What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

MOHAKAAL

Mega Poster
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
2,293
Messages
16,063
Credits
1,472,352
Thermometer
Billiards
Sandwich
Profile Music
French Fries
সেন্টমারটিনে দেবীভোগ পর্ব ১ - by sensuous_aphrodite

পান্নানীল জলরাশি ফোঁস ফোঁস শব্দ তুলে বারবার আছড়ে পড়ছে ফেব্রুয়ারি সকালের তেরছা সূর্যালোকে ঈষৎ উজ্জ্বল বালুময় সৈকততীরে। বালিতে তার ক্ষণিক অস্তিত্তের চিত্র এঁকে এরপর ধীরপায়ে ফিরছে নোনাজলের অশেষ উৎস পানে। পরক্ষনেই আবার উঁচু হয়ে ফণা তুলে সৈকতে তার প্রত্যাবর্তন, বালিতে প্রকট নতুন রেখাচিত্র। ঘুম ভাঙা অবধি জল ও তটের এই খেলাই দেখছিল অনিক, সানলাউনজারে আধশোয়া থেকে। সূর্যোদয় দেখবার ইচ্ছে থাকলেও আজ তা দেখা হোল না, কিছুটা দেরিতে ঘুম ভেঙেছিল তার। কাল সন্ধ্যেবেলা বিকেলের জাহাজে তারা সেন্টমারটিন পৌঁছেছে । হোটেল বুক করাই ছিল, ফেরিঘাটে নেমে বাজার হয়ে সোজা পশ্চিম বীচের সূর্যাস্ত রিসোর্টে উঠেছে। খাওয়া দাওয়া সেরে ক্লান্ত থাকবার কারণে ঘুমিয়ে পড়েছিল দ্রুত, আর সকাল অবধি পশ্চিম বীচে সাগরসূর্যের মিষ্টি রোদ আর হালকা হাওয়ার মাঝে থেকে বেশ ফুরফুরে লাগছিল অনিকের। ঘণ্টাখানেক সমুদ্রজলের আসা যাওয়া দেখতে দেখতে আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসে তার।

"অনিক, এই অনিক ঘুমিয়ে পড়লি নাকি"
চোখ খুলে অনিক দেখল সামাদ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অনিক চোখ ঘষে বলল, "নারে এই একটু চোখ লেগে এসেছিল।"
সামাদ সামনে ঝুকে অনিকের কাঁধে হাত রেখে বলল, "চল কিছু খেয়ে আসি, মাসুদ ব্যাটাও উঠে পরছে।"
অনিক উঠে পড়ে সামাদের সাথে হাঁটতে শুরু করল।
"অনেকদিন থেকেই সাগরপাড়ে আসতে চাচ্ছিলাম। আজ অনেক ভালো লাগছে।"
সামাদ বলল, "সাগর আমারও ভালো লাগে, তবে এবারের ছুটিতে পাহাড়ে যাবার মন ছিল। তোর জোরাজুরিতেই শেষে কিনা এখানে এলাম।"
"জানিনা কেন, কিছুদিন থেকে মনে হচ্ছিল সাগর যেন আমাকে তার কাছে টানছে; ঠিক সাগরতীরের বালুকনার মতো স্রোত আমায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের বুকে, বাধা দেয়ার যেন কোন সামর্থ্যই আমার নেই।"
সামাদ শ্লেষের সুরে বলল,"কি আর করা, কেউ তো আমাকে আর তোর মতো বুকে টেনে নিবেনা। তোর মতো কবিতাও তো কাউকে শোনানো হয়না।"
রিসোর্টের সামনে মাসুদকে দেখা গেল; সে তাদের দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বলল, "কি রে শালা, কই ছিলি! খিদায় আমার কাহিল অবস্থা। মাছ ভাজা যে কয়টা সাবার করতে ইচ্ছে করছে, দেখিস ব্যাটা।"
ক্যান্টিনের দিকে এগুতে থাকল ওরা। একটা ফাকা টেবিলে বসে ওয়েটারকে ডেকে মাসুদ খাবার অর্ডার করল। মাসুদ আয়েশ মতো চওড়া হয়ে বসে বলল, "কি রে অনিক, কখন বেরিয়েছিলে রুম থেকে?"
অনিক বলল,"এই ভোরের কিছু পরেই হবে।"
"সমুদ্র দেখে কবিতা-টবিতা কিছু লিখে ফেললি নাকি।"
সামাদ ঈষৎ হেসে বলল,"ও কবিতা কি লিখবে রে, গিয়ে তো দেখি রোদের মধ্যে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। স্রোতের আওয়াজে বিহ্বল হয়ে পড়েছে কিনা।"
এর মাঝে ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে গেল। মাসুদ বেশ পেটুক গোছের, খিদে লাগলে প্রচুর খেতে পারে। মাসুদের গোগ্রাসে মাছ ভাজা খাবার ব্যাগ্রতা দেখে অনিক আর সামাদ হাসতে লাগল। খাওয়া হয়ে গেলে তিনজন বীচের দিকে এগুতে থাকে।

