What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

এক রাতের কথা (পুরষ্কার প্রাপ্ত-ইরোটিক সাইকো থ্রিলার) (1 Viewer)

[HIDE]

চেকপোস্টে পাহাড়া বসানো হয়েছে। তাই অপরাধিরা শহরের বাইরে যেতে পারবে না। কিন্তু এখনও ওদের গাড়ির দেখতে পাচ্ছি না। শালিনী চিন্তিত হয়ে বলে।
ম্যাডাম, আমরা এখনও অনেক পেছনে তাই গাড়ি দেখা যাচ্ছে না। রাজ বলে।
হতে পারে। শালিনী শান্ত গলায় বলে। তবে সবার মধ্যেই একটা উত্তেজনা কাজ করছে।

এই রাস্তাটায় খুব একটা ট্রাফিক নেই। একটু পর পর দুই একটা বড় ট্রাক আর বাস দেখা যায়। গাড়ি চলতে থাকে।

রাজ আমি ধেরাধুনের কিছু কেইস স্টাডি করেছি। তাতে পড়েছি যে, এই রাস্তা দিয়ে রাতে বাস বা ট্রাক একেরারেই চলাচল করে না।
জ্বী ম্যাডাম। এখানে নাকি জঙ্গল থেকে বের হয়ে রাতে ডাকাতেরা বাস বা ট্রাকের উপর হামলা করতো আর ছিনতাই করতো। কিছু খুনের ঘটনাও আছে। তাই ড্রাইভাররা এই রাস্তাটায় দিনের বেলা ছাড়া আসে না।
হুম। আমি পড়েছি সেটা।
মোহিত মনে মনে ভাবে তার জঙ্গলে এডভেঞ্চার করতে আসাটা সত্যিই খুব ঝুকিপূর্ণ ছিল। লাইফ রিস্ক ছিল। নেক্সট টাইম আর কখনও আগপিছু না জেনে শুনে কোথাও এসব করতে আসবে না।
আমিও কিছু কেইস স্টাডি কিছু করেছি। রাজ বলে।
হুম গুড।….. রাজ এটা তো চৌরাস্তা। কোন দিকে এখন?
ম্যাডাম বুঝতে পারছি না। আমি এই রাস্তায় প্রথমবার এসেছি। গুরু! তুমি কিছু জানো?
রাজ আমি একবার এখান দিয়ে গিয়েছি। সামনে গেলে আরেকটা বড় রাস্তা আসে। যেটা হাইওয়ের দিকে গিয়ে মিলে যায়। আর ডানে গেলে একটা মফস্বল এরিয়া আসে। আর বামে নাকি কিছু কোল্ড স্টেরেজ আর বড় বড় রড ফ্যাক্টরী আছে।
আই সি! শালিনী গম্ভীর হয়ে বলে।
মোহিতের দেয়া তথ্য রাজ গুগল ম্যাপের সাথে মিলিয়ে নেয়। মোহিত যা যা বলেছে তা মিলে গেছে।

ম্যাডাম উনি যা বললেনন তা মিলে গেছে। কিন্তু ম্যাডাম, এই তিন দিকের কোনটিতে তাদের যাবার সম্ভাবনা বেশি?

আমার মনে হয় রাজ, ওরা বামে রড ফ্যাক্টরীর দিকে যাবে না। কারণ সেগুলো সংরক্ষিত এলাকা। আর বরাবর গেলে হাইওয়ে আসে। এখন এই আহত অবস্থায় ওরা হাইওয়ে দিয়ে এত লম্বা রাস্তা পেরিয়ে দূরের কোন হসপিটালে যাবে না। তাই হতে পারে ওরা ডানে মফস্বলের দিকে গেছে।

হতে পারে ম্যাডাম! তাহলে ডানে নিবো?

শালিনীর কথা বলার আগে মোহিত বলে, তুই ডানে টার্ন নে।

শালিনী অবাক হয়। মোহিত ওর তোয়ক্কা না করে রাজকে হুকুম দিচ্ছে। এতে তার ইগোতে লাগে। তবে সে কিছু বলে না কারণ এটা ইগো দেখানোর সময় নয়। কারণ মোহিত জায়গাটা তাদের দুজনের চাইতে বেশি চেনে। রাজ গাড়ি ডানে টার্ন নেয়।

আচ্ছা মোহিত! আপনি কি বুঝতে পারলেন? আপনার কি মনে হয় ওরা ওখানে কেনো যাবে?

দেখুন ম্যাডাম! মফস্বল এলাকায় পরিত্যক্ত বাড়ি থাকে, ছোট খাটো জঙ্গল থাকে। অনেক নিরিবিলি এলাকা থাকে যেখানে মানুষের বসতি খুব একটা থাকে না। অপরাধিরা সেসব জায়গা গুলিকে টার্গেট করে নিজেদের আস্তানা গেড়ে নেয়। পুলিশ স্টেশনও সেখান থেকে দূরে থাকে।

রাজ আর শালিনী মনোযোগ দিয়ে মোহিতের কথাগুলো শোনে। দুজনেই তার কথায় যুক্তি খুঁজে পায়।

শালিনী বলে, আচ্ছা ওখানে কি কোন পাহাড়ী এলাকা আছে?
জ্বী সাথেই একটা সরু রাস্তা দিয়ে পাহাড়ী এলাকায় যাওয়া যায়। তবে সেটা অনেক দূর।

রাজ লেটস গো! শালিনী নির্দেশ দেয়।
গুরু তুমি এত কিছু জানো কি করে?

আমি যখন রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে সান ফার্মায় কাজ করতাম তখন সেখানকার একটা ছেলে, আমাদের জুনিয়র হিসেবে কাজ করতো। এসব কিছু ওর মুখেই শোনা।

আচ্ছা! তার কথাটা আজ বেশ কাজে দিবে। রাজ বলে।

গাড়ি মফস্বলের দিকে চলতে থাকে। শালিনী বুঝতে পারে মোহিতের কথা অনুযায়ী গেলে ওদের পাওয়া সম্ভব। পাহাড়ী এলাকা অপরাধিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে একটা ভালো জায়গা।
গাড়ি যত চলতে থাকে রাস্তায় আশেপাশে মানুষ ও গাড়ি চলাচলের সংখ্যা তত কমতে থাকে। এই এলাকাটি ততটা উন্নত নয়।

শালিনী সামনের ভিউ মিররের দিকে তাকায়। দেখে মোহিত অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। হঠাত ওর সাথে মোহিতের চোখাচোখি হয়। মোহিত দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে। কিন্তু আবারও সে তাকায়। শালিনী তখনও তার দিকে দেখছে। অভিজ্ঞ মোহিত বুঝতে পারে শালিনী তাকে পড়ার চেষ্টা করছে।

আর শালিনী মনে মনে ভাবে লোকটার বেশ হ্যান্ডসাম। বেশ চার্মিং! ফিটনেসও ভালো, একটা ক্রিসমা আছে। অনায়েসেই যে কোন টিভি সিরিয়ালে কাজ করতে পারে। তবে স্বভাবটা বেশ ঢিলা! তবে যার যেটা শোভা পায় সে কি সেটা করে? তবে, তাকে সঙ্গে আনাটা ভুল হয়নি। এখন দেখা যাক সে কতটুকু তাদের হেল্প করতে পারে।

গাড়ি চলতে থাকে। শালিনী ভেবেছিল রাস্তায় কোন না কোন ক্লু পাবে। কিন্তু দৃশ্যত কোন ক্লু পেলো না। একটা পানের দোকানের সামনে শালিনী জিপ পার্ক করতে বলে। রাজ জিজ্ঞেস করোতো, এ রাস্তা দিয়ে কোন জিপ গেছে কি না!

এই কাকা!
পানওয়ালা তাকিয়ে দেখে পুলিশের জিপ সামনে।
জি সাব?
কাকা এখান দিয়ে কোন জিপকে যেতে দেখেছেন?
হ্যা সাব! একটা জিপ, খুব জোরে আমার দোকানের সামনে দিয়া গ্যাছে। আর রাস্তার মধ্যে পানি ছিল। যে জোরে গ্যাছে আরেকটু হইলে আমার পান আর আমারে শুদ্ধো ভিজায়ে দিতো! শালা! সাসুর কা নাতি! কিড়ে পারে উনকে উপার!

কোন আহত লোক দেখেছন? মোহিত বলে।
আহত লোক? হ্যা হ্যা, জিপের ভিতর একটা লোককে দেখলাম পায়ে কাপড় প্যাচানো, পায়ে ধরে বসে আছে। আর একজনকে দেখলাম হাতে পট্টি ধরে আছে। মনে হয় কোন জখম পাইছে! কোন সমস্যা সাব?
সমস্যা না হলে কি আর আমরা পেছনে পেছনে যাই? রাজ বলে।
শুকরিয়া কাকা। শালিনী বলে।

রাজ আমরা ঠিকমতই এগুচ্ছি। উনি যে বর্ণনা দিলেন তাতে নিশ্চিত ওরাই হবে। শালিনী বলে।
দেখলেন তো ম্যাডাম! আমার অনুমান ভুল হয় না। আমাকে তো আপনি সঙ্গে নিতে চাননি। আমি বলেছিলাম না আমাকে আপনাদের প্রয়োজন হবে। এবার বুঝতে পেরেছেন তো? মোহিত গম্ভিরভাবে বলে।
হ্যা ম্যাডাম! আমি বলেছিলাম না উনি আমাদের যথেষ্ট হেল্প করতে পারবেন। দেখলেন তো! আমার গুরু! অসাম বাডি!

শালিনী রাজের দিকে তাকায়। তার মধ্যে এক উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে।
এরপর শালিনী সামনের ভিউ মিররের দিকে তাকায়। দেখতে পায় মোহিত তাকিয়ে আছে। মোহিতের চোখে এক অন্যরকম বিজয়ের ঝিলিক। একটা দৃঢ়তা তার চোখ মুখে দারুণভাবে লক্ষ্যণীয়। শালিনী যে মোহিতকে দেখছে, মোহিত সেটা ধরে ফেলে! আবারও তাদের চোখাচোখি হয়। শালিনী মুচকী হাসে।

শালিনী বুঝতে পারে তাদের এই কেইসটা সমাধানের পথে মোহিত আরও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হতে চলেছে। একবার যখন সে জোড় করে কেইসের সাথে জুড়েই গেছে, সে আর কোন কথা শুনবে না, কেইসটা থেকে সরবেও না। সরবার মতো লোক যে মোহিত নয় তা শালিনী ভালোভাবেই বুঝতে পারে।
[/HIDE]
 
[HIDE]

আত্নবিশ্বাসী পুরুষ সব মেয়ের পছন্দ। শালিনী মোহিতের কুলনেসে মুগ্ধ হয়। তবে হঠাত অশালীন অবস্থায় মোহিতকে ধরে ফেলার কথাটা তার মনে পড়ে যায়! শালিনী বুঝতে পারে না কেনো পৃথিবীর সব গোয়েন্দারা নারী পিপাসু হয়? তাদের চাওয়াটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেনো যেনো খুব নোংরামিতে ভরপুর থাকে!

এক ইংরেজী ক্রাইম থ্রিলারে সে পড়েছিল, যে পুরুষ যত বেশি রহস্য পছন্দ করে সে তত বেশি যৌন আবেদন রাখে! হতে পারে কথাটা ঠিক! উপন্যাসের লেখক নিজেও একজন তুখোড় গোয়েন্দা ছিলেন আর তার নিজের ব্যক্তিগত অনেক উত্তেজক ঘটনা তিনি উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। শালিনী তার নিজের জীবনে যাকে স্বচক্ষে দেখেছে সেও নেহাত কম নয়!

তবে যাই হোক, মোহিতের কোন আবেদন তার উপর কাজ করবে না! শালিনী তীক্ষ্ণ চোখে মোহিতকে দেখতে থাকে। মোহিত, শালিনীর এই এক্সপ্রেশনে একটা আকর্ষণ অনুভব করে। পরক্ষণেই বুঝতে পারে সব জায়গায়, সব পরিস্থিতিতে, সব কিছু সবার সাথে প্রয়োগ করা যায় না। তাই সে, পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিলের দিকে তাকিয়ে থাকে। বিলটা বেশ বড়! সোজা হয়ে বয়ে চলেছে। সবুজের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া বিলের ওপারটা দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে রাজ কিন্তু বুঝতে পারে তারা দুজন- দুজনকে বেশ ভালো করে দেখছে! কিন্তু সে জানে গুরু মোহিতের এখানে কোন সুযোগ নেই! শালিনী ম্যাডাম, যে - সে বস্তু গিয়ে গড়া মহিলা নন! রাজ বাম গালে মুচকী হেসে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়। আজ ক্রিমিনালদের ধরতে পারলে কেইসটা বহুদিন পর আলোর মুখ দেখবে। বাকি দুজনও মিশনের দিকে ফোকাস করে। মফস্বলের নিরিবিলি রাস্তার নির্জনতা মাড়িয়ে পুলিশের জিপ সুষমত্বরণে এগুতে থাকে।

গাড়ি চলতে থাকে আর তিনজন কেসের বিষয় নিয়ে ভাবতে থাকে। আরও কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পরে আবারও চৌরাস্তা আসে।
গুরু! এবার কোন দিকে নেবো?
আমার সঠিক জানা নেই। তবে এই তিন দিকে আবাসিক এলাকা থাকবে এটা আমি জানি।
গুগল ম্যাপ দেখো রাজ।
জ্বী ম্যাডাম।
রাজ ওর ফোনে ম্যাপ বের করে। কিন্তু নেট কানেক্ট হচ্ছে না। কারণ নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি কম।
ম্যাডাম আমার নেট কানেকশন স্লো।
ওয়েট করো। দেখো আসে কি না।
কয়েকমিনিট কেটে যায় কিন্তু ইন্টারনেট কানেক্টেড হয় না।
দাঁড়াও আমারটাতে দেখছি। ধ্যাত! আমারটাতেও ফুল নেটওয়ার্ক নেই। কানেকশন নিচ্ছে না। শালিনী বিরক্ত হয়ে বলে।
মোহিত তার ফোন বের করে। তার ফোনের গ্লাস প্রেটেক্টর ভেঙ্গে গেছে। তার উপর ব্যাটারী লো। বন্ধ হয়ে যাবে এমন অবস্থা। তারটাতেও ফুল নেটওয়ার্ক নেই।
আমারটাতেও নেই রে।
আশ্চর্য! প্রত্যেকের ফোনে নেটওয়ার্ক ডাউন। শালিনী বিরক্ত হয়।
আমরা এখন শহর থেকে দূরে মফস্বল এলাকার চৌরাস্তায় আছি। এখানে কোন অপারেটরই ফুল নেটওয়ার্ক কভারেজ থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। মোহিত বলে।
আই নো দ্যাট! শালিনী মুখ বাঁকা করে বলে।
তবে ম্যাডাম নেটওয়ার্ক এত কম থাকার কথা নয়।
কি করবে এখন যদি না থাকে?
রাজ চুপ করে যায়। তারপর বলে, এখন কি করবো ম্যাডাম?
চলো নেমে দেখি।
সবাই গাড়ি থেকে নেমে যায়।
শালিনী গাড়ি থেকে প্রথমে নামে আর আশপাশটা দেখতে থাকে। মোহিত নেমে রাস্তার মধ্যে টায়ারের ছাপ দেখার চেষ্টা করে।
কি দেখছো গুরু?
টায়ারের ছাপ দেখছি। এই রাস্তাটাতে প্রথম থেকেই দেখলাম জায়গায় জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে ছিল। রাস্তাটা মেরামত করা হয়না ঠিকমতো। মনে হয় লোকাল অথোরিটির তেমন মাথাব্যাথা নেই।
তুমি টায়ারের ছাপ দেখে কি অনুমান করছো?
রাজ দ্যাখ! তিনদিকের মধ্যে বরাবর আর ডানদিক, এই দুই দিকে গাড়ির টায়ারের বড় বড় দাগ আছে। তার মানে এই দুই দিকে বড় সাইজের গাড়ি চলেছে। কিন্তু দ্যাখ! এই বাম দিকে বড় গাড়ি যায় নি।
শালিনী তখনও মোবাইলটা হাতে নিয়ে আশপাশটা দেখছিল। সে ডান দিকে, অনেক দূরে পাহাড়ের টীলা দেখতে পায়।
কিন্তু গুরু! এখন বিষয় হল দু'দিকের কোনদিকে যাবো? রাজ বলে।
আমার মনে হয় ডান দিকে হবে না। মোহিত বলে।
শালিনী বলে, কেনো হবে না মিস্টার মোহিত?
কারণ ডানদিকে পাহাড়ের টীলা দেখতে পাচ্ছেন? হতে পারে সেখানে তারা আস্তানা গেড়েছে থাকতে পারে কিন্তু তাদের এখন চিকিৎসা দরকার। তাই তারা আস্তানায় না গিয়ে হাসপাতালে যাবে বলে মনে হয়। আর টীলার দিকে হাসপাতাল থাকার সম্ভাবনা কম। কারণ এটা মফস্বল, পাহাড়ী এলাকা নয়। অবশ্য পুরোটাই পাহাড়ী এলাকা হলে ভিন্ন কথা ছিল।

