ভ্রমণ কেবলই ঘুরে বেড়ানো আর দৃশ্য উপভোগের নয়, বরং অনেক সময় এর চেয়ে ঢের বেশি উপভোগ্য নানা মানুষের সঙ্গ। দৃশ্য দেখার চেয়ে যা গভীরতর আনন্দের। পথে পথে ঘুরে মানুষ দেখা আর অন্তরঙ্গতা অনুঘটক হয় সমাজবীক্ষণের।
শেষ বিকেলে অনেকটা পথ হেঁটে এসে যখন মিস্টার তাকেও তাবিদার বাড়ির কল বেল টিপছি, তখন আকাশটা সবুজাভ-হলুদ মেরুপ্রভায় কী এক অনিন্দ্য রূপসী হয়ে উঠেছে। কাঠের তৈরি জাপানের এ ধরনের বাড়ির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ছাদ। এগুলো প্রার্থনারত ব্যক্তির হাতের মতোই দেখতে অনেকটা। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলে একধরনের ধপ ধপ শব্দ কানে বাজে। জাপানে এ ধরনের বাড়িগুলোকে মিনকা বলা হয়ে থাকে। একসময় এগুলো ছিল কৃষক, কারিগর ও ব্যবসায়ীদের বাসস্থান। যদিও আজকাল এই অভিব্যক্তি হারিয়ে যাচ্ছে জাপানে। এখন ঐতিহ্যবাহী সব সম্ভ্রান্ত বাড়িগুলোকেই মিনকা বলে উল্লেখ করা হয়।
শরীরে শীতের দাপট ঘনীভূত হলে দস্তানা ছাড়াই দরজার হাতলে হাত দিয়ে এই শীত কতটা শক্তিমান, তা পরখ করতে না করতেই 'কোননেচিওয়া' উচ্চারণে জাপানি কায়দায় অভিবাদন। পরম আন্তরিকতায় ঘরে প্রবেশে উদ্ধুদ্ধ করলেন তাকেও তাবিদা।
বসার ঘরটি যেন জাপানি আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটসের নিখুঁত উপমা। আরামদায়ক ভিক্টোরিয়ান সোফা আর দেয়ালজুড়ে প্রণত আলংকারিক ওয়াল পেইন্ট স্টিকারের সঙ্গে জাপানি গাছ ও পাখির ভুবনভোলানো ছবি।
টোকিও কোন ারস্তা
একটু পরপর জ্বালাতন করা প্রিয় কুকুরটিকে সামলে রেখে এসে ধূসর হিমশীতল চোখের তাকেও তাবিদা আমার পাশে এসে বসলেন। গল্প জুড়ে দিলেন অকৃত্রিম মমতায়। পেশায় এনজিও গবেষক তাবিদা জানালেন, জাপান-বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কের কথা। তাঁর নিজ হাতে পরিবেশন করা জাপানের জনপ্রিয় চা সেনচাতে চুমুক দিতে দিতে বললাম, রবীন্দ্রনাথও জাপানি চায়ের অনুরক্ত ছিলেন; রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'জাপান যাত্রী' বইয়ে উল্লেখ করেছিলেন ধৈর্য, নিষ্ঠা, মনোসংযোগ ব্যতীত সুপেয় জাপানি চা তৈরি করা যায় না। শুনে তাবিদা হো হো করে হেসে উঠলেন!
