What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মন্দের ভালো by nextpage (1 Viewer)

[HIDE]




আমি জোয়ার-ভাটায় ভাসতে থাকা
শূন্য তরি
আমার নোঙর তো নেই মাঝিও নেই
ভয়ে মরি
সব অবাধ্য ঢেউ আছড়ে পড়ে
আমার ভেলায়
সব থেমে গেছে হারিয়ে গেছে
অবহেলায়
আমার অবহেলায়..




কতক্ষণ ওভাবে এক পলকে তাকিয়ে ছিল জানা নেই, যখনি বাস্তবতা পাশ কেটে আবার ফিরে আসে তখনি দ্রুত নজর সরিয়ে আবার নিজের জায়গায় বসে পড়ে রুদ্র। রুদ্রের ওভাবে তাকিয়ে থাকায় যতটা শান্তির পরশ পেয়েছিল এখন যেন ততটাই লাজে মরে যাচ্ছে রাই। ইশ ওমন করে কেউ তাকিয়ে থাকে নাকি, তেমন সাজগোজ করে নি তাতেই ওভাবে হ্যাংলার মত তাকিয়ে ছিল যেন চোখ দিয়েই গিলে নিবে। কই এতদিন তো সামনেই ছিল একটিবারের জন্য এমন করে তাকায় নি যদি একটাবার এমন করে দেখতো তবে তো ঠিকি চিনে নিতে পারতো, ইচ্ছে করছে চোখ দুটো গেলে দেই। কখনো কখনো মনে হতো এই বুঝি ওকে হারিয়ে ফেলবো কিন্তু আজ মনের কোনে অন্যরকম প্রশান্তির ঢেউ উঠেছে সেই ঢেউ যত শঙ্কা ভয় ছিল সব দূরে সরিয়ে দিয়েছে, ও তো চায় রুদ্র যেন সবসময় ওকে এমন করেই দেখতে থাকুক প্রিয়তমের এমন চাহনি তে যে কি সুখ সেটার অাভাস যে লেগেছে প্রেমিকার হৃদয়ে। আজ যেন অন্য এক রুদ্র কে দেখেছে রাই শান্ত মুখ, স্থির চোখ আর সেখানে অনেক অপেক্ষার পর পাওয়া কোন সুখের পরিতৃপ্তি, ভালবাসার অপার সম্ভার। এই রুদ্র কেই তো রাই চেয়ে এসেছে, নিজের করে নিতে চেয়েছে বরাবর আগলে রাখতে চেয়েছে নিজের থেকেও যে ওকে বড্ড বেশি ভালো বাসে সে। মায়ের পাশেই রাই গুটিসুটিয়ে দিয়ে বসে পড়ে, মাঝে মাঝে আড় চোখে বাকিদের মুখের অভিব্যক্তি পড়ার চেষ্টা করে, আঙ্কেল-আন্টি, মা, ছুটকি-তনু সবাই যেন চাপা হাসি আড়াল করছে শুধু ব্যতিক্রম রাই এর বাবা ওনার মুখের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে ওনার অসন্তুষ্টি। আর ওদিকে বুদ্ধু টা মাথা নিচু করে বসে আছে আর এক হাতে আরেক হাতের আঙ্গুল গুলো ঘসে যাচ্ছে, উহহ দেখে মনে হচ্ছে যেন সে কনে আর সবাই তাকে দেখতে এসেছে। ইচ্ছে করছে উঠে গিয়ে ওর কান দুটো টেনে দিতে, একটু জড়িয়ে ধরতে, গালে ছোট্ট চুমোতে ভরিয়ে দিতে। ধ্যাত... এসব কি ভাবছে রাই, যেন তর সইছে না এতদিন অপেক্ষা করতে পারলো আর আজ একটু চাহনিতেই সব অপেক্ষার বাঁধ ভেঙে গেল। ছি ছি রাই তুই মেয়ে মানুষ একটু তো লজ্জা বলতে কিছু রাখ, এমন করে কেউ ভাবে নাকি.... নিজের মনে মনেই রাই কথা বলতে থাকে।



রুদ্রর কেমন জানি লাগছে একটা হাসফাস ভাব মনের ভিতর কাজ করছে, অবাধ্য মনে বান এসেছে ইচ্ছে হচ্ছে আরেকটু রাই কে দেখতে, ওতোটুকু দেখাতে যে মনের আশ যেন মিটছে না। ক্লান্ত পথিকের মত সহস্র ক্রোশ পথ পাড়ি দিয়ে যখন জলাধারের নাগাল পায় তখন যেন সমস্ত তৃষ্ণা এসে জমা হয় তেমনি করেই আজ চোখের মনের আত্মার সব তৃষ্ণা যেন একত্রে জমা হয়েছে আরেকটা বার দেখার জন্য মন টা কেমন আনচান করছে, এত উতলা মন নিয়ে কি ঠিক ভাবে বসে থাকা যায় নাকি। মনের সাথে শরীরটাও উশখুশ করছে, যেন বাহানা খুঁজে চলেছে আরেকবার সামনের দিকে তাকিয়ে প্রাণভরে রাই কে দেখতে। ইশশশ তখন ওমন বোকার মত কাজ না করলে এখন এতটা আনইজি লাগতো না, কি জানি মা বাবা কি না কি ভাবছে। ওদিকে ছুটকি তনু দুটো যে খুঁচা খুঁচি করছে ওদের জন্য স্বাভাবিক ভাবে বসতেও পারছে না, কি হচ্ছে নিজের সাথে নিজেই বুঝতে পারছে, আগে তো কখনো এমন হয় নি একজন কে এক নজর দেখবে তার জন্য এত তাল বাহানা তো আগে কখনো করতে হয় নি ওকে তাহলে আজ কেন এমন হচ্ছে। কতবছরের সাধনার সিদ্ধি লাভ করার মত করে তাকে সামনে পেয়ে কই তাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে দিবে, না সে এখানে বসে বসে লুকিয়ে একনজর প্রেয়সীকে এক নজর দেখার রনকৌশল সাজাতে হচ্ছে। না আর পারছে না রুদ্র, এ এক ভীষণ জ্বালা চোখের সামনে বসে আছে কিন্তু দু চোখ ভরে তাকে দেখা হচ্ছে না। যা হবার হবে সাহসী সৈনিকের মত কামানের সামনে দাড়িয়ে গোলা মোকাবেলা করার মত অটুট মনোবল বুকে জমিয়ে একটু আড় চোখে তাকাতেই রাইয়ের চোখে চোখ পড়ে যায় রুদ্রের, পলকেই আবার দৃষ্টি নেমে আসে নিচে, যেন চুরি করে ওকে দেখতে গিয়ে ওর চোখে ধরা পড়ে যাবার লজ্জা ওকে পেয়ে বসেছে ধ্যাত এখনি ওকেও তাকাতে হলো আরেকটু পড়েও তো তাকাতে পারতো। না না আর ওদিকে তাকানো হবে না।


বিজয় চৌধুরী এতক্ষণ গম্ভীর হয়ে বসেছিলেন, স্ত্রীর কয়েকদিনের চেষ্টা ফলে উনি রুদ্রের ফ্যামিলির সামনে আসতে রাজি হয়েছিলেন। উনার চেষ্টা এখনো সেই একই নিজের পছন্দ করা ছেলের সাথে বিয়ে দেয়া, কোন মতে আজকে এদের এড়িয়ে যেতে পারলেই বাঁচে। কিন্তু মেয়েটা হঠাৎ করে এতোটা একরোখা হয়ে উঠলো কি করে কে জানে, আগের বাবার কথার উপর কোন কথা বলার সাহস ছিল না আর সেই মেয়ে নিজের পছন্দ মতো বিয়ে করার সিদ্ধান্তে একটা অনড় কি করে, সব ঐ বখাটে ছেলেটার জন্য। এমন বাজে ছেলের সাথে থাকলে যে কারো অধপতন তো হবেই। কিন্তু এই ছেলেকে আবার পেলো কোথায় ও, শহরের চলে আসার পর তো রাই কে সবসময়ই নজরে রাখতো যেন কারও সাথে মিশতে না পারে তাহলে এতবছর পর আবার কোথা থেকে উদয় হলো। না এভাবে চুপচাপ বসে থাকলে তো চলবে না, কিছু একটা করে সব জানতে তো হবে।

-(রুদ্রের দিকে তাকিয়ে)তা তুমি কি করছো এখন আই মিন কিসে জব করছো?

-(রুদ্র অন্যমনস্ক হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল, পাশে বসা মায়ের হালকা ধাক্কায় সম্বিত ফেরে) আমি একটা ওয়েল নোন কনস্ট্রাকশান কোম্পানিতে প্রজেক্ট ইনচার্জ পদে চাকরি করছি। রাই ও ঐ কোম্পানিতেই আছে।
-আমার মেয়ে তো ম্যানেজার পদে আছে, তুমি কি মনে করো তুমি ওকে বিয়ে করার মত যোগ্য?

