[HIDE]
রাজ বাকি এক কদমও সামনে এসে মনিকার গাঁ ঘেষে দাঁড়ায়। বাইরে রিনিঝিনি বৃষ্টির শব্দের মূর্ছনা আর শীতলতা এক মাদকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে!
কি করছেন আপনি? দূরে সরুন। মনিকা রাজকে সরতে বলে নিজেই পিছিয়ে যায় আর দেয়ালের সাথে লেগে থমকে যায়।
রাজ কয়েকমুহূর্ত পর্যন্ত সিদ্ধান্তহীন হয়ে থাকে। তারপর কামনার স্ফুলিঙ্গ তাকে অগ্রসর হবার শক্তি দেয়! রাজকে আসতে দেখে মনিকা দেয়ালের সাথে আড়ষ্ট হয়ে যায়। রাজ ছুটে এসে মনিকার মাথার দু'পাশে হাত রেখে মনিকাকে আবদ্ধ করে বলে,
কি হল? আমার দিকে তাকাও মনিকা!
মনিকা চোখ নামিয়ে রাখে।
মনিকা! আমার দিকে তাকাও!
মনিকা রাজের দিকে তাকায়। আর বলে, আপনি এসব কি করছেন? আপনি চলে যান। না হলে আমি চিতকার করবো।
চিতকার করলে লোক জানাজানি হবে। এতে তোমার ক্ষতি হবে।
ক্ষতি যা হবার হয়ে গেছে। আমার আর কোন কিছুর পরোয়া নেই!
মনিকা! এভাবে বলছো কেন? তোমার কি ইচ্ছে নেই? রাজ মনিকার চোখে তাকিয়ে থাকে। সে জানে মিথ্যে বললেও মনের সত্যিকারের ভাবনাগুলো চোখে ভেসে আসে!
আপনি আমার সম্পর্কে ভুল ধারণা করছেন। আমি কয়েকদিন দিন- রাত শুধু ভেবেছি। আমার ভুলগুলো, আমার কমতিগুলো আমি বুঝতে পেরেছি। তাই আমি এখন থেকে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে চাই।
রাজ মনিকার চোখে একটা সরলতা দেখতে পায়। মুক্তির আকাঙ্খা আর অনুতাপ মিশ্রিত মনিকার চোখ দুটি রাজের দুর্বার কামনাকে ধীরে ধীরে শীতল করে দেয়!
রাজ সরে আসে। মনিকা তখনও দেয়ালের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখে। তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
রাজ মনিকার কাছে থেকে সরে এসে একটা টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারে বসে পড়ে । এ নারীকে বাহুডোরে বাঁধার মতো ক্ষমতা রাজের আর নেই। তার মনে পড়ে চৌহান তাকে বলেছিল পুলিশি চাকুরীতে অনেক নারীভোগের সুযোগ আছে! শুধু কৌশল জানতে হয়। হঠাত চৌহানের উপর ও রাগ হতে থাকে। আজ থেকে আর চৌহানের কুপরামর্শ আর সে কানে তুলবে না। পুলিশ হয়ে দায়িত্ব ফেলে তার এমন নারীপিপাসু হয়ে ওঠা তার পবিত্র দায়িত্বের শপথকে ধূলোয় মিশিয়ে দেয়। আর শুধু পুলিশ হলেই কেনো? একজন পুরুষ হবার যথেচ্ছা সুযোগ সে আগেও নিয়েছে যা তার উচিত হয়। আজ রাজ বুঝতে পারছে জোর করে সম্ভোগ হয়তো তৃপ্তিদায়ক হতে পারে কিন্তু হীন অমর্যাদাকর! একবার সে মনিকার দিকে তাকায়। মনিকা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে। তবে দেখতে না পেলেও রাজ বুঝতে পারলো মনিকা কাঁদছে! খুব মায়া লাগে মনিকার উপর। হয়তো তার চাওয়া পাওয়া কোন কমতি ছিল তাই সে হয়তো পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজ সে ফিরে আসতে চায়। ভালো থাকতে চায়। তাকে না হয় সুযোগ করে দেই। মনিকার জন্য তার হৃদয়ে শ্রদ্ধা জন্মে।
রাজ উঠে দাঁড়ায়। মনিকা মুখ ঘুরিয়ে রাজের দিকে তাকায়। বিদ্যুতের ঝলকানি রাজের উপর পরে তাকে অন্যরকম লাগছে। মনিকা ধরে নেয় এবার প্রলয় ঘটে যাবে! কিন্তু তার আশংকাকে মিথ্যে করে দিয়ে রাজ বলে
আমি চলে যাচ্ছি। সময়, পরিস্থিতি আর চরিত্রের দোষে খুব বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। সম্ভব হলে আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি চেষ্টা করবো আজকের তদন্ত রিপোর্ট আপনার ফেভারে লিখতে। এতে আপনাকে হয়তো কোর্টে নির্দোষ হতে সহায়তা করবে। আসি।
রাজ অন্য আরেকটি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে। বৃষ্টি আরও বাড়ছে। বোধহয় কমবে না সহসা।
মনিকা স্তম্ভিত হয়ে পড়ে রাজের কথা শুনে। রাজের কথা তার বিশ্বাস হয় না! তার এটাও বিশ্বাস হয় না এমনও পুরুষ হয়!
