What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected ছোছনা ও জননীর গল্প - উপন্যাস (1 Viewer)

মনসুর সাহেব (এমএ, বিটি. গোন্ড মেডেল) মানুষটা ছোটখাটো। গায়ের রঙ ভয়াবহ ধরনের কালো। ছাত্ররা আড়ালে তাকে ডাকে অমাবস্যা স্যার। স্বভাবে-চরিত্রে অসম্ভব কঠিন। গত নবছর ধরে তিনি এই স্কুলের হেডমাস্টার। এ নবছরে শুধু একদিনই নাকি তাকে হাসতে দেখা গেছে। ১৯৬৩ সালের মে মাসের ৮ তারিখে। সেদিন মেট্রিক পরীক্ষার রেজাল্ট হয়েছিল এবং নেপালচন্দ্ৰ হাওলাদার নামের এই স্কুলের একজন ছাত্র ফোর্থ স্ট্যান্ড করেছিল। আবারো কোনো একদিন এই স্কুল থেকে কেউ স্ট্যান্ড করলে মনসুর সাহেব হয়তো হাসবেন। সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। গ্রামের স্কুলে ভালো ছাত্র আসছে না।

ইরতাজউদ্দিন বসেই আছেন। হেডমাস্টার সাহেবের লেখালেখির কাজ শেষ হচ্ছে না। ইরতাজউদিনের মনে হলো–হেডমাস্টার সাহেব আজ যেন অন্যদিনের চেয়েও গম্ভীর। মনে হয় তার শরীরটা ভালো না। কিংবা দেশ থেকে খারাপ কোনো চিঠি পেয়েছেন। প্রায়ই হেডমাস্টার সাহেব দেশ থেকে খারাপ চিঠি পান। মনসুর সাহেবের স্ত্রীর মাথা পুরোপুরি খারাপ। ভদ্রমহিলা থাকেন তার বাবার কাছে। সেখানে তার উপর নানান ধরনের চিকিৎসা চলে। চিকিৎসার কারণে কিংবা প্রাকৃতিক কারণে ভদ্রমহিলার মাথা মাঝে-মাঝে ঠিক হয়, তখন হেডমাস্টার সাহেব তাকে নীলগঞ্জ নিয়ে আসেন। সেই সময় হেডমাষ্টার সাহেবের মুখ ঝলমল করতে থাকে। তাকে দেখে মনে হয় সুখী একজন মানুষ। গায়ের কালো রঙ তখন তেমন কালো লাগে না। সেই সময় প্রায় প্রতিদিনই তিনি স্ত্রীকে নিয়ে সোহাগী নদীর পাড় ধরে হাঁটেন। তাদের বাড়ির কাছেই একটা বটগাছ–যার কয়েকটা ঝুরি নেমে গেছে সোহাগী নদীর পানিতে। সেই বটগাছের গুড়িতেও প্রায়ই হেডমাস্টার সাহেবের স্ত্রীকে বসে থাকতে দেখা যায়। ঘোমটাটানা লাজুক ধরনের একটি মেয়ে। যার ভাব-ভঙ্গি এমন যেন নতুন বিয়ে হওয়া বউ, স্বামীর সঙ্গে যার এখনো তেমন করে পরিচয় হয় নি। মহিলা বসে থাকেন, তার আশপাশে হাঁটাহাঁটি করেন হেডমাস্টার সাহেব। বড়ই মধুর দৃশ্য। কিছুদিন পর ভদ্রমহিলার মাথা আবার যথানিয়মে খারাপ হয়। হেডমাস্টার সাহেব বিষণ্ণ মুখে তাকে শ্বশুরবাড়ি রেখে আসেন। স্কুলে ফিরে কিছুদিন তার খুব মেজাজ খারাপ থাকে। অকারণে সবাইকে বকাঝকা করেন। তারপর আবার স্বাভাবিক হয়ে যান। সোহাগী নদীর পাড়ে একা একা হাঁটেন। বটগাছের গুড়িতে একা বসে থাকেন।
 
হেডমাস্টার সাহেব লেখা বন্ধ করে চোখ তুলে তাকালেন। প্রায় বিড়বিড় করে বললেন, আমার বড় শ্যালককে একটা পত্র লিখলাম। আমার স্ত্রীর অবস্থা ভালো না। তারা তাকে পাবনার মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি করতে চায়।

কী হয়েছে?

নতুন করে কিছু হয় নাই। পুরনো ব্যাধি। তবে এবার নাকি বাড়াবাড়ি। আমার বড় শ্যালকের স্ত্রীকে মাছ কাটা বটি দিয়ে কাটতে গিয়েছিল। সবাই এখন ভয় পাচ্ছে। ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এখন তাকে ঘরে তালাবন্ধ করে রেখেছে। খুব চিৎকার চেচামেচিও না-কি করে।

ইরতাজউদ্দিন কিছু বললেন না। চুপ করে রইলেন। তার মনটা খারাপ হলো। আর তখনি ভুরু কুঁচকে হেডমাস্টার সাহেব কথা বলা শুরু করলেন।

ইরতাজউদ্দিন সাহেব।

জি।

দেখলাম স্কুলে একটা পতাকা টানিয়েছেন।

জি, ঢাকা থেকে নিয়ে এসেছি। বারো টাকা দাম নিয়েছে। কাপড়টা সিস্কের। জাতীয় পতাকা আজকাল পাওয়াই মুশকিল। কেউ বিক্রি করতে চায় না।

নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করেছেন। অপ্রয়োজনীয় খরচ করার মতো অবস্থা স্কুলের নেই। যেখানে মাস্টারদের বেতন দিতে পারি না…

ইরতাজউদ্দিন নিচু গলায় বললেন, জাতীয় পতাকা অপ্রয়োজনীয় কোনো ব্যাপার না।

পতাকা তো একটা আমাদের ছিল।

সেটার রঙ জ্বলে গেছে। মনসুর সাহেব গম্ভীর মুখে বললেন, এই দেশের জন্যে রঙ জ্বলে যাওয়া পতাকাই ঠিক আছে, রঙ তো বাস্তবেও জ্বলে গেছে।

ইরতাজউদ্দিন বললেন, আপনার কথা বুঝলাম না। হেডমাস্টার সাহেব বিরস গলায় বললেন, এক সময় এই পতাকাটাকে নিজের মনে হতো, এখন হয় না। সারা দেশে কী হচ্ছে খবর নিশ্চয়ই রাখেন, না রাখেন না?

জি, খবর রাখি।

লক্ষণ খুব খারাপ। পতাকা বদলে যেতে পারে। কাজেই আমার ধারণা, আপনি অকারণে দরিদ্র একটা স্কুলের বারোটা টাকা খরচ করিয়ে দিয়েছেন।

ইরতাজউদ্দিন বিস্মিত গলায় বললেন, পতাকা বদল হয়ে যাবে?

