What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পথের পাঁচালি ও বিভূতিভূষণ (1 Viewer)

নীরদচন্দ্র চৌধুরী মেস থেকে বেরিয়ে দেখলেন, তাঁর কলেজের প্রিয় বন্ধু বিভূতিভূষণ, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তার টাইম-কল থেকে কী একটা পাত্রে ধরে জল খাচ্ছেন।. নীরদ বাবু নিশ্চিত হওয়া র জন্য এগিয়ে গেলেন। হ্যাঁ, কোনো ও সন্দেহ নেই,ইনিই তার বন্ধু, প্রিয় বন্ধু বিভূতিভূষণ।বিভূতিবাবুর জল পান শেষ হলে, নীরদ বাবু বলে উঠলেন,' বিভূতি, তুমি এখানে জল খাচ্ছ,কী আশ্চর্য! কারণটা কী?'
বিভূতিভূষণ একটু অপ্রস্তুতের হাসি হেসে বললেন,' একটু আগে ছাতু খেলাম। তাই জল খেয়ে গলাটা ভিজিয়ে নিলাম।'
নীরদবাবু বললেন,তা তো বুঝলাম, কিন্তু তুমি আছ কোথায়? কী করছ এখন? '
বিভূতিভূষণ বললেন,'আপাতত কিছু না, ওই ভুজিওয়ালার দোকানে একটা চৌকি খালি আছে। রাতে ওখানেই থাকি,মাসে পাঁচ টাকা দেব বলেছি। আসলে যে স্কুলে শিক্ষকতা করতাম,সেটা হঠাৎই ছেড়ে দিতে হলো। তাই এই অবস্থা চলছে।'
নীরদবাবু বললেন, ' বিভূতি, আমি তোমার কলেজের ঘনিষ্ঠ ক্লাসফ্রেনড, তুমি একবারটি আমাকে জানালেনা , তোমার এমন অবস্থা, থাকার জায়গা নেই,চল আমার মেস- এ ।'
সেই ৪১ এ , মির্জাপুর স্ট্রিটের মেস এর বাসিন্দা হলেন বিভূতিভূষণ,নীরদবাবুর ঘরে।
সেই মেসে আরও একজন লেখক থাকতেন, পরবর্তীকালে বিখ্যাত দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার--- ঠাকুরদাদার ঝুলি, ঠাকুমার ঝুলি ও দাদামশায়ের থলের লেখক।
বিভূতিভূষণ কে মেস- এ নিয়ে গিয়ে খাটে থিতু করে নীরদবাবু বললেন,,' এবার বল বিভূতি, তোমার ব্যাপার কী, সমস্যা কোথায় ?
বিভূতিভূষণ বললেন, তুমি তো জানো আমি এম,এ ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলাম। হঠাৎ আমার স্ত্রী গৌরী র মৃত্যু- সংবাদ এল, আমার প্রথম সন্তানের ও, আমার মন ভেঙে গেল।পড়া ছেড়ে দিলাম। কতদিন ঘুরেছি কত জ্যোতিষীর কাছে,সাধু-সন্ন্যাসীর কাছে,পরলোক সম্বন্ধে জানবার জন্য। মফস্বলের এক স্কুল এ চাকরি নিলাম।মাইনে যা পাই, একজনের চালাবার মতো যথেষ্ট,যা বাঁচে- মাকে পাঠাই। মাঝে মাঝে কলকাতায় আসি, পরিচয়ের আড্ডায় শ্যামলকৃষ্ণ ঘোষের সঙ্গে আলাপ হলো।ইনি আফ্রিকায় জন্মেছিলেন, সেখানেই বড়ো হয়েছেন। বললাম, আফ্রিকার একটা নির্জন বনের নাম করতে পারেন।আমি সেখানে গিয়ে থাকতে চাই।সব শুনে শ্যামলবাবু বললেন,' আপনি যাঁদের স্কুলে কাজ করছেন,তাঁদের ই ‌ভাগলপুরে বিশাল এস্টেট আছে,জমি বিলি করবেন। সেখানকার বন আফ্রিকার থেকেও গভীর।শ্যামলবাবুর কথামতো সেখানে চলে গেলাম।ছ, বছর তাঁদের জমিদারির অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হয়ে কাজ করলাম।'নীরদবাবু বললেন,' তারপর?'
