What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মন্দের ভালো by nextpage (4 Viewers)

[HIDE]



আজকের পর আর যেন এমন না হয়। মা বাবা পড়াশোনার জন্য স্কুলে পাঠায় এসব করার জন্য না। ভুলেও যেন এসব কাজে আর কখনো না দেখি।

পেছনে একটা বাস এসে দাড়ায়, আগে থেকেই বাসটার ভেতরে একদম মানুষে ভর্তি তারপরও কিছু মানুষ নামতেই কয়েকটা ছেলে মেয়ে গাদাগাদি করেই বাসটায় উঠে পড়ে, কয়েকজন তো দরজার কাছেই ঝুলে আছে এমন অবস্থাতেই বাসটা আবার চলতে শুরু করে। নিজের বাইকের দিকে এগুতে গিয়ে খেয়াল করে ওর পেছনে যে মেয়েটি ছেলেগুলোর নামে নালিশ করেছিল সে তখনো সেখানেই দাড়িয়ে।

-কি ব্যাপার তুমি গেলে না, তোমার বাস কত নাম্বার?

-ছয়

-সেটাতো মাত্রই গেলো।

-যে ভিড় ছিল উঠতাম কি করে?

-আরেক বাস কখন আসে কে জানে? তোমার বাসা কোথায়?

-সেন বাড়ি রোড থেকে একটু ভেতরে যেতে হয়।

-এসো আমি পৌঁছে দিচ্ছি।

ভাগ্যিস ঠিক সময়ে লোকটা এসেছিল, নইলে আজ ওদের সাহস যেন আরও বেড়ে গিয়েছিল। প্রতিদিন এমন সহ্য হয় নাকি, স্কুল শেষে বাসের জন্য অপেক্ষা টা প্রথমে যেমন রোমাঞ্চকর ছিল আজকাল সেটা বিভীষিকা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ছেলে গুলো দলবেঁধে এখানে এসে মেয়েদের টিজ করে চলে। আজেবাজে কথা বলার পাশাপাশি অশ্লীল আর কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করে মেয়েদের দিকে। আশেপাশের মানুষ গুলো সং এর মত দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখে, কেউ কিচ্ছুটি বলে না। সবাই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, ততক্ষণ পর্যন্ত হুশ হয়না যতক্ষণ না বিষয়টা নিজের সাথে না জড়ায়। কয়েকটা তো বাসে উঠেও পিছু নেয়, খুব বিরক্তিকর লাগে এসব কিছু। তবে আজ যে দাবড়ানি টা খেয়েছে তাতে কিছুদিনের জন্য হলেও ওদের উৎপাত টা কমবে সেটাই স্বস্তির।

লোকটা আগে কোন দিন এলো না কেন সেটাই আফসোস হচ্ছে৷ আজ আবার তাকে পৌঁছেও দিচ্ছে বাসায়। মেয়েদের মনে সহজে জায়গা করে নেয়ার জন্য এমন পদক্ষেপ যথেষ্ট। পোশাকে যতটুকু বুঝা যাচ্ছে তাতে তো মনে হয় চাকরি করে নয়তো বড় ক্লাসে পড়ে ইউনিভার্সিটি হবে হয়তো। ছেলে গুলোকে যখন ধমকাচ্ছিলো তখন লোকটার চোখ মুখের মাঝে একটা অদ্ভুত হিংস্রতা ছিল কিন্তু এখন আবার একদম শান্ত৷ চেহারা বলতে গেলে তেমন কোন ড্যাশিং হিরোর মত না তবে একটা মায়াবী ভাব আছে এই শান্ত অভিব্যক্তি তে। মেয়েদের পটতে এটাই অনেক, যেমন সে নিজেই অনেকাংশে পটে আছে। ধুর বাবা কখন থেকে কি সব ভেবে যাচ্ছে সে, এখনি যদি একটা থমক দেয় তবেই কেঁদে কেটে এক করে দিবে সে।আর বয়সের ফারাকটাও তো অনেক। মেয়েরা অনেক কিছু সহ্য করতে পারে কিন্তু যার কাছে মন দুর্বল হয়ে পড়ে তার একটুখানি রাগ ভাবও হৃদয়ে আঘাত করে চোখ ভেজায় ঝর্ণা ধারায়। সেটা খুব অল্পেই সহ্যের বিপদসীমা অতিক্রম করে চলে যায়, তখন মস্তিষ্ক কাজ করে কম হৃদয়ের প্রভাব থাকে বেশি।

-এখন কোন দিকে যেতে হবে?

লোকটার ডাকে সম্বিত ফিরে মেয়েটার। কিসব আবোল তাবোল ভাবছে সেই কখন থেকে। এই বয়সেই কত কি ভেবে ফেলেছে সে, এ জন্যই মা বলে সে ইঁচড়েপাকা হয়ে গেছে।
-এই সামনে বা দিকে যে রাস্তা টা।

একটা বহুতল বিল্ডিং এর সামনে এসে বাইকটা দাড় করাতে বলে।

-এই বিল্ডিংটার ছয় তলায় আমাদের ফ্ল্যাট।

-ওহ, তা তোমার নাম কি?

-আমি তনু, ইয়ে মানে ভাল নাম ত্বন্বী চৌধুরী।

-আমার নাম রুদ্র রায়। তোমার বয়সি আমার একটা বোন আছে, তাই মনে হয় তোমাকে তুমি করে বলাটা কেমন দেখায়। তা তোমার বাসায় কে কে আছে?
আমরা দু বোন, মা বাবা। আসো না বাসায় মা আছে দেখা করে যাও।

-না না আজ হবে না, কাজ আছে অফিসে যেতে হবে।

-বাহ! মাত্রই বললে আমি তোমার বোনের মত আর আমারও কোন দাদা নেই তাহলে বোনের একটা কথা রাখবে না?

-সত্যি বলছি আজ হবে নারে, বাসা তো চিনে গেলাম আরেকদিন ঠিক আসবো।

-কথা দিলে তো?

-হুম দিলাম, তোর সাথে দেখা করতে আসবো।(পকেট থেকে মানিব্যাগ টা বের করে তার থেকে একটা কার্ড তুলে নিয়ে) এই কার্ড টা রাখ। দরকার পড়লে ফোন দিবি, ছেলে গুলো যদি আবার ডিস্টার্ব করে তবে আমাকে একটা ফোন করবি শুধু দেখিস আমি কি করি।

-(হু হু করে হাসতে থাকে তনু) ঠিক আছে দাদাভাই, তবে মনে হয় আজ যে ঔষধ পড়েছে তাতে আর কোনদিন এমন করার সাহস পাবে না।

-হয়েছে এখন তুই যা আমাকে অফিসে যেতে হবে এখন
তনু হাত নেড়ে বিদায় জানাতে জানাতে বিল্ডিং দিকে এগিয়ে যায়। রুদ্র বাইক স্টার্ট করে অফিসের দিকে যাত্রা শুরু করে।



[/HIDE]
[HIDE]


দিন কয়েকটা এতই ব্যস্ততার চাদরে মোড়া ছিল যে নিজের দিকে নজর দেবার খানিকটা মূহুর্ত খোঁজে বের করা মুশকিল হয়ে পড়েছিল। ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং, সাইটের ভিজিট করা, অফিসের কাজ সবকিছু সামাল দিতে দিতে দিন শেষে শরীরটা আর কুলিয়ে উঠতে পারে না। বসের চোখের মনি হলে যেমন সুবিধে আবার সময়েতে সেই সুবিধাটাই হাড়ে হাড়ে টের পেতে হয়। এই জন্যই হয়তো কারও গুডবুকে না থাকাটাই ব্যাটার, তোমার জীবন তুমি তোমার মতই কাটাও ডোন্ট কেয়ার। না এমন ছন্দ ছাড়া জীবনটা কিছু সময়ের জন্য উপভোগ্য হতেই পারে তবে বৃহৎ সময়ের জন্য এতো মানুষের পদদলিত পৃথিবীর বুকে কখনো না কখনো বড্ড নিসঙ্গ একাকি হয়ে যাবে। একাকী কোন ভিড় রাস্তায় হেটে চলেছো কিন্তু কেউ তোমার মুখের দিকে একটিবার তাকিয়ে পর্যন্ত দেখছে না সেটা যে কতটা যন্ত্রণার সেটা হয়তো মৃত্যুর প্রহর গোনতে থাকা মানুষটার চেয়ে আর কেউ ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবে না। তাই যতই চাই না কেন একা থাকার দিন শেষে ছায়াটাও হন্য হয়ে একটা অবলম্বনের খোঁজ করে। সারাদিন শেষে যখন বাড়ি ফিরে যায় শরীরের শেষ প্রাণবিন্দু টা তপ্ত ধরনীর বুকে উবে যেতে চায় কিন্তু দরজার ওপাশে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা মানুষটার হঠাৎ প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠা মুখের হাসিটা নতুন শক্তির সঞ্চার করে। মমতাময়ীর কোমল আঁচলের স্পর্শে মুখমন্ডলে জমে থাকা লবণাক্ত কর্দক ঘামের সাথে ক্লান্তিটাও মুছে যায়। নিজের প্রাণপাখিটা যখন ছুটতে ছুটতে এগিয়ে আসে তখন কোন অদৃশ্য শক্তি এসে শরীরে উদ্যমের আগমন ঘটায় যেটার রেশ হয়ে মলিন মুখটাতেও হাসি ফুটে উঠে। বা হাতটা বশীভূতের মত পকেটের ভিতর থেকে চকলেট গুলো যক্ষের ধনের মত আগলে বেড় করে আনে। "ছেলেটাকে একদন্ড জিরিয়ে নিতে দে"- দূরে উল্টোদিকে মুখ করে আড়ালে বসে থাকা সদা গাম্ভীর্যের ছাপে ঢাকা মুখের আওয়াজ টাও হৃদয় টাকে শীতল করে দিয়ে যায়৷ শেষবেলায় ঘুমের দেশে হারানোর আগে মায়ের হাতটা যখন কপাল জুড়ে সঞ্জীবনীর পরশ বুলায় সেটাই যে আগামী সকালের নতুন জীবনী রসদের কাজ করে।



নিজের রুমে বসে গতকালকের ক্লাইন্ট মিটিং এ যে ডিজাইন টা এপ্রোভ হয়েছে সেটা নিয়ে আরেকটু কাটাছেঁড়া করার মত পয়েন্ট গুলো মার্কিং করে রাখছে৷ হাতের কাজ টা গুছিয়ে পা দুটো সামনের দিকে ছড়িয়ে দিয়ে হা দুটো মেলে দিয়ে শরীরের আড়মোড়া টা ভাঙে। আপাতত একটু অবসর, অবসর সময়টাতেই মাথায় হয়তো ভূত গুলো চেপে বসে। মনে মনে কি ভেবে যেন সেটা বাস্তবায়নের ফলাফলের কল্পনায় ছোট্ট হাসি টা অদৃশ্য ভাবেই ফুটে উঠে। ফোন টা তুলে কাউকে ডেকে পাঠায় রুদ্র। দরজা টা খোলার শব্দ হতেই মুচকি হেসে অভ্যর্থনা জানানোর ভঙিতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।

-আসুন আসুন মিস ললিতা, সিটি কলেজ ব্যাচ-২০১৪, গোলপুকুর পাড়, নেতার মেয়ে, ডেয়ারিং ভাব, শত শত ছেলের ক্রাশ।

-(মুচকি হাসিতে এগিয়ে এসে চেয়ার টেনে বসতে বসতে) এই রিতার সব ইনফরমেশন মনে আছে তাহলে।

-(হা হা হা করে হাসতে থাকে) সব মনে থাকে আমার, একটু অতলে চলে গিয়েছিল আরকি। হালকা নাড়াচাড়া করে সব আবার বের করে আনলাম।

-উহু ভাট বকো না রুদ্র দা। তোমার মনে থাকলে সেদিনই চিনতে পারতে। নিশ্চিত আমার তথ্য জানতে লোক লাগিয়ে ছিলে।




[/HIDE]
 
[HIDE]


-আরে না, সত্যি বলছি। সেদিন দেখার পরই কেমন চেনা চেনা লাগছিলো। কলেজে যেই মেয়ের পেছনে সবাই পড়ে থাকতো আর সেই মেয়ে সিনিয়র একজনের পেছনে লেগে আছে ওমন কাউকে ভুলা যায়।

-মোটেও তোমার পেছনে লেগে ছিলাম না। (সশব্দে হাসতে থাকে) তোমাকে ভালো লাগতো তাই তোমার কাছাকাছি থাকতে চাইতাম কিন্তু তুমি তো পাত্তাই দিতে না তাই জেদ করে তোমার পেছনে থাকতাম সবসময়।

-শুধু তোমাকে কেন আমি তেমন কাউকেই পাত্তা দেই নি কখনো। তবে তোমার মত পিছনে আঠার মত কেউ লেগে থাকে নি৷ সেই তোমাকে পিছু ছাড়াতে কি শর্ত দিয়েছিলাম মনে আছে।

-ও বাবা থাকবে না আবার। ওমন কথা বলার সাহস আর কারও ছিল কলেজে? বারবার তোমাকে প্রপোজ করেছি তুমি না করে দিয়েছো৷ শেষে একদিন তুমি বললে যদি সবার সামনে তোমাকে কিস করি তবে তুমি ভেবে দেখবে।

-আমিও তো হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম যখন তুমি রাজি হয়ে গেলে। কই ভাবলাম লজ্জায় তুমি না করবে উল্টো তুমি এক কথায় রাজি হয়ে গেলে।

-কি করবো বলো? তোমাকে তো তখন পাগলের মত ভালবাসতাম। কিন্তু প্রথম কিস টা এভাবে করবো সেটা কখনো ভাবি নি৷ যেই তুমি শর্ত দিলে আমার মন বললো সে যা খুশি হোক তাতে তুমি যদি আমাকে ভালবাসো তাতেই খুশি।

-তুমি যে এমন পাগলি সেটা জানলে এই শর্ত রাখতামই না৷ এখনো মনে আছে আমি কলেজ থেকে বের হচ্ছি। গেটের কাছে তখনো অনেকেই জটলা করে দাড়িয়ে আছে আর হঠাৎ তুমি পেছনে থেকে ডেকে দাড় করালে, আর কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার ঠোঁট মুখে পুড়ে নিলে। আমার তো দম বন্ধের মত অবস্থা। সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। নিজেকে কেমন পাখির পালকের মত হালকা লাগছিলো এই বুঝি কেউ ফু দিয়েই উড়িয়ি দিবে আমায়।

-(মাথা নিচু করে) থাক না রুদ্র দা ওসব কথা আমার লজ্জা করছে, ওসব পাগলামির কথা মনে করে।

-প্রথমে অপ্রস্তুত থাকলেও পরে কিন্তু বেশ লেগেছিল আমার। এমন ডেয়ারিং কাজের ফিলিংস টাই অন্যরকম। তবে মেয়েরাও যে এমন সাহস দেখাতে জানে সেটা জানাই ছিল না।

-তুমি থামবে, দরকার হলে আমি আরেকবার কিস করবো তবুও তখনকার কথা আর বলো না। পুরনো স্মৃতিতে আমার সেই আগের পাগলামি ভাবটা জেগে উঠে।