হ্যাঁ, যাবে। চট করে বদল হবে না। তবে হবে। লক্ষণ সে-রকমই। মাওলানা ভাসানী পল্টনের মাঠে কী বক্তৃতা দিয়েছেন জানেন?

জি-না।

না জানারই কথা, কোনো কাগজে আসে নাই। সব খবর তো কাগজে আসে না। কোনটা আসবে কোনটা আসবে না তা তারা ঠিক করে দেন।

মাওলানা ভাসানী কী বলেছেন?

তিনি বলেছেন–নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার। স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান জিন্দাবাদ।

কী বলেন এসব?

পতাকা বদল হয়ে যাবে। চানতারা পতাকা থাকবে না। মাওলানা সাহেব সুফি মানুষ। উনার জীন সাধনা আছে। জীনদের মারফতে তিনি আগে আগে খবর পান। চানতারা পতাকা থাকবে না।

ইরতাজউদ্দিন চিন্তিত মুখে বললেন, যদি হয়ও সেটা ভালো হবে না।

ভালো হবে না কেন?

হিন্দুর গোলামি করতে হবে। মুসলমান হিন্দুর গোলামি করবে সেটা কি হয়?

হেডমাস্টার সাহেব ক্লান্ত গলায় বললেন, কপালে গোলামি লেখা থাকলে গোলামি করতে হবে, উপায় কী? তবে দেশ স্বাধীন হলেই হিন্দুর গোলামি করতে হবে–এ কী ধরনের চিন্তা? আপনি আধুনিক মানুষ। আপনি উন্নত চিন্তা করবেন, সেটা তো স্বাভাবিক। এখন তো আমরা গোলামিই করছি। অন্য কিছু তো করছি না। সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের সার্ভিসে বাঙালির সংখ্যা কত জানেন? শতকরা দশেরও কম। সেনাবাহিনীতে বাঙালির সংখ্যা জানেন? না জানাই ভালো। পশ্চিমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বাইরে যাবার আমাদের উপায় আছে? কোনো উপায় নেই। শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব ইলেকশানে জিতে কি পেরেছেন এসেম্বলিতে বসতে? পারেন নি। কারণ তাকে বসতে দেওয়া হবে। না। কোনোদিনও না। এখন যা হচ্ছে তার নাম ধানাই। আর পানাই। কাজেই আমাদের সময় হয়ে আসছে। পতাকা খুলে ফেলে দেওয়ার।

পতাকা নামিয়ে ফেলব?

হ্যাঁ। আপাতত পুরনো পতাকাই উড়ুক। নতুনটা না।

জি আচ্ছা।

আর পতাকার দাম বাবদ বারো টাকা আপনাকে স্কুল ফান্ড থেকে দেওয়া হবে না। পারচেজ কমিটির অনুমোদন ছাড়া আপনি পতাকা কিনেছেন। এটা আপনি পারেন না। সবকিছু নিয়মের ভিতর দিয়ে হতে হবে। নিয়মের বাইরে যাওয়া যাবে না।

জি আচ্ছা।

আর শুনুন, আমার স্ত্রীর জন্য একটু দোয়া করবেন।

জি, অবশ্যই করব। জোহরের নামাজের পরেই দোয়া করব ইনশাআল্লাহ।

ইরতাজউদ্দিন মন খারাপ করে হেডমাস্টার সাহেবেব ঘর থেকে বের হলেন।
 
স্বাধীন পূর্ববাংলা এই জাতীয় কথাবার্তা ইদানীং খুব শোনা যাচ্ছে, কিন্তু এগুলি কোনো কাজের কথা না। আকাজের কথা। অখণ্ড হিন্দুস্তানে মুসলমানরা অনেক কষ্ট করেছে। জিন্নাহ সাহেব মহাপুরুষ মানুষ ছিলেন, তিনি অভাগা মুসলমানদের মুক্তি দিয়েছিলেন। অকৃতজ্ঞেব মতো সেইসব কথা ভুলে গেলে চলবে না। মুসলমানদের ভুলে গেলে চলবে না যে কোনো হিন্দুর বাড়িতে তারা ঢুকতে পারত না! হিন্দু বাড়িতে মুসলমান ঢুকলে সেই বাড়ি অপবিত্র হয়ে যেত। হিন্দু ময়রার মিষ্টির দোকানে বসে তারা মিষ্টি খেতে পারত না। মুসলমানরা নগদ পয়সা দিয়ে ভিখিরির মতো দুহাত বাড়িয়ে দিত। মিষ্টি ছুঁড়ে দেওয়া হতো সেই হাতে; এই অপমানের ভেতর দিয়ে তাকে অসংখ্যবার যেতে হয়েছে। আজ যারা স্বাধীন বাংলা স্বাধীন বাংলা করছে, তারা কি এই অপমানের ভেতর দিয়ে গিয়েছে? মাওলানা ভাসানী তো গিয়েছেন। তাহলে তিনি কেন এই কাণ্ডটা করছেন? তার মতো বুদ্ধিমান লোক হিন্দুদের চাল বুঝতে পারবেন না তা কী করে হয়?

ইন্ডিয়া যে একটা গভীর ষড়যন্ত্র করছে–এ তো বোঝাই যাচ্ছে। পুরো জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। খুব সূক্ষ্মভাবে করছে। এটা আর কিছুই না, জিন্নাহ সাহেবের সঙ্গে দাবাখেলায় হেরে যাবার শোধ তোলার চেষ্টা। এতদিন পর তাবা! একটা সুযোগ পেয়েছে। এই সুযোগ তারা হাতছাড়া করবে না।

জোহরের নামাজের পর মাওলানা ইরতাজউদ্দিন পাকিস্তানের সংহতি ও মঙ্গলের জন্য দীর্ঘ প্রার্থনা করলেন। হেডমাস্টার সাহেবের স্ত্রীর বিষয়ে দোয়া করার কথা ছিল। করতে ভুলে গেলেন। তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। তিনি আবারো নফল নামাজে বসলেন।

সেদিনই দুপুর একটায় রেডিওতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করলেন। তারিখটা হলো

রেডিও পাকিস্তান ঢাকা থেকে ইয়াহিয়াকে উদ্ধৃত করে ঘোষণা প্রচার করা হলো–

যথাক্রমে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্বশীল দুটি প্ৰধান দলের মধ্যকার অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বাধ্য হয়েছি ____ সালের ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের বৈঠক মুলতবি করতে। তবে আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, এ মুলতবি দুই/তিন সপ্তাহের বেশি অতিক্রান্ত হবে না এবং এই স্বল্প পরিসর সময়ে আমি আমাদের দেশের দুই অঞ্চলের নির্বাচিত প্ৰতিনিধিদের মধ্যে সৌহার্দ্য আনয়নে সব ধরনের প্ৰচেষ্টাই করব।



