[HIDE]
রুদ্রের মা বাবা কে যত সহজে মনের কথা গুলো বলতে পেরেছিলো নিজের বাসায় ততটা সহজে সে কাজ হচ্ছে না রাইয়ের জন্য। মা কে কোন ভাবে ম্যানেজ করা যাবে কিন্তু বাবা?? বিজয় চৌধুরী পরিবারের হর্তাকর্তা, তার ইচ্ছে মতই সবাইকে চলতে হয়, উনার কথাই বাড়িতে শেষ কথা৷ ভীষণ রাগি মানুষ বাকি সবাই বিজয় চৌধুরী কে বাঘের মত ভয় পায়৷ সেই ভয়ের জন্যই সেই ছোটবেলায় শহরে পাড়ি জমাতে হয়েছিল। রাইয়ের এই সিদ্ধান্ত ওর বাবা সহজে মেনে নিবে না সেটা রাই ভাল করেই বুঝতে পারে সেটার পেছনেও তো একটা কারণ লুকিয়ে আছে। কিন্তু আজ হোক কিংবা কাল নিজের ইচ্ছের কথাটা তো বাবার কাছে বলতেই হবে সেই কারণেই গত কয়েকদিন ধরে ভেবে চলেছে কিভাবে কথা গুলো বাবার সামনে বলবে, বাবার চোখের দিকে তাকাতেই তো ভয় ধরে যায়। কিন্তু অন্যদিকে রুদ্রের বাবা মা কতো ফ্রেন্ডলি সবার সাথে, ছেলে মেয়ের সাথে বন্ধুর সাথে মেশে এতদিন পরে এক দেখাতেই কত সুন্দর রাইকে আপন করে নিয়েছিল রুদ্রের বাবা। তবে আশার কথাও আছে বিজয় চৌধুরী সেই আগের মত হম্বিতম্বি টা আর করে না, রাগটাও কমতির পথে। সুযোগ বুঝে নিজের কথাটা বলতে হবে। অফিস থেকে এসে ফ্রেশ হবার পর বিছানায় শুয়ে শুয়ে এই কথা গুলোই ভাবছিলো রাই। রুদ্রের বাসায় কথা বলেছিল দশ বারো দিনের মত হতে চলেছে এখনো নিজের বাসায বলা হলো না। ঘরে তনু কখন এসেছে সেটা রাই খেয়াল করে নি, দিদিকে এমন আনমনে দেখে দিদির পাশে শুয়ে জড়িয়ে ধরে। তনু জড়িয়ে ধরতেই রাইয়ের ঘোর ভাবটা কেটে যায়, এক হাতে বোন কে জড়িয়ে ধরে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসে।
-(একটা পা রাইয়ে উপরে দিয়ে আরও কাছে সরে যায়) কিরে দিদি এখন শুয়ে আছিস তাও আবার মনমড়া হয়ে। কিছু হয়েছে কি? মন খারাপ নাকি শরীর?
-(বা হাতে তনুর থুতনি টা নাড়িয়ে দিয়ে কপালের বা দিকে একটা ছোট্ট চুমো একে দেয়) নারে কিচ্ছু হয় নি আমার এমনি শুয়ে আছি।
-আমাকে বলবি না নাকি?? কিছু একটা নিয়ে ভাবছিলি মনে হলো। তুই মনমড়া থাকলে আমার ভাল লাগে না তো।
-আরে কই মনমড়া হয়ে আছি, ওটা তুই ভাবছিস আর কি। আচ্ছা আমি যদি চলে যাই তোর অনেক খারাপ লাগবে তাই নারে?
-(বুকের উপর ভর দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে মাথা টা উচু করে) কেন তুই কোথায় যাবি? কি হয়েছে?কোন কারণে আমার উপর রাগ করেছিস?
-ধুরু পাগলি, রাগ করবো কেন তোর উপর। তুই আমার সোনা বোন তোর উপর রাগ করে থাকতে পারবো আমি?
-তাহলে চলে যাবার কথা বললি কেন?
