বলতে না পেরে দিপঙ্করের ওপরে চেঁচিয়ে ওঠে, “টেন্ট কেন এনেছো, শুধু দেখানোর জন্য?” দীপঙ্কর অসহায়ের মতন অভির দিকে তাকায়, তাঁবুর ব্যাপার ওর পরিকল্পনায় ছিল না।

অরুনা অভির কাছে এসে মৃদু সুরে বলে, “প্লিস অভি, দেখ সব মেয়েরা থাকতে চাইছে, ওদের কথা ভেবে থেকে যা।” অরুনার মিষ্টি মুখের কাতর আহবান অভি প্রত্যাখান করতে পারলো না, শেষ পর্যন্ত সবাইকে জানিয়ে দিল যে রাতে ওরা টেন্টে থাকবে। পরী সেই ছোটো ছেলেটাকে দুশো টাকা দিয়ে তাঁবু খাটানোর জায়গা আর কিছু কাঠের ব্যাবস্থা করতে অনুরোধ করে।

সেই ছোটো নদী পার করে একটা সমতল ভুমিতে তাঁবুর জায়গা ঠিক করা হয়। ছেলেরা কোনোরকমে তাঁবু খাটায়, সারাদিন ওরা ঘুই ঘুরে বেড়ায়। মেয়েরা নদীর সেই হীম শিতল জলে অনেকক্ষণ ধরে মজা করে। রাতের বেলায় তাঁবুর সামনে আগুন জ্বালিয়ে খোলা আকাশের নিচে সবাই বসে গল্প করে। এই রকম ভাবে রাত কাটানোর সবার কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা। অভির জীবনের সব থেকে স্মরণীয় দিন, একদিকে পরীর আনন্দ আর অন্যদিকে ওর দেবী, অরুনার মুখে হাসি, ওর কাছে যেন পৃথিবীর সব খুশি একত্রিত হয়ে গেছে।

আগুনের চারদিকে সবাই মাটিতে বসে। পরীর কোলে হেলান দিয়ে অভি ভদকার গ্লাসে চুমুক দিতে থাকে। ওদের ঠিক সামনে অরুনা বসে। বাকি তিন জোড়া বেশ আনন্দ করছে।

এমন সময়ে রিতিকা বলে, “একটু গান করলে বেশ ভাল হয়, কি বল সবাই?”

ওর কথা শুনে অভি বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার প্রেমিকা দারুন গান গায়, ওই সব থেকে আগে গান গাইবে।”

পরী মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে, “না না, আমি গান গাইতে যাবো না, গ্রামের লোকেরা আমার গান শুনে আমাদের মারতে আসবে।”

কল্যাণী পরীকে বলে, “বেশি দাম দেখাস না, আমি জানি তুই খুব সুন্দর গান গাস।”

অনেক অনুরোধ করার পরে পরী অভির দিকে তাকিয়ে গান ধরে...
“এই জীবন ছিল নদীর মতন, গতি হারা দিশা হারা।
এই জীবন ছিল নদীর মতন, গতি হারা দিশা হারা।
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে, আমি হয়ে গেছি তারা,
ও ও ও আমি হয়ে গেছি তারা...
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে, আমি হয়ে গেছি তারা,
আগে ছিল শুধু পরিচয়, পরে হলো মন বিনিময়,
শুভ লগ্নে হয়ে গেল শুভ পরিণয়
শুভ লগ্নে হয়ে গেল শুভ পরিণয়
আজ যখনি ডাকি জানি তুমি দেবে সাড়া,
আজ যখনি ডাকি জানি তুমি দেবে সাড়া।
এই জীবন ছিল নদীর মতন, গতি হারা দিশা হারা.........”

গানের শেষে অভি পরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে গভীর এক চুম্বন এঁকে দেয়। সবাই গান শুনে আপ্লুত হয়ে যায়।

রিতিকা সুপ্রতিমদার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আমি না শুধু জীবন, নদী, আকাশ, তারা এই শব্দগুলো বুঝতে পেরেছি, বাকি গানের কি মানে? যাই গেয়ে থাক না কেন, বড় মিঠে এই গান।” সুপ্রতিমদা ওকে গানের মানে বুঝিয়ে দিতে, রিতিকা পরীর দিকে দেখে কৃতজ্ঞতায় মাথা নোয়ায়।
পরীর গানের শেষে সবাই অরুনাকে অনুরোধ করে গান গাইতে। লাজুক অরুনা মৃদু চেঁচিয়ে ওঠে, “না না না, আমি গান টান জানি না।” সবাই ওর স্বাস্থের কথা জানে তাই অরুনাকে কেউ বিশেষ চাপ দিল না। সুপ্রতিমদা রিতিকাকে গান গাইতে অনুরোধ করে।

অরুনা এমন সময়ে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি গান গাইব।” অভি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করে যে ওর চোখ দুটি চিকচিক করছে। অভি ঠিক বুঝতে পারেনা কি হলো, সারাদিন তো ঠিক ছিল অরুনা।

অরুনা গেয়ে ওঠে, “মেরা চন্দা হ্যায় তু, মেরা সুরজ হ্যায় তু,
ও মেরি আঁখো কা তারা হ্যায় তু,
জিতি হু ম্যায় ব্যাস তুঝে দেখ কর,
ইস টুটে দিল কা সাহারা হ্যায় তু,
মেরা চন্দা হ্যায় তু, মেরা সুরজ হ্যায় তু...”

গান শুনে অরুনার চোখের চিকচিক দেখে, অভির বুক কেঁপে ওঠে আবেগে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা অভি, গাল বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। পরী অভিকে জড়িয়ে ধরে আদর করে চোখের জল মুছিয়ে দেয়।

পরী গালে আলতো করে ঠোঁট চেপে বলে, “ধুর বোকা, তোমরা দুজনে আবেগে যে এত ভেসে যাবে জানতাম না তো।”

রিতিকার বুঝতে দেরি হয় না যে আবেগের বাতাস আবহাওয়াকে ভারী করে তুলেছে। মনের মধ্যে আনন্দের জোয়ার এনে গেয়ে উঁচু সুরে ওঠে, “ছোড়ো সনম কাহে কা গম, হাসতে রহো, খিলতে রহো,
ছোড়ো সনম কাহে কা গম, হাসতে রহো, খিলতে রহো,
মিট জায়েগা সারা গিলা, হামসে গলে মিলতে রহো,
ছোড়ো সনম কাহে কা গম, হাসতে রহো, খিলতে রহো, ”

অভি ওর গান শুনে ওর দিকে হেসে বলে, “ডারলিং গলে মিলতে রহো তো বলে দিলে, আমাকে একবার জড়িয়ে ধরবে না।”

রিতিকা ওর দিকে তাকিয়ে হেসে উত্তর দেয়, “শয়তান, তোমাকে কেন জড়িয়ে ধরতে যাব আমি?”

হাঁটুর ওপরে ভর দিয়ে অরুনার কাছে গিয়ে অরুনাকে জড়িয়ে ধরে ওর চোখের জল মুছিয়ে দেয়।

অনেক রাত পর্যন্ত সবাই আনন্দে আর গল্প গুজব করে। রাতে ম্যাগি আর আলু সেদ্ধ খাওয়া হয়। রাতের খাবার পরে, সবাই তাঁবুর মধ্যে ঢুকে পড়ে নিজের নিজের স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে। অভি আর সুপ্রতিমদা খোলা আকাশের নিচে, নিভু নিভু আগুনের সামনে ভদকা নিয়ে বসে পড়ে।

পরী ওদের দিকে বিরক্তি ভরে চেঁচিয়ে ওঠে, “তোমার দুটি মাতাল কি সবসময়ে মদে ডুবে থাকবে?”

অভি পরীর দিকে তাকিয়ে মিনতি করে, “বেবি, এই বোতলটা শেষ করেই আসছি।”

অভির কথা শুনে রিতিকা চেঁচিয়ে ওঠে, “তোমরা তোমাদের ওইটা নিজেদের পেছনে ঢুকিয়ে নিও, আমাদের কাছে আর আসতে হবে না।”

রিতিকার মুখে গালাগালি শুনে সবাই হেসে ফেলে। শেষ পর্যন্ত ভদকা শেষ হয় না, অভি একটান মেরে বোতল ফেলে দেয় নদীর জলে।

পরের দিন সকালে উঠতে সবার দেরি হয়ে যায়। ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়ে পরবর্তী স্থানের উদ্দেশ্যে, কাজা। মাঝ পথে ওরা তাবো নামের এক জায়গায় থেমে দুপুরের খাওয়া সেরে নেয়। তাবোতে খুব সুন্দর এক বৌদ্ধদের মঠ আছে যা প্রায় হাজার বছরের পুরানো। কাজা পৌঁছাতে প্রায় বিকেল হয়ে যায়। হোটেল পেতে ওদের বিশেষ অসুবিধে হয় না। কাজায় যে হোটেলে ওরা ওঠে সেটা বেশ ছোটো কিন্তু খুব সুন্দর, মাঝ খানে একটা ছোটো বাগান আছে।

রাতের খাওয়ার পরে অভি পরীকে জিজ্ঞেস করে যে পরী ওর সাথে রাত কাটাবে কিনা। উত্তরে পরী একটু বিরক্তি প্রকাশ করে বলে, “এত উতলা হচ্ছো কেন বলতো? আমি তো তোমার কাছে সারা জীবন থাকব। ওর মানসিক অবস্থার কথা একটু ভেবে এই কটা দিন সবুর করে যাও।”

অগত্যা অভির চোখের সামনে অরুনার শীতল মুখাবয়ব ভেসে ওঠে, কিছু বলতে পারেনা পরীকে। ম্লান হেসে মাথা নাড়িয়ে ঘরে ঢুকে পরে, সিগারেট আর বিয়ারের ক্যান নিয়ে।

এই ভয়ঙ্কর সুন্দর হীম শীতল মরুভুমির মাঝে, কাজা একটি মরুদ্যানের মতন, বড় শহর। এখানে বেশ কিছু দোকান আর হোটেল আছে। আসে পাশে দেখার অনেক ছোটো ছোটো জায়গা আছে। স্পিতি নদীর তীরে কাজা শহর, স্পিতি নদী এখানে অনেক চওড়া, কিন্তু নদিতে বিশেষ জল নেই, ছোটো ছোটো জলধারা বয়ে চলেছে ফাঁকা নদীর মাঝখান থেকে।

পরদিন সকালে উঠে অভিরা কাজা ঘুরতে বের হয়। শহরের বাইরে একটি বৌদ্ধদের মঠ আছে, সেখানে যায় ওরা। সেখান থেকে ওরা যায় কি নামের এক মঠে, বেশ উঁচু উই ঢিপির মতন পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত কি মঠ।

কি মঠে যাওয়ার পথে একটা বৃদ্ধা আশ্রম দেখিয়ে পরী অভিকে বলে, “আমরা যখন বুড়ো বুড়ি হয়ে যাব, তখন আমাদের সব কিছু বিক্রি বাটা করে, যত দিন না ভগবান আমাদের আলাদা করে ততদিন এখানে থাকব।”

অভি আদর করে গালে গাল ঘষে উত্তর দেয়, “উম্ম, রানির যা ইচ্ছে তাই হবে।”

রিতিকা সামনের সিটে বসে ওদের কথা শুনে ফেলে। পিছন ফিরে তাকিয়ে পরীকে বলে, “তোমরা দুজনে একদম এক প্রান এক আত্মা। সুপ্রতিম যদি আমাকে একটু ওইরকম করে ভালবাসতো।” বলে, সুপ্রতিমদার গালে আদর করে একটা ছোটো চাঁটি মারে। সুপ্রতিমদা ওর হাতে চুমু খেয়ে নেয়।

কি মঠের পরে, ওরা আরও ওপরে চড়তে শুরু করে। এই রাস্তা নাকি, ভারতের সব থেকে উঁচু গ্রাম, কিব্বের পর্যন্ত যায়। কিব্বের সমুদ্রতল থেকে প্রায় চোদ্দ হাজার ফিট উচ্চতায়, একটি ছোটো গ্রাম। সেখানে একটি অতি ছোটো মঠ আছে আর সেই মঠে খুব অল্প সংখ্যক সাধু থাকেন। মঠে ঢুকে দেখে যে একজন বৌদ্ধ সাধু পুজো করছেন আর সেই বৌদ্ধ মন্ত্র সবার মনের মধ্যে এক অনাবিল শান্তির ভাব এনে দেয়।

কিব্বেরে একটি ছোটো হোটেলে অভিরা দুপুরের খাওয়া সেরে নেয়, সারাদিন কিব্বেরে কাটিয়ে বিকেলের দিকে কাজা ফিরে আসে। বিকেলে হোটেলে ফিরে চা খাওয়ার সময়ে অরুনা পরীকে বলে যে ও রাতে একা শুতে পারবে।

অরুনাঃ “আমার সত্যি খুব খারাপ লাগছে তোমাদের মাঝখানে এসে। আমি ঠিক আছি শুচিদি, আজ রাত থেকে আমি একা শুতে পারব।”

অভি অরুনার কথা শুনে পরীর দিকে ভুরু নাচিয়ে বলে, “বড়ে দিনো কে বাদ, বে বতনোকো ইয়াদ, পরী আয়ি হ্যায় আয়ি হ্যায়, পরী আয়ি হ্যায়।”
 
Chapter 6: স্পিতির তীরে জুঁই ফুল। (#1)

রাতের খাবার টেবিলে পরী অভির কানে কানে বলে, “আজ রাতে যদি ড্রিঙ্ক করেছো তাহলে কিন্তু আমার কাছে শুতে দেব না বলে দিচ্ছি।”

অভি কাতর মিনতি করে, “প্লিস হানি, একটা ছোটো করে, তারপরে আমি তোমার আলিঙ্গনে ধরা দেব।”

পরী বিরক্ত হয়ে বলে, “কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আমি না ভদকা?”

অভিঃ “অবশ্যই তুমি, বেবি।”

পরীঃ “তাহলে, খাওয়ার পরে সোজা ঘরে চলে আসবে, না সিগারেট না ভদকা।”

নাক কুঁচকে কাতর মিনতি জানায় অভি। পরী রেগে গিয়ে ওর দিকে লাল চোখ করে বলে, “যা ইচ্ছে করো গিয়ে, আমি চললাম শুতে।”

তাড়াতাড়ি খাওয়া সেরে, রিতিকা আর অরুনাকে নিয়ে ঘরের দিকে চলে যায়। যাওয়ার আগে রিতিকা সুপ্রতিমদার দিকে কটমট করে তাকিয়ে জানিয়ে যায় যে পরীর মতন ওর অভিপ্রায় একই। কল্যাণীরা খাওয়া শেষ করে ওদের দিকে তাকিয়ে হেসে শুতে চলে যায়।

সুপ্রতিমদা অভির দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বলে, “ভায়া, বেড়াল রেগে গেলে কিন্তু মাটিতে আঁচড় কাটে।”

অভিঃ “তো কি হয়েছে, বেড়াল মারতে হলে গায়ে শক্তি তো চাই নাকি।”

সুপ্রতিমদাঃ “তোর বেড়াল কিন্তু আমার বেড়ালের চেয়ে বেশি রেগে আছে রে। রাতে তোর হালত খারাপ করে দেবে।”

অভিঃ “আমার ম্যাও আমি সামলে নেব শালা, তুই তোর ম্যাও কি করে সামলাবি তাই ভাব।”

অভি নিজেকে বলে যে, প্রেয়সীকে উত্যক্ত করে লাভ নেই। ঘরের মধ্যে মৃদু নীলচে আলো ঘরে একটা অপরূপ রোম্যান্টিক শোভার আবহাওয়া তৈরি করেছে। পরী কম্বল গায়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। দরজার দিকে মুখ ফিরে অভির জন্য অপেক্ষা করে একপাশ হয়ে শুয়ে আছে পরী, ঠোঁটে লেগে আছে এক অদ্ভুত মিষ্টি হাসি। ডান হাত ভাঁজ করে মাথার নিচে রাখা, উন্মুক্ত মসৃণ ফর্সা হাত। মাথার চুল মাথার পেছনে হাত খোঁপায় বাঁধা বালিশের ওপরে এলিয়ে পড়ে আছে। ঘরের মৃদু নীলচে আলো ওর ত্বকের ওপর যেন পিছলে যাচ্ছে। বাম হাত মুঠি করে কম্বলটিকে আঁকড়ে ধরে আছে উন্নত বুকের কাছে। কম্বলে ঢাকা দেহের অবয়ব দেখে মনে হয় যেন সাদা সমুদ্রের ওপরে এক মত্ত ঢেউ। উঁচু কাঁধ, সরু হয়ে নেমে এসেছে পাতলা কোমরে তারপরে ফুলে উঠেছে সুগোল নিতম্বদেশ। বাম পা ডান পায়ের সামনে রাখা, যার জন্য দেহের অবয়ব দেখে মনে হয় যেন এক জলপরী শুয়ে অভির দিকে প্রেমাগ্নির চাহনি নিয়ে তাকিয়ে।

নাকের ডগা লাল, গাল গোলাপি। মুখে প্রসাধনির লেশ মাত্র নেই, কানে দুল নেই, হাতে চুড়ি নেই। কাজল কালো, বাঁকা ভুরু জোড়া যেন ওকে উত্যক্ত করে জিজ্ঞেস করছে, কি ওই রকম ভাবে দেখছো? কোমল লাল ঠোঁট জোড়া অল্প খোলা, তার মাঝে ঝিলিক মারে মুক্তো সাজানো দাঁত। চেহারায় এক সুন্দর আলোক ছটা।

অভির নাকে ভেসে আসে পরীর মাদকতাময় জুঁই ফুলের সুবাস। সেই সুবাস সারা ঘরের বাতাসে ছড়িয়ে আছে আর অভিকে মাতাল করে তুলেছে। অভি পরীর চোখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করে, “প্রেয়সী কি বাঘিনীর মতন ক্ষিপ্ত, না মাছরাঙার মতন অপেক্ষা করছে মাছ ধরার জন্য?”

অভি বিছানার পায়ের দিকে বসে, ওর দিকে তাকিয়ে পায়ের ওপরে হাত রাখে। কম্বলের ওপর দিয়ে, বাম পায়ের গুলির ওপরে আদর করে দেয়।

পরী গম্ভির সুরে ওকে বলে, “তাড়াতাড়ি হাত পা ধুয়ে শুতে এসো, আমি খুব ক্লান্ত, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।”

গম্ভির গলার আওয়াজ শুনে অভি একটু ঘাবড়ে যায়। পরী বালিশের ওপরে মাথা গুঁজে চোখ বন্ধ করে নেয়। অভি ভাবে, “একি হলো? প্রেয়সী কেন ওর সাথে ভালো করে কথা বলছে না?”

সামনে ঝুঁকে পড়ে জুতো খুলতে যায় অভি, পরী পেছন থেকে ওর শিরদাঁড়ার নিচে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মৃদু খোঁচা মারে। নখের আঁচড়ের অনুভুতি অভির শরীরে বিদ্যুতের শিহরণ ছড়িয়ে দেয়। অভি মাথা ঘুরিয়ে পরীর দিকে তাকায়, পরী সঙ্গে সঙ্গে কম্বলের মধ্যে পা টেনে নিয়ে চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকে। অভি কম্বলের নিচের দিক পায়ের ওপর থেকে সরিয়ে দিয়ে পায়ের পাতার তলায় তর্জনী দিয়ে আঁচড় কেটে দেয়। পরী মোচড় দিয়ে উঠে, খিলখিল করে হেসে ফেলে।

অভি ওর হাসি শুনে বিছানার ওপরে লাফ দিয়ে উঠে পরীকে বলে, “আমার সাথে দুষ্টুমি করা হচ্ছে, বেবি?”

পরী ওর বুকের ওপরে পা রেখে ঠেলে দিয়ে বলে, “তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে পরিষ্কার হয়ে এসো।”

অভিঃ “তারপরে?”

পরীঃ “তারপরে আর কি, তারপরে ঘুমিয়ে পড়ব।”

অভি হাফ প্যান্ট হাতে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ে। প্রেয়সীর হাসি আর গালের লালিমা ওর ভেতরের জমে থাকা প্রেমের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। প্রেয়সীকে বিছানায় বেশিক্ষণ অপেক্ষায় রাখা উচিত নয়। চোখের উষ্ণ লালিমার ছটায় অভির বুঝতে দেরি হয়নি যে চাতকের ন্যায় প্রেম বারির জন্য অপেক্ষা করছে প্রেয়সী। যেন এক জলপরী সমুদ্র থেকে উঠে এসে ওর বিছানায় শুয়ে প্রেম বারির জন্য কাতরাচ্ছে। কোনোরকমে স্নান সেরে, দাড়ি কামিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে অভি। ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে যায়, বিছানায় পরী নেই।

দরজা অল্প খোলা, কম্বল এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে বিছানার ওপরে। অভি ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা, হলোটা কি? এত রাতে পরী ওকে একা ছেড়ে আবার কোথায় চলে গেল। ঘরের বাল্ব জ্বালিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায় বাইরে দেখতে যে গেল কোথায় পরী।

যেই মাত্র দরজা খুলেছে, তখনি পরী অভিকে পেছন থেকে এসে কোমরের দুপাশ দিয়ে হাত বাড়িয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। নগ্ন পিঠের ওপরে চেপে ধরে নরম বুক। বুকের ওপরে রাখে হাতের তালু, পিঠের শিরদাঁড়ার ওপরে চেপে ধরে গাল। উষ্ণ দেহের স্পর্শে মনে হয় যেন পরীর মাখনের মতন পেলব শরীর ওর পিঠের ওপরে গলে মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে। অভি দরজা বন্ধ করে সামনে ঝুঁকে, পরীকে পিঠের ওপরে তুলে নেয়। পরী ওর পিঠের ওপরে ভার দিয়ে মাটি থেকে পা ভাঁজ করে তুলে নেয়।

প্রেমঘন সুরে কানে কানে বলে, “খুঁজে পেলে না তো আমাকে।”

অভিঃ “ছিলে কোথায়?”

