কলেজ থেকে বের হয়ে নরিন কে বললাম,,,,
দোস্ত তোর ফোনটা একটু দে তো,,,,
--কেন??ফোন কেন??
--বাড়িতে ফোন করবো,,,
--তোর ফোন নাই,,, তোর ফোন দিয়ে কর,,
--আরে হারামি আমার ফোনে টাকা থাকলে কি তোর ফোন চাইতাম,,,,
--ফকিন্নি,,,
--ফকিন্নি তো তুই,,,,দুই টাকার জন্য কিপটামি করছিস,,,আচ্ছা যা ফোনে যক টাকা খরচ হবে আমি দিয়ে দিবো। এই নে অগ্রীম দুই টাকা।
--আমারে ভিক্ষুক মনে হয় তোর?? এই নে বিশ টাকা তোর ফোনে রিচার্জ করে তারপর কথা বল।
--আজব মেয়ে তো তুই,,,,দুই টাকার জন্য নিজের ফোন দিলি নি,,,আবার বিশ টাকা দিচ্ছি রিচার্জ করতে।
--ঐ আমি টাকার জন্য না করি নাই।
ফোনে আমার কিছু পার্সোনাল জিনিস আছে তাই না করছি।
--তোর বাসা থেকে ওয়াসরুম পর্যন্ত সব আমার জানা,, আর ফোনে কি এমন পার্সোনাল জিনিস আছে যেটা আমি জানতে পারবো না।
--আছে,,,
--কচু,,,আছে। তুই টাকার জন্য না করছিস।
--ঐ কুত্তা আমি গরীব হতে পারি কিন্তু ছোটলোক না। এই নে ফোন যত খুশি কথা বল। তবে অন্য কোথাও যাবি না।
--যাবো না মানে,,,,অবশ্যই যাবো,,,
--ঐ বিলাই আমার ফোন দে।
--আচ্ছা ঠিক আছে যাবো না।
পাসওর্য়াডটা তো বল আগে। না হলে আমি লক খুলবো কিভাবে।
--obuj_siam
--.................
--কিরে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন??
তোর নাম দিছি বলে?? আমার নামই দিছিলাম
কিন্তু পিচ্চি মামাতো ভাইটা আগের পাসওর্য়াড জেনে গিয়েছিলো। সারাক্ষণ গেম নিয়ে বসে থাকতো। তাই কাল রাতেই তোর নাম দিছি।
--তাই নাকি??
--তো,,,তুই কি ভেবেছিলি??
--না কিছু না।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে ফোনের লকটা খুলতেই দেখলাম,,,ওয়ালপেপারে আমার আর নরিনের একটা পিক দেয়া। অন্য কেউ হলে
হয়তো অনেক কিছুই মনে করতো।
কিন্তু আমি কিছু মনে করি না।
কারণ আমি জানি এই ছবিটাতে ওকে সুন্দর
দেখাচ্ছিল বলে এটা ওয়ালপেপারে দেওয়া।
আমি সেখানে কিছুই না। অনেকটা ছবির মধ্যে
গাছপালা যেমন থাকে তেমনই মূল্যহীন।
সাত পাচ না ভেবে আমি আম্মাকে কল দিলাম।
কিন্তু আমার নাম্বারটা শাশুরি নামে সেভ করা।
হয়তো মজা করে দিছে। অপরিচিত নাম্কার থেকে কল দেয়ায়,, পরিচয় দিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম। কথা বলতে বলতে আমি এতক্ষণে রাস্তায় এসে পড়েছি,,,,আমার ডান পাশে নরিনও
হাটছে। চট্রগ্রাম পলিটেকনিক থেকে চট্রগ্রাম বাস স্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছি। আমার মেস ওখানেই।
নরিন হোস্টেলে থাকে। কিন্তু আজকে নাকি কি কাজ আছে তাই আমার সাথে যাচ্ছে।
হঠাৎই আমাকে খুব জুড়ে এতটা ধাক্কা দিল নরিন।
আমি সামলাতে না পেরে সামনের একটা ময়লা স্তুপের উপর গিয়ে পড়লাম। খুব রাগ উঠলো নরিনের উপর। মেয়েটা কখন যে কি করে বসে সেটার ঠিক নেই। আরে এই মাঝ রাস্তায় ইর্য়াকি করার যায়গা। উঠে ওকে একটা ঝাড়ি দিতে যাবো