-বারে, আমার বিয়ে হয়ে গেলে তখন চলে যেতে হবে না। তখন তো আমাকে শশুরবাড়ি চলে যেতে হবে।
-তুই বিয়ে করবি? কবে? তুই বিয়ে করে চলে গেলে আমার খারাপ লাগবে কেন, আমি আরও খুশি হবো। এই ঘরটা আমার হয়ে যাবে, তোর সবকিছু আমার হবে, কত কসমেটিক জিনিস আর ওর্নামেন্ট পাবো। তোর বিয়েতে কত আনন্দ করবো কত মজা হবে। নতুন নতুন ড্রেস কিনবো, পার্লারে যাবো, বিয়েতে নাচবো, ছবি তুলবো আর কত কি করবো।
-সত্যিই তুই একটুও কষ্ট পাবি না এই যে আমি তোর থেকে দূরে চলে যাবো।
-একটুও না। আমি তো খুব মজা করবো, তুই চলে গেলে আমাকে আর এত শাসনে থাকতে হবে না, তুই তো শুধু শুধু বকাবকি করিস। সেই সাথে এই আলমারি, ওয়ারড্রব, ড্রেসিং টেবিল সব আমার হয়ে যাবে। এত বড় বিছানা আমার ইচ্ছে মত হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাবো, তোর সাজগোজের জিনিস গুলোও তো আমার হয়ে যাবে। তাহলে তুই বল আমি কষ্ট পাবো কেন।
-তাই, ঠিকি বলেছিস আমি তো তোর কেউ না, যা তোর সাথে আর কথাই বলবো না। ছাড় আমাকে আর জড়িয়ে ধরতে হবে না (অন্যদিকে পাশ ফিরে রাই)
-জানিস দিদি রাগ করলে তোকে না আরও বেশি ভালো লাগে। তোর গাল দুটো লাল হয়ে যায় (দিদির গাল দুটো টানতে থাকে)
-এসব ঝাড়ি মারা কথা কোথা থেকে শিখলি? বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে?
-(রাইয়ের হাতে হালকা চিমটি কেটে) আমার বয়ফ্রেন্ড নেই বুঝলি। এসব শিখাতে হয় না এমনি জানা যায়। তোর বয়ফ্রেন্ড কি তোকে এসব বলে পটানোর চেষ্টা করে বুঝি।
-বললেও সেটা তোকে বলতে যাবো কেন এমনিতেই অনেক কিছু শিখে ফেলেছিস দেখছি। মা কে বলতে হবে আমার আগে যেন তোকেই বিয়ে দিয়ে দেয়।
-তোর ঐ সব মাকেই বলতে হবে কেন, আমাদের মাঝেও তো কিছু সিক্রেট থাকতে পারে তাই না। সব কথাতে বড়দের টানতে নেই বুঝলি দিদি।
-হুম সেটা ঠিক। দুই বোনের মাঝে অনেক কিছুই সিক্রেট থাকতেই পারে, ওটা বাকিরা কেউ জানবে না।
-(আসল কথা বলার সময় এসে গেছে বুঝতে পারে তনু) দিদি একটা কথা বলবো রাগ করবি নাতো?
-রাগ করার মতো হলে তো করবোই। আগে বল শুনি তারপর
ভেবে দেখবো।
-(একটু ভয়ে ভয়ে) তোর একটা ডায়েরি আছে ঐ ড্রয়ারে, সেটা আমি লুকিয়ে দেখেছিলাম।
-আমি জানি, ঐ ছবি গুলোও দেখেছিস। ছবি গুলো উল্টানো দেখেই বুঝেছি কারো হাত পড়েছে সেখানে আর সেটা যে তুই সেটাও ভালো করে জানি।
-তার মানে তুই রাগ করিস নি। আচ্ছা ঐ ছবি গুলো কার রে দিদি? অনেক পুরনো ছবি।
-আমার স্কুলের বন্ধুদের। ছোট থেকে একসাথে পড়েছি আমরা। কেজি থেকে শুরু করে সেই হাইস্কুল অব্দি।
-(বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে ডায়েরি টা বের করে ছবি গুলো হাতে নিয়ে রাই এর কাছে যায়) তোর বন্ধুদের কথা তো কখনো বলিস না আমাকে, কারও নামটা পর্যন্ত জানি না। তাও আবার ছবি গুলিও লুকিয়ে রাখিস কেন রে?
-কারণ আছে তুই বুঝবি না।(হাত থেকে ছবি গুলো নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে) অনেক মিস করি সেই সময়টাকে, কত হাসি খুশি আনন্দে কাটতো সেই সময় গুলো। যদি আবার ফিরে পেতাম সবাই কে। সারাদিন কত হৈ-হুল্লোড় করতাম, সবকিছুই আমাদের একসাথে করতেই হবে এমন একটা চিন্তা কাজ করতো। একই টিউশনে পড়তে যেতাম, একই রঙের জামা বানাতাম, টিফিনে এক সাথে খাওয়া সব কিছু। কত তাড়াতাড়ি দিনগুলো চলে গেল মনে হয়।
-আচ্ছা দিদি এই ছবিতে মাঝখানে তুই সেটা বুঝতে পারছি তোর বন্ধু গুলো কে কে?
