What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঝর্ণা The untold story( সম্পূর্ণ উপন্যাস) (2 Viewers)

[HIDE]

আগে এইদিকের সমস্ত ঝামেলা মিটে যাক তারপর না হয় তোমাদের বাড়িতে গিয়ে কথা বলা যাবে ! কিন্তু তার আগে তোমাদের বাড়িতে জানিয়ে দিও যে আমরা ব্রাম্ভন ! তোমাদের যেন কোনো আপত্তি না থাকে !
কানাই ঢক করে লাহিড়ীদাকে প্রণাম করলো !
- শালা জামাই হো তো আইসা ! শুশুরের সাথে বসে মাল খাচ্ছে আবার শশুরকে প্রণামও করছে ! চলো চলো মাল শেষ করে নেওয়া যাক !
কানাই বললো "আমি এখুনি আসছি !"
- কি চৈতালিকে খবর দিতে যাচ্ছো ?
- না না ! বাড়িতে ফোন করে কাল কলকাতা এয়ারপোর্টে গাড়ি আনার জন্য বলে দেবো ! তাহলে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না ! একটু হেসে কানাই বললো !
- এটা আমাদের মাথায় ছিলোনা ! যায় ভালো গাড়ি বোলো ! কারণ দু দুটো পেসেন্ট আছে আমাদের সাথে !
কানাই নিচে চলে গেলো ! যাবার আগে আমায় ডেকে বললো "এখনই চৈতালি বা মঞ্জুকে কিছুই জানাস না ! ওকে সারপ্রাইজ দেব ! আমার হাত দুটো ধরে আমাকে ধন্যবাদ জানালো কানাই !
আমি আর লাহিড়ীদা মালের আসরে ফিরে এলাম ! ঘোষদা জিজ্ঞাসা করলেন "কিসের এতো আলোচনা চলছিল ?"
- আরে কি বলবো তোমাদের ! আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেললাম !
সবাই হুরররে করে উঠে জামাই টা কে সেটা জিজ্ঞাসা করলো ! লাহিড়ীদা বললেন এখন না ! ক্রমশ প্রকাশ্য ! চলো চলো মাল ঢালো ! আজ আমাদের সবার খুব খুশির দিন ! হই হয় করতে করতে আমরা আরও দুপেগ মাল খেয়ে নিলাম ! কানাইকে আসতে দেখে লাহিড়ীদা বললেন "এসো জামাই তাড়াতাড়ি ! মাল সব শেষ হয়ে যাবে ! কানাই একটু লজ্জা পেয়ে এসে বসলো !
লাহিড়ীদা বললেন "এই দেখো আমার জামাই ! আর ঘটক হচ্ছে এই সুনন্দ ! " এসো জামাই এর নামে আরও এক পেগ হয়ে যাক !
সমীর রাজু ঘোষদা কানাইকে শুভকামনা জানালো !
- সুনন্দ আর কানাই তোমরা নিচে গিয়ে তোমাদের মুখেই ওদের এই খুশির খবরটা দিয়ে এসো তাড়াতাড়ি !
আমি আর কানাই তাড়াতাড়ি নিচে এসে কানাইয়ের সামনেই চৈতালিকে জড়িয়ে ধরলাম ! মঞ্জু মিতালি কমলদা সবাই অবাক !
কানাই তাড়াতাড়ি বলে উঠলো "বোকাচোদা নিজের টাকে জড়িয়ে ধরনা ! আমারটা কেন জরাচ্ছিস ? মনে মনে বললাম " তুই কি জানিস বোকাচোদা তোর বৌকে আমি আগে কতবার চুদেছি ! " কিন্তু মুখে বললাম "এরপর তোর বৌ হয়ে যাবে ! তখন তো জড়াতে পারবোনা ! "
মঞ্জু মিতালি চৈতালি আমার এই ব্যবহার দেখে পুরোপুরি অবাক হয়ে গেছে !
আমি চিল্লিয়ে বললাম "লাহিড়ীদা ওদের বিয়েতে মত দিয়ে দিয়েছেন !
এবার কানাইয়ের সামনেই চৈতালি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো "থ্যাংক ইউ সুনন্দ ! তুমি যদি না থাকতে তাহলে বাবা কিছুতেই রাজি হতেন না !"
তারমানে ও বুঝতে পেরে গেছে যে আমিই লাহিড়ীদাকে রাজি করিয়েছি ! মঞ্জু চৈতালিকে জড়িয়ে ধরে বললো "তোর তো হিল্লে হয়ে গেলো ! আমারটা যে কবে হবে সেটাই ভেবে পাচ্ছিনা ! "
কমলদা পাশ থেকে খুবই হালকা স্বরে বললেন "হয়তো তোমাদের এইভাবে হবে না কিন্তু হবে !" কমলদাকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে বললাম "এই জন্যই তোমাকে এতো ভালোবাসি দাদা গো !"
মিতালীর চোখ হাসছে কিন্তু মুখ শুকনো ! ওর দিকে মৌন দৃষ্টিতে বললাম "সরি মিতালি ! তুমি আমার জন্য না ! আমার জন্য আমার মঞ্জু আছে ! "
সমীর আমাদের ডাকতে এলো !"কি রে তোরা এখানে এসে জমে গেছিস দেখছি ! চল ওদিকে ! লাহিড়ীদা জামাই জামাই করে হামলাচ্ছে !"
- এই আমার বাবা গরু নয় যে হামলাবে ! মুখ সামলে কথা বোলো ! হাসতে হাসতে চৈতালি বললো !
- এতদিন তো হামলাতে দেখিনি ! কিন্তু গত এক ঘন্টায় জামাই জামাই করে হামলিয়ে যাচ্ছে !
সবাই হেসে ফেললাম !
সবাই উপরে উঠে এলাম ! লাহিড়ীদার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে ! "আরে এসো জামাই এসো ! আমার পাশে বসো ! বুঝলাম লাহিরদার নেশা হয়ে গেছে ! আরও এক পেগ করে নিয়ে সবাইকে নিচে নিয়ে এলাম ! খাবারের অর্ডার দেওয়াই ছিল ! রাতের দিনার সেরে আমি কানাইকে বললাম "কাল সকাল বেলাতে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে ! কারণ আমাদের আটটার মধ্যে এয়ারপোর্ট পৌঁছতে হবে ! দুজনের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা ! ওদের ঠিক ভাবে প্লেনে চাপানো ! অনেক ঝামেলা আছে ! "
কানাই বললো তুই চিন্তা করিস না ! আমি আছি !
যথারীতি ভোর পাঁচটায় আমার ঘুম ভাঙলো ! কানাইকে ডেকে তুললাম ! বললাম সবাইকে তুলে দে ! জিনিসপত্র সমস্ত গুছিয়ে নিক ! বলেই আমি মর্নিং ওয়াক এ বেরিয়ে গেলাম ! আধঘন্টা মতো হেঁটে হেটেলের সামনের চায়ের দোকান থেকে চা খেয়ে সবার জন্য চায়ের, কমলদা আর মিতালীর জন্য দুধ আর টোস্টের আর বাকিদের ব্রেড অমলেটের অর্ডার দিয়ে রুমে ঢুকলাম !

সবাই তৈরী হয়ে গেছে মোটামুটি ! শুধু কমলদা আর মিতালীর ড্রেসিং চলছে ! হাসপাতালের এম্বুলেন্স বলেই রেখে ছিলাম সাথে একটা ট্যাক্সি !
কমলদা, মিতালি, লাহিড়ীদা ঘোষদাকে এম্বুলেন্সই তুলে দিলাম ! একটা ট্যাক্সিতে গাদাগাদি করে সবাই বসলাম ! ট্যাক্সির ড্রাইভার কিছুতেই এতজনকে নেবে না ! ৫০ টাকার লোভ দেখাতেই রাজি হয়ে গেলো ! এম্বুলেন্সের পিছু পিছু আমরা ভালোর এয়ারপোর্ট পৌঁছে গেলাম ! এম্বুলেন্স দেখেই এয়ারপোর্টের কর্মচারীরা হুইল চেয়ার নিয়ে এলো ! আমি বললাম "একটা তে হবে না ! আরো একটা চাই ! দুজন পেসেন্ট আছে ! "
আরো একটা হুইল চেয়ার নিয়ে এসে দুজনকে খুব সাবধানে তাতে বসিয়ে দিলো ! মঞ্জু আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দিলো ! ওর দেখা দেখি চৈতালিও আমাকে জড়িয়ে ধরলো ! মিতালীর ওঠার ক্ষমতা নেই ! হুইল চেয়ারে বসেই কাঁদছে ! আমি মঞ্জু আর চৈতালিকে ছাড়িয়ে ওর মাথা আমার বুকে চেপে ধরলাম ! "ভালো থেকো ! " এইটুকুই বলতে পারলাম ! লাহিড়ীদা তারা দিলেন ! আমি মিতালীকে ছেড়ে দিয়ে সবার সামনেই মঞ্জুকে চুমু খেলাম ! অনেক কষ্টে আমার হাত ছাড়িয়ে মঞ্জুকে চৈতালি জোর করে টেনে নিয়ে এয়ারপোর্টের ভিতরে ঢুকে গেলো ! সবার শেষে ঘোষদা। .
ঢোকার আগে আমাদের তিনজনের হাত ধরে প্রায় কান্নার স্বরে বললেন "তোমরা ছিলে বলেই আমি আমার মেয়েকে ফিরে পেয়েছি ! কি বলে যে তোমাদের ধন্যবাদ জানাবো সেই ভাষা আমার নেই ! তোমরা সবাই ভালো থেকো ! সুখে থেকো " আমাদের হাত ছেড়ে দিয়ে ঘোষদাও ভিতরে ঢুকে গেলেন !
অনেকক্ষন বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম ! সবাই মন মরা ! কিছুই করার নেই !
রাজু আমার হাত ধরে টেনে বললো " চল ইয়ার ! হামে ভি বাপস জানা হায় !"
আমরা তিনজনে একটা অটো ধরে হোটেলে ফিরে এলাম ! ট্রাভেল এজেন্টের কাছে গিয়ে আজকের হায়দরাবাদের টিকিট চাইলাম !

[/HIDE]
 
[HIDE]

সময় কাটতে থাকলো ! কমলদা আর মিতালি অনেক সুস্থ ! তবে মিতালি এখন হুইল চেয়ার ছারা হাঁটা চলা করতে পারেনা ! আমাদের কোর্স শেষ হতে আর মাত্র ছমাস বাকি আছে ! এর মধ্যেই আমি দুবার বারি ঘুরে এসেছি ! কমলদা নতুন উদ্দমে তার আনাথ আশ্রমের কাজে দুবে আছেন ! প্রথমবার কানাইএর বিয়েতে গেছিলাম ! আমি রাজু আর সমির মিলে ! খুব আনন্দ করেছিলাম ! মঞ্জু আমার হাত জরিয়ে ধরে বলেছিল "আমাদের বিয়ে কবে হবে ! "
আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম আর মাত্র দেড় বছর পরেই আমাদের বিয়ে হবে ! তবে আমাদের বিয়ে কেউ দেবেনা ! আমরা নিজেরাই করব ! হয়ত কোনও মন্দিরে বা রেজিস্ট্রি আফিসে !
এই তিন বছরে কোয়েল অনেক চেষ্টা করেছে আমার কাছে আসার ! প্রথম প্রথম ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু কানাইএর বিয়ের থেকে ফিরে আসার পর ও জোর করে আমাকে বাঁধার চেষ্টা করায় আমি ওকে প্রত্যাখ্যান করি !
ও নাকি ওর বাড়িতে গিয়ে অনেক কান্নাকাটি শুরু করে দেয় ! সুভাসবাবু নিজে একবার আমার হস্টেলে এসে আমার হাত দুত ধরে ওনাদের বাড়িতে যাবার অনুরোধ করেন ! এক বিকালে হরপ্রিত, সুজাতা, সমির আর রাজুকে নিয়ে আমি কোয়েলদের বাড়িতে যাই ! যাবার আগে সবার সাথে আমি আমার আর মঞ্জুর ব্যাপারে আলোচনা করে নিয়েছিলাম ! আমাদের সবার একটাই উদ্দেশ্য ছিল কোয়েলকে বোঝানো ! সুভাসবাবু এবং ওনার স্ত্রির সামনেই আমি বললাম "দেখো কোয়েল ! আমি তোমার সাথে আজ পর্যন্ত একজন কলেজের বন্ধুর মতই মিশেছি ! তোমার প্রতি কোনোদিনই আমার কোন দুর্বলতা ছিলনা ! অনেকবার তোমাকে বুঝিয়েছি যে আমরা শুধুই বন্ধু !! আমাদের বাড়িতেও তোমাকে বুঝিয়েছি ! এখানে ফিরে এসে এই তিনবছরে তোমাকে বুঝিয়েছি এবং জানিয়েছিও আমার প্রেমের কথা ! আমার প্রেম তুমি নয় ! মঞ্জু আমার জীবনের প্রথম নারী ! আমার প্রথম প্রেম ! এবং শেষ প্রেমও বলতে পার ! কিন্তু তুমি সব জেনেও মঞ্জুকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে আমাকে তোমার করতে চেয়েছ !
জোর করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না কোয়েল ! একজন বন্ধু হিসাবে তোমাকে আমি সত্তিই খুব ভালোবাসি ! কিন্তু একজন প্রেমিকা হিসাবে নয় আর মঞ্জুর জায়গায় আমি কাউকেই কোনোদিন বসাতে পারবোনা ! ছেলেমানুষি ছেরে দিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকাও !
সুভাসবাবু এবং ওনার স্ত্রী চুপ করে ছিলেন ! আমি সুভাসবাবুর দিকে তকিয়ে বললাম " কোনোদিন আমাকে কোয়েলের প্রতি দুর্বল হতে দেখেছেন আমাকে ? এইযে হরপ্রিত সুজাতা এরাও তো আমার বান্ধবি ! কই এরা তো কোনোদিন কোয়েলের মতো ছেলেমানুষি করেনি ? আমি কিন্তু কাউকে কোনোদিন সেইভাবে চিন্তা করিনি আর করতেও পারব না ! কারন আমার জীবন আমার জন্য অপেখ্যা করছে কলকাতায় ! শুধু তার জন্য আমি এত কষ্ট করে ইঞ্জিনিয়ারিং পরছি ! তাকে নিয়েই আমার ভবিষ্যৎ ! সবাই জানে ! এবং কোয়েল যখন কলকাতায় গেছিলো তখন ও জেনেছিল কিন্তু জেনেও আমাকে আমার মঞ্জুর থেকে আলাদা করে নিজের করতে ছেয়েছিল ! আমি যদি খারাপ ছেলে হতাম তাহলে হয়ত আমি এতদিন কোয়েলের সাথে এঞ্জয় করে চুপচাপ পালিয়ে যেতাম ! কিন্তু আমি সেতা করিনি ! কারন আমার সেই জায়গাটা আমি কাউকে দিতে পারবোনা ! সব জেনেও যদি কোয়েল এইরকম ব্যবহার করে তাহলে আমার দোষ কোথায় আমাকে বলতে পারেন ?
সুভাসবাবু বললেন " আমরা এইসবের বিন্দুবিসর্গ কিছহুই জানতাম না ! কোয়েল কলকাতা থেকে ফিরে এসে শুধু বলেছিল যে ও তোমাকে ভালবাসে ! তোমার ব্যবহারে কোনোদিন কোন বিরুদ্ধাচারন না দেখে তোমাকে আমরা জামাই বলে মেনে নিয়েছিলাম ! আমাদের উছিত ছিল তোমার সাথে আলোচনা করা ! কিন্তু সেটা আমরা করিনি ! আর সেটাই আমাদের বড় ভুল ! তুমি কিছু মনে করোনা বাবা ! আমরা কোয়েলকে বোঝাবো ! "