কিন্তু গুরু! ডানে টায়ারের দাগ দেখে মেনেনিলাম আর ডানে যেহেতু টীলা কিন্তু হাসপাতাল দরকার তাই সেখানে তাদের আস্তানায় তারা যায় নি। আর সামনে হয়তো হাসপাতাল আছে সেখানে গেছে। কিন্তু তোমার কথা অনুযায়ী তো বামে যদি আবাসিক এলাকা হয় তাহলে টায়ারের ছাপ তো অবশ্যই থাকার কথা কিন্তু নেই কেন?
রাজ! খেয়াল করে দেখ! ওখানে ছাপ আছে কিন্তু হয়তো ছোটো ছোটো অটোরিক্সা বা প্রাইভেট কার গেছে আর বেশি পরিমাণে যাওয়ায় চাকার ছাপ স্পষ্ট নয়, আর টায়ারের থিকনেস কম আর প্যাটার্ণও জিপের টায়ারের মতো নয়।

আর এখানে দেখ ডান দিকে আর সামনে বড় গাড়ীর চাকার ছাপ। জিপের চাকা অত ছোট নয়। ছাপ ভালো করে দ্যাখ! গাড়ির চাকার মতো প্যাটার্ণ নয়। ববং আরো চওড়া আর বড়। ডানে মনে হয় পাহাড়ী এলাকায় বড় মালবাহী গাড়ি যায়। হতে পারে গাছ কেটে তার পরিবহনের জন্যে। আর সামনে হয়তো রেগুলার বড় বড় গাড়ি যায়।

রাজ একটু ভেবে দেখে। সত্যিই প্যাটার্ণে পার্থক্য আছে।
আবার তুই দেখ বাম দিকে আর সামনে কিন্তু ঝোপঝাড় কম। কারণ হতে পারে সামনে হাসপাতাল। আর ওখান দিয়ে শহরের আরেকটা অংশ। তাই ঝোপঝাড় নেই। আবার বাম দিকে আবাসিক এলাকা হতে পারে তাই ওখানে গাছপালার ঘনত্ব কম। তাছাড়া বাম দিকে, অনেক দূরে দেখতে পাচ্ছিস? কয়েকটি উঁচু বিল্ডিং, নেটওয়ার্ক টাওয়ার আর একটা ব্রিজ দেখা যাচ্ছে? ওখানে জনবসতি বেশি তাই বিল্ডিং, ব্রিজ আর নেটওয়ার্ক টাওয়ার আছে। কিন্তু ডানদিকে দ্যাখ! গাছাপালার ঘনত্ব বেশি। বন বা পাহাড়ী এলাকার কাছাকাছি এরকম গাছপালার প্যাটার্ণ দেখা যায়। আর সামনে শুধু গাছের সারি।

শালিনী মোহিতের কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিল। সে যথেষ্ট ইমপ্রেসড হলো মোহিতের যুক্তিগুলি শুনে।
তাহলে ম্যাডাম আমরা কি সামনের দিকে এগুবো?
সামনেই চলো। তোমার গুরুর কথা কতখানি সঠিক দেখা যাক।
ম্যাডাম আমার গুরুর কথা সচরাচর ভুল হয় না!
গুড! তাহলে তো বেশ ভালো!
মোহিত, শালিনীর দিকে মুচকী হাসতে হাসতে গাড়ীতে ওঠে। গাড়ি আবার চলতে শুরু করে।
রাজ ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি চালাতে শুরু করলে দুই কিলোমিটার সামনে যাবার পর দুটো গাড়িকে আসতে দেখতে পাওয়া যায়। একটি Ramco ltd. এর সিমেন্টের গাড়ি আর একটা এম্বুলেন্স!
তিনজনই একে- অপরের দিকে দিকে তাকায়। সবাই বুঝতে পারে মোহিতের অনুমান সঠিক। কারণ সামনের দিক থেকে বিপরীত দিকে যেহেতু এম্বুলেন্স যাচ্ছে তাই সামনে হতে পারে হাসপাতাল আছে। মোহিত দেখলো এম্বুলেন্স খালি। এম্বুলেন্সের গায়ে লিখা Max Super Specialty Hospital Pvt. Ltd.
মনে হয় আমরা সঠিক পথে এগুচ্ছি রাজ! মোহিত বলে।
শালিনী মনে মনে ভাবে, যাক! একটা কাজের লোক পাওয়া গেলো। চৌহান সাহেব বা রাজ হলে এত সূক্ষ্ণভাবে চিন্তা করে সঠিক রাস্তাটা বের করতে পারতো না। তবে তার নিজেরও মনে হয়েছিল সামনের দিকেই হবে।
শালিনী এবার চৌহানকে ফোন করে।
হ্যালো মিস্টার চৌহান! কি আপটেড ওখানকার?
জ্বী ম্যাডাম! আমরা আরও কয়েকজন লোকবল নিয়ে জঙ্গল তল্লাশি করছি। তল্লাশির একপর্যায়ে দুজনকে দেখতে পেয়েছিলাম কিন্তু তাদের ধরা সম্ভব হয় নি। কারণ তারা পালাতে সক্ষম হয়েছে। তবে তাদের পিছু নিয়ে আমরা একটা আড্ডাখানা খুঁজে পাই যেখান থেকে বেআইনী অস্ত্র উদ্ধার করেছি আমরা। আর সেখানে আর্মসের সাথে একটা বড় নক্সা, ছোট টুকরো কাগজ, কিছু শুকনা খাবার, মদের বোতল আর কয়েকটি মুখোশ পেয়েছি।
মুখোশ? আই সি!
আপনারা জঙ্গলে তল্লাশী অব্যহত রাখুন। আর থানায় কে কে আছেন?
জ্বী সাব ইন্সক্টের বিজয় আর হাবিলদার কমলেশ আছে।
ঠিক আছে। তারা সেখানে ডিউটি করুক। আপনি আপনার ফোর্স নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে যান।
ওকে ম্যাডাম! আর আপনারা কোথায় আছেন?
আমরা রাজপুর রোড ক্রস করে বিজেপুর হয়ে সামনে এগিয়ে মালসীর দিকে চলে গেছি। যাই হোক, আর কিছু পেলে আমাকে ইনফর্ম করবেন।
রাজ আমি এখন নিশ্চিত বামে গেলে আবাসিক এলাকাই পড়তো। আর ওখানে অনেকগুলো হোটেল আর রিসোর্ট আছে। তাই ওখানে ওদের যাওয়া সম্ভাবনা খুব কম। মোহিত বলে।
[/HIDE]
 
[HIDE]

শালিনী এবার গুগল ম্যাপ দেখে। এবার নেট কানেক্টড হয়েছে। ম্যাপ লোড নিচ্ছে। তবে নেট স্লো। দেড় মিনিটের মধ্যে ম্যাপ লোড নেয় আর সেখানে সত্যিই দেখতে পায় ডানে hill, বামে residential area ছিল আর এখন সামনে Max Super Specialty Hospital. তবে হসপিটালের যে চাকচিক্য তাতে মনে হয় না ক্রিমিনালরা ওখানে যাবে।
রাজ! এ হসপিটালটা কিন্তু বেশ আধুনিক।
বলেন কি? মফস্বলে ভালো হসপিটাল? সচরাচর তো এমনটা দেখা যায় না। তবে হতে পারে সাথেই ইন্ড্রাস্ট্রীয়াল এরিয়া তাই হোমরা চোমড়া ধনীরা থাকে। তাদের বদান্যতাই হয়তো এই হসপিটাল! মোহিত বলে।
হুম হতে পারে। ভারত এখন অনেক এগুচ্ছে মেডিক্যাল ফিল্ডে। মফস্বলকে আর এখন বেকডেইটেড বলে মনে করা যায় না। তবে যাই হোক, আমাদের ক্রিমিনালরা মনে হয় না এত ভালো হসপিটালে যাবে। তারপরেও আমি গুগল ম্যাপ থেকে নাম্বারটা নিয়ে ফোন করে সিউর হয়ে নিচ্ছি।
হ্যা ম্যাডাম তাই করুন।
হ্যালো, আমি এএসপি শালিনী বলছি!
Good afternoon madam! How can I help you?
আপনাদের হসপিটালে আজকে সকাল থেকে এ পর্যন্ত কোন গুলিবিদ্ধ লোক ভর্তি হয়েছে?
Just a minute madam! Hmmm… aa.. No, madam! Anything wrong?
হুম। কয়েকজন অপরাধী আমাদের গুলিতে আহত হয়ে ঘটনাস্থল পালিয়েছে, আমাদের ধারণা তারা আশেপাশে কোন হসপিটালে ট্রিটমেন্টের জন্য যেতে পারে।
Oh!
যদি আপনাদের হসপিটালে এমন কোন পেশেন্ট ভর্তি হয় যার হাতে বা পায়ে গুলি লেগেছে তাহলে আমার এ নাম্বারে সাথে সাথে ইনফর্ম করবেন।
Ok Madam! Have A Nice Day!
শালিনীর মুখে মৃদুর হাসির রেখাপাত হয়। পুলিশের কখনও nice day হয় না!
রিসেপশনের সুন্দরী মেয়েটা নম্বরটা সেইভ করে রাখে। একোতো পুলিশের কাছ থেকে একটা কাজ পেলো। আর তার উপর এটা এএসপির নাম্বার। একজন উটকো লোক কয়েকদিন ধরে তাকে ফোনে বিরক্ত করছে। কোন সমস্যা দেখলে ম্যাডামকে কল করে নেবে। মনে মনে সে খুশিই হলো।
কি হল ম্যাডাম? রাজ বলে।
রাজ এই হসপিটালে তো গুলিবিদ্ধ কেউ ভর্তি হয় নি। শালিনী বিভ্রান্ত হয়ে বলে।
What? গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওরা যাবে কোথায়?
রাজ গাড়ি থামিয়ে দেয়।
সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না মোহিত। ব্লিডিং হতে থাকলে তো এত সময় নিয়ে অনেক দূর যাওয়া সম্ভব না। শালিনীর মুখে চিন্তার ছাপ পড়ে।
Strange! রাজও বুঝতে পারে না।
রাজ! মনে কর! তুই আমি দুজনে গুলি খেয়েছি আর অনেকক্ষণ ধরে পালাচ্ছি আর এতে অনেকখানি ব্লিডিং হয়ে গেছে আমাদের। তো আমরা আমাদের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রথমে হসপিটালে না গিয়ে কোথায় যাবো?
আচ্ছা ওরা কি আড্ডাখানায় যাবে গুরু? কি মনে হয়? আমরা কি ভুল পথে এগুলাম?
না না! তোর কি মনে হয়, এই রক্তাক্ত অবস্থায় আড্ডাখানায় গেলে কি চিকিৎসা পাবে?
না রাজ! ওরা আড্ডাখানায় যাবে না। কারণ ওদের অবস্থা এতক্ষণে অনেক খারাপ হয়ে যাবার কথা।
ঠিক বলেছেন ম্যাডাম! আর তাছাড়া আমার মনে হয় পুলিশ যে তাদের পিছু নিবে সেটা ওরা জানে। তাই আড্ডাখানার দিকে যাবে, এত বোকা মনে হয় ওরা নয়! মোহিত বলে।
তাহলে কোথায় যেতে পারে ওরা? রাজ প্রশ্ন করে।
শোনো রাজ! তারা জানে কোন হাসপাতাল হলে পুলিশ কেইস দেখে কর্তৃপক্ষ তাদের ট্রিটমেন্ট নাও করতে পারে। প্রাইভেট ক্লিনিক হলেও একই কথা খাটে। তবে কোন হাসপাতাল বা প্রাইভেট ক্লিনিকে যে যাবেই না সেটাও কিন্তু জোর দিয়ে বলা যায় না। আর সেখানে না গিয়েও যদি কোন প্রাইভেট ডাক্তারের চেম্বারে দিয়ে ট্রিটমেন্ট নিতে যায় তবে সেক্ষেত্রে দুটি বিষয় হবে। প্রথমত ডাক্তার তাদের পূর্ব পরিচিত হতে হবে আর না হয় ভয়ভীতি দেখিয়ে ট্রিটমেন্ট নিতে হবে। কারণ, আর যাই হোক, এমন কেইস পেলে সহজে কোন ডাক্তার ট্রিটমেন্ট করতে চাইবে না। শালিনী ম্যাডাম সুন্দর করে যুক্তি উপস্থাপন করে।
মোহিত একটু ভেবে বলে, রাজ ধর, এমন যদি হয় ওরা কোন ট্রিটমেন্ট নিতে কোথাও যায়ই নি। হতে পারে ওরা এমন কোন প্রেশারে আছে যার কারণে ওরা ওদের লাইফ রিস্কে ফেলে হসপিটালে না গিয়ে অন্য কোথাও গেছে?
ওয়ান সেকেন্ড! শালিনী চিন্তায় পড়ে যায়।
কি হল ম্যাডাম?
রাজ ধরো, এমন কি হতে পারে না যে ওদের কোন দায়বদ্ধতা আছে?
দায়বদ্ধতা? সেটা কেমন ম্যাডাম? রাজ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
ইয়েস! গুড পয়েন্ট! মোহিত উত্তেজিত হয়ে ওঠে!
শালিনী ঘুরে মোহিতের দিকে তাকায়।
রাজ! তুই মনে করে দেখতো জিপে করে যখন ওরা যখন পালাচ্ছিল তখন ওদের সাথে কোন বক্স দেখেছিলি?
রাজ মনে করার চেষ্টা করে। তার মনে পড়ে যায় জিপে তিনজন ছিল। দুজনের গুলি লাগে। আরেকজন বক্সের পিছনে লুকিয়ে তাকিয়ে থাকে। বক্স একটা নয় দুইটা বা তিনটা হবে।
হ্যা গুরু! বক্স ছিল আর দুই/ তিনটা ছিল মনে হয়।
ওহ! গড! ওগুলো আর্মসের বক্স ছিল। শালিনী বলে ওঠে!
আর তারা সেগুলো জঙ্গল থেকে চালান করছিল কোথাও! রাজ বলে।