তখনই বুকটা ছ্যাত করে উঠলো। উপুড় হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে নরিন। মাথার নিচ থেকে রক্ত গড়িয়ে যাচ্ছে। সাই করে একটা কিছু চলে গেলো পাশ দিয়ে। তারমানে আমি যখন আম্মার সাথে কথা বলতে বলতে আনমনে রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম
তখন হঠাৎই সামনের দিক থেকে একটা গাড়ি আসে,, কিন্তু আমি খেয়াল করি নি। নরিন আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেও নিজে সরে আসার মতো যথেষ্ট সময় পায় নি। তাছাড়া ও ডান পাশে ছিলো। কিন্তু ইচ্ছে করলেই ও আরেকটু ডান পাশে সড়ে গিয়ে নিজেকে বাচাতে পারতো। কারণ ডানপাশে তখন কোন গাড়ি ছিল না। কিন্তু তা না করে আমাকে বাচাতে আমাকে ধাক্কা দিল।
কিন্তু নিজে সরে যাবার আর সময় পেল না।
আমাকে বাচিয়ে নিজেই এখন রাস্তায় পড়ে আছে।
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
কি করবো কিছুই মাথায় আসছিলো না।
আমি শুধু ওর মাথাটা কোলে নিয়ে.......
--নরিন,, এই নরিন উঠ। এই নরিন উঠনা। কিরে কথা বলছিস না কেন?? এই নরিন..... বলে চিতকার করছিলাম। ওর মায়াবী শ্যামলা মুখটা রক্তে লাল হয়ে গেছে। ওর ঘন কালো মেঘের মতো চুলগুলো রক্তে ভিজে গিয়ে চ্যাট চ্যাট হয়ে গেছে। ওকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে সে কথাটা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার শুধু বার বার মনে হতে লাগলো,,,,,
আমার জন্য। শুধু আমাকে বাচাতে গিয়ে নরিনের আজ এই অবস্থা। আমার জন্যই আমাকে যে বেস্ট ফ্রেন্ড বলতো সেই মেয়েটা আজ মরতে বসেছে।
তারপর আশেপাশে যারা ছিলো তারা আমাকে আর নরিনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। নরিনকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার বলল,,,অনেক রক্ত লাগবে। কিন্তু আমি জানতাম আমার নরিনের রক্তের গ্রুপ ম্যাচ করে না। অবশেষে ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত পাওয়া যায়। নরিনের চিকিৎসা শুরু হলো,,,,
আনুমানিক রাত ১০টা,,,,,
ডাক্তার বাবু তাকে বেডে দিয়ে গেছে। আমি ওর বেডের পাশে নির্জীব অবস্থায় বসে আছি। বাকি যারা এসেছিলো সবাই চলে গেছে।
ওর মামার বাসাতেও খবর দেওয়া হয়েছে।
কেউ আসে নি। কেউ আসবেও না আমি জানি।
কারণ ওর মামী বাপ মা মরা নরিনকে তাদের পরিবারের বোঝা মনে করে। আর নরিনের মামাও এখন ঢাকায় আছেন। আমার ক্লাসমেটগুলাও এই মাতরো চলে গেছে,,কিন্তু আমি যাই নি।
কি করে যাবো আমার জন্যইতো আজ ওর এ অবস্থা। বার বার বুক ফেটে কান্না আসছে।
চিতকার করে বলতে ইচ্ছে করছে,,,,
--নরিন,,,নরিনরে কেন এমন করলি তুই এমনটা।
কেন আমার জন্য,নিজেকে বিপদে ফেললি??
