What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মন্দের ভালো by nextpage (2 Viewers)

[HIDE]



সাথে সাথে ফোন দিলেও এইবারেও ব্যর্থ ততক্ষণে নাম্বার টা বন্ধ হয়ে গেছে। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে একবার বুঝতে চেষ্টা করে এখানকার কারও কাজ কিনা এটা, বারবার কেন মনে হচ্ছে যেই মেসেজ টা যেই পাঠাক না কেন সে হয়তো ওকে সবসময়ই নজরে রাখছে আবার এটা মনের ভুলও হতে পারে। নিজের রুমে ঢুকতে যাবে তখনি পেছন থেকে রিতা ডেকে উঠে, রুদ্রের ইচ্ছে না থাকলেও ওর ডেস্কের দিকে এগিয়ে যায় ওর মনটা আবারও ঐ মেসেজ আর নাম্বারের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। রুদ্র ডেস্কের কাছাকাছি যেতেই রিতা কিছু একটা আড়াল করলো কয়েকটা কাগজের নিচে, একটু হলেও সেটা রুদ্রের নজরে সেটা পড়েছে কারণ ওর দিক থেকে ডেস্ক টা পুরোটাই দেখা যায়।

-রুদ্র দা অফিসের পর ফ্রি আছো?

-কেন? কোন দরকার?

-বাসায় বিয়ের কথা বলছে, তুমি যাবে আমার সাথে বাসায় আমাকে বিয়ের করার প্রস্তাব নিয়ে।

-এখন মজা করার মোড নেই, কি দরকার সেটা বলো।

-বাহ! দরকার ছাড়া আমার সাথে কোথাও যেতে তোমার সমস্যা হয় বুঝি? থাক তাহলে আর দরকার নেই(আহ্লাদের সাথে অভিমানের সংমিশ্রনে মিলিত স্বরে কথা টা বলে উঠে)

-না তেমনটা নয়, কাজের চাপ আছে তাই আর কি। কোথায়ও যেতে হবে দূরে কি?

-তেমন কোন সমস্যা হবে না, একটু শপিং এ যেতাম কিন্তু আমার কালার সেন্স খুব বাজে তাই তুমি থাকলে একটু ভালো হতো আর কি। সাথে কেউ থাকলে একটা কনফিডেন্স কাজ করে, আর সেই সাথে তোমার পছন্দ কেমন সেটাও দেখা হয়ে গেল।

-(একটু স্ফীত হাসিতে) আমার কালার সেন্স তোমার চেয়েও খারাপ, আমিই তো এখনো মা কিংবা বোনকে সাথে করে নিয়ে যাই। এর চেয়ে ভালো তুমি তোমার বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে যাও সেটাই বেস্ট হবে, বেচারার চয়েস সম্পর্কেও জেনে যাবে।

-বয় ফ্রেন্ড কোথায় পাবো? ভাড়া দেয় নাকি কেউ? তুমি যদি রাজি হতে তবে তো তুমিই হয়ে যেতে (শেষটায় লাজুকতার সাথে মিষ্টতার অনন্য মিশ্রণ) এখন তুমি যাবে কি না সেটা বলো।

-আচ্ছা ফ্রি হলে জানাবো, ঠিক আছে!

-থ্যাংকস রুদ্র দা( কথা বলতে গিয়ে একটু ঘুরতেই একটু আগে কাগজের নিচে লুকানো জিনিসটা অসাবধানতার কারণে নিচে পড়ে যায়। রুদ্র নিচু হয়ে তুলতে গিয়ে দেখে একটা মোবাইল)

-(মোবাইলটা হাতে নিয়ে উপরে উঠতেই দেখে ডেস্কের কোনে আরেকটা মোবাইল রাখা, হাতের মোবাইল বন্ধ হয়ে আছে) তোমার কটা মোবাইল? এটা কোথা থেকে পড়লো।

-(একটু অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গিয়ে) না মানে এটা আমার না। মানে এটা আমার মায়ের মোবাইল কি একটা সমস্যা হয়েছে সার্ভিসিং এ দেবার জন্য নিয়ে এসেছিলাম।

-ওহহ! তাই বলি এত মোবাইল দিয়ে কি করো।

পিয়ন এসে জানিয়ে গেছে ম্যাডাম নাস্তা সেরেই মিটিং এ বসবেন। রুদ্রের মনে হলো মাথা টা কেমন ঝিমঝিম করছে তাই ক্যান্টিনে চলে যায় চা খেতে। ক্যান্টিনে চা এর অর্ডার দিয়ে পেছন ফিরতেই দেখে ম্যানেজার ম্যাডাম পাশের টেবিলেই বসে নাস্তা খাচ্ছে। রুদ্র কখনো ভাবে নি ম্যাডাম ক্যান্টিনে এসে খেতে পারে এটা তো সাধারন স্টাফের জন্যই, বস আর ম্যাডামদের কিছু লাগলে সেটা তাদের রুমেই চলে যায়। রুদ্রের কিছুটা ইতস্তত বোধ হয় চা নিয়ে অন্য পাশে চলে যেতে এগোবে তখনি ম্যাডাম ডেকে উঠে

-কি ব্যাপার মি. রুদ্র, ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন? এখানেও বসতে পারেন কোন সমস্যা নেই।

-না মানে ম্যাডাম আপনি যদি রাগ করেন তাই আর কি।

-(একটা ছোট্ট হাসিতে সকল শঙ্কা উড়িয়ে) আমাকে দেখে কি রাগী মনে হয়? নাকি মুখে লেখা আছে কোথাও? এখানেই বসুন।

-(রুদ্র আর কথা না বাড়িয়ে বসে পড়ে) থ্যাংকস ম্যাডাম। তা ম্যাডাম আপনি এখানে কেন খাচ্ছেন আপনি বললে তো রুমেই চলে যেত।

-কেন? আমার কি এখানে খাওয়া বারণ? আমার তো বেশ লাগছে।

-না বারণ হবে কেন? আগে কখনো দেখিনি তাই, তা আজ বাসায় নাস্তা করা হয় নাই তাই হয়তো?


-তোমার জন্যই তো বাসায় এত কান্ড ঘটিয়ে চলে আসলাম(কথাটা একদম আস্তে করেই বলে)

-কিছু বললেন ম্যাডাম?

-না মানে, এমনি দেরি হয়ে যাচ্ছিলো তাই আর কি।

-(খানিকটা ইতস্ততা নিয়েই) ম্যাডাম একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? যদি কিছু মনে না করেন।

-বলুন।(আড় চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে)

-আপনি কি কোন কারণে কি আমার উপর রেগে আছেন? মানে ঐ দিনের ঘটনার জন্য? আমি কিন্তু সেটার জন্য ক্ষমা চেয়েছি, মন থেকেই অনুশোচনা বোধ হয়েছে আমার। ওমন করে কথা বলা ঠিক হয় নি সেদিন।(একবারও ম্যাডামের দিকে তাকাতে পারেনি কথা গুলো বলার সময়, কেমন একটা বিব্রতবোধ কাজ করছিলো)

-না না, সেটা আমি মনে রাখে নি। সেদিন আমারও ওভাবে রিয়্যাক্ট করা ঠিক হয় নি। আপনার উপর কোন রাগ নেই আমার, এটা আপনার মনের ভুল ধারণা। আমিও সেটার জন্য স্যরি ফিল করেছি, আই এম রিয়েলি স্যরি।(রুদ্রের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে) তা চা তো ঠান্ডা হলো আপনার, এখন না হয় চলুন মিটিং এ একসাথেই চা খাওয়া যাবে।

-ওকে ম্যাডাম (রিদ্ধিমা চৌধুরীকে যতটা গম্ভীর আর রাগী ভেবেছিল ততটা নয় সেটা রুদ্র আজ উপলব্ধি করতে পেরেছে, শুধু শুধুই নিজেকে একটা গাম্ভীর্যতা আর রাগী চেহারার আড়াল রাখে হয়তো এত বড় দায়িত্ব পালন করতে গেলে এমন হতে হয়৷ কিন্তু একটা জিনিস এখনো ক্লিয়ার হলো না রুদ্রের ঐ মেসেজ কে পাঠাচ্ছে? রুপালির উত্তর টা জানা হলো না ওদিকে রিতার ফোন লুকিয়ে রাখা নতুন করে সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে)


-(কি মনে হলো তাই রুদ্রকে একটু চমকে দেবার জন্যই দিতেই বলে উঠলো) কি হলো চলুন, নাকি ঠান্ডা চায়ের মায়াতেই আটকে আছেন মনে হয় চা খুব ভালোবাসেন?

-(ম্যাডামের এমন রসিকতার ছলে বলা কথাতে রুদ্র হতবাক হয়ে যায়) না না ম্যাডাম,তেমন কিছু না ঐসব মায়া টায়া আমার কম। আপনি এগিয়ে যান আমি আসছি

রিদ্ধিমার পেছন পেছন রুদ্র ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে কনফারেন্স রুমের দিকে এগিয়ে যায়...




[/HIDE]
 
[HIDE]

স্কুল শেষে আজ আগের ঠিক করা জায়গায় দেখা করার জন্য যে যার মত স্কুল থেকে বেড়িয়ে গেছে। ছুটকি আগেই এসে গিয়েছিল কফি সপে কিন্তু তনুর আসার নাম নেই। কিছুক্ষণ পরেই ঘেমে নেয়ে একশা অবস্থায় তনু এসে ছুটকির উল্টো দিকের চেয়ারটায় বসে হাঁফাতে থাকে। প্রচন্ড গরমে শহরের অসহনীয় যানজটে জীবনের কি অবস্থা হয় সেটা যারা লোকাল পরিবহনে যাতায়াত করে তাদের অজানা নয়৷ ক্যাফের এসির বাতাসে শরীরটা একটু জুড়িয়ে নিয়ে গত দুদিন আগে বাসায় কি কি ঘটে গেছে তা ছুটকির কাছে একে একে সব বলতে থাকে। তনুর কাছে ওর বাবার কথা শুনে ছুটকিও রাগে ফুসতে থাকে, জ্ঞান হবার পর বাবার অনেক শাসন সামলাতে হয়েছে তাই বলে এমন আচরণ কখনো কারো সাথে করতে দেখে নি সে। আপাতত সেগুলো পাশে রেখে যে কাজটার জন্য এসেছিল সেটা করার দিকে মনোযোগ দেয়, তনু ব্যাগ থেকে মোবাইল আর দিদির মোবাইল থেকে লুকিয়ে জয় দার নাম্বার টা যে কাগজে লিখেছিল সেটা বের করে৷ কিন্তু এখানেও সমস্যা আছে একটা, জয় নামে তিন চারটে নাম্বার সেভ করা ছিল সেটার মাঝে ওদের দরকারের জয় কোনটা সেটা বুঝা মুশকিল তাই সবগুলো নাম্বারই লিখে নিয়ে এসেছে। একেক করে দুটো নাম্বার ট্রাই করা হয়েছে, সরাসরি পরিচয়ও দিতে পারছে না কারণ কেউ যদি আবার দিদি কে ফোন করে জানিয়ে দেয় তবে খুব বকা খাবে এমনিতেই দিদির মেজাজ কয়েকদিন ধরে চটে আছে। ইনিয়ে বিনিয়ে অন্য কথার ছলে আসল জয় কে খোঁজার চেষ্টা চলছে। আরেকটা নাম্বারে ফোন করে তনু, নাহ... কেউ পিক করছে না আরেকবার ট্রাই করে এবারও সারাক্ষণ রিং হয়ে গেল কিন্তু কেউ রিসিভ করলো না। আপাতত এটা বাদ দিয়ে আরেকটা নাম্বারে ফোন করবে তখনি আগের নাম্বার টা থেকে কল আসে৷ অনেক আশা নিয়ে দুরুদুরু বুকে কলটা রিসিভ করে তনু, ইয়ারফোন দুটো দুজনের কানে গুজে রাখা


-হ্যালো কে বলছেন? এই নাম্বার থেকে মাত্রই দুটো কল এসেছিল আমি মিটিং এ ছিলাম তাই রিসিভ করতে পারি নি।

-(গলাটা একটু গম্ভীর করে) আপনি কি জয় বলছেন?

-হ্যাঁ আমি জয়, আপনি কে?

-আমাকে চিনবেন না, আচ্ছা আপনি কি গোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এস এস সি-২০০৯ ব্যাচের জয় সাহা।

-হ্যাঁ আমিই সেই জয় সাহা, ওটা আমাদের গ্রামের বাড়ি। আপনি কে বলছেন? আমি কি চিনি আপনাকে?

-(ইয়াহু.... পেয়ে গেছি দুজনেই চিৎকার করে উঠে, ওদের প্রথম টার্গেট ফুল হবার আনন্দে হাত পা ছুঁড়তে থাকে) দাদা তুমি আমাদের চিনবে না তবে আমরা তোমাকে চিনি, আচ্ছা তোমার স্কুলের বন্ধু রুদ্র আর রাই এর কথা মনে আছে।

-হ্যাঁ মনে আছে, দিন বিশেক আগে রাই এর সাথে কথা হয়েছে। কিন্তু রুদ্রের সাথে তো অনেক বছর ধরে যোগাযোগ নেই, সেই শেষ কলেজে থাকতে যোগাযোগ হয়েছিল এরপর হয় নি ওর নতুন নাম্বাটাও আমার কাছে নেই। কেন, কিছু হয়েছে কি? তোমরা কে, কোন মজা করছো না তো।

আমরা এখানে দুজন আমি তনু মানে তন্বী চৌধুরী রাই এর ছোট বোন আর ছোটকি, রিতু রায় রুদ্র দার বোন।

-ছোটকি??? বাবুর বোন ওকে তো ছোট্ট থাকতে দেখেছি। তখন তো আমরা গোপালপুরে থাকতাম, তবে ছোটকি ছোট থাকতেই ওরা ওখান থেকে শহরে চলে গিয়েছিল। রাই এর একটা বোন আছে সেটা ও বলেছিল। তোমরা হঠাৎ আমাকে ফোন করলে যে, কি ব্যাপার?

