What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ইখলাছ মুক্তির পাথেয় (২য় কিস্তি) (1 Viewer)

৮. বৈধ কাজগুলো ইবাদতে রূপান্তরিত হওয়া :

ইবাদত ও কাজে-কর্মে বান্দার একনিষ্ঠতা এবং বিশুদ্ধ নিয়ত তার পার্থিব কর্মগুলোকে উঁচু স্তরে উন্নীত করে এবং পরিণত করে গ্রহণযোগ্য ইবাদতে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
وَفِيْ بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، قَالُوْا يَارَسُوْلَ اللهِ أَيَأْتِيْ أَحَدُناَ شَهْوَتَهُ وَيَكُوْنُ لَهُ فِيْهَا أَجْرٌ؟ قَالَ: أَرَأَيْتَ لَوْ وَضَعَهَا فِيْ حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ وِزْرٌ ؟ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ-
'আর তোমাদের স্ত্রীদের সাথে যৌনকর্মেও রয়েছে ছাদাক্বার ছওয়াব। ছাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কেউ যদি তার যৌন চাহিদা পূরণ করে তাহ'লে কি পুরস্কার? তিনি বললেন, আচ্ছা তোমরা কী মনে কর, যদি কেউ অবৈধ পন্থায় যৌন চাহিদা মেটায় তাহ'লে তার কি পাপ হবে? এমনিভাবে যদি কেউ বৈধ পন্থায় তার যৌন চাহিদা পূরণ করে তাহ'লে পুরস্কার পাবে'। (মুসলিম হা/২৩৭৬। )
সে বৈধ পন্থায় যৌন চাহিদা মেটালেও কেন ছওয়াব পাবে? কারণ সে কাজটি করার সময় এ ধারণা করেছে যে, আমি বৈধ পন্থায় কাজটি করে সেই অবৈধ পন্থা থেকে বেঁচে থাকব, যেখানে আল্লাহ আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন। আল্লাহ রাববুল আলামীনের এ অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে আমি তার প্রতি একনিষ্ঠ (মুখলিছ) হ'তে পারব। আর এ ইখলাছপ্রসূত ধারণার কারণেই তার সামান্য মানবিক চাহিদা মেটানোর কাজটাও ছওয়াবের কাজ হিসাবে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে যাবে।
অন্য হাদীছে রয়েছে,
إِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِيْ بِهَا وَجْهَ اللهِ إِلاَّ أُجِرْتَ عَلَيْهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِىْ فِيْ اِمْرَأَتِكَ-
'তুমি যা কিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে খরচ করবে অবশ্যই তার পুরস্কার পাবে। এমনকি তুমি যা কিছু তোমার স্ত্রীর মুখে দিয়েছ তারও ছওয়াব পাবে'। (বুখারী হা/৫৬। )
স্ত্রী-সন্তানদের জন্য খরচ করা পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব। এখানে পাপ-পুণ্যের কী আছে? তবুও যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রী, সন্তানদের জন্য খরচ করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত করে তাহ'লে সে ছওয়াব ও পুরস্কার পেয়ে যাবে।
 
এমনিভাবে যদি কেউ নিজের খাওয়া-দাওয়ার জন্য ব্যয় করে এবং এর সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত করে, তাহ'লেও সে ছওয়াব লাভ করবে। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, 'যে ব্যক্তি কোন বৈধ মানবিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে ইবাদত-বন্দেগীতে সামর্থ্য হাছিলের নিয়ত করবে, তার এ চাহিদা পূরণের কাজটা আল্লাহর কাছে ইবাদত হিসাবে কবুল হবে ও সে এতে ছওয়াব পাবে'। (ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ'উ ফাতাওয়া )।
যেমন কেউ নিয়ত করল যে, সে এখন বাজারে কেনা-কাটার জন্য যাবে। কিন্তু তার উদ্দেশ্য হ'ল, এ কেনা-কাটার মাধ্যমে সে খেয়ে-দেয়ে যে শক্তি অর্জন করবে তা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনের ক্ষেত্রে ব্যয় করবে। তার এ নিয়তের কারণে বাজারে কেনা-কাটা করাটা তার ইবাদত হিসাবে গণ্য হবে। এটাই তো ইখলাছ বা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হওয়া।
ইখলাছ যেমন সাধারণ বৈধ কাজকে ইবাদতে রূপান্তরিত করে, তেমনি রিয়া বা লোক দেখানো উদ্দেশ্যে সম্পাদিত ইবাদতকে বরবাদ করে প্রতিফল শূন্য করে দেয়।
আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لاَ تُبْطِلُوْا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى كَالَّذِيْ يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ-
'হে মুমিনগণ! দানের কথা বলে বেড়িয়ে এবং কেলশ দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় নিষ্ফল করো না, যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকাল দিবসে ঈমান রাখে না' (বাক্বারাহ ২/২৬৪ )।
অর্থাৎ দানের কথা বলে বা খোঁটা দিয়ে যেভাবে দানের প্রতিফলকে ধ্বংস করা হয়, তেমনি মানুষকে দেখানোর বা শুনানোর জন্য দান করলে আল্লাহর কাছে তার প্রতিদান পাওয়া যায় না। বাহ্যিক দিক দিয়ে যদিও মনে হবে সে আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার জন্য দান করেছে, কিন্তু তার উদ্দেশ্য হ'ল মানুষের প্রশংসা অর্জন করা। মানুষ তাকে দানশীল বলবে, তার দানের কথা প্রচার হ'লে মানুষ তাকে সমর্থন দিবে ইত্যাদি।
 