পরী ওর বাম বুকের ওপরে হাত চেপে বলে, “আমি এখানে ছিলাম, তুমি দেখতে পাওনি।”

বিছানার দিকে হেঁটে যায় অভি, পরী ওর পিঠের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে চুমু খেতে শুরু করে। তপ্ত ঠোঁটের পরশে অভির দেহে বিদ্যুতের সঞ্চার হয়। বাঁ দিকে একটু ঝুঁকে পড়ে, পরীকে বিছানার ওপরে শুইয়ে দেয় অভি। পরী বিছানার পায়ের দিকে বসে, পেছন দিকে ঝুঁকে যায় কনুইয়ের ওপরে ভর দিয়ে। তার ফলে পীনোন্নত বুক জোড়া হিমালয়ের সুউচ্চ শৃঙ্গের মতন আকাশের পানে ঠেলে ওঠে। পরীর পরনে সিল্কের স্লিপ, কাঁধ, উপরি বক্ষ, বুকের খাঁজের অধিকাংশ অনাবৃত। পরনের রাত্রিবাস অনেক ছোটো, কোনোক্রমে শুধু মাত্র জানুর মাঝ পর্যন্ত নেমে এসেছে। জানুর মসৃণ ত্বকের ওপরে ঘরের আলো পিছল খেয়ে পড়ছে। সেই দৃশ্য দেখে অভির সিংহ ভেতরে ভেতরে মাথা উঁচু করে জেগে ওঠে, তলপেটের কাছে যেন তরল আগুন দলা পাকিয়ে মোচড় দেয়। পরী অনুধাবন করে অভির তপ্ত চাহনি, যেন ওর অনাবৃত জানু, বুক, কাঁধ জ্বালিয়ে দিচ্ছে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে প্রেমঘন চাহনি নিয়ে তাকায় উদ্দাম অভির দিকে। অভি পরীর দিকে ঝুঁকে পড়ে ওর নরম কোমর হাতের মাঝে চেপে ধরে। কোমল নারী মাংস তপ্ত আঙুলের স্পর্শে যেন গলে যায়।

অভি নিজের শরীর টেনে নিতে চায় পরীর দেহের ওপরে, কিন্তু পরী ওর ডান পা ভাঁজ করে অভির বুকের ওপরে চেপে ধরে। পরীর হাঁটু অভির চিবুক ছুঁয়ে যায় আর পায়ের পাতা অভির নাভির কাছে ছুঁয়ে যায়। অদ্ভুত সেই স্পর্শে অভির সারা দেহে কাঁটা দিয়ে ওঠে। অভি যত চেষ্টা করে পরীর দিকে ঝুঁকতে, পরী ততই যেন ঠেলে দেয় অভিকে, দুজনে যেন প্রেমের এক খেলায় মেতে ওঠে। দুজনের চোখে ঝরে প্রেমের ঘন তরল আগুন।

পরীর রাত্রিবাস জানু ছাড়িয়ে কোমর পর্যন্ত উঠে আসে। সুগোল ফর্সা ডান নিতম্ব অনাবৃত হয়ে যায় ঠেলাঠেলির খেলায়। পরী রাতে শোয়ার সময়ে অন্তর্বাস পরতে ভালবাসেনা, অভির মাথায় সেই চিন্তা আসতেই অভির চোখ চলে যায় পরীর জানুসন্ধির দিকে। রাত্রিবাস উঠে গেছে ঠিকই কিন্তু অতি সন্তর্পণে ঢেকে রেখেছে পরীর জানুসন্ধির নারীঅঙ্গ। প্রেমের মত্ত ক্রীড়ায় দুজনের শ্বাস বর্ধিত হয়ে ওঠে। অভি ঠেলে দেয় পরীর ডান জানু, পরীর উন্নত বুকের ওপরে।

পরী দুষ্টু হেসে জিজ্ঞেস করে, “ওই রকম ভাবে কি দেখছো, সোনা?”

অভি, “আমি আমার জলপরীকে দেখছি, যে সাগর থেকে উঠে আমার বিছানায় শুয়ে আমার প্রেমের জন্য কাতরাচ্ছে।”

পরী বড় বড় চোখ করে অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “তাহলে দেরি কেন করছো? জলপরীকে কোলে তুলে আবার সাগরের জলে ছেড়ে দাও।”

অভিঃ “সাগরের জলে যে অনেক ভয়ঙ্কর মাছ আছে। আমি তো আমার জলপরীকে বুকের মাঝে রাখতে চাই।”

অভির পেটের ওপরে পরীর কোমল নিতম্বের ছোঁয়া লাগে, সেই সুখের স্পর্শে অভির মনে যেন ওর আগ্নেয়গিরি এখুনি ফেটে পড়বে। অভি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, “এই স্লিপটা কবে কিনেছো, আগে দেখিনি তো।”

পরীঃ অনেক দিন আগে কিনেছি, সেই এপ্রিলে যখন তোমার বাড়িতে এসেছিলাম।”

অভি ওর শরীরের ওপর থেকে ভার হাল্কা করে আর সেই সঙ্গে সঙ্গে পরী পেটের ওপরে মাথা নিচু করে বিছানার ওপরে শুয়ে পড়ে। নরম বালিশ আঁকড়ে ধরে মুখ লুকিয়ে নেয় তুলোর মধ্যে। কামনার আগুনে জ্বালায়, শ্বাসের গতি বেড়ে যায়, দ্রুত ওঠানামা করে পরীর পিঠ, যেন বুকের মাঝে এক বিশাল ঝড় বয়ে চলেছে।

সিল্কের সেই ছোটো রাত্রিবাস পরীর সুগোল নিতম্ব ঢেকে রাখতে পারেনা। নরম সুগোল দুই নিতম্ব আর নিতম্বের মাঝের গভীর সরু খাঁজ পু্রোপুরি অভির কামতাড়িত চাহনির সামনে অনাবৃত। নিম্নাঙ্গে পরনে কোন অন্তর্বাস নেই।

অভি পরীর মেলে ধরা পায়ের দুপাশে হাত রেখে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে, বাম পায়ের গুলির ওপরে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। ডান হাত নিয়ে যায় পরীর অনাবৃত ডান পায়ের গুলির ওপরে আর ধিরে ধিরে আদর করতে শুরু করে, পায়ের গোড়ালি থেকে হাঁটুর পেছনের ভাঁজ পর্যন্ত। আদরের ছোঁয়ায় পরীর উত্তপ্ত শরীর মোচড় দিয়ে ওঠে, মৃদু শীৎকার ওঠে ওঠে পরী।

অভি মুখ নামিয়ে আনে পরীর জানুর পেছনে, রাত্রিবাস না সরিয়ে কাপড়ের ওপর দিয়ে, জিবের ডগা দিয়ে বৃত্তাকারে ভিজিয়ে দেয় পরীর নরম নিতম্ব। ভিজে ওঠা রাত্রিবাস লেপটে যায় পরীর তপ্ত নিতম্বের ত্বকের ওপরে, বারংবার কেঁপে ওঠে কোমল নিতম্ব দুটি। আলতো করে চেপে ধরে ঠোঁট পরীর নিতম্বের ওপরে।

পরী মৃদু কন্ঠে শীৎকার করে ওঠে, “ম্মম্মম্মম্মম......... অভি... সোনা...”

অভি মাথা উঠিয়ে দেখতে চেষ্টা করে পরীর মুখের দিকে, পরী মাথা গুঁজে রাখে বালিশের ওপরে। নিতম্বের ওপরে ছোটো ছোটো চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে অভির ঠোঁট উঠে আসে, শিরদাঁড়ার শেষ প্রান্তে, যেখানে শিরদাঁড়া আর নিতম্ব মিলেছে। ঠোঁট চেপে ধরে শিরদাঁড়ার শেষ প্রান্তে, ভিজিয়ে দেয় রাত্রিবাসের কাপড় মুখের লালায়। নগ্ন বুকের নিচে চেপে ধরে কোমল নিতম্ব, পিষে দেয় পরীকে বিছানার সাথে আর বুকের নিচে। পায়ের পাতার ওপরে পরী অনুভব করে অভির তপ্ত শলাকা। কামনায় প্রজ্বলিতে দেহ মুচড়ে ওঠে কঠিন পরশ পেয়ে। অভির বুকের নিচে যেন প্রেয়সীর সাপের মতন শরীর বারে বারে মোচড় দেয় আর অভির শলাকাকে বারেবারে উত্যক্ত করে তোলে।

পরী অভির নামে ঠোঁটে এনে মৃদু শীৎকার করে ওঠে, “অভিইইইইই... আমাকে মেরে ফেললে যে হানি...”

বিছানার ওপরে চেপে ধরা বুক, দুপাশ থেকে ফেটে বেরিয়ে পড়ে, পরীর মুখ তখন বালিশে গোঁজা। রাত্রিবাস পিঠের দিকে অর্ধেকটা উন্মুক্ত, পুরো কাঁধ আর পিঠের অধিকাংশ অনাবৃত, লিপ্সা মাখানো অভির চোখের সামনে।

অভি আরও ঝুঁকে পড়ে পরীর পিঠের ওপরে চুমু দিতে শুরু করে। ঘাড়ের নিচ থেকে শুরু করে, শিরদাঁড়ার ওপর দিয়ে যে টুকু অনাবৃত, সেই টুকু অংশে চুমুতে ভরিয়ে দেয় অভি, আর জিবের ডগা দিয়ে বৃত্তাকারে দাগ কেটে দেয়। তপ্ত শ্বাসে পরীর সারা দেহে কাঁটা দিয়ে ওঠে। ভিজে গেছে পিঠ অভির তপ্ত লালায়। মাঝে মাঝে অভি পরীর পিঠের নরম মাংস দাঁতের মাঝে নিয়ে আলতো করে কামড়ে দেয়, জিব পুরো বের করে চেটে দেয় শিরদাঁড়া। পরীর মুখ লাল, গায়ে ঘাম। অভির জিবে লাগে নোনতা স্বাদ।
বাম কনুইয়ের ওপরে ভর দিয়ে পরীর বাম দিকে শুয়ে পড়ে অভি, কনুই ছুঁয়ে যায় পরীর বাম বক্ষের পাশে। ডান হাতে পরীর মাথার চুলের বাঁধন খুলে দেয়। মুঠি করে ধরে নেয় পরীর মাথার পেছনের চুল আর ধিরে ধিরে নখের ডগা দিয়ে আঁচড়ে দেয় মাথা। পরী পাগল হয়ে ওঠে অভির উষ্ণ আদরের ছোঁয়ায়।

অভি সামনে ঝুঁকে মরালী গরদানে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। পরীর কোমরের ওপরে অভি ওর ডান পা উঠিয়ে দেয়, হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে নিতম্ব আর পায়ের পাতা দিয়ে বুলিয়ে দেয় জানুর পেছন দিকে। ধিরে ধিরে অভির পা, জানু থেকে ওপরে উঠে যায় আর রাত্রিবাস সরে যায় নিতম্বের ওপর থেকে। পরী ওর বাম নিতম্বের পাশে অভির তপ্ত শলাকার পরশ অনুভব করে, মনে হয় যেন কঠিন কোন গুঁড়ি ওর কোমলতাকে চেপে ধরে পেষণ করছে।

ঘাড়ের পেছনে ঠোঁট চেপে ধরে অভি। চোখ দুটি শক্ত করে বন্ধ করে মাথা ওঠায় পরী, চিবুক রাখে বালিশের ওপরে আর বিছানার মাথার দিকে মুখ। ঠোঁট জোড়া অল্প খোলা, আর সেই তপ্ত ঠোঁট জোড়ার ভেতর থেকে তপ্ত শ্বাস বয়ে চলে অবিরাম। ঘাড়ের পেছনে দাঁত দিয়ে আলতো করে চেপে দেয় অভি। দাঁতের আদরের পরশে পাগল হয়ে ওঠে পরী। বুকের ওপরে শক্ত করে চেপে ধরে বালিশ, যেন নরম তুলো দিয়ে ভরিয়ে দেবে কোমল উন্নত বুক জোড়া।

পরী এবারে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে শীৎকার কর ওঠে, “আআআআআ... তুমি যে আমাকে একদম পাগল করে দিলে অভি...”

পরীর মাথার পেছনে নাক ডুবিয়ে চুলের ঘ্রান বুকে টেনে নেয়। নগ্ন বুক চেপে ধরে পরীর অনাবৃত পিঠের ওপরে। কানে কানে বলে, “বেবি, তুমি এত রসালো, যে আমি তোমার সারা শরীর চুমু খেলেও সেই রস ফুরাবে না। তোমার দেহের প্রতি রোম কুপের থেকে নির্গত রস যে কত মধুর তা বলে বুঝাতে পারবোনা বেবি।”

পরীঃ “আমি তো একটা কুঁড়ি ছিলাম সোনা, তোমার ছোঁয়ায় আমি সিক্ত ফুটন্ত রসে ভরা হয়ে উঠেছি।”

অভিঃ “আলো কি বন্ধ করে দেব, বেবি?”

পরীঃ “আমি জানিনা, তোমার যা ইচ্ছে করে সেটা করো। আজ আমার কিছু বলার নেই অভি। আজ তুমি আগের থেকে অনেক অনেক বেশি দুষ্টুমি করছো, সোনা।”

ডান হাত দিয়ে পরীর ডান কাঁধ থেকে রাত্রিবাসের পাতলা বাঁধন নামিয়ে দেয়। কাঁধ একটু নড়িয়ে অভিকে সাহায্য করে যাতে রাত্রিবাস খুলে আসে। চিবুক দিয়ে বাম দিকের রাত্রিবাসের বাঁধন নামিয়ে দিতেই পরীর শরীর মোচড় দিয়ে ওঠে। অভির মাথায় খেলে যায় যে আজ রাতে ও তাঁর প্রেয়সীর অপরূপ দেহ সুধা দুচোখ ভরে পান করার সুযোগ পাবে, অনেক দিন ধরে অভির অভিপ্রায় আজ রাতে সফল হবে। আসন্ন সুধা পানের চিন্তায় যেন বুকের মাঝে উত্তাল ঢেউ দোলা দেয়।

ফিস ফিস করে পরীকে জিজ্ঞেস করে, “সোনা আর কি সুধা লুকিয়ে আছে তোমার দেহে?”

অভির আঙুল পরীর বাজুর ওপরে আলতো করে আঁচড় কাটে। মৃদু কনে বলে পরী, “তুমি যা চেয়েছিলে, সেই বাগান আমি পরিষ্কার করে দিয়েছি।”

কথাটা বলতে গিয়ে পরীর কান লাল হয়ে যায় লজ্জায়, চোখ দুটি লজ্জায় আরও শক্ত করে চেপে নেয়। গাল লাল, সারা শরীর যেন আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ওই কথা বলার সময়ে। অভি চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, “উউউউউ... বেবি...” পরী শেষ পর্যন্ত অভির কথা রেখে জানুমাঝের কুঞ্চিত ঘাসের বাগান পরিষ্কার করে দিয়েছে। ডান হাত দিয়ে পরীর নিতম্বে আলতো করে চাঁটি মারে অভি, মৃদু হাতের চাপে, নরম মাংসে ঢেউ খেলে যায়।
 
Chapter 6: স্পিতির তীরে জুঁই ফুল। (#2)

কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলে, “দুষ্টু পরী আমাকে আজ রাতে সত্যি সত্যি মেরে ফেলবে যে।”

পরী প্রেমের ঘোরে কঁকিয়ে বলে, “তোমার ছোঁয়ায় আমি পুরো পাগল হয়ে গেছি, আমি আর তোমাকে কি মারবো সোনা।”

অভি নিতম্বের দিকে দেখে একবার তারপরে ধিরে ধিরে রাত্রিবাস উঠিয়ে দেয় নিতম্বের ওপর থেকে। ধিরে ধিরে ঘরের আলোয় অনাবৃত হয় কোমল সুগোল ফর্সা নিতম্ব। মসৃণ ত্বকের ওপরে যেন আলো পিছলে যায়। আঙুলের নখ দিয়ে বৃত্তাকারে আঁচড় কাটে নরম নিতম্বের ত্বকের ওপরে। বারে বারে কেঁপে ওঠে সুপুষ্ট নিতম্ব দুটি আর ঢেউ খেলে যায় নরম মাংসের ওপরে। পরী আর থাকতে না পেরে বালিশে ঠোঁট চেপে অভির নাম ধরে ডাকে। অভির নখের ছোঁয়ায় নিতম্বের কাঁপুনি যেন আরও বেড়ে যায়, মনে হয় যেন বৃষ্টিতে ভিজে এক জোড়া নরম খরগোস ঠাণ্ডায় কাঁপছে।

অভি বিছানা থেকে নেমে পরীর পায়ের কাছে বসে পড়ে, রাত্রিবাস নিচের থেকে টেনে নামিয়ে দেয়। পরী শরীরকে আলতো মুচড়ে অভিকে সাহায্য করে গায়ের থেকে কাপড় খানি খুলে ফেলতে। অভির চোখের সামনে পেটের ওপরে শুয়ে প্রেমের আগুনে থরথর কাঁপে প্রেয়সীর উন্মুক্ত দেহ পল্লব। পা জোড়া একে অপরের সাথে শক্ত করে চেপে ধরা, মনে হয় যেন মাঝখান থেকে একটি ঘাসের পাতাও যেতে পারবে না। প্রেমের কাঁপনে বারংবার দেহের ওপরে ঢেউ খেলে যায়। অভি এই প্রথম বার প্রান প্রেয়সীকে জন্মদিনের পোশাকে দেখে। এই কামার্ত দেহ পল্লব যে কোন মুনি ঋষির ধ্যান ভঙ্গ করে দিতে পারে।

অভি পরীর দুপা ধরে ধিরে ধিরে চিত করে শুইয়ে দেয়। পরী মাথার বালিশ শক্ত করে ধরে থাকে, অতীব লজ্জায় দুচোখ চেপে বন্ধ করা। অভির চোখ যায় পীনোন্নত বুকের দিকে। হিমালয়ের সুউচ্চ শৃঙ্গের মতন বুক জোড়া আকাশের দিকে উঁচিয়ে, আর শৃঙ্গ ওপরে বসে থাকা তপ্ত গাড় বাদামি রঙের নুড়ি। সেই বুকের দিকে চোখ গেল অভির, বুকের মাঝের উত্তাল তরঙ্গকে শান্ত করে নেয় অভি, প্রেমের সাগরে ডুব দেওয়ার আগে আরও কিছু খেলা বাকি তাঁর প্রেয়সীর সাথে। দৃষ্টি চলে যায় ফর্সা কোমল বুকের দিকে, বৃন্তের চারদিক থেকে নেমে আসে অতীব হাল্কা নীলচে আর লালচে শিরা উপশিরা।

বুকের নিচ থেকে নাভি পর্যন্ত সরু হয়ে নেমে আসে মধ্যচ্ছদা, যেন কোন সরু পাহাড়ি নদী, সেই নদী যেন নাভিদেশে এসে মিশে গেছে। গোল পেটের নিচে একটু ফুলে উঠে অতীব সুন্দর বাঁক নিয়ে নেমে গেছে ফোলা তলপেট। উত্তেজনায় কাঁপছে পরীর তলপেট। পরী যেন আর থাকতে পারছে না অভির উত্তপ্ত চাহনির সামনে, বারে বারে শরীর মুচড়ে উঠছে।

অভির দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত হয় জানুসন্ধিক্ষনে। পরীর জানুসন্ধি ফুলে বেঁকে হারিয়ে গেছে চেপে ধরা দুই জানুর মাঝে। অতীব যত্নে সাজান সেই নারীত্বের সুখের দোরগোড়া, রোমের লেশ মাত্র নেই।

পরনের কাপড় খুলে ফেলে অভি, কঠিন সিংহ অবশেষে ছাড়া পেয়ে লাফিয়ে ওঠে। অভি ঝুঁকে পড়ে পরীর জানুর ওপরে আর জিবের ডগা দিয়ে বৃত্তাকারে আদর করতে থাকে জানুর ওপরে। ধিরে ধিরে ঠোঁট ওপরে নিয়ে আসে অভি।

পরীর অর্ধ ফাঁক করা ঠোঁটের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে একটা আওয়াজ, “আআআআ... পারছিনা... সোনা...”

