What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঝর্ণা The untold story( সম্পূর্ণ উপন্যাস) (5 Viewers)

[HIDE]

দেখতে দেখতে ১৫ দিন কথা দিয়ে বেরিয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না ! কিছুটা বিষণ্ণতা কিছুটা লেখাপড়া করা কারণ আমাকে জয়েন্ট এ বসতে হবে। . একদিন সকাল বেলায় টিভি খুলে দেখি মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে ! ( আমি যখনকার কথা বলছি তখন অনলাইন বলে কিছুই ছিলোনা !প্রতিটি বইয়ের দোকানে গেজেট পাওয়া যেতো আর নিজের নাম্বার বলে রেজাল্ট জানতে পারা যেতো ! ) আমি তাড়াতাড়ি জামা প্যান্ট পরে তৈরী হয়ে নিলাম ! মঞ্জুর নাম্বার আমার কাছে আছেই তাই। .....
বেরুতে যাবো ঠিক তখনি ফোনের ঘন্টি। ... বাবা ফোন তুললেন " হাল্লো হ্যা ! আচ্ছা ! খুব ভালো খবর ! কোন ডিভিশন ? সেকেন্ড ? বা ! কত পেয়েছে ? " বুঝলাম পিসির বাড়ি থেকে ফোন এসেছে ! তাই আমি আর বেরুলাম না ! আরো কিছুক্ষন কথা বলে বাবা বেশ আনন্দের সাথেই আমাকে খবর দিলেন ! "মঞ্জুর রেজাল্ট বেরিয়ে গেছে ! সেকেন্ড ডিভিশনে পাস্ করেছে ! তোকে এখুনি পিসির বাড়ি যেতে বলেছে !"
মনটা বেশ উৎফুল্ল হয়ে গেলো ! তড়াক করে দু পাক লাফিয়ে ঘুরে নিলাম ! মাকে জড়িয়ে ধরলাম ! পাশে ঝর্ণা ছিল ! ওর গাল দুটো ধরে আদর করে দিলাম ! বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম ! " উফফ ! এতদিন পর কোনো ভালো খবর পেলাম !" আমি এখুনি পিসির বাড়ি যাবো !"
- কিছু খেয়ে যা ! মা বললেন !
- যা দেবার তাড়াতাড়ি দাও ! আজ আমি মঞ্জুকে একটা বিরাট ট্রিট দেব !
বলার সাথে সাথেই ঝর্ণা আমার সামনে লুচির প্লেট ধরিয়ে দিলো ! কোনো কথা না বলে আমি গোগ্রাসে সব খেয়ে নিলাম ! মা গম্ভীর হয়ে বললেন মঞ্জুকে নিয়ে আগে তৃপ্তিদির বাড়িতে গিয়ে ওনার ছবিকে প্রণাম করিস !"
একটা ঠান্ডা বাতাস আমার সারা শরীরে ছড়িয়ে গেলো ! একটু শিউরে উঠলাম ! মনেই ছিলোনা তৃপ্তিদির কথা ! শুধু ঘাড় নাড়িয়ে বাইক বের করে স্টার্ট দিলাম ! ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি ঝর্ণার ভাষা ভাষা চোখ হয়তো কিছু বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না ! সামনের বছর ঝর্ণাও মাধ্যমিক দেবে ! তখন কি হবে কে জানে ! যদিও ঝর্ণা খুব ভালো ছাত্রী !

বাইকে স্টার্ট দিয়ে হাওয়ায় উড়তে উড়তে আমি পিসির বাড়ি পৌঁছে গেলাম ! বাইকের আওয়াজ পেয়ে মঞ্জুই দরজা খুলে দিলো ! আমি মঞ্জু কে উড়িয়ে ধরে সজোরে একটা চুমু খেলাম ! ঘর ঢুকে পিসিকে প্রণাম করলাম ! পিসি আমার মুখে একটা রসগোল্লা ঢুকিয়ে দিয়ে বললো "এটা মঞ্জুর পাশের তোর টা যেদিন আসবে সেদিন পেট পুরে রসগোল্লা খাওয়াবো ! "
আমি মঞ্জু কে বললাম "তৈরী হয়ে নে ! তৃপ্তিদির বাড়ি যাবো ! "
মঞ্জুর মুখ আবার গম্ভীর হয়ে গেলো ! চোখের কোণে জলের ঝিলিক ! আমি মঞ্জু কে বললাম " দেখ যে গেছে তাকে তো ফিরিয়ে আনা যাবে না ! যে আছে তাকে তো বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে ! "
ঘরে ঢুকে মঞ্জু তৈরী হয়ে এলো ! বাইকের পিছনে বসে পড়লো ! তৃপ্তিদির বাড়ি গিয়ে দেখি বেশ কিছু মজুর লেগে রয়েছে ! সমস্ত বাড়িটাকেই একরকম ভাঙা হচ্ছে বলা যায় ! কমলদা গম্ভীর হয়ে সমস্ত তদারকি করছেন ! আমাদের দেখে একটা বিষন্ন হাসি দিয়ে বললেন "আয় ! মঞ্জুর পাশের খবর পেয়েছি ! "
- কিন্তু বাড়ি কেন ভাঙছো ?
- তৃপ্তির ইচ্ছা ছিল মা হবার ! আমারও তো ইচ্ছা ছিল বাবা হবার ! আমাদের সেই সাধ পূরণ হলোনা ! তাই এই বাড়িটাকে একটা অনাথ আশ্রম করবো ! কত ছোট ছোট বাচ্ছার কলতানে এই বাড়ি ভোরে থাকবে ! তৃপ্তিও মা হবে আর আমিও বাবা হবো !
আমাদের মুখ থেকে কোনো কথাকে বেরুলোনা ! চুপচাপ কিছুক্ষন বসে থেকে আমরা বেরিয়ে এলাম ! তৃপ্তিদিকে কথা দিয়েছিলাম যতদিন না নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছি ততদিন আমি মঞ্জুকে টাচ করবো না ! মঞ্জুকে বাড়িতে ছেড়ে দুপুরের খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরে এলাম ! সন্ধ্যে বেলায় লাহিড়ীদা ফোন করে অভিযোগ করলেন " আমি কমলদার বাড়ি গিয়েও ওনার সাথে কেন দেখা করিনি ! আমি বললাম কমলদাকে দেখার পর মুড্ খুব অফ হয়ে গেছিলো তাই আর দেখা করা হয়নি ! তখন লাহিড়ীদা বললেন কমলবাবুর সাথে ওনার অনাথ আশ্রম গোড়ার কাজে আমিও আছি ! শুনে খুব ভালো লাগলো !

দিন চারেক পরে আমাদের রেজাল্ট বেরুলো ! এতো ভালোও রেজাল্ট যেটা আমার আশাতীত ছিল ! সবাই খুশি ! একবার পিসি, পিসেমশাই, মঞ্জু সবাই আমাদের বাড়িতে এলেন খুব হৈ হুল্লোড় হলো ! কিন্তু আমার কোথায় যেন একটা তাল কেটে গেছে তাই আমি মন খুলে সেই আনন্দে যোগ দিতে পারলাম না !
ধীরে ধীরে জয়েন্টের রেসাল্ট বেরুলো ! সেখানেও আমি ভালো ফল করলাম ! আমি ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ চান্স পেয়ে গেলাম হায়দরাবাদে ! ততদিনে মঞ্জু কলেজে ভর্তি হয়ে গেছে ! বাবা আর আমি একবার হায়দরাবাদে গিয়ে সমস্ত ব্যবস্থা করে এলাম ! জুন এর ১৫ থেকে আমাদের কলেজ শুরু হবে ! তার মানে আমাকে ১২ জুন গিয়ে কলেজে রিপোর্ট করতে হবে ! সেই মতোই টিকিট কাটা হয়ে গেলো ! বাবা, মা, পিসি সবাই খুব উৎকণ্ঠায় ! জীবনে প্রথম ৩ বছরের জন্য বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও পড়তে যাবো ! সবাইকে বোঝালাম ! যাবার আগের দিন আমাদের বাড়িতে লাহিড়ীদা, ঘোষ দা, কমলদা সবাই এলেন ! কমলদার শরীরে সেই জৌলুস আর নেই ! কোথায় যেন প্রদীপ নিভে গেছে ! মুখেতে একটা ম্লান হাসি ! সবাই আমাকে উপদেশ দিলেন ! রাতের বেলায় মঞ্জুকে জড়িয়ে ধরে একটু আদর করে বললাম "যাচ্ছি তোমার আর আমার ভবিষ্যৎ বানাতে ! " অপেখ্যা কোরো ! আমি তোমার কাছেই ফিরে আসবো ! ( ঠিক তখনি একটা পুরানো গান খুব মনে পরে গেলো "আমি তোমার কাছেই ফিরে আসবো ! তোমায় আবার ভালোবাসবো ! তুমি কি ডাকবে মোরে ! চেনা সে নামটি ধরে ! )
পরেরদিন সবাই আমাকে বিদায় জানাতে হাওড়া স্টেশনে হাজির ! ঝর্ণা কেঁদে যাচ্ছে ! আমি ঝর্ণার কাছে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম "আজ থেকে তোকে আর কেউ ডিস্টার্ব করবে না ! ভালো থাকিস ! বাবা মায়ের যত্ন নিস্ ! " ঝর্ণা এই প্রথম আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো ! কাঁদতে কাঁদতে মঞ্জুও এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো ! ঝর্ণা আর মঞ্জুকে জড়িয়ে ধরে আমিও কেঁদে ফেললাম !
- এই পাগল গুলোকে নিয়ে আর পারা যাবে না ! সব সময় এদের চোখের কল খোলা ! শুধুই কেঁদে যায় ! আমাকে দেখে শেখ ! আমি এখন আর কাঁদিনা ! কমলদা বললেন কিন্তু নিজের চোখের জল নিজেই রুখতে পারলেন না !
গাড়ির সময় হয়ে গেছিলো ! বাবা আমাকে তারা দিলেন " উঠে পর ! সিগন্যাল হয়ে গেছে ! গাড়ি ছেড়ে দেবে ! আমি ওদের ছেড়ে গাড়িতে উঠতে যাবো কিন্তু ঝর্ণা আমাকে ছাড়তে চাইছে না ! বাবা ঝর্ণা কে একটা ধমক দিলেন " এই ঝর্ণা ! কি হচ্ছে ? ও কি একেবারে বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাচ্ছে নাকি ? ও তো পড়তে যাচ্ছে ! ছাড় ওকে !
বাবার ধমক খেয়ে কাঁদতে কাঁদতেই ঝর্ণা আমাকে ছেড়ে দিলো ! সবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মা,পিসি, মঞ্জু ঝর্ণা ! সবার চোখেই জল ! গাড়ি ছেড়েদিলো ! কাঁদতে কাঁদতে সবার দিকে হাত নাড়াতে থাকলাম ! কখন যে সবাই চোখের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না ! ট্রেন ভালোই স্পিড নিয়েছে !

[/HIDE]
 
[HIDE]

দরজা বন্ধ করে নিজের সীটে এসে বসলাম ! কিছুক্ষনের মধ্যেই টিটি এসে হাজির ! আমার টিকিট দেখে বললেন " ও তুমিই সুনন্দ ! লাহিড়ীদা তোমার কথা আমাকে বলে দিয়েছেন ! আমিও হায়দরাবাদে থাকি ! কোনো অসুবিধা হলে আমাকে জানাবে ! " ভালো ছেলের মতো আমি ঘাড় নাড়লাম ! উনি বললেন সমস্ত টিকিট চেক করে আমি আসছি ! তখন কথা হবে ! আমি শুধু লাহিড়ীদার দূরদর্শিতার কথা ভেবে অবাক হলাম !
ঘন্টা খানেক পরে টিটি সাহেব ফিরে এলেন ! কি হলো বসে আছো ? ডিনার করবে না ?
- করবো ! একটু পরে খেতে ইচ্ছা নেই !
- প্রথম প্রথম একটু মন খারাপ হবেই ! পরে দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে ! কথায় কথায় জানতে পারলাম ভদ্রলোকের নাম সুভাষ ব্যানার্জী ! ছেলে হায়দরাবাদে চাকরি করে ! মেয়েও এইবার হায়দরাবাদ আই আই টি তে ইন্সট্রুমেন্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়েছে ! ছেলের চাকরির সুবিধার জন্যই উনি হায়দরাবাদে সেটেল হয়েছেন ! আমাকে ওনার বাড়িতে আসতে নিমন্ত্রণ জানালেন ! এটাও বললেন যে লাহিড়ী দা ওনার সাথে কলেজে পড়তেন ! খুব ভালো বন্ধু ওরা !
বুঝলাম লাহিড়ীদা এখানেও আমার জন্য ভেবে রেখেছেন !
গল্প করতে করতেই রাতের খাবার খেয়ে নিলাম ! আমার সিট ছিল আপার ! সেখানে উঠে শুয়ে পড়লাম !
দুটোদিন রাস্তার শোভা আর নানা রকম লোকের যাওয়া আসা দেখতে দেখতেই কেটে গেলো ! সন্ধ্যেবেলায় যখন হায়দরাবাদ পৌঁছলাম তখন সুভাষ বাবু এগিয়ে এলেন ! " এই সন্ধ্যে বেলায় তো তোমাকে হোস্টেলে ঢুকতে দেবে না ! তার থেকে বরণ তুমি আমার বাড়িতে চলো ! ! রাতে আমার ওখানেই থেকে যেও ! কাল সকাল বেলায় কলেজে গিয়ে রিপোর্ট করো !