মোহিত এবার বুঝতে পারে মুখোশধারী তাকে গুলি না করে কেনো এএসপি শালিনীকে গুলি করেছিলো।

[/HIDE]
রাজ তুই আমাকে জিজ্ঞেস করছিলি না কেনো মুখোশধারী আমাকে গুলি না শালিনী ম্যাডামকে গুলি করেছিল?
হ্যা গুরু!
শালিনী মোহিতের দিকে তাকায়। মোহিত মুখ শক্ত করে মাথা নিচু করে নিচে তাকিয়ে থাকে তারপর মাথা উচিয়ে বলে কারণ সে আমাদের সিরিয়াল কিলার নয়। সে আমাকে চাকু মারে নি। আর তাই সে আমাকে চেনে না!
ড্যাম শিট! তার মানে আজকের সব কষ্ট বৃথা? রাজ মুখ বিকৃত করে ফেলে।
রাজ! হতে পারে সে সাইকো কিলালার নয়। কিন্তু আমরা একটি অপরাধী আর্মস স্মাগলার গ্রুপের পিছু নিয়েছি। তাদের দমন করাও আমাদের দায়িত্ব!
আমি বুঝতে পারছি ম্যাডাম! রাজ নিজেকে সামলে বলে। এরপর মোহিত বলতে শুরু করে।
ও আর ওর সঙ্গীরা জঙ্গলে লুকিয়ে আর্মস চোরাচালান করছিল। আর হয়তো নজর রাখছিল যে পুলিশ ওদের ফলো করছিল কিনা। ঠিক সেসময় তুই আর ম্যাডাম জঙ্গলে ঢুকে সার্চ করতে শুরু করিস। কারও গতিবিধি টের পেয়ে যখন তোরা জঙ্গলের ভিতের প্রবেশ করিস তখন তোদের উপর একজন আক্রমণ করে। আমার ধারণা গুলিটা ম্যাডামের উপর প্রথমে যে করেছিল সেই আবার পরের গুলিটা চালায়।
ঠিক বলেছো গুরু।
রাজ! জানিস তো! অপরাধীরা চিরকাল পুলিশকে ঘৃণা করে। আর তোর ম্যাডাম তো আসার পর ড্রাগ মাফিয়া আর আর্মস লর্ডদের মাথাব্যাথা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার সম্পর্কে খবরের কাগজ, ইলেকট্রনিক মিডিয়া সবখানে আলোচনা চলে সবসময়। তাই চিনতে কষ্ট হয় নি। সে চেষ্টা করেছিল সহজেই পথের কাটা সরিয়ে ফেলতে।
কিন্তু সে পারেনি। শালিনীর প্রাণ এত সস্তা নয়। আমি আমার জীবনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না করে মরবো না। শালিনী হাত মুঠো করে দৃঢ় কণ্ঠে বলে।
মোহিত আর রাজ এএসপি সাহেবার চোখে এক সুকঠিন প্রত্যয় দেখতে পায়। কোন একটা কিছু তাকে এত দৃঢ় হতে বাধ্য করেছে। কিন্তু কি সেটা তা সময়েই বলে দেবে।
তবে আমার মনে হয় মুখোশধারী চাইলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। কারণ তার সাধ্যের বাইরে দুঃসাহসীক একটা কাজ সে করতে চেয়েছিল। আমার তো মনে হয় আপনাকে গুলি করার আগে তার হাতও যথেষ্ট কেঁপেছিল তাই গুলিটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গেছে! মোহিত বলে।
শালিনী মোহিতের দিকে তীর্যক চোখে তাকায়!
তবে পরেরবার সে লক্ষ্যভ্রষ্ট হতো না। যদি না আমি তৎক্ষণাৎ আপনাকে না সরিয়ে দিতাম।
শালিনী তীর্যক দৃষ্টি স্বাভাবিক হয়ে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে পরিণত হয়।
কিন্তু গুরু একটা ব্যাপার বুঝলাম না সাইকো কিলার না হলে সে মুখোশ পড়েছিল কেন?
আর কেনো? অপরাধিদের নিজেদের আইডেনটিটি লুকানোর জন্য একটা কমন মেথড হল তারা মুখোশ পড়ে থাকে। তবে তার মুখোশটা অনেকটা সাইকো কিলারের মুখোশের মতো। এটার মানে বুঝতে পারছি না।
হতে পারে সাইকো কিলার আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট। শালিনী বলে।
হতে পারে ম্যাডাম। আর তাই মুখোশের ধরণ একইরকম। হয়তো আগে সে অন্ধকার জগতে ছিল এখন নেই। কিন্তু তার ধাঁচটা সেরকমই রয়ে গেছে।
সেটা তো সময়েই বলে দেবে তার কালো ইতিহাস!
এখন কি করবো ম্যাডাম?
আমি অনেক আগেই চেকপোস্টে পাহাড়া বসাতে বলেছি। তাই তারা এই আহত রূপ নিয়ে পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে জিপে করে শহরের সীমা অতিক্রম করে বাইরে যেতে পারবে না। আর ইন্টেলিজেন্সকে বলেছিলাম যে তারা হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলিতে খোঁজ নিতে। তারা শীঘ্রই জানাবে। যদি কোন হাসপাতাল আর ক্লিনিকে না গিয়ে থাকে তবে ধরে নিতে হবে তারা নিজেদের কোন এসাইনমেন্ট কম্লিট করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
ঠিক বলেছেন। রাজ বলে।
 
[HIDE]

চৌহান সাহেব বলছিলেন দুজন পালিয়ে গেছে আর ওনারা আর্মস আর মুখোশ পেয়েছেন। তারমানে ওদের কোথাও আজকে আর্মস ডেলিভারী করার কথা ছিল। আর সেসময় আমরা হঠাত চলে আসি। একজন আমাদের উপর দুবার হামলা করে তারপর দুজনের সঙ্গে পালিয়ে যায়। আর পরে দুজন পরে আমাদের ফোর্সদের উপস্থিতে টের পেয়ে পালিয়ে যায়। শালিনী শান্ত কণ্ঠে অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বলে।
That clearly defines that they were delivering arms. আর তারা আহত হলেও তাদের এসাইনমেন্ট কম্লিট করার জন্য জীবনের মায়া না করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মোহিত বলে।
কিন্তু কোথায় গুরু?
দ্যাখ রাজ! আমি সিউর যে ওরা এ মফস্বল এলাকার এই রেডিয়াসেই আছে। জঙ্গলের থেকে এই এলাকার প্রতিটি রাস্তার শেষ প্রান্তে পাহাড়া, তাই মধ্যস্থলে কোথাও আছে। মোহিত বলে।
সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি মোহিত। কিন্তু তাদের খুঁজবো কি করে? শালিনী বলে।
ম্যাডাম! আমি যখন ভার্সিটির শেষ সময়ের ছাত্র ছিলাম তখন স্থানীয় রাজনীতিবিদদের অনেক অপকর্মের গোপন খবর আর পার্টির সদস্যেদের রহস্যময় সমস্যার কারণ খুঁজে বের করার জন্য আমরা কাজ করতাম। আমরা টাকার বিনিময়ে অনেক রাজনীতিবিদদের কাছে গোপন খবর এনে দিতাম আর তাদের নির্দেশে তাদের শত্রুদের ট্রেস করতাম। আর তখন থেকেই আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি অনেক সময় অদৃষ্ট থেকেই কিভাবে যেনো অনেক সমাধান আপনা -আপনি হাতে এসে পড়ে!
ওহ! মোহিত! আমরা এখানে কোন মিরাকেল ঘটার জন্য অপেক্ষা করতে পারি না। শালিনী বিরক্ত হয়ে বলে।
মোহিত চুপ করে রইলো। এ ব্যাপারে আসলে জোর দিয়ে কিছু বলার নেই।
রাজ গাড়ি পিছনে দিকে নেও।
ওকে ম্যাডাম।
রাজ গাড়ি ঘুরিয়ে থেমে গেলো।
কি হল রাজ? শালিনী বলে।
ম্যাডাম আমার মনে হচ্ছে রাস্তার ওপাশে গাছের আড়াল থেকে কেউ যেনো আমাদের দিকে এসে আমাদের দেখতে পেয়ে সরে গেলো!
শালিনী আর মোহিত রাজের ইশারা দিকে তাকায়। ওরা কিছু দেখতে পায় নি। কিন্তু দুজনেই কৌতুহলী হয়ে উঠলো।
মোহিত বলল, কোন গলদ আছে। নইলে আমাদের দেখে এমনিই কেউ সরে যাবে না। চল নেমে দেখি।
গাড়ি লক করে তিনজনই নেমে গেল। রাজ বলে এদিকে এসো। রাজ তুই এদিকে যা। আমরা দুজন দুই দিক থেকে যাই। আর যে ছিল সে সহসা সরে যাবে না। সে আশেপাশেই লুকিয়ে থাকবে।
হ্যা রাজ। আমরা তিনজন তিনদিক থেকে যাই। শালিনী বলে।
রাজ যে দিকে দেখেছে সেদিকেই গেলে। মোহিত আর শালিনী ঘুরে সেদিকে গেল। মোহিতের অনুমান সে ব্যক্তি সোজা না গিয়ে অন্যদিকে টার্ন নিয়ে যেতে পারে।
তিনজন চলতে লাগলো নি:শব্দে।

কিছুদূর এগুনোর পর রাজ অনুভব করে কেউ তাকে হয়তো দূর থেকে দেখছে। মানুষের অবচেতন মন খুব শক্তিশালী। কারো উপস্থিতি মনের মধ্যে একটা ইঙ্গিত প্রদান করে। রাজ আশেপাশে দেখতে থাকে। কাউকে দেখা যায় না। কিন্তু অবশ্যই সে ব্যক্তিটি আছে। সে পকেট থেকে রিভলবার বের করে। শালিনী ম্যাডাম গাড়ি থেকে নামার সময় জিপ এর সুরক্ষিত চেম্বার থেকে কয়েকটি গুলি তার হাতে দেয়।

রাজ দাঁড়াও!
জ্বী ম্যাডাম!
এ কয়েকটা বুলেট রাখো। প্রয়োজন পড়তে পারে।
থ্যাংক ইউ ম্যাডাম।
মোহিত তখন মনে মনে ভাবে জিজ্ঞেস করবে নাকি কোন এক্সট্রা রিভলবার আছে কি না? পরক্ষণেই মনে মনে ভাবে সার্ভিস রিভলবার তো, বেসামরিক লোককে দেবে না। অযথা শালিনীকে বলে তার মুখ থেকে ত্যাড়া বাঁকা মন্তব্য শোনার কোন মানে নেই!
রাজ রিভলবারের ট্রিগারে আঙ্গুল রাখে। হঠাত তার মনে হয় আশাপাশে কিছু একটা নড়লো।
কখনও কখনও অপরাধীদের অদৃষ্টে কিছু বিচিত্র ঘটনা ঘটবে লিখা থাকে, আর তা ঘটে যায়! আর তারা ধরা পড়ে!
যে ব্যক্তিটির পিছু ওরা নিয়েছে সে ব্যক্তিটিকে মৌমাছি হুল ফুটায় আর তাই সে যন্ত্রণায় পুলিশের কথা ভুলে গিয়ে হড়বড় করে মৌমাছিটিকে তাড়ায়। আর তার এই নড়াচড়া রাজ টের পেয়ে যায়। তাকে ভালো করে দেখতে না পেলেও রাজ অনুমান করে পাতার আড়ালে নিচের দিকে গুলি করে। গুলিটা যদিও লাগে নি কিন্তু লোকটি কোন উপায় না দেখে দৌড় দেয়। রাজও তার পিছু নেয়। শালিনী আর মোহিত গুলির শব্দ শুনতে পায়।
ড্যাম! শালিনী উচ্চারণ করে।
ওহ! মোহিত শব্দ উচ্চারণ করে এলার্ট হয়।
এরপর দুদিকে থাকা দুজন ভেসে আসা গুলির শব্দের দিকে দৌড় দেয়। দৌড়ে তারা প্রায় একই সময়ে রাজের গুলি চালানোর স্থলে চলে আসে। তবে রাজকে দেখতে পায় না। দুজনে ভেবেছিল রাজ হয়তো গুলি করে ব্যক্তিটিকে কুপোকাত করে ফেলে রেখেছে। যখন কাউকেই দেখতে পেল না তখন মোহিত শ্যাঁতশ্যাঁতে মাটিতে বুটের ছাপ দেখে বলে,
ম্যাডাম এদিকে আসুন।
দুজন রাজের গতিপথে এগুতে থাকে। কিছুদূর যেতে রাজের খাকী অবয়বের দেখা মেলে। আরেকটি গুলি চলে ওঠে। এবারও রাজের গুলিটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় কিন্তু লোকটি ব্যালেন্স রাখতে না পেরে উল্টিয়ে পড়ে যায়। রাজ দ্রুত তার কাছে গিয়ে উপস্থিত হয় আর তার চেহারা দেখে চিনতে পারে। এটা সেই তৃতীয় ব্যক্তি যার গুলি লাগে নি। রাজ যখন ঝাখান বনে গুলি চালাচ্ছিলো সে তখন দ্রুত আর্মসের বক্সের পিছনে লুকিয়ে পড়েছিল।
রাজ তাকে বলে, খবরদার! পালাবার চেষ্টা করবি না! দুবার আমার আমার নিশানা ফসকে গেলেও এখন কিন্তু ফসকে যাবে না!
আমি কিছু করিনি! আমি কিছু করিনি।
মিথ্যে বলবি না! বল! বাকিরা কোথায় বল!
মোহিত আর শালিনী এসে উপস্থিত হয়। শালিনী লোকটির দিকে বন্দুক তাক করে রাখে।
ম্যাডাম এটা সেই হারামজাদা যে আর্মসের বক্সের পিছনে লুকিয়ে ছিল। নইলে ওকেও গুলি করতাম। বল শুয়েরের বাচ্চা! বল! ওরা কোথায়
ওরা চলে গেছে।
হারামজাদা! কোথায় গেছে ওরা? বল!
বলবো না!
মোহিত এসে ওর ঘাড়ে ধরে বলে, বলবি নাকি গুলি করে মাথায় ছিদ্দি করে দেবো?
হা হা! হা হা হা! লোকটি হাসে!
মোহিত রাজের রিভলবারটা নিয়ে লোকটার কপালে চেপে ধরে বলে, আমি কিন্তু ফালতু কথা বলি না! তাড়াতাড়ি বল! লোকটা ভয় পায়।
শালিনীর সহ্য হলো না। সে এসে লোকটির পায়ের গোড়ালিতে বুট দিয়ে পারা দিয়ে ডলে জায়গাটা থেতলে দেয়।
আহহহহ! লোকটি চিৎকার করে ওঠে ব্যাথায়।
তারপর শালিনী তার মাথায় রিভলবার দিয়ে আঘাত করে আর বলে,
বল! ওরা কোথায় বল!
মোহিত মাথা চেপে ধরে। তিনজনের চরমপন্থী রূপ দেখে এবার সে চুপসে যায় আর উত্তর দেয়।
ওরা দুজন রাস্তায় নেমে গেছে।
নেমে কোথায় গেছে? রাজ বলে।
ডাক্তারের কাছে আড্ডাখানায় গেছে।
আর্মসগুলো কোথায় তাহলে? শালিনী ঝাঝালো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।
জিপের ড্রাইভার আর্মসগুলো নিয়ে জঙ্গলে ক্লাইন্টের কাছে ডেলিভারী দিয়েছে।
যারা ডেলিভারী নিলো আর জিপের ড্রাইভার তারা কোথায়? মোহিত জিজ্ঞেস করে।
ওরা এতক্ষণে এই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
শিট! রাজের মুখ থেকে উচ্চারিত হয়।
কোন দিক দিয়ে গেছে?
এখানে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে একটা সরু রাস্তা আছে সেটা দিয়ে এলাকার বাইরে যাওয়া যায়। এটা সবাই জানে না!
তুই ওদের সাথে যাস নি কেনো? মোহিত জিজ্ঞেস করে।
আমার সাথে টাকার ভাগ নিয়ে ঝামেলা হয়। আমাকে কম দেওয়ায় আমি ওদের সাথে কাজ করবো না বলে ঝামেলা করে চলে আসি।
আচ্ছা! তবে এখন যদি বাঁচতে চাস তবে আমাদেরকে ওদের সব তথ্য তোকে দিতে হবে। মোহিত বলে।
না! ওরা অনেক বড় মাফিয়া চক্র। আমি আপনাদের সব বলেছি বললে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।
মারা তো তুই এখনো পড়বি, যদি আমাদের সবকিছু না বলিস। আর যদি সব কিছু খুলে বলিস তবে আমরা ভেবে দেখেবো তোকে কি করা যায়! রাজ বলে।
রাজ বন্দুকটা ওর কপালে ধরে। রাজ জানে এটা পুলিশী আচরণ নয়। তবে এখন কথা বের করার জন্য আর কোন উপায় নেই। শালিনীও তাই কোন বাঁধা দিলো না।
বল!
এরপর ধৃত লোকটি অকপটে অনেক কিছু বলে দেয়। তিনজন মন দিয়ে সব কথা শোনে। তিনজনই বুঝতে পারে সহজ পন্থায় ওদের পুরো মাফিয়া গ্রুপকে ধরা যাবে না।
এখন কি করবেন ম্যাডাম? রাজ জানতে চায়।
ওকে জিপে নিয়ে চল। তারপর আমরা আহত বাকি দুজনকে গ্রেফতার করবো। আর সবাইকে লকআপে পুড়বো! ওদের থেকেও স্বীকারক্তি নিতে হবে। আর আমি মনে করি ডিপার্টমেন্টের সাথে আলোচনা ছাড়া এবং পুরো ফোর্স ছাড়া নেক্সটে বড় একশন নেয় যাবে না। শুনলে তো ওদের ক্ষমতা কতদূর।
জ্বী ম্যাডাম। আজ হয়তো ওদের ক্ষমতা অনেক। কিন্তু যখন ওদের সবকটাকে ধরবো তখন একটার ক্ষমতাও কাজে আসবে না।
লোকটা মুখ চিমসে থাকে। এরপর ওকে নিয়ে জিপে তুলে হ্যান্ডকাফ লাগানো হয়। শালিনী এবার পেছনে ক্রিমিনালের সাথে বসে। আর মোহিত রাজের সাথে সামনে বসে। এরপর বাকি দুজন আসামীকে দিয়ে গাড়ির শূন্যস্থান পূরণ করার লক্ষ্যে গাড়ি ছুটতে শুরু করে।
[/HIDE]
 