তনু আর ছুটকির দুজনে কেন জয় কে খুঁজে বের করা ওদের কি দরকার জয় কে সবকথা জয়ের কাছে খুলে বলে, ওরা জানতে চায় রাই কেন রুদ্রের উপর রেগে আছে আর রুদ্রেরই বা কিসের আক্ষেপ নিয়ে এমন করে নিজেকে ছোট ভাবে। কেন এত ভালো বন্ধু হয়েও ওদের মাঝে যোগাযোগ নেই, একে একে প্রশ্নের পাহাড় জমতে থাকে জয়ের সামনে। চাইলেও সব কথা ওদের সামনে জয় বলতে পারে, সে-সব কথা বলে ওদের কাছে নিজেদের ছোট করা ছাড়া আর কোন কাজে আসবে না। তাই খেয়াল করে কিছু কিছু কথা বাদ দিয়ে ওদের সেই ছোট থেকে শহরে আশা অব্দি অনেক কথাই তনু আর ছুটকির কাছে শেয়ার করে। ওরা দুজনে যদি রাই আর রুদ্র কে আবার এক করতে পারে তবে জয়ের নিজের মনের উপর থেকেও একটা বোঝা কমবে মনে হয়। সেদিনের ঐ কান্ডের জন্য সে নিজেকেই সবচেয়ে বেশি দোষী মনে করে। রুদ্র যে রাই কে পছন্দ করতো মানে ভালোবাসতো সেটা জয় ছাড়া আর কারও কাছে বলে নি, সেটাও আকারে ইঙ্গিতে তনু আর ছুটকির কাছে বলতে শুরু করে৷ তনু আর ছুটকিও বুঝতে পারে জয় ওদের কি বুঝাতে চাইছে ওদের কে, জয়ের কথা শুনে মনে হলো সবটাই একটা ভুল বুঝাবুঝি থেকে হয়েছে আর সেটাই জমতে জমতে অনেক বড় ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে৷ আর সেটা ঠিক করতে হলে আবার ওদের তিনজনকে একসাথে আনতে হবে আর সেটা ওরা দুজনে মিলেই করবে।

-আচ্ছা জয় দা তুমি কোথায় আছো এখন?

-আমি তো চট্টগ্রামে, একটা স্টীল কোম্পানিতে জব করি। রাই যে কোম্পানিতে আছে সেটার বড় সাপ্লায়ার আমাদের কোম্পানি। কেন বলতো?

-তুমি একবার আমাদের এখানে আসতে পারবে?

-তোদের এখানে? কেন?

-দরকার আছে, একটা গেট টুগেদার হবে। আর তুমি ছাড়া সেটা সম্ভব না তাই তোমাকে আসতে হবে আর রাই দি আর রুদ্র দার মাঝের ভুল বুঝাবুঝি টা দূর করতে হবে।

-এত বড় দায়িত্ব আমার উপরে দিয়ে দিলি, আমাকে আসতে হলে তো ছুটি নিতে হবে। আচ্ছা এদিকে সব গুছিয়ে তোদের জানাবো ঠিক আছে। তোদের প্ল্যানে অনেকদিন পর সবার সাথে দেখা হবে সেটার এক্সাইটেড টা এখনি ফিল করছি আমি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোদের আমি জানাবো কবে আসতে পারবো।(জয়ের খুব আনন্দ হচ্ছে আজ, যদি সত্যিই আবার সবার সাথে দেখা হয় তবে ওর ট্রাই করবে রাই আর রুদ্রের মাঝের দূরত্ব টা যেন ও দূর করে দিতে পারে। জয় জানে রাইও রুদ্রের উপর দূর্বল ছিল কিন্তু এতবছর পর কি সব আগের মতই আছে? যদি থাকে তবে জয়ের চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না কিন্তু ওদের মনে যদি সেই টান টা আর না থাকে তবে? না না যা ভাববো সব ভালো কিছুই ভাবতে হবে)

-আচ্ছা দাদা শুনো তুমি কিন্তু আবার দিদির কাছে এটা নিয়ে কিছু বলে ফেলো না যেন, এটা তোমার আর আমাদের সিক্রেট থাকবে।

-ওকে ঠিক আছে, সেটা আর আমাকে বলে তোদের বলে দিতে হবে না।

-আচ্ছা দাদা রাখি এখন, বাসায় যেতে দেরি হলে আবার টেনশন করবে।
কলটা কেটে যাবার পর ওদের আনন্দ দেখে কে, খুশিতে একজন আরেকজন কে চিৎকার করে জড়িয়ে ধরে। সম্বিত ফিরতেই বুঝতে পারে বাকিরা সবাই হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের আরেকটা মিশন সাকসেসফুলি শেষ হলো এখন লাস্ট স্টেজ সেটা ঠিকঠাক ভাবে কাজ করলেই ওদের টার্গেট ফুল হবে। সেটার জন্যই এখনি ভাবতে হবে, জয় দা না হয় এসে যাবে কিন্তু রাই দি আর রুদ্র দা কে কি বলে এক জায়গায় আনা যায় সেটা বের করতে হবে যাতে করে সারপ্রাইজটাও থাকে আবার ওদের কাজটাও হয়ে যায়। না আর দেরি করা যাবে না, নাইলে বাসা থেকে দাদা দিদির কাছে ফোন চলে যাবে আর সেটা হলে বকাঝকা শুনতেই হবে।



[/HIDE]
 
[HIDE]


মিটিং শেষেই রুদ্রকে একটা সাইটের কাজে যেতে হতো তারপর তেমন কোন কাজ নেই আজ, সাইটের কাজে রিতাও ওর সাথেই যায় আজও ওরা দুজনেই সাইটের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো। ওখানকার কাজ শেষ হতেই রিতা বারবার শপিং এ যাবার তাগাদা দিতে লাগলো, রুদ্রের শপিং এর মত বোর কাজে তেমন আগ্রহ নেই আবার রিতাকে কথা দিয়েছে অবশেষে তাই ওকে যেতেই হলো। মেয়েদের শপিং পৃথিবীর দশম আশ্চর্যের অন্যতম একটা কয়েকটা দোকান আর এত এত কালার আর ডিজাইনের জামা না দেখা পর্যন্ত ওরা ওদের চয়েস সম্পর্কে ধারনাই পায় না ঠিকমত। একবার বলছে এটা ভালো লাগছে একটু পরেই ডিসিশন চেঞ্জ এবার আরেকটা বেশি ভালো লাগছে তো একটু পরে অন্য আরেকটা। সাথে যে থাকে তার কাছে বিষয়টা কতটা বোরিং সেটা তারাই জানে, রুদ্র শুধু পেছন পেছন হাটছে আর যেটা দেখাচ্ছে সেটাই মাথা নাড়াছে এছাড়া আর কিছু বলার আছে সেটা ওর মনে হচ্ছে না। একঘন্টার বেশি সময়ে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে মাত্র দুটো জামা কেনা হয়েছে, এত ধৈর্য ওরা আর অন্য কিছুতে দেখাতে পারুক আর না পারুক শপিং আর পার্লারে ঠিকই দেখাতে পারে। যাইহোক আপাতত শপিং শেষ রুদ্র ভেবেছিলো বাঁচা গেছে এবার একটু শান্তি পাবো

-রুদ্র দা আজ তো আর অফিসে যাবে না?

-না তেমন কোন কাজ নেই।

-আমারও, তাহলে তুমি কি বাসায় চলে যাবে?

-হুম, তোমাকে না হয় বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাবো।

-না ভাবছিলাম তেমন কোন কাজ নেই যেহেতু তোমার সাথে তোমাদের বাসায় যাবো, একদিনও তুমি নিজ থেকে বললে না। আমিই নিজ থেকে বললাম।

-আমার বাসায় গিয়ে কি করবে, এখন তো কোন অনুষ্ঠানও নেই। থাকলে তোমাকে নিয়ে যেতাম।

-আঙ্কেল আন্টির সাথে কথা বলবো, অনুষ্ঠান বলতে তো তোমার বিয়ে সেটা কি এবছর হবে বলে তো মনে হয় না(মিষ্টি হাসির ফোয়ারা)। অনুষ্ঠানে গিয়ে তো আর মন খুলে কথা বলা হবে না।

এ মেয়ের সাথে কথা বলে পারা যাবে না একটা না একটা যুক্তি ঠিকি কোথা থেকে খুঁজে নিয়ে আসবেই তাই কথা না বাড়িয়ে রুদ্র ওকে ওদের বাসায় নিয়ে যেতে রাজি হয়ে গেল। সারা রাস্তা মুখটা একটুর জন্যও মনে হয় বন্ধ করে নি, যত কথা আছে সব যেন আজই শেষ করে দিবে। তবে ওর কথা বলার মাঝে যে মিষ্টতা আছে সেটার জন্য ও বকবক করলেও সেটা কানে ধরে না। বাসায় ঢুকতেই রিতা বাইক থেকে নেমেই রুদ্রের আগে এগিয়ে যায়, কলিং বেল চাপতে একটু পড়েই একজন এসে দরজা খুলে। পোশাকে আর বয়সে বুঝতে পারে এটাই রুদ্রের মা, ঝট করে ওড়না টা ঘোমটার মত করে মাথায় দিয়ে অঞ্জলি দেবীকে প্রনাম করে রিতা। অঞ্জলি দেবী অবাক হলেও দুহাতে মাথা স্পর্শ করে আশীর্বাদ করে জিজ্ঞেস করে

-তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না, কে তুমি?

-আন্টি আমি রিতা রুদ্রের কলিগ একসাথেই কাজ করি, আজ আমরা হঠাৎ বিয়ে করে ফেলেছি তাই তোমাদের আশীর্বাদ নিতে আসলাম।

-(দূরে বাইকে কভার দিতে থাকা রুদ্রের দিকে তাকিয়ে কি ঘটেছে বুঝার চেষ্টা করে, বাবু হঠাৎ এমন কাজ করার ছেলে নয় তাও আমার মা বাবা কে না জানিয়ে। আবার মেয়েটাও দেখা যায় ওর সাথেই এসেছে তাহলে কি মেয়েটা সত্যি বলছে? রুদ্রের দিকে তাকিয়ে হাঁক দেয়) বাবু এদিকে আয় তো একটু তাড়াতাড়ি

রুদ্র মায়ের ডাক শুনেই কাছে এগিয়ে যায় রুদ্র ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই রিতা রুদ্র কে বারবার অঞ্জলি দেবী কে প্রনাম করার জন্য কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ো বলতে থাকে, রুদ্র কিছু বুঝতে পারছে তবুও মাকে প্রণাম করে। রুদ্রের প্রণাম করা দেখে অঞ্জলি দেবীর মনে সন্দেহ আরও বাড়তে থাকে তবে কি সত্যিই রুদ্র বিয়ে করে নিয়েছে।

-কিরে বাবু, মেয়েটা কি বলছে এটা কি সত্যি?