বীচে পৌঁছে তিনজনই একদৃষ্টিতে সমুদ্র দেখতে থাকল। জোয়ার তখন অনেকটাই কমে এসেছে, স্তিমিত ধারায় জল তটে এসে পড়ছে। খানিক বাদেই তিন বন্ধু মিলে খুনসুটিতে মেতে উঠল, সাগরপাড় হতে বিপরীতের ঝাউ গাছে ভরা টিলা পর্যন্ত দৌড়াদৌড়ি, বীচ বল নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকল। সূর্য তখন মাথার উপর উঠতে শুরু করেছে; সকালের মিষ্টি লাজরক্তিম বর্ণ ছেড়ে গনগনে হলুদ বর্ণে তাপ বিকিরণ করে সমস্ত প্রকৃতিকে জীবনীশক্তি দানের নৈমিত্তিক রুপ ধারন করেছে। তিন বন্ধুই সাগরসূর্যের তাপে ঘামতে থাকলে তাদের টিশার্ট খুলে ফেলে। সাগরপাড়ে তখন অনেক টুরিস্ট ভিড় জমিয়েছে, তাদের মাঝে অনেকে এই শার্টখোলা ছেলেদের আনন্দক্রীড়া একদৃষ্টিতে দেখছিল। তাদের মাঝে তরুণী আর মাঝবয়সী মহিলাদের চোখ দুটো যেন ইচ্ছায় অনিচ্ছায় বার বার এই ছেলেদের উপরি ঘোরাফেরা করছিল, আর তাদের সিংহভাগেরই দৃষ্টি অনিকের প্রতি।

অনিকের গৌরবর্ণ, লম্বা, নিয়মিত জিম করা চওড়া কাঁধের বলশালী দেহকাঠামো যেকোনো বয়সী মহিলাকেই তার দিকে ফিরে তাকাতে বাধ্য করে; সাথে তার মুখশ্রীও সুগঠিত এবং মায়াকাড়া; টানা টানা চোখ, ধারালো ছুরির ন্যায় নাক, তীক্ষ্ণ চোয়াল; নারীদের পরম আকাঙ্ক্ষার দেবমূর্তি হিসেবেই অনিক যেন তাদের সামনে ধরা দেয়। স্কুল কলেজের মেয়েবন্ধুদের আর চাকুরীক্ষেত্রের মেয়ে কলিগদের মাঝেও অনিকের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে; সেটার জন্যে শুধু তার দেহগড়নই দায়ী নয়, অনিকের কবিতা লেখার হাতও বেশ চমৎকার। কলেজে থাকতে সহপাঠিনীরা তার চোখের মায়ায় আবিষ্ট হয়ে রবি ঠাকুরের মানসসুন্দরি কিম্বা ভৈরবীর গান শুনতে শুনতে কতবার যে সম্মোহিত হয়ে নিজেদের শুভবুদ্ধি হারিয়েছে তার সঠিক হিসেব কেউ বলতে পারবেনা। অনিকের বন্ধুদের তার এই জনপ্রিয়তা দেখে গা জ্বলে গেলেও, অনিক এসব বিষয় তেমন পাত্তা দিতো না, মেয়েদের ব্যাপারে সে বরাবরই উদাসীন। মাসুদ বীচের মেয়েদের দৃষ্টিরেখা লক্ষ্য করে দৌড় থামিয়ে সামাদকে উদ্দেশ্য করে বলল, "কি রে সামাদ দেখতেছিস, মেয়েগুলো সব কেমন হা করে অনিককে গিলতেছে।"

