What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (7 Viewers)

পায়েলের বাবা ডক্টর কমলেশ সান্যাল খুব বদরাগী প্রকৃতির লোক। পায়েলের মা সুজাতা, সেই তুলনায় অনেক নিরীহ আর রক্ষণশীল মহিলা। পায়েল অনেক বড় বয়স পর্যন্ত বাবা মাকে ঝগড়া করতে দেখেছে, এমনকি ওর বাবা ওর মায়ের গায়ে হাত তোলে, সেও দেখেছে। বাবাকে বাধা দিতে গেলে পায়েল অনেক বার মার খেয়েছে। কোন কারন ছাড়াই ওর বাবা ওর মাকে মারতো, তরকারিতে নুন হলেও মারতো, নুন না হলেও মারতো। টাকা পয়সা সব কিছুই ছিল, কিন্তু কেন ওর মাকে ওর বাবা প্রায়দিন মারধোর করতো সেই কারন ওর অজানা। একদিন পায়েল ওর মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ওর মা বলেছিল যে ওর বাবা বদরাগী, বাইরের কারুর কথা বলা, মেলা মেশা পছন্দ করে না, কোন কিছুতেই ভালো দেখে না। পায়েল স্কুলে পড়ার সময় থেকেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতো, বাড়ির চার দেয়ালের বাইরে উন্মুক্ত পৃথিবীতে বিচরন করার স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু ওর বাবার ভয়ে স্কুলে থাকতে কোনদিন সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি। কোন ছেলের সাথে কথা বলা দুরের কথা, কারুর দিকে তাকালেই ওর বাবা যেন ওকে গিলে ফেলবে এমন করতো। তাও পায়েল সেই সময়ে লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম করেছে। অচেনা ছোঁয়ার কিছু স্বাদ নিয়েছে। পায়েল ছোটবেলা থেকে মেয়েদের স্কুল, মহাদেবী বিড়লাতে দিদির সাথে পড়াশুনা করেছে। সেই সময় থেকেই দিদির আর পায়েলের চেনাজানা। কলেজে পড়ার সময়ে থেকে দিদি, অনুপমার সাথে পায়েলের বন্ধুত্ব প্রগাড় হয়ে ওঠে। দিদির খোলামেলা পোশাক আশাক দেখে পায়েল উন্মুক্ত আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখে। দিদির সাহায্যে পায়েল প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ পায়, প্রথম ডিস্কোথেকে যাওয়া, প্রথম কোন বড় রেস্টুরেন্টে খাওয়া, মন খুলে কেনাকাটা করা সব দিদির জন্য করে। পায়েলের এই খোলামেলা পোশাক, নধর গঠনের জন্য অনেক ছেলেরা ওকে কাছে পেতে চেয়েছে। পায়েল সেই সময়ে উড়তে উড়তে অনেকের কাছে ধরা দিয়েছে। পায়েল জানতো ওর বাবা যদি এই স্বভাবের কথা জানতে পারে তাহলে ওকে আস্ত রাখবে না, তাই পায়েলের বেশির ভাগ পোশাক দিদির আলমারিতে রেখে দিতো। কলেজে যাবার আগে ওদের বাড়িতে এসে পোশাক পালটে তবে দিদির সাথে কলেজ যেতো। বাধা অবস্থায় থাকতে থাকতে পায়েল হটাত করে মুক্তির স্বাদ পায় দিদির হাত ধরে, তাই পায়েল একটু বেশি রকমের উশৃঙ্খল হয়ে যায়। যদিও অঙ্কন ওর সব উশৃঙ্খলতার কথা জানে না, তবে জানে যে পায়েল মাঝে মাঝে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাড়িতে ফিরতো দিদির সাথে। সেদিন আর পায়েল নিজের বাড়িতে যেতো না, দিদি ওকে নিজের কাছে রেখে দিতো। এক পাড়ায় বাড়ি, তাই দিদির সাথে মেলামেশা করাতে ওর বাবা ওকে বিশেষ কিছু বলতো না। পায়েল বলেছিল যে কোনদিন যদি কাউকে ওর মনে ধরে তাহলে তার সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে যাবে আর ওর মাকে সাথে নিয়ে যাবে। বাড়ির ওই লোহার খাঁচা থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিল কিন্তু ওর অদৃষ্টে মনের মতন মানুষ জুটল না। সবাই ওকে শুধু ভোগের বস্তু হিসাবে ব্যবহার করে গেছে।

দেবায়ন চুপ করে অঙ্কনের কথা শুনে যায়। পায়েলের এই কাহিনী অনুপমা ওকে আগেই বলেছিল। অঙ্কনের মুখে সব শুনে একটু দমে যায়, অঙ্কন কি জানে যে ওর দিদির সাথে আর দেবায়নের সাথে পায়েলের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে? অঙ্কনের কথা শুনে মনে হলো, পায়েল এই ঘটনা লুকিয়ে রেখেছে অঙ্কনের কাছ থেকে। দেবায়ন অগ্নিহোত্রীর কথা জিজ্ঞেস করে।

অঙ্কন অগ্নিহোত্রীর কথা বলতে শুরু করে। পায়েল যত বড় হয়েছে, ওর দেহের গঠন তত সুন্দর আর লাস্যময়ী হয়ে উঠেছে। ওর পিসির বাড়ি নৈহাটি, পায়েলের যেতে ইচ্ছে করে না ওর পিসতুতো দাদার জন্য কিন্তু বাবার জন্য যেতে হয় পিসির বাড়িতে। ওর পিসতুতো দাদার কুনজর ছিল পায়েলের উপরে। পিসির বাড়িতে গেলে ওর পিসতুতো দাদা, বিনয়, কোন অছিলায় পায়েলের গায়ে হাত দিতো, মাঝে মাঝে ওর বুকে পাছায় হাত দিতো। আগে পায়েল কিছু বলতো না, কিন্তু পরের দিকে পায়েলের এই সব ভালো লাগতো না। পায়েল এই সব কথা কাউকে জানায়নি। এমনকি ওর পিসতুতো দাদা ওকে একদিন একা বাড়িতে পেয়ে চুমু খেয়ে, স্তন টিপে পাছা টিপে আদর করেছিল। রাগে দুঃখে পায়েল কেঁদেছিল সারারাত, কিন্তু কাউকে বলতে পারেনি।

দিদি আর দেবায়ন গরমের ছুটিতে মুসৌরি ভ্রমনে যায়। পায়েলের বাবা, ওকে কয়েক দিনের জন্য ওর পিসির বাড়ি নৈহাটিতে রেখে আসে। পায়েল প্রমাদ গোনে, বুঝতে পারে যে ওর দাদার হাতে ওর ধর্ষণ হওয়া ছাড়া আর কোন গতি নেই। পায়েল এক মতলব আঁটে তখন, বিনয়ের বন্ধু অগ্নিহোত্রীর সাথে প্রেমের নাটক করে। পায়েল ভেবেছিল যে দুই বন্ধুর ভেতরে দ্বন্দ লাগিয়ে দেবে আর এইভাবে ও বিনয়ের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে আর যদি অগ্নিহোত্রীকে ভালো লেগে যায় তাহলে অগ্নিহোত্রীর সাথে পালিয়ে যাবে। নারীর লাস্যময়ী রুপ সব কিছু করতে পারে, সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়েছিল। অগ্নিহোত্রীর সাথে বিনয়ের মনোমালিন্য ঘটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল পায়েল। পায়েল অগ্নিহোত্রীকে নিজের প্রেমের জালে জড়িয়ে নিয়েছিল। কোলকাতা ফিরে আসার পরে, অগ্নিহোত্রীর সাথে বেশ কয়েকবার দেখা হয়।

দেবায়ন মন দিয়ে অঙ্কনের কাছে এই কাহিনী শুনতে শুনতে জিজ্ঞেস করে পায়েলের ব্যাপারে এতো কিছু জানলো কি করে? অঙ্কন বলে যে পরে এই সব ঘটনা এক এক করে পায়েল ওকে জানিয়েছে। অগ্নিহোত্রীর সাথে প্রেমের কথা পায়েল ওর দিদিকে কিছুটা বলেছিল কিন্তু সম্পূর্ণ বলেনি। পায়েল আর অঙ্কনের মাঝে আগে থেকেই একটু হৃদ্যতা ছিল কিন্তু প্রেম প্রীতি পর্যায় ছিল না। মাঝে মাঝেই দুইজনে ফোনে বেশ গল্প করতো। সেই গল্পের আওয়াজ একদিন ওর দিদি শুনে ফেলেছিল আর সেই নিয়ে প্রশ্ন করেছিল। তখন সেই কথা ঢাকার জন্য গরিমার নাম নেয় অঙ্কন। দেবায়নের কাছে এবারে চিত্র বেশ পরিষ্কার হতে শুরু করে।

প্রথম যেদিন অঙ্কন পায়েলকে ফোন করেছিল তখন পায়েলের সাথে অগ্নিহোত্রীর দেখা হয়নি। একদিন রাতে সাহস জুগিয়ে দিদির ফোন থেকে পায়েলের ফোন নাম্বার নিয়ে পায়েলকে ফোন করেছিল। কাঁপা গলার আওয়াজ শুনে পায়েল রেগে নাম জিজ্ঞেস করেছিল। অঙ্কন ভয় পেয়ে ফোন কেটে দিয়েছিল। কিছু পরে আবার ফোন করেছিল অঙ্কন, তখন কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করেছিল কেমন আছে পায়েল। পায়েল দ্বিতীয় বার ফোন পেয়ে আরও রেগে যায়, অঙ্কন নিজের পরিচয় দিতে দ্বিধা বোধ করে আবার ফোন কেটে দেয়। রাতে ঘুমাতে পারেনা অঙ্কন, বারে বারে শুধু পায়েলের মুখ ভেসে ওঠে ওর চোখের সামনে। অনেক রাতে ওর ফোনে ফোন আসে পায়েলের। এবারে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে অঙ্কন উত্তর দেয়, “আমি মানে তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাইছিলাম, পায়েলদি।”
“পায়েল দি” শুনে পায়েল হেসে ফেলে, “হি হি, তুই? আমি ভাবছিলাম কে না কে আমাকে এতো রাতে ফোন করে জ্বালাতন করছে। হটাত করে ফোন করলি? ঘুম আসছে না তোর?”

অঙ্কন পায়েলের হাসির কলতান শুনে খুশি হয়ে বলে, “না গো পায়েলদি, একদম ঘুম আসছে না।”

পায়েলঃ “কেন আসছে না? গার্ল ফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ছে?”

অঙ্কনঃ “হ্যাঁ বটে আবার না বটে। ঠিক জানিনা কেন ঘুম আসছে না, তবে মনে হলো তোমার সাথে একটু কথা বলি।”

পায়েলঃ “বাঃবা এতো রাতে ছেলের প্রেম জেগেছে নাকি? তোর দিদি জানতে পারলে কিন্তু ছাল ছাড়িয়ে দেবে।”

অঙ্কনঃ “আমার ঘরের দরজা সবসময়ে বন্ধ থাকে। দিদি এতো রাতে দেবায়নদার সাথে হয়তো আড্ডা মারছে, আমার কথা শুনতেই পাবে না।”

পায়েলঃ “তোর স্কুল কেমন চলছে? সামনে পরীক্ষা, পড়াশুনা করছিস ঠিক ভাবে?”

অঙ্কনঃ“যা বাবা, তুমি দেখি আমার পড়াশুনা নিয়ে বসে গেলে। দিদির মতন কথা বলতে শুরু করে দিলে দেখি। আমি ভাবলাম একটু গল্প করবো।”

পায়েল হেসে বলেছিল, “আচ্ছা বাবা, বল কি বলতে চাস।”

অঙ্কন তোতলায় একটু, কি বলবে ঠিক ভেবে পায় না। ওর মনের মাধুরী যাকে দূর থেকে দেখে এসেছে, ফোনে তার গলার আওয়াজ বড় মধুর শোনায়। অঙ্কনকে চুপ থাকতে দেখে পায়েল নিজেই বলে, “তোর স্কুলের বান্ধবীদের কথা বল না হয়।”

অঙ্কনঃ “না গো পায়েলদি, সেইরকম কোন মনের মতন গার্ল ফ্রেন্ড খুঁজে পেলাম না।”

পায়েল খেলায় অঙ্কনকে, “কেমন গার্ল ফ্রেন্ড পছন্দ তোর?”

অঙ্কন মন বলতে শুরু করে “তোমার মতন সুন্দরী আর সেক্সি গার্ল ফ্রেন্ড পছন্দ আমার। তোমাকে আমার চাই।” সেই কথা গলা পর্যন্ত এসেছিল কিন্তু ঠোঁটে আনতে পারেনি অঙ্কন। তার বদলে বলে, “এই একটু বেশ সুন্দরী হবে। স্কুলে সবাই যেন আমার উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সবার নজর আমার টাকা উড়ানো আর দামী দামী গিফট পাওয়ার প্রতি। ঠিক মনের মতন কাউকে পাচ্ছি না।”

পায়েলঃ “আচ্ছা বাবা, একদিন দেখিস তোর মনের মতন কাউকে পেয়ে যাবি।”

অঙ্কন মনমরা হয়ে বলে, “জানিনা, তার সাথে দেখা হলে মুখ ফুটে বলতে পারবো কি না?”

পায়েলঃ “কেন, কেন? এমন কে সে যে তাকে তুই মুখ ফুটে বলতে পারবি না?”

অঙ্কনঃ “না মানে, এখন দেখা পাইনি সেই রকম কাউকে তবে জানি না। ছাড়ো ওই সব, তোমার কথা বল।”

পায়েল হেসে দেয় অঙ্কনের আব্দার শুনে, “আমার কথা কি বলবো তোকে? তুই কি আমার বন্ধু নাকি?”

অঙ্কন একটু আহত হয় পায়েলের কথায়, “তা যখন বলতে চাইছো না তাহলে ফোন রাখছি।”

পায়েল হেসে বলে, “বাপ রে ছেলের অভিমান কত। ফোন রাখলে কিন্তু কালকে বাড়ি গিয়ে নাক ফাটিয়ে দেবো।”

অঙ্কনঃ “তাহলে শুনি তোমার বয় ফ্রেন্ডের কথা।”
 
অঙ্কন বিছানায় উঠে বসে, পায়েলের সাথে কথা বলতে বলতে ওর প্যান্টের ভেতরে লিঙ্গ টানটান হয়ে যায়। পায়েলের সাথে গল্প করতে করতে, মানস চক্ষে পায়েলের নধরকান্তি দেহ পল্লবের কথা চিন্তা করে অঙ্কন। ওর দিদির এ্যালবাম থেকে বেশ কয়েক দিন আগে লুকিয়ে আনা পায়েলের একটা ফটো দেখে রোজ রাতে বিনিদ্র রজনী কাটাতো অঙ্কন। রোজ রাতে ভাবতো নিজের প্রেয়সী হিসাবে। পায়েল মাঝে মাঝে ওদের বাড়িতে থাকলে ছোটো হাফ প্যান্ট আর হাত কাটা টপ পরে থাকতো। পায়েলের নধর কোমল পাছার দুলুনি দেখে থাকতে পারতো না অঙ্কন। রাতে কোনদিন ব্রা পরতো না পায়েল, হাঁটা চলার সময়ে স্তনের দুলুনির সাথে নধর গোলগাল পাছার দুলুনি দেখে উন্মাদ হয়ে যেতো। নিজের রুমের নিভৃতে একাকী পায়েলের নধর লাস্যময়ী অঙ্গ মানস চক্ষে উলঙ্গ করে আত্ম রতিতে রত হতো অঙ্কন।

সেই শুরু ওদের কথা কাহিনীর, তবে শুধু ফোনে কথা বলা ছাড়া এগোতে পারেনি অঙ্কন। পায়েল জানতো যে অঙ্কনের সাথে ওর প্রেমের সম্পর্ক কোনদিন সম্ভব নয়, তাই পায়েল ইচ্ছে থাকলেও কোনদিন নিজের মনের কথা বলেনি। এর মাঝে একদিন রাতে গল্প করতে করতে পায়েল ওকে অগ্নিহোত্রীর কথা জানায়। সেদিন বেশ দুঃখ পেয়েছিল অঙ্কন, মনের মধ্যে জমা আগুন ফেটে বের হবার যোগাড় হয়েছিল। ঈর্ষা বোধ করেছিল ওই না দেখা অগ্নিহোত্রীর উপরে। সেদিনের পরে বেশ কয়েকদিন অঙ্কন আর পায়েলের সাথে অভিমান করে কথা বলেনি। তবে পায়েলের সাথে বেশ কয়েকদিন পরে আবার কথা শুরু হয়। অঙ্কন ক্ষমা চেয়ে নেয় আর পায়েল হেসে সেই সব কথা ভুলে যায়। পায়েল তখন অগ্নিহোত্রীর প্রেমে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। অঙ্কন শুধু ওদের প্রেমের গল্প শুনে যেতো চুপ করে, বুক জ্বলে গেলেও কিছু বলতে পারতো না।

দেবায়ন অঙ্কনের কথা শুনে হেসে ফেলে বলে, পায়েলের মতন মেয়েকে দেখলে মরা সাপ পর্যন্ত ফনা তুলে দাঁড়িয়ে যাবে। অঙ্কন সেই কথা শুনে হেসে দেয়। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে কি করে তাহলে অগ্নিহোত্রীর কবল থেকে পায়েলকে ছাড়িয়ে নিজের করে নিল।

