What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মন্দের ভালো by nextpage (1 Viewer)

সুন্দর গল্প দাদা জটিল হইতেছে। অনেক সুন্দর হয়েছে এরকমআরো চাই। ধন্যবাদ দাদা
 
[HIDE]


রুদ্রের মা বাবা কে যত সহজে মনের কথা গুলো বলতে পেরেছিলো নিজের বাসায় ততটা সহজে সে কাজ হচ্ছে না রাইয়ের জন্য। মা কে কোন ভাবে ম্যানেজ করা যাবে কিন্তু বাবা?? বিজয় চৌধুরী পরিবারের হর্তাকর্তা, তার ইচ্ছে মতই সবাইকে চলতে হয়, উনার কথাই বাড়িতে শেষ কথা৷ ভীষণ রাগি মানুষ বাকি সবাই বিজয় চৌধুরী কে বাঘের মত ভয় পায়৷ সেই ভয়ের জন্যই সেই ছোটবেলায় শহরে পাড়ি জমাতে হয়েছিল। রাইয়ের এই সিদ্ধান্ত ওর বাবা সহজে মেনে নিবে না সেটা রাই ভাল করেই বুঝতে পারে সেটার পেছনেও তো একটা কারণ লুকিয়ে আছে। কিন্তু আজ হোক কিংবা কাল নিজের ইচ্ছের কথাটা তো বাবার কাছে বলতেই হবে সেই কারণেই গত কয়েকদিন ধরে ভেবে চলেছে কিভাবে কথা গুলো বাবার সামনে বলবে, বাবার চোখের দিকে তাকাতেই তো ভয় ধরে যায়। কিন্তু অন্যদিকে রুদ্রের বাবা মা কতো ফ্রেন্ডলি সবার সাথে, ছেলে মেয়ের সাথে বন্ধুর সাথে মেশে এতদিন পরে এক দেখাতেই কত সুন্দর রাইকে আপন করে নিয়েছিল রুদ্রের বাবা। তবে আশার কথাও আছে বিজয় চৌধুরী সেই আগের মত হম্বিতম্বি টা আর করে না, রাগটাও কমতির পথে। সুযোগ বুঝে নিজের কথাটা বলতে হবে। অফিস থেকে এসে ফ্রেশ হবার পর বিছানায় শুয়ে শুয়ে এই কথা গুলোই ভাবছিলো রাই। রুদ্রের বাসায় কথা বলেছিল দশ বারো দিনের মত হতে চলেছে এখনো নিজের বাসায বলা হলো না। ঘরে তনু কখন এসেছে সেটা রাই খেয়াল করে নি, দিদিকে এমন আনমনে দেখে দিদির পাশে শুয়ে জড়িয়ে ধরে। তনু জড়িয়ে ধরতেই রাইয়ের ঘোর ভাবটা কেটে যায়, এক হাতে বোন কে জড়িয়ে ধরে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসে।


-(একটা পা রাইয়ে উপরে দিয়ে আরও কাছে সরে যায়) কিরে দিদি এখন শুয়ে আছিস তাও আবার মনমড়া হয়ে। কিছু হয়েছে কি? মন খারাপ নাকি শরীর?

-(বা হাতে তনুর থুতনি টা নাড়িয়ে দিয়ে কপালের বা দিকে একটা ছোট্ট চুমো একে দেয়) নারে কিচ্ছু হয় নি আমার এমনি শুয়ে আছি।

-আমাকে বলবি না নাকি?? কিছু একটা নিয়ে ভাবছিলি মনে হলো। তুই মনমড়া থাকলে আমার ভাল লাগে না তো।

-আরে কই মনমড়া হয়ে আছি, ওটা তুই ভাবছিস আর কি। আচ্ছা আমি যদি চলে যাই তোর অনেক খারাপ লাগবে তাই নারে?

-(বুকের উপর ভর দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে মাথা টা উচু করে) কেন তুই কোথায় যাবি? কি হয়েছে?কোন কারণে আমার উপর রাগ করেছিস?

-ধুরু পাগলি, রাগ করবো কেন তোর উপর। তুই আমার সোনা বোন তোর উপর রাগ করে থাকতে পারবো আমি?

-তাহলে চলে যাবার কথা বললি কেন?

-বারে, আমার বিয়ে হয়ে গেলে তখন চলে যেতে হবে না। তখন তো আমাকে শশুরবাড়ি চলে যেতে হবে।

-তুই বিয়ে করবি? কবে? তুই বিয়ে করে চলে গেলে আমার খারাপ লাগবে কেন, আমি আরও খুশি হবো। এই ঘরটা আমার হয়ে যাবে, তোর সবকিছু আমার হবে, কত কসমেটিক জিনিস আর ওর্নামেন্ট পাবো। তোর বিয়েতে কত আনন্দ করবো কত মজা হবে। নতুন নতুন ড্রেস কিনবো, পার্লারে যাবো, বিয়েতে নাচবো, ছবি তুলবো আর কত কি করবো।

-সত্যিই তুই একটুও কষ্ট পাবি না এই যে আমি তোর থেকে দূরে চলে যাবো।

-একটুও না। আমি তো খুব মজা করবো, তুই চলে গেলে আমাকে আর এত শাসনে থাকতে হবে না, তুই তো শুধু শুধু বকাবকি করিস। সেই সাথে এই আলমারি, ওয়ারড্রব, ড্রেসিং টেবিল সব আমার হয়ে যাবে। এত বড় বিছানা আমার ইচ্ছে মত হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাবো, তোর সাজগোজের জিনিস গুলোও তো আমার হয়ে যাবে। তাহলে তুই বল আমি কষ্ট পাবো কেন।

-তাই, ঠিকি বলেছিস আমি তো তোর কেউ না, যা তোর সাথে আর কথাই বলবো না। ছাড় আমাকে আর জড়িয়ে ধরতে হবে না (অন্যদিকে পাশ ফিরে রাই)

-জানিস দিদি রাগ করলে তোকে না আরও বেশি ভালো লাগে। তোর গাল দুটো লাল হয়ে যায় (দিদির গাল দুটো টানতে থাকে)

-এসব ঝাড়ি মারা কথা কোথা থেকে শিখলি? বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে?

-(রাইয়ের হাতে হালকা চিমটি কেটে) আমার বয়ফ্রেন্ড নেই বুঝলি। এসব শিখাতে হয় না এমনি জানা যায়। তোর বয়ফ্রেন্ড কি তোকে এসব বলে পটানোর চেষ্টা করে বুঝি।

-বললেও সেটা তোকে বলতে যাবো কেন এমনিতেই অনেক কিছু শিখে ফেলেছিস দেখছি। মা কে বলতে হবে আমার আগে যেন তোকেই বিয়ে দিয়ে দেয়।

-তোর ঐ সব মাকেই বলতে হবে কেন, আমাদের মাঝেও তো কিছু সিক্রেট থাকতে পারে তাই না। সব কথাতে বড়দের টানতে নেই বুঝলি দিদি।

-হুম সেটা ঠিক। দুই বোনের মাঝে অনেক কিছুই সিক্রেট থাকতেই পারে, ওটা বাকিরা কেউ জানবে না।

-(আসল কথা বলার সময় এসে গেছে বুঝতে পারে তনু) দিদি একটা কথা বলবো রাগ করবি নাতো?

-রাগ করার মতো হলে তো করবোই। আগে বল শুনি তারপর
ভেবে দেখবো।

-(একটু ভয়ে ভয়ে) তোর একটা ডায়েরি আছে ঐ ড্রয়ারে, সেটা আমি লুকিয়ে দেখেছিলাম।

-আমি জানি, ঐ ছবি গুলোও দেখেছিস। ছবি গুলো উল্টানো দেখেই বুঝেছি কারো হাত পড়েছে সেখানে আর সেটা যে তুই সেটাও ভালো করে জানি।

-তার মানে তুই রাগ করিস নি। আচ্ছা ঐ ছবি গুলো কার রে দিদি? অনেক পুরনো ছবি।

-আমার স্কুলের বন্ধুদের। ছোট থেকে একসাথে পড়েছি আমরা। কেজি থেকে শুরু করে সেই হাইস্কুল অব্দি।

-(বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে ডায়েরি টা বের করে ছবি গুলো হাতে নিয়ে রাই এর কাছে যায়) তোর বন্ধুদের কথা তো কখনো বলিস না আমাকে, কারও নামটা পর্যন্ত জানি না। তাও আবার ছবি গুলিও লুকিয়ে রাখিস কেন রে?