৯. ইখলাছপূর্ণ নিয়ত দ্বারা পরিপূর্ণ আমলের ছওয়াব অর্জন:

কোন কোন সময় মানুষ ইখলাছ ও বিশুদ্ধ নিয়তে কাজ করতে উদ্যোগী হয়, কিন্তু তার সম্পদের সীমাবদ্ধতা, শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি কারণে কাজটি সমাধা করতে পারে না। কখনো দেখা যায়, উক্ত ভাল কাজটি করার জন্য সে প্রবল প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, কিন্তু কোন কারণে কাজটি আঞ্জাম দিতে পারেনি। এমতাবস্থায় সে কাজটি সম্পন্ন করার ছওয়াব পেয়ে যাবে এবং তার ইখলাছের কারণে কাজটি যারা করতে পেরেছে তাদের সমমর্যাদা লাভ করবে। যেমন নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ أَقْوَامًا خَلَفْنَا بِالْمَدِيْنَةِ مَا سَلَكْنَا شِعْباً وَلاَ وَادِياً إِلاَّ وَهُمْ مَعَناَ، حَبَسَهُمُ الْعُذْرُ .
'আমরা কয়েকটি দলকে মদীনায় রেখে এসেছি। তারা আমাদের সাথে কোন পাহাড় অতিক্রম করেনি, কোন উপত্যকাও মাড়ায়নি। অথচ তারা আমাদের সাথে অংশগ্রহণকারীর মর্যাদা লাভ করবে। অক্ষমতা তাদেরকে আটকে রেখেছে'। (বুখারী হা/২৮৩৯। )
হাদীছে বর্ণিত ছাহাবীগণ রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে অভিযানে অংশ নিতে পারেননি কোন অসুবিধার কারণে। কিন্তু তাদের বিশুদ্ধ নিয়ত ও ইখলাছ ছিল অভিযানে অংশ নেয়ার জন্য। তাই তারা অংশগ্রহণ না করেও অংশগ্রহণকারীদের সমমর্যাদার অধিকারী হবেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,
مَنْ أَتَى فِرَاشَهُ وَهُوَ يَنْوِيْ أَنْ يَّقُوْمَ يُصَلِّى مِنَ اللَّيْلِ، فَغَلَبَتْهُ عَيْناَهُ حَتَّىِ أَصْبَحَ كُتِبَ لَهُ مَا نَوَى وَكَانَ نَوْمُهُ صَدَقَةً عَلَيْهِ مِنْ رَّبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ -
'যে ব্যক্তি শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করবে এ নিয়তে শুয়ে পড়ল। অবশেষে নিদ্রা তাকে কাবু করে ফেলল এবং সকাল হওয়ার আগে জাগতে পারল না। এমতাবস্থায় সে যা নিয়ত করেছিল তা তার জন্য লেখা হয়ে যাবে এবং এ নিদ্রা তার প্রভুর পক্ষ থেকে দান হিসাবে ধরা হবে'। (ছহীহ নাসাঈ হা/১৭৮৭। )
তাহাজ্জুদের নিয়ত করেও এ ব্যক্তি তাহাজ্জুদ পড়তে পারল না বটে, কিন্তু ইখলাছ ও বিশুদ্ধ নিয়তের কারণে সে তাহাজ্জুদের পূর্ণ ছওয়াব পাবে।
 