জাপান সম্পর্কে বাংলাভাষীদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাপান ভ্রমণ, এ প্রসঙ্গে যোগ করলেন রবীন্দ্রপ্রেমী তাবিদা। প্রসঙ্গের বাঁকবদল করে জানতে চাইলাম, জাপানে অতিরিক্ত কাজের ডিপ্রেশন থেকে আত্মহত্যা বা যেটাকে বলা হয় 'কারোশি' বা মাত্রাধিক চাপ থেকে শ্রমিক বা কর্মচারীর মৃত্যু, এটা কেন খুব ঊর্ধ্বমুখী? এর কারণ হিসেবে জানালেন, এখানে ২০ ভাগ কর্মচারী প্রতি মাসে ৮০ ঘণ্টা ওভারটাইম করেন। এর জন্য করপোরেট কালচারও নীতিগতভাবে দায়ী। এ ছাড়া আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিচ্ছিন্নতা বা একা থাকার মানসিকতাকেও দুষলেন।
জাপানি চায়ের অনুরক্ত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, ছবি: উইকিপিডিয়া
শেষমেশ তুললাম, বাংলাদেশ ও জাপানের পতাকার সাদৃশ্য। এবারও অবিকল হাসির ছটার দেখা মেলে তাঁর চোখেমুখে, সঙ্গে যেন কৃতজ্ঞতার নিবেদন। জানালেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হিটলারের মন্ত্রিপরিষদ এবং যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিচার করা হয় 'নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে'; আর জাপানের সমরবিদ জেনারেল হিদেকি তোজোর বিচার করা হয় 'টোকিও ট্রাইব্যুনালে'। ১১ দেশের ১১ প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয় 'টোকিও ট্রায়াল'। এ ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রধান বিচারপতি ছিলেন ড. রাধা বিনোদ পাল।
বিচারের একপর্যায়ে রাধা বিনোদ পাল বাদে অন্য সব বিচারপতি জেনারেল তোজোকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করে ফাঁসিতে ঝোলানোর রায় দেন। অন্যান্য বিচারপতির ধারণা ছিল, বিচারপতি পালও মিত্রশক্তির পক্ষে অনুগত থাকবেন। কিন্তু বিচারপতি রাধা বিনোদ পালের সেই ঐতিহাসিক রায় মিত্রশক্তি, এমনকি বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছিল। তাঁর প্রজ্ঞা আর দৃঢ় কৌশলগত কারণে জাপানিরা বেঁচে যায় অনেক বড় ক্ষতি থেকে।
ড. রাধা বিনোদ পালের কারণে অনেক বড় ক্ষতি থেকে বেঁচে যায় জাপানিরা, ছবি: উইকিপিডিয়া
জাপানিরা যা করেছিল, তার পেছনে অল্প কয়েকজনের হাত থাকলেও মিত্রশক্তি চেয়েছিল পুরো জাতির ঘাড়েই এর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিতে, যেটি রাধা বিনোদ পালের কারণে সম্ভব হয়নি। এ রায় বিশ্বনন্দিত ঐতিহাসিক রায়ের মর্যাদা লাভ করে। তাই জাপানের সম্রাট হিরোহিতো কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বলেছিলেন, যত দিন জাপান থাকবে, তত দিন বাঙালি খাদ্যাভাবে, অর্থকষ্টে মরবে না। জাপান হবে বাঙালির চিরকালের নিঃশর্ত বন্ধু। মুগ্ধতায় আবিষ্ট আমি তন্ময় হয়ে গেলাম। এ রকম গল্প কোনো ভিনদেশির কাছ থেকে শুনতে কার না ভালো লাগে!
কাজলদার সঙ্গে আমার কিনশিখোতেই প্রথম সাক্ষাৎ। সরাসরি আলাপ। জায়গাটা টোকিও সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে মাত্র ১০ মিনিট দূরত্বের। কিনশিখো হচ্ছে টোকিওর বৃহত্তম বাণিজ্যিক এলাকা। কিনশিখো যেতে হলে আপনাকে জেআর সবুলাইন বা টোকিওর মেট্রো ট্রেনে চড়ত হবে। ট্রেনটি হলুদ রঙের। সময়সচেতন জাপানিরা একটি বর্ণময় জাতিও। ইতিমধ্যে তাদের পোশাক, আভিজাত্য দেখে আর ট্রেনে চড়েই হরদম বুঝে গেছি। কিনশিখো বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় চারপাশের এলাকা মূলত শপিংভিত্তিক।
