[HIDE]
আমি জোয়ার-ভাটায় ভাসতে থাকা
শূন্য তরি
আমার নোঙর তো নেই মাঝিও নেই
ভয়ে মরি
সব অবাধ্য ঢেউ আছড়ে পড়ে
আমার ভেলায়
সব থেমে গেছে হারিয়ে গেছে
অবহেলায়
আমার অবহেলায়..
কতক্ষণ ওভাবে এক পলকে তাকিয়ে ছিল জানা নেই, যখনি বাস্তবতা পাশ কেটে আবার ফিরে আসে তখনি দ্রুত নজর সরিয়ে আবার নিজের জায়গায় বসে পড়ে রুদ্র। রুদ্রের ওভাবে তাকিয়ে থাকায় যতটা শান্তির পরশ পেয়েছিল এখন যেন ততটাই লাজে মরে যাচ্ছে রাই। ইশ ওমন করে কেউ তাকিয়ে থাকে নাকি, তেমন সাজগোজ করে নি তাতেই ওভাবে হ্যাংলার মত তাকিয়ে ছিল যেন চোখ দিয়েই গিলে নিবে। কই এতদিন তো সামনেই ছিল একটিবারের জন্য এমন করে তাকায় নি যদি একটাবার এমন করে দেখতো তবে তো ঠিকি চিনে নিতে পারতো, ইচ্ছে করছে চোখ দুটো গেলে দেই। কখনো কখনো মনে হতো এই বুঝি ওকে হারিয়ে ফেলবো কিন্তু আজ মনের কোনে অন্যরকম প্রশান্তির ঢেউ উঠেছে সেই ঢেউ যত শঙ্কা ভয় ছিল সব দূরে সরিয়ে দিয়েছে, ও তো চায় রুদ্র যেন সবসময় ওকে এমন করেই দেখতে থাকুক প্রিয়তমের এমন চাহনি তে যে কি সুখ সেটার অাভাস যে লেগেছে প্রেমিকার হৃদয়ে। আজ যেন অন্য এক রুদ্র কে দেখেছে রাই শান্ত মুখ, স্থির চোখ আর সেখানে অনেক অপেক্ষার পর পাওয়া কোন সুখের পরিতৃপ্তি, ভালবাসার অপার সম্ভার। এই রুদ্র কেই তো রাই চেয়ে এসেছে, নিজের করে নিতে চেয়েছে বরাবর আগলে রাখতে চেয়েছে নিজের থেকেও যে ওকে বড্ড বেশি ভালো বাসে সে। মায়ের পাশেই রাই গুটিসুটিয়ে দিয়ে বসে পড়ে, মাঝে মাঝে আড় চোখে বাকিদের মুখের অভিব্যক্তি পড়ার চেষ্টা করে, আঙ্কেল-আন্টি, মা, ছুটকি-তনু সবাই যেন চাপা হাসি আড়াল করছে শুধু ব্যতিক্রম রাই এর বাবা ওনার মুখের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে ওনার অসন্তুষ্টি। আর ওদিকে বুদ্ধু টা মাথা নিচু করে বসে আছে আর এক হাতে আরেক হাতের আঙ্গুল গুলো ঘসে যাচ্ছে, উহহ দেখে মনে হচ্ছে যেন সে কনে আর সবাই তাকে দেখতে এসেছে। ইচ্ছে করছে উঠে গিয়ে ওর কান দুটো টেনে দিতে, একটু জড়িয়ে ধরতে, গালে ছোট্ট চুমোতে ভরিয়ে দিতে। ধ্যাত... এসব কি ভাবছে রাই, যেন তর সইছে না এতদিন অপেক্ষা করতে পারলো আর আজ একটু চাহনিতেই সব অপেক্ষার বাঁধ ভেঙে গেল। ছি ছি রাই তুই মেয়ে মানুষ একটু তো লজ্জা বলতে কিছু রাখ, এমন করে কেউ ভাবে নাকি.... নিজের মনে মনেই রাই কথা বলতে থাকে।
