What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ইখলাছ মুক্তির পাথেয় (2 Viewers)

এ সকল আয়াত থেকে বুঝা যায় নবীগণের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল ইখলাছ বা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা।
অপরদিকে ইখলাছশূন্য ব্যক্তির জন্য এসেছে কঠোর হুঁশিয়ারী ও শাস্তির সংবাদ। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন,
إِنَّ اللّهَ لاَ يَغْفِرُ أَنْ يُّشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذَلِكَ لِمَنْ يَّشَآءُ-
'নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করেন না। এ শিরক ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। (নিসা ৪/৪৮)।
যারা শিরক করে তাদের সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা,
وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَّنْثُوْراً-
'আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ করব অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব' (ফুরকান ২৫/২৩ )।
আয়াতটি উল্লেখের পর ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ)-এর মন্তব্য এই যে, এ আয়াতে আল্লাহ রাববুল আলামীন ব্যর্থ কাজ বলতে ঐ সকল কাজকে বুঝিয়েছেন, যা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর পদ্ধতিতে করা হয়নি অথবা তার পদ্ধতিতে করা হয়েছিল তবে একনিষ্ঠভাবে (ইখলাছের সাথে) আল্লাহর উদ্দেশ্যে করা হয়নি (মাদারিজু সালেকীন)।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, মুশরিকরা রক্ষা লাভ ও শুভপরিণতির আশায় পার্থিব জীবনে যে কর্মসম্পাদন করেছে, তা যারপরনাই মূল্যহীন। কারণ ইখলাছ অথবা আল্লাহ প্রণীত বিধানের প্রতি আনুগত্য-শরী'আতের এ দু'টি আবশ্যকীয় শর্তের কোনটিই তাতে উপস্থিত নেই। যে সকল কাজ খালেছভাবে আল্লাহর জন্য করা হয় না কিংবা শরী'আতের অনুমোদিত পন্থায় পালন করা হয় না, তা বাতিল বলে গণ্য (তাফসীর ইবনে কাছীর )।
 
হাদীছে এসেছে,
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ اللهُ تَعَالَى: أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ مَعِىَ فِيْهِ غَيْرِىْ تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ-
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'আমি শরীকদের শিরক থেকে একেবারেই অমুখাপেক্ষী। যদি কোন ব্যক্তি কোন আমল করে এবং এতে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে তাহ'লে আমি তাকে ও তার শিরকী কাজকে প্রত্যাখ্যান করি' (মুসলিম )।
অন্য একটি হাদীছে এসেছে,
قََالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ لاَ يَتَعَلَّمُهُ إِلاَّ لِيُصِيْبَ بِهِ عَرْضًا مِنَ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِرِيْحَهَا يَعْنِى-
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, 'যে জ্ঞান অর্জন করা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তা যদি কেউ পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে করে তাহ'লে সে কিয়মাত দিবসে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না'। (আবূদাঊদ হা/৩৬৬৪; ইবনু মাজাহ হা/২৫২, হাদীছ ছহীহ। )
হাদীছে আরো এসেছে,
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُجَارِىَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِىَ بِهِ السُّفَهَاءِ أَوْ يَصْرِفَ بِهِ وُجُوْهَ النَّاسِ إِلَيْهِ أَدْخَلَهُ اللهُ النَّارَ-
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করবে আলেমদের উপর প্রাধান্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে অথবা মূর্খদের সাথে অহমিকা প্রদর্শনের জন্যে কিংবা মানুষকে তার দিকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে আল্লাহ তা'আলা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন'। (তিরমিযী হা/২৬৫৪, হাদীছ হাসান )
সুতরাং প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাবতীয় ইবাদতের ক্ষেত্রেই ইখলাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বান্দার কিছু আমল হবে ইখলাছে পূর্ণ, কিছু হবে শূন্য, কিছু মু'আমালায় ইখলাছ হবে তার আদর্শ, অপরকিছু মু'আমালা হবে ইখলাছ হ'তে বিচ্যুত। এটা খুবই গর্হিত বিষয়, এটা কখনো শরী'আত মোতাবেক স্বীকৃত নয়। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) ইখলাছের গুরুত্ব ও অবস্থান বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, ইখলাছ ও আনুগত্য শূন্য আমল তুলনীয় এমন মুসাফিরের সাথে, যে অকাজের ধুলোয় পূর্ণ করেছে তার থলে এবং প্রচুর কলান্তি ও ঘর্মাক্ত দেহে অতিক্রম করছে মরুভূমির পর মরুভূমি, তার জন্য এ সফর নিশ্চয়ই নিস্ফল ও শুভপরিণতি শূন্য (বাদাইয়ুল ফাওয়ায়িদ )।
 