রাতের টোকিও সেন্ট্রাল রেল স্টেশন, ছবি: উইকিপিডিয়া
এ ছাড়া দেখা পাওয়া গেল স্থাপত্যের সৌন্দর্যঘেরা পার্ক, দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা, তিনটি বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর, দুটি সিনেমা থিয়েটার, অসংখ্য গৃহস্থালি সরঞ্জামের দোকান, নাইট ক্লাব আর সঙ্গে বার। কাজলদার সঙ্গে মধ্যরাতে বাংলাদেশের গল্প করতে করতেই তাঁর নিজ মালিকানাধীন বারে ঢুকলাম। বার গার্ল এসে অভ্যর্থনা জানালেন। টেবিলে টেবিলে দেখছি, আগন্তুকের রুচি অনুযায়ী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ ঢেলে দিচ্ছেন। এই বার গার্লরা আবার পূর্ব ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড, রোমানিয়া, রাশিয়া, লাটভিয়া থেকে আসা। এখানে খদ্দেরকে যত বেশি সময় টেবিলে বসিয়ে রাখা যায়, ততই লাভ! গোপন তথ্যটি আমার কাছে ফাঁস করে দিলেন শ্রীলঙ্কান বিক্রয়কর্মী রেবেকা গুনাশেকারা।
কথাচ্ছলে সেই রাতে আধুনিক জাপানি সমাজের জীবনদর্শন থেকে জীবনাচরণ সম্পর্কে জানাতে গিয়ে কাজলদা টেনে আনলেন সমকামিতা ও পরকীয়ার প্রসঙ্গটি। জানালেন, দুটিতেই জাপানিরা বেশ পটু। পরকীয়ায় আসক্তি এত তীব্র যে এমনও হয়েছে, প্রমোদে মজে সারা মাসের মাইনে দিয়ে গেছে বার গার্লদের। তাঁদের খুব পছন্দ শ্বেতাঙ্গ পরনারী! জানালেন, এখানে ৪০ ভাগ বিবাহিত পুরুষই এই দোষে দুষ্ট।
টোকিওর বিখ্যাত পাঁচ তারকা হোটেল 'হিলটন'। সিনজুকুতে অবস্থিত এই অভিজাত হোটেলে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবীদের সেমিনার। বিরতিতে প্রিমিয়াম লাউঞ্জের ফুডকোর্টে চলছে বহুজাতিক আইনজীবীদের চিন্তার বিনিময়।ৎ
টোকিওর হোটেল হিলটন, ছবি: উইকিপিডিয়া
সেখানেই সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আইনজীবী ইয়োশি ইয়োকোইয়ামার সঙ্গে পরিচয় ও সখ্য। তিনি জানালেন, জাপানে সমকামিতা মধ্যযুগ থেকে চলমান। তবে আইনি বৈধতা পায় ১৮৮০ সালে। চতুর্দশ শতকে জাপানে সামুরাই সম্প্রদায়ের অনেকে তাদের গৃহে আশ্রিত বালকদের শয্যাসঙ্গী হিসেবে নিতে পছন্দ করত। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ভালোবাসার মানুষটি হতো একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর। তাঁদের মধ্যে নাকি কেউ কেউ মনে করতেন, নারী এমনই এক সৃষ্টি, যার আসলে কোনো প্রয়োজনীয়তাই নেই।
টেকিওv একটি স্কাইট্রিতে লেখক
তিনি মত দেন, জাপান এলজিবিটিদের নিয়ে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে সহনশীল রাষ্ট্র। যদিও খোলামেলাভাবে সমকামী ঘোষণা করার ব্যাপারে এখনো সমাজে ট্যাবু রয়ে গেছে। জাপানে সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ে অবৈধ হলেও এখানে পৌরসভা থেকে একটি পার্টনারশিপ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, যাতে কিনা সমকামী জুটির বাড়িভাড়া পেতে, চিকিৎসা নিতে এবং একত্রে বসবাসে কোনো অসুবিধা হয় না।
জেআর সবুলাইন মেট্রো ট্রেন, ছবি: উইকিপিডিয়া