তারপরের দিন থেকে কোয়েল কলেজে আসা ছেরে দিল ! সুজাতা বলল "হয়ত নিজের ভুল বুঝে আমাদের সামনে আসতে লজ্জা পাচ্ছে ! দুএকদিনের মধ্যেই নিজের ভুল শুধরে ফিরে আসবে ! চিন্তা করোনা ! "
কিন্তু পনেরদিন হয়েগেল তখনও যখন কোয়েল কলেজে এলনা তখন আমি সুজাতাকে বললাম "একবার কোয়েলের বারি গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখো ! যদি দরকার পরে তাহলে কাল সকালে জোর করে ধরে নিয়ে এসো !
পরেরদিনও কোয়েল এলো না ! সুজাতা ও আসেনি ! তাহলে নিশ্চয়ই ও কোয়েলদের বাড়িতেই আছে ! আসবে নিশ্চয়ই !
সুজাতা দুপুরের পরে কলেজে এলো ! মুখ খুব গম্ভির ! আমরা তখন কলেজের ক্যান্টিনে খাবার খাচ্ছি ! এসেই রাজুর পাত থেকে স্প্রিং রোলের এক্তা টুকরো মুখে নিয়ে গম্ভির ভাবে রাজুকে বলল " চলো আমরা কালই রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করে নিই ! নাহলে পরিক্ষার পরে তুমিও আমাকে ছেরে চলে যাবে "
ব্যাপারটা কি হটাত কি এমন হোল যে সুজাতা রেজিস্ট্রি সেরে ফেলতে ছাইছে ! কোয়েলকে রাজু বলল " কি হয়েছে সেটা আগে বলবে ? আসল ঘটনা না বলেই বিয়ে সেরে নিতে ছাইছ ?"
- কোয়েলরা হায়দেরাবাদ ছেরে বাংলায় চলে গেছে ! ওর দাদা বাড়িতে ছিল গত পরশুই ওরা কলকাতা চলে গেছে ! ওর বাবা নিজের ট্রান্সফার বাংলায় করিয়ে নিয়েছে ! এখন থেকে ওরা ওখানেই থাকবে !

তাহলে কোয়েলের ফাইনাল পরিক্ষা ? সমির কথার উত্তরে সুজাতা বলল "জানিনা ! "
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! কোয়েলের হায়দেরাবাদ ছেরে চলে যাবার জন্য আমিই দ্বায়ি ! সবার চাহুনিতে বুঝতে পারলাম যে কোয়েলের চলে যাওয়াকে ওরা আমাকেই দোষী মানছে !
খাবার ছেরে আমি উঠে পরলাম ! "তোরা কি বলতে ছাইছিস আমার জন্য কোয়েল কলেজ ছেরে চলে গেল ? তোরা সব জেনেও যদি আমাকে দোষ দিস তাহলে আমার আর কিছহুই করার নেই ! কারন আমি কোয়েলের জন্য মঞ্জুকে ধোঁকা দিতে পারবোনা !" বলেই আমি সোজা হস্টেলের রুমে ফিরে এলাম ! কিছুই ভাল লাগছেনা ! আমার জীবনের সাথে এগুলো কি ঘতে চলেছে ?
ঘণ্টা খানেক পরে সমির আর রাজু এলো ! দুজনের মুখই গম্ভির !
আমার সামনে বসে বলল " আমরা কাল রেজিস্ট্রি অফিসে যাব ! তোকেও আমাদের সাথে যেতে হবে ! "
কিছু বুঝতে না পেরে ওদের দিকে তাকালাম !
সমির বলল কাল আমি আর হরপ্রিত রাজু আর সুজাতা বিয়ের আবেদন করে আসব ! কোয়েলের চলে যাওয়াকে ওরা ভালভাবে মেনে নিতে পারছে না ! তাই ওরা এখন থেকেই আমাদের বেঁধে রেখে দিতে চাইছে !
- সেটা খুবই ভাল কথা ! তবে যা কিছু করবি তার আগে নিজের বাবা মাকে জানিয়ে করবি ! কারন আমার বিয়ে আমার বাবা মা সবার অজান্তেই হবে ! আমি নিজেই জানিনা আমার ভালবাসার জন্য আরও কতো গুনগাত দিতে হবে ! কিন্তু তোদের পরিস্থিতি সেইরকম নয় ! তাই নিজেদের আভিভাবকদের জানিয়ে দিস ! পরে যেন ওনারা তোদের দোষারোপ না করেন !
- কিন্তু বাবা মাকে কি ভাবে বলব ? সমির আর রাজু দুজনেই বলে উঠল !
- যেমন করে বাবা মায়ের সাথে সমস্ত কথা শেয়ার করিস ঠিক সেই ভাবেই বলবি !
ওরা গভির চিন্তায় দুবে গেলো !
আমি বললাম "যদি তোরা সত্যি করেই হরপ্রিত আর সুজাতাকে ভালবাসিস তাহলে তোদের বুক শক্ত করে এই সময়টাকে ফেস করতে হবে ! হয়ত তোদের বাবা মা একটু অফেনডেট হবেন ! কিন্তু পরে সব মেনে নেবেন বলেই আমি মনে করি !
ঠিক হোল রেজিস্ট্রি করার আগে সবাই সবার বাবা মায়ের সাথে কথা বলে পারমিসন চাইবে !



[/HIDE]
 
[HIDE]

সন্ধ্যে বেলায় সবাই মানে আমি সমির রাজু সুজাতা আর হরপ্রিত পার্কে বসে ঠিক করছি কে কি ভাবে তাদের বাবা মায়ের কাছে বিয়ে করার পারমিসন নেবে ! হরপ্রিত বলল " আমার কোন প্রব্লেম নেই ! আমার মতেই বাবার মত ! তবে আমরা শিখ ! হয়ত মা বা কাকারা একটু ঝামেলা পাকাতে পারে ! বাবা ম্যানেজ করে নিতে পারবে আশা করি ! "
- আমার বাড়িতে সহজে মানবে না ! আমাদের দক্ষিন ভারতের লোকেরা হিন্দি ভাষীদের পছন্দ করে না ! আমার বাবা খুব গোঁরা ! হিন্দি জানলেও বলতে চান না ! তার উপর যদি জানতে পারেন যে আমি রাজুকে ভালবাসি তাহলে হয়ত হয় আমাকে খুন করে দেবেন আর নাহলে রাজুকে খুন করে দেবেন ! আমার বাবা এখানের একজন নাম করা ব্যবসায়ি ! ওনার হাতে প্রচুর খমতা !
সবাই ঝোঁকের মাথায় রেজিস্ট্রি করার কথা বলে ফেলেছিল ! কিন্তু এখন প্রতিপদে বিপদের সম্ভবনা !
ওদেরকে স্বান্তনা দিয়ে বললাম !"মেয়েদের বাড়ির কথা পরে ভাবা যাবে ! যদি ছেলেদের বাড়ির থেকে মত থাকে তাহলে বিয়ের পরে মেয়েদের বারি থেকে কিছুই করতে পারবে না ! আগে সমির আর রাজুর বাবা মায়ের সাথে কথা বলে দেখা যাক ! তারপর যদি ওনারা মত দেন তাহলে ঠিক আছে ! আর না হলে আমার রাস্তা খোলা ! যে ভাবে আমাকে বিয়ে করতে হবে সেই ভাবেই না হয় সবার বিয়ে হবে !
সবাই আমার কথা মেনে নিলো ! আমি বললাম " চল হস্টেলের ফোন থেকে ফোন করি ! তাহলে নিরিবিলিতে বসে কথাও বলা যাবে আর সাথে পয়সাও খরছ হবে না !
আমরা সবাই হস্টেলের অফিসে ফিরে এলাম ! গার্ড আমাদের দেখেই বলল " বাবু এখানে মেয়েছেলে এলাও নয় ! " আমি ওকে বললাম "ওরা কেউ আমাদের রুমে যাবে না ! অফিসেই বসে থাকবে ! তুমি যাও আমাদের মাল নিয়ে এসো ! " আমার কথায় আশ্বস্ত হয়ে ও চলে গেলো ! আমি সমিরকে বললাম "তুই আগে তর বাবাকে ফোন কর ! খুব ঠাণ্ডা হাবে বলবি যে তুই হরপ্রিতকে ভালবাসিস ওকে বিয়ে করতে চাস ! যেহেতু আর পনেরদিনের মধ্যেই ফাইনাল পরিক্ষা শুরু হবে তোরা তোদের জীবনের ফাইনাল টাও সেরে রাখতে চাস !"
রাজু আর সমির দুজনেই আমার কথায় ঘার নেরে সায় দিল ! প্রথমে সমির ফোন করল ওর বাবাকে " হ্যা বাবা ! কেমন আছ ! ...। না আমি খুব ভাল আছি ! তোমার শরির কেমন ? মা ঠিক আছে ?...... এদিক সেদিকের কথা চলছে দেখে আমি সমিরের পিঠে একটা কিল মেরে বললাম শালা আসল কথায় আয় ! " হরপ্রিত বড় বড় চোখ করে সমিরের দিকে তাকিয়ে আছে !
- পাপা ! আমি একজন মেয়েকে ভালবাসি ! তাকে বিয়ে করতে চাই ! ওর নাম হরপ্রিত কৌর ! পাঞ্জাবের মেয়ে !... আমরা ঠিক করেছি যে ফাইনাল পরিক্ষার আগে রেজিস্ট্রি করে নেব ! তাহলে ............... না পাপা ! ও খুব ভাল মেয়ে ! .........। কি বলছ তুমি পরশু আসবে ? কিন্তু কেন পাপা ? তুমি এসে কি করবে ? ............।। না না পাপা ! ও খুব ভাল মেয়ে !
আমরা শুধু এক তরফের কথাই শুনতে পাচ্ছিলাম ! অপর প্রান্তে কি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছিলাম না ! বেশ কিছুক্ষণ হ্যা ! হু ! ঠিক আছে হতে হতে ফোন রাখল সমির ! সারা শরির বেয়ে ঘামের বন্যা নামছে ! ফোন রেখেই গার্ডের রাখা জলের বোতল তুলে নিয়ে ধক ধক করে জল খেয়ে নিলো সমির ! আমরা সবাই ওর দিকে উদ্গ্রিব তাকিয়ে আছি ! ওর বাবা কি বলল সেটা শোনার জন্য ! বিশেষ করে হরপ্রিত !
জলের বোতল রেখে সমির আমাকে জরিয়ে ধরল ! বলল "বাবা আর মা আসছেন কাল সকালের ফ্লাইটে ! উনি নিজে হরপ্রিতের বাবা মায়ের সাথে কথা বলবেন !
হরপ্রিত ওর কথা শুনে সমিরকে জরিয়ে ধরে চুমুর বন্যা বইয়ে দিল ! আমি ওদেরকে থামিয়ে দিয়ে রাজুর হাতে ফোন দিয়ে বললাম " এবার তুই তোর বাবাকে ফোন কর ! "
কাঁপা হাতে রাজু আঙ্গুল ঢুকিয়ে ওদের বাড়ির নাম্বারে ডায়াল করল ! বেশ কিছুক্ষণ ফোন বেজে থেমে গেলো ! ও আমার দিকে বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ! আমি ওকে ওর বাবার অফিসে ফোন করতে বললাম !
আবার ও ফোন মেলালো !
- হ্যা বাবা ! কেমন আছো ! ... সেই একই স্টাইল ! যে ভাবে সমির শুরু করেছিল ! কথা বলতে বলেতেই হটাত রাজু বলে বসলো " বাবা আমি একটা সাউথ ইন্ডিয়ান মেয়েকে বিয়ে করতে চাই ! আর আমরা কাল বা পুরশুর মধ্যেই রেজিস্ট্রি করে নিতে চাই ! তোমার সাহায্য দরকার ! আমকি চাই তুমি কালকের মধ্যেই হ্যদেরাবাদে চলে এসো ! " একটু থামার পর "ওকে ! ঠিক আছে ! " বলেই রাজু ফোন নামিয়ে দিল !
সুজাতার মুখে বিশ্বের সমস্ত জিজ্ঞাসা !
জিজ্ঞাসা আমাদের সবার মুখেই ! রাজু থম মেরে বসে আছে ! কিছুই বলছে না ! আর থাকতে পারলাম না ! " কি রে কি হোল ? বলবি নাকি ?"