কিন্তু বলতে পারছি না। ডাক্তার শব্দ করতে নিশেধ করেছেন। শব্দ করলে নাকি আমাকর রুম থেকে বের করে দিবে। কিন্তু এই অবস্থায় আমি নরিনকে রেখে কেমন করে যাই। তাই চুপ করেই বসে আছি।
হঠাৎই আমার প্যান্টের পকেটটা কেপে উঠলো।
মনে হয় কোন মেসেজ এসেছে ফোনে।
আমি ফোনটা বের করে দেখলাম এটা নরিনের
ফোন। আমার ফোনতো আমার ব্যাগে।
ফোনের লকটা ওপেন করতেই নরিনের হাসিমাখা মুখটা ভেসে উঠলো। ওর মায়াবী মুখটা দেখে আবারও বুক ফেটে কান্না আসছে আমার
কিন্তু না কাদা যাবে না।
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে নরিনের ফোনটা দেখতে লাগলাম। নরিন বলেছিল ওর ফোনে পার্সোনাল জিনিস আছে। তাই আমি ওন গ্যালারি চেক করতে লাগলাম। পুরো গ্যালারিতে প্রায় ৪৫০ টি ছবি তার মধ্যে প্রায় ৩০০টাই আমার ছবি।
বাকিগুলো আমার আর নরিনের ছবি। কি আশ্চর্য পুরো গ্যালারিতে আর কারো ছবি নেই।
এবার আমার একটু খটকা লাগলো।
আমি ওর ফাইল গুলো চেক করলাম,,,,
সেখানেও ওর আর আমার ছবি ছাড়া আর কারও পিক নেই।
প্রত্যেকটা ফোল্ডারই পাসওর্য়াড দেওয়া,,,
আর সবজায়গায় পাসওর্য়াড একই। পারিনি
আমি ওর মনের কথাগুলো বুঝকে পারি নি।
যেখানে আমার প্রায় সব সুবিধু অসুবিধায় আমার চোখ দেখে বুজে যেত। এই প্রথম আমার নিজের খুব ঘৃণা হচ্ছে। অজান্তেই আমার হাত চলে গেল ওর মাথায়। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। ইচ্ছে করছে ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বলি,,,,
--এওো ভালোবাসিস আমায়???
কোনোদিন বলিস নি কেন??আমি আসলেই অনেক খারাপ তাই না?? অনেক খারাপ।
কিন্তু ও জেগে যাবে তাই করতে পারছি না।
কিন্তু তবুও ও জেগে গেল। খেয়াল করলাম ওর
চোখের কোণা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
পানির ফোটাগুলো গাল বেয়ে কানের দিকে যাচ্ছে,,,,
আমি আস্তে করে সেগুলো মুছে দিয়ে বললাম,,,
--কিরে কাদছিস কেন???
--তুই ঠিক আছিস আবির??
--হুম আছি। কিন্তু তুই কাদছিস কেন যন্ত্রনা হচ্ছে??
--নারে। আসলে আব্বা আম্মা মারা যাওয়ার পর এভাবে কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় নি তো তাই।
জানিস,,,,আমার যখন অসুখ হতো তখন খুব ইচ্ছে করতো কেউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিক। কিন্তু জানিস সিয়াম,,, মামীকে অসুখের কথা বললেই মামী বলে সব নাকি আমার ভঙ্গি,,,
কাজে ফাকি দেওয়ার ধান্দা। আর নানান ধরণের
কথা শুনাত। তাই এখন আর অসুখ হলে আমি কাউকে বলি না। নিজের মধ্যেই পুষে রাখি কষ্টটাকে।
কথাগুলো ও এমন করুণ গলায় বলল যে,,,,
আমি আর চোখের পানি আটকিয়ে রাখতে পারি নি। খেয়াল করলাম আমার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেছে।
--কিরে এবার তুই কাদছিস কেন হারামি??
আমাকে নিষেধ করে এখন তুই কাদছিস।
--না আর কাতবো না। আর তোকেও কাদতে দিবো না। এখন থেকে তোর যখন অসুখ হবে আমায় বলবি আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিবো।
সবসময়,,,,মনে থাকে যেন
--সবসময় তুই হাত বুলিয়ে দিবি???তোর বউ তোকে আস্ত রাখবে??বলেই হাসার চেষ্টা করলো কিন্তু মাথায় থুতনিতে টানা ব্যান্ডেজ থাকায় হাসিটা পূর্ণতা পেল না। তবুও ওর এই অপূর্ণ হাসিটাই আমার কাছে পৃথিবীর সব থেকে মূল্যবান সম্পদ বলে মনে হচ্ছে। আমি ওর চোখ দুটো আবারও মুছে দিয়ে বললাম,,,,,
--আমার বউ হবি নরিন??ছোট্র,মিষ্টি আর দুষ্টু বউ। যে আমার খেয়াল রাখবে। আমার পরিবারের
সবার খেয়াল লাখবে। কেউ কোন ভুল করলে শাসন করবে। আমার বিপদে আপদে ছায়ার মতো পাশে থাকবে।
--কি বলছিস এইসব,,,,তোর মাথা নষ্ট হয়েছে নাকি???