-(রুদ্র উনার গলার টোন শুনেই বুঝতে পারে ওকে অপমানের স্বরেই কথা টা বলছে, বাকিরা সবাইও এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না, রাই তো ওর বাবার উপর রেগেই গেছে) আপনি কি বলতে চাইছেন সেটা হয়তো বুঝতে পারছি। যদি বলেন চাকরির যোগ্যতার কথা তবে আমি বলবো আমার দক্ষতা অনুযায়ী আমি আরও বেটার জব করতে পারি এমন অফার অনেক এসেছে কিন্তু আমি এখানে রয়ে গেছি। আর যদি মানুষ হিসেবে যোগ্য কিনা জানতে চান তবে আমাকে আগে জানতে হবে বাকিটা তারপর আপনিই বলবেন। হ্যা মানুষ হিসেবে অনেক ভুল ক্রটি আছে, আমি শতভাগ নিষ্কলুষ সেটা কখনই দাবি করবো না। তবে একজন সন্তান, একজন বন্ধু, একজন সহকর্মী হিসেবে আমি আমার শতভাগ টাই দেবার চেষ্টা করি আর সেটা ভবিষ্যতেও থাকবে।

বিজয় চৌধুরী এমন ভাবে প্রতিত্তোর আসবে আশা করে নি, এখন কি জিজ্ঞেস করবে সেটা মনে মনে সাজাতে থাকে।

-(পাশ থেকে অবিনাশ বাবু ব্যাপারটা একটু সামাল দিতে বলে উঠে) রুদ্র যেই কোম্পানিতে আছে পূর্বে এই কোম্পানি আমাদের বিপদে অনেক হেল্প করেছে, আমার অসুস্থতার সময় বাবু কলেজে পড়ে তখন সংসারের হাল ধরার জন্য ওর কিছু একটা করার দরকার ছিল সেই সময়ে ওকে ওরা চাকরি দিয়েছে। ওদের কাছে আমাদের অনেক ঋন তাই আমিই ওকে বলেছি যত ভালো অফারই আসুক না কেন এই কোম্পানি না চাওয়া পর্যন্ত ও যেন এই চাকরি টা না ছাড়ে। নইলে অনেক বিদেশি কোম্পানি ওকে হাই প্রোফাইল চাকরি অফার করেছে চাইলেই যেতে পারতো। আমার ছেলে বলে বলছি না কমার্শিয়াল দৃষ্টিতেই বলছি রুদ্রের সেই দক্ষতা আছে সেটা বাকি যে কোম্পানি গুলো আছে তাদের ওর উপর নজর দেখেই বুঝা যায়।

-(রাই এর নিজের বাবার উপর রাগ হয় খুব, রুদ্র কে কোন ভাবেই ছোট হতে দিতে চায় না সে) বাবা আমিও কিন্তু নিজের দক্ষতা থেকে ম্যানেজার হই নি, ওটা তো তোমার সুপারিশ ছিল সেটা আমার ভালো করেই জানা। আর ওর পদ দিয়ে ওকে জাজ করা যাবে না, আমাদের বস তো রুদ্র কে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারে না, সবকিছুতেই ওর মতামত সবার আগে নেয়। রুদ্রের ফিল্ড পারফরম্যান্স খুব ভালো আমাদের সব ইনভেস্টরস আর ক্লাইন্টরা চায় যেন ও সবটা দেখাশুনা করে। আমাদের এই সেক্টরে সব কোম্পানি ওকে জিনিয়াস হিসেবেই চিনে, ও কোন ডিল হাতে নিলে সেটা আর কারও হাতে যাবার চান্স নেই।




[/HIDE]
 
[HIDE]

রাই কে ওমন ভাবে ওর হয়ে কথা বলতে দেখে অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে রুদ্র। রাই খেয়াল করে রুদ্র চাতকের মত ওর দিকে তাকিয়ে আছে, শুধু ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু একটা বলে রুদ্রের উদ্দেশ্যে সাথে সাথেই রুদ্র দৃষ্টি নামিয়ে নেয়।

-হুম সেটা বুঝলাম, কিন্তু এসব আবেগের কথাবার্তায় তো জীবন চলে না। জীবন চলে বাস্তবতায়, আর সেখানে বিয়ের পর অনেক দায় দায়িত্ব আছে। আমার মেয়েকে যে আয়েসি জীবন যাপনে বড় করেছি ওর চাহিদার খেয়াল রেখেছি সেটা কি ও পারবে? মানে সহজ কথায় ফাইন্যান্সিয়াল দিকটা সামলাতে পারবে( চিবিয়ে চিবিয়ে কথা গুলো বিজয় চৌধুরী বলতে থাকে)

-(রুদ্র কিছু একটা বলতে যাবে তখনি অবিনাশ বাবু ওকে থামিয়ে দেয়) আপনি বোকার মত কথা বলছেন তো, সেই যুগ কি এখনো আছে নাকি? আপনার মেয়ে নিজেই চাকরি করে ভালো একটা ইনকাম ওর আছে। ও কেন আরেকজনের উপর ডিপেন্ড করতে যাবে, হ্যাঁ দুজনে মিলে আরও ব্যাটার কিছু করতে পারবে ভবিষ্যতে। সব কিছু দুজনে ভাগ করে নিবে সেটা যাই হোক না কেন। তাতে তো রুদ্রের উপর ডিপেন্ড করতে হবে না দরকার হলে রুদ্র ওর উপর ডিপেন্ড করতে পারে আপনার কথা অনুযায়ী যেহেতু ওর ইনকাম কম। একজন আরেকজন কে সাপোর্ট না করতে পারলে সম্পর্কের কি লাভ বলুন তো। মেয়েকে শিক্ষিত করে লাভ কি বলুন সে যতি ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্ট না হতে পারে।

বিজয় চৌধুরী মুখ চুপসানো বেলুনের মত হয়ে যায়, কোথায় ভেবেছিল ওদের অপদস্ত করবে এখন ওদের উত্তরে নিজেই অপদস্ত হয়ে যাচ্ছে। আর ঘর শত্রু বিভীষণের মত নিজের মেয়ে তো ওদের হয়ে কথা বলছে। তবে সে যে খবর নেয় নি তা নয়, যেদিন মেয়ের মুখে নাম টা শুনেছিল সেদিনই খবর নেবার জন্য লোক লাগিয়েছিলেন। খবর অনুযায়ী ছেলেটা খারাপ না, আর মার্কেটে প্রচুর সুনামও আছে, যে কোম্পানি নাম মাত্র কাজ করতো আগে সেটাই এখন এই ছেলের বদৌলতে টপ টেন কোম্পানির মাঝে একটা। যে কাজে হাত দেয় সেটাই সবার নজরে চলে আসে। যদি কোন ভাবে এই ছেলেকে নিজের বিজনেসে আনতে পারে তবে আর বিজয় চৌধুরী কে পেছন ফেরে দেখতে হবে না, ওনার অনেক দিন থেকেই টার্গেট কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগ করা।

-ঠিক বলেছেন দাদা, আমার মেয়ে ফেলনা নাকি। আর ও নিজে যখন পছন্দ করে সবদিক বিবেচনা করেই করেছে। সম্পর্ক তো আর টাকা পয়সা দেখে হয় না, হয় দুজনের বুঝাপড়ায় আর ভালোবাসায়।(পাশ থেকে দেবীকা চৌধুরীর এমন কথায় বিজয় চৌধুরীর চুপসানো বেলুন টা যেন আরও চুপসে গেছে)

-সেটাই তো দেখছি, আগে থেকেই সব ঠিক করা আছে। এখানে আমার সবকথাতেই উল্টো মানে ধরা হচ্ছে। সোজা করে বলতে গেলে আমার ইচ্ছে আমার পছন্দ মত মেয়ের বিয়ে দেয়া। কিন্তু মেয়ে মা বাকিরা সবাই যেহেতু এই বিয়েতেই রাজি সেখানে আমার মতামতের প্রয়োজন আছে কি? তারপরও আমার মত চাইবেন তাই আমার মতামত জানিয়ে দিলাম, মেয়ে যদি এখানে সুখী হয় তবেই সেটাই হোক।


এতক্ষণ চুপ করে বসে থেকে অবস্থা পর্যবেক্ষণের করে কি হচ্ছে সেটা বুঝতে থাকা দুই ছোট সদস্য ছুটকি আর তনু হঠাৎ করেই হুররেএএএএ বলে চিৎকার করে উঠে। ওরা দুজনে মিলে যেটা করতে চাইছিলো সেটা এমন করে হয়ে যাবে সেটা বুঝতেও পারে নি। কোথায় ওরা ভেবেছিল আবার কোন একটা বাহানা করে হলেও দুজনকে সামনাসামনি এনে দাঁড় করাবে এবার আর প্ল্যানে কোন গড়বড় হবে না আর তাতেই পুরনো রাই আর রুদ্রের দেখা মিলবে যেখানে সমস্ত রাগ অভিমান সব ভেঙে গিয়ো নতুন করে সব শুরু হবে। সকাল থেকে ওরা একটা টেনশনে ছিল সেই সাথে তনুদের বাসায় আসার পর থেকে একের পর এক ঘটনা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিলো। এরপর রাই এর ওদের সামনে আসা, রুদ্রের ওমন করে তাকিয়ে থাকা আর তারপর বিজয় চৌধুরীর ওমন বাঁকা প্রশ্ন সব কিছু যেন ওদের কাছে গোলকধাঁধার মত লাগছিল কি থেকে কি হচ্ছে হিসেবটা মেলাতে পারছিলো না। কিন্তু যখনি তনুর বাবা নিজের সম্মতির কথা জানালো তখনি ওদের আনন্দ দেখে কে, ওদের করতে চাওয়া কাজ টা এমন ভাবে ঘটে যাবে সেটা একটিবার আন্দাজও করতে পারেনি। দুটো মিলে লাফালাফি শুরু করে দিলো, বাকিরা যে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। ওদের খুশির রেশ টা বাকিদের মাঝেও ছড়িয়ে যেতে সময় নিলো না বেশি। ছুটে গিয়ে দুজনে রাই আর রুদ্র গলা জড়িয়ে ধরলো।