কাল বাবা আসছেন সকাল এগারোটার ফ্লাইটে ! জানিনা কি হবে ! বাবা খুব রেগে আছেন ! কি হবে জানিনা ! সুজাতা আর রাজু ! দুজনের মুখেই দুশ্চিন্তার ছাপ পরিস্কার !
ওদের সাহস দেবার জন্য আমি বললাম ! "তোরা চিন্তা করিস না ! আমরা সবাই সকালে এয়ারপোর্ট যাবো ওনাদের রিসিভ করতে ! বাকি যা হবে আমি দেখে নেবো ! যদিও আমি জানিনা রাজুর বাবাকে কি করে সামলাবো ! কিন্তু কেন জানিনা আমার মনের মধ্যে একটা বিজগনিত কাজ করে চলেছে ! আর সেই বিজগনিতের বীজ আমার মনে ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হয়ে যাচ্ছে !সুজাতা আর হরপ্রিতকে কাল সকাল আটটার মধ্যে কলেজে চলে আসতে বললাম ! কারন এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনেরই বাবা মা আসবেন ! সুজাতা একরাশ চিন্তা নিয়ে বেরুতে গেলে আমি ওর হাত ধরে বললাম " দুনিয়া এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলেও তোমাদের বিয়ে আমি দেবো ! ! নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়ি যাও ! ভরসা রাখো ! কথা দিচ্ছি তোমাকে ! "
সুজাতা একটু ম্লান হাসি দিয়ে চলে গেলো !
কাল থেকে আমাদের কলেজের স্টাডি লিভ ! সুতরাং কলেজের ক্লাস করার কোনও চাপ নেই ! হস্টেলের রুমে আমরা তিনজন মাল খেতে শুরু করলাম ! মাল খেতে খেতেই সমির আর রাজু ওদের বাবা মায়ের সমন্ধে অনেক কথা বলল ! সব শুনে গেলাম ! ওদের মনেতে বিরাট ভয় ! ওদের আমাই আমার বাবা মায়ের সমন্ধে বললাম ! জিজ্ঞাসা করলাম আমার বাবা মা কি বাঘ না ভাল্লুক ? তোরা তো দেখে এসেছিস ! কিন্তু আমার আর মঞ্জুর সম্পর্কে ওনারা হয়ত বাঘ ভাল্লুকের থেকেও বেশি হয়ে যাবেন ! একবার আমার কথা ভাব ! যা হবে সেটা দেখা যাবে !

পরের দিন সকাল বেলাতেই সুজাতা আর হরপ্রিত এসে হাজির ! তখনও সকাল আটটা বাজেনি ! খুব সাধারন পোশাকে দুজনকে দেখে আমাদের গার্ড আমাদের তুলে নিয়ে গেলো ! ওদের দেখে আমরাও অবাক ! এত সাধারন পোশাক ! এত সাধারন ভাবে মানে মেক আপ ছারা আমরা কোনোদিনই হরপ্রিত আর সুজাতাকে দেখিনি ! তবুও সকালের আলোতে ওদের দুজনকে খুব সুন্দর লাগছিলো !
সমির চোখ কচলাতে কচলাতে বলল "তোমরা এত সকালে ?"
- না মানে কাল সারা রাত আমি আর সুজাতা কেউ ঘুমাতে পারিনি ! তাই আমরা ঠিক করেছি আমরা এয়ারপোর্ট এ যাবনা !
এক ধমকে দুজনকে চুপ করিয়ে দিয়ে বললাম ! এখানে এই ভাবেই বসে থাকো ! আমরা তৈরি হয়ে আসছি !
রাজু আর সমিরকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তারাতারি তৈরি হয়ে নিচে নেমে এলাম ! সুজাতা আর হরপ্রিত স্থানুর মতো বসে ! ওদের কে নিয়ে আগে চা খেলাম ! সবাইকে উৎসাহ দিয়ে বললাম সব ঠিক হয়ে যাবে ! চিন্তা করার কোনও কারন নেই ! যা হবে সেটা ভালর জন্যই হবে !
দুরু দুরু মন্ নিয়ে আমরা পাঁচজন এয়ারপোর্ট এর উদেশ্যে বেরিয়ে গেলাম !
ঠিক সাড়ে দশটায় ! সমিরের বাবা আর মা বাইরে বেরিয়ে এলেন ! সমির গিয়ে তাদের পা ছুঁতেই আমি হরপ্রিতকে থেলে দিলাম ! হরপ্রিত ওনাদের পা ছুঁতেই সমিরের বাবা ওকে দাঁড় করিয়ে হরপ্রিতের দুই কাঁধে দু হাত দিয়ে তাকিয়ে ওকে বুকে টেনে নিলেন ! সমিরের মা ও হারপ্রিতকে জরিয়ে ধরে বুকে টেনে নিলেন ! " যেরকম চেয়েছিলাম তার থেকেও সুন্দর আমার বউমা ! " বলেই উনি হরপ্রিতের মুখে কপালে চুমু খেলেন !
যাক ! একটা দুশ্চিন্তা শেষ হয়ে গেলো ! এবার রাজুর বাবার আসার পালা ! ।
সমিরের বাবা বললেন " চলো রেজিস্ট্রি অফিসে ! "
আমি রাজু আর সুজাতাকে দেখিয়ে বললাম " এখনও ওদের ভাগ্য ঠিক হবার জন্য এক ঘণ্টা অপেখ্যা করতে হবে ! " এই প্রথম সমিরের বাবা মা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন " তুমিই সুনন্দ ? তোমার কথা অনেক শুনেছি ! " আমি ওনাদের পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করলাম ! " আমাকে সমিরের বাবা জরিয়ে ধরলেন !



[/HIDE]
 
[HIDE]

এমিনিতেই সমিরের বাবা মোনা পাঞ্জাবি ! তার উপর ফর্সা টকটকে রঙ ! একটা আলাদা ব্যাক্তিত্ব ! মাকেও দেখতে খুব সুন্দরি ! এই বয়েসেও উনি যে কোনও পুরুষের বুকে আগুন জ্বালাতে পারেন ! কিন্তু কি অমাইক ব্যবহার ওনাদের ! আমি রাজু আর সুজাতার সাথে আলাপ করিয়ে দিয়ে
বললাম "রাজুর বাবা আধঘণ্টার মধ্যেই চলে আসবেন ! আমাদের অপেখ্যা করতে হবে ! "
উনি বললেন তাহলে চলো ক্যান্টিনে বসে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক !
ওনার কথা মতই আমরা সবাই ক্যান্টিনে বসে পরলাম ! সমিরের মা হরপ্রিতের পাশে বসে বার বার ওর মুখে মাথায় হাত বলাতে লাগলেন ! বুঝলাম যে ওনার হরপ্রিতকে খুবই পছন্দ হয়েছে ! চা আর বারগারের সাথে অনেক গল্প শুরু করলেন সমিরের বাবা ! অনাকে দেখে মনেই হুলনা যে উনি সমিরের বাবা ! একদম যেন একজন বন্ধু আরেক জন বন্ধুর সাথে কথা বলছে ! খুব ভাল লাগলো ! এত ভালো সম্পর্কের মাঝেও সমিরের যে কুণ্ঠিত ভাবে তার বাবার সাথে ফোনে কথা বলাকে বাপ ছেলের পরিপক্ক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সম্পর্ক কে উজাগর করল !


কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজুর বাবা এসে হাজির ! আমি আগে সমিরের বাবার সাথে আলাপ করিয়ে দিলাম ! কারন উনি আমাকে আগে থেকেই চিনতেন ! একবার উনি রাজুকে দেখতে হ্যদেরাবাদে এসেছহিলেন ! তখন স্মাদের সাথে পরিচয় হয়েছিল ! উনি সুজাতাকেও আগে দেখেছেন ! তবে মনে রেখেছেন কিনা সেটাই ভাবার বিষয় ! দুই বাবা আলাপ হলেন ! দুজনেই বেশ সপ্রিতভ ! সমিরের বাবা বললেন " চলুন আগে কোনও হোটেলে উঠি ! তারপর না হয় এই গাধাগাধি গুলর কথা ভাবা যাবে ! হরপ্রিত সমিরের মায়ের সাথে লেপটে আছে ! যেহেতু রাজুর মা আসেনি তাই হয়ত সুজাতা লেপটাতে পারেনি !

আমাদের কলেজের কাছেই হোটেল হায়দেরাবাদে সবাই উঠলেন ! আমাদের গোল টেবিল বৈঠক শুরু হোল ! সমিরের বাবা সুখবিন্দার সিংহ আগেই হরপ্রিতকে নেজের বউ বলে মেনে নিয়েছেন ! সুতরাং ওদের কোনও আসুবিধা নেই ! শুধু হরপ্রিতের বাড়িতে গিয়ে ওর বাবা মাকে রাজি করানোর দেরি ! রাজুর বাবা দিপক শ্রীভাস্তব সুজাতাকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে দেখে গেলেন ! সুজাতা হরপ্রিতের একটা হাত ধরে কুঁকড়ে বসে আছে !
দিপক বাবু সুজাতাকে বললেন "একবার উঠে দাঁরাও দেখি ! " ভয়ে ভয়ে সুজাতা উঠে দাঁড়ালো !
- একদম ঠিক আছে ! আমি চাইনা আমাদের বংশের ছহেলে মেয়ে বেঁটে হোক ! চলো তোমার বাবার সাথে কথা বলতে হবে !
সুজাতার শরির বেশ বড়সড় ! লম্বায় প্রায় ৫ ফুট আট ইঞ্চি ! রাজুও প্রায় ছ ফুটের কাছাকাছি ! দুজনের জোরি দেখতে বেশ ভালই লাগে !
- কি নাম তোমার বাবার ?
সুজাতা ধীর গলায় বলল " পি কে জে রেডডী"
- দাঁরাও দাঁরাও পি কে জে রেডডী মানে টাইকুন পাম্পের সাউথের ডিস্ট্রিবিউটর ?
- হ্যাঁ !
- তাহলে তো ঝামেলা মিটে গেলো ! বলেই উনি হোটেলের রিসেপ্সনে একটা নাম্বার মিলিয়ে দিতে বললেন ! মিনিট পাঁচের মধ্যেই রুমের ফোনের ঘণ্টি বেজে উঠল ! দিপক বাবু হ্যালো বলতেই ওপার থেকে হ্যালো শোনা গেলো ! সাথে সাথেই স্পিকার অফ করে দিয়ে দিপক বাবু বললেন রেডডী তারাতারি হোটেল হ্যদেরাবাদে চলে এসো ! আর সাথে তোমার বউকেও আনতে ভুলোনা ! ...। আরে আমি কবে এসেছি কখন এসেছি সেটা তখন বোঝা যাবে ! ......। কি বললে ? আধঘণ্টা ? ঠিক আছে ! আমার রুম নম্বর ২০৮ ! হাসি মুখে ফোন রেখে দিলেন ! সুজাতা রিতিমত ঘাব্রাতে শুরু করেছে ! " আরে তুমি কেন ঘাবড়াচ্ছ ! জাস্ট রিলাক্স ! যাও তোমরা ঘুরে এসো ! আমি আর সুখবিন্দার বাবু একটু গল্প করে নিই ! ব্যবসাদার লোক দুজনেই ! এবার হয়ত এনাদের নতুন ব্যবসা শুরু হবে !
আমরা হোটেলের বাইরে বসে গল্প করছি ! হরপ্রিত একটু খুসি হলেও একটু ভয়ে আছে ! ওর বাড়ি থেকে যদি কোনও আপত্তি আসে ! আর সুজাতা ভয়ে মরছে কারন ওর বাবা খুব কড়া লোক !
যাই হোক কিছুক্ষণের মধ্যেই রেডডী সাহেব স্বস্ত্রিক চলে এলেন ! সুজাতাদের বাইরে বসিয়ে ওনাদের অভ্যর্থনা করে আমি দিপক বাবুর রুমে নিয়ে গেলাম ! সেখানে তখন দিপক বাবু আর সুখবিন্দার সাহেবের জোর মিতিং চলছে ! ওনাদের সাদর সম্ভাসনে ডেকে মিসেস রেডডীকে বসতে বলে রেডডী সাহেবকে বুকে জরিয়ে ধরলেন !
- তোমার মেয়েকে আমি চাই ! মানে আমার ছেলের বউ করতে চাই ! তোমাদের কোন আপত্তি আছে ?
হটাত এইরকম সোজাসাপটা কথায় রেডডী সাহেব ঘাবরে গেলেন !
- মানে কি বলতে চাইছ তুমি ?
- তোমার মেয়ে আর আমার ছেলে একে অপরকে ভালবাসে ! তাই ওরা চাইছে পরিক্ষার আগেই রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করে নিতে !
রেডডী সাহেব একবার বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন " আমার কোন আপত্তি নেই ! তোমার ছেলে বলেই আমি রাজি আছি ! তোমাকে না বলে কি আমি আমার ব্যাবসা লাটে তুলব?" দিপক বাবু হেসে উঠলেন ! আমার মুখেতেও হাসি ফুটে উঠল ! রেডডী সাহেবের সাথে সুখবিন্দার বাবুর পরিচয় করানোর মাঝেই আমাকে ইশারা করলেন সবাইকে ডাকতে ! এক ছুটে নিচে নেমে এলাম ! সবাইকে উপরে আসতে বললাম !
রাজুর সাথে রেডডী সাহেবের পরিচয় করিয়ে দিলেন দিপক বাবু ! ঠিক হোল পরিক্ষার আগেই ওদের রেজিস্ট্রি করিয়ে দেবে যাতে করে ওরা নির্ভাবনায় পরিখ্যা দিতে পারে ! কিন্তু প্রশ্ন হরপ্রিতের পরিবার কে নিয়ে !
দিপক বাবু আর সুখবিন্দার সাহেব দুজনেই বিজনেসম্যান ! কোন জিনিস ফেলে রাখতে পছন্দ করেন না ! তার উপর সাথে আছে হ্যদেরাবাদের কিং রেডডী সাহেব !
- তোমার বাবার নাম্বার দাও ! হাঁসতে হাঁসতে সুখবিন্দার বাবু হরপ্রিতকে বললেন ! কারন হরপ্রিতের ফ্যামিলি পাঞ্জাবে থাকে !
হরপ্রিত নাম্বার দিলে আবার অপারেটর কে ফোন করে সেই নাম্বারে মিলিয়ে দিতে বললেন ! হরপ্রিতের বাবার নাম দলজিত সিং ! পাঞ্জাবের একজন বিরাট কৃষক ! এ ছারাও উনি রিয়েল স্টেটের কাজ করেন ! রুমের ফোন বেজে উঠতেই সুখবিন্দার বাবু ফোন তুলে নিজের পরিচয় দিলেন ঠাট পাঞ্জাবিতে ! বেশ কিছুক্ষণ ওনাদের কথা হোল ! ফোন রেখে বললেন উনি পরশু হায়দেরাবাদে আসবেন ! আমাদের সাথে দেখা করতে !
মতামুতি ঝামেলা মিটে গেলো ! রেডডী সাহেব সবাইকেঅনুরধ করলেন ওনাদের বাড়িতে ডিনার করতে ! সুজাতাকে নিয়ে উনি চলে গেলেন ! হরপ্রিত নিজের হস্টেলে ফিরে গেলো ! আমাদের মন ফুর্তির গড়ের মাঠ ! সেই রাতে জমিয়ে আমরা মাল খেয়ে শুয়ে পরলাম ! দিপক বাবুর কথা অনুসারে পরেরদিন সকালে সমির নিজে গিয়ে দুটো রেজিস্ট্রির ফর্ম নিয়ে এলো ! সারাদিন আমাদের বেশ ভালই কেটে গেলো ! সন্ধ্যেবেলায় আমরা সবাই হোটেলে গিয়ে ওনাদের সাথে দেখা করে ফিরে এলাম ! জানলাম হরপ্রিতের বাবা কাল সকালেই হায়দেরাবাদ পৌঁছে যাবেন ! যদি সম্ভব হয় কালই ওদের রেজিস্ট্রি হয়ে যাবে ! এখন কলেজের স্টাডি লিভ ! তাই আমাদের কোন তারা নেই ! সকাল বেলাতেই আমি হরপ্রিতকে নিয়ে এয়ারপোর্ট পৌঁছে গেলাম ! সমিরকে নিই নি ! কারন সুখবিন্দারবাবু বারন করে দিয়েছিলেন ! হরপ্রিতের বাবাকে রিসিভ করে আমরা সোজা হোটেলে ফিরে এলাম ! রাস্তায় উনি হরপ্রিতের সাথে কিছু টুকরো কথা বার্তা বলেছিলেন ! কিন্তু যেহেতু আমি পাঞ্জাবি বুঝিনা তাই কিছুই বুঝতে পারিনি !