[HIDE]

কটির কথামতো একটা স্থানে তারা পৌছায়। জিপটা রাস্তায় থামিয়ে রেখে মোহিতকে আসামীকে পাহাড়া দিতে বলে রাজ আর শালিনী এগিয়ে যায়। একটা জায়গায় গিয়ে দেখা মেলে একটা আড্ডাখানার।

দুজনের অতর্কিত আক্রমণে হতভম্ব হয়ে পড়ে দুজন আসামী আর একজন ডাক্তার। হঠাত আরেকজন উদয় হয় অস্ত্র হাতে। তাকে প্রথমে চোখে পড়েনি দুজনের। সে রাজ আর শালিনীকে অস্ত্র ফেলে দিতে বলে। কিন্তু রাজ পুলিশে নতুন হলেও এ সিচুয়েশনে সে নতুন পড়েনি! তার রিভলভারের হ্যামারটা সে আগেই দাবিয়ে নিয়েছিল।

সে হঠাত শালিনীকে বলে,
ম্যাডাম! আমাদের মনে হয় আমাদের অস্ত্র ফেলে দিলেই ভালো। কিন্তু চোখে ভিন্ন ইশারা করে। আর বন্দুক নামিয়ে ফেলে। শালিনী বুঝতে পারে রাজ ট্রিকস খাটাতে চাচ্ছে। ওদিকে আহত দুজন সাহস করে বসা থেকে উঠে যায়।

ঠিক আছে রাজ। এই বন্দুক নামিয়ে রাখছি। শালিনী বলে।
সাথে সাথে রাজ রিভলবারের ট্রিগার দাবায় আর একটা গুলি আশপাশ কাঁপিয়ে বন্দুক তাক করে রাখা সন্ত্রাসীর বুকে লাগে। তার বুকের উষ্ণ লাল রক্ত সামনে ছিটকে পড়ে আর সে ধপাস করে পড়ে যায়। তার হাতের বন্দুক হাতছাড়া হয়ে একপাশে ছিটকে পড়ে যায়।

শালিনী ভেবেছিল রাজ হয়তো প্রোটোকল অনুযায়ী পায়ে গুলি করবে কিন্তু সে যে সোজা বুকে গুলি চালাবে তা ভাবেনি। কিন্তু ক্রিমিনাল সামনে বন্দুক তাক করে রাখলে প্রোটোকল নিয়ে ভাববার অবকাশ নেই! তাই ন্যায়- অন্যায় না ভেবে শালিনী আহত দুজন আর হতভম্ব ডাক্তারকে বলে,
Don't move. নইলে তোমাদেরও একই পরিণাম হবে! Head down! C'mon head down!

ডাক্তারসহ তিনজন মাথার পিছনে হাত দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। ডাক্তার বেচারা মনে মনে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে। তার ভয়ের কারণ, পুলিশের কীর্তিকলাপে তার কোন আস্থা নেই। পুলিশের ক্ষমতার দাপট যেমন এখন অনেক বেশি তেমনি তারা এখন একদম বাছ বিচচার করেনা! ছেড়ে দেবার সুযোগ থাকলেও ইচ্ছা করে গুলি করে মেরে দিয়ে সাজানো কাহিনী লিখে অহরহ কেইস তৈরী করে এখনকার পুলিশ। তাই সে মন গলানোর চেষ্টা করে,

প্লিজ আমাকে মারবেন না। আমার কোন দোষ নেই। আমাকে ওরা ডেকে এনেছে। ডাক্তার কেঁদে দেয়!

চুপ! একদম কথা বলবে না। তোমার কোন দোষ আছে না নেই তা আমরা বুঝবো। রাজ হ্যান্ডকাফ লাগাও!

শালিনীর রুক্ষ কণ্ঠ ডাক্তারের ভয় আরও বাড়িয়ে দেয়। সে যেরকম ধারণা করেছিলো সেটাই সঠিক মনে হচ্ছে। পুলিশের কোন বিশ্বাস নেই। তাই সে স্থির হয়ে থাকলো।

রাজ সাথে সাথে সাইড থেকে হ্যান্ডকাফ বের করে একটা ক্রিমিনালের মাথায় রিভলবারের কিনারা দিয়ে আঘাত করে। এতে সে পড়ে যায়। আঘাতটা রাজ এজন্য করেছে যাতে হ্যান্ডকাফ লাগানোর সময় সে রাজকে হিট করতে না পারে। এরপর রাজ দ্রুত তার পকেট চেক করে আর কোন আর্মস না পেয়ে তার পিঠে বসে হ্যান্ডকাফ লাগায়। এরপর শালিনী আরেক ক্রিমিনালের কাছে এগিয়ে আসে। রাজ তার মাথায়ও আঘাত করে তাকে বসিয়ে দেয়। শালিনী তাকে চেক করে। আর্মস পাওয়া যায় না। এরপর সে ডাক্তারের কাছে যায়। এ ফাঁকে রাজ দ্বিতীয় আসামীকে হ্যান্ডকাফ পড়ায়।

শালিনী ডাক্তারকে বলে, এই তুমি সরে আসো। নিরুপায় ডাক্তার সরে আসে।

রাজ ডাক্তারের ব্যাগ চেক করো। দেখো ব্যাগে কোন আর্মস আছে কি না। বলা যায় না। অপরাধীদের ডাক্তার। তার সাথেও আর্মস থাকতে পারে।

রাজ বুট দিয়ে তার সামনের ক্রিমিনালকে লাথি মেরে তার সহচর ক্রিমিনালের উপর ফেলে দেয়। কারণ তারা যাতে উঠে পালাতে না পারে।

বিশ্বাস করুন ম্যাডাম! আমার ব্যাগে কেবল মেডিক্যাল ইকুইপমেন্টস আছে! কোন আর্মস নেই। আমি নির্দোষ!

চুপ! তোর কাছে কে জানতে চেয়েছে? রাজ ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয় ডাক্তারকে।

এরপর রাজ ডাক্তারের ব্যাগ খোলে। পুরো ব্যাগ তল্লাশি করার পর ব্যাগে সত্যি সত্যি মেডিক্যাল ইকুইপমেন্টসই পাওয়া যায়। কোন আর্মস বা অন্য কিছু পাওয়া যায়নি। ব্যান্ডেজ যা ছিল তা তো ডাক্তার ওদের লাগিয়েই দিয়েছে। ওদের স্যালাইন দেবার প্রক্রিয়া শুরু করছিল ডাক্তার আর তখনই তারা দুজন এসে হানা দেয়।

শালিনী বন্দুক তাক করে রাখে বাকি দুজন আসামীর উপর। তারপর বলে, আমি ওদের নজর রাখছি তুমি পুরোটা জায়গাটা তল্লাশি করো।

ওকে ম্যাডাম।

জায়গাটা একটা ক্যাম্পের মতো। দেখেই বুঝা যায় সীমিত সময় অবস্থানের জন্য বানানো। তাই রাজ তল্লাশি শুরু করতেই দ্রুতই কিছু ছোটখাটো পিস্তল, আর্মস আর কাগজপত্র আর ওদের মোবাইল জব্দ করে। তারপর একটা ব্যাগ পায় যার মধ্যে সেসব পেচিয়ে নেয়।

শালিনী বলে, তুমি দুজনকে ধরে উঠিয়ে সামনে আগাও। আমি কভার করছি তোমাকে। এরপর শালিনী ডাক্তারের হাঁটুতে আঘাত করে। এতে ডাক্তার চিৎকার মেরে হাঁটু চেপে বসে পড়ে। এখন সে উঠে দৌড়ে পালাতে তো পারবেই না বরং তার হাঁটতেও কষ্ট হবে কিছু সময়। ডাক্তার ব্যাথায় হাউ মাউ করতে থাকে। কিন্তু সে বুঝতে পারে তার বেশি কিছু হয়নি!

পুলিশের একশন, কোন সিনেমার একশন সিকোয়েন্সের মতো নয়। যে বন্দুক তাক করে ভয়ভীতি দেখালে সুবোধ বালকের মতো হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে ক্রিমিনালদের!

প্রথমে রাজ দুজনকে হ্যাচকা টেনে নিয়ে যায়। আর তার পেছনে ডাক্তারকে চলতে বলে শালিনী। তারপর আশপাশটায় একটু চোখ বুলিয়ে নিয়ে এক হাতে বন্দুক তাক করে আর এক হাতে ব্যাগে রাখা উদ্ধারকৃত জিনিসগুলো নিয়ে সবার পেছনে আসতে থাকে।

ওদিকে মোহিত গুলির শব্দ শুনে বুঝতে পারে কোন একটা টপকানো হয়েছে! আর টপকিয়ে মহৎ দেবার কাজটা যে তার গুণধর শাগরেদ রাজ করেছে তা সে ভালো করেই জানে। কারণ ইতোপূর্বে সে প্ল্যানের বাইরে গিয়ে আচমকা গুলি করতে অভ্যস্ত ছিল!

মোহিতের রোমহর্ষক অতীতে মোহিত তাকেও মাঝে মাঝে তার সাথে মিশনে নিয়ে গেছে। যদিও খুব একটা প্রয়োজন হতো না রাজের। তবে বন্দুক যুদ্ধের মরণ খেলায় রাজও এক সময়কার তরুণ প্রতিযোগী!

তবে একসময় দুজনের ভাবনা পালল্টে যায়! অন্যরকম জীবন যাপন করতে চেষ্টা করে। তাই তাদের জীবন অনেকটাই বদলে গেছে। সেসব কথা না হয় অন্য কোন উপযুক্ত সময় আলোচনা করা যাবে। আর তাছাড়া শালিনী রাজকে বলেছিল, হুটহাট গুলি করে বসতে না। তাই এখানে রাজকে সতর্ক করে শালিনী নিজেই যে গুলি করবেনা না, সেটা মোহিত জানে। তাই সে রিল্যাক্সড বসে থাকে।

অন্যদিকে, পূর্বে ধৃত আসামী গুলির শব্দ শুনে চিন্তিত হয়ে পড়ে। পুলিশ যখন তার কাজ ঈমানদারীর সাথে করে তখন অপরাধীরা চোখে শনি দেখতে পায়! এখন সেও দেখছে! একেতো সে অনেক কিছু বলে দিয়েছে। তার বাঁচবার আশা এখন খুব কম! হয় ক্রাইম সিন্ডিকেটের হাতে নয়তো পুলিশের হাতে তার মরণ নিশ্চিত! আতংকে তার মুখ রক্তশূণ্য হয়ে যায়!