ঝড়ের গতিতে সময় বয়ে চললো ! প্রথম প্রথম একটু মন খারাপ হলেও ধীরে ধীরে কলেজের নতুন জীবনের সাথে জড়িয়ে গেলাম ! অনেক নতুন নতুন বন্ধু হলো ! আমাদের ছোট বেলার বন্ধু বা স্কুলের বন্ধুদের থেকে আলাদা ! সবার চোখে মুখে নতুন জীবনের উৎফুল্ল আনন্দ ! সবাই সোনার ভবিষ্যতের পিছনে ছুঁটছে ! যদিও আমি সেইরকম ভাবে কারুর সাথে মিশতে পারতাম না তবুও তার মাঝেই আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেলো সমীর সাক্সেনা আর রাজু শ্রীভাস্তাভের সাথে ! কোয়েল মানে সুভাষ বাবুর মেয়েও আমাদের বেশ ভালো বন্ধু হয়ে গেলো ! আরো অনেক মেয়ে আমাকে চাইতো কিন্তু আমি তাদের পাত্তা দিতাম না ! সমীর আর রাজু আমাকে লেডি কিলার বলে খেপাতো ! কোয়েল আমাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশলেও আমাকে একটু বেশি গুরুত্ব দিতো ! বুঝতাম সবই ! কিন্তু কিছুই বলতাম না ! কারণ আমার জীবনে মঞ্জু ছাড়া আর কাউকে জায়গা দিতে পারবো না !
প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে ফোন করে এবং পিসির বাড়িতে ফোন করে সবার সাথে কথা বলে নিতাম ! বিশেষ করে মঞ্জুর সাথে কথা বলতে একটু বেশি সময় নিতাম ! মঞ্জু আমাকে ওর কলেজের সমস্ত ঘটনা বলতো আর অকারণে হাসিতে ফেটে পড়তো !
এই ভাবেই ৫ মাস কেটে গেলো ! অক্টোবরে দূর্গা পুজো নভেম্বরে দিওয়ালি ! দিন ২০ মতো কলেজ ছুটি থাকবে ! আমিও সুযোগ বুঝে ফেরার টিকিট করবো বলে চিন্তা করলাম ! বিকালে আমি সমীর রাজু আর কোয়েল কলেজের মাঠে বসে আড্ডা মারছি ! কথায় কথায় আমি বললাম যে দুর্গাপুজোতে আমি কলকাতা যাবো ! সমীর আর রাজু এক সাথে লাফিয়ে উঠলো ! আমরাও যাবো তোর সাথে ! কলকাতার দুর্গাপুজোর নাম অনেক শুনেছি কিন্তু কোনোদিন দেখা হয়নি ! কোয়েল বললো আমিও যাবো ! আমি একটু চিন্তিত হলাম ! যতই হোক সমীর পাঞ্জাবের এক বিরাট বড়োলোক পরিবারের ছেলে আর রাজু দিল্লির এক নাম করা ব্যবসাদারের ছেলে ! ওরা কি আমাদের বাড়িতে মানিয়ে নিতে পারবে !
- কি ভাবছিস ? কোয়েল বলে উঠলো !
- না কিছু না ! তোরা কি আমাদের বাড়িতে মানিয়ে নিতে পারবি ? আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার হয়তো। ...
খেঁকিয়ে উঠলো সমীর ! " মধ্যবিত্ত মারবি না ! কলেজের হোস্টেলে কি আমরা ফাইভ ষ্টার হোটেলে থাকি নাকি ? নিয়ে যেতে চাইছিস না সেটা বল !
বুঝলাম ওরা মনে দুঃখ পেয়েছে ! " ধুর বোকাচোদা ! আমি তো তোদের সাথে ইয়ার্কি মারছিলাম ! দাঁড়া কাল টিকিট করতে দেবো !! কিন্তু কোয়েল কে কি ভাবে নিয়ে যাবো সেটাই ভাবছি !
কোয়েল রাগে ফুঁসে উঠলো ! তাড়াতাড়ি ওকে বোঝালাম "দ্যাখ তোর বাবা মা কি আমাদের তিনজন ছেলের সাথে তোকে ছাড়বে ? সেই জন্যই বললাম ! "

সেটা আমার ভাবনা ! তোদের দেখতে হবে না ! আমাকে কাল তোদের টিকিটের পয়সা দিয়ে দিবি ! বাবা টিকিট করে দেবে ! '
সেই সন্ধ্যায় আরও কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে কোয়েল বাড়ি চলে গেলো আর আমরা আমাদের হোস্টেলে ফিরে এলাম ! কিছুক্ষন পরেই হোস্টেলের এটেন্ডেন্ট আমার দরজায় করা নাড়িয়ে বললেন সুনন্দর ফোন। .
তাড়াতাড়ি গিয়ে ফোন তুলে দেখি মঞ্জুর গলা !
- কি গো কি করছো ? কলেজে কোনো বান্ধবী পেয়ে কি আমাকে ভুলে গেলে নাকি?
বুঝলাম মঞ্জু বাড়ি থেকে ফোন করছে না ! আর করলেও বাড়িতে পিসি বা পিসেমশাই কেউ নেই ! তাই তুমি তুমি করে কথা বলছে !
মঞ্জু নিজেই বললো যে ও চৈতালিদের বাড়িতে ! রাতে ওখানে থাকবে ! আজ চৈতালির বার্থডে ! তাই নেমন্তন্ন ! অনেকক্ষন ওর সাথে সুখ দুঃখের কথা বললাম ! যত মান অভিমান সব ফোনেতেই মঞ্জু সেরে নিলো ! ওকে বললাম না যে আমি বাড়ি আসছি পুজোতে!
ফোন ছেড়ে দিয়ে রুমে ফিরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম ! এক ঘুমে সকাল ! সকালবেলায় উঠেই আমি কলেজের গ্রাউন্ডে ছুঁটতে চলে গেলাম ! এটা আমার অভ্যাস ! এখনো ছাড়তে পারিনি ! রাজু আর সমীর দুজনেই আমার সাথী ! ঘন্টা খানেক ঘাম ঝরিয়ে রুমে ফিরে কলেজের জন্য তৈরী হয়ে বেরুতেই কোয়েলের সাথে দেখা ! চোখে মুখে খুশি যেন ঝরে পড়ছে ! ছুটে আমার কাছে এসে আমার হাতে টিকিট ধরিয়ে দিলো ! বিস্ময়ে হতবাক ! কাল বিকাল বেলায় কথা হলো ! এখনো কিছুই ফাইনাল করিনি তার আগেই টিকিট ! টিকিটের টাকাও দেওয়া হয়নি ! টিকিট দেখলাম পাঁচ জনের ! আমরা তো চারজন ! এই পঞ্চম জন টি কে ? উৎসুক হয়ে কোয়েলের দিকে তাকালাম ! কোয়েল বললো " পঞ্চমী ! আমার ছোট বেলার বন্ধু ! সাউথ ইন্ডিয়ান মেয়ে ! আমরা একসাথে ছোট থেকে স্কুলে পড়েছি ! কাল সন্ধ্যে বেলায় যখন আমায় বাবার সাথে কথা বলছিলাম তখন ও এসে পরে ! সব কিছু শুনে ওও জেড করে আমাদের সাথে যাবে ! কলকাতা নাকি ওর স্বপ্নের শহর ! এই সুযোগ আবার যে কবে আসবে। .. তাই ! বাবা সকালবেলাতেই গিয়ে নিজের হাতে টিকিট করে এনেছেন ! ফেরার টিকিট করতে পারেননি কারণ আমাদের ফেরার দিনক্ষণ কিছুই জানা নেই ! ওনার কে এক বন্ধু আছেন কলকাতায় ! ওনাকে ফোন করে দেবেন আমাদের ফেরার টিকিট হয়ে যাবে ! দূর থেকে সমীর আর রাজুকে আসতে দেখে ওদেরকে হাতের ইশারায় ডাকলাম ! ওরা কাছে এলে ওদের হাতে টিকিটটা ধরিয়ে দিলাম ! সমীর টিকিটটা ভালোকরে দেখে হুরররররে বলে লাফিয়ে উঠে কোয়েলকে জড়িয়ে ধরলো ! এক ধাক্কায় কোয়েল সমীরকে ছাড়িয়ে দিয়ে বললো " যা না শালা হরপ্রীতের কাছে গিয়ে জরাগে ! আমাকে কেন জড়াচ্ছিস ?"
সমীর হেসে ফেললো " আরে হরপ্রীত আমাকে লাইক করে ! উই আর জাস্ট ফ্রেন্ড ! "



[/HIDE]
 
[HIDE]
রেহেনা দে ! তুম দোনোকো ম্যায়নে কই বার ক্যান্টিন কে পিছে চুমা চাঁটি করতে হুয়ে দেখা ! মেরা মুহ মত্ খুলবা !
কোয়েলের এ হেনো আক্রমণে সমীর একটু বিপর্যস্ত হয়ে পড়লো ! কাঁচুমাচু মুখ করে বললো " দিলিতো আমার সব রাজ্ খুলে ! " এইবার রাজু আর সুনন্দ আমার জীবন হারাম করে দেবে !
- কেন রাজুও তো সুজাতাকে নিয়ে প্রতি শনিবারে ঘুরতে যায় ! আমি কি জানিনা ভেবেছিস ?
এবার রাজুর অপ্রস্তুত হবার পালা ম্যা ম্যা করতে করতে বললো " কেন তুই ফালতু কথা বলছিস ! আমরা এমনিই ঘুরতে যাই !
- এমনিই ঘুরতে যাই ! দাঁত খিঁচিয়ে কোয়েল রাজুকে বললো ! "লাক্সমান গেস্টহাউসের সব ডিটেলস আমার কাছে আছে !
- এ বহেন ! মুঝে মাফ কর দে ! সরে বাজার মে মেরে রাজ মত্ খোল !বলেই কোয়েলের পা ধরতে গেলো ! কোয়েল তড়াক করে লাফিয়ে দু পা পিছিয়ে গিয়ে হাসতে শুরু করে দিলো !
আমি বললাম ব্যাপারটা কি রে কোয়েল ?
- শালা দুজনেই ডুবে ডুবে জল খাবে আর ভাববে যেন শিবের বাবাও টের পাবে না ! সমীর আর হরপ্রীত রাজু আর সুজাতা।.ডুবে ডুবে লাইন চালিয়ে যাচ্ছে ! কিন্তু ওরা জানেনা হরপ্রীত আর সুজাতা দুজনেই আমার বান্ধবী ! সব কথা আমাদের মধ্যে আলোচনা হয় ! আর লাক্সমান গেস্ট হাউস আমাদের বাড়ির পাশেই ! আমি অনেকবার রাজু আর সুজাতাকে ঢুকতে আর বেরুতে দেখেছি !
রাজু কান ধরে ওঠবস করতে শুরু করে দিলো ! আর সমীর কোয়েলকে তারা করলো ! বেশ হাসি খুশিতেই সন্ধ্যেটা কাটলো ! আমাদের কলকাতা যাবার টিকিট ১১ অক্টবর সকাল সাতটায় ! হটাৎ সমীর বললো " সুনন্দ যেদিন থেকে হোস্টেলে এসেছি সেদিন থেকে মাল খেতে পাইনি ! আজ একটু ব্যবস্থা হবে কি ?"
আমি জানি আমাদের হোস্টেল খুব স্ট্রিক্ট ! আমি ওদের বললাম আমরা দশ তারিখে বেরিয়েগিয়ে লাক্সমান গেস্ট হাউসেই থাকবো সারা সন্ধ্যে মাল খেয়ে এনজয় করবো ! আর সকাল হতেই স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরে নেবো ! ট্রেনের জন্যও কিছু মাল স্টকে রেখে দেব ! রাজু আর সমীর হুরররে বলে লাফিয়ে উঠলো ! কোয়েল বললো " তোরা একা একা মাল খাবি আর আমরা কি আঙ্গুল চুঁষব ?
- তাহলে বলুন দেবী আপনাদের জন্য আমরা কি করতে পারি ?হাসির ছলে বললাম !
- আমাদের জন্য ভদকা নিয়ে নিবি ! সবাই ট্রেনে আনন্দ করবো !
- পুলিশ ধরলে কি হবে? আমি বললাম !
- নো চিন্তা ! ডু ফুর্তি ! আমার বাবা কি জন্য আছে !
আর মাত্র ৪ দিন আছে ! আমরা সেইভাবেই সমস্ত গোছগাছ করে নিতে শুরু করে দিলাম !
১০ তারিখ আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী আমরা তিনজন লাক্সমান হোটেলে পৌঁছে গেলাম ! হোটেলের মাইক একটা আমাদের বয়সী ছেলে আমাদের ওয়েলকাম করলো ! আমার আইডি দেখে পরিষ্কার বাংলায় বললো "কলকাতার কোথায় থাকেন ?"
আমি অবাক হয়ে গেলাম এই বিদেশ বিভুঁয়ে এতো পরিষ্কার বাংলা। ..
আমাকে আশস্ত করে রাহুল বললো " আমার নাম রাহুল আগারওয়াল ! আমাদের সাতপুরুষ বাংলায় ! বাবা এখানে চাকরি করতে এসেছিলেন পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে এই বিন্ডিংটা কিনে হোটেল তৈরী করেন ! আমি বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারিনি ! কোনোরকমে গ্রাজুয়েট হয়েছি ! বাবা এখানে নিয়ে এসে নিজে কলকাতায় গিয়ে রয়েছেন ! "
ভালো লাগলো ! একজন মাড়োয়ারিকে শুদ্ধ বাংলা বলতে দেখে ! আমাদের সমস্ত ব্যবস্থা রাহুল করে দিলো ! কথা দিলো যে সকাল পাঁচটায় আমাদের তুলে দেবে ! হোটেল থেকে স্টেশন মাত্র ৫ মিনিটের হাঁটা পথ ! কোনো অসুবিধা হবে না !
আমরা তিনজন সেই রাতে খুব এনজয় করলাম ! জীবনে প্রথম চিকেন সিক্সটিফাইভ খেলাম রাহুলের সৌজন্যে ! কখন যে মালের নেশায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কারুর খেয়াল ছিলোনা ! হটাত দরজায় জোরে জোরে ধাক্কায় ঘুম ভেঙে গেলো ! মাথা পুরো ভারী হয়ে আছে ! অনেক কষ্টে মাথা তুলে দরজা খুলে দেখি রাহুল দাঁড়িয়ে ! " পাঁচটা বাজে ! উঠে পড়ুন ! না হলে ট্রেন পাবেন না !" সমীর আর রাজুকে জোর করে তুলে সবাই তৈরী হয়ে সবাই স্টেশনের দিকে পা চালালাম !
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই স্টেশনের বাইরে পৌঁছে গেলাম ! মাথা পুরো ভারী হয়ে আছে ! তিনজনে স্টেশনের বাইরে চা খেলাম ! কিছুক্ষনের মধ্যেই কোয়েলদের দেখতে পেলাম ! কোয়েল, কোয়েলের বাবা মানে সুভাষ ব্যানার্জী সাথে অন্য দুটি মেয়ে যাদেরকে আমি চিনিনা ! রাজু আর সমীর আমার পিছনে লুকাতে চেষ্টা করলো !
ব্যাপারটা কি নিজেই বুঝতে পারছিলামনা ! এই মেয়েদুটি কারা ? আর রাজু আর সমীর আমার পিছনেই বা কেন লুকাচ্ছে ?
একটু ভালো করে দেখতেই বুঝতে পারলাম ওই দুটি মেয়ের একটি হরপ্রীত আর একটি সুজাতা ! এতক্ষনে সমীর আর রাজুর আমার পিছনে লোকানোর কারণ ধরতে পারলাম ! কোয়েলরা এগিয়ে এসে আমাদের হাই করলো ! আমরাও হাই করলাম ! সুভাষ বাবু বললেন এরাও তোমাদের সাথে যাবে ! এরা আমার মেয়ের বান্ধবী !
কোয়েল তো বলেছিলো যে পঞ্চমী বলে কেউ যাবে ! এখানে তো পঞ্চমী বলে কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা !
- কি রে কি রকম সারপ্রাইজ দিলাম বলতো ! রাজু আর সমীরের দিকে চোখ টিপে কোয়েল ইশারা করলো ! এ হচ্ছে হরপ্রীত ! আর এ হচ্ছে পঞ্চমী মানে সুজাতা ! সুজাতার ডাক নাম পঞ্চমী !
সুভাষ বাবু বললেন এখন থেকেই তোমাদের ব্রেকফাস্ট কিনে নাও ! রাস্তায় ট্রেনের প্যান্ট্রি থেকে দুপুরের আর রাতের খাবার কিনে নিও !
আমাদের চারজনের সিট্ একটা কূপের মধ্যেই ! শুধু হরপ্রীতের একদম শেষের দিকে ! সুভাষ বাবু ট্রেনে উঠে সবাইকে আমাদের সীটে বসিয়ে দিলেন ! বললেন হরপ্রীতের সিট্ যাতে তোমাদের সাথে হয় সে ব্যবস্থা করে আসি !
হরপ্রীত সুজাতা আর কোয়েল সমীর আর রাজুর পিছিনে পরে গেলো ! আমাদের সামনের সীটে এক ভদ্দরলোক এলে তাকে আমি রিকোয়েস্ট করলাম যদি উনি হরপ্রীতের সীটে নিজেকে এডজাস্ট করে নিতে পারেন ! ভদ্রলোক বললেন কোনো ব্যাপার নয় ! উনি হরপ্রীতের সিটে চলে গেলেন ! কিছুক্ষন পরেই সুভাষ বাবু একজন টিটিকে সঙ্গে নিয়ে এসে আমাদের দেখিয়ে দিলেন এবং হরপ্রীতের সিটের ব্যাপারে বললেন ! আমি বললাম আমরা সিট চেঞ্জ করে নিয়েছি ! হরপ্রীতের সিটে এক ভদ্রলোক কে পাঠিয়ে দিয়েছি !
- তাহলে তো প্রব্লেম সল্ভ হয়ে গেলো ! সুভাষ বাবু বললেন ! টিটি সাহেবের সাথে আগে নিজের মেয়ের পরিচয় করলেন তারপর আমাদের সবার সাথে ওনার মেয়ের বন্ধু হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন যেন আমাদের প্রতি উনি খেয়াল রাখেন ! বিশেষ করে আমাদের খাওয়াদাওয়ার যেন কোনো প্রব্লেম না হয় ! টিটি সাহেব সুভাষ বাবুকে আশ্বস্ত করলে সুভাষ বাবু আমাদের সবাইকে সাবধানে যাবার সতর্কবাণী শুনিয়ে চলে গেলেন !