[/HIDE]
 
[HIDE]

হোটেলে আসতেই সুখবিন্দার বাবু করমরদনের জন্য নিজের হাত বারিয়ে দিয়ে বললেন " হাই ! আমি সুখবিন্দার সিংহ ! অপর প্রান্ত থেকে হাত বেরিয়ে এসে করমরদন হোল ! আমি দলজিত সিংহ !"
সাদর আপ্যায়নে সুখবিন্দার বাবু ওনার রুমে গিয়ে বসালেন ! ঠেট পাঞ্জাবি ভাসায় বেশ কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলেন ! ইশারায় আমাকে সমির আর হরপ্রিতকে ডাকতে বললেন !
আমি দুজঙ্কেই নিয়ে ফিরে এলাম !
- চলুন তাহলে ! আজকেই এদের রেজিস্ট্রি সেরে দিয়ে যাই ! দলজিত সিং বলে উঠলেন ! যেখানে অভিবাবকের পারমিসন আছে সেখানে রেজিস্ট্রি হতে সময় লাগেনা ! আর লাগলও না ! প্রত্যেকে বিরিয়ানি মুখ করলেন ! (হায়দেরাবাদ এ কেউ মিষ্টি খায় নাকি ?)
সমির রাজু হরপ্রিত সুজাতা সবাই খুব খুশি ! আমাকে জরিয়ে ধরে আমাকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাল ! আমার জন্যই ওদের রেজিস্ট্রি সম্ভব হোল ! সন্ধ্যে বেলায় সবাই ফিরে গেলেন ! যাবার আগে উপদেশ দিয়ে গেলেন "আসল বিয়ের আগে যেন বিয়ের ফসল না আসে ! "
সুজাতাকে নিয়ে পরেরদিন আমি কোয়েলের বাড়ি গেলাম ! ওর দাদাকে বোঝালাম যে কোয়েল কেন নিজের ভবিষ্যৎ বরবাদ করতে চাইছে ? ও যেন এসে ফাইনাল পরিখ্যা দিয়ে দেয় !
সময় কোথা দিয়ে কেটে গেলো বুঝতে পারলাম না ! একে একে সব পরিখ্যা শেষ হয়ে গেলো নভেম্বরের মাঝামাঝি ! রেজাল্ট বেরুবে ডিসেম্বরের ৯ তারিখে ! হাতে অনেক সময় ! যে যার বাড়িতে ফিরে গেলো ! আমিও বাড়িতে ফিরে এলাম ! বাবা মা সবার প্রশ্নবাণে জর্জরিত হলাম ! সবাইকে বললাম যে আমার পরিক্ষা খুবই ভালো হয়েছে ! আর তাছাড়া ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্টে আমি জার্মানির একটা বিরাট কম্পানি "ম্যান রোনালদ " কম্পানিতে সিলেক্টেড হয়েছি ! সবাই খুব খুশিতে আছে ! বেশি খুশি ঝর্না ! কলকল করে কতো কথা বলে গেলো আমার মাথায় ঢুকল না ! আমার একটাই চিন্তা মঞ্জু !@
একদিন পরেই আমি মাকে বললাম যে আমি পিসির বাড়ি যেতে চাই ! মাঞ্জুর সাথে দেখা হবে আর কমলদা আর মিতালির সাথেও দেখা করব !
- যা বাবা ! ঘুরে আয় !
বাইক স্টার্ট করে সোজা পিসির বাড়ি পৌঁছে গেলাম ! পিসিমা পিসেমসাই মঞ্জু সবাই ছিল ! আমি পিসি আর পিসেমসাইকে প্রনাম করলাম ! মঞ্জুর থুতনি ধরে একটু নারিয়ে দিলাম ! ! আমার রিক্রুটমেন্টের খবর শুনে পিসেমসাই আমার পিঠ থাবড়ে আমাকে সাবাসি দিলেন ! মঞ্জুর মুখ গম্ভির !
আমি পিসিকে বললাম যে আমি মঞ্জুকে নিয়ে একটু কমলদা আর মিতালিকে দেখে আসি !
ওনারা আমাকে বললেন "যা বাবা ! ওনারা তকে খুব ভালবাসে ~! তোকে দেখলে অনেক আনন্দ পাবেন !
মঞ্জুকে পিছনে বসিয়ে সোজা পৌঁছে গেলাম বিড়লা মন্দিরের গঙ্গার তীরে ! একটা ছোট ঝোপ দেখে তার নিচে মঞ্জুকে নিয়ে বসে পরে ওকে জরিয়ে ধরলাম !
আমাকে ছাড়িয়ে দিয়ে বলল " তোমার তো খুবই ভালো হোল ! আমাকে ছেরে তুমি বিদেশে পারি দেবে ! এখন আমাকে আর কি দরকার ?"
বুঝলাম মানিনির মান হয়েছে ! বললাম "তোমাকে নিয়ে যাবার জন্যই তো এত দূরে বিদেশে চাকরি নিলাম ! আর এখন তুমিই মুখ ফুলিয়ে বসে আছো ?"
আমার কথা শুনে মঞ্জুর মুখে হাসি ফুটে উঠল ! আমাকে চকাত করে একটা হামি খেয়ে নিলো ! "তাহলে আমরা কবে যাবো ?"
- এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আমার জয়েনিং ! তার আগে মার্চের মাঝামাঝি গিয়ে ওখানের থাকার ব্যবস্থা আমাদের বিয়ে করার ব্যবস্থা সব করে এসে চুপিচুপি তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবো ! কেউ জানতেও পারবে না !
মঞ্জু আনন্দে উচ্ছল হয়ে আমাকে জরিয়ে ধরল ! "উফফ ! আমাদের কতদিনের স্বপ্ন পুরন হতে চলেছে !" বলেই চুপ করে গেলো !
- কি হোল চুপ করে গেলে কেন?
-মা বাবার কি হবে ? লোকের কাছে মুখ দেখাবেন কি করে ? আমার জন্য ওনারা লোক সমাজে মুখ দেখাতে পারবেন না ! আরও যখন জানতে পারবেন যে আমি তোমার সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছি তখন হয়ত ওনারা মরেই যাবেন ! বলেই মঞ্জু কেঁদে ফেলল ! মঞ্জুকে গভির ভাবে জরিয়ে আমি ওকে বোঝালাম " দেখো যদি আমরা না পালাই তাহলে তোমার আমার মিলন কোনোদিনই সম্ভব নয় ! আবার যদি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি তাহলে দু দুটো পরিবার খুব কষ্ট পাবে ! কিন্তু আমাদের যে কিছুই করার নেই !
কেন জানিনা সেইদিন আমি খুব স্বার্থপর হয়ে গেছিলাম ! বাবা মা পিসি পিসেমসাইএর কথা ভাবতেই চাইছিলাম না ! এখন ভাবি সতিই আমি কতো স্বার্থপর ছিলাম সেইদিন ! কিন্তু তখন আমার জীবন মানেই মঞ্জু ! ওকে ছাড়া জীবন ভাবতেই পারতাম না ! মঞ্জুকে কে জোর করে জরিয়ে ধরে ওকে বোঝালাম "এটাই আমাদের নিয়তি ! হয় আমাদের এইকুল রাখতে হবে না হলে ওইকুল ! আর এটাও ঠিক ওনারা কোনোদিন আমাদের এক হতে দেবেন না !এ ছাড়া আমাদের কোন রাস্তা নেই ! " মঞ্জু আমার মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো ! ওর ওই চোখের গভিরতায় আমি স্বজন হারানোর বেদনা দেখতে পাচ্ছিলাম ! কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই ! অনেক বুঝিয়ে মঞ্জুকে নিয়ে কমলদার বাড়ি গেলাম ! ওনার সাথে সমস্ত কথা বললাম ! সব শুনে কমলদা বলল "তুই যে মঞ্জুকে নিয়ে জার্মানি যাবি মঞ্জুর কি পাসপোর্ট আছে ?" মঞ্জু বলল " না আমার পাসপোর্ট নেই ! "
-তাহলে আগে পাসপোর্ট তৈরি করতে আবেদন করে নে ! ততদিনে পাসপোর্ট এসে যাবে !
আমি আর মঞ্জু ঠিক করলাম আগামিকাল সকালে কলকাতা গিয়ে পাসপোর্টের আবেদন করে আসব ! সেই মতই মঞ্জুকে বললাম "কাল সকালবেলায় তুমি তোমার সব সার্টিফিকেট আর পাসপোর্ট সাইজের ফটো নিয়ে স্টেশনে আমার জন্য অপেখ্যা করবে ! তারপর তোমাকে নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে যাবো ! " মজু ঘার নেরে সম্মতি দিল !
কমলদার থেকে বিদায় নিয়ে ঘোসদার বাড়ি গেলাম ! মিতালি একটা হুইল চেয়ারে বসে পড়াশোনা করছে ! আমাদের দেখেই উতফুল্ল হয়ে ওঠার চেষ্টা করল ! কিন্তু পারলনা ! মুখটা এক অব্যাক্ত যন্ত্রণায় বেঁকে গেলো ! মঞ্জু তারাতারি গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরল ! আমার হাত ধরে মিতালি বলল "এইবার তোমাদের দুজনের সময় হয়ে গেছে এক হবার ! আমি খুব খুশি ! আমাকে যেন ভুলে যেওনা তোমরা ! "

মিতালির কাঁধে স্নেহের পরশের হাত রেখে বললাম "শুধু তুমি কেন ! আমি কাউকেই ভুলতে পারবোনা ! " ঘোসদার জরাজুরিতে দুটো সিঙ্গারা আর চা খেতে বাধ্য হলাম ! কিন্তু মনের কোনে একটা ব্যাথা খুব খিঁচ খিঁচ করছিল ! সত্তিই তো আমরা যদি পালিয়ে যাই তাহলে আমাদের বাড়ির লকজন, পিসির বাড়ির অবস্থা কি হবে ? সাথে আবার এই চিন্তাটাও আসছিল যদি আমরা না পালাই তাহলে আমাদের মিলন কি করে হবে !
ভাবতে ভাবতেই পিসির বাড়ি পৌঁছে গেলাম ! পিসেমসাই আর পিসিমা বসে বসে টিভি দেখছিলেন !
আমি পিসিকে বললাম "কাল সকালে মঞ্জুকে নিয়ে আমি পাসপোর্ট অফিস যাবো মঞ্জুর পাসপোর্ট করানোর জন্য ! "
- মঞ্জু পাসপোর্ট দিয়ে কি করবে ?পিসিমা জিজ্ঞাসা করলেন !
মঞ্জুর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো ! কি বলতে চাইছি আমি ? মঞ্জুর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি বললাম---
- না মানে আমি তো জার্মানি চলে যাবো ! মঞ্জুর গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হয়ে গেলে ওখানে হাইয়ার স্টাডি করতে পারবে ! আর তাছাড়া ওখানে যখন আমি থাকব তখন ওর তো ওর চিন্তার কিছুই নেই ! ! মঞ্জু হাঁফ ছেড়ে বাঁচল !