রুদ্রর কেমন জানি লাগছে একটা হাসফাস ভাব মনের ভিতর কাজ করছে, অবাধ্য মনে বান এসেছে ইচ্ছে হচ্ছে আরেকটু রাই কে দেখতে, ওতোটুকু দেখাতে যে মনের আশ যেন মিটছে না। ক্লান্ত পথিকের মত সহস্র ক্রোশ পথ পাড়ি দিয়ে যখন জলাধারের নাগাল পায় তখন যেন সমস্ত তৃষ্ণা এসে জমা হয় তেমনি করেই আজ চোখের মনের আত্মার সব তৃষ্ণা যেন একত্রে জমা হয়েছে আরেকটা বার দেখার জন্য মন টা কেমন আনচান করছে, এত উতলা মন নিয়ে কি ঠিক ভাবে বসে থাকা যায় নাকি। মনের সাথে শরীরটাও উশখুশ করছে, যেন বাহানা খুঁজে চলেছে আরেকবার সামনের দিকে তাকিয়ে প্রাণভরে রাই কে দেখতে। ইশশশ তখন ওমন বোকার মত কাজ না করলে এখন এতটা আনইজি লাগতো না, কি জানি মা বাবা কি না কি ভাবছে। ওদিকে ছুটকি তনু দুটো যে খুঁচা খুঁচি করছে ওদের জন্য স্বাভাবিক ভাবে বসতেও পারছে না, কি হচ্ছে নিজের সাথে নিজেই বুঝতে পারছে, আগে তো কখনো এমন হয় নি একজন কে এক নজর দেখবে তার জন্য এত তাল বাহানা তো আগে কখনো করতে হয় নি ওকে তাহলে আজ কেন এমন হচ্ছে। কতবছরের সাধনার সিদ্ধি লাভ করার মত করে তাকে সামনে পেয়ে কই তাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে দিবে, না সে এখানে বসে বসে লুকিয়ে একনজর প্রেয়সীকে এক নজর দেখার রনকৌশল সাজাতে হচ্ছে। না আর পারছে না রুদ্র, এ এক ভীষণ জ্বালা চোখের সামনে বসে আছে কিন্তু দু চোখ ভরে তাকে দেখা হচ্ছে না। যা হবার হবে সাহসী সৈনিকের মত কামানের সামনে দাড়িয়ে গোলা মোকাবেলা করার মত অটুট মনোবল বুকে জমিয়ে একটু আড় চোখে তাকাতেই রাইয়ের চোখে চোখ পড়ে যায় রুদ্রের, পলকেই আবার দৃষ্টি নেমে আসে নিচে, যেন চুরি করে ওকে দেখতে গিয়ে ওর চোখে ধরা পড়ে যাবার লজ্জা ওকে পেয়ে বসেছে ধ্যাত এখনি ওকেও তাকাতে হলো আরেকটু পড়েও তো তাকাতে পারতো। না না আর ওদিকে তাকানো হবে না।
বিজয় চৌধুরী এতক্ষণ গম্ভীর হয়ে বসেছিলেন, স্ত্রীর কয়েকদিনের চেষ্টা ফলে উনি রুদ্রের ফ্যামিলির সামনে আসতে রাজি হয়েছিলেন। উনার চেষ্টা এখনো সেই একই নিজের পছন্দ করা ছেলের সাথে বিয়ে দেয়া, কোন মতে আজকে এদের এড়িয়ে যেতে পারলেই বাঁচে। কিন্তু মেয়েটা হঠাৎ করে এতোটা একরোখা হয়ে উঠলো কি করে কে জানে, আগের বাবার কথার উপর কোন কথা বলার সাহস ছিল না আর সেই মেয়ে নিজের পছন্দ মতো বিয়ে করার সিদ্ধান্তে একটা অনড় কি করে, সব ঐ বখাটে ছেলেটার জন্য। এমন বাজে ছেলের সাথে থাকলে যে কারো অধপতন তো হবেই। কিন্তু এই ছেলেকে আবার পেলো কোথায় ও, শহরের চলে আসার পর তো রাই কে সবসময়ই নজরে রাখতো যেন কারও সাথে মিশতে না পারে তাহলে এতবছর পর আবার কোথা থেকে উদয় হলো। না এভাবে চুপচাপ বসে থাকলে তো চলবে না, কিছু একটা করে সব জানতে তো হবে।
-(রুদ্রের দিকে তাকিয়ে)তা তুমি কি করছো এখন আই মিন কিসে জব করছো?
