What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঝর্ণা The untold story( সম্পূর্ণ উপন্যাস) (1 Viewer)

[HIDE]

চৈতালি কাল সকালে বৈদ্যবাটী স্টেশনে লেডিসের পরের কামরায় থাকবে ! আমরাও যেন সেই কামরাতেই থেকেই ! বলেই কোয়েল একচোট হেসে নিলো !
আমি কোয়েলকে জিজ্ঞাসা করলাম " কি হলো হাসছো কেন ?
- চৈতালি ও জিজ্ঞেস করছিলো কানাই যাবে কি না ! তাই হাসছি !
তড়কা আর রুটির সাথে রাতের ডিনার শেষ করে সবাই শুয়ে পড়লাম ! শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম কথা দিয়ে যে আট দিন কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না !
সকাল বেলায় ঘুম ভাঙলো ! আজ আর মাঠে যেতে ইচ্ছে হলোনা কারুরই ! ওদের বললাম তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নিতে ! ঝর্ণা যাবে না ! ওর অনেক পড়া বাকি আছে সেগুলো শেষ করবে ! দিন পনেরো পরেই ওর প্রিটেস্ট !
সবাই রুটি তরকারি খেয়ে কানাইয়ের সাথে স্টেশনের দিকে বেরিয়ে গেলো ! আমিও স্নান করে বাইক বের করলাম ! মাকে বললাম যে আমি বৈদ্যবাটী যাচ্ছি ! কমলদার সাথে অনেক কথা আছে ! তার আগে পিসির বাড়ি থেকে মঞ্জুকে নিয়ে তবেই যাবো ! লাহিড়ীদা, ঘোষ দা সবাই থাকবেন ! মা দুগ্গা দুগ্গা বলে আমায় বিদায় দিলেন !
মঞ্জুকে আমি আগেই বলে রেখেছিলাম যে আমি সকাল ১০টার মধ্যে ওদের বাড়ি পৌঁছে যাবো ! ও তৈরিই ছিল ! পিসি আর পিসেমশাইয়ের সাথে দেখা করে দুটো রসগোল্লা খেয়ে আমি মঞ্জুকে নিয়ে কমলদার বাড়ির উদেশ্যে বেরিয়ে গেলাম ! আমি আগেই কমলদাকে বলে রেখেছিলাম যে আমাকে আর মঞ্জুকে একটু আলাদা ছেড়ে দেবার জন্য ! কমলদা আমাদের একটা ঘর ছেড়ে দিলেন !
- না সারাদিন এখন তোরা প্রেম কর ! দুপুরের খাবারের সময় তোদের ডাকবো !
দরজা বন্ধ করে দিয়েই আমি মঞ্জুকে আমার বুকে জড়িয়ে ধরলাম ! উফফফ ! কতদিন আমার প্রেয়সীকে আমার বুকে পাইনি ! আমার বুকের সাথে লেপ্টে মঞ্জু কাঁদতে শুরু করে দিলো ! বুঝলাম বিরহ আমার মঞ্জুকে অনেক কষ্ট দিয়েছে !

চুমুতে চুমুতে মঞ্জুকে ভরিয়ে দিতে থাকলাম ! কতদিন পরে আমার মঞ্জু আমার বুকে ! কি করে যে মঞ্জুকে ছেড়ে আমি এতদিন আছি সেটা ভাবতে বড়োই কষ্ট হয় !
- আর কতদিন আমাদের এইভাবে দূরে থাকতে হবে ? আমি আর থাকতে পারছি না ! মঞ্জু কাঁদতে কাঁদতেই বললো !
- ওরে পাগলী যাতে আর বেশিদিন দূরে না থাকতে হয় তাইতো আমি শুধু তোমাকে পাবার জন্যই তো এটা দূরে গিয়ে পড়াশোনা করছি ! পাশ করে বেরুবার পরেই কোনো না কোনো চাকরি নিয়ে বিদেশে পারিদেব তোমায় নিয়ে ! কেউ জানতেও পারবে না !
মঞ্জু আমার বুকে কিল মেরে বললো " আমি যে আর থাকতে পারছি না ! " তোমাকেও ফোন করে কথা বলতে পারিনা ! যদি মা বা বাবা জেনে ফেলে ! জানো তুমি আমি কত কষ্টে আছি ? তুমি তো বেশ আনন্দেই আছো ! এতো গুলো মেয়ে তোমার চারপাশে ঘুরছে। ...
মঞ্জুর মুখটা তুলে ওর চোখে চোখ রেখে বললাম " আজ পর্যন্ত আমি কোনো মেয়ের দিকে তাকাই নি ! ছোঁয়া তো দূরের কথা ! আমি সবার সাথে শুধু বন্ধু হিসাবেই মিশি ! বিশ্বাস করো ! "
অনেক ম্যান অভিমানের পর আমরা মিলিত হলাম ! এই মিলনের সুখ যে এতো মধুর সেটা আজ অনুভব করলাম ! কারণ আজ পর্যন্ত যে মিলন হয়েছে সেগুলো কোনোটাই মিলন ছিলোনা ! সেগুলো ছিল চোদা আর চোদার উন্মাদনা !
এই প্রথম আমরা প্রথম মিলনেই ক্লান্ত ! শরীর ভরলেও দুজনের মন ভরছে না ! বেশ কিছুক্ষন দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকলাম ! হাতের ঘড়িতে দেখলাম দুপুর সাড়ে বারোটা ! আমি মঞ্জুকে বললাম " তৈরী হয়ে নাও ! এইবার খাবার ডাক আসবে ! "
দুজনেই জামা কাপড় পরে তৈরী হয়ে নিলাম ! মঞ্জু কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না !
- বোলো কি বলতে চাইছো ?
- না কিছু না ! ভাবছি। .....
- কি ?
- না মানে ওই মেয়েটা কোয়েল। .....
- হ্যা ! ও আমার সাথে আমাদের কলেজে পরে !
- কিন্তু ওর ভাব গতিক আমার সুবিধার লাগছে না ! ও তোমার প্রতি দুর্বল ! সেদিন রাতে তোমাকে নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করেছে !
- ঝগড়া ও করেনি ! করেছো তোমরা দুজনেই ! মাল খেয়ে দুজনেরই কারুর কোনো হুঁশ ছিল না ! সেদিন যদি বাড়িতে সবাই জেনে যেত তাহলে আমরা কাউকে মুখ দেখতে পারতাম না ! হয়তো ওর মনে আমার প্রতি কোনো দুর্বলতা আছে কিন্তু আমার নেই ! আমার একটাই প্রতিজ্ঞা আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তোমাকে আমার জীবনে নিয়ে আসা ! একটু থেমে বললাম " দেখো মঞ্জু আগে আমরা যা করেছি সেগুলো ছিল উদ্ভ্রান্ত উশৃঙ্খল যৌবনের উন্মাদনায় ! তৃপ্তিদির মৃত্যু আমাকে একটা অন্য মানুষে পরিণত করেছে ! আমি তৃপ্তিদিকে কথা দিয়েছিলাম উদ্ভ্রান্ততা ছেড়ে দিয়ে তোমাকে নিয়ে একটা সুষ্ঠ জীবন গড়বো ! আমি সেই লক্ষে এখন অবিচল ! আজ যে আমরা কমলদার বাড়িতে আছি বা এসেছি সেটা কমলদা জেনেও কেন কিছু বলে নি জানো ? কারণ কমলদা জানে আমার লক্ষের কথা ! তাই তোমাকেও বলছি মনকে স্থির রাখো ! আমি তোমারি থাকবো সারাজীবন ! আমার থেকে তোমাকে কেউ দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না !
আমার কথা শুনে মঞ্জু আমাকে জড়িয়ে ধরে আমাকে একটা খুব গভীর চুমু দিলো !
দরজায় আওয়াজ পেতেই দরজা খুলে দেখি কমলদা দাঁড়িয়ে ! আয় খেতে আয় ! সবাই তোদের জন্য অপেখ্যা করছে ! মঞ্জুর চোখে মুখে এই কদিনে যে দুঃখ বা গ্লানি দেখেছিলাম সেটা এখন আর নেই ! এখন মঞ্জু আবার ঝর্ণার মতো উচ্ছল ! তরল !
গোটা দশেক বাচ্চা লাইন দিয়ে বসে আছে সবার সামনেই থালা বেছানো ! লাহিড়ীদা আর রেবাদি সবাইকার পাতে ভাত দিচ্ছেন ! আমরাও বসে পড়লাম বাচ্চা গুলোর সাথে ! ডাল ভাত আলু ভাজা আর মাছের ঝোল দিয়ে খুব শান্তি নিয়ে খেয়ে নিলাম ! রেবাদি আর কমলদা কিছু কিছু বাচ্ছার মাছের কাঁটা ছাড়িয়ে দিয়ে খাইয়ে দিতে থাকলেন ! কত নির্মল এই দৃশ্য ! মঞ্জুকে দেখিয়ে বললাম "এইরকম শান্তি তুমি কি কোথাও পাবে ? এক তৃপ্তি দি চলে গিয়ে কত বাচ্চা দের জীবন বানিয়ে দিয়ে গেলো ! আমরা কি পারবো না তৃপ্তিদির কথা রাখতে ! মঞ্জু আমার হাতে হাত রেখে বললো " আর কোনোদিন আমার ভুল হবে না ! আমি তোমার দেখানো পথেই চলবো !" ওর চোখ থেকে দুফোঁটা জলের ধারা গড়িয়ে পড়লো ! কমলদা সেটা দেখে বলে উঠলেন " এই পাগলী ! এখন কাঁদার সময় নয় ! এখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সময় ! নিজেকে শক্ত কর ! "
খেয়ে উঠে আমি মঞ্জু কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কমলদা আর লাহিড়ীদার আজ্ঞা নিয়ে ! সোজা বিড়লা মন্দিরে ! আজ অনেক জায়গা ফাঁকা পরে আছে ! গঙ্গার ঘাটে বসে দুজনেই বহমান গঙ্গাকে দেখতে থাকলাম একে অপরের হাত নিজের হাতে নিয়ে ! কারুর মুখেই কোনো কথা নেই ! বেশ কিছুক্ষন পরে মঞ্জু বলে উঠলো " আমার হাইয়ার সেকন্ডরারির পর তাহলে কি করবো? তোমার তো এখনো আড়াই বছর লাগবে !"


[/HIDE]
 
[HIDE]
যেমন পড়াশোনা করছো তেমনি করবে ! আমার পড়া শেষ হয়ে গেলেই একটা না একটা চাকরির ব্যবস্থা হয়ে যাবে ! আর যদি না হয় তাহলে অনুনয়দা তো আছেই ! উনি নিশ্চয় আমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন !
নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা দুজনেই যে কতটা উৎকণ্ঠায় আছি সেটা আমরা দুজনেই জানি ! আরও ঘন্টা খানেক গঙ্গার ধরে কাটিয়ে বললাম " এবার চলো ! তোমাকে বাড়ি ছেড়ে আমাকে ফিরতে হবে ! সমস্ত গোছগাছ বাকি ! কাল সকাল বেলাতেই বেরিয়ে যেতে হবে !
মঞ্জু কিছুতেই আমাকে ছাড়তে চায়না ! অনেক কষ্টে মঞ্জুকে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আমি বাড়ি ফিরে এলাম তখন সন্ধ্যে সাড়ে পাঁচটা ! এসেই আমি আমার ব্যাগ গোছাতে শুরু করে দিলাম ! বাড়িতে এখন ঝর্ণা ছাড়া কেউ নেই ! মা বাজারে গেছে ! আমার ব্যাগ গোছানোর ফাঁকেই ঝর্ণা আমার রুমে ঢুকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো !
- কি রে কিছু বলবি ?
- তোমার আর ইচ্ছে হয়না ?
- কিসের ইচ্ছে ?
- আমার শরীরটাকে নিয়ে খেলা করার ইচ্ছে ? যেটা করার জন্য তুমি পাগল ছিলে একদিন ?