অঙ্কন পরবর্তী ঘটনা বলতে শুরু করে। অগ্নিহোত্রী প্রচন্ড ইতর প্রকৃতির ছেলে, আসলে অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের মনোমালিন্য কোনদিন ঘটেনি। অগ্নিহোত্রী পায়েলকে ফাঁসানোর জন্য নাটক করেছিল। বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর মতলব আসলে অন্যকিছু ছিল, যেটা পায়েল ঠিক মতন জানে না। অগ্নিহোত্রী ওকে জানায় যে ডালহৌসিতে কোন এক্সপোর্ট কোম্পানিতে চাকরি করে। বেশ কিছুদিন অগ্নিহোত্রী পায়েলের সাথে বি.বা.দি বাগে দেখা করে। সঙ্গিতাদি পায়েলকে সাবধান করার পরে, পায়েল একবার অগ্নিহোত্রীর অফিস দেখতে চায়। আসলে বিনয়ের এক বন্ধু ডালহৌসিতে চাকরি করতো, সেই অফিস দেখিয়ে অগ্নিহোত্রী বলে যে ওখানে চাকরি করে। পায়েল খুব খুশি হয়, একদিন পায়েল অগ্নিহোত্রীকে ওর বাড়ির কথা, বাবার কথা সব জানিয়ে বলে যে ওকে বিয়ে করতে হলে পালিয়ে বিয়ে করতে হবে। অন্ধ হয়ে গিয়েছিল পায়েল, দেখতে পায়নি অগ্নিহোত্রীর আসল চেহারা।

অগ্নিহোত্রী ওকে জানায় যে পায়েলকে নিয়ে পালিয়ে যেতে রাজি আছে। পায়েল বেশ খুশি, বাড়ি থেকে পালাবে। যেদিন পায়েল পালাবে, তার আগের দিন রাতে অঙ্কনের সাথে অনেক গল্প করে। অঙ্কনকে জানিয়েছিল যে পায়েল পালাবে। সেদিন অঙ্কন নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি। ফোন ছেড়ে খুব কেঁদেছিল পায়েলের জন্য। সকালেই কলেজের নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। দিদির সাথেই বেরিয়েছিল পায়েল কিন্তু মাঝপথে নেমে যায়। গাড়ি কলেজে চলে যাবার পরে পায়েল অগ্নিহোত্রীকে ফোনে জানিয়ে দেয় যে পালানোর জন্য তৈরি। অগ্নিহোত্রী জিজ্ঞেস করে যে পায়েল বাড়ি থেকে কিছু নিয়ে এসেছে না খালি হাতে বেরিয়ে পড়েছে। পায়েল অত শত ভাবেনি। অগ্নিহোত্রীর সাথে পালাবার খুশিতে শুধুমাত্র কয়েকটা জামাকাপড় আর কলেজের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল। অগ্নিহোত্রী পায়েলকে শিয়ালদা স্টেসানের ওভারব্রিজের নিচে দাঁড়াতে বলে। পায়েল ওর কথা মতন ওভারব্রিজের নিচে অগ্নিহোত্রীর জন্য অপেক্ষা করে। বেশ কিছুক্ষণ পরে অগ্নিহোত্রী ওর সাথে দেখা করে, পায়েল ওকে দেখে বেশ খুশি। বুক ভরে শ্বাস নেয়, মুক্তির স্বাদ, স্বাধীনতার বাতাস, কে জানতো ওর কপালে কি অদৃষ্ট অপেক্ষা করছে। পায়েল আর অগ্নিহোত্রী রাজাবাজারের দিকে হাঁটতে শুরু করে। অগ্নিহোত্রীকে জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দেয় যে ওরা বম্বে পালিয়ে যাবে আর সেখানে অগ্নিহোত্রীর কোন এক বন্ধু আছে সে ওকে একটা কাজ দেবে। রাজাবাজারে আসার পরে অগ্নিহোত্রী পায়েলকে একটা গাড়িতে উঠতে বলে। গাড়ি দেখে পায়েলের সন্দেহ হয়, সেই সাথে অদুরে দাঁড়িয়ে থাকা বিনয় আর তার সাথে বেশ কয়েকটা ছেলেকে দেখতে পায় পায়েল। রাগে দুঃখে অপমানে পায়েলের চোখ ফেটে জল চলে আসে, অগ্নিহোত্রীর মুখোশ ছিঁড়ে কুটি কুটি হয়ে যায় পায়েলের সামনে। রাজাবাজার মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে পায়েলকে জোর করে গাড়িতে তুলতে পারে না অগ্নিহোত্রী। পায়েল অগ্নিহোত্রীর গালে সপাটে এক চড় কষিয়ে বলে প্রতারক, নীচ। দিদির কথা, সঙ্গিতাদির কথা ওর অনেক আগেই শোনা উচিত ছিল।

অঙ্কন সেদিন স্কুলে যায়নি। সকালে স্কুল যাবার নাম করে মাঠের একপাশে লুকিয়ে ছিল। পায়েল আর দিদি বাড়ি থেকে বের হবার পরেই একটা ট্যাক্সি নিয়ে ওদের গাড়ির পেছনে অনুসরণ করে। মাঝ পথে পায়েল নেমে যেতেই, ট্যাক্সি দুরে দাঁড় করায় অঙ্কন। ট্যাক্সি ড্রাইভার হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল তার কারন। অঙ্কনের মাথায় শুধু শেষ বারের মতন পায়েলকে দেখার আকাঙ্ক্ষা প্রবল ভাবে জেগে উঠেছিল। ড্রাইভারকে বলে যে যত টাকা লাগে দেবে কিন্তু ওকে অপেক্ষা করতে হবে একটু। ড্রাইভার দাঁড়িয়ে থাকে, কিছু পরে পায়েল আরেকটা ট্যাক্সি চেপে শিয়ালদা চলে আসে। অঙ্কন ওর পেছন পেছন শিয়ালদা আসে। ট্যাক্সি থেকে নেমে পায়েল হারিয়ে যায় ভিড়ে, অঙ্কন পাগল হয়ে যায় পায়েলকে দেখতে না পেয়ে। একবার ভাবে যে পায়েলকে একটা ফোন করে বলে দেয় ওর মনের কথা, কিন্তু যদি পায়েল ওর প্রেম নিবেদন নাকচ করে দেয় তাহলে, সেই ভয়ে ফোন করে না। কিছু পরে দেখে একটা ছেলের সাথে পায়েল রাজাবাজারের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। দূর থেকে পায়েলকে অনুসরণ করে সব দেখে।
অগ্নিহোত্রীকে চড় মারার পরে কাঁদতে কাঁদতে পায়েল রাস্তা পার করে, ঠিক তখন অঙ্কন ট্যাক্সি নিয়ে ওখানে পৌঁছে যায়। অঙ্কনকে দেখে পায়েল ভেঙে পড়ে। ট্যাক্সিতে উঠে অঙ্কনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে পায়েল।

অঙ্কন পায়েলকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আই লাভ ইউ পায়েলদি, আমি তোমাকে বড় ভালোবাসি পায়েলদি।”

পায়েল জল ভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “জানতাম অনেকদিন ধরে, যে তুই আমাকে ভালবাসিস। দুইজনে অন্ধ ছিলাম। তুই যার ভয়ে আমাকে বলিসনি সেই এক ভয়ে আমিও তোকে বলিনি কোনদিন।”

অঙ্কন পায়েলকে জড়িয়ে ধরে বলে, “না গো পায়েলদি, আমি অন্ধ নই, আমি অনেকদিন ধরে তোমাকে দেখে এসেছি। আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি শুধু বলতে পারিনি দিদির ভয়ে আর তোমার ভয়ে। যদি নিবেদন করতাম আর তুমি যদি নাকচ করে দাও তাহলে সেই ধাক্কা হয়তো সহ্য করতে পারতাম না। সেই কারনে আর মুখ ফুটে বলতে পারলাম না তোমাকে।”

পায়েল নিজেকে ছাড়ানোর কোন চেষ্টা করেনি। অঙ্কনের আনকোরা আলিঙ্গনে নিজেকে সঁপে দিয়েছিল। বড় লোকের ছেলে অঙ্কন, উপহার পাওয়ার লোভে অনেক মেয়েরাই ওর কাছে এসেছে। স্কুলে থাকতে বেশ কয়েক জন মেয়ের সাথে ছোটো খাটো শরীর নিয়ে খেলা, টপের উপর দিয়ে স্তনে আদর করা, চুমু খাওয়া এই সব করা হয়ে গেছে অঙ্কনের। কিন্তু যাকে ভালোবাসে, যাকে বুকে পেতে এতদিন ইচ্ছুক ছিল তাকে শেষ পর্যন্ত জড়িয়ে ধরে অঙ্কনের শরীরে বিদ্যুতের ঝটকা লাগে। নরম তুলতুলে শরীর ওর শক্ত আলিঙ্গনের মাঝে গলে যায়। পায়েল ওর জামার কলার ধরে ওর মুখের দিয়ে চেয়ে থাকে আর দুই জনের উষ্ণ শ্বাস পরস্পরের মুখ মন্ডলে ভালোবাসার প্রলেপ ছড়িয়ে দেয়।

পায়েল গভীর ভাবে অঙ্কনের হাসি হাসি চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, “শেষ পর্যন্ত যা ভয় করছিলাম সেটাই হলো। আমি শেষ পর্যন্ত আমার প্রানপ্রিয় বান্ধবীর ভাইয়ের প্রেমে পড়লাম।” দুইজনেই হেসে ফেলে।

ট্যাক্সি ড্রাইভার জিজ্ঞেস করে কোথায় যেতে চায়। পায়েল আর অঙ্কন পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বলে শিবপুর বোটানিকাল গার্ডেন যেতে চায়। ট্যাক্সি ড্রাইভার হেসে জিজ্ঞেস করে যে এতক্ষণ ধরে ট্যাক্সি ধরে রেখেছে, ভাড়া দেবার মতন টাকা ওদের আছে? অঙ্কন হাত খরচের জন্য অনেক টাকা পায়, শেষ হয়ে গেলে ওর ব্যাঙ্ক ওর দিদির পার্স আছেই। টাকার কথা চিন্তা করতে বারন করে দেয় অঙ্কন, ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলে যে, শিবপুরে গিয়ে ওরা ভাড়া মিটিয়ে ট্যাক্সি ছেড়ে দেবে।

ট্যাক্সি চলতে শুরু করে। পায়েলকে জড়িয়ে ধরে অঙ্কন বলে, “আর কোনদিন পালাবার মতলব করবে না, তাহলে আমি মারা যাবো।”

পায়েল ম্লান হেসে বলে, “উভয় সঙ্কটে পড়েছিরে। যদি তোর দিদি জানতে পারে, তাহলে আমাদের অবস্থা সঙ্গিন করে তুলবে। আর যদি পালাই তাহলে দেবায়ন যা ছেলে, মাটির নীচ থেকে আমাদের খুঁজে বের করে নিয়ে আসবে। কিন্তু আমাকে পালাতে হবেই, মাকে ওই নরক থেকে বের করে আনতে হবে।” পায়েল জানে, অনুপমা আর দেবায়ন মিলে সূর্য আর মনিদিপার কি অবস্থা করেছিল। দুইজনের অনেক বুদ্ধি আর সেই সাথে দেবায়নের সাথে পেরে ওঠা অসম্ভব। অঙ্কন চিন্তায় পড়ে যায়। পায়েল ওকে ছোটো ভাইয়ের মতন জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই এতো চিন্তা করিস না। কাউকে জানাবো না এখুনি আমাদের ব্যাপার। আমার পালানো এখন ক্যান্সেল। বি.এস.সি.র পরে আমি পড়াশুনা চালিয়ে যাবো যতদিন না তোর পড়াশুনা শেষ হয়। আমার পড়াশুনা চলাকালীন আশা করি আমার বাবা আমাকে বিয়ে দেবে না আর যদি জোর করে দেয় তাহলে তখন না হয় তোর দিদির আর দেবায়নের শরণাপন্ন হওয়া যাবে। তুই কলেজ শেষ কর, ততদিনে তোর দিদি আর দেবায়নকে কিছু বুঝিয়ে রাজি করানো যাবে। এবার থেকে আমি আর বিশেষ তোর বাড়িতে যাবো না, গেলেও আমরা খুব সাধারন ব্যবহার করবো যাতে কারুর সন্দেহ না হয়। যা কিছু করার বাড়ির বাইরে।”

অঙ্কন হেসে বলে, “জানো পায়েলদি, বড় কাউকে প্রেম করে মজা আছে। নিজেকে বিশেষ চিন্তা ভাবনা করতে হয় না, বেশির ভাগ চিন্তা ভাবনা সেই করে। বেশ মিষ্টি আদর খাওয়া যায়।”

পায়েল ওর গালে ছোট্ট থাপ্পড় মেরে বলে, “ফাজিল ছেলে, শুধু আম খেলে কাজে দেবে? গাছে একটু জল দেওয়া চাই তো।”

সেদিন আর স্কুল যাওয়া হলোনা অঙ্কনের। পায়েলের মুখের হাসি দেখে সব ভুলে গেল অঙ্কন। দুইজনে ট্যাক্সি চেপে বোটানিক্যাল গার্ডেন পৌঁছায় ঠিক দুপুরের দিকে। সারাটা রাস্তা দুইজনে হাত ধরে পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে, যেন হারিয়ে যাওয়া মানিক খুঁজে পেয়েছে দুইজনে। বয়সের ব্যাবধান, পারিবারিক অসমানতা কাটিয়ে দুইজনে হারিয়ে যায়। বুকের ভেতরে দুরু দুরু, ওদের সব থেকে কাছের মানুষ, দিদি যদি জানতে পারে তাহলে তার মনের অবস্থা কি হবে।

গল্প করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায়। অঙ্কন মিচকি হেসে চুপ করে বলে, ব্যাস এই শুরু ওদের প্রেমের। দেবায়ন মানতে রাজি নয়, আরও জানতে চায় কি হয়েছে। কবে প্রথম চুমু খেয়েছে পায়েলকে, শুধু চুম্বনে ক্ষান্ত ছিল না আরো কিছু হয়েছে পায়েল আর অঙ্কনের মাঝে। সেই কথা শুনে অঙ্কনের কান লাল হয়ে যায় লজ্জায়, মাথা নিচু করে পারলে বিছানার কোথাও লুকিয়ে যাবার চেষ্টা করে। দেবায়ন চেপে ধরে অঙ্কনকে, কারন দেবায়ন ভালো ভাবে জানে যে পায়েল কামুকি প্রকৃতির মেয়ে কিন্তু কয়েক মাস ধরে পায়েলের চরিত্রের যে পরিবর্তন ঘটেছে তাতে অত তাড়াতাড়ি নিশ্চয় পায়েল ধরা দেয়নি অঙ্কনের কাছে। আর অঙ্কনের প্রথম অভিজ্ঞতা জানতে বড় ইচ্ছুক দেবায়ন। অঙ্কন লজ্জায় পড়ে জানিয়ে দেয় যে আর কিছু হয়নি, শুধুমাত্র গল্প করতো। বার কয়েক কোচিং পালিয়ে সিনেমা দেখতে গেছিল কিন্তু কোচিংয়ের স্যার বাড়িতে ফোন করে মাকে সব জানিয়ে দেওয়াতে সব পরিকল্পনা মাটি হয়ে যায়। তারপরে একদিন বাইকের জন্য বায়না ধরে। দিদির সাহায্যে শেষ পর্যন্ত বাইক কিনে দেয় ওর বাবা। বাইকে করে প্রতি শনি রবিবার কোলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছে। একবার ব্যান্ডেল চার্চ পর্যন্ত গিয়েছিল ওরা দুইজনে।

দেবায়ন কিছুতেই মানতে রাজি নয় যে অঙ্কন পায়েলকে চুমু পর্যন্ত খায়নি। লাজুক অঙ্কন কি বলবে ভেবে পায় না। দিদির বন্ধু হিসাবে বরাবর দেবায়নকে খুব সমিহ করে চলে আর বলতে গেলে একটু ভয় পায় ওর চেহারা আর গলার আওয়াজের জন্য। দেবায়ন অভয় দিয়ে বলে যে সব কথা না জানালে ও কিছু করতে পারবে না। অগত্যা অঙ্কন ওর প্রেমের অভিজ্ঞতার খাতা খুলতে শুরু করে।
 