[/HIDE]
 
[HIDE]
কিছুক্ষণের মধ্যে শালিনী ও রাজ জেলের নতুন মেহমানদের সঙ্গে নিয়ে আসে। মোহিত নেমে যায়।

রাজ তুমি ওদের সাথে বস।
জ্বী ম্যাডাম। এই ওঠ! রাজ ধমক দিয়ে ওদের জিপে উঠতে বলে।
মোহিত আপনি ড্রাইভ করতে পারবেন?
জ্বী পারবো। মোহিত এমন একটা এক্সপ্রেশন দেয় শালিনীকে যার মানে হল "আমি ড্রাইভ করতে পারবো না এটা কোন কথা বললেন?"
শালিনীও মুখে ভার ভাব এনে তার পাশে বসে।
কোথায় নেবো ম্যাডাম? মোহিত জিজ্ঞেস করে।
থানায় চলুন। এখন ওদের থেকে ফারদার ইনফরমেশন নিয়েই নেক্সট স্টেপ নিতে হবে। শালিনী গম্ভীর কণ্ঠে বলে।
মোহিত গাড়ি স্টার্ট করে। তার ড্রাইভিং রাজের চাইতেও ফাস্ট। শালিনী মনে মনে ভাবে, পুলিশের গাড়ি নিয়ে যে এভাবে ড্রাইভ করে সে নিজের বাইক নিয়ে যে কেমন রেকলেস ড্রাইভিং করবে তা শালিনী ভালোমতই অনুমান করতে পারে। শালিনী বিরক্ত হয়।
আপনি এত দ্রুত ড্রাইভ করছেন কেন? আপনি কি আপনার বাইক নিয়েও এরকম রেকলেস ড্রাইভিং করেন?
আসলে ম্যাডাম উনি একটু দ্রুত ড্রাইভ করতে পছন্দ করেন। রাজ সাফাই দেয়।
তবে এত দ্রুত ড্রাইভ করা দন্ডনীয় অপরাধ, সেটা কি তোমার গুরু জানেন?
আসলে ম্যাডাম বিষয়টা হল…
কি বিষয়? আপনার কি কোন তাড়া আছে?
আসলে খুব ক্ষুধা লেগেছে ম্যাডাম। লাঞ্চ করা হয়নি।
ওহ! বুঝতে পেরেছি।
শালিনী আজকে ক্রিমিনালদের পাকড়াও করার দিকে এতটাই মগ্ন ছিল যে বেলা কখন পড়ে গিয়ে বিকেলও ফুরানোর পথে তা খেয়াল করেনি। আজকে তো কারোই লাঞ্চ করা হয়নি। তাছাড়া লাঞ্চ করবার মতো সিচুয়েশন কি আসলেই ছিল?
থানায় পৌছাতে আরও দুই ঘণ্টা লাগবে। গুরু চিন্তা করো না। আমি আজকে তোমাকে খাওয়াবো।
বাদ দে রাজ! ক্ষুধা এমনিতেও কমে গেছে।
মোহিত মনে মনে ভাবে জঙ্গলে যে শক্তি ক্ষয় করেছিল তারপর লাঞ্চ না করে দিনভর ক্রিমিনালের পেছনে দৌড়াদৌড়ি করে এখন তার বেশ কাহিল লাগছে। তবে স্বস্তি এটাই যে কিছু ক্রিমিনাল ধরা পড়েছে আর প্রথমে ইমেজ হারালেও শালিনী ম্যাডামের সামনে এখন একটা পজিটিভ ইমপ্রেশন জমাতে সে সক্ষম হয়েছে।
আরে না গুরু! সারাদিন আমাদের সাথে এত খাটলে কিছু খাবে না। তা হবে না। আগে থানায় চল।
অন্যদিকে পায়ে ও হাতে গুলি খাওয়া ক্রিমিনালরা মনে মনে ভাবে, আমাদের বারোটা বাজিয়ে এখন খাওয়া হয়নি বলে আফসোস করছে। আগে খেয়ে নিতি। তারপর আমাদের পেছনে আসতি।
যদি খেয়ে দেয়ে তোদের পেছনে আসতাম তবে তোদের তো আর সময় মতো ধরতে পারতাম না। তোরা তো প্ল্যান করেছিলি কিছুদিন গা ঢাকা দেয়ার জন্যে। রাজ বলে।
জিপের সবাই কথাটা শোনে। মোহিত আর শালিনী প্রথমে বুঝতে পারে না রাজ এ কথাটা কেনো বলল। তবে পরে ধরতে পারে যে রাজ ক্রিমিনালদের সাইকোলজিটা ধরতে পেরে কথাটা বলেছে।
আসলে রাজ অপরাধীদের চোখে নজর রাখছিল। কেউ যখন কোন চালাকী করতে চায় তখন তার চোখ চঞ্চল হয়ে ওঠে। তাই সে যেহেতু ক্রিমিনালদের সাথে বসেছে তাই সে কড়া নজর রাখছে তাদের গতিবিধির উপর। বিশেষ করে তাদের চোখের ভেতরে কোন শয়তানি ঘুরছে কি না সেটা রাজ বোঝার চেষ্টা করে। আর যখন মোহিত খাবারের কথা বলল তখন সে ক্রিমিনালদের চোখের প্রতি নজর রাখছিল আর যখন সে মোহিতকে খাওয়ানোর কথা বলল তখনও তার নজর ওদের উপর নিবিষ্ট ছিল। তো রাজ দেখতে পেলো দুপুরে না খেয়ে ওদের পেছনে ছুটেছে এ কথাটা শুনে গুলিবিদ্ধ দুজনের চোখ- মুখ কালো হয়ে গেলো। রাজ বুঝতে পারলো ওরা মনে মনে বলছে যে ওরা তিনজন যদি খেয়ে দেয়ে জাস্ট আরেকটু দেরী করে আসতো তবে ওদের আর এখন হ্যান্ডকাফ পড়ে লালদালানে যেতে হতো না! আর তারা দুজন যে ট্রিটমেন্ট নিয়ে গা ঢাকা দিতো সেটা তো সহজেই অনুমান করা যায়। কারণ তার আহত। কিছুদিন তারা কোন এসাইমেন্টে যেতে পারবে না। তাদের লর্ডরা তাদের ডাকবেও না।
রাজের মুখে কথাটা শুনে ক্রিমিনাল প্রত্যেকেই থমকে যায়। গুলিবিদ্ধ দুজনের ভয় ধরে। মনে মনে তারা ভাবে বুঝলে কি করে সে? পুলিশ যদি ক্রিমিনালদের মনের ভাব ধরতে পারে তবে ক্রিমিনালরা অসহায় বোধ করে। তারাও এখন আরও অসহায় বোধ করছে। কখন আবার কোন পানিশমেন্ট দেয় ঠিক নেই। তারা সবাই সিদ্ধান্ত নেয় মনে মনে আর কিছু বলবে না!
শালিনীর অবশ্য রাজের ক্রিমিনাল সাইকোলজিটা ধরতে পারাটা বেশ পছন্দ হয়। তার মনে হয় একটা উদীয়মান তরুণ পুলিশ অফিসার হিসেবে যে চৌকস গুণগুলো রাজের মধ্যে থাকা দরকার তা সবগুলোই আছে তার মাঝে। এমনিক আরও অনেক গুণও তার আছে যা আসলেই অপ্রত্যাশিত। এটা বেশ ভালো দিক একজন পুলিশ অফিসারের জন্য। এ ধরণের পুলিশই ডিপার্টমেন্টের জন্য প্রয়োজন।
এটা খুব ভালো রাজ যে তুমি ক্রিমিনালদের সাইকোলজিটা ধরতে পারছো। Keep your consciousness & instinct growing! এটা খুবই দরকারী এ সার্ভিসের জন্য।
Thank you madam! এসব আসলে আমার গুরু শিক্ষা। সব সময় উনি একটা কথা বলতেন, মানুষের সাইকোলোজিটা তোর বুঝতে হবে। তবে তুই মানুষকে দিয়ে কাজ আদায় করে নিতে পারবি।
I see. তোমার গুরু ভালো কিছু শেখাতে জানেন দেখছি।
শালিনী মোহিতের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে। মোহিতও তার দিকে তাকায়। দুজনের চোখাচোখি হয় হয়! মোহিত চোখ সরিয়ে নেয়। শালিনী অবশ্য চোখ সরিয়ে নেয় না। কারণ চোখে চোখ রেখে কথা বলতে সে বয়:সন্ধির কঠিন সময় থেকেই শিখেছে। সবাই চোখ গুটিয়ে নিলেও শালিনী কিন্তু অপলক চেয়ে থাকতে পারে। এজন্য তার এ গাম্ভীর্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বও অনেকের কাছে আরও প্রখর বোধ হয়!
মোহিত একটু গুছিয়ে নিয়ে বলে আসলে নিজেদের পেটের তাগিদে আমাদের অনেক রকম মানুষের সাথে কাজ করতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে মানুষের মনস্তত্ত্ব বোঝাটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্লাস পয়েন্ট ছিল আমাদের।
ঠিক তাই ম্যাডাম। আপনি তো জানেন আমরা কেমন ফাইন্যানশিয়াল কন্ডিশন থেকে বিলোং করি। তাই, ছোটবেলা থেকেই আমাদের অনেক কিছু শিখে নিয়ে চলতে হয়েছে। এ পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে মানুষকে সময়ে সময়ে অনেক কিছু শিখতে হয়, ভালো মন্দ অনেক কিছু অর্জন করতে হয়। তাই না গুরু!
হ্যা রে ঠিক বলেছিস তুই।
সেটা ঠিক রাজ। এ নিষ্ঠুর পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে অনেক কিছু সহ্য করে, পৃথিবীর সাথে লড়াই করার মতো অনেক যোগ্যতা অর্জন করতে হয়।
শালিনী অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। সে স্মৃতির পাতায় ভর করে বহু বছর পেছনে চলে যায়। কিন্তু, হঠাত ফিরে আসে স্পীড ব্রেকারের ঝাকুনিতে। তারপর সে বর্তমানে ফিরে আসে। তারপর, সে অন্য ভাবনায় মগ্ন হয়।
একজন সহকর্মী হিসেবে রাজ আগেই তার ভরসা ক্ষেত্র ও আস্থা অর্জন করেছে। আর মোহিতের কাছ থেকে যেহেতু রাজ অনেক ভালো কিছু শিখেছে তাই মোহিতকেও তার এখন ভিন্ন একজন মানুষ মনে হচ্ছে। দুপুরের আগে যে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে তার প্রতি যে একটা চরম নেতিবাচক ধারণা শালিনীর মনে জন্মেছিল তা দিনের বাকি অংশে মোহিতের কৌশলী ও উদ্যমী কর্মকান্ডের কারণে পাল্টে গেছে! তবে, হঠাত একটা জিনিস তার মাথায় খেলে যায়। গুরু তো! ভালো কিছু যে শিখিয়েছে তা তো বোঝা যাচ্ছে কিন্তু খারাপ কিছুও যে শেখায়নি তা কি হতে পারে না?
শালিনী সামনের মিররে রাজের দিকে তাকিয়ে বলে, রাজ এটা ভালো যে তোমার গুরুর কাছ থেকে তুমি অনেক ভালো কিছু শিখেছো। আর আমি আশা করছি যে তুমি কেবল ভালো দিকগুলোই শিখেছো ওনার কাছ থেকে!
মোহিত শালিনীর দিকে তাকায়। তার বুঝতে অসুবিধা হয় না কোন দিকে ইঙ্গীত করে শালিনী একথা বলছে!
রাজও মিররের দিকে তাকায়। সে শালিনীর মুখে একটা বিদ্রুপ লক্ষ্য করে। সে লজ্জা পেয়ে যায়। আর রাজের লজ্জিত হওয়াটা শালিনী বুঝে ফেলে! শালিনী বুঝে যায়, রাজের গুরু কেবল তাকে একদিকেই দীক্ষা দেয়নি, সবদিকেই দিয়েছে!
Damn it! শালিনী বলে।



[/HIDE]
 
[HIDE]

রাজ আরও লজ্জা পেয়ে যায়। মোহিতও ইতস্তত বোধ করে।
অপরাধীরা কিছুটা অনুমান করে। কিন্তু তারা ভয়ে তাদের অনুমানের দৌড়াত্ন্যটা নিয়ন্ত্রণ করে!
কিছুক্ষণ পরে শালিনী বিজ্ঞের মতো বলে, চাইলেই একজন মানুষ ভবঘুরে, বেপড়োয়া আর স্বেচ্ছাচারী জীবন ছেড়ে, সুস্থ্য সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারে। আমরা সবাই পারি। আমরা চাইলে অপরাধের সাথে নিজেদের না জড়িয়ে কষ্ট হলেও দেশ আর সমাজের ক্ষতি না করে, একটি সৎ, সুখী জীবন যাপন করতে পারি।
কথাটা শালিনী পেছনে ঘুরে অপরাধীদের উদ্দেশ্যে বলে। অপরাধীরা লজ্জিত হয়। কিন্তু মনে মনে ভাবে, দুনিয়া এত সহজ নয়! আপনাদের জীবন গোড়া থেকেই সুন্দর ছিল তাই পেরেছেন আর তাই বড় করে বলতে পারছেন। আমাদের মতো হলে এ দশায় হতো।
শালিনী যেমন তাদের মন পড়তে পারলো। তাই সে মাথা ঘুরিয়ে বলল, আমাদের জীবনও অনেক কষ্টের ছিল। কঠিন পরিবেশ পার করে অনেক কষ্ট করে আজ এ পর্যন্ত এসেছি আমরা। মাঝে মাঝে আমাদেরও মন চাইতো সমাজের মানুষদেরকে ঘৃণা করি। তাদের নিষ্ঠুরতার প্রতিদান নিষ্ঠুরতা দিয়েই দেই। কিন্তু, আমরা তা করিনি। আমরা অন্যায় সয়ে একদিন নিজেরাও অন্যায়কারী হয়ে যাইনি।

অপরাধীরা এবারও ভিড়মি খায়! কি আশ্চর্য এ ম্যাডামও তাদের মনের কথা ধরে ফেলেছে! পুলিশদেরকে তো তারা ঘুষখোর গবেট ভাবতো। এনারা তো দেখি অন্যরকম! অপরাধীরা মনে মনে প্রার্থনা করে, তাদের যেনো তাড়াতাড়ি লক- আপে ঢুকানো হয়! আসলে মানুষের একের পর এক মনের গোপন কথা কেউ ধরে ফেললে মানুষ প্রচন্ড অস্বস্তি আর ইনসিকিউর ফিল করে। তাদের ক্ষেত্রেও এমনটাই হচ্ছে! তারা হাফ ছেড়ে বাঁচতে চাচ্ছে!
রাজ আর মোহিতও মনোযোগ দিয়ে শালিনীর কথাটা শুনে। দুজনের এবার মনে হয় শালিনী ম্যাডামকে তারা অনেক কম চেনে। তার ভেতরের কষ্ট, তার নিজস্ব জীবন, তার অতীতের কোন কথাই তো তারা জানে না। জানবার কথাও নয়। রাজ প্রতিদিন শালিনী ম্যাডামকে দিনের বিরাট একটা সময় দেখছে, তার সাথে রেগুলার কথা হচ্ছে, হুটহাট নানা মিশনে যাচ্ছে কিন্তু তার সম্পর্কে তেমন কিছুই সে জানে না! এতটুকু সে জানে যে তিনি পুলিশের একজন দক্ষ বড় কর্মকর্তা। অনেক কড়া মেজাজের আর রিজার্ভড একজন মহিলা। নিজের ব্যক্তিগত কোন বিষয়ে তিনি কখনও আলোচনা করেন না, তুলে ধরেন না। কিন্তু তার মনটা খুব সুন্দর। কিন্তু সে সুন্দর মনের ভেতরে হয়তো অনেক কষ্টের ছাপ আছে বলে অনুমিত হচ্ছে! কিন্তু এর বাইরে ম্যাডামের জীবন সম্পর্কে রাজ কিছু জানে না। আর রাজ যদি জানে মোহিতই বা কি করে জানবে?

