পায়েলের পরে সবাই সঙ্গীতাকে ছেঁকে ধরে ওদের প্রেমের গল্প শোনার জন্য। সঙ্গীতা চোরা চোখে একবার প্রবালের দিকে তাকায়, অনুপমা সঙ্গীতার থুতনি নাড়িয়ে বলে, “বাপরে, যে মেয়ের মুখে কিনা সকাল বিকেল খই ফুটতো সেই মেয়ের চোখে লাজুক হাসি। ও মা গো, রাখি কোথায় এই মেয়েকে।” প্রবালের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে, “মাল আমার জন্মদিনে রান্না করতে করতে আমার সুন্দরী বান্ধবীকে হাতিয়ে নিলি। আমি কি পেলাম? আমার প্রেসেন্ট চাই।”
প্রবাল মাথা নিচু করে লাজুক হেসে অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “কি চাস বল।”
ধিমান চেঁচিয়ে ওঠে, “অনুপমার জন্মদিনের মতন একটা ধাসু পার্টি চাই।”
ওই দিনের পার্টির কথা সব বন্ধু বান্ধবীদের মনে গাঁথা। সঙ্গীতা আর প্রবাল ছিল না কিন্তু সঙ্গীতা জানে সেই রাতে পার্টিতে কি হয়েছিল। সেই কথা মনে পড়ে যেতেই সঙ্গীতার সাথে সাথে অনুপমার মুখ লাল হয়ে যায়। দেবায়ন অনুপমার কানেকানে জিজ্ঞেস করে যে পার্টি একটা করা যেতেই পারে।
পেছন থেকে সমুদ্র চেঁচিয়ে ওঠে, “হ্যাঁ হ্যাঁ সেদিনের মতন পার্টি চাই।”
ধিমান আর দেবায়ন হেসে ফেলে সমুদ্রের কথা শুনে। দেবায়ন সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে, “শালা চুপ করে যা। বেশি বকলে যেখান থেকে বেরিয়েছিস সেখানে ঢুকিয়ে দেবো আবার। বোকাচোদা, নিজের মুরোদ নেই ফাউ খেলে সেদিন পার্টিতে টিঁকে গেলি।” তনিমার দিকে সবার নজর চলে যায়। তনিমা কোন রকমে শ্রেয়ার পেছনে মুখ লুকিয়ে নেয় লজ্জায়।
অনুপমা সঙ্গীতা আর প্রবালকে বলে, “তোদের বিয়ে যেদিন হবে সেদিন একটা প্রেসেন্ট নেব।”
দেবায়ন এবারে পরাশরকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে বাল, তুই শালা কি চুপ করে থাকবি?”
রজতঃ “শালা প্রেম করলি তো করলি শেষ পর্যন্ত জারিনা, একজন মুসলিম মেয়েকে? তোর বাড়ির লোক ওর বাড়ির লোক মেনে নেবে? শালা তোকে কেটে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেবে দুই বাড়ির লোক, সেটা ভেবেছিস।”
পরাশরঃ “প্রেম ভালোবাসা ভাই ধর্ম মানে না। জারিনা আর আমি ভালোভাবে জানি আমরা কি করছি, এর পরিণতি তুই যা বলেছিস, সেটা ঘটার সম্ভাবনা আশি থেকে নব্বুই শতাংশ। তবে ওই যে বাকি থাকে দশ শতাংশ, আমরা আমাদের ভালোবাসা দিয়ে নিজেদের আত্মীয় স্বজন পরিবারকে বুঝাতে চেষ্টা করবো। যদি শেষ পর্যন্ত না হয় আমাদের মিল, তাহলে দেখা যাবে।”
সবাই হ্যাঁ হ্যাঁ করে ওঠে। বাধ্য হয়ে পরাশর মাথা চুলকিয়ে ওদের প্রেমকাহিনী গোড়া থেকে বলতে শুরু করে, “গত অক্টোবরে ঠিক পুজো শেষ হয়ে গেছে। এক সন্ধ্যেবেলায় আমি পার্ক সার্কাস ময়দানের কাছে দাঁড়িয়ে, বাড়ি যাবো বলে বাসের অপেক্ষা করছি। ঠিক পাশ দিয়ে একদল মেয়ে হেঁটে গেল, তার মধ্যে একজন ভারী সুন্দরী দেখতে। পাশের মেয়েদের সাথে দেখে বুঝলাম যে ও মুসলিম, কিন্তু জারিনাকে দেখে একদম মনে হয় না। জারিনাকে দেখে মনে হলো যেন স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে একটা ডানা কাটা পরী, ওর দিক থেকে আর চোখ ফেরাতে পারলাম না। হাতে স্কুলের ব্যাগ, পরনে স্কুল ড্রেস দেখে বুঝতে পারলাম যে স্কুলে পড়ে, কিন্তু বেশ ডাগর দেহের কাঠামো। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে কিছু দুর ওদের পেছন পেছন হাঁটলাম। ওদের কথাবার্তা শুনে বুঝলাম ওরা কোচিং থেকে ফিরছে। তারপরে কলেজ ছুটি হলেই আমি পার্ক সার্কাস মোড়ে চলে যেতাম। প্রায় দিন আমি ওখানে ওর জন্য দাঁড়িয়ে থাকতাম ওই সময়ে। কোনদিন দেখা হতো, কোনদিন হতো না। মাঝে মাঝে জারিনা হাঁটতে হাঁটতে পেছনে তাকাতো, আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তাম। আবার যেই ওরা হাঁটতে শুরু করতো আমি ওদের পিছু নিতাম। ওই দুই পা চলেই ওর প্রেমে পড়ে গেলাম আমি, জানি না তখন কি করবো। কিন্তু জারিনার চোখের অধরা ভাষা আর রুপের টান প্রতিদিন বিকেলে আমাকে টেনে নিয়ে যেতো ওই পার্ক সার্কাস মোড়ে। রোজদিন চোখে চোখে কথা হতো কিন্তু মুখে কিছু বলার সাহস পেতাম না।”
অনুপমা, শ্রেয়া সবাই মাথা নাড়ায়, “তুই শালা সত্যি একটা সুন্দরীকে লাইন মেরেছিস। এবারে শালা বিয়ের পিঁড়িতে যাবি না কবর খানায় যাবি সেটাই দেখার।”
দেবায়ন অনুপমাকে থামিয়ে দিয়ে পরাশরকে বলে, “বাল, শুধু চোখেই দেখা না আরও কিছু হলো। শালা, লাইনে আনলি কি করে?”
পরাশরঃ “বলছি বাড়া, বলছি। প্রত্যেক দিন ওর জন্য অপেক্ষা করতে যেন আমার ভালো লাগতো। জারিনা মাঝে মাঝে হাঁটার গতি কমিয়ে দিতো, আমি বুঝতে পারতাম বেশ। ওই শুধু চলার পথের সাথী হিসাবে একটু বেশিক্ষণ দেখা হতো আমাদের। এর মাঝে ব্যাগড়া বাধায় চার পাঁচ খানা ছেলে, রোজ ওরা ওইসময়ে ওই খানে দাঁড়িয়ে থাকে আর মেয়েদের দেখে কমেন্ট মারে। মেয়েগুলো কোনোরকমে ওদের না দেখে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। মাঝে মাঝে জারিনা আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে থাকতো যখন ওই ছেলেরা কমেন্ট করতো। একদিন মাথা খারাপ করা ব্যাপার হলো। রাস্তায় কিছু একটা পড়েছিল আর তাতে হোঁচট খেয়ে জারিনা পড়ে গেল। বইয়ের ব্যাগ হাত থেকে ছিটকে গেল ওই ছেলেদের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেগুলোর হাসি আর লুটোপুটি। একটা ছেলে ব্যাগ তুলে দিতে এসে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বেশ উগ্র মন্তব্য করলো। আমার মাথায় রক্ত চেপে গেল সেই দেখে। শালা একদম ফিল্মি হিরোর মতন একটাকে ধরলাম আর কষিয়ে গালে একটা চড় কসালাম। ছেলে গুলোর বয়স বেশি না তবে শালা বাঞ্চোতদের দেখে মনে হচ্ছিল চুল্লু খাওয়া মাল। একটা ছেলে ছুরি বের করে আমাকে মারতে তেড়ে আসে। আমি যাকে ধরেছিলাম, তার শ্বাস নলি চেপে বললাম ছুরি দেখালে ওখানেই ওর গলা টিপে দেবো। হই হট্টগোলে মেয়েরা বেশ ভয় পেয়ে গেল। এমন সময়ে একজন মাথার পেছনে বাড়ি মারল, আমি তাও যে ছেলেটাকে ধরেছিলাম তাকে ছাড়লাম না। ততক্ষণে জারিনা আর বাকি মেয়েরা চিৎকার করে লোকজন জড়ো করে ফেলে। বাকি ছেলেগুলো পালিয়ে যায় কিন্তু একটাকে ধরে রেখেছিলাম। লোকজন জড়ো হয়ে যে ছেলেটাকে ধরেছিল তাকে মারতে মারতে চলে গেল। আমার মাথায় যে বাড়ি মেরেছিল সেখানে বেশ ব্যাথা করছিল, ফুলে উঠেছিল। মাথায় হাত দিয়ে দেখি রক্ত পড়ছে। জারিনা আর মেয়েরা আমার মাথা থেকে রক্ত দেখে ঘাবড়ে যায়। আমি মাথায় হাত দিয়ে রাস্তায় বসে পড়লাম, জারিনা দৌড়ে এল আমার দিকে। ওর ভয়ার্ত মুখ দেখে আমার রক্ত বন্ধ, ব্যাথা বন্ধ হয়ে গেল। জারিনা সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে আর একজনের জলের বোতল থেকে জল নিয়ে ভিজিয়ে আমার মাথায় চেপে ধরে। ওর নরম তুলতুলে আঙুলের স্পর্শে, মাথার ব্যাথা উধাও হয়ে বুকের ব্যাথা শুরু করে দেয়।”
রজতঃ “উরি বাস, একদম শাহরুক খান স্টাইল মেরেছিস। তারপরে কি মাথা ফাটা নিয়ে বাড়ি গেলি নাকি?”