সেদিন বোটানিকাল গার্ডেনে যখন ওরা দুই জনে নামলো ট্যাক্সি থেকে, তখন অঙ্কনের খুব লজ্জা করছিল। কাঁধে স্কুল ব্যাগ আর পরনে স্কুল ড্রেস, পাশে পায়েল। পাঁচ বছরের বয়সের ব্যবধান ওর চেহারার প্রতি বাঁকে আঁকা, খুব লজ্জা করছিল পায়েলের পাশে হাঁটার। মনে হচ্ছিল যেন এক দিদি তার ভাইকে নিয়ে গাছ পালা দেখাতে এসেছে। পায়েল দুই হাতে ওর হাত ধরেছিল। বাজুর কাছে পায়েলের নরম স্তনের ছোঁয়ায় শরীর গরম হয়ে গেছিল অঙ্কনের। পায়েল ওকে যতবার স্বাভাবিক হতে বলে ততো যেন আড়ষ্ট হয়ে ওঠে অঙ্কন। পায়েল রেগে বলে যে এইরকম ভাবে হাঁটলে কিন্তু ও চলে যাবে। প্রথম দিনেই পায়েলকে বাঁচিয়ে নিয়ে প্রেমে পড়ে যদি হাত ছাড়া হয়ে যায় কি করবে অঙ্কন। শেষ পর্যন্ত ভয়ে ভয়ে হাতে হাত রাখে, আঙ্গুলের সাথে আঙুল পেঁচিয়ে যায়। অঙ্কনের দেহের প্রত্যেক রোমকুপ জেগে ওঠে। এতদিন কত মেয়ের সান্নিধ্য পেয়েছে তবে ঠিক এমনটি কোনদিন মনে হয়নি অঙ্কনের।
হাঁটতে হাঁটতে নদীর ধারে চলে আসে দুইজনে। বড় বড় ঘাসের আড়ালে নদীর দিকে একটা ছোটো খালি জায়গা পেয়ে বসে পড়ে। পায়েলের পরনে একটা লম্বা স্কার্ট আর ঢিলে টপ ছিল। বাড়ি থেকে বেরিয়ে দিদির কাছে এসে আর জামা কাপড় বদলানো হয়নি তাই আর ছোটো ড্রেস পরতে পারেনি পায়েল। অঙ্কন অবশ্য বলেছিল যে পায়েল লম্বা স্কার্ট আর পুরো জিন্সে বেশি সুন্দরী দেখায়। সেই কথা শুনে পায়েল ছোটো পোশাক পরা ছেড়ে দিয়েছিল তারপরে। দিদির আলমারিতে এখন পায়েলের ছোটো জামা কাপড়গুলো রাখা আছে, বাড়িতে নিয়ে গেলে ওর বাবা ওকে খুন করে দেবে।

পায়ের কাছে গঙ্গার জল, সামনে চওড়া নদী কুলুকুলু বয়ে চলেছে। দুইজনে পাশাপাশি বসে, পায়েলের হাতের উপরে হাত রেখে চুপ করে থাকে অনেকক্ষণ, কারুর মুখে কোন কথা নেই। পায়েল ওর হাতখানা মুঠি করে ধরে গালের কাছে নিয়ে যায়। নরম গালের হাতের স্পর্শে অঙ্কনের শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে। গালের ওপরে হাত ঘষে মিষ্টি করে অঙ্কনের দিকে তাকিয়ে থাকে পায়েল। লাল নরম ঠোঁট জোড়া অল্প ফাঁক করা, বড় বড় কাজল লাগানো চোখ যেন ওকে ডাক দেয়। অঙ্কন, বয়সের ব্যবধান, দিদির সাবধান বানী ভুলে যায় ওই চোখের মূক আহ্বান শুনে।

পায়েল মিষ্টি হেসে ওর ঠোঁটের উপরে আঙুল রেখে বলে, “কি রে কি দেখছিস এরকম ভাবে?”

অঙ্কনের কথা জড়িয়ে যায়, “তোমাকে দেখছি। তুমি ভারী সুন্দরী।”

পায়েল ওর হাত গালের উপরে চেপে বলে, “তাহলে পালাতে দিয়েছিলি কেন?”

অঙ্কন পায়েলের কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে, “পালাতে আর পারলে কই, সেই তো ধরে নিয়ে এলাম আমার কাছে।”

পায়েল হেসে বলে, “দুষ্টু ছেলে। অগ্নিহোত্রী যদি আমাকে নিয়ে চলে যেতো তাহলে কি করতিস? আঙুল চুষতিস তুই?”

অঙ্কনঃ “কেন? দেবায়নদার শরণাপন্ন হতাম। দিদি আর দাদার কাছে সব কিছুর ওষুধ আছে।”

পায়েল হেসে বলে, “জানি রে তোর দিদি আর দেবায়নের কথা।”

অঙ্কনের কথার অর্থ ভিন্ন ছিল। ঠিক জানে না তবে যেদিন দেবায়ন ওর মাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল সেদিনের পর থেকে মায়ের স্বভাবে বাবার স্বভাবে অনেক পরিবর্তন দেখেছে। মা আর বাড়ির বাইরে বিশেষ যায় না, গেলেও নিজের গাড়ি নিয়ে অফিসে যায় আর বিকেলের আগেই বাড়ি ফিরে আসে। ওর দিদি আর মায়ের মধ্যে ছোটো বেলা থেকে যে ব্যাবধান দেখে এসেছে সেটা সম্প্রতি অনুপস্থিত। পায়েল জানে, দেবায়ন সূর্য আর মনিদিপার সাথে কি করেছিল।

সেদিন আর চুমু খাওয়া হলো না। পায়েল ওর বাড়ির কথা, বাবা মায়ের কথা, অগ্নিহোত্রীর কথা সব খুলে বলে। সব কিছু বলার পরে পায়েল বেশ খানিকক্ষণ চুপ করেছিল অঙ্কনের অভিব্যক্তি দেখার জন্য। অঙ্কন পায়েলের কাঁধে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে বলেছিল যে সময় হলে ওকে এই সব পাঁকের থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসবে। পায়েল তারপরে বলে ওর বিগত উশৃঙ্খল জীবনের কথা। পায়েল বলতে চেয়েছিল যে ওর অনেক বয়ফ্রেন্ড ছিল আর তাদের সাথে পায়েল কি কি করেছে। অঙ্কন বলেছিল যার সাথে যা করেছে সেইগুলো সব অতীত। অঙ্কন কিছু শুনতে নারাজ, অঙ্কন বলে আর ওর অতীত জেনে কাজ নেই। পায়েলের বর্তমান, পায়েলের ভবিষ্যৎ সুন্দর করে তুলবে বলে প্রতিজ্ঞা করে অঙ্কন। পায়েল ছলছল চোখে জড়িয়ে ধরেছিল অঙ্কনকে, ভেবে পায়নি ঠিক কি বলবে। গল্পে অনেক সময় কেটে যায়। অতীতের সব কিছু ভুলে হাসিতে মেতে ওঠে পায়েল। পায়েলকে সেদিন বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে কোচিং চলে যায় অঙ্কন।

তারপর থেকে মাঝে মাঝে পায়েলের সাথে ঘোরা। স্কুল কলেজের দিন গুলোতে বিশেষ ঘুরতে মানা করে দিয়েছিল পায়েল, তাই আর স্কুল পালানো হয় না। তবে শনি রবিবার ওদের একদম নিজেদের। দিদি আর দেবায়ন শনি রবিবার সকাল থেকে কম্পিউটার ক্লাসে ব্যস্ত থাকে। পায়েল ওর বাড়িতে বলে যে অনুপমার বাড়িতে যাচ্ছে, তাই ওর বাবা মা নিষেধ করেনি। অঙ্কনের কথা ওর মা জানতো যে গরিমার সাথে বেড়াতে যাবে ছেলে, তাই সেখানেও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। সবার চোখে ধুলো দিয়ে সবার নাকের নীচ দিয়ে চুটিয়ে প্রেম করে গেছে।

সেদিন ছিল শনিবার, আকাশ সকাল থেকে মুখ গোমড়া করে বসে। দিদি কম্পিউটার ক্লাসে বেরিয়ে যাবার পরেই পায়েলের ফোন আসে, বলে যে এই বৃষ্টিতে আর ঘুরতে গিয়ে কাজ নেই, বাড়িতে বসে আড্ডা মারবে। পায়েলের বাবা মা, কল্যাণী ওর মাসির বাড়িতে গেছে। ওর মাসতুতো দিদি বিয়ের জন্য ছেলে দেখা হচ্ছে, সেদিন ওর মাসতুতো দিদিকে দেখতে আসার কথা। পায়েল বৃষ্টির অছিলায় জ্বরের ভান করে সকাল থেকে বিছানায় পড়েছিল। বাবা মা বেরিয়ে যাবার পরেই বাড়ি ফাঁকা দেখে পায়েলের মন নেচে ওঠে পেখম তোলা ময়ুরের মতন। ফাঁকা বাড়ি শুনে অঙ্কনের মন উতলা হয়ে ওঠে, মিলনেচ্ছুক হয়ে ওঠে প্রান। কয়েক মাস পেরিয়ে গেছে সেদিনের পর থেকে, কিন্তু ঠিক ভাবে চুমু খেয়ে উঠতে পারেনি দুইজনে। অঙ্কন তাড়াতাড়ি স্নান সেরে জামা কাপড় পরে মাকে বলে বেরিয়ে যায়। ওইদিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু, মা বারন করার আগেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
পায়েলেকে কিছু উপহার দেওয়া হয়নি। গরিয়াহাটে গিয়ে একটা স্টোন ওয়াসের লিভাইস কাপ্রি কেনে, সেই সাথে একটা দামী পারফিউম। মেয়েদের মন জয় করতে ওস্তাদ অঙ্কন। অনেক মেয়েদের উপহারের ছলে ভুলিয়ে স্তন, পেট নিয়ে খেলা করেছে তবে পায়েল ভিন্ন। পায়েলের সাথে খেলা নয়, পায়েলের হৃদয় অর্জন করতে চায় অঙ্কন। কেনাকাটা সেরে বাইকে চড়ে পায়েলের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তুমুল বৃষ্টি মাথায় করে পায়েলের বাড়ি যখন পৌঁছায়, ততক্ষণে অঙ্কন কাক ভিজে হয়ে যায়।

দু’তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওর জন্য অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিল পায়েল। অঙ্কনকে বাড়ির গেট খুলে বাইক ঢুকাতে দেখে দৌড়ে নিচে নেমে আসে। কাক ভিজে অঙ্কনকে দেখে খিলখিল করে হেসে ফেলে পায়েল। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা পায়েলের দিকে চোখ যায় অঙ্কনের। পরনে শুধু একটা ছোটো হাতার কামিজ, নিচে চুড়িদার পরেনি তাই কামিজখানা দুই পুরুষ্টু থাইয়ের মাঝখান অবধি এসে আর নেই। নধর দুই থাইয়ের নিচে ফর্সা পায়ের গুলি। বুকের দিকে দৃষ্টি যেতেই ছ্যাঁক করে ওঠে অঙ্কনের বুক। দুই নরম তুলতুলে স্তন জোড়া কামিজের ভেতরে যেন ছটফট করে ওর দিকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কামিজের দুইপাশে কাটা, কোমরের একটু নীচ পর্যন্ত কাটা থাকার ফলে, থাইয়ের পাশ পুরো দেখা যাচ্ছে আর সেই সাথে গুরু নিতম্বের ফোলা নরম ভাব পরিষ্কার অনুধাবন করা যায়। অঙ্কন হাঁ করে দাঁড়িয়ে পায়েলের হাসি মুখ দেখে, মাথার চুল একটা পনি টেল করে মাথার পেছনে বাধা। একটা ছোটো চুলের গুচ্ছ, ডান গালের উপরে নেচে বেড়ায়। পায়েল ওর হাত ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে দুতলায় নিয়ে যায়। পায়েলের হাতে জিন্সের প্যাকেট আর পারফিউমের বাক্স ধরিয়ে দেয়। পায়েল ওইগুলো সোফার উপরে রেখে অঙ্কনের গলা জড়িয়ে ধরে বলে যে ওইসব আনার কি দরকার ছিল। গলা জড়িয়ে ধরতেই, অঙ্কনের বুকে চেপে যায় পায়েলের নরম স্তন জোড়া। অঙ্কন আড়ষ্ট হয়ে যায় প্রেমিকার বাহুডোরে বদ্ধ হয়ে।

পায়েল ওর মাথার চুলে আঙুল ডুবিয়ে ঝাঁকিয়ে বলে, “তুই একদম ভিজে গেছিস দেখছি। পাগল ছেলে, সোজা বাড়ি থেকে এখানে চলে আসা উচিত আর তুই কি আমার জন্য এই সব কিনতে গেলি? আমি চেয়েছিলাম নাকি তোর কাছে?”

অঙ্কন মাথা ঝাঁকিয়ে চুলের জল পায়েলের সারা মুখের উপরে ছিটিয়ে বলে, “বাঃরে, কিছু একটা আনতে হয় তাই আনলাম। খালি হাতে আসলে কি আর ভালো লাগতো, বলো?”

পায়েল ওকে সোফার ওপরে বসিয়ে একটা তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছাতে মুছাতে বলে, “তুই এসে গেছিস আবার কি চাই আমার।”

অঙ্কনের মাথা মুছিয়ে দেবার পরে পায়েল ওকে ভিজে জামা প্যান্ট ছাড়তে বলে। অঙ্কন বলে যে জামা কাপড় ছাড়লে পরবে কি, পায়েল হেসে বলে ওর বাবার একটা পায়জামা দিয়ে দেবে সেটা পরে থাকবে। অঙ্কন হেসে ফেলে ওর কথা শুনে। তোয়ালে আর পায়জামা নিয়ে অঙ্কন বাথরুমে ঢুকে ভিজে জামা প্যান্ট খুলে পায়জামা পরে বেরিয়ে আসে। পরনের জাঙ্গিয়া ভিজে গেছিল, অগত্যা সেটাও খুলে বাথরুমে মেলে দিতে হয়। জাঙ্গিয়া ছাড়া পায়জামা পরে বেরিয়ে আসতেই, সামনে দেখে যে পায়েল ওর দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে কিছু কাজ করছে। হাওয়ায় পরনের কামিজ সরে যায়, ফর্সা পাছার কিছু অংশ দেখা যায় কামিজের নিচে। পরনের গোলাপি প্যান্টির এক ঝলক দেখা যায়। পায়জামার নিচে শুয়ে থাকা লিঙ্গ নড়েচড়ে ওঠে। অঙ্কনের হাত নিশপিশ করতে শুরু করে। বুকের মধ্যে জ্বলে ওঠে আগুন, পায়েলের নধর দেহপল্লব পারলে দুই হাতে চটকে কচলে একাকার করে দেয়। পায়েল বুঝতে পারে যে অঙ্কন বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। ওর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বলে দুপুরে কি খেতে চায়। অঙ্কন পারলে পায়েলের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওকে খেয়ে ফেলতে প্রস্তুত। ওর দিকে ভালোবাসা আর প্রেমের আগুনে ভরা চাহনি নিয়ে থাকিয়ে থাকে অঙ্কন। বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে পায়েলের, নিচের ঠোঁট দাঁতে চেপে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে তাকায়।

পায়েলের সামনে দাঁড়ায়, অঙ্কনের বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করা শুরু। যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করে, সারা শরীরের সব রোম কূপ খাড়া হয়ে যায়। উত্তেজনায় পায়েলের চোখের পাতা কেঁপে ওঠে সেই সাথে অঙ্কনের কান, গাল গরম হয়ে যায়। পায়েল অঙ্কনের চোখের দিকে আর তাকাতে পারেনা, চোখের পাতা বন্ধ করে মুখ উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। অঙ্কন আলতো করে পায়েলের কাঁধ ছোঁয়, পায়েল কেঁপে উঠে অঙ্কনের নগ্ন বুকের উপরে হাতের পাতা মেলে ধরে। নরম আঙ্গুলের তপ্ত পরশে অঙ্কনের বুকের ত্বক ঝলসে যায়। অঙ্কন ঝুঁকে পড়ে পায়েলের মুখের উপরে, শ্বাসের গতি বেড়ে ওঠে পায়েলের। কামিজের নিচে লুকিয়ে থাকা, দুই জোড়া নরম স্তন ফুলে ফুলে ওঠে। অঙ্কন ধিরে ধিরে মুখ নামিয়ে আনে পায়েলের মুখের উপরে, ঠোঁটের উপরে আলতো ফুঁ দিয়ে চুম্বনের প্রতীক্ষা করে। এতো কাছে এতো মিষ্টি গোলাপি নরম ঠোঁট, কিন্তু বুঝে উঠতে পারে না, ঠিক কি ভাবে চুমু খেলে ওর প্রেমিকাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবে। দেরি দেখে পায়েল চোখ খোলে, কাজল কালো চোখ জোড়া ভালোবাসায় চিকচিক করছে।

অঙ্কন পায়েলের নাকের উওপরে নাক ঘষে বলে, “আই লাভ ইউ পায়েল দি!”
 