(রুদ্র ঘটনার আদ্যোপান্ত কিছুই জানে না তাই সে অবাক হয় মা কিসের কথা জিজ্ঞেস করছে। রিতা কি মাকে কিছু বলেছে নাকি, কি না কি বলেছে কে জানে ওলটা পাল্টা কিছু বললে তো কেলো করেছে। রিতার দিকে তাকাতেই দেখে ও মিটিমিটি হাসছে) মা কিসের কথা বলছো আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি কি কিছু ভুল করেছি তুমি ওমন করে তাকিয়ে আছো কেন (মায়ের রাগী ভাবটা দেখে ভয় পেয়ে একটু জড়সড় অবস্থা)

-(হঠাৎ করে খিলখিল করে হাসতে থাকে রিতা, ওকে হাসতে দেখে অঞ্জলি দেবী রুদ্র দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে) রুদ্র দা তুমি তো দেখি আন্টি কে খুব ভয় পাও সেটা তো জানা ছিল না।(অঞ্জলি দেবীর দিকে এগিয়ে গিয়ে) তোমার ছেলের তোমাকে না জানিয়ে বিয়ে করার সাহস নেই। এখন তুমি যদি অনুমতি দাও তবে, (দুই হাত দুই গালে কাছের নিয়ে) দেখো আমি কিন্তু দেখতে খারাপ না কি সুন্দর মিষ্টি একটা মেয়ে।

-মা ওর কথায় কান দিও না ও সবসময় মজা করতে থাকে, আরেকটু হলে তো আমার জান বেড়িয়ে গেছিলো। ভাবছি ও কি না কি বলেছে তোমাকে।(যেন হাঁপ ছেড়ে বাচলো রুদ্র)

-হুম সেতো দেখছিই,(রিতার দিকে তাকিয়ে) তবে মেয়েটা আসলেই মিষ্টি সেই সাথে দুষ্টুও একটু বেশি। একটুর জন্য হলেও আমি ওর কথা বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম। আয় তোরা ভিতরে গিয়ে বস।

রিতা কিছুক্ষণ থাকার পর ওদিনের মত চলে গিয়েছিল। যতক্ষণ ছিল ততক্ষণ মনে হচ্ছিলো ও বুঝি নিজের বাড়িতেই আছে এই এদিকে ছুটছে ওদিক ছুটছে, অঞ্জলি দেবীর সাথে কি নিয়ে কথা বলতে বলতে হাসি শুরু করেছে। যেমন তেমন হাসি না মনে হয় এই বুঝি হাসতে হাসতে মাটিয়ে গড়িয়ে পড়বে, খানিকটা সময়ের মাঝেই হুলস্থুল করে হাঁপিয়ে উঠে। এর মাঝেই বলে উঠে আজ তো বাসাটা চিনে গেলাম এখন কিন্তু মাঝে মাঝে এসে এমন অত্যাচার করবো কিছু বলতে পারবে না। অঞ্জলি দেবীর সাথে এর মাঝেই যেন বন্ধুত্ব হয়ে গেছে রিতার, তাই তো তিনি নিজেও বললেন সময় পেলেই যেন চলে আসে কিচ্ছুটি মনে করবে না।


[/HIDE]
[HIDE]

স্কুলের জন্য বের হবার আগেই আগের দিনের করা প্ল্যান মত তনু আর ছুটকি দুজনেই যে যার মত করে রাই রুদ্র কে বলে দেয় যে আজ স্কুল শেষে একটা নতুন রেস্টুরেন্ট খুলেছে সেটাতে যাবে। ওরা যেন ওখানে আসে, ওখানে কিছু নতুন খাবার টেস্ট করবে ছুটকির তেমন কোন জোর করতে হয় নি রুদ্র কে, খাবারের ব্যাপারে ওর দুর্বলতা আগে থেকেই। আর নতুন রেস্টুরেন্টের কথা শুনে ও নিজে থেকেই ট্রিট দেবে জানিয়ে দেয়, ছুটকি কে বলে দেয় যেন তনু কে জানিয়ে দেয় দরকার হলে ও অফিস থেকে বেরিয়ে তনু কে পিক করে নিবে। ছুটকি জানিয়ে দেয় তার কোন দরকার নেই ওরা নিজেরাই চলে যেতে পারবে শুধু রুদ্র যেন ঠিক টাইমে চলে যায়।
তনুও ফাঁক পেতেই রাই কে জানায় বান্ধবীকে নিয়ে নতুন রেস্টুরেন্টে যাবে রাইও যেন সেখানে যায়। রাই প্রথমে রাজি হয় না, বাসায় কদিন ধরেই পরিস্থিতি তেমন একটা ভালো না, এখনো বাবার সাথে রুদ্রের ব্যাপার টা নিয়ে আলোচনা করা হয় নি। কথা হবে কি করে ঐদিনের পর থেকে তো বাবা অনেকটা এড়িয়ে চলছে রাই কে। তবে বোনের আবদার ফেলতে পারে না, তাই শেষমেশ রাজি হয়।



[/HIDE]
 
[HIDE]


তনু কে বলে দেয় পৌঁছে যেন রাই কে জানিয়ে দেয় ও ওখানে পৌঁছে যাবে।
স্কুল শেষে দুজনেই রেস্টুরেন্টে পৌঁছে যায় তনু আর রাই। আবহাওয়া সকাল থেকেই ভালো না, আকাশটা কালো মেঘে ঢেকে আছে, যখন তখন ঝড় নামবে হয়তো, আর এমনিতেও ঝড়ো বাতাই বইছে মাঝে মাঝে, দুদিন ধরেই নিউজে দেখাচ্ছে নিম্নচাপে সমুদ্র উত্তাল হয়ে আছে ৩ নাম্বার সর্তক সংকেত ও দিয়েছে। প্ল্যান মতো জয় সকালের ফ্লাইট ধরে এখানে চলে আসবে, আর রেস্টুরেন্টের লোকেশান টা পাঠিয়ে দিয়েছে তাই তেমন কোন সমস্যা হবার কথা না। ছুটকি আর তনু খবর নিয়েছে রাই আর রুদ্র দুজনেই অফিস থেকে বেড়িয়ে গেছে আর মিনিট চল্লিশ লাগবে পৌঁছাতে। এদিকে জয় কে ফোন করছে কিন্তু ফোনটা আনরিচেবল দেখাচ্ছে এর মানে কি এখনো ফ্লাইটে আছে নাকি, কিন্তু এতক্ষণ লাগার কথা না। জয় দা ঠিক টাইমে না আসলে তো সব প্ল্যান মাটি হয়ে যাবে। মনটা খুব উশখুশ করছে তনু আর ছুটকির শেষ পর্যন্ত যেন সব ঠিকঠাক ভাবেই হয় সেটাই প্রার্থনা করছে, তনুর ফোনটা বেজে উঠে একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে, কল টা রিসিভ করতে গলা শুনে বুঝতে পারে এটা জয়ের গলা।

-দাদা কোথায় তুমি, আমরা তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছি, রুদ্র দা দিদি বেড়িয়ে পড়েছে।

-আমি তো এখনো চট্টগ্রামেই বিমানবন্দরে বসে আছি।

-মানে কি দাদা, তুমি মজা করছো তাই না? এসে গেছো কি, কোথায় তুমি আমরা রেস্টুরেন্টে বসে আছি তোমায় তো দেখতে পারছি না।

-নারে মজা করছি না, এদিকে নিম্নচাপের কারণে ঝড় আর প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে তাই আমার ফ্লাইট ক্যানসেল হয়ে গেছে। আমি এখনো বিমানবন্দরেই বসে আছি পরের ফ্লাইটের জন্য, কিন্তু কখন ছাড়বে ঠিক নেই। বিশ্বাস না হলে তোদের বৌদির সাথে কথা বলে দেখ(পাশ থেকেই একটা নারী কন্ঠ শোনতে পাচ্ছে তনু)

-হ্যালো তনু আমি পল্লবী বলছি, তোমার দাদা সত্যি বলছে আমরা এখনো বিমানবন্দরে বসে আছি। তোমার দাদার আর আমারও তো খুব ইচ্ছে তোমাদের সবাইকে দেখতে, দেখি কখন আসতে পারি।

-ঠিক আছে বৌদি ভাই, দেখো কখন ফ্লাইট আবার চালু হয়।

-শোন তনু ছুটকি তোরা আজ কোন ভাবে সামাল দে। আমি দেখি কি করা যায়।

-ওকে দাদা।

জয় আসতে পারছে না তাতে করে ওদের আজকের প্ল্যান টা আর ওয়ার্কআউট করা হবে না। তবুও চেষ্টা করে দেখতে হবে আকারে ইঙ্গিতে যদি কিছু করা যায় তবে একটু হলেও ওদের কষ্টটা সফল হবে। একটু পরেই দেখে রুদ্র এসে গেছে ও বাইরে বাইক টা পার্ক করছে, ও ভিতরে এসেই ছুটকি আর তনু কে জড়িয়ে ধরে

-কিরে বেশি লেট করে ফেললাম নাকি?

-না দাদা ঐ একটু আরকি।

-খাবারের অর্ডার দিয়ে ছিস নাকি?

-না দাদা এইতো তুমি এসেছো এখন দিবো।

-ওকে, তোরা একটু ওয়েট কর আমি একটু টয়লেট থেকে আসছি।

রুদ্র টয়লেটের দিকে যেতেই তনু রাই কে ফোন করে, রিং হতেই কলটা কেটে যায় হয়তো কাছাকাছি এসে গেছে তাই কেটে দিয়েছে। হঠাৎই পেছন থেকে কেউ তনুর দুচোখ চেপে ধরে

-দিদি এটা তুই আমি জানি।

-ধুর, তোকে আর সারপ্রাইজ দেয়া গেল না।(ছুটকি কে দেখে চিনতে পেরেও) ওকে তোর বান্ধবী?

-হুম, তুই কোন সেন্ট ব্যবহার করিস সেটা তো আমার জানা তাই চিনে ফেলেছি। তোকে বলেছিলাম না রুদ্র দার কথা ও রুদ্র দার বোন। নাম রিতু রায়।

(একটা চেয়ার টেনে বসে) তুমি কোন স্কুলে পড়ো?

-ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে। তোমার কথা তনুর কাছে অনেক শুনেছি, ও যা বলেছে তার থেকেও তুমি অনেক বেশি সুন্দর দিদি।

-হয়েছে হয়েছে আর প্রশংসায় ভাসাতে হবে না। তা খাবারের অর্ডার দেয়া হয় নাই তো।

-না এখনি দিবো।

রুদ্র এদিকেই আসছে, ওদের টেবিলে আরেকজন কেউ বসে আছে ওর দিক থেকে উল্টো করে বসা আছে তাই মুখ দেখতে পারছে না। আর কারও তো আসার কথা ছিলো না তবে কে আসলো, ওদের পরিচিত কেউ নাকি, পরিচিত কেউ তাই তো এতো কথা বলছে। ধীরে ধীরো এগিয়ে গিয়ে টেবিলের ওদিকে চেয়ারে গিয়ে বসে যাবে ওমনি আগে থেকেই বসা মেয়েটিকে দেখে পিলে চমকে যায়...

-ম্যাডাম আপনি? এখানে, কখন এলেন? ওদের সাথে আপনার পরিচয় আছে?

-এত প্রশ্ন এক সাথে! মাত্রই এসে বসলাম, আমার পরিচয় না থাকলে কার থাকবে? তনু আমার বোন।

ছুটকি তনু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে কি ঘটলো সেটা এখনো বুঝতে পারছে না, রুদ্র দা কেন রাই দি কি ম্যাডাম ডাকছে। তাহলে তারা কি দুজন একে অন্যকে আগে থেকেই....

-কিরে দিদি তুই কি রুদ্র দা কে চিনিস নাকি?

-হুম চিনি তো, মি.রুদ্র আর আমি তো একই কোম্পানিতে আছি।

-তাহলে ঐদিন কার্ড দেখানোর পর বললি নাতো?

-তোকে সব বলতে হবে নাকি?

-ম্যাডাম আমি কিন্তু জানতাম না তনু আপনার বোন হয়, ও আমাকে বলেনি আপনি যে জব করেন আমাদের কোম্পানিতে। ওর কাছে আপনার কথা অনেক শুনেছি, আর ওটা ছুটকি আমার বোন।

-ওর সাথে পরিচয় তনু করিয়ে দিয়েছে। খুব মিষ্টি মেয়ে, তনু হয়তো খুব জ্বালায় আপনাকে তাই না?

-না না, ও ছুটকির চেয়ে অনেক কম.... আপনি খুব শাসন করেন তো তাই।(যথারীতি পাশে বসা ছুটকির গাল ফুলানো শুরু হয়ে গেছে, তনু আর রাই মিটিমিটি হেসেই চলেছে)

-ওহহ ওসবও বলা হয়ে গেছে( তনুর দিকে তাকিয়ে) কিরে আমি কি তোকে সবসময়ই বকাবকি করি শাসন করি নাকি?? ভালো কিছু আর বলতে পারলি না, এমনিতেই তো ওনি ভাবে আমি নাকি অনেক রাগী মানুষ।

-না না ম্যাডাম, ওটা তো জাস্ট মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল মাত্র। তনু তো বলেছে আপনি ওকে অনেক আদর করেন ভালোবাসেন, ওর সব আবদার তো আপনার কাছেই করে।

-যাক ভালো কিছু বলেছে তাহলে। তা অর্ডার টা দেয়া হোক এখন। তোরা অর্ডার টা দে আমার একটা কল আসছে আমি কথা বলে আসছি।

তনু আর ছুটকি কে কি অর্ডার করবে সেটা নিয়ে হুল্লোড় শুরু করে দিয়েছে আর রুদ্র ওরা দুটোকে সামলাবার চেষ্টা করছে। রুদ্র বুঝতে পারলো এইভাবে বললে কাজ হবে না তাই হালকা একটা ধমক দিতেই সব ঠান্ডা, আস্তে ধীরে অর্ডার করতে শুরু করলো। পারলে ওরা সব আইটেমই আজকে খেয়ে নেবার পায়তারা করছে একের পর এক অর্ডার করে চলেছে শেষে আবার আইসক্রিম ও অর্ডার করেছে এত খাবার খাবে কি করে কে জানে। হঠাৎ করে রুদ্রের মোবাইলটা বেজে উঠলো পকেট থেকে বের করতেই সেই নাম্বার থেকে মেসেজ

"""ভালোই জমিয়েছো দেখছি, একেবারে অফিসেরর ম্যাডামের সাথে লাঞ্চ করছো আজ। সাবধান, ঐ ম্যাডামের দিকে যেন আবার মন গলে না যায়। যদি যায় তবে আরেকটা কাঁধ কিন্তু বাকি আছে ওটাতেও কামড়ে দেবো বলে দিলাম।
ঐ কামড়ের দাগটা এখনো আছে তে মনে হয়? আর থাকতেই হবে আমি যতদিন আছি ওটাও থাকবে আমার ভালবাসার চিহ্ন হিসেবে।"""


[/HIDE]
 
[HIDE]


মেসেজ টা পড়া শেষ করেই রুদ্র চেয়ার ছেড়ে উঠে পাগলের মত আশেপাশে দেখতে থাকে, ও হয়তো আশেপাশেই কোথাও লুকিয়ে বসে আছে নইলে জানলো কি করে ও এখানে আছে আর কার সাথে আছে। বারবার নাম্বার টাতে কল করার ট্রাই করে কিন্তু যেটা হবার ততক্ষণে হয়ে গেছে। রুদ্র টেবিল ছেড়ে ডানে বামে ঘুরেফিরে খোঁজার চেষ্টা করে সেই মানুষটাকে, কিন্তু দেখলেই কি চিনতে পারবে? এখনো কি সেই আগের চেহারা আছে এত বছরে কত কি বদলে গেছে। হয়তো চিনতে পারবে না আবার চিনতেও তো পারে, যেভাবে ও রুদ্র কে চিনে নিয়েছে। না আশেপাশের সব-কয়টা টেবিল দেখা হয়ে গেছে কিন্তু কোথাও মনে হলো না ও আছে। তেমন করে কারও দিকেই তো নজর টা টানলো না। রুদ্র কে এমন করে ছোটাছুটি করতে দেখে ছুটকি তনু হতবাক হয়ে যায়, হঠাৎ করে দাদার কি হলো বুঝতে পারে না৷ না আর হয়তো দেখা পাওয়া গেল না, আশাহত হয়ে যুদ্ধ বিধস্ত এক সৈনিকের ন্যায় ক্লান্ত পায়ে জরাজীর্ণ শরীরটা নিয়ে কোন মতে চেয়ারটার কাছে এসে ধপ করে বসে পরে।

-কিরে দাদা কি হয়েছে, এমন করে ছোটাছুটি করছিলি কেন?