সামাদ এতক্ষণ একমনে খুনসুটিতেই মেতে ছিল, এখন ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েদের ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি দেখে বলল, "এ আর নতুন কি, অনিককে কি আমাদের বান্ধবীদেরই কেউ ছাড়ত! অনিক যদি মুখ ফুটে কিছু বলত তো তখনি ওর কোলে ঢলে পড়ত, আর কতজন যে পড়েছে তার হিসেবও কি আমরা জানি নাকি, অনিক তো মেয়েদের সম্পর্কে কিছুই বলতে চায়না। মেয়েদের থেকে তো ও গা বাঁচিয়েই চলল সারাজীবন।"

"তবে সামাদ, আমি কথায় কথায় শুনেছি যে কলেজে থাকতে রায়হান নাকি আসাদচত্বরে দীপ্তিকে অনিকের বুকে ঢলে পড়তে দেখেছিল।"
"হুম এমন কথা আমিও কিছু শুনেছি, কিন্তু সেটা স্নেহার ব্যাপারে; স্নেহা নাকি গার্ডেনে কবিতা শুনতে শুনতে অনিকের কাঁধেই হেলে পরেছিল, একদম মূর্ছা যাওয়ার মতো ব্যাপার। অনিক নাকি বহু কষ্টে সামলেছিল ওকে।"

সামাদ আর মাসুদ বীচের মাঝে দাড়িয়ে কথা বলছিল, অনিক তাদের থেকে দূরে স্রোতের মাঝে কিছুক্ষণ পা ডুবিয়ে রেখে আবার তাদের দিকে ফিরে আসছিল। সামাদ অনিকের ঘামে ভেজা রোদে চিকচিক করে রুপোলী আলো ছড়ানো শরীরের দিকে একমনে তাকিয়ে থেকে মাসুদকে বিড়বিড়িয়ে বলল, "ঈশ্বরের এমন এক অপরুপ শিল্পকে মেয়েরা যে এমন অস্থির হয়ে কাছে চাইবে তাতে আসলে অবাক হবার কিছু নেই, সুন্দরকে সবাই আপন করেই পেতে চায়।"

ইতোমধ্যে অনিক ওদের কাছে চলে আসায় মাসুদ আর সামাদ এই বিষয়ে কথা বলা বন্ধ রাখে। ওরা জানে অনিক এসব ব্যাপারে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেনা; স্কুলজীবন থেকেই ওরা তিনজন ভালো বন্ধু, একে অপরকে নিজেরা বেশ ভালমতই চিনে। তিনজনই এরপর সমুদ্রে গিয়ে ডুব দেয়, নোনা জলের ঢেউ তাদের উপর বয়ে গেলে ধাক্কা লেগে কিছুটা পিছিয়ে পড়ার এবং মাধ্যাকর্ষণ বলের দুর্বলতায় ভেসে বেড়ানোর অনুভূতি হয় তাদের; একজন আরেকজনকে পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে মজাও করতে থাকে। ঘণ্টা খানেক পানিতে কাটিয়ে তারা হোটেলে ফিরে আসে। গোসল করে তিনজনই তাদের রুমে রেস্ট নেয়।

সেন্টমারটিনে কিছুদিন ছুটি কাটাবার জন্যে তিন বন্ধু রিসোর্টের একটি রুমই ভাড়া নিয়েছে । বেশ বড়সড় রুমটি, তিনটি বিছানা পাতা, রুমে ঢুকে সোজা কিছদুর এগুতেই স্লাইডিঙ দরজা খুললেই পরিষ্কার সমুদ্র দেখতে পাওয়া যায়। ছুটি কাটাবার পক্ষে বেশ ভালো ব্যবস্থা। কিছুক্ষণ পর সামাদ উঠে বারান্দায় গিয়ে তার গার্লফ্রেন্ড রিয়ার সাথে ফোনে কথা বলতে থাকে। রিয়া সামাদের সাথে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ত, সামাদের মালটিন্যাশনালে চাকরি হয়ে যাওয়ায় সামনে কিছুদিনের মাঝে বিয়ে করার চিন্তা করছে। সামাদ রুমে ফিরে আসলে তিনজনই ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে বের হয়।