-কারণ আছে তুই বুঝবি না।(হাত থেকে ছবি গুলো নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে) অনেক মিস করি সেই সময়টাকে, কত হাসি খুশি আনন্দে কাটতো সেই সময় গুলো। যদি আবার ফিরে পেতাম সবাই কে। সারাদিন কত হৈ-হুল্লোড় করতাম, সবকিছুই আমাদের একসাথে করতেই হবে এমন একটা চিন্তা কাজ করতো। একই টিউশনে পড়তে যেতাম, একই রঙের জামা বানাতাম, টিফিনে এক সাথে খাওয়া সব কিছু। কত তাড়াতাড়ি দিনগুলো চলে গেল মনে হয়।

-আচ্ছা দিদি এই ছবিতে মাঝখানে তুই সেটা বুঝতে পারছি তোর বন্ধু গুলো কে কে?

-বা পাশে যে আছে ওর নাম জয় আর ডান দিকে বাবু ওটা ওর ডাকনাম ভালো নাম রুদ্র।

-ওদের সাথে যোগাযোগ নেই? কাউকে তো আজ পর্যন্ত দেখলাম না।

-আছে..... শুধু জয়ের সাথে, অনেক বছর আগে এক জায়গায় দেখা হয়েছিল তখন থেকে মাঝে মাঝে কথা হয়। ও একটা কোম্পানিতে জব করে অন্য শহরে থাকে।

-আর রুদ্র? তার সাথে যোগাযোগ নেই?

-না যোগাযোগ নেই আর ঐ শয়তানটার সাথে কথা বলতে যাবে কে? হারামি একটা(শেষের কথাটা মনে মনেই বলে)

-শয়তান? কেন?

-শয়তান কে শয়তান বলবো না তো কি বলবো। অনেক জ্বালিয়েছে এখনো জ্বালিয়ে চলেছে(এই কথাটা একটু নিচু স্বরে বলে) ওটা একটা উজবুক, পাজি, বদমাশ, কুত্তা, হাদারাম....(হঠাৎ করেই কেমন খেঁকিয়ে উঠে রাই)

-ছি দিদি তুই এত পঁচা কথা বলিস। ছবিতে কত কিউট লাগছে রুদ্র দা কে আর তুই কি কি না বলছিস। যে কেউ দেখলেই প্রেমে পড়ে যাবে।

-আমার তো প্রেম উতলে পড়ছে না তাই আমার কাছে ওকে ওমনি মনে হয়। ওটা একটা কুত্তা কুত্তা কুত্তা। সামনে পেলে ইচ্ছে হয় মন ভরে যদি কিল ঘুসি মারতে পারতাম তবে মনটা শান্তি পেত।

-দিদি খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম, রুদ্র দা কে একদম বাজে কথা বলবি না।(মুখ ফসকে কথা গুলো বলে ফেলে)

-আমার যা খুশি যা ইচ্ছে তাই বলবো তোর কি।(হালকা ভ্রু কুঁচকে তনুর দিকে তাকিয়ে) কিরে হঠাৎ করে তোর ওকে নিয়ে এত আগ্রহ কেন সেটা বলতো আগে। ছবি দেখেই প্রেমে পড়ে গিয়ে একেবারে ডিফেন্ড করা শুরু করে দিয়েছিস,ঘটনা কি?

-(ধরা পড়ে যাবার ভয়ে ভ্রু কুচকে আসে) কেন আবার এমনিই হঠাৎ মনে হলো তাই, যাই মা তখন কেন জানি ডেকে ছিল দেখে আসি। তুই শুয়ে থাক।(তড়ি ঘরি করে গুটি গুটি পায়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়)

তনুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রাই রুদ্রের ছোটবেলার একটা ছবি নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে। যেভাবেই হোক বাবাকে ওর রাজি করাতেই হবে আর যদি রাজি না হয় তবে? তবে অন্য পথে যেতে হবে তবুও আর ওকে হারানো যাবে না, একবার হারিয়ে আবার পেয়েছে এবার আর ছাড়বে না।




অফিস থেকে এসে সোজা বাথরুমে ছুটেছিল রুদ্র, আসার পথেই চাপ টা বুঝতে পারছিলো কোনমতে আটকে বাড়ি পর্যন্ত এসেছে। কোনমতে প্যান্টের জিপার খুলে নিজের পুরুষাঙ্গ টাকে অবমুক্ত করতেই এক ঘোড়া পাম্পের মত প্রেসার রিলিজ হতে থাকে। তখন যে শান্তি টা পাওয়া যায় সেটা সেসব মানুষরাই জানে যারা কখনো না কখনো বা এমন সিচুয়েশনে পড়েছে। জামাকাপড় চেঞ্জ করে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে পড়ে এক হাতে মোবাইলটা সামনে নিয়ে আসে। একটা মেসেজ দেখে অবাক হয় সে। মেসেজ টা খুলতেই দেখে একটা গানের কয়েকটা কলি






[/HIDE]
 
[HIDE]

গত কিছুদিন ধরেই এমন মেসেজ আসছে এই নাম্বার টা থেকে। নাম্বার টাতে সাথে সাথে ফোন করে কিন্তু আগের বারের মত এবারও বন্ধ দেখাছে, কে এমন মেসেজ পাঠাচ্ছে বুঝতে পারছে না। প্রথমে ভেবেছিল রিতা কিংবা তনয়ার মাঝে কেউ হতে পারে, ওরা দুজনেই অনেকটাই দুর্বল হয়ে আছে সেটা রুদ্র ওদের হাভভাব দেখেই বুঝতে পারে। রিতার টা তো সেই কলেজ থেকেই জানা এত বছর পর আবার সেই প্রেম মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো কিনা কে জানে। আর তনয়ার ব্যাপার টা একটু কমপ্লিকেটেড, ও মর্ডান মেয়ে এসব রিলেশনশিপে জড়িয়ে একমুখী জীবনে আগ্রহী হবার মত মেন্টালিটি নেই তবে মাঝে মাঝে ও যেভাবে রুদ্রের এটেনশান নিজের দিকে নেবার জন্য হামলে পড়ে সেটা একটু ভয়ের কারণ হতেই পারে। তবে রুদ্র তো কোন রিলেশনে জড়ানোর মত মনোভাব ওদের কে দেখায় নি৷ এই পর্যন্ত যা হয়েছে সবটাই ক্যাজুয়াল দুই দিক থেকেই, সেখানে কোন জোর জবরদস্তি ছিলো না আবার না ছিলো কোন কমিটমেন্ট তবুও একবার ব্যাপার টা নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখতেই হচ্ছে রুদ্র কে। তাই কৌশলে ওদের এই ম্যাসেজ এর ব্যাপারে জানার চেষ্টা করেছিল কিন্তু রেজাল্ট নেগেটিভ। ওরা যে নয় ওটা কর্নফাম তবে কি রুপালির কাজ এটা, ওকে দেখে তো মনে হয় না ও এমনটা করবে। কিছু বলার থাকলে তো সরাসরি বলতেই পারে। আর রুপালি কাছে এমন কিছু এক্সপেকটেশান রুদ্র করে না আর রুপালিও যাতে না করে সেটাও অনেক আগেই ক্লিয়ার করে দিয়েছিল। তাও তো মেয়ে মানুষের মন কখন বদলে যায় বলা তো যায় না। একবার ওর সাথে কথা বলতে হবে সেটা ভাবতে ভাবতে কপালে হাত দিয়ে হালকা মেসেজ করতে থাকে৷ মাথা একটু চিনচিন করছে, চা খেলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে।

-কিরে দাদা মাথা ব্যাথা করছে? (চায়ের কাপ হাতে ঘরে ঢুকে
ছুটকি)

-না ঐ আরকি, রোদের মাঝে এদিক ওদিক যেতে হয় তাই একটু টায়ার্ড লাগছিলো আর কি। চা খেলেই ওটা কেটে যাবে।

-চা খেলেই যদি সব ঠিক হয়ে যেত তবে তো ডাক্তার রা এত এত ঔষধ না লেখে তিন বেলা চা খেতে বলতে। তোর আর চা খেতে হবে না, তুই বস আমি একটু গ্লুকোজ দিয়ে শরবত করে নিয়ে আসি।

