What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বাগানের বাগানে: পর্ব ১ (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
উন্নত দেশের মুদ্রা না থাকায় উপেক্ষার শিকার হতে হলো একরত্তি পোস্টকার্ড বিক্রেতার কাছে। আর এ মজার অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু বাগান সফরের। মান্দালে প্রদেশের প্রাচীন এই শহর একসময় পাগান রাজবংশের রাজধানী ছিল। বর্তমানে ইউনেস্কো হেরিটেজ সিটি।

0JmqEEe.jpg


'ক্যান ইউ গিভ মি ইয়োর কান্ট্রি কারেন্সি?'
১০ বছরের একটা বাচ্চা থ্রি–কোয়ার্টার প্যান্ট, হাফ শার্ট পরা, গলায় ছোট একটা ব্যাগ আর হাতে কিছু পোস্টকার্ড নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে। পোস্টকার্ডে মিয়ানমারের বিভিন্ন দ্রষ্টব্য জায়গার ছবি। আমি বুঝে গেলাম, এ নির্ঘাত পোস্টকার্ড বিক্রি করতে চাইছে আমার কাছে।
আমি বললাম, 'কোন দেশের টাকা আছে আমার কাছে আছে বলে তুমি মনে করো?'
ছেলেটি খুব ভেবে বলল, 'ইউরোপ।'
'আমার কাছে যে দেশের টাকা আছে, সে দেশের টাকা তুমি নেবে না। তার চেয়ে বরং পোস্টকার্ড দাও, কিনি।'
'তুমি আমাকে কারেন্সি দেবে না?'
'আমার দেশের নাম বাংলাদেশ, কিন্তু আমি এসেছি ভারত থেকে। এখনো তুমি কারেন্সি চাও?'
'না, চাই না।'

বলে ছেলেটি একই বয়সী আরেকটা ছেলের সঙ্গে হাঁটতে লাগল। ওর নাম পিসো, বন্ধুর নাম টেট। থাকে কাছাকাছি, ভ্রমণার্থীদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে বিনিময়ে কিয়াটস নেয় আর দামি কারেন্সি টিপস দেওয়ার আবদার করে।
আমি পোস্টকার্ডের বায়না করতেই দিল তো না, উল্টো চলে গেল। গরিব দেশ থেকে এসেছি, ১০ ডলারের সমান কারেন্সি এমনিই দিয়ে দেব না, সেটা পিসো ভালোভাবে জানে।

বাগান নামক শহরটিতে এসেছি আজ সকালে। ইয়াঙ্গুন থেকে রাতে বাস ধরেছিলাম। খুব ভোরে বাগান পৌঁছে দিল। হোটেল বুক করেছি ওল্ড টাউনে, যাতে যা কিছু দেখার সব কাছাকাছি পাই। সকালে পৌঁছানোর সুবিধা হলো, সারা দিন হাতে পাওয়া যায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য। হোটেল রিসেপশন থেকে দরকারি তথ্য জেনে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছুট লাগালাম।

2udwGbn.jpg


টিলো মিনলো মন্দিরের ভিতরে

মিয়ানমারে আসার ইচ্ছা বহুদিনের, কিন্তু বাইরের দেশের ভ্রমণার্থীদের জন্য মিয়ানমার অনেক বছর ভিসা বন্ধ রেখেছিল। খোলার সঙ্গে সঙ্গেই সময়–সুযোগ বুঝে অনলাইনে ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করে পেয়ে গেলাম। এই মুহূর্তে এ কাজ অবশ্য করতে যাবেন না। কারণ, এখন মিয়ানমার আবার ভিসার দুয়ার বন্ধ করে দিয়েছে। একে তো প্রতিবেশী দেশ, তার ওপর অজানা সবকিছু, তাই কৌতূহলের মাত্রা সব দিক ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
বাগান শহরের কথা প্রথম জানতে পারি মিয়ানমারে কর্মরত এক আত্মীয়ের কাছে। সেই থেকে বাগান নিয়ে আগ্রহ জন্মে।

