What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

চাই রস, চাই রস (1 Viewer)

uUjmfqw.jpg


শীতের সকালে উঠানজুড়ে মিষ্টি রোদ। ভাইবোনেরা রোদে পিঠ দিয়ে বসা সবাই। উঠানে বিরাট চুলায় জ্বলছে আগুন। নেওয়া হচ্ছে পিঠা বানানোর প্রস্তুতি—পিঠা নিয়ে অভিনয়শিল্পী দিলারা জামানের এমন কত স্মৃতি।

zAIergr.jpg


ঢুকুর ঢুকুর শব্দে ঢেঁকিতে কয়েক দিন ধরে চালের গুঁড়া হতো

যশোর থেকে পূজার ছুটিতে মা আমাদের নিয়ে যেতেন গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে। দুই-তিন দিনের পথ। প্রথমে ট্রেনে খুলনায়, এরপর কয়েক দফায় স্টিমার বদলে বরিশাল-চাঁদপুর হয়ে নৌকায় নানার বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। সেই সময় নাইওরেরা আসতেন বলে বাড়ি বাড়ি পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যেত। এক বাড়ির পিঠা বানাতে যোগ দিতেন আশপাশের বাড়ির মেয়ে-বউয়েরা। সারা দিনের কাজের পর রাত জেগে চলত পিঠা তৈরির আনন্দ–উৎসব।

শীতের সকালে উঠানজুড়ে মিষ্টি রোদ। ভাইবোনেরা রোদে পিঠ দিয়ে বসেছি। উঠানেই বিরাট চুলা। কুয়াশা জড়ানো ভোরে সংগ্রহ করে রাখা খেজুরের রস জ্বাল দেওয়া হচ্ছে। বড় বড় হাঁড়ি-কড়াইয়ে তৈরি হচ্ছে ঝোলা গুড় কিংবা ছাঁচে ফেলে গড়া হচ্ছে পাটালি গুড়। পিঠার জন্য চাষ করা হতো আলাদা ধরনের ধান। ছিল অনেক নারকেলগাছ। এভাবে বাড়িরই নানান উপকরণ দিয়ে তৈরি হতো সুস্বাদু সব পিঠা।

xt2Wu5M.jpg


'বেয়াইবাড়িতে তত্ত্ব পাঠানোর মতো আয়োজন যতই আধুনিক ধারায় করুন, অন্যান্য সামগ্রীর সঙ্গে অন্তত একটা ডালা সাজিয়ে দিন কয়েক পদের পিঠা দিয়ে': অভিনয়শিল্পী দিলারা জামান, ছবি: সংগৃহীত

নানাবাড়িতে ছুটির সময় রাতে ঘুম ভেঙে যেত, হাসি-গল্পের আওয়াজ পেতাম। ঢুকুর ঢুকুর শব্দে ঢেঁকিতে চালের গুঁড়া হতো কয়েক দিন ধরে। দিনভর পরিশ্রম করেও মানুষগুলো যেন ক্লান্তিহীন। নিঃস্বার্থভাবে অন্যের বাড়িতে কেন পিঠা তৈরি করতেন, তা ধীরে ধীরে অনুভব করলাম। নকশি পিঠার ছাঁচ ছিল না তখন। খেজুরকাঁটা দিয়েই যে তাঁরা কী চমৎকার নকশা তুলতেন একেকটি পিঠায়! এখনো ভেবে পাই না, কীভাবে তাঁরা এমন শিল্প আয়ত্ত করতেন।

আমি মনে করি, পিঠা বাঙালি সংস্কৃতির, বিশেষত পূর্ব বাংলার নিজস্ব ঐতিহ্য, গর্ব। মানুষ যেমন পূর্বপুরুষের সম্পত্তি পায়, এটিও তেমন এক সম্পত্তি। পৃথিবীর এত জায়গায় ঘুরেছি, কোথাও এমনটা নেই, পশ্চিমবঙ্গেও না। কোথাও কোথাও হয়তো বছরে একবার সাধ মেটাতে পিঠা করা হয়। কিন্তু এমন নিজস্বতা, এমন স্বাদের ঐতিহ্য আর কারোরই নেই।