ক্যান্টিনে এসে তারা রূপচাঁদা মাছ ভাজি, সসে ডোবানো করাল মাছ অর্ডার দিয়ে দুপুরের খাবার খেতে শুরু করে। মাসুদের মাছ ভাজা খাওয়া দেখে অনিক তাকে একটু সবুর করতে বলে এই বলে যে রাতে সাদা করাল মাছের বারবিকিউ খাওয়া হবে, তার জন্যে একটু জায়গা রাখতে। মাসুদ চোখ পাকিয়ে বলে, "এই শালা, খাওয়া নিয়ে কিছু বলবিনা, বলে দিলাম। আর বারবিকিউ নিয়ে তোর ভাবতে হবেনা। পারলে পুরো মাছটাই আমি একা খাব।"

মাসুদের কথায় ওরা দুজনই হাসতে থাকে। খাওয়া শেষ হলে ওরা বাজারের দিকে হাঁটতে থাকে। বাজারে পৌঁছে ওরা দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে; সেন্টমারটিনের বাজারটা বেশ ছোট, বেশিক্ষন সময় লাগেনা তাদের পুরো বাজার ঘুরে দেখতে। সূর্য তখনও মধ্যগগণ থেকে খুব বেশি হেলে পরেনি, তারা ঠিক করে সাইকেল চেপে দ্বীপটি ঘুরে দেখবে।

সাইকেল ভাড়া নিয়ে বাজার হতে সোজা দক্ষিন দিকে পূর্ব বীচ সংলগ্ন রাস্তাটি বরাবর তারা এগুতে থাকে। রাস্তা বরাবর এগুতে এগুতে তারা প্রায় সৈকতের ধারেই এসে পরে; জেলেদের মাছধরা নৌকোগুলো সাগরতীরে নোঙ্গর ফেলা ছিল। ছোট ছোট নৌকোগুলোর মাঝে দুএকটা কিছুটা বড় আকারের, কতগুলোতে বেশ উজ্জ্বল রঙের হাতে আঁকা কারুকাজ করা। তারা বীচে নেমে সেগুলো দেখতে লাগল, নৌকোগুলোর পাশে দাড়িয়ে কিছু ছবিও তুলল। তারপর আবার সাইকেল চেপে দক্ষিণে এগুতে থাকল সৈকতের উপর দিয়েই। কোথাও বালি বেশি থাকবার কারণে মাঝেমধ্যে এগিয়ে যেতে বাধা পেলেও, অনেকটা সাবলীলভাবেই তারা সাইকেল চালিয়ে এগুতে থাকল।

সমুদ্রের জলরাশি এত কাছাকাছি দেখতে দেখতে যাওয়ার কারণে অনিকের মনে হতে লাগল যেন জলরাশির একটু উপর দিয়েই অদৃশ্য কোন ভাসমান যানের উপর চেপে সে ভেসে চলেছে, নিজেকে অনেক হালকা মনে হতে লাগল তার, নগরের যান্ত্রিক জীবনধারা ছেড়ে যেন অন্য এক জগতে চলে এসেছে, যেখানে কোন ছুটোছুটি নেই, কোন ভার নেই, সবকিছুই এই জলরাশির মতো আপন নিয়মে আপন সময়ে এগিয়ে যাচ্ছে; চারিদিকেই যেন এক অপার সৌন্দর্য, এই ছলকে চলা স্রোতের মতো সবই যেন এক অশেষ যৌবন সৌন্দর্যে ভরা। সাগরতীরের আশেপাশের সব কিছুই, সেই ছোট ছোট ছড়ানো ছিটানো ঝাপিতোলা দোকনগুলো, চারপাশে দাড়িয়ে থাকা সার সার ইউক্যালিপটাস আর আমগাছগুলো, সাগরতটে দাড়িয়ে থাকা নারিকেল গাছগুলো যেন, নব আবিষ্কৃত তার এই নন্দন্দদৃষ্টিতে , এক মায়াবি স্নিগ্ধ রুপের জগত তৈরি করতে থাকে।

বি,দ্রঃ পাঠক-পাঠিকাদের গল্প পছন্দ হলে এর পরবর্তী সংস্করন প্রকাশ করব। কমেন্টে মতামত জানান।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top