What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

এক রাতের কথা (পুরষ্কার প্রাপ্ত-ইরোটিক সাইকো থ্রিলার) (2 Viewers)

[HIDE]

মনিকা রাজের চেহারায় প্রবল রাগের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলো। মনিকা মনে মনে ভাবলো, নিশ্চই এরপর রাজ কোন মারাত্নক নেতিবাচক কাজ করেছে। এমনটাই তো করে থাকে ব্যর্থ প্রেমিকরা। কিন্তু তারপরেও রাজ কি করেছে তা জানতে চাইলো। কারণ এমন একের পর এক দু:খজনক ঘটনা শুনে রাজের প্রতি তার একটা মায়া পড়ে গেছে।

তারপর আপনি কি করলেন? মেয়েটাকে…
তারপর আমি ওদের বললাম আমাকে গুরুর কাছে নিয়ে যেতে। মোহিত তখন একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে রিপ্রেজেন্টেটিভ এর কাজ করত। রোহান ওকে ফোন দিল। মোহিত তখন বাইরেই ছিল। আমাকে ওরা আমাকে গান্ধী পার্কে নিয়ে গেল। পার্কের বেঞ্চে শুয়ে পড়লাম আমি।
কিছুক্ষণ পর মোহিত এসে বলল, এই কিরে রাজ? যা হয়েছে হয়েছে, তুই এমন করছিস কেনো?
আমি মোহিতকে জড়িয়ে ধরে বললাম, গুরু! সুনিতা আমাকে ধোকা দিয়েছে, গুরু!
মোহিত বেঞ্চে বসে ঠান্ডা গলায় বলল, জানি। আমিতো তোকে আগেই বলেছিলাম রে! ও তোকে ঠকাবে! আর ও মিথ্যা বলছে। কিন্তু তুই তো মানছিলি না!
সরি গুরু! আমি তোমার কথা বুঝতে পারি নি। আমি ওর প্রেমে এত পাগল হয়ে গিয়েছিলাম!
তুই কি করবি এখন বল?
আমি জানি না! তবে আমি ওকে ছেড়ে দিবো না!
জানো মনিকা! আজকাল তো ছেলে- মেয়েরা শরীরের ক্ষুধা মেটাতে রিলেশন করে। তুমি রিয়েল লাভ খুঁজেই পাবে না। দুই তিন দিন যেতেই শরীরে হাত দেয়া, আর রুমডেইটে যাওয়া খুব কমন। কিন্তু আমার আর সুনিতার মধ্যে এসব কিছু ছিলো না। কোন লালসা, সেক্স এসব কিচ্ছু ছিল না। শুধু ভালোবাসাটাই ছিল। কিন্তু সে আমাকে ছেড়ে এসবের জন্যে ঐ রিকির কাছে যায়। আমার কাছে অনেক সময় টাকা থাকতো না। টাকা ধার করে এনে হলেও ওকে রেস্টুরেন্টে ফাস্টফুডে নিয়ে যেতাম। ওর জন্মদিন অথবা কোন পার্টিতে যাবার হলে আমি ওকে ম্যাচিং করে ড্রেস কিনে দিতাম। মোবাইল টকটাইম বা ইন্টারনেট তো দিতামই। আর সবসময় ওকে ভালো মন্দ বুঝাতাম। কিন্তু এসবের ওর কাছে মনে হয় কোন মূল্য ছিলো না। তাই সে আমাকে ছেড়ে রিকির মতো ছেলে কাছে চলে গেছে! অথচ কি জানো? আমাকে সে কতবার বলেছে কখনও ছেড়ে যাবে না! আরও কত রকম কথা সে দিয়েছিল!
দেখুন ওই মেয়েটা আসলে আপনাকে ভালোবাসতে পারেনি। তখন তার বয়স কম ছিল। আবেগ বেশি ছিল। তাই ভালোবাসা কি জিনিস সেটা সে বুঝতে পারে নি।
তুমি কথা ঠিক যে, ভালোবাসা কি সেটা সে বোঝেনি। তবে বয়স তো আমারও কম ছিল কিন্তু আমি তো বুঝেছিলাম ভালোবাসাটা কি।
মনিকা চুপ করে থাকে।
রাজ রাস্তার দিকটা মনিকার কাছে জানতে চায়।
মনিকা! এখান থেকে কি ডানে টার্ন নেবো?
হ্যা ডানে নিন। তারপর আপনি কি করলেন?
গাড়ি ডানে ঘুরে আবার চলতে শুরু করে। তারপর রাজ আবার মনিকা ও আমাদের নিয়ে ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যায়।
মোহিত আমাকে সেদিন কিছু বিষয় বুঝিয়ে দেয় যা আজও আমাকে সঠিক পথে থাকতে সাহায্য করেছে।
কি রকম?
আমার ভেতরে তখন ক্রোধের আগুন জ্বলছিলো। আমার মন চাইছিলো সুনিতাকে পেলে ওকে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দেই। ওকে… টেনে হিচড়ে.. ওর ভেতরে …. আমি মোহিতকে বললাম, আমি ওকে নষ্ট করে দেবো। ও যেটা আমার কাছে পায়নি, যার জন্য ঐ হারামীটার কাছে গেছে… ওর সেই স্বাদ আমি মিটিয়ে দেবো!
মোহিত তখন বলেছিল, যে আগে থেকেই নষ্ট হয়ে গেছে তুই তাকে আর কি নষ্ট করবি। তোর রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখ। আর রাজ তুই আমার কথা মন দিয়ে শোন।
আমি চোখ মুছে বললাম, বল গুরু।
গুরু বলল, তোমরা সবাই মন দিয়ে আমার কথাগুলো শুনো।
আজ রাজ যে অবস্থার স্বীকার হয়েছে তাতে ওর কোন দোষ নেই। মেয়েটারই দোষ এটা আমিও মানছি। ওর এত বড় প্রতারণা করাটা উচিত হয়নি।
হ্যা গুরু! ও আর মানুষ পায়নি! আমার মতো এতিম ছেলেটা যার জীবনটা দু:খে দু:খে কাটছে তাকেই সে পেলো এমন দু:খ দেবার জন্য? আমি কি ওকে কোন অমর্যাদা করেছি বা ওকে কোনো কষ্ট দিয়েছি? নাকি অন্য কোন মেয়েকে নিয়ে ওকে ধোকা দিয়েছি। আমি তো কোনদিন ওকে ছাড়া আর কারও কথা ভাবিনি।
মোহিতের মুখটা কালো হয়ে যায়। সে নিজে এতিম তাই সে বুঝতে পারে রাজের ব্যাথাটা। কিন্তু সে কিছু চমতকার কথা বলে।
দ্যাখ রাজ! আমি তোর কষ্ট বুঝি। কিন্তু তুই আমার কথা বোঝার চেষ্টা কর। আমি জানি না তোদের সম্পর্কের মধ্যে কিসের কমতি ছিল, কিসের নেশায় ও সেই ছেলেটার কাছে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সে গেছে। কেনো গেছে সেটা আর ভেবে লাভ নেই। আর আমার মনে হয় সে আর তোর কাছে ফিরবে না। কিন্তু আমি যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হল ,আমি বুঝতে পারছি ওর উপর তোর খুব ক্ষোভ কাজ করছে। এই যে তুই বললি ওকে তুই নষ্ট করবি, এটা করে তুই কি পাবি? তুই তো কোন রেপিস্ট না! তুই সবসময় মেয়েদের সম্মান করিস আর যারা করে না তাদের বিরুদ্ধে তুই দাঁড়িয়েছিস সব সময়। এখন তুই যদি রাগের বশে ওকে পেয়ে খারাপ কিছু করে বসিস তবে তুই বল, তুই কি নিজের বিবেকের সামনে দাঁড়াতে পারবি?
আমার তখন খুব রাগ হচ্ছিল মনিকা! আমি বললাম, আমি জানি না!
গুরু শান্ত গলায় বলল, না রাজ! তুই জানিস! তুই ভালো করেই জানিস এটা ঠিক নয়। তবে কেনো রাগের নেশায় এমন ভুল পদক্ষেপ নিবি?
আমি জানি না গুরু! আমি কিছু জানি না! আমি শুধু জানি ওকে আমি ছাড়বো না!
মোহিত রেগে গেলো, আরে ব্যাটা আমার শোন! তোকে ছাড়তে হবে! এই পাগলামি চিন্তা ভাবনা তোকে ছাড়তে হবে, সে মেয়েটাকে ছাড়তে হবে, আর সব কিছু ভুলে যেতে হবে।
না আমি পারবোনা! আমি কিছূতেই ভুলতে পারবো না! কিভাবে পারবো এসব ভুলতে?
ভুলতে তোকে হবেই। কারণ এটা জীবন আর জীবনে অনেকে আসে, অনেকে চলে যায়। প্রত্যেকটা মানুষের সময় আমাদের জীবনে নির্দিষ্ট। আামদের বাবা মাও তো ছিল, কিন্তু তারা আজ নেই। তাদের হারিয়ে আমরা যে কষ্টে ছিলাম তার জন্য কি আমাদের জীবন থেমে গেছে? আর মেয়েটা যাই করছে ভুল করছে কিন্তু তোর এই কাজ মেয়েটার জীবনটাকে চিরতরে নষ্ট করে দিবে। ওর সমাজে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে। তুই না ওকে সত্যি সত্যি ভালোবেসেছিস? তো তুই কিভাবে পারবি এমটা করতে? ওর জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিতে?


[/HIDE]
 
[HIDE]

আর তোকে, আমাকে অনেক মানুষ চেনে, এটা নিয়ে শহরে অনেক সমালোচনা হবে। কমলেশরা বিরাট বড় সুযোগ পাবে তোদের দলকে নির্বাচনে হারিয়ে দিতে। তারপর শুরু করবে ওদের তান্ডব। কলেজ কর্তৃপক্ষ তোকে সাথে সাথে বহিষ্কার করবে। তোকে পুলিশ এরেস্ট করে জেলে ঢুকিয়ে দিবে। তোর লেখাপড়া আর তোর মানুব সেবা করার স্বপ্ন এখানেই শেষ হয়ে যাবে। তুই যে নিতা কাকীমাকে কথা দিয়েছিল সেটার কি হবে? তুই সমাজে পরিচিত হবি রেপিস্ট হিসেবে। তোর কাকীমা তোর সে বোন তোর চেহারাও কোনদিন আর দেখতে চাইবে না। আমি তখন চাইলেও কোন উপকার তোর কতে পারবো না। আর করতে চাইবোও না।
গুরু খুব সুন্দর কথা বললা। কিন্তু আমার মন তখনও অশান্ত ছিল। আমি গুরুকে বললাম,
কিন্তু ও এমনটা করার আগে কি একবারও আমার কথা ভেবেছে যে আমার কি হবে? আমি কি করে থাকবো?
রাজ! একটা কথা মনে রাখবি সবসময়, জীবনে অনেকেই তোর প্রতি অন্যায় করবে, তোর প্রতি অবিচার করবে কিন্তু তুই তোর কর্তব্য থেকে পিছনে সরে যাবি না। ক্ষতির বদলে ক্ষতি করতে যাবি না। তুই তোর বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকবি।
গুরু!
জানো মনিকা আমি তখন কাঁদতে শুরু করলাম। আমার মতো শক্ত হৃদয়ের মানুষ বাবা- মা হারানোর পর আর কাকীমা চরলে যাবার পর প্রথমবার সেদিন খুব কাঁদলো। আ্মাকে মোহিত জড়িয়ে ধরে রাখলো। সৌমেন, আশীষ ওরাও কাঁদলো।
কিছুক্ষণ পর মোহিত বলল, পাগল ছেলে, তোর পুরো জীবনটা পড়ে আছে। তুই ওকে ভুল গিয়ে এখন লেখাপড়ায় মনোযোগ দে। তোকে অনেক দূর অগ্রসর হতে হবে। একটা ফালতু মেয়ের জন্য তুই নিজের জীবনটা নষ্ট করে দিতে পারিস না।
কিন্তু ওকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিবো? কিছুই বলবো না ওকে?
হুম দিবি। এমনি এমনিই ছেড়ে দিবি। তুই তার সাথে সমস্ত যোগরযাগ বিচ্ছিন্ন করে দিবি। আর মনকে শক্ত করে রেখে তাকে এভয়েড করে যাবি। যদি সামনে দেখতে পাস তবে দেখেও না দেখার ভান করে দূরে সরে যাবি।
আমি পারবো না গুরু!
তোকে পারতে হবে রাজ! আমি তোকে ছোটবেলা থেকে জানি। তুই এত দুর্বল ছেলে না।
আর সে এমনিই কয়দিন পর সে ছেলেটার কাছে প্রতারিত হবে। আর এটাই হবে তোর প্রতি তার করা অন্যায়ের শাস্তি। এরপর হতে পারে সে নির্লজ্জের মতো তার কাছে ফিরে আসতে চাইতে পারে। কিন্তু তুই কিন্তু কোনভাবেই তাকে ফিরিয়ে নিবি না। কারণ সে এবার তার মনের দু:খ ভোলার জন্য তোর কাছে আসবে। তোকে ভালোবেসে নয়। মুখে সে যাই বলুক, এমনকি সে ক্ষমাও চাইতে পারে। তোর কাছে ক্ষমা চাইলে যদি পারিস ওকে ক্ষমা করে দিস কিন্তু ওকে তুই গ্রহণ করবি না।
আর যদি আমার কথা না রেখে তুই নিজের ক্রোধের কাছে হেরে যাস আর খারাপ কিছু ঘটিয়ে দিস তাহলে সে মেয়েটার চোখে তুই চিরদিনের জন্য নেমে যাবি, তোর নিজের জীবনটা নষ্ট হবে, অথচ অন্য সবার চোখে তুই একটা খারাপ উদাহরণ হয়ে উঠবি। আর তোর সাথে ও যে এত জঘন্য প্রতরণা করলো সেটাও কেউ বুঝবে না, বরং সবার কাছ থেকে মেয়েটা সিম্প্যাথি পাবে। সবাই তোকেই দুষবে। তোকেই খারাপ বলবে।
মনিকা আমি তখন হ্যাবলার মতো গুরু দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমার মাথা আস্তে আস্তে শান্ত হতে থাকে। আমি মোহিতের কথাগুলো বুঝতে চেষ্টা করি। আর মনে মনে ভাবছিলাম গুরুর কথাই আমি অক্ষরে অক্ষরে মানবো। যতই কষ্ট লাগুক আমার।