এই পর্যায়ে তিনি নাকাজিমা-বাউমান যুগলকে ডেকে আনলেন। নাকাজিমা জাপানি হলেও বাউমান জার্মান নাগরিক, তিনি স্টুডেন্ট ভিসায় জাপানে অবস্থান করছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আসন্ন ডিসেম্বরে তাঁর ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাবে। দেখা গেল এ নিয়ে তাঁর পার্টনার নাকাজিমা ভীষণ উদ্বিগ্ন, এখন কী হবে? তাঁদের আইনজীবী ইয়োকোইয়ামা জানালেন, উপায় এখন একটাই। যে ২৫টি দেশে সমকামী বিয়ে বৈধ, সেগুলোর যেকোনো একটি দেশে গিয়ে বিয়েটা সম্পন্ন করতে হবে। তারপর নাকাজিমা ভিসার আবেদন করলে বাউমান জাপানে চলে আসতে পারবেন।
অতঃপর তিনি যেন তাঁর পুরোনো ভাষা ভুলে গেলেন এবং যত দূর সম্ভব ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কথা চালিয়ে যেতে থাকলেন। আলাপে বুঝলাম, টোকিওর সরু গলি, চোরাগলি, অন্ধগলি, সুনসান গলি সবই তাঁর নখদর্পণে। তিনি আমাকে নিয়ে ফুটপাতের উল্টো পাশে এসে দাঁড়ালেন। মেশিনে কয়েন ফেলামাত্রই অপর প্রান্ত থেকে ছলাৎ করে বেরিয়ে এল দুটি স্ট্রবেরি ড্রিংকস। সামনের সারিতে তিনটি, পেছনের সারিতে আরও তিনটি, দেখলাম মোট ছয়টি বাড়ি। বাড়িগুলোর ভেতরে ছোট অ্যাপার্টমেন্ট। তবে প্রতিটি বাড়ির সামনেই চোখধাঁধানো ফুলের বাগান। ফুটপাতের টাইলস দেখে মনে হচ্ছে, কেউ যেন এইমাত্র এসে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দিয়ে গেছে! তিনি সায় দিলে জাপানি জাতিরাষ্ট্র সম্পর্কে আমার কৌতূহল অনন্য মাত্রা পায়, আমি প্রশ্নের ঝাঁপি খুলি:
টোকিওর রাস্তা
লেখক: পৃথিবীতে বহু রাষ্ট্র, তবু জাপানিদের কেন আলাদা করে পরিশ্রমী জাতি বলা হয়
মিচিকো সাকুরা: জাপানে একটি কোম্পানিতে আমাদের দীর্ঘকাল ধরে কাজ করে যেতে হয়, যা অন্য দেশগুলোয় নেই। ফলে কোম্পানিতে কে কত দিন কাজ করেছে, তার ওপর নির্ভর করে বেতন বৃদ্ধি ও প্রমোশন। মনিব অনেক বেশি কাজ চাপিয়ে দিলেও ধৈর্য ধরে আমরা সেই কাজ করি। কেন? আমরা সবাই কাজ নষ্ট করতে চাই না। সময় অমূল্য ভেবে এমনকি ছুটির দিনেও আমরা কাজ করতে থাকি।
লেখক: পরিবারের চেয়ে কেন এখানে কর্মজীবনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়?
মিচিকো সাকুরা: কাজ করা নিয়ে জাপানি সমাজের নিজস্ব কিছু মনোভাব রয়েছে। জাপানে পুরো জীবন এক কোম্পানিতে কাজ করে যাওয়া হচ্ছে প্রচলিত নিয়ম। জাপানে অতিরিক্ত কাজ করার মানে হচ্ছে, নির্ধারিত কাজে তুমি ফাঁকি দিয়েছ। ওভারটাইমের জন্য বাড়তি বেতন বাস্তবে দেওয়া হয় না। আর পরিবারকে কেন গুরুত্ব দেবে না; পরিবারকে সুখী রাখতেই তো জাপানিরা বেশি কাজ করে!
লেখক: আচ্ছা, অভিবাদনের সময় কেন তোমরা মাথা নোয়াও?
মিচিকো সাকুরা: এখানে অভিবাদনের সময় প্রথাগতভাবে মাথা নুইয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। অর্থাৎ তুমি কার সামনে কতটা নত হবে, তা নির্ভর করে ওই ব্যক্তির সামাজিক পদমর্যাদার ওপর। বয়োজ্যেষ্ঠ বা উচ্চতর মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তির নিকট গভীরভাবে মাথা নোয়াতে হয়। আর যদি ওই ব্যক্তি তোমার সমবয়সী বা কম বয়সী হন, তাহলে কম মাথা নোয়ালেই চলে। অভিবাদন জানানোর সময় ব্যক্তির চোখের দিকে না তাকিয়ে মাটির দিকে তাকাতে হয়। দুই বাহু জোরালোভাবে দেহের সঙ্গে মিশিয়ে রেখে যতটা সম্ভব নিচু হতে হবে।
লেখক: জাপানে হ্যান্ডশেক কেন বর্জনীয়?
মিচিকো সাকুরা: জাপানে স্পর্শকাতর স্থানে যোগাযোগ ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই এটা বর্জনীয়।
লেখক: জাপানে খাওয়ার সময় লোকেরা স্লারপিং বা শব্দ করে কেন?