পরাশর, “না রে, একবার ভেবেছিলাম যে কাকাকে একটা ফোন করি। আমার ছোটো কাকা, লালবাজার ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর, তারপরে ভাবলাম এতো ছোটো ব্যাপারে আর কাকাকে জ্বালাতন করা কেন। জারিনা জানাল ওর বাবা ডাক্তার, পাশেই ওদের বাড়ি। ওর বাবা বাড়িতেই আছেন। আমাকে নিয়ে ওদের বাড়িতে গেল। ব্যাস, একদম মাথায় বাড়ি খেয়ে রক্ত নিয়ে হিরোর এন্ট্রি নিলাম। জারিনাদের বেশ বড় দোতলা বাড়ি, পার্ক সার্কাস মোড় থেকে একটু ভেতরে। একতলায় ভাড়াটে আর ওর বাবার একটা চেম্বার। বিকেলে ওর বাবা চেম্বারে ছিলেন। বাড়িতে ঢোকার পরে জারিনার একদম অন্য রুপ। রাস্তায় বান্ধবীদের সাথে কোনদিন বেশি কথা বলতে শুনিনি কিন্তু বাড়িতে ওর মুখে যেন খই ফুটছে। ওর আম্মিজানের কাছে আমার কত তারিফ, কত কিছু। ওর আব্বাজান, ডক্টর মিসবাউল মতিন আন্সারি, পিজি হস্পিটালের মেডিসিনের প্রফেসার। ওর বড় ভাই সঙ্গে সঙ্গে নিচে গিয়ে ওর বাবাকে ডেকে নিয়ে আসে। মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা হলো, মিষ্টি খাওয়ানো হলো। পরিচয় পর্ব শেষ হলো। ওর দাদা, দানিস আন্সারি, দুর্গাপুর আর.ই কলেজে মেকানিকাল নিয়ে ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। ওর মা, নাজমা আন্টি খুব ভালো একদম মাটির মানুষ। কথায় কথায় জানতে পারলাম যে ঢাকায় ওদের মামাবাড়ি। ওর মায়ের সাথে কথাবার্তা পরিচয়ে বিশেষ গোঁড়া বলে মনে হলো না। কেননা ওকে অথবা ওর মাকে বোরখা পড়তে দেখিনি। কথার ছলে একসময়ে জারিনা আমার ফোন নাম্বার নেয়।”
দেবায়নঃ “বোকাচোদা গাঁড় মেরেছে। প্রপোসালের আগেই শ্বশুর বাড়ি এন্ট্রি মেরে দিলি? তোকে কিমা বানিয়ে দেয়নি ওর বাবা? তুই মাল বাড়িতে কি বললি বে? তোর বাবা জেঠা কি বলল?”