[/HIDE]
 
[HIDE]
ট্রেন ছাড়তেই আমাদের হৈ হুল্লোড় শুরু হয়ে গেলো ! তিনটে মেয়েই পুরো কম্পার্টমেন্টকে মাতিয়ে রাখলো ! সাথে রাজু আর সমীর তো আছেই ! সাধারণত আমি চুপচাপ ছিলাম ! আমার মাথায় একটাই চিন্তা মঞ্জুকে কি করে বোঝাবো কোয়েল শুধুই আমার বন্ধু ! যাই হোক ! আমাদের আনন্দের মাঝেই কখন যে আমাদের সফরের তিনদিন পেরিয়ে গেলো আমরা বুঝতেই পারলাম না ! ওদেরকে নিয়ে সোজা আমাদের বাড়ির উদেশ্যে রওনা দিলাম ! স্টেশন থেকেই পিসির বাড়িতে ফোন করে দিয়েছিলাম মঞ্জুকে আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেবার জন্য !
হাওড়া স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনের টিকিট কেটে বর্ধমান লোকালে চেপে গেলাম ! ওদের বোঝালাম যে হাওড়া হলো কলকাতার একটি বড়ো স্টেশন ! এখানে দুটো বড়ো স্টেশন আছে ! একটা শিয়ালদহ আর অন্যটি হাওড়া ! এখন থেকে আমাদের বাড়ির দূরত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটার ! ওরা সবাই অবাক হয়ে হাওড়া স্টেশনের ভিড় দেখছিলো ! লক্ষ লক্ষ লোক কেমন ছুঁটে বেড়াচ্ছে ! এতো লোক ওরা আগে কোথাও এইভাবে ছুঁটতে দেখেনি ! ট্রেনে বসে ওরা আরও অবাক ! কারণ লোকাল ট্রেনে যাত্রীর থেকে হকার বেশি ! আমি ওদের কে বাংলার বেকার সমস্যার কথা বোঝালাম ! বললাম এই হকারি করেই কত লক্ষ লক্ষ লোকের সংসার চলে এখানে ! এটাও একটা প্রধান জীবিকা এখানে !
ঘন্টা খানেকের মধ্যেই আমরা আমাদের স্টেশনে নেমে পড়লাম ! দূর থেকে দেখি পিসি আর মঞ্জুও অন্য কম্পার্টমেন্ট থেকে নামছে ! আমি মঞ্জুর নাম ধরে চিৎকার করতেই মঞ্জু ছুঁটে আমাদের কাছে চলে আসলো ! কিন্তু আমার সাথে দুইজন অপিরিচিত যুবক আর তিনজন যুবতীকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো ! আমি সবার সাথে মঞ্জুর পরিচয় করিয়ে দিলাম ! বললাম ওরা সবাই কলকাতার দূর্গা পুজো দেখতে এসেছে ! একটু মুখটা গম্ভীর হলেও কোয়েলদের ব্যবহারে মঞ্জু ওদের সাথে মিশে গেলো ! আমি পিসির পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা দেখে ওরা সবাই পিসিকে প্রণাম করলো ! পিসি সবার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন !
সবাই হই হই করে রিক্সাতে চেপে বসলাম ! রাস্তায় যাদের সাথেই দেখা হচ্ছে সবাই আমার কুশল জিজ্ঞাস্যা করছে ! দেখছে যে আমি এখনই আসছি তবুও একটাই প্রশ্ন " কবে এলি ? কতদিন থাকবি !" উত্তর দিতে দিতে আমার নাজেহাল অবস্থা ! বুঝি এটাই সকলের আমার প্রতি ভালোবাসা দেখানোর প্রতীক তবুও মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত লাগে ! বাড়িতে আগেই আমি আমার বন্ধু বান্ধবী নিয়ে আসার কথা বলে দিয়েছিলাম ! তাই বাড়িতে কোনো অসুবিধা হবার কথা নয় !
বাড়ির গেটে আসতেই ঝর্ণা এক ছুঁটে ভিতরে গিয়ে চেল্লাতে লাগলো ! " দাদা এসে গেছে ! " মা আর বাবা দুজনেই বাইরে বেরিয়ে এলেন হাসি মুখে ! " সবাইকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন ! আমার বন্ধু বান্ধবীরা অভিভূত আমাদের অথিতি পরায়ণতা দেখে !

সবাই ঘরে ঢুকে বসে পড়লাম ! মা এসে বললেন রাজু আর সমীরকে বললেন তোমরা দুজন সুনন্দর সাথে এই ঘরেই থাকবে আর ওরা তিনজন মঞ্জু আর ঝর্ণার সাথে অন্য ঘরে থাকবে ! মেয়েরা হই হই করে উঠলো ! আমরা সবাই একসাথে থাকবো ! মা ওদের বোঝালেন একটা ঘরে এতজনের জায়গা হবে না তাই...
কেউ আর কোনো কথা বললো না ! প্রায় ১২টা বাজে ! আমি ওদের বললাম যে ওরা স্নান কোথায় করবে বাড়িতে না আমাদের সামনের নদীতে ! নদীর নাম শুনে সবাই নদীতে স্নান করার ইচ্ছা প্রকাশ করলো ! মঞ্জু আর ঝর্ণা সবার আগে ওদের রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে চললো ! বেশ কিছুক্ষন নদীতে হৈ হুল্লোড় করার পর সবাই বাড়িতে এসে খেতে বসে পড়লাম ! ভাত মুগের ডাল আলু পোস্ত মাছের ঝাল ওরা বেশ তৃপ্তি করেই খেয়ে নিলো ! রাজু বললো " যাবার সময় ট্রেনের জন্য আলুপোস্ত আর ভাত প্যাক করে দিতে !"
মা হেসে ফেললো !
দুপুরে বাবা আমার পড়াশোনার কথা জিজ্ঞেস করলেন ! আমি বললাম সব ভালো চলছে ! বাবাকেই বললাম "ওদের দুর্গাপুজো কি ভাবে দেখাবো ? বাবা বললেন যে কানাই অ্যাম্বাসেডর গাড়ি কিনে ভাড়াটে খাটাচ্ছে ! ওকে বলে দিলেই হবে !
দুপুর বেলায় সবাই আমার ঘরে বসে আড্ডা দিতে শুরু করলাম ! মঞ্জু, কোয়েল, সুজাতা, হরপ্রীত আর ঝর্ণার কলকলানি কিছুতেই থামছে না ! দেখে মনেই হচ্ছে না ঝর্ণা আর মঞ্জুর সাথে এদের তিনজনের আজকেই পরিচয় হয়েছে !
বিকেল বেলাতে ওদের সবাইকে নিয়ে আমাদের ক্লাবে গেলাম ! ক্লাবের সবাই ওদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাল।