-(রুদ্র অন্যমনস্ক হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল, পাশে বসা মায়ের হালকা ধাক্কায় সম্বিত ফেরে) আমি একটা ওয়েল নোন কনস্ট্রাকশান কোম্পানিতে প্রজেক্ট ইনচার্জ পদে চাকরি করছি। রাই ও ঐ কোম্পানিতেই আছে।
-আমার মেয়ে তো ম্যানেজার পদে আছে, তুমি কি মনে করো তুমি ওকে বিয়ে করার মত যোগ্য?
-(রুদ্র উনার গলার টোন শুনেই বুঝতে পারে ওকে অপমানের স্বরেই কথা টা বলছে, বাকিরা সবাইও এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না, রাই তো ওর বাবার উপর রেগেই গেছে) আপনি কি বলতে চাইছেন সেটা হয়তো বুঝতে পারছি। যদি বলেন চাকরির যোগ্যতার কথা তবে আমি বলবো আমার দক্ষতা অনুযায়ী আমি আরও বেটার জব করতে পারি এমন অফার অনেক এসেছে কিন্তু আমি এখানে রয়ে গেছি। আর যদি মানুষ হিসেবে যোগ্য কিনা জানতে চান তবে আমাকে আগে জানতে হবে বাকিটা তারপর আপনিই বলবেন। হ্যা মানুষ হিসেবে অনেক ভুল ক্রটি আছে, আমি শতভাগ নিষ্কলুষ সেটা কখনই দাবি করবো না। তবে একজন সন্তান, একজন বন্ধু, একজন সহকর্মী হিসেবে আমি আমার শতভাগ টাই দেবার চেষ্টা করি আর সেটা ভবিষ্যতেও থাকবে।
বিজয় চৌধুরী এমন ভাবে প্রতিত্তোর আসবে আশা করে নি, এখন কি জিজ্ঞেস করবে সেটা মনে মনে সাজাতে থাকে।
-(পাশ থেকে অবিনাশ বাবু ব্যাপারটা একটু সামাল দিতে বলে উঠে) রুদ্র যেই কোম্পানিতে আছে পূর্বে এই কোম্পানি আমাদের বিপদে অনেক হেল্প করেছে, আমার অসুস্থতার সময় বাবু কলেজে পড়ে তখন সংসারের হাল ধরার জন্য ওর কিছু একটা করার দরকার ছিল সেই সময়ে ওকে ওরা চাকরি দিয়েছে। ওদের কাছে আমাদের অনেক ঋন তাই আমিই ওকে বলেছি যত ভালো অফারই আসুক না কেন এই কোম্পানি না চাওয়া পর্যন্ত ও যেন এই চাকরি টা না ছাড়ে। নইলে অনেক বিদেশি কোম্পানি ওকে হাই প্রোফাইল চাকরি অফার করেছে চাইলেই যেতে পারতো। আমার ছেলে বলে বলছি না কমার্শিয়াল দৃষ্টিতেই বলছি রুদ্রের সেই দক্ষতা আছে সেটা বাকি যে কোম্পানি গুলো আছে তাদের ওর উপর নজর দেখেই বুঝা যায়।
-(রাই এর নিজের বাবার উপর রাগ হয় খুব, রুদ্র কে কোন ভাবেই ছোট হতে দিতে চায় না সে) বাবা আমিও কিন্তু নিজের দক্ষতা থেকে ম্যানেজার হই নি, ওটা তো তোমার সুপারিশ ছিল সেটা আমার ভালো করেই জানা। আর ওর পদ দিয়ে ওকে জাজ করা যাবে না, আমাদের বস তো রুদ্র কে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারে না, সবকিছুতেই ওর মতামত সবার আগে নেয়। রুদ্রের ফিল্ড পারফরম্যান্স খুব ভালো আমাদের সব ইনভেস্টরস আর ক্লাইন্টরা চায় যেন ও সবটা দেখাশুনা করে। আমাদের এই সেক্টরে সব কোম্পানি ওকে জিনিয়াস হিসেবেই চিনে, ও কোন ডিল হাতে নিলে সেটা আর কারও হাতে যাবার চান্স নেই।
[/HIDE]
আমি জোয়ার-ভাটায় ভাসতে থাকা
শূন্য তরি
আমার নোঙর তো নেই মাঝিও নেই
ভয়ে মরি
সব অবাধ্য ঢেউ আছড়ে পড়ে
আমার ভেলায়
সব থেমে গেছে হারিয়ে গেছে
অবহেলায়
আমার অবহেলায়..