-(গলা থেকে আওয়াজ বের হয় না, কেমন যেন শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। হার্টবিট বেড়ে গেছে সেটার কারণেই হয়তো কপালের পাশ জড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে এই এসির মাঝেও৷ মনের ভিতর কি চলছে সেটা বলে কাউকে বুঝাতে পারবে না, এত বছর পর এমন একটা মানুষের কথা মনে পড়ে গেছে নাকি মনে করিয়ে দিয়েছে যেটা সে কখনোই ভুলতে পারেনি আর পারবেও না। ওটা ও ছাড়া আর কেউ হতে পারে না নইলে কাঁধে যে কামড়ের দাগ আছে সেটা তো আর কারও জানার কথা না, ঘুরের মাঝেই অস্পষ্ট স্বরে মুখ দিয়ে আস্তে করে বেরিয়ে আসে একটা শব্দ) রাইইইই।

-কিরে দাদা কি হলো বললি না তো, কি বিড়বিড় করে বলছিস তখন থেকে?

-(ছুটকির ধাক্কায় সম্বিত ফেরে, এর মাঝেই ম্যাডাম ও চলে এসেছে টেবিলের কাছে, খাবার গুলোও একেক করে চলে আসছে টেবিলে) না মানে তেমন কিছু না। ঐ আর কি ওটা তোরা বুঝবি না। নে খাওয়া শুরু কর। ম্যাডাম আপনিও বসে পড়ুন।

তনু আর ছুটকির মনটা খ্যাচ খ্যাচ করলেও সেটা নিয়ে আর কথা বাড়ায় না, কিন্তু পাশে বসা রিদ্ধিমা চৌধুরী মুখ টিপে টিপে হাসছে তখন থেকেই। দূরে দাড়িয়ে এতক্ষণ সবটাই দেখা হয়েছে তার, রুদ্র কেমন করে পাগলের মত এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছিলো ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছিলো যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা কোন মূল্যবান বস্তুর খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে। একবার মনে হয়েছিল ছোটে এসে ওকে জড়িয়ে ধরবে রুদ্রকে ওর বুকে মাথা রেখে বলে দিবে যেই মানুষটাকে হন্যে হয়ে সে খুঁজে চলেছে আমিই সেই। কিন্তু আবার ভাবলো একটু ছোটাছুটি করুক না দেখি নিজ থেকে খুঁজে নিতে পারে কিনা, এতটুকু তো পরিষ্কার হয়েই গেল বাইরে বাইরে যতই রাগ দেখাক না কেন ভিতরে এখনো সেই আগের বাবু এখনো বেঁচে আছে আর সেখানে রাই আগেও ছিল আর পরেও থাকবে। ওদিকে আনমনে হয়ে বসে থাকা রুদ্র ঠিকমত খেতেও পারছে না, ওর মনটা আর খাবারের দিকে নেই যেন মনটা এক ছোটে সেই গ্রামে সেই স্কুল সেই খেলার মাঠ বাজার ভাঙা ব্রীজটার কাছে চলে গেছে, সেই মানুষ গুলোর কাছে বিশেষ করে ঐ একজনের কাছে। চোখ বন্ধ করে সেই চেহারা আরেকটা বার ভালো করে মনে করার চেষ্টা করে চলেছে, আবছা আবছা একটা চেহারা ভেসে উঠে আবার মিলিয়ে যায়। কতবছর হয়ে গেল সবকিছুর উপর জমে থাকা সেই টান টা কেমন করেই যেন ছিন্ন করে চলে এসেছিল একটাবারও তাকাতে ইচ্ছে হয় নি ফিরে কিন্তু আজ যেন এক ঝটকায় আবার সব স্মৃতি গুলো ঘিরে ধরেছে তাকে, না টান টা কোন কালেই ছিন্ন হয় নি আর হবেও না তখন যেটা ছিল সেটা হলো নিজের উপর তৈরী হওয়া ঘৃণা রাগ, ক্ষোভ আর রাই এর উপর জমতে থাকা অভিমান। কিন্তু বিধাতার কি আশ্চর্য খেলা এতদিনের ক্ষোভ রাগ অভিমান যেন এক তুড়িতেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল আর ভিতর থেকে সেই পুরনো আকাঙ্খা টা জেগে উঠলো সেই মানুষটাকে একটিবার চোখ ভরে দেখবার। ভিতরটা যেন শুষ্ক মরুভূমি হয়ে আছে সেই মানুষটায় হইতো পারবে আবার সেখানে সবুজের সমারোহ ঘটাতে, এই আশায় আবারও জেগেছে মনের কোনে।

খাবার শেষে কে বিল দিবে সেটা নিয়ে আবার একটা হট্টগোল ছুটকির ইচ্ছে রুদ্র দিবে আর ওদিকে তনু ইচ্ছে রিদ্ধিমা দেবে। রুদ্রের আগেই বলা ছিল ও ট্রিট দিবে তাই ও আগ বাড়িয়ে বিল দিতে যাবে তখনি রিদ্ধিমা রেগে উঠলো, ম্যাডামের রাগান্বিত মুখ দেখে রুদ্রের আর আর্গুমেন্ট করার সাহস হলো না তাই বিল রিদ্ধিমাই পে করলো তবে রুদ্রের মন রাখতে আইসক্রিম বিলটা ওকে দিতে দিলো। রুদ্রের দাপট কেন জানি রিদ্ধিমার সামনে কাজ করে না, ম্যাডামের চোখের দিকে তাকাতেই ওর কেমন জানি অনুভূতি হয় উল্টো করে জবাব দেবার মত কিছুই যেন খুঁজে পায় না, এমনটা আরও কারো সাথেই তো হয় না হয়তো ওর মনে ম্যাডাম কে নিয়ে ভীতি টা কাজ করে বলেই। ম্যাডামের রাগান্বিত চোখে যেন ও নিজেকে ভস্মীভূত হতে উপলব্ধি করে সবকিছু শেষ করে পার্কিং এ এসে ওরা বিদায় নিলো একে অন্যের কাছ থেকে। কিন্তু তনু আর ছুটকির মন খুশি না তেমন কারণ যেটার জন্য আসলো সেটাই তো হলো না, তবুও ওরা যে পরিচিত সেটা তো জানা গেল তাতে করে সামনে নতুন কোন প্ল্যান করতে সুবিধা হবে ওদের। আবার নতুন করে ভাবতে হবে, একবার ভেবেছিল জয় দা আসতে পারে নি তাতে কি হয়েছে ওরাই সব বলে দিবে কিন্তু পরে আবার ভাবলো ওদের বলার চেয়ে জয় দা কে বলালেই সবচেয়ে ভালো হবে কারণ জয় দার তো সবটাই জানা আর বড় কেউ হলে পরের ব্যাপারটাও সামাল দিতে সহজ হবে। তবে আজ কি কি হলো সেটা জয় দার কাছে শেয়ার করতে হবে তবেই পরবর্তী তে কি প্ল্যান হবে সেটা ঠিক করা যাবে।

তনু ওর দিদি সাথে গাড়িতে উঠে বসে আর ছুটকি ওর দাদার বাইকে, আরেকবার হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে যে যার গন্তব্যের দিকে চলতে শুরু করে।


[/HIDE]
[HIDE]


আজ বাসা থেকে অফিসের জন্য বের হতে গিয়েই দেখে বাইকটা স্টার্ট নিচ্ছে না, এখন আবার কি হলো কে জানে কয়েকদিন আগেই তো নতুন করে মবিল ভরার সময় সব চেক করা হয়েছিল। সকার সকাল মেজাজটাই গরম হয়ে গেল, এতদিনে অভ্যাস হয়ে গেছে আজ আবার লোকাল বাসে কিংবা উবারে যেতে হবে। যাই হোক বিষন্ন মনটা নিয়েই অফিসের জন্য বেরিয়ে পরে, মোবাইল বের করে কাছাকাছি কোথায় উবারের গাড়ি আছে সেটার লোকেশান দেখতে থাকে কিন্তু রাস্তায় প্রচুর জ্যাম আর আশেপাশে গাড়ির লোকেশানো দেখাচ্ছে না। যে জ্যাম তাতে করে ভেঙে ভেঙে যেতে হবে। দেরি না করে মেইন রাস্তায় দিকে হাটতে শুরু করে, দু তিনবার গাড়ি চেঞ্জ করে অফিসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রুদ্রের অবস্থা একেবারে কাহিল। অফিসে ঢুকতে যাবে তখনি ম্যানেজার ম্যাডামের সাথে দেখা হাই হ্যালো করে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। রুমে ঢুকেই এয়ার কুলার টা ফুল স্পিডে দিয়ে চেয়ারে এলিয়ে পরে, একটু পরেই পিয়ন এসে লেমন সোডা দিয়ে যায়। রুদ্র অবাক হয় কারণ সে তো কিছু অর্ডার করে নি


-আমি তো কিছু আনতে বলি নি, অন্য কারোর টা নিয়ে এসেছো নাকি ভুলে?

-না ম্যাডাম পাঠিয়েছে।

-ম্যাডাম? কোন ম্যাডাম?

-ম্যানেজার ম্যাডাম।

রুদ্র ভাবে আসার পথে হয়তো বেহাল অবস্থা দেখেছে তাই পাঠিয়ে দিয়েছে, সত্যিই যত দেখছে অবাক হচ্ছে এই মনে হয় খুব রাগী মানুষ এই আবার খুব সাধারন। লেমন সোডা টা খাওয়ার পর শরীরটা চনমনে লাগছে।




[/HIDE]
 
[HIDE]


অফিসে রুপালির সাথে দেখা হয়েছিল, তখন জানতে পারে রুদ্র বাইক ছাড়া এসেছে তখনি রুপালি বলে আজ ও রুদ্র কে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবে অফিস শেষে যেন অপেক্ষা করে। রুদ্রেরও মনে হলো একটু ঘুরে আসলে মনটা ভালো লাগবে তাই আর না করে না। রুদ্র একটু আগেই অফিস থেকে বের হয়ে নিচে অপেক্ষা করতে থাকে। রিদ্ধিমা গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছিলো লুকিং গ্লাসে রুদ্র কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তাও আবার বাইক ছাড়া, মোবাইল বের করে আন্টি কে ফোন দিয়ে বাইক না আনার কারন টা জেনে নেয়। জানালার গ্লাস নামিয়ে মাথা টা হালকা বের করে রুদ্র কে ডাক দেয়

-কি ব্যাপার মি. রুদ্র, আজ বাইক দেখছি না।

-ম্যাডাম বাইকটা স্টার্ট নিচ্ছিলো না তাই আজ আনি নি।

-ওহ, তাই তখন ওমন দেখাচ্ছিলো, চলুন আজ না হয় আমি ড্রপ করে দিই।

-না না ম্যাডাম আপনাকে কষ্ট করতে হবে না আমি এমনিই চলে যাবো।

-এতে আবার কষ্ট কিসের? নাকি অন্য কোন প্ল্যান আছে তাহলে থাক, আমি আপনার প্ল্যান নষ্ট করতে চাই না।

-(কি করবে ভেবে পায় না, ওদিকে রুপালি অপেক্ষা করবে আবার এদিকে যদি ম্যাডাম না সরাসরি না করে তবে ম্যাডাম রাগ করতে পারে আবার সেটা তনুর কাছেও বলতে পারে, ইশশ তনু কি ভাববে যে আমি আ্যাটিটিউড দেখিয়েছি। না রুপালির সাথে না হয় আরেকদিন যাওয়া যাবে, কেন জানি ম্যাডামের কথা ফেলতে পারছে না সে) না ম্যাডাম তেমন কোন প্ল্যান নেই, আমি ভাবলাম শুধু শুধু আপনাকে কষ্ট দেব কেন।

-কিসের কষ্ট সেটাই বুঝলাম না আমি কি আপনাকে কোলে করে নিয়ে যাবো নাকি, নিন উঠে বসুন।