মিচিকো সাকুরা: এখানে এটি বিশ্বাস করা হয় যে কোনো ব্যক্তি যদি নিঃশব্দে এবং চুপচাপ খায়, তবে তার খাবার পছন্দ হয়নি। এটি খাবারের প্রশংসা করার রীতি হিসেবে দেখা হয়, অন্যথায় কুক অত্যন্ত বিরক্ত হবেন যে তাঁর রান্না আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
* লেখক: মোস্তফা মহসীন
শেষ বিকেলে অনেকটা পথ হেঁটে এসে যখন মিস্টার তাকেও তাবিদার বাড়ির কল বেল টিপছি, তখন আকাশটা সবুজাভ-হলুদ মেরুপ্রভায় কী এক অনিন্দ্য রূপসী হয়ে উঠেছে। কাঠের তৈরি জাপানের এ ধরনের বাড়ির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ছাদ। এগুলো প্রার্থনারত ব্যক্তির হাতের মতোই দেখতে অনেকটা। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলে একধরনের ধপ ধপ শব্দ কানে বাজে। জাপানে এ ধরনের বাড়িগুলোকে মিনকা বলা হয়ে থাকে। একসময় এগুলো ছিল কৃষক, কারিগর ও ব্যবসায়ীদের বাসস্থান। যদিও আজকাল এই অভিব্যক্তি হারিয়ে যাচ্ছে জাপানে। এখন ঐতিহ্যবাহী সব সম্ভ্রান্ত বাড়িগুলোকেই মিনকা বলে উল্লেখ করা হয়।
শরীরে শীতের দাপট ঘনীভূত হলে দস্তানা ছাড়াই দরজার হাতলে হাত দিয়ে এই শীত কতটা শক্তিমান, তা পরখ করতে না করতেই 'কোননেচিওয়া' উচ্চারণে জাপানি কায়দায় অভিবাদন। পরম আন্তরিকতায় ঘরে প্রবেশে উদ্ধুদ্ধ করলেন তাকেও তাবিদা।
বসার ঘরটি যেন জাপানি আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটসের নিখুঁত উপমা। আরামদায়ক ভিক্টোরিয়ান সোফা আর দেয়ালজুড়ে প্রণত আলংকারিক ওয়াল পেইন্ট স্টিকারের সঙ্গে জাপানি গাছ ও পাখির ভুবনভোলানো ছবি।
টোকিও কোন ারস্তা
একটু পরপর জ্বালাতন করা প্রিয় কুকুরটিকে সামলে রেখে এসে ধূসর হিমশীতল চোখের তাকেও তাবিদা আমার পাশে এসে বসলেন। গল্প জুড়ে দিলেন অকৃত্রিম মমতায়। পেশায় এনজিও গবেষক তাবিদা জানালেন, জাপান-বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কের কথা। তাঁর নিজ হাতে পরিবেশন করা জাপানের জনপ্রিয় চা সেনচাতে চুমুক দিতে দিতে বললাম, রবীন্দ্রনাথও জাপানি চায়ের অনুরক্ত ছিলেন; রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'জাপান যাত্রী' বইয়ে উল্লেখ করেছিলেন ধৈর্য, নিষ্ঠা, মনোসংযোগ ব্যতীত সুপেয় জাপানি চা তৈরি করা যায় না। শুনে তাবিদা হো হো করে হেসে উঠলেন!