গুরু! তুমি না থাকলে আমার যে কি হতো?
আমি গুরুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম।
গুরু বলল, আরে পাগল আমি তোর জন্য আছি সবসময়। তোকে আমি আগলে রাখবো না তো কে আগলে রাখবে!
মনিকার চোখে পানি চলে এলো। সে বলল,
আপনার গুরু তো এক মহান মানুষ। এ যুগে এত সুন্দর করে কেউ তো কাউকে এত ভালো পথ দেখায় না।
ঠিক বলছো মনিকা। আমি আজ যে পর্যায়ে আছি সেটা গুরুর অবদান। উনি যদি আমাকে সেদিন না বোঝাতেন তবে আমি নিজেই নিজের জীবনটা নষ্ট করে দিতাম।
হুম। উনি কোথায়?
কে গুরু?
হুম।
গুরু এখন হাসপাতালে।
ওমা সেকি? হাসপাতালে কেন?
কারণ ওনাকে ঐ নরপিশাচ সিরিয়াল কিলারটা চাকু মেরেছে।
বলেনি কি? তারপর? ওনার অবস্থা কেমন?
এখন বেশ ভালো। মেয়েবাজি করার মতো যথেষ্ট সুস্থ্য!
ছি: এভাবে বলেন কেন?
তো আর কিভাবে গুরুর গুণকীর্তন করবো? তবে কি জানো? গুরুও ঐ সিরিয়াল কিলারের পেটে চাকু মেরে ওকে যখম করে দিয়েছে!
বলেন কি? সত্যি? ওনার তো দুর্দান্ত সাহস! আজ পর্যন্ত কেউ এমন সাহস করে নি।
উনি গুরু বলেই পেরেছেন। আর উনিই সেই সিরিয়াল কিলারের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া একমাত্র লোক।
হুম। বুঝতে পারছি। একবার ‍ওনার সাথেও আমাকে পরিচয় করিয়ে দেবেন। এমন মহতপ্রাণ মানুষটাকে দেখার ইচ্ছে করছে আমার।
হুম। তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেই আর সে তোমাকে পটিয়ে ফেলুক। আমি যা করিনি সেটা সে করবে! হা হা!
এক্সকিউজ মি মিস্টার রাজ! আমি আপনাকে আগেও অনেকবার বলেছি যে আমি একবার ভুল করে তার মাশুল গুনেছি। কিন্তু একই ভুল আর কখনই করবো না। তাই বার বার এই ফালতু কথা আমাকে শুনাবেন না। আর আপনি তো দুনিয়ার সব মেয়ের মন বোঝেন, তাই না?
হুম সেটা বুঝি!
কোন মেয়ে নিজে না চাইলে, নিজে সুযোগ না দিলে তাকে কেউ পটাতে পারে না-- তাহলে এটাও নিশ্চই বোঝেন?
রাজ চমকে যায়! আর একটু পর হেসে বলে। সরি। আমার ভুল হয়ে গেছে। নেক্সটা টাইম আমি খেয়াল রাখবো।
জ্বী অবশ্যই রাখবেন! আর আমি জানি আপনি দ্রুত সবকিছু এডজাস্ট করে নেন।
কিভাবে বুঝলে তুমি?
আমি বুঝতে পারি। আর না বোঝার তো কিছু নেই। আমি আপনার মনের অনেক ভেতরের অনুভূতিগুলি দেখেছি।
রাজ চোয়াল নাড়াচাড়া করে বলল, হুম। বেশ।
গাড়ি কলোনীর কাছাকাছি চলে আসলো। মনিকা কিছুক্ষণ পর বলে, তারপর গুরুর কথা কিভাবে রাখলেন?
আমি চোখ মুছে নিলাম। তারপর মোহিতের সাথে তার বাসায় চলে গেলাম। কয়েকদিন সেখানেই থাকলাম। একয়দিন আর কলেজে গেলাম না। মোহিত ছুটি নিয়ে আমাকে আর ওদের সঙ্গে নিয়ে হ্যাঙ্গ আউট করতে Robber's Cave গেল। আরও কয়েকটা ট্যুরিস্ট স্পটে নিয়ে গেল। আমি ধীরে ধীরে মন খারাপের সময়টা কাটিয়ে উঠলাম। তারপর একদিন কলেজ গেলাম। আমাকে দেখে সবাই খুব খুশি হল। একয়দিন অনেকেই আমাকে ফোন করে খোঁজ খবর নিয়েছিল। অনেকে সুপরামর্শ- কুপরামর্শ দুইটাই দিয়ে ছিল। কিন্তু আমি গুরুর কথা ছাড়া আর কারও কথা কানে তুলিনি। তাই প্রথম প্রথম ফোন ধরলেও পরে বিরক্ত হয়ে আর ধরিনি।
সবাই আমাকে পেয়ে জড়ো হয়। আর আমার ভেতরেও ঘুরে দাঁড়ানোর একটা প্রত্যয় জাগে। কয়েকদিন নিয়মতি কলেজে গেলাম কিন্তু বেশি একটা ক্লাস আর ছাত্র সংসদে সময় দিলাম না। এ দিনগুলোতে মোহিতও মাঝে মাঝে আমার কলেজে আসতো। আড্ডা দিতো। আর নানা পরামর্শ ‍দিতো। কিন্তু কেনো যেনো সুনিতাও আসেনি সেকয়দিন। তবে এটা ঠিক ততদিনে সুনিতাও কারও না কারও মাধ্যমে জানতে পেরেছে যে আমি তার সবকিছু জেনে গেছি। আর দেবদাস হয়ে কলেজে আসছি না। আমি ভাবলাম যে সে হয়তো নিজেও ডিচড হয়েছে। তাই সেও হয়তো হার্টব্রোকেন তাই আসছে না। কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিলো। এত তাড়াতাড়ি তার সুমতি হয়নি। সে মূলত রিকির সাথে ঋষীকেশ সী-বিচে বেড়াতে গিয়েছিল। এখন ফিরে এসেছে।
একদিন আমি সাইন্স বিল্ডিং এর নিচে বীরেন্দ্রর সাথে কথা বলছিলাম তখন দেখি সে রিকির গাড়ি থেকে নামে। তাকে দেখে আমার মনের ভেতরে কষ্টের শ্রোত বয়ে গেলে। আমি বুঝলাম আমার হৃদয়ে থেকে তাকে এখনও বের করতে পারি নি। সে আমাকে দেখলো আর তার মুখভঙ্গীতে কেমন যেনো একটা তাচ্ছিল্য ভাব লক্ষ্য করলাম। সে ভেবেছিলো আমি তাকে দেখে এগিয়ে এসে কান্না করে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইবো। দেখলাম রিকিও সানগ্লাস খুলে মুড নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু একটা মুচকী হাসি দিলাম। সুনিতা বিভ্রান্ত হল আর রিকি অবাক হল। তারপর আমি সরে গেলাম। মোহিত ছিল পাশে। সে সব দেখলো। সুনিতা সিঁড়ি দিয়ে ক্লাসরুমের দিকে চলে গেল আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম। মোহিত বলল,
রাজ আমি মেয়েটার চেহারায় স্পষ্ট একটা তাচ্ছিল্য দেখতে পেলাম। আমার খুব রাগ লাগছিল। কিন্তু কিছু করার নেই। আমি যা বলছি দেখবি একদিন তাই হবে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি হবে?
সে তোর মতো ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে যে ভুল করেছে তা সে হাড়ে হাড়ে টের পাবে।
তাতে আমার লাভ কি?
তোর কোন লাভ নেই। কিন্তু তুই যেদিন ওকে কষ্টে দেখবি সেদিন তোর খুব ভালো লাগবে।
না গুরু! আমি এখনও ওকে মন থেকে দূরে সরাতে পারি নি। আমি মনে হয় আজও ওকে ভালোবাসি। আমার মন চাইছিল দৌড়ে ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি আর নিয়ে আসি।
কিন্তু তুই যাস নি!

[/HIDE]
 
[HIDE]