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,
مَنْ سَأَلَ الشَّهَادَةَ بِصِدْقٍ بَلَّغَهُ اللهُ مَنَازِلَ الشُّهَدَاءِ وَإِنْ مَاتَ عَلَى فِرَاشِهِ -
'যে বিশুদ্ধ মনে জিহাদে শরীক হয়ে আল্লাহর কাছে শহীদ হওয়া কামনা করবে, আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দান করবেন যদিও সে বিছানায় মৃত্যুবরণ করে'। (মুসলিম হা/৫০৩৯; মিশকাত হা/৩৮০৮ 'জিহাদ' অধ্যায়। )
আরেকটি হাদীছ উল্লেখ করা যেতে পারে। তা হ'ল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, 'এক ব্যক্তি নিয়ত করল, আমি রাতে কিছু ছাদাক্বা (দান) করব। যখন রাত এল সে ছাদাক্বা করল। কিন্তু ছাদাক্বা পড়ল এক ব্যভিচারী মহিলার হাতে। সকাল হ'লে লোকজন বলতে শুরু করল, গত রাতে জনৈক ব্যক্তি এক ব্যভিচারীকে ছাদাক্বা দিয়েছে। এ কথা শুনে দানকারী বলল, হে আল্লাহ! ব্যভিচারীকে ছাদাক্বা দেয়ার ব্যাপারে তোমারই প্রশংসা। আমি রাতে আবার একটি ছাদাক্বা করব। পরের রাতে যখন সে ছাদাক্বা করল, তা পড়ল একজন ধনীর হাতে। যখন সকাল হ'ল তখন লোকজন বলাবলি শুরু করল, গত রাতে জনৈক ব্যক্তি এক ধনীকে ছাদাক্বা দিয়েছে। এ কথা শুনে দানকারী বলল, হে আল্লাহ! ধনীকে ছাদাক্বা দেয়ার ব্যাপারে তোমারই প্রশংসা। আমি রাতে আবার একটি ছাদাক্বা করব। যখন পরের রাতে সে ছাদাক্বা করল, তা পড়ল একজন চোরের হাতে। যখন সকাল হ'ল তখন লোকজন বলতে শুরু করল, গত রাতে এক ব্যক্তি এক চোরকে ছাদাক্বা দিয়েছে। এ কথা শুনে দানকারী বলল, হে আল্লাহ! ব্যভিচারী, ধনী ও চোরকে ছাদাক্বা দেয়ার ব্যাপারে তোমারই প্রশংসা। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বলা হ'ল, তোমার সকল ছাদাক্বাই কবুল করা হয়েছে। সম্ভবত তোমার ছাদাক্বার কারণে ব্যভিচারী মহিলা তার পতিতাবৃত্তি থেকে ফিরে আসবে। ধনী ব্যক্তি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহী হবে। চোর তার চুরি কর্ম থেকে ফিরে আসবে'। (বুখারী হা/১৪২১; মুসলিম, মিশকাত হা/১৮৭৬। )
এ ব্যক্তি তার ছাদাক্বা বা দান করার ব্যাপারে এতটাই ইখলাছ অবলম্বন (আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার নিয়ত) করেছিল যে, ছাদাক্বা প্রদানে তার অতি গোপনীয়তা কাউকেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে দেয়নি। এ গোপনীয়তা রক্ষার কারণে বার বার এ ছাদাক্বা অনাকাংখিত লোকের হাতে পড়লেও সে তার ইখলাছ থেকে সরে আসেনি। ইখলাছ অবলম্বনে ছিল অটল। ফলে তার কোন দান ব্যর্থ হয়নি।
 
১০. ইখলাছ বিপদ-মুছীবত থেকে মুক্তির কারণ :