ঝর্ণার দিকে ঘুরে তাকালাম ! আজ আমি কোন ঝর্নাকে দেখছি ! আজ ঝর্ণার চোখে আকুতি ! ব্যাকুল দৃষ্টি নিয়ে ঝর্ণা আমাকে বললো " কি গো বললে না ? আমার শরীর তোমাকে আর টানে না ? এখন অনেক নতুন বান্ধবী পেয়েছো বলেই কি আমার মতো কালো মেয়ের প্রতি এতো নিস্পৃহতা ?"
উঠে দাঁড়িয়ে ঝর্ণার দুই কাঁধে হাত দিয়ে ধরে ঝর্ণার চোখে চোখ রেখে বললাম !" না রে ঝর্ণা আর কোনো শরীরই আমায় টানে না ! আমি এখন একটা কঠিন পথের যাত্রী ! যেদিন রাস্তা খুঁজে পাবো সেইদিন হয়তো আবার তোর শরীর আমাকে টানবে ! যখন তোর শরীর আমাকে টানতো তখন আমি মানুষ ছিলাম না ! আমি জানোয়ার ছিলাম ! আজ মানুষ হবার চেষ্টা করছি ! আমার এই মানুষ হবার চেষ্টায় তুই কি আমার সাথে দিতে পারবি না ?"
- পারবো দাদা ! পারব ! তোমরা আমাকে আমার ভবিষ্যৎ দেখতে শিখিয়েছো আর আমি কি তোমার অগ্নি পরীক্ষায় তোমার সাথ দিতে পারবো না ? তবে হয়তো আমি তোমার ঝর্ণা কোনোদিন হতে পারবো না কারণ আমার সেই যোগত্যা বা সামাজিক স্বীকৃতি কোনোটাই নেই ! তবুও মন থেকে আমি তোমাকেই চেয়ে যাবো চিরকাল ! এতদিন আমি তোমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছি ! এখন থেকে আমি তোমাকে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা দেব ! যেদিন আমার দরকার পড়বে সেদিন আমাকে তোমার কাছে থাকতে দেবে তো ?
ঝর্নাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম ! বুঝলাম ওর ঘৃণা তিল তিল করে ভালোবাসায় পরিনিত হয়েছে ! ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে বললাম " যদি কোনোদিন তোকে আমার দরকার পরে তখন আমাকে আপন করে নিস্ !"
বাইরের দরজায় শব্দ হতেই ঝর্ণা আমাকে ছেড়ে দরজা খুলতে চলে গেলো !
হৈ হৈ করতে করতে কোয়েলরা ঢুকে পড়লো ! সবার পিছনে নিলয় ! সবাই খুব আজ আনন্দ করেছে ! আমি কানাইয়ের কথা জিজ্ঞাসা করলাম ! নিলয় বললো যে ও চৈতালিকে ছেড়ে পরের ট্রেনে আসবে ! বুঝে গেলাম ওদের ক্ষীর ভালোই জমেছে !
নিলয় জিজ্ঞাসা করলো আজকের সন্ধ্যের কি প্রোগ্রাম ?সেরকম কোনো প্রোগ্রাম নেই ! সবাইকে নিজেদের লাগেজ গুছাতে হবে ! কাল সকালেই বেরুতে হবে ! অনেক ঝামেলা আছে !
- লাগেজ রাতে গুছালেও চলবে ! আজ তোদের সবার আমাদের ক্লাবের তরফ থেকে ডিনারের নেমন্তন্ন আছে ! তোদেরকে সারপ্রাইজ দেবার জন্য সারাদিন তোদের কিছুই বলিনি ! মাসিমা আর মেসোমশাইয়ের খাবারও আজ ক্লাব থেকে আসবে ! তোরা এক ঘন্টার মধ্যে তৈরী হয়ে যা ! আমি ক্লাব থেকে একবার ঘুরে আসি !
- কাল যাবার আছে সকালে ! আজ আবার রাতে তোরা এই ঝামেলা গুলো করতে গেলি কেন ?
- কাল ববি আর সন্দীপ এই প্রোগ্রাম করেছে ! আজকের মেনু কষা মাংস, চিংড়ির মালাইকারি আর ভাত ! যে রুটি খাবে তার জন্য রুটি !
-কষা মাংসটা না হয় বুঝলাম ! চিংড়ির মালাইকারি কে রান্না করবে ?
- ওটা আমার বাড়ি থেকে আসবে ! মায়ের রান্না হয়ে গেছে এতক্ষনে হয়তো ! বাকি সব রান্না বুধু আর শম্ভুর দাইত্ব !
আমাদের কথার মাঝেই মা যে কখন ফিরে এসেছেন সেটা খেয়াল করিনি !
- সকালে বুধু বলে গেলো যে রাতের খাবার ক্লাবে হবে ! আমার আর কোনো রান্না বান্নার ঝামেলা নেই ! তাই একটু বাজার থেকে ঘুরে এলাম !
নিলয় চলে গেলো !
রাতের পার্টির খবর শুনে সবাই যৎপরোনাস্তি খুশি হলো ! আমি সবাইকে বললাম যে নিজেদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে ! কারণ কাল সকালে অত সময় হবে না ! আমরা সাড়ে আটটার ট্রেন ধরব !
আধঘন্টার মধ্যেই সবাই যে যার লাগেজ গুছিয়ে নিলো ! মার আমাদের ঘরে এসে সবাইকে এক প্যাকেট করে গৌড়ের চানাচুরের প্যাকেট ধরিয়ে দিলেন ! বললেন " আমাদের এই জেলার এই চানাচুরটা পৃথিবী বিখ্যাত ! সঙ্গে দিলেন দেশবন্ধুর মাখা সন্দেশের প্যাকেট ! সবাই খুলতে চাইলে মা বারণ করলেন ! ফ্রিজে রাখা প্যাকেট থেকে সবাইকে একচামচ করে দিলেন ! মাখা সন্দেশ খেয়ে সবাই আবার হাত পাতলো ! কোয়েল বললো আমার প্যাকেটে কেউ হাত দিবি না ! বাড়িতে মা আর বাপিকে খাওয়াবো !
ঘন্টা খানেক পরে বুধু এলো আমাদের বাড়িতে ! সঙ্গে একটা ডেকচি ! মা বললেন কি নিয়ে এসেছিস ?
- কষা মাংস ! কাল ওরা ট্রেনের খাবারের জন্য নিয়ে যাবে !
- সে কি আমি আলুপোস্ত ভাত সব রেডি করে রেখেছি ! শুধু সকাল বেলাতে ভাত বসিয়ে দিলেই হয়ে যেত !
- এটা ওদের রাতের খাবারের ! শুধু ওদের ট্রেন থেকে রুটি কিনে নিতে হবে !
- বুধুর কোনো ধারণাই নেই যে শুধু রুটি ট্রেনে পাওয়া যায় না !
যাই হোক মা হাসি মুখে ডেচকিটা রান্না ঘরে ঢুকিয়ে নিলেন ! শুধু একটাই চিন্তা এতো খাবার কি করে আমরা নিয়ে যাবো ! বুধু যাবার আগে বলে গেলো যে ওই ডেচকিতে মা বাবা আর ঝর্ণারও মাংস আছে !
আমি বললাম ঝর্ণা আমাদের সাথে খেতে যাবে ! ওর মাংস তুই নিয়ে যা ! বুধু হেসে ফেললো !
ও চলে যাবার পর মাকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম " এতো খাবার কি করে দেবে গো ?
মা বললো যে ডিস্পোসেবেল কৌটোতে ! অনেক কৌটো আমাদের বাড়িতে আছে ! তাতেই সব হয়ে যাবে ! শুনে শান্তি পেলাম !



[/HIDE]
 
[HIDE]

সবাই ক্লাবে গিয়ে পৌঁছলাম ! ববি মদের আসর সাজিয়ে বসে আছে ! আমাদের ক্লাবের মোটামুটি সবাই হাজির ! সমীর রাজু আমার বন্ধুদের সাথে এমন মিশে গেছে যেন কত জন্মের বন্ধুত্ব ওদের ! কোয়েলরা ছাড়া ববির বৌ (মাস তিনেক আগেই বিয়ে করে ফেলেছে শালা ) স্বরসতী আরও দুজন নতুন মেয়ের মুখ দেখলাম ! এখন আর আলাপ করার সময় নেই ! মেয়েরা একটা দিকে বিয়ারের আসরে ! কোয়েলরা ছাড়া আর কেউ বিয়ার খায়না ! কিন্তু সবাই ওদের সঙ্গে থাকলো ! ওরা ওদের মতো হাসি ঠাট্টা করতে লাগলো আমরা আমাদের মতো ! আমি সবাইকে বলেদিলাম যে দু পেজের বেশি যেন না খায় ! কাল সকালে বেরুনোর আছে ! বেশি খেয়ে কিছু হয়ে গেলে ট্রেন মিস হয়ে যাবে !
গল্পে গল্পে দুয়ের জায়গায় চারে পৌঁছে গেলো ! আমি সবাইকে বললাম আর না ! এখানেই শেষ করো ! রাত দশটা বাজছে ! সবাই খেতে বসে গেলাম ! কানাই নিলয় সাধু বুধু আর শম্ভু সার্ভ করতে থাকলো ! প্রথম পাতে চিংড়ির মালাইকারি ! উম্মমা ! শুধুই যেন অমৃত ! খুব তৃপ্তি করে রাজু, সমীর , সুজাতা ওরা চিংড়ির মালাইকারি খেলো ! হায়দরাবাদে চিংড়ি পাওয়া যায় সমুদ্রের ! তবে এইরকম চিংড়ির রেসিপি ওরা কোনোদিন খায়নি ! সবাই জুলজুল করে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো ! ওদের তাকানো দেখে নিলয় সবার পাতে আরও একপিস করে চিংড়ি দিয়ে গেলো ! শেষে কষা মাংসের সাথে শুকনো ভাত ! সবাই খুব তৃপ্তি করে খেয়ে নিলাম ! বাড়ি ফিরে সবাই বিছানায় ঢলে পড়লাম !

সকাল বেলায় তাড়াতাড়ি উঠে সবাই তৈরী হয়ে নিলাম ! মা রান্না ঘরে ঝর্ণা সাথে মায়ের যোগানের কাজ করছে ! সাড়ে সাতটার মধ্যেই রিকশা চলে এলো ! মাকে বাবাকে প্রণাম করে রিকশায় উঠে বসলাম ! স্টেশনে কানাই আর নিলয় ছিল ! ওদের হাতে একটা প্যাকেট ! আমি জিজ্ঞাসা করলাম " কি আছে রে তোর প্যাকেটে ?"
- তোদের সকালের ব্রেকফাস্ট ! হাওড়া স্টেশনে বসে খেয়ে নিবি ! ট্রেন আসলে সবাই উঠে পড়লাম ! ট্রেনে ভালোই ভিড় ! বান্ডেলে গিয়ে মোটামুটি সবাই বসার সিট পেয়ে গেলাম ! একটা পলিথিন ছিল নিলয়ের হাতে ! ভিতরে শক্ত কিছু ছিল ! বার বার আমার গায়ে লাগছিলো ! আমি পলিথিনটার গায়ে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম কি আছে ওতে ! বুঝলাম মালের বোতল ! আমাদের ট্রেনের খোরাকের জন্যই হয়তো নিয়ে এসেছে নিলয় !
দশটার মধ্যেই হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে গেলাম ! অফিস টাইম ! প্রচুর ভিড় ! সমস্ত ভিড় কাটিয়ে আমরা যে প্লাটফর্মে ট্রেন দেবে তার সামনের ওয়েটিং এরিয়া তে বসে পড়লাম ! নিলয় প্যাকেট খুলে সবার হাতে ডোঙা ধরিয়ে দিলো ! দুটো করে কচুরি আর তরকারি দিলো সবাইকে ! ব্রেকফাস্ট সেরে নিলাম ! কিছুক্ষনের মধ্যেই লাহিড়ীদা কমলদা সবাই এসে হাজির ! সময়টা কথা দিয়ে কেটে গেলো বুঝতে পারলাম না ! ট্রেন দিয়ে দিয়েছে ! আমাদের টিকিট থার্ড এসি তে ! এ এস ৪ ! সবাই নিজের নিজের সিট গ্রহণ করলাম ! দরজার সামনে সবাই দাঁড়িয়ে গল্প করতে থাকলাম ! রাজু, সমীর নিলয় আর কানাইয়ের হাত ধরে ওদের হায়দরাবাদে যাবার অনুরোধ করলো ! রাজু কমলদাকে কথা দিলো সুযোগ পেলেই ও এসে কমলদার অনাথ আশ্রমে সময় কাটাবে ! কোয়েল লাহিড়ীদার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো ! ওর দেখা দেখি সবাই লাহিড়ীদা আর কমলদাকে প্রণাম করলো ! ট্রেন নড়ে উঠলে সবাই তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম ! গেটে দাঁড়িয়ে সবাইকে বিদায় জানালাম ! কানাই আর নিলয় যতক্ষণ পারলো ট্রেনের সাথে সাথে চলতে চলতে অনেক কথা বললো ! কিছুই মাথায় ঢুকছিল না ! ওদের সবাইকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো ! ধীরে ধীরে সবাই অদৃশ্য হয়ে গেলো !
আমাদের কূপেতেই আমাদের সবার সিট ! তাই এখানে অন্য কোনো বাইরের যাত্রীর জায়গা নেই ! কিছুক্ষনের মধ্যেই টিটি সাহেব চলে এলেন ! আমাদের দেখেই চিনতে পারলেন ! আসার দিন উনিই ছিলেন আমাদের টিটি ! আমাদের টিকিট আর চেক করলেন না ! শুধু বললেন আমি প্যান্ট্রির লোকেদের বলে দিচ্ছি যাতে তোমাদের খাবারের ব্যবস্থা ঠিক করে করে ! আমি বললাম আজকের খাবারের সমস্ত ব্যবস্থাই আছে ! কাল আর পরশু সকালের ব্যবস্থা করতে হবে ! উনি মাথা নাড়িয়ে চলে গেলেন !
নানান কথার মাঝেই হটাৎ কোয়েল আমাকে চেপে ধরলো ! এবার বলতো চাঁদু মঞ্জুর কেস টা কি ! আমি এড়িয়ে যেতে চাইলাম ! কিন্তু ওরা নাছোড়বান্দা ! তখন আমি ওদের ধীরে ধীরে সমস্ত কথা বললাম ! তৃপ্তিদির মৃত্যু পর্যন্ত বলে আর বলতে পারলাম না !! আমার গলা বুঁজে এলো !
কোয়েলের চোখে জল ! সেই অবস্থাতেই বললো " জানি সুনন্দ তুমি মঞ্জুর ! কিন্তু আমিও যে তোমাকে ভালোবাসি !"
- আমি তৃপ্তিদিকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি মানুষ হবো ! আর যতদিন না মানুষ হতে পারছি ততদিন আমার মঞ্জুকে কাছে পাবো না ! কারণ আমাদের সম্পর্ক আমাদের মাঝের বাধা ! তুমি আমাদের এই সম্পর্কের মধ্যে ঢুকোনা কোয়েল ! আমি আর কাউকে দুঃখী করতে বা দেখতে চাইনা !
কোয়েল কোনো কথা বললো না ! সমীর রাজু হরপ্রীত সুজাতা সবাই চুপ !
আমিই ঝেড়ে নড়েচড়ে বসলাম ! " আরে ছাড়না ওই সব কথা !" যতক্ষণ কলেজে আছি ততক্ষন তো আমরা একে অপরের সাথেই আছি ! পরের কথা পরে ভাবা যাবে ! "
টুক টাক কথার মাঝেই আবার সবার মুড্ ঠিক হয়ে গেলো কিন্তু কোয়েল গম্ভীর ! আমি কোয়েলকে বেশি ঘাঁটালাম না ! দুপুর বারোটা বাজে ! এতোদূরের রাস্তা এমনিতেই খুব ক্লান্তিকর আর একঘেয়ে !
হটাৎ হরপ্রীতের প্রস্তাব " এই সুজাতা ! ভদকার বোতলটা বের কর ! গ্লাস বের কর ! লাঞ্চের আগে দু পেগ করে ছড়িয়ে নিই ! তাহলে দুপুরের ঘুমটা ভালো হবে ! ওর কথায় রাজু লাফিয়ে উঠলো ! " তোরা ভদকার বোতল কোথায় পেলি ?"
- কাল সন্ধ্যে বেলায় নিলয়দা দিয়ে গেছে চুপি চুপি !
প্যান্ট্রি থেকে সমীর গিয়ে ঠান্ডা জলের বোতল নিয়ে এলো ! সুজাতা বললো এখনই যদি শেষ করে দিস তাহলে সন্ধ্যে বেলায় কি খাবি আর কাল কি করে কাটবে ?
শহরের মেয়ে সব ! ড্রিংক করা নিয়ে ওদের কোনো মাথাব্যথা নেই ! কিন্তু সুজাতার কথায় সবাই আমার মুখের দিকে তাকালো ! আমি বললাম আমার কাছে দু বোতল হুইস্কি আছে ! কাল নিজে একটা কিনেছিলাম ! আজ নিলয় একটা দিয়ে গেলো ! আজকের সন্ধ্যা আর কালকের দিন ভালো ভাবেই কেটে যাবে ! আমরা আমাদের কূপের পর্দা লিগিয়ে দিয়ে বসে গেলাম ড্রিংক করতে ! আমি নিজে কিছু চানাচুর কিনেছিলাম আর গোটা কুড়ি প্লাস্টিকের গ্লাস নিয়ে এসেছিলাম
[/HIDE]
 