সন্ধ্যা পার হয়েছে। মাগরেবের নামাজ শেষ করে ইরতাজউদ্দিন রান্না বসিয়েছেন। আয়োজন সামান্য। ভাত, ডাল আর আলুভর্তা। বৈয়মে খাঁটি ঘি আছে। আলুভর্তার সঙ্গে দুচামচ ঘি দিয়ে দিবেন। ক্ষুধা পেটে অমৃতের মতো লাগবে। নবিজী দুটা খেজুর খেয়ে অনেক রাত পার করেছেন। সেই তুলনায় রাজ ভোগ।

আলুভর্তা করা গেল না। তিনটা আলু ছিল। তিনটাই পচা। তাছাড়া আলুভতাঁর প্রধান উপকরণ কাঁচামরিচ বা শুকনামরিচ কোনোটাই নেই।

ইরতাজউদ্দিন বললেন, শুকুর আলহামদুলিল্লাহ। সবসময় সর্ব পরিস্থিতিতে শুকুরগুজার করতে হবে। আল্লাহপাক শুকুরগুজারি বান্দা পছন্দ করেন।

হাঁড়িতে পানি ফুটছে— ইরতাজউদ্দিন ফুটন্ত পানিতে ডাল ছাড়বেন, তার ঠিক আগে আগে মধু এসে বলল, হেড স্যার ডাকে। রাতে তার সাথে আপনেরে খাইতে বলছেন।

ইরতাজউদ্দিন বললেন, রান্না কী?

মধু বলল, মৈরিলা মাছের ঝোল, টাকি ভর্তা, মাষকলাই-এর ডাইল।

রেঁধেছে। কে? তুই?

জে।

ইরতাজউদ্দিন আবারো বললেন, শুকুর আলহামদুলিল্লাহ। মধু হেডমাস্টার সাহেবের বাড়িতে থাকে। রান্নাবান্না করে। তার রান্নার হাত খুবই ভালো। মাছের কাটাকুটা, সামান্য লাউপাতা কুমড়াপাতা দিয়ে সে এমন জিনিস তৈরি করে যে মোহিত হয়ে খেতে হয়। তার রান্না মিষ্টি কুমড়ার ভর্তা যে খায় নি, সে জানেই না ভতাঁর স্বাদ কী।

মধু!

জি স্যার।

দেশের অবস্থা তো ভালো না রে মধু। কী হয় কে জানে!

মধু দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল, হউক গা। কপালের লিখন না হবে খণ্ডন।।
 
মধুকে অতিরিক্ত আনন্দিত মনে হচ্ছে। কারণে অকারণে দাঁত বের করে নিঃশব্দে হাসছে। ইরতাজউদ্দিন ভুরু কুঁচকে বললেন, গাজা খেয়েছিস না-কি?

মধু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল, খাইতেও পারি, আবার নাও খাইতে পারি।

এই জিনিসটা না খেলে হয় না?

হয়। খাইলেও হয়, না খাইলেও হয়।

ইরতাজউদ্দিন ডাল পানিতে ভিজিয়ে ফেলেছেন। পানি থেকে তুলে কুলায় মেলে দিলেন। শুকিয়ে গেলে আবার ব্যবহার করা যাবে। কোনো কিছুই নষ্ট করা উচিত না। আল্লাহপাক অপচয়কারী পছন্দ করেন না।

স্যার গো, দিনের অবস্থা কিন্তু ভালো না। ঝড় তুফান হইতে পারে।

ইরতাজউদ্দিন সামান্য চিন্তিতঃ বোধ করলেন। তিনি যে চালাঘরে বাস করেন তার অবস্থা শোচনীয়; প্রধান খুঁটির সব কটাতে উইপোকা ধরেছে। ঝড়ের বড় ঝাপ্টা এই ঘর নিতে পারবে না। ঘর নতুন করে বাঁধতে হবে। ঠিক করে রেখেছিলেন, বর্ষার আগে আগে ঘরের কাজটা ধরবেন। মনে হয় না। এইবারও পারবেন। সব নির্ভর করছে আল্লাহপাকের ইচ্ছার উপর। উনি ইচ্ছা! করলে হবে। উনি ইচ্ছা না করলে হবে না। তাঁর অনুমতি ছাড়া কিছুই হবে না। তাহলে মানুষের চেষ্টার মূল্যাটা কী?

মধু খিকখিক করে হাসছে। ইরতাজউদ্দিন বললেন, কী হয়েছে?

মধু বলল, কিছু হয় নাই। একটা শিলুক মনে আসছে। বলব?

বল শুনি।

গাই এ ভাঙ্গে নল খাখরী, বাছুর ভাঙ্গে আইল
ছয় মাস হইল গাই বিয়াইছে বাছুর আইছে কাইল।

কন দেহি জিনিসটা কী?

জানি না।

খুবই সোজা। একটু চিন্তা নিলেই হবে।

চিন্তা নিতে পারছি না।

জিনিসটা হইল গিয়া কচ্ছপের আন্ডা।

ইরতাজউদ্দিন বললেন, কচ্ছপের আন্ডা হলে তো ভালোই।

আরেকটা বলি?

শিলুক শুনব নারে মধু। চল রওনা দেই।

মধু উসখুসি করছে। শিলুক তার খুব পছন্দের একটা বিষয়। এই অঞ্চলে শিলুক-ভাঙ্গানি হিসাবে তার নাম-ডাক আছে; বিয়ে-শাদি হলেই তার ডাক পড়ে। বরযাত্রীদের কঠিন কঠিন শিলুক দিয়ে সে নাকানি-চুবানি খাওয়ায়।



দিনের অবস্থা আসলেই ভালো না; আকাশে ঘন মেঘ। মাঝে-মাঝে বিজলি চমকাচ্ছে। বিজলির চমকে দেখা যাচ্ছে পশ্চিম দিক থেকে মেঘ উড়ে উড়ে আসছে। পশ্চিমি মেঘ ভালো জিনিস না। ঝড়-ঝাপ্টা হবে।

ইরতাজউদ্দিন দ্রুত পা চালাচ্ছেন। বৃষ্টি নামার আগেই হেডমাস্টার সাহেবের বাড়ি পৌছানো দরকার। থানার সামনে দিয়ে গেলে সময় বেশি লাগবে। তবে রাস্তা ভালো। ডিসট্রিক্ট বাের্ডের সড়ক। জেলেপাড়ার ভেতর দিয়ে গেলে অতি দ্রুত পৌছানো যাবে। সমস্যা একটাই–জঙ্গলের ভেতর দিয়ে রাস্তা। মাঝেমধ্যে খুব সাপের উপদ্রব হয়। ইরতাজউদ্দিন সাপ ভয় পান।
 
বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করেছে। ঠাণ্ডা বাতাসও ছেড়েছে। শরীর জুড়িয়ে যাওয়া ঠাণ্ডা। চারদিকে ঘুরাঘুট্টি অন্ধকার। ডিসট্রিক্ট বোর্ডের সড়ক এই অন্ধকারেও চিকচিক করছে। ইরতাজউদিনের মনে হচ্ছে তিনি সড়ক না, নদীর উপর দিয়ে হাঁটছেন। থানার সামনে দিয়ে যাবার সময় তার মুখে পাঁচ ব্যাটারি টর্চের আলো পড়ল। মুখে টর্চের আলো ফেলা বিরাট অভদ্রতা। এই অভদ্রতাটা থানাওয়ালারা সবসময় করে। তাদের দোষও দেয়া যায় না। তাদের মানুষ চিনতে হবে। কে চোর কে সাধু জানতে হবে।

মাওলানা সাহেব, স্নামালিকুম।

ওয়ালাইকুম সালাম।

আমাকে চিনেছেন? আমি ওসি ছদারুল আমিন।

গলা শুনে চিনতে পারি নাই। পরিচয়ে চিনেছি।

মুখের উপর টর্চের আলো ফেলেছি, বেয়াদবি মাফ করে দিবেন। আপনি যান কই?