ওরা সবাইকার বাংলা হিন্দির মিশ্রণ ভাষা বেশ উপভোগ করতে লাগলো ! বেশ কিছুক্ষন আড্ডা মারার পর কানাই এলো ! এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো ! দুপুরেই ও শুনেছে যে আমি এসেছি ! কিন্তু ভাড়া থাকার জন্য আমার সাথে দেখা করতে পারেনি ! সবার সাথে কানাইয়ের পরিচয় করিয়ে দিলাম ! ওদের কলকাতার দূর্গা ঠাকুর দেখানোর কথা বললাম ! কানাই বললো "তুই শুধু ডিজেলের খরচ দিয়ে দিস বাকি আমি দেখে নেবো !
- তোর একটা গাড়িতে কি করে যাবে রে সবাই ?
- সেটা আমার ভাবনা ! তোকে চিন্তা করতে হবেনা ! তবে আমরা সকাল বেলাতেই বেরিয়ে যাবো ! সন্ধ্যেবেলায় কলকাতায় গাড়ি নো এন্ট্রি ! সারাদিনে তোরা যত খুশি ঠাকুর দেখে নিস্ !
সেই মতোই প্ল্যান হলো ! আমরা কাল সকাল সকাল বেরিয়ে পড়বো ! সারাদিন কলকাতার ঠাকুর দেখবো ! একদিনে যদি সব না দেখা হয় তাহলে আরেকদিন যাবো না হয় ! দেবাশীষ আর কানাই বললো " আজকে তাহলে একটু পার্টি হয়ে যাক ! "
আমি বললাম হয়ে যাক কিন্তু বেশি খেয়ে বাওয়াল করা চলবে না ! মেনু ঠিক হলো কষা মুরগি আর মদ ! আমি বললাম মদের দাম আমি দিয়ে দেব ! বাকি তোরা দেখে নে ! নিলয় বললো " তোকে কিছুই দিতে হবে না ! তোর কলেজের বন্ধুরা আমাদের অতিথি ! ওদের সেবা আমরাই করবো ! সন্ধে ৭টায় সমস্ত ব্যবস্থা করতে শুরু করে দেবো টালিখোলার মাঠে ! তুই সবাইকে নিয়ে চলে আসিস ! আমি সমীর আর রাজুকে বলতে ওরা এক পায়ে খাড়া ! বাড়িতে গিয়ে মাকে ম্যানেজ করতে হবে !
সবাই মিলে বাড়ি ফিরে এলাম ! মেয়েরা আমার উপর চোটে লাল ! আমরা এনজয় করবো ওরা কি ধুন্দুল চুষবে ?
আমি ওদের বললাম আমার ব্যাগে একটা ভদকার বোতল রাখা রয়েছে যেটা ট্রেনে ওরা খায়নি সেটা নিয়ে ওরা নিজেদের মতো ছাদে গিয়ে পার্টি করতে পারে ! কিন্তু সমস্ত ব্যবস্থা মঞ্জু আর ঝর্নাকে করতে হবে ! বাড়িতে মা বাবা পিসি সবাইকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব ঝর্ণা নিলো ! এই প্রথম ঝর্নাকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কিছু করার চেষ্টা করতে দেখলাম ! বন্ধুদের জন্য আমি মঞ্জুর সাথে বেশি কথা বলতে পারছিনা ! তাতে মঞ্জুর মনের ভিতর কি চলছে সেটা বোঝার উপায় আমার নেই ! কোনো এক ফাঁকে মঞ্জুকে একটু আদর করতেই হবে ! কারণ আমি নিজেই থাকতে পারছি না ! এতো কাছে থেকেও মঞ্জুকে আমি ছুঁতে পাচ্ছিনা ! মঞ্জুকে চোখের কাতর ইশারায় বোঝাতে চেয়েছি অনেকবার ! কিন্তু মঞ্জু আমাকে কোনো পাত্তাই দেয়নি ! বুঝতে পারছি যে মঞ্জু খুব রেগে আছে ! কিন্তু আমার বন্ধুবান্ধবীদের সামনে কি সুন্দর অভিনয় করে যাচ্ছে ! এক ফাঁকে ঝর্নাকে ধরলাম ! " হ্যারে কি ব্যাপার তোর মঞ্জুদি মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে ?"
- রেগে থাকবে না তো কি তোমাকে পুজো করবে ?এতদিনে তুমি কতবার মঞ্জুদিকে ফোন করেছো ? তুমি তো তোমার বন্ধুবান্ধবীদের নিয়েই মেতে আছো ! কাল কলকাতা যাবার সময় ওর মান ভাঙিয়ে দিও ! বলে ঝর্ণা চলে গেলো !



[/HIDE]
 
[HIDE]

আমি মায়ের ঘরে ঢুকলাম ! মা আর পিসি গল্প করছে ! যদিও সমস্ত গল্পই আমাকে নিয়ে বা আমার বন্ধুদের নিয়ে সেটা বেশ বুঝতে পারলাম ! আমার বন্ধু বান্ধবীদের মায়ের আর পিসির ভালো লেগেছে ! কলেজের বন্ধু সমন্ধে ওনাদের ধারণা খুব একটা ভালো ছিল না ! কিন্তু এদের দেখে ওনাদের ধারণা বদলে গেছে !
- কি রে কিছু বলবি ? মা আমাকে দেখে প্রশ্ন করলেন !
- না। . মানে আজকে ক্লাবে আমার নতুন বন্ধুদের অনারে সবাই পার্টির আয়োজন করছে ! তাই বলছিলাম।........
- সেতো ভালো কথা ! যা এনজয় কর ! তোর বন্ধুরাও জানুক আমরা বাঙালিরা অতিথি সৎকার করতে জানি ! কিন্তু বেশি ড্রিংক করিস না ! আমরা কেউ চাইনা তোদের আমাদের পাড়ার লোকে খারাপ বলুক !
মায়ের উদারতায় আমি অবাক হয়ে গেলাম !
- কি দেখছিস হা করে ! এখন তোরা বড়ো হয়ে গেছিস ! একটু আধটু পার্টি যদি এখন না করিস তবে কি আমাদের মতো বয়সে এসে করবি ?
মাকে জড়িয়ে ধরলাম ! -- কিন্তু বাবা !!
- ওরে তোর বাবাই বলে গেছে তোদের এইসময় ছাড় দিতে !
মাকে জড়িয়ে ধরে একটা হামি খেয়ে নিলাম ! পিসিকেও একটা হামি খেলাম !
মেক বললাম আজ মেয়েরাও একটু এনজয় করতে চাইছে !
এবারে পিসি বললেন " করুক না ! কে মানা করেছে ! এবার পিসি মুখ খুললেন ! তবে ওরা যেন হুইস্কি বা রাম খাওয়া চলবে না ! খাবার টেবিলে যেন কেউ বমি না করে ! তোদের ট্রেনের সমস্ত ঘটনা আমি শুনেছি ! সেটা যেন মনে থাকে !
- আমাদের ট্রেনের ঘটনা তুমি কি করে জানলে ?
- মঞ্জু আমাকে সব বলেছে !
আমি মাথা নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম !
ঝর্ণা আমাকে দেখে প্রশ্নবাচক মুখ করে দেখতে থাকলো ! আমি শুধু বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলাম অল ইস ওকে !
দেখতে দেখতে সাড়ে ছটা বেজে গেলো ! রাজু আমাকে তারা দিতে শুরু করলো ! "কি রে কখন যাবি ?"
বললাম " যাবো এইবার ! " মঞ্জুকে আর ঝর্নাকে ডেকে বলে দিলাম যে পারমিশন হয়ে গেছে ! ওরা যেন ছাদে গিয়ে ওদের প্রোগ্রাম চালু করে দেয় ! সেই সাথে হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলাম যেন বেশি না খায় !
হরপ্রীত বললো " কি দিয়ে খাবো ?" ঝর্ণা বললো বাড়িতে বাদাম আছে ! ভেজে নেওয়া হবে !
- না ! আমাদেরও চিকেন চাই ! আমি পরে গেলাম ফ্যাসাদে ! ওদের জন্য চিকেনের ব্যবস্থা কোথা থেকে করবো ?
ঝর্ণা বললো " তুমি যাও ! আমি দেখে নেবো ! ফ্রীজে পম্পলেট মাছ আছে ওদের ভেজে দেবো !" বাপের কালে খায়নি ! ওতেই কাজ হয়ে যাবে !"
মনে মনে নিশ্চিন্ত হলাম ! আমি সমীর আর রাজু তিনজনে বেরিয়ে পড়লাম ! একটু মার্কেটের দিকে গেলাম ! সিগারেট নিতে হবে ! কলেজে হকার পর থেকে এখনো পর্যন্ত সিগারেট খাইনি ! আজ অনেকদিন পরে সিগারেট খাবো ! সিগারেট কিনে পিছন ঘুরে তাকাতেই দেবাশিসের সাথে দেখা ! " দিলি তো আমার গাঁড় মেরে ?" দেবাশিস আমাকে দেখেই বলে উঠলো !
- আমি আবার তোর গাঁড় কখন মারলাম ?
- এই যে পাঁচ কিলো চিকেন আমার পোঁদ মেরে দিলো নিলয় ! বললো যে যদি চিকেন নিয়ে না যাই তাহলে আমার ক্লাবে ঢোকা বন্ধ করে দেবে ! বলেই হেসে ফেললো ! " বুঝলি তুই এসেছিস শুনেই আজ তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে চিকেন নিয়ে ক্লাবে যাচ্ছি ! "
পিছন থেকে "এ বড়দা ! কেমন আছিস ?" শব্দে পিছন ঘুরে দেখি সাধু সাইকেলের পিছনে একটা পেটি বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে ! সাধু মদের দোকানে কাজ করে ! মাধ্যমিক অবধি আমাদের সাথে পড়তো ! তারপর অভাবের তাড়নায় মদের দোকানে চাকরি নিয়েছিল ! ভালোই কামায়
- কি রে কেমন আছিস ? যাচ্ছিস কোথায়

সাধু বলল ক্লাবে মাল নিয়ে যাচ্ছি ! নিলয়দার হুকুম হয়েছে !
- কটা বোতল নিলি ?
- পাঁচটা ! যদি লাগে তাহলে আরো দিয়ে যাবো !
রাজু আর সমীর শুধু দেখে যাচ্ছে ! আমি ওদের তারা দিলাম চল এবার !
সবাই মিলে ক্লাবে ফিরে এলাম ! সৈকত বললো সবাই টালিখোলার মাঠে চলে গেছে ! তোদেরকে ওখানেই যেতে বলেছে !
সৈকতকে সঙ্গে নিয়ে টালিখোলার মাঠে পৌঁছে গেলাম ! মাঠের এক কোনে ইটের পাতা উনুন ! বুধু আর শম্ভু দুজনে মিলে হেরিকেন জ্বালিয়ে পিয়াঁজ, আদা রসুন কাটতে ব্যস্ত ! আমাকে দেখে মুচকে হাসলো ! বুধু বললো জানিস সুনন্দ তুই চলে যাবার পর এখানে আর কোনো পার্টি হয়নি ! তুই এলি তবেই আজ পার্টি হচ্ছে ! বুধু আর শম্ভু দুজনেই টালিখোলায় কাজ করে ! ওরা ওঁড়াও সম্প্রদায়ের ! জন্ম এখানেই ! পড়ালেখা বেশিদূর করতে পারেনি ! টালি খোলাতেই ওদের জন্ম হয়তো এখানেই ওদের শেষ হয়ে যাবে ! আমাদের ক্লাবের কেউ ওদের নিচু নজরে দেখেনা ! সবাই সবাইকার বন্ধু ! ওরা চিকেন রান্নাতে মন দিলো ! ইট পেতে বেঞ্চের মতো করা হয়েছে ! সবাই সেই ইটের বেঁচে বসে পড়লাম ! গোল করে ইটের বেঞ্চের মাঝখানে ইটের বানানো টেবিল মানে বেদি মতো করা হয়েছে ! নিলয় আর কানাই গ্লাস আর জলের বোতল রাখলো ! একটা প্লেটে চানাচুর ঢালা হলো ! হেরিকেনের আলোয় আমাদের পার্টি ! রাজু আর সমীরের জীবনে নতুন অভিজ্ঞতা !
সবাই খুব এনজয় করলাম ! বুধুর হাতের চিকেনের খুব তারিফ হলো ! রাজু বা সমীর এইধরণের চিকেন নাকি জীবনে কোনোদিন খায়নি ! সঙ্গে সঙ্গে বুধুকে ওরা রিকোয়েস্ট করে বসলো যে যেদিন ওরা যাবে সেদিন যদি বুধু ওদের জন্য চিকেন রেঁধে দেয় ! আমি বললাম "এইতো বলি আলুপোস্ত ভাত নিয়ে যাবি আবার এখন বলছিস যে চিকেন নিয়ে যাবি ! কি নিয়ে জাবি সেটা আগে ঠিক কর !
সমীর বললো দুপুরে আলুপোস্ত ভাত খাবে আর রাতে চিকেন আর রুটি খাবে !
ওর বলার ধরণ দেখে সবাই হেসে ফেললো ! বুধু বললো ও রাতে চিকেন রেঁধে আমাদের বাড়ির ফিজে রেখে দেবে !
নিলয় আর কানাই এমনিতেই ছ্যাঁচড়া ! (যারা বাগদি বাড়ির প্রথম পর্ব পড়েছেন তারা নিশ্চই জানবেন !) বললো " ওই মাল গুলোর সাথে একটু পরিচয় করিয়ে দিলি না তো ? ভাবলাম নদীর ধরে নিয়ে এসে একটু চুদবো। ...
- ওরে বোকাচোদা ওই মালগুলোর মধ্যে দুজনে এই দুজনের জিনিস ! ওই দিকে হাত বারাস না !
সবাই হেসে উঠলো !
কথায় কথায় অনেক রাত হয়ে গেলো ! সবাইকার ই মোটামুটি নেশা হয়ে গেছে ! আসর ভঙ্গ হলো ! বাড়ি আসার পথে কানাই বললো সকাল দশটায় তোদের বাড়ি গাড়ি চলে আসবে ! সবাই রেডি হয়ে থাকিস ! আমি বললাম একটা গাড়িতে কি করে হবে রে ?
- সে চিন্তা আমার ! তোরা রেডি হয়ে থাকিস !
বাড়ি ফিরে এলাম ! আমার রুমে বসে তিনজনে আজকের পার্টির গল্প চলছিল ! সমীর আর রাজু বললো যে ওরা কোনোদিন ভাবতেই পারেনি যে বন্ধুত্ব এতো মিষ্টি মধুর হয় ! ওদের জীবনে যত বন্ধু এসেছে মোটামুটি সবাই স্বার্থের বন্ধু ! এইরকম নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব ওরা কোনোদিন দেখেনি ! এখন থেকেই আমার বন্ধুই ওদের বন্ধু ! সুযোগ পেলেই ওরা এখানে চলে আসবে !
ঝড়ের গতিতে ঝর্ণা আমাদের রুমে ঢুকে আমাকে টানতে শুরু করে দিলো !
- কি হলোরে আমাকে ধরে টানাটানি করছিস কেন ?
- তারাতারি ছাদে চলো ! মঞ্জুদি আর কোয়েলদি দুজনে খুব লড়াই করছে ! আমি বুঝতে পেরে গেলাম ! কিসের লড়াই ! দুজনে আমাকে নিয়েই লড়াই করছে ! এখুনি যদি বাড়ির সবাই জানতে পারে তাহলে কেলোর কীর্তি হয়ে যাবে !