[HIDE]

সেগুলোই এখন কাজে লাগলো ! আমি সবাইকে গ্লাস ফেলতে বারণ করলাম ! কারণ এইগুলো দিয়েই আমাদের এখনো দুদিন কাটাতে হবে ! আমাদের গ্লাসে ভদকা ঢালার মাঝেই আমাদের পর্দা সরিয়ে দুজন আরপিএফের লোক দাঁড়িয়ে পড়লো ! ওরা বোধ হয় খড়গপুর থেকে উঠেছে ! শুরু হলো আমাদের সাথে টানা পুরোন ! সমীর আর রাজু তো রীতিমতো ঝগড়া শুরু করে দিলো ! ওদের কথা ট্রেনে মদ্যপান নিষেধ তার জন্য ১০০০ টাকা করে প্রতি ব্যক্তি জরিমানা দিতে হবে ! অনাদায়ে ৩ মাসের জেল ! সামনের জামশেদপুর স্টেশনে আমাদের নামিয়ে নিয়ে যাবে ! আমাদের বিতর্কের মাঝেই টিটি সাহেবের আবির্ভাব ! উনি এসে পরিস্থিতি সামাল দিলেন ! আরপিএফ দুজন গজর গজর করতে করতে চলে গেলো ! টিটি সাহেব আমাদের স্বস্নেহে একটু ধমক দিলেন ! এবং একটু সাবধানে থাকতে বললেন ! দু পেগ করে খেয়ে আর খেতে ইচ্ছা করলো না ! এমনিতেই দিনের বেলায় ড্রিংক করতে ভালো লাগে না ! সমস্ত গুছিয়ে মায়ের দেওয়া ব্যাগ বের করলাম ! ভাত, আলুপোস্ত ! মাছের ঝোল সহকারে আমাদের লাঞ্চ সারা হয়ে গেলো ! এখনো যা বেঁচে আছে তাতে হয়তো কালকের খাবারও হয়ে যাবে ! শুধু দেখতে হবে এগুলো যেন নষ্ট না হয়ে যায় ! নিচের একটা টিফিনে কষা মাংস এবং অন্য টিফিনে অনেক রুটি !
ঠিক করলাম ! মাংস আর রুটি এখানেই রেখে দেব ! বাকি খাবার প্যান্ট্রি কারের ফ্রিজে রেখে দেওয়া যাবে ! কোয়েল বললো শুধু রুটি গুলো এখানে রাখো ! বাকি সব প্যান্ট্রিতে রেখে এস ! সন্ধ্যে বেলায় ওদের ওখান থেকেই মাংস গরম হবে !

সেই মতোই আমি প্যান্ট্রিতে গিয়ে সব রেখে এলাম ! একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে ! হয়তো দুপেগ ভদকার জন্য ! জানালার পর্দা আর কূপের পর্দা দুটোই টেনে দিয়ে সবাই শুয়ে পড়লাম ! পর্দা ফেলে দেওয়ার জন্য ভিতরটা বেশ আবছা অন্ধকার অন্ধকার লাগছিলো ! ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ! হটাৎ চা চা করে চা ওলার ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো ! জানলার পর্দা সরিয়ে দেখি সন্ধে হবো হবো হচ্ছে ! গাড়ি এখন ভুবনেশ্বরে দাঁড়িয়ে ! সবাইকে ডেকে তুললাম ! সবাই এক কাপ করে চা খেলাম ! ফ্রেস হয়ে এসে আবার গল্পে মেতে গেলাম ! সুজাতা হরপ্রীত সমীর আর রাজুর খুনসুটির মাঝে বেশ সময় কাটছে ! কোয়েল কিন্তু চুপ ! খুব বেশি কথা কারুর সাথেই বলছে না ! বুঝলাম আমার প্রত্যাখ্যান ও মেনে নিতে পারছে না ! ওর সামনে বসে ওর হাত দুটোকে আমার হাতে নিয়ে ওকে বোঝানোর চেষ্টা করতে শুরু করলাম ! ওকে বললাম " দেখো ! তোমাকে আমি আমার উশৃংখলতার কথা তোমায় বলেছি ! আর আমি উশৃঙ্খল হতে চাই না ! আমি তোমার সাথে কোনো অন্যায় করতে চাইনা ! হয়তো তোমাকে একজন বন্ধু হিসাবে ভালোবেসে যাবো কিন্তু একজন প্রেমিকা হিসাবে তোমাকে আমার এই বুকে স্থান দিতে পারবো না !"
এক ঝটকায় কোয়েল আমার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো ! সমীর রাজু হরপ্রীত সুজাতা সবাই দেখছে ! কিন্তু ওদের কিছুই করার নেই ! কোয়েল উঠে বাথরুমে চলে গেলো ! তখন আমাকে হরপ্রীত বললো " তোমার সাথে আসার আগে কোয়েল আমাকে বলেছিলো যে সবাই যে যার প্রেমিকের সাথে থাকবে ! ও তোমাকে ওর প্রেমিক হিসাবে দেখে ! কিন্তু ওর মনের কথা তোমাকে বলতে পারে নি ! তাই সেদিন যখন মঞ্জুর কাছে ও আভাস পেয়েছিলো সেদিন থেকেই ও একটু আপসেট হয়ে গেছে ! হয়তো তোমাকে এই ট্রেনে প্রপোজ করতো ! কিন্তু তুমি তার আগেই সমস্ত কথা বলে ওর মন ভেঙে দিয়েছো ! "
- ওকে তোমরা বোঝাও ! না হলে সারাজীবন আমরা দুজনেই পস্তাবো ! ও হয়তো আমার হবে কিন্তু আমি তো ওর কোনোদিন হতে পারবো না !
- যতদিন কলেজে আছো ততদিন না হয় ওর সাথেই থাকো !ওর হয়েই থেকো ! কলেজের পরে কার কি ভবিষ্যৎ সেটা আমরা কেউই জানি না ! যেমন দেখো আমি পাঞ্জাবের মেয়ে আর রাজু ইউপির ছেলে ! হয়তো আমাদের পরিবার আমাদের মেনে নেবেনা বা হয়তো কোর্স শেষ হবার পরে দুজনে যে কোথায় থাকবো তার কোনো ঠিক নেই ! ঠিক তেমনি দেখো সমীর দিল্লির ছেলে আর সুজাতা হায়দরাবাদের মেয়ে ! জানিনা আমাদের সবার মিলন হবে কি না ! কিন্তু যতদিন একসাথে আছি ততদিন তো থাকতেই পারি আমরা ! !
হরপ্রীতের কোথায় সুজাতা, সমীর রাজু সবাই সম্মতি জানালো !
আসলে আমরা বাঙালিরা একটু বেশিই সেন্টিমেন্টাল ! আমরা প্রাক্টিকাল জীবনটাকে ঠিক মতো উপভোগ করতে পারিনা আমাদের এই সেন্টিমেন্টের জন্যই !
- দেখ সুনন্দ তোর সাথে ঘুরে তোদের বন্ধুদের, কমলদা, লাহিড়ীদা সবাইকে আমাদের খুব ভালো লেগেছে ! কারণ ওরা মন দিয়ে ভালোবাসতে জানে ! কিন্তু ওরা যদি আমাদের সাথে আসে তাহলে কি আমরা ওদের মতো আন্তরিকতা দেখতে পারবো ? সম্পর্ক নিয়ে বাঙালিরা খুব ভাবুক হয় সেটা শুনেছিলাম কিন্তু সবার সাথে মিশে আমরা সেটা মনেপ্রাণে অনুভব করেছি ! কিন্তু আমরা ছোট বেলা থেকে সেই শিক্ষা পাইনি ! তাই আমাদের সেন্টিমেন্ট অনেক কম ! আমরা বিরাট প্র্যাকটিকাল রে ! তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা এতো চিন্তা করিনা ! যতক্ষণ বেঁচে আছি ঠিক ততক্ষনই বাঁচার আনন্দ নিতে জানি আমরা ! সেন্টিমেন্টে শুড়শুড়ি দিয়ে যে কোনো বাঙালিকে তুই যেমন রাগাতে পারবি তেমনি তাকে অনেক কাজে লাগিয়ে তোর কাজ উদ্ধার করতে পারবি ! কিন্তু আমাদের সেন্টিমেন্টে কেউ শুড়শুড়ি দিতে পারে না !কারণ আমরা সেনটিমেন্টের ধার ধরি না ! হয় এসপার না হয় ওসপার ! তাই বলছি। ..... এই পর্যন্ত বলে সমীর থামলো !
- তোকে শুধু দুটো সত্তা নিয়ে চলতে হবে যদি তুই জীবনে কিছু হতে চাস তাহলে ! আর যদি তুই সেটা না করতে পারিস তাহলে জীবনে যাই পাস্ না কেনো কিছুতেই সুখী হতে পারবি না ! রাজু বললো !
ওদের কথা আমাকে ভাবতে বাধ্য করালো ! তাহলে আমি আজ পর্যন্ত যা শিখেছি যা জেনেছি সব কি ভুল ?
- না ভুল নয় ! তুই শুধু টাকার একটাই পিঠ দেখেছিস ! অন্য পিঠ দেখতে চাসনি ! এবার একটু অন্য পিঠ টাকে দেখ তাহলে হয়তো নিজের ভাবনাকে বদলাতে পারবি ! সমীরের কথা খুব মনে লাগলো ! সত্যিই তো এতদিন শুধু একদিকিই দেখেছি ! কিন্তু কোনোদিন ইফ বা বাটের কথা তো চিন্তা করিনি ! শুধু একতরফাই ভেবেছি যে মঞ্জু আমার হবে ! আমার জীবন সুখী হবে ! সেটা তো নাও হতে পারে ! কখন যে কোয়েল আমাদের মাঝে বসে পড়েছে সেটা খেয়াল করিনি ! কোয়েলের দিকে তাকিয়ে বললাম " হয়তো এতো তাড়াতাড়ি আমার সেন্টিমেন্ট বদলাতে পারবো না তবে বদলাতে চেষ্টা করবো !"
- কোয়েল মাথা নিচু করলো !
আমি কোয়েলের দিকে তাকিয়ে থাকলাম ! আজ প্রায় ছয় মাস ও আমার আসে পাশে সব সময় ঘোরাঘুরি করেছে ! কিন্তু সেইভাবে ওর দিকে কোনোদিনই আমি তাকাই নি ! আজ কোয়েলকে দেখতে দেখতে বুঝতে পারলাম ও একটা মেয়ে ! আর সব মেয়ের মধ্যে যে সমস্ত সম্পদ আছে সেগুলো কোয়েলের মধ্যেও আছে এবং হয়তো বেশি করে ! মঞ্জুর থেকে কোয়েলের ফিগার অনেক সেক্সি ! অনেক ফর্সা কোয়েল এবং লম্বাও ! তাহলে আজ পর্যন্ত কেন কোয়েল আমার চোখ কে টানেনি ? সেটা কি আমার সেন্টিমেন্টের জন্য ?