-আরে শরবত লাগবে না, চা হলেই হবে তো। তোকে কষ্ট করতে হবে না।

-কষ্ট যেহেতু আমার হবে তাহলে তুই এত চেচামেচি করছিস কেন, শরবত আনছি সেটাই খাবি। (কিছুক্ষণ পর একটা জগ আর গ্লাস হাতে ঘরে আসে ছুটকি, জগ থেকে গ্লাসে শরবত ঢেলে দাদার দিকে এগিয়ে দেয়) নে দাদা খা, এটা শেষ করে আরেক গ্লাস খাবি কোন কথা শুনবো না।

-বুঝেছি আর বলতে হবে না, দে আমি চুপচাপ খেয়ে নিচ্ছি(এক চুমুকে সবটা শেষ করে গ্লাস টা আবার সামনে এগিয়ে দেয়) তুই আমার বোন না হয়ে মা হলে ভালো হতো। বাপরে বাপ মাও আমাকে এত শাসন করে নি তুই যতটা করিস।

-(খিল খিল করে হাসতে থাকে ছুটকি) তাই নাকি, তাহলে আমাকে ছোট মা বলে ডাকবি।

-কিরে তোর দাদাকে শরবত টা দিয়েছিস, মিষ্টি ঠিক আছে তো (জোরে জোরে কথা গুলো বলতে বলতে অঞ্জলি দেবী ওদের দিকে আসতে থাকে)

-(রুদ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে) ওকে জিজ্ঞেস করছো কেন ওই তো শরবত বানিয়ে এনেছে মিষ্টি তো ও জানবেই।

-তোর বোন শরবত বানালে তো আমার ছুটিই হয়ে যেত, বসে বসে খেতে পারতাম। সেই কপাল তো নেই ওঘরে গিয়ে হম্বিতম্বি করে শরবত টা আমাকে দিয়ে বানিয়ে নিয়ে আসলো, দে খাওয়া শেষ হলে জগ আর গ্লাস টা দে আমাকে (জগ আর গ্লাস নিয়ে উনি বের হয়ে যায়)

-(পাশে বসে মিটিমিটি হেসে চলেছে ছুটকি) ওইটুকু পথ তো আমিই এনেছি সেটা তো সত্যি।

-হুম খুব সত্যি।

-দে দাদা আমি তোর চুলে বিলি কেটে দেই দেখবি তোর ভালো লাগবে।(আসন করে বসে রুদ্রের মাথাটা নিজের কোলে রেখে লম্বা আঙুল গুলো দিয়ে চুলে বিলি কাটতে থাকে, মাঝে মাঝে কপালে ম্যাসেজ করে দিচ্ছে। শান্তির আবেশে চোখ দুটো বুজে নেয় রুদ্র)

-খুব ভালো লাগছেরে। তা আজ খাতিরযত্ন টা বেশি করছিস তা কিছু বলার আছে না কিছু লাগবে নাকি?

-(কতকগুলো চুল মুঠি করে জোরে টান দেয়, অল্প যন্ত্রণায় রুদ্রের মুখে অভিব্যক্তি বদলে যায় আর মুখ থেকে অস্পষ্ট স্বরে উফফ শব্দটা বের হয়ে আসে) তোর কি এমনই মনে হয় যে আমি সবসময় তোর কাছে কিছু চাওয়ার জন্য আসি। যা তোর কাছে আসবো না আর চলে যাচ্ছি।

-(হাত টেনে ধরে ছুটকিকে আবার বসিয়ে দেয়) আজকাল খুব গাল ফুলানো শিখেছিস। আমার বোন গাল ফুলিয়ে থাকলে কি আমার ভালো লাগে নাকি। আমি আর এমন করে বলবো না এই কান ধরলাম।

-কান ধরতে হবে না, আচ্ছা দাদা একটা কথা জিজ্ঞেস করি।

-কর না(চোখ বন্ধ করেই উত্তর দেয়)

-তোর স্কুল লাইফের কথা মনে পড়ে না? তোর বন্ধু দের সাথে কি যোগাযোগ হয় না। এত বছরে কাউকেই তো দেখলাম না আমি। আগের জায়গাটা তোকে টানে না।

-(কতটা সময় নিশ্চুপ থাকার পর একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে) নারে। কলেজে থাকতে জয়ের সাথে শেষ যোগাযোগ করেছিলাম এরপর আর হয় নি৷ আমার কেন জানি আগের কোন কিছুর প্রতি আর টান টা নেই। স্কুলে থাকতে আমি যেমনটা ছিলাম কলেজে উঠার পর থেকে আমি সেখান থেকে অনেকটা বদলে গেছি। আগের কিছু আমাকে আর তেমন টানে না। নিজেকে একা করে ফেলেছি ধীরে ধীরে।

আরেকজন যে ছিল কি নাম যেন রাই দি তার সাথেও যোগাযোগ নেই?

-ওর সাথে স্কুল থেকেই যোগাযোগ বন্ধ, কোথায় আছে জানি না। শুনেছিলাম শহরে চলে এসেছে এত মানুষের ভীড়ে খুজে পাবো কোথায়? আমার উপর রাগ অভিমান আর ঘৃণা নিয়ে দূরে চলে গেছে। জানিস তোর দাদা টা না বড্ড বাজে, খারাপ মানুষ। তাই তো একটাবারো আমার কোন কথা না শুনেই চলে গেলো। অনেকেই মনে মনে আমাকে খুব খারাপ ছেলে ভাবে কিন্তু বাইরে সেটা প্রকাশ করে না। হয়তো আমি সত্যিই খারাপ ছেলে এইজন্যেই কাউকে নিজের করে ধরে রাখতে পারি না। দিন দিন যেন আমি আরও নিচের দিকে নামছি। সবাই দূরে সরে গেছে আর না হয় আমি সরিয়ে দিয়েছি। নিজেকে আজকাল নিজের কাছেই ছোট ছোট লাগে, জানিস ছোট থাকতে মা বাবা শাসন করতো তখন খুব মন খারাপ হতো, এখন তো শাসন করে না কিন্তু খুব মন চায় কেউ একটু শাসন করুক তবে হয়তো নিজেকে শুধরে নিতে পারতাম৷ জানিস ছুটকি এই যে সারাদিন সবার সাথে এতো হাসিখুশি হৈ-হুল্লোড়েে থাকি এর পরও নিজেকে খুব একা লাগে মাঝে মাঝে। নিজের মাঝে নিজেকে খুঁজতে থাকি, আমি কি ছিলাম আর এখন কোথায় এসে দাড়িয়েছি। অনেক মানুষের কাছে অপরাধী আমি, তারা কি কখনো ক্ষমা করবে কি না জানি না।(হঠাৎ নিজের কপালে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়তে দেখে উপরের দিকে তাকায়, ছুটকির দুচোখ বেয়ে জলের ধারা গাল বেয়ে টপটপ করে রুদ্রের কপালে পড়ছে) কিরে বোকা মেয়ে কাঁদছিস কেন।

-এমনি রে দাদা, তুই নিজেকে এমন করে আড়াল করে রাখিস কেন। নিজেকে খারাপ ভাবিস কেন? আমার দাদা দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো দাদা, কেউ তোকে খারাপ বললে তাকে আমি মেরেই ফেলবো। তুই একা হবি কেন আমি আছি মা-বাবা আছে।

-না না কাউকে মারতে হবে না। আর কেউ তোর দাদাকে খারাপ বলবে না তুই আছিস যে। যা এখন পড়তে বস গিয়ে।

-আচ্ছা,(রুদ্রের কপালের জলের ফোটা গুলো মুছে দিয়ে, গালে চুমো দিয়ে ছুটকি নাচার ভঙ্গিতে নিজের রুমের দিকে যেতে থাকে।



[/HIDE]
 
[HIDE]

ঘরে গিয়েই ছুটকি তনুকে ফোন করে, ওদিকে তনুও ছুটকিকে ফোন করবে বলেই মোবাইলটা হাতে নিয়েছিল ওমনি ছুটকির ফোন পেয়ে হাসির রেখা ফুটে উঠে ঠোঁটের কিনারায়। দুজনেই আজকের প্ল্যান অনুযায়ী কি কি জানতে পেরেছে সেটা শেয়ার করে। রাই কি কি বলেছে সেটা সবটাই সে ছুটকি কে জানায় ওদিকে রুদ্র কি কি বলেছে সেটাও ছুটকি তনু কে জানায়। বিশদ আলোচনা শেষে দুজনেই বুঝতে পারে রুদ্র আর রাইয়ের মাঝে কিছু তো একটা ঘটনা আছে আর সেটা জানতে হলে একজন কে খুঁজে বের করতে হবে সেটা হলো জয় দা। রুদ্রের যেহেতু জয়ের সাথে যোগাযোগ নেই তাই রাই হলো শেষ ভরসা৷ ওর মোবাইল থেকেই জয়ের নাম্বার টা কালেক্ট করাই হলো ওদের নেক্সট মিশন আর সেটার দায়িত্ব পড়েছে তনুর উপর। তনুও তৈরী সেই কাজটা করার জন্য এই জয় দা তপসে হয়ে সাহায্য করবে বাকি রহস্যের সমাধান করতে।




সন্ধ্যা পূজা শেষে অঞ্জলি দেবী ঘরে এসে কাপড় পাল্টে ছুটকি পড়তে বসলো কিনা সেটা একবার দেখে যায়, নিজের ঘরে গিয়ে মোবাইল টা হাতে নিয়ে একটা নাম্বারে ফোন করে। তনু চলে যাবার পর রাই কানে হেডফোন গুজে গান শুনছিলো শুয়ে শুয়ে, হঠাৎ একটা ফোন আসতেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে নাম টা দেখে কল টা রিসিভ করে,

-হা আন্টি, কেমন আছো?

