ঘুমে কথক। ঘুমঘোরে কী কথা কাহারে বলে এরা। এটা একধরনের বৈকল্য। ঘুমের মধ্যে কথা, ডাকাডাকি আর মাঝেমধ্যে অসংযত বাক্য উচ্চারণ। তবে এই সমস্যা খুব কম দেখা যায় না। পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদের চেয়ে বাচ্চা আর কিশোরদের মধ্যে হয় বেশি। আর এই ঘুমিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে নারী–পুরুষে নেই কোনো ভেদাভেদ। ঘুমের যেকোনো পর্যায়ে এটা হতে পারে।
ঘুমের মধ্যে কেন মানুষ কথা বলে, এ নিয়ে গবেষণা কম নয়। তবু এ নিয়ে যা জানা তাই জানি। কেন হয় তাহলে! বিশেষজ্ঞরা সত্যি জানেন না কেন এটি কিছু লোকের ক্ষেত্রে অথচ কিছু লোকে এমন ঘটে না। আর এদের অন্তর্গত অসুখ থাকে তা–ও না।
ঘুমকথন একধরনের পারাসমনিয়া বলেন বিজ্ঞরা। ঘুমের নানা রকম সমস্যার একটি এই ঘুমিয়ে কথা বলা। আমেরিকার ৬৭ ভাগ মানুষ আছে ঘুমের এমন সমস্যা নিয়ে। আমাদের দেশে কেমন তা অবশ্য জানি না। তবে লোকমুখে বেশ শোনা যায়। ঘুমিয়ে কথা বলা এমনই নিরীহ আর হঠাৎ ঘটা সমস্যা। তবে এর সঙ্গে কখনো থাকে পারকিনসন রোগ।
দেখা গেছে, রেম ঘুম বৈকল্যের সময় আচরণের যে সমস্যা, তা সাত গুণ বেশি হয় পারকিনসন রোগীদের। রেম ঘুম হলো নিদ্রার এক অনন্য পর্যায়, যখন চোখের মণির সঞ্চালন দ্রুত হয় আর ঘুমন্ত মানুষ দেখে স্পষ্ট সব স্বপ্ন, স্তন্যপায়ী প্রাণী আর পাখিদের হয় এমন ঘুম পর্যায়। এই শেষ নয়, অনেক সময় অপ্রীতিকর সব স্বপ্ন আর ভয়ংকর হাত–পা ছোড়াছুড়ি চলে।
কী হতে পারে এর প্রভাবে
এমনিতে নির্দোষ এই সমস্যা। কিন্তু শয্যাসঙ্গীর ঘুম নষ্ট করতে পারে। আর জীবনসঙ্গী খুব মানিয়ে চলা মানুষ না হলে তা থেকে দাম্পত্য কলহ বা অন্য শয্যায় যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটা বিচিত্র না। আর রাতে ঘুম ভালো না হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না হলে দিনে থাকবে ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখ। তবে একটা বিপদ আছে, যিনি ঘুমের সময় এমন কথা বলেন, তিনি কিন্তু তা জানেন না। অনেক সময় অনেক গোপন আর ব্যক্তিগত কথা বলা হয়ে যায় তারই অজান্তে। এতে শয্যাসঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের হতে পারে অবনতি। এমন ঘুমে কথার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে আরও কিছু সমস্যা—ঘুমের মধ্যে হাঁটা, দাঁত কিড়মিড় আর দুঃস্বপ্ন। এমন সমস্যা হলে সারাতে সমর্থ মনোরোগ চিকিৎসকের দর্শন অবশ্য।
কখন দেখাবেন চিকিৎসক
- পূর্ণবয়স্ক কেউ, যার আগে এমন ঘুমিয়ে কথা বলার ইতিহাস নেই, হঠাৎ করে ঘুমের মধ্যে কথা বলা শুরু করলেন, তিনি চিকিৎসক দেখাতে পারেন।
- নিদ্রাকথনের সঙ্গে ভয়ংকরভাবে হাত-পা সঞ্চালন আর ঘুমের মধ্যে পূর্বঘটনার মঞ্চায়ন দেখা দিলে।
- ঘুমিয়ে কথা বলার কারণে শয্যাসঙ্গী বিপর্যস্ত হয়ে গেলে, বিরক্ত হলে।
সমস্যা বুঝে চিকিৎসক দিতে পারেন ওষুধ। কিন্তু সমস্যার প্রকৃতিভেদে তাতে সমাধান না–ও হতে পারে। আজকাল আচরণের জন্য থেরাপি বা কগ্নিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপির মাধ্যমে সমাধান করা যায়। আর অনেকে যে ঘুমের মধ্যে হো হো করে হাসেন, সেই বেলা? সে আরেক দিন হবে।
* ডা. শুভাগত চৌধুরী, ঢাকা