[/HIDE]
 
[HIDE]

সন্ধ্যে হয়ে গেছে অনেক আগে ! গাড়ি চলছে ! আমাদের সামনে সাইড সীটে দুজন যাত্রী উঠলেন ! একজনের সিট সাইড লোয়ার আর একজনের সাইড আপার ! দুজনের বয়সই ৫৫ ষাটের কাছ কাছি ! সুমি স্ত্রী ! ভদ্রলোকের বয়স প্রায় ষাট বছর আর ভদ্রমহিলার ৫৫ বা ৫৬ হবে ! ওনারা খুব দ্বিধায় বসে আছেন ! আমি প্যান্ট্রিতে যাবার জন্য পর্দা খুলতেই দেখি ওনারা বসে আছেন ! আমি কিছুই বললাম না ! এমনিতেই ট্রেনে অনেকে যাত্রী চাপেন আর নামেন তাদের গন্তব্যে ! সেই খানে সবার সাথে পরিচয় করা যায় না ! আমি কোনো কথা না বলে প্যান্ট্রিতে চলে গেলাম ! ম্যানেজারের কে বললাম যে আমাদের রাতের খাবার খেতে মোটামুটি রাত দশটা হবে ওনাদের সেই সময় খাবার গরম করে দিতে কোনো অসুবিধা নেই তো ? উনি বললেন একটু তাড়াতাড়ি হলে ভালো হয় ! কারণ সবার দিনরাত কাজ করছে ওদের একটু রেস্ট দরকার ! বুঝলাম যে আমরা এসে থেকে প্যান্ট্রি থেকে কিছুই কিনিনি ! তাই হয়তো উনি রাজি হচ্ছেন না ! আমি কথায় কথায় ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম " এখন চাটের জন্য কি পাওয়া যেতে পারে গরম গরম ?"
একটু ভেবে বললেন চিকেন ফ্রাই পাবেন আর ফিশ কাটলেট পাবেন ! তবে একটু দেরি হবে আধঘন্টা মতো ! আমি ওনাকে ফিশ কাটলেটের অর্ডার দিয়ে তিনটে ঠান্ডা জলের বোতল নিয়ে আমাদের সিটে ফিরে এলাম ! সমীর আর রাজু ততক্ষনে সমস্ত রেডি করে ফেলেছে ! দেখি টিটি সাহেব ওই দুই যাত্রীর সাথে কথা বলছেন ! ওনাদের বললেন ! দেখি কি করতে পারি ! ততক্ষনে আপনারা পাশের কূপে বসে যান ! নেক্সট স্টেশন আসতে আসতে প্রায় দশটা বাজবে ! ততক্ষন একটু আরাম করে নিন ! ওনারা পাশের কূপে চলে গেলো ! টিটি সাহেব আমাদের কূপে ঢুকে বললেন একটু সাবধানে খেয়ো ! আমি ওনাকে আহ্বান করলাম " আপনিও আসুন আমাদের সাথে ! " বয়েসে আমরা অনেক ছোট তাই হয়তো টিটি সাহেব একটু ইতস্তত করছেন ! আমি বললাম " স্যার ! এখন আমরা অ্যাডাল্ট ! আর তাছাড়া কোনো না কোনো সময় তো বয়সের ব্যবধান টাকে ভাঙতেই হবে ! কারণ আপনি ট্রেনে কত লোকের সাথে আলাপ করেন কত নতুন নতুন লোক দেখেন ! আপনার তো সংকোচ হয় উচিত নয় !
উনি বললেন " তোমরা শুরু করো ! আমি আধঘন্টা পরে আসছি ! যে সমস্ত প্যাসেঞ্জার উঠেছে তাদের টিকিট চেক করে আসছি ! "
আমরা পর্দা টেনে দিয়ে হুইস্কির বোতল খুলে বসে পড়লাম ! মেয়েদের বললাম তোরা ভদকা খেয়ে না ! যতটা আছে তোদের জন্য অনেক ! কিন্তু ওরা বললো ওরাও হুইস্কি খাবে ! তিনজন মেয়ের গ্লাসে হালকা হালকা ঢেলে দিলাম হরপ্রীত চোখটাকে ট্যারা করে আমার দিকে তাকালো ! আমি বললাম হুইস্কি একটু বেশি হার্ড ! আর এতে নেশাও প্রচুর হয় ! ধীরে ধীরে খা ! একটা কাগজ বিছিয়ে তাতে চানাচুর ঢালা হলো ! বাইরে একটা হকার পোকোরে পোকোরে বলে আওয়াজ দিছিলো ! সমীর উঠে গিয়ে ২০ টাকার পকোড়া নিয়ে এলো ! যেটাকে আমরা পিঁয়াজি বলি সেটাই ! বেশ গরম ছিলো ! পিঁয়াজি দিয়ে হুইস্কি বেশ ভালোই লাগছিলো ! প্রথম পেগ মুখে দিয়েই মেয়েরা মুখটাকে একটু ব্যাঁকা করলেও এক চুমুকে পুরো গ্লাস শেষ করে দিলো ! আসলে ওদের বিয়ার আর ভদকা খাবার অভ্যাস আছে ! তাই একটু করা হলেও ওদের বেশি প্রব্লেম হলো না ! দ্বিতীয় পেগ ডলার মাঝেই ফিশ কাটলেট চলে এলো ! পেগ ঢালার মাঝেই টিটি সাহেব ফিরে এলেন ! ওনার জন্য একটা গ্লাস বের করে বোতল ওনার হাতে ধরিয়ে দিলাম ! বললাম " আপনি নিজেই নিজের মতো নিয়ে নিন স্যার ! "
উনি কোনো কথা না বলে একটা পাটিয়ালা পেগ ঢেলে তাতে জল ঢাললেন !
মাল খেতে খেতেই উনি বললেন ওই দুই যাত্রীর কথা ! দুজনেরই আলাদা আলাদা সিট পড়েছে আর দুটোই উপরে ! আমরা যদি একটু এডজাস্ট করে ওনাদের লোয়ার দুটো সিট দিতে পারি। ..... কারণ সামনের দুটো লোয়ার সিটে সামনের স্টেশন থেকে দুজন চড়বে ! ওরা যদি এডজাস্ট করতে না চায় তখন ওই দুই পৌঢ়র খুব অসুবিধা হবে !
- সে জন্য আপনি চিন্তা করবেন না ! আগে দেখুন সামনের স্টেশনে যারা উঠবে তারা যদি রাজি না হয় তখন না হয় আমরা এডজাস্ট করে নেবো !
টিটি সাহেব আরও একটা পাতিয়ালা পেগ মেরে চলে গেলেন ! আমাদের তখন দুই পেগ শেষ হয়ে গেছে ! মেয়েরা কেউই টিটির সামনে খায়নি ! আর না খাবার কারণও আছে কোয়েলের বাবা ওই টিটির বন্ধু ! উনি যদি সুভাষ বাবুকে তার মেয়ের কীর্তি বলে দেন তাহলে কোয়েলের বাড়িতে প্রব্লেম হয়ে যাবে ! টিটি চলে যেতেই হরপ্রীত আমার হাত থেকে বোতল কেড়ে নিয়ে নিজেদের পেগ নিজেরাই বানিয়ে নিলো ! টিটির মতো অত বড়ো না হলেও বেশ বড়ো পেগ ই বানালো ! আমি কিছুই বললাম না ! শুধু দেখে গেলাম !


ফিশ ফ্রাইয়ের আমরা বিশেষ কিছুই পেলাম না ! মেয়েরাই গপ গোপি করে শেষ করে দিলো ! শেষ পেগ যখন নিলাম তখন বোতলে মাত্র দুই কি তিন পেগ বেঁচে আছে ! মেয়েদের সবার চোখ লাল ! কেবিনের নীলাভ আলোয় সব কটা মেয়েকেই খুব সেক্সী আর রহস্যময়ী লাগছিলো ! কোয়েলের চোখ ঢুলুঢুলু ! সেই অবস্থাতেই আমাকে দেখে যাচ্ছে ! আমি আমাদের জন্য শেষ পেগ ঢেলে বাকি বোতলটা ব্যাগে ঢোকাতে যাবো ঠিক তখনই কোয়েল আমার হাত থেকে বোতলটা কেড়ে নিলো ! " তোমাকে আমার দরকার নেই ! আজ থেকে এই বোতল আমার সাথী ! তোমরাই শুধু দেবদাস হতে জানো ! আমি কি দেবদাসী হতে পারিনা ?"
ওর কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম ! ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম ! দেবদাস হওয়া যায় না ! দেবদাস একজনের নাম ছিল ! সে প্রেমে ঢোকা খেয়েছিলো তাই তার নাম ফেমাস হয়ে গেছিলো ! আর দেব দাসী মানে যারা পুরোহিতদের বাঁধা মেয়েছেলে ! ভগবানের নাম উৎসরকৃত হলেও ওরা পুরোহিতদের সেক্সের পুতুল ছিল !
কোয়েল রাগে গোঁ গোঁ করতে লাগলো ! আমি হরপ্রীতকে ইশারা করলাম ! হরপ্রীত ওর হাত থেকে বোতল কেড়ে নেবার চেষ্টা করলো ! কিন্তু ও কিছুতেই বোতল দেবেনা ! রাজু বললো ছেড়ে দে ! ওকে খেতে দে ! আমি উঠে চলে গেলাম প্যান্ট্রিতে ! যা খুশি করুক ! আমার দেখার দরকার নেই ! প্যান্ট্রিতে মাংস গরম করতে বলে ফিরে এলাম ! দেখি তিন মেয়ের গ্লাসে সব মালটাই ঢেলে দিয়েছে কোয়েল ! খাক ওরা !
-একটু সাবধানে খা ! এটা ট্রেন ! আমাদের বাড়ি না ! !


[/HIDE]
 
[HIDE]

সন্ধ্যে হয়ে গেছে অনেক আগে ! গাড়ি চলছে ! আমাদের সামনে সাইড সীটে দুজন যাত্রী উঠলেন ! একজনের সিট সাইড লোয়ার আর একজনের সাইড আপার ! দুজনের বয়সই ৫৫ ষাটের কাছ কাছি ! সুমি স্ত্রী ! ভদ্রলোকের বয়স প্রায় ষাট বছর আর ভদ্রমহিলার ৫৫ বা ৫৬ হবে ! ওনারা খুব দ্বিধায় বসে আছেন ! আমি প্যান্ট্রিতে যাবার জন্য পর্দা খুলতেই দেখি ওনারা বসে আছেন ! আমি কিছুই বললাম না ! এমনিতেই ট্রেনে অনেকে যাত্রী চাপেন আর নামেন তাদের গন্তব্যে ! সেই খানে সবার সাথে পরিচয় করা যায় না ! আমি কোনো কথা না বলে প্যান্ট্রিতে চলে গেলাম ! ম্যানেজারের কে বললাম যে আমাদের রাতের খাবার খেতে মোটামুটি রাত দশটা হবে ওনাদের সেই সময় খাবার গরম করে দিতে কোনো অসুবিধা নেই তো ? উনি বললেন একটু তাড়াতাড়ি হলে ভালো হয় ! কারণ সবার দিনরাত কাজ করছে ওদের একটু রেস্ট দরকার ! বুঝলাম যে আমরা এসে থেকে প্যান্ট্রি থেকে কিছুই কিনিনি ! তাই হয়তো উনি রাজি হচ্ছেন না ! আমি কথায় কথায় ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম " এখন চাটের জন্য কি পাওয়া যেতে পারে গরম গরম ?"
একটু ভেবে বললেন চিকেন ফ্রাই পাবেন আর ফিশ কাটলেট পাবেন ! তবে একটু দেরি হবে আধঘন্টা মতো ! আমি ওনাকে ফিশ কাটলেটের অর্ডার দিয়ে তিনটে ঠান্ডা জলের বোতল নিয়ে আমাদের সিটে ফিরে এলাম ! সমীর আর রাজু ততক্ষনে সমস্ত রেডি করে ফেলেছে ! দেখি টিটি সাহেব ওই দুই যাত্রীর সাথে কথা বলছেন ! ওনাদের বললেন ! দেখি কি করতে পারি ! ততক্ষনে আপনারা পাশের কূপে বসে যান ! নেক্সট স্টেশন আসতে আসতে প্রায় দশটা বাজবে ! ততক্ষন একটু আরাম করে নিন ! ওনারা পাশের কূপে চলে গেলো ! টিটি সাহেব আমাদের কূপে ঢুকে বললেন একটু সাবধানে খেয়ো ! আমি ওনাকে আহ্বান করলাম " আপনিও আসুন আমাদের সাথে ! " বয়েসে আমরা অনেক ছোট তাই হয়তো টিটি সাহেব একটু ইতস্তত করছেন ! আমি বললাম " স্যার ! এখন আমরা অ্যাডাল্ট ! আর তাছাড়া কোনো না কোনো সময় তো বয়সের ব্যবধান টাকে ভাঙতেই হবে ! কারণ আপনি ট্রেনে কত লোকের সাথে আলাপ করেন কত নতুন নতুন লোক দেখেন ! আপনার তো সংকোচ হয় উচিত নয় !
উনি বললেন " তোমরা শুরু করো ! আমি আধঘন্টা পরে আসছি ! যে সমস্ত প্যাসেঞ্জার উঠেছে তাদের টিকিট চেক করে আসছি ! "
আমরা পর্দা টেনে দিয়ে হুইস্কির বোতল খুলে বসে পড়লাম ! মেয়েদের বললাম তোরা ভদকা খেয়ে না ! যতটা আছে তোদের জন্য অনেক ! কিন্তু ওরা বললো ওরাও হুইস্কি খাবে ! তিনজন মেয়ের গ্লাসে হালকা হালকা ঢেলে দিলাম হরপ্রীত চোখটাকে ট্যারা করে আমার দিকে তাকালো ! আমি বললাম হুইস্কি একটু বেশি হার্ড ! আর এতে নেশাও প্রচুর হয় ! ধীরে ধীরে খা ! একটা কাগজ বিছিয়ে তাতে চানাচুর ঢালা হলো ! বাইরে একটা হকার পোকোরে পোকোরে বলে আওয়াজ দিছিলো ! সমীর উঠে গিয়ে ২০ টাকার পকোড়া নিয়ে এলো ! যেটাকে আমরা পিঁয়াজি বলি সেটাই ! বেশ গরম ছিলো ! পিঁয়াজি দিয়ে হুইস্কি বেশ ভালোই লাগছিলো ! প্রথম পেগ মুখে দিয়েই মেয়েরা মুখটাকে একটু ব্যাঁকা করলেও এক চুমুকে পুরো গ্লাস শেষ করে দিলো ! আসলে ওদের বিয়ার আর ভদকা খাবার অভ্যাস আছে ! তাই একটু করা হলেও ওদের বেশি প্রব্লেম হলো না ! দ্বিতীয় পেগ ডলার মাঝেই ফিশ কাটলেট চলে এলো ! পেগ ঢালার মাঝেই টিটি সাহেব ফিরে এলেন ! ওনার জন্য একটা গ্লাস বের করে বোতল ওনার হাতে ধরিয়ে দিলাম ! বললাম " আপনি নিজেই নিজের মতো নিয়ে নিন স্যার ! "
উনি কোনো কথা না বলে একটা পাটিয়ালা পেগ ঢেলে তাতে জল ঢাললেন !
মাল খেতে খেতেই উনি বললেন ওই দুই যাত্রীর কথা ! দুজনেরই আলাদা আলাদা সিট পড়েছে আর দুটোই উপরে ! আমরা যদি একটু এডজাস্ট করে ওনাদের লোয়ার দুটো সিট দিতে পারি। ..... কারণ সামনের দুটো লোয়ার সিটে সামনের স্টেশন থেকে দুজন চড়বে ! ওরা যদি এডজাস্ট করতে না চায় তখন ওই দুই পৌঢ়র খুব অসুবিধা হবে !
- সে জন্য আপনি চিন্তা করবেন না ! আগে দেখুন সামনের স্টেশনে যারা উঠবে তারা যদি রাজি না হয় তখন না হয় আমরা এডজাস্ট করে নেবো !
টিটি সাহেব আরও একটা পাতিয়ালা পেগ মেরে চলে গেলেন ! আমাদের তখন দুই পেগ শেষ হয়ে গেছে ! মেয়েরা কেউই টিটির সামনে খায়নি ! আর না খাবার কারণও আছে কোয়েলের বাবা ওই টিটির বন্ধু ! উনি যদি সুভাষ বাবুকে তার মেয়ের কীর্তি বলে দেন তাহলে কোয়েলের বাড়িতে প্রব্লেম হয়ে যাবে ! টিটি চলে যেতেই হরপ্রীত আমার হাত থেকে বোতল কেড়ে নিয়ে নিজেদের পেগ নিজেরাই বানিয়ে নিলো ! টিটির মতো অত বড়ো না হলেও বেশ বড়ো পেগ ই বানালো ! আমি কিছুই বললাম না ! শুধু দেখে গেলাম !