-আমি ভালো আছি তুই কেমন আছিস? কি করছিস?

-ভালোই আছি, অফিস থেকে এসে রেস্ট নিচ্ছিলাম। বাকিরা সবাই ভালো আছে?

-হুম তোর আঙ্কেল ছুটকি ভালোই আছে, আরেকজনের টা তুই নিজেই ফোন করে জেনে নে।

-(নিঃশব্দের চওড়া হাসিতে মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠে) তুমিও না আন্টি, দরকার নেই ফোন করার। কখন কোন মোডে থাকে বুঝা মুশকিল। আর আমি ফোন করেছি জানতে পারলে হয়তো ফোনেই ধরে আছাড় মারতে চাইবে আমাকে।

-(হা হা করে হাসতে থাকে অঞ্জলি দেবী) তোর আর বাবুর মাঝে কি যে হয়েছে সেটাই আজ পর্যন্ত বললি না। তোর উপর ওর রাগ করবে কেন সেটাই বুঝি না, এরপরও আবার ওকে বিয়ে করতে চাস। তোদের ভাবস্রোত কোন দিকে বহে বুঝা মুশকিল। তা কিরে তোর বাড়িতে কথা বলেছিস? তোর আঙ্কেল তো আজও জানতে চাইলো, তোর কথা বলা হলে তোর আঙ্কেল বাবুর সাথে কথা বলবে।

-না গো আন্টি এখনো তো বলতেই পারলাম না। বাবার সামনে গিয়ে কি বলবো সেটাই তো ভুলে যাই। একবার ভাবছি মা কে দিয়ে বলাবো আবার ভাবি আমার জন্য শুধু শুধু মা বকা খাবে কেন এর চেয়ে আমিই বলে ফেলি কিন্তু সাহস হচ্ছে না৷ আমার বাবা তো সবসময়ই যেন রেগে থাকে।

-তাহলে আমিই না হয় কথা বলি৷ তোর হয়ে আমি কথা বললেই তো হলো। আমি ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষ দুটোই।

-না না আন্টি, বাবা কেমন রগচটা আর কড়া মানুষ তুমি তো জানে না। তোমাকে কি না কি বলে আবার অপমান করে জানে, তার চেয়ে আমিই কথা বলবো সেটাই ভালো হবে৷

-আচ্ছা ঠিক আছে, তুই রেস্ট নে এখন রাখি পরে কথা হবে।

-ওকে আন্টি।


সকালের নাস্তার টেবিলে পত্রিকা হাতে বিজয় চৌধুরী বসে আছে, দেবীকা দেবী রান্নাঘর থেকে নাস্তার প্লেট গুলো একে একে টেবিলে এনে রাখছেন। তনু রাই ওদের ঘরে রেডি হচ্ছে স্কুল আর অফিসের জন্য। একটা প্লেটে পরোটা আর ভাজি দিয়ে স্বামীর দিকে এগিয়ে দেয় দেবীকা চৌধুরী

-তোমার নাস্তাটা, খেয়ে নাও ঠান্ডা হয়ে যাবে।

-জানো যেহেতু ঠান্ডা হয়ে যাবে তাহলে পত্রিকা টা পড়া শেষ হওয়ার পরেই দিতে পারতে (খেঁকিয়ে উঠে কথা গুলো বলে)

-তখন তো আবার চেচামেচি শুরু করতে যে এখনো নাস্তা দিচ্ছি না কেন। তুমি তো সবটাতেই দোষ ধরতে ব্যস্ত।

-(একটু উচ্চস্বরে) থাক, সব কথায় উত্তর দেয়া শুরু করেছো আজকাল। মেয়েরা কই এখনো নাস্তা করতে আসলো না কেন?

-ওরা রেডি হচ্ছে, এখনি চলে আসবে।

-রাই কে ডাকো ওর সাথে কথা আছে।
দেবীকা দেবী এগিয়ে গিয়ে রাই কে ডাক দিয়ে আসে।

-(একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে) বাবা ডাকছিলে।

-হুম, তোমার সাথে একটা কথা আছে। এমনিতেও আমি মনে করি না তোমার সাথে ডিসকাস করার দরকার আছে তবুও একবার বলছি।

-কি কথা? আমারও একটা কথা ছিল তোমার সাথে আবার মায়ের সাথেও(মায়ের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে, মায়ের মুখ দেখেই বুঝতে পারে সকাল সকালই বাবা আবার রাগরাগি করেছে মায়ের সাথে)।

-আগে আমি আমার টা শেষ করি তারপর না হয় তোমার টা শোনা যাবে।

-ঠিক আছে।

-আমার এক কলিগের ছেলে ইউকে তে একটা ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং কোম্পানিতে চাকরি করে ও গত সপ্তাহে দেশে এসেছে। আমার কলিগ চায় তার ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দিতে, আগামী শুক্রবার দেখতে আসতে চায় তোমাকে সেদিনই হয়তো বিয়ের ডেট ফিক্সড করবে। সেদিন কোন প্ল্যান থাকলে ক্যানসেল করে দাও।

-(বাবার কথাটা শুনার পর হঠাৎ যেন চোখে মুখে অন্ধকার হয়ে আসে, মূহুর্তেই যেন নিজেকে কেমন অসার মনে হচ্ছে। বাবা যে একরোখা মানুষ তাতে করে আর নিজের মনের কথা আর হয়তো বলা হবে না কখনো। তাহলে কি নিজের সব ভালোলাগা ভালোবাসা আবারও সেই আগের মতই মাটি চাপা দিতে হবে?? না এবার আর সেটা হবে না আগে ছোট ছিল তাই কিছু বলতে পারে নি কিন্তু আজ সময় আছে নিজের টা নিজের করে নেবার, যেভাবেই হোক বাবার বিরুদ্ধে না গেলেও বুঝাতে তো হবে) বাবা আমাকে না জানিয়ে ওদের আসতে বলে দিলে। আমারও তো একটা মতামত আছে নাকি। একদম বিয়ের ডেটও ফিক্সড মানে কি আমার কি পছন্দ ও পছন্দ কিছু নেই?

-তোমার আবার কিসের মতামত? আমি সব দেখাশোনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তোমাকে জানাবার কি আছে। যা বললাম সেরকমই সেদিন বাসায় থাকবে। তোমার যেটাতে ভালো হবে এত বছর সেটাই করে এসেছি আর আগামীতেও সেটাই করবো।

-মেয়েটার কথাটাও তো একবার শুনতে পারতে, ও তো বড় হয়েছে(দেবীকা দেবী পাশ থেকে কম্পিত স্বরে কথা গুলো বলে উঠে)

-তুমি চুপ করো তোমাকে কে কথা বলতে বলেছে, তোমার আশকারাতেই ও এতগুলো কথক বলার সাহস পেয়েছে (শাসিয়ে উঠে বিজয় চৌধুরী)

-বাবা তুমি মা কে ধমকাবে না, মা তো ভুল কিছু বলে নি। আমি জানি তুমি সবসময় আমাদের ভালোর জন্যই সব করেছো, কিন্তু বিয়েটা তো আমাকে করতে হবে সারাটা জীবন কাটাতে হবে। আমার নিজের মত ছাড়া তুমি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারো না, এ বিয়ে আমি করতে পারবো না।(সশব্দে চেয়ার সরিয়ে উঠে পড়ে রাই)


আড়াল দাড়িয়ে থাকা তনু সবটাই শুনতে থাকে। দিদি কে এমন করে বাবার কথার বিরুদ্ধে গিয়ে প্রতিবাদ করতে আগে দেখ নি সে। তবে কি দিদি অন্য কাউকে পছন্দ করে....