বিভূতিভূষণ বললেন,' সে কী গভীর বন, তুমি চিন্তা করতে পারবেনা। কাজের পর রাত্রে শুয়ে পরলোক চিন্তা করতাম।গৌরীর কথা ভাবি আর সকালে লেখালেখি।টানা ছবছর কাজ করার পর হাঁপিয়ে উঠলাম। মাঝে- মধ্যে কাজের জন্য পূর্ণিয়া, ভাগলপুর যাই, আবার ফিরে যাই জঙ্গলমহলে। শেষে শহরের টানে ফিরে এলাম। ফিরে এসে মফস্বলের একটা স্কুলে চাকরি নিই। রেজাল্ট তো ভালো ছিল। চাকরি পেতে অসুবিধা হল না। চলছিল ভালোই।তা যেখানে থাকতাম, তাদের বাড়ির এক মেয়ে এত যত্ন করতে লাগলো, মনে ভয় হলো। আমার মনে হলো,সে মেয়েটি হয়তো আমায় ভালো বাসতে চায়।স্বঘর নয়,বদনাম হলে,তার বিয়ের সমস্যা হয়ে যাবে।আমি তাই একদিন চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে কলকাতায় চলে এলাম।'
নীরদবাবু তাঁর অক্সফোর্ড এর বাড়িতে বসে আমাকে এ ঘটনাটি বলেছিলেন, 'বাবু ,কত মহৎ অন্তঃকরণ ছিল বিভূতির,পরে কি করবে, কোথায় থাকবে, তার কোন সংস্থান নেই,পাছে মেয়েটির দুর্নাম রটে সেজন্য স্কুলের পাকা চাকরি ছেড়ে চলে এল।।'
নীরদবাবু বললেন,' তা তুমি ছবছর ধরে লেখালেখি করেছ বললে,কী লেখা দেখাবে ত ?
বিভূতিভূষণ বললেন,' তা তুমি তো এখন কাজে বেরোচ্ছো----- ফিরে এস,আমি ততক্ষণে একটু গোছগাছ করে নিই।'
নীরদবাবু বললেন,' হ্যাঁ, আমার তো আবার রামানন্দবাবুর প্রবাসী অফিসে যাওয়া, আবার সেই সঙ্গে মডার্ন রিভিউ কাগজটাও দেখতে হচ্ছে। ঠিক আছে, তুমি জিরিয়ে নাও।আমি মেস ম্যানেজার কে বলে দিচ্ছি তুমি আমার গেষ্ট, যতদিন দরকার থাকবে।আসি।'
নীরদবাবু চলে যাওয়ার পর বিভূতিভূষণ তাঁর বাক্স ও ব্যাগ খুললেন। জিনিসপত্রের মধ্যে তো সামান্য কিছু জামা কাপড়। ব্যাগের মধ্যে তাঁর যাবতীয় পান্ডুলিপি। পান্ডুলিপি র মধ্যে সম্পূর্ণ উপন্যাসের কাগজগুলি গুছিয়ে নিলেন।যাতে নীরদবাবুর পড়ার সুবিধা হয়।
প্রবাসী র অফিস থেকে ফিরে এসে নীরদবাবু বললেন,' দাও বিভূতি, তোমার লেখা পত্র দেখি।।'
বিভূতিভূষণ তাঁর উপন্যাস এর পান্ডুলিপি টি দিলেন। বললেন,' এইটি সম্পূর্ণ হয়েছে। অন্যগুলো ঘষামাজা করতে হবে। তুমি এটাই পড়।'
নীরদবাবূ পান্ডুলিপি টি হাতে নিয়ে দেখলেন----- সেটির নাম পথের পাঁচালী-- নতুন ধরনের নাম। বিভূতিভূষণ কে বললেন,' আমি পড়তে শুরু করি, অনেক রাত অবধি পড়ি-- তুমি খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে নিতে পার।'
বিভূতিভূষণ ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, বন্ধু উঠে মুখচোখ ধুয়ে এসে জানালার দিকে চেয়ে বসে আছেন।
বিভূতি বললেন,' কখন উঠেছ নীরদ? '
নীরদবাবু বললেন,' ওঠার তো প্রশ্নই নেই। তোমার লেখা পড়তে পড়তেই তো সারা রাত কেটে গেল।ওঃ কী লিখেছ বিভূতি, তুমি হয়তো নিজেও জানো না।এ ব ই বেরোলে রীতিমতো হ ই চ ই পড়ে যাবে।

তারপর---- তৃতীয় মাসেই বেরোতে শুরু করল ধারাবাহিক ভাবে ' বিচিত্রায় ' বিভুতিভূষণের উপন্যাস ' পথের পাঁচালী ' ।
প্রথম ব ই তেই বাজিমাত করলেন বিভূতিভূষণ। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ লিখলেন------ ' এ ব ই টা দাঁড়িয়ে আছে আপন সত্যের জোরে।'

--- সূত্র ----সবিতেন্দ্রনাথ রায়
বাংলা সাহিত্যের অমর সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়
 

Users who are viewing this thread

Back
Top