তোর মতো ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে যে ভুল করেছে তা সে হাড়ে হাড়ে টের পাবে।
তাতে আমার লাভ কি?
তোর কোন লাভ নেই। কিন্তু তুই যেদিন ওকে কষ্টে দেখবি সেদিন তোর খুব ভালো লাগবে।
না গুরু! আমি এখনও ওকে মন থেকে দূরে সরাতে পারি নি। আমি মনে হয় আজও ওকে ভালোবাসি। আমার মন চাইছিল দৌড়ে ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি আর নিয়ে আসি।
কিন্তু তুই যাস নি!
না। কারণ তুমি যা বলেছে তাই আমি করেছি।
আমার কথা যেহেতু তুই মেনেছিস তাই এটাও মেনে নে, যে তুই ওকে কষ্টে দেখে একদিন খুশি হবি।
আমি চুপ করে রইলাম মনিকা। আমার কাছে তখন মনে হচ্ছিল গুরুর এ কথাটা সত্যি হবে না কোনদিন। কারণ ও বেশ ভালোই আছে। ও খারাপ থাকবে না। আর আমি চাইনি যে ও খারাপ থাকুক। কেনো চাইবো? আল্টিমেটলি আমি তো তাই চেয়েছিলাম যে সে ভালো থাকুক। আমার সাথে না হোক। অন্য কারো সাথে থাকুক। কিন্তু ভালো থাকুক। তার ও কষ্টে থাকবে আর এটা আমার কাছে ভালা লাগবে এটা আমার কাছে তখন মনে হয়নি।
রাজ আপনার ভালোবাসা অনেক উঁচু স্তরের ছিল! আমি যত শুনছি আর অবাক হচ্ছি। সত্যিই মেয়েটা খুব বোকা যে আপনার মতো এত চমতকার মানুষকে সে ছেড়ে চলে গেছে!
মনিকা সে যে কত বোকা তা আরও বুঝেছি।
কিভাবে?
এক ক্লাসমেইট ছিল ওর, নাম বর্ষা। ওর সাথে বনিবনা হতো না ওর কখনই। আমিও বর্ষাকে মাঝে মাঝে ঝারি দিতাম ওর পেছনে লাগার জন্য। আর পড়াশুনা নিয়েও খুব কম্পিটিশন হতো ওদের মাঝে। তো ও একদিন এসে আমাকে কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে লাগলো।
আচ্ছা?
বর্ষা আমাকে ডেকে বলে, এক্সকিউজ মি রাজ! একটু এদিকে আসো!
কি ব্যাপার বর্ষা? হঠাত আমাকে ডাকলে?
কি ব্যাপার রাজ? আজকাল সুনিতা কি তোমাকে পাত্তা দেয় না নাকি?
বর্ষা! কি বলতে চাও তুমি?
কি বলতে চাইছ তুমি জানো। খুব তো সুনিতাকে নিয়ে বড়াই করতে। আর আমাদের ক্রিটিসাইজ করতে। সব জায়গায় তোমাদের দেখা মিলতো। দুজন দুজনকে ছাড়া চলতে পারতে না। কি হল এখন? দিলো তো তোমাকে ধোঁকা!
বর্ষা! তুমি যাও এখান থেকে! তোমার সাথে আমি কোন কথাই বলবো না!
কি খুব লাগছে? আমারও লাগতো যখন তুমি ওকে নিয়ে আমাকে তুমি বকা ঝকা করতে। এখন সহ্য হচ্ছে না?
বর্ষা কি চাচ্ছ কি তুমি?
আমি দেখলাম আমার সাথে সৌমেন, সিদ্ধার্থ আর হোসেন এসে দাঁড়িয়েছে।
সিদ্ধার্থ বলল, এই কি? হয়েছে তোমার? কি বলছ আবোত তাবোল, যাও! তুমি কি ভুল গেছ রাজ কে?
না আমি ভুলিনি। আমি জানি সে আজও সেই রাজ আছে। কিন্তু একটা বাজে মেয়ের জন্য সে খারাপ হয়ে গেছে।
তো? তোমার এসব ফালতু কথার অর্থ কি?
দেখো রাজ! আমি তোমাকে খুব ভালো করেই জানি। তুমি খুব ভালো ছেলে। অনেক ছেলেমেয়ের উপকার তুমি করেছো। কিন্তু তুমি আমাকে অনেক বকা ঝকা করতে তাই আমি তোমাকে একটু কথা শুনিয়ে মনের ঝাল মিটালাম। কিন্তু
মনের ঝাল মিটিয়েছে তো? এবার যাও!
দেখো রাজ একটা কথা বলার ছিল।
আবার কি কথা?
দেখো তুমি সুনিতার অতীত সম্পর্কে জানো না।
কিসের অতীত? আমি কারো অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি করি না কখনও। আর সুনিতার অতীত জেনেও কি করতাম আমি?
এখানেই তো ভুল করেছ তুমি রাজ!
কি ভুল? বল আমাকে?
তুমি জানো না রাজ! সুনিতা ছোটো বেলা থেকেই গায়েপড়া স্বভাবের মেয়ে ছিল। ছেলেদের সাথে সে অতিরিক্ত মিশতো যেটা আসলে দেখতে দৃষ্টিকটু মনে হত। আমারা এক স্কুলেই পড়াশুনা করেছি তাই আমি ছোটবেলা থেকেই ওর ব্যাপারগুলো জানি। ওর ছোট বেলা থেকেই নোংরামী করার অভ্যেস ছিল। ক্লাস টেনে পড়ার সময় এক ছেলের সাথে ও আপত্তিকর অবস্থায় ধরা খায়। তারপর সেটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়। তার মাও তাকে যথেচ্ছা স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছিল। তো সে মেয়ের দোষ আড়াল করে রাখতো। তার বাবা আর্মি অফিসার বাসায় থাকতো না। আর সেই সুযোগটা সে নিতো। সে মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে যায়। অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। কিন্তু তার সে ছেলের সাথে যোগাযোগ করে। এসএসসি দেবার পর সে ছেলেটার সাথে পালিয়ে বিয়ে করে। তার বাবা মা কেউ সেটা মেনে নেয় না। আর নেবার কথাও না। তারপরেও মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তারা মেনে নেয়। ছোট খাটো আনুষ্ঠানিকতা করেই তার বাবা তাকে স্বামীর ঘরে পাঠায়। তার সে বিয়েতে আমিও ছিলাম। তারপর কিছুদিন না যেতেই শুনি সে শ্বশুড়বাড়িতে এডজাস্ট করতে পারছে না। প্রথমে আমরা না বুঝলেও আমার মায়ের মুখে শুনি ও শ্বশুড়বাড়ির আত্নীয়দের দেখতে পারতো না।
হোসেন বলে, বর্ষা থামো। আমরা এখানে নয় বাইরে গিয়ে কথা বলি। এখানে সমস্যা আছে।
আমি থ হয়ে শুনছিলাম সব। সিদ্ধার্থ একটা অটো ডাকলো। আর পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম আমরা। আমার কেমন যেনো সব ঘোলাটে লাগছিল। বোধশক্তি হারিয়ে ফেলছিলাম।
তারপর?
সৌমেন মেন্যু অর্ডার দেবার পর বর্ষা তার বাকি কথাগুলো শুরু করলো।
সুনিতা যে শুধু শ্বশুড়বাড়ির আত্নীয়দের দেখতে পেতো না, তা নয় কেবল। সে রীতিমতো বেয়াদবী করতো আর উচ্ছৃঙ্খলতা করতো। সে বড় ছোট কাউকে তোয়াক্কা করতো না। যা খুশি বলতো। আর তার হাজবেন্ড সে নিজেও বকে যাওয়া ছেলে ছিল। সে কিছুসময় পরে তাকে নিয়ে ফেড আপ হয়ে যায়। আর সে বাবার ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। বাড়ীও ফিরতে চায় না। আর ওদিকে সুনিতাও শ্বশুড়-শ্বাশুড়িকে যাচ্ছে তাই বলত। তারাও কম যেতো না। পরে একসময় শুনি সে নাকি পরকীয়ায় জাড়িয়েছে এক ইয়াং পুলিশের সাথে। এটা নিয়ে আরও হুলস্থুল হয়। আমার ভাই পরশ ওকে সেই পুলিশ অফিসারের সাথে দেখেছেও। তাই আমরা বুঝলাম ওর সংসার ঠিকবে ন। এবং তাই হয়েছে।
ওদের ডিভোর্স হয়ে যায়। আর ছেলেটা ওকে শেষে মারধোরও করে। নারী নির্যাতনের মামলায় সেই পুলিশই তাকে জেলে ঢুকিয়ে দেয়। তারপর পুলিশের সাথে আরও কিছুদিন অনৈতিক সম্পর্ক রাখার পর সে বুঝতে পারে যে এই রিলেশন আর রাখা যাবে না। তাই সে তাকে এভয়েড করে। পুলিশ অফিসার তা বুঝতে পেরে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখায়। তারপর সুনিতার মা টাকার বিনিমেয়ে আপোষে মিটমাট করে ফেলে বিষয়টা। তারপর তার ঐ এলাকা ছেড়ে এখানে এসে এপার্টমেন্ট কিনে বসবাস শুরু করে। আর সাডেনলি সুনিতার চলাফেরা খুব নম্র ভদ্র হয়ে ওঠে। ও মা হয়তো ওকে অনেক বুঝিয়েছে। তাই সে বাধ্য হয়ে নিজেকে একটু ভদ্ররূপে সাজিয়েছিল। আর তুমি বোকা ছেলে তার এই মেকী রূপ দেখে তার প্রেমে পড়ে গেছো! হায় ভগবান!
আমার পা রীতিমতো কাঁপতে থাকে মনিকা এসব শুনে! আমি যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। সুনিতা আমাকে কখনও এসব বলে নি।
মনিকা হতবাক হয়ে শুনতে থাকে।
আমরা সবাই বিশ্বাস করতে পারিনি। এত সরজ সোজা একটা সুশিল মেয়ের অতীত এত জঘন্য?
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বর্ষাকে বলি, বর্ষা দেখো তুমি আমাকে সব সত্যি বলছো তো?
আমি মিথ্যা বলিনা রাজ। আর কারও বিরুদ্ধে খারাপ বলার আমার কোনো উদ্দেশ্য নেই। আমি এত খারাপ নই।
আচ্ছা আমাদের এক বছরের রিলেশন ছিল, কিন্তু একবারও কেনো তুমি আমাকে এসব বলোনি?
আমি জানতাম রাজ তুমি আমাকে এ প্রশ্নটা অবশ্যই করবে। এজন্য আমি আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম।
মনিকার ফোন বাজে। আর সে একজনকে আসতে বলে।
হ্যা আমি Jalapenos এ আছি। তুমি আসো।
কাকে ডাকলে তুমি বর্ষা?
আগে তাকে আসতে দেও তারপরে বলবো।
ঠিক আছে।
আমি আগে তোমাকে বলি নি কারণ তুমি ওর প্রেমে পাগল হয়ে একটা স্টুপিডে পরিণত হয়েছিলে। তুমি আমার কোন কথাই বিশ্বাস করতে না। তবে সাহস করে আমি কয়েকবার চেষ্টা করেছি তোমাকে বলতে।
তোমার মনে আছে রাজ আমি মাঝে মাঝে তোমাকে একটু কথা শুনার জন্য ডাকতাম।
হুম। আমি এভয়েড করতাম। সুনিতা দেখলে রাগ করবে তাই।
হ্যা। তুমি এতই বোকা ছেলে রাজ তুমি জানই না যে সুনিতা তোমার পলিটিক্যাল এনিমি কমলেশের সাথেও যোগাযোগ করতো। ওকে দিয়ে আমাকে সে ভয় দেখিয়েছিলো যে আমি যদি তোমাকে সব বলে দেই তবে আমাকে….
মনিকা আমি বর্ষার থেকে এটাও জানতে পারবো আশা করি নি। সঙ্গে সঙ্গে আমার হৃদয়ে সুনিতার জন্য একরাশ ঘ্রণা জন্মালো। যে কমলেশ খুনি আর রেপিস্ট এটা সবাই জানে। কেবল রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণে ওকে কেউ কিছু করতে পারে না। আর তার সাথে সুনিতা গোপনে সখ্যতা রেখেছে? আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম , তোমাকে কি?
আমাকে রেপ করাবে আর আমার সাথে অভয়ের সাথে যে রিলেশন আছে তা বাসায় জানিয়ে দিবে। ও তখন পরীক্ষা দিচ্ছে । আমার বাসায় জেনে গেলে আমাকে কলেজে আসতেই দিবে না আর এ সময় রিলেশন ব্রেক আপ হলে অভয়ের পরীক্ষা খারাপ হবে। আর তাছাড়া তোমার যা এটচিউড তাতে তুমি আমাকে সবার সামনে থাপ্পর মেড়ে বসতে তা আমি ভালো করেই জানাতম। তাই আমি আর সাহস করিনি।

[/HIDE]
 
[HIDE]

জানো মনিকা! বর্ষার কথা শুনে নিজেকে একটা অথর্ব মনে হচ্ছিল। আর অপরাধবোধে ভুগছিলাম যে আমি বর্ষাকে কত অপমান করেছি। অথচ সে আমার ভালোই চাইতো। আমার তখন মরে যেতে মন চাইছিলো।
একটু পর একটা সুদর্শন লোক ভেতরে ঢুকলো। বর্ষা চেয়ারটা টেনে ওনাকে বসতে দিলো।
হায় রাজ!
হেলো। কে আপনি? আমার পরিচয় তো বর্ষা বলবে।
রাজ ও হল আমার হাজবেন্ড অভয়। ওর কথাই তোমাদের বলছিলাম।
তুমি বিয়ে করেছ কবে? জানলাম না দেখি। আচ্ছা বেশ। ভালো লাগলো
তুমি জানবে কেনো? তুমি তো ওর পেছনেই পাগল। এই তো অগাস্টের ১৭ তারিখ হল বিয়ে।
আচ্ছা বেশ। কিন্তু বর্ষা?
হ্যা বল।
তুমি আমাকে কেনো এখন এসব বলছ?
কারণ আমার এখন আর ভয় নেই। কারণ অভয়কে পেয়ে আমার সব ভয় দূর হয়ে গেছে! আমি তোমাকে বলতে না পারার কারণে সবসময় একটা অপরাধবোধে থাকতাম। আর তাছাড়া..
তাছাড়া কি?
অভয় মুচকী হাসে!
কি ব্যাপার বর্ষা বল?

দেখো তোমার মতো ছেলেকে যে কোন মেয়েই পছন্দ করবে। তোমার মত হ্যান্ডসাম, কেয়ারিং, মেয়েদের প্রোটেক্ট করার মতো এবিলিটি আর জনপ্রিয়তা যে কোনো মেয়েকেই তোমার দিকে আকর্ষিত করবে। আর তোমার একটা গুড হার্ট আছে। এজন্য আমিও প্রথম প্রথম তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি। আর কিছুটা জেলাসও ছিলাম যে সুনিতার মতো মেয়ে কিভাবে তোমাকে পেতে পারে। কিন্তু ভগবানের লীলা দেখো, তোমাকে না হোক, কিন্তু আমার জন্য তোমার মতই গুড হার্টের একজন মানুষ আমাকে উপহার দিয়েছেন ভগবান! তাই আমার আর এখন কোন আফসোস নেই। কিন্তু তোমাক যখন আমি কলেজে দেখলাম না তখন আমি হৃদয়কে জিজ্ঞেস করলাম তখন ও বলল তোমার অবস্থা। আমি তোমাকে কলও করেছিলাম। কিন্তু তুমি ফোন ধরোনি।

হুম। আননৌন নাম্বার ছিল তাই।
হুম জানি। আমাকে তো তোমার মানুষ মনে হতো না তাই কথাই তো ভালো করে বলতে না। তবে রাজ আমি খুব কষ্ট পেয়েছি যখন শুনেছি সুনিতা তোমার সাথে এটা করেছে। তবে ও এটা করতোই। কারণ এটাই ওর চরিত্র। তোমার মতো ছেলেকে দেখে ও পাগল হয়ে গেছে তোমার গার্লফ্রেন্ড হবার জন্য। কারণ এতে তার একটা আলাদা পপুলারিটি হবে। আর ও তো বরবরাই আমার উপর জেলাস আমি যেমন জেলাস ছিলাম ওর প্রতি।
আসলে কি ভাই! আপনি খুব ভালো মনের মানুষ আর আপনার উদ্দেশ্য ভালো ছিল তো তাই সে মেয়েটাকে আপনি এসব জটিল বুঝতে পারেননি। বর্ষার হাজবেন্ড বলল।
সুনিতার সাথে আমার সবসময় একটা কম্পিটিশন বেঁধে থাকতো। তবে জীবন সঙ্গীর ক্ষেত্রে ও আমার কাছে গো হারা হারবে। বলেই বর্ষা অভয়ের হাত হাত রাখে। বর্ষার হাজবেন্ড ওর দিকে দুষ্টু নজরে তাকায়।
মনিকা আমি বুঝতে পারলাম আমার অনেক ভুল হয়েছে।
এখন রাজ তুমি পড়াশুনা বাদ দিয়ে প্লিজ দেবদাস হয়ে লাইফটা নষ্ট করো না। তোমার ভিতরে অনেক সম্ভাবনা আছে। তুমি পাস করে বের হয়ে লাইফে অনেক কিছু করো। সেটাই আমরা চাই। আর সামনেই ইলেকশনে আমরা তো ধরেই নিয়েছিলাম যে তুমি নেই। বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ঐ কমলেশ হারামজাদাটা জিতে যাবে। কিন্তু প্লিজ তুমি এটা হতে দিও না।
খাবার মেন্যু চলে এসেছে। সাবই যার যার মতো নিয়ে নেয়।
রাজ নে ধর!
না খাবো না।
আরে ভাই খান। এত স্যাড হলে চলে না ভাই। বর্ষার হাজবেন্ড বলল।
আমাকে বর্ষা সব কথাই বলতো। ও যে আপনার প্রতি দুর্বল ছিল তাও বলতো। আর ওকে যে কমলেশ হুমকী দিয়েছিল সেটাও বলেছিল। আমি কমলেশকে আপনাদের কলেজেই মেরে শেষ করে দিতাম কিন্তু বর্ষা না করায় আমি চুপ করে যাই।
আপনার কিছু করার লাগবে না। আমিই কমলেশকে শায়েস্ত করবো।
তবে রাজ সে সময় এখনও হয়নি। আগে আমরা পাশ করে বের হই। বর্ষা বলল।
হুম । সেটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দেও বর্ষা। আমি জানি কখন কাকে দিয়ে কি করতে হবে। নইলে আমি ছাত্রনেতা হতে পারতাম না। বর্ষা! তোমাকে ও যে হুমকী দিয়েছে এর জন্য ওকে চরম মূল্য দিতে হবে!
বর্ষা বলল, আমার খুব ভালো লাগছে রাজ তোমার মধ্যে আগের সেই রাজকে খুঁজে পাচ্ছি। আর এটাই আমি দেখতে চাই।
তোমার মতো এত অসাধারণ একটা ছেলে সুনিতার মতো একটা অপরিণামদর্শী মেয়ের জন্য নষ্ট হয়ে যাবে সেটা আমি কখনিই সহ্য করবো না। তাই তোমাকে এটা বললাম।
আর আমি সুনিতার শেষ টা দেখতে চাই।
তা তো আমিও দেখতে চাই রাজ। ওর যখন পচা শামুকে পা কেটেছে তখনই ওর কপালে খারাপ কিছু জুটেছে। এবার ও আরও বড় ধরা খাবে দেখে নিও তুমি!
আমি চুপ করে রইলাম। কেনো যেনে আমার মনে চাইলো বর্ষার কথাই সত্যি হোক।
খাবার শেষ। বর্ষা বলল। আমার নাম্বারটা এবার মশাই একটু সেইভ করে রাখেন।
হ্যা দেও। রাজ বর্ষার নাম্বারটা নিয়ে নিলো। আর বর্ষার হাজবেন্ড তার ভিজিটিং কার্ডটাও দিলো।
বর্ষা তোমাকে ধন্যবাদ! আমি এখনও সুনিতার দেয়া স্মৃতিগুরো হাতড়ে কষ্ট পাচ্ছিলাম। মনে হত আমার কোন কমতির জন্য হয়তো ও আমাকে ত্যাগ করে চলে গেছে। কিন্তু না!
তোমার কোনো কমতিই নেই রাজ! তুমি অনেক বেটার, আমাদের সবার চাইতে বেটার! আর তাই তোমার অবস্থান হতে হবে আমাদের সবার উপরে! আর যাই করো কখনও নিজেকে শেষ করে দিও না!
বর্ষা উঠে গেল। ওর হাজবেন্ডও উঠে গেল আর বিল দিতে গেল। আমি মানা করলাম কিন্তু তিনি বিল দিলেন আমি আর কিছু বললাম না।
আমি বর্ষাকে বললাম, তুমিও আজ থেকে আমার প্রিয় বন্ধুদের তালিকায় থাকবে। আমাকে পারলে ক্ষমা করো। অনেক অন্যায় করেছি তোমার সাথে।
আরে না না! রাজ কি যে বল! আমি কখনই কিছু মনে করিনি। আমি অপেক্ষায় ছিলাম কবে তোমার চোখে মেকী ভালোবাসার পর্দাটা সরবে। আজ সেদিন চলে এসেছে। এতেই আমি খুশি। আর হ্যা তুমি তো সুনিতার কথায় আমার সাথে মেজাজ দেখাতে। কিন্তু সত্যি বলতে আমি কিন্তু কখনই খারাপ কিছু বলিনি ওকে। ও তোমার কাছ থেকে আমাকে সরিয়ে রাখার জন্য এমন করতো।
আমি মাথা নিচু করে ফেললাম নিজের মূর্খতা দেখে।
তারপর মাথায় তুলে বললাম, কিন্তু আজ তুমি আমার কাছে আছো, এত কাছে যেখানে মানুষ বন্ধুদের জায়গা দেয়।
তোমার বন্ধুত্বের মান সবসময় রাখবো রাজ। ভালো থেকো। পারলে একবার আমাদের বাসায় এসো।
হ্যা ভাই। আপনার সবাই একদিন আসবেন।
আমরা সবাই তারপর ওদের দুজনকে বিদায় দিলাম। তারপর আমরা কলেজে চলে গেলাম।
মনিকা, সেদিন বর্ষার কথাগুলো যে আমাকে খুব অনুপ্ররণা দিয়েছিল। আমি নিজের inner strenght টা উপলব্ধি করলাম। আমি বুঝতে পারলাম আমার অনেক কিছু করার আছে।
আপনি ভাগ্যবান যে বর্ষার মতো বন্ধু পেয়েছেন।
সেটা ঠিক মনিকা।
তারপর তো অনেক বছর হল। এরপর সুনিতার কি হয়েছে?
রাজ মুচকী হাসলো! সুনিতার? হা হা …
কি হল হাসছেন কেন?
মোহিত আমাকে বলেছিল আমি একদিন সুনিতার কষ্ট দেখে কষ্টের বদলে খুশি হবো, এবং সেটাই হয়েছে শেষ পর্যন্ত।
কিভাবে?
বর্ষা আর তার হাজবেন্ড সেদিন চলে যাবার পর আমরা আবার কলেজের ক্যান্টিনে যাই। ওখানে বসে আমি ঠিক করি আমি কি করবো? সামনে ফাইনাল ছিল সেটার প্রিপারেশন নিতে হবে। আবার ইলেকশন আছে সেটার কাজ আছে।
সৌমেন বলল, দ্যাখ রাজ! যা হবার হয়েছে। এখন তুই পড়াশুনায় মন দে। এছাড়া আর তোর তো করার কিছু নেই।
ঠিক বলেছিস সৌমেন। আমি সব ভুলে যেতে চাই। আর নতুনভাবে সব শুরু করতে চাই।
That's the spririt! হুসেইন বলে ওঠে!
আমার এখন দুটো কাজ। এক. ইয়ার ফাইনালে ভালো রেজাল্ট করা আর দুই. ইলেকশনে আমাদের দলকে জেতানো।
হুম। তুই শুধু এই দুটোর ওপরেই ফোকাস রাখ। বাকিটা আমরা সামলে নেবো।
[/HIDE]
 