[/HIDE]
 
[HIDE]

রাই খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে ঘরে চলে যায়, যাবার পথে দরজার আড়ালে তনু কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কিছু বলবে ভেবেও আর বলে না৷ তখনো বিজয় চৌধুরীর গর্জন শোনা যাচ্ছে, দেবীকা দেবী কে ভৎসনা করছে রাই এর এমন আচরনে জন্য। তার মেয়ে বাবার মুখের উপরে কখনো কথা বলবে সেটা কখনো চিন্তায় আনে নি, সেই রাগের বহিঃপ্রকাশে একদুটো অশ্লীল শব্দও হয়তো বেরিয়ে গেছে মুখ থেকে। রাগ আর উত্তেজিত হবার কারণে খুব দ্রুত ছোট ছোট শ্বাস নিচ্ছে। স্বামীর এমন আচরণ নতুন কিছুই নয় দেবীকা চৌধুরীর কাছে, বাইরের মানুষের কাছে যতটাই নিপাট ভদ্রলোক সেজে থাকুক না কেন বাড়িতে কখনোই সে সেই ভদ্রতার মুখোশের ধার ধারে নি৷ বিয়ে হয়ে আসার পর থেকেই এমন আচরণ সয়ে আসছে, হয়তো এখনকার সময় হলে সইতো না। কিন্তু তার সেই ছোট সময়ের আনকোরা মস্তিষ্কেই যে পরিবার থেকে একটা শিক্ষা গেঁথে দিয়েছিল স্বামী হলো দেবতা তার কথার অবাধ্য হতে নেই, তার মন জুগিয়ে চলাই হলো স্ত্রীর কর্তব্য। শশুরবাড়ীতে এসে সবার সাথে মানিয়ে নিয়েই সংসার করতে হয়, মুখ বুজে অনেক কিছু সহ্যও করতে হয়। সেই কারণেই হয়তো এতটা কাল এই মানুষ টার সাথে সংসার করে চলেছে। তবে এখন আর তেমনটা মনে হয় না, তাই আজকাল স্বামীর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে মনের গোপন কুঠুরিতে স্পৃহা জেগে উঠে। যেমন আজ চাইছে মেয়ের হয়ে কথা বলতে, নিজে যা সইবার সয়েছে কিন্তু মেয়েটার যেন তেমন করে জীবন কাটাতে না হয় সেটাই চায় দেবীকা দেবী। চিরকাল তো মুখ বুজে সব কিছু বিষের মত হজম করেই এসেছে আজও যদি সেটা করে তবে সেটার অনুশোচনা বাকিটা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে।

দূরে দাড়িয়ে থাকা তনু এতক্ষণ সবকিছুর উপর নজর রাখছিলো কিন্তু স্কুলের সময় হয়ে যাওয়াতে ওকে বেড়িয়ে পড়তে হলো। আজ আর নাস্তা করা হয় নি ওর কাঁধে ব্যাগ চাপিয়ে চুপি চুপি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়, যাবার আগে একবার পিছন ফিরে তাকিয়ে রাইয়ের অশ্রুসিক্ত চোখ দেখে আর থাকতে পারে নি দ্রুতই বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আগের চেয়ে পরিবেশ একটু শান্ত হয়ে এসেছে দেবীকা দেবী স্বামীর পাশের চেয়ার টা টেনে বসে পড়ে

-(শান্ত গলায় বলতে শুরু করে) তুমি মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেললে সেটা একবারও আমাকে পর্যন্ত জানালে না। আমার তো সেই অধিকার টা আছে তো নাকি।

-(আবার গর্জে উঠে) সেটা তোমার কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে নাকি? আমার মেয়ে আমি যা সিদ্ধান্ত নেব সেটাই হবে।

-(এবার একটু চড়া গলাতেই বলে উঠে) চেচামেচি করবে না, আস্তে করে কথা বলো। তোমার চেচামেচি পাশের ইউনিট পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তারা তোমাকে আর যাই ভাবুক ভদ্রলোক ভাবে না সেটা মনে রেখো। আর আমার মেয়ে আমার মেয়ে
এ কথাটা বারবার বলছো কেন? মেয়ে কি তোমার একার নাকি ও আমারও সন্তান। ওর ভালো মন্দের দেখভালে অধিকার আমারও আছে। আমারও জানার অধিকার আছে কোথায় কার কাছে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছি। আর সবচেয়ে বড় কথা মেয়ে বড় হয়েছে ওরও একটা মতামত আছে ওর কোন পছন্দ অপছন্দ থাকতেই পারে। আগে তো তোমার উচিত ছিল সেটা জানা, তারপর না হয় তুমি খোঁজ খবর নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারতে। কিন্তু না তুমি সেটা করলে না উল্টো তো আমাকেও না জানিয়ে মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছো। তুমি যদি ভেবে থাকো আগের মত এখনো সব তোমার খেয়াল খুশি মত হবে তবে তুমি ভুল ভাবছো, আমি অন্তত সেটা হতে দেব না।(এক টানা কথা গুলো বলে বলে একটা লম্বা শ্বাস নেয় দেবীকা দেবী)


-(এত বছরের নিশ্চুপ স্ত্রীর এমন বদলে কিছুটা হলেও ঘাবড়ে যায় বিজয় চৌধুরী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে দেবীকা দেবীর দিকে যেন এখনি হামলে পড়ে ছিন্নভিন্ন করে দিবে বিপরীতে মানুষটাকে কিন্তু সেটা কেন জানি পারছে না। স্ত্রীর এমন অগ্নিগর্ভ রূপ আগে সে প্রত্যক্ষ করে নি সেটাতেই যেন তার পৌরুষের তেজ জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে, তবে সে দমে যাবার মত নয় আহত বাঘের মত আবার গর্জে উঠে) এই একদম উচু গলায় কথা বলবে না, আমার মাথা গরম করো না হাত উঠে যাবে বলে দিলাম। এতদিন যেহেতু আমার মতেই সব হয়েছে আগামীতেও হবে। আমার কাছে তোমাদের মতামত নেবার মত কিছুই ইম্পরট্যান্ট মনে হয় নি। আমি যেটা চাইবো সেটাই হবে আমার পছন্দ করা ছেলের সাথেই ওর বিয়ে হবে। এই আত্মীয়তায় আমার বিজনেসের জন্য অনেক বড় একটা টার্নিং পয়েন্ট দিবে পারলে তুমি আটকে দেখাও...

-তুমি যে নিচু মানসিকতার মানুষ সেটা জানতাম তবে আজ দেখে মনে হচ্ছে তুমি মানুষের কাতারেই নেই, নিচে নামতে নামতে কোথায় এসে দাড়িয়েছো সেটা একবার দেখো। নিজের বিজনেসের জন্য মেয়েকে ব্যবহার করতেও দ্বিধা বোধ কাজ করছে না।(কড়া গলাতেই উত্তর দেয় দেবীকা চৌধুরী)

-একদম চুপ, আমি যেখানে আছি ঠিক আছি, কিন্তু তুমি তোমার জায়গাতে নেই, আরেকবার কথা বলবে মুখ চিপে ধরবো। (দু হাত বাড়িয়ে দিয়ে শাসিয়ে উঠে বিজয় চৌধুরী)

-(ঘর থেকেই মা বাবার কথা শুনছিলো সেটা যে বাজে দিকে যাচ্ছে সেটা বুঝতে পেরে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেই বাবার এমন বিভৎস রূপ দেখতে পায়) ছি বাবা ছি.... তুমি মায়ের সাথে এমন আচরণ কেমন করে করলে। তোমার প্রতি যতটুকু সম্মান ছিল আজ থেকে সেটাও আর মন থেকে আসবে না। আমি আগে কখনই তোমার কথার উপরে কিছু করি নি আগেও হয়তো করতাম না কিন্তু আজকের ঘটনার পর থেকে সেটা আবার নতুন করে ভাবতে হবে দেখছি।
(মেয়ের সামনে আর সেই দাপট ধরে রাখতে পারে নি বিজয় চৌধুরী, ধপ করেই চেয়ারে বসে নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়)
শুনো বাবা তোমার পছন্দ করা ছেলে কে আমি বিয়ে করতে পারবো না। আমি একজন কে পছন্দ করি, আমি তাকেই বিয়ে করবো, ভেবেছিলাম তোমাদের মতামত নিয়েই যা হবার হবে কিন্তু আজ যা দেখলাম তাতে বাবার মতামত তো জানাই হয়ে গেল। মা তোমার মতামতও আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ তাই তোমাকেই বলছি আমি একজন কে ভালোবাসি তার বাবা মায়ের সাথে কথা বলেছি তারা রাজি এখন শুধু তোমাদের মতামতের অপেক্ষা করছিলো তবেই তারা আসতো কথা বলতে।

