What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র (3 Viewers)

আমার দেখা জমিদার বাড়ি - ০৩২
আঠারোবাড়ি জমিদার বাড়ি


mbg3jjqh.jpg


নেট ঘেটে যতটুকু জানা যায়-
১৭৯৩ খ্রিষ্ঠাব্দ পর্যন্ত হোসেন শাহী পরগনা রাজশাহী কালেক্টরের অধিনে ছিল। সে সময় মহা রাজ রামকৃষ্ণের জমিদারি খাজনা অনাদায়ে নিলামে উঠলে হোসেন শাহী পরগনাটি খাজে আরাতুন নামে এক আর্মেনীয় ক্রয় করে নেন।
১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে আরাতুনের ২ মেয়ে বিবি কেথারিনা, বিবি এজিনা এবং তার দুই আত্মীয় স্টিফেন্স ও কেসর্পাজ প্রত্যেকে চারআনা অংশে হোসেন শাহী পরগানার জমিদারী লাভ করেন।

১৮৫৩ খ্রিষ্টব্দে আঠারোবাড়ি জমিদার শম্ভুরায় চৌধরী, বিবি এনিজার অংশ কিংবা মতান্তরে কেসপার্জের অংশ ক্রয় করেন। পরে মুক্তাগাছার জমিদার রামকিশোর চৌধরীর জমিদারী ঋণের দায়ে নিলামে উঠলে তা শম্ভুরায় চৌধুরীর পুত্র মহিম চন্দ্র রায় চৌধুরী কিনে নেন।
১৯০৪ খ্রিষ্টব্দে মহিম চন্দ্র রায় চৌধরীর স্ত্রী জ্ঞানেদা সুন্দরীর স্বামীর উত্তরাধিকার ও ক্রয় সূত্রে হোসেন শাহী পরগনার ১৪ আনার মলিক হন। বাকী দুই আনা অন্য এলাকার জমিদাররা কিনে নেন।

জমিদারী প্রতিষ্ঠার পর তাদের আয়ত্তে আসে উত্তর গৌরীপুরের রাজবাড়ী, পশ্চিমে রামগোপাল পুর,ডৌহাখলা দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর ও নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা। তাছাড়া বৃহৎত্তর ময়মনসিংহের জামালপুর জেলার কয়েকটি মৌজা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বেশ কিছু মৌজা ছিল এ জমিদারের দখলে। প্রতি বছরে নির্দিষ্ট এক সময়ে এসব জেলা শহরে স্থাপিত আঠারোবাড়ী কাচারী বাড়ীতে নায়েব উপস্থিত হয়ে খাজনা আদায় করত। আজ ও এসব কাচারী “আঠারোবাড়ী কাচারি” নামে নিজ নিজ জেলায় পরিচিত।

জমিদার শম্ভুরায় চৌধরীর পিতা দ্বীপ রায় চৌধুরীর প্রথম নিবাস ছিল বর্তমান যশোর জেলায়। তিনি যশোর জেলার একটি পরগনার জমিদার ছিলেন। সুযোগ বুঝে একসময় দ্বীপ রায় চৌধুরী তার পুত্র শম্ভুরায় চৌধুরীকে নিয়ে যশোর থেকে আঠারোবাড়ী আসেন। আগে এ জায়গাটার নাম ছিল শিবগঞ্জ বা গোবিন্দ বাজার। দীপ রায় চৌধুরী নিজ পুত্রের নামে জমিদারি ক্রয় করে এলাকার নাম পরির্তন করে "রায় বাজার” রাখেন। রায় বাবু এক একর জমির উপর নিজে রাজবাড়ী, পুকুর ও পরিখা তৈরী করেন। এটিই আঠারোবাড়ি জমিদার বাড়ি।

শোনা যায়, রায় বাবু যশোর থেকে আসার সময় রাজ পরিবারের কাজর্কম দেখাশুনার জন্য আঠারোটি হিন্দু পরিবার সংঙ্গে নিয়ে এসে তাদের বসবাসের জন্য আঠারোটি বাড়ি তৈরী করে দেন। তখন থেকে জায়গাটি আঠারোবাড়ী নামে পরিচিতি লাভ করে।
দ্বীপ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার পুত্র শম্ভুরায় চৌধুরী জমিদারী লাভ করেন। তবে তার কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তিনি এক ব্রাহ্মণ প্রমোদ রায় চৌধুরীকে দত্তক নেন। পরবর্তীতে এই প্রমোদ রায় চৌধুরী আঠারোবাড়ি জমিদারী লাভ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভের শুভেচ্ছা বিনিময় ও শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব নিকেতন করে গড়ে তুলতে নৈতিক ও আর্থিক সমর্থনের লক্ষ্যে ১৯২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় আসেন। প্রায় এক সপ্তাহ ঢাকায় অবস্থান শেষে ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ময়মনসিংহে পৌছান। এদিকে ততকালিন আঠারবাড়ীর জমিদার প্রমোদ চন্দ্র রায় চৌধুরী শান্তিনিকেতনের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং তার শিক্ষক ছিলেন স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রমোদ চন্দ্র রায় চৌধুরীর নিমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী আঠারোবাড়ি রাজবাড়ি ভ্রমণ করেছিলেন। সে সময় কবিগুরুর সম্মানে মধ্যাহ্নভোজ, বাউল, জারি-সারি গানের আয়োজন করা হয়েছিল। এছাড়া কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চন্দ্রকথা ছবির চিত্রায়ন এই জমিদার বাড়িতে হয়ে ছিলো।


যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,
মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা দেনা,
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে--
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।

যখন জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়,
কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়, আহা,
ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা বনবাসের,
শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায়--
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।

তখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে,
কাটবে দিন কাটবে,
কাটবে গো দিন আজও যেমন দিন কাটে, আহা,
ঘাটে ঘাটে খেয়ার তরী এমনি সে দিন উঠবে ভরি--
চরবে গোরু খেলবে রাখাল ওই মাঠে।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।

তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি।
সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি-- আহা,
নতুন নামে ডাকবে মোরে, বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে॥

কথিতো আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার বিখ্যাত এই গানটি আঠারবাড়ী জমিদার বাড়ির রানী পুকুরের ঘাটে বসে লিখেছিলেন।

১৯৬৮ সালে আঠারবাড়ি জমিদার বাড়িতে আঠারবাড়ী ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ডিগ্রি কলেজ প্রধান ফটক পার হয়ে ভিতরে ঢুকলে চোখে পড়বে বিশাল খেলার মাঠ এবং তার বিপরীতে জমিদার বাড়ীর অন্দরমহল। এগিয়ে গেলে পুরোনো শ্যাওলা পরা ভবনগুলো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। অন্দরমহলে নাচের জায়গা, চাকরবাকর থাকার ঘর, সুবিশাল একটি অট্টালিকা চোখে পড়বে যার প্রতিটি খাঁজ সুন্দর কারুকাজ করাছিল দেখে বুঝা যায়। এসব পার হয়ে কলেজের ভিতরে গেলে কাছারি বাড়ি ও দরবার হল। ভবনের উপরে রয়েছে সুবিশাল এক টিনের গম্ভুজ। পিছনে সারি সারি গাছ। সামনে রাণীপুকুর। কথিতো আছে এই পুকুরে আসার জন্য অন্দরমহল থেকে গোপন গুহা ছিল মাটির নিচ দিয়ে।
সূত্র : উইকিপিডিয়া

পথের হদিস :

আঠারবাড়ী যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে ময়মনসিংহ শহরে।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে ময়মনসিংহে যাওয়ার জন্য মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এনা, শামীম এন্টারপ্রাইজ, সৌখিনসহ কয়েকটি পরিবহন বাস রয়েছে। সময় লাগবে আড়াই থেকে চার ঘণ্টা। ভাড়া জনপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। অথবা ময়মনসিংহ বা কিশোরগঞ্জগামী বাসে ঈশ্বরগঞ্জ নেমে আঠারবাড়ীগামী অটো বা সিএনজি করে যাওয়া যাবে। আর ময়মনসিংহ শহর থেকে আঠারবাড়ী রাজবাড়ীতে যেতে চাইলে ট্রেন, বাস অথবা সিএনজি করে যেতে পারবেন।

এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে করেও যেতে পারেন ময়মনসিংহ। ঢাকা থেকে তিস্তা এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, যমুনা এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ও হাওর এক্সপ্রেস ময়মনসিংহে যায়। ভাড়া শ্রেণিভেদে ১০০ থেকে ৩৬০ টাকা। ময়মনসিংহ হতে ভৈরব গামী ট্রেনে আঠারবাড়ি রেলস্টেশনে নেমে যাওয়া যাবে।

ছবি তোলার স্থান : আঠারবাড়ী, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ,বাংলাদেশ।
GPS coordinates : 24°37'51.7"N 90°42'58.6"E
ছবি তোলার তারিখ : ২৮/০৭/২০১৭ ইং
 
জমিদার বাড়ি মানেই দুই রকম চরিত্রের আড়াল, কখনও ভালো হয় আবার কখনো বা খারাপ হয় দেখা গেছে, তবে অবশ্যই রহস্যময়।
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top