রাজ দরজার কাছে চলে যায়। মনিকা এবার এগিয়ে আসে। রাজ দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে গিয়ে রাজ হেসে বলে, ক্ষমা করবেন তো। নইলে মনটা অশান্ত থাকবে।
ক্ষমা করেছি। মনিকার চোখে শ্রদ্ধা আর আনন্দের ঝিলিক।
রাজের চেহারায় প্রশান্তি ফুটে ওঠে।
আমি আর আপনার হাজবেন্ডের সাথে কথা বলবো না। প্রয়োজন নেই তার। আমার কার্ডটা রেখে দিন। যদি কখনও প্রয়োজন পড়ে আমাকে ডাকবেন। আসি। ভালো থাকবেন।
বৃষ্টির মধ্যে না যেতেন।
না। যেতেই হবে। এ বৃষ্টিতে ভেজা আমার দরকার।
মনিকা রাজের অদ্ভূত উত্তরে অবাক হয়ে যায়। সে একদৃষ্টিতে রাজের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাজ লিফট রেখে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়। মনিকা বুঝতে পারে কিছু পুরুষকেও বোঝা মুশকিল! তারা আনপ্রেডিক্টেবল!
বিল্ডিং এর বাইরে এসে রাজ দেখে প্রকৃতির কান্না আরও বেড়েছে। ধরিত্রি মাতা ভিজে গেছে। গাছপালাগুলো বেশ আনন্দিত বহুদিন পর তারা ধুয়ে মুছে ফেলবে নগরীর যত ধূল আর অপরাধের কালিমার স্বাক্ষ্য!
এবার রাজের ভেজার পালা। সে কভারে রাখা ফোনটাকে অধিক সুরক্ষার জন্য রুমালে জড়িয়ে পকেটে রেখে হাঁটতে শুরু করে। হেঁটেই যেতে থাকে গলি পেরিয়ে, বড় রাস্তা পেরিয়ে ধেরাধুনের রাজপথে! লোকজন আর যানবাহন নেই তেমন একটা। পথচারীরা দেখে, দোকানীরা দেখে আনমনে হেঁটে চলেছে এক সুদর্শন যুবক। তারা ভাবে সে হয়তো কিছু হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু রাজ জানে সে আজ পেয়েছে। একজন মানুষের শ্রদ্ধা আর কিছু শিক্ষা। নিজেকে আরেকটু ভালোভাবে জানতেও পেরেছে আজ। আকাশে বিদ্যুতের ঘনঘটা। বাতাসে শীতলতা বয়ে আনে শরীরে। জ্বর জ্বর লাগতে শুরু করে। হঠাত মনে পড়ে পদ্মিনীর কথা। আর তো যোগাযোগ হলো না। কি করছে সে এখন? বৃষ্টি তো খুব ভালো মেয়েদের। হয়তো তারও খুব ভালো লাগে। জিজ্ঞাসা করা হয়নি। আসলে অনেক কিছুই জানা হয়নি তার সম্পর্কে। এতগুলো দিন থাকলো তাদের কাছে। কত সময় সুযোগ ছিল। আচ্ছা? তাকেই বা কতটুকু সে চিনেছে? কতটুকু জানে তার সম্পর্কে? তার অতীত বর্তমান সম্পর্কে? জ্বর জ্বর লাগাটা আরেকটু বাড়ে। কিন্তু এসবকে পাত্তা না দিয়ে রাজ এগিয়ে যেতে থাকে দৃষ্টি মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত!