নিয়তের ব্যাপারে ইখলাছ অবলম্বন ও আল্লাহ রাববুল আলামীনের কাছে আশ্রয় গ্রহণে সততা ও সত্যবাদিতা হ'ল দুনিয়া ও আখিরাতের বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির মাধ্যম।
বিষয়টি স্পষ্ট করে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَلَقَدْ ضَلَّ قَبْلَهُمْ أَكْثَرُ الْأَوَّلِيْنَ، وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا فِيْهِمْ مُنْذِرِيْنَ، فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُنْذَرِيْنَ، إِلَّا عِبَادَ اللَّهِ الْمُخْلَصِيْنَ-
'তাদের পূর্বেও পূর্ববর্তীদের অধিকাংশ বিপথগামী হয়েছিল এবং আমি তাদের মধ্যে সতর্ককারী প্রেরণ করেছিলাম। সুতরাং লক্ষ্য কর যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল, তাদের পরিণাম কী হয়েছিল! তবে আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাদের কথা স্বতন্ত্র' (ছাফফাত ৩৭/৭১-৭৪ )। আল্লাহ আরো বলেন, 'তিনিই তোমাদেরকে জলে-স্থলে ভ্রমণ করান এবং তোমরা যখন নৌকারোহী হও এবং এগুলো আরোহী নিয়ে অনুকূল বাতাসে বয়ে যায় এবং তারা এতে আনন্দিত হয়। অতঃপর এগুলো বাত্যাহত এবং সর্বদিক থেকে তরঙ্গাহত হয় এবং তারা তা দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে গেছে মনে করে, তখন তারা আনুগত্য ও ইখলাছের সাথে (বিশুদ্ধ চিত্তে) আল্লাহ্কে ডেকে বলে, তুমি আমাদেরকে এ থেকে উদ্ধার করলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। অতঃপর তিনি যখনই তাদেরকে বিপদমুক্ত করেন তখনই তারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে যুলুম করতে থাকে' (ইউনুস ১০/২২-২৩ )।
 
এ রকম আরেকটি দৃষ্টান্ত, আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَإِذَا غَشِيَهُمْ مَوْجٌ كَالظُّلَلِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ إِلَى الْبَرِّ فَمِنْهُمْ مُقْتَصِدٌ وَمَا يَجْحَدُ بِآَيَاتِنَا إِلاَّ كُلُّ خَتَّارٍ كَفُوْرٍ-
'যখন তরঙ্গ তাদের আচ্ছন্ন করে মেঘচ্ছায়ার মত, তখন তারা আল্লাহ্কে ডাকে তাঁর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্তে। কিন্তু যখন তিনি তাদের উদ্ধার করে স্থলে পেঁŠছান, তখন তাদের কেউ কেউ সরল পথে থাকে; কেবল বিশবাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে' (লোক্বমান ৩১/৩২ )।
এ সকল আয়াতে স্পষ্টভাবেই ব্যক্ত করা হয়েছে যে, উক্ত বিপদগ্রস্তরা ইখলাছের সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার কারণেই বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছে।
এমনিভাবে বুখারী ও মুসলিমের এক দীর্ঘ হাদীছে তিন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির কথা আলোচিত হয়েছে, যারা এক বিপদসংকুল ঝড়-বৃষ্টির রাতে পাহাড়ের এক গুহায় আটকে পড়েছিল। তখন প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ নেক আমলের অসীলায় দো'আ করে বলেছিল, হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজটি আপনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য করে থাকি, তবে এর অসীলায় আমাদেরকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করুন! ফলে তারা বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেয়েছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৩৮। )
এ হাদীছ দ্বারা আমরা বুঝতে পারি আলোচিত তিন ব্যক্তির কাজ তিনটি ইখলাছ ভিত্তিক হওয়ার কারণে বিপদ থেকে আল্লাহ তাদের মুক্তি দিয়েছিলেন।
 
১১. শয়তানের ধোঁকা থেকে মুক্ত থাকা :