বেশ কিছুক্ষণ কেটে যায়। শালিনী চৌহানকে ফোন করে।
মিস্টার চৌহান কি আপডেট এখন?
জ্বী ম্যাডাম আমরা তল্লাশি অব্যাহত রেখেছি। ছোট খাটো কিছু বিষয় ধরতে পেরেছি কিন্তু কিন্তু তেমন কোন ক্লু আর আমাদের হাতে আসেনি। আর কাউকে ধরাও যায়নি। মনে হচ্ছে বনটা এখন জনশূণ্য।
ওকে ঠিক আছে তাহলে আপনাদের এই এসাইনমেন্ট এখানেই শেষ করে দিন।
ওকে ম্যাডাম। আপনারা কোথায়?
আমরা বনের কাছাকাছি চলে এসেছি। আর আমরা কয়েকজনকে গ্রেফতার করতেও সক্ষম হয়েছি।
ওহ দ্যাটস গুড ম্যাডাম! আমরা এখনি আমাদের কাজ শেষ করছি।
আপনারা প্যাক -আপ করে বাইরে মেইন রোডে এসে অপেক্ষা করুন। ওভার।
ওভার।

শালিনী তার ওয়াকিটকি রেখে দেয়। গাড়ি এগুতে থাকে। ঝাখান বনের সামনে যেখানে মোহিত তার বাইক পার্ক করে রেখেছিল সেখানে চলে আসে। চৌহান সাহেবকে তার ফোর্স নিয়ে অপেক্ষমান দেখা যাচ্ছে। মোহিত তার বাইকটা অক্ষত অবস্থায় দেখতে পায়।

মোহিত স্টপ।
মোহিত গাড়ি থামায়। চৌহান এগিয়ে আসে। সে এসে ক্রিমিনালদের একনজর দেখে আর বলে,
বাহ! আজ তোদের ভালো মত খাতির করবো। কি বল রাজ?
জ্বী স্যার অবশ্যই! আমি তো অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি!

রাজ তুমি নেমে গিয়ে ড্রাইভিং সীটে বস।
ওকে ম্যাডাম।
মিস্টার চৌহান আপনি ক্রিমিনালদের একটু সঙ্গ দিন।
জ্বী ম্যাডাম অবশ্যই! চৌহান বলে।

মোহিত নেমে গিয়ে তার বাইক স্টার্ট করে। হাবিলদার আর কনস্টেবলগণ যে যে যে জিনিস উদ্ধার করেছিলেন তা আরেকটি জিপে রাখেন। তারপর শালিনী সব তদারকি করে গুছিয়ে নিয়ে জিপে বসে। দুটো জিপ আর বাইক চলতে শুরু করে। একটি জিপের সামনে রাজ আর শালিনী বসা। পেছনে চৌহান আর আজকের ধৃত আসামীগণ। আর অন্য জিপটিতে কনস্টেবল ও হাবিলদারগণ রয়েছেন। অন্যদিকে মোহিত বেশ ফুরফুরে মেজাজে তার বাইক চালাতে থাকে। তবে জিপ দুটোর সাথে তাল মিলিয়েই। শালিনী সাব ইন্সপেক্টর বিজয়ের সাথে যোগাযোগ করে।

হ্যালো বিজয়!
ইয়েস ম্যাডাম।
আমাদের এখানকার এসাইনমেন্ট শেষ। আমরা আসছি। ইজ এভরিথিং ওকে?
ইয়েস ম্যাডাম। আমি আর মিশরা সাহেব আছি। কিছু এফআইআর লিখেছি। আপনি আসলে ডিসকাস করবো।
ওকে বিজয়। আউট।

ঝাখান বনের পাশ দিয়ে গোধূলী বেলায় পুলিশ, অপরাধী আর গোয়েন্দা, তিন শ্রেনী সমান গতিতে সামনে এগুতে থাকে। কনস্টেবল আর হাবিলদারদের তেমন কোন দুশ্চিন্তা না থাকলেও বাকিদের আছে। চৌহান প্রথম দর্শনেই যেই ডায়লগটা ক্রিমিনালদের দিয়েছে তাতে তাদের গা শিরশির করছে। তারা জানে তাদের পিটিয়ে তক্তা করে হলেও তাদের থেকে ইনফরমেশন বের করা হবে। কোন উপায় নেই তাদের। ডাক্তার ভাবছে লোভের বসে ক্রিমিনালদের ফাঁদে পা দিয়ে আজ তাকে জেলে যেতে হচ্ছে। কমসে কম ৫ বছরের জেল হবে। সে তো অনেকদিন থেকেই তাদের মেরামত করার কাজে নিয়েজিত আছে। তার স্ত্রী তাকে নিষেধ করেছিল। কিন্তু সে শোনেনি। অবশেষে, তার লোভ তাকে আজ হাজতে নিয়ে যাচ্ছে!
অন্যদিকে মিস্টার চৌহান চিন্তিত এই কারণে যে, এতজন ফোর্স নিয়ে জঙ্গল থেকে কাউকেই সে উদ্ধার করতে পারেনি। যদিও কিছু জিনিস উদ্ধার করা গেছে। কিন্তু তাতে শালিনীর ম্যাডামের মন গলবে কিনা কে জানে? তাকে দেখে অবশ্য রেগে আছেন বলে মনে হচ্ছে না। তবে ম্যাডামের মন মর্জির কোন গ্যারান্টি নেই!
রাজ গাড়ি চালাচ্ছে আর চিন্তা করছে দিনভর অনেক খাটা-খাটুনি হলেও আসল সিরিয়াল কিলারের কেইসটার কোন অগ্রগতি হল না। যদিও যে কোন অপরাধ দমন করাই তাদের কাজ। কিন্তু সে মনে মনে চাইছিল যেন, কোন একটা বড় কিছু আজকে হাতে লাগুক।
মোহিতও বেশ হতাশ। সে ভাবছে একটা নাটকীয় দিন কেটে গেলো আজ! অনেক কিছু ঘটলো। প্রথমে সিনেমা হলে পূজার কাছে ধরা খেয়ে প্রিয়াংকাকে নিয়ে জঙ্গলে টাইম পাস করে, হঠাত সাইকো কিলারের কেইস মনে করে জান-প্রাণ দিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে শেষে ড্রাগ মাফিয়ার কিছু চামচা ধরে ফেরত যেতে হচ্ছে! খুব ভালো লাগতো যদি সত্যি সত্যি সিরিয়াল কিলারকে ধরতে পারতো! তবে যাই হোক, পুলিশের সাথে অনেকদিন পর আবার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। এবার থেকে সে আরও সিরিয়াসলি কাজ করবে। আশা করা যায় শালিনী ম্যডাম আর আপত্তি করবে না তাকে নিতে!
একবার সে শালিনী ম্যাডামের দিকে তাকায়। দেখতে পায় শালিনী ম্যাডাম মন দিয়ে কি যেনো ভাবছে। হঠাত সে কি মনে করে মোহিতের দিকে তাকায়! মোহিত হচকিয়ে গিয়ে সামনের দিকে তাকায়। শালিনী ম্যাডাম মুচকী হাসলো। মোহিত নিজেকে বলে, এ মহিলা এক অপূর্ব কেয়ামত! যেমন সুন্দরী তেমনি তীক্ষ্ণ তার ব্যক্তিত্ব! পুলিশের চাকুরী না করলেও অনায়েসে নাটক- সিনেমাতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করতে পারতেন। এমনিক পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা চরিত্রেও তাকে দারুণ মানাতো! তখন তার উপর ক্রাশ খেলে চলতো! কিন্তু তিনি সত্যি সত্যিই পুলিশ। আর তার উপর ক্রাশ খাওয়ার মতো ঔদ্ধত্য খেয়াল মোহিতের নেই। তাকে দেখলে অন্তত তার প্রতি শ্রদ্ধা জাগে প্রেম বা কামনা জাগে না!
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। রাস্তা প্রায় ফাঁকা বলা যায়। অপরাধীদের আতংকের কারণে এমনিতেও এ রাস্তাটা এর পর থেকে ফাঁকাই থাকে। মোহিত সামনে তাকিয়ে বাইক চালানোতে মন দেয়।

[/HIDE]
 
[HIDE]

ওদিকে শালিনীও হতাশ। তার মনে হচ্ছিল আজকেই সিরিয়াল কিলারের কেইসটার বড় কোন রহস্য বেপর্দা হতে চলেছে। কিন্তু দিন শেষে মাফিয়া ডনদের চ্যালাদের ধরে নিয়ে যেতে হচ্ছে! যদিও এটাও সমান কর্তব্য তবুও একটা হতাশা কাজ করছে ভেতরে।
আর ঠিক তখনেই মোহিতকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখতে পায়। সে বুঝতে পারে মোহিতের মনের ভেতরটা। হিউম্যান সাইকোলজি যে কেবল তার পাঠ্য ছিল তা নয়, তার পছন্দের সাবজেক্টও ছিল। শালিনী সে আলোকেই বুঝতে মোহিত বেপরোয়া জীবন -যাবন করলেও তাকে সে ব্যক্তি বা পদমর্যাদার জন্যে শ্রদ্ধা করে। সে বেশামাল দৃশ্যপটে শালিনী তাকে আবিষ্কার করেছিল তাতে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছিল শালিনীর মনে। সে প্রথমে ধরেই নিয়েছিল নারীদের দেখলেই মোহিতের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।। কিন্তু, দিনভর মোহিতকে দেখে তার ধারণা পাল্টে গেছে। নিজের প্রতি মোহিতের চোখে কোন নোংরামী সে দেখতে পাচ্ছে না। এমন মানুষের সাথেই কাজ করা সম্ভব। নারীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মীদের সুন্দর মানসিকতা ও স্বচ্ছতা থাকা খুবই জরুরী।
শালিনীর মনের জমে থাকা তিক্ততা এখন পুরোপুরি কেটে গিয়ে মোহিতের প্রতি একটা আস্থা ও কৃতজ্ঞতা সৃষ্টি হয়েছে। সে যে তার জীবন বাঁচিয়েছে তা তো অনস্বীকার্য! সেসময় গুলিটা লাগলে হয়তো সে এখন বেঁচে নাও থাকতে পারতো কিংবা বেঁচে থাকলে এই সার্ভিসে হয়তো তার আর থাকা হতো না। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য অর্জন করা তার পক্ষে আর সম্ভব হতো না। এজন্য মোহিতের প্রতি সে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
মানুষের সেরা দিকটাতে শালিনী বিশ্বাস করে। মানুষের মধ্যে ভালো- মন্দ উভয় দিক থাকবেই কিন্তু ভালোটাই যে বের করে আনাই আমাদের কর্তব্য এটা সে বিশ্বাস করে।
এরপর শালিনী তার হৃদয়ের গোপন জগত জড়ে বিচরণ করা সে মানুষটির কথা ভাবতে শুরু করে। অনেকদিন কাছে থেকে দেখা হয় না তাকে। তার নরম অধরে ছুঁয়ে যায় না তার সুকঠিন হাতের জাদুকরি স্পর্শ! অনেকদিন হল নিজের সুঠাম বাহুডোরে আবদ্ধ করে শালিনীর ভেতরের কোমল নারীটিকে ভালোবাসা দিয়ে আরও সুদৃঢ় করতে সে আসেনি!
শালিনী চোখ বন্ধ করে একবার তাকে অনুভব করে। তার অস্তিত্ব জুড়ে সে টের পায় তার উপস্থিতি। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে। কেউ আবার তার এই মতিভ্রম দেখে ফেললো নাতো? নাহ! সবাই ছুটে চলেছে সামনের দিকে। তার অনুভূতিকে কেউ টের পায়নি।

রাজ তার মতো গাড়ি চালনায় মগ্ন। মোহিত বাইকে দুর্বার গতি সঞ্চার করতে চাইছে কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছে। পাশাপাশি পুলিশ না থাকলে হয়তো এতক্ষণে সে বাইকের স্পীড আকাশে তুলে দিত! শালিনী আঁচ করতে পারলো কিসের অভাব তাকে এমন বেপরোয়া করেছে। সব ঠিক হলে কাউকে খুঁজে মোহিতকে একটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিবে আর রাজের জন্য তো একজন আছেই!
রাজ যেদিন পদ্মিনীকে নিয়ে রাতের বেলা তার বাংলোতে এসে হাজির হল তখনই সে বুঝতে পেরেছিল যে কিছু একটা মনস্তাত্বিক সম্পর্ক আছে দুজনার মাঝে। এরপর যখন রাজ বিস্তারিত সবকিছু খুলে বলল তাকে, তখন রাজের কথায় পদ্মিনীর প্রতি তার একটা নি:স্বার্থ ভালোবাসা সে টের পেয়েছিল। কিন্তু শালিনী যে এটা বুঝতে পেরেছে সেটা প্রকাশ করা তার কাছে উচিত বলে মনে হয়নি।
তবে পদ্মিনীর ব্যাপারটা স্পষ্ট নয়। সে রাজকে আসলে চায় কি না। নাকি কেবলই একটা আন্তরিকতা। রাজ ক্রিসমাটিক ছেলে, তাকে ভালো লাগতেও পারে। তবে পদ্মিনী মেয়েটি খুব রিজার্ভড। তাই জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। যদি মেয়েটা সত্যিই তাকে চায় তবে সঠিক সময় হলে তাকেও নিয়ে আসবে!
এরপর ধীরে ধীরে শালিনী নিজের কথা চিন্তা করে। তার নিজের কি হবে? তার মনের ভেতর সব কিছু জট পাকিয়ে যায়! It's complicated!
শালিনী আকাশের দিকে তাকায়। দিগন্তের শেষ রেখা ক্রমশ ম্লান হয়ে যাচ্ছে! দেখা যাক, তার স্বপ্নের পুরুষ সব ফেলে সোনালী ঊষা নিয়ে ভোরবেলা তার প্রিয় সময়টাতে তার কাছে আসে কিনা! যদি আসে সে তৈরী থাকবে তার সাথে কল্পলোকে ভেসে বেড়ানোর জন্য!