[HIDE]

কি করবি তোরা?

আমরা খেয়াল রাখবো যে ঐ সুনিতার কালো ছায়াও যাতে তোর কাছে না আসতে পারে!
ঠিক আছে।
রাজ হুসেনের হাত ধরে আর বলে দোস্ত তোরা আছিস বলেই আমি টিকে আছি।
আমরা তোর বন্ধু রাজ! আর বন্ধু হলে বন্ধুকে সামলাতে তো হবেই। এটা তো আমাদের দায়িত্ব! বিজ্জু বলল।

তারপর মনিকা আমি নিয়মিত ক্লাসে আসতে লাগলাম। দেখলাম সুনিতা প্রায়ই ক্লাস মিস দিচ্ছে। যাই হোক আমি আর ওকে নিয়ে তেমন একটা ভাবতাম না। তবে মাঝে মাঝে অনেক স্মৃতিই মনে পড়তো যখন চেনা জানা পথ দিয়ে হেঁটে যেতাম। পার্কে, রেস্টুরেন্টের সামনে দিয়ে যেতাম তখন অনেক কিছুই মনে পড়তো। আর তখন বুকের বা দিকে একটা অদ্ভূত ব্যাথা হতো! তবে ধীরে ধীরে সেটা চলে যেতে থাকে। আসলে কি ভালোবাসার মানুষের প্রতি ঘৃণা কিন্তু তোমাকে তাকে ভুলে থাকতে সাহায্য করবে। যখন থেকে তুমি তাকে ঘৃণা করতে শুরু করবে তখন থেকেই তোমার হৃদয়ে তার জন্য ভালোবাসাটা কমে যেতে শুরু করবে। অনেক ব্যর্থ প্রেমিক প্রেমিকা আছে যারা কখনই ভালোবাসার মানুষকে ভুলতে পারে না। এর কারণ তারা তাদের ঘৃণা করতে পারে না অথবা ঘৃণা করার মতো কিছু তাদের সাথে ঘটে না। তাই তারা সারাজীবন তাদের ভুলতে পারে না। অন্তত আমি সে অবস্থানে ছিলাম না। একসময় বুঝতে পারলাম, একজন মানুষের ভালোবাসা পেলে হয়তো জীবনটা খুব সুন্দর হতে পারে, কিন্তু না পেলেও জীবনে তেমনি কিছু আসে যায় না।
সেটা ঠিক রাজ! এটা আমিও বুঝতে পারি।
তারপর দিনগুলো খুব দ্রুত কাটতে লাগলো। পরীক্ষা এলো। আমি কখনই টপ করিনি। কিন্তু সেবার টপ করলাম! আমার বিশ্বাস ছিল আমি খুব ভালো রেজাল্ট করবো কিন্তু টপ করবো সেটা ভাবিনি। আমার বন্ধুরাও বেশ ভালো করলো।
আচ্ছা সুনিতা কি করলো?
সুনিতার? শুনবে?
বলুন।
সে দুটোতে ফেইল করে! একটিতে সে পরীক্ষা দিয়েছিল আরেকটিতে সে দিতেই পারেনি।
কেনো?
কারণ সে হাসপাতালে ছিলো।
কেনো? কারণ সে বাম হাতের রগ কেটে ফেলেছিলো।
বলেন কি? কেনো?
কেনো আবার? তার সেই নতুন বয়ফ্রেন্ড তাকে ইউজ করে ছেড়ে দিয়ে অন্য মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে! আর এটা সে যখন জানতে পারে তখন সে রিকির সাথে খুব ঝগড়া করে। কিন্তু কোন লাভ হয় না। রিকি তার সাথে ব্রেকআপ করে অন্যজনের দিকে মুভ করে। মূলত পরীক্ষার আগে থেকেই সমস্যাটা সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতি নিয়েও সে পরীক্ষা দেয়। ক্যাম্পাসে আসা যাওয়ার পথে আমি মাঝে মাঝে দেখতাম কেমন করে যেনো আমার দিকে ও তাকিয়ে থাকে। আমি অনুমান করতে পারতাম সে অপরাধবোধে ভুগছে। কিন্তু সে আমার সাথে কথা বলার কোন চেষ্টা করতো না। আর যদি করতো আমি এভয়েড করতাম তাকে। যাই হোক, পরীক্ষার মাঝেও রিকিকে ফিরিয়ে আনার জন্য সে হয়তো অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু তা আর পারেনি। শেষ পর্যন্ত সে বাম হাতের কব্জির দিকের রগ কেটেছে। কিন্তু রিকিকে আর ফিরিয়ে আনতে পারেনি! একটা পরীক্ষায় যখন ও আসেনি তখন আমি আন্দাজ করেছিলাম হয়তো সে খুবই আপসেট তাই পরীক্ষা সে দেয়নি। কিন্তু রগ কেটে ফেলেছে এটা আমি আন্দাজ করতে পারিনি।
আচ্ছা সুনিতার সাথে যে রিকির ঝামেলা চলছে এটা আপনি কার মাধ্যমে জানলেন?
কার আবার? বর্ষার মাধ্যমে! ও নিজেও তো পরীক্ষা দিচ্ছিল। পরীক্ষা শেষ হলে ও এসে কথা বলতো। পড়াশুনার পাশাপাশি সুনিতার প্রসঙ্গেও বলতো। আসলে তোমরা মেয়েরা আসলে খুব জেলাস প্রকৃতির! তোমরা যাকে নিয়ে একবার জেলাস হও তার নাড়ি নক্ষত্রের খবরও তোমরা রাখো!
হা হা হা। ঠিক বলেছেন! তা আমরা অবশ্যই করি! এটা আসলে আমাদের মৌলিক স্বভাব। তারপর?
তো প্রায়ই পরীক্ষার পর বর্ষা আমাকে সুনিতার লেটেস্ট আপডেটটা জানাতো। ওর বর আসতো, একসাথে চা কফি খেতাম আর নানা বিষয়ে কথা হতো। তবে রগ কাটার ব্যাপারটা কিন্তু বর্ষা আমাকে জানায়নি। এমনকি সৌমেন, বিজ্জু, হুসেন ওরাও কিন্তু জানতো কিন্তু আমাকে জানায়নি।
জানায় নি কারণ হতে পারে আপনি হয়তো ওর এতটা খারাপ অবস্থা জেনে নিজেকে সামলে রাখতে না পেরে ওর কাছে চলে যেতেন, তাই হয়তো।
ঠিক বলেছো মনিকা! বাস্তবে এটাই হতো আসলে! আমি যদি একটিবার জানতে পারতাম যে সুনিতা নিজেই নিজের হাত কেটে হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তবে আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারতাম না! আমি ছুটে চলে যেতাম ওর কাছে! আর ওকে ক্ষমা করে দিয়ে ওকে আমার কাছে নিয়ে আসতে চাইতাম। কারণ আমার ভালোবাসা ততদিনে মরেনি।
হুম সেটাই আপনার আরেকটি মারাত্নক ভুল হতো।
হ্যা। যেখানে গুরু আমাকে নিষেধ করেছে আমি যাতে সুনিতা ফিরে আসলে তাকে গ্রহণ না করি সেখানে আমিই যদি তার কাছে যেতাম তবে সেটা তো ভালো হতো না!
ফল ভালো হতো না আর তাছাড়া সে হয়তো আর উপায় না দেখে আপনার কাছে সাময়িকভাবে ফিরে আসতো কিন্তু কিছুদিন পর দেখতেন সে আবার অন্যদিকে ডাইভার্ট হয়ে গেছে কিংবা আপনার সাথে আবার ব্রেকআপ করে চলে গেছে।
হুম সেটাই হতো। এবার কোনদিকে নেবো?
এবার বামে গিয়ে শেষ মাথা দিয়ে আবার ডানে টার্ন নেবেন।
তোমার বান্ধবীর বাসা তো অনেক দূর! শহরের এ মাথা থেকে আরেক মাথায় চলে এলাম।
আসলে আমি ওর ওখানে কয়েকদিন স্টে করবো।
তাই নাকি? তো লাগেজ নিয়ে আসোনি।
আরে লাগেজ লাগবে না। প্রয়োজনীয় জিনিস আছে ওখানে।
ওকে ফাইন।
হুম। তারপর বলুন। তো আমি আসলে জানতে পারলাম তখন যখন ওকে আসতে দেখলাম নীলার সাথে। আর ওকে দেখে সবাই ওকে ঘিরে ধরলো। কিভাব হয়েছে, কখন হয়েছে কেনো হয়েছে জানতে চাইলো। আমি তখন খেয়াল করলাম যে ওর বাম হাতে ব্যান্ডেজ!
ওর হাতে ব্যান্ডেজ দেখে আপনি তো খুব শকড হয়েছিলেন, তাই না?
হ্যা খুব শকড হয়েছি। কারণ আমি জানতাম ও এত দুর্বল চরিত্রের মেয়ে না। কিন্তু মোহ আর অন্ধ ভালোবাসা মানুষকে সমূলে পাল্টে দেয় মনিকা!
হ্যা সত্যিই দেয়। আমি জানি সেটা। মনিকা গাড়ীর সীটে হেলান দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
ওহ! কাম অন মনিকা! তুমি তোমার অতীত ভুলে যাও তো প্লিজ!
হুম ভুলার চেষ্টা করছি। তবে হঠাত করেই তো আর সম্ভব হয় না! আচ্ছা ঠিক আছে। ক্যারি অন!
ওকে! তারপর সবাই যখন ওকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো ও প্রচন্ড অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। কেউ একজন বলে উঠলো, রাজকে ছেড়ে দিয়েছো তো! এবার বুঝলে তো! খারাপ ছেলের খপ্পরে পড়লে এমনই হয়! মনে হয় কথাটা রাজদ্বীপ বলেছিল।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমার কেনো যেনো কষ্টও হলো আবার করুণাও হল। ওর সাথে আমার কয়েকবার চোখাচোখি হল। ওর চোখে আমি দেখলাম অপরাধবোধের লজ্জা!
আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। তবে আমি এটা জানতাম যে আমি উঠে ওর কাছে যাবো না। হর্ষ আমাকে কাধে হাত দিয়ে বলল, তুই স্থির থাক দোস্ত!
আমি হর্ষের কথায় মাথা নিচু করে বসে রইলাম। তখনই মাথা উঠালাম যখন সুলতা মিস খাতা পত্র আর পিয়ন ব্রিজেন দা নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকলো।
সুলতা মিস আগে থেকেই জানতো সুনিতার হাত কাটার ব্যাপারটা। উনি সবাইকে যার যার নির্ধারিত সীটে বসতে বললেন আর সুনিতাকে বললেন, সুনিতা?