জাপান সম্পর্কে বাংলাভাষীদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাপান ভ্রমণ, এ প্রসঙ্গে যোগ করলেন রবীন্দ্রপ্রেমী তাবিদা। প্রসঙ্গের বাঁকবদল করে জানতে চাইলাম, জাপানে অতিরিক্ত কাজের ডিপ্রেশন থেকে আত্মহত্যা বা যেটাকে বলা হয় 'কারোশি' বা মাত্রাধিক চাপ থেকে শ্রমিক বা কর্মচারীর মৃত্যু, এটা কেন খুব ঊর্ধ্বমুখী? এর কারণ হিসেবে জানালেন, এখানে ২০ ভাগ কর্মচারী প্রতি মাসে ৮০ ঘণ্টা ওভারটাইম করেন। এর জন্য করপোরেট কালচারও নীতিগতভাবে দায়ী। এ ছাড়া আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিচ্ছিন্নতা বা একা থাকার মানসিকতাকেও দুষলেন।
জাপানি চায়ের অনুরক্ত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, ছবি: উইকিপিডিয়া
শেষমেশ তুললাম, বাংলাদেশ ও জাপানের পতাকার সাদৃশ্য। এবারও অবিকল হাসির ছটার দেখা মেলে তাঁর চোখেমুখে, সঙ্গে যেন কৃতজ্ঞতার নিবেদন। জানালেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হিটলারের মন্ত্রিপরিষদ এবং যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিচার করা হয় 'নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে'; আর জাপানের সমরবিদ জেনারেল হিদেকি তোজোর বিচার করা হয় 'টোকিও ট্রাইব্যুনালে'। ১১ দেশের ১১ প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয় 'টোকিও ট্রায়াল'। এ ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রধান বিচারপতি ছিলেন ড. রাধা বিনোদ পাল।
বিচারের একপর্যায়ে রাধা বিনোদ পাল বাদে অন্য সব বিচারপতি জেনারেল তোজোকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করে ফাঁসিতে ঝোলানোর রায় দেন। অন্যান্য বিচারপতির ধারণা ছিল, বিচারপতি পালও মিত্রশক্তির পক্ষে অনুগত থাকবেন। কিন্তু বিচারপতি রাধা বিনোদ পালের সেই ঐতিহাসিক রায় মিত্রশক্তি, এমনকি বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছিল। তাঁর প্রজ্ঞা আর দৃঢ় কৌশলগত কারণে জাপানিরা বেঁচে যায় অনেক বড় ক্ষতি থেকে।
ড. রাধা বিনোদ পালের কারণে অনেক বড় ক্ষতি থেকে বেঁচে যায় জাপানিরা, ছবি: উইকিপিডিয়া
জাপানিরা যা করেছিল, তার পেছনে অল্প কয়েকজনের হাত থাকলেও মিত্রশক্তি চেয়েছিল পুরো জাতির ঘাড়েই এর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিতে, যেটি রাধা বিনোদ পালের কারণে সম্ভব হয়নি। এ রায় বিশ্বনন্দিত ঐতিহাসিক রায়ের মর্যাদা লাভ করে। তাই জাপানের সম্রাট হিরোহিতো কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বলেছিলেন, যত দিন জাপান থাকবে, তত দিন বাঙালি খাদ্যাভাবে, অর্থকষ্টে মরবে না। জাপান হবে বাঙালির চিরকালের নিঃশর্ত বন্ধু। মুগ্ধতায় আবিষ্ট আমি তন্ময় হয়ে গেলাম। এ রকম গল্প কোনো ভিনদেশির কাছ থেকে শুনতে কার না ভালো লাগে!
কাজলদার সঙ্গে আমার কিনশিখোতেই প্রথম সাক্ষাৎ। সরাসরি আলাপ। জায়গাটা টোকিও সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে মাত্র ১০ মিনিট দূরত্বের। কিনশিখো হচ্ছে টোকিওর বৃহত্তম বাণিজ্যিক এলাকা। কিনশিখো যেতে হলে আপনাকে জেআর সবুলাইন বা টোকিওর মেট্রো ট্রেনে চড়ত হবে। ট্রেনটি হলুদ রঙের। সময়সচেতন জাপানিরা একটি বর্ণময় জাতিও। ইতিমধ্যে তাদের পোশাক, আভিজাত্য দেখে আর ট্রেনে চড়েই হরদম বুঝে গেছি। কিনশিখো বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় চারপাশের এলাকা মূলত শপিংভিত্তিক।