[/HIDE]
 
[HIDE]


পিসি বললেন "কি দরকার ওর পাসপোর্ট করে? গ্রাজুয়েশন হয়ে গেলেই ওর বিয়ে দিয়ে দেবো !"
- না সেটা আমি চাইনা ! আমি চাই মঞ্জু নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তবেই বিয়ে করুক !
পিসেমসাই বললেন বিয়ে টিয়ে সব পরের কথা ! সুনন্দ যখন বলছে তখন পাসপোর্ট তৈরি করে রাখাই ভালো ! যদি মঞ্জু জার্মানিতে হাইয়ার স্টাডির চান্স পায় তাহলে তো খুব ভালো কথা !
পিসেমসাইএর কথা শুনে আমি নিশ্চিন্ত হলাম ! কথা হোল কাল সকাল বেলায় মঞ্জু সমস্ত ডকুমেন্ট নিয়ে স্টেশনে আমার জন্য অপেখ্যা করবে !
বাড়ি চলে এলাম !
দেখি মা আর পিসি ফোনে কথা বলছে ! " না না খোকা তো ঠিক কথাই বলেছে ! ওর পাসপোর্ট তৈরি করিয়ে রেখে দাও ! ততদিনে আগে ওর গ্রাজুয়েশন শেষ হোক ! তারপর না হয় দেখা যাবে ! " বুঝলাম পিসি মাকে ফোন করে মঞ্জুর পাসপোর্টের ব্যাপারে বলছেন আর মা তার নিজের মতামত বলছেন ! আমি ঘরে ঢুকে বিছানায় একটু গা এলিয়ে দিলাম ! ঝর্না এক কাপ চা নিয়ে এলো ! চা খেতে খেতেই ঝরনাকে জিজ্ঞাসা করলাম তোর ফিউচার প্লানিং কি ? আমার জিজ্ঞাসা করার কারন হোল ঝর্না এইবার বিএ সেকেন্ড ইয়ারে পরছে ! এরপর তো ওকে আর জোর করে আমাদের বাড়িতে ধরে রাখা যায়না !ও বলল "আমার স্কলারসিপ এসে গেছে ! জুন মাসে আমি আমেরিকায় চলে যাবো পরতে !
- মা বাবাকে জানিয়েছিস ?
- হ্যাঁ ! ওনারা খুব খুশি ! শুধু আমার পাসপোর্ট তৈরি করতে হবে !
আমি চেঁচিয়ে মাকে ডাকলাম ! মা আ আ আ আ
মা আমার রুমে এলে আমি বললাম "কই আমাকে তো তোমরা বলনি যে ঝর্না স্কলারসিপ পেয়ে গেছে ?"
- একদম ভুলে গেছি রে ! আর তাছারা ঝর্না আমাদের বাড়ি ছেরে চলে যাক সেটাও তো মানতে পারছিনা ! ঝর্না মাকে জরিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছে ! একটু রেগেই গেছিলাম "তোমাদের জন্য কি ও ওর ভবিষ্যৎ খারাপ করবে নাকি ?"
- সেটা তো বলিনি ! কিন্তু ঝরনার বাবা কিছুতেই মেয়েকে বাইরে যেতে দিতে চায় না ! তাই...।
- কাল সকালে ঝর্না আমাদের সাথেই যাবে পাসপোর্টের আবেদন করতে ! তোমাদের কোন আপত্তি নেই তো ! ওর বাবাকে আমার বাবা দেখে নেবে ! আর তাছাড়া ঝর্না এখন বড় হয়ে গেছে !
- ঠিক আছে তোর বাবা আগে আসুক তারপর কথা হবে ! ঝর্না মায়ের সাথে বেরিয়ে গেলো ! আমিও উঠে মাকে বলে ক্লাবের দিকে বেড়িয়ে গেলাম !
ক্লাবে সবার সাথে আড্ডা দিয়ে যখন ফিরলাম তখন বাবা বাড়ি এসে গেছেন ! মা আর বাবা কথা বলছেন আর ঝর্না দাঁড়িয়ে আছে ! ওর চোখে জল !
আমাকে দেখেই বাবা বললেন "খোকা কাল ঝরনাকেও নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে চলে যাস ! ওর বাবাকে আমি দেখে নেবো ! বাবাকে আমি জরিয়ে ধরলাম !
ইয়ারকি মারতে মারতেই বাবা বলে উঠলেন "তাহলে আমাদের আবার একটা ঝরনাকে খুঁজতে হবে বাড়ির কাজের জন্য ! " ঝর্না ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলল মাকে জরিয়ে ধরে !
বাইরে থেকে বুধুর ডাক পেলাম !
বাইরে বেড়িয়ে দেখি কানাই নিলয় বুধু সবাই দাঁড়িয়ে ! ওদের দেখে বললাম "কি ব্যাপার রে ? তোরা এখন ?"
- বোকাচোদা ! সারাদিন কোথায় ছিলে শুনি ? কানাই খেঁকিয়ে উঠল !
- কমলদা আর মিতালিকে দেখতে গেছিলাম !
-পিসিমা কিছু বলেনি তোকে? নিলয় জিজ্ঞাসা করল !
- না তো ...
- যা আগে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে আয় !
আমি ভিতরে ঢুকে মাকে বললাম "সকালে কি নিলয় বা কানাই এসেছিলো !
একটা বিরাট জিভ কেটে মা বলল "একদম ভুলে গেছিলাম ! আজ নিলয়ের আশীর্বাদ হয়েছে তোর নেমন্তন্ন আজ রাতে ওদের বাড়িতে ! "
- তুমি একেবারে বুড়ি হয়ে গেছ মা ! কোন জিনিস মনে রাখতে পারনা ! ঝর্না চলে গেলে কি করবে সেটাই ভাবছি !
- হ্যাঁ আমিও ভাবছি এবার তোর একটা বিয়ে দিয়ে একটা নতুন ঝর্না নিয়ে আসব বাড়িতে ! তাহলেই হবে ! আমি ভুললেও কিছু এসে যাবে না !
- ধ্যাত ! কি যে বলনা ! । চলো ওরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ! আমি যাচ্ছি !
- বেশি রাত করিস না !
টালিখোলার মাঠে বসে সবাই জমিয়ে মদ খেলাম ! একটু একটু ঠাণ্ডা পরে গেছে ! খোলা মাঠে বেশ শীত শীত করছে ! তারাতারি শেষ করে সবাই নিলয়ের বাড়িতে গিয়ে খেতে বসলাম ! কচুর লতি দিয়ে কুঁচ মাছের তরকারি ! খাসির মাংস ভাত ! বেশ জমিয়ে খেলাম ! কচুরলতি যে এইরকম স্বুস্বাদু হতে পারে সেটা আমার কল্পনায় কোনোদিনই ছিলোনা ! একটু বেশি করেই কচুরলতি ছেয়ে খেয়ে নিলাম !

সকাল বেলাতেই ঝর্না রেডি হয়ে বসে আছে ! আমি ঝরনাকে নিয়ে একটা রিক্সায় বসে স্টেশনের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলাম ! এখন আমি বড় হয়ে গেছি ! বাবা বা মা আমাকে আর বকাবকি করেনা বা কোন উপদেশ দেয়না ! আর কদিন পরেই আমি জার্মানি চলে যাবো ! বাবা মায়ের গর্বে বুক ফুলে আছে ! সবাইকে ডেকে ডেকে বোলে বেরায় "আমার ছেলের জার্মানিতে চাকরি হয়েছে ! ও জার্মানি চলে যাবে ! বাবা মায়ের এই শিশু সুলভ আচরণ আমাকে খুব ভাবিয়ে তোলে ! যেদিন ওনারা জানতে পারবেন আমি মঞ্জুকে নিয়ে জার্মানি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছি সেদিন ওনাদের কি অবস্থা হবে !
মঞ্জু ঝর্নাকে দেখে একটু অবাক হোল ! হটাত ঝর্নাকে নিয়ে এলে ?
ওকেও পাসপোর্ট বানাতে হবে ! স্কলারশিপ পেয়েছে ! জুনে ও আমেরিকা চলে যাবে তাই... কেউই বেশি কথা বললাম না ! পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দুটো ফর্ম কিনে বাইরে বেড়িয়ে এসে সবার সমস্ত ডকুমেন্ট এর জেরক্স করিয়ে ফর্ম ফিলাপ করে স্ক্রুটনির লাইনে দাঁড়িয়ে জমা করে দিয়ে যখন বেরুচ্ছি তখন প্রায় সাড়ে তিনটে বাজে ! খিদেয় পেটে ছুঁচো ডন মারছে ! দুজনকে নিয়ে পাসপোর্ট অফিসের লাগোয়া হোটেলে মাছ ভাত খেয়ে নিলাম ! পেট শান্ত তো মনও শান্ত ! খেতে খেতেই মঞ্জু বলল আগামি ৬ ডিসেম্বর ওদের কলেজ থেকে বিহার ঘোড়াতে নিয়ে যাচ্ছে ! ওও যাচ্ছে !
শুনে খুশি হলাম ! যাক একটু বেড়িয়ে আসুক ! কারন আর কিছুদিন পরেই ও এই দেশ ছেরে আমার সাথে বিদেশে পারি দেবে ! এখন না হয় একটু বান্ধবিদের সাথে আনন্দ করুক !
৬ ডিসেম্বরই আমার ট্রেন ! কিন্তু ওর ট্রেনের সময় দুপুর বেলায় আর আমার রাতে ! তাই আমি ওকে স্টেশনে তুলতে আসতে পারবো না ! ও একটু দুক্ষ পেল ! কিন্তু ও জানে যে আমাকেও ফিরে যেতে হবে তাই বিশেষ কিছু বলল না ! হাতে বেশি সময় নেই ! মঞ্জুকে যে একটু সময়ের জন্য আদর করব সেটারও উপায় নেই ! ঝর্না আমার সাথে আছে !
একটা জিনিস খেয়াল করলাম যে ঝর্না এবং মঞ্জু দুজনেই কেউ কারুর সাথে একটাও কথা বলেনি সকাল থেকে !
আমি ঝর্নাকে জিজ্ঞাসা করলাম কি রে তোদের ভিতর আবার কিসের ঝগড়া ?
- তুমি মঞ্জুদিকেই জিজ্ঞাসা করো ! আমাকে কেন করছ ?
- কি হোল বলবে কিছু ? মঞ্জুকে প্রশ্ন করলাম !কিন্তু মঞ্জু কিছুই বলল না !
চুপচাপ মঞ্জুকে ওদের বাড়িতে ছেরে খুব সাবধানে ঘুরতে যাবার পরামর্শ দিয়ে আমি ঝর্নাকে নিয়ে ফিরে এলাম ! রাস্তায় যখন আমরা রিক্সায় বসে আছি তখন ঝর্না আমার হাত ধরে জিজ্ঞাসা করল "দাদা তুমি রাগ করলে ?"
- আমি কেন রাগ করতে যাবো ?
ঝর্না আমার হাত কে কলে নিয়ে বলল আমি স্কলারশিপ পেয়েছি বলেই মঞ্জুদির একটু রাগ ! ও চায়না যে আমি আমেরিকায় গিয়ে বড় হয়ে তোমাদের বরাবরি করি ! আর এমনিতেও তো স্কলারশিপ আমি পেতাম না যদি না সিডিউল কাস্ট না হতাম ! এতে আমার কি দোষ বল ?
বুঝলাম মঞ্জু ঠিক মেনে নিতে পারছেনা যে ঝর্না স্কলারশিপ পেয়ে বাইরে যাবে ! একদিন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আমাদের সাথে বরাবরি করবে !
আমি ঝরনার মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম "আরও বড় হ ! দুনিয়াকে দেখিয়ে দে যে তুই বা তোর মতো মেয়েরা সব পারে ! "
- তোমরা না থাকলে কি আর আমি লেখাপরা করতে পারতাম দাদা ?আর আমি তোমাদের বরাবরি করব? তোমরাই আমার ভগবান ! তোমাদের আসন সবসময় আমার মাথায় থাকবে !
রিক্সার মধ্যেই ঝর্নাকে আলতো করে জরিয়ে ধরলাম ! কিন্তু ঝর্না আমাকে জোর করে চেপে ধরল ওর বুকের সাথে !