[/HIDE]
 
[HIDE]

জি ম্যাডাম[font=Arial, sans-serif]!

তুমি এখন ঠিক আছো তো[font=Arial, sans-serif]?
জ্বী ম্যাডাম।
ওকে ফাইন। পরীক্ষার পর টিচার্সরুমে আসবে। কিছু কথা আছে তোমার সাথে।
সুলতা ম্যাডামের মেজাজ আমাদের কলেজে খুব কুখ্যাত ছিলো[font=Arial, sans-serif]! উনি ভীষণ রাগী ছিলেন আর ওনার কথা ছুড়ির মতো বুকে বাঁধতো সবার। আর খুব অকুতোভয় ছিলেন। আমাকে খুব স্নেহ করতেন।
একবার কমলেশের এক সাঙ্গ[font=Arial, sans-serif] -পাঙ্গ হরিশ এক মেয়েকে হ্যারাস করার চেষ্টা করে তখন উনি বেত দিয়ে হরিশকে এমন মার মারেন। সেসময় আমরা কয়েকজন সেটা দূর থেকে দেখছিলাম। এক পর্যায়ে দেখলাম সে ম্যাডামের উপর চড়াও হতে চাচ্ছে। ব্যস[font=Arial, sans-serif]! তখন আমি ছুটে গিয়ে হরিশকে এমন মার দিলাম যে রক্ত বের হয়ে ফেললাম[font=Arial, sans-serif]! ম্যাডাম দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। উনি চুপ করে রইলেন। একটু পর বললেন ব্যস[font=Arial, sans-serif]! রাজ থামো এবার[font=Arial, sans-serif]! অনেক হয়েছে। তারপর উনি বাকি স্যারদের ডাকলেন। ওনারা আমার এমন বেধরক মারকে আর ম্যাডামের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে চুপ করে তামাশা দেখাকে যখন কটাক্ষ করলেন তখন উনি কিছু লেকচার ঝারলেন তাদের প্রতি। সবা স্যারেরা চুপ করে গেলেন। সাধারণত এমন রক্তরক্তি যদি কেউ কলেজ ক্যাম্পাসে করে তবে তাকে বহিষ্কার করা হয়। আমি পরে চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিন্তু দিন দুয়েক বাদে সব কিছু স্বাভাবিক। মনে হল যেনে কিছুই হয়নি। কমলেশও দেখলাম চুপ করে থাকে। কিছু বলে না। আমি তো ভেবেছিলাম আমাদের সাথে ক্ল্যাশিং করতে আসবে। দেখি ম্যাডামও বেশ স্বাভাবিক। পরে শুনলাম উনিই কলকাঠি নেড়ে সব কিছু ধামাচোপ দিয়েছেন। আমাকে শুধু ডেকে একবার বললেন[font=Arial, sans-serif], হরিশকে মেরেছো ভালো[font=Arial, sans-serif], অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় তুমি সোচ্চার জানি[font=Arial, sans-serif], তবে কখনও ক্ষমতা আর পেশিশক্তির অন্যায় ব্যবহার করবে না তুমি আশা করি।
আমি তখন ম্যাডামের পায়ে ছুয়ে আশির্বাদ নিলাম। উনি বললেন[font=Arial, sans-serif], তুমি অনেক বড় হও রাজ[font=Arial, sans-serif]!
যাই হোক তারপর সেদিন পরীক্ষা শেষ হল। তারপর আমি তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেলাম হল থেকে পাছে সুনিতা আবার আমাকে দেখে কোন কথা বলার চেষ্টা করে। আমি বাইরে গিয়ে একটা আইসক্রীপ শপে গিয়ে বসলাম। আমার বন্ধুরাও এলো। তারপর দেখি বর্ষার ফোন। বললাম আমরা আইসক্রীম শপে আছি। ও এসে বসলো। আর বললো[font=Arial, sans-serif], ওর বের হবার সময় চুপ করে টিচার্সরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে সুনিতাকে সুলতা ম্যাডাম কি বলছে সেটা শুনলাম।
কি বললো ম্যাডাম ওকে[font=Arial, sans-serif], আমি বর্ষাাকে জিজ্ঞেস করলাম।
ও বলল[font=Arial, sans-serif], ম্যাডাম সুনিতাকে বলেছেন[font=Arial, sans-serif],
শোন মেয়ে[font=Arial, sans-serif], তোমার এখন বয়স কম তাই তুমি এরকম একটা জঘন্য ভুল করতে চলেছিলে। কেনো[font=Arial, sans-serif]? একটা ছেলে তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে দেখে[font=Arial, sans-serif]? তাও রিকির মতো একটা ছেলে[font=Arial, sans-serif]? আমি প্রায়ই তোমাদের দেখতাম একসাথে। কিন্তু আমি কিছু বলিনি। তোমরা গ্রাজুয়েশনের স্টুডেন্ট[font=Arial, sans-serif]! তোমরা প্রত্যেকেই প্রাপ্তবয়ষ্ক[font=Arial, sans-serif], এডাল্ট[font=Arial, sans-serif], তোমাদের ভালো মন্দ তো শিখিয়ে দেবার দরকার নেই[font=Arial, sans-serif]! এই ভিকি ছেলেটা কখনও ক্লাসে মনোযোগী ছিল না[font=Arial, sans-serif], ক্লাস করতো না[font=Arial, sans-serif], রাজনীতি করতো[font=Arial, sans-serif], আর খুন খারাপীর মধ্যের আছে শুনেছি। তুমি কি দেখে এই বাজে ছেলেটার সাথে রিলেশন করতে গেলে[font=Arial, sans-serif]? আর রাজ ছেলেটার সাথেও তো তোমার রিলেশন ছিল। কিন্তু তুমি ওর মতো একটা ভালো ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে কেনো রিকির ছেলেটার সাথে রিলেশন করেছ[font=Arial, sans-serif]?
জয়দেব স্যার বললেন[font=Arial, sans-serif], আর তোমরা কলেজে পড়াশুনা করতো আসো। প্রেম ভালোবাসা করতে নয়। হ্যা[font=Arial, sans-serif], এটা ভালোবাসা বাসি হবার মতোই বয়স। আমরাও ছাত্র অবস্থায় এমন অনেক প্রেম ট্রেম করেছি কিন্তু মেয়ে তুমি যে পদক্ষেপটা নিয়েছো[font=Arial, sans-serif], সেটা তো কোনভাবেই মেনে নেয়ে যায় না। নিজের হাত নিজে কেটেছো[font=Arial, sans-serif]? তোমার প্রাণটাই তো চলে যেতো মেয়ে[font=Arial, sans-serif]! সেটা কি বুঝেছ[font=Arial, sans-serif]?
সুলতা ম্যাডাম বললেন[font=Arial, sans-serif], আমার তো মন চাইছে তোমাকে বেত দিয়ে পিটিয়ে তোমার ছাল তুলে ফেলি। কিন্তু তোমার এমন অবস্থার জন্য করলাম না।
কোকিলা ম্যাডাম শান্ত গলায় বললেন[font=Arial, sans-serif], দেখো মা[font=Arial, sans-serif]! এ বয়সটা ভুল করারই বয়স। সবাই এ বয়সে কোন না কোন ভুল করেই। আমরাও করেছি। কিন্তু তুমি যেটা করেছ সেরকম ভুল কারও কাছ থেকেই আমরা আশা করি না।

তোমরা ছাত্র ছাত্রীরা আমাদের সন্তানের মতো। তাই বলছি[font=Arial, sans-serif], কক্ষণও এমন কোন কাজ করবে না যেটা তোমার জীবনটা নষ্ট করে দেয়। তোমার বড় হয়েছো[font=Arial, sans-serif] , যথেষ্ট বোঝ। আর হ্যা[font=Arial, sans-serif], যেই ভালোবাসার জন্য তুমি এমনটা করেছ সেটা কখনই ভালোবাসা ছিল না। তুমি ঐ ছেলেটার সাথে আর যোগাযোগ করবে না। প্রেম ভালোবাসা সব সময় জীবনে সুখ বয়ে আনে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কষ্ট বয়ে আনে। তুমি বরং পড়াশুনাটা শেষ করে তোমার বাবা মায়ের পছন্দে কোন ছেলেকে বিয়ে করে সুখি হও। এর বেশি কিছু তোমাকে বলার নেই।
দেবানন্দ স্যার বললেন[font=Arial, sans-serif], ঐ রিকি হতচ্ছড়াকে যদি আমি পিটিয়ে ওর ছাল তুলে ফেলতে পারতাম তবে আমার কলিজা ঠান্ডা হতো। অনেক বাড় বেড়েছে। কয়েক বছর ধরে হাড় মাংস জ্বলিয়ে খাচ্ছে। কেবল এম এল এ সাহেব ওর সাপোর্টে আছে। নইলে কবে আমি ঝেটিয়ে ওকে বিদায় করতাম এই কলেজ থেকে। যত্তসব রাস্কেল[font=Arial, sans-serif]! যাও মেয়ে[font=Arial, sans-serif]! ম্যাডাম যা বলল তা মেনে চলো। এখনকার ছেলে মেয়ে গুলিকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না। দেবানন্দ স্যার বের হয়ে গেলেন যাবার সময় আমাকে দেখলেন আমি ভয় পেয়েছিলাম রাজ কিন্তু স্যার কিছু বললে না।
সুনিতা এতক্ষণ সব শুনে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না। সে অঝোরে কান্না করা শুরু করলো।
সুলতা ম্যাডাম বলল[font=Arial, sans-serif], এই মেয়ে চোখ মোছ। কেঁদে কোন লাভ নেই। একটা পরীক্ষাতো দিতে পারোনি। বাকি পরীক্ষাগুলো দেও। পড়ে আলাদা করে আমরা তোমার ঐ পরীক্ষাটা নিয়ে নেবো।
ঠিক আছে ম্যাডাম।
সুলতা ম্যাডাম বললেন[font=Arial, sans-serif], যাও এবার পরের পরীক্ষার প্রস্তুতি নেও।
বাংলার স্যার সূর্য প্রকাশ স্যার বললেন[font=Arial, sans-serif], শেনো মামনি। যাকে একবার ভালোবাসবে তাকে ভালোবাসার মতো ভালোবাসাবে। রাজের সাথে তুমি যা করেছ তা ঠিক করোনি। ছেলেটা আমাদের সোনার ছেলে। তাকে ছেড়ে দেয়াটা তোমার উচিত হয়নি। ভালোবাসা একবার ছেড়ে গেলে আর ফিরে আসে না। যা তুমি করে গেছো তা ঠিক করোনি মোটেই। তবে এখন সামনের দিকে এগোও। তোমার জন্য আমাদের সবার শুভ কামনা রইলো।
সুনিতা আবারও কেঁদে ফেললো।
এখন যাও সুনিতা। সুলতা ম্যাডাম সুনিতাকে যেতে বলল। সুনিতা চলে গেলো।
রাজ তন্ময় হয়ে সব শুনছিলো। ওর খারাপ লাগতে শুরু করে সুনিতার জন্য। কিন্তু সে আবেগ গোপন করে।
ম্যাডাম আর স্যাররা খুব সুন্দর কথা বলেছে। বিশেষ করে বাংলার স্যার।
হুম। আমাদের সব টিচাররাই ভালো। শুধু হুমাংশ হারামজাদাটা বাদে।
তার কথা এখন বাদ দে। কমলেশে আর রিকির সাথে ওনাকেও আমি দেখে নেবো[font=Arial, sans-serif]!
হুম সেটা পড়ে করো। আগে পরীক্ষাটা দিয়ে নেও। বর্ষা বলল।
আচ্ছা ও হাত কাটলো কিভাবে[font=Arial, sans-serif]? বিজ্জু বলল।
বর্ষা বলল[font=Arial, sans-serif], সুনিতা রিকিকে বার বার দেখা করার জন্য বলছিল। সে রাজি হচ্ছিল না। তারপর যখন রাজি হয় তখন সুনিতাকে তার সবকিছু উজাড় করে দেয় রিকিকে। কিন্তু রিকি তাতেও পাল্টায় না। তারপর আবার যখন রিকিকে দেখা করতে বলে আর হুমকী দেয় যে সে হাত কাটবে তখন রিকি নাকি তাকে বলেছে কেটে ফেলতে। তাই সে বাম হাতের রগ কেটে ফেলে।
তুমি কি করে জানলে এসব[font=Arial, sans-serif]?
কবিতা আছে না[font=Arial, sans-serif]? ওর কাছ থেকে শুনেছি। সুনিতাকে ও হাসপাতালে দেখতে যায় তখন সুনিতাকে ওকে বলে। পরে আমি ওর কাছে জানতে চাইলে সে বলে।
তোরা তো আমাকে জানাসনি[font=Arial, sans-serif]!
জানাইনি ভালো করেছি বুঝলি[font=Arial, sans-serif]! নইলে তুই পাগল হয়ে হাসাপাতালে চলে যেতি আর গিয়ে কোন লাভ হতো না। বরং তোরই ইমেজ নষ্ট হতো।
রাজ চুপ করে থাকে।
[/HIDE]
 
[HIDE]

তবে পুরো কলেজে রিকি আর সুনিতার বিষয়টা নিয়ে খুব চর্চা হচ্ছে। সবাই ওদের দুজনকেই দুষছে। আর রাজের সাপোর্টে আছে সবাই। হুসেন বলল।