[/HIDE]
 
[HIDE]

তাড়াতাড়ি ছাদে চলে গেলাম ! দুজনেই ভদকা খেয়ে টুন্ ! ও বলছে সুনন্দ আমার ও বলছে সুনন্দ আমার ! হরপ্রীত আর সুজাতা দুজনে মজা দেখছে !
আমি তাড়াতাড়ি দুজনের মাঝে গিয়ে দুজনকেই একটা ধমক দিলাম ! কোয়েল একটু দোমে গেলেও মঞ্জু নাছোড়বান্দা ! অনেক কষ্টে ওদের বোঝানোর পর শান্ত হলো ! তখন হরপ্রীত জিজ্ঞাসা করলো " হ্যা রে মঞ্জু তো তোর পিসির মেয়ে ! কেস টা কি ?"
- সব বলবো ! এখন এখানে কিছুই নয় ! ট্রেনে সমস্ত বলবো ! মঞ্জু থেমে গেলেও মনে মনে গজরে যাচ্ছে ! ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করলাম ! কোয়েলকেও একটু মৃদু ভর্ৎসনা করলো সুজাতা ! সিচুয়েশন আন্ডার কন্ট্রোল !
- আমি বললাম অনেক হয়েছে ! এবার সবাই শেষ করো ! আর নিচে গিয়ে যেন কোনো বাওয়াল না হয় !
সবাই নিচে নেমে এলাম ! পেট মোটামুটি সবার ভরা ছিল ! রাতে কেউ আর কিছু খেলো না ! শুয়ে পড়লো যে যার মতো !
হটাৎ ফোনের ঘন্টি ! বাবা আমাকে ডাকলেন ! "খোকা ! তোর লাহিড়ীদার ফোন !"
- উঠে গিয়ে ফোন ধরলাম ! "কি রে এসে অবধি আমাদের ফোন করার কথা মনে নেই নাকি ? ওদিকে সুভাষ আমার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে ! "
- না গো এসে থেকে একটুও সময় পাইনি ! কাল সকালবেলায় সবাইকে নিয়ে কলকাতায় ঠাকুর দেখতে যাবো !
- তাহলে যাবার পথে আমাদের এখন থেকে হয়ে যাবি ! চৈতালিকেও নিয়ে যাস !
- ঠিক আছে ! কাল সকালে তোমাদের সাথে দেখা হবে ! বলে ফোন রেখে দিলাম !
- ভোর বেলাতেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো ! দেখি সমীর আর রাজু দুজনেই এপাশ ওপাশ করছে ! আমি ওদের বললাম আমার সাথে ক্লাবের মাঠে ফুটবল খেলতে যাবে কি না ? ওরা তাড়াতাড়ি উঠে তৈরী হয়ে নিলো ! সবাই মাঠে পৌঁছে দেখি আমাদের ক্লাবের সবাই প্র্যাকটিস শুরু করে দিয়েছে ! নিলয় বললো "অনেকদিন পর আজ ফুটবল খেলার মজা আসবে !" এমনিতেই আমি ফুটবল ভালোই খেলতাম কিন্তু সমীর আর রাজু ও যে ভালো ফুটবল খেলে সেটা জানতাম না ! ওদের খেলা দেখেই নিলয় বললো "রবিবারে জাগরণী সংঘের সাথে ম্যাচ আছে ! তোরা তিনজন থাকলে আমাদের ওরা আর হারাতে পারবে না ! গত ছয়মাসে ওদের কাছে আমরা গো হারান হেরেছি ! "
আমি বললাম ! হয়ে যাক তাহলে ! আটটা নাগাদ বাড়ি ফিরে এলাম ! দেখি সবাই ঘুম থেকে উঠে গেছে ! কোয়েল আর মঞ্জু দুজনে দুজনের হাত ধরে বসে আছে ! বুঝলাম দুজনেই কাল রাতের ঘটনায় দুঃখিত ! আমি ওদের দেখে হেসে ফেললাম ! " নেশা কেটেছে ? হাসতে হাসতেই ওদের কে বললাম !" মঞ্জু আমাকে তেড়ে এলো ! ঠিক তখনি পিসি ঢুকে আমাদের দেখে বলে উঠলেন " তোরা কি আর বড়ো হবিনা ? সকাল বেলাতেই ঝগড়া শুরু করে দিয়েছিস ?"
মঞ্জু বললো "দ্যাখোনা মা সকাল বেলাতেই আমার পিছনে লেগেছে ! পিসি হাসতে হাসতে চলে গেলেন ! "
ঝর্ণা সবাইকে চা দিয়ে গেলো ! আমি চা নিয়ে মায়ের ঘরে গেলাম ! মাকে আজকের ঠাকুর দেখতে যাবার কথা বললাম !

ঝর্নাকেও নিয়ে যাবার জন্য বললাম ! মা বললেন " যা মেয়েটাকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আয় ! " সবাইকার জন্য লুচি আর তরকারি ব্রেকফাস্টে ! সবাই খেয়ে রেডি হয়ে বসে আছি ! বাড়ির বাইরে গাড়ির হর্ন ! বেরিয়ে দেখি একটা ম্যাটাডোর ভ্যান দাঁড়িয়ে ! ড্রাইভার ছেলেটাকে আমি ঠিক চিনিনা ! ও বললো কানাইদা পাঠিয়েছে !
- কানাই কোথায় ? ও যাবে না আমাদের সঙ্গে ?
- ও মোরে দাঁড়িয়ে আছে ! ওখান থেকেই উঠবে ! সবাই উঠে পড়লাম ! মেয়েদের কলকলানিতে পুরো গাড়ি মেতে রয়েছে ! মোড়ের মাথায় কানাইকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ড্রাইভার ছেলেটি গাড়ি দাঁড় করলো ! কানাই উঠে সমীর আর রাজুর সাথে হাত মেলালো ! রাজু কোয়েল, সুজাতা আর হরপ্রীতের সাথে কানাইয়ের পরিচয় করিয়ে দিলো ! যে কাজটা আমার করার ছিল সেটা রাজু বেশ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে করে নিলো ! কথায় কথায় জানতে পারলাম যে গাড়িটি আমাদের ক্লাসের বন্ধু ববি বাগ্গার ! সর্দার ! আমাদের সাথেই পড়তো ! এখন গাড়ির ব্যবসা খুলে বসেছে ! আমার কথা শুনে গাড়িতে ডিজেল ফুল লোড করে পাঠিয়েছে ! সন্ধ্যে বেলায় ক্লাবে আসবে দেখা করতে !
সমীর বললো "তোদের বন্ধুরা খুব ভালো রে ! কেউ এখানে পয়সার কদর করে না ! সবাই বন্ধুত্তের কদর করে ! যদি আমাদের ওখানেও এইরকম বন্ধু পাওয়া যেত তাহলে জীবনটা কত সুখের হতো !
আমি কানাইকে বললাম আমরা দিল্লি রোড হয়ে বৈদ্যবাটী ঢুকবো আগে ! সেখান থেকে আরো একজন কে নিয়ে কলকাতা যাবো !
মিনিট চল্লিশের মধ্যেই আমরা লাহিড়ীদার বাড়ির সামনে পৌঁছে গেলাম ! লাহিড়ীদা বেরিয়ে এসে সবাইকে অভ্যর্থনা করলেন ! বিশাল ড্রয়িং রুমে সবাই গিয়ে বসলো ! লাহিড়ীদা একটা ফোন করে কিছুক্ষন কথা বলে কোয়েলের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলেন ! কোয়েল এগিয়ে গিয়ে ফোন নিয়ে বেশ কিছুক্ষন কথা বলে ফোনটা রেখে দিয়ে লাহিড়ীদাকে থাঙ্কস জানালো ! বুঝলাম লাহিড়ীদা সুভাষ বাবুর সাথে নিজে কথা বললেন আর কোয়েলেরও কথা বলিয়ে দিলেন !
আমার দিকে তাকিয়ে লাহিড়ীদা বললেন ফেরার পথে একটু তাড়াতাড়ি এস ! আমরা সবাই একটু আড্ডা মারবো ! সাথে গাড়ি রয়েছেই ফিরতে কোনো অসুবিধা হবে না ! চৈতালি রেডি হয়ে বেরিয়ে এসে মঞ্জু কে জড়িয়ে ধরলো ! মঞ্জু একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো ! কানাই আর চৈতালি ঘন ঘন একে অপরের দিকে তাকাতে শুরু করে দিলো ! কানাইয়ের দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট করে চোখ মেরে বুঝিয়ে দিলাম চালিয়ে যাও গুরু ! সবাই আবার গাড়িতে উঠে পড়লাম ! ঘন্টাখানেকের মধ্যেই কলকাতা পৌঁছে গেলাম ! সমীর রাজু কোয়েল হরপ্রীত এবং সুজাতা সবাই কলকাতার রাস্তাঘাট পুজো প্যান্ডেল খুব উপভোগ করছিলো ! ওদের চোখে মুখে মুগ্ধতার ছোঁয়া ! ওদের ভালো লাগা দেখে আমারও একটু গর্ব হচ্ছিলো !
ঘুরে ঘুরে মোটামুটি সবাই ক্লান্ত হয়ে গেছে ! দুপুর প্রায় তিনটে বাজে ! কানাই সবাইকে নিয়ে কফি হাউসে নিয়ে এলো ! ওদের সবাইকে কফি হাউসের গল্প শোনাতে লাগলো ! সবাই মুগ্ধ হয়ে গল্প শুনতে থাকলো ! আর নানান প্রশ্নে কানাইকে জর্জরিত করতে থাকলো ! কানাই হাসি মুখেই সবার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকলো ! মাঝখানে সবার জন্য মোঘলাই পরোটা আর কষা মাংসের অর্ডার দিয়ে দিলো কানাই !
কানাই যে ভাবে ওদের সব বোঝাচ্ছিলো দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম ! যে কানাইকে আমি বা আমাদের বন্ধু মহল ছ্যাঁচড়া বলে জানি সেই কানাই আর এই কানাইয়ের মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ !
কানাইয়ের জ্ঞান দেখে আমিও মুগ্দ্ধ হয়ে গেলাম ! শুধু রাজুরাই নয় মঞ্জু চৈতালি ঝর্ণা সবাই মন দিয়ে কানাইয়ের কথা শুনে যাচ্ছিলো ! চৈতালির চোখে অবাধ মুগ্ধতা ! বুঝলাম এতদিনে চৈতালি কোথাও নৌকা বাঁধার জায়গা পেয়েছে !



[/HIDE]
 
[HIDE]

কফি হাউসের মোগলাই খেয়ে সবাই খুব প্রশংসা করলো ! কানাই বললো কাল কলকাতায় এসে অনাদির মোগলাই খাওয়াবে ! ওখানকার মোঘলাই ভারত বিখ্যাত !
মোঘলাই পর্ব শেষ হতেই আরো দু চারটে ঠাকুর দেখে আমিই বললাম " চলো এইবার ফেরা যাক ! " চৈতালীদের বাড়ি যেতে হবে ! লাহিড়ীদা অপেখ্যা করছেন ! "
বিকেল পাঁচটা নাগাদ আমরা রওনা দিলাম !
সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ লাহিড়ীদার বাড়ির সামনে পৌঁছতেই লাহিড়ীদা বেরিয়ে এসে বললেন "সোজা চলো কমল বাবুর বাড়ি ! উনি অপেখ্যা করছেন ! " নিজেই ড্রাইভারের পাশে বসে পড়লেন ! গাড়ি মিনিট দশেকের মধ্যেই কমলদার বাড়িতে এসে গেলো !
কমলদার বাড়ির ভোল পুরো পাল্টে গেছে ! বাড়ির একদিকটা একটা স্কুলের শেপ নিয়েছে আর অন্য দিকটা নিজের বসবাসের জন্য বানানো হয়েছে ! বাড়ির গেটে একটা সাইনবোর্ডে লেখা "তৃপ্তির শান্তি"
নাম টা দেখে বুকটা একটু যেন ভারী হয়ে গেলো ! আমার বন্ধুরা কেউই জানেনা কমলদা বা তৃপ্তিদির ব্যাপারে ! ওরা একটু অবাক হলেও মুখে কিছুই বললো না ! কানাইয়ের সাথে লাহিড়ীদার বেশ জমে গেছে ! দুজনেই খুব জোরে পলিটিক্সের গল্প করে চলেছে ! বুঝলাম কানাইয়ের পলিটিক্সেরও জ্ঞান রয়েছে ! কমলদা বেরিয়ে এলেন ! সাথে ঘোষ দা আর মুখার্জি দা ! সবাই আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালো ! কমলদার মধ্যে এখন সেই ঝিমিয়ে যাওয়া ভাবটা একেবারেই নেই ! এখন একজন চনমনে উচ্ছল একজন মানুষ ! সবাইকে নিয়ে কমলদা পুরো বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখালেন ! এটি একটি অনাথ আশ্রম ! প্রায় জনা দশেক খুদি খুদেদের দেখা পেলাম ! কেউ কমলদার পা জড়িয়ে ধরছে কেউ লাহিড়ীদার কাঁধে চেপে পড়ছে ! কেউ ঘোষ দা আর মুখার্জিদার পিছনে পরে গেছে ! সবাই বাচ্ছাদের নিয়ে মেতে উঠেছে ! হটাৎ পিছন থেকে একটি মেয়েলি কণ্ঠ " অনেক হয়েছে ! যায় সবাই খেয়ে শুয়ে পর !ঘুরে দেখি রেবা দি ! তৃপ্তিদির স্কুলের হেডমিস্ট্রেস !
পরে জানতে পারলাম উনি স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে এই সমস্ত বাচ্ছাদের মা হয়েছেন আর কমলদা হয়েছেন বাবা ! কি নির্মল পরিবেশ ! সবার মন ভরে গেলো !
আমি নিজে খুব খুশি কমলদাকে একটা বিষন্ন জীবন থেকে বেরিয়ে আর একটা নতুন জীবনে ফিরে আসার জন্য !
- চলো সবাই এবার আমার ছাদে গিয়ে বসি ! যদিও অক্টোবর মাস কিন্তু এখনো এখানে ঠান্ডা পড়েনি ! একটা সুন্দর আবহাওয়া এখানে ! মেয়েদের রেবাদি নিয়ে চলে গেলেন ! ছাদে শুধু আমরা ছেলেরা ! সবার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিলাম ! রাজু কমলদার হাত দুটো জড়িয়ে বললো " দাদা আপনার এই মহৎ কাজে কি আমি কিছু যোগদান দিতে পারি ?"
- টাকা পয়সা আমাদের চাইনা ! তবে যদি পারো মাঝে মাঝে এসে এই বাচ্ছাগুলোর সাথে একটু সময় কাটিয়ে যেও !