-(একটু এগিয়ে এসে, কোমড় বাকিয়ে নিচু হয়ে মুখটা রিতার কাছাকাছি নিয়ে) তবে তো আরেকটা চুমো পেতেই পারি।

-(রিতা কিছু বলছে না আবার সরেও যাচ্ছে না। ভ্রু কুঁচকে কিছু একটা ভেবে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো)

মৌনতাকে সম্মতি আর চোখ বন্ধ করাকে নিমন্ত্রণ ধরে নিয়ে রুদ্র আরেকটু এগিয়ে যায়। চোখ বন্ধ অবস্থাতে অপরূপ লাগছে রিতা কে, চশমাটা খুলে নিতেই আরও ঠিকরে পড়ছে যেন সেই সৌন্দর্যের ছটা। হালকা করে স্পর্শ করে কোমল ঠোঁটে, ছোঁয়া পাওয়া মাত্রই ঈষৎ ফাঁক গলে ঠোঁটের পাপড়ি গুলো নিজ আয়ত্ত্বে নিয়ে নেয়৷ লালা আর লিপস্টিকের সংমিশ্রণে কেমন এক আঠায় যেন একে অপরের সাথে লেগে লেগে যাচ্ছে বারবার। ধীর গতিতে সমুদ্র মন্থনের মতই আরও প্রকট হতে থাকে চুম্বন মূহুর্ত। চুমোর অবর্ননীয় স্বাদের উপভোগ্যতা বাড়িয়ে তুলতে রিতা নিজেকে এলিয়ে দেয় চেয়ারে। স্থান কাল ভুলে দুজনে ডুবে গেছে অনুভব আর অনুভূতির অতল গহ্বরে।





[/HIDE]
[HIDE]

সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি হয়েই চলেছে, ঘর থেকে বের হওয়া দায়। ভারী বৃষ্টির প্রকোপে ছাতি গুলোর অসহায় আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। এমন দিনে কাঁথা মুড়ি দিয়ে একটা ঘুম দেয়াটাই অধিকাংশ তরুনের অগ্রাধিকারেে মাঝেই পড়ে। তবে রুদ্র কে সেই ঘুমকে বিসর্জন দিয়ে কলেজে আসতেই হলো একটা ইম্পর্ট্যান্ট ল্যাব ক্লাসের জন্য। বৃষ্টির অজুহাতে বেশিরভাগ স্টুডেন্টই কলেজ বাংক করেছে৷ ল্যাব ক্লাসটা হলেও বাকি ক্লাস নেবার কোন নামগন্ধ নেই। ক্লাস টা বলতে গেলে একদম ফাঁকাই, সামনের দিকে কয়েকজন ছেলে মেয়ে নিচু গলায় গান গাইছে, কেউ আবার এসাইনমেন্ট কপি করছে। রুদ্র শেষদিকের একটা বেঞ্চে জানালার কাছে কানে হেডফোন গুঁজে বসে আছে। করিডোর ধরে আরেকজন আসছে এদিকেই, সদা চঞ্চল চোখ কাউকে খুজে বেড়াচ্ছে। চলতি পথে প্রতিটা কক্ষে উকি দিয়ে সেই মানুষটাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। একটা কক্ষে এসে রুদ্রের দেখা পায় রিতা, না রুদ্র ওকে দেখেনি। রিতা এগিয়ে যায় রুদ্রের দিকে, ওর সামনের বেঞ্চে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নিজের প্রেয়সীর দিকে। ওর সামনে একজন বসে ওমন ভাবে তাকিয়ে আছে সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই যেন রুদ্রের। এমন করে উপেক্ষিত হওয়াটা কতটা যন্ত্রণার হয় সেটা যে ভালবাসতে শিখেছে সেই জানে, সদা হারানোর ভয় মনকে ভীত করে রাখে যদিও সে মানুষটি কখনোই তার ছিল কিনা সেটাও জানা নেই। তবে ওয়ান সাইড লাভ এর সুবিধাও আছে অনেক সে নিয়ে না হয় পরে কথা হবে।

-রুদ্র দা, কি ভাবছো ওমন করে??

-(হঠাৎ কারও ডাকে বর্তমানে সম্বিত ফিরে রুদ্রের) কই কিছু না তো। তুমি এখানে কখন এলে।

-এই দেখলে তো আমি কখন এলাম সেটাও খেয়াল করলে না, এতটাই ভাবনায় মগ্ন ছিলে তুমি৷ তা কার কথা ভাবছিলে? আমার?

-তোমার কথা ভাবতে যাবো কেন?

-বাহ! বেমালুম ভুলে গেলে??কি বলেছিলে তুমি মনে নেই? আমি তো আমার কথা রেখেছি।

-ওহহ, আরে পাগলি মেয়ে তুমি এখনো সেটা নিয়েই পড়ে আছো। আমি তো ভাবলাম...

-এরমানে তুমি আমাকে কখনোই ভালোবাসবে না??

-উফফ, আচ্ছা জ্বালাতন শুরু করেছো তো তুমি। ভালবাসা কি বুঝো সেটা??

-আমার তো এতো বুঝে কাজ নেই। আমি শুধু জানি আমি তোমাকে ভালবাসি আর আমার তোমাকে চাই।

-এটাকে ভালবাসা বলে না, জাস্ট এট্ট্রাকশন। আজ আছে কাল নাও থাকতে পারে। আজ আমাকে ভাললাগছে কাল হয়তো আর লাগবে না। ভালবাসলেই কাউকে পেতে হবে সেটা তোমাকে কে বললো? যদি সত্যিই ভালবাসো তবে পারবে অপেক্ষা করতে যেমন আমি করছি এমন কারও জন্য যার সাথে হয়তো আর কখনই দেখা হবে না। সে এখন কেমন দেখতে, সে অন্য কাউকে ভালবাসে কিনা কিচ্ছু জানি না তবুও অপেক্ষা করি।

-আমি তোমার মত এত কিছু জানি না। আমি বুঝি আমি তোমাকেই ভালবাসি তবে কেন তোমাকে পাব না??

-বোকা মেয়ে, আমিও তোমাকে ভালবাসি কিন্তু বন্ধুর মত, ভালো বন্ধু। সেখানে চাওয়া পাওয়ার কোন হিসেব নেই। ধরতে পারও আমি অনেকটা বাতাসের মত, সবার পাশেই আছি কিন্তু কারও সাথে নয়। তুমি চাইলে আমি তোমার বন্ধু হয়ে সবসময় পাশে থাকবো। সবসময় তোমার পাশে পাবে, তুমি আমাকে ধরতে পারবে, ছুতে পারবে। তোমার সবকিছু আমার কাছে শেয়ার করবে, সুখ দুঃখ আনন্দ হতাশা সব ভাগাভাগি করে নেব। বিপদে তোমার সামনে থাকবো তোমার খুশিতে নিজেকে শামিল করবো কিন্তু তুমি যেমন করে চাইছো সেভাবে পাবে না। দেখো তুমি আমার চেয়ে আরও ভালো কাউকে পাবে জীবনে যে তোমাকে অনেক ভালোবাসবে।

-(কিছুক্ষণ থম মেরে বসে তির্যক চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে) তবে তুমি কি ভালো না??

-আরে বাবা কাকে দিচ্ছি আমি রামের পাঠ। না আমি ভালো না, আমি অনেক খারাপ ছেলে সুযোগ পেলে তোমার সাথেও খারাপ কিছু করে ফেলবো।

-যাহ মিথ্যে বলছো, মোটেও ওমন না তুমি। আর তুমি চাইলে আমি সব দিতে রাজি।

-(এমন উত্তর শুনে হতভম্ব রুদ্র) এই মেয়ে তুমি যাও তো। তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে যা তা বলছো।

-রাগ করছো কেন রুদ্র দা, থাক আর কিছু বলবো না। আচ্ছা তোমার ক্লাস আছে?

-না কেন?

-চলো একটা জায়গায় যাবো।

-এই বৃষ্টিতে কোথায় যাবে, তুমি কি গাড়ি নিয়ে এসেছো?

-(মুখ বেকিয়ে ভেংচি দেবার ভঙ্গিতে) বৃষ্টিতে ভিজতে যাবো, গাড়িতে করে ভিজা যায় নাকি?? যাবে কিনা বলো

-(মেয়েটার অদ্ভুত একটা ক্ষমতা আছে, ওর আবদার উপেক্ষা করতে পারে না রুদ্র) আমার কিন্তু ঠান্ডার ধাত আছে জ্বর উঠে যায়, বেশিক্ষণ ভিজতে পারবো না।




[/HIDE]
 
[HIDE]


-জ্বর উঠলে আমি সেবা করবো তোমাকে ঠিক আছে! এখন চলো তো

রুদ্রের হাত ধরে টানতে টানতে বাইরের দিকে যেতে থাকে। কলেজ থেকে বেরিয়ে ফুটপাত ধরে হাটতে থাকে ওরা দুজনে৷ বৃষ্টির কারণে রাস্তাটা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে আছে, মাঝে মাঝে একদুটো গাড়ি যাবার সময় জল ছিটিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। রুদ্র কে অবাক করে দিয়ে রিতা লাফ দিয়ে ফুটপাত থেকে রাস্তায় নেমে যায়, পাশে জমে থাকা জলটাতে বাচ্চাদের মত লাফালাফি করতে থাকে৷ এ এক জাদুকরী আবহ বলতেই হয়, এমন আবহাওয়া মানুষের মনের সুপ্ত শিশু ভাবটাকে জাগিয়ে তুলে৷ রুদ্র এক দৃষ্টিতে দেখছে রিতা কে, বলতে গেলে এমন ভাবে কখনও দেখ হয় নি ওকে। বেশ লম্বা চুল মেয়েটার কোমড় অব্দি ছাপিয়ে গেছে, পাতলা গড়নের শরীরটা পালকের মতই জলের উপর যেন ভাসছে। সামনের দিকের চুল গুলো মুখটাকে ঢেকে দিয়েছে, সেই চুল গুলো বেয়ে টপটপ করে জল পড়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে বুকের জায়গাটা। বাদামি রঙের সালোয়ার কামিজে যেন এক জলপরী দাড়িয়ে আছে রুদ্রের সামনে। ভিজে জামা টা গায়ের সাথে লেপ্টে রয়েছে, ভেতরের শরীরটাকে একটু হলেও দৃষ্টিগোচর করতে যার কৃতিত্ব অনেক। বুকটা ওরনা দিয়ে ঢাকা থাকলেও ভিজে যাওয়া শরীরে সেটা দিয়ে বক্ষদেশ আড়াল করা বেশ কষ্টসাধ্য বৈকি৷ স্তনদ্বয় খুব ভারী নয় সেটা বুঝা যাচ্ছে তবে এমন পাতলা গড়নের শরীরে সে দুটো বেশ মানিয়ে আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সরু কোমরের পর হালকা উঁচু নিতম্ব আলাদা এক আকর্ষণ তৈরী করে রেখেছে৷ রুদ্র যে রিতাকে দেখছে সেটা আচ করতে পারে, হঠাৎ দু'হাতে জল নিয়ে রুদ্রের দিকে ছুড়ে দেয়। "এভাবে দেখা কিন্তু ভাল না"- হাসি মিশ্রিত রিতার কথাটায় রুদ্রের একটু হলেও লজ্জায় পড়তে হয়।

-অনেক হয়েছে এবার জল থেকে উঠে এস।

-প্লিজ আরেকটু।

-(কথায় কাজ হবে না বুঝে রুদ্র এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে ফুটপাতে নিয়ে আসে) আর না ঠান্ডা লেগে যাবে।

আবার দুজনে চলতে শুরু করে, মাঝে মাঝে একজন আরেকজন কে আড় চোখে দেখে চলেছে। সামনে চায়ের স্টল দেখে চা খাবার বায়না ধরে রিতা, ত্রিপলির ভিতরে মানুষে ঠাসা বসার জায়গা নেই। ওরা দুজনে চায়ের কাপ হাতে ফুটপাতে বসে পড়ে, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চা খাওয়ার মাঝেও যে অন্যরকম একটা আনন্দ, উত্তেজনা বা ভাললাগা কাজ করে সেটা আজই প্রথম জানলো দুজনেই। এর মাঝেই দু একবার হাঁচি দিয়ে ফেলেছে রুদ্র, সত্যিই ওর ঠান্ডার ধাত আছে। রুদ্রকে হাঁচি দিতে দেখে রিতা বাড়িতে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়৷ রুদ্র একটা রিক্সা ডেকে রিতা কে উঠিয়ে দেয় কিন্তু সে একা যেতে নারাজ, রুদ্র কে তার সাথে যেতেই হবে৷ অনেক করে বুঝানোর পড়েও কোন লাভ হলো না, শেষমেশ রুদ্র কে রিতার সাথেই যেতে হলো।
বাড়ির কাছে আসতেই দারোয়ান এসে গেট খুলে দিলো।

-এবার আমি যাই তাহলে?

-একি কথা এভাবে ভিজে শরীরে যাবে কিভাবে, এমনিতেই তো ঠান্ডা লেগে গেছে মনে হচ্ছে। চলো ভেতরো চলো, মা জানলে রাগ করবে।

-আরে না কিচ্ছু হবে না, আমি চলে যাব তুমি যাও বাসায়।

-কোন কথা শুনবো না, ভিজে শরীরে নির্ঘাত জ্বর উঠবে। মাথা টা না হয় একটু মুছে নিলে।

যুক্তির কাছে আর টেকা গেল না, রুদ্রকে বাসার ভিতরে যেতেই হলো। বসার ঘরে বসিয়ে রিতা যেন কাকে খুঁজতে চলে গেল। আওয়াজ শুনে বুঝা যাচ্ছে মা মা বলে ডাকছে, কিন্তু কেউ সারা দিচ্ছে না তো। বের হয়ে আসে ওদিক থেকে

-চুমকি আন্টি ও চুমকি আন্টি মা কোথায়?
কোন একটা রুম থেকে আওয়াজ আসে

-ম্যাডাম তো একটু বের হলো কোথায় গেছে বলে যায় নি তবে চলে আসবে তাড়াতাড়ি।
রুদ্রের দিকে এগিয়ে এসে

-চলো আমার সাথে জামা কাপড় টা বদলে নিবে।

-না না আমি ঠিক আছি।(এক সাথে আরও কয়েটা হাঁচি দেয় রুদ্র)

-ঠিক কতটা আছো সেটা তো দেখতে পাচ্ছি। ভিতরে চলো জামা কাপড় পাল্টে নেবে।

ভিতরে একটা রুমে গিয়ে রিতা আবার কোথায় উধাও হয়ে গেল, কিছুক্ষণ পর লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি আরেক হাতে টাওয়াল নিয়ে এসে জামা কাপড় পাল্টে নিতে বললো রুদ্রকে। এবার আর অনুরোধের সুরে নয় যেন আদেশ করছে সে রুদ্র কে। রুদ্র লুঙ্গি পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে বাথরুমের দিকে চলে গেল। চেঞ্জ করে বাইরে আসতেই দেখে এর মাঝে রিতাও চেঞ্জ করে নিয়েছে, গায়ে একটা টি শার্ট আর ঢোলা প্যান্ট। রুদ্রের ভিজে জামা প্যান্ট গুলো হাত থেকে নিয়ে আবার উধাও, রুদ্রের ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে সে বিছানাতে গা এলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর রিতার ডাকে চোখ খুলে দেখে ওর হাতে একটা ট্রে তে কিছু নিয়ে এসেছে। ভিজে যাওয়া চুল গুলো পুরোপুরি শুকায় নি, সেগুলো পিছনে ছড়িয়ে রেখেছো রিতা। তাতেই যেন ওকে আরও অপরূপা লাগছে, সাধারণ সাজেই অসাধারণ সৌন্দর্যের উজ্জ্বল দ্যুতি ছড়াচ্ছে। মন্ত্রের মত রুদ্রকে আকর্ষিত করছে নিজের দিকে, যেন কোন মায়াবিনী তার মায়ার প্রভাব বিস্তার করেছে রুদ্রের উপরে রুদ্র যেন আজ তার বশীভূত কোন মানুষ সে তার ইচ্ছে মত চালনা করতে পারবে তাকে। নিজের দৃষ্টি কিছুতেই ফেরাতে পারছে না রুদ্র।
রুদ্রের চাহনিতে লজ্জায় নিজিকে একটু গুটিয়ে নেয় রিতা, ওর মনে হচ্ছে প্রেয়সীর চোখের আগুনেই যেন সে জ্বলে পুড়ে আজ ছাড়খার হয়ে যাবে।

-কি গো রুদ্র দা কিছু খাচ্ছো না কেন?

