What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পথের পাঁচালির স্রষ্টার পথের সাথী (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,073
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
দুজনের বয়সের ব্যবধান উনত্রিশ৷ বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল রমা'র থেকে, সময় চেয়েছিলেন 'পথের পাঁচালী'র স্রষ্টা বিভূতিভূষণ। রমা কে বুঝিয়েছিলেন নানা ভ ভাবে। বয়সের অসম্ভব তফাত কে একেবারে গুরুত্বই দিলেন না রমা৷

রমা'র বাবা ছিলেন আবগারি দপ্তরের আধিকারিক,১৯৩৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি বনঁগা শহরে বদলি হয়ে আসলেন৷ ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের মেজ মেয়ে রমা'র হৃদয়ে তখন থেকে সাহিত্য প্রেম৷ একজন প্রতিবেশীর কাছে খবর পেয়েছিলেন 'পথের পাঁচালী'র স্রষ্টা বিভূতিভূষণ এই শহরে থাকেন৷ প্রিয় লেখকের সঙ্গে পরিচয় করার ইচ্ছা মনের কোনে,অতএব আর বিলম্ব কেন, সোজা চলে এসেছিলেন লেখকের বাড়ি৷

বাড়ির অন্দরে খবর গেল,মাদুর এনে বারান্দায় পেতে বসতে দিয়েছিলেন লেখকের ভাগনি উমা৷ একটু পরে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন স্বয়ং বিভূতিভূষণ,রমার হাতে তখন অটোগ্রাফের খাতা,চোখে—মুখে খুশির ঝিলিক৷ লেখকের মুখ অবশ্য বেশ গম্ভীর, অভিব্যক্তিতে বেদনার ছাপ,সৌজন্যমূলক কিছু কথার পরে রমা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অটোগ্রাফের খাতা,সেই খাতায় বিভূতিভূষণ লিখে দিলেন— গতিই জীবন,গতির দৈন্যই মৃত্যু৷

এবার বাড়ি ফেরার পালা,তবে লেখককে আন্তরিক ভাবে অনুরোধ করেছিলেন তাদের বাড়ি একদিন আসার জন্য৷ উত্তরে বিভূতিভূষণ বলেছিলেন নিশ্চয়ই তিনি একদিন তাদের বাড়ি যাবেন কিন্তু সঠিক দিন তিনি বলতে পারছেন না,কারণ তাঁর বোন জাহ্নবি নদীতে স্নান করতে গিয়ে আর ফেরেনি,খোঁজাখুঁজি চলছে হয়ত সে জলে ডুবে মারা গিয়েছে! সঠিক ভাবে অভ্যর্থনা না করতে পারার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখপ্রকাশ করলেন৷

২৯ বছর ব্যবধানের দুই নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব, চিঠি চালাচালি। রমার বাবা ষোড়শীকান্ত একদিন এসেছিলেন তাঁর কন্যার প্রিয় লেখকের বাড়ি,ক্রমেই দুই পরিবারের কাছাকাছি আসা,বন্ধন আরও নিবিড় হয়
বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল রমা'র থেকে, সময় চেয়েছিলেন বিভূতিভূষণ। বোঝালেন নানা ভাবে। বয়সের অসম্ভব তফাত কে একদম গুরুত্ব দিলেন না রমা৷ ১৯৪০সালের ৪ ডিসেম্বর (অনেকের লেখায় ৩ডিসেম্বর) রমার বিয়ে হয়ে গেল অমর কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে,বয়স যেমন সেই বিয়েতে বাধা হয়নি,ঠিক তেমন দুজনের স্বামী-স্ত্রী'র দাম্পত্য জীবনে বয়সের ব্যবধান কোনওদিন প্রতিকূলতা তৈরি করতে পারেনি৷

পুত্রবধূ-পুত্র কে রমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতেন মরতে তিনি ভয় পান না কারণ ওপারের ঘাটে তাঁর জন্য অপেক্ষা করবেন স্বামী বাংলা সাহিত্যের অমর কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ গৌরীদেবী যিনি বিভূতিভূষণের প্রথম পত্নী তাঁর প্রয়াণের পর লেখক আর নতুন করে বিবাহের কথা ভাবেন নি,কিন্তু মানুষ যে ভাবে এক কখনও-কখনও হয় অন্য কিছু৷ শেষপর্যন্ত কন্যাসম রমা কে বিবাহ করেছিলেন এবং সেই সম্পর্কে ভালবাসার বাঁধন ছিল অটুট৷ এর একটি প্রতিচ্ছবি যেন আমরা দেখি ১৯৪০এর পর বিভূতিভূষণের দিনলিপিতে কল্যানীদেবী (রমা'র ডাক নাম)৷ উল্লেখ সর্বত্র৷

নিজের জীবনে স্বামী কে রমা পেয়েছেন মাত্র দশ বছর৷ ১৯৫০-এর নভেম্বরে ঘাটশিলা শহরে বিভূতিভূষণ পাড়ি দিয়েছিলেন নাম না জানা দেশের উদ্দেশ্যে,তিন বছরের শিশু পুত্র কে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে এলেন,খুব সত্যি বলতে এরপর তিনি উজ্জ্বল হয়ে আছেন স্বামীর প্রচারে,স্মৃতি রক্ষায়৷

'কাছে থেকে দেখা' নামে জীবনী উচ্চ প্রশংসিত এবং জনপ্রিয়৷ কেবলমাত্র ভারতবর্ষ নয় সমগ্র পৃথিবী একটি বিশেষ কারণে রমা দেবীর কাছে কৃতজ্ঞ,শত প্রলোভনে আর্থিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও অনেক কে 'পথের পাঁচালি' চলচ্চিত্র রূপায়িত করার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তিনি তুলে দিয়েছিলেন প্রবাদপ্রতিম সত্যজিৎ রায়ের হাতে৷ তারপরের ইতিহাস আমাদের কারও অজানা নয়৷
মৃত্যুর আগে রমা বন্দ্যোপাধ্যায় আক্রান্ত হয়েছিলেন আলঝেইমার্স রোগে,প্রিয়জন কে চিনতে পারতেন না কিন্তু তাঁর রচিত বিভূতিজীবনীর প্রচ্ছদ দেখে ছেলে কে বলেছিলেন তোর বাবার ছবিটা খুব ভালো এঁকেছে৷
কলমে—অরুণাভ সেন৷

গ্রন্থঋণ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার,বরণীয় বাঙালির বউয়েরা,সম্পাদনা মানস চক্রবর্তী,তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিবন্ধ
 

Users who are viewing this thread

Back
Top