হেডমাস্টার সাহেবের বাড়িতে যাচ্ছি। উনি খবর পাঠিয়েছেন।

উনাকে আমার সালাম দিবেন। বিশিষ্ট লোক।

অবশ্যই দিব।

দেশের খবর তো মাওলানা সাহেব শুনেছেন–ইয়াহিয়া অধিবেশন স্থগিত করেছে। এখন লাগবে ক্যাচাল। ঢাকায় পোস্টিং থাকলে অবস্থা কেরোসিন হয়ে যেত। পাবলিকের সঙ্গে কাটাকাটি মারামারি। পুলিশ দেখলেই পাবলিক ক্ষেপে যায়। ক্ষেপিস কেন রে বাবা? পুলিশ কি তোরই বাপ-ভাই না? তুই ভাত-মাছ খাস, পুলিশও খায়। তোর ণ্ড-এ যেমন দুৰ্গন্ধ, পুলিশের গু-তেও সেইরকম দুৰ্গন্ধ। আচ্ছা ঠিক আছে, মাওলানা সাহেব। আপনি যান। আপনাকে দেরি করায়ে দিয়েছি। গায়ে একটা দুটা বৃষ্টির ফোটাও পড়তেছে। আসসালামু আলায়কুম।

ওয়ালাইকুম সালাম।

ইরতাজউদ্দিন হাঁটতে শুরু করলেন। থানার ওসিকে রাস্তায় দেখে মধু একটু পিছিয়ে পড়েছিল, এখন সে এগিয়ে এলো। গলা নিচু করে বলল, স্যার, আমরার ওসি সাহেবের বেজায় সাহস এইটা জানেন?

না।

আরে ব্যাপারে—সাহস কী! তার সাহসের একটা গাফ করব?

দরকার নাই।

তাইলে একটা শিলুক ভাঙ্গানি দেন! কন দেখি স্যার–চামড়ার বন্দুক বাতাসের গুল্লি এইটা কী?

জানি না। কী?

এইটা হইল গিয়া আপনের–পাদ। পাদে যে শব্দ হয়। সেই শব্দটা হইল গুল্লি। চামড়ার বন্দুক হইল–পুটকি।

ইরতাজউদ্দিন স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। এত বড় বেয়াদব–এ ধরনের অশ্লীল কথাবার্তা তার সঙ্গে বলছে? কানে ধরে একশবার উঠবোস করানো দরকার। যাতে ভবিষ্যতে কোনোদিন এই ধরনেম কথাবার্তা না বলে।

বৃষ্টির ফোটা ঘন হয়ে পড়তে পড়তে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। মধু বলল, লক্ষণ ভালো না, বিষ্টির ফোঁটা পড়তে পড়তে বন হইলে বেজায় পরমাদ।

ইরতাজউদ্দিন কঠিন গলায় বললেন, চুপ করে থাক। আর একটা কথা বললে এমন চড় খাবি…

কথা বইল্যা দোষ কী করলাম!

অনেক দোষ করেছিস। আর কথা না।
 
হেডমাস্টার সাহেব বারান্দায় চৌকির উপর বসে আছেন। ঘরের ভেতর হারিকেন জুলছে। হারিকেনের আলোয় তাকে আবছা দেখা যাচ্ছে। বারান্দায় পেতে রাখা চৌকি হেডমাস্টার সাহেবের পছন্দের জায়গা। এখানে বসলে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। সামনে বুড়ো ফসলের মাঠ। দক্ষিণ দিকে নদী। বর্ষা মৌসুমে সামনের মাঠের পুরোটাই ড়ুবে যায়। বাতাস এলে সমুদ্রের মতো ঢেউ ওঠে! ছলাৎ ছিল।াৎ শব্দ হয়। বারান্দা থেকে এই শব্দ শোনা যায়। হেডমাস্টার সাহেবের বড় ভালো লাগে।

ইরতাজউদ্দিন বারান্দায় উঠতে উঠতে বললেন, আসসালামু আলায়কুম। খবর দিয়েছেন?

হেডমাস্টার সাহেব বললেন, খানা খেতে ডেকেছি। দিনের পর দিন একা খেতে ভালো লাগে না। মন যখন অস্থির থাকে, তখন আরো ভালো লাগে না।

মধু বদনায় করে পানি নিয়ে এসেছে। জলচৌকিতে দাঁড়িয়ে ইরতাজুদ্দিন পা ধুলেন। উঠে এলেন চৌকিতে। হেডমাস্টার সাহেব বললেন, আপনার ভাবির কথা মন থেকে দূর করতে পারছি না। শেষে আমার বড় শ্যালককে একটা চিঠি লিখলাম। চিঠিটা আপনাকে পড়ে শোনাতে চাচ্ছি।

ইরতাজউদ্দিন বললেন, পড়ুন শুনি।

হেডমাস্টার সাহেব তৎক্ষণাৎ চোখ বন্ধ করে চিঠি মুখস্থ বলে যেতে থাকলেন। যে-কোনো চিঠি একবার লেখা হয়ে গেলে দাড়ি-কমাসহ তার মনে থাকে। মানুষটার স্মৃতিশক্তি অস্বাভাবিক।

জনাব আব্দুর রহমান।

প্রিয় ভ্ৰাতা,

পরিসমাচার তোমার ভগ্নির বর্তমান অবস্থার কথা পাঠ করিয়া মুহ্যমান হইয়াছি। এ কী কঠিন পরীক্ষায় পতিত হইলাম? এই পরীক্ষার শেষ কোথায়? বেচারি নিজে কষ্ট পাইতেছে, অন্যদেরও কষ্ট দিতেছে। তাহার বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া যায় সে-সম্পর্কে আমার পক্ষে কিছু বলা অসম্ভব। এত দূরে বসিয়া প্রকৃত অবস্থা জানা আমার পক্ষে অসম্ভব। তোমরা যাহা ভালো মনে করো তাঁহাই করা বাঞ্ছনীয়।

তোমার অতি আদরের ভগ্নির জন্যে তোমরা কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিবে না। এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত।

পাবনা মানসিক হাসপাতালে তাহাকে ভর্তি করাইবার ব্যাপারে আমার কোনো আপত্তি নাই। আল্লাহপাকের কাছে প্রার্থনা যেন হাসপাতালে তাহার সুচিকিৎসা হয়।

ইতি

চিঠি মুখস্থ বলা শেষ করে হেডমাস্টার সাহেব ইরতাজউদ্দিনের দিকে তাকালেন। ইরতাজউদ্দিন বললেন, পুনশ্চতে কিছু লিখেছেন?