--আমার মাথা ঠিকই আছে। তোর মাথা নষ্ট হইছে। না হলে আমাকে পছন্দ করিস,, ভালোবাসিস এই কথাটা এতোদিন আমার কাছ থেকে গোপন করতি না।
--পছন্দ করি মানে???কি বলছিস তুই,,
--দেখ ন্যাকামো আমার একদম পছন্দ না। আমি তোর সব মেসেজ,,অনলি মি দেয়া পোষ্ট আর গ্যালারির সব ছবি দেখেছি। আমাকে আর তুই ফাকি দিতে পারবি না,,,,,
--অ্যাহ,,,,,তার মানে আমার সব শেষ,,,,এমন একটা ভঙ্গি করে ও বেডে শুয়ে পড়লো যেন আসলেই সব কিছু শেষ হয়ে গেছে ওর।
--আচ্ছা তুই এমন ক্যানরে??? এও ভালো কেন তুই???নিজের মনের কথাগুলো ফোনে রেখে দিতে পারিস আর আমাকে বলতে পারিস না। তুই আবার আমাকে বেস্ট ফ্রেন্ড বলিস। কি ভাবিস নিজেকে???সব ত্যাগ করে মহান হতে চাস তুই???আমার জীবন বাচিয়ে বিক্ষাত হতে চাস তুই???
--আসলে সিয়াম,,, আমি চাইনি আমার জন্য তোর কোন ক্ষতি হোক। আমার মতো চালচুলোহীন,এতীম অনাথ মেয়ের সাথে জড়িয়ে তুই কেন নিজের জীবনটাকে নষ্ট করবি। তুই ব্রিলিয়েন্ট স্টুডেন্ট তোর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
তুই দেশের সুনাম করবি,,,,তোর বাবা মায়ের সুনাম করবি,,,বিক্ষাত হবি। তখন আমিও বলবো ইজ্ঞিনিয়ার সিয়াম আমার ক্লাসমেট ছিলো।
--আরে ধ্যাত,,,দরকার নাই আমার বিক্ষাত হবার।
কিছুই লাগবে না আমার। আমার শুধু তোকে চাই,,, শুধু তোকে।
--কিন্তু আমার পরিচয়,,,আমার সমাজ,,,আমি যে এতিম।
--চুপ কর। আমি কখনো তোকে এই ব্যাপারে কিছু বলছি। আরেকবার যতি নিজেকে এতিম বলিস তাহলে আমি তোকে মেরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসবো,,,,
--বাব্বাহ,,,,,একদিন মাএ মোবাইলের পাসওর্য়াড পাইছোস তাতেই এতো সাহস। বাকি দিনতো বাকিই রইলো এখনো,,,,
--ঠিক বলেছিস। তখন যদি পাসওর্য়াডটা না জানতাম তাহলে জীবনে অনেককিছুই অজানা থাকতো। অনেক দামী জিনিস হারাতাম।
--আচ্ছা যা,,, এখন শুধু মোবাইলের পাসওর্য়াড নয় জীবনের পাসওর্য়াডটাও তোকে দিয়ে দিলাম।
--তুই না দিলে আমিই হ্যাক করে নিয়ে নিতাম,,,,
--তাই নাকি???
--হুম তাই।
--তাই??
--হুম তাই।
আমার মাথাটা টেনে ওর মুখের কাছে নিয়ে নাকে নাক ঘষে বলল,,,,,
--পারলে হ্যাক করে দেখা কেমন পারিস।
--ওকে চ্যালেঞ্জ এক্সেপটেড।
অতঃপর শুরু আরো একটি ভালোবাসার গল্প
★★এইটা হলো সত্যিকারের ভালোবাসা কারণ সত্যিকারের ভালোবাসায় কখনো তার ভালোবাসার মানুষের কোন ক্ষতি হোক সেটা সে কখনোই চাইবে না বা আশাও করবে না। সবসময় তার ভালোবাসার মানুষের পাশে থাকবে সেটা জীবনের যেকোন পরিস্থিতিই হোক কেন সবসময় তার পাশে থাকবে কখনো ছেড়ে যাবে না।
----------------সমাপ্ত----------------
দোস্ত তোর ফোনটা একটু দে তো,,,,
--কেন??ফোন কেন??