সেই সন্ধে আমাদের খুব ভালোই কাটলো ! লাহিড়ীদা, ঘোষ দা ! মুখার্জি দা ! রেবা দি সবাই কমলদার এই মহৎ কার্যে সাথে আছেন ! রেবাদির হাসবেন্ড নেই ! একমাত্র ছেলে সে আমেরিকাতে সেটল ! তাই রেবাদিই হাসি মুখে বাছা দেড় নিয়েই থাকেন ! আর তাছাড়া সারা জীবন একপাল ছাত্রী ঠেঙাতে ঠেঙাতে ছোট ছোট বাচ্ছাদের হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন আগেই ! এখন ওনাকে এই রূপে দেখে খুব ভালো লাগলো ! কানাই কমলদা, লাহিড়ীদাদের দেখে অবাক ! আমার মতো একটা ছোট ছেলের সাথে ওরা কি রকম বন্ধুর মতো মিশছে ! আরও অবাক হলো যখন লাহিড়ীদা আমার কাছে সিগারেট চাইলেন ! " দে সুনন্দ আজ একটা তোর সিগারেট দে ! অনেক দিন তোর সিগারেট খাইনি ! " অবাক চোখে কানাই আমাদের দেখতে থাকলো ! মোটামুটি সবাই দু তিন পেগ করে মাল খাবার পর আমি ওনাদের কাছে বিদায় চাইলাম !
গাড়িতে বসে কানাই আমাকে বললো " তুই করেছিস কি রে ? বাবার বয়সী লোকেদের সাথে সিগারেট খাচ্ছিস, মদ খাচ্ছিস ! তুই তো গুরুদেব লোক মাইরি ! "
- ওনাদের দেখে তোর কি মনে হলো বলতো ? আমি কানাইকে ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলাম !
- না মানে সেরকম কিছুই নয় কিন্তু ওনারা খুব আমাকেও তোর বন্ধু জেনে কেমন নিজের করে নিলো ! !
তখন আমি কানাইকে আমাদের প্রথম পরিচিত হবার দিন থেকে আজ পর্যন্ত যত ঘটনা ঘটেছে সমস্ত বললাম ! শুনে কানাই আমাকে জড়িয়ে ধরলো ! সত্যিই তুই গুরুদেব !
সবাই বিষয়ে করে রাজু আর সমীর অবাক হয়ে গেলো সবার সাথে পরিচিত হয়ে ! এইরকম সমাজ বা এইরকম মানুষ ওরা আজ পর্যন্ত দেখেনি ! শুধু মাত্র গল্পে বা উপন্যাসে পড়েছে ! আজ যখন ওনাদের সামনে সামনি দেখতে পেলো ওরা অভিভূত এবং বিহ্বল ! আমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানালো ওদের একটা নতুন পৃথিবী দেখানোর জন্য ! বাড়ি পৌঁছে গেলাম ! কানাই বললো কাল আবার সকাল দশটায় গাড়ি চলে আসবে ! আমি কানাই কে থামিয়ে বললাম " এই আজকের খরচ কত হলো সেটা বল ! এতগুলো মোঘলাই কষা মাংস অনেক খরচ হয়েছে !"
- বোকাচোদা ! সমস্ত খরচ তোমার গাঁড়ে ঢুকিয়ে নাও ! আমার সাথে হিসাব মারতে এস না ! নিলয়কে বললে তোমার কেলিয়ে গাঁড় ভেঙে দেবে !
হাসতে হাসতে আমি ঘরে ঢুকে পড়লাম !
সবাই আমার ঘরে ! শুধু কমলদা আর লাহিড়ীদার গল্প ! ওরা সবাই অভিভূত ! মা এসে সবাইকে খেতে ডাকলেন !
হাত মুখ ধুয়ে সবাই খাবারের থালা নিয়ে আবার আমার ঘরে ঢুকে গেলাম ! কারণ ডাইনিং টেবিলে অত জনের বসার জায়গা নেই ! গল্প করতে করতে খাসির মাংস সহকারে রুটি খেয়ে নিলাম ! এবারও সমীর বললো " যাবার সময় আন্টির হাতের খাসির মাংস নিয়ে গেলে দারুন হয় ! " আমার আমার মুখ দিয়ে চুটিয়ে খিস্তি বেরুলো ! " শালা খেয়ে খেয়ে মরবি ! ট্রেনে আলুপোস্ত ভাত চাই, বুধুর হাতের কষা মাংস চাই আবার এখন মায়ের রান্না খাসির মাংস চাই ! খেয়ে খেয়ে মরবি শালা !
সবাই আবার হেসে উঠলো ! খাবার পরে সবাই ঘুমাতে চলে গেলো !



[/HIDE]
 
[HIDE]

ভোর বেলায় আমরা যথারীতি ফুটবল খেলতে বেরিয়ে গেলাম ! আজ ক্লাবের মাঠে আমাদের বন্ধুদের প্রায় সবাই হাজির ! ববি বাগ্গাও এসেছে ! নিলয়কে কানাই তাড়িয়ে তাড়িয়ে কালকের সব ঘটনা বলছে আর সবাই শুনে এনজয় করছে ! কিন্তু কানাই যখন কমলদার কথা বলতে শুরু করলো ! সবার চোখে মুখে এক অপরিসীম শ্রদ্ধা নেমে এলো ! নিলয় আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো " এই জন্যই শালা তোকে আমি গুরু মানি ! ( কে কার গুরু ! স্কুলে ওরাই আমার গুরু ছিল ! ) ববি বললো তুই সেই একইরকম আছিস সুনন্দ ! এই জন্যেই তোকে এতো সবাই ভালোবাসি রে ! গল্পে গল্পে খেলা আর হলো না ! সাড়ে আটটায় বাড়ি ফিরে এলাম ! আসার আগে ববি বললো গাড়ি ঠিক সময়ে তোদের বাড়ি চলে আসবে ! আমি ববিকে রিকোয়েস্ট করলাম যেন তেলের আর ড্রাইভারের খরচ আমার থেকে নিয়ে নেয় ! প্রথমে রাজি না হলেও পরে বললো ঠিক আছে কানাইয়ের হাতে দিয়ে দিস !
আজ সকালে আমাদের বাড়িতে কোনো ব্রেকফাস্ট হয়নি ! বাবা দেশবন্ধুর হিঙের কচুরি নিয়ে এসেছেন ! দেশবন্ধুর কচুরি পুরো হুগলি জেলাতে প্রসিদ্ধ ! গরম গরম কচুরির সাথে ছোলার ডাল ! আমি নিজেই লোভ সামলাতে পারিনা ! দেশবন্ধুর কচুরি আমি একই গোটা দশ বারো খেয়ে ফেলি ! দেখি সমীর আর রাজু কি বলে খেয়ে ! সমীর একটুকরো মুখে দিয়েই ওয়াও বলে চিল্লিয়ে উঠলো ! " এই ধরণের পুরি ( সমগ্র নর্থ বা সাউথ ইন্ডিয়াতে ফুলকো কোনো জিনিস মানেই পুরি !) এই পুরি তো গজব কে হায় ! মাঝে অউর চাহিয়ে !
হরপ্রীত বললো " তু অউর সমীর এক কাম কর ! এহিপে রেহে জা ! রোজ ইয়ে খানা খানা ! নেহি তো অভি বোলেগা ইয়ে ভি ট্রেন কে লিয়ে প্যাক করনে কে লিয়ে !"
সবাই হেসে ফেললাম হরপ্রীতের কথা বলার ভঙ্গিতে !
আজ সবাই খুব খুশির মুডে আছে ! আমাদের সাথে পিসি ও তৈরী হয়ে নিলো ! উনি বৈদ্যবাটিতে নেমে যাবেন ! মঞ্জু আমাদের সাথেই থাকবে !
বাবা আমাকে চুপি চুপি ডেকে আমার হাতে তিন হাজার টাকা ধরিয়ে দিলেন ! বললেন "দেখিস যেন কেউ তোর নিন্দে না করে ! " আমি হাসি মুখে টাকা নিয়ে বললাম "বাবা ! ওরা এতো অভিভূত যে তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না !
আজকেও ঝর্নাকে সাথে নিয়ে নিলাম ! পিসি আমাদের সাথেই গাড়িতে উঠে পড়লেন ! সবাইকে বুঝিয়ে দিলাম যেন ইয়ার্কি একটু কম মারে ! মোড়ের মাথায় কানাই নিলয় আর একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে ! ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দিলে সবাই গাড়িতে উঠে পরে ! পিসিকে দেখে একটু চিন্তিত হয়ে পরে নিলয় ! আমি পিসির সাথে নিলয় আর কানাইয়ের পরিচয় করিয়ে দিলাম ! সাথে মেয়েটার পরিচয় আমি জানতাম না ! তাই। ....
পিসি সবাইকে আশীর্বাদ করলেন ! পিসির বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই পিসি আর মঞ্জু নেমে গেলো ! আমি মঞ্জুকে বললাম " কিরে তুই কেন নামলি ?"
- তোমরা ঘুরে এসো ! যাবার পথে আমাকে তুলে নিও ! '
বুঝলাম মঞ্জুর মাসিক এসে গেছে ! সবাই লাহিড়ীদার বাড়ির সামনে পৌঁছে গেলাম ! কানাই নিজেই আগে গাড়ি থেকে নেমে গেলো ! চৈতালিকে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে বসে পড়লো ! মঞ্জুর বাড়ির বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল ! ওকে তুলে নিয়ে নিলয়ের নিয়ে আসা মেয়ের সাথে আলাপ করা শুরু করলাম ! ওই মেয়েটির নাম স্বরস্বতী ! নিলয়ের অনেক দূর সম্পর্কের আত্মীয় ! নিলয়ের সাথে বিয়ে হবার কথা পাকা হয়ে আছে !
শালা আমি নিজেই জানিনা ! নিলয় আমাদের সবাইকে এই কথাটা লুকিয়ে রেখেছিলো ! কিন্তু আজ বেরিয়ে পড়লো ! নিলয়ের মুখে লজ্জার হাসি !
সারা রাস্তা আমি আর কানাই নিলয়ের খিঁচাই করতে থাকলাম !
নিলয় আর থাকতে না পেরে জোর গলায় চেঁচিয়ে বলে উঠলো " ওই বোকাচোদা কানাই যে চৈতালিকে ছিপ ফেলেছে সেটা কোনো ব্যাপার নয় নাকি ?!"
আবার একপ্রস্থ হাসি ! চৈতালির মুখে রক্তিম ছটা ! মঞ্জু চৈতালিকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে নিলো ! কানাই লজ্জায় মুখ তুলে তাকাতে পারছিলো না !
ড্রাইভার বললো " আজ একটু ঘুরে যেতে হবে ! রাস্তায় অনেক জায়গা বন্ধ করে রেখেছে ! আমাদের হাওড়া হয়েই যেতে হবে ! ওরা সবাই হাওড়ার নাম শুনে হই হই করে উঠলো ! ওরা হাওড়া ব্রিজ হেঁটে হেঁটে পার হতে চায় !