-বা পাশে যে আছে ওর নাম জয় আর ডান দিকে বাবু ওটা ওর ডাকনাম ভালো নাম রুদ্র।
-ওদের সাথে যোগাযোগ নেই? কাউকে তো আজ পর্যন্ত দেখলাম না।
-আছে..... শুধু জয়ের সাথে, অনেক বছর আগে এক জায়গায় দেখা হয়েছিল তখন থেকে মাঝে মাঝে কথা হয়। ও একটা কোম্পানিতে জব করে অন্য শহরে থাকে।
-আর রুদ্র? তার সাথে যোগাযোগ নেই?
-না যোগাযোগ নেই আর ঐ শয়তানটার সাথে কথা বলতে যাবে কে? হারামি একটা(শেষের কথাটা মনে মনেই বলে)
-শয়তান? কেন?
-শয়তান কে শয়তান বলবো না তো কি বলবো। অনেক জ্বালিয়েছে এখনো জ্বালিয়ে চলেছে(এই কথাটা একটু নিচু স্বরে বলে) ওটা একটা উজবুক, পাজি, বদমাশ, কুত্তা, হাদারাম....(হঠাৎ করেই কেমন খেঁকিয়ে উঠে রাই)
-ছি দিদি তুই এত পঁচা কথা বলিস। ছবিতে কত কিউট লাগছে রুদ্র দা কে আর তুই কি কি না বলছিস। যে কেউ দেখলেই প্রেমে পড়ে যাবে।
-আমার তো প্রেম উতলে পড়ছে না তাই আমার কাছে ওকে ওমনি মনে হয়। ওটা একটা কুত্তা কুত্তা কুত্তা। সামনে পেলে ইচ্ছে হয় মন ভরে যদি কিল ঘুসি মারতে পারতাম তবে মনটা শান্তি পেত।
-দিদি খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম, রুদ্র দা কে একদম বাজে কথা বলবি না।(মুখ ফসকে কথা গুলো বলে ফেলে)
-আমার যা খুশি যা ইচ্ছে তাই বলবো তোর কি।(হালকা ভ্রু কুঁচকে তনুর দিকে তাকিয়ে) কিরে হঠাৎ করে তোর ওকে নিয়ে এত আগ্রহ কেন সেটা বলতো আগে। ছবি দেখেই প্রেমে পড়ে গিয়ে একেবারে ডিফেন্ড করা শুরু করে দিয়েছিস,ঘটনা কি?
-(ধরা পড়ে যাবার ভয়ে ভ্রু কুচকে আসে) কেন আবার এমনিই হঠাৎ মনে হলো তাই, যাই মা তখন কেন জানি ডেকে ছিল দেখে আসি। তুই শুয়ে থাক।(তড়ি ঘরি করে গুটি গুটি পায়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়)
তনুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রাই রুদ্রের ছোটবেলার একটা ছবি নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে। যেভাবেই হোক বাবাকে ওর রাজি করাতেই হবে আর যদি রাজি না হয় তবে? তবে অন্য পথে যেতে হবে তবুও আর ওকে হারানো যাবে না, একবার হারিয়ে আবার পেয়েছে এবার আর ছাড়বে না।
অফিস থেকে এসে সোজা বাথরুমে ছুটেছিল রুদ্র, আসার পথেই চাপ টা বুঝতে পারছিলো কোনমতে আটকে বাড়ি পর্যন্ত এসেছে। কোনমতে প্যান্টের জিপার খুলে নিজের পুরুষাঙ্গ টাকে অবমুক্ত করতেই এক ঘোড়া পাম্পের মত প্রেসার রিলিজ হতে থাকে। তখন যে শান্তি টা পাওয়া যায় সেটা সেসব মানুষরাই জানে যারা কখনো না কখনো বা এমন সিচুয়েশনে পড়েছে। জামাকাপড় চেঞ্জ করে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে পড়ে এক হাতে মোবাইলটা সামনে নিয়ে আসে। একটা মেসেজ দেখে অবাক হয় সে। মেসেজ টা খুলতেই দেখে একটা গানের কয়েকটা কলি
[/HIDE]