রাই চোখের ভাষায় অঞ্জলি দেবীর দিকে ইশারা করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করলো, অঞ্জলি দেবীও হাতের ইশারায় রাই কে আশ্বস্ত করলো।

-আমরা বড় রা এখানে কথা বলি ওরা ছোট রা না হয় ওদের মত করে একটু সময় কাটাক।

-(অঞ্জলি দেবীর কথায় দেবীকা চৌধুরীও সায় দেয়) ঠিকি বলেছেন দিদি।(তনু ছুটকির দিকে তাকিয়ে) যা তরা ভিতরের ঘরে গিয়ে তোদের মত করে কথা বল।(রাই কে ইশারা) তুই ও যা রুদ্র কে বাসাটা ঘুরিয়ে দেখা।

তনু ছুটকি ততক্ষণে ওদের মত করে ওদিকে কোন একটা রুমে চলে গেছে। রাই ও উঠে ওর রুমের দিকে যেতে গিয়ে পিছনে তাকিয়ে রুদ্র কে আসতে না দেখে দাড়িয়ে থাকে। রুদ্র কি করবে ভাবতে থাকে এখানেই বসে থাকবে নাকি রাই এর সাথে ভিতরে যাবে বুঝতে পারে না। কি কথা বলবে সেটাই মাথায় আসছে না সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। ছেলেকে নির্জীব মত বসে থাকতে দেখে রুদ্র কে রাই এর সাথে যাবার জন্য ইশারা করে। কিছুটা দুনামোনা মন নিয়েই উঠে দাড়ায়, রুদ্র কে উঠে দাঁড়াতে দেখে মুচকি হাসি হেসে হাত নেড়ে রুদ্র কে ওর দিকে আসতে বলে।
রাই এর পেছন পেছন একটা রুমে ঢুকে রুদ্র, রুমের ডেকোরেশন থেকে বুজা যাচ্ছে ওটা রাই এর রুম। রুদ্র একটু ভিতরে আসতেই রাই এগিয়ে গিয়ে রুমের দরজা টা হালকা করে ভেজিয়ে আসে। দরজা ভেজাতে দেখে রুদ্র একটু ভড়কে যায় সামনে কি ঘটতে পারে সেটার একটা আন্দাজ করার চেষ্টা করছে৷ রুদ্রের দিকে ফিরে তাকাতেই রাই কে কেমন অচেনা অচেনা লাগছে। একটু আগেও কেমন হাস্যোজ্জ্বল ছিল এখন কেমন একটা রাগান্বিত ভাব নিয়ে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন ও দুটো চোখ নয় গনগণ জ্বলতে থাকা উনুন যার উত্তাপে রুদ্রের শরীর পুড়ে যাচ্ছে। একটু একটু করে রাই এগিয়ে আসছে আর রুদ্র পিছিয়ে যাচ্ছে। পেছাতে পেছাতে হঠাৎ দেয়ালে পিঠ ঠেকে রুদ্রের পলক ফেলতেই ওর সামনে রাই দাড়িয়ে। ও যেন আরও এগিয়ে আসছে রুদ্রের দিকে, রুদ্র নড়তে পারছে পা দুটোতে কেমন জড়তা কাজ করছে। রাই এর গরম নিঃশ্বাস ও নিজের বুকের কাছে অনুভব করতে পারছে, একটু আগেও যে চোখ মোহনীর মত আকর্ষণ করছিলো সেই চোখ গুলো লালচে হয়ে আছে।


[/HIDE]
 
[HIDE]


-মোবাইল টা কই তোমার, বের করো তাড়াতাড়ি।

-(হঠাৎ করে মোবাইল চাওয়ার কারণ বুঝতে না পেরে আমতা আমতা করেই বলে) আমার মোবাইল কেন? ওটা দিয়ে কি হবে?

-এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না, যেটা বলেছি সেটা করো (কথাটা শেষ করেই বা হাতে জোরে চিমটি কাটে রাই)

-উহহ,(হাতে চিমটি কাটার যন্ত্রণায় মুখের মানচিত্র বদলে যায়) দিচ্ছি দিচ্ছি, এটার জন্য এমন করে চিমটি কাটতে নাকি কেউ?(পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে রাই এর হাতে দেয়) নখ বসে গেছে।

-চিমটি না আমি কামড়েও দিতে পারি দিয়ে দেখাবো? মোবাইলের লকটা কে খুলে দিবে।

-(মোবাইলের লকটা খুলে দিতে দিতে) না সেটার দরকার নেই।

-আগের সিম টা কই? আর নতুন নাম্বারের আমার নাম্বার টা ব্লক করার সাহস হলো কি করে।(ধমকানো সুরে)

-(শুরুতেই এমন প্রশ্ন আসবে ভাবতে পারেনি, আমতা আমতা করে বলে উঠে) আ...মার আমার সিম আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই ফেলে দিয়েছি।

-(রাগে মুখটা লাল হয়ে উঠছে) ওহ, তাহলে এখন আমার ইচ্ছে হচ্ছে বারান্দায় নিয়ে ধাক্কা দিয়ে তোমাকে নিচে ফেলে দিতে, দেব?

-(চমকে উঠে) কেন আমাকে ফেলে দিবে কেন, আমি কি তোমার....

কথাটা শেষ হবার আগে রুদ্রের মুখ চেপে ধরে রাই আরেকটু এগিয়ে আসে, ওর মুখটা এখন রুদ্রের মুখের কাছে। হতবাক নয়নে রুদ্র অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে রাইয়ের মুখের দিকে
-হুম তুমি শুধু আমার, আর কথাটা যেন মনে থাকে। যদি একটু এদিক সেদিক হইছে তাহলে একদম...

হঠাৎ করেই রাই এর ফোনটা বেজে উঠে, হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে ফোনটা নিতেই দেখে জয় ফোন করেছে কলটা রিসিভ করে
-কিরে তোকে নাকি আজ ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছে একবার বললি না তো।

-হুম বলবো বলবো করে আর বলা হয়ে উঠেনি। দেখতে এসে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। মেজাজ টা একটু গরম আছে, হাতের সামনে পাত্র দাড়িয়ে আছে ওটাকে মার্ডার ও করে ফেলতে পারি। পরে কথা হবে এখন রাখি।

-(রাই এর এমন রূপ দেখে রুদ্রের গলা শুকিয়ে আসছে) এসব কি ধরণের কথা বার্তা, আমি কি করেছি যে মার্ডার করার কথা আসছে।

-কি করো নাই সেটা বলো। তখন ওমন করে তাকিয়ে ছিলে কেন?

-কই তাকিয়ে ছিলাম, না তো।

-ওহ তাকিয়ে ছিলে না? তাহলে এখন তাকিয়ে থাকবে না হলে চোখ দুটো গেলে দেব।

-এমন দস্যুর মত আচরণ করছো কেন তুমি তো আগে এমন ছিলে না(রাইয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে রুদ্র)

-আমার কথা মনে আছে তাহলে? আমি তো ভেবেছিলাম ভুলেই গেছো হয়তো। নইলে এতদিনেও সামনে থাকার পরও চিনতে পারলে না। আমার যে কতটা কষ্ট লেগেছে সেটা বুঝতে পারবে না।

-হুম, সেটার জন্য ক্ষমা চাইতে রাজি আছি, সত্যি বললে ওমন করে তোমার দিকে কখনো তাকাই নি, নইলে ঠিকি চিনে নিতাম। অফিসের আসার পর থেকে যে গম্ভীর আর রাগ রাগ ভাব নিয়ে থাকতে ম্যাডামের দিকে তাকাতেই ভয় পেতাম।

ওমন করে মানে কেমন করে তাকানো? তুমি কি তাহলে
আরও মেয়ে দেখো বুঝি। তাদের দিকে কেমন করে তাকাও দেখাও আমাকে।

-না মানে তেমন কিছু না, আমি আবার মেয়ে দেখবো কেন?? (রাই এর হাতে থাকা রুদ্রের ফোনটা বেজে উঠে, তনয়া ফোন করেছে। তনয়ার নাম টা দেখেই রাই এর মেজাজ টা গরম হয়ে যায়। আর রুদ্র ভাবে ফোনটা আসার আর সময় পেল না। রাই কলটা রিসিভ করে)

-রুদ্র, গতকাল যে ফাইল টা দিয়েছিলে সেটার হিসেব টা মেলাতে পারছি না। একটু সময় করে আসতে পারবে, তুমি একটু যদি দেখে দিতে।

-(রাইয়ের মেজাজের কি অবস্থা সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝতে পারছে রুদ্র, কিন্তু কি করবে সেটাই বুঝতে পারছে না। রাই চড়া গলায় বলে উঠে) তোমার রুদ্র এখন ব্যস্ত আছে ও আসতে পারবে না, আসতে চাইলেও পা ভেঙে দেব।(কথাটা শেষ করেই কল টা কেটে দেয়)

-রাই প্লিজ প্লিজ প্লিজ রাগ করো না। আসলে অফিসে আমিই আমাকে স্যার বলতে না করি তাই আর কি।

-আমি রাগ করিনি। অফিসে তো তোমাকে কেউ স্যার ডাকতে দেখি না, আর মেয়েদের আড্ডায় হট টপিক তো তুমি, সবাই তোমার উপরে ক্রাশ। জাদু টাদু করো নাকি।

-তুমি গোয়েন্দা গিরি করতে নাকি? সবার সাথে সারাদিন থাকি তবু আমিও তো এতো কিছু জানি না। আর তুমি রুমে বসেই এত খবর কি করে রাখো।

-করতে হয়, নইলে তোমাকে ধরে রাখবো কি করে। দেখি হাত টা দেখি(রুদ্রের বা হাত টা কাছে টেনে নেয়)

-কেন আবার কি হয়েছে।

-এত কথা বলো কেন একদম চুপ। (রুদ্রের বা হাতে যেখানে চিমটি দিয়েছিল সেখানটাতে সত্যিই নখের দাগ বসে গেছে, সেখানে হালকা করে ফু দিয়ে চুমো খায়) আচ্ছা তুমি আমাকে ভালোবাসো?