দুই হাতে অঙ্কনের গলা পেঁচিয়ে ধরে পায়েল, মাথার পেছনে হাত দিয়ে অঙ্কনের মাথা নিজের উপরে টেনে ধরে ঠোঁটের উপরে ঠোঁট বসিয়ে দেয়। প্রথমে অঙ্কন বুঝে উঠতে পারেনা ঠিক কি হলো। ঠোঁটে যেন নরম মাখনের প্রলেপ লেগে গেল, সেই সাথে অধরের মধু। অঙ্কনের হাত পায়েলের কোমর জড়িয়ে আলিঙ্গন নিবিড় করে নেয়। পায়েলের ঠোঁট ওর ঠোঁটের সাথে খেলা করে। অঙ্কনের মনে হয় যেন বৃষ্টি থেমে গেছে, চারপাশে যেন কেউ হাজার বাতি জ্বালিয়ে চলে গেছে, বন্ধ চোখের সামনে শুধু ছোটো ছোটো লাল, নীল কমলা আলোর ফুল্কি ফুটছে, ঠিক যেন দিওয়ালির রাতের আকাশের বাজির মতন। পায়েল জিব দিয়ে অঙ্কনের ঠোঁটের ফাঁক করে ভেতরে জিব ঢুকিয়ে দেয়। অঙ্কনের জিবের সাথে ওর গোলাপি মখমলের জিব খেলতে শুরু করে। অঙ্কনের দেহ অসাড় হয়ে যায় সেই সুমধুর স্পর্শে। পায়েলের নরম চাঁপার কলির আঙুল ওর মাথার চুল আঁকড়ে ধরে থাকে। পায়েলের নরম স্তন জোড়া, অঙ্কনের বুকের উপরে লেপটে সমতল হয়ে যায়। এতকাছ থেকে প্রেয়সীকে বাহুডোরে বেঁধে নেবে কল্পনা করেনি আগে। পাতলা কোমর আরও পাতলা মনে হয়, পায়েলের শরীরে যেন মাংস নেই শুধু মাখন আর তুলোয় ভরা তুলতুলে নরম কিছু দিয়ে তৈরি। কামিজের ওপর দিয়ে সারা পিঠে আদর করে হাত বুলিয়ে দেয় অঙ্কন।

প্রেমঘন চুম্বন ছাড়িয়ে পায়েল ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “তুই আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিস আর একটা চুমু খেতে এতো দেরি করে দিলি কেন?” অঙ্কন উত্তরের ভাষা হারিয়ে আবার পায়েলের ঠোঁটে একটা ছোটো চুমু খেয়ে নেয়। পায়েল ওর মাথায় ছোটো একটা চাঁটি মেরে হেসে বলে, “এবারে একটু পেট পুজো হয়ে যাক, তারপরে তোর সাথে সারাদিন গল্প করা যাবে।”

দেবায়ন হাঁ করে থাকে, এতো রোম্যান্টিক নাকি ওর শালা। কথাবার্তায় বুঝেছিল যে অঙ্কন বেশ বড় হাত মারবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওদের বান্ধবী পায়েলের প্রেমে পড়বে সেটা আশাতীত ছিল। দেবায়নের মনে পড়ে অনুপমার সাথে প্রথম চুম্বনের কথা। যেদিন অনুপমাকে কবিতার বইখানা উপহার দিয়েছিল, তারপরের দিন দেবায়ন ক্লাসের পরে একা অনুপমাকে ক্লাসের মধ্যে ঢুকিয়ে, জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছিল ওর লাল নরম ঠোঁটে। দুই কপোত কপোতীর সেই প্রথম চুম্বন। অনুপমার আগে কোন প্রেমিক অথবা ছেলে বন্ধু ছিল না যাকে চুমু খাওয়া যায় আর দেবায়নের কোন বান্ধবী ছিল না যাকে চুমু খাওয়া যায়। দুইজনের প্রথম প্রেমের চুম্বন, বড় মধুর সেই অধরের মিলন ক্ষণ। চুমু খেয়ে অনুপমা অবশ হয়ে গেছিল, দেবায়নের বুক ঠোঁট মাথা কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতিতে ভরে উঠেছিল।

দেবায়ন অঙ্কনকে জিজ্ঞেস করে যে আর কিছু হয়নি সেদিন, শুধু চুম্বনে ক্ষান্ত থেকেছিল না আরও দূর এগিয়ে ছিল। অঙ্কন কিছুতেই মুখ খুলতে নারাজ, কথা আটকে যায়, কান লাল হয়ে যায়। দেবায়ন বুঝতে পারে যে অঙ্কন আর পায়েল, সেদিন শুধু চুম্বনে ক্ষান্ত ছিল না আরও দূর ওরা এগিয়েছিল। দেবায়ন উৎসুক হয়ে ওঠে জানার জন্য আর অঙ্কন কিছুতেই মুখ খুলতে চায় না। দেবায়ন মিচকি হেসে জানিয়ে দেয় যে সম্পূর্ণ গল্প না শোনালে কিছুই করবে না। অগত্যা অঙ্কন ওদের প্রেমের পরবর্তী পর্যায়ের ঘটনা বলি বলতে শুরু করে।

পায়েল ওর মিউসিক সিস্টেমে আদনান সামির রোম্যান্টিক গান চালিয়ে দেয়, অঙ্কন সেই গান বন্ধ করে মোবাইল থেকে সেলিন ডিওউনের কান্ট্রি সংগ চালায়। গান নিয়ে কিছুক্ষণ দুইজনের মধ্যে বচসা শুরু হয় শেষ পর্যন্ত পায়েল, ছোটো অঙ্কনের জিদের কাছে ইচ্ছে করে হার মেনে ইংরাজি গান শুনতে বসে পড়ে। খাওয়া শেষে অঙ্কন আর পায়েল বসার ঘরে সোফার উপরে বসে। খালি গায়ে, একটা ঢিলে পায়জামা পরিহিত অঙ্কন আর পায়েল শুধু কামিজ গায়ে অঙ্কনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখে। পায়েলের নরম গালের স্পর্শে, ধিরে ধিরে মাথা চাড়া দিতে শুরু করে অঙ্কনের পুরুষ সিংহ বাবাজি। পায়েলের বুকের কাছে পেটের ওপরে অঙ্কনের হাত রাখা ছিল। কামিজের উপর দিয়েই, পায়েলের নরম পেটের উপরে আদর করে অঙ্কন। টিভির দিকে অঙ্কনের বিশেষ মন ছিল না, পাশে অর্ধশায়িত প্রেমিকাকে পেয়ে অঙ্কনের উত্তেজনা উত্তরাত্তর বেড়ে উঠে। আদর খেতে খেতে, পায়েলের চোখ বুজে আসে। অঙ্কনের হাত খানি জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের উপরে চেপে ধরে। নরম স্তনের ছোঁয়া পেয়ে অঙ্কনের সারা শরীর কেঁপে ওঠে, কি করবে ভেবে না পেয়ে, কামিজের উপর দিয়েই আলতো করে পায়েলের স্তনের উপরে আঙুল বুলিয়ে দেয়। উত্তপ্ত আঙ্গুলের পরশে পায়েল কেঁপে উঠে অঙ্কনের দিকে তাকায়। আঙ্গুলের ডগায় ব্রার ছোঁয়া পায়। ব্রা ভেদ করে স্তনের বোঁটা ফুলে ফেঁপে ওঠে। অঙ্কনের আঙ্গুলের ডগা, ব্রার ওপর দিয়ে স্তনের বোঁটার চারদিকে আলতো ছুঁয়ে যায়। স্তনে নরম আঙ্গুলের স্পর্শে পায়েলের চোখ বন্ধ হয়ে আসে। দুইজনের শরীরে যেন বিজলি তরঙ্গ বয়ে যায়।

পায়েল মিহি আওয়াজ করে আধ খোলা ঠোঁটে, “আহহহহহ... বড় ভালো লাগছে... উম্মম্ম কি যেন হচ্ছে রে আমার... সোনা... ”

অঙ্কন কি করবে কিছু বুঝে পায় না। কামিজের ওপর দিয়ে, ব্রার ওপর দিয়ে আলতো চাপতে চাপতে বলে, “তুমি বড় মিষ্টি আর নরম পায়েলদি... আমি থাকতে পারছি না...”

অঙ্কন ঝুঁকে পড়ে পায়েলের মুখের উপরে। পায়েল দুই হাতে অঙ্কনের মাথা নিজের মুখের উপরে টেনে ধরে অধরে অধর মিলিয়ে তীব্র কামঘন চুম্বন এঁকে দেয়। অঙ্কন, পায়েলের কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের ওপরে টেনে নেয়। পাগলের মতন চুমু খায় পায়েলের গালে, কপালে, কানের লতিতে। পায়েল ঘাড় উঁচু করে অঙ্কনের মাথা নিজের গলার কাছে ধরে। পাজামার নিচে শুয়ে থাকা লিঙ্গ বেড়ে ওঠে, ফুলে ওঠে পায়েলের নরম থাইয়ের নিচে পড়ে। পায়েল বুঝতে পারে অঙ্কনের লিঙ্গের কঠিনতা। পায়েল ইচ্ছে করে অঙ্কনের লিঙ্গের উপরে পেলব নধর থাই চেপে ধরে আর সঙ্গে সঙ্গে কেঁপে ওঠে অঙ্কন।

পায়েল কাতরে ওঠে “আহহহহহহ...... সোনা... আমার কিছু একটা হচ্ছে...”

পায়েলের কামিজের দুই পাশে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে ওর প্যান্টির কোমরে হাত দেয়। নগ্ন মসৃণ ত্বকের উপরে তপ্ত আঙ্গুলের ছোঁয়ায় পায়েল পাগল হয়ে ওঠে। এতদিনে মনের মতন মানুষের হাতে নিজের শরীর সঁপে দেবে পায়েল। অঙ্কনের মুখ আঁজলা করে ধরে চুম্বনে চুম্বনে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। অঙ্কনের হাত পায়েলের নরম ভারী পাছার ওপরে চলে আসে, দুই হাতের থাবা মেলে প্যান্টির উপর দিয়ে পায়েলের নরম পাছা চেপে ধরে। পায়েলের নরম শরীরের ভারে অঙ্কন, সোফার উপরে শুয়ে পড়ে। পায়েলের কামিজ কোমরের উপরে উঠে যায়। দুই থাই মেলে অঙ্কনের লিঙ্গের উপরে নিজের ঊরুসন্ধি চেপে ধরে পায়েল। শক্ত লিঙ্গ বাড়ি খায় নরম যোনি বেদির উপরে। প্রথম কারুর যোনির ছোঁয়া পায় অঙ্কন নিজের লিঙ্গের উপরে। পায়েলের প্যান্টি তিরতির করে ভিজতে শুরু করে দেয়, সেই সাথে অঙ্কনের হাতের থাবা, পায়েলের পাছা চটকায়। পায়েল অঙ্কনের মুখের উপর থেকে মাথা তুলে বড় বড় চোখে কামাগ্নি জ্বালিয়ে অঙ্কনের চোখের ভেতরে তাকিয়ে থাকে। পায়েলের বাম হাত অঙ্কনের মাথার চুল আঁকড়ে ধরে থাকে, আর অন্য হাত দুইজনের প্যাঁচানো দেহের মাঝে অঙ্কনের লিঙ্গের কাছে চলে যায়। নরম আঙ্গুলের স্পর্শ বুঝতে পারে অঙ্কন। ওর তলপেটের নিচে ঠিক লিঙ্গের কাছে আলতো করে আঙুল বুলিয়ে উত্যক্ত করে তোলে। তীব্র কামানুভুতির বশে অঙ্কনের চোখ বুজে আসে।

অস্ফুট স্বরে গুঙিয়ে ওঠে অঙ্কন, “পায়েলদি আমার শরীরে কেমন যেন কিছু একটা হচ্ছে।” বারেবারে কেঁপে ওঠে অঙ্কন, এই প্রথম কোন পূর্ণ নারী ওর লিঙ্গের এতো কাছে ছুঁয়েছে আর প্রথম সুখানুভুতি দিয়েছে।

পায়েল কামঘন মিহি কণ্ঠে বলে, “সোনা, আমি কিন্তু ভারজিন নই। তোর আগে অনেক বয় ফ্রেন্ড ছিল আমার, প্লিস সোনা কিছু মনে করিস না। আমি তোকে বড্ড ভালোবাসি।”

অঙ্কনের তখন কিছু বলার মতন অবস্থা ছিল না। পায়েলের প্যান্টির ভেতরে হাত ঢুকিয়ে, নরম পাছার নগ্নতা উপভোগ করতে করতে বলে, “হ্যাঁ পায়েলদি, তুমি শুধু আমার, আমি কারুর সাথে আজ পর্যন্ত কিছু করিনি। তোমার জন্য আমি বসেছিলাম, তোমার অপেক্ষায় ছিলাম এতদিন।”

অঙ্কনের আঙুল, পায়েলের পাছার খাঁজ বেয়ে নিচের দিকে ঢুকে যায়। সিক্ত যোনির চেরায় আঙুলের ডগা স্পর্শ করে। পায়েলের পাছা শক্ত হয়ে যায়, উরু সন্ধি চেপে ধরে অঙ্কনের ঊরুসন্ধির উপরে।

পায়েল ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে, হাত নিয়ে যায় লিঙ্গের উপরে। অঙ্কনের সারা শরীর কেঁপে ওঠে, তলপেটের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। সারা শরীর বেঁকে যায় অঙ্কনের, তীব্র কামানুভুতির বশে গরম হয়ে যায় শরীর। পায়েল পাজামার ওপর দিয়েই লিঙ্গের চারদিকে কোমল আঙুল পেঁচিয়ে ধরে। নরম আঙ্গুলের মাঝে ছটফট করে ওঠে কঠিন লিঙ্গ। পায়েল ওর লিঙ্গ মুঠি করে ধরে প্যান্টির ওপর দিয়ে যোনির চেরায় বুলিয়ে দেয়। অঙ্কন এক হাতে পায়েলের পাছা, অন্য হাতে পায়েলকে জড়িয়ে ধরে, পায়েলের যোনির ওপরে নীচ থেকে লিঙ্গের ধাক্কা মারতে থাকে। প্যান্টি সরিয়ে লিঙ্গের ডগা সিক্ত যোনি পাপড়ির ছুঁয়ে যায়। পায়েলের চোখ বন্ধ হয়ে যায় আসন্ন, সম্ভোগের উত্তেজনায়। অঙ্কনের শরীর টানটান হয়ে যায়, সব পেশি কুঁকড়ে যায়। তলপেট যেন কেউ চেপে ধরে, সারা শরীরের এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগে যেটা আগে কোনদিন জাগেনি। লিঙ্গের লাল মাথা, যোনির চেরায় একটু ঘষে দেয় পায়েল।

অঙ্কন পায়েলকে শেষ শক্তিটুকু উজাড় করে জড়িয়ে ধরে গুঙিয়ে ওঠে, “পায়েলদি, আমার কিছু একটা হচ্ছে পায়েলদি।”

পায়েল ওর কপালে, গালে চুমু খেতে খেতে বলে, “হ্যাঁ সোনা এমন হয়, প্লিস আমাকে চটকে পিষে ধরো সোনা...”

পায়েল কিছু বুঝে ওঠার আগেই, লিঙ্গ বেয়ে উষ্ণ বীর্য লিঙ্গের মাথা থেকে ঝলকে ঝলকে বেরিয়ে আসে। পায়েলের হাত, পায়েলের যোনি বেদি, পাজামা সব বীর্যে চপচপ হয়ে ভিজে যায়। হটাত বীর্য পতনে অঙ্কন ঘাবড়ে যায়। বীর্য স্খলনের সময়ে অস্ফুট গুঙিয়ে ওঠে অঙ্কন, বারেবারে পায়েলের নাম নিয়ে পিষে ফেলে নধর দেহ পল্লব ওর বাহুডোরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর কঠিন লিঙ্গ শিথিল হয়ে যায়। দুইজনে কামাবেগে পরস্পরকে সাপের মতন পেঁচিয়ে শুয়ে থাকে। কারুর মুখে কোন কথা নেই, শুধু প্রেমের প্রথম পরশের অনুভূতি নিজেদের শরীরের প্রতি অঙ্গে মেখে নেয়।

অনেকক্ষণ পরে পায়েল মাথা উঠিয়ে অঙ্কনের চোখের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু মিষ্টি হেসে বলে, “দুত্তু তেলে, এতো তাড়াতাড়ি ফেলে দিলি। বাবার পাজামা নষ্ট করে দিলি। একটু ধরে রাখতে পারলি না?”

অঙ্কনের কান লাল হয়ে যায় লজ্জায়, “কি করে ধরে রাখতাম বলো। তুমি যা সেক্সি আর মিষ্টি আমি নিজেকে সামলাতে পারলাম না। আর সব থেকে বড় কথা, আমি যে আনকোরা তোমার কাছে। তোমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হবে যে, পায়েলদি।”

পায়েল ওর গালে ছোট্ট চুমু খেয়ে বলে, “এতো কিছু করার পরেও আমাকে পায়েলদি বলে ডাকবি নাকি?”