কানাইকে বললাম তোরা গাড়ি নিয়ে ব্রাবোন রোডের মুখে দাঁড়া ! এদের আমি হাওড়া ব্রিজ দেখিয়ে নিয়ে আসছে !
গাড়ি থেকে কানাই চৈতালি নিলয় এবং স্বরস্বতী নামলো না ! হাওড়া ব্রিজ পার হতে হতে ওরা বার বার উপরের দিকে আর নিচের দিকে তাকাচ্ছিলো ! অবাক হয়ে যাচ্ছিলো যে ব্রিজের নিচে কোনো পিলার নেই ! শুধু ওরাই কেন যারাই এই ব্রিজ প্রথম দেখে তারাই আশ্চর্য হয়ে যায় ! ব্রিজের উপর হাঁটতে হাঁটতেই আমি ওদের হাওড়া ব্রিজ তৈরির ইতিহাস জানালাম ! " ১৮৬২ সালে যখন হাওড়া রেল স্টেশন তৈরী হলো তখন ব্রিটিশ বেঙ্গল গভর্নমেন্ট শিপিং কর্পোরেশনর চিফ ইঞ্জিনিয়ার জর্জ টার্নবুলকে কলকাতা এবং হাওড়ার সাথে যোগ সৃষ্টি করার জন্য একটি ব্রিজ বানানোর সমিখ্যা করতে বললো ! ২৫ বছর ধরে তিনি সমীক্ষা করে জানালেন কলকাতা থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে হুগলির শ্রীরামপুরে এই ব্রিজ বানানো যেতে পারে ! ব্রিটিশ সরকার জর্জ টার্নবুলের এই সমীক্ষার রিপোর্টে খুশি হন না ! কারণ কলকাতা আর হাওড়ার ব্যবধান মাত্র তিন কিলোমিটার ! এই তিন কিলোমিটার ব্রিটিশ সরকারের লোকেদের যাওয়া আসার জন্য একমাত্র সাধন স্টিমার ! তাতে অনেক বেশি সময় লাগে আর তা ছাড়া তখন গঙ্গার গতিবেগ অনেক বেশি ছিল যে কোনো সময়ে স্টিমার ডুবি হয়ে যেত ! ব্রিটিশ সরকার হাল ছাড়েন নি ! ১৯৩৬ সালে জর্জ টার্নবুল ইংল্যান্ড থেকে ফিরে ব্রিটিশ সরকারকে একটি বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার এর কথা বলেন ! উনি বলেন ওই বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার এর সাথে ইংল্যান্ডে বসে হাওড়ার ব্রিজ বানানোর ব্যাপারে অনেক কথা হয়েছে এবং তিনি নাকি বলেছেন যে উনি মাত্র ১০বছরের মধ্যেই হাওড়া এবং কলকাতার সংযোগকারী ব্রিজ বানাতে পারবেন ! ব্রিটিশ সরকার সেই বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার কে তৎক্ষণাৎ আমন্ত্রণ জানিয়ে কলকাতায় নিয়ে আসলেন ! তার সাথে কথা ঠিক হলো যে ব্রিজ হাওড়া স্টেশন আর কলকাতার মধ্যেই হওয়া চাই ! এদিক ওদিক নয় ! সেই বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার বলেন হাওড়া স্টেশন থেকেই ব্রিজ তৈরী হবে ! কিন্তু সেই ব্রিজটি হবে সম্পূর্ণ স্টিলের ! লোহা এখানে ব্যবহার করা যাবেনা ! আর এই ব্রিজ তৈরির টেকনোলজি তিনি কাউকে দেবেন না ! সেই ইঞ্জিনিয়ার এর নাম ছিল অতনু মুখার্জি ! দীর্ঘ সাত বছরের অক্লান্ত প্ররিশ্রমে এবং তখন কার দিনের হিসাব অনুযায়ী ১৪০০ কোটিই টাকার ব্যায়ে ১৯৪৩ সালে ব্রিজটি সম্পূর্ণ হলো ! সমগ্র ব্রিটিশ শাসন ব্রিজটিকে দেখে অবাক হয়ে গেলেন ! এমন কি সেই ইঞ্জিনিয়ার তখন দাবি করেন যদি এই ব্রিজকে বোমা মেরেও ওড়াতে কেউ চায় সেটা কোনোদিন সম্ভব হবে না ! ব্রিটিশ সরকার তখন তাকে প্রশ্ন করলো " এই ব্রিজ বানাতে তুমি সাত বছর নিলে ! এই ব্রিজটি ধ্বংস করতে কত বছর নেবে ! তখন অতনু মুখার্জি উত্তর দিয়েছিলেন মাত্র সাত মিনিট ! কারণ পুরো ব্রিজ রিভেট এর উপর বাঁধা ! এমন একটা মেইন রিভেট আছে যেটাকে খুলে নিলেই এই ব্রিজ ধরধরিয়ে ভেঙে পড়বে ! ব্রিটিশ সরকার অতনু মুখার্জিকে সম্মান জানানোর জন্য তাকে ইংল্যান্ড এ নিয়ে যান ! তারপর তার আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি ! যতোদুন জানা গেছে ইংরেজরা অতনু মুখার্জি কে পাগলাগারদে রেখে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে ! ( তথ্য ইঞ্জিনিয়ারিং মিউজিয়াম অফ লন্ডন ১৯৫০ by জর্জ টার্নবুল ! তিনি নিজে ইংরেজদের এই আচরণে এতই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে ব্রিটিশ সরকার তাকেও ৭ বছরের জেল দিয়েছিলো ! ভারতের স্বাধীনতার পর তাকে মুক্ত করা হয়েছিল ) আজ এই ব্রিজের কোথাও সেই মহান ইঞ্জিনিয়ার অতনু মুখার্জির নাম নেই ! আমাদের স্বাধীন ভারতবর্ষের কোনো সরকার, নেতা মন্ত্রী কেউ তার কথা জানতে চান না !


[/HIDE]
 
[HIDE]

সবাই হাওড়া ব্রিজের ইতিহাস শুনে যৎপরোনাস্তি অবাক এবং দুঃখিত হয়ে গেলো এমন মহান ইঞ্জিনিয়ার এর হারিয়ে যাওয়াতে !
গল্প করতে করতেই আমরা আমাদের গাড়িতে এসে গেলাম !
সমীর ব্রিজের উপর থেকে ফটো নেবার চেষ্টা করতেই আমি ওকে বারণ করলাম কারণ ব্রিজের উপর ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ ! বাইরে থেকে ও যত খুশি ফটো নিতে পারে ! তখন রাজু বললো আসার সময় যদি আমরা লঞ্চ করে পার হই তাহলে লঞ্চ থেকে ফটো নেওয়া যাবে ?
আমি বললাম হ্যা সেটা নেওয়া যাবে !
গাড়িতে উঠে কলকাতার নতুন দিক সাউথ এর দিকে চললাম ! এখানেও অনেক পূজা মণ্ডপ আছে ! দুপুর তিনটে নাগাদ আমরা ধর্মতলার মোড়ে অনাদির রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম অনাদির মোঘলাই খাবার জন্য !
মোঘলাই খেয়ে ওরা খুব খুশি ! শুধু ওদের একটাই দুঃখ যে ট্রেনে ওরা মোঘলাই নিয়ে যেতে পারবে না ! কারণ অনাদির মোঘলাই দুপুর ১২টার পরেই পাওয়া যায় ! আর আমাদের ট্রেন সাড়ে এগারোটায় ! সব ঘুরে মঞ্জু আর চৈতালিকে ওদের বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আমরা যখন বাড়ি ঢুকলাম তখন সন্ধ্যে আটটা বাজে ! নিলয় বললো তোরা আধঘন্টার মধ্যে ক্লাবে চলে যায় আমি স্বরস্বতীকে বাড়ি ছেড়ে আসছি !
ক্লাবে আজ আমরা প্রায় জনা দশেক মানুষ ! ববিও এসে বসে আছে ! কাল আর কোথাও ঘোরার নেই ! কাল বিকালে জাগরণী সংঘের সাথে ফুটবল ম্যাচ ! সবাই মিলে দু তিন পেগ করে মাল খেয়ে বাড়ি ফিরে গেলাম !
রাতে খাওয়া দাওয়া করে সবাই ঘুমাতে যাবো তখন হরপ্রীত আমাদের রুমে ঢুকে বললো সুজাতার খুব পেটে যন্ত্রনা করছে ! যদি কোনো ওষুধ থাকে তাহলে ওকে দেওয়া যেতে পারে ! আমি মা কে গিয়ে বললাম যে সুজাতার পেটে যন্ত্রনা করছে কি করা যায় !
মা ওদের রুমে গিয়ে সুজাতার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে বেরিয়ে এসে বললেন "কোনো ব্যাপার নয় ! এক ব্যারেলগান দিয়ে দাও ঠিক হয়ে যাবে !" মা হরপ্রীতের হাতে একটা ব্যারালাগান ট্যাবলেট ধরিয়ে দিলেন ! কিছুক্ষনের মধ্যেই সুজাতার যন্ত্রণার উপশম হলো ! সবাই শুয়ে পড়লাম ! শুয়েও শান্তি নেই ! এবার কোয়েল এসে বাংলায় বললো " এই সুনন্দ এখন কি কোনো ওষুধের দোকান খোলা আছে ?"
- কেন কার আবার কি হলো ?
-আরে ন্যাপকিন চাই সুজাতার !
- আগে ঝর্ণার কাছে জিজ্ঞাসা কর ! যদি ওর থাকে তো কাজ মিতে যাবে ! না থাকলে আমাকে বলে যাস আমি এনে দেব !
হরপ্রীত ফিরে এসে বললো " পাওয়া গেছে ! আর কোনো চিন্তা নেই ! তোরা এবার আরামে ঘুমিয়ে পর !
বেশ কিছুটা ক্লান্ত সবাই ছিলাম ! তাই ঘুম আসতে বেশি সময় লাগলো না ! সবাই তলিয়ে গেলাম ঘুমের অতলে !
ভোর বেলা উঠে যথারীতি মাঠে চলে গেলাম ! কিছুক্ষন প্র্যাক্টিস করার পরে সবাই বিকালের ম্যাচের স্ট্যাক্টিস তৈরী করে ফেললাম ! আমি রাজু আর সমীর ফরোয়ার্ডে খেলবো ! কানাই আর নিলয় আর দেবাশিস ব্যাকে ! বুধু শম্ভু ডিফেন্সে ! সৈকত গোলে আর ফ্রন্ট লাইনে থাকবে সুব্রত !
বাড়ি এসে ব্রেকফাস্ট করে মোটরসাইকেল বের করলাম ! অনেক দিন চালানো হয়নি ! সমীর আর রাজুকে পিছনে বসিয়ে কুন্তিঘাট নিয়ে গেলাম ! ওখানে কুন্তী যদি গঙ্গার সাথে মিলছে অদূরেই ত্রিবেণী ! এই অঞ্চলটাকে ত্রিবেণী নামেই জানে কারণ এখানে গঙ্গা স্বরস্বতী আর কুন্তীর মিলন স্থল ! এমনিতেই গঙ্গা এখানে প্রচন্ড উত্তাল ! ওরা অনেক গুলো ছবি নিয়ে নিলো ! কুন্তিঘাট গঙ্গার ধারেই আমার ছোট মাসির বাড়ি ! মেসো কেশোরাম রেয়নের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ! বিরাট ইন্টেলেকচুয়াল ! যাকেই সামনে পায় তাকেই জ্ঞান দিতে শুরু করে বলে কেউ চট করে মেসোর সামনে আস্তে চায়না ! যাবার ইচ্ছা ছিলোনা ! আসার আগে মা বার বার মাসির সাথে দেখা করার কথা বলেছিলেন বলেই বাধ্য হয়ে ওদের নিয়ে মাসির বাড়ি গেলাম ! মাসি তখন গঙ্গার কুঁচো মাছ ভাজছিলেন ! গঙ্গায় জেলেরা মাছ ধরে ওখানকার লোকাল বাজারেই বিক্রি করে দেয় ! মেসো কিনে এনেছিলেন ! মাসি ভাজতে ভাজতেই উঠে এলেন ! আমাদের আদর করে বসালেন ! ওদের পরিচয় জেনে ওদের দিকে আপ্যায়ন টা বেশি করেই দিলেন ! একটা প্লেটে কুঁচো মাছ ভাজা দিয়ে বললেন খেয়ে দেখো ! কুড়মুড় করে সমীর আর রাজু মাছ চিবিয়ে আমার দিকে সন্তুষ্টির নজরে তাকালো ! আমি বললাম যে মাছ আমরা হায়দরাবাদ বা দিল্লিতে খাই সেই কুঁচো মাছ সম্পূর্ণটাই প্রায় সমুদ্রের ! এই সামনে গঙ্গা দেখছিস এই মাছ এই গঙ্গার ! মাছ ভাজা খাওয়ার মাঝেই মেসো এলেন ! আমাদের দেখে হেসে বললেন আরিব্বাস ! সুনন্দ বাবু যে ! আজ হটাৎ আমাদের কথা মনে পড়লো কি করে ! আমি উঠে ওনাকে প্রণাম করলাম ! আমার দেখা দেখি সমীর আর রাজুও মেসোকে প্রণাম করলো ! মেসোকে ওদের পরিচয় দিলাম ! মেসো বললেন " তুই এসেছিস ভালোই হয়েছে ! আমাকে আর তোদের বাড়ি যেতে হলোনা ! আজ বাজারে তাজা গঙ্গার ইলিশ পেয়েছি ! তোদের আর আমাদের জন্য দুটো নিয়ে নিয়েছি ! দিদি (আমার মা ) বলেছিলেন যে গঙ্গার ইলিশ পেলে পাঠিয়ে দিতে ! উনি ব্যাগ থেকে দুটো ইলিশ মাছ বার করলেন ! সমীর বা রাজু কোনোদিন ইলিশ মাছ দেখেনি ! রুপোর মতো চকচকে মাছকে দেখে ওদের চোখ চক চক করে উঠলো ! মেসো ওদের ইলিশ সমন্ধে অনেক জ্ঞান দিলেন ! মেসোর কথা শোনার ফাঁকে ফাঁকেই ওরা মুগ্ধ হয়ে ইলিশমাছ দুটোকে দেখতে থাকলো ! এক একটা মাছের ওজন প্রায় ১ কেজি করে হবে ! একটা ব্যাগে ইলিশ মাছ দিয়ে মেসো বললেন এতো বেশি দাম যে কেনার উপায় নেই ! কিন্তু আমি একটু লোভী মানুষ তাই থাকতে পারলাম না ! নিয়ে নিলাম ৭০০ টাকা কিলো ! দুটো মাছ মিলিয়ে দু কিলো ২০০ গ্রাম ! 'মাছ নিয়ে বাড়িতে এসে মাকে দিয়ে বললাম " মা আজ ইলিশের তেল দিয়ে ভাত খাবো ! অনেকদিন ইলিশের তেল দিয়ে ভাত খাওয়া হয়নি ! ঝর্ণা বঁটি নিয়ে ইলিশ কাটতে বসে গেলো ! ঝর্নাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে সমীর, রাজু,হরপ্রীত, সুজাতা কোয়েল সবাই ঝর্ণার মাছ কাটা দেখতে লাগলো ! ওরা কেউ কোনোদিনই ইলিশ মাছ খায়নি ! যদিও কোয়েল ওর বাবা মায়ের কাছ থেকে ইলিশের কথা অনেক শুনেছে কিন্তু জীবনে প্রথম ইলিশ দেখছে ! সমীর ফটাফট বেশ কয়েকটা ফটো তুলে নিলো !
ইলিশ কাটা হয়ে গেলে ঝর্ণা রান্নাঘরে মাকে দিয়ে এলো ! দুপুর বেলা খেতে বসে সবাইকে ভাত দিলেন এবং প্রথম পাতে ইলিশের তেল একটু নুন আর একটা করে কাঁচা লঙ্কা দিলেন সাথে একটা করে ইলিশ মাছ ভাজা !! সমীররা ভাতে তেল দেখে ঘাবড়ে গেলো ! আমি ওদের শিখিয়ে দিলাম কি ভাবে লংকাটা ডলে নুন দিয়ে মেখে খেতে হবে ! ওরা আমার দেখাদেখি সেই ভাবেই মেখে একদলা ভাত মুখে দিতেই কোয়েল বলে উঠলো ! " উফফ ! একেবারে অমৃত !" সবাই বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে ইলিশের তেল মাখা ভাত খেতে লাগলো ! সমস্যা শুরু হলো ইলিশ মাছ খাবার সময় ! এতো কাঁটা ওরা জীবনে কোনো মাছে পায়নি ! রাজু দু হাত দিয়ে ইলিশের কাঁটা বাঁচতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো ! রাজুর দেখাদেখি সবাই দুই হাত লাগিয়ে দিলো ! ওদের কান্ড দেখে মা ঝর্ণা সবাই হেসে ফেললো ! কোয়েল বললো "সত্যি বলছি মাসিমা এতো সুন্দর গন্ধ আর এতো মিষ্টি মাছ জীবনে কোনোদিন খাইনি ! কাঁটা থাকলেও যে মাছ এতো সুস্বাদু হতে পারে সেটা আমাদের জানা ছিল না ! রাজু সমীর সুজাতা হরপ্রীত সবাই কোয়েলের কথাকে সমর্থন করলো !
মা বললেন যদি তোমরা কোনোদিন ভাপা ইলিশ খাও তাহলে অন্য কোনো মাছ জীবনে খেতে চাইবে না !
রাজু বললো আজ সেটা হয়নি ?
- না বাবা এবারে তোমাদের সেটা খাওয়াতে পারলাম না ! সামনের বার যখন আসবে তখন তোমাদের খাওয়াবো ! কথা দিচ্ছি ! খুব তৃপ্তি করে সবাই খেয়ে নিলো ! সবার শেষে মা কোয়েলের পাতে একটু ইলিশের ডিম্ ভাজা দিতেই সবাই কোয়েলের পাতে হামলে পড়লো ! মা আর ঝর্ণার হাসির ফোয়ারা ! দমকে দমকে হাস্তে লাগলো ! কোয়েল সবাইকে একটু একটু করে মাছের ডিম্ ভাগ করে দিলো ! ঊম্মম্মা !