পরাশরঃ “না রে ওদের বাড়িতে ওদের দেখে আমার সেই রকম মনে হয়নি। মেয়েকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছি বলে আর জারিনার হাসির ফোয়ারা দেখে মনে হয় আঙ্কেলের আমাকে একটু ভালো লেগে যায়। বাড়ি ফিরে আসার পরে মা জিজ্ঞেস করলো আমার মাথা ফাটার কথা, আমি বানিয়ে একটা গল্প বললাম। ঘুমাতে গেলাম কিন্তু চোখের সামনে জারিনার মুখ ভেসে ওঠে। কিন্তু আমার মনে সংশয় থেকে গেল, সত্যি কি জারিনা আমার প্রেমে পড়বে? সংশয় দূর হয় গভীর রাতে। প্রায় রাত একটা বাজে, এক অজানা নাম্বার থেকে ফোন এল আমার কাছে। অন্য দিকে একটা মেয়ের গলা, প্রথমেই আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি কেমন আছি, আমার মাথার ব্যাথা কেমন আছে। আমি থ, রাত দেড়টার সময়ে একটা মেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছে আমি কেমন আছি। আমি তখুনি ভেবে দেখলাম মেয়েটা জারিনা ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। ব্যাস আর কি, শুরু হলো আমাদের লুকিয়ে প্রেম। আমি রোজ কলেজ ফেরত পার্ক সার্কাস মোড়ে ওর জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম। ঠিক সময়ে ওরা যখন আসতো, তখন বাকিরা জারিনাকে ছেড়ে একটু এগিয়ে যেতো। বাস স্টান্ড থেকে ওর বাড়ির দরজা পর্যন্ত পাশাপাশি হাঁটা। এইটুকু আমাদের হাতে প্রেমের সময়, গল্প করার সময়। আমি শুধু ওর সারাদিনের গল্প শুনতাম, কানের মধ্যে ওর গলার আওয়াজ ভরে উঠতো কিন্তু মন ভরতো না। তাই রাতে ওর বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পরে আমি ওকে ফোন করতাম, রাত দেড়টা দুটো কোনদিন সকাল চারটে পর্যন্ত ফোনে গল্প করে কাটিয়েছি।”
অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “উম্মম্ম দারুন প্রেম করেছিস মাইরি। প্রোপোস করেছিস কবে? কি ভাবে করলি একটু শুনি?”
পরাশরঃ “দাঁড়া দাঁড়া, এতো তাড়াহুড়ো করলে গল্পের ধারা মাটি হয়ে যাবে। প্রোপোস করেছিলাম এক অদ্ভুত ভাবে, ঠিক ভাবিনি সেদিন যে আমি ওকে প্রোপোস করবো। প্রথম দিকে একা বের হতে বেশ ভয় ভয় করতো, ওই যা রাস্তায় কথা। আমি একদিন জিজ্ঞেস করলাম আমার সাথে একা ঘুরতে যেতে ওর কোন অসুবিধে আছে নাকি। একা আমি আর ও বেড়াতে যাবো শুনে ওর চোখেমুখে খুশির ছোঁয়া লাগে। আমি ওকে পরীক্ষার আগে একবার দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু একটু সংশয় ছিল, জারিনা যাবে কি না। ভয়ে ভয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম, মন্দিরে যাবার কথা। আমাকে হেসে বলল, নিশ্চয় যাবে বলল আমি ওকে নিয়ে যদি জাহান্নামে যাই তাহলে ও সানন্দে আমার সাথে যেতে রাজি। সেদিন আমাকে আরেকটা কথা বললো, বললো যে ভগবান মানুষের বিশ্বাসে থাকে, ভগবান মানুষের ভালোবাসায় থাকে। ভালোবাসা যেমন মন্দির মসজিদ দেখে না, তেমনি ভগবান হিন্দু মুসলিম শিখ ক্রিস্টান দেখে না। অনেক বড় কথা বলেছিল ওই ছোটো মেয়েটা আমাকে। সত্যি বলছি, মন্দিরে গিয়ে আমি দেখলাম ওর ভক্তি। মন্দিরে বেশির ভাগ মানুষকে দেখলাম শুধু পাথরের মূর্তিকে প্রনাম করতে, সেখানে জারিনাকে দেখলাম যেন নিজের মাকে প্রনাম করছে। কপালে মন্দিরের সিঁদুরের টিপ পরে তাকিয়েছিল আমার দিকে, হাঁ হয়ে গেছিলাম ওর মুখ দেখে। সেদিন মনে হয়েছিল ওই মন্দির প্রাঙ্গনে ওকে জড়িয়ে ধরি। তারপরে ওর পরীক্ষা চলে এল মার্চে, খুব ভয়। সে কয়দিন আর দেখা হলো না। পরীক্ষার পরে দেখা সাক্ষাৎ একটু কমে যায়, বাড়ি ছেড়ে বের হতে পারে না। বাড়ি থেকে বের হলে সাথে ওর এক বান্ধবী, আহীদাকে নিয়ে আসতো। লুকিয়ে চুরিয়ে বেশ কয়েকবার সিনেমা দেখতে গেছি তিনজনে, ব্যাস আর কি। তবে মাঝে মাঝে আহীদা আমাদের ছেড়ে দিতো, শুধু বলে দিতো যে বাড়ি ফেরার আগে যেন ওকে একটা ফোন করে দেওয়া হয় তাহলে আহীদা পার্ক সার্কাস মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।”