অঙ্কন হেসে ফেলে বলে, “এতদিন পায়েলদি বলে ডেকে এসেছি, নাম ধরে ডাকতে কিছু সময় লাগবে পায়েলদি।”
 
পায়েল অঙ্কনের কান মুলে আদর করে বলে, “আবার পায়েলদি, এবার থেকে নাম ধরে ডাকবি বুঝলি।”

অঙ্কন পায়েলকে জড়িয়ে ধরে নাকের ওপরে নাক ঘষে আদর করে বলে, “আচ্ছা পায়েলদি, এরপরে নাম ধরেই ডাকবো। তুমি বড় দুষ্টু মিষ্টি, তাই মিষ্টি বলে ডাকবো এবার থেকে তোমাকে।”

পায়েল হেসে, ওর মুখ আঁজলা করে ধরে ঠোঁটের উপরে ঠোঁট ঘষে বলে, “উফফ, প্রেম যে উথলে উথলে পড়ছে। পাজামা ছাড় এবারে, আমি অন্য পাজামা দিচ্ছি। আর এই পাজামা বাথরুমে রেখে আসিস, এটা ফেলে দেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। আমার বাবা ডাক্তার মানুষ, কুকুরের নাক। গন্ধ পেয়ে গেলে আমাকে কেটে ফেলবে।”

পায়েল ওকে ছেড়ে উঠে আরেকটা পাজামা দেয় পরতে। তারপরে দুইজনে জড়াজড়ি করে প্রেমের রসে অঙ্গ ভাসিয়ে গল্পে মজে যায়। পায়েল সেদিন বলে, একবার শুধু জন্মদিনে সব বন্ধু বান্ধবীদের ডাকতে পেরেছিল বাড়িতে, সেদিন বাড়িতে কেউ ছিল না তাই। পায়েল জানায় যে ওর পিসিও অনেক বদরাগী মহিলা। পিসির বাড়িতে ওর পিসে মশাই প্রায় ভিজে বেড়াল হয়ে থাকে। পিসির আস্কারা পেয়ে পিসতুতো দাদা, বিনয় কলেজের পড়াশুনা ছেড়ে একটা ব্যাবসায় নেমেছে ওই অগ্নিহোত্রীর সাথে। পায়েল যেতে চায়না ওর পিসির বাড়িতে, কিন্তু বাবা জোর করে ওকে নিয়ে যায়। বিনয়ের ব্যাবসার জন্য ওর পিসি ওর বাবার কাছ থেকে টাকা চেয়েছিল আর বাবা, দিদি দিদি করে টাকা দিয়ে দিয়েছে তার ভাগ্নেকে। বাবা কিছুতেই বোঝে না যে বিনয়, মামা মামা করে ওর বাবার মাথা ভেঙে অনেক টাকা নিয়ে নিয়েছে। যেই টাকা ফুরিয়ে যায় ওমনি মামার কাছে এসে হাত পাতে। বিনয়ের নামে কোন বাজে কথা শুনতে নারাজ ওর বাবা। তাই কোনদিন সাহস পায়নি বিনয়ের বিরুদ্ধে কিছু বলার।

সবকিছু শোনার পরে দেবায়নের কান লাল হয়ে যায়। প্রচন্ড রাগ হয় বিনয়ের ওপরে। অঙ্কন বলে যে করে হোক ওর “মিষ্টি” কে বাঁচিয়ে আনতে। ডক্টর কমলেশ সান্যাল নিশ্চয় পায়েলের উপরে এবারে অনেক অত্যাচার শুরু করবে। দেবায়ন অভয় দিয়ে বলে যে পায়েলের কিছু হবে না। অনুপমার সাথে কথা বলে সব ঠিক করে দেবে। অনুপমার প্রিয় বান্ধবী পায়েল, নিশ্চয় অনুপমা পায়েলের জন্য কিছু ভাবছে এতক্ষণে। রাত ফুরিয়ে সকালের আলো পুব আকাশে উঁকি মারে। দেবায়ন মিচকি হেসে জিজ্ঞেস করে যে সেদিনের পরে পায়েলের সাথে আর কিছু কোনদিন হয়েছিল কিনা। অঙ্কনের কান লাল হয়ে যায়, মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয় যে হ্যাঁ ওদের মধ্যে শেষ দেয়াল টুকু ভেঙে গেছে। অঙ্কনের লাজুক মুখ দেখে দেবায়ন বুঝতে পেরে যায় যে পায়েলের সাথে পূর্ণ সহবাস করা হয়ে গেছে। দেবায়ন আর কিছু জিজ্ঞেস করে না অঙ্কনকে।

সারা রাত ঘুমাতে পারেনি অনুপমা, সারা রাত বিছানায় জেগে কাটিয়ে দেয় অথবা নিজের ঘরে পায়চারি করে। কাকভোরে দেবায়নকে ফোন করে অনুপমা জিজ্ঞেস করে ওর ভাইয়ের কথা। দেবায়ন বলে যে অঙ্কনের মুখে সব শুনেছে, দেখা হলে সব কথা জানাবে। অনুপমা বলে যে গত রাতে অনেকবার পায়েলের ফোনে ফোন করতে চেষ্টা করেছে, কিন্তু ওর ফোন বন্ধ। বেশ কয়েক বার ল্যান্ডলাইনে ফোন করেছে কিন্তু প্রতিবার ওর বাবা তুলেছিল ফোন তাই কোন কথা না বলে ফোন কেটে দিয়েছে। দেবায়ন জানায় যে পায়েলের অবস্থা বড় খারাপ, এমত অবস্থায় কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না। অনুপমা অঙ্কনের সাথে কথা বলে শান্ত হতে বলে। দিদির আশ্বাস বানী শুনে অঙ্কনের ধড়ে প্রান ফিরে আসে। মিস্টার সেন আর পারমিতাকে সামলে নেবে অনুপমা। দেবায়নকে বলে যে অঙ্কনকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যেতে। অনুপমা বলে যে, অঙ্কন যেন ভুলেও এখন পায়েলের নাম বাড়িতে না নেয়। ওর বাবা মা দুইজনে খুব রেগে আছে অঙ্কনের উপরে।

সকাল বেলা মা জিজ্ঞেস করলে, দেবায়ন জানায় যে পরে বিস্তারিত ভাবে সব ঘটনা জানাবে। দেবশ্রী মাথা চাপড়ে জিজ্ঞেস করে যে দেবায়ন কি সারা পৃথিবীর সমস্যার সমাধান করতে বেরিয়েছে? মায়ের কথা শুনে হেসে বলে যে, অন্তত যাদের ভালোবাসে তাদের সমস্যার সমাধান করতেই পারে। দেবশ্রী আলতো হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, যেন সাবধানে থাকে।

ঢাকের বাদ্যি বাজতে শুরু করেছে। ঘন নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতন মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ায়, আকাশে বাতাসে আগমনীর সুরের দোলা লাগে। অঙ্কনের মনের বাতি দিন দিন নিভতে শুরু করে দেয়। ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অনুপমা চিন্তিত হয়ে পড়ে। ষষ্ঠীর পুজো কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হবে। পারমিতা অনুপমাকে নিয়ে পুজোর মন্ডপে এসেছে। অনুপমার চোখ বারেবারে সুজাতা কাকিমাকে খোঁজে। প্রতিবছর সুজাতা কাকিমা ওদের সাথেই ষষ্ঠীর পুজো দেয়। এই কয়দিনে অনুপমা ওদের বাড়ি যেতে সাহস করেনি। সুজাতা কাকিমার দেখা না পেয়ে অনুপমা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। দেবায়ন আর অনুপমার কথা মতন অঙ্কন নিজেকে শান্ত করে নেয়, বাড়িতে পায়েলের কথা আর ওঠায় নি সেদিনের পরে। কিন্তু রোজরাতে বাবা মা ঘুমিয়ে পড়ার পরে দিদির কাছে এসে মনের সংশয় ব্যাক্ত করতো। নিরুপায় অনুপমার কাছে ভাইকে প্রবোধ দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।
সব বন্ধু বান্ধবী পুজোর আনন্দে মত্ত, শুধুমাত্র অনুপমা আর দেবায়ন চিন্তায় ঘুমাতে পারে না। অঙ্কনের মুখে পায়েলের বাড়ির ব্যাপারে যা শুনেছে তাতে এই টুকু বুঝতে পেরেছে যে পায়েল আর ওর মায়ের ওপরে ওর বাবা খুব অত্যাচার শুরু করবে। পুলিসের কাছে গিয়ে কাজ দেবে না। ওর বন্ধু বান্ধবীরা কেউ এই বিষয়ে কিছুই জানে না। সপ্তমির দিনে সব বন্ধু বান্ধবীদের ঘুরতে বেড়ানোর কথা ছিল, কিন্তু অনুপমা ওদের মানা করে দেয়। শ্রেয়ার খুব সন্দেহ হয় সেই ব্যাপারে কেননা বেড়ানো, পার্টি, মজা করা ইত্যাদিতে সব থেকে আগে অনুপমা আর দেবায়ন এগিয়ে আসে। ওদের হাত ধরেই বাকিরা আনন্দের শরিক হয়। শ্রেয়া চেপে ধরে অনুপমাকে। শেষ পর্যন্ত অনুপমা থাকতে না পেরে শ্রেয়াকে সব কথা খুলে বলে। সপ্তমির দিনে আর ওদের ঠাকুর দেখতে যাওয়া হলো না। অনুপমার বাড়িতে গেলে ওর মা বকাবকি করতে পারে সেই কারনে সব বন্ধু বান্ধবীরা একত্রিত হয় শ্রেয়ার বাড়িতে। জারিনা চিন্তিত আর সব থেকে ছোটো আর অনুপমার একটু আদুরের, তাই অনুপমার হাত ধরে সোফার উপরে চুপচাপ বসে।

অনুপমাঃ “একটা খবর আমার কাছে, যেটা একটু ভয়ের। ওদের বাড়ির যে কাজের লোক, তার সাথে আমাদের বাড়ির কাজের লোকের জানাশুনা আছে। তাকে দিয়ে খবর বের করেছি আমি।” সবাই ত্রস্ত চোখে অনুপমার দিকে তাকিয়ে। অনুপমা দেবায়নকে সেই কথা বলতে বলে।

দেবায়নঃ “অনুপমা বেশ কয়েক বার গেছিল পায়েলের বাড়িতে, কিন্তু ঢুকতে পারেনি। ব্যাপারটা হচ্ছে যে, সুজাতা কাকিমার শরীর খুব খারাপ হয়ে পড়েছে সেই দিনের পর থেকে। বলতে পারা যায় যে কাকিমা শয্যাশায়ি হয়ে গেছেন। এক নতুন কাজের লোক রাখা হয়েছে। সে কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেয় না। পুরানো কাজের লোকের কাছ থেকে পাওয়া খবর যে পায়েল বাড়িতে নেই, পায়েলের দেখা পাওয়া যায়নি ওই দিনের পর থেকে। এখন ঠিক বোঝা যাচ্ছে না যে পায়েলকে ওর পিসির বাড়ি নৈহাটি পাঠিয়ে দিয়েছে না বাড়িতে কোথাও আটক করে রেখেছে। কেননা ওই কাজের লোককে সেইদিনের পরে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়।”

রূপক দাঁত কিড়মিড় করে দেবায়নকে বলে, “শালা, ওই ডাক্তারকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিলে কেমন হয়। দুই ঘা মারলে শালা সব বলে দেবে।”

পরাশর বলে, “ভুলেও কিছু করতে যাস না। পায়েলের বাবা তিনি, আইন সম্মত মেয়ের ওপরে তার অধিকার বেশি। পুলিসে এফ.আই.আর করে দিলে আমার কাকাও বাঁচাতে পারবে না। আমি কাকাকে বলে দেখি। কিছু একটা পথ বলতে পারবে নিশ্চয়।”

অনুপমাঃ “কিছু করে কি ওর বাড়িতে ঢোকা যাবে না? মুশকিল হচ্ছে আমাদের সব বান্ধবীদের ওর বাবা চেনে। হয়তো ওই চাকরকে বলাই আছে যে কাউকে বাড়িতে ঢুকতে না দিতে।”

ঋতুপর্ণা বলে, “একটা উপায় আছে। আমাকে ওর বাবা দেখেনি কোনদিন, জানে না আমি ওর বান্ধবী। আমি কিছু একটা করে ওর বাড়িতে ঢুকতে পারি।”

ধিমান জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি ভাবে যাবে? যেই তুমি বলবে যে তুমি ওর বান্ধবী অথবা তুমি সুজাতা কাকিমার সাথে দেখা করতে চাও, তখনি ওদের সন্দেহ হবে আর তোমাকে বাড়িতে ঢুকতে দেবে না। অপমান করে বার করে দেবে।”

সঙ্গীতাঃ “এক কাজ করা যায়। আমি কালকে নৈহাটি চলে যাবো আর আমার মামাতো দাদাকে সব কথা খুলে বলবো। বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে চেপে ধরলে কিছু একটা কথা বের হতে পারে।”

পরাশর বলে, “ধরো যদি ওইখানে না থাকে আর তোর দাদা ওদের মারধোর করে তাহলে কিন্তু আবার হিতে বিপরিত হতে পারে।”

অনুপমার গলা ধরে আসে, বুক কেঁপে ওঠে ভয়ে, “আমরা কি হাতে হাত দিয়ে বসে থাকবো আর ওই মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে আমরা থাকতে?”

দেবায়নঃ “কি করতে চাও তুমি শুনি?”

পরাশরঃ “কাকাকে একবার বলে দেখি, কি উপায় করা যায়। আমার যতদূর মনে হয় আমরা এফ.আই.আর পর্যন্ত করতে পারবো না। কেননা ওর বাবা মা জীবিত আর ওর বাবা মা এখন পর্যন্ত মেয়ের ব্যাপারে পুলিসের কাছে কিছু বলেনি।”

জারিনা শেষ পর্যন্ত মুখ খোলে, “আমি একটা কথা বলবো?”
 
পরাশর হেসে ফেলে, “তুমি চুপ করে থাকো, ছোটো আছো এখন। হাতি ঘোড়া গেল তল মশা বলে কত জল।”
সবাই পরাশরের কথা শুনে হেসে ফেলে একমাত্র অনুপমা ছাড়া। অনুপমা সবাইকে চুপ করিয়ে জারিনার কথা শুনতে বলে।

জারিনা বলে, “আমার আব্বু ডাক্তার আর পায়েলদির বাবাও ডাক্তার। আব্বাজানকে বলে ওর বাবার খবর বের করতে পারি। হয়তো আব্বুর চেনা জানা কেউ হতে পারে যে পায়েলদির বাবাকে চেনে।”

পরাশরঃ “তাতে লাভ? ওর বাবার কথা জেনে আমাদের কি হবে? আমরা কি পায়েলের খবর জানতে পারবো? বাইরের কেউ যদি ওর মেয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে তৎক্ষণাৎ ওর বাবা সতর্ক হয়ে যাবে আর কিছুই বলবে না।”

অনুপমাঃ “আমার ভাইয়ের অবস্থা খুব খারাপ। একে তো বাবা মায়ের ভয়ে বাড়িতে কিছু বলতে পারছে না। আর ওইদিকে পায়েলের জন্য বেচারার রাতে ঘুম হচ্ছে না।”

শ্রেয়া হেসে বলে, “তোর ভাই প্রেম করার আর মেয়ে পেলো না, শেষ পর্যন্ত কি না পায়েল? তুই ওকে আগে বলিস নি, যে পায়েলের বাড়ির কি অবস্থা।”

জারিনা শ্রেয়াকে হেসে বলে, “শ্রেয়াদি, প্রেম কি আর দিনক্ষণ, ধর্ম গোত্র নামধাম বয়স দেখে হয়? সেই যদি হতো, তাহলে আমাকে আর পরাশরকে ডুবে মরে যাওয়া উচিত। সেটাই করতাম যদি না শেষ পর্যন্ত দেবশ্রী কাকিমা আমাদের দুই পরিবারের মাঝে সুরাহা করিয়ে না দিতো।”

পরাশর দেবায়নকে বলে, “শেষ পর্যন্ত মনে হচ্ছে কাকিমার শরনাপন্ন হতে হবে আমাদের। দেবী দুর্গতিনাশিনী কি উপায় করেন একবার দেখা যাক।”

অনুপমা মুখ ভার করে বলে, “মামনি সব জানে, মামনি খুব চিন্তায় আছে। এর বেশি মামনি আর কি করতে পারে? পায়েলের বাবা যেই রকমের মানুষ সেখানে মামনিকে নিয়ে যেতে বড় ভয় করে।”

রূপক সবাইকে থামিয়ে বলে, “ভাই, শেষ কথা হচ্ছে যে আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।”

পুজোর আনন্দ মাতামাতি কিছুই হলো না শেষ পর্যন্ত। সবার কপালে চিন্তার রেখা। শ্রেয়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনুপমাকে বাড়ি পৌঁছে দেয় দেবায়ন। বাড়ির যাবার রাস্তায় অনুপমা বলে যে ওর মাকে একটু বুঝানোর চেষ্টা করেছে, মা একটু নরম হয়েছে। মাও খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছে পায়েলের ব্যাপারে। অনেকদিন ধরে আসে ওদের বাড়িতে তাই ওর বান্ধবী হিসাবে মায়ের খুব ভালো লেগেছিল। মা ক্ষণিকের জন্য রেগে গিয়েছিল, যখন জানতে পারে যে অঙ্কন পায়েলের প্রেমে পড়েছে। দেবায়ন হেসে বলে যে ওর মিমি ভালো, বুঝালে অনেক কিছু বোঝে। অনুপমা আলতো করে চাঁটি মেরে বলে দশমীতে ওর বাড়িতে সপরিবারে নিমন্ত্রন। দেবায়ন বলে যে সেটা ওকে না জানিয়ে ওর মাকে জানালে ভালো হয়। অনুপমা বলে ওর মা মামনির সাথে কথা বলে নেবে।

দুর্গা পুজো শেষ, কালী পুজোর আরও কয়েকদিন দেরি। রাতের অন্ধকার আকাশে মাঝে মাঝে কেউ বাজি ফুটিয়ে আকাশ আলোকিত করে দেয়। অনুপমার মনে শান্তি নেই, একা একা ছাদে দাঁড়িয়ে কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। মন পড়ে থাকে ওর প্রিয় বান্ধবীর কাছে। কোথায় আছে, কেমন আছে, কোন খবর পায়নি বিগত কুড়ি দিনে। পুজোর ছুটি শেষ, কলেজ আর দুইদিনের মধ্যে খুলে যাবে। সেই সাথে পড়াশুনার চাপ বেড়ে যাবে। দশমীর পর থেকেই ওদের কম্পিউটার ক্লাস পুরোদমে শুরু হয়ে যায়। প্রায় প্রতিদিন দেবায়নের সাথে দেখা হয়।

প্রায় রোজ দিন একবার করে সন্ধ্যে বেলায় অনুপমা না হলে দেবায়ন একবার পায়েলের বাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে যায়, এই আশায় যদি কোন খবর পায় পায়েলের। অঙ্কন রোজ সামনের মাঠে গিয়ে চেয়ে থাকে পায়েলের অন্ধকার বাড়ির দিকে, যদি কারুর দেখা পাওয়া যায় সেই আশায়। লক্ষ্মী পুজোর পরের দিন থেকেই পায়েলদের বাড়ির দরজায় তালা। কাউকে আসতে যেতেও দেখে না। আশে পাশের বাড়ির লোক কেউ জানে না ডক্টর কমলেশ পরিবার নিয়ে কোথায় গেছে। অন্ধকার বাড়ি দেখে অনুপমা আরো চিন্তায় পড়ে যায়। ওইদিকে অঙ্কনের অবস্থা শোচনীয়, ওর বন্ধুরা বুঝিয়ে সুঝিয়ে একটু ধাতস্ত করেছে। দুর্গা পুজোর সময়ে একটা দিনের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়নি অঙ্কন। শুধু নিজের রুম আর খাবার সময়ে নিচে আসা ছাড়া কিছু করেনি, কারুর সাথে কথা পর্যন্ত বলেনি। পারমিতা ছেলের মতিগতি দেখে খুব চিন্তায় পড়ে যায়। মিস্টার সেন আর পারমিতা, ছেলের মনের অবস্থা বুঝে ওদের সম্পর্কের কথা মেনে নেয়। কিন্তু সব থেকে বড় চিন্তা, পায়েল কোথায়?