-এত খবর নিয়েছো এটা নেও নি। কি মনে হয়?

-না ভালো বাসো না, যদি বাসতে ঠিক একটাবার জড়িয়ে ধরতে, কত কাঠখড় পুড়িয়েছি আজকের দিনটার জন্য এতোটুকু তো আমি আশা করতেই পারি, তাই না।

-(রুদ্র ভাবে সত্যিই তো এতো বড় ভুল কি করে হলো, আসলে সকাল থেকে ও নিজেই তো ঘোরের মাঝে আছে আর রাই কে দেখার পর তো নিজের সব কিছুই ভুলে যাচ্ছে বারবার। এত বছর পর নিজের মানুষটাকে কাছে পেয়েও এখনো কাছে টেনে নিতে পারে নি। আগের যত রাগ অভিমান ছিল সব নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে। এতক্ষণ ধরে একটু ভয় হচ্ছিলো রুদ্রের কখন না আবার সেই ভিতরের রুদ্র টা বেড়িয়ে আসে, তখন তো ও নিজেকে সামলে রাখতে পারে না। তবে আজ মিরাকল হয়েছে এখন পর্যন্ত তেমন কিছুই হয় নি, রুদ্র ভাবছে হয়তো রাই সামনে আছে বলেই এমন টা হচ্ছে। তবে তো রাই কে আর দূরে থাকতে সে দিবেই না।) ভুল হয়ে গেছে, আমার না সবকিছু কেমন স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে তাই ঠিকমত কথাও বলতে পারছি না।(দু হাত প্রসারিত করে রাই কে নিজের আরও কাছে আসার আহবান জানায় সে)

-এত ভুল করলে কিভাবে চলবে স্যার।(রাই নিজেকে রুদ্রের বুকের সাথে মিশিয়ে দেয়, কান পেতে ওর হৃৎস্পন্দন শুনতে থাকে। অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করছে ওর মনে এমন এক শান্তির আবাস পেয়েছে যে মাথা টা সরাতে ইচ্ছে করছে না৷ ভালোবাসার মানুষ কাছে থাকলে সেটা পথ্যের মত কাজ করে সব কষ্ট যন্ত্রণা মান অভিমান রাগ ক্ষোভ নিমিষেই উধাও করে দেয়)

-(রাই এর স্পর্শে মনের সব সংশয় এক এক করে দূর হয়ে যাচ্ছে, ওর জড়িয়ে ধরায় এমন এক সুখ হচ্ছে যেটা আগে কখনো হয় নি, সেভাবে কখনো ভেবেই দেখা হয় নি, এ জড়িয়ে ধরায় কোন কাম ভাব নেই নেই কোন শারীরিক উত্তেজনা, যতটুকু আছে সবটা প্রগাঢ় নির্মল ভালোবাসার হাতছানি, একে অন্যের শরীরে উষ্ণতায় ভাগ বসাছে তবে সেই উষ্ণতায় শরীর জাগে না জেগে উঠে মন, মনের কুঠরিতে জমে থাকা অফুরান প্রেমখনি) রাই এর কপালে ছোট করে একটা চুমো খায়।



[/HIDE]
 
[HIDE]


এখন ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে, (হঠাৎ রাই এর মনে কি খেলে গেল কে জানে, ও রুদ্রের শার্টের বোতাম খুলতে থাকে)

-(রাইয়ের এমন কান্ডে রুদ্র হতভম্ব হয়ে যায়) এই কি করছো কেউ এসে যাবে, পাগল হলে নাকি। কেউ দেখলে কি ভাববে বলো।

-(রাই কোন বারণ শুনে না, উপরের দিকের কয়েকটা বোতাম খুলে কাঁধের দিক থেকে শার্ট টা একটু সরিয়ে নেয়, এখনো সেখানে কামড়ের দাগ টা রয়ে গেছে সেখানটাতে রাই হাত বুলাতে থাকে)

-আবার কামড়ে দিবে নাকি?

-দিলে দিবো কোন সমস্যা(রাই সেই ক্ষত দাগটাতে ঠোঁট নামিয়ে এনে চুমো খায়, কোমল ঠোঁটের স্পর্শে রুদ্রের সারা শরীরে শিহরণ জেগে উঠে। (রাই শার্টের বোতাম গুলো লাগাতে থাকে)

-(রুদ্র দুহাতে রাইয়ের মুখ খানা তুলে ধরে, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। রাইয়ের কপাল ঠেকে থাকে রুদ্রের কপালে, দু জোড়া চোখ খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। রাইয়ের খাড়া নাকের ডগায় প্রায়ই রুদ্রের ছোয়া লেগে যাচ্ছে, একে অন্যের নিঃশ্বাস টা অনুভব করতে পারছে। এতবছরের জমানো ভালোবাসা সবটা আজই দিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে, ওর চোখ মুখে লেগে থাকা মায়ার আবেশে যেন রুদ্র হারিয়ে যাচ্ছে। না এ হারানো তে কোন ভয় নেই নেই কোন সংশয় যেটুকু আছে সবটা ভালোবাসাময়। আজ শুধু ওকে দেখতেই ইচ্ছে করছে, এতবছরে কল্পনায় যে ছবিটা একেছিল সেটার সাথে মিলিয়ে দেখছে, না কল্পনার চেয়েও বেশি সুন্দর বাস্তবের রাই। এমন স্নিগ্ধ শীতল অপরূপ মুখটার কাছে আজ রুদ্রের সেই ভেতরের মানুষটা আর বেড়িয়ে আসার সাহস পাচ্ছে না, কোথায় যেন গুম হয়ে গেছে। এটাই বোধ হয় ভালবাসার শক্তি)


অনেকক্ষন ধরে রুদ্র আর রাইয়ের কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছে না, কোন কথাও বলছে না। ওদের একটু ভড়কে দিতে হঠাৎ করেই ছুটকি আর তনু ঘরে ঢুকেই রাই আর রুদ্র কে দেখে দুহাতে চোখ ঢেকে নেয়

-(হিহিহিহি করে হাসতে হাসতে দুজনেই একসাথে বলে উঠে) আমরা কিন্তু কিছু দেখি নি, শুধু তোমাদের খুঁজতে এসেছিলাম। তোমরা থাকো আমরা চলে যাচ্ছি।

তনু আর ছুটকির আওয়াজ শুনে রুদ্রের বাঁধন ছেড়ে রাই একটু দূরে চলে আসে, কিছুটা লজ্জা ওকে পেয়ে বসেছে যতই হোক ওরা দুটো ছোট বোন ওদের ওমন করে দেখে কি রা কি ভাবছে কে জানে। আর ঐ হ্যাংলা টাও কিভাবে জড়িয়ে ধরিয়েছিল আর সে নিজেও তো একদম মিশে গিয়েছিল ওর বুকের সাথে। রুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে ও অন্যদিকে তাকিয়ে আছে আর বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছে। পরিস্থিতির সাথে একটু ধাতস্ত হয়ে রাই তেড়ে যায় তনু আর ছুটকির দিকে

-তোরা দুই পাজি এখানে কি করিস হুম, ঘরে ঢুকলে নক করে ঢুকতে হয় জানিস না। ইচ্ছে করছে কান দুটো ছিড়ে দেই( দুই হাতে ছুটকি আর তনুর কান ধরে)

-ইশশ দিদি ছাড় লাগছে তো, আমরা কি সাধে এসেছি নাকি। মা বলেছে তোদের খাবার জন্য ডাকতে। আর এতদিন তো নক করে ঢুকি নি তাই ওটা মনে ছিল না তবে এখন থেকে দেখছি নক করেই ঢুকতে হবে।

-(পাশ থেকে ছুটকিও বলে উঠে) কিরে দাদা আমাকেও কি নক করে ঢুকতে হবে? তোর ঘরে তাহলে আর আমার অধিকার থাকবে না কি তাইতো (খিলখিল করে হাসতে থাকে)

-তরা দুটো খুব পেকেছিস মার খাবি বলে দিলাম (রুদ্র মুচকি হাসির সাথে হালকা শাসিয়ে উঠে)