কতক্ষণ ওভাবে এক পলকে তাকিয়ে ছিল জানা নেই, যখনি বাস্তবতা পাশ কেটে আবার ফিরে আসে তখনি দ্রুত নজর সরিয়ে আবার নিজের জায়গায় বসে পড়ে রুদ্র। রুদ্রের ওভাবে তাকিয়ে থাকায় যতটা শান্তির পরশ পেয়েছিল এখন যেন ততটাই লাজে মরে যাচ্ছে রাই। ইশ ওমন করে কেউ তাকিয়ে থাকে নাকি, তেমন সাজগোজ করে নি তাতেই ওভাবে হ্যাংলার মত তাকিয়ে ছিল যেন চোখ দিয়েই গিলে নিবে। কই এতদিন তো সামনেই ছিল একটিবারের জন্য এমন করে তাকায় নি যদি একটাবার এমন করে দেখতো তবে তো ঠিকি চিনে নিতে পারতো, ইচ্ছে করছে চোখ দুটো গেলে দেই। কখনো কখনো মনে হতো এই বুঝি ওকে হারিয়ে ফেলবো কিন্তু আজ মনের কোনে অন্যরকম প্রশান্তির ঢেউ উঠেছে সেই ঢেউ যত শঙ্কা ভয় ছিল সব দূরে সরিয়ে দিয়েছে, ও তো চায় রুদ্র যেন সবসময় ওকে এমন করেই দেখতে থাকুক প্রিয়তমের এমন চাহনি তে যে কি সুখ সেটার অাভাস যে লেগেছে প্রেমিকার হৃদয়ে। আজ যেন অন্য এক রুদ্র কে দেখেছে রাই শান্ত মুখ, স্থির চোখ আর সেখানে অনেক অপেক্ষার পর পাওয়া কোন সুখের পরিতৃপ্তি, ভালবাসার অপার সম্ভার। এই রুদ্র কেই তো রাই চেয়ে এসেছে, নিজের করে নিতে চেয়েছে বরাবর আগলে রাখতে চেয়েছে নিজের থেকেও যে ওকে বড্ড বেশি ভালো বাসে সে। মায়ের পাশেই রাই গুটিসুটিয়ে দিয়ে বসে পড়ে, মাঝে মাঝে আড় চোখে বাকিদের মুখের অভিব্যক্তি পড়ার চেষ্টা করে, আঙ্কেল-আন্টি, মা, ছুটকি-তনু সবাই যেন চাপা হাসি আড়াল করছে শুধু ব্যতিক্রম রাই এর বাবা ওনার মুখের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে ওনার অসন্তুষ্টি। আর ওদিকে বুদ্ধু টা মাথা নিচু করে বসে আছে আর এক হাতে আরেক হাতের আঙ্গুল গুলো ঘসে যাচ্ছে, উহহ দেখে মনে হচ্ছে যেন সে কনে আর সবাই তাকে দেখতে এসেছে। ইচ্ছে করছে উঠে গিয়ে ওর কান দুটো টেনে দিতে, একটু জড়িয়ে ধরতে, গালে ছোট্ট চুমোতে ভরিয়ে দিতে। ধ্যাত... এসব কি ভাবছে রাই, যেন তর সইছে না এতদিন অপেক্ষা করতে পারলো আর আজ একটু চাহনিতেই সব অপেক্ষার বাঁধ ভেঙে গেল। ছি ছি রাই তুই মেয়ে মানুষ একটু তো লজ্জা বলতে কিছু রাখ, এমন করে কেউ ভাবে নাকি.... নিজের মনে মনেই রাই কথা বলতে থাকে।