শয়তান সর্বদা আল্লাহর বান্দাদের ধোঁকা দিয়ে খারাপ পথে নিয়ে যায়। খারাপ কথা ও কাজ, পথ এবং মতকে মানুষের কাছে শোভনীয় ও সুনদরভাবে উপস্থাপন করে তাদের বিভ্রান্ত করে। কিন্তু মানুষ যদি সকল কাজে ইখলাছ বা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে, তবে শয়তান তাকে ধোঁকা দিতে পারে না, আবদ্ধ করতে পারে না বিভ্রান্তির বেড়াজালে।
আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِيْ لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ، إِلاَّ عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ-
'শয়তান বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন সেজন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভন করে দিব এবং আমি তাদের সকলকে বিপথগামী করব, তবে তাদের ব্যতীত, যারা আপনার ইখলাছ অবলম্বনকারী (একনিষ্ঠ) বান্দা' (হিজর ১৫/৩৯-৪০ )।
এ আয়াতে বলা হয়েছে, যারা নিজেদের ঈমান-বিশবাস, ইবাদত-বন্দেগীকে আল্লাহর জন্য বিশুদ্ধ করে নিবে, সবকিছু যখন শুধু আল্লাহর জন্যই নিবেদন করবে, তখন তাদের বিভ্রান্ত করতে শয়তান কোন পথ খুঁজে পাবে না (তাবারী, জামেউল বয়ান )।
ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, 'মানুষ যখন আল্লাহর জন্য ইখলাছ অবলম্বন করবে বা তার জন্য একনিষ্ঠ হবে, আল্লাহ তখন তাকে নির্বাচন করে নেন, তার অন্তরকে জাগ্রত করে দেন। তখন যত পাপ-পংকিল, অশ্লীলতা, অপকর্ম আছে সবকিছু তার কাছে ঘৃণিত মনে হয় এবং এগুলোর লালনকে সে খুব ভয় করে চলে।
পক্ষান্তরে যে অন্তর আল্লাহর জন্য নিবেদিত নয়, ইখলাছ অবলম্বন করতে পারেনি, সে যখন কোন ভাল কাজ করতে যায়, তখন মানুষের প্রশংসা পাওয়ার আশা করে, মানব সমাজে নিজের সুনাম ও খ্যাতির প্রত্যাশা করে, কখনো কখনো মানুষের কাছ থেকে কিছু পাওয়া বা সুবিধা আদায়ের নিয়ত করে। অথবা কখনো মানুষের সমালোচনা, গাল-মন্দ থেকে বেঁচে থাকার বিষয়টি প্রাধান্য দেয়। ফলে আল্লাহর কাছে তার সৎকর্মটি অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। এমনিভাবে সে শয়তানের ধোঁকায় পতিত হয়। তাই শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে থেকে নিজের কাজ-কর্মগুলো সফলভাবে সম্পন্ন করতে ইখলাছ তথা সকল কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টার কোন বিকল্প নেই (মাজমূ'উ ফাতাওয়া )।
 
১২. সৎ কাজের সামর্থ্য, ভালবাসা ও বরকত লাভ :

বান্দা যখন তার সকল কাজ আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার জন্য করবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে করবে তখন সে ভাল কাজের তাওফীক, মানুষের ভালবাসা ও আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত লাভ করবে।
হামদূন কিসারকে যখন বলা হ'ল, মহান পূর্বসূরীদের কথা ও বক্তব্য কি করে আমাদের কথা ও বক্তব্যের তুলনায় অধিক উপকারী ও কল্যাণকর রূপে দেখা দেয়? উত্তরে তিনি বললেন, তারা কথা বলেন ইসলামের সম্মান, নফসের মুক্তি ও আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। আর আমাদের বক্তব্য হয় নফসের সম্মান, পার্থিবের অনুসন্ধান ও মানুষের সন্তুষ্টি লাভের জন্য (ইবনুল জাওযী, ছাফওয়াতুছ ছাফওয়াহ )।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, 'আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার জন্য কু-প্রবৃত্তির লালসা ত্যাগ করলে, আল্লাহর জন্য সকল কাজ নিবেদন করলে যে প্রশান্তি, মনোবল, বরকত অর্জিত হয় তা ঐ সকল লোক কখনো অর্জন করতে পারে না, যারা আল্লাহর জন্য না করে অন্যের উদ্দেশ্যে করে। সে যত বড় আলেম, দরবেশ হোক, কখনো মুখলিছ ব্যক্তির ন্যায় সাহস, মনোবল, আধ্যাত্মিক শান্তি অর্জন করতে পারবে না' (ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ )।
ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) সুন্দর একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন যে, প্রচলিত আছে, এক ব্যক্তি শুনল, যদি কেউ চল্লিশ দিন ভোরে আল্লাহর জন্য ইখলাছ অবলম্বন করে তাহ'লে তার অন্তর ও মুখের কথা হিকমত (প্রজ্ঞা) পূর্ণ হবে। শোনার পর সে চল্লিশ দিন পর্যন্ত (তার ধারণা অনুসারে) ইখলাছের চর্চা করল, কিন্তু সে প্রজ্ঞা বা হিকমত অর্জন করতে পারল না। এরপর সে একজন বড় আলেমের কাছে গিয়ে অনুযোগ করল যে, আমি যে হিকমত অর্জনের উদ্দেশ্যে আল্লাহর জন্য ইখলাছের চর্চা করেছি তার কিছুই পেলাম না। ইখলাছ অবলম্বন করেও কেন আমি তার ফল লাভ করতে পারলাম না। আলেম উত্তরে বললেন, তুমি তো ইখলাছ চর্চা করেছ হিকমত (প্রজ্ঞা) অর্জনের জন্য, আল্লাহর জন্য তো নয়! তোমার ইখলাছই তো হয়নি। কাজেই তার মাধ্যমে হিকমত অর্জন করবে কিভাবে? তুমি যদি আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার জন্য ইখলাছ চর্চা করতে তাহ'লে হিকমত এমনিতেই অর্জিত হ'ত। কিন্তু তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে না করে করেছ হিকমত অর্জনের উদ্দেশ্যে। তাই ইখলাছও আদায় হয়নি আর তার প্রতিফল হিকমতও অর্জন করতে পারনি (ইবনু তায়মিয়া, আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা )।
 