বাম পা ভাঁজ করে নেয় পরী আর নারীসুখের গহ্বর অভির দৃষ্টির সামনে উন্মুক্ত হয়ে যায়। অভির নাকে ভেসে আসে জোরালো এক ঘ্রান, জিবের ডগা পরীর জানুর মাঝে নিয়ে আদর করে চেটে দেয়।

চোখের সামনে উন্মুক্ত পরীর সুখের স্বর্গদ্বার। এত সুন্দর করে পরিষ্কার করে রেখেছে যে, সেই দ্বার দেখে মনে হয় যে, উল্টানো একটি ত্রিভুজের মাঝে অতীব সরু এক নদী।

সেই গোলাপ ফুলের পাপড়ির কোমলতা বুঝতে অভির দেরি লাগেনা। প্রেমের বারিতে সিক্ত হয়ে উঠেছে দুই পাপড়ি আর অল্প অল্প বেরিয়ে সিক্ত করে তুলেছে বাইরেটা। পরীর সারা শরীর কেঁপে ওঠে এই ভেবে যে অভির আগুন ঝরানো চাহনি ওর নারীত্বের দোরগোড়ায় কেন্দ্রীভূত আর পুড়িয়ে ওকে ছারখার করে দিচ্ছে। অল্প ঠোঁট খুলে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে পরীর নারীত্বের ওপরে, পরীর দেহ প্রচন্ড ভাবে কেঁপে ওঠে তপ্ত শ্বাসের পরশে। কামাতুর অভির চোখের সামনে সেই মালভূমির দ্বার অল্প অল্প কাঁপতে থাকে।

অভি দু’হাত বাড়িয়ে বুকের ওপরে নিয়ে এসে, থাবা মেলে দুই বক্ষ হাতের মুঠোয় নিয়ে আলতো করে পিষে দেয়। হাতের তালুর নিচে চেপে ধরে তপ্ত শৃঙ্গের নুড়ি। পরী, বুকের ওপরে অভির উত্তপ্ত হাতের পেষণে কামপাগল হয়ে ওঠে। অভি ঝুঁকে পড়ে জানু মাঝে, জিব বের করে চেপে জানুমাঝের ধরে সিক্ত মালভুমি, চেটে নেয় পরীর মধু।

কামপাগল পরীর শরীরে তীব্র কামনার আগুন ঝলসে যায়। থাকতে না পেরে বালিশে মাথা দাপাতে শুরু করে পরী। পরীর দেহ ধনুকের মতন বেঁকে ওঠে, উঁচু হয়ে ওঠে বুক আর পেট, মাথা বেঁকে নিচে নেমে আসে। দু’হাত দেহের দুপাশে ছড়ানো, বিছানার চাদর মুঠিতে খামচে ধরে। ধিরে ধিরে জিব দিয়ে পরীর মধু চাটতে শুরু করে অভি, মাঝে মাঝে সেই সরু ঝরনা ধারার ফাটলে জিব ঢুকিয়ে দিয়ে পাগল করে তোলে পরীকে। বারংবার কেঁপে কেঁপে উঠে তীব্র শীৎকার করে ওঠে পরী, সারা শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘামের দানা ফুটে ওঠে, বেঁকে, মুচড়ে, দুমড়ে যায় পরীর কোমল নধর দেহ পল্লব। বারেবারে মাথার পেছন দিয়ে বালিশে মারে।

অভি ওর মালভূমির ঝরনা ধারা ছেড়ে, পরীর সিক্ত কমনীয় দেহ পল্লবের ওপরে উঠে আসে। পরী জানু ফাঁক করে আহবান জানায় অভির উত্তপ্ত কামাতুর দেহ খানি। মালভুমির ঝরনা ছেড়ে অভির সিক্ত জিব উঠে আসে ওপরে, ঠিক ওর নাভিদেশের কাছে গোল করে জিবের ডগা বুলিয়ে দেয়, আদরের চোটে পাগল হয়ে ওঠে পরী। জিবের ডগা দিয়ে নাভির ভেতর চেটে দেয় আর অভি দাঁত ফাঁক করে আলতো কামড় বসিয়ে দেয় নাভির ওপরে থলথলে পেটে।

পরী ওর ঠোঁটের ওপরে পেট চেপে ধরে শীৎকার করে ওঠে, “সোনা, আমাকে আর পাগল কোরো না, আমি মরে যাব যে।”

পরীর কাতর শীৎকার উপেক্ষা করে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে পরীর নাভিদেশ। ক্ষণিকের জন্যেও পরী চোখ খোলেনা, অভি জানে চোখ খুলে প্রেমের খেলা খেলতে ওর আরও সময় লাগবে।

জানুমাঝে অভির তপ্ত কঠিন পুরুষ দন্ড মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে, পরীর জানুমাঝের কোমল মাংসে বারেবারে ধাক্কা মারে। পরী অনুধাবন করে যে অভির তপ্ত শলাকা ওর নারীসুখের দোরগোড়ায় প্রবেশ করার জন্য উন্মুখ হয়ে প্রতীক্ষা করছে। দুই হাঁটু ভাঁজ করে দুপাশে মেলে ধরে পরী, অভি নিজের নিচের অঙ্গ চেপে ধরে পরীর জানুমাঝে। পরীর দেহ পল্লবের দুপাশে হাত দিয়ে ভর করে সামনে ঝুঁকে জিবের ডগা দিয়ে পরীর মধ্যচ্ছদার ওপর দিয়ে বুলিয়ে দেয়, সাথে সাথে মুখের লালা ভিজিয়ে দেয় তপ্ত ত্বক। পরী ঠোঁট জোড়া ছোটো গোল আকার করে, শ্বাস নিতে থাকে, ঘাড় বেঁকে গেছে পেছনের দিকে। উন্মত্ত পরী, জানু দিয়ে চেপে ধরে অভির শরীর আর পা উঠিয়ে আনে অভির কোমরের উপরে। শিরদাঁড়ার ওপরে গোড়ালি দিয়ে চাপ দেয় আর অভির কঠিন শলাকার সম্পূর্ণ বহিরাঙ্গ পিষে যায় পরীর সিক্ত পাপড়ির ওপরে। পরী পা দিয়ে অভির কোমর চেপে ধরে বারেবারে আহবান জানায় ওর দেহকে গ্রহন করতে, ওকে পাগল করে দিতে, নিয়ে যেতে সুখের স্বর্গোদ্যানে।

অভির কঠিন শলাকার মাথা কোমল সিক্ত নারীসুখের পাপড়ি মাঝে ছুঁয়ে যায়, অল্প ফাঁক হয়ে যায় পাপড়ি জোড়া। ক্ষীণ প্রবেশ করে অভি পরীর শরীরে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে পরী। অভি সামনে ঝুঁকে পড়ে ডান বুকের কঠিন নুড়ি দাঁতের মাঝে নিয়ে নেয়, প্রথমে আলতো করে দাঁতে চাপ দেয় অভি, কিছু পরে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে কোমল সুগোল বক্ষ আর চুষে নেয় মধুর নুড়ি। পরীর হাত উঠে আসে অভির মাথার ওপরে, দশ আঙুলে খামচে ধরে মাথার চুল, মাথা চেপে ধরে নরম বুকের ওপরে। জানু মাঝে পরী বুঝতে পারে যে অভির শলাকা কিঞ্চিত ওর সুখের গুহার ভেতরে প্রবেশ করেছে।

অভির মাথা আরও এগিয়ে যায়, চলে আসে পরীর মুখের ওপরে। গোলাপের পাপড়ির মতন লাল ঠোঁট চেপে ধরে ঠোঁট দিয়ে, নিচের ঠোঁট ঠোঁটের মাঝে নিয়ে চুষে দেয় অভি। পরীর সারা মুখে অভির তপ্ত শ্বাস বয়ে যায়। পরী ওর নিচের ঠোঁট নিজের দাঁতের মাঝে নিয়ে আলতো কামড় বসিয়ে দেয়। জিব বের করে ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে দেয় অভি। পেশি বিহুল বুকের নিচে পিষে যায় কোমল তুলতুলে বক্ষ জোড়া। হাতের ওপরে হাত বুলিয়ে দুহাতের দশ আঙুল মিলে যায়, দুজনেই হাত চেপে ধরে একে অপরের, সাপের মতন পেঁচিয়ে যায় একে অপরের আঙুল।

শেষ পর্যন্ত পরী আর থাকতে না পেরে, কোমরে মোচড় দিয়ে ঠেলে উপরে ওঠবার চেষ্টা করে আর সেই সময়ে অভিও ওর ডাকে সাড়া দেয়। মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় দুই দেহ। নারীসুখের দ্বার খুলে যায়, আহবান জানায় উম্মত্ত কঠিন সিংহকে, থেমে থাকেনা অভির সিংহ, ধিরে ধিরে প্রবেশ করে পরীর জানুমাঝের সুখের দ্বারের ভেতরে। মাখনের মাঝে যেন এক তপ্ত ছুরি কেটে ঢুকে পড়ে। সিক্ত দেয়াল চেপে ধরে শলাকার ত্বক, উষ্ণ মধু ভিজিয়ে দেয় কঠিন অঙ্গ।

পরী অভির নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে থাকে যতক্ষণ অভির সিংহ প্রবেশ করে ওর ভেতরে। গলে মিশে একাকার হয়ে যায় দুই কপোত কপোতী, ধিরে ধিরে বিচরন করে সুখের স্বর্গোদ্যানে। বারে বারে সুখের হরিৎ মালভুমির ওপরে ঘুরে বেড়ায় দুজনে, একে অপরকে সাপের মতন জড়িয়ে ধরে সারা বিছানার ওপরে গড়াতে থাকে।

অভি চুড়ান্ত সময়ে পরীর বুকের ওপরে দাঁত বসিয়ে দেয়, পরী ওর পিঠে দশ আঙুলের নখ দিয়ে আঁচড় কেটে দেয়, পিঠের ত্বক আঁচড়ে যায়। অভির বারি মিলিত হয় পরীর সুধার সাথে। অনেক দিনের উন্মুখ অপেক্ষার পরে অভির প্রেয়সী, প্রানের জুঁই ফুল স্বমহিমায়, ফুটে ওঠে স্পিতি নদীর তীরে।
 
Chapter 7: বীরের প্রত্যাবর্তন। (#1)

কোমরের নিচে সজোর এক লাথির চোটে অভির ঘুম ভেঙে যায়, ঘুম ঘুম চোখ খুলে দেখে সামনে সুপ্রতিমদা দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিচ্ছে।

সুপ্রতিমদা, “কিরে বোকা... উঠে পড়। সবাই ধাঙ্কার যাবার জন্য তৈরি আর আমাদের টিম লিডার নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে।”

অভি ঘুম চোখ রগড়ে সুপ্রতিমদাকে জিজ্ঞেস করে, “পরী কোথায়?”

সুপ্রতিমদাঃ “শালা, সারা রাত ধরে তুমি তোমার পেরেক গুঁজে যাবে আর ভাবছো যে সকাল বেলায় ও তোমার পাশে থাকবে? বোকা... ওঠ...”

মাথা চুলকে সুপ্রতিমদার দিকে হেসে বলে, “বোকা... তুই যেন হাতে নিয়ে নাড়াচ্ছিলি, তুই কি পেরেক গুঁজিসনি মাখনের মধ্যে?”

দুজনেই হেসে ফেলে গত রাতের কথা ভেবে। সুপ্রতিমদা বলে, “পাঁচটা মেয়েই সকালে উঠে পড়ে হাঁটতে গেছে স্পিতির দিকে।”

অভির গায়ে কোন কাপড় নেই, সুপ্রতমদার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সুপ্রতিমদা মেঝে থেকে অভির প্যান্ট তুলে ছুঁড়ে মারে অভির মুখের ওপরে। শয়তানি হেসে বলে, “উঠে পড় এবারে বোকা... তাড়াতাড়ি তৈরি হয়েনে, সাড়ে আটটা বাজে, এতক্ষণে মনে হয় মেয়েরা এসে গেছে।”

তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে স্নান সেরে, জামা কাপড় পরে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে অভি। বাইরের ঘাসের বাগানের ওপরে টেবিল পেতে ওদের সকালের খাওয়ার ব্যাবস্থা করেছে হোটেলের ম্যানেজার। আজকে ওরা ধাঙ্কার মঠ ঘুরতে যাবে। খাবার টেবিলে পরীর দিকে তাকায় অভি, পরী ওর উল্টো দিকে রিতিকা আর অরুনার মাঝে বসে। পরনে দুধ সাদা একটা সালোয়ার কামিজ আর তাঁর ওপরে গাড় নীল রঙের কারডিগান। সকালে উঠে স্নান সেরে নেওয়া ওর অভ্যেস, সদ্য স্নাত পরীকে দেখতে ঠিক এক দুধ সাদা অপ্সরার মতন লাগছে। দুপাশের, সুন্দরী নারীদের এক জন যেন মহামায়া আরেক জন শকুন্তলা। পরী মেয়েদের সাথে গল্প করে আর মাঝে মাঝে অভির দিকে আড় চোখের তাকিয়ে হাসে।

চেহারায় এক অদ্ভুত সুন্দর লালিমার ছটা। ভুরু নাচিয়ে পরীর দিকে ইশারায় জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছো দুষ্টু সোনা?” শয়তানি করে জিব বের করে অভি আর প্লেটে থাকা চাটনি চেটে নেয়। অভির শয়তানি হাসি আর প্লেট চাটা দেখে পরীর বুঝতে অসুবিধে হয় না যে ওকি বুঝাতে চাইছে, লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে পরীর মুখ। অভি ইশারায় জানায়, “তোমার মধু ভারী মিষ্টি, বেবি।”

সকালের খাওয়া শেষে অভি পরীকে অনুরোধ করে জিন্স পরার জন্য। পরী নারাজ জিন্স পরতে, বলে যে ওতে নাকি শরীরের প্রত্যেক আঁকিবুঁকি ভালো করে বোঝা যায় তাই লজ্জা করে ওর। বুঝিয়ে উঠতে পারে না অভি যে ওই পোশাকে পরীকে খুব আকর্ষণীয় দেখাবে। ওর কথা শুনে লজ্জায় কান লাল হয়ে যায়।

রিতিকা পরীর কাছে এসে কানে কানে বলে, “তোমার ফিগার এত সুন্দর, তোমাকে জিন্স আর টপে মারাত্মক দেখতে লাগবে, সবাই দেখে পাগল হয়ে যাবে।”

পরী ফিসফিস করে অভিকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার কি ইচ্ছে?”

ডান হাত কাঁধে রেখে পরীকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে অভি, দুজনে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। ঘরে ঢুকেই অভি পরীকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের লতি চুষে নেয় ঠোঁটের মাঝে।

পরী মোচড় দিয়ে ককিঁয়ে বলে, “উফ, ছাড়ো ছাড়ো, এখন আর শয়তানি কোরোনা, ধাঙ্কার যেতে হবে, দেরি হয়ে যাবে।”

অভি পরীকে বাহুপাশ থেকে মুক্ত না করেই জিজ্ঞেস করে, “সকালে আমাকে একা ছেড়ে কেন পালিয়ে গেছিলে?”

পরী চোখ বন্ধ করে মাথা পেছন দিকে হেলিয়ে দেয়, “তোমার চোখের দিকে তাকাতে আমার খুব লজ্জা করছিল, তাই আমি সকালে বেরিয়ে পড়েছিলাম বাকিদের সাথে।”

পেটের ওপরে হাত চেপে, গালে গাল ঘষে কানে কানে বলে, “আই লাভ ইউ, পরী।”

পরী মৃদু সুরে ককিঁয়ে ওঠে, “ম্মম্মম্মম্মম... ছাড়ো আমাকে, না হলে কি করে জিন্স পরবো?”

অভি পরীকে ছেড়ে দেয়, পরী আলমারি থেকে জিন্স আর মভ রঙের টপ বের করে বাথরুমে ঢুকে পড়ে। বাথরুমে ঢোকার আগে অভির দিকে একটু বিরক্তি, একটু দুষ্টু হাসি নিয়ে তাকিয়ে জিব বের করে ভেঙিয়ে দেয়। অভি ওর দিকে তাকিয়ে আঙুল দিয়ে ইশারা করে যে ওকে জিন্সে আর চাপা টপে প্রচন্ড আকর্ষণীয় দেখাবে। অভির দিকে হাত তুলে চাঁটি মারার ইশারা করে পরী, “শয়তান কোথাকার!” দরজা বন্ধ করে দেয়।

একটা সিগারেট জ্বালিয়ে প্রেয়সীর অপেক্ষা করে। জিন্স আর টপ পরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে পরী, পরীর সেই রুপ দেখে অভির মুখ হাঁ হয়ে যায়। সিগারেট টানা ভুলে নিস্পলক চোখে দেখতে থাকে পরীকে। কোমরের নিচে ত্বকের সাথে চেপে বসে জিন্সের মসৃণ কাপড়। কোমরের নিচের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেন উন্মোচিত, না, জিন্সের কাপড়ের পেছনে ঢাকা বটে, কিন্তু অভির চোখে যেন সেই কাপড় ফুঁড়ে সব কিছু দেখতে পায়। সামনে জানুমাঝে ছোটো চেন, যেন নারীসুখের দোরগোড়ার এক অদ্ভুত অবয়ব ধারন করেছে। অভি যেন চোখ ফেরাতে পারেনা, পরীর দেহ পল্লব থেকে। পরনের টপ, পরীর শরীরে যেন দ্বিতীয় ত্বক, দেহের অবয়ব যেন অতি পুরাতন বালি ঘড়ির মতন।

মাথার ওপরে জাপানি পুতুলের মতন করে খোঁপা বাঁধা, খোঁপার মধ্যে দুটি ছোটো ছোটো কাঠি গোঁজা। কানে মুক্তোর দুল, ঠোঁটে গাড় বাদামি রঙ, চোখের কোলে কাজল। সব মিলিয়ে পরীকে দেখে মনে হচ্ছে যে স্পিতির তীরে আগুন লাগানোর জন্য প্রস্তুত হয়েছে আজ।

অভি ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে দুহাতে জড়িয়ে ধরে পরীকে। অভির তপ্ত চোখের চাহনি দেখে লজ্জায় লাল হয়ে গিয়ে অভির বুকে মুখ লুকিয়ে ফিসফিস করে বলে, “আমার না খুব লজ্জা করছে সোনা। আমি বাইরে যাবো না।”

মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে জিজ্ঞেস করে, “কেন বেবি?”

বুকের ওপরে দাঁত দিয়ে আলতো কামর কেটে পরী বলে, “তোমার চোখ দুটি যেন আমাকে পাগল করে দিচ্ছিল, যেন আমার গায়ে কোন কাপড় নেই।”

ঠিক সেইসময়ে দরজায় টোকা মেরে রিতিকা ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। পরী আর অভিকে দৃঢ় আবেগের আলিঙ্গনে বদ্ধ থাকতে দেখে রিতিকা বাইরে যাবার জন্য পা বাড়ায়। পরী অভির বুক আলতো করে ঠেলে দিয়ে আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করে রিতিকাকে জিজ্ঞেস করে যে কি খুঁজতে এসেছে।

রিতিকা পরীকে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তারপরে দৌড়ে গিয়ে পরীকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমি ছেলে হলে নিশ্চয় তোমার প্রেমে পড়ে যেতাম।” রিতিকা অভির দিকে চোখ টিপে বলে, “এক দিনের জন্য তোমার বউকে দেবে আমায়?”

রিতিকার দেহের গঠনও খুব সুন্দর আর কমনীয়। পরনে গাড় নীল রঙের আঁটো জিন্স আর সাদা শার্ট। অভি বেশ কিছুক্ষণ রিতিকার দিকে তাকিয়ে থাকে, বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে ভাবে চোখের সামনে এই দুই সুন্দরী আজ স্পিতির তীরে আগুন জ্বালিয়ে দেবে।

অভি পরীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে বাম হাত নিজের হাতে নিয়ে ছোটো একটা চুমু খায়। তারপরে গেয়ে ওঠে...
“আমি যামিনী তুমি শশী হে ভাতিছো গগন মাঝে,
মম সরসীতে তব উজল প্রভাত, বিম্বিত যেন লাজে,
আমি যামিনী তুমি শশী হে ভাতিছো গগন মাঝে......”