ইখলাছ একটি কঠিন কাজ:

ইখলাছের গুরুত্ব ও মর্যাদা সত্ত্বেও আমরা বলব, নিঃসন্দেহে ইখলাছ নফসের জন্য কঠিন একটি বিষয়। কারণ নফস এবং প্রবৃত্তি ও নফসের আকাঙ্খার মাঝে ইখলাছ এক কঠোর দেয়াল ও বাধা হয়ে নিজেকে উপস্থিত করে। নিজ প্রবৃত্তি, সামাজিক অবস্থা ও শয়তানের কুমন্ত্রণা মুকাবিলা করে ইখলাছ ধরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর উপর অটল থাকতে সংগ্রাম ও অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। এ সংগ্রাম শুধু সাধারণ মানুষ করবে তা কিন্তু নয়; বরং আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, ইসলামী আন্দোলনের কর্মী, ইসলাম প্রচারক ও নেককার-মুত্তাকী সকলের প্রয়োজন। সূফইয়ান আছ-ছাওরী বলেন, আমার কাছে নিজের নিয়ত ঠিক করার কাজটা যত কঠিন মনে হয়েছে অন্য কোন কাজ আমার জন্য এত কঠিন ছিল না। কতবার নিয়ত ঠিক করেছি কিন্তু কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই আবার পাল্টে গেছে (খতীব বাগদাদী, আল-জামে লি আখলাকির রাবী ওয়া আদাবুস সামে )।
ইউসুফ ইবনে হুসাইন রাযী বলেন, দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন কাজ হ'ল ইখলাছের উপর অটল থাকা। আমি আমার অন্তর থেকে রিয়া (লোক দেখানো ভাবনা) দূর করার জন্য কত প্রচেষ্টা চালিয়েছি, সে দূর হয়েছে বটে তবে আবার ভিন্ন আকৃতিতে, ভিন্ন রূপে উপস্থিত হয়েছে। (ইবনু রজব, জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম )।
সাহল ইবনু আব্দুল্লাহকে প্রশ্ন করা হ'ল, আপন প্রবৃত্তির নিকট কঠিনতম কর্ম কি? তিনি বললেন, ইখলাছ। কেননা প্রবৃত্তি কখনো ইখলাছ গ্রহণ করতে চায় না (ইবনুল জাওযী, সফওয়াতুস সাফওয়াহ )। [color]
 
তাই মন্দকর্মে প্রণোদনাদাতা নফস বান্দার কাছে ইখলাছকে মন্দরূপে উপস্থাপন করে, দৃশ্যমান করে তোলে এমন রূপে, যা সে ঘৃণা করে মনেপ্রাণে। সে দেখায়, ইখলাছ অবলম্বনের ফলে তাকে ত্যাগ করতে হবে বিলাসী মনোবৃত্তির দাসত্ব, যে তোষামোদী স্বভাব ও মেনে নেয়ার দুর্বলতা মানুষকে সমাজের সকল শ্রেণীর কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে ব্যাপক অবদান রাখে, তাও তাকে ছিন্ন করতে হবে আমূলে। সুতরাং বান্দা যখন তার আমলকে একনিষ্ঠতায় নিবিষ্ট করে, আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কেউ তার কর্মের উদ্দেশ্য হয় না, তখন বাধ্য হয়েই বিশাল একটি শ্রেণীর সাথে তাকে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়, তারাও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, একে অপরের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়।
এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অধিকাংশ সময় এ দো'আ পাঠ করতেন,
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِّ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلَى دِيْنِكَ.
'হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন'।
(তিরমিযী হা/৩৫২২। )
 
আল্লাহ আমাদের মুখলিছ বান্দা হওয়ার তাওফিক দিন
 

Users who are viewing this thread

Back
Top