-দে দে দুজন এক হয়েছিস এখন কত কি সহ্য করতে হবে, কান একটা করে তো খালি আছে ওটা তুই ধর।

-(ওদের কথা শুনে রাই আর হাসি আটকে রাখতে পারে না, ঝকঝকে দু পাটি দাঁত বের করে হাসতে থাকে) অনেক পাকনামি হয়েছে এখন যা তোরা আমরা আসছি।

-(কান থেকে হাত সরিয়ে নিতেই ছুটকি আর তনু একটু দূরে সরে গিয়ে) চল চল আমরা চলে যাই, তাদের কোন কাজ বাকি থাকতে পারে, একটু স্পেস তো দরকার( কথাটা শেষ করেই দুটো দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়, রাই ও পিছন পিছন একটু দৌড়ে গিয়ে দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে আসে)

-(রুদ্রের কাছে এসে) ওমন করে জড়িয়ে ধরতে হয় নাকি, দেখতো ওরা দুটো দেখে নিল।

-বাহ! তুমিই তো বললে জড়িয়ে ধরতে তাই ধরলাম এখন আবার আমার দোষ। তখন যদি জড়িয়ে না ধরতাম তখন তো আবার ঠিকি বকাবকি করতে।



-থাক এত সাফাই গাইতে হবে না, সুবোধ ছেলের মত চলো এখন। মা ডাকছে খাবার জন্য ওরা দুটো আবার কি না কি বলে ওখানে গিয়ে কে জানে।

যেমন করে রাইয়ের পেছন পেছন এসেছিল তেমন করেই আবার বসার ঘরের দিকে যেতে থাকে ওরা। বাকিরা আগেই খাবার টেবিলে বসে ছিল রাই আর রুদ্র দুজনেই বিপরীতমুখী দুটো চেয়ারে বসে পড়ে।




হঠাৎ শুয়া থেকে উঠে বসে রুদ্র, চোখটা লেগে এসেছিল খুব বাজে একটা স্বপ্নে ঘুমটা ভেঙে গেছে৷ স্বপ্নের রেশটা মনে এখনো রয়ে গেছে, খুব দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে, হার্টবিট বেড়ে গেছে আর কোন এক অজানা ভয়ে ফুল স্পিডে ফ্যান চলতে থাকা সত্ত্বেও সারা শরীর দরদর করে ঘামছে। এখনো বাস্তবতায় ফিরে আসতে পারছে না রুদ্র, বারবার চোখ বন্ধ করে কি ঘটেছে সেটা মেলাবার চেষ্টা করছে। কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে এখন রুদ্র বুঝতে পারছে যেটা এতক্ষণ ওকে ওমন ভাবে ভীত করে তুলেছিল সেটা একটা বাজে স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে আসে। রাইদের বাসা থেকে ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গিয়েছিল বাসায় এসে জামাকাপড় চেঞ্জ করে একটু শুয়েছিল কখন যে চোখ লেগে গেছে টের পায় নি।


মোবাইলটা একটু দূরে ছিল উঠে গিয়ে নিয়ে আসতেই দেখে রাই মেসেজ করেছিল, নাম্বার টা তখন রাই নিজেই সেভ করে দিয়েছিল মনে হয়। রাই এর মেসেজ টা দেখার সময় রুদ্রের কেমন একটা অদ্ভুত অস্বস্তি লাগতে থাকে। ভেতরের রুদ্র টা জেগে উঠতে চাইছে, রুদ্র দু হাত শক্ত করে মুঠ করে নেয়, মাথাটায় ভীষণ রকমের যন্ত্রণা করছে। চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে ভিতরের রুদ্রটাকে আটকাতে চেষ্টা করতে থাকে। শরীরে ভয়ংকর রকমের শক্তি কাজ করছে, নিজেকে এক জায়গায় স্থির রাখতে পারছে না, পা দুটো ফ্লোরের সাথে চেপে ধরেছে। না আর পারছে না রুদ্র, ভেতরটাকে আটকাতে পারছে না।
রুদ্র নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতে থাকে, আগে যাই হয়েছে হোক এখন সে জানে রাই ওকে ভালোবাসে ওর জন্য এতবছর অপেক্ষা করে ছিল এখন এতটা কাছে এসে আবার দূরে ঠেলে দিতে পারবে না৷ যা ভুল হবার হয়ে গেছে আর ভুল করা যাবে না। রাইকে আর কোন মতেই রুদ্র হারাতে চায় না, যেমন করেই হোক ওকে আকড়ে ধরে রাখতে চায়।
ভেতরের রুদ্র ওর সামনে দাড়িয়ে হাসছে, না স্বাভাবিক কোন হাসি নয় সেটা, সেই হাসিতে কটাক্ষের সংমিশ্রণ স্পষ্ট। যেন বলতে চাইছে কিসের ভালোবাসা? কার ভালোবাসা? রাই তোকে ভালোবাসে কিন্তু তুই ওকে ভালোবাসিস? যদি ভালোবাসতি তবে এতোদিন যে ওর উপরে তোর রাগ ছিল অভিমান ছিল অভিযোগ ছিল তাহলে সেগুলো কেন? ওর উপরের রাগ থেকে যে তুই এতোদিন ওতো মেয়ের সাথে মেলামেশা করলি সেগুলো কেন? তাহলে তোর ভালোবাসা কই? রাই কে সব কিছু বলেছিস, বলতে পারবি তো নাকি সবকিছু লুকিয়ে রাখবি এতোদিন যেমন লুকিয়ে রেখেছিস। কারও কাছে নিজের এতবড় একটা অংশ লুকিয়ে রাখাটা কি ভালোবাসার মাঝে পড়ে, নাকি এটা ধোঁকা দেয়া। তোর সব জানার পরেও কি ও তোকে তেমন করেই ভালোবাসবে? না বাসবে না তোকে ছেড়ে চলে যাবে, এমন কোন মানুষকে কেউ ভালোবসে না রুদ্র কেউ ভালোবাসে না তোকেও বাসবে না। তোর নিজের উপর বিশ্বাস আছে নাকি তোর ভালোবাসার উপর বিশ্বাস আছে, কোনটাই নেই তোর। তুই হাওয়ায় ভেসে থাকা পাখির পালকের মত, তোর নিজের বলে কিছু নেই। দেখ পরীক্ষা করে তুই বলতে পারিস কিনা, তুই পারবি না কখনই বলতে পারবি না। আর তোর অতীত শুনে ও তোকে কখনই ক্ষমা করবে না, এটা ক্ষমা করার মত না তুই রাই কে আবারও হারিয়ে ফেলবি বরাবরের মতই হারিয়ে যাবে তোর কাছে। তাহলে কি তুই মিথ্যা বলে ধরে রাখতে চাস তাহলে সেটা তো ওকে ঠকানো ছাড়া আর কিছুই না।

[/HIDE]
 
[HIDE]

রুদ্র আর সহ্য করতে পারছে দু হাতে মাথা চেপে ধরে মুঠোভর্তি চুল টেনে ধরে, ও আর কিছুই ভাবতে পারছে না। প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছে মাথায় আর বুকের ওপর ভারী কিছু চেপে বসার কষ্ট। ইচ্ছে হচ্ছে মাথাটা ভারী কিছু দিয়ে থেতলে দিতে। বালিশে মাথা চেপে ধরে গা এলিয়ে দেয় বিছানায়। পাশেই পড়ে থাকা মোবাইলের শব্দে মাথা তুলে তাকায়, এতোক্ষণের ঘোর ভাবটা কেটে গেছে নিজের সম্বিত ফিরে পেয়েছে রুদ্র। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে রাই ফোন করেছে। রুদ্র ঠিক করে আজই সব বলে দিবে যা হবার হোক যদি ভালোবাসা সত্যি হয় তবে ওর রাই ওরই থাকবে তবুও এই বোঝাটা নিয়ে আর চলতে পারছে না সে। শেষ মূহুর্তে কল টা রিসিভ করে কানে মোবাইলটা ধরে

-কোথায় ছিলে এতক্ষণ, মেসেজ এর রিপ্লাই করলে না কল ও রিসিভ করতে এতো দেরি।

-(রুদ্রের গলা কাঁপতে থাকে, অজানা আতংকে গ্রাস করে নিচ্ছে গলার স্বর তবুও আজ বলতেই হবে ওকে) বাআআথরুমে... ছিলাম, তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।

-যা বলার দেখা হলে সামনাসামনি বলবে কেমন। এখন যেটার জন্য ফোন করেছি সেটা বলি পরশু সময় বের করে রেখ। বিয়ের তো মাত্র দিন পনের বাকি শপিং এ যেতে হবে সাথে তনু ছুটকিও সাথে তোমার যেন মনে থাকে।

-ঠিক আছে।

-এখন রাখি পরে কথা হবে, বাই। উম্মাহহহহ..