-(তন্দ্রা ভাঙার মতই হুড়মুড় করে উঠে) হ্যা কিছু বললে?

-চা টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, তোমার জন্য ডিম টোস্ট করালাম সেটাও খাচ্ছো না।

-এইতো খাচ্ছি... তাড়াহুড়ো করে ডিম টোস্ট মুখে পুড়ে নেয়।

-একটা কথা রাখবে?

-(মুখ ভর্তি খাবার নিয়েই কোন ভাবে বলে) কি?

-তোমাকে তো আর পাবো না কোনদিন নিজের করে, আজকের জন্য আমার হবে??

-(প্রচন্ড ভিষম খেয়ে কাশতে থাকে, রিতা জলের গ্লাস টা এগিয়ে দেয় একটু সামলে নিয়ে) তোমার কি মাথা খারাপ নাকি? কিসব বলছো, ভেবে বলছো?

-এতো ভেবে কি হবে? মনে যা আসলো সেটাই বলে দিলাম, প্লিজ আজকের জন্য আমার হয়ে যাও আর কখনো চাইবো না। তুমি যা বলবে তাই শুনবো।

-ভুল করছো তুমি রিতা, তুমি আমার ভালো দিকটাই দেখেছো তাই মনে মনে আমাকে নিয়ে একটা ভালো ছবি একেছো আর সেটাকেই ভালবাসছো। কিন্তু বাস্তবে আমি ততটাও ভালো নই, বিশ্বাস করো আমি খুব নোংরা মানুষ খুব খারাপ শুধু ভালোর মুখোশ পড়ে চলি। এমন বড্ড খারাপ ছেলেটাকে কেউ ভালবাসে নাকি?

-বারে, যাকে ভালবাসবো তার ভালোটাকে ভালবাসবো আর খারাপ টাকে বাসবো না সেটা হয় নাকি। তার সবটাকেই ভালবাসবো, কারণ সবটাই তো আমার।

-তুমি বুঝতে পারছো না, আমি কিন্তু খারাপ পল্লী তে পর্যন্ত যাই। আমার চরিত্রের ঠিক নাই, ভেবে দেখ এমন কাউকে তুমি তোমার করে চাইবে?



[/HIDE]
 
[HIDE]



আচ্ছা তুমি যাকে ভালবাসো মানে যার জন্য অপেক্ষা করছো বললে সে যদি ফিরে তোমার কাছে আর সে তোমাকে জানালো তার সাথে আগেও অনেকের ফিজিক্যাল রিলেশন হয়েছে তখন কি তাকে আর ভালোবাসবে না তাকে আর তোমার করে চাইবে না? এতই সস্তা ভালোবাসা? সে তো সব স্বীকার করেই তোমার কাছে তার ভালবাসার কাছে ফিরতে চাইছে।

-(রুদ্র আর কিছু বলতে পারে না, আসলে বলার মত কিছুই খুঁজে পায় না। সব যুক্তি তুচ্ছ মনে হচ্ছে আজ, মেয়েটা যেন ওকে ভিতর থেকে ভেঙে দিচ্ছে তাহলে মেয়েটার কাছে কি সে হেরে গেল)

-কি হলো এমন স্ট্যাচুর মত বসে আছো কেন? একটা চুমো খাই তোমাকে? সেদিন তো এতো মানুষের সামনে ঠিক মত খেতে পারে নি।

-(বশ্যতা স্বীকার করা মানুষের মত রুদ্র মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়, এতদিন সে চুমো খেয়েছে আজ মেয়েটা নাকি ওকে চুমো খেতে চায়। মেয়েটার কথা রাজি হলো কেন, তবে কি মেয়েটা তার উপর অধিকার ফলাতে চাইছে। কিন্তু কিসের অধিকার, সেই অধিকার তো রুদ্র তাকে দেয় নি, নাকি ভালবাসালে এভাবেই আদায় করে নিতে হয়)
রিতা খাবারের ট্রে টা নিজেদের মাঝখান থেকে সরিয়ে দূরত্ব টা কমিয়ে দেয়, আরও এগিয়ে যায় রুদ্রের দিকে। রুদ্র আগের মতই সটান হয়ে বসে আছে, আর অপেক্ষা করছে সময়টা কত দ্রুত কাটানো যায়। দুষ্টু একটা হাসি হেসে রিতা তার নরম ওষ্ঠ দিয়ে রুদ্রের ঠোঁটে হালকা পরশ বুলায়।

হঠাৎই ভাইব্রেশনে থাকা রুদ্রের ফোনটা বেজে উঠে, রিংটোনের শব্দে দুই কপোত-কপোতীর চুম্বনের ব্যাঘাত ঘটে। দ্রুতই রুদ্র রিতাকে ছেড়ে দিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করে।

-(ইয়েস ম্যাডাম, ফাইল ওকে আছে আমি এখনি নিয়ে আসছি) ম্যাডাম ডাকছে এক্ষুনি যেতে হবে। তবে রিতা তুমি কিন্তু আগের মতই মিষ্টি আছো।

-আর মন ভোলানো কথা বলতে হবে না, যদি মিষ্টিই হতাম তবে সেদিনের পরও আমাকে দূরে রাখতে পারতে না। যাও এখন ম্যাডামের কাছে আমিও চলি কাজ জমে আছে।





অফিস থেকে একটু আগেভাগেই বের হয়েছে রুদ্র ছুটকি কে নিয়ে শপিংমলে যেতে হবে তাই। বাসায় গিয়ে ছুটকি কে নিয়ে শপিংমলের দিকে রওনা হয় সে। পার্কিং এ বাইকটা রেখে শপিংমলের দিকে যেতে থাকে, ভিতরে ঢুকতে যাবে তখনি কানে বাজে কেউ ওর নাম ধরে ডাকছে। প্রথমে ভেবেছিল মনের ভুল হবে হয়তো। কিন্তু এবার স্পষ্ট শুনতে পেল "রুদ্র দা রুদ্র দা" বলে কেউ ডাকছে কণ্ঠ টাও কেমন পরিচিত ঠেকলো। পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে তনু এদিকে এগিয়ে আসছে।

-বাপরে, এত ডাকছি শুনতেই পাও না তুমি। কানে কম শুনো নাকি।

-(ওর দাদা কে অচেনা একজন ওমন করে কথা বলছে শুনে ছুটকির রাগ ওঠে যায়, একটু এগিয়ে এসে) এই কি বলছো এসব, আমার দাদা কে। দাদা কানে কম শুনতে যাবে কেন?

-(মিষ্টি একটা হাসি হেসে) দাদাভাই এটা বুঝি তোমার সেই বোন ছুটকি।

-(মেয়েটার মুখে দাদাভাই ডাক টা শুনে ছুটকির নিজের কাছেই একটু লজ্জা লাগে, কিন্তু মেয়েটা কে চিনতে পারছো না তো) কিরে দাদা কে ও? তোকে দাদাভাই ডাকছে(গলার স্বরটা একটু নামিয়ে জিজ্ঞেস করে)

-(হাসতে হাসতে রুদ্র দুজনের দিকেই তাকিয়ে) ও তনু, তোর মতই আরেক বোন। তোকে তো ওর কথা বলাই হয় নি, পড়ে বলবো নে সব। আচ্ছা তনু তুই এখানে কেন? কার সাথে এসেছিস?

-এক ফ্রেন্ডের বার্থডে তে যাবো তার গিফট কিনতে এসেছিলাম, দিদির সাথে এসেছি।

-তা তোর দিদি কই? পরিচয় করাবি না?

-এখানেই তো ছিল, কি একটা ইম্পর্ট্যান্ট কল এসেছে তাই গাড়িতে গিয়ে বসলো।( পার্কিং এর দিকে ইশারা করে গাড়িটা দেখালো)

-(পার্কিং এ অনেক গাড়ি দাড়িয়ে কোনটা ওর দিদির সেটা বুঝা মুশকিল, তবে হঠাৎ চোখে পড়লো ওদের অফিসের একটা গাড়ি পার্কিং এ দাড়িয়ে। কেউ এসেছে হয়তো) তা তুই নিজের জন্য কিছু কিনলি না?

-না তো৷ একটা ড্রেস পছন্দ হয়েছিল কিন্তু দিদি কিছুতেই কিনে দিলো না, বলে কিনা আমার যে জামাগুলো আছে সেগুলো দিয়ে নাকি একটা দোকান দেয়া যাবে।

-(হা হা করে হাসতে হাসতে) সে তো ছুটকিরও আছে তবুও তার নতুন ড্রেস চাই বান্ধবীর বার্থডে পার্টিতে যাবে।( ছুটকি মুখে ভেংচি কেটে হালকা ঘুসি দেয় রুদ্রের হাতে) তুই চল আমার সাথে আমি কিনে দেব তোকে।

-না দাদাভাই দেরি করলে দিদি আবার বকাবকি শুরু করবে। যা রগচটা স্বভাব ওর।

-আচ্ছা ঠিক আছে ছুটকির জন্য যেই ড্রেসটা কিনবো সেটাও তোর জন্য কিনবো।

-থ্যাংক ইউ দাদাভাই, এখন যাই না হলে ম্যাডাম আবার চেচামেচি করবে।(ছুটকির সাথে হাত মিলিয়ে) তোমার সাথে তো কথাই হলো না, আরেকদিন অনেক আড্ডা দেব কেমন।

-অবশ্যই, দাদাকে বলবো তোমাকে একদিন আমাদের বাসায় নিয়ে আসতে।

তনু বিদায় নিয়ে পার্কিং এর দিকে চলে যায়, রুদ্র ছুটকি কে নিয়ে শপিংমলের ভিতরে চলে যায়। তনু গাড়িতে উঠে বসতেই ওর দিদি জিজ্ঞেস করে

-কিরে এত দেরি হলো কেন? আমি সেই কখন থেকে বসে আছি।

-(রাগান্বিত স্বরে) পরিচিত একজনের সাথে দেখা হয়েছিল, তাই দেরি হয়েছে৷ তোর কি তাতে তুই তো এসিতেই বসেছিলি।

-ড্রেস টা কিনে দেই নি বলে রাগ দেখাচ্ছিস।

-তোকে রাগ দেখাতে বয়েই গেছে, তোর কিনে দিতে হবে না। আরেকজন আছে সে ঠিক কিনে দিবে।

-আরেকজন টা কে আবার?? তর বয়ফ্রেন্ড নাকি রে?

-এত প্রশ্ন করিস কেন? আমার না তোর বয়ফ্রেন্ড গিফট করবে ঠিকাছে। কখন থেকে বকবক করছে এখন তোর দেরি হচ্ছে না, বাসায় চল।





[/HIDE]
[HIDE]

কলিং বেলটা বাজছে কখন থেকে কিন্তু কেউ খুলছে না কেন? বাথরুম থেকে মাথাটা হালকা বের করে তনুকে উচ্চস্বরে বার কয়েকবার ডাকার পরও মেয়েটার সাড়া দেবার নাম নেই। তাড়াহুড়ো করে চোখে মুখে জল দিয়ে বেরিয়ে এসে দরজা টা খুলে দেখে বিল্ডিং এর ওয়াচম্যান দাড়িয়ে আছে, হাতে একটা ব্যাগ ও আছে।


-কি ব্যাপার রুনু ভাই?

-একটা পার্সেল এসেছে তনু ম্যাডামের নামে।

-দাও আমাকে আমি দিয়ে দেব।
ব্যাগটা হাতে নিয়ে দরজা লক করে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। ঘরে ঢুকে দেখে তনু কানে হেডফোন গুজে বিছানায় শুয়ে হাত পা নাচাচ্ছে। এই কারণেই কলিং বেলের আওয়াজ মহারানীর কানে আসে নি। বিছানার কাছে গিয়ে তনুর দিকে ব্যাগটা ছুড়ে মারে। ব্যাগটা গায়ের উপর পড়তেই হুড়মুড় করে তনু শুয়া থেকে উঠে বসে।

-তোর কি সমস্যা বলতো? এটা আমার দিকে ছুড়ে মারলি কেন? ঘরে আর জায়গা ছিল না?

-তোর পার্সেল তাই তোর দিকে ছুড়লাম। ভাল না লাগলে বল এক্ষুনি বাইরে ফেলে দিয়ে আসি।

-আমার পার্সেল? কে পাঠালো আবার( বলতে বলতে ব্যাগটা খুলতে একটা টুকটুকে লাল কালারের পার্টি ফ্রক দেখতে পায়। জামাটা হাতে নিয়েই তড়াক করে বিছানার উপর দাড়িয়ে পড়ে) ইয়াহু আমার জামা এসে গেছে। (দিদির দিকে ইশারা করে) দেখ তুই তো কিনে দিলি না, তাতে কি আমার বার্থডে পার্টির জামা ঠিকই পেয়ে গেছি।

-মানে কি?বাবা তো দেয় নি সেটা নিশ্চিত তবে কে তোকে আবার জামা কিনে দিবে? আমি কিন্তু মাকে ডাকবো।

-তোর এত জেনে লাভ কি? তখন কত করে বললাম একটা জামা কিনে দিতে দিলি না। এখন জামা এসে গেছে দেখে কি তোর হিংসে হচ্ছে?