রাতের টোকিও সেন্ট্রাল রেল স্টেশন, ছবি: উইকিপিডিয়া
এ ছাড়া দেখা পাওয়া গেল স্থাপত্যের সৌন্দর্যঘেরা পার্ক, দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা, তিনটি বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর, দুটি সিনেমা থিয়েটার, অসংখ্য গৃহস্থালি সরঞ্জামের দোকান, নাইট ক্লাব আর সঙ্গে বার। কাজলদার সঙ্গে মধ্যরাতে বাংলাদেশের গল্প করতে করতেই তাঁর নিজ মালিকানাধীন বারে ঢুকলাম। বার গার্ল এসে অভ্যর্থনা জানালেন। টেবিলে টেবিলে দেখছি, আগন্তুকের রুচি অনুযায়ী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ ঢেলে দিচ্ছেন। এই বার গার্লরা আবার পূর্ব ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড, রোমানিয়া, রাশিয়া, লাটভিয়া থেকে আসা। এখানে খদ্দেরকে যত বেশি সময় টেবিলে বসিয়ে রাখা যায়, ততই লাভ! গোপন তথ্যটি আমার কাছে ফাঁস করে দিলেন শ্রীলঙ্কান বিক্রয়কর্মী রেবেকা গুনাশেকারা।
কথাচ্ছলে সেই রাতে আধুনিক জাপানি সমাজের জীবনদর্শন থেকে জীবনাচরণ সম্পর্কে জানাতে গিয়ে কাজলদা টেনে আনলেন সমকামিতা ও পরকীয়ার প্রসঙ্গটি। জানালেন, দুটিতেই জাপানিরা বেশ পটু। পরকীয়ায় আসক্তি এত তীব্র যে এমনও হয়েছে, প্রমোদে মজে সারা মাসের মাইনে দিয়ে গেছে বার গার্লদের। তাঁদের খুব পছন্দ শ্বেতাঙ্গ পরনারী! জানালেন, এখানে ৪০ ভাগ বিবাহিত পুরুষই এই দোষে দুষ্ট।
টোকিওর বিখ্যাত পাঁচ তারকা হোটেল 'হিলটন'। সিনজুকুতে অবস্থিত এই অভিজাত হোটেলে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবীদের সেমিনার। বিরতিতে প্রিমিয়াম লাউঞ্জের ফুডকোর্টে চলছে বহুজাতিক আইনজীবীদের চিন্তার বিনিময়।ৎ
টোকিওর হোটেল হিলটন, ছবি: উইকিপিডিয়া
সেখানেই সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আইনজীবী ইয়োশি ইয়োকোইয়ামার সঙ্গে পরিচয় ও সখ্য। তিনি জানালেন, জাপানে সমকামিতা মধ্যযুগ থেকে চলমান। তবে আইনি বৈধতা পায় ১৮৮০ সালে। চতুর্দশ শতকে জাপানে সামুরাই সম্প্রদায়ের অনেকে তাদের গৃহে আশ্রিত বালকদের শয্যাসঙ্গী হিসেবে নিতে পছন্দ করত। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ভালোবাসার মানুষটি হতো একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর। তাঁদের মধ্যে নাকি কেউ কেউ মনে করতেন, নারী এমনই এক সৃষ্টি, যার আসলে কোনো প্রয়োজনীয়তাই নেই।
টেকিওv একটি স্কাইট্রিতে লেখক
তিনি মত দেন, জাপান এলজিবিটিদের নিয়ে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে সহনশীল রাষ্ট্র। যদিও খোলামেলাভাবে সমকামী ঘোষণা করার ব্যাপারে এখনো সমাজে ট্যাবু রয়ে গেছে। জাপানে সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ে অবৈধ হলেও এখানে পৌরসভা থেকে একটি পার্টনারশিপ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, যাতে কিনা সমকামী জুটির বাড়িভাড়া পেতে, চিকিৎসা নিতে এবং একত্রে বসবাসে কোনো অসুবিধা হয় না।
জেআর সবুলাইন মেট্রো ট্রেন, ছবি: উইকিপিডিয়া
এই পর্যায়ে তিনি নাকাজিমা-বাউমান যুগলকে ডেকে আনলেন। নাকাজিমা জাপানি হলেও বাউমান জার্মান নাগরিক, তিনি স্টুডেন্ট ভিসায় জাপানে অবস্থান করছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আসন্ন ডিসেম্বরে তাঁর ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাবে। দেখা গেল এ নিয়ে তাঁর পার্টনার নাকাজিমা ভীষণ উদ্বিগ্ন, এখন কী হবে? তাঁদের আইনজীবী ইয়োকোইয়ামা জানালেন, উপায় এখন একটাই। যে ২৫টি দেশে সমকামী বিয়ে বৈধ, সেগুলোর যেকোনো একটি দেশে গিয়ে বিয়েটা সম্পন্ন করতে হবে। তারপর নাকাজিমা ভিসার আবেদন করলে বাউমান জাপানে চলে আসতে পারবেন।