যেই আমার কথা শোনা অমনি কোয়েল চেঁচিয়ে উঠলো " ট্রেন তো কি হয়েছে ? পয়সা দিয়ে টিকিট কেটে বসেছি ! কার বাপের হিম্মত আছে আমার কিছু করবে ? তুমি শালা ফাট্টু ! তোমার ফাটে ! নিজের পিসির মেয়ের সাথে প্রেম করছো আর আমি তোমাকে ভালোবাসলেই দোষ ?"
প্রমাদ গুনলাম ! আজ কোয়েল ভোগাবে ! ইতিমধ্যেই দু একজন উঁকি মেরে দেখে গেছে কি চলছে এখানে ! সুজাতা গলা বাড়িয়ে সবাইকে বলেছে কিছুই না ! আমাদের নিজেদের ঝগড়া চলছে ! আপনারা যান ! বেশ বুঝতে পারছি সবাই চলে গেলেও প্রত্যেকের কান খাড়া আমাদের ঝগড়া শোনার জন্য !
- তুমি আমার সাথে চিট করেছো ! আমাকে ধোঁকা দিয়েছো ! আমার কলার ধরে কোয়েল চেঁচিয়ে উঠলো ! আমি ওর হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম ! কিন্তু মালের নেশায় ওকে কিছুতেই থামানো যাচ্ছিলো না ! মোটামুটি আশেপাশের সবাই উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছিলো ! সুজাতা, হরপ্রীত সবাই কোয়েলকে থামানোর চেষ্টা করছিলো ! কিন্তু কোয়েল কিছুতেই থামতে চায়না ! বেশ কিছুক্ষন সহ্য করার পর আর পারলাম না ! টেনে একটা চর মারলাম কোয়েলের গালে !
আমার চর খেয়ে কোয়েল থতমত খেয়ে গেলো !
দুচোখে জল নিয়ে আমাকে বললো " তুমি আমাকে মারতে পারলে ?" কেঁদে ফেললো ! ওকে জড়িয়ে ধরে আমি স্বান্তনা দেবার চেষ্টা করলাম ! ও আমাকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকলো ! আমি ওকে ছাড়লাম না ! জানি যদি আমি ওকে ছেড়ে দিই তাহলে ও একটা বিরাট কেওয়াশ সৃষ্টি করবে ! ওকে থামানোর জন্য ওর মাথায় গায়ে হাত বুলাতে বুলাতেই ওকে বললাম " তোমাকে আমিও ভালোবাসি কোয়েল !কিন্তু তুমি তো জানো। ....."
আমার বুকে মাথা গুঁজে ও কাঁদতে কাঁদতে বললো " আমার কিছুই জানার দরকার নেই !! আমি তোমাকে ভালোবাসি ! আমার বাবা মা সবাইকে আমি বলে রেখেছি ! তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে ভাবতেই পারিনা সুনন্দ ! " ওর কথা শুনে আমি স্তম্ভিত !" ও যে মনে মনে এতদূর এগিয়েছে সেটা আজকের আগে ঘূর্ণাক্ষরেও আমাকে জানতে দেয়নি ! এখন আর কিছুই করার নেই ! ওকে জড়িয়ে রাখলাম ! কেমন যেন মনে হতে লাগলো মঞ্জু আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ! অনেক দূরে !

কাঁদতে কাঁদতে কোয়েল আমার বুকেতেই ঘুমিয়ে পড়লো ! প্যান্ট্রির একটা ছেলে আমাদের মাংসের পাত্র গরম করে দিয়ে যেতেই আমি ওদের বললাম " তোরা খাবার ব্যবস্থা কর ! কোয়েলকে আগে খাইয়ে দিয়ে তারপর আমি খাবো ! জোর করে ঘুমন্ত কোয়েলের মুখে আমি রুটি আর মাংস ঢুকিয়ে দিতে থাকলাম ! সবার খাওয়া হলে আমি হরপ্রীত আর সুজাতাকে বললাম ওরা যেনো কোয়েলকে জোর করে বাথরুমে নিয়ে যায় ! কারণ মালের নেশায় মেয়েরা কি কী করে সেটা আমার থেকে বেশি কেউ জানেনা ! ওরা অনেক কষ্টে কোয়েলকে বাথরুমে নিয়ে গেলো ! কখন যে পরের স্টেশন পেরিয়ে গেছে কোয়েলের পাগলামিতে সেটাও খেয়াল করতে পারিনি ! টিটি সাহেব বললেন ! পিছনের কূপে ভদ্রলোকের ব্যবস্থা হয়েছে ! কিন্তু ভদ্রমহিলার ব্যবস্থা হয়নি ! কারণ সাইড এর লোয়ার সিটে একজন বৃদ্ধা রয়েছেন ! আমি বললাম "চিন্তার কোনো কারণ নেই ! ওনাকে আমাদের লোয়ার বার্থ এ শুইয়ে দেব ! কিন্তু একটু সময় লাগবে ! এখনো আমার খাওয়া হয় নি ! টিটিসাহেব আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেলেন ! কোয়েল আমার সমস্ত নেশার পিন্ডি চটকে দিয়েছিলো ! তাই আমার ব্যাগ থেকে অন্য বোতল বের করে একটা মোটা পেগ ঢেলে বোতল ব্যাগেই ঢুকিয়ে দিলাম ! এক চুমুকেই সমস্ত পেগ শেষ করে দিলাম ! ওরা এখনো ফেরেনি ! ঘটনার আস্বকীতায় সমীর আর রাজু একটু উদভ্রান্ত ! ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম ! "তোরা বলেছিলিস না সেন্টিমেন্ট ? দেখ সেন্টিমেন্ট কি ভাবে কাজ করে ! তোদের জীবনে হয়তো এই সেন্টিমেন্ট নেই ! কিন্তু একজন বাঙালি হিসাবে আমার সেন্টিমেন্টের দাম অনেক রে ! কারণ আমরা বাঙালিরা ভালোবাসতে জানি ! কেয়ার করতে জানি ! " চোখ জ্বলছিল ! কেবল থেকে বাইরে বেরিয়ে এলাম ! একটা সিগারেট ধরালাম ! খুব জোরে সিগারেটে টান দিতে থাকলাম ! বুকের জ্বলন আর সিগারেটের ধোঁয়ায় জ্বলন দুটোই মিশে গেলো ! সিগারেট শেষ করে কেবিনে ফিরলাম ! সমস্ত খাবার এখনো খোলা অবস্থায় পরে আছে ! কোনোরকমে একটা রুটি খেলাম ! সমস্ত প্যাক করে প্যান্ট্রির দিকে যাবার সময় দেখি হরপ্রীত বাথরুমের বাইরে উদভ্রান্তের মতো দাঁড়িয়ে ! আমি বললাম " কি হলো ? "


[/HIDE]
 
[HIDE]

সুজাতা অনেকক্ষন কোয়েলকে নিয়ে ঢুকেছে ! কিন্তু এখনো বেরুচ্ছে না ! আমি বাথরুমের দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা লাগাতেই সুজাতা ভিতর থেকে বলে উঠলো " একটু টাইম লাগবে ! "
বুঝলাম সব ঠিক আছে ! প্যান্ট্রির ফ্রিজে খাবার রেখে ফিরে এলাম ! সুজাতা হরপ্রীত সমীর রাজু সবাই কেবিনে বসে আছে ! আমি কোয়েলের কথা জিজ্ঞাসা করতে ওরা বললো যে সাইড আপারে ওকে অনেক কষ্টে তুলে দিয়েছে ! ও এখন গভীর ঘুমে !
পাশের কেবিনে গিয়ে ভদ্রমহিলাকে বললাম যে উনি এখন আমাদের এখানে এসে শুতে পারে !
উনি আমাদের ধন্যবাদ জানিয়ে ভদ্র্লোককে একটা ট্যাবলেট খাইয়ে আর নিজে একটা ট্যাবলেট খেয়ে চলে এলেন ! ভেবেছিলাম বয়স হয়েছে তাই হয়তো ওষুধের প্রয়োজন ! জিজ্ঞাসা করলাম কিসের ট্যাবলেট খাচ্ছেন ? উনি বললেন ঘুমের ! রাতে ওনাদের ঘুম হয়না ! তাই ঘুমের টেবলেট নিতে হয় !
কোয়েলের সিটে ওনাকে বিছানা করে দেওয়া হলো ! আমি আপার সিটে ! একদিকের লোয়ার সিটে সুজাতা, মিডল সাথে হরপ্রীত ! আর আমার অপজিটে রাজু ! আমার নিচে সমীর !
ঘুম আসছিলো না কিছুতেই ! একবার উঠে কোয়েলকে দেখতে গেলাম ! ওর শরীরে কোনো চাদর ছিল না ! বেডরোল খুলে ওর গায়ে চাদর দিয়ে দিলাম ! মাথায় বালিশ গুঁজে দিলাম ! কেবিনের বাইরে এসে আবার একটা সিগারেট ধরালাম ! টিটি সাহেব নিজের কাজ সেরে ফিরছিলেন ! আমাকে বাইরে দেখে একটা সিগারেট চাইলেন ! সিগারেট ধরিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন " কিসের ঝগড়া চলছিল ? সবাই কিন্তু আমাকে কমপ্লেইন করেছে ! আমি পাত্তা দিইনি ! কারণ আমি জানতাম যে ট্রেনে মাল খেতে খেতে অনেকেই ঝগড়া করে ! "
- না সেরকম কিছুই না ! এটা প্রেমের ঝগড়া ! এটা মাল না খেলেও হয় আবার খেলেও হয় !
তিটি সাহেব হাসতে শুরু করে দিলেন ! " এই বয়েসে এইরকম হবে নাতো কি আমাদের বয়েসে হবে ? ! তবে এগুলো ট্রেনে না করে যদি বাড়িতেই করা যায় তাহলে ভালো হয় !
টিটির কথায় আমার ঝাঁট পর্যন্ত জ্বলে উঠলো ! হাসতে হাসতেই বললাম " যদি আপনার এখন হিসি পায় তাহলে কি আপনি এখানেই মানে বাথরুমে করবেন নাকি বাড়িতে গিয়ে করবেন?"
ভদ্র্লোক থতমত খেয়ে গেলেন ! আমি বললাম "দেখুন আমাদের যা বয়স এই বয়েসে যদি আমরা গলা খুলে ঝগড়া না করতে পারি তবে কবে করবো ?এটাই তো আমাদের সময় ! এখনই তো আমরা ভালোবাসবো ঝগড়া করবো ! মারামারি করবো ! আপনাদের বয়েসে এসে কি আর সেই সব জিনিস করতে পারবো?"
- ঠিক ঠিক ! তবে কিনা ট্রেনে। .......
- আমরা সময় কাল পাত্র কিছুই দেখিনা ! আমাদের উন্মাদনা আমাদের এক নতুন পৃথিবী দেখায় ! আপনাদের পৃথিবীকে আমরা বিশ্বাস করতে চাইনা ! যদিও জানি যখন আপনাদের বয়সে আমরা পৌঁছাবো তখন আপনাদের মতোই বেহভে করবো ! কিন্তু এখন তো মন মানতে চায়না !
ঘাড় নাড়তে নাড়তে টিটি সাহেব বিদায় নিলেন !
আমিও বাথরুম সেরে নিজের সিটে শুয়ে পড়লাম ! সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে ! বেশ কিছু নাক ডাকার শব্দ পাচ্ছি ! চোখ বুঁজে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম ! কিন্তু কোয়েলের আহবান আমাকে কিছুতেই ঘুমাতে দিচ্ছে না !