বর্ষা বলল, এবার আমি উঠি। তোমারা পরের পরীক্ষাটার জন্য প্রস্তুতি নেও। আমি গেলাম। আজকে আবার শ্বশুড় মশাই আসবেন। রান্না করতে হবে গিয়ে।
আচ্ছা যাও। … আচ্ছা বর্ষা? সুনিতার কি ভালো হয়ে যাবে?
জানি না রাজ! তবে হতেও পারে। আর এত বড় ধাক্কা খেয়েও যদি না হয় তবে ওর কপালে আরও খারাপি আছে। যাক দেখা যাক কি হয়। খবরাখবর তো পাবই! তবে তুমি কিন্তু ওর আশায় বসে থেকো না। বলে দিলাম। যা গেছে, গেছে।
হ্যা তা ঠিক। তবে বর্ষা! আমি কখনও হারিয়ে ফেলে জিনিস খুঁজে আনি না।
সেটাই ভালো। যার কাছে তুমি একবার ব্যাথা পেয়েছো সম্ভাবনা আছে আবারও তার কাছে থেকেই ব্যাথা পাবার। একবার যে তোমাকে ঠকিয়েছে সে তোমাকে দ্বিতীয়বার ঠকাতে ভাববে না। চললাম।
ঠিক আছে যাও। ভালো থেকো।
বর্ষা চলে গেল। হলুদ রঙ্গের সাজে ওকে ভালোই লাগছিল। প্রেম যার ভাগ্যে জোটে না, ভালো বন্ধুত্ব নাকি তার ভাগ্যে জোটে। রাজ আনমনে তাকিয়ে থাকে রাস্তার দিকে।
তারপর দিনগুলো বাকি পরীক্ষা দিয়েই কেটে যায়। সুনিতা আমাকে দেখে উদাস নয়নে তাকিয়ে থাকে। আমি আর ওর উদাস নয়নে আনন্দের ঝলক ফুটিয়ে তুলতে যাই না। সবাই যার যার মতো ব্যস্ত হয়ে যায়। সবাই ভুলও যায় সবকিছু। পরীক্ষাও শেষ হয়ে যায়। তারপর আসে নির্বাচন। নির্বাচনে এবার আরও উদ্যোমে প্রচরাণায় নামি। কিছু নতুন প্রপাগান্ডা দেই। ছাত্র – ছাত্রীরা বেশি সংখ্যক আমার দিকেই থাকে। নির্বাচনের আগেই আমি জানতাম আমার আর রাজপালের জয় নিশ্চিত। কিন্তু ছোটখাটো কিছু রাজনৈতিক অপকর্ম হয় যা কাটিয়ে উঠে বিপুল ভোটে রাজ-রাজপাল পরিষদ জিতে যায়।
আপনি তো দেখছি কলেজে দুর্দান্ত এক পার্সোনালিটি ছিলেন!
হুম তা তো ছিলামই। তবে গুরু না থাকলে আমি অনেক ষড়যন্ত্র ধরতে পারতাম না।
সেটা কি রকম?
সেটা না হয় পরে শুনাবে আরেকদিন। এখন কোন দিকে বল?
ঐ যে সামনে গেরুয়া রঙের বাড়িটা। ওটাই। আমার বান্ধবী সুনন্দার বাড়ী।
আচ্ছা।
রাজ এবার পুলিশের জিপটা সাঁ করে টান দিয়ে বিল্ডিং এর নিচে রাখে। মনিকা বের হয়।
আসুন।
না আসবো না!
ওমা সেকী? এতটা পথ আমাকে নিয়ে এলেন, আর এই ভরদুপুরে কিছু না খেয়েই এখন চলে যাবেন।
হুম যাবো। অনেক কাজ আছে। আসলে অনেক দেরী হয়ে গেছে।
কোন দেরী হয় নি। চলুন তো!
না না মনিকা তুমি যাও। আমি অন্য সময় আসবো।
আচ্ছা। … রাজ! দাঁড়ান!
রাজ ঘুরে জিপে বসে যাচ্ছিল। কিন্তু উঠে আসলো আবার।
হ্যা বল মনিকা।
আজ আপনি আমাকে আপনার জীবনের অনেক কষ্টের কথা বললেন। আপনাকে দেখে বোঝা যায় না আপনি জীবনে এতটা কষ্ট পেয়েছেন। আচ্ছা আমি কি জানতে পারি আমাকে কেনো এত কিছু বললেন? আমি তো আপনার আপন কেউ না? এই তো সেদিন মাত্র পরিচয় আপনার সাথে।
দেখো মনিকা! দিন হিসেব করে সম্পর্কের গভীরতা বলা যায় না। অনেক সময় অল্পদিনের পরিচয়েও মানুষ মানুষের খুব কাছে আসতে পারে। আবার খুব কাছের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার পরেও মানুষ মানুষকে মনের কথা খুলে বলতে পারে না। বলতে চায় না। ধরে নেও তোমাকে আমার খুব কাছের কোন মানুষ আমি ভাবতে শুরু করেছি। তোমাকে আমি হয়তো সে স্থানটা দিয়েছি।
বুঝতে পেরেছি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি এক অসাধারণ মানুষ!
হা হা! অসাধারণ মানুষ না হলে কি গল্পের নায়ক হই?
কোন গল্প?
ঐ যে তুমি বললে আমার আর মোহিতের জীবনটা গল্প উপন্যাসের মতো!
ও হ্যা! বলেছিলাম মনে পড়েছে!
ঠিক আছে আমি গেলাম।
সুনন্দা চলে এসেছে।
মনিকা!
সুনন্দা!
দুই বান্ধবী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। রাজ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে।
সুনন্দা উনি হচ্ছেন রাজ। আমার খুব কাছের বন্ধু।
আর রাজ ও হল সুনন্দা! আমার বেস্ট ফ্রেন্ড!
হ্যালো!
হায়! আচ্ছা আমি এবার চলি তাহলে।
একী! উনি চলে যাচ্ছেন কেন?
আসলে ওনার ডিউটিতে যেতে হবে।
ও আচ্ছা। ঠিক আছে। আবার আসবেন।
রাজ জিপে উঠে জিপ স্টার্ট দিলো। আশেপাশের লোকজন তাকিয়ে দৃশ্যটা দেখছিল। রাজ জিপে বসে সানগ্লাসটা লাগিয়ে মুড নেয়। তারপর জিপটা টার্ন নিয়ে সা করে ধূলো উড়িয়ে চলে যায়।

মনিকা আর সুনন্দ্যা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকে।
আগে তো কোনদিন শুনিনি তোর কোন পুলিশ বন্ধু আছে? ওনাকে কোথায় পেলি?
বাসা থেকে পেয়েছি!
মানে তোদের বিল্ডিং এ থাকে?
না।
তবে?
আরে বাদ দে। চল! কি রান্না করেছিস সেটা বল।
তুই দেখলে পাগল হয়ে যাবি।
বিট্টু কোথায়? স্কুল থেকে আনতে যাবি না?
না আজ স্কুলেই যায়নি জমিদারপুত্র!
বাহ! বেশ ভালো। উফ! হাপিয়ে উঠলাম।
এতেই হাপিয়ে উঠলি! আর সঞ্জয়কে নিয়ে যখন খেলিস!
আরে ধ্যাত! চুপ করতো! যেখানে সেখানে!
চল! সব কথাই হবে।
চল।
দুই বান্ধবীর ভিতরে খুনসুঁটি শুরু হয়ে যায়। কে জানে সামনের ৭ দিনে কত রকম মজার ঘটনা ঘটে!
ওদিকে রাজ কিছুটা হালকা বোধ করছে। অনেকদিন পর প্রাণ খুলে কথা বলার মতো কাউকে পেলো! খুব রোদ! রাস্তায় লোকজন যার যার মতো চলছে। হঠাত পদ্মিনীর কথা মনে পড়ে। এত কথাই তো হল। পদ্মিনীর কথা বলতে মনে নেই। যাক! দেখা তো হবেই। তখন বলা যাবে। তবে এখন সেই কে. কে. শয়তানটাকে খুঁজে বের করতে হবে।
এই কেইসে বার বার নিত্য নতুন দিক সামনে আসছে। দেখা যাক এই কেইসটা কতদূর গড়ায়। গুরুর সাথেও কথা বলতে হবে।
জিপ চলতেই থাকে। মানুষ দেখে ভেতরে এক সুদর্শন পুলিশ কঠোর চেহারা নিয়ে ড্রাইভিং করছে। পথচারীরা রাস্তা ছেড়ে দিচ্ছে। এক নতুন মোড় নেবার প্রত্যাশায় সূর্য হেলে পড়ে!
[/HIDE]
 
[HIDE]

রাজ গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে ভাবতে থাকে আজকের দিনের অর্ধেকটা কেটে গেলো তার পুরোনো স্মৃতিগুলো হাতড়ে। অল্প দিনের পরিচয় হলেও মনিকা রাজের মনে শক্ত অবস্থান নিয়ে নিয়েছে। খুব কম মানুষই আছে রাজের জীবনে যারা খুব দ্রুত রাজের মনে জায়গা করে নিতে পারে। আর রাজ সবসময় সম্পর্কের প্রতি যত্নবান, শ্রদ্ধাশীল। এখনকার সময়ে তো মানুষ কেবল সম্পর্ক তৈরী করে স্বার্থ হাসিলে জন্য। কিন্তু রাজ কখনই স্বার্থের জন্য সম্পর্ক তৈরী করেনি। এটা তার নীতি বিরুদ্ধ। তবে রাজ সম্পর্কের ব্যাপারে বেশ বিচক্ষণ! সবসময় সে চেষ্টা করেছে এমন মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে যারা তার মতেই সম্পর্কের প্রতি দায়িত্বশীল। মনিকাকেও তার এমনি একজন মানুষ মনে হয়।
রাজ এরপর ডিউটির দিকে মনোনিবেশ করে। সে চৌহানকে ফোন করে।
স্যার মনিকার সাথে কথা হয়েছে আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা গেছে।
হুম। গুড!
আপনি কোথায় আছেন স্যার?
আমি থানায় আছি। চলে আসো।
ওকে স্যার। রাজ ফোন রেখে একটা গান ছাড়ে মোবাইলে। তাকে এখন আবারও বহুদূর অতিক্রম করে যেতে হবে। গান বেজে চলেছে, কেয়া হুয়া তেরা ওয়াদা… ও কাসাম! ও ইরাদা…
বেশ কিছুক্ষণ ড্রাইভ করার পর রাজের বেশ ক্ষুধা লাগে। এক হোটেলের সামনে জিপটাকে রেখে সে হোটেলে প্রবেশ করে। হোটেলের মালিক বলে আসুন স্যার। এই স্যারের জন্য প্লেট লাগা!
এক ছোকড়া এসে বলল , কি খাবেন স্যার?
কি আছে?
ছোকড়াটা এক নি:শ্বাসে সব মেন্যু বলে দিল। রাজ কিছু বুঝতে পারলো। কিছু বুঝতে পারলো না। তার মনে হল জিজ্ঞেস ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে ভুল করেছে! রাজ দেশি ডাল সবজি আর মাছ চাইলো।
কিছুক্ষণ পর মেন্যু আসলো। রাজ ততক্ষণে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হল। সবাই আড়চোখে রাজকে দেখছে। মনে হয় যেনো পুলিশকে কখনও হোটেলে বসে খেতে দেখেনি বা কখনও খেতেই দেখেনি!
রাজ ঝটপট খাওয়া শেষ করে বিল মিটিয়ে দিল। হোটেল মালিক বলল, রান্না কেমন হল সাব?
ফার্স্ট ক্লাস!
ধন্যবাদ স্যার! আমাদের এ হোটেল খুব নামকরা স্যার। আবারও আসবেন।
জ্বী আচ্ছা।
রাজ হোটেল থেকে বের হয়ে দেখলো এক ছোট ছেলে ভিক্ষা করছে। ছেলেটা এক দোকানে ভিক্ষা চাইতে গেলে দোকানদার তাকে কড়াভাবে ধমক দেয়। ছেলেটা বলে, ভিক্ষা চাইছি বলে ‍তুই এমন করছিস! দেখবি একদিন আমি একদিন এমন থাকবো না! সেদিন তোকে দেখাবো!
রাজ আন্দাজ করতে পারে ছেলেটার অবস্থা তারপরেও সে ছেলেটাকে বলে, কি হল ভিক্ষা করছিস কেনো? তোর পরিবার নেই?
আমার খুব খুদা স্যার! আমার কেউ নাই! আমি অনাথ!
সঙ্গত কারণে অনাথ কথাটা রাজের মনে ধাক্কার মতো লাগে!
সে সহ্য করতে না পেরে দোকানদারকে একটা ঝাড়ি মারে। দোকানদার চুপসে যায়! এরপর সে ছেলেটাকে বলে কি খাবি তুই?
ছেলেটা ইতস্তত করে। রাজ ছেলেটাকে বলে দাঁড়া। সে দোকানীকে বলে কেক, কোল ড্রিংকস ও পানি দিতে।
তারপর সেগুলোকে নিয়ে ছেলেটাকে বলে, তুই যাবি আমার সাথে?
না স্যার! বাবজি মারবে!
বাবজি কে?
দোকানদার বলে স্যার বাবজি হলো এখানকার ভিক্ষুকদের সর্দার। ওরা একটা সিন্ডিকেট।
রাজ বলে ব্যস বুঝেছি। রাজ ভালো করেই জানে এই ভারতবর্ষ জুড়ে গরিব এতিম ছেলে মেয়ে আর বয়স্কদের দিয়ে ভিক্ষা করানো হয়। আর এর পেছনে কাজ করে এক সিন্ডিকেট। ওরা সুস্থ্য সবল ছেলে মেয়েদের পঙ্গু বানিয়ে ভিক্ষা করায়। যদিও এ ছেলেটিকে করেনি।
রাজ ছেলেটাকে বলে, তোর বাবজির সাথে আমাকে দেখা করাবি?
ছেলেটা মাথা নাড়ে। বাবজি খুব খারাপ লোক আছে!
রাজ বলে, আমার খারাপ লোকের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে। চল!
রাজ বাবজির আড্ডাখানায় ছেলেটাকে সাথে করে নিয়ে যায়। আগে ছেলেটাকে পাঠায় বাবজির কাছে।
কিরে হারামজাদা! তুই এত তাড়াতড়ি চলে এসেছিস কেন? আজও তোর শরীর খারাপ করেছে মাগির পুত?
বাবজি উনি তোর সনে কথা বলতে চান।
কে?
রাজ এসে বাবজির গালে এক তাগড়া চড় কসিয়ে দেয়!
বাবজি দাঁড়ানো থেকে শুয়ে পড়ে!
আমি হারামজাদা! আমার নাম রাজ বীর সিং!
পুলিশ! ঐ হারামজাদা লক্ষণ! তুই পুলিশ এনেছিস কেনোরে!
খবরদার! শুয়েরের বাচ্চা! আর একবার তুই ওকে গালি দিয়েছিস তো তোর জিব টেনে ছিড়ে রাস্তায় ফেলে দেবো!
না স্যার! হামাকে মাফ করে দেন! স্যার! ভুল হলে গেছে!
শোন উঠে ঐ গদিটাতে বস!
জ্বী স্যার জী স্যার!
বাবজি উঠে গিয়ে একটা গদিতে বসে।
শোন হারামজাদা! আমি এই ছেলেটাকে নিয়ে যাবো। তুই কোন বাঁধা দেবার কথা কল্পনাও করবি না!
জ্বী স্যার!
একটু পর পুলিশ আসবে। তোকে তোর চ্যালা চামুন্ডা সহ ধরে নিয়ে যাবে। আর কোন কোন বাচ্চা আর বয়স্ক লোক আছে সব তাদের কাছে বলবি।
না স্যার মাফ চাই স্যার!
কোন মাফ নেই। যত অপকর্ম করেছিস তার ফল ভোগ করবি। রাজ চৌহানকে ফোন করে।
স্যার!
হ্যা বল রাজ।
এখানে রাধা কৃষ্ণ মনিদের কাছে ব্যাংক কলোনীতে একটা ক্রাইম সিন্ডিকেট পেয়েছি। আপনি এখানকার ওসির ফোন নাম্বার দিন।
তুমি এত দূরে গিয়েছ কিজন্যে?
বলতে পারেন স্যার ডিউটি টেনে এনেছে!
তুমি আসলেই না বেশি করো রাজ! এক কাজে গেলে আরেক কাজ ধরেছ।
স্যার অপরাধ দমন করাই তো আমাদের প্রধান কাজ তাই না?
হুম। দাঁড়াও আমি নাম্বার নিয়ে ম্যাসেজ করি দিচ্ছি।
ওকে স্যার!
একটু পর রাজের ফোনে রাধা কৃষ্ণ মন্দিরের পাশে যে থানা আছে তার ওসির নাম্বার এলো।
রাজ ফোন করতেই রাজকে ওসি নানান ধানাই পানাই শুনালো।
রাজ উল্টা ওসিকেই ঝাড়ি দিলো। টিকতে না পেড়ে ওসি ফোর্স পাঠালো।
ফোর্স আসার পর রাজ বলল, আপনারা এত কাছেই আছেন কিন্তু এত বড় ক্রাইম হয় আপনারা কি জানেন না নাকি বান্ডেল গিলে চোখে পট্টি পড়ে আছেন?
নেইম প্লেটে বিক্রম লিখা একজন বলে, আসলে…
আমি জানি থাক। আর বলা লাগবে না। এদের ধরে নিয়ে যান। আমি এই ছেলেটাকে নিয়ে যাচ্ছি। আর বাকি ওর মতো আরও যারা আছে তাদের মুক্ত করার ব্যবস্থা করুন। আর এ কেইসটা ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করবেন না। নইলে পরিণতি ভালো হবে না। কারণ আমি আছি পেছনে ! আমি রাজ বীর সিং!
পুলিশ আর বাবজি তটস্থ হয়ে ওঠে!
বাবজি আর তার কিছু সাঙ্গ পাঙ্গকে এরেস্ট করা হয়।
আমি জানি এর পেছনে বড় বড় হাত আছে। আমি সে বড় বড় হাতকে গুড়িয়ে দেবো!
পুলিশরা অপরাধিদের এরেস্ট করে নিয়ে গাড়িতে তোলে। কিন্তু তার আগে এক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। লক্ষণ নামের সে ছেলেটা বাবজির পেটে লাথি মারে!
রাজসহ সবাই তব্দা খেয়ে যায়।
শালা! মনে আছে কতদিন তুই আমার পেটে লাথি মেরেছিলি! ব্যাথা হইছে খুব? আমারও তখন ব্যাথা হইতো!
রাজ বলে সাবাস!
পুলিশ অপরাধিধের গাড়িতে তোলে আর কয়েকজন বাকিদের খোঁজে বের হয়।
রাজ ছেলেটাকে বলে গাড়িতে ওঠে। ছেলেটা দাঁড়িয়ে থাকে।
রাজ বলে, কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন। যাবি না!
ছেলেটা একটু ভাবে আর তারপর হ্যা সূচক মাথা নাড়ে।
তারপর রাজ জিপ স্টার্ট দেয়। জিপ চলতে শুরু করে। রাজ জানে পুলিশের চাকুরী অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ। আর এ যুদ্ধে ভালো সৈনিক দরকার। যে সৈনিকের হৃদয়ে দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি ভালোবাসা আর এক প্রচন্ড আগুন দরকার! যে আগুন শিখা অনিবার্ণ হয়ে জ্বলবে তার হৃদয়ে চিরদিন!
এই ছেলেটার ভিতরে রাজ এক আগুন দেখতে পেয়েছে। এই আগুনটাকে নিভে যেতে দেয়া যাবে না! বরং একে সে মানবতার কল্যাণে কাজে লাগাবে। একদিন তাকেও তো চলে যেতে হবে সার্ভিসে ছেড়ে। তখন উত্তরসূরী হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য দামাল ছেলে লাগবে! এ ছেলের ভিতরে সে এক আগুন দেখতে পায়। আর এ ছেলেকে সে তার থেকেও আরও চৌকস করে গড়ে তুলবে!
জিপ এগুতো থাকে। ছেলেটা প্যাকেট খুলে খেতে থাকে। খেতে খেতে তার চোখ বেয়ে পানি পড়ে।
কিরে কাঁদছিস কেনো? কক্ষণও কাঁদবি না!
ঠিক আছে সাব!
এখন চুপচাপ খা! আজ থেকে তোর আর কোন কষ্ট থাকবে না!
ছেলেটা চোখ মুছে! জিপের বাইরে থেকে পথচারীরা দেখে দু'জোড়া জ্বলন্ত চোখ এগিয়ে যাচ্ছে সোনালী রোদ্দুরের দিকে!