প্রবাল মাথা নিচু করে লাজুক হেসে অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “কি চাস বল।”
ধিমান চেঁচিয়ে ওঠে, “অনুপমার জন্মদিনের মতন একটা ধাসু পার্টি চাই।”
ওই দিনের পার্টির কথা সব বন্ধু বান্ধবীদের মনে গাঁথা। সঙ্গীতা আর প্রবাল ছিল না কিন্তু সঙ্গীতা জানে সেই রাতে পার্টিতে কি হয়েছিল। সেই কথা মনে পড়ে যেতেই সঙ্গীতার সাথে সাথে অনুপমার মুখ লাল হয়ে যায়। দেবায়ন অনুপমার কানেকানে জিজ্ঞেস করে যে পার্টি একটা করা যেতেই পারে।
পেছন থেকে সমুদ্র চেঁচিয়ে ওঠে, “হ্যাঁ হ্যাঁ সেদিনের মতন পার্টি চাই।”
ধিমান আর দেবায়ন হেসে ফেলে সমুদ্রের কথা শুনে। দেবায়ন সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে, “শালা চুপ করে যা। বেশি বকলে যেখান থেকে বেরিয়েছিস সেখানে ঢুকিয়ে দেবো আবার। বোকাচোদা, নিজের মুরোদ নেই ফাউ খেলে সেদিন পার্টিতে টিঁকে গেলি।” তনিমার দিকে সবার নজর চলে যায়। তনিমা কোন রকমে শ্রেয়ার পেছনে মুখ লুকিয়ে নেয় লজ্জায়।
অনুপমা সঙ্গীতা আর প্রবালকে বলে, “তোদের বিয়ে যেদিন হবে সেদিন একটা প্রেসেন্ট নেব।”
দেবায়ন এবারে পরাশরকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে বাল, তুই শালা কি চুপ করে থাকবি?”
রজতঃ “শালা প্রেম করলি তো করলি শেষ পর্যন্ত জারিনা, একজন মুসলিম মেয়েকে? তোর বাড়ির লোক ওর বাড়ির লোক মেনে নেবে? শালা তোকে কেটে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেবে দুই বাড়ির লোক, সেটা ভেবেছিস।”
পরাশরঃ “প্রেম ভালোবাসা ভাই ধর্ম মানে না। জারিনা আর আমি ভালোভাবে জানি আমরা কি করছি, এর পরিণতি তুই যা বলেছিস, সেটা ঘটার সম্ভাবনা আশি থেকে নব্বুই শতাংশ। তবে ওই যে বাকি থাকে দশ শতাংশ, আমরা আমাদের ভালোবাসা দিয়ে নিজেদের আত্মীয় স্বজন পরিবারকে বুঝাতে চেষ্টা করবো। যদি শেষ পর্যন্ত না হয় আমাদের মিল, তাহলে দেখা যাবে।”
সবাই হ্যাঁ হ্যাঁ করে ওঠে। বাধ্য হয়ে পরাশর মাথা চুলকিয়ে ওদের প্রেমকাহিনী গোড়া থেকে বলতে শুরু করে, “গত অক্টোবরে ঠিক পুজো শেষ হয়ে গেছে। এক সন্ধ্যেবেলায় আমি পার্ক সার্কাস ময়দানের কাছে দাঁড়িয়ে, বাড়ি যাবো বলে বাসের অপেক্ষা করছি। ঠিক পাশ দিয়ে একদল মেয়ে হেঁটে গেল, তার মধ্যে একজন ভারী সুন্দরী দেখতে। পাশের মেয়েদের সাথে দেখে বুঝলাম যে ও মুসলিম, কিন্তু জারিনাকে দেখে একদম মনে হয় না। জারিনাকে দেখে মনে হলো যেন স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে একটা ডানা কাটা পরী, ওর দিক থেকে আর চোখ ফেরাতে পারলাম না। হাতে স্কুলের ব্যাগ, পরনে স্কুল ড্রেস দেখে বুঝতে পারলাম যে স্কুলে পড়ে, কিন্তু বেশ ডাগর দেহের কাঠামো। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে কিছু দুর ওদের পেছন পেছন হাঁটলাম। ওদের কথাবার্তা শুনে বুঝলাম ওরা কোচিং থেকে ফিরছে। তারপরে কলেজ ছুটি হলেই আমি পার্ক সার্কাস মোড়ে চলে যেতাম। প্রায় দিন আমি ওখানে ওর জন্য দাঁড়িয়ে থাকতাম ওই সময়ে। কোনদিন দেখা হতো, কোনদিন হতো না। মাঝে মাঝে জারিনা হাঁটতে হাঁটতে পেছনে তাকাতো, আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তাম। আবার যেই ওরা হাঁটতে শুরু করতো আমি ওদের পিছু নিতাম। ওই দুই পা চলেই ওর প্রেমে পড়ে গেলাম আমি, জানি না তখন কি করবো। কিন্তু জারিনার চোখের অধরা ভাষা আর রুপের টান প্রতিদিন বিকেলে আমাকে টেনে নিয়ে যেতো ওই পার্ক সার্কাস মোড়ে। রোজদিন চোখে চোখে কথা হতো কিন্তু মুখে কিছু বলার সাহস পেতাম না।”
অনুপমা, শ্রেয়া সবাই মাথা নাড়ায়, “তুই শালা সত্যি একটা সুন্দরীকে লাইন মেরেছিস। এবারে শালা বিয়ের পিঁড়িতে যাবি না কবর খানায় যাবি সেটাই দেখার।”
দেবায়ন অনুপমাকে থামিয়ে দিয়ে পরাশরকে বলে, “বাল, শুধু চোখেই দেখা না আরও কিছু হলো। শালা, লাইনে আনলি কি করে?”
পরাশরঃ “বলছি বাড়া, বলছি। প্রত্যেক দিন ওর জন্য অপেক্ষা করতে যেন আমার ভালো লাগতো। জারিনা মাঝে মাঝে হাঁটার গতি কমিয়ে দিতো, আমি বুঝতে পারতাম বেশ। ওই শুধু চলার পথের সাথী হিসাবে একটু বেশিক্ষণ দেখা হতো আমাদের। এর মাঝে ব্যাগড়া বাধায় চার পাঁচ খানা ছেলে, রোজ ওরা ওইসময়ে ওই খানে দাঁড়িয়ে থাকে আর মেয়েদের দেখে কমেন্ট মারে। মেয়েগুলো কোনোরকমে ওদের না দেখে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। মাঝে মাঝে জারিনা আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে থাকতো যখন ওই ছেলেরা কমেন্ট করতো। একদিন মাথা খারাপ করা ব্যাপার হলো। রাস্তায় কিছু একটা পড়েছিল আর তাতে হোঁচট খেয়ে জারিনা পড়ে গেল। বইয়ের ব্যাগ হাত থেকে ছিটকে গেল ওই ছেলেদের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেগুলোর হাসি আর লুটোপুটি। একটা ছেলে ব্যাগ তুলে দিতে এসে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বেশ উগ্র মন্তব্য করলো। আমার মাথায় রক্ত চেপে গেল সেই দেখে। শালা একদম ফিল্মি হিরোর মতন একটাকে ধরলাম আর কষিয়ে গালে একটা চড় কসালাম। ছেলে গুলোর বয়স বেশি না তবে শালা বাঞ্চোতদের দেখে মনে হচ্ছিল চুল্লু খাওয়া মাল। একটা ছেলে ছুরি বের করে আমাকে মারতে তেড়ে আসে। আমি যাকে ধরেছিলাম, তার শ্বাস নলি চেপে বললাম ছুরি দেখালে ওখানেই ওর গলা টিপে দেবো। হই হট্টগোলে মেয়েরা বেশ ভয় পেয়ে গেল। এমন সময়ে একজন মাথার পেছনে বাড়ি মারল, আমি তাও যে ছেলেটাকে ধরেছিলাম তাকে ছাড়লাম না। ততক্ষণে জারিনা আর বাকি মেয়েরা চিৎকার করে লোকজন জড়ো করে ফেলে। বাকি ছেলেগুলো পালিয়ে যায় কিন্তু একটাকে ধরে রেখেছিলাম। লোকজন জড়ো হয়ে যে ছেলেটাকে ধরেছিল তাকে মারতে মারতে চলে গেল। আমার মাথায় যে বাড়ি মেরেছিল সেখানে বেশ ব্যাথা করছিল, ফুলে উঠেছিল। মাথায় হাত দিয়ে দেখি রক্ত পড়ছে। জারিনা আর মেয়েরা আমার মাথা থেকে রক্ত দেখে ঘাবড়ে যায়। আমি মাথায় হাত দিয়ে রাস্তায় বসে পড়লাম, জারিনা দৌড়ে এল আমার দিকে। ওর ভয়ার্ত মুখ দেখে আমার রক্ত বন্ধ, ব্যাথা বন্ধ হয়ে গেল। জারিনা সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে আর একজনের জলের বোতল থেকে জল নিয়ে ভিজিয়ে আমার মাথায় চেপে ধরে। ওর নরম তুলতুলে আঙুলের স্পর্শে, মাথার ব্যাথা উধাও হয়ে বুকের ব্যাথা শুরু করে দেয়।”
রজতঃ “উরি বাস, একদম শাহরুক খান স্টাইল মেরেছিস। তারপরে কি মাথা ফাটা নিয়ে বাড়ি গেলি নাকি?”