১৩. ফিতনা-ফাসাদ থেকে মুক্তি পাওয়া :

ইখলাছ অবলম্বন করার কারণে বিভিন্ন ফিতনা-ফাসাদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ রাববুল আলামীন ইউসুফ (আঃ) সম্পর্কে বলেন,
كَذَلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوْءَ وَالْفَحْشَاءَ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِيْنَ-
'আমি তাকে মন্দ কাজ ও অশ্লীলতা হ'তে বিরত রাখার জন্য এভাবেই নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত' (ইউসুফ ১২/২৪ )।
ইখলাছের কারণে আল্লাহ তাকে অশ্লীলতা, ব্যভিচার ও অবৈধ প্রেমের ফিতনা থেকে রক্ষা করেছেন। মানুষের অন্তর এ জাতীয় অনাচারে তখনি লিপ্ত হয়ে পড়ে, যখন তার অন্তর শূন্য থাকে আল্লাহপ্রেম ও তাঁর প্রতি সমর্পিত ইখলাছ থেকে। কারণ মানুষের অন্তর মাত্রই প্রেমের আকাঙ্খী, সমর্পণের উদগ্র বাসনা তাকে উন্মত্ত করে রাখে সতত।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) ইউসুফ (আঃ) প্রসঙ্গে বলেন, ইউসুফ (আঃ) যখন আল্লাহর জন্য ইখলাছ বা নিষ্ঠা অবলম্বন করলেন, আল্লাহ তার কাছে এ সকল অশ্লীল বিষয়কে ঘৃণিত হিসাবে তুলে ধরলেন, ফলত উক্ত অনাচার ও ফিতনা তাকে কোনভাবে ত্যাক্ত করতে পারল না। সুতরাং ইখলাছ অবলম্বন নিঃসন্দেহ অনাচার ও অকল্যাণ হ'তে মুক্তির সরল পথ। ইখলাছের ব্যাপারে যে যত দুর্বল থাকবে, সে তত বেশী অন্যায়-অপকর্ম ও পাপাচারে জড়িয়ে পড়বে (ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ )।
অন্যত্র তিনি বলেন, ...এ কারণেই ইউসুফের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে উদ্ধৃত হয়েছে যে, 'এমনই ঘটেছিল, যাতে তার থেকে দূরীভূত করি অকল্যাণ ও অনাচার। নিশ্চয়ই তিনি আমার নিষ্ঠাবান বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত (ইউসুফ ১২/২৪ )।
 
আয়াতটি প্রমাণ করে অনৈতিক প্রেম ও তার ফলে উদ্ভূত অন্যায়-অকল্যাণ, অনাচার রোধের অন্যতম উপায় হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে, সর্বকাজে ইখলাছ অবলম্বন। এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে সালাফে ছালেহীনের কারো কারো মন্তব্য এই যে, প্রেম হ'ল অলস, কর্মশূন্য ও অথর্ব অথবা বলা যায়, প্রেমিকশূন্য অন্তরের এক ধরনের কর্মব্যস্ততা ও মনোবৃত্তি। তারা আরো বলেন, ছোট হোক কিংবা বড়, যাবতীয় পাপাচার তিনটি কান্ড হ'তে পত্র-পল্লবে বিস্তৃত হয়ে প্রকাশ পায়। সেগুলো হচ্ছে, আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো সাথে হৃদয়ের সম্পর্ক স্থাপন, অশুভ ও প্রবৃত্তির শক্তির পূজা অর্থাৎ শিরক এবং যুলুম ও অনাচার। এ তিনটি একে অপরের সাথে শৃঙ্খলাবদ্ধ, গলায় গলায় জড়িত। শিরক তার অবশ্য পরিণতিতে ডেকে আনে যুলুম ও অনাচার। যেমনিভাবে ইখলাছ ও তাওহীদের প্রতি বান্দার সমর্পণ বান্দাকে মুক্ত করে এই সব অনাচার থেকে।

[চলবে]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top