পরীকে সঙ্গে নিয়ে রিতিকা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, পেছন পেছন অভি। অরুনাও পরীকে জিন্সে দেখে অবাক। অরুনা পরীর দিকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি সত্যি পরী, শুচিদি। তুমি যা পরো তাই তোমাকে মানায়।” পরী নতুন বউয়ের মতন লজ্জা পেয়ে যায় অরুনার কথা শুনে।

সুপ্রতিমদা ওর কাছে এসে মৃদু সুরে বলে, “লজ্জাবতি লতা, গালের লালিমা বিয়ের রাতের জন্য বাঁচিয়ে রাখো। এখন প্রান খুলে আনন্দ কর, ডারলিং।”

কল্যাণী আর রানীও পরীকে জিন্সে দেখে অবাক, জীবনের প্রথম বার পরী ওইরকমের পোশাক পরেছে।

কিছুপরেই অভিরা ধাঙ্কার মঠের দিকে রওনা দেয়। গাড়ির চালক সুপ্রতিমদা, পাশে বসে রিতিকা। অরুনাকে নিয়ে পরী আর অভি পেছনে বসে।

কাজা থেকে ধাঙ্কার বেশ কিছু দুরে। ধাঙ্কার মঠ, উঁচু পাহাড়ের মাথায়। পাহাড়ের অধিকাংশ ঝুরঝুরে হয়ে ঝরে গেছে, পুরানো মঠের বেশির ভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। দূর থেকে সেই পাহাড় দেখলে মনে হয় যেন উঁচু এক উইয়ের ঢিবি। খুব কম বৌদ্ধ সাধু বসবাস করে পুরানো মঠে, একটি নতুন মঠ রাস্তার পাশে তৈরি করা হয়েছে। দুপুরের খাওয়া ওরা ধাঙ্কায় সেরে নেয়।

অভি আর সুপ্রতিমদা রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারকে কাজার আগের রাস্তার খবর জিজ্ঞেস করে। ম্যানেজার জানায় যে কাজা ঠেলে লোসার নামক একটি গ্রাম পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি ভালো, তারপরে ঠিক রাস্তা বলে কিছু নেই। আগের রাস্তা পাথর, বালি আর ঝরনায় ঢাকা, সুউচ্চ হিমালয়ের বুক চিরে রাস্তা, খুব ভয়ঙ্কর আর অতীব সুন্দর। কাজা থেকে মানালি, আড়াইশো কিলোমিটারের মতন আর পুরো রাস্তা একদিনে পার করতে হবে। কারন মাঝপথে থাকার কোন জায়গা নেই, আছে শুধু পাহাড় আর গভীর খাদ। রাস্তার মাঝে প্রচুর চড়াই উতরাই আছে আর কুঞ্জুম পাস নামক একজায়াগয় চড়াই পনেরো হাজার ফিটের ওপরে।

সবাই অভির দিকে তাকায়, এমন কি পরীও তাকায়, যেন ওই রাস্তার জন্য অভি দায়ী।

মাথার ওপরে হাত ছুঁড়ে সবার মনে উৎসাহ জাগাতে চেঁচিয়ে বলে, “আরে বাবা, চিয়ার আপ। ভগবান তোমাদের একটা জীবন দিয়েছে, আনন্দ ক্রো, খুশিতে মন ভরিয়ে নাও গুরু। যতক্ষণ অভিমন্যু সাথে আছে, তোমাদের কোন ভয় নেই।”

অরুনা অভির দিকে চেঁচিয়ে বলে, “হ্যাঁ, সে কথা তো শুধু শুচিদির জন্য, বাকিদের কি?”

অরুনাকে ক্ষেপানোর জন্য অভি বলে, “তোকে না হয় এখান থেকে ছুঁড়ে সমুদ্র নীলের কোলে ফেলে দেব, তাহলে তো খুশি? এবারে হাস হাস...”

ঠিক করা হলো যে বিকেলে কোথাও না বেরিয়ে সবাই হোটেলে বিশ্রাম করবে, কাল খুব ভোরে রওনা দেবে কাজা থেকে। ধাঙ্কার থেকে কাজা ফিরতে ফিরতে বিকেল চারটে বেজে যায়। ফেরার পথে মেয়েরা দীপঙ্কর আর রামানুজ বাজারের কাছে নেমে গেল। অরুনা আর পরী জানালো যে ওরা বাড়িতে ফোন করতে চায়। অভি পরীকে বললো যে ওর ছোটমায়ের সাথে ও কথা বললেই হবে, পরী একটু বিরক্তি বোধ করে। রিতিকা আর বাকি মেয়েরা একটু কেনাকাটা করবে। ইনোভা ওদের জন্য রেখে সুপ্রতিমদা আর অভি হোটেলে ফিরে আসে।

কাজায় শেষ দিন। সূর্য ডোবার পরে, পরী অভিকে অনুরোধ করে নদীতে ঘুরতে যেতে। অরুনা ওর ঘরে বসে রানী আর কল্যাণীর সাথে গল্প করছিল। পরী চাইছিল যে ওরা একটু একা একা ঘুরতে যাক, অভিরও একই অভিপ্রায়। হোটেলে থেকে বের হতে যাবে তখন রিতিকার সাথে দেখা, রিতিকা ওদের জিজ্ঞেস করাতে, পরী জানায় যে ওরা নদীর দিকে ঘুরতে যাচ্ছে আর রাতে খাওয়ার আগে ফিরবে। সেই শুনে রিতিকা সুপ্রতিমদাকে ডাক দেয় আর অভিদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে। হোটেল থেকে বেশ দুরে নদী, সুপ্রতিমদা অতি সন্তর্পণে গাড়ি সেই পাথুরে রাস্তার ওপরে দিয়ে, নদী গর্ভে নামিয়ে দেয়।

সূর্য ডুবে গেছে, পশ্চিমের আকাশ কমলা রঙের। পায়ের তলায় কুলুকুলু বয়ে চলেছে স্পিতি নদী। কোথাও হাঁটু, কোথাও গোড়ালি পর্যন্ত জল। নদী গর্ভ ছোটো ছোটো গোল গোল পাথরে ঢাকা। নদী অনেক চওড়া হলেও জল নেই তাতে, মাঝে মাঝে অতি সরু জলধারার রেখা।

দুই রমণীর পরনে জিন্স আর টপ, যেন ওদের নধর কমনীয় দেহ পল্লবের সাথে আঠার মতন সেঁটে। অভি আর সুপ্রতিমদা গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে বিয়ারের ক্যান হাতে নিয়ে অল্প অল্প চুমুক দেয়। দুই কপোতের দুই প্রেয়সী জলে নেমে ঘুরে বেড়ায় আর জল নিয়ে খেলা করে। দূর থেকে অভি আর সুপ্রতিমদা দাঁড়িয়ে ওদের খেলা দেখে। মনে হয় যেন জল ছেড়ে উঠে দুই সুন্দরী মৎস্যকন্যা ওদের সামনে কেলি করছে। কিছু পরে সুপ্রতিমদা নদীর তীরের দিকে গিয়ে কিছু কাঠ আর শুকনো ঝোপ ঝাড় উপড়ে নিয়ে আসে। অভি জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দেয় যে আগুন জ্বালাবে, কেননা কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া থেকে বাঁচতে হবে। আকাশের লালিমা ধিরে ধিরে কমে আসে, আস্তে আস্তে ওদের চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে। স্পিতির গর্ভে শুধু মাত্র ওর চারজন, দুরে শহরের ছোটো ছোটো আলো দেখা যায়, মাথার ওপরে পরিষ্কার আকাশ।

সুপ্রতিমদা আগুন জ্বালায়, রিতিকা আর পরী গাড়ির বনেটের ওপরে বসে পড়ে। রিতিকার পাশে সুপ্রতিমদা ওর কোমর জড়িয়ে ধরে আছে আর রিতিকা ওর গলা। পরী অভির কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে বসে, অভির হাত পরীর কোমরে। দুই জোড়া কপোত কপোতী প্রেমালিঙ্গনে আবদ্ধ। সবার দৃষ্টি দুরে পশ্চিমে উঁচু পাহাড়ের দিকে, দুরে বরফে ঢাকা পাহাড়।

রিতিকা উদাস সুরে বলে, “এখানে আসা উচিত হয়নি।” গলা যেন একটু ধরে এসেছে ওর।

সুপ্রতিমদা ওকে জিজ্ঞেস করে, “কেন বেবি? সামনে তো খুব সুন্দর দৃশ্য।”

রিতিকা সুপ্রতিমদার গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বলে ওঠে, “কাল আমরা কাজা ছেড়ে চলে যাবো, আর আজ এই সুন্দর সূর্যাস্ত আমার বুকের ভেতরে কেন জানিনা উদাসীন ভাব এনে দিয়েছে, আমার খুব কান্না পাচ্ছে।”

অভি পরীর চোখের দিকে তাকায়, কি বলতে চায় প্রেয়সীর কাজল কালো আঁখি। পরী কাঁধে মাথা গুঁজে ধরা গলায় বলে, “এই কাজা যেন আমার জায়গা, এই সূর্যাস্ত আমার বুকের মাঝে এক অন্তহীন উদাসীনতা তৈরি করেছে। আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো, আমি হোটেলে ফিরে যেতে চাই।”

“হটাত করে কি হলো এই সুন্দরী দুই নারীর হৃদয়ে?” অভি ভাবে। নারী মাতৃময়ী ধরিত্রীর আরেক রুপ। নারী এই পৃথিবীকে জীবনের মলয় দিয়ে জীবন্ত করে তোলে, নারী হৃদয়ের স্নেহের পরশে এই পৃথিবী অপরূপ সুন্দর হয়ে ওঠে। ওদের প্রেয়সী সেই মাতৃময়ী ধরিত্রীর আরেক রুপ, ওদের হৃদয়ে নারী স্নেহ মায়া মমতা আছে। ওরাই এই পৃথিবীর হৃদয় ঠিক মতন বুঝতে পারে, আর সেইজন্য সেই সন্ধায় ওদের চোখে জল।

অভি সুপ্রতিমদাকে বলে, “চল রে, হোটেলে ফিরে যাই। কাল সকাল সকাল উঠে আবার মানালির দিকে যাত্রা শুরু করতে হবে, বিকেলের মধ্যে মানালি পৌঁছাতে হবে।”

সারা সন্ধ্যে দুই রমণী খুব চুপচাপ হয়ে যায়, বুকের মাঝে যেন কাজা ছেড়ে যাওয়ার বিরহ সুর বাজে।

পরদিন মঙ্গলবার, সকাল সকাল অভিরা বেরিয়ে পড়ে কাজা থেকে। এবারে যেন এক নিরুদ্দেশের দিকে যাত্রা। সবার মুখে একই কথা, রাস্তা কি রকম হবে। হোটেলের ম্যানেজার বার বার করে সাবধান করে দিয়েছে যে যে রাস্তা দিয়ে ওরা যাচ্ছে, সেই রাস্তা অতি জনবিরল, কিছু ঈগল পাখি আর গাধা বা শেয়াল ছাড়া মানুষ জনের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে না। ওরা যেন কোথাও বেশি দেরি না করে, না হলে মানালি পৌঁছাতে রাত হয়ে গেলে মাঝ পথে থাকার কোন জায়গা পাবেনা।
 
Chapter 7: বীরের প্রত্যাবর্তন। (#2)

গাড়ির চালক অভি, পাশে যথারীতি পরী বসে। অরুনাকে মাঝখানে বসিয়ে পেছনে রিতিকা আর সুপ্রতিমদা। রিতিকা জিন্স পরেছিল তাই পরীকেও অনুরোধ করেছিল জিন্স পরতে। পরী ধুসর রঙের জিন্স পরে, গায়ে ভারী সাদা জ্যাকেট। রিতিকাকে ওর হাল্কা নীল জিন্স আর লম্বা কালো জ্যাকেটে বেশ মানিয়ে গেছে।

অভি গাড়ি চালাতে চালাতে মাঝে মাঝে আয়নায় অরুনার দিকে তাকায়। অরুনার মন বেশ হাল্কা, অনেক বিপদ অনেক বেদনা কাটিয়ে নিজেকে ঠিক করে নিয়েছে। ওর মুখে সেই হাসি পুরানো হাসি দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলে অভি। তবে সেই পুরানো চঞ্চল অরুনা যেন এখন কোথাও লুকিয়ে আছে, সেই অরুনা যে কিনা অভিকে মারতো, বকতো সেই অরুনাকে ফিরে পেতে এখন অনেক সময় লাগবে।

গাড়িতে সবাই বেশ গল্প গুজবে মেতে ওঠে। লোসার পর্যন্ত পিচের রাস্তা কিন্তু একটু এবড়ো খেবড়ো। লোসারের পুলিস চেক পোষ্ট পার করেই আর যেন রাস্তা নেই, রাস্তা যেন পাহাড়ের মাঝে কোথাও হারিয়ে গেছে, তার জায়গায় ওদের সামনে এক পাথরে ঢাকা পথ। গাড়ি বারে বারে দোল খায়, একবার এদিক একবার ওদিকে বেঁকে যায় গাড়ি। অভির চোয়াল শক্ত, খুব ধিরে ধিরে গাড়ি চালায়। একদিকে উঁচু পাহাড়, একদিকে নেমে গেছে গভীর খাদ। এখানে মানুষ হারিয়ে গেলে তার মৃত্যু নিশ্চিত। চারিদিকে ছড়িয়ে ভয়ঙ্কর সুন্দর হিমালয়, কোথাও পাহাড় থেকে ঝরনা গড়িয়ে পড়ছে রাস্তার ওপরে, কোথাও পাহাড় ঝুরঝুরে হয়ে রাস্তার ওপরে ধসে যাচ্ছে। পথে মানুষের চিহ্ন মাত্র নেই, প্রাণী বলতে কিছু বন্য গাধা আর শেয়ালের দেখা পায়। মাথার ওপরে গাড় নীল আকাশ, কিছু ঈগল উড়ে বেড়ায় ওই নীল আকাশের বুকে। কিছু দুরে বরফে ঢাকা পর্বত শৃঙ্গ। সবাই হাঁ করে জানালার বাইরে চেয়ে থাকে আর দেখে হিমালয়ের ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য। ওদের কেউ ভাবেনি যে হিমালয়কে এত কাছ থেকে ওরা কোনদিন দেখতে পাবে।

পরী যেন এর মধ্যে এডভেঞ্চারের গন্ধ পায়, অতি উতসাহে চেঁচিয়ে ওঠে, “উফ, কি মারাত্মক জায়গা। আমি এই জায়গার প্রেমে পড়ে গেছি অভি। আমার প্রেমিক সত্যি এক অসাধারন মানুষ, শুধু ওই পারে এই রকম জায়গা খুঁজে বের করতে।”

অরুনার ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে রাস্তা আর আশপাশ দেখে, ভয়ার্ত চোখে অভিকে বলে, “এটা কি একটা ঘোরার জায়গা? মানুষ ছাড়, এমন কি পশু পাখীর দেখা মেলা ভার এখানে। তোর আর শুচিদির মতন পাগলদের জন্য এই জায়গা।” অরুনার কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে, পরী ওকে অভয় দেয়।

রিতিকা সুপ্রতিমদাকে বলে, “উফফ... সত্যি পাগল করে দেওয়া জায়গা এটা। তোমার বন্ধু যদি এখানে না নিয়ে আসতো তাহলে হয়তো আমরা কোনদিন এখানে আসতাম না, আর কোনদিন এই ভয়ঙ্কর সুন্দর দৃশ্য দেখতেও পেতাম না। দূর থেকে হিমালয় দেখে চলে যেতাম। এর জন্য অভিকে আর পরীকে সত্যি ধ্যনাবাদ জানানো উচিত।”

সুপ্রতিমদা অভির দিকে মজা করে বলে ওঠে, “বোকা... কোথা থেকে এই রকম জায়গার খবর পেলি রে তুই? শালা আমার যদি কিছু হয়ে যায় এখানে তাহলে শালা রিতিকা মা হওয়ার আগেই বিধবা হয়ে যাবে রে।”

রিতিকা লজ্জায় সুপ্রতিমদার কাঁধে মুখ লুকিয়ে নেয়। পরী অভির কাছে এসে গলা জড়িয়ে ধরে। গালে আঙুল ছোঁয়াতেই অভি ব্রেক কষে দেয়, নরম আঙুলের স্পর্শ অভির মন বিচলিত করে দেয়, গাড়ি চালাতে অসুবিধে হয়। গাড়ি ব্রেক কষতেই সবাই ঝটকা দিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

সুপ্রতিমদা পরীকে বলে, “ডারলিং, অভির গিয়ার বদলাতে যেওনা এখানে, আমরা কিন্তু পেছনে বসে আছি।”

পরী লজ্জায় লাল হয়ে যায় কিন্তু অভির গালে ছোটো চুমু খেয়ে নেয়।
আরও কিছু দূর চলার পরে অভির গাড়ি এক সমতল ফাঁকা জায়গায় চড়ে। কুঞ্জুম পাস, সমুদ্রতল থেকে পনেরো হাজার ফুট উঁচুতে। চারপাশের দৃশ্য মন মুগ্ধ করে দেয়। চারপাশে বরফে ঢাকা উন্নত শৃঙ্গ, কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া ওদের চারপাশে বয়ে চলেছে। একদিকে ছোটো একটি উঁচু ঢিপি, তার পরেই একটা বৌদ্ধ স্তুপ। কুঞ্জুম পাস পৌঁছাতে ওদের দুপুর এগারোটা বেজে গেল। কুঞ্জুম পাস পৌঁছে, বৌদ্ধ স্তুপের কাছে এসে গাড়ি থামায় অভি, পেছনের গাড়িও এসে থামে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।

গাড়ি থেকে নেমেই পরী দৌড়ে এসে অভির ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে, শক্ত করে গলা জড়িয়ে ধরে। অভি ওর কোমরের নিচে হাত দিয়ে, আঁকড়ে ধরে পরীর শরীর আর টেনে মাটি থেকে হাওয়ায় উঠিয়ে দেয়। পরী ঝাঁপ দেয় উপরে আর মাথার ওপরে আকাশের দিকে দু’হাত ছড়িয়ে আনন্দে চিৎকার করে ওঠে, “আই লাভ ইউ অভিমন্যু।” পরীকে দেখে মনে যেন হিমালয়ের পাহাড়ি ঈগল পাখি তাঁর বিশাল দুই ডানা মেলে অভির কোলে দাঁড়িয়ে।

ওর আনন্দের চিৎকার শুনে সবাই অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকায়। অরুনা মৃদু হেসে বৌদ্ধ স্তুপের দিকে চলে যায়।

পরীর বুকে থেকে আনন্দের এক শ্বাস বেরিয়ে আসে। মুখ নিচু করে দুহাতের তালুর মাঝে অভির মুখ আঁজলা করে ধরে গভীর চাহনি নিয়ে অভির চোখের দিকে তাকায়। পরীর উষ্ণ শ্বাস অভির সারা মুখের ওপরে বয়ে চলে। ঠোঁট লেগে থাকে মিষ্টি হাসি, চোখে প্রেমের জল চিকচিক করে। আলতো করে ঠোঁট ফাঁক করে মাথা নামিয়ে অভির ঠোঁটের ওপরে চেপে ধরে ঠোঁট। অনাবিল আনন্দে ভেসে যায় দুই প্রান।

রিতিকা ওদের দেখে খিলখিল করে হেসে অভিকে বলে, “প্রেমের জোয়ারে ভেসে এখানেই কিছু শুরু করে দিওনা যেন।”

চুম্বনের ফলে পরীর শ্বাস বর্ধিত হয়ে ওঠে কিন্তু রিতিকার কথা শুনে ওরা দুজনেই সম্বিৎ ফিরে পায়, ওদের চারপাশে লোকজন আছে যে, না হলে ওরা প্রেমের জোয়ারে ভেসেই যেতো। পরীকে কোল থেকে নামিয়ে অভি রিতিকার দিকে শয়তানি হাসি দেয়।

রিতিকা সুপ্রতিমদাকে বলে, “হানি, আমরা টেন্ট এনেছি তাই না? আজ রাতে আমরা এই খোলা, অন্তহীন শূন্যতার মাঝে থেকে যাই না কেন?”

পরী ওর কথা শুনে লাফিয়ে ওঠে, অভিকে নিজের অভিপ্রায় জানায় যে ও রাতে এখানে থাকতে চায়। অভি আর সুপ্রতিমদা দুজনকেই বুঝাতে চেষ্টা করে যে ওই জায়গায় রাত কাটানো অসম্ভব ব্যাপার। কোথাও কিছু নেই, চারদিকে শুধু উঁচু উঁচু বরফে ঢাকা পাহাড়। নিকটবর্তি লোকালয় লোসার প্রায় ষাট সত্তর কিলোমিটার দুরে। ওদের কথা শুনে ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মতন রেগে ওঠে রিতিকা আর পরী।

কল্যাণী আর দীপঙ্কর জানায় যে ওরা থাকতে পারবে না। সুপ্রতিমদা রিতিকার চোখ দেখে আর আশেপাশের জায়গা দেখে ঠিক করে উঠতে পারছে না, পরাজিত সৈনিকের মতন অভির দিকে তাকায়। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করে যে রাত ওরা কুঞ্জুম পাসে কাটাবে।
দীপঙ্কর আর রামানুজ অভির কাছে এসে জানায় যে ওরা থাকতে পারবে না। ওদের ট্রেনের টিকিট আগে থেকে কাটা আছে আর ওরা বাড়ি থেকে বলে বেরিয়েছে যে ওরা বারো দিনের মতন ঘুরতে যাবে। অভি, পরী আর অরুনার হাতে অঢেল সময়, ওদের বাড়ি ফেরার বিশেষ তাড়া নেই কেননা ওদের প্লেনের টিকিটে ফিরে যাবার দিন লেখা নেই। ওরা যে কোনদিন ফিরতে পারে।

রিতিকা সুপ্রতিমদার দিকে তাকায়। সুপ্রতিমদা মুখ কাঁচুমাচু করে কিছু বলতে যাবার আগেই রিতিকা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “আমি জানি তুমি অফিসে কি কাজ করো। মানালি গিয়ে বসকে একটা ফোন করে দেবে যে শরীর খারাপ ব্যাস। আমি তোমার আর কোন কথা শুনতে চাই না, আমি রাতে এখানে টেন্টে থাকব।”

পরী বেঁকে বসে আছে যে রাতে কুঞ্জুম থাকবে। সব মিলিয়ে এক ধন্দের মধ্যে পড়ে গেল সুপ্রতিমদা আর অভি। দীপঙ্কররা থাকতে চাইছে না আর ওদিকে ওদের প্রেয়সীরা থাকতে চায়।

শেষ পর্যন্ত পরীর মাথায় একটা সুন্দর উপায় আসে। পরী বলে, “আমাদের কাছে দুটো গাড়ি আছে আর দুটো ড্রাইভার আছে। কল্যাণী আর রানীরা, ইনোভা নিয়ে আমজাদকে নিয়ে চলে যাক, তাহলে আমরা আরও কিছুদিন এই জায়গায় ঘুরতে পারব।”

অভি মাথা নাড়ে, পরীর মাথার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। রিতিকা পরীকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে বলে, “সত্যি তুমি না থাকলে আমাদের টিম হ্যাবা টিমলিডারের যে কি হতো ভগবান জানে।”

অরুনার দিকে তাকালো অভি, জানতে চায় ওর অভিপ্রায় কি। অরুনা মৃদু হেসে বলে, “আমার কি কোন উপায় আছে না থেকে?”