রুদ্র সামনে সিটেই উঠে বসতে বসতে রুপালি কে মেসেজ করে প্ল্যান ক্যানসেল সেটা জানিয়ে দেয়। গাড়ি চলতে শুরু করে, টুকটাক অফিসিয়াল বিষয়ে কথা হতে থাকে কিন্তু রুদ্র রিদ্ধিমার দিকে একবারও ফিরে তাকায় নি, যতটুকু কথা হয়েছে সবটাই বাইরের দিকে তাকিয়ে। বেশিক্ষণ লাগলো না রুদ্রের বাসায় পৌঁছাতে। বাসার সামনে গাড়ি থামতেই রুদ্র গাড়ি থেকে নেমে বোকার মত হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে গেট খুলে বাসায় ঢুকতে যাবে তখনি রিদ্ধিমা পেছন থেকে ডেকে উঠে

-আপনাকে এতদূর এসে ড্রপ করলাম, আমাকে বাসায় আসতে বলবেন না??
[/HIDE]
[HIDE]

অফিস থেকে বেড়িয়ে রুপালির সাথে আগের ক্যানসেল করা লং ড্রাইভে যাচ্ছে রুদ্র। আজ রুদ্র বাইক আনলেও রুপালির জেদ করে বসলো তার স্কুটিতে করেই যেতে হবে, রুদ্রও আপত্তি করে না বেশি, ভালই রাগে স্কুটি রাইড বিশেষ করে বেশি ভালো লাগে যখন আশেপাশের মানুষ হা করে তাকিয়ে থাকে। তাদের কাছে এ যেন এক আশ্চর্য বিষয় যে মেয়ে বাইক চালাচ্ছে তার চেয়ে বেশি আশ্চর্যের যে একটা ছেলে পিছনে বসে আছে। মানুষ কতটা অলস হলে এমন বিষয় নিয়েও গসিপ করতে বসে যায়, যেন এটা নিয়ে সমালোচনা না করা পর্যন্ত পেটের ভাত হজম হবে না। রাস্তাটা ফাঁকা পেতেই গতি বাড়ায় রুপালি, হেলমেটের বাইরে থাকা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে আর সেই উড়তে থাকা চুল মাঝে মাঝেই রুদ্রের মুখের উপর সৈকতের সমুদ্রের ঢেউয়ের মতই আছড়ে পড়ছে। চোখ খোলা রাখলে চোখে চুল পড়তে পারে তাই রুদ্র চোখ গুলো আবছা করে বুজে নেয়, উড়ে আসা চুলের ঘ্রাণে মনের ভিতরে আলোড়ন তৈরী করে সহসাই যেন কল্পনার জগতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। দু চোখ মেলে সামনে তাকায় রুদ্র স্কুটির লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাতেই একটা মুখ দেখে চমকে উঠে সামনে যে বসা ওটা রুপালি না, একটা অন্য মেয়ে বছর তের কি চৌদ্দের ঠোঁটের কোনে সদা লেগে থাকা মিষ্টি হাসিতে যেন ভাসিয়ে দিবে সবকিছু। মেয়েটি লুকিং গ্লাসে রুদ্রের বিস্ময় ভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে আর ছোট ছোট পলক ফেলে কিছু যেন একটা বলতে চাইছে, না কোন শব্দ রুদ্রের কান অব্দি আসতে পারছে কোথাও যেন আটকে গেছে, আর আটকে যাবারই তো কথা চোখের সামনে যে সেই স্কুলে পড়া দু দিকে বেনী করে চুল বাধা ঠোঁটের নিচে ছোট্ট একটা তিল নিয়ে সদা হাস্যজ্বল রাই কে দেখতে পারছে সে। সেই রাইকে যাকে সে শেষ বার দেখেছিলো স্কুলের বারান্দায় দুদিকে বেনী করা চুল গুলো হাতে নিয়ে নাচাতে নাচাতে ওর দিকে আসছে, সেই হাসি সেই মিটমিট করে তাকিয়ে থাকা। নাহ রুদ্র আর ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছে না এই বুঝি সেই চোখের গভীরতায় এখনি ডুবে যাবে, মূহুর্তেই চোখ বন্ধ করে নেয়... ওদিকে আর তাকাতে পারছে না হয়তো আরেকবার তাকালে ও এতকাল ধরে যেটা বলতে চাইছিলো সেটাই মুখ থেকে বেড়িয়ে আসবে। না হঠাৎ করেই সব বদলাতে শুরু করলো ভেতরের আরেকটা রুদ্র আবার জেগে উঠেছে ঐ রুদ্রের কাছে কেন জানি মনে হলো সেই চোখের চাউনিতে ভালবাসা ছিল না যা ছিল সেটা ওর উপরে জন্মানো ঘৃনা আর রাগের ঝলকানি। রুদ্র কে ও ঘৃনা করে ওর কাছে রুদ্র একটা নষ্ট হয়ে যাওয়া পঁচে যাওয়া মানুষ ছাড়া আর কেউ না, তবে ও যে বারবার ভালোবাসি ভালোবাসি বলে তাহলে সেটা সেটাও কি ওর উপরে দয়া দাক্ষিণ্য মাত্র নাকি হাস্যরসের জন্যই। ঐ তো তাই মনে হচ্ছে রাই ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে ওকে তাচ্ছিল্য করছে, ব্যঙ্গবিদ্রূপ করে চলেছে৷ না এটা আর যাই হোক ভালবাসা না ভালোবাসলে তো ওভাবে চলে যেতে পারতো না, একটা কিছু বলে তো যেতে পারতো। নিজের মুখেও যদি রুদ্র কে খারাপ বলতো তাও সেটা মেনে নিতো৷ কিন্তু সেটা করেনি কারণ রাই তো কখনো ওকে ভালোই বসে নি, আর এখন যেটা করছে সেটা শুধুমাত্র ওকে নিয়ে খেলছে ওর অনুভূতি নিয়ে খেলছে শুধু ওকে আরও গহীনে নিয়ে যেতে চাইছে।


রুপালির ধাক্কায় সম্বিত ফেরে রুদ্রের, চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে না আশেপাশে সে মেয়েটি নেই, কোথাও উধাও হয়ে গেছে। নিজের উপর রাগ টা আবার বাড়তে থাকে, কিন্তু সেটা মুখের উপরের অভিব্যক্তিতে কেউ দেখে সেটা বুঝতে পারবে না। রুপালির সাথে হাটতে হাটতে নদীর ধারে চলে এসেছে, পাশেই বেঞ্চে বসে পড়ে দুজনে রুপালি তখন থেকেই কিছু একটা বলে চলেছে কিন্তু রুদ্রের মন বা কান কোনটাই সেদিকে নেই, মাঝে মাঝে শুধু মাথা হেলিয়ে সায় দিয়ে যাচ্ছে মাত্র। রুদ্র আবার নিজের দুনিয়াতে হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমে ক্রমে পুরনো রাগ ক্ষোভ গুলো আবার বেরিয়ে আসছে, নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে রুদ্রের ঐদিনের মেসেজ টা পাওয়ার পর ওমন ছোটাছুটির জন্য, কেন কার জন্য এমন পাগলের মত ছুটছিলো সে যার কাছে ও একটা কীট সমতুল্য মানুষ মাত্র ওর কাছে রাই কিচ্ছু না আর রাইয়ের কাছেও রুদ্রের কোন অস্তিত্ব নেই। কেন যে ঐ পাগলামি টা করতে গেল কে জানে, নিজেই নিজেকে মনে মনে গালাগাল দিতে লাগলো। কতটা বোকা হলে এমন করা যায় এত বছর পর একটা মেসেজেই সব ভুলে গিয়ে ওকে একটাবার দেখার জন্য ওমন উতলা হবার মত কিচ্ছু হয়নি, সব সেই আগের মতই আছে কিচ্ছুটি পাল্টায় নি। নাহ ঐ নাম্বার টাই আর রাখবে না ওর থেকে কোন যোগাযোগ দরকার নেই কারও দরকার নেই রুদ্র যেমন ছিল বেশ ছিল, পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে সিম টা খুলে নদীতে ছুড়ে মারে। পাশে বসা রুপালি অবাক হয়ে রুদ্রের কান্ড দেখে, হঠাৎ করে এমন কি হলো যে ও সিমটা ফেলে দিলো রুপালি তো তেমন কিছুই বলে নি


[/HIDE]
 
[HIDE]


-কি হয়ছে রুদ্র সিমটা ফেলে দিলে কেন?

-এমনি একটা নাম্বার বারবার ডিস্টার্ব করছে তাই, এদিকে বসে থাকতে ভালো লাগছে না, চলো ওদিকে যাই একটু...
হাটতে হাটতো একটু এগিয়ে যায় এদিকটায় সারি সারি টগর ফুলের গাছ গুলো সুন্দর ঝুপের মত হয়ে আছে, গাছগুলো ফুল ফুলে ভরে গেছে সবুজ পাতার মাঝে মাঝে সাদা ফুল গুলো অপূর্ব লাগছে, হঠাৎ মনে হলো ওদিকে কেউ দাড়িয়ে আছে, ভাল করে খেয়াল করতেই রুদ্র খেয়াল করলো স্কুটির সেই মেয়েটা এখানেও দাড়িয়ে আছে আর ওর দিকে তাকিয়েই খিলখিল করে হাসছে। রুদ্রের রাগটা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়, ঐ হাসিটা যেন ও সহ্য করত পারছে না ওর কাছে মনে হয় সেই হাসিতে আছে তাচ্ছিল্যের উপযোগ আর হেরে যাওয়া রুদ্রের গ্লানি, রুদ্র আর হারতে চায় না আর কখনো না। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে তেমন কেউ নেই, এক হাতে টেনে রুপালি কে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় আর পাশে ফিরে তাকিয়ে দেখে সেই মেয়েটা এখনো হেসে চলেছে। রুপালি রুদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা করে কিন্তু এ চোখ বড়ই দুর্ভেদ্য দুর্গের মত এত সহজে পড়া যায় না, কিন্তু চোখ গুলো আজ আর স্থির নেই এদিক ওদিকে ছুটছে বারংবার যেন কিছু খুঁজে চলেছে। মূহুর্তের মাঝেই রুদ্রের ঠোঁট নেমে আসে রুপালির ঠোঁটের উপর, হালকা করে একটা চুমো খায় সেখানেই। কোন কিছু বুঝার আগেই পাগলের মত চুষতে থাকে রুপালির ঠোঁট গুলোকে, রুপালিকে নিজের সাথে আরও বেশি করে চেপে ধরে একদম নড়ার সুযোগ পায় না পর্যন্ত। একপাটি ঠোঁট ছেড়েই আরেক পাটিতে অসহ্য শক্তিতে চোষে চলেছে রুদ্র। এমন ভাবে রুদ্র ওর মাথা চেপে ধরেছে যে একটু দম নেবার মত সুযোগও পাচ্ছে না সে, এই রুদ্র কে রুপালি চিনে না সে এ এক অন্য বন্য রুদ্র ওর সামনে দাড়িয়ে নিজেকে একটু ছাড়ানোর জন্য বার কয়েকবার হয়তো নখও বসিয়ে দিয়েছে রুদ্রের পিঠে কিন্তু না ওদিকে রুদ্রের কোন মনযোগ নেই যেন অসুরের শক্তি ভর করেছে ওর উপর। টানা পাঁচ মিনিটের এই ঠোঁটের উপর অত্যাচার শেষ করে রুপালি কে মুক্তি দিয়ে পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে সেই মেয়েটি এখনো দাড়িয়ে কিন্তু এখন যেন সেই হাসিটা নেই মুখটা কেমন কালো মেঘের আড়ালে হারিয়ে গেছে, মুখের বিষন্নতা বলে দিচ্ছে ও হেরে গেছে রুদ্রের কাছে ও হেরে গেছে। রুদ্রের ঠোঁটে কোনায় হাসি ফুটে উঠে যেন এই যুদ্ধে সে জয়ী হয়ে গেছে, যেই মানুষটাকে ও ঘৃনা করে ওর মুখ থেকে হাসিটা ও ছিনিয়ে নিতে পেরেছে। বারবার পাশ ফিরে তাকিয়ে কি যেন দেখছে আর বিড়বিড় করছে আর ওমন পাগলের মত কিস করা এসবে রুপালির কাছে রুদ্রের আজকের আচরণ স্বাভাবিক মনে হয় না তাই সে আজকে আর বেশি এগোতে চায় না এমনিতেই হালকা কামড়ে ঠোঁটের কিনারে একআধটু রক্তও জমে গেছে বোধ হয়। কিছু একটা হয়তো রুদ্রের ভিতরে ভিতরে ওকে এসব করিয়ে চলেছে। আর কিছুটা সময় কাটিয়ে ওরা সেখান থেকে আবার শহরের দিকে চলে আসে। রুপালির বাসার কাছে এসে বিদায় নিয়ে রুদ্র আবার অফিসের দিকে চলে যায় বাইক আনতে আর সেখান থেকে বাসা।

বাসায় ফিরে বাথরুমে ফ্রেশ হবার সময় আয়নার দিকে তাকিয়ে পাগলের মত হাসছে রুদ্র, চোখ বন্ধ করে সেই বিষন্ন মুখটা দেখতে পাচ্ছে আর তাতেই ওর হাসি পাচ্ছে, অবশেষে ও পেরেছে ঐ মুখের হাসিটা কেড়ে নিতে পেরেছে। ধীরে ধীরে নিজের মাথার উপর চেপে বসা ভেতরের রুদ্রটা আবার ভেতরেই শীতনিদ্রায় চলে যাচ্ছে মাথাটা ঠান্ডা হয়ে আসছে। চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে, মোবাইলটা হাতে নিয়ে চেক করতে যায় কোন মেসেজ এসেছে কিনা বারবার রিফ্রেশ দিতে থাকে হয়তো অন্য মেসেজে ভীরে হারিয়ে গেছে মন কেমন উতলা হয়ে আছে সেই নাম্বার থেকে একটা মেসেজ দেখার আসায়। তখনি মনে পরে সিমটা ও ফেলে দিয়েছে, একদিক থেকে ভালই হয়েছে এখন আর ওর কথা মনে পড়বে না একটু সময় লাগবে তবে আবার আগের মতই ভুলে যাবে কিন্তু ভুলতে কি কখনো পেরেছিল সেই প্রশ্ন টা আর কারও করা হয়ে উঠেনি।
রাতের খাবার খাওয়ার সময় অবিনাশ বাবু রুদ্র কে খাবার শেষে তার সাথে দেখা করতে বলে কোন একটা বিষয় নিয়ে কথা হবে, রুদ্র মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। খাওয়া শেষে একটু রেস্ট নিয়ে রুদ্র বাবা মায়ের ঘরের দিকে এগিয়ে যায় দরজা টা খোলাই ছিল ভেতরে ঢুকতেই দেখে অঞ্জলি দেবীও ঘরেই আছে।

-বাবা ডেকেছিলে?