--বাড়িতে ফোন করবো,,,
--তোর ফোন নাই,,, তোর ফোন দিয়ে কর,,
--আরে হারামি আমার ফোনে টাকা থাকলে কি তোর ফোন চাইতাম,,,,
--ফকিন্নি,,,
--ফকিন্নি তো তুই,,,,দুই টাকার জন্য কিপটামি করছিস,,,আচ্ছা যা ফোনে যক টাকা খরচ হবে আমি দিয়ে দিবো। এই নে অগ্রীম দুই টাকা।
--আমারে ভিক্ষুক মনে হয় তোর?? এই নে বিশ টাকা তোর ফোনে রিচার্জ করে তারপর কথা বল।
--আজব মেয়ে তো তুই,,,,দুই টাকার জন্য নিজের ফোন দিলি নি,,,আবার বিশ টাকা দিচ্ছি রিচার্জ করতে।
--ঐ আমি টাকার জন্য না করি নাই।
ফোনে আমার কিছু পার্সোনাল জিনিস আছে তাই না করছি।
--তোর বাসা থেকে ওয়াসরুম পর্যন্ত সব আমার জানা,, আর ফোনে কি এমন পার্সোনাল জিনিস আছে যেটা আমি জানতে পারবো না।
--আছে,,,
--কচু,,,আছে। তুই টাকার জন্য না করছিস।
--ঐ কুত্তা আমি গরীব হতে পারি কিন্তু ছোটলোক না। এই নে ফোন যত খুশি কথা বল। তবে অন্য কোথাও যাবি না।
--যাবো না মানে,,,,অবশ্যই যাবো,,,
--ঐ বিলাই আমার ফোন দে।
--আচ্ছা ঠিক আছে যাবো না।
পাসওর্য়াডটা তো বল আগে। না হলে আমি লক খুলবো কিভাবে।
--obuj_siam
--.................
--কিরে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন??
তোর নাম দিছি বলে?? আমার নামই দিছিলাম
কিন্তু পিচ্চি মামাতো ভাইটা আগের পাসওর্য়াড জেনে গিয়েছিলো। সারাক্ষণ গেম নিয়ে বসে থাকতো। তাই কাল রাতেই তোর নাম দিছি।
--তাই নাকি??
--তো,,,তুই কি ভেবেছিলি??
--না কিছু না।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে ফোনের লকটা খুলতেই দেখলাম,,,ওয়ালপেপারে আমার আর নরিনের একটা পিক দেয়া। অন্য কেউ হলে
হয়তো অনেক কিছুই মনে করতো।
কিন্তু আমি কিছু মনে করি না।
কারণ আমি জানি এই ছবিটাতে ওকে সুন্দর
দেখাচ্ছিল বলে এটা ওয়ালপেপারে দেওয়া।
আমি সেখানে কিছুই না। অনেকটা ছবির মধ্যে
গাছপালা যেমন থাকে তেমনই মূল্যহীন।
সাত পাচ না ভেবে আমি আম্মাকে কল দিলাম।
কিন্তু আমার নাম্বারটা শাশুরি নামে সেভ করা।
হয়তো মজা করে দিছে। অপরিচিত নাম্কার থেকে কল দেয়ায়,, পরিচয় দিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম। কথা বলতে বলতে আমি এতক্ষণে রাস্তায় এসে পড়েছি,,,,আমার ডান পাশে নরিনও
হাটছে। চট্রগ্রাম পলিটেকনিক থেকে চট্রগ্রাম বাস স্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছি। আমার মেস ওখানেই।
নরিন হোস্টেলে থাকে। কিন্তু আজকে নাকি কি কাজ আছে তাই আমার সাথে যাচ্ছে।
হঠাৎই আমাকে খুব জুড়ে এতটা ধাক্কা দিল নরিন।
আমি সামলাতে না পেরে সামনের একটা ময়লা স্তুপের উপর গিয়ে পড়লাম। খুব রাগ উঠলো নরিনের উপর। মেয়েটা কখন যে কি করে বসে সেটার ঠিক নেই। আরে এই মাঝ রাস্তায় ইর্য়াকি করার যায়গা। উঠে ওকে একটা ঝাড়ি দিতে যাবো