অভি মজা করে বলে, “একটা আছে। তোকে এখান থেকে ছুঁড়ে দিচ্ছি, তুই সোজা সমুদ্রনীলের কোলে গিয়ে বসে পড়বি।”

অরুনা হেসে উত্তর দেয়, “ঠিক আছে তাহলে, আমি তৈরি, তুই আমাকে ছুঁড়ে দে দেখি।”

শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো, কল্যাণীরা ইনোভা নিয়ে চলে যাবে আর অভিরা আরও কয়েকটা দিন এই দুর্গম স্থানে কাটিয়ে বাড়ি ফিরবে। আমজাদ আর বলবিন্দারকেও পাঠিয়ে দেওয়া হলো, ঠিক হলো যে গাড়ি অভি আর সুপ্রতিমদা ভাগ করে চালিয়ে নেবে। কল্যাণীদের বিদায় জানিয়ে সবাই মিলে বৌদ্ধ স্তুপের কাছে মাটিতে বসে পড়ে।

পরপর তিনটে সাদা বৌদ্ধ স্তুপ, পাশাপাশি সাজানো, দেখে মনে হয় যেন শীতল মরুভুমির মাঝে এক মরুদ্যান। কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে, ভারী জ্যাকেটটাও যেন সেই ঠাণ্ডা হাওয়াকে দমিয়ে রাখতে পারছেনা। জ্যাকেট ফুঁড়ে যেন হাওয়া ওদের শরীরে তীরের মতন বিঁধছে। রিতিকা সুপ্রতিমদার বুকের কাছে জড়সড় হয়ে বসে। একপাশে অরুনা আরেক পাশে পরীকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে অভি। পৃথিবীর সব থেকে ধনী মানুষ অভিমন্যু, একপাশে ওর হৃদয় আরেক পাশে ওর চোখের মণি।

মাথার ওপরে সূর্য, এবারে এখান থেকে যাত্রা শুর করা উচিত। পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে যে কোথায় যাচ্ছে, ও জানায় যে আগে কোন ভালো ক্যাম্পিংয়ের জায়গা দেখে ওরা তাঁবু ফেলবে। সুপ্রতিমদা গাড়ি চালাতে শুরু করে। কিছু দূর গিয়ে বাতাল নামে এক জায়গায় একটা ছোটো দোকান দেখতে পেয়ে ওরা অবাক হয়ে যায়। সেখান থেকে কিছু খাবার দাবার কেনা হয়। পরী দোকানের মালিককে জিজ্ঞেস করে যে এখানে লোক জন আসে কি আদৌ? লোকটা জানায় যে গ্রীষ্ম কালে বেশ কিছু পর্যটক এই পথে আসে আর মাঝে মাঝে একটা বাস আসে মানালি থেকে কাজা। লোকটা দুরে একটা পাহাড় দেখিয়ে ওদের বলে যে ওই পাহাড়ের ওপাশে একটা ছোটো কিন্তু খুব সুন্দর, চন্দ্রতাল নামে একটা হ্রদ আছে। অভি লোকটাকে জিজ্ঞেস করে রাতের থাকার কোন ভালো জায়গার কথা। লোকটা জানায় যে কিছু দুরে নাকি একটা সরকারি রেস্ট হাউস আছে, তবে সেখানে কেউ থাকবে কিনা জানেনা, সেই রেস্ট হাউসের বাগানে ওরা ক্যাম্পিং করতে পারে। সবাই খুব খুশি হয়ে যায় যে শেষ পর্যন্ত একটা নিরাপদ জায়গার খোঁজ পাওয়া গেছে।

ছত্রুর সেই সরকারি রেস্ট হাউসের বাগানে অভিরা তাঁবু খাটায়। ওখানকার কেয়ার টেকার ওদের সাহায্য করে কাঠ, জল আর কিছু খাবার দাবার যোগাড় করতে। টেন্টের সামনের দৃশ্য মন মুগ্ধকর, পায়ের নিচে খাদ আর সেই খাদের মাঝ দিয়ে বলে চলেছে পাহাড়ি স্রোতস্বিনী চন্দ্রা নদী। নদীর ওপর তীরে কিছু উঁচু পাহাড়, বরফে ঢাকা। কয়েকটা পাহাড়ের গা বেয়ে বরফ নেমে এসেছে নদীর তির পর্যন্ত। সমুদ্রতল থেকে ওরা অনেক উঁচুতে উঠে এসেছে, এখানে বায়ুর ঘনত্ব বেশ কম।

কনকনে ঠাণ্ডা রাতে, আগুন জ্বালিয়ে ওরা পাঁচ প্রান আগুনের চারদিকে বসে গল্প করে। চারপাশে যেন ঠাণ্ডা হাওয়া এক উন্মত্ত যুদ্ধে মেতেছে। হু হু করে হাওয়া যেন ওদের উড়িয়ে নিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত, পরী অভির দিকে তাকায়, ওদের মনে পড়ে যায় চিতকুলের প্রথম রাতের কথা।

রাতের খাওয়া তাড়াতাড়ি সেরে, রিতিকা আর সুপ্রতিমদা একটা বড় টেন্টে ঢুকে পড়ে। অরুনা ছোটো টেন্টে নিজের স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে ঢুকে পড়ে। খোলা আকাশের নিচে বসে থাকে অভি আর চেয়ে থাকে মাথার ওপরে তারাদের দিকে। পরী ওর পাশে একটা স্লিপিং ব্যাগে নিজেকে বন্দি করে ওরা মেলে ধরা পায়ের ওপরে মাথা রেখে শুয়ে থাকে। কিছু পরে অভি ওর পায়ের ওপরে চুম্বনের স্পর্শ পায়, চেয়ে দেখে পরী ওর জানুর ওপরে ঠোঁট চেপে ধরেছে। পরীর মাথার ওপরে হাত এনে অভি ওর চুল আঁচড়ে দেয় আর গালে আদর করতে শুরু করে। সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে পরীর মুখের ওপরে, পরী গভীর চোখে অভির দিকে তাকায়। অভি অল্প ঠোঁট খুলে ঠোঁট নামিয়ে আনে পরীর ঠোঁটের ওপরে।

চুম্বন দেবার আগেই কাঁধের ওপরে আলতো ছোঁয়ায় অভি চমকে ওঠে। পেছন ফিরে দেখে যে অরুনা ওর দিকে তাকিয়ে। পরী উঠে বসে আর অরুনার দিকে জিজ্ঞাসু চোখ নিয়ে তাকায়। অরুনা অভির বাঁ দিকে বসে পড়ে।

অরুনা অভিকে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি কথা বলবি আমাকে? তুই আমার বাবা মাকে কি বলে এনেছিস?”

পরী আর অভি একে ওপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। ওরা যেন নিজেদের ভাষা হারিয়ে ফেলছে, কি উত্তর দেবে অরুনার প্রশ্নের। অরুনা কাঁপা গলায় ওদেরকে বলে, “তোরা দুজনে আমার বাবা মাকে কিছু একটা বলছিস যেটা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিস।”

পরী অরুনাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলে, “আমরা তোর বাবা মাকে এইটুকু অনুরোধ করেছিলাম যে যাতে ওনারা আমাদের সাথে তোকে ঘুরতে যেতে দেয়, ব্যাস।”

অরুনার দু’চোখে জল চিকচিক করে আসে, বিশ্বাস করতে পারে না পরীর কথা, “না, তুমি আমাকে মিথ্যে কথা বলছো শুচিদি।”

পরী অভির দিকে তাকায়। অভি অরুনাকে জিজ্ঞেস করে, “কি জানতে চাস তুই?”

অরুনা চেঁচিয়ে ওঠে, “আমি তোর কাছে সত্যি কথা জানতে চাই। কেন বার বার আমার মা আমাকে জিজ্ঞেস করছিল যে তুই আমার ঠিক মতন খেয়াল রাখছিস কি না? কেন জিজ্ঞেস করছিল? বল, কেন?”

অভি মাথা নিচু করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, কি উত্তর দেবে অরুনার প্রশ্নের। পরী ঠোঁট চেপে, আলতো হেসে বলে, “সত্যি হচ্ছে যে তুই এখন আমাদের সাথে আছিস আর তুই আবার হাসছিস। তোকে আমরা ফিরে পেয়েছি সেটাই সত্যি।”

অরুনা থাকতে না পেরে কেঁদে ফেলে, “কেন কেন, তোমরা আমাকে সত্যি কথা বলছো না।”

পরীর চোখ ছলছল করে ওঠে, নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে সামলে নেয় বুদ্ধিমতী মেয়ে। অরুনা পরীর জ্যাকেটের কলার শক্ত করে ধরে ওর জল ভরা চোখের দিকে তাকায়।

পরী বুক ভরে লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে, “তাহলে তুই সত্যি জানতে চাস। তোর বাবা মা আর অভির বাবা মা তোদের আসল সম্পর্কের কথা জানে না, জানে যে তোরা একে অপরের খুব কাছের মানুষ। তোর শরীর যখন খারাপ হতে শুরু করে, তুই যখন পাগলের মতন প্রায়, তখন বাড়ির সবাই মিলে অভিকে ধরে তোকে কিছু করে হোক, ফিরিয়ে আনার জন্য। তোর মা ওর হাত ধরে অনুরোধ করে যে তাঁর মেয়ের মুখে হাসি ফুটিয়ে দিলে অভি যা চাইবে তাই পাবে। নিরুপায় হয়ে আর তোর মুখের দিকে চেয়ে, অভি কথা দেয়। অভি পুবালিকেও কথা দিয়েছিল যে তোর আর সমুদ্রনীলের ভালোবাসা যেন বৃথা না যায়। ওর অবস্থা, একদিকে খাদ একদিকে পাহাড়, কি করবে কিছু না ভেবেই কথা দিয়ে দিয়েছিল।” অরুনার দুচোখ বেয়ে অবিরাম ধারায় অশ্রু বয়ে চলে। পরী বলতে থাকে, “আমি জানি না, কি করে ওর মাথায় এক উপায় আসে, তোকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার। তোর মুখে হসি ফুটে উঠেছে, সেটাই অনেক বড় পাওনা। কোলকাতা ফিরে গিয়ে ও ব্যানার্জি কাকুকে তোর আর সমুদ্রনীলের সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেবে, কেননা, ব্যানার্জি কাকু ওকে কথা দিয়েছেন যে ও যা বলবে ব্যানার্জি কাকু তাই মেনে নেবেন।”

অভি চশমা খুলে চোখের কোল মোছে। এমন সময়ে অভির মাথার পেছনে রিতিকা একটা ছোট্ট চাঁটি মারে। মাথা ঘুরিয়ে পেছনে দেখে যে রিতিকা আর সুপ্রতিমদা দাঁড়িয়ে। সুপ্রতিমদা আবেগপ্রবন হয়ে অভিকে বলে, “আমরা অরুনার চিৎকার শুনে বেরিয়ে এসে এই ট্রিপের আসল উদ্দেশ্য শুনে অবাক হয়ে যাই।”

রিতিকা অভির পিঠের কাছে বসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে পরীর দিকে তাকিয়ে বলে, “ভগবান যেন কাউকে এই রুকম হৃদয় না দেয় না হলে তোমার অভি আর তোমার থাকবে না সবার হয়ে যাবে। বড় অমুল্য এই অভি। আমার আর কিছু বলার ভাষা নেই তোমাদের।”

সব কথা শুনে অরুনা আর থাকতে না পেরে পরীর বুকে মাথা গুঁজে কেঁদে ফেলে। বারে বারে কেঁদে উঠে বলে, “তোর এটা করা ঠিক হয়নি রে, তোর এটা করা ঠিক হয়নি। এখন তোর আর শুচিদির কথা সবাই জেনে যাবে। তুই আমার জন্য এত কেন করতে গেলি, অভি।”

অভি, “ভবিষ্যতের কথা ভালো ভাবে দেখতে হবে। এখনো পর্যন্ত আমাদের কথা কেউ জানেনা আর আমাদের সেই রকম করেই থাকতে হবে পরের দুই বছর। এর মাঝে আমাকে একটা ভালো চাকরি পেতে হবে আর পরী ওর মাস্টারস শেষ করবে। তারপরে বাবা মায়ের সামনে দাঁড়াতে পারব আর কিছু বলতে পারব। অরুনা তুই চিন্তা করিস না।”

সুপ্রতিমদাঃ “অভি, তুই এক কাজ কর, দিল্লী চলে আয়, এখানে অনেক আই.টি কম্পানি আছে তোর চাকরি আমি করিয়ে দেবো।”

অভিঃ “নারে, পরী আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না, আমাকে ওর সাথে থাকতেই হবে। আমাকে কোলকাতায় চাকরি খুঁজতে হবে যতদিন না পরীর পড়াশুনা শেষ হয়।”

সুপ্রতিমদাঃ “পরী ওর মাস্টার্স দিল্লীতে করতে পারে।”

অভি, “না রে, সেখানেও এক বাধা আছে, সেটা তুই বুঝবি না। আমার মা আর পরী, খুবই একে অপরের অনুরক্ত, ওদের দুজনকে ছাড়ানো বড় মুশকিল হয়ে যাবে। মা পরীকে কিছুতেই কাছ ছাড়া করবে না। ওর ছোটো মায়ের আর ওর মাঝে এক অদৃশ্য বন্ধন আছে যেটা পৃথিবীর কোন শক্তি খন্ডন করতে পারে না, এমন কি আমিও নয়।”

ছত্রুর সেই রাত বড় আবেগময় রাত হয়ে ওঠে সবার জন্য। কারুর চোখে ভালবাসার জল, কারুর চোখে প্রেমের জল, কারুর চোখে কৃতজ্ঞতার।
 
Chapter 7: বীরের প্রত্যাবর্তন। (#3)

পরদিন সকালে অভিরা মানালির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। গ্রীষ্মকালে মানালি যে খুব ভিড় ভর্তি হবে সেটা ওদের অজানা নয়। সুপ্রতিমদা গাড়ি চালাচ্ছিল। গতকাল রাতের আবেগময় সময়ের পরে সবাই আবার আনন্দে মেতে উঠেছে। সবাই উচ্চ হিমালয়ের দৃশ্য দেখতে দেখতে আর এবড়ো খেবড়ো রাস্তার ওপরে দোল খেতে খেতে এগিয়ে চলে। বিকেলের মধ্যে রহটাং পাস পৌঁছে যায় ওরা। বেশ কিছুক্ষণ ওরা রোহতাং পাসে বসে থেকে হিমালয়ের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। অবশেষে রোহতাং পাস পেরিয়ে এসে ওরা মানুষের দর্শন পায়। এতক্ষণ পরে লোকজন দেখতে পেয়ে যেন ওদের ধড়ে প্রান ফিরে আসে। অরুনার দিকে তাকায় অভি, অরুনা যেন লোক দেখে খুব খুশি।

অভি ওকে মজা করে বলে, “কিরে এবারে ভিড় দেখে খুশি তো?”

মানালির দিকে রোহতাং পাসে গাড়ি থেকে আবার নামে। মেয়েদের চেহারায় যেন আনন্দ আর ধরে না। মানালির দিকের রোহতাং পাসে লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল যে মানালিতে খুব ভিড়, হোটেল পাওয়া একটু মুশকিল হতে পারে। অভির মুখ শুকিয়ে এলো, কি করা যায় এবারে। একটা ফেরিওয়ালা ওদের জানালো যে, মানালি থেকে কিছু দুরে নাগর নামে একটা জায়গা আছে, ছোটো আর সুন্দর, মানালি থেকে বেশি দুরেও নয়, সেখানে কিছু হোটেল ওরা পেয়ে যাবে। অভি ভেবে দেখলো, যেহেতু ওদের কাছে গাড়ি আছে সুতরাং নাগরে হোটেলে থেকে ওরা সহজেই মানালি ঘুরে যেতে পারে। এই পর্যন্ত যত জায়গায় ওরা ঘুরে এসেছে, তাঁর তুলনায় মানালিতে অনেক গরম। সবাই গায়ের থেকে গরম জামা কাপড় খুলে ফেলে।

নাগর পৌঁছতে ওদের একটু দেরি হয়ে যায়, তাঁর কারন মানালিতে খুব ভিড় ছিল। তবে নাগরে হোটেল পেতে ওদের বিশেষ অসুবিধে হয় না। নাগর, কুলু এবং মানালির মাঝে খুব ছোটো এক শান্তিপূর্ণ জায়গা। কিছু হোটেল আর কিছু দোকান পসার আছে সেখানে। হোটেলে নিজেদের ব্যাগ রেখে রাতের খাওয়া তাড়াতাড়ি সেরে ফেলে ওরা।

পরী আর অরুনা বলে যে ওদের বাড়িতে ফোন করতে হবে। অভি পরীকে বলে যে ছোটমায়ের সাথে ওর কথা বললেই হবে। পরী বিরক্ত হয়ে ওঠে কেননা বেড়াতে আসা পর্যন্ত ওই ছোটমায়ের সাথে কথা বলে গেছে, অভি একবারও বাড়ির সাথে কথা বলেনি।

পরী ওর ছোটমাকে ফোন করে জানায় যে ওরা ভালো ভাবে ঘুরে এসেছে আর নাগর নামে এক জায়গায় পৌঁছে গেছে। মা মনে হয় পরীকে জিজ্ঞেস করে যে কবে ফিরবে, পরী অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে সেই প্রশ্ন। অভি জানায় যে সম্ভবত রবিবারের মধ্যে ওরা কোলকাতা ফিরে যাবে। মা পরীকে অনুরোধ করে অভির সাথে কথা বলার জন্য। পরী অভিকে ফোন ধরিয়ে দেয়।

মাঃ “হ্যালো, কেমন আছিস?”

অভিঃ “ভালো আছি, তোমাদের কি খবর?”

মাল “আমরা সবাই ভালো। অরুন্ধুতির কি খবর?”

অভিঃ “ও খুব ভালো আছে, বেশ আনন্দে আছে আর মজা করছে। আমাদের এই বেড়ানোটা ওর পক্ষে বেশ ভালোই হয়েছে। ব্যানার্জি কাকুকে জানিও যে অরুনা ঠিক আছে।”

মাঃ “অরুন্ধুতিকে ফোন দে।”

অভি অরুনাকে ফোন দেয়, মা অরুনার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পরে অরুনা আবার ফোন অভির হাতে ধরিয়ে দেয়।

মাঃ “আমার কিছু বলার আছে।”

অভিঃ “কি বলো?”

মাঃ “তুই তো বলেছিলি যে তোদের বেড়ানো বারো দিনের, তাহলে তোরা রবিবার কেন ফিরবি?”

অভিঃ “আমার, অরুনার বা পরীর বাড়িতে কোন কাজ নেই তাই আমি ভাবলাম একটু ঘুরে বেড়িয়ে ফিরি, কেন দেরি করে ফিরলে কি কোন অসুবিধে আছে?”

মাঃ “না মানে, তোর ইন্দ্রানি মাসি কয়েক দিন আগে ফোন করেছিল, আমাদের বম্বে ডেকেছে। তাই আমি ভাবছিলাম যে পরীকে নিয়ে বম্বে যাবো।”

অভিঃ “তুমি যাবে বম্বে পরীকে নিয়ে তা আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছো, পরীকে সোজা জিজ্ঞেস করে নাও ও যেতে চায় কিনা।”

মাঃ “তুই যদি শুক্রবার ফিরে আসিস তাহলে নিয়ে যেতে পারি না হলে নয়। সেই জন্যেই তোকে জিজ্ঞেস করা। আমি ভালো করে জানি যে পরীর যাওয়ার হয়তো ইচ্ছে নেই কিন্তু যদি তুই শুক্রবার ফিরিস তাহলে হয়তো আমি বলে কয়ে রাজি করাতে পারব। আমরা শনিবারের রাতের প্লেনে বম্বে যাচ্ছি।”

অভি পরীকে জিজ্ঞেস করে যে ও বম্বে যেতে চায় কিনা, পরী মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে বম্বে যাবে না ও।

অভিঃ “না ও বম্বে যেতে চাইছে না। তোমরা কত দিনের জন্য বম্বে যাচ্ছো?”

মাঃ “আগামি সাত দিনের জন্য। পরীকে ফোন দে।”

অভি পরীকে ফোন ধরিয়ে দেয়, বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পরে পরী ফোন রেখে দেয়। তারপরে অরুনা ওর বাড়িতে ফোন করে কুশল জানিয়ে দেয়।

হোটেলের ঘরে ঢুকে পরীকে অভি জিজ্ঞেস করে যে ওর ছোটমা কি বললো। পরী জানায়, “আমরা সময় মতন পৌঁছাবো না শুনে ছোটমা মনঃক্ষুণ্ণ। আমি ভাড়াটের কাছে চাবি রেখে যেতে বলে দিয়েছি। ছোটমা বলছিল যে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে, সেটাই ভালো হবে, এপ্রিলের পরে মায়ের সাথে দেখা হয়নি আর তুমিও অনেকদিন আমাদের বাড়ি যাওনি। ছোটমা মনে হয় চায় না যে আমরা একা একা বাড়িতে থাকি। আমরা রবিবারের মধ্যে যদি কোলকাতা ফিরে যাই তাহলে সোমবার সকালে বসিরহাট চলে যাবো।”

অভিঃ “কেন বসিরহাট কেন যেতে হবে? আমরা বাড়িতেই তো দুজনে থাকতে পারি, তাতে অসুবিধে কোথায়?”