রুদ্রর কেমন জানি লাগছে একটা হাসফাস ভাব মনের ভিতর কাজ করছে, অবাধ্য মনে বান এসেছে ইচ্ছে হচ্ছে আরেকটু রাই কে দেখতে, ওতোটুকু দেখাতে যে মনের আশ যেন মিটছে না। ক্লান্ত পথিকের মত সহস্র ক্রোশ পথ পাড়ি দিয়ে যখন জলাধারের নাগাল পায় তখন যেন সমস্ত তৃষ্ণা এসে জমা হয় তেমনি করেই আজ চোখের মনের আত্মার সব তৃষ্ণা যেন একত্রে জমা হয়েছে আরেকটা বার দেখার জন্য মন টা কেমন আনচান করছে, এত উতলা মন নিয়ে কি ঠিক ভাবে বসে থাকা যায় নাকি। মনের সাথে শরীরটাও উশখুশ করছে, যেন বাহানা খুঁজে চলেছে আরেকবার সামনের দিকে তাকিয়ে প্রাণভরে রাই কে দেখতে। ইশশশ তখন ওমন বোকার মত কাজ না করলে এখন এতটা আনইজি লাগতো না, কি জানি মা বাবা কি না কি ভাবছে। ওদিকে ছুটকি তনু দুটো যে খুঁচা খুঁচি করছে ওদের জন্য স্বাভাবিক ভাবে বসতেও পারছে না, কি হচ্ছে নিজের সাথে নিজেই বুঝতে পারছে, আগে তো কখনো এমন হয় নি একজন কে এক নজর দেখবে তার জন্য এত তাল বাহানা তো আগে কখনো করতে হয় নি ওকে তাহলে আজ কেন এমন হচ্ছে। কতবছরের সাধনার সিদ্ধি লাভ করার মত করে তাকে সামনে পেয়ে কই তাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে দিবে, না সে এখানে বসে বসে লুকিয়ে একনজর প্রেয়সীকে এক নজর দেখার রনকৌশল সাজাতে হচ্ছে। না আর পারছে না রুদ্র, এ এক ভীষণ জ্বালা চোখের সামনে বসে আছে কিন্তু দু চোখ ভরে তাকে দেখা হচ্ছে না। যা হবার হবে সাহসী সৈনিকের মত কামানের সামনে দাড়িয়ে গোলা মোকাবেলা করার মত অটুট মনোবল বুকে জমিয়ে একটু আড় চোখে তাকাতেই রাইয়ের চোখে চোখ পড়ে যায় রুদ্রের, পলকেই আবার দৃষ্টি নেমে আসে নিচে, যেন চুরি করে ওকে দেখতে গিয়ে ওর চোখে ধরা পড়ে যাবার লজ্জা ওকে পেয়ে বসেছে ধ্যাত এখনি ওকেও তাকাতে হলো আরেকটু পড়েও তো তাকাতে পারতো। না না আর ওদিকে তাকানো হবে না।
বিজয় চৌধুরী এতক্ষণ গম্ভীর হয়ে বসেছিলেন, স্ত্রীর কয়েকদিনের চেষ্টা ফলে উনি রুদ্রের ফ্যামিলির সামনে আসতে রাজি হয়েছিলেন। উনার চেষ্টা এখনো সেই একই নিজের পছন্দ করা ছেলের সাথে বিয়ে দেয়া, কোন মতে আজকে এদের এড়িয়ে যেতে পারলেই বাঁচে। কিন্তু মেয়েটা হঠাৎ করে এতোটা একরোখা হয়ে উঠলো কি করে কে জানে, আগের বাবার কথার উপর কোন কথা বলার সাহস ছিল না আর সেই মেয়ে নিজের পছন্দ মতো বিয়ে করার সিদ্ধান্তে একটা অনড় কি করে, সব ঐ বখাটে ছেলেটার জন্য। এমন বাজে ছেলের সাথে থাকলে যে কারো অধপতন তো হবেই। কিন্তু এই ছেলেকে আবার পেলো কোথায় ও, শহরের চলে আসার পর তো রাই কে সবসময়ই নজরে রাখতো যেন কারও সাথে মিশতে না পারে তাহলে এতবছর পর আবার কোথা থেকে উদয় হলো। না এভাবে চুপচাপ বসে থাকলে তো চলবে না, কিছু একটা করে সব জানতে তো হবে।
-(রুদ্রের দিকে তাকিয়ে)তা তুমি কি করছো এখন আই মিন কিসে জব করছো?