যখন আমরা কলকাতা এসেছিলাম তখন মনে হয়েছিল আমাদের যাত্রা কত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো ! কলকাতা থেকে ফেরার যাত্রা আর শেষ হতে চায় না ! এক ঘেয়েমি লাগছে ! আজ সকাল থেকেই কেউ বেশি কথা বলছে না ! কোয়েল একদম চুপ ! হরপ্রীত আর সুজাতা কোয়েলের সাথে বসে আছে ! সমীর রাজু আর আমি অন্যদিকে ! সকাল দশটা বাজছে ! অল্প খিদে খিদে পাচ্ছে ! প্যান্ট্রিতে গিয়ে সবার জন্য ব্রেড ওমলেট বলে এলাম ! ওরা জিজ্ঞাসা করলো আমাদের যে খাবার গুলো রাখা আছে সেগুলোর কি করবে ! আমি বললাম তোমরা গরম করে খেয়ে নাও ! সিটে বসার মিনিট পনেরোর মধ্যেই ব্রেড ওমলেট চলে এলো ! চুপচাপ খেয়ে নিলাম ! আমাদের সামনের সিটের দুই বৃদ্ধ যাত্রীকে দেখতে পেলাম না ! হয়তো ওরা নেমে গেছে ! এগারোটা নাগাদ সমীর হরপ্রীতকে ভদকা বের করতে বললো ! আমি বললাম "তোরা খা ! আমার ইচ্ছে নেই !"
কোয়েল আর সুজাতা খেলো না ! যেটুকু বেঁচে ছিল তাতেই ওদের হয়ে গেলো ! দুপুরের খাবারের অর্ডার নিতে আসলে আমরা ননভেজ মিলের অর্ডার দিলাম ! কোয়েল জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে ! আর আমি তাকিয়ে আছি কোয়েলের দিকে ! কোয়েল দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী ! কাঁচের জানালা দিয়ে যেটুকু রোদ ওর মুখে পড়ছে তাতে ওকে আরও সুন্দরী দেখাচ্ছে ! একবার ইচ্ছে হলো কোয়েলকে জড়িয়ে ধরে আদর করি ! পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলাম ! সেই কাল সকালে স্নান করেছি ! সারা শরীর জ্বলছে ! খাবার আসতে এখনো দেরি আছে ! সময় কিছুতেই কাটতে চায়না ! ব্যাগ থেকে গামছা বের করে একটা বারমুডা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম ! ট্রেনের এইটুকু বাথরুমে স্নান করতে খুবই অসুবিধা হয় ! তাতেও স্নান করে নিলাম ! শরীরটা অনেক ঝরঝরে লাগছে ! কূপে ফিরে এসে গামছাটা উপরের বার্থ এ টাঙিয়ে দিলাম ! আমার দেখা দেখি কোয়েল আর সুজাতা দুজনেই বাথরুমে চলে গেলো ! মিনিট দশেকের মধ্যেই ওরা ফিরে এলো ! এখন কোয়েলকে আরও তরতাজা লাগছে ! কাল থেকে ও একটা সালোয়ার পরে ছিল ! এখন পরনে একটা ছোট্ট বারমুডা আর একটা টাইট টিশার্ট !
এই পোশাকে সত্যিই কোয়েলকে সেক্সের দেবী লাগছিলো ! আমি অপলক কোয়েলের দিকে তাকিয়ে রইলাম ! সম্বিৎ ফিরলো হরপ্রীতের খোঁচাতে ! " ইশারাতে একটা চোখ টিপে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো "মনে ধরেছে মনে হচ্ছে !"
ওর বলার ধরণ দেখে একটু লজ্জা পেয়ে গেলাম ! ঘাড় নাড়িয়ে বললাম না ! সেইরকম কোনো ব্যপার নয় ! সুজাতাও একটা বারমুডা আর টিশার্ট পড়েছে ! ওর শরীরটা একটু বড়সরো সমস্ত জিনিস প্রকট কিন্তু কোয়েলের কাছে কিছুই নয় !
কথা ঘোরানোর জন্য আমি সমীরদের বললাম " যা তোরাও স্নান সেরে আয় !"
- না আমাদের স্নান করার কোনো দরকার নেই ! স্নান করলেই নেশা কেটে যাবে !
আমাদের খাবার চলে এসেছে ! ডাল ভাত দুটো রুটি দু পিস্ ছোট ছোট চিকেনের ঝোল আর আলু ফুলকপি ভাজা ! খেয়ে নিলাম টুকটাক গল্প করতে করতেই ! কোয়েল একটাও কথা বলেনি এখনো পর্যন্ত !
কি চাইছে কোয়েল ? কেন ও বোঝার চেষ্টা করছে না যে কেউ আমার পথ চেয়ে বসে আছে ! তাকে আমি কথা দিয়েছি ! সব জেনেও কোয়েল অবুঝের মতো ব্যবহার করছে !
খোয়া হয়ে গেলে সবাই শুয়ে পড়লো ! আমি বাইরে এসে একটা সিগারেট ধরালাম ! টিটি সাহেবের সাথে দেখা ! উনি আমাকে বাথরুমের ভিতরে গিয়ে সিগারেট খেতে বললেন ! এই রুটে এখন থেকে খুব পুলিশের দৌরাত্য বাড়বে ! কারণ এখন আমরা নাকষালাইট বেল্টের উপর দিয়ে যাচ্ছি ! ওনার কথা মেনে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে সিগারেট শেষ করলাম ! বার্থে ফিরে এসে শুয়ে পড়লাম !
ঘুম আসছে না ! সুজাতা আর কোয়েল দুজনেই চুপচাপ বসে আছে সাইড এর সিটে ! নিচে নেমে ব্যাগ থেকে শারদীয়ার নবকল্লোল বের করলাম ! এটা খালি সময়ে পড়ার জন্য কিনেছিলাম ! সাথে একটা আনন্দবাজার পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যাও কিনে নিয়ে এসেছিলাম ! এখন নবকল্লোল পড়া যাক ! শুয়ে শুয়ে সৈয়দ মুস্তাফা সিরিজের একটা রহস্য উপন্যাস পড়তে শুরু করলাম ! টান টান উত্তেজনা ! আমার আর কোনোদিকে খেয়াল নেই ! সন্ধ্যে বেলায় শেষ করে তবেই উঠলাম ! সময়টা বেশ কেটে গেলো ! নিচে নেমে দেখি সুজাতা আর কোয়েল চা খাচ্ছে ! হরপ্রীত এখনো শুয়ে আছে ! সমীর আর রাজুর দেখা পেলাম না ! হয়তো বাথরুমে গেছে ! হরপ্রীতকে ঠেলে তুললাম ! ও উঠে বসলো ! মিনিট কুড়ি পরে সমীর আর রাজু ফিরে এলো ! ওদের জিজ্ঞাসা করলাম "কোথায় গিয়েছিলিস তোরা ?"
- ট্রেনের এই প্রান্ত থেকে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে এলাম ! কতরকমের লোক দেখে এলাম ! এসিতে ওই মজা নেই ! কেউ কারুর সাথে কথা বলেনা ! স্লিপার কোচে সবাই কেমন গল্প করছে ! কেউ বা তাস খেলছে ! কত হকার !

[/HIDE]
 
[HIDE]


এটা ঠিক কথা ! এসিতে যারা সফর করে তারা নিজেদের একটু ভিআইপি মনে করে ! সাধারণ মানুষের মাঝে থাকার আনন্দটাই আলাদা ! একটা প্যাকেট বের করলো " রাতের মদের চাট নিয়ে এলাম ! " দেখি ছোলা বাদাম মটর সব দিয়ে চটপটি মতো বানানো হয়েছে ! সন্ধ্যে হতে দেরি নেই ! সবাইকার হাতে একটু একটু দিলো রাজু ! সবাই বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে খেতে থাকলো ! আর কাউকে দেবোনা ! এটা রাতের চাট ! প্যান্ট্রি থেকে একজন আমাদের রাতের খাবারের অর্ডার নিতে আসলো ! আমি ভেজ ফ্রাইড রাইসের অর্ডার দিলাম ! ওরা ননভেজ থালির অর্ডার দিলো ! ছেলেটিকে ঠান্ডা জলের বোতল আনতে বললাম আর সাথে চিকেন ফ্রাই ! ও অর্ডার নিয়ে চলে গেলো ! মিনিট দশেকের মধ্যেই তিনটে জলের বোতল দিয়ে বলে গেলো পনেরো মিনিটের মধ্যেই চিকেন ফ্রাই চলে আসবে ! আমি ব্যাগ থেকে হুইস্কির বোতল বের করলাম সুজাতা আর কোয়েল সাইড সিট থেকে আমাদের সামনের সিট এ এসে বসলো ! রাজু আমাদের কূপের পর্দা টেনে দিলো ! সমীর বললো " আজ যেন কেউ কোনো বাওয়াল করোনা ! যদিও উদ্যেশ্যটা ছিল কোয়েলকে বলার কিন্তু হরপ্রীত ঝাঁজিয়ে উঠলো " হ্যা আমরাই তো বাওয়াল করি !" আমি হাত দেখি
য়ে ওকে থামিয়ে দিই ! ও হেসে ফেলে !
আজ খুব শান্তি পূর্ণ ভাবে মাল খাওয়া শেষ হলো ! হয়তো এটাই আমাদের সবার একসাথে শেষ মাল খাওয়া ! এরপর কোথায় বসে খাবো তার ঠিক নেই ! ফ্রাই চিকেনে আর তার সাথে সমীরের আনা চাট ভালোই জমলো ! বেশ কিছুটা বেঁচে গেলো বোতলে ! আমি বার্থের নিচে রেখে দিলাম ! সমীর জিজ্ঞাসা করলো রেখে দিলি কেন ?
- টিটি সাহেব কে দেব ! আমরা যা খেয়েছি সেটা যথেষ্ট ! বেশি খেয়ে বাওয়াল করতে চাইনা ! কোয়েল আজ চুপচাপ খেয়ে গেছে ! কোনো কথা বলেনি !