[/HIDE]
রাজ বাকি এক কদমও সামনে এসে মনিকার গাঁ ঘেষে দাঁড়ায়। বাইরে রিনিঝিনি বৃষ্টির শব্দের মূর্ছনা আর শীতলতা এক মাদকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে!
কি করছেন আপনি? দূরে সরুন। মনিকা রাজকে সরতে বলে নিজেই পিছিয়ে যায় আর দেয়ালের সাথে লেগে থমকে যায়।
রাজ কয়েকমুহূর্ত পর্যন্ত সিদ্ধান্তহীন হয়ে থাকে। তারপর কামনার স্ফুলিঙ্গ তাকে অগ্রসর হবার শক্তি দেয়! রাজকে আসতে দেখে মনিকা দেয়ালের সাথে আড়ষ্ট হয়ে যায়। রাজ ছুটে এসে মনিকার মাথার দু'পাশে হাত রেখে মনিকাকে আবদ্ধ করে বলে,
কি হল? আমার দিকে তাকাও মনিকা!
মনিকা চোখ নামিয়ে রাখে।
মনিকা! আমার দিকে তাকাও!
মনিকা রাজের দিকে তাকায়। আর বলে, আপনি এসব কি করছেন? আপনি চলে যান। না হলে আমি চিতকার করবো।
চিতকার করলে লোক জানাজানি হবে। এতে তোমার ক্ষতি হবে।
ক্ষতি যা হবার হয়ে গেছে। আমার আর কোন কিছুর পরোয়া নেই!
মনিকা! এভাবে বলছো কেন? তোমার কি ইচ্ছে নেই? রাজ মনিকার চোখে তাকিয়ে থাকে। সে জানে মিথ্যে বললেও মনের সত্যিকারের ভাবনাগুলো চোখে ভেসে আসে!
আপনি আমার সম্পর্কে ভুল ধারণা করছেন। আমি কয়েকদিন দিন- রাত শুধু ভেবেছি। আমার ভুলগুলো, আমার কমতিগুলো আমি বুঝতে পেরেছি। তাই আমি এখন থেকে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে চাই।
রাজ মনিকার চোখে একটা সরলতা দেখতে পায়। মুক্তির আকাঙ্খা আর অনুতাপ মিশ্রিত মনিকার চোখ দুটি রাজের দুর্বার কামনাকে ধীরে ধীরে শীতল করে দেয়!
রাজ সরে আসে। মনিকা তখনও দেয়ালের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখে। তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
রাজ মনিকার কাছে থেকে সরে এসে একটা টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারে বসে পড়ে । এ নারীকে বাহুডোরে বাঁধার মতো ক্ষমতা রাজের আর নেই। তার মনে পড়ে চৌহান তাকে বলেছিল পুলিশি চাকুরীতে অনেক নারীভোগের সুযোগ আছে! শুধু কৌশল জানতে হয়। হঠাত চৌহানের উপর ও রাগ হতে থাকে। আজ থেকে আর চৌহানের কুপরামর্শ আর সে কানে তুলবে না। পুলিশ হয়ে দায়িত্ব ফেলে তার এমন নারীপিপাসু হয়ে ওঠা তার পবিত্র দায়িত্বের শপথকে ধূলোয় মিশিয়ে দেয়। আর শুধু পুলিশ হলেই কেনো? একজন পুরুষ হবার যথেচ্ছা সুযোগ সে আগেও নিয়েছে যা তার উচিত হয়। আজ রাজ বুঝতে পারছে জোর করে সম্ভোগ হয়তো তৃপ্তিদায়ক হতে পারে কিন্তু হীন অমর্যাদাকর! একবার সে মনিকার দিকে তাকায়। মনিকা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে। তবে দেখতে না পেলেও রাজ বুঝতে পারলো মনিকা কাঁদছে! খুব মায়া লাগে মনিকার উপর। হয়তো তার চাওয়া পাওয়া কোন কমতি ছিল তাই সে হয়তো পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজ সে ফিরে আসতে চায়। ভালো থাকতে চায়। তাকে না হয় সুযোগ করে দেই। মনিকার জন্য তার হৃদয়ে শ্রদ্ধা জন্মে।
রাজ উঠে দাঁড়ায়। মনিকা মুখ ঘুরিয়ে রাজের দিকে তাকায়। বিদ্যুতের ঝলকানি রাজের উপর পরে তাকে অন্যরকম লাগছে। মনিকা ধরে নেয় এবার প্রলয় ঘটে যাবে! কিন্তু তার আশংকাকে মিথ্যে করে দিয়ে রাজ বলে
আমি চলে যাচ্ছি। সময়, পরিস্থিতি আর চরিত্রের দোষে খুব বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। সম্ভব হলে আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি চেষ্টা করবো আজকের তদন্ত রিপোর্ট আপনার ফেভারে লিখতে। এতে আপনাকে হয়তো কোর্টে নির্দোষ হতে সহায়তা করবে। আসি।
রাজ অন্য আরেকটি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে। বৃষ্টি আরও বাড়ছে। বোধহয় কমবে না সহসা।
মনিকা স্তম্ভিত হয়ে পড়ে রাজের কথা শুনে। রাজের কথা তার বিশ্বাস হয় না! তার এটাও বিশ্বাস হয় না এমনও পুরুষ হয়!