তখনই বুকটা ছ্যাত করে উঠলো। উপুড় হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে নরিন। মাথার নিচ থেকে রক্ত গড়িয়ে যাচ্ছে। সাই করে একটা কিছু চলে গেলো পাশ দিয়ে। তারমানে আমি যখন আম্মার সাথে কথা বলতে বলতে আনমনে রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম
তখন হঠাৎই সামনের দিক থেকে একটা গাড়ি আসে,, কিন্তু আমি খেয়াল করি নি। নরিন আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেও নিজে সরে আসার মতো যথেষ্ট সময় পায় নি। তাছাড়া ও ডান পাশে ছিলো। কিন্তু ইচ্ছে করলেই ও আরেকটু ডান পাশে সড়ে গিয়ে নিজেকে বাচাতে পারতো। কারণ ডানপাশে তখন কোন গাড়ি ছিল না। কিন্তু তা না করে আমাকে বাচাতে আমাকে ধাক্কা দিল।
কিন্তু নিজে সরে যাবার আর সময় পেল না।
আমাকে বাচিয়ে নিজেই এখন রাস্তায় পড়ে আছে।
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
কি করবো কিছুই মাথায় আসছিলো না।
আমি শুধু ওর মাথাটা কোলে নিয়ে.......
--নরিন,, এই নরিন উঠ। এই নরিন উঠনা। কিরে কথা বলছিস না কেন?? এই নরিন..... বলে চিতকার করছিলাম। ওর মায়াবী শ্যামলা মুখটা রক্তে লাল হয়ে গেছে। ওর ঘন কালো মেঘের মতো চুলগুলো রক্তে ভিজে গিয়ে চ্যাট চ্যাট হয়ে গেছে। ওকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে সে কথাটা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার শুধু বার বার মনে হতে লাগলো,,,,,
আমার জন্য। শুধু আমাকে বাচাতে গিয়ে নরিনের আজ এই অবস্থা। আমার জন্যই আমাকে যে বেস্ট ফ্রেন্ড বলতো সেই মেয়েটা আজ মরতে বসেছে।
তারপর আশেপাশে যারা ছিলো তারা আমাকে আর নরিনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। নরিনকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার বলল,,,অনেক রক্ত লাগবে। কিন্তু আমি জানতাম আমার নরিনের রক্তের গ্রুপ ম্যাচ করে না। অবশেষে ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত পাওয়া যায়। নরিনের চিকিৎসা শুরু হলো,,,,
আনুমানিক রাত ১০টা,,,,,
ডাক্তার বাবু তাকে বেডে দিয়ে গেছে। আমি ওর বেডের পাশে নির্জীব অবস্থায় বসে আছি। বাকি যারা এসেছিলো সবাই চলে গেছে।
ওর মামার বাসাতেও খবর দেওয়া হয়েছে।
কেউ আসে নি। কেউ আসবেও না আমি জানি।
কারণ ওর মামী বাপ মা মরা নরিনকে তাদের পরিবারের বোঝা মনে করে। আর নরিনের মামাও এখন ঢাকায় আছেন। আমার ক্লাসমেটগুলাও এই মাতরো চলে গেছে,,কিন্তু আমি যাই নি।
কি করে যাবো আমার জন্যইতো আজ ওর এ অবস্থা। বার বার বুক ফেটে কান্না আসছে।
চিতকার করে বলতে ইচ্ছে করছে,,,,
--নরিন,,,নরিনরে কেন এমন করলি তুই এমনটা।
কেন আমার জন্য,নিজেকে বিপদে ফেললি??