রাত তখন প্রায় ১২টা ! হটাৎ ট্রেনের মধ্যে হুলুস্থূলুস পরে গেলো ! আরপিএফ জিআরপিএফ সাধারণ মানুষের ছোঁটা ছুঁটি ! ট্রেনের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে সবাই ! ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে ! আমি নেমে দেখতে চেষ্টা করলাম ! প্যান্ট্রির একটা ছেলে আমাকে বাইরে যেতে বারণ করলো ! কেন কিসের জন্য কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না ! ট্রেনের বডিতে দুমদাম শব্দ ! মোটামুটি সবাই জেগে গেছে ! কি হচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না ! জানালায় পাথর এসে পড়ছে ধুপধাপ ! যেহেতু ট্রেনের এসি কোচের সমস্ত জানালা সহজে ভাঙতে চায়না তবুও সবাই খুব ভয় পেয়ে গেছে ! বাইরে গুলির শব্দ ! ট্রেনের সমস্ত লাইট অফ করে দেওয়া হয়েছে ! বেশ কিছুক্ষন এই ভাবে চলার পর সমস্ত ঠান্ডা হয়ে গেলো ! কাঁচের বাইরে শুধুই পুলিশের টর্চের আলো ! প্রায় ঘন্টা তিনেক সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার পর ট্রেন নড়ে উঠলো ! ঘন্টাখানেক চলার পর একটা স্টেশনে থামলো তখন সকাল পাঁচটা বেজে গেছে ! ট্রেনের চারিপাশে পুলিশ এম্বুলেন্স আর স্ট্রেচারের ছড়াছড়ি ! আমাদের কম্পার্টমেন্টের দরজা খুলে কিছু পুলিশ ঢুকলো !সঙ্গে স্ট্রেচার ! কেউ এখানে আঘাত পেয়েছেন ? ওনারা প্রশ্ন করলো ! সবাই সমস্বরে না বললো ! ওরা স্ট্রেচার নিয়ে আগের দিকে এগিয়ে গেলো ! প্যান্ট্রির ছেলেটাকে দেখে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম " কি হয়েছে ?"
- তেলেঙ্গনা রাজ্যের দাবিতে সমস্ত অন্ধ্রপ্রদেশে ২৪ ঘন্টার বন্ধ ডাকা হয়েছে ! রাজামুন্ড্রি স্টেশনে পুরো ট্রেনে ওদের সমর্থকরা হামলা করেছিল ! ঠিক সময়ে পুলিশ এসে বাঁচিয়ে দিয়েছে ! স্লিপার ক্লাসের অনেক লোক ঘায়েল হয়েছে ! ওদের এখানে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ! আমরা এখন নিডাডাভল্লু (NDD ) জংশনে দাঁড়িয়ে আছি ! ট্রেন আজ আর ছাড়বে না ! হয়তো রাতের বেলায় ছাড়তে পারে ! ! এটা তামিলনাড়ুর স্টেশন ! এখানে কোনো প্রব্লেম নেই ! এর পরেই আবার অন্ধ্রপ্রদেশ শুরু হয়ে যাবে ! তাই এখানে ট্রেন কে দাঁড় করানো হয়েছে ! আমি প্লাটফর্মে নেমে পড়লাম ! দেখলাম পুলিশ আর স্বাস্থকর্মীদের তৎপরতা ! মুগ্ধ হয়ে গেলাম ! সমস্ত প্লাটফর্মে গাড়ি দাঁড়িয়ে ! বুঝলাম আমাদের কপালে অনেক ভোগান্তি আছে !
আমাদের টিটি সাহেবের সাথে দেখা হয়ে গেলো ! অনেক কথা হলো ! উনি বললেন যদি তোমরা বাইরে ঘুরতে চাও তাহলে ঘুরে এসো ! কারণ আজ আর ট্রেন ছাড়বে না ! নিজেদের খাবার দাবারের ব্যবস্থা করে নাও ! আমার পিছু পিছু সবাই নেমে এসেছে ! এতো সকাল বেলায় কি কারুর খিদে পায় ? সবে মাত্র সকাল সাতটা বাজে ! সুজাতা সমীরকে নিয়ে স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে গেলো ! হরপ্রীত আর রাজু আমার সাথেই আছে ! আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে কোয়েল ! ওর মুখে চোখে এখনো আতংক ! পাথর ছোঁড়ার পর থেকেই ও আমার সাথে সেঁটে রয়েছে ! প্লাটফর্মের সমস্ত স্টলেই খুব ভিড় ! সেই ভিড় ঠেলে আমি চায়ের অর্ডার করলাম ! সকাল হয়ে গেছে ! চা না পেলে খুব খারাপ লাগে !
অনেক ভিড় ঠেলে স্টলের লোক আমাদের চা দিলো ! সেটাকে চা না বলে ঘোড়ার মুত বললে হয়তো ভালো হতো !
চা খেয়ে আমি ওদের বললাম চল একটু ফ্রেশ হয়ে নিই ! প্লাটফর্মের লাউডস্পিকারে ঘোষণা করা হচ্ছে কেউ যেন ট্রেনের টয়লেট ব্যবহার না করেন ! বাইরে সুলভ শৌচালয় আছে সেখানে গিয়ে প্রাতঃকৃত্যাদি সারতে পারেন !
একটা জিনিস আমি দেখেছি যে সাউথ ইন্ডিয়ার রেলওয়ে স্টেশন গুলো খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ! আর সবাই যদি ট্রেনের টয়লেটে পায়খানা করে তাহলে নিজেরাই টিকতে পারবে না ! (তখনকার দিনে বায়ো টয়লেট বলে কোনো জিনিস ছিলোনা ! আমি নিজের অজান্তেই কোয়েলের হাত ধরে টেনে নিয়ে সুলভ শৌচালয়ের সামনে দাঁড়ালাম ! কোয়েল লেডিসের লাইন এ চলে গেলো ! মিনিট দশেকের অপেখ্যার পরে আমাদের নাম্বার আসলো ! ফ্রেশ হয়ে স্টেশনের বাইরেই এক কাপ করে চা খেলাম ! এটা তবুও পদে আছে !
নিজেদের কূপে ফিরে এলাম ! কম্পার্টমেন্টের গেটে সেই পুরানো আরপিএফগুলো দাঁড়িয়ে আছে ! পুরো ট্রেন খালি ! মুহুর্মুহু ঘোষণা করা হচ্ছে "অন্ধ্রপ্রদেশে বন্ধের কারণে এখন কোনো ট্রেন চলবে না ! সবাই শান্তি বজায় রাখুন ! "
কিছুই ভালো লাগছে না ! কোয়েল আমার গা সেটেই বসে আছে ! খুব ভয় পেয়ে গেছে !
কিছুক্ষন পরেই সুজাতা আর সমীর একটা বড়ো প্যাকেট নিয়ে ফিরে এলো ! আমায় তাকাতেই সুজাতা বললো "কাল সকাল পর্যন্ত খাবারের ব্যবস্থা করে নিলাম ! "
সমীর বললো অনেক ইডলি নিয়ে নিয়েছি ! আর ইডলি খারাপ হয়না ! কাল সকাল পর্যন্ত ইডলি সাম্বর আর চাটনি থাকবে ! আমাদের খাবারের চিন্তা নেই !
- তাহলে ব্রেকফাস্টের কি হবে ?
ধোসার অর্ডার দিয়ে এসেছি ! বলেছে এক ঘন্টার ভিতর পৌঁছে দেবে !
সুজাতার দূরদর্শিতার প্রশংসা করলাম মনে মনে ! এতগুলো ট্রেন ! এতো প্যাসেঞ্জার ! হয়তো আর কিছুক্ষন পরে খাবার হয়তো পাওয়া যাবে না !

[/HIDE]
 
[HIDE]

এইরকম পরিস্থিতির মধ্যে আগেও আমি পড়েছি ! বাংলায় সিপিএমের ডাকা ২৪ ঘন্টার বন্ধে অনেক কে না খেতে পেয়ে থাকতে দেখেছি ট্রেনে বাসে !
সবাই নিজেদের সিট এ ফিরে এলাম ! কোয়েল কিছুতেই আমার সাথ ছাড়ছেনা ! মুখে কোনো কথা নেই ! কিন্তু। .......
কোয়েলকে জোর করে হরপ্রীত বাথরুমের বাইরের বেসিনে নিয়ে গিয়ে ব্রাশ করিয়ে নিয়ে এলো ! ফিরে এসে আবার আমার পাশে বসে পড়লো !
কেন জানিনা বিব্রত হলেও সময়ের পরিস্থিতি বুঝে আমি কিছুই বললাম না !
একঘন্টার মধ্যেই আমাদের ধোসা চলে এলো ! ভিড়ের মাঝে যে রকম খাবার পাওয়া যায় ঠিক সেইরকমই ! এখন আমাদের কোনো উপায় নেই ! পেট ভরানোর জন্য যা পাওয়া যায় তাই মুখ বুঁজে খেয়ে নেওয়াই শ্রেয় ! প্যান্ট্রির কোনো লোক জনের পাত্তা নেই ! এদিকে আমাদের জল ও শেষ হয়ে গেছে ! আমি কোয়েলকে বললাম" এখানেই বসে থাকো ! আমি আসছি ! ! " সোজা বাইরে চলে এলাম ! আমার পিছনে রাজু !
স্টেশনের বাইরের দোকান থেকে পাঁচ লিটারের পাঁচখানা বোতল কিনলাম ! কারণ আমি ভালোই জানতাম ! হয়তো আর কিছুক্ষন পর জল ও পাওয়া যাবে না ! বন্ধের সাথে আমি ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে আছি ! ৭৮ সাল থেকে সিপিএমের দৌরাত্ত দেখে শিখে গেছি ! তাই নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরা করে নিলাম !
সময় কিছুতেই কাটতে চায় না ! ট্রেনের বাইরে গিয়ে লাভ নেই ! চারিদিকে শুধু লোক আর লোক ! এতো হইচই আমার কোনোদিন ভালো লাগে না !
সমীর আমাকে জিজ্ঞাসা করলো " হ্যারে সারাদিন কি করে কাটবে ? মালের জোগাড় আছে ?"

সত্যিই তো তো কি করে সময় কাটাবো? আমি রাজুকে বললাম তুই আমার সাথে যায় ! বাকি সবাই এখানেই যেন থাকে !
স্টেশনের বাইরে এসে একটা রিকশাওয়ালা কে বললাম " ওয়াইন শপে যাবো আর আসবো !" ও বললো ১০০ টাকা লাগবে !" বুঝলাম সবাই মৌকা পেয়ে চৌকা লাগাতে চাইছে ! আমি বললাম চলো ! প্রায় পনেরো মিনিট রিক্সা চালানোর পর একটা মদের দোকানে দাঁড়ালো ! আমি আর রাজু নেমে গেলাম ! সকাল এগারোটাতেও বেশ ভিড় ! আমি ওদের কাছে একটা ভদকার বোতল আর একটা হুইস্কির বোতল চাইলাম ! ওরা কিছুই বুঝতে পারলো না বা বুঝতে চাইলো না ! ! কারণ আমি হিন্দিতে বলেছিলাম ! বুঝলাম ওরা হিন্দি ভাষায় কথা বলা লোককে পছন্দ করে না ! তখন আমি ইংলিশে ওদের কে একটা ম্যাজিক মোমেন্টের বোতল আর একটা রোয়েলস্ট্যাগের বোতল দিতে বললাম ! ওরা দুটো বোতল পেপারে মুড়ে একটা ক্যারিব্যাগে দিয়ে দিলো !
একটা জিনিস তখন আমি বুঝেছিলাম যে ওরা কতটা হিন্দি বিদ্বেষী !
রিকশায় বসে আবার ফিরে এলাম ! সবার মুখে উৎকণ্ঠা ! এক ঘন্টার উপর হয়ে গেছে আমরা গেছি ! আমাদের দেখে সবাই স্বস্তির নিঃস্বাস নিলো ! আসার পথে কিছু বাদামের প্যাকেট আর চিপসের প্যাকেট নিয়ে নিয়েছিলাম আর নিয়েছিলাম তিনটে ঠান্ডা জলের বোতল ! ! চানাচুর আমাদের সাথেই ছিল !
কম্পার্টমেন্ট পুরো ফাঁকা ! সবাই বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে !
ভদকার বোতল পুরোই শেষ হয়ে গেলো ! নেশা না হয়েও মোটামুটি সবাই নেশাতেই রইলাম ! সুজাতা সবাইকে ইডলি আর সাম্বর খেতে দিলো ! দু তিন পিস্ করে সবাই খেয়ে নিলাম ! এমনিতেই রাতে কারুরই ঘুম হয়নি ! সবাই শুয়ে পড়লো ! কিন্তু কোয়েল আমার পাশ ছেড়ে নড়লো না !
অগত্যা। ... আমি কোয়েলকে দু হাত বাড়িয়ে ডাকলাম ! কোয়েল আমার ডাকে সারা দিয়ে আমার বুকে শুয়ে পড়লো !
কেবিনের পর্দা ফেলাই ছিল ! কোয়েল আমার বুকে শুয়ে শুয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল ! একটু ঘুম আমারও এসেছিলো ! কিন্তু বুকে কোয়েলের মাথার চাপে ঘুমটা ভেঙে গেলো ! আস্তে করে কোয়েলের মাথাটা তুলে ওর নিচে থেকে খুব সন্তর্পনে সরে গিয়ে ওকে শুইয়ে দিলাম ! কম্পার্টমেন্টে এসি চলছে না ! শুধুই ব্লোয়ারের হাওয়া ! একটু গরম করলেও সহ্য করা যায় ! খুব সন্তর্পনে কম্পার্টমেন্ট থেকে নিচে নেমে এলাম ! এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রচুর লোক বসে আছে ! স্টেশনের সমস্ত স্টলে খাবার শেষ হয়ে গেছে !
স্টেশনের বাইরের হোটেলগুলোর অবস্থাও সেই একই রকম ! ভাগ্য ভালো সুজাতা বুদ্ধি করে ইডলি কিনে নিয়েছিল ! না হলে আমাদের রাত্রে না খেয়ে কাটাতে হতো ! বাইরে একটা পিসিও দেখে এগিয়ে গেলাম ! বাড়িতে ফোন করলাম ! বললাম সব ঘটনা ! মা বললেন সাবধানে থাকিস বাবা ! বিদেশ বিঁভুই ! ওখানে কিছু হলে আমাদের কিছুই করার নেই !
ফোন রেখে পয়সা মিটিয়ে বেরিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম ! প্যাকেটে মাত্র দুটো সিগারেট বেঁচে আছে ! এদিক ওদিক দেখে একটা সিগারেটের দোকান দেখতে পেয়ে তার কাছে সিগারেট চাইলাম ! প্রায় ডবল দাম চাইলো ! মওকা পেয়েছে লুটে নিচ্ছে ! পুরো প্যাকেট না নিয়ে আমি পাঁচটা সিগারেট চেয়ে নিলাম !
বাজার থেকে গাড়ি গাড়ি সব্জিপাতি আসছে হোটেলগুলোতে ! বুঝলাম রাতের খাবারের ব্যবস্থা হবে ! কিন্তু আমাদের চিন্তা নেই ! অনেক ইডলি আছে ! সেই খেয়েই কাটিয়ে দেব ! স্টেশন চত্বর থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে একটা ননভেজ হোটেলের দেখা পেলাম ! আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে দেখতে চেষ্টা করলাম কি কি পাওয়া যায় ! বাইরেই মেনু লেখা আছে তামিল এবং ইংলিশে ! একটা জায়গায় লেখা আছে সুরমাই টিক্কা ! জিজ্ঞাসা করলাম এই সুরমাই টিক্কা কি জিনিস ? ওরা বললো একধরণের সামুদ্রিক মাছের টিক্কা সঙ্গে কারি (ঝোল) এক প্লেটের দাম ৫০ টাকা তাতে আট পিস্ টিক্কা থাকবে ! জিজ্ঞাসা করলাম সন্ধ্যে বেলায় ওরা আমাদের ট্রেনে দিয়ে আসতে পারবে? ওরা বললো পয়সা মিটিয়ে দিয়ে গেলে ডেলিভারি করে দেবে ! আমি তিন প্লেটের অর্ডার দিয়ে ফিরে এলাম !
সবে সন্ধ্যে হচ্ছে ! কিছু চা ওয়ালা চা চা করে হেঁকে চলেছে ! কম্পার্টমেন্টের বাইরে সমীর দাঁড়িয়ে দেখছে ! আমাকে দেখে বললো " কোথায় গেছিলি ?"
এমনি ঘুরছিলাম ! বাকি সবাই কি এখনো ঘুমাচ্ছে ?
শুধু কোয়েল আর সুজাতা ঘুমাচ্ছে ! হরপ্রীত আর রাজু টয়লেট এ গেছে !
কম্পার্টমেন্টের ভিতর একটু গরম আছে বাইরে প্লেসেন্ট ওয়েদার ! আমাদের কোচ আটটেনডেন্টকে দেখতে পেয়ে ওকে কম্পার্টমেন্টের এসির কথা বললাম ! উনি উত্তর দিলেন আমাদের ট্রেনে জেনারেটার নেই ! ডায়নামো দিয়ে এসি চলে ! কিছু পাওয়ার ব্যাকআপ ইঞ্জিন থেকে পাওয়া যাবে এর কিছুক্ষন পরে !
কম্পার্টমেন্টে উঠে গেলাম ! কোয়েল উঠে বসে আছে ভয়ার্ত চোখে এদিক সেদিক দেখে যাচ্ছে ! পুরো কম্পার্টমেন্ট খালি ! কাউকে না দেখতে পেয়ে খুব ভয় পেয়ে গেছে ! আমাকে দেখেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো !
- কি হলো এতো ভয় পাবার কি হলো ?
ঘুম ভেঙে কাউকে দেখতে না পেয়ে খুব ভয়ে পেয়ে গিয়েছিলাম !
ওকে বোঝালাম " দেখো কোয়েল তুমি এখন অনেক বড়ো হয়েছে ! এইরকম কথায় কথায় ভয়ে পেলে চলে ? তুমি একজন মর্ডার্ন যুগের মর্ডার্ন শহরের মেয়ে হয়ে কি করে কথায় কথায় ভয় পেয়ে যাও ?
ধীরে ধীরে আমি কোয়েলের সাথে সহজ হবার চেষ্টা করছি কিন্তু কোয়েল আমাকে বেশি করে জড়িয়ে ধরছে ! কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিনা ! কোয়েল আমার বুক থেকে আলাদা হতে চাইছেনা ! সমীর রাজু হরপ্রীত সুজাতা সবার সামনেই আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে ! ধীরে ধীরে আমি ওর বন্ধন থেকে মুক্ত হলাম !