রাজ দরজার কাছে চলে যায়। মনিকা এবার এগিয়ে আসে। রাজ দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে গিয়ে রাজ হেসে বলে, ক্ষমা করবেন তো। নইলে মনটা অশান্ত থাকবে।
ক্ষমা করেছি। মনিকার চোখে শ্রদ্ধা আর আনন্দের ঝিলিক।
রাজের চেহারায় প্রশান্তি ফুটে ওঠে।
আমি আর আপনার হাজবেন্ডের সাথে কথা বলবো না। প্রয়োজন নেই তার। আমার কার্ডটা রেখে দিন। যদি কখনও প্রয়োজন পড়ে আমাকে ডাকবেন। আসি। ভালো থাকবেন।
বৃষ্টির মধ্যে না যেতেন।
না। যেতেই হবে। এ বৃষ্টিতে ভেজা আমার দরকার।
মনিকা রাজের অদ্ভূত উত্তরে অবাক হয়ে যায়। সে একদৃষ্টিতে রাজের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাজ লিফট রেখে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়। মনিকা বুঝতে পারে কিছু পুরুষকেও বোঝা মুশকিল! তারা আনপ্রেডিক্টেবল!
বিল্ডিং এর বাইরে এসে রাজ দেখে প্রকৃতির কান্না আরও বেড়েছে। ধরিত্রি মাতা ভিজে গেছে। গাছপালাগুলো বেশ আনন্দিত বহুদিন পর তারা ধুয়ে মুছে ফেলবে নগরীর যত ধূল আর অপরাধের কালিমার স্বাক্ষ্য!
এবার রাজের ভেজার পালা। সে কভারে রাখা ফোনটাকে অধিক সুরক্ষার জন্য রুমালে জড়িয়ে পকেটে রেখে হাঁটতে শুরু করে। হেঁটেই যেতে থাকে গলি পেরিয়ে, বড় রাস্তা পেরিয়ে ধেরাধুনের রাজপথে! লোকজন আর যানবাহন নেই তেমন একটা। পথচারীরা দেখে, দোকানীরা দেখে আনমনে হেঁটে চলেছে এক সুদর্শন যুবক। তারা ভাবে সে হয়তো কিছু হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু রাজ জানে সে আজ পেয়েছে। একজন মানুষের শ্রদ্ধা আর কিছু শিক্ষা। নিজেকে আরেকটু ভালোভাবে জানতেও পেরেছে আজ। আকাশে বিদ্যুতের ঘনঘটা। বাতাসে শীতলতা বয়ে আনে শরীরে। জ্বর জ্বর লাগতে শুরু করে। হঠাত মনে পড়ে পদ্মিনীর কথা। আর তো যোগাযোগ হলো না। কি করছে সে এখন? বৃষ্টি তো খুব ভালো মেয়েদের। হয়তো তারও খুব ভালো লাগে। জিজ্ঞাসা করা হয়নি। আসলে অনেক কিছুই জানা হয়নি তার সম্পর্কে। এতগুলো দিন থাকলো তাদের কাছে। কত সময় সুযোগ ছিল। আচ্ছা? তাকেই বা কতটুকু সে চিনেছে? কতটুকু জানে তার সম্পর্কে? তার অতীত বর্তমান সম্পর্কে? জ্বর জ্বর লাগাটা আরেকটু বাড়ে। কিন্তু এসবকে পাত্তা না দিয়ে রাজ এগিয়ে যেতে থাকে দৃষ্টি মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত!
[/HIDE]