না।

চিঠির বক্তব্যের সঙ্গে আপনি কি একমত?

অবশ্যই।

ইরতাজউদ্দিন ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আপনি একমত না। আপনার মনে সংশয় আছে। সংশয় আছে বলেই আপনি আমাকে চিঠিটা শুনিয়েছেন। আপনার মন চাচ্ছে যেন আমি বলি আপনি যা করেছেন ঠিকই করেছেন। আপনি আমার Support চাচ্ছেন।

হেডমাস্টার সাহেব কিছু বললেন না। এক দৃষ্টিতে ইরতাজউদ্দিনের দিকে তাকিয়ে রইলেন। ইরতাজউদ্দিন বললেন, আপনি একটা কাজ করেন। ভাবিকে আপনার কাছে নিয়ে আসেন। আপনার পাশে থাকলে ভাবি সাহেবার মনে একটা পরিবর্তন আসতে পারে। তারপরেও যদি কিছু না হয়, আমরা দুজন উনাকে হাসপাতালে দিয়ে আসব। ডাক্তার সাহেবের সঙ্গে কথাবার্তা বলে আসব।

আমাকে নিয়ে আসতে বলছেন?

জি।

তাহলে বরং এটাই করি?

হেডমাস্টার সাহেবকে দেখে মনে হলো–তার বুক থেকে পাষাণ ভার নেমে গেছে। তিনি সহজে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন।

ইরতাজউদ্দিন বললেন, ক্ষুধা হয়েছে। খানা দিতে বলেন। আকাশের অবস্থা ভালো না। সকাল সকাল বাড়ি ফিরব। পশ্চিম আকাশ কেমন লাল হয়ে আছে। ঝড়-তুফানের লক্ষণ।

মধু এসে বিড়বিড় করে বলল, খানা দেওন যাইব না। দিরং হইব।

হেডমাস্টার সাহেব বললেন, দেরি হবে কেন? রান্না তো আগেই করা।

মধু সেই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উদাস চোখে মাথা চুলকাতে লাগল। জানা গেল, কুকুর খাবারে মুখ দিয়েছে বলেই নতুন করে রান্না বসাতে হবে। সেটাই এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না; চাল বাড়ন্ত। চাল কিনে আনতে হবে।

হেডমাস্টার সাহেব অবাক হয়ে বললেন, বলিস কী?

মধু বলল, হারামি কুত্তা একটা আছে, বড় ত্যক্ত করতাছে। বিষ খাওয়াইয়া এরে মারণ ছাড়া গতি নাই।
 
হেডমাস্টার সাহেব বললেন, আমার শরীরটা ভালো না। আমি আগেই ঠিক করেছিলাম রাতে কিছু খাব না। এক গ্লাস তোকমার শরবত খেয়ে শুয়ে পড়ব। মাওলানা সাহেবের খাবার ব্যবস্থা করা দরকার। উনি ক্ষুধার্তা! ঘরে চিড়া মুড়ি আছে না?

ইরতাজউদ্দিন বললেন, আমার ভাতের ক্ষিধা হয়েছে। এই ক্ষিধা চিড়া মুড়ি খেলে যাবে না। আমি ঘরে গিয়ে ভাত চড়াব।

হেডমাস্টার সাহেব বললেন, মধুকে সঙ্গে নিয়ে যান, রোধে দিয়ে আসবে। ও নিজেও চারটা খাবে।

ইরতাজউদ্দিন মধুকে নিয়ে পথে নামলেন। ডিসট্রিক্ট বোর্ডের রাস্তায় উঠার পর পর প্রচণ্ড শব্দে কয়েকবার বিদ্যুৎ চমকাল।

জঙ্গলের দিক থেকে শো শো শব্দ আসছে। মধু ভীত গলায় বলল— ঝড় আসন্তাছে গো। আইজ খবর আছে।

দেখতে দেখতে ঝড় এসে গেল। ঝড়ের প্রথম ধাক্কায় মধু ছিটকে রাস্তা থেকে খালে পড়ে গেল।

ইরতাজউদ্দিনকে দৌড়ে এসে আশ্ৰয় নিতে হলো থানায়; ঝড়ের তাণ্ডব চলল অনেক রাত পর্যন্ত। রাতে তাকে খেতে হলো ওসি সাহেবের বাসায়। ওসি সাহেবের স্ত্রী লম্বা ঘোমটা টেনে অতি যত্নে ইরতাজউদ্দিনকে খাওয়ালেন। মহিলা সন্তান-সম্ভবা। শরীর ঢেকে ঢুকে রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত।

ওসি সাহেব থানায় নেই। ঝড় আসছে দেখে তিনি তিনজন কনষ্টেবল নিয়ে বের হয়ে পড়েছেন। তার উদ্দেশ্য ডাকাত হাসান মাঝিকে ধরা। ঝড়-বৃষ্টির রাতে সে নিশ্চয়ই তার তৃতীয়পক্ষের স্ত্রীর কাছে রাত কাটাতে আসবে। হাসান মাঝির তৃতীয়পক্ষের স্ত্রীর নাম রঙিলা। সে আগে গৌরীপুরের নটিবাড়িতে নটির কাজ (দেহব্যবসা) করত। হাসান মাঝি তাকে বিয়ে করে মিন্দাপুর গ্রামে ঘর তুলে দিয়েছে। মিন্দাপুর নীলগঞ্জ থেকে দুই-আড়াই মাইল দূরে। সে যে মাঝে-মাঝে এখানে রাত কাটায়, সে-খবর ওসি সাহেব জানেন। তার ভাগ্য ভালো হলে দেখা যাবে ব্যাটা আজই এসেছে।

রান্নার আয়োজন ভালো। গরুর মাংস, পাবদা মাছের ঝোল, করলা ভাজি, বেগুন ভর্তা।

ইরতাজউদ্দিন বললেন, মাগো, বড়ই তৃপ্তি করে খেয়েছি। আল্লাহপাক কার রুজি কোথায় রাখেন বলা মুশকিল। খাওয়া শেষ করে তিনি হাত তুলে মোনাজাত করলেন, হে আল্লাহপাক, হে গাফুরুর রহিম, যে খানা আজ আমি এত তৃপ্তি করে খেয়েছি তার জন্যে তোমার দরবারে শুকরিয়া। যে বিপুল আয়োজন করে আমাকে খাইয়েছে, তার ঘরে যেন এরচেয়েও দশগুণ ভালো খানা সবসময় থাকে–তোমার পাক দরবারে এই আমার প্রার্থনা। আমিন।

দোয়া শেষ করে ইরােতাজউদ্দিন তাকিয়ে দেখেন, ওসি সাহেবের স্ত্রী চোখের পানি মুছছে। ইরতাজউদ্দিন বিস্মিত হয়ে বললেন, কাঁদছেন কেন গো মা?