কিন্তু বলতে পারছি না। ডাক্তার শব্দ করতে নিশেধ করেছেন। শব্দ করলে নাকি আমাকর রুম থেকে বের করে দিবে। কিন্তু এই অবস্থায় আমি নরিনকে রেখে কেমন করে যাই। তাই চুপ করেই বসে আছি।
হঠাৎই আমার প্যান্টের পকেটটা কেপে উঠলো।
মনে হয় কোন মেসেজ এসেছে ফোনে।
আমি ফোনটা বের করে দেখলাম এটা নরিনের
ফোন। আমার ফোনতো আমার ব্যাগে।
ফোনের লকটা ওপেন করতেই নরিনের হাসিমাখা মুখটা ভেসে উঠলো। ওর মায়াবী মুখটা দেখে আবারও বুক ফেটে কান্না আসছে আমার
কিন্তু না কাদা যাবে না।
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে নরিনের ফোনটা দেখতে লাগলাম। নরিন বলেছিল ওর ফোনে পার্সোনাল জিনিস আছে। তাই আমি ওন গ্যালারি চেক করতে লাগলাম। পুরো গ্যালারিতে প্রায় ৪৫০ টি ছবি তার মধ্যে প্রায় ৩০০টাই আমার ছবি।
বাকিগুলো আমার আর নরিনের ছবি। কি আশ্চর্য পুরো গ্যালারিতে আর কারো ছবি নেই।
এবার আমার একটু খটকা লাগলো।
আমি ওর ফাইল গুলো চেক করলাম,,,,
সেখানেও ওর আর আমার ছবি ছাড়া আর কারও পিক নেই।
প্রত্যেকটা ফোল্ডারই পাসওর্য়াড দেওয়া,,,
আর সবজায়গায় পাসওর্য়াড একই। পারিনি
আমি ওর মনের কথাগুলো বুঝকে পারি নি।
যেখানে আমার প্রায় সব সুবিধু অসুবিধায় আমার চোখ দেখে বুজে যেত। এই প্রথম আমার নিজের খুব ঘৃণা হচ্ছে। অজান্তেই আমার হাত চলে গেল ওর মাথায়। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। ইচ্ছে করছে ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বলি,,,,
--এওো ভালোবাসিস আমায়???
কোনোদিন বলিস নি কেন??আমি আসলেই অনেক খারাপ তাই না?? অনেক খারাপ।
কিন্তু ও জেগে যাবে তাই করতে পারছি না।
কিন্তু তবুও ও জেগে গেল। খেয়াল করলাম ওর
চোখের কোণা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
পানির ফোটাগুলো গাল বেয়ে কানের দিকে যাচ্ছে,,,,
আমি আস্তে করে সেগুলো মুছে দিয়ে বললাম,,,
--কিরে কাদছিস কেন???
--তুই ঠিক আছিস আবির??
--হুম আছি। কিন্তু তুই কাদছিস কেন যন্ত্রনা হচ্ছে??
--নারে। আসলে আব্বা আম্মা মারা যাওয়ার পর এভাবে কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় নি তো তাই।
জানিস,,,,আমার যখন অসুখ হতো তখন খুব ইচ্ছে করতো কেউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিক। কিন্তু জানিস সিয়াম,,, মামীকে অসুখের কথা বললেই মামী বলে সব নাকি আমার ভঙ্গি,,,
কাজে ফাকি দেওয়ার ধান্দা। আর নানান ধরণের
কথা শুনাত। তাই এখন আর অসুখ হলে আমি কাউকে বলি না। নিজের মধ্যেই পুষে রাখি কষ্টটাকে।
কথাগুলো ও এমন করুণ গলায় বলল যে,,,,
আমি আর চোখের পানি আটকিয়ে রাখতে পারি নি। খেয়াল করলাম আমার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেছে।
--কিরে এবার তুই কাদছিস কেন হারামি??
আমাকে নিষেধ করে এখন তুই কাদছিস।
--না আর কাতবো না। আর তোকেও কাদতে দিবো না। এখন থেকে তোর যখন অসুখ হবে আমায় বলবি আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিবো।
সবসময়,,,,মনে থাকে যেন
--সবসময় তুই হাত বুলিয়ে দিবি???তোর বউ তোকে আস্ত রাখবে??বলেই হাসার চেষ্টা করলো কিন্তু মাথায় থুতনিতে টানা ব্যান্ডেজ থাকায় হাসিটা পূর্ণতা পেল না। তবুও ওর এই অপূর্ণ হাসিটাই আমার কাছে পৃথিবীর সব থেকে মূল্যবান সম্পদ বলে মনে হচ্ছে। আমি ওর চোখ দুটো আবারও মুছে দিয়ে বললাম,,,,,
--আমার বউ হবি নরিন??ছোট্র,মিষ্টি আর দুষ্টু বউ। যে আমার খেয়াল রাখবে। আমার পরিবারের
সবার খেয়াল লাখবে। কেউ কোন ভুল করলে শাসন করবে। আমার বিপদে আপদে ছায়ার মতো পাশে থাকবে।
--কি বলছিস এইসব,,,,তোর মাথা নষ্ট হয়েছে নাকি???