সঙ্গীতা পুজোর পরেই ওর মামা বাড়িতে গিয়ে ওর মামাতো দাদা, রুদ্রকে সব কিছু জানিয়েছিল। সঙ্গীতার কাছে পায়েলের ছবি ছিল কিন্তু ওর বাবা মায়ের কোন ছবি ছিল না। রুদ্র সব কিছু শুনে বলেছিল যে ও আর তার বন্ধুরা অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের বাড়ির উপরে কড়া নজর রাখবে। সঙ্গীতা রোজদিন ওর দাদাকে ফোনে জিজ্ঞেস করে পায়েলের খবর, কিন্তু সেখানেও পায়েলের কোন খবর পাওয়া যায়না। লক্ষ্মী পুজোর দুইদিন পরে একদিন খবর আসে যে বিনয়ের বাড়িতে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। রুদ্র খবর নিয়ে জানতে পারে যে বিনয়ের এক মামিমা মারা গেছেন। সেই শুনে সঙ্গীতা সঙ্গে সঙ্গে দেবায়ন আর অনুপমাকে ফোন করে। অনুপমা বুঝতে পারে যে পায়েলের মায়ের মৃত্যু হয়েছে, কারন পায়েলের বাবা আর পায়েলের পিসি দুই ভাই বোন। সেই খবর শুনে অনুপমা খুব ভেঙে পড়ে। সঙ্গীতা খবর নিয়ে জানতে পারে যে এক রাতে, বিনয়ের মামিমা হার্ট এটাকে মারা যান।

কিছুদিন আগে সব বন্ধুরা আবার শ্রেয়ার বাড়িতে আলোচনা সভা বসায়। সঙ্গীতা সব কিছু জানায়। সেইখানে পরাশর বলে যে ওর সাথে ওর কাকার কথা হয়েছে। কাকা বলেছেন যে যতক্ষণ না ওদের বাড়ির লোক কিছু নালিশ জানায় ততক্ষণ পুলিসের হাত পা বাঁধা। আইন মত বন্ধু বান্ধবীরা কিছু করতে পারে না যতক্ষণ পায়েলের বাবা জীবিত। অনুপমা খুব ভেঙে পড়েছিল পায়েলের মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে, অঙ্কনকে সেই সব খবর জানানো হয়নি। অনুপমার ভয় এবারে হয়তো কোনদিন পায়েলের মৃত্যু সংবাদ কোন খবরের কাগজে পড়বে অথবা হয়তো জানতেও পারবে না যে পায়েলের মৃত্যু হয়েছে।

অনুপমার সম্বিৎ ফিরে আসে ওর মায়ের হাতের আলতো ছোঁয়ায়, “কি রে এতো রাতে কি করছিস ছাদে?” মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে অনুপমা। পারমিতা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করে বলে, “কি করা যেতে পারে বল? সেদিন তোর বাবার আর আমার খুব রাগ হয়েছিল অঙ্কনের ওপরে। আমি পায়েলকে অনেকদিন ধরেই চিনি, তাই ঠিক মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। আজ মনে হচ্ছে, সেদিন যদি জোর করে পায়েলকে বাড়িতে নিয়ে আসতাম তাহলে হয়তো মা মেয়ে দুই জনেই বেঁচে থাকতো।”

অনুপমা কাঁদতে কাঁদতে বলে, “না মা, পায়েলের কিছু হতে পারে না।”

পারমিতা বলে, “জানি না, তবে খুব ভয় হচ্ছে এখন। পায়েলের মা মারা যাবার পরে আরো ভয় করছে ওই মেয়েটার জন্য। পরাশরের কাকু কিছু করতে পারছে না?”

অনুপমাঃ “না মা, আমাদের হাত পা একদম বাঁধা। মা, আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় মাঝে মাঝে, মনে হয় যেন পায়েল আমার বুকের উপরে চেপে বসে কেঁদে কেঁদে বলছে আমাকে বাঁচা অনু।”

অনুপমার করুন আর্তনাদে পারমিতা কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারে না, “হ্যান্ডসাম কি করছে। ওর মাথায় কিছুই কি আসছে না? এতো বুদ্ধি রাখে আর পায়েলকে বাঁচানোর সময়ে ওর বুদ্ধি খালি হয়ে গেছে?”

অনুপমাঃ “মুশকিল ওখানেই মা। ওইদিকে পায়েলের পিসির বাড়ির উপরে সঙ্গীতার দাদা নজর রেখেছে, কিন্তু কথা হচ্ছে যে পায়েলের দেখা পায়নি। একবার পায়েলের দেখা পেলে না হয় কিছু করা যায়। পরাশরের কাকু বলেছে কোন প্রমান ছাড়া বিনয় অথবা অগ্নিহোত্রীকে পুলিসে আটক করতে পারবে না। যারাই পায়েলকে ধরে রেখেছে অথবা কিছু করেছে, তারা খুব সতর্ক ভাবে কার্যসিদ্ধি করেছে। এদিকে পায়েলদের বাড়ি বিগত দশ দিন থেকে বন্ধ, কেউ নেই বাড়িতে। পায়েলের বাবা নৈহাটি, পায়েল ওইখানে নেই, বাড়িতে নেই। সমস্যা ওইখানে যে কি হচ্ছে কিছুই ঠিক ভাবে জানা যাচ্ছে না।”
 
পারমিতা বুঝিয়ে সুঝিয়ে মেয়েকে নিচে নিয়ে আসে। অঙ্কন নিজের ঘরে জেগে বসে, সামনে বই খোলা কিন্তু পড়তে আর ভালো লাগে না ওর। মা আর দিদিকে নিচে নামতে দেখে একবার দরজা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে। অঙ্কন বেরিয়ে এসে মাকে জিজ্ঞেস করে, কোন খবর পাওয়া গেল পায়েলের? অনুপমা মাথা নাড়ায়, না কোন খবর পাওয়া যায়নি। শুকনো মুখে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় অঙ্কন। পারমিতার মাঝে মাঝে ভয় হয় যে অঙ্কন রাগে দুঃখে কিছু করে না বসে।

রাতের খাওয়ার পরে দেবায়ন চুপচাপ বসার ঘরে বসে টিভি দেখে। ওর মা একবার জিজ্ঞেস করে পায়েলের কথা। দেবায়ন শুকনো মুখে জানিয়ে দেয় যে পায়েলের কোন খবর পাওয়া যায়নি। দেবশ্রী রাতের কাজ সেরে ঘুমাতে চলে যায়। টিভি দেখতে দেখতে দেবায়ন সোফার উপরেই ঘুমিয়ে পড়ে।

কত রাত ঠিক খেয়াল নেই, মায়ের ধাক্কায় ধড়মড় করে উঠে বসে দেবায়ন।

দেবায়ন মাকে জিজ্ঞেস করে, “কি হলো?”

দেবশ্রী ওর হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলে, “অনুর ফোন এই নে কথা বল।”

ওই পাশে অনুপমার কাঁপা গলা শোনা যায়, “পায়েল পায়েল...”

দেবায়নের ঘুম কেটে গিয়ে চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, “কি হয়েছে পায়েলের?”

অনুপমা কাঁপতে কাঁপতে বলে, “পায়েলের খবর পাওয়া গেছে, তুমি এখুনি আমার বাড়িতে এসো।”

দেবায়ন মায়ের দিকে তাকায়। দেবশ্রী ওর জন্য জামা প্যান্ট নিয়ে তৈরি। দেবশ্রী, দেবায়নের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “মেয়েটাকে বাঁচিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আয় আর যারা এর পেছনে আছে তাদের ছাড়িস না।”

দেবায়ন মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি যখন একবার বলে দিয়েছো, তাহলে আর সেই শয়তানদের রক্ষে নেই।”

রাত তখন বারোটা বাজে। বাইক নিয়ে অনুপমার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে দেবায়ন। বাড়ি থেকে বেরিয়েই রূপক আর ধিমানকে ফোনে করে অনুপমার বাড়িতে যেতে বলে, জানিয়ে দেয় যে পায়েলের খবর পাওয়া গেছে। রূপক জানায় যে শ্রেয়া ওকে জানিয়েছে, সেই মতন ও শ্রেয়াকে নিয়ে অনুপমার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। ধিমান জানিয়ে দেয় কিছুক্ষণের মধ্যেই ও অনুপমার বাড়িতে পৌঁছে যাবে।

বাইকের শব্দ শুনে অনুপমা দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। বসার ঘরে ঢুকে দেখে যে শ্রেয়া, রূপক, ধিমান, সঙ্গীতা সবাই পৌঁছে গেছে। পারমিতা অঙ্কনকে জড়িয়ে ধরে একধারে বসে। মিস্টার সেন, চুপ করে সোফার উপরে বসে আছেন। অঙ্কন চুপ করে গুম মেরে সবার দিকে তাকিয়ে। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে অনুপমাকে, কি খবর।

অঙ্কন বলে, “এই কিছু আগে, মানে রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ আমার কাছে একটা ফোন আসে। কার ফোন জানি না। সেই লোকটা আমাকে ফোনে বলল যে একটা মেয়ে ওকে আমার নাম্বার দিয়ে সাহায্য চেয়েছে। আমি বুকে হাত রেখে বলতে পারি যে ওই মেয়েটা মিষ্টি ছাড়া আর কেউ নয়। আমি এখুনি যাবো সেই লোকটার সাথে দেখা করতে আর মিষ্টিকে বাঁচাতে।”

দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “তুই কোথায় যাবি? লোকটা কে, কোথা থেকে ফোন করেছে কিছু জানিস? এতো রাতে হয়তো কোন শত্রুর চাল হতে পারে। কি করে বিশ্বাস করা যায় যে লোকটা সত্যি কথা বলছে?”

অঙ্কন রাগে দুঃখে চেঁচিয়ে ওঠে, “দিদির কিছু হলে তুমি কি করতে? এই রকম ভাবে হাতে হাত রেখে বসে থাকতে?” পারমিতা ছেলেকে শান্ত হতে বলে। অঙ্কন বলে, “আমার মন বলছে যে লোকটা মিথ্যে কথা বলছে না। লোকটা নৈহাটির কাছাকাছি, মালঞ্চ নামে একটা গ্রাম থেকে ফোন করেছে। আমি যেতে চাই দেবায়নদা, মিষ্টি আমাকে ডাকছে। আমি বুকে হাত রেখে বলতে পারি যে এর পেছনে বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর হাত আছে। লোকটা যেই হোক আমি মিষ্টিকে বাঁচাতে যাচ্ছি। আমি ওকে বলেছি যে আমি আসছি। লোকটা আমাকে বলেছে যে কল্যাণী হাইওয়ের মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে।”

দেবায়ন বলে, “ঠিক আছে। লোকটার ফোন নাম্বার আছে তোর কাছে?”

অঙ্কন দেবায়নকে সেই আগন্তুকের ফোন নাম্বার দেয়। রূপক ধিমানকে বলে যে এক বার ঋতুপর্ণাকে খবর দিতে, কারন লোকটা জানিয়েছে যে পায়েলের শরীর খুব খারাপ, কথা বলার মতন শক্তি নেই, ঋতুপর্ণার দরকার লাগতে পারে। ধিমান ঋতুপর্ণাকে মেস থেকে নিয়ে আসতে বেরিয়ে পড়ে।

দেবায়ন আগন্তুককে ফোন করে, “আপনি কে? আপনি এতো রাতে পায়েলের খবর কি করে জানলেন?”

ওপর পাশে সম্পূর্ণ গ্রাম্য কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, “বাবু, আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন, নাইলে মেয়েডা মারা যাবে। আপনারা আসুন তারপরে আমি সব জানাবো। বাবু আমি চোর কিন্তু কোন মেয়ের ইজ্জত চুরি করিনা। বাবু আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন।” লোকটার কণ্ঠ স্বর শুনে দেবায়ন বুঝতে পারে যে হয়তো লোকটা মিথ্যে কথা বলছে না।

রূপক জিজ্ঞেস করে লোকটা কি বলল, দেবায়ন সবাইকে বলে যে ওদের বের হতে হবে নৈহাটির উদ্দেশ্যে। দেবায়ন অনুপমাকে বলে যে একবার পরাশরকে ফোনে জানিয়ে দিতে যাতে ও জারিনার বাবাকে বলে রাখে। পায়েলকে কি রকম অবস্থায় পাবে জানে না, ডাক্তারের দরকার পড়তে পারে। অনুপমা সোজা জারিনাকে ফোন করে। জারিনা জানিয়ে দেয় যে ওর আব্বুকে সব জানিয়ে দেবে। জারিনা পরাশরকে ফোনে সব ঘটনা জানায়। পরাশর দেবায়নকে ফোনে জিজ্ঞেস করে যে দরকার পড়লে কাকাকে নিয়ে চলে আসবে। দেবায়ন বলে যে এখুনি কোন দরকার নেই পুলিশের, আগে পায়েলকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসুক তারপরে পুলিশে দেবে না নিজেরা বিচার করবে সেটা পরের ব্যাপার।
 
অনুপমার বাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যে রণক্ষেত্রের পরিচালনা গৃহ হয়ে ওঠে। সঙ্গীতা ওর মামাতো দাদা, রুদ্রকে ফোনে সব জানিয়ে দেয়। রুদ্র জানিয়ে দেয় ওর বন্ধু বান্ধব নিয়ে কল্যাণী হাইওয়ের মোড়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে। ধিমান কিছুক্ষণের মধ্যে ঋতুপর্ণাকে নিয়ে উপস্থিত। ঋতুপর্ণা বেশ কয়েকটা স্যালাইন আর কিছু ইঞ্জেকশান, একটা আইস বক্সে নিয়ে এসেছে। দেবায়ন, অনুপমা আর শ্রেয়াকে বাড়িতে থাকতে বলে। দেবায়ন জানায় যে ওইখানে মারামারির মধ্যে মেয়েদের গিয়ে প্রয়োজন নেই। অনুপমা নাছোড়বান্দা, পায়েলের সাথে যারা এই সব করেছে তাদের নিজে হাতে খুন করবে। পারমিতা আর শ্রেয়া কিছুতেই অনুপমাকে বুঝিয়ে উঠতে পারে না। শেষ পর্যন্ত দেবায়ন ধমক দেয় অনুপমাকে। ধমক খেয়ে থমথমে মুখে চুপচাপ বসে পড়ে অনুপমা। অঙ্কন যাবেই, ওকে বারন করা ঠিক হবে না বলে দেবায়ন ওকে আর বারন করে না। অনুপমাদের গাড়ি নিয়ে যাওয়া উচিত হবে না, তাই ধিমান একটা গাড়ির ব্যাবস্থা করেছে। রূপক বলে যে শুধু সঙ্গীতার ফোন ছাড়া বাকি সবার ফোন অনুপমার বাড়িতে রেখে যেতে।

রাত প্রায় সাড়ে বারোটার মধ্যে সবাই বেরিয়ে পড়ে নৈহাটির উদ্দেশ্যে।

অনুপমা দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে, “তুমি পায়েলকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসো। ও হয়তো জানে না যে ওর মা মারা গেছে। আমি ওকে আমার সব দিয়ে দেবো, শুধু আমার বান্ধবীকে ফিরিয়ে নিয়ে এসো।” চোখ মুছে বলে, “শয়তানগুলোকে ছেড়ো না একদম।”