মহিলা শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, আপনি এত সুন্দর করে দোয়া পড়লেন! শুনে চোখে পানি এসে গেছে।

ঝড় থামার পর ইরতাজউদ্দিন বাড়ি ফিরলেন। বাড়ির সামনে এসে তিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। বাড়ির কোনো চিহ্নই নেই। ঝড় উড়িয়ে নিয়ে চলে গেছে। তিনি কিছুই বললেন না। মধু শুধু বলল, স্যার, আফনেরে তো শুয়াইয়া দিছে।

ইরতাজউদ্দিন জবাব দিলেন না; মধু বলল, মন খারাপ কইরেন না। একটা শিলুক দেই, ভাঙেন–

যায় না চোখেতে দেখা কৰ্ণে শোনা যায়
উড়াল দিয়া আসে হে উড়াল দিয়া যায়।

স্যার পারছেন? খুব সোজা।

ইরতাজউদ্দিন জবাব দিলেন না। মধু আনন্দিত গলায় বলল, এইটা হইল ঝড়; ঝড় উড়াল দিয়া আসে উড়াল দিয়া যায়। এরে চউক্ষে দেখা যায় না।
 
কলিমউল্লাহ নামটা কোনো আধুনিক কবির জন্যে তেমন মানানসই না। কবিতা মানেই তো শব্দের খেলা। কলিমউল্লাহ নামের মধ্যে কোনো খেলা নেই। এই নাম উচ্চারণের সময় মুখ বড় হয়ে যায়। জিব দেখা যায়। কিন্তু কলিমউল্লাহ একজন কবি। এই মুহুর্তে সে দৈনিক পাকিস্তান অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার বয়স পঁচিশ। সে জগন্নাথ কলেজে বি.কম পড়ে। বি.কম পরীক্ষা সে আগে দুবার দিয়েছে। পাশ করতে পারে নি। তৃতীয়বারের জন্যে জোরেসোরে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কলিমউল্লাহর বাবা দ্বিতীয়বার পরীক্ষা ফেলের কথা শুনে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। তাতে তার তেমন অসুবিধা হচ্ছে না। সে দুটা টিউশনি করে। কাটাবনের কাছে একটা হোটেলের সঙ্গে মাসকাবারি ব্যবস্থা করা আছে, সেখানে খায়। রাতে ঘুমাতে যায় ইকবাল হলে। গ্রাম-সম্পর্কের এক বড় ভাই, ইতিহাসের থার্ড ইয়ার অনার্সের ছাত্র রকিব আলি ইকবাল হলে থাকেন। তার ঘরের মেঝেতে বিছানা পেতে শুয়ে থাকা। হলে এই বিষয়টা চালু আছে। রকিব ভাইয়ের বিছানাটা আলাদা রেখে মেঝেতে যে কজন ইচ্ছা শুয়ে থাকতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বড় ভাইরা আশ্রয়হীন ছোট ভাইদের না দেখলে কে দেখবে? রুমের দরজা সবসময় খোলা থাকে। রাত একটা দেড়টায় হলে এসে উপস্থিত হলেও তেমন কোনো অসুবিধা হয় না।

অসুবিধা একটাই–নিরিবিলি কবিতা লেখাটা হয় না। এই কাজটা তাকে করতে হয় টিউশনির সময়। ছাত্রকে এক ঘণ্টা পড়বার জায়গায় দুঘণ্টা পড়ালে সবাই খুশি হয়। বাড়তি সময়টা সে কাজে লাগায়। ছাত্রকে রচনা লিখতে দিয়ে সে কবিতা লেখে। কলিমউল্লাহ ঠিক করে রেখেছে কবিতা, লিখে খ্যাতিমান হলে সে একটা কবিতার বই বের করবে। বইটার নাম দিবে টিউশন কাব্য। যে বইটির প্রতিটি কবিতা ছাত্রকে পড়াতে গিয়ে লেখা। রবীন্দ্রনাথের মতো প্রতিটি কবিতার শেষে রচনার তারিখ ও স্থান দেয়া থাকবে। যেমন মেঘবালিকাদের দুপুর কবিতার নিচে লেখা থাকবে–মটুদের ঝিকাতলার বাসা।

কবিতার বইটা বের হবে ছদ্মনামে। অনেকগুলি ছদ্মনাম নিয়ে সে চিন্তা করছে। কোনোটিই তেমন মনে ধরছে না। একটা নাম মোটামুটি পছন্দ হয়েছে, সেটা হলো শাহ কলিম। এই ছদ্মনামটা মূলের কাছাকাছি। নামের আগে শাহ যুক্ত করায় মরমী আধ্যাত্মবাদী কবি ভাব চলে আসে। তারপরেও এই নাম আধুনিক না। গ্রাম্য কবিয়ালটাইপ নাম। যারা মুখে মুখে গান রচনা করে এবং একটা পর্যায়ে গানে নিজের নাম ঢুকিয়ে দেয়; যেমন

শাহ কলিমে কয়
রোজ-হাসরের দিনে তোমার পরাজয়।।
পিতা নয় মাতা নয়
ব্রাদার ভগ্নি কেহই নয়
হৃদয়ে জাগিবে ভয়,
জানিবা নিশ্চয়।
রোজ-হাসরের দিনে তোমার পরাজয়।

শাহ কলিম-এর পাশাপাশি আরেকটা নাম তার পছন্দের তালিকায় আছে–ধূর্জটি দাশ। কঠিন নাম, তবে বেশ আধুনিক। শাহ কলিম নামটা মনে এলে একটা বোকা-সোকা বাবরি চুলের লোকের চেহারা মনে আসে। ধূর্জটি দাশ-এ মনে হয় গম্ভীর চোখে চশমা পরা বুদ্ধিমান একজন মানুষ। নামটা হিন্দু, এটা একটা সমস্যা। সে যদি কোনো একদিন খুব বিখ্যাত হয়ে যায়, তাহলে সমালোচকরা তাকে ধরবে। আপনি কেন হিন্দু ছদ্মনাম গ্ৰহণ করেছেন? এটা কি হীনমন্যতার কারণে? মুসলমান নাম কবির নাম হিসেবে চলে না। এই বোধ থেকে? এ দেশের অনেক কবিই তো ছদ্মনাম গ্ৰহণ করেছেন। এমনকি আমাদের প্রধান কবি শামসুর রাহমানও এক সময় ছদ্মনামে লিখতেন। হিন্দু ছদ্মনাম লেখার কথা তো তার মনে হয় নি। আপনার মনে হলো কেন?