-ছেলে টা কে? কি করে? (শান্ত গলায় দেবীকা দেবী জিজ্ঞেস করে)

-তোমরা চিনবে মা, ওর নাম রুদ্র... রুদ্র রায়। গোপালপুরে আমরা একসাথেই পড়তাম। ওরা এখন শহরেই থাকে, ও এখন আমি যে কোম্পানিতে আছি সেটাতেই আছে প্রজেক্ট ইনচার্জ হিসেবে।

-ঐ বখাটে লম্পট টা এখনো তোমার পিছে পড়ে আছে। যার কারণে তোমাকে শহরে নিয়ে এলাম সেই আবারও... তাই তো বলি তোমার এমন আস্পর্ধা হয় কি করে। ওমন ছেলের সাথে ঘুরলে তো এমন অবস্থা হবেই।(মেয়ের দিকে তাকাতে গিয়েও তাকাতে না পেরে অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে কথা গুলো বলে যায় বিজয় চৌধুরী)

-তুমি তো সবসময়ই সবার ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিতে পারদর্শী। আমার তোমাদের বলার দরকার ছিল বললাম, এখন তোমাদের সিদ্ধান্ত নেবার পালা। (মায়ের দিকে তাকাতেই দেবীকা দেবী হালকা মাথা দুলিয়ে সায় দেয়) মা তোমার সাথে পরে কথা বলে নেব, এখন অফিসে যাচ্ছি এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে ক্যান্টিনেই কিছু খেয়ে নেব।



[/HIDE]
 
[HIDE]

রাই বেরিয়ে যাবার পর দেবীকা চৌধুরীও খাবার টেবিল ছেড়ে ঘরে চলে যায়, সকালের খাবার টা আজ আর কারও মুখেই উঠলো না। বিজয় চৌধুরীর সামনে থাকা প্লেটের রুটি গুলো ততক্ষণে ঠান্ডায় নেতিয়ে গেছে, সেগুলোই তিন আঙুলে টুকরো টুকরো করে মুখে নিতে গিয়েও নিতে পারে না। এ এক বিশ্রী রকমের নীরবতায় চারদিক গ্রাস করে নিয়েছে, সেই নীরবতার ঘুন পোকা গুলো একটু

একটু করে তার এতদিনের অহংবোধ কাটতে শুরু করে।

রাই বরাবরই নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে, সিগনালে গাড়ি দাড়িয়ে আছে। লম্বা জ্যাম পড়েছে, এসির বাতাস টা মুখে এসে লাগছে সকালে এমন একটা ঘটনা ঘটবে সেটা আশা করে নি। ভেবেছিল ঠান্ডা মাথায় সবকিছু বুঝিয়ে বলবে কিন্তু ভাবা হয় এক আর ঘটতে থাকে আরেক।




[/HIDE]


[HIDE]



স্মৃতিচারন



[HIDE]


ফিজিক্সের একটা নোট বাবু কে দিয়েছিল সেটা আজ মনে করে স্কুলে ওর থেকে নেয়া হয় নি। সেটা আনতেই বাবুর বাড়িতে গিয়েছিল, কিন্তু বাবু বাড়িতে নেই বিকেলে মাঠে চলে যায় খেলতে সেটা তো জানাই ছিল কিন্তু নোট টা ভীষণ দরকার ছিল তাই আসতেই হলো। আন্টির সাথে দেখা হতেই বললো ওর ঘর থেকে নোট কোথায় আছে খুঁজে নিয়ে যেতে। রাই বাবুর পড়ার টেবিলে এত খুঁজেও নোট টা কোথাও পেল না, কোথায় রেখে গেল কে জানে। একবার বিছানার আশপাশটাও দেখে নিয়ে ঘর থেকে বের হতে যাবে তখনি নজরে পড়লো বাবুর স্কুল ব্যাগটা টেবিলের একপাশে আড়াল করে দাড় করানো। কাছে গিয়ে ব্যাগটা তুলে নিয়ে নোট টা খুঁজতে থাকে, নোট টা পেয়ে সেটা বের করে আনতেই সেটার সাথে আরেকটা ছোট পাতলা বইয়ের মত কিছু একটা নিচে পড়ে গেল। সেটা তুলে পাতা উল্টাতেও রাই এর চোখ ছানাবড়া। আর একদুটো পাতা উল্টাতেই নিজেকে কেমন পালকের মত হালকা মনে হতো লাগলো। মাথাটা কেমন ঘুরছে মনে হচ্ছে, কান দিয়ে গরম ভাপ বের হচ্ছে প্রতিটা পাতায় বিভিন্ন নায়ক নায়িকার নগ্ন ছবি তার নিচেই গল্পের মত কিছু একটা লেখা, না রাই আর এক মূহুর্ত দাড়িয়ে থাকতে পারে না পা গুলো কেন জানি অসারের মত হয়ে যাচ্ছে। ব্যাগটা জায়গা মত রেখে ওর ফিজিক্স নোট টার সাথে সেই বইটা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে নিজের বাসার দিকে ছুটতে থাকে।

বাসায় এসে নিজের ঘরে ঢুকেই দরজা টা চাপিয়ে দিয়ে নোটের ভেতর থেকে সেই নগ্ন ছবির বইটা সন্তপর্ণে বের করে আনে৷ আবারও একের পর এক পাতা উল্টে যায়, নিজের শরীরের আর মানসিক পরিবর্তন অন্যদিকে কিছু ইঁচড়েপাকা বান্ধবীর কল্যানে বইয়ের বিষয়বস্তু একেবারেই আর অজানা থাকার কথা না। ছবি গুলোর নিচে প্রিন্ট করা গল্প গুলোও একদুটো পড়া হয়ে যায় এই ফাঁকে। সারা শরীরের একটা অদ্ভুত শিহরণ অনুভব করছে রাই, বিশেষ করে শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলির মাঝে একটা প্রভাব বুঝতে পারে যেন সেখানে আজ কোন উৎসব লেগে গেছে সেই উৎসবের উদ্দীপনার সঞ্চারে মনের অজান্তেই একটা পা আরেকটা পায়ের উপর কখন থেকে ঘসে চলেছে সেটার সময় দেখা হয় নি। রক্তের গতিবেগ যেন মূহুর্তে মূহুর্তে বেড়েই চলেছে, হাত পা গুলো অসারের মত মনে হচ্ছে না আর পারছে না নিজের কিশোরী শরীরটা কেমন আনচান করে উঠছে কিছু এটা হচ্ছে ভেতরে ভেতরে তবে সেটা কি সেটাই বুঝতে পারছে না কোন মতে মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করে বইটা দূরে ছোড়ে মারে। নয়তো নিজের সাথে আর যুদ্ধ টা আর চালিয়ে নেয়া যেত না, দর দর ঘামছে শরীরটা নাকের পাটা দুটো ফুলে আছে ঘন ঘন শ্বাস নেবার কারণে। চোখ মুখের লাবণ্যতার জায়গা দখলে নিয়েছে ক্ষণিকের কিশোরী শরীরের অজানা উদ্দীপনা, চোখের সামনে এখনো ভেসে উঠছে সেই বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিমায় নগ্ন নিষিদ্ধ ছবি গুলো। নিজের নিম্নাঞ্চলের ঈষৎ ভেজা ভাবটা মস্তিষ্কের কাছে অনেক আগেই ধরা পড়ে গেছে। অদ্ভুত এক আকর্ষণের মায়াজালে যেন নিবন্ধ হয়ে পড়েছিল নিজের পরিস্ফুটিত হতে থাকা শরীরের আনাচে কানাচে জমতে থাকা উত্তেজনার পারদ, হাত পায়ের শিরা ধমনি গুলো যেন হঠাৎই কেমন টান টান হয়ে যাচ্ছিলো। কিছুটা সময়ের ব্যাপ্তিতে উত্তেজনার প্রকোপ টা কমতেই সেখানে ঘৃণার আনাগোনা বাড়তে থাকে, বাবুর উপর তার চেয়ে বেশি হয়তো নিজের উপরে ঘৃণার জন্মে গা টা কেমন ঘিনঘিন করে উঠে রাইয়ের। চেয়ার ছেড়ে উঠে দৌড়ে বাথরুমে চলে যায়, পাগলের মত জলের ঝাপটা দিতে থাকে নিজের চোখে মুখে। কতক্ষণ এভাবে কেটে সেটা হয়তো ঐ দূরের টিকটিক করে চলতে থাকা ঘড়ির কাছেই হিসেব তুলা রইলো। এত বছর ধরে একসাথে বড় হওয়া মানুষটার এমন বদলে যাওয়া টা রাইয়ের কাছে একটা বিশাল ধাক্কা, বাবুর কাছে এমন একটা বই থাকতে পারে সেটা সে কল্পনাতেও ভাবতে পারে নি। নিজের শরীরের পরিবর্তনের সাথে সাথে যখন মনের মাঝেও পরিবর্তন ঘটতে থাকে তখন থেকেই বাবু কে আর আট দশটা বন্ধুর মত ভাবতে পারে নি কখনো, শত চেষ্টাতেও আর আগের জায়গায় বসাতে পারে নি ওর প্রতি যে টান টা সে অনুভব করে সেটা আর কারো প্রতি আসে না৷ ওর হাবভাব দেখে বান্ধবী গুলো বারবারই বলে ও নাকি বাবুর প্রেমে পড়েছে। এটা প্রেম নাকি ভালোবাসা সেটার সিদ্ধান্ত নেবার মত বয়স এখনো হয়তো হয়নি, সেই সাথে এতটাও পরিপক্বতা আসে নি যে এমন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে তবে এটা ঠিক বুঝতে পারে ও এখন আর বন্ধুর গন্ডিতে নেই সেটা ছাড়িয়ে বেশি কিছু৷ সে কারণেই হয়তো বাবুর কাছে এই বইটা কেন থাকবে সেটা মেনে নিতে পারছে না, অন্যকারও হলে হয়তো ওর এত সমস্যা হতোই না যতটা না বাবুর জন্য হচ্ছে৷ ইচ্ছে করছে যেন এখনি ওর চুল গুলো মুঠি করে জোরে টেনে ছিঁড়ে নিক, ইচ্ছে মত যতক্ষণ না মন শান্ত হয় ততক্ষণ পর্যন্তই মারতে । নিজের সবটা রাগ বাবুর উপর উগড়ে দিতে, না ওটার জবাব ওকে দিতেই হবে৷ তবে কাল স্কুল ছুটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।