-ঐ ফাজিল মেয়ে আমার হিংসে হবে কেন? আমি শুধু জিজ্ঞেস করছি তোকে জামা টা কে দিলো, কার সাথে ইটিশপিটিশ করছিস সত্যি করে বল, পরে বিপদে পড়লে কিন্তু আমাকে বলিস না।

-তোর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তোর হিংসে হচ্ছে। এত চিন্তা করতে হবে না যে জামা টা গিফট করছে বিপদে পড়লে সে দেখবে। তোর থেকে অনেক ভালো।

-(চিৎকার করে মাকে ডাকতে থাকে) মা ও মা দেখো তোমার ছোট মেয়ে কি শুরু করেছে, কে না কে ওকে এত দামের জামা গিফট পাঠিয়েছে। ওকে কিছু বলো তুমি।

দুই মেয়ের চেচামেচি অনেকক্ষণ ধরেই ঠাকুরঘর থেকে শুনছিলেন, এখন আর থাকতে না পেরে বাইরে বেরিয়ে এসে দুই মেয়েকেই ধমকে শান্ত করে আবার ঠাকুর ঘরে চলে গেলেন। এরা দুটো একসাথেই হলেই ঝগড়া শুরু, একদন্ড শান্তি পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে।



[/HIDE]
 
[HIDE]

মাঝখানের ট্রে টা সরে গিয়ে দুজনকে আরও কাছে আসার সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। অন্যদিন অন্যকেউ হলে হয়তো রুদ্র এক মূহুর্তে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে কুন্ঠা বোধ করতো না। কিন্তু আজ যেন ওর শরীরটা বিছানার সেই জায়গাতে কেমন অসারের মত আটকে আছে। মেয়েটা যেন তাকে নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে নিয়েছে, হাতের ইশারায় পুতুলের মত নাচিয়ে চলেছে সেই কখন থেকে। হয়তো ভালোবাসার অদৃশ্য জালে রুদ্র কে জড়িয়ে নিয়েছে সে, মাকড়সা যেমন তার শিকার কে নিজের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে তিলে তিলে শেষ করে আজ যেন রুদ্র কেউ ওভাবেই নিঃশেষ হতে হবে এই মেয়ের অব্যর্থ প্রেম আহ্বানে।
এতক্ষণের ঘোর ভাঙে ঠোঁটে ভিজা পরশ পাওয়ার সাথে, মনে কোনে দোলাচালে জমা হওয়া মেঘ গুলো হঠাৎ উড়ে যেতে শুরু করে রিতার দুরুন্ত মিষ্টি হাসিতে। রুদ্রের সামনে হাঁটু গেড়ে এমন ভঙ্গিমায় বসেছে যেন সে কতকালের অপেক্ষায় কাতর কোন প্রাণ আর সেই প্রাণে জীবন সঞ্চারে ত্রাতা রূপে রুদ্র তার সামনে। মেয়েটার চোখ দুটো সদা চঞ্চল হরিণীর মত এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে, তবে সেখানে আশ্রয়ের আকুতিও যেন মিশে আছে। এবার আর ফিরিয়ে দিতে মনে সায় দেয় না মগজে, রুদ্রও খানিকটা এগিয়ে এসে রিতার বা কাধের দিকে ঝুকে গিয়ে কানের লতিতে ছোট্ট করে চুমো খায়। চুমোর উষ্ণতা মুহূর্তে নরম লতি হয়ে পুরো মুখমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম চুমোর লজ্জায় কিংবা আনকোরা শরীরের উত্তেজনা কোন এক অদৃশ্য সুখানুভূতিতে রিতার ফর্সা মুখটা আরও উজ্জ্বল আর রক্তিম হয়ে উঠে। এবার যেন ডাক এসেছে শরীরের প্রতিটি কোনে নিজেকে সমর্পিত করতে ভালবাসার উদ্দেশ্যে। রিতা যেন আর বসে থাকতে পারছে না, কেমন যেন অবশতা কাজ করছে হাত পা গুলোতে নিজেকে এলিয়ে দিতে চায় রুদ্রের তপ্ত বুকে। না সেটা আর হয়ে উঠে না তার আগেই রুদ্রের বলশালী দুই হাতের বাঁধনে আটকা পড়ে রিতার সদ্য বৃষ্টিস্নাত স্নিগ্ধ তনু। এতক্ষণের নীরবতা ভেঙে রুদ্রও খানিকটা এগিয়ে আসে না ভুল হলো কোথাও রুদ্র এগিয়ে আসে নি বরং রিতাকেই ওর কোলের উপর নিয়ে এসেছে৷ বাঘ যতই ভরপেটে থাকুক শিকার যদি বারংবার সামনেই চলাফেরা করে তবে নিজের শিকারী সত্তার সাথে আর কত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া যায় সেটা আমার অনুর্বর মস্তিষ্কে গগনা করা গেল না। এখনো হালকা ভিজে ভাব থাকা চুল গুলো হাতে ছড়িয়ে দিয়ে রিতার ঘাড়ের কাছে নিজের উষ্ণ নিশ্বাসের সাবলীল প্রয়োগ ঘটাতে থাকে রুদ্র। উত্তেজিত অবস্থায় কিংবা স্বাভাবিক ভাবেই অনেকসময় আমাদের শরীরের ঘাড়, পিঠ, কোমর বেশ সংবেদনশীল হয়ে থাকে। হালকা একটা স্পর্শেও যেন শরীরে বিপ্লবের প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে দেয়, কখনো সেটা উপভোগের হয় আবার কখনো সেটা বিব্রতকর। রিতার গলায়, কাঁধে, ঘাড়ে আবার কখনো সখনো নরম গালে অদ্ভুত আঁকিবুঁকির খেলা খেলে চলেছে রুদ্র। সেই খেলায় রুদ্রই যেন সব আর রিতার শরীর দর্শক মাত্র, কিচ্ছুটি তার হাতে নেই সে মুখে কিছু বলতে পারছে না তবে শরীর অনেকই কিছু বলে চলেছে সেটা ওর স্থির হয়ে থাকতে না পারাটাই রুদ্রের কানে কানে বলে দিচ্ছে।
একটু আগেও বৃষ্টির ঠান্ডা জলের পরশে থাকার দরুন রিতার শীতল দেহবল্লরী অভিজ্ঞ রুদ্রের সুনিপুণ কারুকাজের প্রথম ছোয়াতেই তেতে উঠতে শুরু করেছে৷ এক্ষুনি কেউ ওর গায়ে হাত দিলে মনে হবে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে রিতার কোমল শরীর তবে না এ জ্বর থার্মোমিটারে ধরা পড়বে না। কি চালাক বিজ্ঞানীরা তাই না কামনার জ্বর মাপার কোন যন্ত্রই তো তারা আবিষ্কার করলো না। নাকি এ আবিষ্কার না হওয়াতেই ভালো হয়েছে নয়তো কে কখন কতটা ঐ কামনার জ্বরে পুড়ছে সেটা সবার দৃষ্টিগোচর হয়ে যেত। হায় হায়, তবে তো আমিও ধরা পড়ে যেতাম আমার কিংবা অন্য কারও প্রেয়সীর কাছে। ছোট্ট বাচ্চারা যেমন করে একটু একটু ললিপপে জিভ বুলিয়ে সেটা আবার কতটা বাকি আছে সেটা চোখে দেখে ঠিক তেমনি করেই রুদ্র একটু একটু করে রিতার কাঁপতে থাকা ঠোঁটের পাপড়ি গুলোতে আক্রমণ করে চলেছে। ছোট্ট করে চুমো খেয়ে একটু আলগা করে দিচ্ছে পরক্ষণেই যেন আবার আগের চেয়েও বেশি আগ্রহে সেগুলো কে মুখে পুড়ে নিচ্ছে। রিতার আনকোরা শরীর সেটার স্বাদ আর যন্ত্রণা দুটোকেই উপভোগ করে চলেছে। অভিজ্ঞ কামার জানে কতটা গরম হলে লোহায় হাতুড়ি মারার সময় আসে, হঠাৎই রুদ্র আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রিতার শরীর নিজের সাথে মিশিয়ে দেয় আর ওর একটু আগেই আলগা হওয়া কমলার কোয়ার মত ঠোঁট দুটো নিজের কাছে পুড়ে নেয়। আচমকা এমন একটা আগ্রাসী টানে রিতা লুটিয়ে যায় রুদ্রের বুকে, একের সাথে অন্যের শরীরে ঘসা লাগে মাঝে বাঁধা শুধু ঐ পাতলা পাঞ্জাবি আর রিতার গায়ের টি শার্ট। রুদ্রের চাতুর শরীর অনুভব করতে পারে রিতার স্তনের বোটা দুটো জেগে উঠেছে, এর মানে টি শার্টের নিচে কিচ্ছুটি নেই ওর। উফফ, চোখের সামনে যেন ওর হালকা শরীরের সাথে লেগে থাকা প্রমান সাইজের কমলা দুটো ভেসে উঠে রুদ্রের কল্পনায়। পিঠের দিকে থাকা হাত দুটো টিশার্টের ভিতরে ঢুকে দিয়ে রিতার নগ্ন পিঠে চড়তে শুরু করে দিয়েছে। হালকা লোমের উপস্থিতিতে রুদ্রের হাতের স্পর্শ পেতেই শিউরে উঠে রিতার পুরো শরীর।

নিজের পাশেই উল্টো করে রিতাকে শুইয়ে দেয় আর ওর শরীরের উপরিভাগ কে ঢেকে রাখা টি শার্ট টা গুটিয়ে দিতেই ফর্সা পিঠ উন্মুক্ত হয়ে যায় রুদ্রের সামনে। আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায় রুদ্র রিতার খোলা পিঠে। ছোট্ট ছোট্ট চুমোতে ভরিয়ে তুলে রিতার ফর্সা পিঠ। প্রথম দিকে একটু কাতুকুতু লাগছিলো

-(হাসির উদ্রেক নিয়ে)রুদ্র দা ওমন করো না কাতুকুতু লাগছে তো।

-তবে কেমন করবো বলে দাও। আমিও সেটাই করবো।( রিতা কে ছেড়ে উঠে বসে)

-উহ সেটা আমি জানি নাকি? (রুদ্রে সরে যেতেই ওকে হারিয়ে ফেলার ভয় জাপটে ধরে রিতাকে, না কোন ভাবেই আজ রুদ্র কে হারাতে চায় না সে) আমি কি করে বলবো, তুমি যা করছিলে সেটাই করো(বলতেই মুখে হাসির ঝিলিক উকি দেয়)

-(চাতুর রুদ্রের জানা কোথায় কেমন করে টোকা দিতে হয়) ভেবে দেখ আরেকবার এখনো সময় আছে।

-উফফ, রুদ্র দা তুমি খুব জ্বালাচ্ছো এখন। আর কিছু ভাবার নেই, আজ আমার সব তোমার। যা খুশি করো কিচ্ছু বলবো না।
রুদ্রের বা হাতের আঙুল গুলো হালকা করে আঁকিবুঁকি করে নগ্ন পিঠে। সারা শরীর জারিয়ে উঠে রিতার, কিসের ক্রিয়ায় সারা শরীরের একটা টান অনুভব করে কিন্তু সেটার উৎসের জানা নেই। তবে এমন ভাললাগা আগে কখনো সে পায় নি সেটা ঠিক বুঝতে পারছে সে। রুদ্র রিতাকে উঠিয়ে বসায় পিছন থেকেই ওর টি শার্ট খুলে দিতেই রিতার উপরিবক্ষ এখন সম্পূর্ণ নগ্ন। মেয়েলি জাত স্বভাবের টানেই দুহাতে নিজের নগ্ন বক্ষ ঢাকার চেষ্টা করেতে থাকে রিতা, ওর মুখটা আগের চেয়ে অনেকটাই লালচে হয়ে আছে উত্তেজনার সাথে লজ্জার মিশেলে। পিছনদিক থেকেই রুদ্র জড়িয়ে ধরে ওকে, রিতার হাত সরিয়ে নিয়ে স্পর্শ করে ওর কমলার মত স্তন দুটো, বয়সের তুলনায় একটু ছোটই বটে কিন্তু বেশ নরম। হালকা জুড়ে চাপ দিতেই

-উহহ! লাগে তো। এমন করে কেউ জুড়ে চাপ দেয়, ব্যাথা করে তো আমার।

-এহহ কি বলছো! তোমার ব্যাথা করছে? কেন কেউ আগে এভাবে টিপে দেয় নি নাকি?


[/HIDE]
 
[HIDE]


(নাক সিটকিয়ে) তুমি সত্যিই খুব পঁচা, আর কাউকে ধরতে দেব কেন? আমি কি সবাইকে ভালবাসি নাকি? তোমাকেই ভালবাসি শুধু আর তুমিই প্রথম রুদ্র দা। (কন্ঠে অভিমানের সুর)

-আচ্ছা আর পঁচা কথা বলবো না আর ব্যাথাও দেব না ঠিক আছে। (রুদ্র হালকা করে সমান তালে হাত বুলাতে থাকে ওর নরম স্তনে। মাঝে মাঝে আঙুল গুলো হালকা ছোয়ে যাচ্ছে স্তনের বোটা গুলোকে। মাঝে মাঝে দু আঙুলের মাঝে রেখে হালকা করে পিসে দিচ্ছে)

-(অন্যরকম এক ভাললাগার আবেশে নিজেকে এলিয়ে দেয় রুদ্রের বুকে, নিজের হাত দিয়ে রুদ্রের হাত মাঝে মাঝে চেপে ধরছে। একটু কাতুকুতু, একটু ব্যাথা আর তার সাথে প্রচন্ড সুখের মিশেলে যেন ভেসে যাচ্ছে সে) রুদ্র দা আমার কেমন যেন লাগছে।

-ব্যাথা লাগছে? হাত সরিয়ে নেব?