-(রুদ্র অন্যমনস্ক হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল, পাশে বসা মায়ের হালকা ধাক্কায় সম্বিত ফেরে) আমি একটা ওয়েল নোন কনস্ট্রাকশান কোম্পানিতে প্রজেক্ট ইনচার্জ পদে চাকরি করছি। রাই ও ঐ কোম্পানিতেই আছে।
-আমার মেয়ে তো ম্যানেজার পদে আছে, তুমি কি মনে করো তুমি ওকে বিয়ে করার মত যোগ্য?
-(রুদ্র উনার গলার টোন শুনেই বুঝতে পারে ওকে অপমানের স্বরেই কথা টা বলছে, বাকিরা সবাইও এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না, রাই তো ওর বাবার উপর রেগেই গেছে) আপনি কি বলতে চাইছেন সেটা হয়তো বুঝতে পারছি। যদি বলেন চাকরির যোগ্যতার কথা তবে আমি বলবো আমার দক্ষতা অনুযায়ী আমি আরও বেটার জব করতে পারি এমন অফার অনেক এসেছে কিন্তু আমি এখানে রয়ে গেছি। আর যদি মানুষ হিসেবে যোগ্য কিনা জানতে চান তবে আমাকে আগে জানতে হবে বাকিটা তারপর আপনিই বলবেন। হ্যা মানুষ হিসেবে অনেক ভুল ক্রটি আছে, আমি শতভাগ নিষ্কলুষ সেটা কখনই দাবি করবো না। তবে একজন সন্তান, একজন বন্ধু, একজন সহকর্মী হিসেবে আমি আমার শতভাগ টাই দেবার চেষ্টা করি আর সেটা ভবিষ্যতেও থাকবে।
বিজয় চৌধুরী এমন ভাবে প্রতিত্তোর আসবে আশা করে নি, এখন কি জিজ্ঞেস করবে সেটা মনে মনে সাজাতে থাকে।
-(পাশ থেকে অবিনাশ বাবু ব্যাপারটা একটু সামাল দিতে বলে উঠে) রুদ্র যেই কোম্পানিতে আছে পূর্বে এই কোম্পানি আমাদের বিপদে অনেক হেল্প করেছে, আমার অসুস্থতার সময় বাবু কলেজে পড়ে তখন সংসারের হাল ধরার জন্য ওর কিছু একটা করার দরকার ছিল সেই সময়ে ওকে ওরা চাকরি দিয়েছে। ওদের কাছে আমাদের অনেক ঋন তাই আমিই ওকে বলেছি যত ভালো অফারই আসুক না কেন এই কোম্পানি না চাওয়া পর্যন্ত ও যেন এই চাকরি টা না ছাড়ে। নইলে অনেক বিদেশি কোম্পানি ওকে হাই প্রোফাইল চাকরি অফার করেছে চাইলেই যেতে পারতো। আমার ছেলে বলে বলছি না কমার্শিয়াল দৃষ্টিতেই বলছি রুদ্রের সেই দক্ষতা আছে সেটা বাকি যে কোম্পানি গুলো আছে তাদের ওর উপর নজর দেখেই বুঝা যায়।
-(রাই এর নিজের বাবার উপর রাগ হয় খুব, রুদ্র কে কোন ভাবেই ছোট হতে দিতে চায় না সে) বাবা আমিও কিন্তু নিজের দক্ষতা থেকে ম্যানেজার হই নি, ওটা তো তোমার সুপারিশ ছিল সেটা আমার ভালো করেই জানা। আর ওর পদ দিয়ে ওকে জাজ করা যাবে না, আমাদের বস তো রুদ্র কে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারে না, সবকিছুতেই ওর মতামত সবার আগে নেয়। রুদ্রের ফিল্ড পারফরম্যান্স খুব ভালো আমাদের সব ইনভেস্টরস আর ক্লাইন্টরা চায় যেন ও সবটা দেখাশুনা করে। আমাদের এই সেক্টরে সব কোম্পানি ওকে জিনিয়াস হিসেবেই চিনে, ও কোন ডিল হাতে নিলে সেটা আর কারও হাতে যাবার চান্স নেই।
[/HIDE]