পরদিন স্কুল ছুটি হতেই বাবুর সাইকেলে চেপে গিয়েছিল ঐ ভাঙা ব্রীজের এখানে, জায়গাটা একদম শুনশান নীরব এদিকে তেমন কেউ আসে না তাই হয়তো প্রকৃতি এই জায়গাটা একটু নিজের মত করেই সাজিয়ে নিয়েছে। এমন একটা জায়গাই বাবু কে শাসানোর জন্য সেইফ মনে হয়েছিল অন্যকোথাও কেউ না কেউ দেখে নিতো ওদের দুজনকে। কিন্তু আমরা ভেবে রাখি এক আর আমাদের জীবনে ঘটে চলে আরেক। বইটা বের করার আগেই বাবু হয়তো বুঝে গিয়েছিল রাই ওকে কি নিয়ে বলতে চাইছে সেটা ওর মুখের কাচুমাচু ভঙ্গি টাতেই স্পষ্ট কিন্তু রাই একদম বুঝতে পারেনি যেটা মাত্রই ওর সাথে ঘটে গেল, গতকাল যেখানে সবকিছু থেমে ছিল আজ যেন সেখান থেকেই সব শুরু হয়ে গেল বাবুর হাতের স্পর্শে। নিজের বুকের উপর প্রবল কৌতুহলে জেগে উঠা দুটো নরম মাংসপিণ্ডের উপর বাবু হঠাৎ করেই এমন ভাবে বল প্রয়োগে চেপে ধরবে সেটা আচ করতে পারেনি। মূহুর্তের ঘটনায় প্রথমে ব্যাথায় গুঙিয়ে উঠার পরক্ষণেই অবর্ণনীয় এক অনূভুতি ছড়িয়ে পড়ে নিজের কুমারী শরীরে। এই প্রথম কোন জোরালো পুরুষ স্পর্শে কম্পিত হলো পুরো শরীর, কয়েক সেকেন্ডের ঘটনায় যেন সব কিছু বদলে গেল নিজের চেনা জগতের। আগের দিনের জমে থাকা রাগটা এখন আরও প্রবল হয়ে ফিরে এসেছে, কোথা থেকে কি হয়ে গেল সেটা ভাবার ফুসরত টুকুও যেন পেল না সদ্য কৈশোরে ভাসতে থাকা দুটো কিশোর কিশোরী। রাগের মাথায় বাবুর ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে দেয় রাই, তবে যেটুকু চেয়েছিল উত্তেজনার ফাঁদে পা দিয়ে তার চেয়ে বেশিই দাঁত গুলো বসে গিয়েছিল বাবুর ঘাড়ে সেটা বুঝতে পারে যখন দেখতে পায় রক্তের ধারা বইছে। ভয়ে পেয়ে যায় রাই কোনমতে ব্যাগ থেকে রুমালটা বের করে চেপে ধরে বাবুর ঘাড়ে,নিমিষেই শুকনো রুমালট্ রক্তে ভিজে জবজবে হয়ে যায়। বাবুকে নিয়ে কোনভাবে বাজারের একটা ফার্মেসীতে গিয়ে ড্রেসিং করিয়ে যে যার বাসায় চলে যায়।


[/HIDE][/HIDE]
 
[HIDE]


তখন থেকেই মনটা উশখুশ করে যাচ্ছে কোন ভাবেই পড়ায মন বসাতে পারছে না রাই, এমনটা কি করে হয়ে গেল সেটাই এখনো বুঝতে পারছে না। রাতে বাবার গম্ভীর গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, মায়ের সাথে উচু গলায় কিছু একটা নিয়ে কথাকাটি হচ্ছে। বাবার এই রূপ নতুন নয়, তবে আজকের গলার স্বরটা অন্যরকম ঠেকছে সেটার জন্যই ভয় টা বেশি হচ্ছে৷ এমনিতেই রাই ওর বাবাকে বাঘের মতই পায়... হঠাৎই রাই এর ডাক পড়ে। দেবীকা দেবীর পেছন পেছন রাই গিয়ে বাবার সামনে দাঁড়ায়

-এইসব করার জন্য তোমাকে স্কুলে পাঠাই? এত এত টাকা খরচ করছি তোমার পিছনে আর তুমি এর সাথে তার সাথে ঘুরে বেড়াও। কতদিন ধরে চলছে এসব??

-(ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে এই হয়তো চোখের বাঁধ ভেঙে উপচে আসবে অশ্রুধারা) বাব...বা কি বলছো ত..তুমি আমি লেখাপড়া বাদ দিয়ে কিচ্ছু করিনি। কারও সাথে ঘুরতে যাই নি।

-(গর্জন করে উঠে) মিথ্যে বলবে না, ঐ যে অবিনাশ না কি তার ছেলেটার সাথে তুমি সাইকেলে করে বাজারে যাও না?

-লাইব্রেরি গিয়েছিলাম খাতা কিনতে, ও আমার বন্ধু..

-এসব বখাটে ছেলে তোমার বন্ধু?? তাই তো এই অধঃপতন হয়েছে তোমার। আজও ওর সাথে কোথায় গিয়েছিলে?? ছি ছি আমার বলতেও লজ্জা লাগছে ওসব জায়গায় তোমার কি কাজ তাও ঐ ছেলের সাথে..