[/HIDE]
 
[HIDE]
রাজ সন্ধ্যার পরে পুলিশ স্টেশনে পৌছায়। সাথে সে অনাথ ছেলে লক্ষণকে নিয়েই সে থানা ভবনে প্রবেশ করে।

কি হল রাজ? এত দূরে গিয়েছিলে কেনো?
আসলে স্যার মনিকার কাছ থেকে ইনফরমেশন জানার জন্য অনেক দূরে যেতে হয়েছিল তাই।
ওহ আচ্ছা। যাই হোক এ ছেলেটা কে?
স্যার ওর নাম লক্ষণ। অনাথ। ওকে ভিক্ষা করাতো এক সিন্ডিকেট। ওকে নিয়ে এসেছি আমার সাথে।
কেনো?
ওকে লেখাপড়া শিখাবো। উপযুক্ত মানুষ করে তৈরী করবো।
বাহ! তাই নাকি? এই রকম ভাবনার চাকুরীর শুরু থেকেই?
স্যার ওর ভেতরে অনেক সম্ভাবনা আমি দেখতে পেয়েছি। ছেলেটাকে সঠিক গাইডেন্স দিলে ও অনেক বড় কিছু হবে স্যার।
তাই নাকি! ভালো। তবে নিয়ে এসেছো ঠিক আছে। দায়িত্ব নিলে নেও। কিন্তু অত রবিনহুডগিরি কিন্তু ভালো না। মাত্র চাকুরীতে নতুন। বিয়ে শাদী করোনি। যা মাইনে পাবে তাতে হয়তো চলে যাবে। কিন্তু বেশি দায়িত্ব নিতে যেও না ঘাড়ে।
জ্বী স্যার সেটা আমি জানি।
তো ঐ সিন্ডিকেটের অবস্থা কি? ঐ থানার ওসি রাজপাল সাহেব কি ওদের বিরুদ্ধে একশন নিয়েছে?
জ্বী স্যার। ওদের কয়েকজনকে এরেস্ট করা হয়েছে আর কয়েকজনকে করবে। আমি বলে এসেছি এ কাজে যাতে গাফিলতি না করে। কারণ আমি খোঁজখবর রাখবো।
তাই বেশ! তবে নিজের ক্ষমতার সীমার মধ্যে থেকো! নিজের থানার দায়িত্বই তোমার প্রধান ফোকাস হওয়া উচিত। অনধিকার চর্চা যেনো না হয় সেদিকে খেয়াল রেখো।
এক্সকিউজ মি স্যার। আমি বিশ্বাস করি পুলিশের চাকুরীতে ক্ষমতার কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই। কোন নির্দিষ্ট গন্ডি নেই।
মানে? কি বলতে চাও?
থানার অন্যান্য কনস্টেবল ও হাবিলদাররা এবার রাজের দিকে কৌতুহলী হয়ে তাকায়। কারণ রাজকে ওরা দেখে আর ভাবে নতুন এসেছে তাই একটু আলগা হিরোগিরি দেখায়। দু চার বছর পরে আর সবার মতো এই ছেলেও নেতিয়ে পড়বে!
আমি মনে করি ভারত আমার দেশ আর এ দেশে আমি মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছি। কিন্তু, যদি আমি নিজের থানার আওতার বাইরে অপরাধ সংঘটিত হতে দেখেও এটা ভাবি এটা তো আমার আওতার মধ্যে না এবং তারপর না দেখার ভান করে চলে আসি আর তবে সেটা কি আমার কর্তব্যের শপথের বিরুদ্ধে যায় না? যে পবিত্র শপথ আমরা ডিউটিতে জয়েন করার আগে নিয়েছি। এ মাতৃভূমির সাথে করেছি।
চৌহানের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। সে রাজের কথায় যুক্তি খুঁজে পায়।
এদেশে যদি পুরোটা আমার হয়, যদি দেশের যেকোন জায়গায় আমি সমান নাগরিক সুবিধা পাই, এ দেশে যদি আমাকে সব জায়গার প্রবেশের অধিকার দেয় তবে কেনো দায়িত্ব পালনের জন্য আমাকে সীমারেখায় আবদ্ধ করা হবে? অপরাধিরা সারাদেশে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। তাহলে আমি যদি চোখের সামনে কোন অন্যায় ঘটতে দেখি তবে আমি কি তা মুখ বুজে হতে দেবো? আমি কি কোন ব্যবস্থা নিবো না। বলুন স্যার আমি কি নেবো না? আর তাছাড়া আমি তো তাদের ইনফরমেশন দিয়েছি কেবল। আমি তো তাদের এরেস্ট করি নি। তাদের বিরুদ্ধে কোন একশনে যাইনি।
বুঝতে পেরেছি রাজ! তোমার কথা ঠিক। আসলে কি জানো? আমরা ডিউটি জয়েন করার সময় সবাই দেশের জন্য দরকার পড়লে জীবন উতসর্গ করার মতো মনোবাসনা নিয়ে আসি। কিন্তু যখন দেখি একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে না থাকলে নিজেরই বিপদ তখন আমরা নিজেদের চাকুরী বাাঁচনোর স্বার্থে অনেক কিছু এড়িয়ে যাই।
স্যার! এখানেই তো আমাদের দুর্বলতা। আমরা ভয় পেয়ে যায়। আর তারপর অপরাধিরা আমাদের আতংকের কারণ হয়ে যায়। তারপর আমাদের পক্ষে নিজেদের ডিউটি সঠিকভাবে পালন করা আর সম্ভব হয় না।
তুমি আসলে কি চাও রাজ?
আমি চাই। আমরা এই থানায় যে কয়জন আছি অন্তত আমরা অকুতোভয় হয়ে কাজ করবো। হ্যা আমরা সারাদেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। কিন্তু আমাদের এই ধেরাধুনের প্রত্যেকটা অপরাধির আতংক আমরা কি হতে পারি না?
চৌহান চেয়ার ছেড়ে উঠে আসে। দেখ রাজ! তোর বয়স কম, নতুন চাকুরী অনেক কিছুই তুই জানিস না, দেখিস নি। ওর সততা আর নিষ্ঠাকে আমরা সম্মান করি কিন্তু এ রকম চিন্তা ভাবনা তোর জন্য বিপদ নিয়ে আসবে রে! অনেক কিছু দেখেও না দেখার ভান করে থাকতে হয়। অনেক কিছু শুনেও না শুনার ভান করে থাকতে হয়। এতেই মঙ্গল।
স্যার! আমি আশ্চর্য হচ্ছি! একজন পুলিশ অফিসার হয়ে আপনি এমন কাপুরুষের মতো কথা বলছেন।
রাজ! মুখ সামলে কথা বল।
সরি স্যার। তবে আমি বলতে চাচ্ছি আমরা কেনো তাদের ভয় পাবো? প্রশাসন কি আমাদের সাপোর্ট দিবে না?
হ্যা দেবে না কেন। প্রয়োজন হলে আমরা সব রকম সাপোর্ট পেয়ে থাকি।
তাহলে? আমরা কি তাদের দোসর হয়ে থাকবো? আমরা কি ঘুষ খাই? স্যার আপনি কি ঘুষ খান? আপনারা? আপনারা কি ঘুষ খান?
সবাই বলে না।
রাজ তোমার কথার পয়েন্ট কি?
আমার মূল কথা হল আমরা যেহেতু কারো থেকে ঘুষ খাইনা তবে কেনো আমরা তাদের ভয় করে চলবো? আমাদের উপর যারা চাপ সৃষ্টি করবে তাদের আমরা উতখাত করবো।
এত সহজ নয়রে পাগল! এত সহজ নয়!
আমি জানি কঠিন। কিন্তু সমস্ত কাজই শুরু করার আগে কঠিন মনে হয়।
চৌহান চুপ করে থাকে। সে বুঝতে পারে রাজকে বুঝিয়ে সে দমাতে পারবে না।
রাজ তোমার কথা শেষ করো।
স্যার, আমরা এখন থেকে অপরাধিদের ত্রাস হয়ে থাকবো। হোক সে কোন বড় স্মাগলার, কোন এম এল এ কিংবা এই মাথা খারাপ সিরিয়াল কিলার। আমরা কারো কাছেই হার মানবো না।
ওকে গুড।
আমরা আরও চেষ্টা করবো। প্রাণপণ চেষ্টা করবো আমাদের এ অঞ্চলটাকে অপরাধিদের থেকে মুক্ত রাখতে। আর এজন্য আমার আপনাদের সবার সহায়তা প্রয়োজন।
চৌহান কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর বলে, তোমার কথা আমি বুঝতে পারলাম। ঠিক আছে রাজ। এখন থেকে তোমার যেভাবে যেখানে যেটা সঠিক মনে হয় করবে। আমি তোমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা ও সহযোগীতা করবো। আর ওরাও করবে।
কনস্টেবল রাজেন্দ্র বলল, রাজ স্যার আমি আপনার সাথে আছি। আমরা ডিউটি ভুলে গিয়েছিলাম। আমাদের এতদিন বিচ্ছিন্ন, একা মনে হত। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমরা সবাই একজোট।
হ্যার রাজেন্দ্র সাব, আমরা সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ্য হবো।
চৌহান বলল, খুব ভালো লাগলো রাজ। তোমার ভেতরে এই রকম নিষ্ঠা দেখে। আজকাল তো অনেক যুবক পুলিশে জয়েন করে ক্ষমতা দেখানো আর দুর্নীতি করার জন্য। কিন্তু তুমি ব্যতিক্রম। শালীনি ম্যাডাম তোমাকে চিনতে ভুল করেননি।
রাজ হাসে।
তুমি অনেক বড় হবে রাজ। আমার দোয়া তোমার সাথে সবসময় থাকবে।
ধন্যবাদ স্যার।
যাই হোক এখন বড় হবার আগে এই কেইসটা সলভ করো!
জ্বী স্যার।
বল মনিকার কাছে থেকে কি কি জানতে পারলে। রাজ এরপর চৌহানকে মনিকার কাছ থেকে শোনা সমস্ত ঘটনা বলে। কে কে সম্পর্কেও বলে। চৌহান তারপর সোনিয়াকে ফোন করে।
হ্যালো সোনিয়া
জ্বী!
আমি চৌহান বলছি।
জ্বী বলুন। আমি চিনতে পেরেছি।