[/HIDE]
[HIDE]


বড় একটা কমিউনিটি সেন্টারে রাই রুদ্রের গায়ে হলুদের আসর বসেছে। পুরো সেন্টার টা নানা রঙের ফুল, বাহারি রঙের পর্দা আর ঝলমলে আলোতে সাজানো হয়েছে, এক পাশে বড় একটা স্টেজ করা হয়েছে সেখানেই রাজকীয় আসন বসানো হয়েছে পাত্র পাত্রীর জন্য৷ স্টেজের সামনেই সাড়ি সাড়ি চেয়ার পাতা আছে অথিতিদের জন্য। সিলিং জুড়ে বড় বড় ঝাড়বাতি ঝুলছে, দুপাশ জুড়ে রঙ বেরঙের বেলুন ঝুলানো হয়েছে। অতিথিরা যে পথে আসবে তার দুপাশে সাড়ি সাড়ি ফুল গাছের টব বসানো আছে তাতে রঙিন ছোট ছোট এলইডি বাতিতে ঝলমল করছে। সেন্টারের রুম গুলো সব মেয়েদের দখলে সবাই সেখানে শেষ মূহুর্তের সাজে ব্যস্ত, কোন এক রুমে হয়তো রাইও সাজতে বসেছে। মাঝে মাঝে তনু আর ছুটকির দেখা পাওয়া যাচ্ছে সাউন্ড অপারেটর এর কাছে, ওদের নাচার জন্য লম্বা একটা গানের লিস্ট আগেই ধরিয়ে দেয়া হয়েছে এরপরও ওদের চেকিং মাঝে মধ্যেই চলছে। দুজনের গায়েই ভারী চুমকির কাজ করা হলুদ রঙের লেহেঙ্গা, মেহেদীর নকশা আকা হাতে ভর্তি চুরির ঝনঝনানি। দূরে একপাশে যেখানে খাবারের আয়োজন হয়েছে যেখানে সেখানে অবিনাশ বাবু শেষবারের মত ক্যাটারিং এর লোকদের সবটা বুঝিয়ে দিচ্ছে। সাউন্ড চেকের জন্য যখনি সাউন্ড বক্স গুলো বেজে উঠছে পুরো সেন্টার টাই জন্য কেঁপে উঠছে ওদের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যান্ডপার্টি লোক গুলোও বাজনা বাজিয়ে চলেছে। মাঝখানে বড় আলপনার পাশেই জল ভরার কলসি গুলো যেখানে রাখা সেখানেই দেবীকা চৌধুরী আর অঞ্জলি দেবীর দেখা পাওয়া গেল হাসি মুখে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে। মাঝে মাঝে এক রুম থেকে আরেক রুমে কয়েকজন কে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যাচ্ছে, ছোট্ট বাচ্চা গুলোর সাজ সবার আগেই শেষ হয় আর তাই ওদের দলটা একপাশে হুড়োহুড়িতে লেগে পড়েছে, জামাকাপড়ের যে বেহাল দশা করছে তাতে মায়েদের কাছে যে বকুনি খাবে সেটা চিরন্তন সত্য। রুদ্র কয়েকজন পরিচিত বন্ধুর সাথে স্টেজের পাশেই কয়েকটা চেয়ার দখল করে বসে আছে। ওদের সাজসজ্জা নিয়ে এত আয়োজন নেই, সত্যি বলতে বিয়েতে মেয়েদের সাজসজ্জা আর জামাকাপড়, গহনা, পার্লার বা অন্যান্য বিষয়ে যত খেয়াল রাখা হয় এর ফিফটি পার্সেন্টও ছেলেদের দিকে রাখা হয় না। আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতেই থাকে করে কনে আর বাকি মেয়েরা আর নারীরা। ছেলেদের আলাদা তেমন কোন আকর্ষণ থাকে না।

রুদ্র চুপচাপ বসে বাকিদের কথা শুনছিলো হঠাৎ দুটো হাত ওর চোখ চেপে ধরে, সেই হাতের চুড়ির শব্দ ওর কানে আসছে। কে হতে পারে সবার সামনে আন্দাজে ঢিল ছোঁড়া বোকামি হবে, এটা রাই না নিশ্চয়ই তবে কে তনয়া কিংবা রিতা হতে পারে। রূপালির হাত একটু খড়খড়ে কিন্তু এই হাতটা তো মসৃণ আর কোমল, খিলখিল করে হাসছে সেই নারী এই হাসির কন্ঠ আগে কখনো শুনেনি সেই। দু হাত তুলে অপারগতা প্রকাশ করতেই হাত দুটো সরে যায় চোখের সামনে থেকে, চোখ মেলে তাকাতে একজন কে দেখতে পায় মুখটা তার একদম অচেনা নয় কিন্তু অনেকদিন পর দেখছে অনেক বছর পর আবার সেই মানুষটার সাথে দেখা হলো

-জয়..... (মুখে নামটা নিতে নিতেই জড়িয়ে ধরে বাল্যকালের বন্ধুকে, কোন অভিমানে কোন ক্ষোভে এতবছর নিজের প্রাণপ্রিয় বন্ধুর কাছ থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিল সেটার উত্তর এই রুদ্রের কাছে নেই, কখনো ছিলও না। এতবছর পর বন্ধুকে কাছে পেয়ে দুজনের চোখই ভিজে উঠেছে) আমি তো তোকে জানায় নি কিছুই তবে কেমন করে জানলি?

-রাই জানিয়েছে ওর সাথে অনেক আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল, তোকে সারপ্রাইজ দিবো বলেই ওকে কিছু বলতে বারণ করেছিলাম।

-(হঠাৎ চোখে ধরা মেয়েটার কথা মনে পড়তেই পেছন ফেরে তাকায়, বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়া কপালে সিঁদুর হালকা লম্বাটে মুখমন্ডল হাসির ঝিলিকে একজন কে দেখতে পায়, জয়ের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে) উনি কে চিনতে পারলাম না তো।

-তোকে পরিচয় করিয়ে দেই, ও আমার স্ত্রী পল্লবী, আর পল্লবী তোকে ভালো করেই চেনে। গতবছরই বিয়ে করেছি হঠাৎ করেই নইলে তোকে ঠিক জানাতাম।

-ইচ্ছে করেই বলিস নি যদি তোর সুন্দরী বউকে নিয়ে পালিয়ে যেতাম সেই ভয়ে ( পল্লবীর দিকে ইশারা করে)

-আমি কিন্তু এখনো আমার হ্যান্ডসাম দেবরের সাথে পালাতে রাজি আছি, রাই রাজি থাকলেই হলো ( রুদ্রের পেটের কাছে চিমটি কেটে কথাটা বলতেই হাসির রুল পড়ে যায়)

-সুন্দরী তুমি রাজি থাকলে রাই কে বাদ দিয়ে তোমকেই বিয়ে করে নেব বলে দিলাম...

-ভাই থাক একটাই বউ আমার, সেটাও যদি নিয়ে নিস তবে আমার কি হবে ( পল্লবী কে এক হাতে নিজের কাছে টেনে নেয় জয়)
একে একে নিজের অফিসের কলিগ আর নতুন কিছু বন্ধুদের সাথে জয়ের পরিচয় করিয়ে দেয়, এর মাঝেই তনু ছুটকির সাথে জয় আর পল্লবীর দেখা হয়ে যায় ওরা পল্লবী কে নিয়ে ভেতরের দিকে কোন একটা রুমে চলে যায় সেখানেই হয়তো রাই আছে। জয় আর রুদ্র হাটতে হাটতে কফি স্টলের দিকে এগিয়ে যায়, জয় খুব খুশি আজ রাই আর রুদ্র নিজেদের সব ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দুজনের ভালোবাসাকে জিতিয়ে দিয়েছে, জয় ও সেটাই চেয়েছিল আজ নিজেকে একটু ভার মুক্ত মনে হচ্ছে। কিন্তু রুদ্রের মুখ তো অন্য কথা বলছে, সবার সামনে হাসিমুখে কথা বলে যাচ্ছে ঠিকি কিন্তু ভেতরে কিছু একটা চেপে রেখেছে নিশ্চয়ই।



[/HIDE]
 
[HIDE]

সেদিন ঠিকই রুদ্র মনস্থির করে নিয়েছিল রাইয়ের সাথে দেখা হতেই সব কিছু বলে দিবে, যা হবার হবে সেটা পরে দেখা যাবে কিন্তু রাই কে না বলা পর্যন্ত সে কোনমতেই শান্তি পাচ্ছে না, ভেতরের রুদ্র ওকে স্বাভাবিক ভাবে থাকতেই দিচ্ছে না। যদি সব শোনার পর রাই অভিমান করে, দরকার হলে রাই এর পায়ে পড়ে ওকে মানাবার চেষ্টা করবে তবুও সব ওকে বলতেই হবে। নিজেকে তেমন করেই প্রস্তুত করে পরদিন শপিং এ যাবার আগে কিন্তু মানুষ ভাবে এক কিন্তু সেটার বাস্তবে ঘটে আরেক। যাবার পথেই রুদ্রেই সেই মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়, সেই ভয় টা আবার ওকে পেয়ে বসেছে। ভেতরের রুদ্র এবার ওকে ভয় দেখাতে শুরু করেছে, রুদ্রের দুর্বলতায় আঘাত করতে শুরু করেছে, রাইকে হারিয়ে ফেলার ভয় রুদ্রের মাথায় জেকে বসেছে। রুদ্র ভয় পাচ্ছে যদি সব সত্যি জানার পর রাই ওকে ছেড়ে চলে যায় তখন কি হবে? এতবছর পর যাকে কাছে পেয়েছে এখন যদি আবার তাকেই হারিয়ে ফেলে তবে রুদ্র কি করবে! ভেতরের রুদ্র তার খেলা শুরু করে দিয়েছে নিজের বশে নিয়ে এসেছে সব, ভালোবাসা কে ধরে রাখতে হলেও রুদ্রের জীবনের এই অন্ধকার অংশটা লুকিয়েই রাখতে হবে। তেমন যদি হয় তবে কোন বাঁধা আসলে প্রয়োজনে সেই বাঁধা টাকেই উপ্রে দিবে রুদ্র। নিজের মাঝের হিংস্রতা টা জেগে উঠছে, তবে কি কাউকে খুন করতেও মনে দ্বিধা জাগবে না রুদ্রের মনে। না রুদ্র আর নিজের সাথে লড়তে পারে না শেষমেশ নিজের সিদ্ধান্ত বদলে নেয়, রাই কে কিছুই বলবে না এই সম্পর্কে আপাতত না হয় লুকিয়েই রাখলো কিছুদিন, যদি পরে সম্ভব হয় তখন সবকিছু বলে দিবে এছাড়া আর কোন পথ দেখছে না রুদ্র।