দেবায়ন পারমিতাকে বলে, “মা এক কথা বলেছে, চিন্তা করো না। পায়েলকে নিয়ে আসবো আর সেই সাথে বাকিদের ওইখানে কবর দিয়ে আসবো।”

একটা সুমোর মধ্যে, দেবায়ন, রুপক, ঋতুপর্ণা, সঙ্গীতা আর অঙ্কন। ধিমানের হাতে স্টিয়ারিং, ছয়জনে বেরিয়ে পড়ে নৈহাটির উদ্দেশ্যে। জানে না কি ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। রাতের অন্ধকার কেটে গাড়ি দ্রুত গতিতে নৈহাটির দিকে ধেয়ে চলে। সময়ের সাথে ওদের লড়াই, দেরি হলে যদি পায়েলকে বাঁচানো না যায় সেই চিন্তায় দেবায়ন ঘেমে যায়, ধিমান পাগলের মতন গাড়ি চালায়। চারপাশে ঘন কালো আঁধার, রাস্তায় শুধু ট্রাক ছাড়া আর কোন গাড়ি নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যারাকপুর ছাড়িয়ে যায়। ব্যারাকপুর পারো হতেই সঙ্গীতার কাছে ওর দাদার ফোন আসে। সঙ্গীতা জানায় ওর দাদা রুদ্রর সাথে সেই লোকটার দেখা হয়েছে। লোকটা সত্যি কথাই বলছে, না হলে এতো রাতে কল্যাণী মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতো না। ওদের জন্য সবাই ওখানে অপেক্ষায় আছে। তীব্র গতিতে গাড়ি চালায় ওরা। কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা নৈহাটির কল্যাণী রোডের মোড়ে পৌঁছে যায়।

রুদ্র ওদের জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়েছিল। সাথে প্রায় আরও দশ বারোটা ছেলে, সবার হাতে কিছু না কিছু, কারুর হাতে লাঠি, কারুর হাতে বড় ছুরি, কারুর হাতে দা। সবাই তৈরি এক রক্তাক্ত যুদ্ধের জন্য। রুদ্রকে দেখে সঙ্গীতা দৌড়ে যায়। গাড়ি থেকে দুটি মেয়েকে নামতে দেখে রুদ্র একটু ঘাবড়ে যায় বিশেষ করে ওর বোনকে দেখে। রুদ্র সঙ্গীতাকে আসার কারন জিজ্ঞেস করে। সঙ্গীতা জানায় যে পায়েলকে বাঁচাতে এসেছে। রুদ্র সেই আগন্তুককে ধরে এনে দেবায়নের সামনে এনে দাঁড় করায়। দেবায়ন তাকে সব ঘটনা জিজ্ঞেস করে।

আগন্তুক বলে, “বাবু আমি ছিঁচকে এক চোর, নাম জেনে আর কি হবে তাও বলি, আমার নাম শ্যাম। পুজোর মরশুম গ্রামের মানুষের কাছে পয়সা আসে এই সময়ে। গ্রামের দিকের সবার বাড়ি ঘরদোর আমার চেনা। ওই মালঞ্চের দিকে থাকি আমি। ওইখানে সমীর বাবুর অনেক জমিজমা, আম বাগান আর ফলের বাগান আছে। বেশ বড় লোক চাষা। বাগানের মাঝে ওদের একটা বেড়ার বাড়ি আছে যেখানে গরম কালে ওদের লোকেরা বাগান পাহারা দেবার জন্য থাকে।”

দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “এই সমীর বাবু কে?”

রুদ্র উত্তর দেয়, “অগ্নিহোত্রীর বাবার নাম সমীর। অনেক জমিজমা আছে আবার কাপড়ের ব্যাবসা আছে, বেশ বড়োলোক। পাড়ায় বেশ নাম ডাক, সেই সাথে খুব কুটিল প্রকৃতির লোক। তাবে চিন্তা করিস না তোরা, অগ্নিকে পেলে কুপিয়ে মারবো। আমার বোনের বান্ধবী মানে আমার বোন।” রুদ্র দুটো ছেলেকে বলল যে সঙ্গীতাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে, ওদের সাথে সঙ্গীতাকে গিয়ে কাজ নেই। সঙ্গীতা অনিচ্ছা সত্বেও ওর মামাবাড়ি চলে যায়। রুদ্র তারপরে বলে, “ঋতুপর্ণার দরকার আছে। এক কাজ করা যাক, আমরা হাঁটতে থাকি ততক্ষণে ওর মুখে সব কথা শোনা যাক।”

গাড়ি বড় রাস্তায় দাড় করিয়ে সবাই দল বেঁধে মাঠের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে শুরু করে। চারপাশে খালি মাঠ, মাঝখান দিয়ে ভুতের মতন এগিয়ে চলে একদল ছেলে। শ্বাসের আওয়াজ আর পায়ের আওয়াজ ছাড়া কিছু শোনা যায় না। মাঝে মাঝে দূর থেকে শিয়ালের ডাক শোনা যায়, কোথাও দুরে ঝিঁঝিঁ পোকা একটানে সুর করে গান গেয়ে চলেছে।

শ্যাম তার কথা বলতে শুরু করে, “দুই তিন দিন ধরে দেখি সেই কুঁড়ে বাড়িটায় দুটো ছেলের আনাগোনা। তারমধ্যে একজন সমীর বাবুর ছেলে। গরম কালে ওইখানে মানুষ জন থাকে, কিন্তু এইসময়ে ওইখানে ছেলেদের দেখে আমার সন্দেহ হলো। আমি তক্কে তক্কে থাকলাম, কি হচ্ছে জানার জন্য। আমি ওদের বাড়ির উপরে নজর রাখলাম, নিশ্চয় কিছু লুকিয়েছে, হয়তো চুরি করলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। আজ সন্ধ্যের পরে দেখলাম যে ছেলেগুলো বেরিয়ে গেল ঘর থেকে, কিন্তু ভেতরে হ্যারিকেন জ্বালানো। আমি চালের টালি সরিয়ে ভেতরে ঢুকে যা দেখি, তাতে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। একটা ঘরে যেখানে খড় বিচুলি, লাঙ্গল ইত্যাদি থাকে সেই ঘরে একটা মেয়ে বাঁধা। মেয়েটার গায়ে কাপড় নেই বললেই চলে, শুধুমাত্র একটা ছেঁড়া নোংরা কামিজ। আমি মেয়েটার মুখের উপরে ঝুঁকে নাকের কাছে হাত নিয়ে দিয়ে দেখলাম যে শ্বাস চলছে, কিন্তু খুব ধিরে। আমি কি করবো কিছু ভেবে পেলাম না। এসেছিলাম চুরি করতে কিন্তু মেয়েটাকে দেখে বড় কষ্ট হলো। মেয়েটা কোন রকমে চোখ খুলে আমার দিকে তাকাল। মেয়েটার চোখের করুন ভাষা দেখে আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম কে ওকে বেঁধে রেখেছে, ওর বাড়ি কোথায়? মেয়েটার কথা বলার মতন শক্তি ছিল না। আমি আমার জামা দিয়ে মেয়েটাকে ঢেকে দিলাম। আমি চোর হতে পারি বাবু, কিন্তু কোন মেয়ের গায়ে আজ পর্যন্ত হাত তুলিনি। মেয়েটা আমাকে কোনমতে ইশারায় ফোনের কথা জিজ্ঞেস করে। আমি আমার ফোন বের করে দিলাম। সেই ফোন হাতে ধরার মতন শক্তি ছিল না মেয়েটার হাতে। আমি এক একটা করে বোতামে আঙুল দিয়ে দেখালাম, আর সেই মতন আমাকে ইশারায় আপনার নম্বর জানাল। আমি যেরকম ভাবে ঢুকেছিলাম তেমনি বেরিয়ে এলাম। আমি বের হবার কিছু পরে দেখলাম যে ওই দুজন ছেলে বাড়িতে আবার ঢুকেছে, ওদের হাতে খবরের কাগজে মোড়া মদের বোতল। আমি বুঝতে পারলাম যে মদ খেয়ে এই মেয়েটার সর্বনাশ করবে ওরা। আমি সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে ফোন করলাম।”

দেবায়ন অঙ্কনের দিকে তাকায়। অঙ্কনের দুই চোখে আগুন ঝরছে, দাঁতে দাঁত পিষে চিবিয়ে বলে, “আমি তোমাকে বলেছিলাম বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে ধরতে। যদি মিষ্টির কিছু হয় তাহলে আমি তোমাকে, মাকে আর বাবাকে কোনদিন ক্ষমা করবো না।”

রূপক অঙ্কনকে বুঝিয়ে বলে, “দ্যাখ ভাই, আমাদের হাতে কিছু ছিল না। আমরা জানতাম না যে পায়েল কোথায়। প্রমান ছাড়া ওদের গায়ে হাত দিলে পুলিস কেস হয়ে যেতো।”

অঙ্কন চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “দিদির কিছু হলে দেবায়নদা চুপ করে থাকতো? তখন প্রমানের অপেক্ষা করতো না নিশ্চয়।” অঙ্কনের কথা শুনে দেবায়ন মাথা নিচু করে নেয়।

ঋতুপর্ণা অঙ্কনকে আস্বস্ত করে বলে, “ভাইটি, চুপ কর এখন। পায়েলের কিছু হবে না।”

সবাই আবার চুপচাপ হাঁটতে শুরু করে। বেশ কিছুদুর যাবার পরে, দুরে একটা বাগানের দিকে দেখিয়ে দেয় শ্যাম। বলে ওর মাঝে একটা বেড়ার ঘর আছে তার মধ্যে পায়েলকে বেঁধে রাখা হয়েছে। পা টিপে টিপে সবাই এগোতে শুরু করে দেয় বাড়িটার দিকে। সব থেকে আগে দেবায়ন আর রুদ্র, দুইজনের হাতে বাঁশের লাঠি। ঠিক পেছনে ধিমান আর রূপক। রুদ্র একটা বড় ছুরি রূপকের হাতে ধরিয়ে দেয়। বাকি ছেলেরা পেছনে। রুদ্র ইশারায় ওর সাথে আসা ছেলেগুলোকে বলে বাড়ি ঘরে ফেলতে। বেড়ার ফাঁক দিয়ে ভেতরের হ্যারিকেনের আলো দেখা যায়। চারদিক নিস্তব্ধ, শুধু চাপা শ্বাসের আওয়াজ ছাড়া কিছু শোনা যায় না।

শ্যাম গলা নিচু করে দেবায়নকে বলে, “বাবু, দরমার বেড়া, এক লাথিতে ভেঙে যাবে দরজা।”

রুদ্র আর দেবায়ন দরজায় এক সজোরে লাথি মারতেই দরজা খুলে যায়। বিনয় আর অগ্নিহোত্রী, বেশ আরাম করে একটা তক্তায় বসে মদ গিলছিল আর গল্প করছিল, কি ভাবে পায়েলকে ভোগ করা যায়। দরজা ভাঙার শব্দে চমকে ওঠে দুইজনে। ওদের হাতের কাছে একটা লাঠি ছিল, সেইটা তুলে নিল বিনয়। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেবায়ন, রুদ্র আর রূপক ঝাঁপিয়ে পড়ে দুটি ছেলের উপরে। এলোপাথাড়ি কিল চড় ঘুসি মারতে শুরু করে দেয় দুইজনকে। ততক্ষণে রুদ্রের বাকি বন্ধুরা দৌড়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে বেঁধে ফেলে। শ্যাম চোর বলে যে দিদিমনি পাশের ঘরে। ধিমান পাশের ঘরের দরজা লাথি মেরে ভেঙে দেয়। ভেতরের দৃশ্য দেখে ধিমান আর ঋতুপর্ণা হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকে। অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে ঘর, একপাশে খড় বিচুলির গাদা। ঘরের এক কোনায় এক তাল ঘুঁটে, এক পাশে বস্তায় সার, খৈল রাখা। একটা বড় মাটির জালায় খৈল ভেজানো, তার দুর্গন্ধে ঘরে টেঁকা দায়। কোন পশুকে হয়তো এতো নোংরা অবস্থায় রাখা হয় না। দেবায়ন ঘরে ঢুকে পায়েলের দিকে তাকিয়ে দেখে। ওর অবস্থা দেখে চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসে। ফর্সা রঙ আর ফর্সা নেই, কালি হয়ে গেছে। সুন্দরী পায়েলের সেই মূর্তি কালি মাখা, দেখলে মনে হয় যেন একটা শুকনো কঙ্কালের উপরে চামড়া জড়ানো। গায়ে একটা ছেঁড়া কামিজ ছাড়া নিচে কিছুই পরে নেই।

অঙ্কন দৌড়ে গিয়ে পায়েলকে জড়িয়ে ধরে। কাঁপা গলায় পায়েলকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “মিষ্টি আমি এসে গেছি।” চোখ ভিজে আসে অঙ্কনের। পায়েল কোনোরকমে চোখ খুলে একবার অঙ্কনের মুখের দিকে তাকায়, ঠোঁট জোড়া নড়ে ওঠে কিন্তু গলা থেকে আওয়াজ বের হয় না। পায়েল অঙ্কনের বুকে মাথা গুঁজে অজ্ঞান হয়ে যায়। অঙ্কন চিৎকার করে ওঠে, “মিষ্টি প্লিস সোনা, চোখ খোলো। প্লিস সোনা আমাকে ছেড়ে যেও না।”

শ্যাম অন্য ঘর থেকে একটা বোতলে জল নিয়ে ঋতুপর্ণার হাতে দেয়। ঋতুপর্ণা পায়েলের মুখে জল ছিটিয়ে দেয়। পায়েলের শরীরে এতটুকু শক্তি ছিল না যে চোখ খুলে একবার সবাইকে দেখে। কোনোরকমে শেষ সম্বলের মতন অঙ্কনের বুকে মাথা গুঁজে নিঃসাড় হয়ে পড়ে থাকে। অঙ্কন প্রাণপণে পায়েলকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে সারা শরীরের উত্তাপ দিয়ে ভরিয়ে দেয়। ধিমান আর ঋতুপর্ণা ওর পাশে এসে বসে পড়ে।
 
ঋতুপর্ণা ভালো ভাবে পায়েলকে দেখার পরে ধিমানকে বলে, “যার বেশি ভয় ছিল সেটা হয়নি, ওরা এখন রেপ করেনি পায়েলকে। তবে পায়েলের শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। এতদিন হয়তো ঠিকভাবে খেতে পায়নি। শরীরে কিছু বেঁচে নেই, প্রচন্ড ডিহাইড্রেট হয়ে গেছে। প্রচন্ড ট্রমাতে ভুগছে। এখুনি ওকে স্যালাইন দিতে হবে, ওকে নিয়ে আমাদের বেরিয়ে পড়া উচিত না হলে শেষ রক্ষা করতে বড় মুশকিল হয়ে যাবে।”

অঙ্কন পারলে বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে পায়েলকে। সব শক্তি দিয়ে আগলে ধরে থাকে, এমন কি ধিমানের উপরেও যেন ওর আর বিশ্বাস নেই। চোখে মুখে করুন ছাপ, বারেবারে পায়েলের মাথায় গালে হাত বুলিয়ে কানের কাছে বিড়বিড় করে চোখ খুলতে অনুরোধ করে। পায়েল অজ্ঞান, অঙ্কনের কাতর ডাক পায়েলের কানে পৌঁছায় না।
দেবায়ন চোখ বন্ধ করে একবার ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানায়। তারপরে ধিমানকে বলে, “তুই এদের নিয়ে বেরিয়ে যা। রুদ্রের ফোন থেকে একবার পরাশরকে ফোন করে দে। জারিনার বাবাকে এমনিতে বলা আছে, সোজা জারিনার বাড়িতে নিয়ে চলে যাবি। একটা কথা মনে রাখিস, পুলিসে খবর একদম দিবি না।”

ধিমান জিজ্ঞেস করে, “কেন? এটা পুলিস কেস।”

অঙ্কন হুঙ্কার দিয়ে ওঠে, “পুলিস শালা কিছুই করতো না। ওর বাবা মা যে কমপ্লেন করেনি। কেন যাবো পুলিসের কাছে? আমি ওদের খুন করে তবে যাবো।”

দেবায়ন অঙ্কনকে শান্ত করে বলে, “তুই তোর মিষ্টিকে পেয়ে গেছিস। এবারে তুই ওকে নিয়ে বেরিয়ে যা এখান থেকে। বাকিদের কি করতে হয় আমি দেখে নেব।”

রুদ্রের ফোন থেকে অনুপমাকে ফোন করে দেবায়ন, “পায়েলকে পাওয়া গেছে। ভাই আর ঋতুপর্ণা পায়েলকে নিয়ে এখুনি রওনা দিচ্ছে। তুমি শ্রেয়াকে নিয়ে জারিনার বাড়িতে চলে যাও। পরাশরকে বলবে পার্ক সার্কাসের মোড়ে দাঁড়াতে। ওইখানে থেকে এদের নিয়ে জারিনার বাড়িতে চলে যায় যেন। পরাশরকে বলে দেবে যেন ওর কাকা এইসবের কিছু জানতে না পারে।”

অনুপমা কেঁদে ফেলে দেবায়নের কথা শুনে, “তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো আমার কাছে। বড় দেখতে ইচ্ছে করছে ওকে।”

শ্রেয়া বলে, “তুই চিন্তা করিস না, আমি ঠিক করে নেব খানে। তুই কখন আসবি?”