[/HIDE]
 
[HIDE]
এই সেই ঝর্না যে আমাকে কতো গালাগালি দিত ! আর আজকের ঝর্না একদম অন্য ! আমাকে দেখলেই ওর চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ! অন্য কারুর সাথে আমাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা ! এমনকি মঞ্জুকেও আমার সাথে মেনে নিতে পারে না ! আমি বেশ ভালো করেই লক্ষ করেছি যে যখনি মঞ্জু বা কোয়েল আমার পাশে এসেছে তখনি ঝরনার চোখ জ্বলে উঠেছে ! প্রথম প্রথম আমি ঝরনার ছেলেমানুষি বোলে ভুল করেছি ! কিন্তু এখন ঝরনার জরিয়ে ধরাকে বুঝলাম আমার প্রতি ঝরনার দুর্বলতা !
ঝর্নাকে ছাড়িয়ে দিয়ে বললাম "এগুলো তোর করা সাজেনা ! তোকে অনেক বড় হতে হবে ! অনেক আগে যেতে হবে ! আমাকে মনের থেকে মুছে ফেলে ভবিষ্যতের দিকে তাকা ! "
ঝরনার চোখে জল ! আধ অন্ধকারেও দেখতে পাচ্ছি সেটা ! কিন্তু আমি ঝর্নাকে কোন স্বান্তনা দিলাম না ! কারন আমি জানতাম যদি সেই সময় ঝর্নাকে স্বান্তনা দিতে যেতাম তাহলে ঝর্না সেটাকে প্রশ্রয় এবং দুর্বলতা ভেবে আমাকে আরও বেশি করে জরিয়ে ধরবে ! আসলে কালো মেয়েদের দেখলে আগে যেরকম একটা মনোবৃত্তি হতো সেটা হায়দেরাবাদে পরতে গিয়ে ৯০% কালো মেয়ে এবং তাদের প্রতিভা দেখে আমার মনোভাব সম্পূর্ণ পালতে গেছে ! বাড়ির সামনে রিক্সা দাঁড়াতেই ঝর্না গম্ভির মুখে ধীর পদক্ষেপে বাড়ির ভিতর চলে গেলো ! মা হয়ত ঝর্নাকে কিছু জিজ্ঞাসা করলেন কিন্তু ঝর্না কোন কথার উত্তর না দিয়েই ঘরের ভিতর ঢুকে গেলো ! মা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন "তুই কি ঝর্নাকে কিছু বলেছিস নাকি রে ?"
-না ! আমি কেন ওকে কিছু বলতে যাবো ? ওর সাথে মঞ্জুর একটু মনমালিন্য হয়েছে ! আসলে মঞ্জু ঠিক নিতে পারছেনা যে ঝর্না বিদেশে পরতে যাবে ! এটাই হয় ! তাই তোমার আমার চিন্তা করার কিছুই নেই !
মা বললেন " আসলে গরিবরা একটু উন্নতি করুক সেটা অনেকেই দেখতে পারেনা ! কিন্তু মঞ্জুর মন এত ছোট কি করে হোল ?"
- হয় মা হয় ! এই রকম জেলাসি এই বয়সে একটু আধটু আসতেই পারে ! ওসব নিয়ে তুমি চিন্তা করোনা !

৬ তারিখ সকালে মঞ্জুকে ফোন করে খুব সাবধানে থাকতে বললাম ! ও যেন একা একা ট্রেন থেকে না নামে ! অজানা কেউ কিছু না দিলে যেন না খায় ! ইত্যাদি ইত্যাদি উপদেশ দেইয়ে ফোন রেখে দিলাম !
সন্ধ্যে বেলায় বাবা আমাকে ছাড়তে হাওড়া স্টেশনে এলেন ! আমাকে ট্রেনে তুলে দেবার আগে বললেন " এত তারাতারি না করে আগে জিবনে দাঁড়া ! তারপর না হয় কিছু ভেবেচিন্তে করবি !"
- মানে ?......। বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি প্রশ্ন করলাম !
আমার চোখে চোখ রেখে বাবা বললেন " আমি সিআইডী তে চাকরি করি ! আমি যদি আমার ছেলের খবর না রাখি তাহলে তো আমার চাকরি ছেরে দেওয়া উচিত ! বুঝে গেলাম বাবা মঞ্জু আর আমার ব্যাপারে সব জানেন ! মাথা নিছু করে নিলাম !
একটু লম্বা স্বাস নিয়ে বাবা বললেন সম্পর্কটা এমন একটা জিনিস সেটা ভাংতে বেশি সময় লাগে না ! কিন্তু তাকে ধরে রাখতে অনেক কষ্ট করতে হয় ! তাই বলছিলাম সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শেখ ! আমি তোদের পথে বাঁধা হব না ! কিন্তু এই মুহূর্তে তোরা যেটা করতে চাইছিস সেটা এখন না করে পরে করলেই ভালো হবে বলেই আমি মানি ! আমি বাবার সামনে মুখ তুলে তাকাতে সাহস পাচ্ছিনা ! বাবা আবার বোলে উঠলেন "আগে তুই যা ! নিজেকে ঠিক করে প্রতিষ্ঠিত কর ! তারপর না হয় ............
মাথা নিচু করেই বাবাকে বললাম " তাই হবে বাবা ! "
চুপচাপ বাবাকে প্রনাম করে ট্রেনের কম্পারটমেনটে ঢুকে গিয়ে নিজের সিটে বসে পরলাম ! নিজেকে খুবই ছোট মনে হচ্ছিলো ! কি করে ভুলে গেছিলাম যে আমার বাবা একজন সিআইডী অফিসার ! যিনি দুনিয়ার খোঁজ রাখেন তিনি কি আর ছেলের খবর রাখবেন না ? কি করে যে এতটা ভুল করেছিলাম !! একটা জিনিস ভেবে নিজেকে স্বান্তনা দিলাম যাক বাবা আমাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছেন ! উনি নিজেই কিছুদিন আমাকে অপেখ্যা করতে বলেছেন ! মনের ভিতর একটা উতফুল্লতা কাজ করলো !
হায়দেরাবাদে ৯ তারিখ সকাল বেলায় পৌঁছে গেলাম !
সকাল দশটায় আমাদের পাস আউট সেরিমনি ! আজ সব বন্ধু বান্ধব এক সাথে বসে আছি ! জানিনা এর পর কে কোথায় হারিয়ে যাবে ! কোয়েল আমাকে দেখে এগিয়ে এলো ! "সরি সুনন্দ ! আমি নিজের স্বার্থে অন্ধ হয়ে গেছিলাম ! "
- ইটস ওকে ! তুমি যে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছ সেটাই অনেক ! আমরা সব সময় ভালো বন্ধু হয়েই থাকতে চাই !

আমাদের ব্যাচের সবারই রেজাল্ট খুব ভালো হয়েছে ! সবাই মসগুল নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ! কারন সবারই ক্যাম্পাস থেকেই চাকরি হয়ে গেছে ! শুধু আমি আর হরপ্রিত বাইরে যাবার সুযোগ পেয়েছি ! এতে সমিরের মনে কোন দুক্ষ নেই কারন মাস ছয়েকের মধ্যেই ওদের বিয়ে তারপর হয় হরপ্রিত চাকরি বদলে এদেশে চলে আসবে আর না হলে সমির চাকরি নিয়ে বিদেশে পারি দেবে ! রাজু আর সুজাতা দুজনেই আইবিএম দিল্লিতে চাকরি পেয়েছে ! দুজনেই খুব খুশি ! কলেজ থেকে কাল আমাদের ফেয়ারওয়েল দেবে ! আমার ফেরার টিকিট ১১ তারিখের ! তার মানে পরশুর ! হস্টেলে গিয়ে সমস্ত গুছাতে শুরু করে দিলাম ! কারন সন্ধ্যে বেলায় আমাদের পার্টি আছে "গ্রিন হায়দ্রাবাদ বারেতে ! আজ সব বন্ধু মিলে এঞ্জয় করব ! আবার কবে দেখা হবে তার কোন ঠিক নেই !
পরেরদিন সকাল দশটায় আমাদের ফেয়ারওয়েল পার্টি শুরু হোল ! অনেক খানাপিনা ! মিউজিক, নাচ গান ! অনেক কিছুই হোল ! সবাই ক্লান্ত ! সন্ধ্যে বেলায় আমি আমার সমস্ত জিনিসের আরও একবার তদারকি করে নিয়ে বেরুতে যাবো ঠিক সেই সময় আমাদের গার্ড এসে হাজির !
- তারাতারি এসো তোমার বাড়ি থেকে ফোন !
আমি দৌড়ে গিয়ে ফোন তুললাম ওপারে মায়ের গলা " খোকা আ আ আ ! তুই এখুনি চলে আয় ! আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে ! "
- মা তুমি এরকম করছ কেন ? কি হয়েছে আমাকে খুলে বল ! মায়ের সেই এক কথা কাঁদতে কাঁদতে বলছেন তুই এখুনি চলে আয় ! আর অন্য কোন শব্দ মায়ের মুখ থেকে বেরুচ্ছে না ! কাঁদতে কাঁদতেই মা ফোন কেটে দিলেন !
- মনের ভিতর প্রচণ্ড ঝর উঠেছে ! কি এমন হোল যে মা কাঁদছেন আর আমাকে এখুনি আমাকে ফিরে যেতে বলছেন ? আমার চোখের মুখের অবস্থা শোচনীয় ! কি করি কাকে ফোন করি ! বাবার কিছু হয়নি তো ? মনের মাঝে দুনিয়ার দুর্ভাবনা ! আমার হাত পা সব কাঁপতে শুরু করেছে !
এমন সময় রাজু এসে অফিসে ঢুকে আমাকে দেখে বলল " কি হয়েছে সুনন্দ ? তুই এমন করছিস কেন ?"
গার্ড বলল " ওর বাড়ি থেকে ফোন এসেছিলো ! তারপর থেকেই ও এইরকম করছে ! "
রাজু নিজে আমার বাড়ির ফোন নাম্বার ডায়াল করল ! কিছুক্ষণ হু হা করে ফোন ছেরে দিয়ে বলল " চল এয়ারপোর্ট ! "
এয়ারপোর্ট এর বাইরের কাউনটার থেকে টিকিট কেটে আমাকে এয়ারপোর্ট এর ভিতরে ঠেলে দেবার সময় বলল "মঞ্জু আর নেই ! "




[/HIDE]
 
[HIDE]