[/HIDE]
 
[HIDE]
একেবারে অমৃত ! রাজু বললো ! সুজাতা বললো "এর পরের বার যদি কোনোদিন আসি তাহলে আমাকে এই ডিম্ দিয়েই খেতে দেবেন ! মা পরম স্নেহে সবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন !
খাওয়া দেওয়ার পরে সবাই আমাদের ঘরে এসে জমিয়ে আড্ডা দিতে শুরু করলো ! বিষয় ইলিশ মাছ ! তখন আমি ওদের বললাম যে ইলিশ সাধারণত সমুদ্রের মাছ ! কিন্তু ওরা ডিম্ পাড়ার জন্য অপেখ্যাকৃত কম স্রোতের জলে চলে আসে ! সেখানেই ডিম্ না পারা পর্যন্ত তিন চারমাস অপেখ্যা করে ! জলের স্রোতের সাথে মোকাবিলা করার জন্যই ওদের কাঁটা বেশি হয় ! ইলিশ বেশি পাওয়া যায় পদ্মায় ! ওদের পদ্দার ইলিশ বলে ! বাংলাদেশে এই ইলিশ পাওয়া যায় ! বাংলাদেশ এই ইলিশ রপ্তানি করে প্রচুর ইনকাম করে ! গঙ্গায় যে ইলিশ পাওয়া যায় তাদের গঙ্গার ইলিশ বলে ! এই ইলিশের টেস্ট সমস্ত ইলিশের থেকে বেশি সুন্দর ! এদেরও অনেক নাম আছে ! কোলাঘাটের ইলিশকে খোকা ইলিশ বলে ! ওরা আমার ইলিশের ব্যাখ্যান শুনতে লাগলো ! কখন যে তিনটে বেজে গেছে খেয়াল ছিলোনা ! বাইরে বুধুর গলা ! "কিরে জাবি না নাকি ?"
তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে বেরিয়ে এলাম ! সমীর আর রাজুর বুটের ব্যবস্থা সকাল বেলাতেই হয়ে গেছিলো ! মেয়েরাও বললো যে ওরা খেলা দেখতে যাবে !


বিকালে ফুটবলের ম্যাচ খুব ভালো হলো ! আমরা তিন দুই গোলে জিতলাম ! সবাই আনন্দ করতে করতে ক্লাবে ফিরে এলাম ! রাজু আর সমীর মাঠে জাদু দেখিয়ে ছেড়েছে ! সবাই ওদের দুজনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ! ক্লাবে বসেই ঠিক করলাম যে কাল সবাইকে কলকাতার সব ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হবে ! আমি কানাইকে রিকোয়েস্ট করলাম যেন কাল ও আর নিলয় ওদের নিয়ে কলকাতার বিশিষ্ট স্থান গুলোও ঘুরিয়ে দেয় ! বিশেষ করে ভিক্টরিয়া, চিড়িয়াখানা,তারামণ্ডল, শহীদমিনার এই গুলো যেন অবশ্যই ঘুরিয়ে দেয় ! তবে কালকে সবাইকে ট্রেনে করে কলকাতা নিয়ে যেতে বললাম ! মেয়েরা নেচে উঠলো !
কোয়েল আমাকে জিজ্ঞাসা করলো " তুমি যাবে না ?"
- না আমার কিছু পার্সোনাল কাজ আছে সেগুলো মিটিয়ে নিতে হবে ! পরশু আমাদের ট্রেন ! তাই কাল তোমাদের সাথে আমার যাওয়া হবে না ! ওরা আর কেউ কিছু বললো না ! কানাই বললো "নিয়ে যেতে পারি এক শর্তে ! যদি তুই চৈতালিকে রাজি করাস কাল আমাদের সাথে যাবার জন্য ! "
- বোকাচোদা !!! লাইন মারবেন উনি আর ব্যবস্থা করব আমি ?
কোয়েল বললো যে ওর কাছে চৈতালির বাড়ির নাম্বার আছে ! ও চৈতালিকে আসতে অনুরোধ করবে !
ঠিক হলো সকাল নটা নয়ের পাণ্ডুয়া লোকাল ধরে সবাই কলকাতা চলে যাবে ! আর কোয়েলের উপর দাইত্ব রইলো চৈতালিকে রাজি করানোর ! আমি কানাই কে কিছুক্ষন পরে আমাদের বাড়িতে আসার অনুরোধ জানিয়ে সবাই বাড়ি ফিরলাম !
সন্ধ্যেবেলায় আলুর চপ দিয়ে মুড়ির টিফিন বেশ জমলো ! সুজাতা আর রাজুর মন ভরলোনা ২ খানা করে চপ খেয়ে ! ওদের বললাম "একটু পরে বাজারে যাবো তোদের সবাইকে মাংসের চপ খাওয়াবো ! " সবাই এক পায়ে রাজি !
সবাইকে নিয়ে বাজারে বেরুলাম ! আমার কিছু জিনিস কেনাকাটার ছিল হোস্টেলের জন্য ! মা বললো যাচ্ছিস যখন তখন বাবলুর হোটেল থেকে তড়কা নিয়ে আসিস ! আজ আর রান্না করতে ইচ্ছে করছে না ! সত্যিই তো এতজনের রান্না ! কত আর ধকল নেবে মা ! আমি বললাম তাহলে সবার রুটিও নিয়ে নেবো ! মা ঘাড় নাড়লেন !
সবাই বেরিয়ে গেলাম রাস্তাতেই কানাইয়ের সাথে দেখা হয়ে গেলো ! ও আমাদের বাড়িতেই আসছিলো ! ওকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে ওর হাতে ১০০০ টাকা ধরিয়ে দিলাম আগামীকালের খরচের জন্য ! ও কিছুই না বলে টাকাটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলো ! হরপ্রীত কানাইয়ের কাছে অনুরোধ করলো যে ওরা আজ বিয়ার খেতে চায় ! যদি কানাই ব্যবস্থা করতে পারে তো ! আমি বারণ করলাম ! ব্যবস্থা করার দরকার নেই ! বাবলুদার হোটেলে বিয়ার পাওয়া যাবে ! সেখানেই খেয়ে নেওয়া যাবে ! কানাই বললো সেটাই ভালো ! কারণ বাবলুদার হোটেলে কোনো খারাপ লোকেদের আড্ডা হয়না ! সেখানেই ভালো জমবে ! বেশ কিছু জিনিস পত্র কিনে আমরা রতনদার চপের দোকানে গেলাম ! বেশ ভিড় ! কিন্তু আমাকে দেখেই রতনদা এক মুখ হাসি দিয়ে আমাকে আহ্বান করলো ! আমি সবাইকে একটা করে মাংসের চপ দিতে বললাম ! সবার হাতেই মাংসের চপ ! গরম গরম চপ খেতে খেতে ওরা হুস হাস করছিলো ! সবাই রতনদার চপের প্রশংসা করলো ! "উফফ যদি এই জিনিসগুলো আমাদের হায়দরাবাদে পাওয়া যেত তাহলে রোজ যে কত গুলো খেতাম। .." কোয়েল বললো ! সুজাতা আর হরপ্রীত ওর কথাকে সমর্থন করলো ! আমি বললাম "যে জিনিস হায়দরাবাদে পাওয়া যায় সেগুলো তো এখানে পাবিনা ! আমাদের এখানে লোক হায়দরাবাদে গিয়ে সেই একই কথা বলে ! হায়দরাবাদের বিরিয়ানি ! চিকেন টিক্কা ! চিকেন সিক্সটিফাইভ সেগুলো এখানে পাওয়া যায় না ! তাই এখানকার লোক হায়দরাবাদে গেলেই মন ভরে ওই গুলো খেয়ে আসে আর সবাইকে গল্প করে ! "
চপ খেয়ে সবাই রওনা দিলাম বাবলুদার হোটেলে ! বাবলুদা আমাদের দেখেই এগিয়ে এলেন ! " আরে সুনন্দ বাবু যে ! এসো এসো ! কবে আসা হলো !" তারপর কানাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন "এখন কানাই বড়োলোক মানুষ গাড়ি কিনেছে তাই আর বাবলুদার কথা মনে পরে না ! "
- ধুর ! কি যে বলোনা বাবলুদা ! আসলে গাড়ি ভাড়া খাটাইতো ! তাই সময় পাইনা ! সুনন্দ এসেছে বলেই কদিন একটা ড্রাইভার রেখে সুনন্দর সাথে ঘুরছি !
আমি বাবলুদাকে বললাম "বাবলুদা ! এই যে মেয়েগুলো দেখছো ওরা সবাই বিয়ার খেতে চায় ! কোথায় বসবে বলো ! " সোজা দুতলার হলে চলে যা ! কারণ তোর বাবাদের ব্যাচের আসার সময় হয়ে গেছে ! ওরা সবাই এখানেই বসে !
বুঝলাম থানার পুলিশের কথা বলছে বাবলুদা ! কারণ ওরাও প্রতি সন্ধ্যে বেলায় বাবলুদার হোটেলে আসে মাল খেতে ! আমার বাবাও মাঝে মাঝে ওদের সাথে যোগ দেয় ! একদিন বাবাকে আমি বলেছিলাম যে বাইরে মাল না খেয়ে ঘরে বসে খেতে তাতে বাবা উত্তর দিয়েছিলো " মাল খাওয়াটা এক অছিলা মাত্র ! ঐখানেই অনেক অপরাধীদের হদিস পাওয়া যায় ! " বুঝেছিলাম পুলিশের দূরদর্শিতা !

সবাই দুতলায় এলে সমীর বললো ওদের জন্য বিয়ারের অর্ডার দে আমাদের জন্য একটা হুইস্কির হাফের কথা বলে দে ! আমাদের চারজনের জন্য একটা হাফ ই যথেষ্ট ! সেই মতোই অর্ডার দেওয়া হলো ! মাছ ভাজার সাথে সবাই যে যার মতো ড্রিংক করে নিচে নেমে এলাম ! হালকা হালকা সরুর সবারই হয়েছে ! বাবলুদাকে আগেই বলে দিয়েছিলাম যে তড়কা আর রুটি প্যাক করে দিতে !
সব রেডি ছিল ! বাবলুদাকে পয়সার কথা জিজ্ঞাসা করতে বাবলুদা বললো "পয়সা এসে গেছে !"
- কথা থেকে এলো শুনি ?
- তোর বাবা এসেছিলো তোদের হৈ হুল্লোড় শুনে জিজ্ঞাসা করছিলো ! আমি বললাম যে তোরা এখন উপরে তন্দুরি চিকেন খাচ্ছিস আর বাড়ির জন্য তড়কা আর রুটির অর্ডার দিতে এসেছিস !
হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম ! বাবা যদি জানতে পারতো যে উপরে বসে আমরা মাল খাচ্ছি তাহলে আজ আর রক্ষা ছিলোনা ! বাবলুদার তারিফ না করে পারলাম না ! বাড়িতে এসে গেলাম ! কোয়েল চৈতালিকে ফোন করলো ! অনেকক্ষন ধরে কথা বললো ! এইতো সেদিন আলাপ ! এতেই যে মেয়েদের মধ্যে কি করে এতো কথা জমে সেটাই বুঝতে পারিনা ! প্রায় মিনিট কুড়ি কথা বলার পর কোয়েল হাসি মুখে ফিরে এলো !


[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top