[/HIDE]
 
[HIDE]

তুমি কি কে কে নামে সুরিন্দরের কোন বন্ধুকে চেনো?
দু:খিত আমি কখনও কে কে নামে কারও কথা শুনিনি।


ঠিক আছে। রাখলাম তাহলে। ভালো থেকো।


সোনিয়া তো কিছু বলতে পারলো না, রাজ। এখন কি করা যায়?
আমিও সেটাই ভাবছি।
এই ছেলেটাকে কোথায় রাখবে তুমি?
লক্ষণ এতক্ষণ রাজের চমতকার কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিল। ওর কাছে মনে হল এখনও কিছু ভালো পুলিশ সমাজে আছে। নইলে এমনও পুলিশ আছে যে ওর কাছে থেকে টাকা নিতো। ওর ঘৃণা জন্মে গিয়েছিল পুলিশদের প্রতি। কিন্তু আজ সে বুঝলো সব পুলিশ খারাপ হয়না।
কিরে ছোকড়া তোর নাম কিরে?
লক্ষণ। স্যার।
আচ্ছা বেশ। তোর কি অনেক তেজ ?
হা হা স্যার তেজ মানে। ও যে কি হবে বড় হয়ে।
তাই নাকি? যাক দেখা যাবে ভবিষ্যতে। যা এখন। পড়াশুনা কর। বড় হ।

স্যার আমি ওকে সেই অনাথ আশ্রমেই রাখবো যেখানে আমি বড় হয়েছি। সেখানে ও বন্ধু পাবে। পড়াশুনার সুযোগ পাবে। আমার সাথে রাখলে তো কিছু শিখতে পারবে না।
এটা তুমি ভুল বললে রাজ। তোমার সাথে থাকলেও অনেক কিছু শিখতে পারবে ও। তবে যেটা এখন তুমি ভালো বোঝ করো।
ওকে স্যার। আমি এবার একটু ওকে নিয়ে আশ্রমের দিকে যাই।
ঠিক আছে যাও।
রাজ এরপর লক্ষণকে নিয়ে আশ্রয়ে যায়। তার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা সেখানেই করে।
আজ বৃষ্টি হচ্ছে। পদ্মিনী ওর রুমে জানাল দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছিল। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে সে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে! ওর মন খুব চাইছিল এ বৃষ্টিতে ভিজতে। কিন্তু, শীতকাল এখনও যায়নি। তাই সে এ সুন্দর ইচ্ছাটিকে দমিয়ে রাখলো। গ্রীষ্মকালে অবশ্য পদ্মিনী নিজেকে আর আটকায় না! সে মন ভরে বৃষ্টিতে ভিজে নেয়। তবে ভিজতে না পারলেও বৃষ্টির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দু গুলো ওর গালে পড়ছিল। ওর মুখে আনন্দের ঝিলিক লক্ষ্য করার মতো!

হঠাত পদ্মিনী হারিয়ে যায় মোহিতের বাসার সেসব মূহুর্তগুলিতে। মোহিত প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে তাকে এত বড় বিপদে ফেললেও নিজের ভুল বুঝতে পেরে তাকে আশ্রয় দিয়েছিল। তার সাথে সবসময় সুন্দর ব্যবহার করে গেছে। তার নিরাপত্তার জন্য সে সবসময় যত্নবান ছিল। তার মধ্যে সে সবসময় এক আন্তরিকতা দেখতে পেতো।
এরপর রাজের কথা মনে পড়ে। ছেলেটা ছ্যাচড়ামি করলেও আসলে খুব ভালো। হয়তো সে মনে মনে পদ্মিনীকে খুব সম্মান করে। হয়তো ভালোও বাসে! আচ্ছা! সেও কি রাজকে ভালোবাসে? তার কথা বার বার মনে হয় কেন? এ কয়টা দিন বাসায় ফেরার পর সে অনেকবার রাজকে মনে করেছে, তার কথাগুলো মনে করেছে। তার কথায় মনে হত সে ওকে খুব শ্রদ্ধা করে। সবসময় বলত সে সিরিয়াল কিলারকে ধরবেই। তার কথায় সে মনে মনে সাহস পেতো। বিশেষ করে পুলিশে জয়েন করে কেইসের দায়িত্ব নিয়ে নেবার পর এসব কথা যখন সে বলতো তখন তার উপর আস্থাটা বেড়ে যায়। আর সেদিন যখন সিরিয়াল কিলার পাথর ছুড়ে ওর মাথা ফাটালো, তখন কত যত্ন করে রাজ তার মাথায় ব্যন্ডেজ করে দিল। আর আজ সে বাসায় ফিরতে পেরেছ তাও তো রাজের কারণেই। সেদিন রাতে যদি এএসপি শালিনীর কাছে সাহস করে তাকে না নিয়ে যেতো আর তাকে কনভিন্স না করতো তবে হয়তো আজও তার বাসায় ফেরা হতো না! সেখানেই থাকতে হতো। যদিও সেখানে থাকতে হয়তো ওর কষ্ট তেমন হচ্ছিল না। কিন্তু, সে মোহিত ও রাজের উপর একটা বড় দায়িত্ব হয়ে পড়েছিল।
একেতো মোহিত বেকার ছিল। তার উপর বেশ কিছু দিন তার বাসায় আশ্রিতা হয়ে থেকেও মোহিতের এই রকম আর্থিক অবস্থায়ও তিন বেলা খেয়ে পড়ে চলেছে, তার জন্য নতুন জামা কাপড়ের ব্যবস্থাও করেছে। এত দায়িত্ব কে নিতো? অন্য কেউ হলে হয়তো সেদিন ঘটনার রাতে ওকে ভয় দেখিয়ে বিপদে ফেলে রেখে চলে যেতো, অথবা বাসায় নিয়ে ব্ল্যকমেইল করে ওকে রাত -দিন ধর্ষণ করতো! সে না পারতো এরেস্ট হবার ভয়ে নিজের বাড়ি ফিরে যেতে আর না পারতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে! রাস্তায় ঘুরলে তো তার জায়গা হতো পতিতালয়ে! কত হতভাগ্য মেয়েরই তো ঠিকানা হয় অন্ধকার গলিতে! আর তখন পদ্মিনীর জন্য মৃত্যু ছাড়া কোন গতি থাকতো না! পদ্মিনীর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে! অথচ মোহিত আর রাজের মতো এমন নারীপিপাসু দুজন শক্ত সামর্থ্য পুরুষ দিনভর তার পাশে থাকলেও একটি বারও তাদের চোখে কোন কামনার আগুন টের পায়নি!
প্রথম প্রথম তো পদ্মিনী খুব সতর্ক থাকতো। পরে বুঝতে পারে এ দুজন তাকে কক্ষণও ক্ষতি করবে না। বরং তারা তার মঙ্গলই কামনা করে। এ ঘটনাটা না ঘটলে হয়তো কিছু ভালো মানুষের সাথে জীবনে সে পরিচিত হতে পারতো না। মোহিত একা একা কষ্টে জীবন যাবন করছিল। তাকে চাকুরীচ্যুত করিয়ে দেবার পর যে তার জীবন যে দুর্বিসহ হয়ে পড়েছিল পদ্মিনী তা কখনও জানতেই পারতো না যদি এ ঘটনাটা না ঘটতো! পদ্মিণীর ভিতরে হঠাৎ অপরাধবোধ কাজ করে। এমন একটা ভালো মানুষকে এমন কষ্টে সে ফেলে দিয়েছে কোন কিছু না ভেবেই!
আর রাজ, সেও তো একাকী জীবন যাপন করে চলেছে। বাবা- মা নেই। এজন্য হয়তো বখে গেছে। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেও তার মন মানসিকতাটা নষ্ট হয়ে যায়নি। পদ্মিণীর জন্য কত ব্যতিব্যস্ত হয়ে থাকতো ছেলেটা! দুজন অনাথ লোকের সহচার্যে থেকে প্রকৃতপক্ষে ও জীবনের অন্যান্য দিকগুলো বুঝতে পেরেছে। নাগমা মেয়েটাও খুব ভালো। হয়তো আজে বাজে কথা বলে, খোঁচে মেরে কথাবার্তা বলে কিন্তু তার মনটাও খুব ভালো। খুব সরল। হয়তো বয়সের দোষে সে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারে না। কিন্তু ও খুব হেল্প করেছে এ কয়দিন তাকে। দুজন পুরুষের মাঝে সে নিজেকে যখন সে ইনসিকিউর ফিল করতে থাকে তখন নাগমা আসার পর একটু স্বস্তি পায় সে। যদিও সে নাগমাকে অনেক কিছু বলেছে। কিন্তু মন থেকে তাকে পছন্দ করে পদ্মিনী। নাগমার বোনটাও খুব ভালো। খুব মিশুক। এখনকার উগ্র মেয়েদের মতো না। দিদি বলে তাকে কত কথা শেয়ার করেছে। আর সে খুব পজিটিভ মাইন্ডের। তার বোন নাগমার চেয়ে এদিক থেকে সে বেটার।
আর একজনের কথা খুব শ্রদ্ধা ভরে পদ্মিনী খুব স্মরণ করে। তিনি হলেন এএসপি শালিনী। তার চেহারা, মেজাজ আর পদবী দেখে বোঝা যায় না তার ভিতরটা। কিন্তু তার ভিতরটা খুব সুন্দর, খুব নরম মন। তার দয়ার জন্য আজ সে বাবা- মার কাছে ফিরতে পেরেছে। নইলে বাবার যেভাবে প্রেশার হাই ছিল হতে পারে বাবা অচিরেই স্ট্রোক করতো! আর এটা হলে সে নিজেকে কক্ষণও ক্ষমা করতে পারতো না! মাও অনেকটা মুষরে পড়েছিল! ওনার হয়তো কিছু একটা হয়ে যেতো! ঈশ্বর রক্ষাকর্তা! আজ দুজন চিন্তামুক্ত। এখন বাবা চেষ্টা করছে এই কেইসটা থেকে তাকে কিভাবে সম্পূর্ণরূপে নিষ্কৃতি দেওয়া যায়।
যা হোক, মোহিতের সাথে সে না বুঝে যে অন্যায় করে ফেলেছে তার প্রায়শ্চিত্ত সে করবে। অফিসে ফিরেই বসকে বুঝিয়ে তাকে আবার চাকুরীতে বহাল করাবে। তার বিশ্বাস বস তার কথা রাখবেন। আর এবার মোহিতকে নিজে সে দায়িত্ব নিয়ে কাজ শেখাবে। অন্যদিকে মন না দিয়ে যাতে সে কাজে মন দেয় সেটা ওকে ভালো করে বুঝাবে। তার মেধাটা সে নষ্ট হতে দেবে না। ওর জীবনে শুধু স্থিতিশীলতার অভাব। ছন্নছাড়া জীবনটা গুছিয়ে নেবার পরামর্শ সে দিয়ে যাবে।
আর রাজ? রাজের কথা মনে হলেই তার মনে যেনো কেমন একটা অদ্ভূত অনুভূতি হয়! তাকে নিয়ে দেখা স্বপ্নটাতো অর্ধেক সত্য হয়েছিল। কিন্তু বাকিটা হয়নি। কিন্তু বাকিটুকুও যদি সত্যি হয়? আচ্ছা! রাজের সাথে কি সে নতুন ভাবে জীবন শুরু করতে পারবে? রাজ কি পারবে সকল আজে বাজে স্বভাব ও ভবঘুরে জীবন বাদ দিয়ে তাকে নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে? পদ্মিণী যে সুন্দর ভালোবাসায় ভরা জীবন সবসময় চেয়েছে তা কি সে রাজের হাত ধরে পাবে? রাজ কি হতে পারবে পদ্মিনীর অবলম্বন?
আচ্ছা এই যে কিছুদিন ধরে ও বাসায় ফিরেছে। একটি বারও তো রাজকে সে ফোন করলো না। মোহিতকেও না। উচিত ছিল ফোন করা। একটা সৌজন্যতাও তো আছে। তবে ফোন করেনি কারণ রাজকে যদি ফোন করতো তবে রাজ হয়তো ভাবতো পদ্মিণী তার প্রতি দুর্বল! আর পদ্মিণী এটা কোনভাবেই প্রকাশ করতে চায় না! আর মোহিতকে ফোন করেনি কারণ সে তার জীবন নিয়ে ব্যস্ত। মদ গিলতে চলে গেলে সেদিন রাতে। ফোন করেও তাকে পাওয়া গেলনা! আর পূজার পিছনে হ্যাংলার মতো লেগে আছে। এসব হ্যাংলামো দেখলে পদ্মিনীর গা জ্বালা করে। এজন্য আর মোহিতকেও ফোন করেনি।
[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top