পরীঃ “ছোটমা নিশ্চয় মাকে আগে থেকে জানিয়ে দিয়ে থাকবে যে আমরা আসব।”

অভি একটু গম্ভির হয়ে যায় গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা ভেবে, “তুমি বুঝতে পারছো না পরী, গ্রামের বাড়ি গেলে কি হবে।”

পরীঃ “কি হবে, অসুবিধে কোথায় আমার বাড়িতে যাওয়ার? আমি আমার মায়ের বাড়ি যাবো, তুমি তোমার দিদার বাড়ি যাবে তাতে অসুবিধে কি?”

অভি মাথা নাড়ায়, “পরী পরী পরী, অসুবিধে দিদাকে নিয়ে বা বাড়ি নিয়ে নয়, সোনা। অসুবিধে সুব্রত আর মৈথিলীকে নিয়ে।”

পরী বেমালুম ভুলে গেছিল সেই ঘটনা। কপালে করাঘাত করে বলে, “উফ ভগবান, আমি একদম ভুলে গেছিলাম সেই কথা। যাই হোক, আমি জানি তুমি কি করেছো আর তুমি কোন ভুল করোনি। যদি কেউ কিছু করে থাকে তাহলে ওরা করেছে। ভয় ওদের পাওয়া উচিত।” হেসে বলে পরী, “আর বেশি কিছু হলে আমার কাছে তুরুপের তাস রাখা আছে, সেই ক্যাসেটটা।”

অভি গম্ভির হেসে উত্তর দেয়, “বেশ দারুন খেলা জমবে তাহলে।”

পরী ওকে সাবধান করে বলে, “মনে রেখো, আমি কিন্তু এই সব বিষয়ে কিছু জানিনা, সুতরাং ওদের সামনে আমি তোমার পাশে দাঁড়াতে পারবো না। যদিও আমি মার্চের পরে ওদের সাথে বিশেষ কথা বলিনি।”

অভি পরীর টোপা গাল টিপে আদর করে বলে, “মিষ্টি সোনা।”

পরী ঠোঁট গোল করে চুমুর ইশারা করে বলে, “অনেক আদর হয়েছে, তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে শুতে এসো।”

অভি মাথা নুইয়ে বলে, “যথা আজ্ঞা মহারানী।”

পরের দিন অভিরা মানালি ঘুরে বেড়ালো। মানালি বিয়াস নদীর তীরে এক ছোটো উপত্যকা, চার পাশে উঁচু উঁচু পাহাড়ে ঘেরা। মানালি খুব সুন্দর এক পাহাড়ি জায়গা, কিন্তু অভির আর পরীর মানালি দেখে ঠিক পছন্দ হলো না, যে জায়গা থেকে ঘুরে এসেছে সেই জায়গার পরে মানালি ঠিক মনে ধরলো না। হিড়িম্বা মন্দির আর একটা শিবের মন্দির ঘুরে দেখলো।

বিকেলবেলা মেয়েরা কেনাকাটা করতেই ব্যাস্ত হয়ে যায়। জুন মাসে স্কুল কলেজের ছুটি তাই মানালিতে পর্যটকের ভিড়। পরী বাড়ির সবার জন্য কিছু কিনে নেয়, ছোটমার আর দিদার জন্য শাল, ওর বউদিদের জন্য স্টোল। ওকে জিজ্ঞেস করে যে কি কিনতে চায়, অভির সেই রেকং পিওর কথা মনে পড়ে গিয়ে হাসি পেয়ে যায়। কেনাকাটা সেরে সন্ধের দিকে নাগর ফিরে আসে ওরা।

পরী আর অরুনা কাসেলের কাছে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে, ওদের বলে যে ওরা কিছু কেনাকাটা করে ফিরবে। অগত্যা অভি একা একা হোটেলের ঘরে বসে ওদের জন্য অপেক্ষা করে।

অনেক ক্ষণ হয়ে যায়, কিন্তু পরী আর অরুনাকে ফিরতে না দেখে অভি সুপ্রতিমদার ঘরে গিয়ে ঢোকে। ঘরে ঢুকে দেখে যে সুপ্রতিমদা বিয়ার সাথে সিগারেট টানছে। বিছানার ওপরে বসে পড়ে অভি, সুপ্রতিমদা ওকে এক ক্যান বিয়ার দেয় আর একটা সিগরেট জ্বালায় অভি। রিতিকার কথা জিজ্ঞেস করাতে সুপ্রতিমদা বলে যে বউ স্নান করতে ঢুকেছে।

সুপ্রতিমদাঃ “তোর বউ কোথায়?”

অভিঃ “শপিং শপিং আর শপিং...” দুজনেই হেসে ফেলে।

সুপ্রতিমদা জিজ্ঞেস করে অভিকে, “কালকের কি প্লান?”

অভি উত্তর দেয়, “কাল, মান্ডি স্বারঘাট হয়ে দিল্লী ফিরে যাওয়া। বেশি দেরি হলে মান্ডি না হয় স্বারঘাটে থেকে যাবো আমরা।”

সুপ্রতিমদাঃ “শেষ পর্যন্ত আমাদের বেড়ানো শেষ হলো বল। বাপরে তুই যে যে জায়গা ঘুরিয়ে দেখালি মাইরি। আমি অনেক পাহাড় ঘুরেছি, মানালি, ফাগু, চায়েল, ডালহউসি, সব ঘুরেছি, ওদিকে নইনিতাল বল কউসানি বল, আবার পুবে দারজিলিং বা সিকিম বল, সব জায়গা ঘুরেছি কিন্তু শালা এই জায়গার মতন কোন জায়গা দেখিনি। সব জায়গায় হাজার হাজার লোক আর আমরা এই জায়গায় কোন লোকজন খুঁজে পেলাম না। সত্যি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।”

বুক ভরে সিগারেটের ধোঁয়া টেনে একটু দার্শনিক উত্তর দেয় অভি, “গুরু, যে কোন জায়গা ভালো লাগে, যদি মনের মতন সাথি থাকে পাশে।”

সুপ্রতিমদা হেসে বলে, “বাঃবা তোর মধ্যে যে কবি কবি ভাব আর একটা দার্শনিক লুকিয়ে আছে জানতাম না তো।”

অভিঃ “রাতের খাওয়ার কি ব্যাবস্থা।”

সুপ্রতিমদাঃ “আমি মানালি আগেও এসেছি...”

চোখ টিপে অভি জিজ্ঞেস করে, “ওয়ান ডে পিচ নিয়ে খেলতে এসেছিলি?”

সুপ্রতিমদা অভিকে চুপ করতে বলে, “আরে জোরে বলিস না, রিতিকা কিছু জানে না কিন্তু ওইসব ব্যাপারে।”

অভিঃ “ছাড় না, টি.ভি র আওয়াজে কিছু শুনতে পাবে না।”

সুপ্রতিমদা টি.ভি’র আওয়াজ একটু জোর করে দিয়ে ওকে বলে, “গুরু, ওয়ান ডে পিচে খেলে মজা আছে আনন্দ বা শান্তি নেই। তুই বল হাঁকালি, ক্যাচ হবে না ছয় হবে জানিস না। আসল খেলা হচ্ছে টেস্ট পিচে।”

অভিঃ “কটা পিচে খেললি তুই?”

সুপ্রতিমদা হেসে বলে, “দুটো ওয়ান ডে খেলেছি রে, তারপরে টেস্ট ম্যাচ।”

অভিঃ “রিতিকাকে জানাস নি কেন? যাকে ভালবাসিস তার কাছে হৃদয় খুলে রাখতে হয় রে।”

সুপ্রতিমদাঃ “ছাড় না পুরানো কথা।”
 
Chapter 7: বীরের প্রত্যাবর্তন। (#4)

অভিকে একবার পরী বলেছিল, সেই কথা অভি সুপ্রতিমদাকে বলে, “অতীত ঠিক অতীত নয়। আমাদের অতীতকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়, অতীতের কাছ থেকে আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করি, ভবিষ্যতের সিঁড়ি তৈরি করি। বর্তমান যদি সঠিক না হয় তাহলে কোন এক সময়ে কিন্তু আমাদের অতীত আমাদের তাড়িয়ে বেড়াবে।”

সুপ্রতিমদা বিরক্ত হয়ে ওঠে, “বোকা... জ্ঞান মারতে যাস না, দারু গেল শালা। তুই কি মদ ঢাললেই দার্শনিক হয়ে যাস নাকি?” কথা অন্য খাতে বয়ে যায়, গল্পে দুজনে মেতে ওঠে।

হটাত বাথরুমের দরজা খুলে রিতিকা তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে। ওকে দেখে সুপ্রতিমদার আর অভির মুখ হাঁ হয়ে যায়। দুজনের চোখ বড় বড় হয়ে যায়, নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে রিতিকার দিকে।

সাদা তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে থাকে রিতিকা, সর্বাঙ্গে একটি সুতো পর্যন্ত নেই। সারা গায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলের ফোঁটা। দেখে মনে হয় যেন এক মৎস্যকন্যে সবে সাগরজল থেকে উঠে এসে ওদের সামনে নিজেকে মেলে ধরেছে। অভি বিস্ফারিত নয়নে রিতিকার নধর পেলব দেহের অপরূপ রুপ সুধা পান করে।

মুখখানি দেখে মনে হচ্ছে যেন সদ্যস্নাত ম্যাগনোলিয়া ফুল, সূর্যের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠেছে। মাথার চুল পরীর মতন লম্বা না হলেও ঘাড় পর্যন্ত নেমে এসেছে। ভিজে চুলের থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে। ছোটো গোল কাঁধ, ঢেউ খেলে উঠেছে উন্নত বক্ষ জোড়ায়। দেহের অবয়ব যেন অতি প্রাচিন বালি ঘড়ির মতন। ত্রুটিহীন নিটোল বক্ষ যুগলের ওপরে দুটি গাড় বাদামি নুড়ি সাজানো। কিছু ক্ষুদ্র জলের ফোঁটা ওই বৃন্তের কাছে লেগে তারপরে গড়িয়ে পড়েছে নিচের দিকে। পীনোন্নত বক্ষ যুগল যেন ঠেলে বেরিয়ে এসেছে ওর শরীরের থেকে আর হাতছানি দিচ্ছে সামনে বসে থাকা দুই বুভুক্ষু হায়নার দিকে।

মধ্যচ্ছদা যেন স্পিতি নদী, বুকের নিচ থেকে নেমে গেছে ছোটো গোল পেটের দিকে, হারিয়ে গেছে সুগভীর নাভির ভেতরে। পাতলা কোমর আর তার নিচে ফুলে উঠেছে সুডৌল নিতম্ব। নিতম্ব জোড়া বেশ পুরুষ্টু আর তলপেটটাও বেশ মাংসল আর ফোলা। ঠিক তলপেটের নিচের দিকে অভির দৃষ্টি যায়, দুই নমনীয় নধর জানু, সদ্য স্নাত হওয়ার ফলে ত্বকের ওপরে ঘরের আলো পিছল খেয়ে যায়। তলপেটের বাম দিকে বেশ নিচে একটা ছোটো কালো তিল। নাভিদেশ থেকে বেশ কয়েকটা সরু জলের ধারা নেমে এসেছে, তলপেটের ওপরে দিয়ে গড়িয়ে হারিয়ে গেছে জানুমাঝের উপদ্বীপে।

রিতিকা ওদের দেখতে পায়নি কারন ও মাথা মুছতে ব্যাস্ত ছিল। চলনের ফলে নিতম্ব জোড়া বেশ দুলে দুলে উঠছিল, জানুমাঝের উপদ্বীপে ওপরে দিকে অতি যত্নে সাজানো একটি ছোটো বাগান। একটু সরু ধারা যেন ওর সুন্দর ত্রিকোনা উপদ্বিপের মাঝখান থেকে নিচের দিকে বয়ে চলেছে। বাগানে জলের ফোঁটা লেগে, মনে হচ্ছে যেন শরতের ঘাসের আগায় শিশির রেখা।

রিতিকা অপার রুপ দেখে অভি আর সুপ্রতিমদা হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকে। কান লাল হয়ে উঠেছে অভির, গলা শুকিয়ে গেছে রিতিকাকে দেখে, মাথার মধ্যে থেকে যেন দুচোখ ঠিকরে বেরিয়ে যাবে মনে হচ্ছে।

রিতিকা আপনমনে মাথা মুছতে মুছতে সুন্দর কোন গান গুনগুন করতে থাকে। কিছু পরে সুপ্রতিমদাকে বলে, “হানি, আমার গাউনটা দেবে প্লিস।” রিতিকার গলার আওয়াজ পেয়ে সুপ্রতিমদার আর অভির ঘোর কেটে যায়।

অভির যেন হাতে পায়ে প্রান ফিরে আসে, অস্ফুট চিৎকার করে ওঠে, “যাঃ শালা!” বলেই এক লাফে রুমের দরজা ঠেলে বেরিয়ে যায়। সারা গায়ে বিয়ার পরে যায়।

রিতিকা হকচকিয়ে যায় অভির গলার আওয়াজ শুনে, কোন রকমে গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে একলাফে বাথরুমে ঢুকে পড়ে। বাথরুমের দরজার পেছন থেকে রিতিকা ওদের দিকে চেঁচিয়ে ওঠে, “ফা... ইউ ব্লাডি শূওর। অভি রুমে ছিল সেটা আগে জানাতে পারোনি?”

সুপ্রতিমদা তোতলাতে তোতলাতে বলে, “বেবি তুমি যে জন্মদিনের পোশাকে বেরিয়ে আসবে তা কি আর জানতাম?”

রিতিকা ভেতর থেকে চেঁচিয়ে ওঠে, “আমি কি করে জানব যে অভি রুমের মধ্যে আছে? তোমরা দুজনে যা জোরে টি.ভি চালিয়েছো, তাতে ঘাটের মড়া জেগে যাবে।”

অভি দরজা থেকে চেঁচিয়ে রিতিকাকে বলে, “আমি দুঃখিত, রিতিকা।”

রিতিকা অভির দিকে চিৎকার করে ওঠে, “বের হ রুম থেকে শয়তান ছেলে, না হলে এখুনি মেরে ফেলব।”

দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে এসে অভি নিজের রুমে ঢুকে পড়ে। পরী আর অরুনার দেখা নেই, চুপ করে বিছানার ওপরে বসে বিয়ারের ক্যানে চুমুক দেয় আর চোখের সামনে ভেসে ওঠে রিতিকা অনাবৃত অপরূপ দেহ পল্লব। অভির পেটের মধ্যে তরল আগুন জ্বলে ওঠে সেই মনোরম আকর্ষণীয় দৃশ্য মনে পড়াতে। কিছু পরে পরী ফিরে আসে, অভি ওর দিকে বুভুক্ষু হায়নার মতন চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। ভেতরের সিংহ যেন গর্জে উঠেছে রিতিকার শরীর দেখে।

পরী ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে, “আমার দিকে ওই রকম ভাবে কেন তাকিয়ে আছো? এক মিনিটের জন্যেও কি আমি তোমার থেকে দুরে থাকতে পারবো না?”

গোলাপি রঙের স্কার্ট আর সাদা ফ্রিল শার্টে পরীকে খুব আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে, গলায় একটা স্টোল জড়ানো। অভি ওর দিকে উঠে গিয়ে পেটের ওপরে হাত রেখে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। পরীর পেছনে নিজেকে চেপে ধরে অভি। পরী হাতের ব্যাগ বিছানার ওপরে ছুঁড়ে ফেলে দেয় আর নিজের কোমল গোলায় অভির কঠিন সিংহের পরশ অনুভব করে।

আদর করে জিজ্ঞেস করে অভিকে, “কি হলো তোমার?”

অভিঃ “কিছু না সোনা। তোমাকে খুব মিস করছিলাম আমি। এত দেরি করলে কেন?”

পরীঃ “আরে বাবা, আমরা কাসেলে গেছিলাম। জানো কাসেলটা খুব সুন্দর, ওখানে আবার একটা রেস্টুরেন্টও আছে।”

পরী পেছন দিকে মাথা হেলিয়ে অভির গালে গাল ঘষে দেয়। অভির নাকে ভেসে আসে পরীর গায়ের জুঁই ফুলের গন্ধ, পাগল করে তোলে অভির হৃদয়কে।

পরীঃ “প্লিস আমাকে ছেড়ে দাও সোনা, আমি খেতে যাবার আগে একবার স্নান করবো। এখানে বড় গরম।”

অভিঃ “উম্মম... ছাড়তে পারি যদি তুমি আমাকেও স্নান করার জন্য সঙ্গে নাও।”

পেটের ওপরে অভির চেপে ধরা হাতের ওপরে চাঁটি মারে পরী, একটু বিরক্তি সুরে বলে, “না, আমি জানি তুমি বাথরুমে ঢুকে আমার সাথে দুষ্টুমি শুরু করে দেবে। কেন সবসময়ে তোমার মাথায় দুষ্টুমির করার চিন্তা ঘোরে?”

অভি ওর কানে কানে বলে, “উম্মম... সোনা, আমি তোমার আকর্ষণীয় দেহের হাতছানি থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারি না যে, তাই তো মনে হয় যেন তোমাকে নিয়ে সবসময়ে উম্মত্ত খেলায় মেতে উঠি।”

পরী একটু গম্ভির হয়ে যায়, “অভি, এই চিন্তাধারা ভালো লক্ষণ নয়। প্রেমের সিঁড়িতে রতিখেলা শুধু মাত্র একটা ধাপ, সেই ধাপ যেন বুভুক্ষু খিদে না হয়ে ওঠে। যেদিন মানুষের মাথায় সেই খিদে চড়ে যাবে সেদিন মানুষ ভয়ঙ্কর জানোয়ারে পরিবর্তিত হয়ে যাবে, আর ভয়ঙ্কর জানোয়ারের হৃদয়ে প্রেম ভালবাসার লেশ মাত্র থাকে না, অভি। নিজেকে সামলাও, আমি চাই না আমার অভি বুভুক্ষু জানোয়ার হয়ে উঠুক।”

পরীর ওই কথা শুনে অভির বুভুক্ষু আগুন নিভে যায়, সেই স্থানে হৃদয়ে এক অনাবিল প্রেমের আলো ছড়িয়ে পড়ে। ঘাড়ের ওপরে আলতো চুমু খেয়ে পরীকে আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে দেয়। পরী ওর জামাকাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ে স্নান সেরে নিতে।

কিছু পরে সুপ্রতিমদা ওদের ঘরে এসে টোকা মেরে খেতে যাওয়ার জন্য ডাক দেয়। অভি মনে মনে প্রস্তুতি নেয় কি করে রিতিকার সামনে যাবে, অভির কান লাল হয়ে ওঠে। পরীকে জানায় যে ও খেতে যাবে না। সুপ্রতিমদা বুঝতে পারে অভির মনের উত্তেজনা আর সেই দেখে হেসে ফেলে।

সুপ্রতিমদা পরীকে বলে, “রিতিকাও খাবার খেতে যাচ্ছে না। পরী, তুমি নাহয় একবার গিয়ে দেখ কি হয়েছে।”

পরী উৎসুক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপরে সুপ্রতিমদাকে জিজ্ঞেস করে, “এদের দুজনের হটাত করে কি হয়ে গেল যে দুজনেই খেতে যাচ্ছে না?”

সুপ্রতিমদা অভির লাল মুখ দেখে আর থাকতে না পেরে হেসে ফেলে। অভি ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে লজ্জা লুকানোর জন্য। পরী কিছু বুঝতে না পেরে দুজনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

সুপ্রতিমদা মাথা চুলকে পরীকে জানায়, “আমি আর অভি আমার রুমে বসে বিয়ার খাচ্ছিলাম আর এমন সময়ে রিতিকা স্নান সেরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। ব্যাপারটা হলো যে রিতিকা তখন একদম বার্থডে পোশাকে ছিল।”

সুপ্রতিমদার কথা শুনে পরী আর হাসি ধরে রাখতে পারেনা, পেট চেপে হাসতে হাসতে বিছানার ওপরে গড়িয়ে পড়ে।

অভি মৃদু চেঁচিয়ে ওঠে ওদের দিকে, “আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি যে কি করে রিতিকার সামনে যাবো আর তোমরা হাসছো?”