দেবায়নঃ “এখানে এখন কাজ বাকি তারপরে আমি আসবো। আর হ্যাঁ একবার আমার মাকে জানিয়ে দিস যে পায়েলকে পাওয়া গেছে।”

ঋতুপর্ণা বেরিয়ে যাবার আগে ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে দেবায়ন আর রূপককে বলে, “এরা যেন কালকের সূর্য না দেখতে পারে সেই ব্যাবস্থা করবে।”

দেবায়ন বলে, “তুমি শুধু পায়েলকে একটু দেখো, প্লিস। আমরা ছাড়া ওর আর কেউ দেখার নেই মনে হয়।”

রুদ্র ওর কয়েক জন বন্ধুকে বলে অঙ্কনদের গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। ধিমান থাকতে চাইলে দেবায়ন বলে যে গাড়িতে ওকে দরকার। একা ঋতুপর্ণা আর অঙ্কন হয়তো পায়েলকে সামলাতে পারবে না। পায়েলের নিঃসাড় দেহ, অঙ্কন কোলে তুলে নেয়। ধিমান বেরিয়ে যাবার আগে, রাগের বশে বিনয়কে খান পাঁচেক সজোরে লাথি মেরে বেরিয়ে পড়ে। দেবায়ন বলে, কোলকাতা পৌঁছে যেন রুদ্রের ফোনে একবার ফোন করে জানিয়ে দেয় ওদের সংবাদ। ধিমান মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয় যে সব সংবাদ দিয়ে দেবে। পায়েলকে নিয়ে বেরিয়ে যায় সবাই।
দেবায়ন অন্য ঘরে ঢোকে, একটা হ্যারিকেন ছাড়া আর কোন আলো নেই। বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর মুখ হাত পা বাঁধা। রুদ্র রূপক আর বাকিরা, ছেলে দুটোকে বেঁধে বেশ মার মেরেছে। শুধু গোঙানো ছাড়া আর কোন আওয়াজ বের হয় না ছেলেগুলোর মুখ থেকে। দুটো ছেলে দেবায়নের দিকে রোষ ভরা চাহনি নিয়ে দেখে।

ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “তোদের মধ্যে বিনয় কে আর অগ্নিহোত্রী কে?” রুদ্র দেখিয়ে দেয় বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে।

দেবায়ন রূপককে বলে, “বিনয়ের মুখ খুলে দে। ওর সাথে আমার কথা আছে।”

রূপক, বিনয়ের মুখ খুলে দিতেই বিনয় চাপা স্বরে চেঁচিয়ে ওঠে, “শালা আমার গায়ে হাত তুলেছিস তুই। তোকে এইখানে পুঁতে ফেলবো। তুই আমাকে চিনিস না।”

রুদ্র গর্জন করে বলে, “তুই বাঞ্চোত জাত শয়তান। তোকে সবাই চেনে।”

দেবায়ন তির্যক হেসে বলে, “সকালের সূর্য দেখতে পেলে তবে না আমাকে পুঁতবি।” দেবায়ন নিজের মোবাইল ফোন রূপকের হাতে ধরিয়ে বলে, “ভিডিও করতে শুরু করে দে। ওদের কাছে আমার অনেক কিছু জানার আছে তারপরে আমি ওদের বিচার করবো।” রুদ্রকে বলে, “বাকিদের বাইরে অপেক্ষা করতে বল। এই কথা শুধু তুমি আমি আর রূপকের মাঝে থাকবে।”

রুদ্র বাকি ছেলেদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলে দেয়। রুদ্রের বন্ধুরা ঘরের বাইরে চলে যায়। রূপক দেবায়নের পেছনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করতে শুরু করে। দেবায়ন বিনয়ের চুলের মুঠি ধরে গালে একটা সপাটে চড় কষিয়ে দেয়। ঠোঁটের কষ ফেটে গিয়ে রক্ত বের হয়। বিনয় কিছু বলার আগেই আরো একটা চড় গালে কষায় দেবায়ন। দেবায়নের কঠিন হাতের চড় খেয়ে বিনয় বুঝতে পারে যে এইবারে সুন্দরবনের বাঘের কবলে পড়েছে।
বিনয় বলে, “বড্ড পাপ করে ফেলেছি। দয়া করে ছেড়ে দাও আমাদের। আমি সত্যি বলছি, কোনদিন পায়েলের দিকে তাকাবো না।”

রুদ্র অগ্নিহোত্রীর মাথার পেছনে সজোরে এক লাথি মেরে বিনয়কে বলে, “বোকাচোদা ছেলে, করার আগে ভাবতে পারিস নি?”
 
দেবায়ন বিনয়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে জিজ্ঞেস করে, “পায়েলকে এই ভাবে ধরে রাখার পেছনে কে?”

বিনয় পাশে পড়ে থাকা অগ্নিহোত্রীর দিকে দেখিয়ে বলে, “আমি কিছু করিনি, আমি কিছু জানিনা। যা করার ওই করেছে পায়েলকে।”

গা জ্বলে ওঠে দেবায়নের। রুদ্র মেঝেতে পড়ে থাকা অগ্নিহোত্রীকে বেশ কয়েকটা লাথি মেরে বলে, “মাদারচোদ আজকে তোর বাড়া কেটে তোকে খাওয়াবো। একটা মেয়েকে এমনভাবে ধরে রেখে কষ্ট দেওয়া বের করে দেবো।”

দেবায়ন বলে, “সব কথা শুরু থেকে বল আমাকে। অগ্নিহোত্রী পায়েলের সাথে প্রেমের নাটক করেছিল কেন? পায়েলের বাবা কোথায়? পায়েলের মায়ের মৃত্যু কি করে হয়েছে? পায়েল এতো দিন কোথায় ছিল? সব কথা বল। এমনিতেও তোরা আজকে মরবি, বলে মরলে তোদের ভালো। পায়েল কোলকাতা চলে গেছে। আমার এক বন্ধুর কাকা ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর। তুই না বললেও, কি করে বলাতে হয় সব কিছু জানা আছে আমাদের কাছে।”

বিনয় কোন রকমে কাতর মিনতি করে বলে, “আমি বলছি, সব বলছি। আসলে, আমার আর অগ্নিহোত্রীর অনেকদিন থেকেই পায়েলের ওপরে নজর ছিল। গত গরমের ছুটিতে পায়েল আমাদের বাড়িতে আসে। পায়েল শয়তানি করে অগ্নিহোত্রীর সাথে মিশে আমাদের মাঝে ঝগড়া বাঁধাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার আর অগ্নিহোত্রীর প্ল্যান অন্য ছিল। আমরা নাটক করলাম যে আমাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়ছে। অগ্নিহোত্রী পায়েলকে খেলিয়ে উঠাতে চেয়েছিল। আমাদের মতলব ছিল যে একবার পায়েলকে এইখানে উঠিয়ে নিয়ে চলে আসবো আর ধরে রাখবো। অগ্নিহোত্রী পায়েলকে ভোগ করবে, পারলে ওকে বিক্রি করে দেওয়া হবে কোথাও। আমার মতলব ছিল মামাকে ব্ল্যাকমেল করে মামার কোটি টাকার বাড়ি নিজের নামে করে নেওয়া। কিন্তু বাধ সাধল কপাল। যেদিন পায়েলকে উঠিয়ে নিয়ে আসার কথা, সেদিন কি করে পায়েল আমাদের দেখে ফেলে আর ওইখান থেকে চলে যায়। সবার সামনে আমাদের সাহস হলো না পায়েলকে জোর করে গাড়িতে তোলার। ইতিমধ্যে দেখলাম একটা ছেলে ট্যাক্সিতে এসে পায়েলকে নিয়ে চলে গেল।”

রূপক আর দেবায়নের গা চিড়বিড় করে জ্বলতে শুরু করে দেয়। রুদ্র অগ্নিহোত্রীর চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় বিক্রি করার মতলবে ছিলিস তোরা?” রুদ্র, অগ্নিহোত্রীর মুখ খুলে দিতেই, অগ্নিহোত্রী কেঁদে দেয় হাউহাউ করে।

অগ্নিহোত্রী বলে, “আমি ওকে বিক্রি করতে চাইনি। আমি ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। বিনয় সব মিথ্যে কথা বলছে।”

বিনয় অগ্নিহোত্রীর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে, “মাদারচোদ ছেলে এখন মিথ্যে বলছিস? এখন মনে হয় তোর অন্য কিছু মতলব ছিল পায়েলকে নিয়ে।”

অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের মাঝে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যায়। দেবায়ন দুইজনের মাথা একসাথে ঠুকে দিয়ে গর্জন করে ওঠে, “চুপ শালা বোকাচোদা ছেলে। বিক্রি করেছিস কি করিস নি, সেটা পরের কথা।” বিনয়কে বলে, “তুই বাকি কথা বল।”

বিনয় বলে, “আমাদের প্ল্যান ভন্ডুল হয়ে গেল। এর বেশ কয়েক মাস পরে একদিন মামা মাকে ফোন করে বলে যে পায়েল নাকি একটা ছেলেকে ভালোবাসে। যে ছেলেটাকে ভালোবাসে সে নাকি পায়েলের বান্ধবীর ভাই। সেই শুনে মা সঙ্গে সঙ্গে সেই রাতেই কোলকাতায় মামার বাড়িতে চলে গেল। মা প্রথমে পায়েলকে বুঝাতে চেষ্টা করে যে এই সব ছেলেদের সাথে মেলা মেশা করা খারাপ। পায়েল কোন কথা শুনতে চায় না, ও বাড়ি থেকে চলে যাবার কথা বলে। সেই কথা শুনে মামা পায়েলকে বেধড়ক মারে। মামী বাধা দিতে এলে মামা মামীকে খুব মারধোর করে। মা ও মামীর উপরে খুব তোলপাড় করে, মামীকে বলে যে মামীর জন্য পায়েল খারাপ হয়ে গেছে। মারধোর করার পরে, মামা পায়েলকে একতলায় মামার চেম্বারের পেছনে একটা ছোটো বাথরুমে বন্ধ করে দেয়। মা মামাকে বুদ্ধি দেয় পায়েলের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিয়ে দিতে। আমি অনেক দিন আগেই মায়ের কান ভাঙিয়ে রেখেছিলাম অগ্নিহোত্রীর কথা বলে। জানতাম একবার যদি অগ্নিহোত্রীর সাথে পায়েলের বিয়ে হয় তাহলে আমিও একটু সুখ পাবো, সেই সাথে কোটি টাকার বাড়ি পেয়ে যাবো।”

দেবায়ন দাঁত পিষে চুপচাপ শুনে যায় ওর কথাবার্তা। রূপক দেবায়নের পেছনে দাঁড়িয়ে সবকিছু মোবাইলে রেকর্ড করে। রুদ্র, অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে।

বিনয় বলে ওর কথা, “সেদিনের পর থেকে পায়েল নিচের বাথরুমে বন্দি হয়ে থাকে। মামা ওকে জোর করে, আর পায়েল জেদ ধরে বসে থাকে সেই অঙ্কন নামের ছেলেটার কাছে যাবে। মামা ওকে বাথরুম থেকে বের হতে দেয় না। ওই দিকে মামী কেঁদে কেঁদে সারা। শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে একদিন মামাকে মারতে যায়। মামা বেগতিক দেখে মামীকে ঘুমের ইঞ্জেকশান দেয় বা ওইরকম কিছু একটার ইঞ্জেকশান দেয়। সেদিনের পর থেকে মামীকে কিছু একটা ইঞ্জেকশান দিয়ে নিস্তেজ করে রেখে দেয় মামা। বাড়িতে বাইরের কারুর প্রবেশ বন্ধ করে দেয়, বাড়ির পুরানো চাকরকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়। আমি মামাকে একদিন ফোন করে সব কথা জিজ্ঞেস করলাম, মামা আমাকে খুব ভালবাসতো, মামা আমাকে সব কথা খুলে বলল। আমি মামাকে বুদ্ধি দিলাম, যে পায়েলকে যেন মামীর সামনে না আসতে দেওয়া হয়। আমি মামাকে বললাম যে এর মাঝে একদিন রাতে পায়েলকে নৈহাটি নিয়ে চলে আসবো। কিন্তু এর মধ্যে একটা গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়লাম আমি, তাই আর সময় মতন কোলকাতা যাওয়া হলো না। ওইদিকে অগ্নিহোত্রী আমাকে রোজ দিন পায়েলের কথা জিজ্ঞেস করতো। আমি ওকে বলতাম যে পায়েল আর মামা এখন আমাদের হাতের পুতুল। যখন খুশি পায়েলকে নিয়ে আসা যায়। আমি জানতাম যে মামা ওকে বাথরুম থেকে কিছুতেই ছাড়বে না। একবার ছাড়া পেলে পায়েল পালিয়ে যাবে। মামা পায়েলের খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে দিল যাতে পায়েলের পালাবার মতন শক্তি না বাঁচে। ওইদিকে মামা রোজদিন মামীকে কোন ইঞ্জেকশান দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে দিতো।”

“কিছুদিন আগে, এক রাতে মামার ফোন। মা চমকে ওঠেন খবর শুনে। মামিমা মারা গেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে মাকে নিয়ে মামাবাড়ি চলে গেলাম। মামা মাকে বললেন যে মামিমাকে রোজ দিন যে ওষুধ বা বিষ দিচ্ছিল সেই কারনে মামিমা মারা গেছেন। কোলকাতায় মামিমার দেহের শেষকৃত্য করতে হলে পুলিস কেস হয়ে যাবে, সবাই আমরা ফেঁসে যাবো। মা মামাকে বলল মামিমার দেহ নৈহাটি নিয়ে চলে আসতে। আমি মামাকে একদিকে ডেকে বললাম যে মামা যদি ওই বাড়ি আমার নামে করে দেয় তাহলে আমি সবকিছু ঠিক করে দেবো। মামা আমাকে বাড়ির দলিল হাতে ধরিয়ে বলে যে আমি এই বাড়ি আমার হয়ে গেল। আমি, মা আর মামা, মামিমার মৃতদেহ সেই রাতে মামার গাড়িতে করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে চলে এলাম। রাতের অন্ধকারে এইখানে বলা হলো যে মামীর হার্ট এটাকে মৃত্যু হয়েছে। এইখানে মানুষকে বোঝানো সহজ, ওইখানে মারা গেলে তোরা পুলিস নিয়ে আসতিস সেটাও একটা ভয় ছিল মামার। তাই এইখানে মামীর শেষকৃত্য করা হয়। পায়েল এই ব্যাপারে কিছুই জানে না। পায়েল জানেই না যে ওর বাবা ওর মাকে ওষুধ দিয়ে মেরে ফেলেছে।”

বিনয়ের কথা শুনে দেবায়ন রাগে কাঁপতে শুরু করে দেয়। গর্জন করে ওঠে বিনয়ের দিকে, “পায়েলের বাবা এখন কোথায়?”

বিনয় বলে, “আমাদের বাড়িতে।”

দেবায়নঃ “তার মানে এতদিন ধরে পায়েল ওই বাথরুমে বন্ধ ছিল। কেউ খেতে পরতে দেয়নি। কি রকম মানুষ ওই ডাক্তার? ওই শালা তোদের বাড়ি চলে আসার পরে পায়েলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেনি?”

বিনয়ঃ “হ্যাঁ করেছিল। আমি বলেছি যে অগ্নিহোত্রী পায়েলকে নিয়ে দিঘা বেড়াতে গেছে। আসলে পায়েলকে ততদিন ওই বাড়িতেই আটকে রাখা হয়েছিল। দুই দিন আগে আমি আর অগ্নিহোত্রী রাতের অন্ধকারে, কোলকাতা গিয়ে পায়েলকে নিয়ে এইখানে রাখি। অগ্নিহোত্রীর প্ল্যান ছিল বেশ কয়েক মাস ওকে রেপ করবে আর তারপরে একদিন ওকে বিক্রি করে দেবে।”

অগ্নিহোত্রী বলে, “বিনয় আমার নামে মিথ্যে বলছে। আমি কিছুই চাইনি ওর কাছ থেকে।”

রুদ্র অগ্নিহোত্রীর চুলের মুঠি ধরে মেঝেতে মুখ ঘষতে ঘষতে জিজ্ঞেস করে, “শালা সত্যি কথা বল, না হলে এখুনি মেরে ফেলে দেবো।”

রূপক রেগে গিয়ে মোবাইল ছেড়ে ছুরি বসাতে যায় বিনয়ের গলায়। দেবায়ন বাধা দেয় রূপককে। রূপক কাঁপতে কাঁপতে গর্জে ওঠে, “এই দুটোকে মেরে ফেলা ভালো।”

দেবায়ন বলে, “দাঁড়া আমার কাজ এখন শেষ হয়নি।”

রুদ্র আর রূপক, দেবায়নের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোর কি মতলব?”

দেবায়ন বড় এক শ্বাস নিয়ে বলে, “দাঁড়া, সময় হলেই জানতে পারবি। এবারে অগ্নিহোত্রীর কথা শুনতে হবে। ওর শুধুমাত্র পায়েলকে বিয়ে করার মতলবে ছিল না, অন্য কিছুর মতলব ছিল।”
 

Users who are viewing this thread

Back
Top