অতঃপর তিনি যেন তাঁর পুরোনো ভাষা ভুলে গেলেন এবং যত দূর সম্ভব ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কথা চালিয়ে যেতে থাকলেন। আলাপে বুঝলাম, টোকিওর সরু গলি, চোরাগলি, অন্ধগলি, সুনসান গলি সবই তাঁর নখদর্পণে। তিনি আমাকে নিয়ে ফুটপাতের উল্টো পাশে এসে দাঁড়ালেন। মেশিনে কয়েন ফেলামাত্রই অপর প্রান্ত থেকে ছলাৎ করে বেরিয়ে এল দুটি স্ট্রবেরি ড্রিংকস। সামনের সারিতে তিনটি, পেছনের সারিতে আরও তিনটি, দেখলাম মোট ছয়টি বাড়ি। বাড়িগুলোর ভেতরে ছোট অ্যাপার্টমেন্ট। তবে প্রতিটি বাড়ির সামনেই চোখধাঁধানো ফুলের বাগান। ফুটপাতের টাইলস দেখে মনে হচ্ছে, কেউ যেন এইমাত্র এসে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দিয়ে গেছে! তিনি সায় দিলে জাপানি জাতিরাষ্ট্র সম্পর্কে আমার কৌতূহল অনন্য মাত্রা পায়, আমি প্রশ্নের ঝাঁপি খুলি:
টোকিওর রাস্তা
লেখক: পৃথিবীতে বহু রাষ্ট্র, তবু জাপানিদের কেন আলাদা করে পরিশ্রমী জাতি বলা হয়
মিচিকো সাকুরা: জাপানে একটি কোম্পানিতে আমাদের দীর্ঘকাল ধরে কাজ করে যেতে হয়, যা অন্য দেশগুলোয় নেই। ফলে কোম্পানিতে কে কত দিন কাজ করেছে, তার ওপর নির্ভর করে বেতন বৃদ্ধি ও প্রমোশন। মনিব অনেক বেশি কাজ চাপিয়ে দিলেও ধৈর্য ধরে আমরা সেই কাজ করি। কেন? আমরা সবাই কাজ নষ্ট করতে চাই না। সময় অমূল্য ভেবে এমনকি ছুটির দিনেও আমরা কাজ করতে থাকি।
লেখক: পরিবারের চেয়ে কেন এখানে কর্মজীবনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়?
মিচিকো সাকুরা: কাজ করা নিয়ে জাপানি সমাজের নিজস্ব কিছু মনোভাব রয়েছে। জাপানে পুরো জীবন এক কোম্পানিতে কাজ করে যাওয়া হচ্ছে প্রচলিত নিয়ম। জাপানে অতিরিক্ত কাজ করার মানে হচ্ছে, নির্ধারিত কাজে তুমি ফাঁকি দিয়েছ। ওভারটাইমের জন্য বাড়তি বেতন বাস্তবে দেওয়া হয় না। আর পরিবারকে কেন গুরুত্ব দেবে না; পরিবারকে সুখী রাখতেই তো জাপানিরা বেশি কাজ করে!
লেখক: আচ্ছা, অভিবাদনের সময় কেন তোমরা মাথা নোয়াও?
মিচিকো সাকুরা: এখানে অভিবাদনের সময় প্রথাগতভাবে মাথা নুইয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। অর্থাৎ তুমি কার সামনে কতটা নত হবে, তা নির্ভর করে ওই ব্যক্তির সামাজিক পদমর্যাদার ওপর। বয়োজ্যেষ্ঠ বা উচ্চতর মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তির নিকট গভীরভাবে মাথা নোয়াতে হয়। আর যদি ওই ব্যক্তি তোমার সমবয়সী বা কম বয়সী হন, তাহলে কম মাথা নোয়ালেই চলে। অভিবাদন জানানোর সময় ব্যক্তির চোখের দিকে না তাকিয়ে মাটির দিকে তাকাতে হয়। দুই বাহু জোরালোভাবে দেহের সঙ্গে মিশিয়ে রেখে যতটা সম্ভব নিচু হতে হবে।
লেখক: জাপানে হ্যান্ডশেক কেন বর্জনীয়?
মিচিকো সাকুরা: জাপানে স্পর্শকাতর স্থানে যোগাযোগ ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই এটা বর্জনীয়।
লেখক: জাপানে খাওয়ার সময় লোকেরা স্লারপিং বা শব্দ করে কেন?
মিচিকো সাকুরা: এখানে এটি বিশ্বাস করা হয় যে কোনো ব্যক্তি যদি নিঃশব্দে এবং চুপচাপ খায়, তবে তার খাবার পছন্দ হয়নি। এটি খাবারের প্রশংসা করার রীতি হিসেবে দেখা হয়, অন্যথায় কুক অত্যন্ত বিরক্ত হবেন যে তাঁর রান্না আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
* লেখক: মোস্তফা মহসীন