রোদ মাথার উপর চিড়বিড় করছে। কলিমউল্লাহ মনস্থির করতে পারছে না। দৈনিক পাকিস্তান অফিসে ঢুকবে কি ঢুকবে না। তার ইচ্ছা কবি শামসুর রাহমানেব। হাতে একটা কবিতা দিয়ে আসা। ডাকে কবিতা পাঠিয়ে লাভ নেই। পত্রিকা অফিসের লোকজন খাম খুলে কিছু পড়ে না। এত সময় তাদের নেই। টেবিলের পাশে রাখা ঝুড়িতে সরাসরি ফেলে দেয়।

কবি শামসুর রাহমানের সঙ্গে সে কীভাবে কথা বলবে তা নিয়ে অনেক ভেবেছে। মনে মনে রিহার্সেল ও দিয়েছে। যদিও সে জানে কোনো রিহার্সেলই কাজে লাগবে না। কবি কোন প্রসঙ্গে কথা বলবেন তা তো জানা নেই। ঘরে ঢোকা মাত্র কবি হয়তো বলবেন, এখন যান। পরে আসবেন। এখন ব্যস্ত আছি। তবে কবি যদি টুকটাক কথা বলেন এবং যদি বলেন, তুমি কি আমার কোনো কবিতা পড়েছ?—তাহলে কেল্লা ফতে। কলিমুল্লাহ কবির একটা কবিতা–আসাদের শার্ট ঝাড়া মুখস্থ করে এসেছে। গড়গড় করে বলে কবিকে মুগ্ধ করা যাবে। কবি-সাহিত্যিকরা অল্পতেই মুগ্ধ হয়।
 
তিনবার ইয়া মুকাদ্দিমু পড়ে ডান পা আগে ফেলে কলিমউল্লাহ। দৈনিক পাকিস্তান অফিসে ঢুকে গেল। ইয়া মুকাদিমুর অর্থ হে অগ্রসরকারী। আল্লাহর পবিত্র নিরানব্বই নামের এক নাম। এই নাম তিনবার পড়ে ডান পা ফেলে যেকোনো কাজে অগ্রসর হওয়ার অর্থ সাফল্য। বি.কম পরীক্ষা দেবার জন্যে হলে ঢোকার আগে আগে এই নাম সে পড়তে পারে নাই। কিছুতেই নামটা মনে পড়ে না। মনে পড়লে অবশ্যই ঘটনা ভিন্ন হতো।

কবি শামসুর রাহমান বিশাল এক সেক্রেটারিয়েট টেবিলের ওপাশে বসে আছেন। তার ডান পাশে জমিদারদের নায়েব টাইপ চেহারার ফর্সা এবং লম্বা এক লোক, ক্রমাগত কথা বলে যাচ্ছে। মাথা দোলাচ্ছে, হাত নাড়ছে। কবি তার দিকে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু সব কথা মনে হয় শুনছেন না। কবিরা ভ্যাড়াভ্যাড়ানি শুনতে ভালোবাসে না।

কলিমউল্লাহর মনে হলো, কবি সাহেব তাকে দেখে খুশি হয়েছেন। অন্তত কিছু সময়ের জন্যে হলেও নায়েব সাহেবের ভ্যাড়াভ্যাড়ানি শুনতে হবে না।

শামসুর রাহমান টেবিলে হাত রেখে গালে হাত দিয়ে সুকান্ত-টাইপ। ভঙ্গিতে বসেছেন। তিনি কলিমুল্লাহর দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার কাছে কী?

কলিমউল্লাহ বলল, স্যার, আমি একটা কবিতা নিয়ে এসেছি। কবিতাটা আমি ডাকে পাঠাতে পারতাম। কিন্তু আমার অনেক দিনের শখ কবিতাটা আমি আপনার হাতে দেই।

কবি কিছু বলার আগেই পাশে বসা নায়েবটা বলল, টেবিলে রেখে চলে যান।

কলিমউল্লাহ নায়েবের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, ঐ গাধা, তুই কথা বলছিস কেন? আমি তো তোর সঙ্গে কথা বলছি না। তোর ভ্যাড়ভাড়ানি শোনার আমার কোনো প্রয়োজন নাই। মনে মনে এই কথা বললেও সে মুখে বলল, আমি কবিতাটা কবির হাতে দিব এই জন্যে এসেছি। টেবিলে রেখে দেবার জন্যে আসি নি।

নায়েব বলল, জিনিস একই। কবি টেবিল থেকে কবিতাটা হাতে নেবেন।

কলিমউল্লাহ বলল, জিনিস এক না। আমরা যদি কাউকে ফুল দিতে চাই আমরা তার হাতে দেই। টেবিলের এক কোনায় রেখে দেই না। আমি যে কবিতাটা লিখেছি সেটা হয়তো খুবই তুচ্ছ, তবে আমার কাছে তা ফুলের মতোই। আমি কবির হাতেই সেই ফুল দিতে চাই।

কলিমউল্লাহ নিজের কথা বলার ক্ষমতায় নিজেই মুগ্ধ হলো। অবশ্যি এই অংশটি সে আগেই রিহার্সেল দিয়ে ঠিক করে রেখেছে। জায়গামতো লাগানো গেছে। এতেই সে খুশি।

শামসুর রাহমান হাত বাড়িয়ে কবিতা নিতে নিতে বললেন, আপনি কী করেন? ছাত্ৰ?

জি ছাত্র। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় এমএসসি করছি (এই মিথ্যা কথাটা যে সে বলবে তাও আগেই ঠিক করা। বিজ্ঞানের জটিল বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে কবিতা লেখার মধ্যে অন্য ব্যাপার আছে। কবি নিশ্চয়ই ঢাকা ইউনিভাসিটিতে গিয়ে খোঁজ নেবেন না।)

আপনার নাম কী?

স্যার আমার নাম শাহ কলিম।

ছদ্মনাম?

জি-না, আসল নাম। আমরা শাহ বংশ।

ও আচ্ছা।
 
কলিমউল্লাহ ফাঁক খুঁজছে আসাদের শার্ট কবিতাটা মুখস্থ শুনিয়ে দেয়ার জন্যে। ফাঁক পাওয়া যাচ্ছে না। সে তো নিজ থেকে হড়বড় করে কবিতা আবৃত্তি শুরু করতে পারে না। নায়েব চেহারার লোকটাই সুযোগ তৈরি করে দিল। সে কলিমউল্লাহর দিবে, তাকিযে হাসি হাসি মুখে বলল, কবিতা যে লিখছেন ছন্দ জানেন? চাক্কা ছাড়া যেমন গাড়ি হয় না, ছন্দ ছাড়া কবিতা হয় না। কবিতাকে চলতে হয়। চাক্কবিহীন গাড়ি হলো গদ্য। চাক্কাওয়ালা চলমান গাড়ি হলো কবিতা। বুঝেছেন?