বিভিন্ন ভাবনা- দুর্ভাবনায় কেটে গেল সময়। একসময় তারা থানায় এসে পৌছালো। যথাযথ মর্যাদায় পাছায় লাথি দিয়ে লকআপে পুরে দেয়া হল মেহমানদের!
শালিনী তার চেয়ারে গিয়ে বসলো। মোহিত আর রাজ গোগ্রাসে পানি পান করলো। শালিনী এটা খেয়াল করলো। কিন্তু কিছু বললো না।
হ্যা তো বিজয়, এসো আজকের আপডেট বল।
জ্বী ম্যাডাম। এই হল আজকের এফআইআর গুলো।
বসো বিজয়।
শালিনী এফআইআরগুলো পড়তে শুরু করলো্। বেশ কিছুক্ষণ পর সে বলল,
দুটো রেইপ কেইস, তিনটে মার্ডার, একটি কিডন্যাপিং আর একটি সাইবার ক্রাইম আর একটি অনলাইন জালিয়াতি। বেশ কিছু জটিল কেইস এসছে। কতদূর কি করলে বিজয়?
ম্যাডাম আমি একজন রেইপ ভিকটিমের সাথে বলেছি। মেয়েটির স্টেটমেন্ট নিয়েছি। আশা করা যায় ক্রিমিনালদের আমরা দ্রুতই ধরতে পারবো। আর কিডন্যাপিং কেইসের জন্য কিডন্যাপ হওয়া মেয়েটার বাবার সাথে সরাসরি কথা বলেছি। তিনি বলেছেন কিডন্যাপাররা ৪০ লক্ষ দাবি করেছে কিন্তু এখনও লোকেশন বলেনি।
আই সি! আর বাকিগুলোর কাজ আপনার নির্দেশে করবো।
ঠিক আছে।
রাজ ও চৌহানও উপস্থিত ছিল। এরপর শালিনী তাদের বেশ কিছুক্ষণ নির্দেশনা দিলো। মোহিত বসে বসে রাজের টেবিলের পেপারওয়েট টা নিয়ে ঘুরাচ্ছিল আর ভাবছিল সাইকো কিলারের কেইসটাকে নিয়ে কিভাবে এগুনো যায়।
ঠিক আছে বিজয় আর মিস্টার চৌহান আপনার তবে আসুন। আর সারাদিন তো খাওয়া হয়নি আপনাদের। খেয়ে নিন। আর রাজ তুমি থাকো।
জ্বী ম্যাডাম।
আজ সারাদিন তো খাওয়া হলো না। চলো বাইরে খেয়ে আসি।
ম্যাডাম আপনি কি আমাকে আপনার সাথে আসতে বলছেন ?
হ্যা। আর শুধু তোমাকেই না তোমার গুরুমশায় মোহিতকেও।
আচ্ছা ম্যাডাম।
তাহলে রেডি হও।
ওকে ম্যাডাম।
রাজ উঠে গিয়ে মোহিতকে বলে, চল গুরু খেয়ে আসি।
চল। আবার ক্ষুধা লাগতে শুরু করেছে।
মোহিত পেপারওয়েটটা রেখে উঠে দাঁড়ালো। তবে সে অবাক হলো যখন দেখতে পেলো শালিনীও তাদের সঙ্গে আসছে।
চলো রাজ।
তারপর তিনজন বেরিয়ে এলো। চৌহান তিনজনকে একসাথে বেরুতে দেখলো। যদিও সে অবাক হল না তবে মনে মনে ভাবলো শালিনী ম্যাডাম মোহিতকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে। জঙ্গল দিয়ে ফেরার সময় মোহিতকে দেখে সে বুঝেছিল মোহিতকে নিয়ে ম্যাডাম ইনভেস্টিগেশনে গিয়েছিল। রাজের মুখে শুনেছে মোহিতের কথা। মোহিতের উপর সাইকো কিলার হামলা করায় একইসাথে সে কেইসটার ভিকটিম ও মামলার প্রাইমারী ইনভেস্টিগেটর হিসেবে দুদিক থেকেই ভালোভাবে জড়িয়েছে। মোহিতের ছবি অনেক আগেই যুক্ত করা হয়েছে কেইসের ফাইলের সাথে। সেখান থেকেই মোহিতকে দেখে চৌহান চিনতে পারে।
যাক তাকে যখন ম্যাডাম কাজের মনে করে সঙ্গে রাখছে তাহলে সে থাকুক। কোন কালে পুলিশ তো আর একা একা বড় বড় কেইস সলভ করতে পারেনি। গোয়েন্দার সহযোগীতা লেগেছেই। তবে তার উপর প্রভাব না খাটালে হয় বা তার কাজে আগ বাড়িয়ে বাগড়া না দিলেই হয়। তবে লোকটাকে দেখে মনে হয় সে বাগড়া দেবেই। এটাই আসলে গোয়েন্দাদের নিয়ে সমস্যা! নিজেদের ইনট্যুশন আর ফ্যাক্ট খাটিয়ে পুলিশকে প্রেশার দেয় তাদের কথা মতো চলতে। যাক গে, তবুও কোন হেল্প পেয়ে কেইসটা তাড়াতাড়ি দফরফা হলে হাফ ছেড়ে বাঁচা যায়! চৌহান খাবারে মন দেয়। আজ সারাদিন গেল দৌড়ঝাপ করে। তবে এটা তার কাছে নতুন কিছু নয়। পুলিশে চাকুরী করলে কোনদিন টাইম মতো খাওয়া জুটলে তো সেদিন রাজ কপাল!



[/HIDE]
 
[HIDE]

ম্যাডাম এই রেস্টুরেন্টে চলুন।
চলো।
তিনজন ভেতরে এসে বসলো্। পুলিশদের দেখে সবাই একটু নড়ে চড়ে বসলো। এএসপি শালিনী পুরো ধেরাধুনে তার চৌকস পেশাদারিত্ব আর অপূর্ব চেহারার জন্য বিখ্যাত মুখ। প্রায়ই প্রেস ব্রিফিং এ তাকে টিভিতে দেখা যায়। ইউটিউব ও সোশাল মিডিয়াতে কম বেশি আলোচনায় থাকেন। তবে ইউটিউবে ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি অনেক ইউটিউবার তাকে নিয়ে বিরূপ সমালোচনা করে এক প্রকার রোস্টিং করে। আজে বাজে টাইটেল দিয়ে তার ভিউয়ার্সদের আকৃষ্ট করে। তাদের মূল বক্তব্য হল- এসব সুন্দরী মহিলা পুলিশ দিয়ে আসলে কাজ হয় না। উল্টো ডিপার্টমেন্টের পয়সা নষ্ট আর লোকবল অপচয়! তারা মূলত বহুল আলোচিত সাইকো কিলারের কেইসটার অন্ধকারাচ্ছন্ন দিক নিয়েই তাকে কটাক্ষ করে। তারা এটা দেখে না তিনি জয়েন করার পর সাইকো কিলারের কেইসটা যদিও তেমন কোন আলোর মুখ দেখেনি কিন্তু শহরের ক্রাইম রেইট বেশ কমে গেছে। চাঁদাবাজি, চোরকারবারি, ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন বেশ কমেছে। আর তার পিছনে শালিনীর তার পেশার প্রতি একান্ত দায়িত্ববোধ ও দ্রুত কার্যকরী কৌশল রয়েছে। তার নির্দেশনায় তার অধীনস্তরা আগের চেয়ে সক্রিয়ভাবে
কাজ করছে আর তাই অন্যান্য কেইসগুলো আগের চেয়ে দ্রুত সলভ হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও নিন্দুক শালিনীর পেছনে সস্তা আঠার মতো লেগেই আছে!
তবে শালিনী এসব নিয়ে অতটা উদ্বগ্ন নয়। তার কাছে তার এফোর্টটাই মূখ্য। যারা বোঝার তারা ঠিকই বোঝে। কারণ শহরের সব অপরাধ দেখতে হয় তাকে। তাই একটা কেইসের ব্যর্থতা দিয়ে তাকে বিচার না করার জন্য সোশাল মিডিয়ায় অনেক লিখালিখি, মন্তব্য- পাল্টা মন্তব্য হয়। শালিনীও এসব জানে। কিন্তু লোকে তাকে সফল বা ব্যর্থ যাই বলুক সে নিজেকে ব্যর্থই মনে করে। কারণ প্রকৃতপক্ষে সে সাইকো কিলারের কেইসটাতে বিশেষ কোন অগ্রগতি করতে সক্ষম হয়নি। প্রায়ই উপর থেকে চাপ দেয়া হয় কিন্তু কোন সুরাহা করা সম্ভব হয়নি এখনও। আর তাছাড়া একজন পুলিশের নিজেকে কখনও সফল মনে করা উচিত নয়। নিজেকে সফল ভাবতে শুরু করলে তা পেশাদারিত্বের পদস্খলন ঘটায়।
তবে একটা কথা বলতেই হয়, ক্রিমিনাল থেকে সারাধণ মানুষ সবাই তাকে ভয় পায়, সমীহ করে। তাই যারা এতক্ষণ আয়েশ করে সিগারেট ফুঁকছিল তাকে দেখার সাথে সাথে সবাই শলার আগুন নিভিয়ে দিল। তারা এখন আড়চোখে তাকে দেখছে।
ইয়াং ছেলেমেয়েগুলো বরাবরই তাকে বেশি পছন্দ করে। বিশেষ করে তরুণীদের কাছে তিনি একজন আইডল হয়ে উঠেছেন। বেশ কয়েকবার টকশোতে তিনি গেস্ট হয়ে এসে মেয়েদের অধিকার ও পুলিশ সার্ভিসে মেয়েদের অংশগ্রহণ শীর্ষক মতবিনিময় করেছেন। সেটা তরুণীরাসহ নির্বিশেষে সবার ভালো লেগেছিল। তখন দেখে তার ফ্যান ফলোয়িং সৃষ্টি হয়েছে। তার বান্ধবীর মুখে শুনেছে তাকে নিয়ে নাকি ফ্যান পেইজও খোলা হয়েছে! কিছু উঠিতি ছেলেমেয়ে খুলেছে। তার বান্ধবী আবার তাতে লাইক দিয়ে এক্টিভ থাকে! তার বান্ধবীর মুখেই শুনেছে, সেখানে প্রশংসা- সমালোচনা দুটোই আছে। আর তার পাশাপাশি অনেক সমস্যা নিয়েও অনেকে লিখে।
অনেকেই বিভিন্ন ছলাকলায় শালিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। পেইজ খোলাটাকে শালিনী প্রথমে বাড়াবাড়ি ভাবলেও পরে যখন শুনলো যে অনেকে সামাজিক অপরাধ নিয়ে পোস্ট করে তখন সে বিষয়টাকে পজিটিভলি দেখা শুরু করে।

সমস্যা নিয়ে সাধারণত মেয়েরাই বেশিরভাগ পোস্ট করে। আর তাদের প্রধান বিষয় হল: ইভটিজিং ও হ্যারাসমেন্ট। কেউ কেউ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স নিয়ে লিখে। বিষয়গুলো জানার পর শালিনী এ পর্যন্ত অল্প কয়েকটা বিষয় খতিয়ে দেখে কাজ করেছে। তবে চাইলেও বেশি কাজ করা সম্ভব নয়। কারণ থানায় এফআইয়ারকৃত অভিযোগ নিয়ে কাজ করে শেষ করা যাচ্ছে না।
আর পুরুষ সমাজ নিয়ে বলতে গেলে তো আর কথাই নেই! পুরুষ সমাজ আশ্চর্য এক জাত! যদিও কিছু পুরুষ গঠনমূলক কথাবার্তা বলে। এটা ভালো দিক। কিছু আবার সত্যিকারের সমস্যা যেমন চাঁদাবাজি ও জায়গা -জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে হুমকী দেয়া প্রসঙ্গে লেখে। তবে হতাশার বিষয়, বেশিরভাগ পুরুষই আঁতেল মার্কা পুরুষ! তাকে নিয়ে কেউ কেউ কবিতা লেখে, কেউ কেউ হ্যাবলামির চূড়ান্ত করে! কেউ সরাসরি জীবনসঙ্গী হবার কথা বলে, কেউবা আবার বিয়ে না করার কারণ জানতে চায়, যেমন আরকি তারা তার অভিভাবক! আবার কেউ জানতে চায় তার কোন প্রেমিক আছে নাকি, থাকলে কেমন? হ্যান্ডসাম নাকি? নাকি প্রেম ট্রেম করে ছ্যাকা খেয়েছে এখন পুরুষ বিদ্বেষী হয়ে গেছে ইত্যাদি একান্ত ব্যক্তিগত ও নেহায়তই পরচর্চার বিষয় জানতে চায়। তার এখনও অবিবাহিত থাকা নিয়ে পুরুষ সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়!
কেউ কেউ আবার খুব নোংরা মন্তব্য করে। মনে হয় যেনো সে বিয়ে না করে চরম অপরাধ করে ফেলেছে। আসলে এ ধরণের পুরুষরা নারীদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি বলেই নারীদের নিয়ে বিতৃষ্ণা প্রকাশ করে। নারীরা তাদের বাজে স্বভাবের জন্যই তাদের খুব অপছন্দ করে কিন্তু এটা তারা বোঝে না। আর কেনো তাদের অপছন্দ করলো এটা নিয়ে সমগ্র নারীজাতির উপর একটা ক্ষোভ সবসময় কাজ করে। এটা যে এক প্রকার বিকৃত মানসিক অসুখ সেটা তারা বুঝে না। আর এরাই মূলত নারীদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়।
আবার কেউ কেউ ভাবে সে যেহেতু অবিবাহিত তাই তাদের এখনও সুযোগ আছে! তবে সব মিলিয়ে পুরুষদের কাছে সে আলোচিত, আরাধ্য বস্তু! এসব বিষয় আবার মেয়েদের সাথে সব স্তরের লোকদের কমেন্টবক্সে লড়াই চলে। শেষে যারা অভদ্রতার চূড়ান্ত করে তাদের ব্যান করা হয় পেইজ থেকে। পড়ে অন্য আইডি খুলে পেইজে জয়েন করে একই কেচ্ছা আবার শুরু তারা করে! মানুষ পারেও আসলে!
শালিনী এসব শুনে হতাশ হয়। তার মতে, ভারতবর্ষের পুরুষরা আজও সুশিক্ষিত হয়ে উঠতে পারেনি। টকশোতে যে কয়েকবার তাকে আহ্বান করা হয়েছে ততবারই তাকে কমন একটা প্রশ্ন করা হয়েছে আর তা হল, গৃহ নির্যাতন ও ধর্ষণ এর দিকে থেকে ভারতীয় পুরুষরা এত এগিয়ে কেনো? উত্তরে তার চমৎকার মন্তব্যে বিশ্লেষকগণ ও নারীসমাজ প্রশংসা করলেও কিছু পুরুষের রোষানলের শিকার হতে হয় তাকে।
তার বান্ধবী অবশ্য পুরুষদের এসব আতঁলামী নিয়ে বার বার খোঁচা দেয়! তার বান্ধবী সুষ্মা তাকে বলে, যেদিন শালিনী সাতপাকে বাঁধা পড়বে সেদিন নাকি এই শহরের বহু পুরুষ মদ খেয়ে হরিদ্বার ব্রীজ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্নাহুতি দেবে! শালিনী শুনে হাসে।
তার নাছোড়বান্দা বান্ধবী তাকে নিজের লাইফ নিয়ে সিরিয়াস হতেও পরামর্শ দেয়। এত বছরের চেনা- জানা লোকটিকে কেনো সে কাছে টেনে নিচ্ছে না সেটা সুষ্মা বুঝতে পারে না! শালিনী বোঝাতেও পারে না। এ এক অদ্ভূত জটিল সমীকরণ!
যাই হোক, রাজ খেয়াল করলো, সবাই তাদের একটু সমীহ করে দেখছে। রাজের কাছে এসব এখন পুরানো হয়ে গেছে।
মোহিতের কাছেও এসব নতুন কিছু না। আগেও পুলিশদের সাথে তার ওঠাবসা ছিল। মানুষ পুলিশ ও তার সাথের লোকদের দেখলে একটু ইতস্তত ও কৌতুহল দেখায়ই। আর পুলিশ যদি শালিনী ম্যাডামের মতো টালিউডের নায়িকা সদৃশ রূপবতী কেউ তবে মানুষের কৌতহুল আর স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে না। তাই সে মেনুকার্ডের দিকে মন দেয়।
ম্যাডাম কি নেবেন?
আপনার যা নিবেন সেটাই।
আরে না, না। আপনি বলুন না।
ঠিক আছে কার্ডটা দিন তাহলে।
মোহিত কর্ডা এগিয়ে দেয়।
রাজ কি খাবে বল। আপনি যা পছন্দ করবেন তাই।
তাই? বেশ। আর মোহিত আপনি?
আমারও সেই একই কথা।
বেশ!