মঞ্জু নেই !! এই কথাটা শুনেই আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরল ! এয়ারপোর্ট এর গেটেই আমি বসে পরলাম ! সিকিউরিটির লোকেরা ছুটে এসে আমাকে তোলার চেষ্টা করল ! আমার হাত রাজুর দিকে বাড়িয়ে সীমাহীন অন্ধকারের অতলে চলে গেলাম !
যখন জ্ঞ্যান ফিরল নিজেকে এয়ারপোর্ট এর প্রাথমিক স্বাস্থ কেন্দ্রে পেলাম ! রাজু সমির হরপ্রিত সুজাতা সবাই ভির করে দাঁড়িয়ে আছে ! উঠে বসার চেষ্টা করলাম ! রাজু আমাকে উঠতে দিতে চাইল না ! তবুও জোর করে উঠে বসলাম ! " চল আমাকে এখুনি যেতে হবে ! তার আগে আমাকে বল কি হয়েছে ! কেনই বা তুই বললি মঞ্জু নেই !"
হবে হবে সব বলব ! আগে তুই নিজেকে একটু সামলে নে ! তারপর তোকে সব বলব !
- না আমাকে এখুনি বল কি হয়েছে মঞ্জুর ?
- বোধগয়ার কাছে ওদের বাস একটা খাদে পরে যায় ! মঞ্জু সমেত আরও পাঁচজন প্রান হারিয়েছে ! এরা সবাই বাসের সামনের দিকে বসে ছিল ! এখনও ওদের দেহ গয়ার জেনারেল হাসপাতালে রাখা আছে ! তোর বাবা আর তোর পিসেমসাই আর লাহিরিবাবু পৌঁছে গেছেন !
আমি বললাম "এখুনি গয়া যাবো ! আমার টিকিট করিয়ে দে ! "
- গয়ার ডাইরেক্ট ফ্লাইট নেই ! আমি পাটনার টিকিট করিয়ে রেখেছি ! তোর শরির ঠিক হলেই আমি টিকিট কনফারম করিয়ে নেবো !
-এখুনি যাবো ! আমার মঞ্জু আমাকে এইভাবে ছেরে যেতে পারেনা ! বুকের ভিতর কান্না গুল দলা পাকিয়ে উঠে আসতে চাইছে !
রাজু সমির আর আমি সেই সন্ধায় পাটনার ফ্লাইট ধরলাম ! রাত দশটায় পাটনা পৌঁছে একটা গারি করে যখন গয়া পৌঁছলাম তখন ভর হতে শুরু করছে ! সোজা হাসপাতালে গিয়ে দেখি বাবা, পিসেমসাই আর লাহিরিদা আরও অনেকে বসে আছেন যাদের আমি চিনি না !
আমাকে দেখেই পিশেমসাই আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন ! কিন্তু এখন আমি আর কাঁদতে পারছিনা ! কণ্ঠরুদ্ধ স্বরে জিজ্ঞাসা করলাম "মঞ্জু কোথায় ?"
লাহিরিদা আমার পিঠে হাত রেখে বললেন " এখন মর্গে আছে ! কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ আসবে তারপর সমস্ত বডি ছাড়া হবে ! "
আমার আর ত্বর সইছহিলনা ! " আমি এখনি দেখতে চাই ! আমাকে নিয়ে চলো প্লিস !!"
- রাজু আর সমির আমাকে জোর করে ধরে বাইরে নিয়ে এলো ! জলের ধারায় চোখের সামনে সব ঝাপ্সা দেখছি ! হাসপাতালের বাইরে এসে রাজু আমার হাতে একটা সিগারেট ধরিয়ে দিয়ে বলল " নে খা ! আর মনটাকে শক্ত কর !! সিগারেট ধরিয়েছি সেটা খেয়াল ছিলোনা ! হাতের আঙ্গুলে গরম ছাঁকা পেতেই বাস্তবে ফিরে এলাম !
পুলিশ এসে গেছে ! সবাই মর্গের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম ! দরজা খুলে একে একে সমস্ত ডেড বডি বের করে সবার আত্মীয় দের তুলে দেওয়া হোল ! মঞ্জুর শরির বেড়িয়ে এলো পুরো সাদা কাপরে ঢাকা !আমি তারাতারি মুখের কাপর শরিয়ে মঞ্জুর মুখটাকে জরিয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম ! সবাই আমাকে সামলানোর চেষ্টা করতে লাগলো ! মাঞ্জুর মুখ যন্ত্রণায় বেঁকে আছে ! যে মঞ্জুকে আমি হাসি মুখে ছাড়া কোনোদিন কল্পনা করিনি আজ সেই মুখে যন্ত্রণার চিহ্ন আমাকে পাগল করে দিল ! ওর দেহকে জরিয়ে ধরলাম ! ওর মুখে চুমু দিয়ে ওর যন্ত্রণা লাঘব করার চেষ্টা করলাম ! সবাই আমাকে জোর করে ধরে মঞ্জুর দেহের থেকে আমাকে সরিয়ে দিল ! সমীর আর রাজু জোর করে আমাকে ধরে বাইরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করতে লাগলো ! আমি তখন কাঠা পাঁঠার মতো ছহতফত করছিলাম আমার মঞ্জুর কাছে যাবার জন্য ! ! বাবা এসে আমাকে শক্ত হাতে ধরে গম্ভির গলায় বললেন " আর না ! অনেক হয়েছে ! আমাদের মান সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিও না ! নিজেকে শক্ত করো ! "
বাবার গলার স্বরে এমন এক অমোঘ বানি ছিল আমাকে বেশ কিছুটা নিভিয়ে দিল !
যে পাঁচ জন মেয়ে মারা গেছিলো তাদের পরিবার তাদের গয়াতেই চিতা সাজানোর কথাবার্তা বলছিল ! পিসেমসাই এবং লাহিরিদাও সেইরকম চিন্তা করে ওদের সাথে ওখানেই মঞ্জুকে শেষ বিদায় দিতে !
আমি বেঁকে বসলাম ! " না এখানে আমি মঞ্জুকে ছেরে যাবো না ! যা হবে আমাদের ত্রিবেনিতে হবে " বাবা লাহিরিদা পিসেমসাই সবাই আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করল ! কিন্তু আমি নাছরবান্দা ! আমি কিছুতেই মঞ্জুকে এখানে ছেরে যাবনা !
আসলে আমি মঞ্জুকে ছাড়তে ছাইছিলাম না ! আরও যতক্ষণ সম্ভব হয় মঞ্জুকে আমার কাছেই রাখতে চাইছিলাম !
শেষে লাহিরিদা পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলেন "যদি এখান থেকে এম্বুলেন্স করা যায় তাহলে কতক্ষনে আমরা কলকাতা পৌঁছে যাবো ?
পুলিশের লোকটি বললেন " কম করে ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা !! কিন্তু রাস্তায় যেতে যেতে বডিতে পচন ধরে যেতে পারে !"
ঠিক হোল একটা কফিনে বরফ রেখে মঞ্জুকে রাখা হবে ! একটা এম্বুলেন্স আর একটা গারি ভারা করে আমরা মঞ্জুকে নিয়ে বেড়িয়ে যাবো !
পুলিশের লোকটিই সমস্ত ব্যবস্থা করলেন ! " যতক্ষণ এই সমস্ত ব্যবস্থা চলছে তার মধ্যেই বাবা সবাইকে বললেন কিছু খেয়ে নিতে ! কাল রাত থেকেই কারুর কিছু খাওয়া হয়নি ! ওনারা বাবার কথায় সায় দিলেন ! বাবা আমার হাত শক্ত করে টেনে নিয়ে চললেন হাসপাতালের সামনের হোটেলে ! খাবার ইচ্ছা একেবারেই ছিলোনা ! কিন্তু জোর করে ঘুগনি আর পাউরুটি খেতে বাধ্য হলাম ! সকাল ১০ টা বেজে গেছে ! বাইরে এসে আমি সমিরকে বললাম "একটা মালের বোতল জগার করতে পারবি?"
সমির কোন কথা না বোলে চলে গেলো !
ঠিক হোল আমি রাজু আর সমির আম্বুলেন্সের পিছনে বসব ! লাহিরিদা সামনে ! অন্য গাড়িতে বাবা আর পিসেমসাই !
লাহিরিদা বাবাকে বললেন "আপনারা আগে বেড়িয়ে যান ! ওখানে গিয়ে সমস্ত জোগাড় যন্ত্র করে রাখুন ! এখনও এখান থেকে বডি নিয়ে বেরুতে দুই তিন ঘণ্টা সময় লাগবে ! যতক্ষণে আমরা স্টার্ট করব ততক্ষনে আপনারা অনেক দূর চলে যেতে পারবেন ! বাবা শুধু বললেন "একটু দেখবেন ! সুনন্দ যেন ছেলেমানুষি বা পাগলামি না করে ! "
- সেটা আমি দেখে নেবো !
১২ টা নাগাদ এম্বুলেন্স ছাড়ল ! আমার সামনে কফিনে ঢাকা দেওয়া মঞ্জুর দেহ ! কফিনের উপরেই মাথা রেখে কফিনটাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠলাম ! রাজু আর সমির আমাকে জোর করে কফিন থেকে সরিয়ে দিল ! গারি চলছে আর সমানে ঝরে যাচ্ছে আমার চোখের জল !
আমাকে বসিয়ে সমির আমার হাতে মদের বোতল ধরিয়ে দিল ! রাজু তিনটে প্লাস্টিকের গ্লাস নিয়ে এসেছিলো ! তার একটায় আমার গ্লাসে মাল ধেলে জল মিশিয়ে দিল ! এক চুমুকেই সবটা শেষ করে দিলাম ! বুক জ্বলে যাচ্ছিলো ! কিন্তু মনের জ্বলনের কাছে সেই জ্বলন কিছুই নয় ! গ্লাস খালি করেই রাজুর দিকে গ্লাস বাড়িয়ে দিলাম ! রাজু চুপচাপ আমার গ্লাসে মাল ঢালতেই সঙ্গে সঙ্গে শেষ করে দিচ্ছিলাম ! কফিনের উপর মাথা রেখে কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানতে পারিনি !




[/HIDE]
 
[HIDE]
যখন পিসির বাড়ির দুয়ারে গারি পৌঁছালো তখন ভোর চারতে ! আমি সারা রাস্তা মাঞ্জুর কফিন ধরে ঘুমিয়ে গেছি ! স্বপ্ন দেখে গেছি আমি মঞ্জুকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছি ! সমীর আমাকে ঠেলে তুলে দিল ! ঘুম ভাঙতেই চোখের সামনে মঞ্জুর কফিন দেখে আমার মন হু হু করে উঠল ! ধীরে ধীরে সবাই ধরে কফিন বাইরে নামাল ! ভোরের আল ধীরে ধীরে সমস্ত অন্ধকার মুছে দিচ্ছে ! ওত ভোরেও মঞ্জুর বাড়ির উঠানে লোকের ভিড় ! রাজু আমাকে ধরে নামাল ! আমি কোন কথা না বোলে কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা টয়লেটে চলে গেলাম ! খুব জোড়েই পাইখানা পেয়েছিলো ! কমোডে বসে পরলাম ! আমার চোখ থেকে জলের ধারা ঝরে যাচ্ছে ! ঠিক তখনই মনের ভিতর থেকে কেউ যেন বোলে উঠল " মঞ্জুকে হারিয়ে তোমার সব কি শেষ হয়ে গেছে ? যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে তুমি এখনও কি করে বেঁচে আছো ? কি করেই বা শরিরের তাগিদে টয়লেটে এসে বসেছ ? জীবন কোনোদিন থেমে থাকে না ! তুমি রাস্তায় খেয়েওছ ড্রিঙ্ক ও করছ ! সব কিছুই করেছ ! তার মানে মঞ্জু মরে যাওয়াতে তোমার কোন কিছুই বন্ধ হয়নি ! আর যখন বন্ধ হয়নি তখন নিজেকে শোকের সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে লাভ কি ? যে যাবার সে চলে গেছে ! তাকে নিজের স্মৃতিতে রেখে দিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকাও ! " মনে হোল যেন মঞ্জুই আমার মনের ভিতর থেকে আমাকে বলল !
মনের আওয়াজ শোনার পরেই আমার চোখ থেকে জলের ধারা উধাও হয়ে গেলো ! মনে মনে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করলাম ! মুখে চোখে জল দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এলাম ! দেখি বাঁশের মাচা বানাচ্ছে লোকেরা ! আমি কিছুই বললাম না ! স্থবির চোখে সব কিছুই দেখতে থাকলাম ! সমির, রাজু লাহিরিদা কমলদা সবাই একটু দূরে দারিয়ে কথা বলছে ! বুঝতে পারছি যে আমাকে নিয়েই ওদের কথা ! আমি ওদের দিকে গেলাম না ! আমাকে বাইরে দেখে আমার পিসি আর মা ডুকরে কেঁদে আমাকে জরিয়ে ধরলেন ! আমি শক্ত হাতে দুজনের বাঁধন ছেরে বাড়ির বাইরে চলে এলাম ! সমির রাজু কমলদা আমাকে দেখে এগিয়ে এলেন ! ওদের উপেখ্যা করে মোড়ের মাথার চায়ের দোকানে বসে পাঁচটা চায়ের অর্ডার দিলাম ! ততক্ষনে ওরাও এসে আমার পাশে বসে পরেছে ! আমার দাবনাতে চাপ দিয়ে কমলদা কিছু বলতে গেলেন ! কিন্তু সেই সুযোগ কমলদাকে না দিয়ে বোলে উঠলাম " না কমলদা আমাকে স্বান্তনা দিওনা ! এটাই বেশ ভালো হোল ! আমাদের সম্পর্ক নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম ! আজ মঞ্জু সমস্ত সম্পর্ককে, সমস্ত দ্বিধাকে সব দূর করে দিয়ে চলে গেলো ! এটাই ভালো হোল ! আর আমাদের ভাবতে হবে না.........। দোকানদারের হাত থেকে চায়ের ভাঁড় নিয়ে খেয়ে নিলাম ! একটা সিগারেট ধরিয়ে বিরাট জোরে একটা টান দিয়ে বুকের ভিতরে জ্বলন্ত ধোঁয়া ঢুকিয়ে দিলাম ! এখন আর বুক জ্বলছে না ! সমস্ত জলুনি মাথার চুলের রন্ধ্র দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে ! কমলদার দাবনায় একটু চাপ দিয়ে বললাম " সবে তো শুরু হোল ! প্রথমে ত্রিপ্তিদি ! তারপর মঞ্জু...... চলতেই থাকবে ! কতো আর কাঁদবো ! না আর কাঁদবো না ! চলো যাওয়া যাক ! ওরা আমার হটাত পরিবর্তনে অবাক হয়ে গেলো !