-না না, হাত সরিয়ে নিও না। এখন আর ব্যাথা করছে না।(ঘাড় ঘুরিয়ে রুদ্র কে দেখার চেষ্টা করে)
রিতা ঘাড় ঘুরাতেই রুদ্রও নিজেকে একটু এগিয়ে নিয়ে চুমো খায় ওর ঠোঁটে গালে গলায় ঘাড়ে আর কানের লতিতে। চুমোর লালায় চটচটে হয়ে যায় রিতার সারা মুখমণ্ডল। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি সেটার শীতলতা তার সাথে ঘরে এসি চলছে তবুও ওদের দুজনেই একটু একটু ঘামছে। উত্তেজনায় যৌবনের টগবগে রক্তের তাপ মুখমন্ডলে বিন্দু বিন্দু ঘামের উৎস। নিজের গা থেকে পাতলা পাঞ্জাবি টা ছাড়িয়ে নিতেই একে অন্যের শরীরটা যেন আরও ভাল করে অনুভব করতে পারছে এখন। রুদ্র গা এলিয়ে দেয় বিছানায়, ওর সামনে বসা রিতার সামনের অংশটা এখন ওর কাছে দৃশ্যমান। ফর্সা ত্বকের সাথে একটো আগে চটকানোর কারণে লালচে হয়ে থাকা স্তন দুটো অপরূপ ভাবে মানিয়ে গেছে। ওর স্তনের বোটা গুলো একটু ভিন্ন লাগে রুদ্রের কাছে, হালকা গোলাপি রঙেরর খাড়া স্তন বোটার অগ্রভাগটা একটু এবড়োখেবড়ো তার পাশেই ঘাড় বাদামি রঙের চাকতি। রিতা বুঝতে পারে রুদ্রের চোখ ওর শরীরের কোথায় খেলা করে চলেছে। ওর লোলুপ দৃষ্টি থেকে নিজেকে এড়াতে রুদ্রের বুকে নিজেকে আশ্রিত করে সে। হালকা রোমশ বুকটাতে চুমো খায় ভালবাসার গাড় আবেশে। দুষ্টুমির ছলে রুদ্রের বুকের ছোট্ট বোটায় চিমটি কাটে রিতা।

-আহহ, ওখানে এভাবে চিমটি দেই নাকি।

-বাহ! আমাকে যে তখন দিলে। আমার কেমন লাগছিলো তখন সেটা বুঝো।

-তোমাকে যে জিজ্ঞেস করলাম লাগছে কি না। তখন তো
ঠিকি না করলে।

-(মুচকি হাসি হেসে) ব্যাথাও লাগছিলো ঠিকি আবার ভালোও লাগছিলো তো তাই।
রুদ্র উঠে রিতাকে চিৎ করে দেয়, ওর মেদহীন পেটের উপর আঙুল দিয়ে রেখা টানে যেটা শেষ হয় এসে ছোট্ট নাভি মূলে। মাথা নামিয়ে এনে নাভিমূলে ভিজে জিভের ডগা টা স্পর্শ করায়। মুহূর্তেই যেন বিদুৎ খেলে যায় রিতার শরীরে, দেহটা মুচড়িয়ে উঠে হঠাৎ পা দুটো টানটান করে একটু শূন্যে উঠে যায়। ছোট্ট অদৃশ্য হাসি হেসে রুদ্র তার খেলা চালিয়ে যায়। কোমড়ের কাছে হাত রেখে প্যান্টের গিট দেয়া দড়িটা হালকা টেনে দিকেই সেটা কোমড় থেকে আলগা হয়ে যায়। এখন শুধুমাত্র গা থেকে খোলে নেবার অপেক্ষা মাত্র। রিতা তখনো ওর নাভিমূলে রুদ্রের খেলা করা জিভের কাছে ধরাশায়ী অন্যদিকে রুদ্রের অভিজ্ঞ হাত ওর শেষ বসন টুকুও খোলে নিচ্ছে ওর দেহ থেকে।
ঢোলা প্যান্ট টা খোলে নিতেই রুদ্রের সামনে পুরো নগ্ন রিতার মোলায়েম তনুখানা। প্যান্টের নিচে কোন অন্তর্বাস পড়েই নি রিতা৷ হয়তো সে আজকের জন্য প্রস্তুত হয়েই ছিল। রুদ্রের চোখে চোখ রাখে সে না এখন সেখানে আর লজ্জার বাড়বাড়ন্ত নেই সেখানে জায়গা করে নিয়েছে যৌবনের কামনার রোমাঞ্চ, আর সমর্পণের আহবান।

-আজকেই ক্লিন করলে বুঝি?

-এহহ, আমি কি জানতাম কি আজই এমন হবে। দুদিন আগে করা।

-(অবাক হবার ভঙ্গিতে) তাই নাকি, কিন্তু দেখে বুঝাই যায় না। দাঁড়াও আরেকটু ভাল করে দেখি।(রুদ্রের মাথা এগিয়ে যায় রিতার যোনির দিকে)

-(হাত দিয়ে রুদ্রের মাথা আটকে দেয়) তুমি ওখানে মুখ দিবে নাকি?(কথাটা বলে নিজেই নিজের দাঁতে জিভ কাটে)

-যাহহ বাবা! আমি তো দেখতে চাইছিলাম শুধু। তবে তুমি চাইলে মুখ দিতেও পারি। দেখে তো মনে হচ্ছে ভালই রস কাটছে।

-তোমার মুখে কিছু আটকায় না নাকি?



-মুখ আটকালে কি আর সুধা পান চলে, আমার তো জিভে জল চলে আসছে।
রুদ্র বা হাতে তর্জনী দিয়ে যোনির চেরা টা স্পর্শ করে, সাথে সাথেই রিতার শরীরটা খানিকটা কেঁপে উঠে। বেশ তেতে আছে সেখানটা আর রসনিঃসারকের কাজে যোনিটা ভালই পিচ্ছিল হয়ে আছে। এবার ক্লিটোরিসটা হালকা করে নেড়ে দিতেই রিতার হাত পা ছুড়তে থাকে৷ এতক্ষণে জ্বলতে থাকা আগুনে ঘি এর ফোটা পড়তেই সেটা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছে। রুদ্রের হাতে সাথে উষ্ণ জিভটাও কাজ করতে শুরু করেছে। সাঁড়াশি আক্রমণে রিতা ভালভাবেই কুপকাত, একদিকে সে আনকোরা অন্যদিকে রুদ্র পাকা খেলোয়াড়। এবার খেলাটা রুদ্র যেভাবে খেলবে রিতাকেও সেদিকেই যেতে হবে।

-আর পাগল করে দিও না। আমি আর পারছি না।

-আগে যে আমাকে পাগল করলে তখন। একটু তো সহ্য করতেই হবে সোনা।

-প্লিজ কিছু করো রুদ্র দা। আমি মরে যাবো তো।

-এইতো আরেকটু অপেক্ষা
রুদ্র আবার ওর জিভটা যোনির ভিতরে ঠেসে ধরে, প্রচন্ড চোষনে যেন রিতার ভেতরে সব বেরিয়ে আসবে এখনি। রিতার হাত দুটো রুদ্রের চুল মুঠো করে ধরে রেখেছে শক্ত করে। যোনিরস আর রুদ্রের লালায় ভেতরটা বেশ ভালই তৈরী হয়েছে। রুদ্র উঠে ওর আধখোলা লুঙ্গি টা খুলে ছুড়ে দিয়ে রিতার দুপায়ের মাঝে হাটু গেড়ে বসে পড়ে। নিজের উত্থিত পুরুষাঙ্গ টার আগায় প্রিকামে চটচটে হয়ে আছে। শক্ত হয়ে থাকা কামদন্ডটা একবার রিতাকে দিয়ে চোষানোর ইচ্ছে থাকলেও আজ দেরি হয়ে যাওয়ায় সেটা আর হলো না। নিজের কামদন্ডটা যোনির মুখে বার কয়েকবার হালকা করে ঘসা খাওয়ায়।

-ব্যাথা দিবে না তো?

-একটু তো লাগবেই তবে আমি যতটা আস্তে করা যায় চেষ্টা করবো।

-এবারই প্রথম, যদি রক্ত টক্ত বের হয়ে যায়, আমার কিন্তু ভয় লাগছে।

-ধুরু পাগলি কিচ্ছু হবে না।
রুদ্র হালকে করে চাপ দেয়া শুরু করে, পিচ্ছিল হয়ে থাকার কারণে প্রথম অংশটা ভালভাবেই ঢুকে যায়

-উহহ, লাগছে তো,

-এটুকুই আর লাগবে না।
রুদ্র আস্তে আস্তে করে ঢাপ দিতে দিতে রিতাকে আরেকটু তৈরি করে নিচ্ছে। রিতাও একটু একটু তাল দিচ্ছে সাথে। এখনো রুদ্রের পুরুষাঙ্গটা পুরোটা ভেতরে প্রবেশ করে নি। এভাবে কিছুটা সময় কাটিয়ে রুদ্র তৈরি হয় সেই সময়ের জন্য, একবার পুরো লিঙ্গটা বের করে এনে আবার সজোড়ে এক ঢাপে সমূলে গেথে দেয় রিতার সিক্ত যোনিতে

-ওওওও ম....মাগো চিৎকার করে উঠার সাথে সাথে রুদ্রের ঠোঁট ওর ঠোঁট দুটো চেপে ধরে। রিতার চোখের কোনে জলের ফোটা বেয়ে চলে। কিছুটা সময় রুদ্র নড়াচড়া করে না রিতাকে স্বাভাবিক করার করার জন্য।

-তুমি একটা ডাকাত

-তা একটু বটেই। এই দেখ তোমার সব ডাকাতি করে নিলাম।

-দস্যু একটা....
রুদ্রের কোমড় আবার নড়েচড়ে উঠে, কিছুটা যন্ত্রণার ছাপ রিতার চোখে মুখে থাকলেও সুখের আশায় সেটুকু চেপে যায়। একটা ছন্দের তালে কোমড় দুলিয়ে চলে রুদ্র, রিতাও মাঝে সাঝে নিচ থেকে সঙ্গ দেয়ার চেষ্টা করে আবার হাপিয়ে উঠে। রিতার উন্মুক্ত স্তনের বোটা নিজের মুখে পুরে নিয়ে বাচ্চাদের মত চুষতে থাকে।
যখন রুদ্রের ঘুম ভাঙে তখন সে নিজেকে আবিষ্কার করে রিতার কোমল দেহের উপর একটা স্তনের বোটা এখনো ওর মুখে, বড্ড চাপ গেছে মেয়েটার উপর দিয়ে এখনো ঘুমোচ্ছে। রুদ্রের নেতানো লিঙ্গ টা এখনো ওর যোনীতে আটকে আছে আঠার মত।







[/HIDE]
 
[HIDE]



-কিরে দিদি তুই শাড়ি পড়ছিস কেন??(নাক সিটকিয়ে) এ্যাহহ
শাড়ি পড়ে পার্টিতে যাবি?

-কিসের পার্টি? আমি পার্টিতে যাবো কেন?

-কেন? তুই আমার সাথে বার্থডে পার্টিতে যাবি না?

-উহু, আমার অন্য কাজ আছে সেখানে যাব।

-এটা কিন্তু ভাল করছিস না, তুই না নিয়ে গেলে কে যাবে আমার সাথে?

-বাবা কে বল, তুই না বলিস বাবা তোকে বেশি আদর করে। তো বাবাই নিয়ে যাক না তার ছোট মা কে।

-তুই এতো হিংসুটে কেন রে। বাবার শরীরটা ভালো না, ঐখানে পার্টিতে গিয়ে হই হুল্লোড়ে এত রাত পর্যন্ত থাকবে কি করে। তুই তাহলে যাবিই না?

-না, আমার অন্য এক জায়গায় কথা দেয়া আছে।

-থাক, আমার ব্যবস্থা আমিই করবো।(মোবাইলটা হাতে নিয়ে রুদ্রের নাম্বারে ফোন করে) হ্যালো দাদাভাই।

-হুম বল, এই সময় কি মনে করে।

-একটা কাজ আছে বলো করে দিবে।

-আগে তো বল কি কাজ।

-ঐ বলেছিলাম না আমার এক ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টি, সেখানে তুমি যেতে পারবে আমার সাথে যাবে?

-মুশকিলে ফেলে দিলি, ছোটকি কে নিয়েও তো যেতে হবে ওর ফ্রেন্ডের পার্টি তে। দুজন কে একসাথে দুই জায়গায় কিভাবে নিয়ে যাবো?

-ছোটকিদের পার্টি টা কোথায়?

-ঐ তো সারিন্দা ক্যাফে তে।

-আমিও তো ওখানেই যাবো।

-তুই ওখানে মানে? তমা কি তোর ও ফ্রেন্ড নাকি?

-হুম আমিও ওর বার্থডে পার্টিতেই যাবো।

-তবে আর কোন সমস্যা নেই, তাহলে দুজনকে একসাথে নিয়ে যেতে পারবো। কিন্তু তোর বাসা থেকে পারমিশন নিছিস?

-সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও। তুমি এসে একটা ফোন করো আমি রেডি হয়ে থাকবো।

-ওকে, আমি যেই জামাটা পাঠিয়েছি সেটা পড়িস কিন্তু।

-ঠিক আছে।
তনুর দিদি এতক্ষণ সামনেই ছিল, ওদিকের মানুষটার কন্ঠ শুনতে না পারলেো সে খেয়াল করেছে তনু ওই মানুষটাকে দাদাভাই ডাকছে। এই দাদাভাই টা আবার কে?

-কিরে এই দাদাভাই টা আবার কে রে? আমার বাবার ছেলে ছিলো কবে?

-আছে আছে, তুই যাবি না তাতে কি। আমার যাবার ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

-কার না কার সাথে যাবি ঠিক নেই মা তোকে যেতে দিলে তো। কার সাথে কথা বললি দে দেখি আগে খোঁজ খবর নিই।

-(টেবিল থেকে একটা কার্ড নিয়ে দিদি দিকে এগিয়ে দেয়) এই নে খোঁজ খবর নিতে থাক।(ফেইবুকে লগ ইন করে রুদ্রের প্রোফাইল টা তে ঢুকে) এই নে দেখ আমাকে কে নিয়ে যাবে।

-(রুদ্রের কার্ড আর ফেইসবুক প্রোফাইল দেখে তনুর দিদির মুখমন্ডলে ছোট হাসি ফুটে উঠে) হুম দেখলাম দেখতে তো সুন্দরই আছে। চেহারা সুন্দর হলেই মানুষ সুবিধার হয় না কিন্তু।

-হয়েছে হয়েছে তর আর জ্ঞান ঝারতে হবে না। তোর সন্দেহ থাকলে ফোন করে নে। তোর থেকে শতগুনে ভালো সেটা
বলতে পারি।

-বাপরে! দুদিন হলো না পরিচয় হয়েছে আর তুই এখনি একেবারে দেবতা বানিয়ে ফেলছিস।

-সবকিছুতেই তোর সমস্যা নাহ!(দিদি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে) লক্ষী দিদি আমার তুই শুধু মাকে ম্যানেজ করে দে তাতেই হবে। প্লিজ দিদি এইটুকু তো করে দে।

-ঠিক আছে ঠিক আছে, সেই তো আমার হেল্প তো তোর লাগছেই। আমি মা কে বলে রাখবো নে। বেশি রাত যেন না হয়।

-(গাল দুটো টেনে দিয়ে) এই তো আমার সোনা দিদি, আমি জানি তো তুই ম্যানেজ করে নিবি। লাভ ইউ উম্মাহহহ।

-(মাথায় হালকা চাটি মেরে) এখন আর আহ্লাদ দেখাতে হবে না পাজি মেয়ে কোথাকার। ঐ ড্রয়ারে দেখ চুড়ি আর লিপগ্লস আছে এই জামার সাথে দারুন মানাবে।





[/HIDE]
[HIDE]


যখন থেকে ছুটকি জেনেছে তনুও ওদের সাথেই যাবে ওর উৎসাহ যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। সেদিন শপিংমলে তেমন কোন পরিচয় হয়নি আর কথাবার্তাও বেশি একটা সামনে আগায় নি৷ আজ পার্টিতে দুজনেই এক রঙের এক রকম জামা পড়ে যাচ্ছে সেটা যেমন রোমাঞ্চের সেই সাথে নতুন বান্ধবী হবে সেটাও বা কম কিসের। রুদ্র সেই কখন থেকে রেডি ছেলেদের আর রেডি হবার কি আছে ঐ তো জিন্সের প্যান্ট আর সাথে সাদা কালারের একটা শার্ট ঐটুকুতে আর কত সময়ই বা লাগে। কিন্তু অন্যদিকে ম্যাডাম ছুটকির তো সাজসজ্জা শেষ হবার নামই নেই। দুই-তিন বার ওর ঘরের সামনে থেকে ঘোরে গেছে প্রতিবারই একই দৃশ্য আয়নার সামনে বসে কত কি যে মেখে যাচ্ছে মুখে। রুদ্র বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেইসবুকে ঘাটাঘাটি করতে থাকে। কতটা সময় পরে ছুটকি এসে হাজির হয় ওর ঘরে


-দেখ তো দাদা আমাকে কেমন লাগছে?