অতিথি এলে কিংবা অতিথি আসার সংবাদ পেলে পিঠা করা হতো। সংরক্ষিত পিঠা ভেজে পরিবেশন করা হতো। ফ্রিজ তো ছিল না, হিম হিম আবহাওয়ায় দিন সাতেক ভালো থাকত অনেক পিঠা। বড় হওয়ার পর বাড়িতে তেমন যাওয়া না হলেও নানাবাড়ি-দাদাবাড়ি থেকে পিঠা পাঠানো হতো আমাদের বাসায়। আম্মা সেই পিঠা প্রতিবেশীদেরও দিতেন। আমার বাসায় পিঠা আসে এখনো, কিশোরগঞ্জ থেকে। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও আত্মার সম্পর্কের এক বোন নকশি পিঠা গড়ে পাঠান।

ধারণ করি ঐতিহ্য

সুন্দর সময়গুলো কোথায় হারিয়ে গেছে! তবু পৌষ-পার্বণ, পয়লা বৈশাখে পিঠা উৎসব হয় এখনো, শহুরে জীবনেও। ভোজনরসিকেরা সেখানেই পিঠার খানিক স্বাদ নেন। পিঠায় জীবিকার সংস্থানও হচ্ছে। গ্রামের মেয়েদের পিঠা তো বিক্রি হচ্ছেই, বিকেল হলেই এখন শহরের মোড়ে মোড়ে চিতই পিঠা, পোয়া পিঠা আর তেলের পিঠার পসরা বসছে। কিন্তু এখনো কানে বাজে সেই ছোট্টবেলার ডাক 'চাই রস, চাই রস।'

একসময় বিয়ে মানেই ছিল পিঠা তৈরির ধুম। কনের সঙ্গেও দিয়ে দেওয়া হতো নানান স্বাদের পিঠা। ডালা কিংবা মাটির হাঁড়িতে করে বেয়াইবাড়িতে পাঠানো হতো পিঠা। আমার বড় মেয়ের বিয়ের সময় হলুদের ডালায় আমিও পিঠা দিয়েছিলাম। আগে ঈদের আনন্দজুড়েও থাকত পিঠা। এখনো অনেক উৎসবে আমরা অনেকেই দু-এক পদের পিঠা বানাই।

বাসায় পিঠা

xMW4EET.jpg


বাড়িতেই বানানো যায় পছন্দমতো পিঠা

ছোটবেলায় নানাবাড়িতে দেখে দেখেই পিঠা করতে শিখেছি। মা বলতেন, 'যাও, যাও, ঘুমিয়ে পড়ো।' আমি কিন্তু যেতাম না, দেখতাম, কীভাবে হাতের নিপুণতায় তৈরি হয় পিঠা। সেমাইও হাতে তৈরি হতো। নারকেলের পুর, গুড়, খাঁটি দুধ, খেজুরের রস—নানান উপকরণে পিঠা হতো। কোনোটা ভাপে, কোনোটা তেলে ভেজে। ঢাকার বাসায়ই আমি ক্ষীর পুলি, নারকেল পুলি, দুধ–পুলি, দুধ-চিতই, মুগ-পাকোয়ান, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা তৈরি করতাম। আমার খড়ির চুলাও ছিল। কোনো একদিন বেশ খানিকটা পিঠা করে আত্মীয়-প্রতিবেশীদের দিতাম। দারুণ এক ভালো লাগা কাজ করত নিজের মধ্যে। তবে বয়স ও শারীরিক কারণে এখন আর পারি না। আগে মেয়েরা এলে পিঠা করতাম। এখন একটি মেয়ে আমার মেয়েদের জন্য পিঠা করে দিয়ে যায়। আমার প্রবাসী মেয়ে বিকেলের পিঠা রাতে আর পরদিন সকালেও খেয়েছে একটানা প্রায় ২০ দিন।

একটা দাবি

আমি বাংলাদেশের এক বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক। বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে জীবনে ভালোবাসাও পেয়েছি অপরিসীম। বয়োজ্যেষ্ঠতা এবং দেশের মানুষের প্রিয় হওয়ার অধিকারের জায়গা থেকে একটা দাবি জানিয়ে লেখাটি শেষ করছি। পিঠার ঐতিহ্য ধারণ করুন প্রাণে। বিয়ে–গায়েহলুদে বেয়াইবাড়িতে তত্ত্ব পাঠানোর মতো আয়োজন যতই আধুনিক ধারায় করুন, অন্যান্য সামগ্রীর সঙ্গে অন্তত একটা ডালা সাজিয়ে দিন কয়েক পদের পিঠা দিয়ে। দৃষ্টিনন্দন হবে আপনার আয়োজন। মন তো কাড়বেই, রসনায়ও আসবে তৃপ্তি।

লেখক: দিলারা জামান, অভিনয়শিল্পী | অনুলিখন: রাফিয়া আলম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top