-হুম, বসো এখানে।(অবিনাশ বাবু বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ছিল তার সামনে হাতের ইশারায় রুদ্র কে বসতে বলে)। একটা জরুরি বিষয়ে কথা বলবো সেটাতে তুইও জড়িয়ে আছিস তাই তোর সাথেই কথাটা আগে বলছি।

-বাবা সিরিয়াস কিছু কি?(একবার বাবার মুখের দিকে তাকায় আরেকবার মায়ের মুখের দিকে, কি ঘটনা সেটা বুঝার চেষ্টা করে)

-সিরিয়াস তো বটেই, তোর মা আর আমি এবার তোর বিয়ের ব্যাপারে এগোতে চাইছি। তোর কি মত, পছন্দ অপছন্দ কিছু থাকলে বল আমাদের আমরা সেদিকেই এগোব।




-(রুদ্র ভাবতে থাকে সেদিন অফিসের ম্যাডাম বাসায় আসায় কি বাবা মা কিছু সন্দেহ করছে নাকি? না হলে হঠাৎ বিয়ের কথা কেন উঠছে কিন্তু সেটা তো তেমন কিছুই না) দেখো বাবা উনি আমার অফিসের ম্যানেজার, ওদিন বাইক টা নষ্ট ছিল বলে আমাকে ড্রপ করতে এসেছিল আর কিচ্ছু না, তোমরা হয়তো অন্য কিছু ভাবছো।

-(মুখ টিপে হাসছে অবিনাশ বাবু, দূরে বসা অঞ্জলি দেবীর মুখেও সেই হাসিটার রেখা ফুটে উঠেছে) আমরা কি তেমন কিছু বলেছি, শুধু জানতে চাইছি তোর কোন পছন্দ আছে কিনা, থাকলে আমাদের বল। জীবনটা তোর আর কার সাথে ভালো থাকবি সেটা তোর বেছে নেয়াটাই সবচেয়ে ভালো।

-(আয়নার সামনে বসে চুলে বেনী করতে থাকা অঞ্জলি দেবী বলে উঠে) দেখ বাবু আমরা আমাদের কোন সিদ্ধান্ত তোর উপর চাপিয়ে দিতে চাই না, তুই যথেষ্ট বড় হয়েছিস নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারার অধিকার তোর আছে। কোন সংকোচ না করে মনে কিছু থাকলে বলতে পারিস আমরা এতটুকু ফ্রি তোর সাথে তো আছিস।

-(রুদ্র কিছু বলতে পারে না, কি বলবে বলার মত কিছু পায় না। একবার ভাবে রাইয়ের কথা কি বলবে? কিন্তু কোন ভরসায় বলবে, ও কোথায় আছে কেমন আছে কিচ্ছু জানে না শুধু একটা নাম্বার ধরে কি কাউকে কিছু বলা যায়। কিন্তু ও তো এখনো ওকেই ভালোবাসে অপেক্ষা করে আছে একবার কি চেষ্টা করে দেখবে যদি খুঁজে বের করতে পারে, ইশ ঐ নাম্বার টা সেভ পর্যন্ত করা হয়নি সেভ করা থাকলে কিছু একটা করে খোঁজ তো নেয়া যেত। না ভেতরের রুদ্রটা আবার বেড়িয়ে আসতে চাইছে সেই পুরনো রাগ, ঘৃণা অভিমান গুলো চড় চড় করে মাথায় জেকে বসছে শত চেষ্টা করেও রুদ্র সেটা সামাল দিতে পারছে না। যত চাইছে সেই রাগ টাকে দমাতে ততই সেটা আরও প্রবল ভাবে ফিরে আসছে। আর পারছে না রুদ্র নিজের কাছেই নিজে হেরে যাচ্ছে একটু একটু করে, ভেতরের রুদ্রের কাছে ভালোবাসা বলে কিচ্ছু নেই সেখানে রাই নামে কেউ নেই সেখানে শুধু রুদ্রের একার রাজত্ব) না বাবা আমার কোন পছন্দ নেই। তোমরা যেটা ভালো মনে করো সেটাই করো, তোমাদের সিদ্ধান্তে আমার কোন আপত্তি নেই।

-ভেবে বলছিস তো? তোর মায়ের আর আমার একটা মেয়ে দেখা আছে, দুজনেরই খুব পছন্দ হয়েছে। তুই রাজি থাকলে সামনে একদিন ওদের বাসায় গিয়ে কথা বলে আসি আর তুইও সাথে গেলে তোরও দেখা হয়ে যাবে।

-তোমাদের পছন্দের উপর আমার কিছু বলার নেই। তুমি আর মা তো আমার জন্য ভালো কিছুই ভেবে রেখেছো, আমার দেখার দরকার নেই তোমরা কথা বলে আসো।

-না বাবু যতই আমাদের পছন্দ হোক তবুও তোর একবার দেখে আসা দরকার। তোর দেখে যদি পছন্দ হয়ে তবেই আমরা এগোব নইলে না।(এতক্ষণ আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকলেও এবার পিছন ফিরে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলে অঞ্জলি দেবী)

-ঠিক আছে মা তোমরা জানিও কবে যেতে হবে আমি তোমাদের সাথে যাবো। আমি এখন ঘরে যাই তাহলে।

-আচ্ছা যা, রাত করিস না বেশি।



[/HIDE]
 
[HIDE]


রুদ্র ঘর থেকে বেড়িয়ে একটু এগিয়ে আবার থমকে যায়, কি থেকে কি হয়ে গেল সেটাই বুঝতে পারছে না রুদ্র৷ ও তো যেটা বলতে চেয়েছিল সেটা বলতেই পারলো না, যখনি রাই এর জন্য মনের কোনে সেই পুরনো টান টা জেগে উঠে তখনি কেন জানি সেই রুদ্রটাও জাকিয়ে বসে ওর উপর। শত চেষ্টাতেও নিজের মনের কথাটা বলতে পারলো না উল্টো যেটা বলতে চায় নি সেটাই বলে ফেললো। তবে কি এটাই নিয়তির খেলা নাকি নিজের তৈরী করা আলাদা জগতে নিজেই হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমে ক্রমে একটু একটু করে তলিয়ে যাচ্ছে অতল গহ্বরে, সেখান থেকে হয়তো আর ফির আসা হবে না কখনো। নিজের উপর ঘৃণা ধরে গেছে রুদ্রের এমন অবস্থায় রাই থেকে যত দূরে চলে যাবে ততই ভালো কারণ ও আর হয়তো রাই এর সামনে দাড়াতেই পারবে না। একবার ইচ্ছে হচ্ছিলো আবার ফিরে গিয়ে মা বাবার কাছে মনের কথা টা বলেই ফেলুক কিন্তু পরক্ষণেই পা দুটো থমকে দাঁড়ায়, যা হচ্ছে সেটাই হোক এটাই হয়তো ভাগ্যে লেখা ছিল। আর দাঁড়ায় না রুদ্র নিজের ঘরের দিকে চলে যায়। দাদাকে বেরোতে দেখেই নিজেকে আড়াল করে নিয়েছিল ছুটকি এর আগে দরজার কাছে আড়ি পেতে শুনছিলো বাবা কি এত সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য দাদা কে ডেকেছিল। ঘরের ভেতরের রুদ্র আর বাইরের রুদ্র কে মেলাতে পারছে না সে, মুখ দেখে তো সেটাই মনে হলো ওর দাদা যেন নিজের মাঝেই নেই কিছু একটা ওকে গ্রাস করছে এমন ভাবে মুখটা অন্ধকার করে আছে। কিছু তো একটা রুদ্র লুকাচ্ছে সবার থেকে কিন্তু সেটা কি জানতেই হবে তার আগে তনুর সাথে কথা বলতে হবে।

ওদিকে রুদ্র বের হয়ে যেতেই অঞ্জলি দেবী রাই কে ফোন করেছিল, রুদ্রের সাথে কি কথা হলো আর তারা কবে আসবে সেটা জানিয়ে দেয়। এবার রুদ্রের সাথে সামনাসামনি দেখা হবে সেই আনন্দ রাই এর মনের আনন্দের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে। কখন সে আবার রুদ্র কে নিজের করে পাবে সেই জন্য আর তর সইছে না। না আজ আর মেসেজ করবে না, সরাসরি ফোন করবে যা খুশি হোক রুদ্র রাগ দেখালে দেখাক সেটা নিঃসংকোচে সয়ে নিবে কিন্তু ওর কন্ঠ টা শুনার জন্য মনের ভিতর তোফান শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু কি হলো কল ডিসকানেক্ট হয়ে যাচ্ছে বারবার আনরিচেবল দেখাচ্ছে, ওর ফোন তো বন্ধ থাকার কথা না আর এটা ওর রেগুলার নাম্বার বন্ধ রাখার কথাও না। মনে একটু দুশ্চিন্তা উকি দিলেও আনন্দের আবহে বেশিক্ষণ টিকতে পারছে না।




[/HIDE]
[HIDE]

একবার ভদ্রতা করেও তো বাসায় আসার জন্য বলতে পারতেন।

রুদ্র বুঝতে পারে অন্যমনস্ক থাকার ফলে সে বোকার মত বিদায় জানিয়ে চলে যাচ্ছিলো, ঠিকি তো ভদ্রতা করে হলেও তো ম্যাডাম কে একবার বাসায় আসতে বলা উচিত ছিল।

-স্যরি ম্যাম, আসলে আমি অন্য একটা বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম তো তাই ভুল টা হয়ে গেছে। প্লিজ ম্যাম আপনি বাসায় আসলে খুব খুশি হবো।

-না না ওটা এমনি বলেছি আজ আর আসবো না অন্যদিন সুযোগ পেলে দেখা যাবে।

-আজ না আসলে আমার নিজেকে খুব ছোট লাগবে, মনে হবে আপনি রাগ করেছেন।

-আরে সবকিছুতেই আমাকে কি শুধু রাগতে দেখেন নাকি, খুব মুশকিলে পড়ে গেলাম তো আপনি তো আমাকে রাগী ছাড়া আর কিছুই ভাবেন না। আচ্ছা এত করে যেহেতু বলছেন তাহলে আসছি।

রুদ্র এগিয়ে এসে গাড়ির দরজা টা খুলে ধরে রিদ্ধিমা কে নামতে সাহায্য করে। রুদ্র একটু এগিয়ে এসে গেট টা খুলে দেয় রিদ্ধিমা ভেতরে ঢুকে। দরজার কাছে গিয়ে কলিং বেল বাজায় রুদ্র, খানিক বাদেই অঞ্জলি দেবী এসে দরজা খুলে। একটু আগেই অবিনাশ বাবুও বাসায় ফিরেছেন এখন তো রুদ্রের আসার কথা না আর ছুটকিও টিউশনে গেছে তাই রুদ্র কে দেখে অবাক হয়।

-মা দেখো সাথে কে এসেছে, আমাদের অফিসের ম্যানেজার ম্যাডাম। (মায়ের দিকে ইশারা করে) ম্যাম এটা আমার মা।

-(অঞ্জলি দেবীর আগে থেকেই জানা যে ও কার সাথে আসছে, তবুও এমন করে মুখের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে যেন কিছুই জানে না আর খুবই অবাক হয়েছে) ম্যাডাম সাথে এসেছে কেন? তুই কি কিছু গড়বড় করেছিস নাকি অফিসে? কিছু তো একটা হয়েছে না হলে অফিস থেকে এতোদিন তো কেউ এলো না আজ তবে কেন?

