প্রতিদিনের পুষ্টিচাহিদা পূরণে শাক তুলনাহীন। প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়, এমন কিছু দেশীয় শাক, যা হতে পারে আমাদের পুষ্টির এক অনন্য উৎস। পুষ্টিবিদদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, সুস্থ থাকতে হলে দৈনিক একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির ২০০ গ্রাম শাকসবজি গ্রহণ করা উচিত। শাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ পদার্থসহ হাজারো পুষ্টি উপাদান। এসব পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে রাখে সতেজ ও সুস্থ। পুষ্টিগুণে অনন্য এমন কিছু দেশীয় শাকের গুণাগুণ জেনে নেওয়া যাক।
পাটশাক
তোষা বা বগি পাটশাক খেতে দারুণ।
সোনালি আঁশ হিসেবেই পরিচিত, অর্থকরী ফসল পাট। কিন্তু এর পাতা বা পাটশাকেরও গুরুত্ব কম নয়। অধিকাংশ মানুষের পছন্দের দেশীয় বিভিন্ন শাকের তালিকায় প্রথম দিকেই থাকবে পাটশাক। দেশি পাটশাক খেতে হালকা তিতা স্বাদের হলেও তোষা বা বগি পাটশাক খেতে দারুণ। পুষ্টিগুণ বিবেচনায়ও রয়েছে এর বিশেষ গুরুত্ব। পাটশাকে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি। এ ছাড়া রয়েছে শর্করা, আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বিসহ প্রচুর খাদ্যশক্তি। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কমপক্ষে ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম এবং শিশুদের ২৫০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ প্রয়োজন, যা অনায়সেই পাটশাক থেকে পাওয়া সম্ভব। নানা উপাদান মিশিয়ে পাটশাক ভাজি করে যেমন খাওয়া যায়, তেমনি ছোট মাছ দিয়ে রান্না করলেও এর স্বাদ থাকে অটুট।
পুঁইশাক
পুষ্টিগুণে ভরা পুঁইশাক
প্রবাদে আছে, 'মাছে মধ্যে রুই, শাকের মধ্যে পুঁই'। অতিপরিচিত, পুষ্টিগুণে ভরা, সহজলভ্য, সারা বছর পাওয়া যায় এবং সুস্বাদু শাকের মধ্যে পুঁইশাকের তুলনা নেই। পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ। পাশাপাশি রয়েছে ক্যালসিয়াম ও আয়রন। পুঁইশাক রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে, ত্বকের সুস্থতায় বাড়াতে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় বেশ উপকারী। নিয়মিত পুঁইশাক খেলে পাইলস, ফিস্টুলা ও হেমোরয়েড হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। পুঁইশাক আমাদের শরীর থেকে সঠিকভাবে বর্জ্য নিষ্কাশন করে বদহজম, গ্যাস, অ্যাসিডিটিসহ নানা সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে থাকে। এ ছাড়া পুঁইশাকের আছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণ। শরীরের কোনো অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ফুলে গেলে পুঁইশাকের শিকড় বেটে ওই স্থানে লাগালে উপশম পাওয়া যায়। মুখের ব্রণের সমস্যা দূর করতেও পুঁইশাকের কার্যকরিতা রয়েছে। শরীরে খোসপাঁচড়া ও ফোড়ার সংক্রমণ রোধ করতেও পুঁইশাকের জুড়ি নেই।
কলমিশাক
স্বাদ ও পুষ্টিতে ভরা কলমিশাক।
গ্রামবাংলার অতিপরিচিত একটি শাকের নাম কলমি। পানির ওপর কিংবা মাটিতে খুব সহজেই এই শাক চাষ করা যায়। স্বাদ ও পুষ্টিতে ভরা কলমিশাক প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যোগ করে হতে পারেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। ভিটামিন ও ক্যারোটিনসমৃদ্ধ কলমিশাকে রয়েছে আমিষ, শর্করা, ক্যালশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ–সহ আরও অনেক পুষ্টি উপাদান। কলমিশাকের রয়েছে বেশ কিছু ঔষধি গুণও। শিশুসন্তানকে বুকের দুধ দিচ্ছেন যেসব মায়ে, তাঁদের জন্য কলমিশাক বেশ উপকারী। হাড় মজবুত রাখতে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে, শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায়, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে, নারীদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় কলমিশাক হতে পারে প্রাকৃতিক সমাধান। মৌমাছি, ভিমরুল বা শিং মাছের কাঁটা ফুটলে কলমিশাকের পাতা ও ডাঁটা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালেও ব্যথা সেরে যায়।
কচুশাক
কচুশাক পুষ্টিগুণে ভরপুর
আমাদের দেশের অতিপরিচিত ও জনপ্রিয় এক শাকের নাম কচুশাক। গ্রামাঞ্চলে পতিত জমিতেই অহরহ দেখতে পাওয়া যায় এই গাছ। কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ। এ ছাড়া রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন। সংগত কারণেই আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টিচাহিদা পূরণে কচুশাক হতে পারে প্রকৃতির অনন্য উপহার। ভিটামিন এ–এর অন্যতম উৎস হিসেবে রাতকানা রোগসহ এই ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন রোগ থেকেও মুক্তি দিতে পারে কচুশাক। গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য দারুণ উপকারী এই শাক হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া রক্তস্বল্পতা সমস্যার সমাধানে, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে, শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ চলমান রাখতে এবং দাঁত ও হাড় ভালো রাখতে কচুশাক বেশ কার্যকরী। কচুশাক ভর্তা ও তরকারি হিসেবে দারুণ সুস্বাদু।
* মো. আবদুল্যা আল মামুন