এরপরও রুদ্র চেষ্টা করেছে রাই কে বলার কিন্তু রাই এর সামনে গিয়ে সবকিছু কেমন গুলিয়ে যায় ওর, কোথা থেকে শুরু করবে বা কি দিয়ে শুরু করবে সেটা বুঝতে পারে না। আবার যখনি রাই থেকে দূরে থাকে তখন অনুশোচনা ওকে ভেতর থেকে একটু একটু করে শেষ করে দিচ্ছে৷ কিন্তু রুদ্র কি করবে কোথায় যাবে সেটা বুঝতে পারে না কাউকে যদি একটু পাশে পেত তবে হয়তো রুদ্রের এই মানসিক অশান্তি টা একটু হলেও কমতো কিন্তু এমন সময় সবাই বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত রুদ্রের ভিতরে কি হয়ে চলেছে সেটা দেখার মত সময় কারও নেই। রুদ্র কিছু বলতেও পারছে না আবার না বলতে পারার ক্ষতটাও দিন দিন বড় হচ্ছে। কখনো ভাবে এভাবেই সারাজীবন এই কথা গুলো লুকিয়ে রাখবে আবার কখনো এই লুকিয়ে রাখাটা নিজেকে মানসিক ভাবে অপরাধী বানিয়ে দিচ্ছে। একদিন একদিন করে বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে কিন্তু রুদ্রের আর নিজের সেই অন্ধকার সময়ের কথা গুলো বলা হয়ে উঠে না।



[/HIDE]

[HIDE]

মেয়েদের দলটা বেড়িয়ে এসেছে সাথে অঞ্জলি দেবী দেবীকা দেবী আর বাকি আত্মীয় স্বজনরাো আছে, তনু আর ছুটকি সবার সামনে ওদের দুটোর ছবি তুলতে ব্যস্ত ফটোগ্রাফারদের একজন। এখন জল ভরার জন্য বের হবে সবাই, সাথে সাথেই ব্যান্ডপার্টির সানাই ঢোল বেজে উঠলো, বাজনার তালে তালে ছোট বাচ্চা গুলো কোমড় দুলানো শুরু হয়ে গেছে, বড়দের মাঝেও কেউ কেউ হালকা নাচের তালে কোমড় দুলাচ্ছে। এক এক করে সবাই বাহারি নকশা করা কলসি হাতে বেড়িয়ে পড়ছে ঘাটের উদ্দেশ্যে। জলভরা অনুষ্ঠানে ছেলেদের কোন কাজ নেই তাই ছেলেরা সবাই যে যার মত সেন্টারেই আড্ডা দিতে ব্যস্ত। মিনিট ত্রিশেক এর মাঝেই মহিলারা জল ভরা শেষে চলে আসে, সেন্টারের ভেতরে ঢুকতেই ব্যান্ডপার্টির বাজনার তালে সবাই নাচতে শুরু করে, সানাই আর বাশিতে একের পর এক হিট গানের সুর তোলা হচ্ছে আর সেটার তালে ঢোলে বাড়ি পড়তেই এমনিতেই ভিতর থেকে সবার নাচের ভাবটা বের হয়ে আসে। ছোট বড় সব সবাই যে যার মত হাত পা নাচিয়ে কোমর দুলিয়ে নেচে চলেছে। ফটোগ্রাফার আর সিনেমাটোগ্রাফার দের দলটা ভিন্ন ভিন্ন এঙ্গেল থেকে সেই আনন্দের মূহুর্ত গুলো ক্যামেরা বন্দী করে নিচ্ছে। মাথার উপরে ড্রোন উড়ছে, সেখান থেকেও সবার আনন্দ উল্লাস গুলো ক্যামেরার লেন্সে ধরা দিচ্ছে। একটানা নাচের শেষে সবাই যখন হাঁপিয়ে উঠেছে তখন বাজনা বন্ধ হয়, হালকা জিরিয়ে নিয়ে ছুটকি আর তনু মেয়েদের দলটাকে নিয়ে ভেতরে দিকে চলে যায়, ওদের সাথেই শাড়ির আঁচল কোমড়ে পেঁচিয়ে পল্লবীও আছে। একদেখাতেই সবার সাথে সুন্দর মিশে গেছে, এমন মিশুক মানুষ ছাড়া কোন অনুষ্ঠান বাড়ি জমে উঠে না ঠিক মত। ও ভালো নাচতেও জানে এতক্ষণ সবার সাথে বেশ তাল মিলিয়ে নেচে গেছে।


সাউন্ড বক্স গুলো বেজে উঠলো ভেতরের ঘর থেকে রাই বেড়িয়ে আসলো সাথে তনু ছুটকি পল্লবী, সবার চোখে কালো চশমা। সাউন্ড বক্সে বাজানো "কালা চশমা" গানের তালে সবাই নাচের স্টেপ মিলিয়ে স্টেজের দিকে এগিয়ে আসছে, পাশেই রুদ্র জয় আর ওদের গ্রুপ টাও আছে ওদের সবার চোখেও কালো চশমা। ছেলেরা সবাই টিয়ে রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে আর মেয়েরা গোলাপি রঙের শাড়ি। দুটো রঙ পাশাপাশি দারুন মানিয়েছে। নাচতে নাচতে সবাই স্টেজের সামনে জলভরা কলসি গুলোর এখানে গিয়ে দাড়িয়েছে। দুটো পিড়ির উপর রাই আর রুদ্র কে দাড় করিয়ে বাকিরা গোল হয়ে দাড়িয়েছে। সাউন্ড বক্সে একটা গান বেজে উঠে, গানটা সিলেট অঞ্চলের বিয়ের অনুষ্ঠানে ধামাইল গান হিসেবে বিখ্যাত




"""জলে গিয়াছিলাম সই
কালা কাজলের পাখি দেইখা আইলাম কই।।
সোনার ও পিঞ্জরা সই গো, রুপার ও টানগুনি
আবের চান্দুয়া দিয়া পিঞ্জরা ঢাকুনি।।
পালিতে পালিসলাম পাখি দুধ কলা দিয়া।।
এগো যাইবার কালে বেঈমান পাখি না চাইল ফিরিয়া।।
ভাইবে রাধারমণ বলে পাখি রইলো কই।।
এগো আইনা দে মোর প্রাণ পাখি পিঞ্জরাতে থুই""""



গানের তালে তালে রাই আর রুদ্র কে মাঝে রেখে সবাই গোল হয়ে হাততালি আর কোমড়ে হাত রেখে ঘুরে ঘুরে নাচতে থাকে। রাইও মাঝে মাঝে বাকিদের সাথে যখনি কোমর দুলিয়ে উঠে তখনি সবাই তুমুল হর্ষধ্বনিতে পুরো সেন্টার প্রকম্পিত করে তুলে। রাইয়ের মাথায় গাদা ফুলের সাখে রজনী গন্ধার মালা জড়ানো, টুকটুকে লাল রঙের শাড়ি হাতে ফুল দিয়ে বানানো চুড়ি কানের ফুলের দুলে আর ফুলের টিকলি অসম্ভব সুন্দর লাগছে। রাই প্রায়ই রুদ্রের দুই হাত ধরে ওকেও নাচার জন্য বলছে, রুদ্র এক দুবার কোমড় দুলিয়েই ক্ষান্ত দিচ্ছে।


গানের তালে তালে রাই আর রুদ্র কে মাঝে রেখে সবাই গোল হয়ে হাততালি আর কোমড়ে হাত রেখে ঘুরে ঘুরে নাচতে থাকে। রাইও মাঝে মাঝে বাকিদের সাথে যখনি কোমর দুলিয়ে উঠে তখনি সবাই তুমুল হর্ষধ্বনিতে পুরো সেন্টার প্রকম্পিত করে তুলে। রাইয়ের মাথায় গাদা ফুলের সাখে রজনী গন্ধার মালা জড়ানো, টুকটুকে লাল রঙের শাড়ি হাতে ফুল দিয়ে বানানো চুড়ি কানের ফুলের দুলে আর ফুলের টিকলি অসম্ভব সুন্দর লাগছে। রাই প্রায়ই রুদ্রের দুই হাত ধরে ওকেও নাচার জন্য বলছে, রুদ্র এক দুবার কোমড় দুলিয়েই ক্ষান্ত দিচ্ছে।




[/HIDE]
 
[HIDE]