পরাশর, “না রে, একবার ভেবেছিলাম যে কাকাকে একটা ফোন করি। আমার ছোটো কাকা, লালবাজার ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর, তারপরে ভাবলাম এতো ছোটো ব্যাপারে আর কাকাকে জ্বালাতন করা কেন। জারিনা জানাল ওর বাবা ডাক্তার, পাশেই ওদের বাড়ি। ওর বাবা বাড়িতেই আছেন। আমাকে নিয়ে ওদের বাড়িতে গেল। ব্যাস, একদম মাথায় বাড়ি খেয়ে রক্ত নিয়ে হিরোর এন্ট্রি নিলাম। জারিনাদের বেশ বড় দোতলা বাড়ি, পার্ক সার্কাস মোড় থেকে একটু ভেতরে। একতলায় ভাড়াটে আর ওর বাবার একটা চেম্বার। বিকেলে ওর বাবা চেম্বারে ছিলেন। বাড়িতে ঢোকার পরে জারিনার একদম অন্য রুপ। রাস্তায় বান্ধবীদের সাথে কোনদিন বেশি কথা বলতে শুনিনি কিন্তু বাড়িতে ওর মুখে যেন খই ফুটছে। ওর আম্মিজানের কাছে আমার কত তারিফ, কত কিছু। ওর আব্বাজান, ডক্টর মিসবাউল মতিন আন্সারি, পিজি হস্পিটালের মেডিসিনের প্রফেসার। ওর বড় ভাই সঙ্গে সঙ্গে নিচে গিয়ে ওর বাবাকে ডেকে নিয়ে আসে। মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা হলো, মিষ্টি খাওয়ানো হলো। পরিচয় পর্ব শেষ হলো। ওর দাদা, দানিস আন্সারি, দুর্গাপুর আর.ই কলেজে মেকানিকাল নিয়ে ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। ওর মা, নাজমা আন্টি খুব ভালো একদম মাটির মানুষ। কথায় কথায় জানতে পারলাম যে ঢাকায় ওদের মামাবাড়ি। ওর মায়ের সাথে কথাবার্তা পরিচয়ে বিশেষ গোঁড়া বলে মনে হলো না। কেননা ওকে অথবা ওর মাকে বোরখা পড়তে দেখিনি। কথার ছলে একসময়ে জারিনা আমার ফোন নাম্বার নেয়।”
দেবায়নঃ “বোকাচোদা গাঁড় মেরেছে। প্রপোসালের আগেই শ্বশুর বাড়ি এন্ট্রি মেরে দিলি? তোকে কিমা বানিয়ে দেয়নি ওর বাবা? তুই মাল বাড়িতে কি বললি বে? তোর বাবা জেঠা কি বলল?”
