আধুনিক জীবন থেকে সকালের নাশতা মিলিয়ে যাচ্ছে হাওয়ায়। দেরি করে ঘুমাতে যাওয়া, দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা, আর লাঞ্চ দিয়ে দিন শুরু করা যেন এখন এক অলিখিত ট্রেন্ড। আবার সকালের নাশতায় কেবল চা আর বিস্কুট দিয়েও চালিয়ে নেন অনেকে। তাতে চাপ পড়ে দুপুরের খাবারে। লাঞ্চে বেশি খাওয়া ঠেকানো যায় না। আর দুপুরে অতিরিক্ত খাওয়ায় পায় ঘুম। ঘরে বা বাইরে, অফিসে বা শুটিংয়ে, দুপুরে খাওয়ার পরে আপনারও কি ঘুম পায়? ঘুমের সঙ্গে মনে মনে যুদ্ধ করে কাজ করতে হয়? মনে রাখবেন, আপনি কিন্তু একা নন।
দুপুরে খাওয়ার পরে আপনারও কি ঘুম পায়?
ভাতঘুম কোন পায়?
পুষ্টিবিদেরা 'ঘুম ঘুম পায়'-এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। মেলাটোনিন ও সেরোটোনিন নামে মস্তিষ্ক থেকে নিঃসৃত হরমোনের কারণে আমাদের ঘুম পায়। দুপুরে শর্করা বেশি খেলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যায়। তখন শরীরে ঘুমের সহায়ক হরমোন তৈরি হয়। আর মস্তিষ্কেও মেলাটোনিন ও সেরোটোনিন উৎপন্ন হয়। ঘুম লাগার এটি একটা কারণ।
শর্করা না খেয়ে আপনি যদি প্রোটিন বেশি খান, তাতেও কিন্তু নিস্তার নেই। প্রোটিন হজমের জন্য পাকস্থলীকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। আবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খেলে এমনিতেই হজমে গড়ে ৬০ শতাংশ বেশি শক্তি খরচ হয়। এর ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। আর ঘুম পায়।
দিনে-দুপুরে ঘুম তাড়াবেন যেভাবে
দুপুরের খাবার বেশি ভারী করবেন না। সারা দিনের খাবারকে ছোট ছোট কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিন, যাতে দুপুরে খাওয়ার ওপর চাপ না পড়ে। অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পরপর খান। তাতে বেশি খেলেও পাকস্থলী টের পাবে না। হজমের ওপর চাপ পড়বে না।
দুপুরের পর অনেকেই একটু গা টা এলিয়ে দিতে পছন্দ করেন
অনেকেই ঘুম তাড়াতে দুপুরে খাওয়ার পর খান কড়া লিকারের এক কাপ চা বা কফি। তাতে ঘুম চলে যায়। কিন্তু যা খাবার খেলেন সেটার সঙ্গে চা বা কফি মিলে এক জটিল পদার্থ তৈরি করে। আর সেটা শরীরে জমে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই ভাত বা ভারী খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে না খেয়ে কিছুক্ষণ পর চা বা কফি খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার, প্রাণিজ প্রোটিন, বেশি মসলাযুক্ত খাবার দুপুরে এড়িয়ে গেলেই ভালো। আর সারা দিনে প্রচুর পানি পান করুন। তাতে তরতাজা থাকবেন। এতেও কাজ না হলে মুখে আর হাতে–পায়ে পানির ঝাপটা দিন।
একটা সুন্দর দিনের জন্য সকালের ঠিকঠাক নাশতা খুবই জরুরি। তাতে দুপুরের খাবারের ওপরও চাপ পড়বে না। আবার দুপুরে ভারী খাবার না খেয়ে মাখনে মাখানো রুটি, পাউরুটি আর ডিম, এক বাটি নুডলস, বিভিন্ন রকম শুকনো ফল, বাদাম, সামান্য দই আর কফি খেতে পারেন।
দুপুরে খাবার পর সবারই আলস্য ভর করে।
দুপুরে খাওয়ার পর ঘুম লাগলে হিপহপ, জ্যাজ বা হালকা রক মিউজিক শুনতে পারেন। তাতে আপনার ঝিমিয়ে পড়া কোষগুলো জেগে উঠবে। তবে অবশ্যই হেডফোন লাগিয়ে। একটু হাঁটাহাঁটিও করতে পারেন। ১০ মিনিটের জন্য খোলা হাওয়ায় একটু ভ্রমণ করে আসা গেলে কিন্তু মন্দ হয় না। দুপুরে খাওয়ার পর এনার্জি ড্রিংক খাবেন না। তাতে আরও ঘুম পাবে। বরং সামান্য গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস বা কমলার রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। তরতাজা লাগবে।
সহকর্মীদের সঙ্গে হালকা গল্প করতে করতে খান। খাওয়ার পর টকদই বা একটা সবুজ আপেল খেতে পারেন।
তবে এটা কিন্তু একেবারেই আমাদের সংস্কৃতি। আর এর উল্টোটাই কিন্তু দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোর। সেখানে কিন্তু ভাতঘুম তথা লাঞ্চ-পরবর্তী বিশ্রাম তাদের সংস্কৃতির অংশ। এমনকি তাদের কর্মসংস্কৃতিতেও সেটা মানা হয়। তাই লাঞ্চের পর অফিসের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয় কিছুক্ষণের জন্য। তারা ওই সময়ে ভাতঘুম দিয়ে চাঙা হয়ে ওঠে। আমাদের সে উপায় নেই। তাই ভাতঘুম তাড়ানোর ব্যবস্থা করা আর অবশ্যই সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করা আবশ্যক।
দুপুরে ভারী খাওয়ার পর কমবেশি সবার ঘুম পায়