পরী হাসতে হাসতে বলে, “আমার শয়তান সোনা, সুপ্রতিমদার ভালবাসার মেনকাকে একদম নিস্কলঙ্ক রুপে দেখে ফেলেছে তাই আমি আর হাসি থামাতে পারছি না।” কোন রকমে হাসি থামিয়ে, “আচ্ছা বাবা, আমি রিতিকার কাছে গিয়ে দেখছি।”

রিতিকা কিছু পরে পরীর পেছনে মুখ লুকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। অভির অন্য দিকে মুখ করে তাকায়, রিতিকার চোখে চোখ রাখতে পারছে না অভি। লজ্জায় লাল রিতিকা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। সুপ্রতিমদা আর পরী ওদের মুখের ভাব দেখে হেসে লুটোপুটি খায়। অরুনা কিছুই বুঝতে না পেরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করে।

সুপ্রতিমদা ওদের নিয়ে যায় একটা ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টে। রিতিকা লাজানিয়ারের অর্ডার দেয় সাথে গ্রিল ট্রাউট মাছ। এর আগে অভিরা কোন দিন ইটালিয়ান খানা খায়নি, পরী রিতিকাকে সেই লাজানিয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। রিতিকা ওদেরকে বুঝিয়ে দেয়। অভি আর সুপ্রতিমদা সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল রিতিকার লজ্জা কাটেনা, পরীর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে। পরী শেষ পর্যন্ত রিতিকার লজ্জা কাটানোর জন্য একরকম টেনে ঠেলে দেয় সুপ্রতিমদার দিকে।

হেসে বলে, “আমরা সবাই পূর্ণবয়স্ক, এই রকম ভাবে লজ্জা পেলে হয়? যা হয়েছে, হটাত করেই না হয়ে গেছে।” বলেই সুপ্রতিমদা আর পরী ওদের দিকে বিদ্রুপে হেসে ওঠে।

রাতের খাওয়ার সময়ে সুপ্রতিমদা জানায় যে ওরা ডিসেম্বরে বিয়ে করবে। পরী আর অভিকে নিমন্ত্রন জানায়। রিতিকার দিকে তাকায় অভি, রিতিকা সুপ্রতিমদার কোল ঘেঁসে বসে থাকে আর জুলুজুলু চোখে ওর দিকে তাকায় একবারের জন্য।

সুপ্রতিমদার দিকে উপহাস করে বলে, “কিরে শেষ পর্যন্ত গাধার টুপি পরছিস তাহলে?”

পরেরদিন সবাই একটু দেরি করেই ঘুম থেকে ওঠে। ওদের বেড়ানোর শেষদিন, সবার মন খানিক বিষণ্ণ। সুপ্রতিমদা গাড়ি চালায় আর অভি পাশে বসে। বিকেলের মধ্যে ওরা মান্ডি পৌঁছে যায়। সুপ্রতিমদা মেয়েদের জিজ্ঞেস করে যে রাতে মান্ডি থেকে যাবে কিনা না সোজা বাড়ি। মেয়েরা প্রথমে একটু দোনামনা করে থাকার জন্য, অভি জানায় যে গাড়ি চালাতে ওর কোন অসুবিধে নেই। চন্ডিগড় পৌঁছাতে ওদের সন্ধ্যে হয়ে যায়। সুপ্রতিমদা একবার অভিকে জিজ্ঞেস করে গাড়ি চালানোর ব্যাপারে, অভি মানা করে দেয়। শেষ পর্যন্ত সুপ্রতিমদা গাড়ি চালায়, প্রায় রাত দুটো নাগাদ ওরা দিল্লী পৌঁছে যায়।

পরের দিন সবাই সুপ্রতিমদার বাড়িতে বিশ্রাম করে। রবিবার সকালের প্লেনে ওরা সবাই কোলকাতা ফিরে যাবে।

দিল্লী পৌঁছে পরী ওর ছোটমাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় ওদের খবর, অরুনাও বাড়িতে ফোন করে দেয়। ব্যানারজিকাকু জানায় যে তিনি এবং অরুনার মা, এয়ারপোর্টে ওদের জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন।

এর মাঝে অভি সমুদ্রনীলকে ফোন করে এয়ারপোর্টে আসতে বলে। সমুদ্রনীল কি বুঝলো জানেনা কিন্তু জানালো যে ও এয়ারপোর্টে ওদের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে।

রবিবার সকালে, যথারীতি মেয়েদের চোখে বিদায়ের জল, মন ভারী। সুপ্রতিমদা অভির হাত ধরে বলে, “তুই না এলে আমি কিন্তু বিয়ের পিঁড়িতে বসবো না। তোর আর পরীর আসা চাই-ই-চাই।”

প্লেনে চড়ে অভি আরেকবার অরুনাকে ওর মতলবের কথা জানায়, “প্লেন থেকে নেমে অরুনা আমার একদম পাশে হাঁটবে, যেন কেউ কোন সন্দেহ না করে, পরী আমাদের পেছনে হাঁটবে। আমি ব্যানার্জি কাকু আর কাকিমাকে সব কথা খুলে বলবো, আমি বলবো যে তিনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন যে আমার কথা রাখবেন।”

পরীর বুক দুরুদুরু করে ওঠে, অরুনা ভয়ে ভয়ে পরীর দিকে তাকায়। পরী নিজের মনের ভাব লুকিয়ে হেসে ওকে জড়িয়ে ধরে আস্বস্ত করে, বলে যে সব ঠিক হয়ে যাবে। ব্যাগ হাতে নিয়ে গেটের দিকে হাঁটতে শুরু করে ওরা। দূর থেকে দেখতে পায় যে ব্যানার্জি কাকু আর কাকিমা অধির অপেক্ষায় ওদের জন্য দাঁড়িয়ে। অভি ভিড়ের মধ্যে সমুদ্রনীলকে খোঁজে, সমুদ্রনীল ভিড়ে এক কোনায় সবার চোখ বাঁচিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, অভি ওকে ইশারায় অপেক্ষা করতে বলে। উৎকণ্ঠায় অরুনার চোখে জল চলে আসে, বুকের মাঝে ঝড় ওঠে, বাবা মা সত্যি কথা জানতে পেরে কি রকম প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করবেন। অভি পিঠের ওপরে হাত বুলিয়ে আস্বস্ত করে অরুনাকে, নিচু গলায় জানায়, “কোন চিন্তা করিস না, মাথা ঠাণ্ডা রাখ, আমি সব ঠিক করে দেব।”

অরুনা কাকিমার দিকে তাকালো তারপরে অভির দিকে। মেয়ের মুখে হাসি দেখে কাকিমার চোখে আনন্দের জল, ব্যানার্জি কাকুর মুখে স্বস্তির হাসি। কাকিমা বারে বারে চোখ মোছেন। অভি অরুনাকে একটু ঠেলে দিয়ে বলে, “কাকিমা কাঁদছে, জড়িয়ে ধরবি না? আমি শেষ পর্যন্ত আমার কথা রেখেছি, আমি তাদের মেয়েকে তাদের কোলে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি, যা তুই।”

পরী অভির মুখের দিকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে তাকায়, বুক ভরে ওঠে গর্বে, যেন এক যুদ্ধ জয় করে ফিরছে ওর প্রানের ছোটো রাজকুমার। অরুনা দৌড়ে গিয়ে কাকিমার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেঁদে ফেল। কাকিমা আর ব্যানার্জি কাকু মেয়ের মুখে হাসি দেখে আপ্লুত হয়ে ওঠেন।

ব্যানার্জি কাকু অভির কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমি তোমাকে কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা অভিমন্যু। তুমি যা চাইবে আমি তোমাকে এখুনি দিয়ে দেব। ভদ্রলোকের এক কথা, অভিমন্যু।”

অভি ব্যানার্জি কাকুর আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করে, গভীর জলে ঝাঁপ দেওয়ার আগে বুক ভরে এক শ্বাস নেয়। পরীর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় একবার, পরী মৃদু মাথা নুইয়ে ইশারা করে তাঁর সাধের রাজকুমারকে, “এগিয়ে চলো রাজকুমার, তুমি বিজয়ী হবে।”

অভি সমুদ্রনীলকে ইশারায় কাছে ডাকে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে অভি ব্যানার্জি কাকুকে বলে, “আমি অরুনার খুব ভালো বন্ধু মাত্র। কিন্তু ওর মনের মানুষ আমি নই” সমুদ্রনীলের দিকে দেখিয়ে বলে, “আমার বন্ধু, সমুদ্রনীল অরুন্ধুতিকে ভালবাসে।”

অভির কথা শুনে ব্যানার্জি কাকু অবাক হয়ে যায়, নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা। অরুনা কাকিমাকে প্রাণপণে জড়িয়ে ধরে, কাকিমা অরুনার মুখের দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে।

ব্যানার্জি কাকু মাথা দোলায়, “না না, এ হতে পারে না। এ কি করে সম্ভব, আমরা তো জানি যে তুমি অরুনাকে ভালোবাসো।”

অভিঃ “হতে কেন পারেনা, সমুদ্রনীল ভালো ছেলে, প্রেসিডেন্সিতে রসায়নে মাস্টারস করছে আর অরুনাকে খুব ভালবাসে।”

ব্যানার্জি কাকুঃ “কিন্তু তোমার বাবা মা?”

অভিঃ “আপনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন যে আমি যা বলবো সেটা আপনি মেনে নেবেন।”

ব্যানার্জি কাকু অভিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় ঠোঁট চেপে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কে বাবা?”

অভি নিজেকে ছাড়িয়ে বলে, “আপনি আমার কথা রাখছেন তাহলে।”

ব্যানার্জি কাকুঃ “হ্যাঁ, রাখছি।”

সমুদ্রনীলকে কাছে ডেকে ওর হাতে অরুনার হাত দিয়ে দুজনকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে অভি। ধরা গলায় ওদের বলে, “পুবালির কাছে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তোদের এক সাথে দেখব বলে, আজ আমি সেই কথা রেখেছি।”

অরুনার কান্না থামছিল না, পরী ওকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করে।

ব্যানার্জি কাকু অভিকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার বাবা মা, তারা তো এই ভেবে বসে আছেন যে আমার মেয়ে তাদের বাড়ির বউমা হয়ে আসছে। তাদের কি করে বুঝাবে যখন তারা এই সত্যি জানবে।”

অভিঃ “আপনাকে আরও একটা কথা দিতে হবে আমাকে। আমি যতদিন আপনাকে বলতে না বলবো, ততদিন আপনি আমার বাবা মাকে কিছু জানাবেন না।”

কাকিমা অভির কাছে এসে, গালে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, “তোমার হৃদয় অনেক বিশাল, তোমার হৃদয় সোনার তৈরি, আর সেটাই হচ্ছে অসুবিধে। আমি কথা দিচ্ছি, তুমি যতদিন আমাদের বলতে না বলবে, আমরা তোমার বাবা মাকে কিছু জানাব না। আমি ভগবানের কাছে প্রান দিয়ে প্রার্থনা করবো, তুমি যা চাও তাই যেন জীবনে পাও।”

পরী আর অরুনাকে যেন একে অপরের কাছে থেকে ছাড়িয়ে আনা যাচ্ছিল না। অরুনা অভির গালে আলতো চাঁটি মেরে বলে, “তোরা দুজনে আমার জীবনের সব থেকে মুল্যবান মানুষ।”

বাড়ি ফেরার পথে, পরী চুপ করে অভির গা ঘেঁসে বসে বারে বারে চোখ মোছে। অভি পরীকে জড়িয়ে ধরে আদর করে।

পরী অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার প্রানের ছোট্ট রাজকুমার আজ বিজয়ী হয়ে ফিরছে। আই লাভ ইউ, অভিমন্যু।”
 
Chapter 8: দাবার 64 ছক। (#1)

মা রবিবার রাতেই ফোন করে জানিয়ে দেন যে তাঁরা ঠিক মতন বম্বে পৌঁছে গেছে আর ওদের বেড়ানোর খবরা খবর জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরী ছোটমাকে জানিয়ে দেয় যে পরেরদিন, সোমবার, ওরা সকাল সকাল গ্রামের বাড়ি চলে যাবে। রাতে পরী মাংস রান্না করে।

অভি পরীকে জিন্স পরতে অনুরোধ করে। পরী আঁতকে উঠে বলে, “তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? গ্রামের সবাই আমার দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকবে তাহলে, যেন কোন ভুত দেখছে।”

অভিঃ “তাহলে কি পরবে তুমি?”

পরীঃ “শাড়ি না হয় সালোয়ার কামিজ।”

অভিঃ “ওয়াকম্যান নিতে ভুলে যেওনা যেন।”

পরীঃ “ও নিয়ে চিন্তা কোরোনা।”

অভি আদর করে ওর গাল টিপে দিয়ে বলে, “আমার ছোট্ট পরী।”

পরেরদিন সকাল সকাল দুজনে তৈরি হয়ে পরীর গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা হয়ে যায়। দিদার বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় ঘন্টা তিনেক লেগে যাবে। পরী একটা লম্বা সাদা রঙের স্কার্ট পরে আর সাদা ফ্রিল শার্ট। একে ফর্সা তাঁর ওপরে সাদা রঙের পোশাকে ঠিক যেন দুধে স্নাত এক অপরূপ মূর্তি। কোলকাতায় গ্রীষ্ম কালে বড় ঘাম দেয়, তবে বাস চলার দরুন হাওয়ার জন্য কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়। ওরা সেই বেড়ানোর গল্পে মেতে ছিল, লাহুল স্পিতির গল্প। পরী দুষ্টুমি করে ওকে রিতিকার স্নানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে খেপিয়ে তোলে। অভি আদর করে মাথার পেছনে চাঁটি মারে। পরী বেশ ঘেমে যায় আর পিঠের দিকের শার্টের কাপড় গায়ের সাথে লেপ্টে যায়। পাতলা কাপড় ভিজে উঠে ভেতরের গাড় নীল অন্তর্বাসের ছবি ফুটে ওঠে। আসেপাশের লোকেদের নজর যেন পরীর চওড়া পিঠের ওপরে, নীল অন্তর্বাস দেখে ওকে চোখ দিয়েই যেন গিলে ফেলে। অভি ওর গলায় জড়ানো স্টোল পিঠের ওপরে ঢেকে দেয়।

বিরক্ত হয়ে ওঠে অভি, “তোমাকে কি এই শার্টটাই পরতে হতো?”

পরীঃ “কেন?”

অভিঃ “ঘামে তোমার পিঠ ভিজে গেছে, খেয়াল আছে?”

পরীঃ “তুমি কি আমাকে কিছু বলেছিলে যে তোমার কি পছন্দ? কিছুই তো বলোনি যখন আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম।”

অভিঃ “কেন, কাল রাতে তুমি বলেছিলে যে তুমি নাকি শাড়ি না হলে সালোয়ার পরে আসবে। এই বাসের মধ্যে শুরু হয়ে যেওনা যেন আবার।”

পরীঃ “বাহ রে, তুমি কিছু একটা পছন্দ করে দিতে পারতে, সেটাই পরতাম। সেবেলায় তো কিছু করোনি।”

অভি ওর কানে কানে বলে, “যাই হোক, তোমায় না সাদা ড্রেসে দারুন দেখাচ্ছে, জানো।”

পরীঃ “হয়েছে, যাই হোক ভালো লাগলো যে তুমি আমার পিঠ ঢেকে দিয়েছো।”

বসিরহাট পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গেল। মাথার ওপরে তপ্ত সূর্য ওদের যেন পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। বাসস্টান্ড থেকে রিক্সা নিয়ে বাড়ির দিকে যাত্রা করে। রিক্সা অনেক আমের কাঁঠালের বাগানের ভেতর দিয়ে চলতে শুরু করে। কোথাও দুপাশে সবুজ ধানের খেত। বাতাসে যেন আম কাঁঠালের তীব্র মাদকতাময় গন্ধ ছড়িয়ে। পরী তাঁর জন্মস্থানে প্রায় তিন মাস পরে ফিরছে। বাচ্চা মেয়ের মতন খিলখিল করে হেসে ওঠে বার বার, অভিকে বোঝায় কি করে কাঁচা আম আর সরষের তেল দিয়ে মাখিয়ে খেতে হয়।

অভি আদর করে বলে, “হ্যাঁ কাঁচা আম হয়তো খুব ভাল লাগবে খেতে, কিন্তু তোমার ঠোঁটের চেয়ে মিষ্টি নয়।” লাজুক হেসে ফেলে পরী অভির মুখে প্রেমের কথা শুনে।

দিদা ওদের জন্য উঠানে বসে অপেক্ষা করছিল। রিক্সা থামতেই পরী দৌড়ে গিয়ে দিদাকে জড়িয়ে ধরে। অনেক দিন পরে মা মেয়ের মিলন দেখে অভির মন খুশিতে ভরে ওঠে। অভি ব্যাগ হাতে নিয়ে গিয়ে দিদাকে প্রনাম করে। দিদা ওর মাথার চুল ধরে উঠিয়ে কপালে চুমু খায়। অভি দিদাকে জড়িয়ে ধরে।

দিদা হেসে বলেন, “এই ছাড় ছাড়, আমার বুড়ো হাড় ভেঙে যাবে যে। এখন কি আর তুই সেই ছোটো অভি আছিস নাকি যাকে কোলে করে আমি রাজা রানীর গল্প, পরীর গল্প, ভুত পেত্নির গল্প বলতাম।”

অভিঃ “তুমি সেই একই আছো দিদা। আজ রাতে আমাকে সাত ভাই চম্পার গল্প শুনাবে?”

পরী দিদাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিল তাই দিদা ওর মুখের অভিব্যক্তি দেখতে পারছিল না, পরী ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হেসে দেয়।

দিদা হেসে বলে, “ভেতরে আয় রে ছেলে। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নে। আমি এখন খাইনি তোদের জন্য বয়সে আছি। মেঘনা আর মৈথিলী না খেয়ে বসে। সুমন্ত মাঠে গেছে বিকেলে ফিরবে। বাকিরা অফিস থেকে বিকেলে ফিরবে।”

মৈথিলীর নাম শোনা মাত্রই অভির চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে, ওর কঠিন মুখ দেখে পরী বুঝতে পারে অভির বুকের উত্তাল ঝড়। চোখ টিপে ইশারায় জানায়, “চিন্তা কোরোনা, আমি আছি।”

পরীকে দেখে মেঘনা এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে। রান্না ঘরের দরজার ফাঁক থেকে মৈথিলী উঁকি মেরে ওদের দিকে তাকায়। পরী ওকে হাত নাড়িয়ে বাইরে ডাকে। অভির সাথে চোখাচুখি হয়ে যায় মৈথিলীর, লাল হয়ে ওঠে ওর কান, লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয় মৈথিলী। পরী একবার অভির দিকে তাকায় তারপরে মৈথিলীর দিকে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। আসেপাশের কেউ মৈথিলীর বা অভির মনের অবস্থা বুঝতে পারে না।

দুপুরে খাওয়ার সময়ে দিদার সাথে অনেক গল্প হয়, দিদা মায়ের কুশল মঙ্গল জিজ্ঞেস করেন। পরী বেড়ানোর কথা দিদাকে জানায়। সবাই পরীর মুখে বেড়ানোর গল্প শুনে অভিভূত হয়ে যায়।

খাওয়ার পরে অভি মেয়েদের গল্পে থাকেনা, মাঠের দিকে হাঁটা দেয়। দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত সবুজ ধানের খেত। আম কাঁঠালের বাগানের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে থাকে অভি। বাগানের শেষে পুকুর পাড়ের দিকে পা বাড়ায় অভি। পুকুরের এক কোনে অভির পোঁতা আমের গাছ। গাছের ওপরে তাকিয়ে দেখে যে আমের বোল ফুটেছে আর কাঁচা আম ঝুলছে গাছে। আম দেখে অভির খুব খেতে ইচ্ছে হয় তাই গাছে চেপে একটা কাঁচা আম ছিঁড়ে একটা ডালে বসে আম খেতে শুরু করে দেয়। আম গাছের ডালে বাঁদরের মতন ঝুলে থাকে কিছুক্ষণ। গ্রীষ্মের মৃদু বাতাসে অভির ঘুম পেয়ে যায়, গাছের ডালে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে অভি।

ঘুম ভাঙে দিদার ডাকে। অভি চোখ খুলে দিদার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে যে দিদা ওকে কি করে খুঁজে পেল। দিদা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “নাতির খবর দিদা জানবে না তো আর কে জানবে।” পশ্চিম আকাশে দিকে সূর্য ঢলে গেছে। দিদা ওকে বলে, “তুই এখানে থাকবি সেটা জানতাম, কিন্তু তুই যে বাঁদরের মতন গাছের ডালে ঝুলে ঘুমিয়ে পড়বি সেটা ভাবিনি। নেমে আয়, সন্ধ্যে হয়ে গেছে। বাড়ির সবাই তোকে খুঁজছে।”

অভি গাছ থেকে নেমে এসে দিদাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছো যে রাতে আমাকে গল্প বলবে। আমার সোনা দিদা।”

দিদাঃ “আমি বুড়ি হয়ে গেছি, চুল পেকে গেছে, দাঁত পড়ে গেছে, চোখে ছানি, আর তুই আমার সাথে মশকরা করছিস?”

অভিঃ “কে বলেছে তুমি বুড়ি হয়ে গেছো?”

দিদা আর অভি বাড়ির দিকে হাঁটা লাগায়, পেছনে পশ্চিম দিগন্তের আড়ালে সূর্যি ডোবে। পুব আকাশে ঘনিয়ে আসে রাতের অন্ধকার। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে গ্রামের আকাশে বাতাসে। দুরে কোথাও কোন বাড়ি থেকে শঙ্খের আওয়াজ শোনা যায়। গ্রামের কোন বধু তুলসি তলায় সন্ধ্যে প্রদিপ দিচ্ছে। বাতাসে ধুপ ধুনোর গন্ধ যেন, অভির মন আনমনা হয়ে যায়। দিদার সাথে পুজোর ঘরে গিয়ে দিদার পেছনে বসে যায়।

সন্ধ্যে প্রদিপ দেওয়ার পরে দিদা ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “ছোট্ট কুট্টি ছিলিস তুই, আর ঠিক এই রকম ভাবে সন্ধ্যে প্রদিপের সময়ে আমার পেছনে বসে থাকতিস। পুজো শেষ হলে তুই ছোটো ছোটো হাত বাড়িয়ে মিষ্টি আর প্রসাদ চাইতিস।”

অভি ডান হাত বাড়িয়ে দেয় দিদার দিকে, “আজ আমাকে প্রসাদ দেবে না দিদা?”