-আরে মা কিছু করিনি, আজ বাইক নেই নি তাই ম্যাডাম আমাকে ড্রপ করতে এসেছিল আর কি।
দরজার কাছে কথাবার্তার আওয়াজ শুনে ভেতরের ঘর থেকে অবিনাশ বাবু বের হয়ে আসে

-কি ব্যাপার কি হলো গো, কে এসেছে?(দরজার কাছে এসে রুদ্রের সাথে রাই কে দেখে চমকে যায়, মুখ ফুটে রাই এর নামটা বলেই ফেলছিল তখনি অঞ্জলি দেবী পিঠে দিকে খুঁচা দিয়ে থামিয়ে দেয়)

-আরে দেখো বাবুর অফিসে ম্যানেজার এসেছে।

-কি বলছো, কি সৌভাগ্য আমাদের আসুন আসুন ম্যাডাম ভিতরে আসুন।

রিদ্ধিমা মিটিমিটি করে হাসছে, ঘরের ভেতরের ঢুকার সময় রুদ্র খেয়াল করলো ওর বাবা মাও যেন হাসিটা লুকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কি এমন হলো যে সবাই এমন আড়াল করে হাসছে কে জানে৷ রিদ্ধিমা ভেতরে গিয়ে সোফায় বসে, অঞ্জলি দেবী ভেতরের দিকে চলে যায় হালকা জল খাবার আনতে। অবিনাশ বাবু বিপরীত দিকের সোফাতে বসতেই রিদ্ধিমা উঠে গিয়ে প্রণাম করে

-(হালকা বাঁধা দেবার চেষ্টা করে) এই দেখো, এসবের কি দরকার ছিল ম্যাডাম।
আপনি আমাকে ম্যাডাম ডাকছেন কেন, আমি মি রুদ্রের ম্যাডাম তাও অফিসে আপনার না। আপনি আমার গুরুজন আপনি ম্যাডাম ডাকলে কেমন অস্বস্তি হয়।(কোন মতে হাসিটা ভেতরে চেপে রেখে সুন্দর অভিনয় টা চালিয়ে যায় রিদ্ধিমা)

-(একটু গলা ছেড়ে) দেখে যাও অঞ্জলি, এত বড় একটা অফিসের এত বড় পদে থেকেও কত নম্র ভদ্র আচরণ মনে টা গলে গেলো আমার।(মাথায় হাত রেখে) সুখী হও মা।
এর মাঝেই অঞ্জলি দেবী ফিরে আসে কিছু খাবার নিয়ে,

-এগুলো কিন্তু আপনাকে খেতেই হবে কোন বারণ শুনবো না, কিরে বাবু তুই কিছু বল তোর ম্যাডাম কে।

-হ্যাঁ ম্যাডাম আপনাকে এগুলো কিন্তু খেতেই হবে, মা অনেক আশা করে এনেছে।

-আচ্ছা আচ্ছা এত করে বলতে হবে না, আমি খেয়ে নেব এমনিতেও খিদে পেয়েছে।(কথাটা শেষ করেই সামনের প্লেট থেকে এক মিষ্টি তুলে মুখে পুড়ে দেয়)

-দেখেছো কত মিষ্টি মেয়ে, একবার বলতেই কেমন খেয়ে নিচ্ছে। এমন লক্ষ্ণীমন্তর মেয়েকে সবাই ছেলের বউ করতে চাইবে (পাশে দাড়ানো অঞ্জলি দেবী বলে উঠে)

-(মায়ের মুখে কথাটা শুনে ভীমড়ি খায় রুদ্র, একি বলতে শুরু করেছে তাও আবার ম্যাডামের সামনে। ম্যাডাম আবার কি না কি ভাবে কে জানে) হালকা নিচু স্বরে মা উনি আমার ম্যাডাম আর তুমি কি সব বলছো, উনি রেগে গেলে আমার চাকরি যাবে।

-আমি খারাপ কি বলেছি, দেখতে শুনতেও ভালো কি মিষ্টি মুখটা আর আচার আচরণও দেখলি কত ভালো, এমন মেয়েকে তো সবাই ছেলের বউ করে নিতে চাইবেই।

-(পাশ থেকে অবিনাশ বাবুো বলে উঠে) হুম তুমি কথাটা খারাপ বলো নি।

মা বাবার এমন কথায় রুদ্র অস্বস্তিতে পড়ছে বারবার, আড় চোখে তাকিয়ে ম্যাডামের ভাব বুঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু রিদ্ধিমার এদিকে যেন কোন মনযোগ নেই সে তার মত খেয়ে চলেছে, সত্যিই খুব খিদে পেয়েছিল হয়তো নইলে এমন করে কেউ খায় নাকি। কিন্তু মা বাবার আজ কি হলো কোন দিন তো এমন করে কথা বলে না তাহলে আজ এমন সুরে কথা তাও আবার ওর অফিসের ম্যানেজারের সামনে, রুদ্রের কি অবস্থা হচ্ছে সেটা কি তারা বুঝতে পারছে না। আর এক মূহুর্ত এখানে ওর থাকা যাবে না


[/HIDE]
 
[HIDE]


ম্যাম আপনি মা বাবার সাথে কথা বলুন আমি একটু ঘরে যাচ্ছি।

রুদ্রের চলে যাওয়ার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে, দরজার ও পাশে হারিয়ে যেতেই তিনজনেই এতক্ষণের জমানো হাসিটা প্রাণখুলে হাসতে থাকে তবে শব্দ কম করে না হলে আবার রুদ্রের কানে পৌঁছে যেতে পারে৷ এরপর রাই নিজেই কি ঘটনা সেটা অবিনাশ বাবুর কাছে বলতে থাকে। এতক্ষণ ওরা সবাই খেয়াল করেছে রুদ্র কেমন করে মিইয়ে ছিল ওদের উদ্ভট কথাবার্তার কারণে। বেচারা তো এসবের কিছুই না মাঝখান থেকে ভাবছিলো কি হচ্ছে এসব। রাই ফোন বের করে ওর মা দেবীকা চৌধুরীর কাছে ফোন করে, কল রিসিভ করতেই অঞ্জলি দেবীর দিকে এগিয়ে দেয়

-হ্যালো, নমস্কার আমি অঞ্জলি রায় বলছি রুদ্রের মা, রাই
আমাদের এখানে এসেছে একটু আগেই।

-নমস্কার, হুম রাই আমাকে মোবাইল করে জানিয়েছিল যে আপনাদের এখান যাবে। তা আপনার সবাই ভালো আছেন?

-হুম ভালোই আছি এখন ওকে দেখে আরও বেশি ভালো লাগছে। আপনারা কেমন আছেন?

-আমরাও ভালো আছি, আপনার সাথে কথা বলতে পেরে ভালো লাগছে।

-তা দিদি যেটার জন্য ফোনটা করা, ঐ বিষয়টা নিয়ে ভেবেছিলেন? আমরা তো কথা বলার জন্য আসতে চাইছিলাম, আপনারা কি বলেন?

-রাই এর বাবার কথা তো মনে হয় ওর কাছেই শুনেছেন, ও কি বলবে জানা নেই তবে রাই তো আমারও মেয়ে তাই আমিই আমার মত জানিয়ে দিলাম। আপনারা একদিন সময় করে আসুন সামনাসামনি কথা বলি, আর রুদ্রকেও দেখার ইচ্ছে আছে।

-ঠিক আছে দিদি, তাহলে আমরা পরে জানিয়ে দেব কবে আসছি আমরা।

-ওকে দিদি, ভালো থাকবেন।

-আপনিও ভালো থাকবেন।

কল টা কেটে রাই কে আবার ফোনটা দিয়ে দেয়।
-কিন্তু আন্টি রুদ্র কে কি কিছু বলেছো?

-নারে বলা হয় নি, তবে চিন্তা করিস না তোর আঙ্কেল কথা বলবে।

-হুম মা, এক দুদিনের মাঝেই ওর সাথে আমি কথা বলবো, কোন সমস্যা হবে না।

-তোমরা থাকতে আমার টেনশন কিসের।

আর কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে সেদিনের মত রুদ্র আর ওর মা বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পরে রিদ্ধিমা, ম্যাডাম কে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে আসে রুদ্র। একটু আগের মা বাবার ওমন কথা বার্তার জন্য চূড়ান্ত রকমের অস্বস্তি বোধ করছে রুদ্র সেটার জন্যই ঘর থেকে বের হয়ে গাড়ি অব্দি আসা পর্যন্ত উপরে আর মুখ তুলে তাকায় নি সে। মনে মনে ভাবছে ম্যাডাম কি না কি ভাবছে কে জানে, আজ আর কিছু বলা যাবে না কাল অফিসে গিযে
আগেভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিবে।




[/HIDE]
[HIDE]


গতকাল রাতেই বাবা জানিয়ে দিয়েছিল আজ দাদা বিয়ের কথাবার্তা বলার জন্য মেয়ের বাড়িতে যাবে তাই আজ সকাল থেকেই সেটার তোড়জোড় শুরু হয়েছে বাসায়। দাদার বিয়ে কিন্তু ছুটকির মনে তেমন কোন আনন্দ নেই, কোথায় ওরা ভেবেছিলো রাই দির সাথে দাদার ঝামেলা টা মিটিয়ে দিবে আর জয় দা যা বলেছে তাতে করে দাদার সাথে বিয়ের ব্যাপারেও এগোনো যেত কিন্তু কিছুই তো হলো না। তনু কে মোবাইল করেছিল গত রাতেই ওদিকেও একি অবস্থা আজ নাকি ছেলে পক্ষ রাই দি কে দেখতে আসবে। ধুর ভালো লাগছে না কিছুই কি এমন রাগ দুজনের মাঝে যে একটা বার যোগাযোগ পর্যন্ত করে না। মোবাইলটা বের করে জয় কে ফোন করে, সব শুনে জয় চিন্তা করতে বারণ করে। জয় বলেছে রাই এর সাথে কথা বলবে, আর দেখতে আসা মানেই তো আর বিয়ে হয়ে যাওয়া নয়। আগামী সপ্তাহের মাঝেই জয় দা আসার চেষ্টা করবে, তখন না হয় কিছু একটা উপায় বের করতে হবে।

রুদ্র রেডি হয়ে ঘরেই বসে ছিল, এশ কালারের একটা শার্ট আর সাথে ব্ল্যাক কালারের গেবাডিন প্যার্ট পড়েছে সে। অন্যদিন হলে আরেকটু সাজগোজ করতো কিন্তু আজ মনটা সেখানে নেই ক্ষণে ক্ষণেই রং পাল্টাছে, এই মনে হচ্ছে মা বাবার পছন্দ মতই বিয়ে হয়ে যাক আবার মন চাইছে রাই এর জন্য অপেক্ষা করতে হয়তো রাই ও ওর জন্য অপেক্ষা করে আছে, নয়তো এতবছর পর মেসেজ গুলোর কারণ কি। না বেশি কিছু ভাবতে পারছে না রুদ্র ভেতরের রুদ্র তাতে বারবার বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একদিকে এতকালের লুকানো ভালোবাসা, জন্মানো টান মায়া অফুরন্ত অনুভূতি আর অন্যদিকে জমে থাকা রাগ ক্ষোভ আর নিজের উপর তৈরী হওয়া ঘৃণা। গত কয়েকদিন ধরেই এদুটোর যুদ্ধ হয়ে চলেছে, কখনো এ জিতে যায় তো আরেকবার আরেক পক্ষ কিন্তু এভাবে কি শান্তি ফিরে আসে মনে? আসতে পারে কখনো।
ছুটকি এসে ডেকে যায় রুদ্র কে বাইরের ঘরে সবাই তৈরী হয়ে অপেক্ষা করছে ওর জন্য। ও ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে

-(এতক্ষণের চলা মনের যুদ্ধের বিধস্ত চেহারা আড়াল করে নেয় সবার কাছ থেকে) চলো সবাই আমি রেডি হয়ে গেছি।

-(অবিনাশ বাবু হাতের ইশারায় নিজের কাছে ডেকে নেয় রুদ্র কে) বাবু আরেকবার বলছি ভেবে দেখ এখনো সময় আছে, তোর মতামত সবার আগে।

-না বাবা, আমি তো সেদিনই বলেছি তেমন কিছুই নেই। তোমরা যেটা সিদ্ধান্ত নিবে তাতেই আমি রাজি।

-আমার আর তোর মায়ের কিন্তু একরকম বিয়েতে মত আছে, আমরা তাদের সাথে সেরকম কথা বলেছি আর এখন তুইও মত দিলি পরে আবার যদি মত বদলে নিস তবে কিন্তু তোর মা আর আমার সম্মান বলতে কিছুই থাকবে না তাদের কাছে।

-চিন্তা করো না তোমরা, তেমন কিছুই হবে না। তোমাদের উপর কিচ্ছু বলবো না।

-ওকে তাহলে চলো সবাই, না হলে আবার দেরি হবে।

ওদের গাড়িটা সেনবাড়ি মোড়ে ঢুকতেই রুদ্র আশ্চর্য হয় এদিকে কোথায় যাচ্ছে, গাড়িটা যখন আলিশা টাওয়ারের সামনে এসে দাঁড়ায় তখন আরও অবাক হয় সে, মনে মনেই বলতে থাকে এখানে তো তনু রা থাকে তবে কোন ইউনিটে সেটা জানা নেই ওর। ছুটকিও অবাক হয় ওরা এখানে এসেছে দেখে, দাদার মুখে দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে দাদা কি ভাবছে। কিন্তু দাদার মুখের অবস্থা বলে দিচ্ছে ওর দাদা ওর থেকেও বেশি অবাক হয়েছে। লিফটে উঠে ষষ্ঠ তালার বোতাম টিপে দেয় অবিনাশ বাবু, লিফট থামতেই ওরা বেড়িয়ে বা দিকে এগিয়ে যায় সামনের দরজার পাশেই বড়বড় করে লেখা বিজয় চৌধুরী। দুবার কলিং বেল টা বাজায়।






[/HIDE]
 
[HIDE]


তনু মাত্রই রেডি হয়েছে ওর মা বলেছে ছেলে পক্ষ এক্ষুনি এসে পড়বে। ঘরে দিদি শাড়ি পড়েছে তবে তেমন কোন সাজ সাজে নি, তনু ভেবেছিল দিদির মত নেই তাই হয়তো কিন্তু সকাল থেকেই রাই এর হাসিখুশি মুখটা ওর চিন্তা চেতনার হিসেবনিকেশ সব পাল্টে দিচ্ছে।ঘটনাটা কি সেটাই বুঝতে পারছে না যে দিদি সেদিন বিয়ের কথা শুনে এমন কাণ্ড ঘটালো সেই দিদিই আজ গুনগুন গান গাইছে, আয়নার সামনে বসে সাজগোজ করছে। একবার ভাবে দিদিকে জিজ্ঞেস করবে কিন্তু দিদি যদি বকা দেয় তাই আর সেদিকে পা বাড়ায় না। হঠাৎ কলিং বেল টা বেজে উঠতেই দেবীকা দেবী তনু কে বলে কে এসেছে দেখতে৷



আরেক বার কলিং বেল বাজাতে যাবে তখনি দরজা টা খুলে যায়, দরজার পাশে তনু কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হতবাক হয়ে যায় রুদ্র ও ভাবে ভুল ঠিকানায় চলে আসে নি তো ওরা।

-বাবা আমার মনে হয় আমরা ভুল ঠিকানায় চলে এসেছি।

-আরে না ঠিক জায়গায় এসেছি, দাঁড়া এরপরও জিজ্ঞেস করি(তনুকে দেখে একটু এগিয়ে যায়) কেমন আছো তুমি, তুমিই সেদিন আমাদের বাসায় গিয়েছিলে পার্টি থেকে, তা এটা বিজয় চৌধুরীর বাসা তাই না?

