পঞ্চানন চৌধুরী দিনাজপুরে তামাক ব্যবসায় প্রথম অর্থলগ্নি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করেন। তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের গ্রাম তেওতায় ফিরে আসেন এবং নিজেকে তেওতার প্রথম জমিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। পঞ্চানন চৌধুরী নিজে ছিলেন বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী এবং তাঁর সময়ে তাঁদের পারিবারিক গুরু হিসেবে ‘শ্রীধর’-এর আগমন ঘটলে তিনিই প্রথম তাঁর ‘সেবায়াৎ’ হয়েছিলেন। তিনি তিরানববই বছর পর্যন্ত জীবিত ছিলেন এবং তাঁর জীবদ্দশায় নিজের জমিদারিকে অন্যতম বৃহত্তম জমিদারি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন
পঞ্চানন চৌধুরীর একমাত্র ছেলে কালি শংকর তার ঔরসজাত দুই ছেলে জয় শংকর ও তারিনী শংকরকে রেখে মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে মারা যান।
তারিনী শংকরেরও মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তিনি, শ্যামা শংকর এবং প্রাণ শংকর নামে দুই ছেলে রেখে যান।
জয় শংকর ছিলেন একজন প্রাজ্ঞ জমিদার এবং তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পৈত্রিক সম্পত্তির সম্প্রসারণ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তাঁর দুই নাবালক শিশু পুত্র পার্বতী শংকর এবং হারা শংকরকে তাদের মা ও ঠাকুরমার তত্ত্বাবধানে রেখে নিজ পরিবার এবং পৃথিবীর যাবতীয় কর্মকান্ড ত্যাগ করে বৈষ্ণবদের বৈষ্ণবীয় রীতি পালনের সর্বোৎকৃষ্ট স্থান পুরীতে চলে যেতে মনস্থির করেন। অল্প কিছুদিন পরে ১৮৬০ সালে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
জমিদার পরিবারেরর চার ভাইয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শ্যামাশংকর রায় ছিলেন প্রখ্যাত জনহিতৈষী, ঈশ্বরবাদী দার্শনিক ও একজন উদ্যোগী জমিদার, যিনি কৃষির উন্নয়নের জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি উনিশ শতকের সত্তর-এর দশকে নিজের নামের সঙ্গে ‘রাজা’ উপাধিটি সংযুক্ত করেছিলেন। রায় পার্বতীশংকর ও ছিলেন একজন কল্পণাশ্রয়ী জমিদার। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়াও তিনি তাঁর জমিদারি আওতার মধ্যে ‘সমবায় ভিত্তিক শস্য ব্যাংক’ (ধর্মগোলা) ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন এবং ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল এসোসিয়েশন-এর অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম একজন। প্রেসিডেন্সি কলেজের স্নাতক এবং আইন বিষয়ে ডিগ্রিধারী হারা শংকর রায় ছিলেন তেওতা এস্টেট এর অবৈতনিক ম্যাজিস্ট্রেট। পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে অনেককেই প্রাথমিক ডিগ্রি নিতে এবং ব্যবহারজীবী পেশা গ্রহনের ট্রেনিং নিতে ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে যান। এঁদের মধ্যে একমাত্র ডা. কুমার শংকর রায় পরবর্তী জীবনে একজন পেশাজীবীর ভূমিকায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। ১৯৩০ এবং ৪০ এর দশকে ব্যারিস্টার (ব্যারিস্টারি অনুশীলন করতেন না) এবং জনসেবক কে এস রায় কংগ্রেসের নির্বাচনী রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছিলেন এবং নয়াদিল্লির কাউন্সিল অব স্টেট এ অন্যান্যদের সঙ্গে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। রাজনীতিক কিরণ শংকর রায় এবং কুমুদ শংকর রায় (ডা. কে.এস. রায়), তেওতা জমিদার পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ব্যক্তি। দুজনের মধ্যে একজন স্বরাজ্য দাবির উত্থানকারী কংগ্রেস নেতা এবং আরেকজন চিকিৎসাশাস্ত্র জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র।
তেওতা জমিদার বাড়িটি মোট ৭.৩৮ একর জমি নিয়ে স্থাপিত। মূল প্রাসাদের চারপাশে রয়েছে আরও বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা ও একটি বড় পুকুর। প্রাসাদের মূল ভবনটি লালদিঘী ভবন নামে পরিচিত। এখানে একটি নটমন্দিরও রয়েছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে নবরত্ন মঠ ও আর বেশ কয়েকটি মঠ। সবগুলো ভবন মিলিয়ে এখানে মোট কক্ষ রয়েছে ৫৫টি। এছাড়াও এখানে রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিচিহ্ন। এ প্রাসাদেই নজরুল, প্রমীলা দেবীর প্রেমে পড়েন ও লিখেছিলেন-
তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়
সেকি মোর অপরাধ
এই ঠিকানাটি ছাড়া এই পরিবারের অন্যান্য স্থানেও বসতবাড়ি ছিল। বেনারসের তেওতা রাজবাড়িটি (মূলত বাড়ি ছিল দু’টি) বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের উপন্যাস এবং সত্যজিৎ রায়ের তৈরি চলচ্চিত্র ‘অপরাজিতা’ এর মাধ্যমে অমর হয়ে আছে। সূত্র : বাংলাপিডিয়া
ছবি তোলার স্থান : শিবালয়, মানিকগঞ্জ, বাংলাদেশ। GPS coordinates : 23°51'31.1"N 89°46'42.5"E ছবি তোলার তারিখ : ২৫/১১/২০১৬ ইং
শত বছরের পুরনো কলোনিয়াল আবাসিক এলাকা মানিকগঞ্জের নালোরা পাড়াতে মোট ৮টা কলোনিয়াল বাড়ি টিকে আছে। গলির বাম হাতে ২টা এবং ডান হাতে গায়ে গায়ে লাগানো ৬টা বাড়ি। এদের মধ্যে লক্ষ্মী নিবাস সবচেয়ে সুন্দর বাড়ি। বাকি বাড়িগুলি দ্বিতল হলেও এই লক্ষ্মী নিবাস বাড়িটি তিন তালা। বাড়ির চমৎকার কারুকাজগুলি এখনো টিকে আছে।
ছবি তোলার স্থান : নালোরা, বেতিলা, মানিকগঞ্জ, বাংলাদেশ। GPS coordinates : 23°50'13.2"N 90°01'38.1"E ছবি তোলার তারিখ : ২৫/১১/২০১৬ ইং
মানিকগঞ্জের নালোরা পাড়ার শত বছরের পুরনো কলোনিয়াল আবাসিক এলাকা পার হয়ে সামান্য পশ্চিমে এগিয়ে গেলে হাতের বামে দেখা মেলে "জ্ঞান কুটীর" নামের একটি এক তলা বাড়ির। বাড়িটি সম্পর্কে কোনো তথ্যই আমার জানা নেই।
ছবি তোলার স্থান : নালোরা, বেতিলা, মানিকগঞ্জ, বাংলাদেশ। GPS coordinates : 23°50'11.5"N 90°01'31.7"E ছবি তোলার তারিখ : ২৫/১১/২০১৬ ইং