নাচের পর্ব শেষে বর কনের গায়ে হলুদের পর্ব শুরু হলো, পাঁচ জন এয়ো স্ত্রী একত্রে হলুদ সরিষা আর গিলা বাটতে লাগলো, প্রথমে ছেলের গায়ে হলুদ দিয়ে তারপর মেয়েকে দেয়া হবে। রাই আর রুদ্র পাশাপাশি দুটো পিড়িতে বসে আছে, মাঝে মাঝে সবার অলক্ষ্যে টুকটাক খুনসুটিও করছে তবে বেশির ভাগটাই রাই এর তরফ থেকে। ওদের পাশেই থালা ভর্তি নানা রঙের আবির রাখা, হলুদ পর্ব শেষেই আবির রঙের খেলা হবে সবটাই ছুটকি আর তনুর প্ল্যান অনুসারে করা হচ্ছে৷ দুই বাড়ির দুই ছোট সদস্যের আবদারের কমতি নেই। প্রথমেই বড় রা রুদ্রের গায়ে হলুদ ছোয়ালো, একে একে অঞ্জলি দেবী, দেবীকা দেবী, অবিনাশ বাবু, বিজয় চৌধুরী হলুদ ছোঁয়ার পর বাড়ির অন্যান্য আত্মীয় স্বজনরাও হলুদ ছোঁয়ানো চলছে। হঠাৎ পল্লবী দু হাত ভর্তি হলুদ নিয়ে রুদ্রের পুরো মুখ মাখিয়ে দিলো অতর্কিত আক্রমণ টা সামলেই রুদ্রও পল্লবীর হাত ধরে নিয়ে ওকেও হলুদ মাখিয়ে দেয়৷ এর মাঝেই তনয়া, রিতা ওরাও এসে গেছে সবাই হৈ-হুল্লোড় করে একে অন্যকে হলুদ মাখানো শুরু করলো। অন্যদিকে বড় রা রাই কে হলুদ ছোঁয়াচ্ছে, রুদ্রের পল্লবীর সাথে হলুদ মাখামাখির দৃশ্য রাইয়ের মনে জেলাস ফিল করায় সবার আড়ালে রুদ্রের উরুতে চিমটি কাটে রাই। ব্যাথা সহ্য করে পাশে তাকাতেই দেখে বড় বড় চোখ করে রাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ছোট বড় সবাই একে অন্যকে হলুদ মাখানো নিয়ে হট্টগোল শুরু করে দিয়েছে। রিতা সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠে রুদ্র যেন রাই কে হলুদ মাখিয়ে দেয় কিন্তু হাত দিয়ে না৷ রুদ্র বুঝতে পারে রিতা কিসের ইঙ্গিতে কথাটা বলেছে কিন্তু সবার সামনে একটু ইতস্তত বোধ করছে, এদিকে রাই ও রুদ্রকে না করছে ওর ইচ্ছে থাকলেও সবার সামনে লজ্জা লাগছে। কিন্তু বাকিরা নাছোড়বান্দা হলুদ ছোঁয়াতেই হবে, শেষমেশ রুদ্র রাইয়ের দিকে ঘুরে বসে ওর গালে লেগে থাকা হলুদ রাইয়ের গালে লাগিয়ে দেয়। সাথে সাথে সবাই একসাথে চিৎকার করে উঠে, রুদ্রও রাইকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে পড়ে।

হলুদ পর্ব শেষে তনু ছুটকি আবির নিয়ে হাজির, একে অন্যের দিকে আবির ছুড়ে দিচ্ছে, আবির রঙে সবাই রঙিন হয়ে উঠেছে বাতাসে উড়তে থাকা আবির রঙে বাতাস টাও রঙিন লাগছে।


গানের তালে সবাই নাচাতে শুরু করলো, উড়তে থাকা আবিরে আশপাশটা ঝাপসা হয়ে গেছে এই ফাঁকে রাই রুদ্রের হাত ধরে খানিকটা নাচতে শুরু করে। যে যার মত করে নেচে চলেছে গানের বিট গুলোই এমন যে মন থেকেই নাচের উদ্রেক বেড়িয়ে আসে। রিতা তনয়া জয় পল্লবী ছুটকি তনু ওদের বন্ধু বান্ধবী রা সবাই নাচছে। বড়রাও কম যায় না তারাও তাদের পুরনো দিনের স্টেপেই নাচছে। একের পর এক হিট গান গুলো বেজে চলেছে।

নাচতে নাচতে সবাই একটু ক্লান্ত এবার ফটোসেশানের পালা, রাই আর রুদ্রকে স্টেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওদের সামনেই টেবিলে একটা কেক রাখা তার পাশেই দুধের নাড়ু, সন্দেশ, নানা পদের মিষ্টি। তার সামনেই আপেল-কমলা- আনারস-আনার বিভিন্ন নকশা করে সাজানো হয়েছে। প্রথমে রুদ্রের মা আর রাই এর মা ধান দুর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করিয়ে মিষ্টি মুখ করায় এরপর ওদের বাবারা আসে, সবার সাথেই ছবি তোলার পর্বও চলতে থাকে। একে একে অন্য আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবরাও স্টেজে উঠে মিষ্টি মুখ করানো ছবি তোলা খুনসুটি এসব চলতে থাকে। রিতা সবার চেয়ে আলাদা ও রাই রুদ্রের মাঝখানে গিয়ে বসে পড়ে আর নানা ভঙ্গিমায় ছবি তুলতে শুরু করে ওর শিশুসুলভ আচরণে সবার মুখে হাসি ফুটিয়ে দেয়। জয় আর পল্লবীর খুনসুটিতে পুরো আসর জমজমাট, রুদ্র তো জয় কে সরিয়ে দিয়ে পল্লবী কে ওর পাশে এনে বসায়, পাশে বসা রাই মেকি অভিমানে গাল ফুলানোর অভিনয় করে। এর মাঝেই তনু ছুটকিদের গ্রুপ তাদের পরিবেশনা শুরু করে, অতিথিরা সবাই তাদের আসনে বসে পড়ে। সাউন্ড বক্সে এক এক করে কাঙ্ক্ষিত গান গুলো বেজে উঠছে আর তার সাথেই ছুটকি তনু পল্লবী আর ওদের বান্ধবীরা নাচ পরিবেশন করছে, রিতা তনয়া ওরাও একটা গানে দারুণ কোমড় দুলিয়েছে। ফাঁকে ফাঁকে ছোট বাচ্চাদের আবদারে ওদের নাচার জন্যও গান বাজাতে হচ্ছে। ওদের কোন রেগুলার স্টেপ নেই মনের ইচ্ছে মত হাত পা ছুড়ছে মাথা ঝাঁকাচ্ছে, কয়েকজন তো ঘেমে নেয়ে একাকার মায়েরা টেনেও নিয়ে যেতে পারছে না, এই আনন্দটাই অনুষ্ঠান জমিয়ে তুলে। একপাশে খাওয়াদাওয়া শুরু হয়ে গেছে বিজয় চৌধুরী আর অবিনাশ রায় দুজনে অতিথিদের দেখভাল করছে। স্টেজে বসা রুদ্র আর রাই সবটা উপভোগ করে চলেছে, সবার জীবনেই এমন একটা আনন্দ উৎসবের স্বপ্ন থাকে ওদের সেটা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। সামনে রাখা আপেল কমলা অনারসের টুকরো রুদ্র রাইয়ের মুখে তুলে দিচ্ছে, লজ্জা ভরা দৃষ্টিতে রাই সেটা টুক করে মুখে নিয়ে নিচ্ছে।
ছোটদের নাচার পর্ব শেষেই ছুটকি তনু চেয়ার থেকে রুদ্রের আর রাই এর বাবা মা কে টেনে নাচের জায়গায় নিয়ে আসে। অনেক জোড়াজুড়ি করার পর পুরনো দিনের কিছু গানে অবিনাশ- অঞ্জলি, বিজয়-দেবীকা জুটির নাচ পরিবেশন হয়। নাচ শেষে সবাই তুমুল কড়তালিতে তাদের অনেক উৎসাহ জানায়। হালকা নাচের স্টেপে দুই জুটির নাচে পুরো অনুষ্ঠান রোমান্টিক আবহে মেতে উঠে। শেষ আকর্ষণ হিসেবে রাই আর রুদ্র কে নাচার জন্য বলা হয়, রাই এর আগ্রহ দেখে রুদ্র বুঝতে পারে এটা রাই এর প্ল্যান। দুজনের হাত ধরাধরি করে স্টেজ থেকে নেমে আসে
নাচ শেষে রাই এর হালকা লাজের আভায় হাসিমাখা মুখটার দিকে রুদ্র মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে। পাশ থেকে পল্লবী এসে চিমটি কাটে

-এখনি এতো তাকিয়ে থাকলে পরে যখন একা পাবে তখন না জানি কি করো।

-(পল্লবীর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে) কি করবো সেটা কি দেখতে চাও নাকি, চাইলে তোমার সাথে প্র্যাকটিক্যাল করে দেখিয়ে দেব।

-ইশশ সখ কতো।

রুদ্র আর রাই কে আবার জলভরা কলসি গুলোর সামনে পিড়িতে বসানো হয়, দুজনের গায়ে দুটো গামছা দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। পাঁচ জন এয়ো স্ত্রী উলুধ্বনির সাথে প্রথমে রুদ্রের পরে রাইয়ের মাথায় জল ঢালতে শুরু করে।

[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top