অভির মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের কোনে জল চলে আসে দিদার। ঠাকুরের থালা থেকে প্রসাদের মিষ্টি তুলে অভির মেলে ধরা হাতে দেয়।

প্রসাদ খেতে খেতে নিচে নেমে আসে অভি। শশাঙ্ক মামা, সুমন্ত মামা ফিরে এসেছেন নিজের নিজের কাজ থেকে। সুব্রতকে দেখা গেল না ওদের সাথে। বাড়ির বারান্দায় বসে সবাই মিলে গল্প শুরু করে দেয়। অভির মন থেকে থেকে পরীর খোঁজ করে, কিন্তু পরীর দেখা নেই।

কিছু পরে মেঘনা মুড়ি, সরষের তেল আর পেঁয়াজ নিয়ে আসে ওদের জন্য। শহরের লোক মুড়ির স্বাদ ভুলে গেছে, তারা বিকেলে চায়ের সাথে পাউরুটি খায় বা কেক খায়। অভির জিভে বাড়ির ভাজা মুড়ি যেন অমৃতের মতন মনে হয়। মুড়ি খেতে খেতে অভির মন আনন্দে ভরে ওঠে, কত কাল পরে মুড়ি খাচ্ছে অভি।

কোথা থেকে দুষ্টু দৌড়ে আসে ওকে দেখে। ছোটো দুষ্টু, অনেকদিন পরে ওর পরী পিসির সাথে দেখা হয়েছে। চোখে মুখে যেন হাজার প্রশ্ন নিয়ে অভির দিকে তাকিয়ে থাকে, শিশু হৃদয়।

দুষ্টুঃ “তোমাকে অভি কাকু বলে ডাকবো?”

শশাঙ্ক মামা ওর কথা শুনে হেসে ফেলে, দুষ্টুকে বলে যে অভি ওর কাকু নয় ওর দূর সম্পর্কের দাদা হয়। বিশ্বাস করে না দুষ্টু, দাদা কি এত বড় হয় নাকি?

দুষ্টুঃ “না, তোমরা মিথ্যে কথা বলছো আমাকে। দাদা কি এত বড় হয় নাকি? দাদার চোখে চশমা থাকে না। আর দাদা যদি হলো তাহলে পরী পিসিকে নাম ধরে ডাকে কেন?” ওর শিশু হৃদয়ের প্রশ্ন শুনে সবাই হেসে ফেলে। দুষ্টু অভিকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি গল্প জানো? ভুত পেত্নির গল্প, রাজা রানীর গল্প?”

অভিঃ “হ্যাঁ আমি অনেক গল্প জানি।”

দুষ্টুঃ “আজ রাতে আমায় গল্প বলবে?”

অভিঃ “নিশ্চয় বলবো, তবে তাঁর আগে তোকে স্কুলের পড়াশুনা শেষ করতে হবে, তাই তো।”

দুষ্টুঃ “ঠিক আছে, আমি পড়াশুনা করে নেই, তারপরে কিন্তু আমাকে গল্প শুনাতে হবে। শুয়ে পোড়োনা যেন।” বলেই ওর মায়ের কাছে দৌড়ে চলে গেল স্কুলের পড়াশুনা শেষ করতে।

অভি লক্ষ্য করলো যে বাড়ির মাঝে দেয়াল উঠে গেছে, সবার আলাদা আলাদা রান্না ঘর। দিদা সুমন্ত মামার সাথেই থাকেন। বাড়িতে লোকজন এলে তবে একসাথে খেতে বসা হয়, না হলে সবার উনুন আলাদা। অনেকদিন পরে সুমন্ত মামার স্ত্রীকে দেখতে পেল অভি। ভদ্রমহিলা খুব নরম হৃদয়ের মানুষ, বেশি লেখাপড়া করেননি তাই বিয়ের সময়ে তাঁর উপস্থিতি কম ছিল, আর সেই জন্য তার দিকে অভির নজর যায়নি। মামিকে দেখতে মা দুর্গার মতন, লাল পাড় সাদা শাড়ি আটপৌরে ভাবে পরে আছেন, কপালে বড় সিঁদুরের টিপ, সেই মাতৃময়ী মূর্তি বাড়ির সব বউমাদের থেকে আলাদা, যেন মন্দিরের দেবী।

অভি ছাদে উঠে গিয়ে একটা সিগারেট ধরায়। কিছু পরে পরী আর দুষ্টু ওর পেছনে এসে দাঁড়ায়। পরী ওর কাঁধে আলতো করে টোকা দেয়। ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখে দুষ্টুকে কোলে করে পরী ওর পেছনে দাঁড়িয়ে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হেসে ফেলে, চোখের ভাষায় জিজ্ঞেস করে, “আমাকে মিস করছিলে?” পরী ওকে বলে, “রাতে সবাই কিন্তু তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়। সবাইকে সকাল সকাল উঠতে হয় এখানে। সুমন্তদা ভোরবেলা মাঠে চলে যায়, আর বাড়ির বউমাদের বাড়ির কাজ থাকে। দেরি না করে ঠিক সময়ে নিচে খেতে চলে এসো।”
 
Chapter 8: দাবার 64 ছক। (#2)

দুষ্টু তাঁর শিশু সুলভ গলায় বলে, “তুমি আমাকে গল্প না বলে শুয়ে পোড়োনা কিন্তু?”

অভি ওদের কাছে গিয়ে দুষ্টুর মাথার চুলে বিলি কেটে পরীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আজ রাতে আমি তোকে একটা চোরের গল্প শুনাব, যে একটা সুন্দরী পরীকে চুরি করে পাহাড়ে পালিয়ে যায়।”

দুষ্টুঃ “এই রকম গল্প তো আগে শুনিনি, আমি তো শুধু রাজা রানীর গল্প শুনেছি।”

পরীর চোখে লাজুক হাসি, নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে, প্রেমের আবেগে দুচোখ চিকচিক করে ওঠে।

দুষ্টুর ছোট্ট নাকের ওপরে নাক ঘষে অভি ওকে বলে, “এটা একটা নতুন গল্প।” আর ঠিক সেই সময়ে দুষ্টুর চোখ এড়িয়ে পরী আলতো করে অভির গালে চুমু খেয়ে নেয়।

পরীঃ “সিগারেট শেষ করে নিচে নেমে এসো, খাবার বাড়া হয়ে গেছে মনে হয়।” পরী দুষ্টুকে কোলে করে নিচে নেমে যায়, অভি ওর পেছনে আসে।
নিচে নামার সময় অভি পরীকে জিজ্ঞেস করে, “আমি কোন ঘরে থাকব?”

পরী পেছনে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “তুমি রাতে আমার ঘরে শুয়ে পোড়ো, আমি রাতে মায়ের সাথে শুয়ে পড়বো।”

রাতের খাওয়ার সময়ে অভি লক্ষ্য করলো যে ডাইনিং টেবিলে ছেলেদের বসার জায়গা করা হয়েছে আর কাঁসার থালা, বাটিতে খাবার বাড়া হয়েছে। অভির মনে হলো, ডাইনিং টেবিলের সাথে কাঁসার থালা মানাচ্ছে না, দিদাকে অনুরোধ করে মাটির ওপরে পিঁড়ি পেতে বসতে দিতে। ওর কথা শুনে সবাই একটু অবাক হয়ে যায়।

শশাঙ্ক মামা ওকে বলে, “তুমি শহরে থাকো, তাও তুমি মাটির খুব কাছের মানুষ।”

মাটির ওপরে পিঁড়িতে বসে খাওয়া শুরু করে, অভির পাশে দিদা হাত পাখা নিয়ে বসে। আতিথেয়তা দেখে অভি আপ্লুত হয়ে ওঠে। দিদাকে জিজ্ঞেস করে, “এত ব্যাবস্থা কেন, আজ কি কোন উৎসব আছে বাড়িতে?”

দিদাঃ “আমার হারানো নাতি আমার কাছে ফিরে এসেছে, এর চেয়ে বড় উৎসব কি হতে পারে।”

বড় মামি আর পরী খাবার বেড়ে দিচ্ছিল, মেঘনা খাবার এগিয়ে দিচ্ছিল রান্না ঘর থেকে আর মৈথিলী রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল চুপ করে। অভিদের সাথে সুব্রতও খেতে বসেছিল কিন্তু এক কোনায়, খাবার সময়ে খুব চুপচাপ ছিল সুব্রত। পরী ওকে জানালো, পুকুরের মাছ, ক্ষেতের চাল আর ডাল, বাড়ির গরুর দুধ, যা খাবার তৈরি তাঁর বেশির ভাগ ওদের বাড়ির। জীবনের প্রথম বার অভির মনে হলো এই রকম ভাবে ওকে কোন আত্মীয় আদর করে খাইয়েছে।

খাবার পরে পরী ওকে নিজের ঘরে নিয়ে যায়। বিছানার ওপরে বসে পরীর কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নেয় অভি। পরী আদর করে ওর গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরে, মিষ্টি হেসে ওর মুখের দিকে তাকায়। অভি নিস্পলক চোখে ওর কাজল কালো চোখের পানে তাকিয়ে থাকে।

পরী ফিসফিস করে বলে, “আমাকে ছাড় এবারে, খেয়ে দেয়ে মায়ের সাথে শুতে যেতে হবে আমাকে।”

অভিঃ “একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে যাও আমাকে।”

পরী মৃদুকন্ঠে বলে, “আগে খেয়ে নেই তারপরে দেখব।”

আরও কাছে টেনে নেয় অভি, নাকে ভেসে আসে এক অজানা ঝাঁঝালো ঘ্রান। ভুরু কুঁচকে তাকায় পরীর দিকে। পরী ওর কানে কানে বলে, “আমার সাইকেল শুরু হয়েছে।”

অভিঃ “মানে? সেতো তিনদিন পরে হওয়ার কথা।”

পরী অবাক হয়ে যায় অভির কথা শুনে, মাথায় একটা গাঁট্টা মেরে জিজ্ঞেস করে, “শয়তান ছেলে, তুমি আবার ওইসব দিন গোনো নাকি?”

অভি পরীর নাকে নাক ঘষে দেয়, “তোমার নাড়ীর খবর যে আমাকে রাখতে হয় সোনা। যাই হোক বাড়ি ফিরে গায়নকোলজিস্ট দেখাতে হবে।”

অভি মাথা উঁচু করে পরীর ঠোঁটের দিকে ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যায়। পরীর ঠোঁট নিচে নেমে আসে, আলতো করে ছুঁয়ে যায় দু’জোড়া ঠোঁট। ঠিকভাবে চেপে ধরার আগেই দুষ্টু দৌড়ে ঘরে ঢুকে পড়ে আর ওদের ওপরে যেন একটা বাজ পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে দুজনে পৃথক হয়ে দাঁড়ায়।

দুষ্টু এক লাফে বিছানায় উঠে অভির বালিশের পাশে একটা বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়ে। খিলখিল করে হেসে অভিকে আব্দার করে বলে, “এবারে সেই চোর আর পরীর গল্প ব্লো।”

পরী অভির দিকে চোখ টিপে ইশারা করে, “নাও এবারে সামলাও, আমি চললাম।” দুষ্টুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, “অভি কাকুকে বেশি বিরক্ত করিস না কিন্তু।”

পরের দিন এগারোটা নাগাদ অভি বড় মামির রান্না ঘরে ঢোকে। বড় মামি একটা থালায় ভাত আর একটা বাটিতে ডাল বাড়ছিলেন। অভি মামকে জিজ্ঞেস করে যে কার জন্য খাবার নেওয়া হচ্ছে। সুমন্ত মামার জন্য মাঠে খাবার নিয়ে যেতে হয় মামিকে তাই মামি খাবার বাড়ছেন। অভি মামির সাথে মাঠে যাবার জন্য জেদ ধরে। মামি ওর কথা শুনে অবাক হয়ে বলেন যে এই দুপুর রোদে ও যেতে পারবে না।

অভিঃ “বুকে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা থাকলে, গ্রীষ্মের রোদ চাঁদের আলোর মতন মনে হয় মামি।”

মমতা ভরা হাসি নিয়ে বড় মামি বলেন, “তুমি সত্যি দুষ্টু ছেলে, চলো তাহলে।”

দিদা আর পরী ওকে জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছে, উত্তর দেয় অভি যে সুমন্ত মামার জন্য খাবার দিতে বড় মামির সাথে মাঠে যাচ্ছে। পরী একটু মাথা নাড়ায়, হে ভগবান, কি ছেলেরে বাবা।

যেতে যেতে অভি বড় মামিকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার কোন ছেলে পুলে নেই তাই না?”

ব্যাথিত হয়ে ওঠেন মামি, “হ্যাঁ, শারীরিক কিছু অসুবিধে আছে তাই।”

অভিঃ “সুব্রতর বিয়ের সময়ে তোমাকে দেখিনি কেন?”

বড় মামির চোখের কোনে চিকচিক করে ওঠে, “আমি গেঁয়ো চাষার বউ, তোমার ইন্দ্রানি মাসি বা চন্দ্রানি মাসির মতন বড়লোক নই আমি, আমার বর চাষা, শশাঙ্ক বা সুব্রতর মতন পড়াশুনা করতে পারেনি।”

অভি বড় মামিকে মাঠের মাঝে দাঁড় করিয়ে বলে, “কে বলেছে তুমি গরিব মানুষ? তুমি তো এ বাড়ির দেবী অন্নপূর্ণা। ছাড় ওসব কথা, মামার কাছে চলো।”

শাড়ির আঁচলে চোখের কোল মুছে অভির দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসেন বড় মামি। আরও কিছু দূর হাঁটার পরে অভি বড় মামিকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি পরীকে খুব ভালোবাসো তাই না।”

মাথা নাড়ায় বড় মামি, “হ্যাঁ, বাড়ির ছোটো মেয়ে, আর আমি আমার ছোটো বেলা ওর মধ্যে দেখতে পাই তাই।”

অভিঃ “পরী চলে গেছে বলে দুঃখ হয় তোমার?”

বড় মামিঃ “না দুঃখ বিশেষ হয় না, যখন ভাবি যে এই পাঁক থেকে বেরিয়ে গেছে তখন মন হাল্কা হয়ে যায়।”

অভিঃ “আমার বাড়ির দরজা তোমার জন্য সর্বদা খোলা, তুমি যখন চাইবে আমার বাড়িতে এসে পরীর সাথে দেখা করে যেও।”

বড় মামিঃ “পরীর জন্য মাঝে মাঝে দুঃখ হয়, সেই ছোটো বেলা থেকে ওর দিদিদের কাছে বকুনি খেয়ে বড় হয়েছে, তখন দুঃখ হয় এই ভেবে যে এই মেয়েটার কপালে আর কি আছে। বুকের মাঝে অনেক ব্যাথা লুকিয়ে রেখেছে পরী, ওর মিষ্টি হাসির পেছনে অনেক বেদনা লুকিয়ে আছে। এই প্রথম বার ওর মুখে এক শান্তির হাসি দেখছি, সেই ব্যাথা বেদনা যেন আর নেই ওর বুকে। জানিনা, কত দিন ওই হাসি, ওই আনন্দ পরীর সাথে থাকবে।”

অভিঃ “আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, আমি পরীর মুখের হাসি ম্লান হয়ে যেতে দেব না।”

বড় মামি কি বুঝলেন, জানেনা, তবে অভির দিকে তাকিয়ে সুন্দর হাসি দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বললেন, “আমার জন্য নয়, ওর জন্য যেন কথাটা মনে রেখো।”

ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে হেঁটে চলে অভি আর বড় মামি। কথায় কথায় বড় মামি, বাড়ির খবর জানান, ক্ষেতের আলু পটল চিনিয়ে দেন, আরও অনেক কিছু।

সেদিন বিকেলে, খাবার পরে দুষ্টু ওর কাছে দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করে যে অভি মাছ ধরতে জানে কিনা। অভি অবাক ওর কথা শুনে, মাথা নাড়ায় অভি, “না রে আমি কোনদিন মাছ ধরিনি।”

দুষ্টু একটু দুঃখ পায়, “ঠানু বললো যে তুমি নাকি ছোটো বেলায় সুব্রত কাকার সাথে পুকুরে গিয়ে মাছ ধরতে।”

অভিঃ “ঠিক আছে, একবার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।” দুষ্টু লাফিয়ে ওঠে আনন্দে, অভি কাকুর সাথে মাছ ধরতে যাবে।

পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে অভি দুষ্টুকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁরে আমাদের তো ছিপ নেই, কি করে মাছ ধরব?”

দুষ্টু দুষ্টু এদিক ওদিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “এখানে কেউ আসবে না এখন, আমরা পুকুরে নেমে মাছ ধরব।”

অভি হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, “ধুর বোকা ছেলে, জামা কাপড় ভিজে যাবে তো।”

দুষ্টু খিলখিল করে হেসে ওঠে, “না না, আমরা জামা কাপড় খুলে পুকুরে ঝাঁপ দেব।”

অভি আর দুষ্টু চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়, কেউ ওদের দেখছে না তো। তারপরে দুজনেই জামা কাপড় খুলে শুধু মাত্র জাঙ্গিয়া পরে দাঁড়িয়ে থাকে। দুজনেই দুজনকে দেখে হেসে ফেলে। অভি এক লাফে জলে ঝাঁপ দেয়। দুষ্টু আম গাছে চড়ে, একটা বাঁকা ডাল থেকে পুকুরে ঝাঁপ দেয়।

দুষ্টু অভিকে বলে, “তুমি পুকুর পাড় থেকে ঝাঁপ দিচ্ছো কেন? গাছের ডাল থেকে ঝাঁপ দাও আরও মজা লাগবে।”

অভিঃ “গাছের ডাল থেকে কি করে?”

দুষ্টু আবার আম গাছে চড়ে যায়, তারপরে ঝাঁপ লাগায়, বুকের কাছে হাঁটু ভাঁজ করে নিয়ে জলের মধ্যে ঝপাং করে পড়ে যায়। ওর দেখাদেখি অভিও গাছে উঠে ডাল ধরে ঝুলে জলে ঝাঁপ দেয়। পুকুরে নেমে বেশ কিছুক্ষণ ওরা খালি হাতে মাছ ধরার চেষ্টা করে, কিন্তু মাছ ওদের নাগালে আসে না, বার বার পিছলে পালিয়ে যায়।

দুষ্টু ওকে একটা উপায় বলে, “জামা দিয়ে একটা জাল বানিয়ে আমরা মাছ ধরলে কেমন হয়।”

অভি মাথা নাড়ায়, “ভালো হয়।”

জামায় গিঁট বেঁধে, জাল বানিয়ে অনেক চেষ্টা করার পরে একটা মাছ ওদের জামায় ধরা পড়ে। অভি মাছটাকে দুষ্টুর হাতে দেয়। জল থেকে বেরিয়ে মাছ খাবি খেতে থাকে, বারে বারে পিছলে যায় দুষ্টুর ছোটো ছোটো হাতের মুঠি থেকে। দুষ্টু আরও শক্ত করে ধরে থাকে মাছ।

কিছু পরে উদাস হয়ে মাছের দিকে তাকিয়ে বলে, “মাছটা বড় খাবি খাচ্ছে কাকা, জলে ছেড়ে দেই একে।” অভি ওর ভেজা চুলে আঁচড় কেটে বলে, “ছেড়ে দে।” দুষ্টু মাছটা জলের মধ্যে ছেড়ে দিতেই হাত ফস্কে মাছ সাঁতরে পালিয়ে যায়।

পুকুর পাড়ে বসে থাকে দুষ্টু আর অভি যতক্ষণ না ওদের জাঙ্গিয়া শোকায়। ওদিকে পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়েছে।

দুষ্টু শিশু সুলভ গলায় অভিকে জিজ্ঞেস করে, “পরী পিসিকে আমার কাছ থেকে কেন নিয়ে গেছো তুমি?”

অভি ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কে বলেছে যে আমি তোর পরী পিসিকে নিয়ে গেছি?”

দুষ্টুঃ “হ্যাঁ তো, তুমি নিয়ে গেছো তো। পরী পিসি এখন তোমার বাড়িতে থাকে যে।”

অভি হাসি থামাতে পারে না, “আমার বাড়িতে থাকে পরী পিসি, তাঁর মানে এই নয় যে আমি তোর পরী পিসিকে নিয়ে গেছি।”

দুষ্টু উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির মুখের দিকে, “বাঃ রে, তুমিই তো নিয়ে গেছ। এই দেখ না, সুব্রত কাকার সাথে মৈথিলী কাকি যেমন আমাদের বাড়িতে এসে থাকে, এখন এটাই তো কাকির বাড়ি, তাই না।”

অভি উত্তর দেবার ভাষা খুঁজে পায় না, এই নিষ্কলঙ্ক নিষ্পাপ শিশু হৃদয়কে কি বলে বুঝাবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top