শুয়া অবস্থাতেই আড় চোখে বোনের দিকে তাকায় সে, লাল কালারের পার্টি ফ্রকটা তে দারুন মানিয়েছে ছুটকি কে। দাদার মতই লম্বা হচ্ছে দিন দিন সে কারণেই আরও বেশি ভালো লাগছে হয়তো। মাথায় তাজ এর মত করে কিছু একটা পড়েছে সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে কোন পরী এসে দাড়িয়েছে সামনে।
-(মুখ ভেঙচিয়ে) কিরে তুই এত সাজগোজ করলি কেন? মানুষ দেখে তো চিন্তায় পড়ে যাবে যে জন্মদিনের পার্টি টা কার? আরেকটু কম সাজলেও পারতি।

-(জিভ বের করে ভেংচি কাটে) তোকে বলেছে বুঝি সবাই এসে এসে। তুই শুধু বল কেমন লাগছে আমাকে?

-নাহ বেশি ভালো না। ঐ তো শাঁকচুন্নির আপডেট ভার্সন আর কি। তোকে দেখলে ঐ সিরিয়ালের ডিরেক্টর রা আরেকটা ভূতের নাটক বানিয়ে ফেলবে।

-(কাঁদো স্বরে) মা দেখো দাদা বলছে আমাকে নাকি ভালো লাগছে না। আমি কিন্তু তাহলে যাবই না।

-না গেলে আমি বেঁচে যাই।

-কিরে বাবু তুই এখন আবার ওর পেছনে লাগচ্ছিস কেন?? দেরি না করে ওকে নিয়ে বেরিয়ে পড়। আবার না কোথা থেকে আরেকজন কে নিবি বললি (বসার ঘর থেকেই অঞ্জলি দেবী উঁচু গলায় বলতে থাকে)

মায়ের গলা শুনেই রুদ্র তড়াক করে বিছানা ছেড়ে উঠে আয়নার সামনে গিয়ে শার্ট টা আরেকটু ঠিকঠাক করে ছুটকি কে নিয়ে বের হবার আগে বাবার সাথে দেখা করে আসে।
-বাবা আমি ছুটকি কে নিয়ে যাচ্ছি।

-সাবধানে গাড়ি চালাবে আর শোন বোন কিন্তু বড় হচ্ছে, সবদিক খেয়াল রেখে। আর তুমিও লিমিটে সব কিছু থাকে যেন। আর ছুটকি দাদার সাথে সাথে থাকবি, বেশি রাত করিস না।

-আচ্ছা ঠিক আছে তুমি টেনশন করো না।(রুদ্র কথাটা বলে
ঘর থেকে হতে থাকে)

-হাতখরচের টাকা তোর মায়ের কাছে দিয়ে রেখেছি নিয়ে যাস(পেছন থেকে অবিনাশ বাবু রুদ্রের উদ্দেশ্যে কথা গুলো বলে যায়)

রুদ্রের মুখে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠে। ও নিজেই ইনকাম করে নিজের খরচ বোনের খরচ সামলে বাকিটা মায়ের কাছে দিয়ে দেয় তারপরও ওর বাবা নিয়মিতই ওর আর ছুটকির হাত খরচের টাকা অঞ্জলি দেবীর কাছে দিয়ে দেয়। ওরা ঐ টাকা টা খরচ করে যেন অন্যরকম একটা আনন্দ উপভোগ করে। বাসা থেকে বের হবার আগে তনু কে মোবাইল করে জানিয়ে দেয় ওদের রওনা হবার কথা। সন্ধ্যার দিকে রাস্তা আজ অন্যদিনের চেয়ে ফাঁকা আছে। সেন বাড়ি মোড়ে যেতে মিনিট পনেরো লাগলো ওদের। বিল্ডিং এর নিচে গিয়ে ফোন করে রুদ্র। মিনিট সাতেক এর মাঝেই তনু নেমে আসে। ওকেও দারুন মানিয়েছে জামাটা। ফর্সা গায়ের রঙের সাথে যেকোন রঙই মানানসই তবে লাল রঙটা একটু বেশিই ফুটে উঠে।

-দাদাভাই এই জামাটাতে কেমন লাগছে আমাকে?

-সুপারব! দেখতে হবে না চয়েস টা কার।

-(ছুটকি পিছন থেকে পিঠে চিমটি কাটে) আর আমাকে কি বলেছিলি মনে আছে তো।

-উফফ, দজ্জাল মেয়ে! ওটা তো দুষ্টুমি করে বলেছিলাম। দুজনকেই বেশ লাগছে। এখন চল দেরি হয়ে যাচ্ছে৷ কিরে তনু বাসায় বলা হয়েছে তো।

-হুম, দিদি মা বাবা কে ম্যানেজ করে নিয়েছে। ঐতো দেখো ব্যালকনিতে মা দাঁড়িয়ে আছে।

-(নিচ থেকে অন্ধকারে মুখ স্পট বুঝা যায় না, তবে কেউ একজন দাঁড়ানো সেটা দেখা যাচ্ছে) তোর দিদি তো তাহলে বেশ আদর করে তোকে।

-করে তবে শাসন করে বেশি, তুমি দেখলে বলবে ও কোন স্কুলের ম্যাডাম হলে ভালো হতো।(খিলখিল করে হাসতে থাকে)

রুদ্রের বাইকে তিন জনে যাওয়া টা একটু মুশকিল তবে সেটা তেমন একটা সমস্যা হলো না। তনু উঠে বসতেই সারিন্দা ক্যাফের দিকে রওনা হয় ওরা।








[/HIDE]
 
[HIDE]


বাবু আর ছুটকি একটু আগেই বেরিয়ে গেছে, অঞ্জলি দেবী মাত্রই সন্ধ্যা পূজো শেষে ঠাকুর শয়ন দিয়ে বের হয়েছে। শাড়িটা পাল্টে আবার আগের টা পড়ে নিয়ে অবিনাশ বাবু কে গিয়ে জিজ্ঞেস করে এখনি চা দিবে কিনা। রান্না ঘরে চায়ের জল গরম করতে দিয়েছে তখনি কলিং বেলটা বেজে উঠলো, গ্যাসের সুইচটা কমিয়ে দিয়ে দরজা খুলতে যায়। দরজা খুলেই দেখে রাই দাড়িয়ে আছে,

-কিরে তুই? আগে তো ফোন ও করলি না?

-কেন আন্টি ফোন না করে আসছি বলে কি বাসায় ঢুকতে দিবে না?

-ওমা এটা আবার কেমন কথা। আয় ভেতরে আয়।

-(বাসার ভেতরে আসে অঞ্জলি দেবীর পেছন পেছন) কিগো আন্টি বাসাটা কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।

-লাগবেই তো দুটো বাসায় নেই যে, আমরা বুড়ো বুড়ি আছি কেবল। ওরা একটা অনুষ্ঠানে গেছে।

-(অঞ্জলি দেবীকে জড়িয়ে ধরে) তুমি মোটেও বুড়ি হওনি, একটু সাজগুজ করলে আমার থেকে তোমাকে বেশি ইয়াং লাগবে।

-(রাইয়ের গাল টেনে দিয়ে) বুঝেছি বুঝেছি! তা তুই আজ শাড়ি পড়লি যে, কোন বিশেষ দিন নাকি।

-(নাকি স্বরে) না আন্টি, তোমাদের এখানে আসবো বলেই পড়লাম। কেমন লাগছে বললে না তো?

-অনেক সুন্দর লাগছে। জাম কালার টা তোর সাথে দারুন মানিয়েছে।

-থ্যাংক ইউ আন্টি, আঙ্কেল কই দেখছি না তো?

-ঐতো রিডিং রুমে, তোর আঙ্কেলের জন্য চা বসিয়েছিলাম তখনি তুই আসলি। যা দেখা করে আয়।

-এখন না, আজ আমিই আঙ্কেলের জন্য চা নিয়ে যাবো। আর হ্যাঁ রাতে কিন্তু তোমার হাতে রান্না খাবো।

-ঠিক আছে চল ঐদিকে রান্নাঘরে।

কিছুক্ষণ পরে চা হয়ে গেছে, দুজনে এর মাঝে আর টুকটাক কথা হয়ে চলেছে। ছোট্ট ট্রে তে চা আর কয়েকটা বিস্কুট সাজিয়ে দিয়ে রাইয়ের দিকে এগিয়ে দেয়। রাই দু হাতে ট্রে ধরে এগোতে যাবে কিন্তু আঁচল টা একটু বড় হয়ে যাওয়াতে সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। সেটা বুঝতে পেরে অঞ্জলি দেবী আঁচল টা সামনের দিকে এনে কোমরে গুঁজে দেয়।

-নে এখন ঠিক আছে, তোকে পুরো গিন্নি গিন্নি লাগছে। এবার মেয়েকে বিয়ে দেয়াই যায়।

-(অঞ্জলি দেবীর কথায় রাই একটু লজ্জা পেয়ে যায়, চেহারায় সেটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে) তুমিও না আন্টি কি সব বলো। চলো আমার সাথে চা তো ঠান্ডা হয়ে যাবে এর পরে।

অঞ্জলি দেবী আগে আগে চলতে থাকে, পেছনে চায়ের ট্রে হাতে গুটি গুটি পায়ে রাই এগিয়ে যেতে থাকে। রিডিং রুমের কাছে এসে হালকা করে দরজাটা ঠেলে সরিয়ে রাইকে আগে যেতে ইশারা দেয়। রাই সন্তপর্ণে এগিয়ে যায় অবিনাশ বাবুর দিকে, তিনি তখন কোন একটা বইয়ের পাতায় মগ্ন হয়ে আছে।

-আঙ্কেল তোমার চা (চা এর প্লেট টা অবিনাশ বাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে আস্তে করে কথাটা বলে)

-হুম সামনে রেখে দাও( কথাটা বলা শেষ করার আগেই অচেনা কণ্ঠস্বরটা কানে বাজতেই উপরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে) তুমি কে? বাবুর মা কই?(পাশে তাকাতেই দেখে অঞ্জলি দেবী মিটি মিটি হাসছে)

-দেখো তো চিন্তে পারো কিনা?

-(অবিনাশ বাবু দ্বন্দে পড়ে যায়, একবার মেয়েটির দিকে তাকায় আরেকবার অঞ্জলি দেবীর দিকে তাকায়। খুব অসহায় ভাবে ভ্রু কুঁচকে মেয়েটিকে আরেকবার ভালো করে দেখে নেয়) না তো চিনতে পারছি না। আগে কোথাও কি দেখেছি আমার তো মনে পড়ছে না।

-(রাই একটু এগিয়ে গিয়ে নিচু হয়ে অবিনাশ বাবুকে প্রনাম করে) আঙ্কেল আমি রাই, বাবুর সাথে স্কুলে পড়তাম মনে আছে? আমার বাবা বিজয় চৌধুরী।

-(এবার অবিনাশ বাবুর মনে পড়ে, রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়) সেই কবে দেখেছিলাম তখন তো ছোট ছিলে, তাই তোমাকে চিনতে পারি নি মা। কিছু মনে করো না। তোমার বাবা মা কেমন আছেন? তোমরা এখন কোথায় থাকো?

-বাবা মা ভালোই আছে, আমরা সেন বাড়ী মোড়ের আলিশা টাওয়ারে থাকি।

-ভালো ভালো, তা কি করছো এখন? জব?

-হুম আঙ্কেল একটা কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে ম্যানেজার পদে আছি।

-অনেক ভালো লাগলো শুনে, ঐ দেখ আজ তুমি আসলে ওদিকে বাবু ছুটকি কেউ বাড়িতে নেই। ওরা থাকলে তো তোমার সাথে কথা বলতে পারতো, কতদিন পর তোমার সাথে দেখা হতো৷

-হুম আঙ্কেল আন্টির কাছে শুনেছি। সমস্যা নেই আজ না হয় তোমাদের সাথেই আড্ডা দেব৷ আচ্ছা আঙ্কেল তুমি চা খাও আমরা ও ঘরে গিয়ে বসি। পরে আবার কথা বলবো তোমার সাথে।

-আচ্ছা মা। আর রাতে কিন্তু এখানে খেয়ে যাবে।

-ওটা তুমি না বললেও আজ ও এখানে খেয়েই যেত( কথাটা বলতে বলতে অঞ্জলি দেবী মুচকি হেসে উঠে)
অবিনাশ বাবু কিছুই বুঝতে পারে না, শুধু ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার বইয়ে পাতায় মুখ গুজে দেয়। রাই আর অঞ্জলি দেবী দুজনেই বসার ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। বসার ঘরে সোফায় পাশাপাশি বসে চায়ের কাপে চুমুকের সাথে সাথে কথার ফুলঝুরি ফোটতে থাকে। নতুন পুরনো কতশত জমা গল্প একে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করতে থাকে। রাই তার কথা তার বোন মা বাবার বিভিন্ন সময়ের নানা অনুভবের, হাসি-খুশির, কষ্টের কথা অঞ্জলি দেবীর সামনে খোলা বইয়েে মত মেলে দিতে থাকে। কখনো হাসির রুল উঠে কখনো আবার দু'জনেরই চোখের পাতা ভিজে ভারি হতে থাকে। অঞ্জলি দেবী রাই এর চলে আসার পর থেকে এখনকার সময়ের অনেক কথাই রাই কে বলতে থাকে। দুজনের কথার ফাকেই হালকা নাস্তাও হয়ে গেছে এর মাঝেই। হঠাৎ ঘড়ির দিকে নজর দিতেই টনক নড়ে, সময় অনেকটাি গড়িয়েছে এখন রান্না না বসালে মাঝরাতে খেতে বসতে হবে।
রাই ও জেদ ধরে সেও অঞ্জলি দেবীর সাথে আজ রান্না করবে। করবে আর কি সে তো তেমন রান্না জানে না তবে ঐ সাথে থেকে খুন্তি নাড়ানো অব্দি। অঞ্জলি দেবী বার বার বারণ করছিলো এই গরমে রান্নাঘরে যাবার কোন দরকার নেই, কিন্তু রাই নাছোড়বান্দা সেই সাথে যুক্তি একা একা সে কি করবে এখানে বসে বসে শেষপর্যন্ত রাই রান্নাঘরের দখলে এগিয়ে গেল। আজ রাই এর পছন্দের দুটো পদ রান্না করবে অঞ্জলি দেবী, এতদিন সে নিজের মায়ের হাতে এই রান্না গুলো খেয়েছিল আজ রুদ্রের মায়ের হাতে রান্না খাবে। উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনার কোন কমতি নেই আজ রাইয়ের মাঝে। এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে অঞ্জলি দেবী কে মাঝে মাঝে আন্টি নির্দেশ মতে কোন মশলা কতটুকু দিতে হবে ততটুকুই দিচ্ছে সে। দুধে আলতা গায়ের রঙের রাই গনগনে আগুনের তাপে লালচে বর্ণ ধারণ করেছে ইতিমধ্যেই, কপালের পাশ বেয়ে ঘামের ধারা ছুটছে। শাড়ির আঁচলে মাঝেমধ্যে মুখটা মুছে নিচ্ছে, আর ভাবতে থাকে একদিনের একটু মূহুর্তেই এমন অবস্থা ওর আর মায়েরা বছরের প্রতিটা দিন প্রতি বেলায় কেমন করে এসব সহ্য করেই সবার জন্য খাবার তৈরি করে চলে, এমন আত্মত্যাগ আর কে কোথায় কবে করেছে সেটা ওর জানা নেই। রান্না প্রায় শেষের দিকে, এবার অঞ্জলি দেবী অনেক ধমকে রাই কে বসার ঘরে পাঠিয়ে দেয় ফ্যানের বাতাসে একটু গা জুড়িয়ে নিতে৷ ও বসার ঘর হয়ে রুদ্রের ঘরে চলে যায়, ফ্যান টা ফুল স্পিডে অন করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ঠান্ডা বাতাসে শরীরের জমে থাকা ঘাম যখন শরীরেরই শুকাতে শুরু করে তখন গা জাড়িয়ে উঠে কাটা দেয় একটু শীত অনুভূত হয়। ক্লান্তির আবেশে চোখ বুজে আসে, পাশ ফিরে একটা বালিশ টেনে মাথার নিচে দিয়ে দেয়। ঠান্ডা বাতাসের শীতলতার প্রভাবে চোখ বুজে আসে...