পরাশরঃ “না রে ওদের বাড়িতে ওদের দেখে আমার সেই রকম মনে হয়নি। মেয়েকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছি বলে আর জারিনার হাসির ফোয়ারা দেখে মনে হয় আঙ্কেলের আমাকে একটু ভালো লেগে যায়। বাড়ি ফিরে আসার পরে মা জিজ্ঞেস করলো আমার মাথা ফাটার কথা, আমি বানিয়ে একটা গল্প বললাম। ঘুমাতে গেলাম কিন্তু চোখের সামনে জারিনার মুখ ভেসে ওঠে। কিন্তু আমার মনে সংশয় থেকে গেল, সত্যি কি জারিনা আমার প্রেমে পড়বে? সংশয় দূর হয় গভীর রাতে। প্রায় রাত একটা বাজে, এক অজানা নাম্বার থেকে ফোন এল আমার কাছে। অন্য দিকে একটা মেয়ের গলা, প্রথমেই আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি কেমন আছি, আমার মাথার ব্যাথা কেমন আছে। আমি থ, রাত দেড়টার সময়ে একটা মেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছে আমি কেমন আছি। আমি তখুনি ভেবে দেখলাম মেয়েটা জারিনা ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। ব্যাস আর কি, শুরু হলো আমাদের লুকিয়ে প্রেম। আমি রোজ কলেজ ফেরত পার্ক সার্কাস মোড়ে ওর জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম। ঠিক সময়ে ওরা যখন আসতো, তখন বাকিরা জারিনাকে ছেড়ে একটু এগিয়ে যেতো। বাস স্টান্ড থেকে ওর বাড়ির দরজা পর্যন্ত পাশাপাশি হাঁটা। এইটুকু আমাদের হাতে প্রেমের সময়, গল্প করার সময়। আমি শুধু ওর সারাদিনের গল্প শুনতাম, কানের মধ্যে ওর গলার আওয়াজ ভরে উঠতো কিন্তু মন ভরতো না। তাই রাতে ওর বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পরে আমি ওকে ফোন করতাম, রাত দেড়টা দুটো কোনদিন সকাল চারটে পর্যন্ত ফোনে গল্প করে কাটিয়েছি।”
অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “উম্মম্ম দারুন প্রেম করেছিস মাইরি। প্রোপোস করেছিস কবে? কি ভাবে করলি একটু শুনি?”
পরাশরঃ “দাঁড়া দাঁড়া, এতো তাড়াহুড়ো করলে গল্পের ধারা মাটি হয়ে যাবে। প্রোপোস করেছিলাম এক অদ্ভুত ভাবে, ঠিক ভাবিনি সেদিন যে আমি ওকে প্রোপোস করবো। প্রথম দিকে একা বের হতে বেশ ভয় ভয় করতো, ওই যা রাস্তায় কথা। আমি একদিন জিজ্ঞেস করলাম আমার সাথে একা ঘুরতে যেতে ওর কোন অসুবিধে আছে নাকি। একা আমি আর ও বেড়াতে যাবো শুনে ওর চোখেমুখে খুশির ছোঁয়া লাগে। আমি ওকে পরীক্ষার আগে একবার দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু একটু সংশয় ছিল, জারিনা যাবে কি না। ভয়ে ভয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম, মন্দিরে যাবার কথা। আমাকে হেসে বলল, নিশ্চয় যাবে বলল আমি ওকে নিয়ে যদি জাহান্নামে যাই তাহলে ও সানন্দে আমার সাথে যেতে রাজি। সেদিন আমাকে আরেকটা কথা বললো, বললো যে ভগবান মানুষের বিশ্বাসে থাকে, ভগবান মানুষের ভালোবাসায় থাকে। ভালোবাসা যেমন মন্দির মসজিদ দেখে না, তেমনি ভগবান হিন্দু মুসলিম শিখ ক্রিস্টান দেখে না। অনেক বড় কথা বলেছিল ওই ছোটো মেয়েটা আমাকে। সত্যি বলছি, মন্দিরে গিয়ে আমি দেখলাম ওর ভক্তি। মন্দিরে বেশির ভাগ মানুষকে দেখলাম শুধু পাথরের মূর্তিকে প্রনাম করতে, সেখানে জারিনাকে দেখলাম যেন নিজের মাকে প্রনাম করছে। কপালে মন্দিরের সিঁদুরের টিপ পরে তাকিয়েছিল আমার দিকে, হাঁ হয়ে গেছিলাম ওর মুখ দেখে। সেদিন মনে হয়েছিল ওই মন্দির প্রাঙ্গনে ওকে জড়িয়ে ধরি। তারপরে ওর পরীক্ষা চলে এল মার্চে, খুব ভয়। সে কয়দিন আর দেখা হলো না। পরীক্ষার পরে দেখা সাক্ষাৎ একটু কমে যায়, বাড়ি ছেড়ে বের হতে পারে না। বাড়ি থেকে বের হলে সাথে ওর এক বান্ধবী, আহীদাকে নিয়ে আসতো। লুকিয়ে চুরিয়ে বেশ কয়েকবার সিনেমা দেখতে গেছি তিনজনে, ব্যাস আর কি। তবে মাঝে মাঝে আহীদা আমাদের ছেড়ে দিতো, শুধু বলে দিতো যে বাড়ি ফেরার আগে যেন ওকে একটা ফোন করে দেওয়া হয় তাহলে আহীদা পার্ক সার্কাস মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।”