-কিসব বলছো মেয়েকে, তুমি মাথা ঠান্ডা করে ভেবে তারপর বলো। রাই এমন কিছু করবে কেন?(বরাবরের মতই শান্ত গলায় কথা বলে যায় দেবীকা চৌধুরী)

-(শাসিয়ে উঠে বিজয় চৌধুরী) একদম কথা কম বলবে, তুমি বাড়িতে থেকে কি জানবে কি হচ্ছে না হচ্ছে। আমার কাছে তো সব খবরই আছে, আমার এক স্টাফের কাছ থেকেই খবর পেয়েছি তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করো সত্য না মিথ্যা। আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কালই আমরা শহরে শিফট করবো এখন থেকে তুমি ওখানেই পড়বে।

-না বাবা, প্লিজ... আর এমনটা হবে না তবুও শহরে যেতে বলো না, আর এখন তো বছরের মাঝামাঝি গিয়ে মানাতে পারবো না। আমি আর কোথাও যাবো না কারও সাথে মিশবো না। প্লিজ বাবা প্লিজ (কাকুতিমিনতি করতে থাকে বারবার, হঠাৎ করে সব এমন উলট পালট হয়ে যাবে বুঝতে পারে নি)

-আমার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে এটা আর বদলাবে না। বাড়াবাড়ি করলে ঐ ছেলের বাড়িতে নালিশ জানাবো এখনো সেটা করিনি। ব্যাগপত্র গুছিয়ে নাও(কথাটা শেষ করেই হনহন করে ঘরে দিকে হাঁটতে থাকে বিজয় চৌধুরী)

সারারাত রাই ঘুমাতে পারে নি, বাবার সিদ্ধান্ত যে বদলাবে না সেটা ওর অজানা নয়। ওর হাতে আর কিছুই নেই সব কিছু ছেড়ে চলে যেতেই হবে শেষবারের মত একবার বাবুর সাথে দেখা করতে হবে, ওদের বাড়ির নাম্বার টা আনতে হবে পরে যোগাযোগ করা যাবে। পরদিন সকালেই বাবা একটু বের হতেই রাই ছোটে গিয়েছিল বাবুদের বাড়িতে। বাসায় গিয়ে দেখে বাবু জ্বরে অচেতন হয়ে আছে আন্টি ওর মাথায় জল ঢেলে চলেছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থেকেছিল রাই সেখানেই শেষ দেখাটা আর হয়ে উঠে নি, কত কথা বলার ছিল সেসব আর হয়তো কখনোই বলা হবে না। ভেজা চোখ নিয়েই বাড়িতে ফিরে এসেছিল রাই কিছুক্ষণ পরেই গাড়ি চলে আসে, শেষবারের মত ঐ পথটার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে আর হয়তো কখনোই আসা হবে না এখানে আর মানুষগুলো সাথেও দেখা হবে না। আর বাবু.....



[/HIDE]


[HIDE]


গাড়ির জানালায় টুকা দেবার শব্দে ঘোর ভাঙে রাইয়ের... সামনের দিকে চেয়ে দেখে সিগনাল ছেড়ে দিয়েছে, পেছনের গাড়ি গুলো উচ্চশব্দে বারবার হর্ন বাজিয়ে চলেছে। রাইয়ের গাড়িও সামনের দিকে চলতে শুরু করে।




কনফারেন্স রুমেই এতক্ষণ বসে ছিল রুদ্র একটা মিটিং হতো কিন্তু ম্যানেজার ম্যাডাম এখনো না আসাতে ২০ মিনিট পর আবার সবাইকে আসতে বলা হয়েছে। রুদ্র নিজের রুমেই চলে যাচ্ছিলো হঠাৎ রূপালির ডেস্কের সামনে দিয়ে যাবার সময় অজানা নাম্বার থেকে আসা মেসেজ সম্পর্কে মনে পড়তেই রুপালির ডেস্কের দিকে পা বাড়ায়। রুপালি কোন একটা ফাইলের এন্ট্রি নিয়ে কাজ করছিলো, রুদ্র কে দেখেই পাশের একটা খালি চেয়ার টেনে ওকে বসতে দেয়। কৌতূহল কে পেছনে রেখে হাসিমুখেই চেয়ার টা টেনে রুপালির পাশে বসে

-কি খবর কেমন আছো?

-(অনেকটা নাকটানা সুরেই কথা বলতে শুরু করে) আজকাল তো আমার খবর নেবার সময়ই তোমার হয় না, তনয়া কি জাদু মন্ত্র জানে নাকি? একেবারে বশ করে নিয়েছে তোমাকে। যখনই দেখি তোমার সাথে আঠার মত লেগে থাকে, আমাদেরও একটু সুযোগ দিও। নাকি তোমার মন আর এদিকে ফিরে তাকাতে বারণ করে??

-(সকল অভিযোগ বাতাসে উড়িয়ে দেবার মতই করে হাসির রেখা টেনে) আরে না কিসব বলছো, ওসব বশ টশ আমি কখনো হয় নি আর হবোও না। নতুন প্রজেক্টের পর থেকে তো দম ফেলার সুযোগই পায় না, নইলে তুমি কি কম সুন্দরী নাকি যে আমার মন তোমাকে এড়িয়ে যাবার মত স্বৈরাচারী হয়ে উঠবে। একটু ফ্রি হলে একদিন না হয় একটা লং ড্রাইভে চলে যাবো, কি যাবে তো? আর আমার একটা পাওনা তো বাকি আছে সেটাও না হয়...

-(অভিমানের মেঘ সরে গিয়ে উজ্জ্বল আলোর রেখায় ঝলমলে চেহারার দীপ্তি ছড়িয়ে) তুমি ভালো করেই জানো কিভাবে কার মান ভাঙাতে হয় এমন সব কথা বলো আর অফার করো যে রাগ করে থাকার মত জোর মন বা মস্তিষ্ক কোনটাতেই পাই না। (ছোট্ট হাসি) তোমাকে কি কখনো বারণ করেছি যখন চাইবে নিজের করে নিবে।

-যাক তাহলে মন গললো, একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো সরাসরি উত্তর দিলে খুশি হবো।

-সিরিয়াস কিছু(অজানা আতঙ্কে ভ্রু দ্বয় কুঁচকে উঠে)

-(মোবাইল বের করে নাম্বার টা দেখিয়ে) এটা কি তোমার নাম্বার? তুমি কি এই নাম্বার থেকে মেসেজ পাঠাও আমাকে?

-(মেসেজ গুলো দেখে দুষ্টুমির হাসি হেসে) আহা এতো প্রেম কার বুকে উতলা ঢেউ এর মত আছড়ে পড়ছে, যদি আমি হতাম তবে কি তুমি আমার হতে? যদি হও তবে আমি স্বীকার করে নেব সব। তোমার জন্য ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে রাজি।

-প্লিজ ভনিতা করো না, এটা কি তোমার কাজ? তুমি যদি এটা মজার ছলে করে থাকো তবে বলে দাও

ওমনি ম্যানেজার ম্যাডাম রিদ্ধিমা চৌধুরী কে আসতে দেখেই রুপালি ডেস্ক ছেড়ে দাড়িয়ে গুড মর্নিং সম্ভাষণ জানায়, রুদ্র উল্টো দিকে বসা ছিল তাই ও ম্যাডাম কে দেখতে পারে নি রুপালি কে দাড়াতে দেখে ও নিজেই দাড়িয়ে ঘুরতেই দেখে ম্যাডাম আসছে। রুদ্রও সাথে সাথে সম্ভাষণ জানাই, ওর কাছে মনে হলো ম্যাডাম হয়তো একটু রাগান্বিত চোখেই ওর দিকে তাকিয়ে থেকেই নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেল, মনে হলো ক্ষণিকের ঐ দৃষ্টিতেই যেন সে ঝলসে যাচ্ছিলো। ম্যাডাম এসে গেছে তাই মিটিং শুরু হয়ে যাবো এই ভেবে রুদ্রও আর চেয়ারে না বসে এগিয়ে যায় সামনের দিকে রুপালির উত্তর টা ওর আর নেয়া হলো না পরে আবার কখনো এক ফাঁকে আবার আসতে হবে। কনফারেন্স রুমে যাবার আগে নিজের রুম থেকে ফাইলটা নিতে হবে তাই সেদিকে যাচ্ছে রুদ্র, মোবাইলে নোটিফিকেশনের আওয়াজ হয় পকেট থেকে মোবাইল টা বের করতেই আবারও সেই নাম্বার থেকে মেসেজ আরও কয়েকটা লাইন





আমি হয়তো তোমার ব্যাপারে বড্ড হিংসুটে, সেটা তুমি দোষ গুণ যেটা খুশি ভাবতেই পারো
তোমার পাশে কাউকেই আমার সহ্য হয় না
বলতে পারো এটা আমার ভালোবাসা কিংবা পাগলামি....
তবু আমি জানি আমি তোমাকেই ভালোবাসি।



[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top