-(দরজা খুলেই রুদ্র দা, ছুটকি আন্টি আঙ্কেল কে দেখে তনু হতভম্ব হয়ে যায়, আজ হঠাৎ তারা ওদের বাসায় কেন। আসার কথা তো ছেলে পক্ষ, কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না, কি বলবে সেটাও বুঝতে পারছে না) হুম আমি ভালো আছি তোমরা সবাই কেমন আছো। বিজয় চৌধুরী আমার বাবা৷ আসো ভিতরে আসো।

রুদ্র ছুটকি তনু তিন মূর্তি কারও মাথায় কাজ করছে না, ওরা এটাও বুঝতে পারছে না ঘটছে টা কি। ওদের কে নিয়ে তনু বসার ঘরে চলে আসে, ততক্ষণে দেবীকা দেবীও ভেতরের ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে অবিনাশ বাবু আর অঞ্জলি দেবীর সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছে। পাশে বসা রুদ্রের তনুর মা কে কেমন চেনা চেনা লাগছে কোথায় যেন দেখেছে আগে কিন্তু মনে করতে পারছে না। এর মাঝেই ভেতর থেকে চা নাস্তা, জুস, বাহারি ফল আর মিষ্টি এক এক করে এসে চলেছে। ছুটকি তনু একে অন্যের মুখ দেখাদেখি করছে সামনে মা বাবা থাকায় কথাও বলতে পারছে না, মাঝে মাঝে রুদ্রের দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু সেখানে আরও মেঘের কালো ছায়া, সে তো নিজেও বুঝতে পারছে না হচ্ছে টা কি৷ বিজয় চৌধুরী এসে ওদের সামনের সোফাতে বসে কোন রকম করে কথা বলা শুরু করে, এটা তনুর বাবা কিন্তু ওনাকে তো আগেও দেখে কিন্তু কার সাথে দেখেছে কোথায় দেখেছে কিচ্ছু মনে পড়ছে না, উফফ মাথাটা বড্ড ব্যাথা করছে তখন থেকে। হঠাৎ করেই মনে পড়লো সবাইকে দেখছে কিন্তু তনুর দিদি মানে ম্যাডাম কে দেখছে না বাসায় উনি কোথায় কোন কাজে গিয়েছে নাকি? বাবা মা মেয়ে দেখতে যাবে বলে বের হলো কিন্তু এখানে কেন
এলো সেটাই তো বুঝতে পারছে না।

দেবীকা দেবী তনু কে ডেকে রাই কে আসতে বলে, তনু মাথা নাড়িয়ে ঘরে দিকে যেতে যেতে ভাবে দিদি কে এখন কেন ডাকছে। একটু পরে তো আবার ছেলে পক্ষ চলে আসবে। যাই হোক তনু দৌড়ে গিয়ে মা যা যা বলতে বলে সেটা দিদি কে বলে চলে আসে। একটু পরেই ছোট ছোট পা ফেলে বসার ঘরে ভেতরে এসে মায়ের পাশে এসে দাড়ায় রাই। রুদ্র নিচের দিকে তাকিয়ে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে ফ্লোরে কিছু একটা আঁকার চেষ্টা করে চলেছে তখন থেকে তাই রাই কখন এসে দাড়ালো সেটা ও খেয়াল করে নি৷ ও পাশ থেকে দেবীকা দেবী বলে উঠে

-এইতো রাই এসে গেছে...


মূহুর্তের মাঝেই রাই নাম টা কানে বাজতেই তড়িৎ গতিতে উপরের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় রুদ্র হাত তিনিকের দূরত্বে দাড়িয়ে আছে সেই মানুষটা টা যাকে নিয়ে গত কয়েকদিন যাবত মনের ভেতরে কি যুদ্ধ করে চলেছে সেটা রুদ্র ছাড়া আর কেউ জানে না। নিজের চোখ কে বিশ্বাস যেন সে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না, সারা শরীরে লোম গুলো দাড়িয়ে গেছে তাৎক্ষণিকের শিহরণে।
সময় যেন থমকে গেছে আসে পাশের কোন কিছুই যেন আর নড়াচড়া করছে না সব কেমন স্থির হয়ে আছে যেমনি করে স্থির দৃষ্টিতে রুদ্র তাকিয়ে আছে রাইয়ের দিকে। এখনো নিজেকে ধাতস্থ করতে পারছে না রুদ্র সামনে দাড়ানো মানুষটাকে তো সে চিনে কিন্তু কতটা? এতোদিনে একবারও ভালো করে তাকিয়ে দেখাও হয় নি হয়তো, সত্যিই তো একবারের জন্যেও তো তেমন করে দেখাই হয়নি মনে সে খেয়াল কোন খেয়ালি আচরণে আসলো না কে জানে। দেখা হলে তো আগেই চিনে নিতে পারতো, সত্যিই কি পারতো রুদ্র? চেষ্টা করে তো দেখতে পারতো। এতোদিনে মনের ভেতরে আকা ছবিটার সাথে মিলিয়ে দেখতে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে রুদ্রের, হার্টবিট বেড়ে গেছে এতোটাই যে কাছাকাছি
কেউ দাঁড়ালে হৃদকম্পের আওয়াজ তার কানে পৌঁছে যাবে।

হালকা লাল কালারের একটা জামদানি শাড়ি পড়েছে রাই সাথে ম্যাচিং করা ব্লাউজ কানে পুতি আর স্টোনের কাজ করা ঝুমকা, গলাতেও ম্যাচিং করা পুতি আর স্টোনের হার। সেই ছোট থেকে ঘন লম্বা চুল ছিল রাইয়ের সেটা আছে এখনো কোমড় অব্দি ছাড়ায় তবে খোপা করে রাখায় তেমন বুঝা যায় না আজও খোপা করে আছে আর তাতে রুদ্রের অজানা সাদা রঙের কয়েকটা ফুল গুজে রাখা, ওর দুধে আলতা গালে তেমন কোন ভারী মেকাপের প্রলেপ নেই আর তাতেই ওর সৌন্দর্য আরও দ্বিগুন বেড়ে গেছে, শিশুদের মতই কাজলে আঁকা বড় বড় চোখ যেখানে কোন ভয় নেই শুধুই দুরন্তপনা আর গভীর ভালোবাসার আঙিনা তার উপরেই ঘন চিকন ভ্রু যোগলের মাঝে কালো টিপে অপূর্ব লাগছে রাই কে। গাঢ় খয়েরী রঙের লিপস্টিকের ছোঁয়ায় আকা কমলার কোয়ার মত ঠোঁটের নিচে সেই কালো তিলটা এখনো আছে৷ এমনিতেই ওর হাসিটা এত দুষ্টু আর মিষ্টি কিন্তু সেই তিলের উপস্থিতি যেন সেই হাসির মিষ্টতা বাড়িয়ে দেয় বারংবার। খোপা করা চুলের বাইরেও কপালের দুপাশেই ঢেউ খেলানো কয়েকটা কালো চুল যেন শিল্পী তুলিতে আঁকা মনোহর রূপে আলাদা মায়া যোগ করেছে। পাতলা গড়নের শরীর না ততটাও পাতলা না তবে মেদহীন ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির শরীরে এটা পারফেক্ট বলা চলে, যেন কোন ভাষ্করের নিপুন হাতে খোদাই করা গ্রীক দেবীর মূর্তি যেখানে প্রতিটা অংশে যতটুকু বাঁকের প্রয়োজন ছিল ততটাই আছে আর তার সাথে সোনালী আভার মত ত্বকের ঠিকরে পড়া উজ্জ্বল জ্যোতির প্রভাব, শাড়ি পড়লে এই দেহবল্লরীর সৌন্দর্যের অপরূপ শোভা যেন আরও বেড়ে যায়। চাইলেও কেউ চোখ সরাতে পারবে না যেমন রুদ্র পারছে না হয়তো ও চোখ সরাবার কোন বৃথা চেষ্টাই করে নি। যত দেখছে ততই বেড়ে চলেছে দেখার ইচ্ছে, এ তৃষ্ণা কখনো ফুরাবার না। রাইয়ের চোখের দিকে চোখ পড়তেই বিদ্যুৎ খেলে যায় রুদ্রের শরীরে, বারবার চোখের পলক ফেলে রুদ্রকে কিছু যেন একটা বলতে চাইছে রাই, হয়তো জিজ্ঞেস করছে "কেমন লাগছে আমাকে বলো"। রাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে সোফা ছেড়ে দাড়িয়ে গেছে রুদ্রের মস্তিষ্কে হয়তো সেটার জানতেি পারে না,

গলা ধরে আসে, ভেতর থেকে একটা আকুতিভরা স্বরে রুদ্রের গলা থেকে বেড়িয়ে আসে সেই একটা নাম, পরম আকাঙ্খিত, এতদিনের সুপ্ত আশা ভালোবাসার মিশে গেছে যেখানে, যার দর্শনে সমস্ত গ্লানি, ক্লেদ মূহুর্তেই বিলীন হয়ে যায়
-রাইইইইই.....
নিজের ভেতরে সব রাগ ক্ষোভ ঘৃণা যেন রাইয়ের সামনে এক এক করে শৃঙ্খল ভেঙে পালিয়ে যাচ্ছে, ইচ্ছে হচ্ছে কত কি বলার কিন্তু বলার শক্তি পাচ্ছে না কন্ঠ নালীতে কেউ যেন চেপে ধরে আছে। এতক্ষণে এতদিনের আজ এখন অব্দি ঘটে চলা সবকিছুর উত্তর এক এক করে পেয়ে যাচ্ছে সে, এখন তো মনে হচ্ছে ও রাই কে না রাই ওকে ভালবাসতো ওর থেকে বেশি তাই তো এমন করেই খুঁজে নিয়েছে কিন্তু রুদ্র সে কি করেছে শুধু ভালোবেসে গেছে, কিন্তু ভালো বাসা কে নিজের করে নিতে কি করেছে সে?? উল্টো ভালোবাসার উপর তৈরী করা অভিমানের পাহাগে একের পর এক ভুল করে গেছে
মনের মাঝেই নিজে নিজে বলে উঠে
কিছু মানুষ আছে কখনো কষ্ট পেলে কাউকে বলতে পারে না, নির্বাক নয়নে চেয়ে থাকে মৃত খরঘোশের মত, ঠোটের কিনারায় শুষ্ক হাসি ছাড়া,
কিছুই অবশিষ্ট থাকে না তার...
আবার কিছু মানুষ আছে অপেক্ষা করতে ভালোবাসে, রাত যায় দিন যায় তার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না, অপেক্ষার মত নিকৃষ্ট সুখে সে বুদ হয়ে থাকে আনমনে।
আর কিছু মানুষ আছে বৃক্ষের মত, কাঁদতে পারে না চোখের পাতা শুকিয়ে হয় মরুময়, অথচ তারা যেন পুর্নিমার চাঁদ আলো ছড়ায় হারাতে চায় মেঘের আড়ালে, হারাতে পারে না কাঁদতে পারে না...
অন্যদিকে কিছু মানুষের বুক নেই পুরোটাই আশার গুদামঘর, জীবনের শেষ নিশ্বাসেও বিশ্বাস করে, তার প্রিয়তমা তাকে ভালোবাসে, অথচ ভালোবাসা কি তা সে মানুষটার অজানা।
আর আমি হয়ত কিছু মানুষের মত ভালোবাসতে পারি না, কাছে টেনেও ঠিক অতটা কাছে টানতে পারি না, শুধু পারি বিষন্ন অভিমানে বুনো অন্ধকারে নাম না জানা পাখির মত হারিয়ে যেতে...
কিছু মানুষ সত্যিই ভালোবাসতে জানে না সত্যি আমিও পারিনি ভালোবাসতে।

[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top