কলিমউল্লাহ মুখে বলল (অতি বিনয়ের সঙ্গে), স্যার, বোঝার চেষ্টা করছি। মনে মনে বলল, চুপ থাক ছাগলা। তোকে উপদেশ দিতে হবে না।

নায়েব বলল, (তার উপদেশ দেয়া শেষ হয় নি) কবিতা লেখা শুরুর আগে প্রচুর কবিতা পড়তে হবে। অন্য কবির কী লিখছেন, তারা শব্দ নিয়ে, ছন্দ নিয়ে কী experiment করছেন তা জানতে হবে। আপনি যে কবি শামসুর রাহমানের কাছে এসেছেন, তাঁর কোনো কবিতা কি আপনি পড়েছেন?

কলিমউল্লাহ মনে মনে বলল, এই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করার জন্যে তোর অতীতের সব অপরাধ এবং ভবিষ্যতের দুটা অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম। মনে মনে কথা বলা শেষ হওয়া মাত্র সে গড়গড় করে কবির আসাদের শার্ট কবিতাটা মুখস্থ বলে যেতে লাগল। তার উচ্চারণ ভালো, সে আবৃত্তিও ভালো করছে। কবিকে দেখে মনে হচ্ছে না। তিনি অভিভূত হয়েছেন। মনে হয় তার আগে আরো অনেকেই এসে কবিকে কবিতা মুখস্থ করে শুনিয়েছে। তাঁর জন্যে এটা নতুন কিছু না।

গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের
জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট
উড়ছে হাওয়ায়, নীলিমায়।
বোন ভাই-এর অম্লান শাটে দিয়েছে লাগিয়ে
নক্ষত্রের মতো কিছু বোতাম কখনো
হৃদয়ের সোনালি তন্তুর সূক্ষ্মতায়;
বর্ষিয়সী জননী সে শার্ট উঠোনের রৌদ্রে দিয়েছেন মেলে।
ডালিম গাছের মৃদু ছায়া আর রোদ্দুর শোভিত
মায়ের উঠোন ছেড়ে এখন সে শার্ট
শহরের প্রধান সড়কে
গমগমে এভিন্নুর আনাচে-কানাচে
উড়ছে, উড়ছে অবিরাম।

কবি পুরো কবিতা শেষ করতে দিলেন না, তার আগেই বললেন, আপনি বসুন। চা খাবেন?

কলিমউল্লাহ বলল, স্যার, চা খাব না। তবে আপনি বসতে বলেছেন, আমি কিছুক্ষণ বসব। আপনার সামনে কিছুক্ষণ বসে থাকা আমার জন্যে পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার।

কলিমউল্লাহ বসল। তাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নায়েব ব্যাটা কবির দিকে ফিরে হাত-মাথা নেড়ে গল্প শুরু করল, যেন এই ঘরে তারা দুজনই আছে আর কেউ নেই।

তারপর শুনুন কবি, কী ঘটনা–আমি নেতার সঙ্গে বরিশাল থেকে স্টিমারে করে ফিরছি। সারাদিন খুব পরিশ্রম গিয়েছে। এখানে মিটিং ওখানে মিটিং। ভেবেছিলাম রাতে স্টিমারে ভালো ঘুম হবে। সেটা হলো না। চাঁদপুরের কাছাকাছি এসে ঘুম ভেঙে গেল। স্টিমারের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছি, দূরে দেখা যাচ্ছে চাঁদপুর শহর। শহরের বাতি পানিতে পড়েছে। এদিকে আবার ভোর হচ্ছে। ভোরের আলো। মায়াবী একটা পরিবেশ।

কলিমউল্লাহ মনে মনে বলল, চুপ থাক ব্যাটা। মায়াবী পরিবেশ! তুই তো মায়াবী বানানই জানস না।

আমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ চমকে উঠলাম। কে যেন আমার কাধে হাত রেখেছেন। তাকিয়ে দেখি নেতা, তার হাতে পাইপ। নেতা আমার নাম ধরে বললেন, কী দেখিস, বাংলার শোভা?

কলিমউল্লাহ মনে মনে বলল, নেতা তোর কাধে হাত রেখে কথা বলেছে? তুই কি নেতার ইয়ারবন্ধু? বাকোয়াজ বন্ধ করবি?

আমি নেতাকে বললাম, আপনি এত ভোরে উঠেন তা জানতাম না। নেতা বললেন, বাংলার শোভা আমাকে বাদ দিয়ে তোরা দেখে ফেলবি তা তো হতে দেব না। আয় আমার ঘরে আয়। চা খেয়ে যা। আমি নেতার কেবিনে গেলাম। উনি নিজেই চা বানিয়ে আমার হাতে দিলেন।

কলিমউল্লাহ মনে মনে বলল, শুধু চা বানিয়ে তোর হাতে দিলেন? তোর গা হাত পা ম্যাসেজ করে দেন নাই?

নেতার সঙ্গে তখন আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হলো। আমি নেতাকে বললাম, আপনি কিছু একটা করেন। মাওলানা ভাসানীকে সামলান। তার সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে ফেলুন। নেতা বললেন, মাওলানাকে নিয়ে তোদের চিন্তা করতে হবে না। আমি মাওলানাকে চিনি। মাওলানা আমাকে চেনে।

কলিমউল্লাহ মনে মনে বলল, তুই তো দেখি আমার চেয়েও বড় মিথ্যাবাদী! তুই হয়ে গেলি শেখ মুজিবের উপদেষ্টা?

কলিমউল্লাহ উঠে পড়ল। ই বকবকানি আর শোনা যায় না। সে ঘর থেকে বের হবার আগে কবি এবং নায়েব সাহেব দুজনকেই পা ছুঁয়ে সালাম করল। কবি খুবই বিব্রত হলেন, তবে নায়েব সাবে এমন ভাব করলেন যেন প্রতিদিন পঞ্চাশজনের মতো তরুণ উঠতি কবি তাকে কদমবুসি করে।

পরের সপ্তাহে শাহ কলিমের কবিতা মেঘবালিকাদের দুপুর দৈনিক পাকিস্তানের সাহিত্যপাতায় প্রকাশিত হয়। তার পরের সপ্তাহে দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত হয় একটি কাব্য নাটিকা। এর দুটি চরিত্র; একটির নাম পরাধীনতা। সে অন্ধ তরুণী। আরেকটা চরিত্রের নাম স্বাধীনতা। সে অসম্ভব রূপবান একজন যুবা পুরুষ।

শাহ কলিম এর পরপরই বাবরি চুল রেখে ফেলল। দাড়ি কাটা বন্ধ করে দিল। আপাতত তার প্রসঙ্গ এইখানেই শেষ, তাকে যথাসময়ে আবার আনা হবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top