[/HIDE]
 
[HIDE]




অফিস শেষে রুদ্র নিচে বাইকে অপেক্ষা করছে কারও জন্য, বারবার মোবাইল বের করে কি যেন দেখছে আবার মোবাইল টা পকেটে পুড়ে রাখছে। কিছুটা সময় পরে তনয়া আসে বাইকের কাছে, ও উঠে বসতেই রুদ্র বাইক স্টার্ট দেয়। পার্কিং সাইডের অন্য পাশেই আরেকটা গাড়িতে বসা ম্যানেজার ম্যাডাম রিদ্ধিমা চৌধুরীর চোখে সবটাই পড়েছে, ম্যাডামের গাড়িটাও বাইকটার পেছন পেছন চলতে শুরু করে। অনেকটা দূর ফলো করার পর হঠাৎ সিগনালে গাড়ি আটকে যায়, সামনে এদিক ওদিক তাকিয়েও রুদ্রের বাইকের দেখা পাওয়া যায় না। ইশ, একটু জন্য আজকেও ফসকে গেল। দু মিনিট পর সিগনাল উঠে যায়, কি করবে ভেবে না পেয়ে সামনের দিকেই চলতে শুরু করে। এই রোডে গাড়ির চাপ টা বেশি দেখে অন্য একটা রোডে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। হঠাৎ নজরে আসে রুদ্রের বাইকটা একটা সাইডে দাড় করানো আর বাইকে তনয়া বসে, কিন্তু রুদ্র কে দেখা যাচ্ছে না। গাড়িটা কিছুটা ব্যাক করে এক সাইডে দাড় করিয়ে নজর রাখে আশে পাশে। ঐতো একটা মেডিসিন শপ থেকে বের হতে দেখা যাচ্ছে রুদ্রকে, হাতে একটা শপিং ব্যাগও আছে ওটা আগে তো ছিল না ওর সাথে অফিস থেকে বের হবার সময়। রুদ্র বাইকের কাছে এসে আবার বাইক স্টার্ট করে চলতে শুরু করে। ম্যানেজার ম্যাডামের গাড়িটাও ফলো করছে পেছন পেছন। একটা বিল্ডিং এর সামনে এসে রুদ্রের বাইকটা থামে, তনয়া এই বিল্ডিং টা চেনে আগেও একদিন এসেছে ও জানে এটাই রুদ্রের ঠিকানা। বাইকটা পার্কিং এ রেখে রুদ্র তনয়া কে নিয়ে বিল্ডিং এর ভেতরে চলে যায়। রুদ্রের অফিসের ম্যানেজার রিদ্ধিমা চৌধুরীর গাড়িটা রাস্তার উল্টো পাশেই দাড়িয়ে।

মিনিট পনেরো র মত অপেক্ষা করে রিদ্ধিমা চৌধুরী চিন্তা করে ফিরে যাবার আবার আরেকবার চিন্তা করে আর মিনিট দশেক অপেক্ষা করবে। একবার গাড়ি থেকে নেমে পাশের দোকান থেকে কয়েকটা লজেন্স কিনে আবার গাড়িতে উঠে বসতেই খেয়াল করে ওরা বিল্ডিং এর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে। রুদ্র বাইকে করে তনয়াকে ওদের বাড়িতে পৌঁছে দিতে রওনা হয়, আগের মতই আরেকটা গাড়ি পেছন পেছন আসছে। তনয়াকে ওদের বাসার কাছে নামিয়ে দিয়ে রুদ্র চলে যায়৷ রিদ্ধিমা চৌধুরী প্রথমে ভেবেছিল আগের বিল্ডিং টাই হয়তো তনয়াদের ঠিকানা তাই নিচে রুদ্রের জন্য অপেক্ষা করছিলো কিন্তু যখন ওরা দুজনেই বের হয়ে আসলো তখন মনে প্রশ্ন জাগলো। এখন পরিষ্কার বুঝতে পারছে ওটা তনয়াদের বাসা ছিল না এখনকার টা তনয়াদের বাসা। মনে অনেক সন্দেহের দানা বাঁধতে শুরু করেছে, আগে মনে হতো সব হয়তো ভুল চিন্তা ভাবনা কিন্তু আজকের পর সেটা তো সত্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাহলে সে যেটা ভেবেছিল সেটাই সত্যি হতে চলেছে। নিজের উপরই রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা জন্ম নিচ্ছে। না এটার শেষ টা জানতে হবে।

পরদিন অফিস শেষে রিদ্ধিমা গাড়িতে অপেক্ষা করছিলো, তনয়া কে আসতে দেখে গাড়িতে ডেকে নেয়। রিদ্ধিমা আজ তনয়াকে পৌঁছে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে, ম্যাডামের মুখের উপর কিছু বলার সাহস হয় না আবার মন থেকে একটু খুশিই হয় ওকে পৌঁছে দিচ্ছে দেখে। কথা বার্তা চলতে চলতে রিদ্ধিমা আগের দিনের বিল্ডিং এর রোড ধরতেই

-ম্যাডাম এদিকে তো আমার বাসা না।

-এদিকে না? আমি তো আরও ভাবলাম সামনে বিল্ডিং এ তোমার বাসা। ঐদিন একটু কাজে এদিকে এসেছিলাম তখন যে দেখলাম তোমাকে ঐ বিল্ডিং এ যেতে। তাই ভাবলাম

-(ম্যাডাম ওদের একসাথে দেখে নিয়েছে শুনে একটু বিব্রতবোধ করে) ন..না..আআ মানে ম্যাডাম ওটা তো রুদ্র স্যারের বাসা। ওদিন একটু প্রবলেম হয়েছিল তাই ওনার বাসায় যেতে হয়েছিল।

-ওহহ, তা কোন গুরুতর সমস্যা নাকি? এখন সব ঠিক আছে? কোন হেল্প লাগলে বলতে পারো, আমি যদি কিছু করতে পারি।

-না ম্যাডাম তেমন কিছু না, এখন সব ঠিক আছে। আসলে ম্যাডাম ঐদিন বাসায় যাবার পথে হঠাৎ করেই পিরিয়ড হবার ব্যাথা হতে থাকে। আমার ব্যাগে প্যাড ও ছিল না। তখন রুদ্র স্যারকে জানাতেই স্যার প্যাড কিনে নিয়ে আসে আর স্যারের বাসায় নিয়ে যায় ফ্রেশ হবার জন্য।

-ওহহ, এই ঘটনা। তবে তো তোমাদের স্যার বেশ কেয়ার করে সবার।

-(একটু লাজুক স্বরে) ইয়েস ম্যাডাম স্যার ভীষন কেয়ার ফুল।

-তা তোমাদের বাসার রাস্তাটা কোন দিকে দেখিয়ে দাও। আর শোন আজকের এই ব্যাপার এখানেই যেন থাকে।

-ওকে ম্যাডাম, আই আন্ডারস্ট্যান্ড।
গাড়ি তনয়ার দেখানো পথে চলতে শুরু করে।

[HIDE]

[/HIDE]


অঞ্জলি দেবীর ডাকে রাইয়ের তন্দ্রা ভাবটা কেটে যায়। মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখে দশটা বাজতে চললো, আন্টি ওকে খাবারের জন্য ডাকতে এসেছিল। আলসে ভাবটা কাটানোর জন্য বাথরুমে যায় চোখে মুখে জল দেবার জন্য। চোখে মুখে জল দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে, মনে মনে কিছু একটা ঘটে চলেছে




এই ঠুনকো জীবনে তুমি কাচের দেয়াল
এক আধটু কারনে যদি হও বেসামাল
মনে তাই তোমার খেয়াল
মনে তাই তোমার খেয়াল।





অঞ্জলি দেবীর ডাকে রাইয়ের তন্দ্রা ভাবটা কেটে যায়। মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখে দশটা বাজতে চললো, আন্টি ওকে খাবারের জন্য ডাকতে এসেছিল। আলসে ভাবটা কাটানোর জন্য বাথরুমে যায় চোখে মুখে জল দেবার জন্য। চোখে মুখে জল দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে, মনে মনে কিছু একটা ঘটে চলেছে

এই ঠুনকো জীবনে তুমি কাচের দেয়াল
এক আধটু কারনে যদি হও বেসামাল
মনে তাই তোমার খেয়াল
মনে তাই তোমার খেয়াল।

লাইন কটা রাইয়ের কানে ঘুরেফিরে আসতে থাকে বারবার। আবার একটু মুখে জল ছিটিয়ে রুদ্রের রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং রুমের দিকে চলে যায়। খাবারের টেবিলে অবিনাশ বাবু আগে থেকেই বসে আছে অন্যদিকে অঞ্জলি দেবী খাবার গুলো গুছিয়ে রাখছে। রাই কে আসতে দেখেই অবিনাশ বাবু ইশারায় ওদিকের একটা চেয়ার দেখিয়ে দেয়

-আসো আসো, চোখ লেগে গিয়েছিল নাকি? অঞ্জলি তুমি ওকে রান্না ঘরে ঢুকতে দিলে কেন, গরমে হয়তো ওর কষ্ট হচ্ছিলো।

-না না আঙ্কেল, আন্টি বারণ করেছিল আমিই জোর করে রান্নাঘরে গিয়েছিলাম। আমার কোন কষ্ট হয় নি তো। দাও আন্টি তাড়াতাড়ি খেতে দাও, তোমার হাতের জাদুতে যে সুঘ্রাণ বেরিয়েছে তাতে খিদে টা আরও বেড়ে গেল।

-তা ঠিক বলেছো মা, তোমার আন্টির হাতে জাদু আছে। কিন্তু আমাদের কি সেই কপাল আছে যা দেয় তাই খেতে হয়। আজ তবু তুমি আছো বলে ভালো কিছু কপালে জুটছে।

-কি বললে তুমি?? এর মানে কি আমি প্রতিদিন যা তা রান্না করি আর সেগুলোই তোমাদের খেতে হয়। তা যাও না বাইরে থেকেই খেয়ে এসো আমার রান্না যখন ভালো লাগে না।

-(মিটি মিটি হেসে চলেছে রাই) আন্টি তুমি রাগ করো কেন? আঙ্কেল এটা কিন্তু একদম ঠিক হচ্ছে না। আন্টি কে শুধু বদনাম করবে না। আমার আন্টি অনেক ভালো।

-ও মা এখনি দেখা যায় দল ভারী, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকতে থাকতেই আমি মুখে কুলুপ এটে দিলাম( হু হু করে হাসতে থাকে)

-মেয়েটার সামনে কিছু বললাম না আর তোমাকে। কাউকে দেখলেই তুমি ভীমরতিগ্রস্ত হয়ে পড়ো। এখন চুপচাপ খেয়ে নাও।

-দেখলে তো মা, তোমার আন্টি আমাকে কিভাবে শাসনে রাখে। একটু পান থেকে চুন খসলো তো একেবারে শাসিয়ে উঠবে।

-বুঝেছি বুঝেছি যাও আমি আজ আন্টিকে বলে যাবো যেন তোমার সাথে এমন না করে।

খাওয়া চলছে এর মাঝেই টুকটাক এদিক সেদিকের আলাপ চলছে, টিপ্পনী কাটা হচ্ছে আর তার পর হাসির রুল পড়ছে। হাসতে গিয়ে বারকয়েক ভীষম ও খেয়েছে সবাই। খাবারের শেষ দিকে অঞ্জলি দেবীর সবাইকে দই দিতে থাকে। তখনি রাই বলে উঠে

-আন্টি একটা কথা বলার ছিল, কিছু মনে করবো না তো?

-কিছু মনে করবো কেন? কি বলবি বল না।

-তবুও আন্টি একটু সেনসেটিভ বিষয় তো তাই।

-বাপরে, তুই এত সিরিয়াস হয়ে গেলি কেন হঠাৎ, যা বলার বলে ফেল এখানে তো আর বাইরের কেউ নেই।

-আন্টি আমি তোমাদের এখানে থাকতে চাই।

-থাকতে চাইলে থাকবি, তোকে কে না করছে।

-না মানে আন্টি, এভাবে না আমি একেবারেই তোমাদের এখানে থাকতে চাই।

কথাটা শুনে অবিনাশ বাবু একটু হকচকিয়ে উঠে, অঞ্জলি দেবীও ওনার দিকে তাকায়। পরস্পর পরস্পরের দিকে চোখে চোখে কিছু একটা বলে চলেছে৷ রাই মাথা নিচু করে প্লেটে আঁকিবুঁকি করে চলেছে, মাঝে মাঝে আড় চোখে রুদ্রের মা বাবার মুখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করছে। অঞ্জলি দেবী কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো

-দেখ রাই তুই যেটা বলতে চেয়েছিস মানে যা বুঝাতে চেয়েছিস সেটা আমিও হয়তো বুঝেছি আর তোর আঙ্কেলও। তুই বড় হয়েছিস তোর নিজের পছন্দ অপছন্দের অধিকার আছে তবুও তোর মা বাবা এখনো তোর অভিভাবক আগে তাদের সাথে আলোচনা টা করে নেয়া ভাল হয় আমার মতে। তুই কি বলিস?

-(মাথা নিচু করেই প্লেট থেকে কিছু একটা মুখে পুড়ে নিয়েছে) তোমরা বড়, তোমরা যেটা সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই হবে। আমি শুধু আমার কথাটা বললাম। সত্যি করে বলবে? আমি তোমাদের পছন্দ নই না?