ওয়েটার গদগদ হয়ে ছুটে আসে অর্ডার নেবার জন্য। কারণ পুলিশকে এক্সট্রা একটু খাতির করার জন্য সব রেস্টুরেন্টই প্রস্তুত থাকে। এটা তারা করে তাদের স্বার্থে। কারণ, পুলিশের সাথে জানাশোনা থাকলে কোন সমস্যা হলে পুলিশের সাহায্য নেয়া যাবে সহজেই। এছাড়া কোন অপকর্ম করলে পুলিশকে ম্যানেজ করে নিলে আর সমস্য থাকবে না।
তবে এখন শালিনীর প্রতি একটা শ্রদ্ধাবোধ থেকে ওয়েটার এগিয়ে এসেছে। আর যাই হোক, ওরা পুরো থানার কর্মকর্তারা যে খুব সৎ এটা শহরের সবাই বিশ্বাস করে। তাই তারা এসে তাদের রেস্টুরেন্টের জৌলুস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
শালিনী মেনুকার্ড নিয়ে অর্ডার দেয়। একই অর্ডার তিন জনের জন্য। অর্ডার সার্ভ হতে হতে নানা বিষয় নিয়ে তারা কথা বলে।

[/HIDE]
 
[HIDE]

ওয়েটার গদগদ হয়ে ছুটে আসে অর্ডার নেবার জন্য। কারণ পুলিশকে এক্সট্রা একটু খাতির করার জন্য সব রেস্টুরেন্টই প্রস্তুত থাকে। এটা তারা করে তাদের স্বার্থে। কারণ, পুলিশের সাথে জানাশোনা থাকলে কোন সমস্যা হলে পুলিশের সাহায্য নেয়া যাবে সহজেই। এছাড়া কোন অপকর্ম করলে পুলিশকে ম্যানেজ করে নিলে আর সমস্য থাকবে না।
তবে এখন শালিনীর প্রতি একটা শ্রদ্ধাবোধ থেকে ওয়েটার এগিয়ে এসেছে। আর যাই হোক, ওরা পুরো থানার কর্মকর্তারা যে খুব সৎ এটা শহরের সবাই বিশ্বাস করে। তাই তারা এসে তাদের রেস্টুরেন্টের জৌলুস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
শালিনী মেনুকার্ড নিয়ে অর্ডার দেয়। একই অর্ডার তিন জনের জন্য। অর্ডার সার্ভ হতে হতে নানা বিষয় নিয়ে তারা কথা বলে।

ম্যাডাম! আমি ভেবেছিলাম যে সাইকো কিলারকে আমরা আজ ধরে ফেলবো। রাজ বলল।
আমিও সেটা ভেবেছিলাম ম্যাডাম। কিন্তু আমরা আসলে মরিচীকার পেছনে দৌড়োলাম। মোহিত বলল।
শালিনী শান্ত গলায় বলে, দেখ প্রথমে আমিও ভেবেছিলাম যে সাইকো কিলারই আমাকে গুলি করেছে। ভাবলাম সে নিজেই আমাদের কাছে চলে এসেছে যখন আজ আর সে পালাতে পারবে না। আজকে আর তাকে ছাড়বো না। তারপর তোমাদের সাথে নিয়ে যখন তার পিছু নিলাম তখনও আমার একটা আশা ছিল যে আমরা তাকে ধরবোই। কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম সে সিরিয়াল কিলার নয় তখন আমারও অনেকটা হতাশ লাগছিল। তবে এখন আর হতাশা কাজ করছে না। কারণ, এক অপরাধীকে ধরতে না পারলেও কয়েকজনকে গ্রেফতার তো করা সম্ভব হয়েছে। আর তাদের দ্বারা তাদের মাথাগুলোকেও ধরা সম্ভব হবে। এতে শহরের আরেকটা অপরাধচক্র ধরা কমে যাবে। আমরা যে অপরাধবিহীন সমাজের কথা চিন্তা করি সে লক্ষ্যে আমরা আরো একটু এগিয়ে যাবো।
সেটা ঠিক ম্যাডাম। তবুও তাকে ধরতে পারলে আমাদের উপর যে প্রেশারটা আছে সেটা সরে যেতো।
তা ঠিক বলেছো রাজ। এ কেইসটা আমার মনটাকে সব সময় একটা অস্থিরতার মধ্যে ঘিরে রাখে।
আর আমি তো কবে থেকে চাইছি কবে এই সাইকো কিলারটিকে ধরবো। আমাকে যে যন্ত্রণা সে দিয়েছিল তা সুদে আসলে উশুল করবো। মোহিতের চোখ ক্ষোভে জ্বলজ্বল করতে থাকে।
উশুল তো এক প্রকার আপনি করেছেনই তাকে জখম করে।
হ্যা তা ঠিক। কিন্তু তাকে ধরাটাই আমার এখন জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
এটা ভালো দিক যে আপনার মতো সমমনা আর প্রত্যয়ী একজনকে আমরা কাছে পেয়েছি।
থ্যাংক ইউ ম্যাডাম। আমি আপনাদের সর্বাত্নক সহযোগীতা করার জন্য সর্বদা পাশে আছি।
দ্যাটস গুড!
কিন্তু ম্যাডাম আমরা কিভাবে এগুবো এখন?
দেখো রাজ! একজন মুখোশ পরিহিত মানুষের সঠিক আইডেন্টিটি পেতে হলে তাকে মুখোশবিহীন অবস্থায় তার স্বরূপে যারা দেখেছে তাদের সাহায্য নিয়ে খুঁজতে হয়।
হ্যা সেটা ঠিক ম্যাডাম। আর এই ক্ষেত্রে তো আমাদের চাক্ষুষ স্বাক্ষী একমাত্র পদ্মিনী।
হ্যা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সে বলেছে সাইকোর চেহারা তার ঠিকমতো মনে নেই। তাই না!
জ্বী ম্যাডাম। তাহলে কি করবেন?
দেখো রাজ তুমি পদ্মিনীকে দিয়ে ওর যতটুকু মনে পড়ে তা দিয়েই সিরিয়াল কিলারের স্কেচ তৈরী করো।
আচ্ছা।
এটা আমাদের আরও আগেই করা উচিত ছিল। কিন্তু পদ্মিনীর হেল্প না পাওয়া যাবার কারণে সেটা এতদিনেও করা সম্ভব হয়নি।
জ্বী ম্যাডাম।
তাই, তুমি শীঘ্রই তার সাথে যোগাযোগ করে, তার কাছে গিয়ে একটা স্কেচ বানাবে। তারপর সেই স্কেচ নিয়ে আমরা আজকে গ্রেফতার করা অপরাধীদের দেখাবো। আর জেলে থাকা অপরাধীদের দেখাবো। যেহেতু তারাও একই রকম মুখোশ পড়তো হতে পারে সাইকো কিলার আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে জড়িত ছিল কিংবা এখনও আছে। হতে পারে একসাথে ক্রাইম সিন্ডিকেটে তারা ছিল। তাই কেউ না কেউ তাকে চিনতেও পারে।
ওকে ম্যাডাম। আমি শীঘ্রই এটা করবো।
আর আমি কি করতে পারি ম্যাডাম?
আপনি আপনার মতো করে ইনভেস্টিগেশন করতে থাকুন। দরকার পড়লে রাজকে এসিস্ট করুন। আর আমরা আপনার প্রয়োজন অনুভব করলে আপনাকে ডেকে নেবো।
ওকে ম্যাডাম।
রাজ মনে মনে পদ্মিনীর কথা ভাবতে থাকে। কতদিন হয়ে গেলো সে গেছে। অনেকবার মনে হয়েছে তাকে ফোন করার কথা। কিন্তু পরে আর সাহসে কুলায়নি। যদি তাকে ফোন করার পর তাকে ইগনোর করে যায়, তার আবেগটা যদি বুঝতে পারে তবে সে ছোট হয়ে যাবে তার সামনে। তবে পদ্মিনীও তো একবার তাকে ফোন করলো না। এতদিন রইলো তাদের মাঝে কিন্তু একবারও কি মনে চাইলো না তার সাথে একটু কথা বলুক? তার মনে কি একটু সে জায়গা করতে পারে নি? আমরা কি সেই উপযুক্তও নই? নাকি তাকে একটা অহেতুক নাটক করে বিপদে ফেল দিয়ে তাকে আইনের চোখে অপরাধী বানিয়ে, তার পরিবারের কাছ থেকে তাকে দূরে রেখেছি দেখে আমাদেরকে সে খারাপ মনে করে আজও? নিজেকে খুব ছোট মনে হতে থাকে রাজের।
কিরে রাজ কি ভাবছিস?
না কিছু না গুরু! এমনি। রাজ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
বুঝতে পেরেছি তুই কার কথা ভাবছিস। মোহিত মুচকী হাসে।
গুরু তুমিও না। সব সময় খোঁচা মেরে কথা বল।
হুম তোকে খোঁচা মেরে কথা বলবো না তো কাকে বলবো?
কি ব্যাপার রাজ কাকে নিয়ে কথা হচ্ছে?
কিছু না ম্যাডাম! এমনিই! গুরু একটা ফান করছে আমার সাথে!
শালিনী, মোহিত ও রাজ দুজনের দিকে তাকায়। সে বুঝতে পেরেছে মোহিত কাকে বুঝাতে চেয়েছে কিন্তু সে দুজনকে বুঝতে দেয় না। তবে এটা নিশ্চিত হওয়া গেল যে সে রাজ আর পদ্মিনীর ব্যাপারে যা ধারণা করেছে তা ঠিক। তবে, ব্যাপারটা শালিনী বুঝতে পারে নি এমন ভাব করে এড়িয়ে গেলো। এ ব্যাপারে সে পরে কখনও একান্তে রাজের সাথে কথা বলবে।
ওয়েটার মেন্যু সার্ভ করে যায়। মোহিত সঙ্গত কারণে রাজ ও শালিনী থেকে তুলনামূলক বেশি ক্ষুধার্থ!
খেতে খেতে মোহিত বলে বেশ ভালোই ওদের মেন্যুটা। ওয়েটার বুঝতে পারছে তাদের খেতে খুব ভালো লাগছে। তাই সে এগিয়ে আসে।
স্যার কেমন লাগছে মেন্যুটা?
জ্বী বেশ ভালো। রাজ উত্তর দেয়।
আপনাদের একটা বিশেষত্ব আছে মনে হচ্ছে। মোহিত প্রশংসার মাত্রা আরেকটু বাড়ায়!
জ্বী স্যার। আমরা এখানকার বেস্ট।
হুম গুড! রাজ বলে।
আরেকটা ওয়েটার ড্রিংকস নিয়ে আসে।
ফিটনেস মেইন্টেনের জন্য শালিনী ড্রিংকস নেয় না কখনও। তাকে দেখে রাজও নিলো না। শুধু মোহিত ড্রিংকস নিলো।
তারপর তিনজন খাওয়া শেষ করে বিল দিতে গেলো।
মোহিত এগিয়ে গেলে শালিনী বলল আমি দিচ্ছি দাঁড়ান।
না ম্যাডাম আমি দিচ্ছি।
মিস্টার মোহিত! বিলটা আমি দিবো।
শালিনীর কমান্ডিং টোন শুনে মোহিত আর কথা বাড়ালো না। শালিনী দেখলো বিলটা বলা চলে প্রায় অর্ধেক ধরা হয়েছে।
এক্সকিউজ মি!
ইয়েস ম্যাডাম।
বিলট কি ঠিক আছে?
জ্বী দেখছি। মালিক বসা ছিলেন ভিতরে। তিনিই বিলটা কমাতে বলেছেন। তিনি এগিয়ে এলেন।
জ্বী ম্যাডাম বলুন কোন সমস্যা?
আমার মনে হচ্ছে বিলটা কম ধরা হয়েছে। বিলটা আরও বেশি আসার কথা।
না না ম্যাডাম। আপনি আর স্যারেরা প্রথমবার এসেছেন তাই আমি ইচ্ছে করেই বিলটা কমাতে বলেছি।
আই সি! বিলটা আপনি কমাতেই পারেন। কিন্তু আমি এটা একসেপ্ট করবো না যে আপনি সৌজন্যতা দেখিয়ে বিলটা কম নিয়েছেন।
রেস্টুরেন্টের মালিক ও ওয়েটাররা মুখ কালো করে ফেলে। বাকি লোকেরাও মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে। কিন্তু কি সমস্যা তারা বুঝতে পারে না।
সরি ম্যাডাম। আমি কি করতে পারি?
আপনি অন্য সবার কাছ থেকে যা বিল রাখতেন তাই রাখবেন এখন আমাদের কাছ থেকে।
ওকে ম্যাডাম।
আমরা সার্ভিসে আছি দেখে আমরা সবাই আপনাদের সম্মানের পাত্র হতে পারি বটে কিন্তু ভুলে যাবেন না আমরা আপনাদের সেবায়ই সর্বদা নিয়োজিত। তাই বিল কম নিয়ে সম্মান প্রদর্শন করবেন এটা ঠিক নয়।
জ্বী ম্যাডাম বুঝতে পেরেছি। আমি আর আমরা স্টাফরা আন্তরিক ভাবে দু:খিত।
ইটস ওকে।
এই যাও রেগুলার বিল বানিয়ে নিয়ে এসো। মালিক তার কর্মচারীকে নির্দেশ দেয়। যখন রেস্টুরেন্টের মালিক রেগুলার বিল বানিয়ে আনতে বলল তখন সেটা সবাই শুনতে পেলো। আর তখন তারা ক্লিয়ার হলো কি নিয়ে কথা হচ্ছে।
দেশজুড়ে পুলিশদেরকে হোটেল, রেস্টুরেন্টে, মার্কেট সব জায়গায় বিক্রেতারা সম্মান করে। ভয় পায়। তাদের সমীহ করে কথা বলে। জিনিসের দাম কম রাখে। এমনকি বিশাল ছাড় দেয়। কিন্তু এটা যে ঠিক নয়। আর এটা পুলিশেরাও বোঝে। কোন কোন পুলিশ অফিসার স্বেচ্ছায় এই সমাদর গ্রহণ তো কেউবা না করলে উল্টো ইউনিফর্মের প্রতাপ দেখায়। যেটা এক বড় মাপের অন্যায়। কিন্তু এই অন্যায়ের মাঝে ডুবে আছে ভারতবর্ষের প্রতি অঞ্চলের পুলিশের লোক। তবে সবাই যে এমনটা করে থাকে তা নয়। তবে এই অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য কাউকে না কাউকে শুরু করতে হবে।
আজ শালিনীর এই ইতিবাচক দিকটিও সবার কাছে প্রকাশিত হলো। তার প্রতি সবার শ্রদ্ধা ও আস্থার মাত্রাটা আরও বেড়ে গেলো। সাথে রাজও বুঝতে পারলো যে চাইলেই আমরা ভালো একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারি। আর এজন্য বেশি কিছু যে করতে হবে তা নয়।
এরপর নতুন বিল আনার পর শালিনী চকচকে ১০০০ রুপির নোটটা বের করে দিলো। খুচরা টাকা ফেরত নিয়ে রাজকে বলল রাজ, এটা ওয়েটার ছেলেটাকে দিয়ে দেও।
ওয়েটার ছেলেটা নোটে চুমু দিয়ে মাথায় ঠেকিয়ে পকেটে রেখে দিল। সে বেশ খুশি হয়েছে। অনেক পুলিশ দেখেছে সে জীবনে। কিন্তু সব দিকে ভালো এমন পুলিশ খুব কমই দেখেছে। বাকি সবাইও দেখলো। পুলিশ সম্পর্কে কিছু নেতিবাচক বদ্ধমূল ধারণা কিছুটা হলে দূর হলো তাদের।
বাইরে বের হয়ে শালিনী বলল, বুঝলে রাজ চাইলেই মানুষের কাছে নিজেকে ছোট না করে বড় হয়ে থাকা যায়। মানুষ আমাদের খারাপ মনে করে আমাদের নিজেদের দোষেই। সব সময়, সব জায়গায়, সবার কাছ থেকে ফেবার নিবে না। এতে মর্যাদা যেমন কমে যায় অন্যদিকে অন্যের গলগ্রহ হতে হয়। বুঝলে? চলো এবার। +
ঠিক বলেছেন ম্যাডাম।
মোহিতও বুঝলো কেন শালিনী ম্যাডামের এত সুখ্যাতি, কেনো এত মানুষ তাকে খুব শ্রদ্ধা করে।

[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top