মাচা বাঁধা হয়ে গেছে ! সবাই কফিন খুলে ফেলেছে !
পলিথেনে ঢাকা মঞ্জুর পার্থিব শরীরটাকে ওরা কফিন থেকে বের করল ! আমি এগিয়ে গিয়ে ওদের সরিয়ে দিয়ে মঞ্জুর শরিরের উপর থেকে পলিথিন সরাতে থাকলাম ! পলিথিনের পরেই সাদা কাপড়ে মঞ্জুর শরির আমার সামনে ! নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না ! মঞ্জুর শরীরটাকে দুই হাতে তুলে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে ধরে সবার সামনেই " কেন আমাকে ছেরে গেলে এ এ এ এ এ" বোলে জোড়েই কেঁদে ফেললাম ! সবাই আমাকে শরিয়ে দিল ! আমি মঞ্জুর মুখ দেখতে চাই ই ই ই ই ... সবাইকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে মঞ্জুর মুখের থেকে ঢাকনা সরিয়ে ওর মুখটাকে দুই হাতের করতলে ধরে ওর যন্ত্রণা কৃষ্ট কপালে চুমু দিলাম ! রাজু আর সমির আমাকে জোর করেই মঞ্জুর থেকে আমাকে সরাতে চেষ্টা করল ! হটাত আমার কাঁধে একটা নরম হাতের চাপ আর সাথে গম্ভির গলার একটা আদেশ ! " ওকে ছেরে দাও দাদা ! " মঞ্জু কে ছেরে আমি ঝর্নাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম ! ঝর্না আমাকে আস্তে আস্তে ঘরের ভিতরে নিয়ে গেলো ! যে ভাবে আমাকে ও জরিয়ে ধরে নিয়ে গেলো সেই জড়ানোতে আমি মঞ্জুর ছোঁয়া খুঁজে পেয়েছিলাম ! পাগলের মতো ঝর্নাকে জরিয়ে ধরে থাকলাম ! ঝর্না আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিল ! আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল " এখন তুমি একটু আরাম করো ! যখন সময় হবে আমি তোমাকে ডেকে নিয়ে যাবো ! দরজার বাইরে সমির রাজু কমলদা সবাই দাঁড়িয়ে ! ঝর্না সবাইকে বলল " ওকে এখন একটু একা থাকতে দিন ! সব ঠিক হয়ে যাবে ! "

ত্রিবেনির ঘাটে নিজের হাতে মঞ্জুর চিতাতে আগুন লাগালাম ! আমার জীবনের একটা অধ্যায় শেষ হয়ে গেলো ! রাজু আর সমিরকে কানাই গিয়ে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দিয়ে এলো ! আমি যেন কেমন হয়ে গেছি ! বাড়ি থেকে বের হই না ! খেতে দিলে খাই না খেতে দিলে চাইনা ! বাবা মা সবাই খুব চিন্তিত আমার এই পরিবর্তনে ! ওদের টুকটাক কথা বার্তা শুনতে পাই ! "মঞ্জুকে সুনন্দ খুব ভালবাসত ! তাই হয়ত মঞ্জুর মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছে না ! "
এই ভাবেই দিন দশেক কাটিয়ে দিলাম ! শ্রাদ্ধ শান্তি সব মিটে গেলো ! জিবনে হয়ত প্রথমবার ন্যাড়া হলাম ! কানাই নিলয় সবাই রোজ আসে আর শুকনো মুখে ফিরে যায় ! কারুর সাথেই কথা বলিনা ! চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকি ! ঝর্না এসে আমাকে জোর করে খাইয়ে দিয়ে যায় ! আমার দায়িত্ব মা বাবা ঝরনার উপর ছেরে দিয়েছে !
সন্ধ্যেবেলায় কানাই আর বুধু এসে জোর করে ধরে নিয়ে গেলো ! ক্লাবের ভিতরে কেউ কেরাম খেলছে কেউ তাস ! আমাকে দেখে সবাই খেলা থামিয়ে দিল ! শম্ভু সাধুকে মালের বোতল নিয়ে আস্তে বলল ! মাল খেতে খেতেই কানাই বলল " এইরকম ভাবে আর কতদিন চলবি সুনন্দ ? নিজেরও তো একটা জীবন আছে নাকি ? তোর বাবা মা সবাই খুব চিন্তিত তোকে নিয়ে ! বাস্তবে ফিরে আয় সুনন্দ !"
- বাস্তবেই তো আছি ! কিন্তু অতীত কে ভুলতে পারছিনা ! আর জার্মানি যাবো না ! যেখানে গিয়ে মঞ্জুকে পাবনা সেখানে গিয়ে লাভ কি ?
- তোর বাবা মা কি দোষ করল ? কেন তুই ওদের শাস্তি দিচ্ছিস ? সব ভুলে যা ! শুধু সামনের দিকে তাকিয়ে দেখ !
অনেক উপদেশ অনেক স্বান্তনার বানী সমস্ত বন্ধুদের কাছ থেকে ভেসে আসলো ! কোন কিছুই কানে ঢুকছিল না ! আমি চুপচাপ মদ খেয়ে চলেছি ! ভালই নেশা হয়ে গেছে ! ক্লাবের বাইরে থেকে বুধু এসে বলল "ঝর্না এসেছে সুনন্দকে নিয়ে যেতে ! " কানাই বেড়িয়ে গিয়ে ঝর্নাকে বলল "তুই যা আমরা বাড়ি পৌঁছে দেবো ! " কিন্তু ঝর্না শুনল না ! সোজা ক্লাবের ভিতরে ঢুকে আমার হাত ধরে আমাকে দাঁড় করিয়ে হিড়হিড় করে টানতে টানতে বাড়ি নিয়ে এলো ! টলমল পায়ে ঝরনার টানে বাড়িতে এসে ঢুকলাম ! মা একবার বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঝর্নাকে বলল " ওকে শুইয়ে দে ! আর আজ থেকে তুই ওর ঘরেই শুবি ! বলা যায়না কখন কি করে বসে ! " ঘুমিয়ে পরেছিলাম ! বুকেতে কেউ যেন মাথা রেখে কাঁদছে ! চোখের জলে আমার বুক ভিজে গেছে ! চোখ খুলে দেখি ঝর্না আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে ! ওকে ঠেলে তুলে দিলাম ! ঘরের ডিম আলোতে দেখি ঝর্না একেবারে ল্যাঙট হয়ে আমাকে জরিয়ে ধরার চেষ্টা করছে ! ঝরনার কান্না ঝরা চোখ আমাকে মঞ্জুর চোখের কথা মনে করিয়ে দিল ! আমি দু হাত বাড়িয়ে ঝর্নাকে জরিয়ে ধরলাম ! ওর মুখে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিলাম ! ও আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে আমার বুকে মুখ লুকালো !
ওকে জরিয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়লাম ! ওর স্তন আমার বুকের সাথে লেপটে আছে কিন্তু আমার ভিতর কোন উত্তেজনা কাজ করছিলোনা !

[/HIDE]
 
[HIDE]

সকাল বেলায় ঘুম ভাঙল ! নিজেকে অনেক ফ্রেস মনে হচ্ছিলো ! চুপচাপ ঝর্নার ঘুমন্ত শরিরকে দেখতে থাকলাম ! সত্তিই ভগবান একটা কষ্টি পাথরে কতো সুন্দর একটা সৃষ্টি করেছে ! আমি ওর ঘুমন্ত মুখে একটা চুমু দিলাম ! ঘুমের ঘোরেই ও আমাকে জরিয়ে ধরতে চাইল ! আমি ওর বাহুবন্ধনে ধরা দিলাম ! আমার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট লাগিয়ে ও আমাকে কিস করতে শুরু করল ! আমিও জবাব দিলাম ! আমার প্যান্টের নিচে আমার তৃতীয় অঙ্গে রক্তের সঞ্চালন অনুভব করতেই বাস্তবে ফিরে এলাম ! ঝর্নাকে জোর করে ছাড়িয়ে দিয়ে ওকে জামাকাপড় পরে নিতে বললাম ! গায়ে একটা গেঞ্জি ছরিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম মাঠের দিকে !
অনেক দিন সকালে ছোঁটা হয়নি ! আজ খুব ছুটতে ইচ্ছা করছিল ! ছোঁটা শুরু করেদিলাম ! কতপাক দিয়েছি আমার সেই পরিচিত মাঠে সেটা আর গুনিনি ! বুধু আর শম্ভু ক্লাবের ঘর পরিস্কার করতে এসেছিলো ! আমাকে ছুটতে দেখে ওরা নিজেদের কাজ থামিয়ে আমাকে দেখতে থাকলো ! প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেছে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়েছি ! দূর থেকে দেখি ঝর্না আসছে ! সারা চোখে মুখে দুশ্চিন্তা নিয়ে ! আমাকে দেখে কিছুটা শান্ত হোল !
ওকে দেখে আমি ধীর পায়ে মাঠের ধারে বসে বুধুর কাছে জল চাইলাম ! বুধু তারাতারি একটা জলের বোতল নিয়ে আমার হাতে দিয়ে দিল ! সারা শরির ঘামে জ্যাব্জ্যাবে হয়ে গেছে !
ঝর্না আমার সামনে এসে দাঁড়ালো ! আমি চোখ তুলে ওর মুখের দিকে তাকালাম ! ওর চোখ দুটো আনন্দে জ্বললেও মুখ গম্ভির ! " একবার কি বোলে আসা যেতনা ?"
আমি কিছুই বললাম না ! উঠে পরে বুধুর হাতে বোতল ধরিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা দিলাম ! আমার পিছন পিছন ঝর্না ! মা আর বাবা উৎকণ্ঠায় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ! ওনাদের দেখে একটা ম্লান হেসে আমি বাথরুমে চলে গেলাম ! ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে মাকে বললাম " খেতে দাও ! খিদে পেয়েছে ! " মায়ের চোখ আনন্দে উচ্ছল হয়ে উঠল ! " ওরে ও ঝর্না ! তারাতারি তোর দাদাকে পরোটা আর আলু চচ্চড়ি করে দে !
ঝর্না তারাতারি রান্না ঘরে গিয়ে নিজের কাজে লেগে গেলো ! বাবা আমার পাশে এসে বললেন "তোকে তো একবার হায়দেরাবাদ যেতে হবে ! তোর সার্টিফিকেট, সমস্ত জিনিসপত্র সব কিছুই তো ওখানেই রয়ে গেছে ! " বাবার দিকে একটা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম " জাবখন"
পরোটা খেতে খেতেই আমি মাকে বললাম " মা আমি বৈদ্যবাটি যাবো আজ ! "
- কি দরকার আছে ? যে গেছে তাকে নিয়ে আর কেন ঘাঁটাঘাঁটি করবি ?
- যাবো মা ! যেতে আমায় হবেই ! আজ যদি না যাই তাহলে হয়ত আর কোনোদিন আমার যাওয়া হবে না ! পিসিমা পিসেমসাইকে সব বলা আর হবে না !
আমার গম্ভির গলা শুনে বাবা বললেন " ঠিক আছে যা ! কিন্তু কাউকে সাথে নিয়ে যা ! "ঝর্না পাশ থেকে বোলে উঠল " আমি যাবো দাদার সাথে !"
জানিনা কেন আমার বাবা মা ঝর্নার উপর বেশ ভরসা করতে ছিখে গেছেন ! এখন ঝর্নার অনেক মতামত তারা নিয়ে থাকেন ! ঝর্নার কথায় বাবা বললেন তাই হোক তবে ! তুই যা ওর সাথে !
বাইক বের করে সাফ করছি ঠিক সেই সময় কানাই আমার বাড়ির সামনে নিজের কার দাঁড় করাল ! চৈতালি গারি থেকে নেমে এলো ! আমাকে জরিয়ে ধরল ! আমি কোন রেস্পন্স দিলাম না ! আমাকে ছেরে চৈতালি ঘরের ভিতর চলে গিয়ে বাবা মাকে প্রনাম করল !
কানাই এগিয়ে এসে আমাকে বলল " বাইক ঢুকিয়ে দে ! আমরাও বৈদ্যবাটি যাচ্ছি ! তুই আমাদের সাথেই চল ! কাল ফিরে আসব ! "
- ব্যাপারটা কি রে ? আমার যাবার কথা তুই কি করে জানলি ?
আমতা আমতা করে কানাই বলল "একটু আগে ঝর্না ফোন করেছিল মানে তোর বাবা ওকে আমায় ফোন করতে বলেছিল ! আজ আমার কোন কাজও নেই ! তাই ভাবলাম তোর সাথেই যাই ! এই ফাঁকে স্বশুরবারিতেও একটু ঘুরে আসা যাবে ! "
বুঝলাম বাবা বা মা আমাকে একা এখন বাইক চালাতে দিতে চাইছেন না ! ! একটু মনক্ষুন হলেও বাবার কথা মেনে নিলাম !

কানাই গারি চালাচ্ছে পাশে আমি ! পিছনে চৈতালি আর ঝর্না ! কেউই কোন কথা বলছে না ! পিসির বাড়ির সামনে পৌঁছে দেখি পিসিমা দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছেন ! বুঝলাম এখানেও ফোন করে দেওয়া হয়েছে ! আমাকে দেখেই পিসিমা কেঁদে ফেললেন ! আমি কোন কথা না বোলে সোজা মঞ্জুর ঘরে ঢুকে গেলাম ! আমার পিছনে পিছনে ঝর্না আর পিসিমা ! মঞ্জুর আলমারি খুলে আমি মঞ্জুর ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে এলাম ! ড্রয়িং রুমে এসে পিসিকে বললাম পিসেমসাইকে ডাকো !
আমার গলা শুনে পিসেমসাই নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে এলেন ! সবাই সোফায় বসে ! শুধু ঝর্না আমার পাশে বসে বসে চুপচাপ আমার কার্যকলাপ দেখে যাচ্ছে !
সবার সামনেই মঞ্জুর ব্যাগ খুলে আমাদের রেজিস্ট্রি সার্টিফিকেট পিসির হাতে দিয়ে বললাম " হয়ত এটাই আমার ভুল ছিল ! তাই আমি মঞ্জুকে হারিয়েছি ! " আর এটার দরকার নেই ! আশা করি তোমরা আমার আর মঞ্জুর সম্পর্ক কে ক্ষমা করে দেবে !" শরির মন তখন আমার শক্ত ! পিশি আর পিশেমসাই ম্যারেজ সার্টিফিকেট টা দেখে কেঁদে ফেললেন " ওরে তোরা যদি আগে আমাদের বলতিস তাহলে আজ আমাদের এইদিন দেখতে হতনা ! " আমি কোন কথা না বোলে পিসিমা আর পিসেমসাইকে প্রনাম করলাম " হয়ত এটাই আমাদের শেষ দেখা ! জানিনা জীবন আমাকে কথায় নিয়ে যাবে ! আমাকে ক্ষমা করে দিও !
সোজা বেড়িয়ে এসে কানাইয়ের গাড়িতে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম ! ঝর্নার চোখেও জল ! কানাই গারি স্টার্ট করল ! পিছন ঘুরে দেখি পিসিমা কেঁদে চলেছেন আর কিছু বলতে চাইছেন ! কিন্তু আমার শোনার ক্ষমতা নেই ! ঝর্না আমার এই আকস্মিক ব্যবহারে আশ্চর্য হয়ে গেছে ! আমি কানাই কে বললাম আমাকে কমলদার বাড়িতে ছেরে দে !


[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top