-এত বড় হয়ে বোকা বোকা কথা বলছিস। পছন্দ হবে না কেন? তোকে সেই ছোট থেকে দেখেছি, অপছন্দ করার মত তো কোন কারণ পাচ্ছি না। তারপরও বাবুর সাথে তো কথা বলতে হবে তো নাকি। আর তোর আঙ্কেল আছে তার সাথেও কথা বলি।

-শুনো অঞ্জলি আমার কোন সমস্যা নেই, আমার তরফ থেকে হ্যাঁ। কিন্তু এরপরও রাই তোমাকে বলছি যে তোমার মা বাবার সাথে আগে কথা বলি। তাদেরও তো কোন মত থাকতে পরে। টেনশন করার কিছু নেই, আমি বাবুর সাথে কথা বলবো মন খারাপ করার কিছু নেই।

-না না আঙ্কেল মন খারাপ করবো কেন। তুমি আছো আন্টি আছে তোমরা ঠিক ম্যানেজ করে নিবে।

-হয়েছো তো তোর আঙ্কেলও তোর পক্ষে। নে একটু হাসি মুখে এদিকে তাকা তো।

বাকিটা সময় হই হুল্লোড়ে কাটিয়ে রাই বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়।



[/HIDE]
 
[HIDE]



ওদিকে পার্টিতে বলতে গেলে একপ্রকার গ্র্যান্ড এন্ট্রি হয়ে তনু আর ছুটকির। দুজনের পড়নেই এক কালারের জম্পেশ পার্টি ফ্রকটা সবার দৃষ্টি কাটছে। অনেকেই দেখে হয়তো ভাবছে ওরা দুই জমজ বোন হয়তো সবাই যেন ওদের ঘিরে ধরেছে, অন্য মেয়ে গুলো জিজ্ঞেস করছে কোথা থেকে জামাটা নিলো কত পড়লো এসব। আর তখনি ওরা দুজনেই দূরে দাড়িয়ে থাকা রুদ্রের দিকে ইশারা করে বলে উঠে দাদাভাই গিফট করেছে। ছিমছাম ড্রেস আপেও রুদ্র কে দারুন লাগছে এশ কালারের জিন্সের সাথে ফরমাল সাদা শার্ট গালে খুঁচা খুঁচা দাড়ি তে একদম দক্ষিণী নায়কের মত লাগছে। এক দুজন তো দৌড়ে ওর দিকেই চলে আসলো, ওর পছন্দের তারিফ করতে কিংবা সাথে অন্য কিছুও৷ যাওয়ার পথেই অনেক কথা বলা হয়ে গেছে তনু আর ছুটকির মাঝে, এখন পার্টিতে ওদের হাবভাব দেখে কেউ বুঝতেো পারবে না একটু আগেই ওদের মাঝে ঠিকমত আলাপ হয়েছে এর আগে কেউ কাউকে চিনতো পর্যন্ত না।

এর মাঝেই কেক কাটার সময় এসে গেল, অনেক হই হুল্লোড়ের মাঝে কেক কাটা হলো সাথে একে অন্যের গালেও একটু আধটু কেক মাখিয়ে দিয়ে মজা নিচ্ছে। এই ফাঁকে কয়েকটা মেয়ে এসেছিলো রুদ্রের দিকে ওকে কেক মাখানোর জন্য কিন্তু তনু আর ছুটকির কড়া পাহারার মাঝে কেউ তেমন হালে পানি পায় নি। ওদের দুটোর কান্ড কারখানা দেখে ও মুচকি মুচকি হাসছে, কোথায় ও এসেছে ওদের পাহারা দিতে এখন ওরাই ওকে পাহারা দিচ্ছে। কেক কাটার পর্ব শেষে নাচানাচি আর গানের ছোট্ট আয়োজন হয়েছে তনু আর ছুটকির তাতে পার্টিসিপ্যাইট করার মাঝে উৎসাহের কমতি নেই। প্রথমেই "প্রেমের বাক্স" নামের একটা হিট গানে ওরা দুজনে দারুন নাচলো। নাচ শেষে সবাই তুমুল করতালি দিয়ে ওদের উৎসাহ দিলো সেই সাথে অনেকেই Once More Once More বলে চিয়ার্স করতে লাগলো। সবার অনুরোধে তনু আর ছুটকি "মানভা লাগে" গানটাতেও দারুন নাচে। দেখে মনে হচ্ছিলো দুটো পরী একসাথে নাচছে এখানে, রুদ্র দুটো নাচই মোবাইলে রেকর্ড করেছে। কয়েকজন দারুন দারুন সব গান পরিবেশন করলো, অনুষ্ঠানের শেষের দিকে ওরা দুটো এসে রুদ্র কেউ চেপে ধরে ওদের সাথে নাচার জন্য, রুদ্র প্রথমে রাজি হচ্ছিলো না কিন্তু ওদের চাপাচাপি তে রাজি হতেই হলো ওকে। শেষমেশ ওরা তিনজনে একটা ম্যাশআপ গানের তালে নাচতে শুরু করলো, একদম মঞ্চ কাপানো পারফরম্যান্স চারদিকে গোল করে দাড়ানো বাকিদের মাঝে মেয়েগুলো উদ্দীপনা যেন তুঙ্গে। ওরা চিৎকার করে আর করতালিতে পুরোটা সময় মুখরিত করে রেখেছিল। নাচটা শেষ হতেই কয়েকজন যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল রুদ্রের উপর, কেউ কেউ তো অটোগ্রাফ চাওয়ার মত বাড়বাড়ন্ত অবস্থা একটা মেয়ে তো মোবাইল নাম্বারও চেয়ে বসলো। সাথে সাথে ছুটকি আর তনু যেন তেড়ে গেল ঐ মেয়ের দিকে, ওরা গিয়ে ওদের বান্ধবী কে একটু ধমকের সুরেই বললো, " ওটা আমার দাদা বুঝলি, তোর চেয়ে কত বড় জানিস তুই যে লাইন মারতে চলে এলি"। রুদ্র এগিয়ে গিয়ে ওদের দুটোকে টেনে নিয়ে আসে আর ঐ মেয়ে টিকে সরি বলে। ছুটকি আর তনুকে হালকা বকা দেবার মত করে বলতে বলতে খাওয়ার জায়গার দিকে এগিয়ে যায়। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে একে একে সবাই বিদায় নিতে শুরু করে রাত প্রায় এগারো টা বাজতে চলেছে আর দেরি করা ঠিক হবে না তাই রুদ্রও ছুটকি আর তনু কে তাড়া দেয় বাসায় চলে যাবার জন্য।

বাইরে বের হয়ে হঠাৎ ছুটকি বায়না ধরলো আজ রাতটা তনুকে ওদের বাসায় থাকার জন্য, তনুও যে আগে থেকেই রাজি হয়ে আছে সেটা ওর হাবভাবেই বুজতে পারে। তবে ওর বাসায় তো চিন্তা করবে এমনিতেই রাত তো অনেক হয়েছে। দুই পক্ষের আর্গুমেন্ট শেষে ঠিক হলো বাসায় গিয়ে ছুটকি মা কে দিয়ে তনুর বাসায় কথা বলিয়ে দিবে তাতেই তো হলো। অগত্যা রুদ্রকে রাজি হতেই হলো, রাতে রাস্তা ফাঁকা বললেই চলে তাই বাইকে স্পিড তুলে তাড়াতাড়িই বাড়িতে পৌঁছে গেল। বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই অঞ্জলি দেবী এসে দরজা খুলে দেয়, তিনি যে ঘরে পায়চারি করছিলেন সেটা বুঝাই যাচ্ছে। চলতি পথে কয়েকবারই রুদ্রের ফোনটা বেজে উঠেছিল আর ফোনটা যে মা করছিলো সেটা ওর জানা। রুদ্র ছুটকির সাথে তনু কে দেখে একটু অবাক হয় অঞ্জলি দেবী

-তোদের সাথে আবার কাকে নিয়ে আসলি আবার?

-মা তোমাকে বলেছিলাম না তনুর কথা, ঐ যে আমাদের সাথেই যাবে। ও সেই তনু৷

-(তনুর দিকে এগিয়ে যায় অঞ্জলি দেবী, দু হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়) ভারী মিষ্টি লাগছে তোমাকে। তা তুমি যে এত রাতে এখানে এলে তোমার বাসায় জানিয়েছো?

-(পাশ থেকে ছুটকি বলে উঠে) না মা, তুমি একটু ওর মায়েে সাথে কথা বলে নাও না। তুমি বললে ওনারা কিছু বলবে না।

আন্টি মা হয়তো মানবে কিন্তু দিদি খুব রাগী ও ঠিকি বকাবকি করবে। তুমি একটু মা কে বুঝিয়ে বলো যেন দিদিকে ম্যানেজ করে নেয়।

-(মুচকি হাসতে হাসতে) ঠিক ঠিক আছে তুমি নাম্বার টা দাও আমি কথা বলে নিচ্ছি, দিদি কে নিয়ে এত টেনশন করতে হবে না। যা ছুটকি ওকে ঘরে নিয়ে যা, যাও চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও। কিরে বাবু তোকে কি আলাদা করে বলতে হবে নাকি।

সোফায় বসে থাকা রুদ্র নিজের রুমের দিকে চলে যায় আর ছুটকি তনুকে নিয়ে ওর রুমের দিকে চলতে থাকে। দুজনেই খুব খুশি, পার্টিতেও অনেক আনন্দ করেছে ওরা ছুটকির ড্রেস তনুও গায়ে হয়ে যাবে তাই আর তেমন কোন টেনশন নেই৷ ওরা জামাকাপড় চেঞ্জ করে ফ্রেশ হতে বাথরুমে চলে যায়। বাইরে অঞ্জলি দেবী ফোনে তনুর মা দেবীকা চৌধুরীর সাথে কথা বলে তনুর তাদের বাসায় থাকার কথাটা জানিয়ে দেয় সেই সাথে যেন তারা টেনশন না করে সেটাও জানিয়ে দেয়।

ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ওরা দুজনে গল্পে মজে যায়, হঠাৎই তনু বলে উঠে ছুটকিদের ফ্যামিলি অ্যালবাম টা আনতে দুজনে মিলে ওদের ছোটবেলার ছবি গুলো দেখবে। ছুটকি দৌড়ে গিয়ে মা বাবার রুম থেকে অ্যালবাম টা নিয়ে আসে, দুজনে মিলে বিছানার উপর উপুড় হয়ে বসে ছবি দেখায় মন দেয়। এক এক করে পাতা উল্টাতে থাকে আর ছুটকির মা বাবার বিয়ের ছবি গুলো দেখতে থাকে মাঝে মাঝে তখনকার সময়ের ছবি তোলার ভঙ্গিমা গুলো দেখে হাসিতে লুটিয়ে পড়ছে। একটা ছবিতে তনুর চোখ আটকে যায়, ছবিটা অনেক পুরনো তাতে দুটো ছেলে আরেকটা মেয়ে স্কুল ড্রেস পড়া ছবি না না ঐ তো অন্য পাতা গুলোতে ওদের আরও ছবি আছে সবগুলোতে স্কুল ড্রেস পড়া নেই বেশিরভাগ ছবিতেই নরমাল জামাকাপড় পড়া৷ কয়েকটা ছবিতে শুধু দুজনই আছে, ছবির মুখ গুলো খানিকটা পরিচিত লাগে তনুর কাছে, ছুটকি কে জিজ্ঞেস করে ছবি গুলোর ব্যাপারে


-কিরে এই ছবি গুলো কার?

-ওহ এগুলো, দাদা আর তার স্কুল ফ্রেন্ডদের। ওরা একসাথে স্কুলে পড়তো ভালো বন্ধু ছিল। পরে একেকজন একেক জায়গায় চলে গেছে।

-রুদ্র দা কোনটা? আর বাকি গুলো কে কে তুই চিনিস?

-বা পাশের টা দাদার ছবি আর ঐ যে মাঝখানের মেয়েটা ওর বান্ধবী নামটা কি জানি মনে পড়ছে না(খানিকটা মাথা চুলকে) মনে পড়েছে ওটা রাই দি আর ডান দিকের টা জয় দা। আমি তাদের কাউকেই দেখিনি, দাদার মুখে নাম শুনেছি শুধু। আর মা বলতো আগে স্কুলে থাকতে আমাদের আগের বাসায় তারা প্রায়ই আসতো।

-(এতোক্ষণ ছুটকির সব কথায় তনুর মনোযোগ ছিল না ও কিছু একটা ভাবছে) একটা কথা বলবো তোকে?

-কি কথা বল।

-এমন দু তিনটে ছবি আমি আমাদের বাসায় দেখেছি।

-তোদের বাসায়? ওখানে কি করে যাবে? অন্য ছবির সাথে গুলিয়ে ফেলছিস হয়তো।

-নারে, বাসায় বলতে দিদির ড্রয়ারে একটা ডায়েরি আছে ওটাতে, হুবহু একই ছবি। একই রঙের স্কুল ড্রেস ঐ ছবি গুলোতেও। আর আমার দিদিকে তো বাসায় বাবা মা রাই বলেই ডাকে ওটা দিদির ডাকনাম। তুই বলছিস রুদ্র দার স্কুল বন্ধুর নামও রাই। আচ্ছা তোরা আগে কোথায় থাকতিস?

-আমি তখন খু্ব ছোট তেমন কিছু মনে নেই সেই জায়গা টার কথা তবে আমরা গোপালপুর নামে একটা মফস্বলের মত জায়গায় থাকতাম।

-আরি ব্যাস এইতো এটাও মিলে গেল, আমি বাসায় শুনেছি আগে আমরাও গোপালপুরে থাকতাম তবে আমার জন্মের আগেই শহরে চলে এসেছিল।

-তাহলে তুই কি বলতে চাইছিস?

-ওটাই যেটা তুই ভাবছিস, রুদ্র দা আর আমার দিদি স্কুল ফ্রেন্ড।

-তা হলে এতদিনেও ওদের কাউকেই তো আসতে দেখলাম না কিংবা দাদার মুখেও কোন কথা শুনলাম না।

-সেটাই তো ভাবছি, দিদিও তো কখনো এই ব্যাপারে কথা বলে নি। আর ছবি গুলো দিদি কখনো আমাকে দেখায় নি কিছু বলবে তো দূরের কথা। কিছু একটা তো ঘটনা আছে।

-কি বলছিস এখন তো আমরই সব গুলিয়ে যাচ্ছে। এখন ঘুমোতে চল পরে ওটা নিয়ে কথা বলতে হবে, বিষয়টা ঠান্ডা মাথায় ক্লিয়ার করা দরকার।

-বিষয়টা ক্লিয়ার না হলে ঘুম আসবে না তো। চল না একবার রুদ্র দাকে জিজ্ঞেস করি।

-মাথা খারাপ নাকি তোর, দাদা কে গিয়ে এত রাতে কি জিজ্ঞেস করবি। বকুনি ছাড়া আর কিচ্ছু পাবি না, দাদার ঐ রূপটা তো দেখিস নি তাই।

-তবে আর কি, আমাদেরই গোয়েন্দা গিরি করতে হবে আর ব্যাপার টা খোলাসা করতে হবে।





[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top