[/HIDE]
 
[HIDE]

মনের ভিতরে যেন মনে হচ্ছে মঞ্জু আমার হৃৎপিন্ড টিপে ধরে আছে আর কোয়েল আমার গলা টিপে ধরেছে ! দুজনের কাউকেই ছাড়াতে পারছিনা !
"ধুর বাঁড়া ! যা হচ্ছে হতে দাও ! পরের কথা পরে দেখা যাবে !" আমার মনের ভিতর থেকে আমার দ্বিতীয় সত্তা বলে উঠলো ! নিজের সত্তার সাথেই আমার লড়াই শুরু হয়ে গেলো !
সন্ধ্যে হয়ে গেছে ! সমীরকে বললাম চল ঠান্ডা জলের ব্যবস্থা করে আসি আর দেখে আসি ট্রেন ছাড়ার কতদূর কি হলো !
সমীর আর আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম ! সবে সন্ধ্যে সাড়ে ছটা বাজে ! এতো তাড়াতাড়ি আমরা মাল খেতে বসব না ! কতক্ষন যে এইখানে এভাবে কাটাতে হবে কে জানে ! আমাদের টিটি সাহেবের সাথে দেখা হয়ে গেলো ! উনি নিজেই আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন " কিছু স্টক আছে নাকি ? আর পারছিনা ! কাল রাত থেকে যা চলছে। .........." আমি বললাম কালকে আপনার জন্য রেখে দিয়েছিলাম ! সেটা এখনও বেঁচে আছে !
উনি বললেন একটু পরেই আমি আসবো ! ওনাকে আমি গাড়ির এসির ব্যাপারে বললাম ! উনি বললেন মিনিট দশের মধ্যেই এসি চালু হয়ে যাবে !
এদিক ওদিক আধঘন্টার মতো ঘুরে বাইরের হোটেল থেকে ঠান্ডা জলের বোতল নিয়ে যখন কম্পার্টমেন্টে ঢুকলাম দেখলাম এসি চলছে ! গরম ভাবটা কমেছে ! রাজু বললো "তুই কি কিছুর অর্ডার দিয়ে এসেছিলিস? দিয়ে গেছে ! নাম বলতে পারলো না ! শুধু কোচ নাম্বার আর সিট নাম্বার বললো ! "
- হ্যা ! সুরমাই টিক্কার অর্ডার দিয়েছিলাম !
তোরা সব রেডি কর ! আমি একটু ফ্রেস হয়ে আসি ! বলেই আমি বেরিয়ে গেলাম ! সকাল থেকে পেট ভালো ক্লিয়ার হয়নি ! তাই এই অসময়ে বেগ দিচ্ছে ! ট্রেনে যাওয়া যাবে না ! তাই বাইরের সুলভ শৌচালয়ে যেতে হলো ! এখন এখানে তত ভিড় নেই ! কাজ সেরে যখন ফিরছি তখন তামিল ভাসতে কিছু এনাউন্সমেন্ট হচ্ছে ! পরে হিন্দিতে এবং সবার শেষে ইংলিশে ! মন দিয়ে শুনে বুঝতে পারলাম সমস্ত যাত্রীদের অনুরোধ করা হচ্ছে যে যার ট্রেনে ফিরে গিয়ে বসে পড়ুন ! কিছুক্ষনের মধ্যেই এক এক করে সমস্ত ট্রেন ছাড়া হবে !
স্বস্তির নিঃস্বাস ফেললাম ! এখন আমাদের কেবিনের পরিবেশ বেশ হালকা ! সবাই কলকলিয়ে কথা বলে চলেছে ! প্রথম পেগ শেষ হতে সময় লাগলো না ! সুরমাই এর টিক্কা খেতে দারুন কিন্তু বিরাট ঝাল ! চোখ দিয়ে নাক দিয়ে জল গড়াবার উপক্রম ! মেয়েরা একটুকরো করে কামড় দিচ্ছে আর এক ঘোঁট করে জল খাচ্ছে ! কিন্তু ছাড়তে পারছে না ! টিক্কা খাবার মাঝেই আমাদের ট্রেন নড়ে উঠলো ! আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম "তোরা ঢাল ! আমি একটু দেখে আসি ! "
ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম আমাদের ট্রেনটাকেই প্রথমে ছেড়েছে ! ধীরে ধীরে প্লাটফর্ম হারাচ্ছে !
আমাদের কম্পার্টমেন্ট পুরো ফাঁকা ! প্যাসেঞ্জার বলতে দু চারজন ছাড়া শুধু আমরা ! জিনিসটা কি হলো ? সবাই গেলো কোথায় ? উঠতে পারেনি নাকি ?
দরজা বন্ধ করে দিলাম !
দ্বিতীয় পেগ ঢালার মাঝেই টিটি সাহেব চলে এলেন ! ওনাকে দেখে মেয়েরা নিজেদের গ্লাস আড়াল করে নিলো ! উনি বললেন "লজ্জা পেওনা ! এখন তোমরা অ্যাডাল্ট ! চালিয়ে যাও !" তবুও মেয়েরা ওনার সামনে গ্লাস বের করছেনা দেখে উনিই বললেন " আমাদের সাউথ ইন্ডিয়ান কালচার একটু আলাদা ! আমাদের বাড়িতে ছেলে মেয়ে বোরো হলে সবাই একসাথে বসে ড্রিংক করি ! তোমরাও এখন অ্যাডাল্ট হয়ে গেছো ! লজ্জা করার কোনো দরকার নেই ! ওনার কথা শুনে সব থেকে আগে গ্লাস বার করলো সুজাতা ! ও নিজেই একজন সাউথ ইন্ডিয়ান মেয়ে ! ওর দেখা দেখি হরপ্রীত ! কোয়েল কিছুতেই বের করতে চাইছে না ! আমার কানে কানে বললো " বাপির বন্ধু ! যদি বাপিকে বলে দেয় ! " উনি আন্দাজ করেছিলেন ! তাই নিজেই বলে উঠলেন ! নাও নাও ! তোমার ড্যাড কে কিছুই বলবো না !
ওনার ভরসা পেয়ে কোয়েল নিজের পিছন থেকে খুব আস্তে আস্তে গ্লাস বের করলো ! সবার গ্লাসে হুইস্কি ঢালা হলে যে যার নিজের মতো জল ঢালতে লাগলো ! টিটি সাহেব এক চুমুকেই পুরো নিট মাল মেরে দিলেন ! মুখ থেকে গ্লাস নামিয়ে একটা টিক্কা মুখে পুরলেন ! ! ওনার মুখে কোনো বিকার নেই !
কি লোক রে বাবা ? ঝাল লাগে না নাকি ? কোয়েল বাংলাতেই আমাকে বলে উঠলো !
আমি কিছুই বললাম না ! টিটি সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলাম " সব প্যাসেঞ্জার কোথায় গেলো ?"
উনি বললেন "কেউ লোকাল ট্রেন ধরে চলে গেছে কেউ বাস ধরে বা কেউ নিজের ব্যবস্থা নিজেরাই করে চলে গেছে ! তোমরা নিশ্চিন্তে থাকো ! কাল সকালেই আমরা হায়দরাবাদ পৌঁছে যাবো ! "
আরও তিনটে নিট পেগ মেরে টিটি সাহেব চলে গেলেন ! আমরা গল্প করতে করতে পুরো বোতলটাই শেষ করে ফেললাম ! নেশা হলোনা কারুর ! শুধু মেয়েগুলোর চোখে একটু রং ধরেছে ! কালকের বোতলে কিছুটা পরে আছে ! সেটা বের করে ঢাললাম ! তার মাঝেই টিটি সাহেব আবার ফিরে এলেন ! মনে মনে বললাম বোকাচোদা চারটে নিট পাটিয়ালা পেগ খেয়েও হয়নি ? আবার এসেছে আমাদের মালের গাঁড় মারতে ?
উনি এসে নিজের ব্যাগ থেকে রোয়েলস্ট্যাগের একটা হাফ বের করলেন ! " আমিও নিয়েছিলাম ! প্যান্ট্রিতে রাখা ছিল ! আমার কোটা পুরো হয়ে গেছে ! তোমাদের কম পড়বে বলে নিয়ে এলাম ! রাজু ওনাকে আরও এক পেগ খাবার জন্য অনুরোধ করলো ! উনি মানা করলেন ! পুরো রাত ওনার ডিউটি আছে ! হয়তো টিক্কার ঝালের জন্য আমাদের নেশা হচ্ছিলো না ! গল্প করতে করতে হাফটাও শেষ হয়ে গেলো ! এখন বেশ ভালো লাগছে ! টিক্কা তো খেয়ে নিয়েছি ! কিন্তু তার ঝোল কেউ খায়নি ! সুজাতা বললো "ইডলির সাথে সম্বরের কাজ করবে টিক্কার ঝোল ! "
- আগে খেয়ে দেখ ! যদি এটাও টিক্কার মতো ঝাল হয় তাহলে আর ইডলি খাওয়া যাবে না ! এমনিতেই সকালে ইদলির সাথে যে সম্বর ছিল সেটা মুখে দেবার যোগ্য ছিলোনা ! তবুও বাঁচিয়ে রাখা আছে ! কিন্তু কারুর খেতে মন নেই !
সুজাতা একটা ডোঙাতে একটু ঝোল ঢেলে চুমুক দিয়ে ইয়াম্মি বলে উঠলো ! আমরাও টেস্ট করলাম ! খুব সুন্দর টক টক ঝোল ! তার মানে ঝাল টিক্কার সাথে টক ঝোল ! দারুন কম্বিনেশন !
ঝোলটাকেই সম্বর করে সবাই ইডলি খেলাম ! এখন আর ইডলি খেতে খারাপ লাগলো না ! বেশ ভালো লাগলো ! হাত মুখ ধুয়ে সবাই শুয়ে পড়লাম ! ট্রেনের দুলুনি সাথে মালের নেশা ! সবাই ঘুমিয়ে পড়লো !
সকালবেলায় চোখ খুলতে দেখি ট্রেন হায়দরাবাদ স্টেশনের আউটারে দাঁড়িয়ে ! আমি সবাইকে তুলে দিলাম ! "উঠে পর সবাই ! আমরা হায়দরাবাদ এসে গেছি ! সবাই ধড়মড় করে উঠে বসলো ! " মিনিট দশেকের মধ্যেই আমরা হায়দরাবাদ পৌঁছে গেলাম !


[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top