--আমার মাথা ঠিকই আছে। তোর মাথা নষ্ট হইছে। না হলে আমাকে পছন্দ করিস,, ভালোবাসিস এই কথাটা এতোদিন আমার কাছ থেকে গোপন করতি না।
--পছন্দ করি মানে???কি বলছিস তুই,,
--দেখ ন্যাকামো আমার একদম পছন্দ না। আমি তোর সব মেসেজ,,অনলি মি দেয়া পোষ্ট আর গ্যালারির সব ছবি দেখেছি। আমাকে আর তুই ফাকি দিতে পারবি না,,,,,
--অ্যাহ,,,,,তার মানে আমার সব শেষ,,,,এমন একটা ভঙ্গি করে ও বেডে শুয়ে পড়লো যেন আসলেই সব কিছু শেষ হয়ে গেছে ওর।
--আচ্ছা তুই এমন ক্যানরে??? এও ভালো কেন তুই???নিজের মনের কথাগুলো ফোনে রেখে দিতে পারিস আর আমাকে বলতে পারিস না। তুই আবার আমাকে বেস্ট ফ্রেন্ড বলিস। কি ভাবিস নিজেকে???সব ত্যাগ করে মহান হতে চাস তুই???আমার জীবন বাচিয়ে বিক্ষাত হতে চাস তুই???
--আসলে সিয়াম,,, আমি চাইনি আমার জন্য তোর কোন ক্ষতি হোক। আমার মতো চালচুলোহীন,এতীম অনাথ মেয়ের সাথে জড়িয়ে তুই কেন নিজের জীবনটাকে নষ্ট করবি। তুই ব্রিলিয়েন্ট স্টুডেন্ট তোর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
তুই দেশের সুনাম করবি,,,,তোর বাবা মায়ের সুনাম করবি,,,বিক্ষাত হবি। তখন আমিও বলবো ইজ্ঞিনিয়ার সিয়াম আমার ক্লাসমেট ছিলো।
--আরে ধ্যাত,,,দরকার নাই আমার বিক্ষাত হবার।
কিছুই লাগবে না আমার। আমার শুধু তোকে চাই,,, শুধু তোকে।
--কিন্তু আমার পরিচয়,,,আমার সমাজ,,,আমি যে এতিম।
--চুপ কর। আমি কখনো তোকে এই ব্যাপারে কিছু বলছি। আরেকবার যতি নিজেকে এতিম বলিস তাহলে আমি তোকে মেরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসবো,,,,
--বাব্বাহ,,,,,একদিন মাএ মোবাইলের পাসওর্য়াড পাইছোস তাতেই এতো সাহস। বাকি দিনতো বাকিই রইলো এখনো,,,,
--ঠিক বলেছিস। তখন যদি পাসওর্য়াডটা না জানতাম তাহলে জীবনে অনেককিছুই অজানা থাকতো। অনেক দামী জিনিস হারাতাম।
--আচ্ছা যা,,, এখন শুধু মোবাইলের পাসওর্য়াড নয় জীবনের পাসওর্য়াডটাও তোকে দিয়ে দিলাম।
--তুই না দিলে আমিই হ্যাক করে নিয়ে নিতাম,,,,
--তাই নাকি???
--হুম তাই।
--তাই??
--হুম তাই।
আমার মাথাটা টেনে ওর মুখের কাছে নিয়ে নাকে নাক ঘষে বলল,,,,,
--পারলে হ্যাক করে দেখা কেমন পারিস।
--ওকে চ্যালেঞ্জ এক্সেপটেড।
অতঃপর শুরু আরো একটি ভালোবাসার গল্প
★★এইটা হলো সত্যিকারের ভালোবাসা কারণ সত্যিকারের ভালোবাসায় কখনো তার ভালোবাসার মানুষের কোন ক্ষতি হোক সেটা সে কখনোই চাইবে না বা আশাও করবে না। সবসময় তার ভালোবাসার মানুষের পাশে থাকবে সেটা জীবনের যেকোন পরিস্থিতিই হোক কেন সবসময় তার পাশে থাকবে কখনো ছেড়ে যাবে না।
----------------সমাপ্ত----------------