ঐতিহাসিক বাগান শহর মিয়ানমারের মান্দালে প্রদেশে অবস্থিত। মিয়ানমারের অন্যতম প্রাচীন শহর এখন। পাগান রাজবংশের রাজধানী ছিল পাগান (বর্তমান বাগান) নবম শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত, যা পরে মিয়ানমার দেশটি গঠন করে আশপাশের কয়েকটি রাজ্যজুড়ে। একাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বাগানে প্রায় সাড়ে চার হাজার প্যাগোডা নির্মাণ করা হয়। সে সময় বাগান ছিল পাগান রাজ্যের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। প্রায় আড়াই শ বছর ধরে পাগান রাজবংশ এবং বিত্তশালী নগরবাসী বাগান শহর ও তার আশপাশে ১০৪ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে ১০ হাজারের বেশি ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণ করেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় ১ হাজার স্তূপ, ১০ হাজার প্যাগোডা ও ৩ হাজার বৌদ্ধ মঠ।

VzJBrMO.jpg


এই সমৃদ্ধশালী নগরটি ছিল ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা গ্রহণের মূলকেন্দ্র

এই সমৃদ্ধশালী নগরটি তখন মিয়ানমারে ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা গ্রহণের মূলকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়; বিস্তৃতি, খ্যাতি লাভ করে আশপাশের রাজ্যে; সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে এর গৌরব। সে সময় ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশ থেকে ছাত্র আসা শুরু করে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নিতে। বিশেষত পালি ভাষায় পাঠদান করা হতো। শুধু বৌদ্ধধর্মই নয়, এখানে দর্শন, মনোবিজ্ঞান, ভাষা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, আইনশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ও পড়ানো হতো।

বার্মিজ ধারাভাষ্য অনুযায়ী, বাগান শহর রাজা পিনবায়া প্রতিষ্ঠা করেন দ্বিতীয় শতকে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে বর্মন গোষ্ঠী দ্বারাই বাগান শহরের পত্তন ঘটে নবম শতাব্দীতে।

বাগান শহরের সংস্কৃতি ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত ছিল ঠিকই, কিন্তু তাতে গোঁড়ামি ছিল না। বৃহত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন বৌদ্ধ সম্প্রদায়, যেমন থেরাভারা, মহায়না ও তান্ত্রিক মতাবলম্বীরা সহাবস্থান করতেন। একাদশ শতাব্দীতে থেরাভারা সম্প্রদায় শিক্ষা–দীক্ষা, বিত্ত, ক্ষমতা ইত্যাদিতে এগিয়ে গেলে অন্যান্য সম্প্রদায় তখন পিছিয়ে পড়ে।
মোঙ্গলদের দ্বারা বারবার আক্রমণের কারণে পাগান রাজবংশের সমাপ্তি ঘটে ১২৮৭ খ্রিষ্টাব্দে। এ সময় কিছু স্থাপনা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

odIf3LP.jpg


সুলেমানি টেম্পল, ছবি: উইকিপিডিয়া

ষোড়শ শতাব্দীতে বাগান পরিণত হয় তীর্থস্থানে। তখন বাগানের পরিচিতি একটি ছোট শহর হিসেবে। ষোড়শ থেকে বিংশ শতাব্দীতে দুই শর মতো নতুন প্যাগোডা বা উপাসনালয় নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে কিছু উপাসনালয়ে নিয়মিত প্রার্থনা করা হয়, ভক্তদের দানে ভবন সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় বলে উপাসনালয়গুলো আজও টিকে আছে।

বাগান শহরটি একটি সক্রিয় ভূমিকম্প বলয়ের মধ্যে অবস্থিত বলে ঘন ঘন ভূমিকম্পের কবলে পড়তে হয় এই হাজার বছরের প্রাচীন উপাসনালয়গুলোকে। ১৯০৪ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ছোট–বড় প্রায় ৪০০ ভূমিকম্পের রেকর্ড করা হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯৭৫ সালে, সে সময় বাগানে বহু স্থাপনা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। বর্তমানে বাগান ও এর আশপাশের এলাকায় দুই হাজারের মতো প্যাগোডা অবশিষ্ট রয়েছে।

FwiCVnB.jpg


নাম না জানা একটি ছোট টেম্পল

আমার হোটেলের পাশের দোকানে সাইকেল, মোটরবাইক ভাড়া দেওয়া হয়। এখানে যাঁরা আসেন, বয়সে নবীন বা প্রবীণ, প্রায় সবাই বাইক ভাড়া নেন। আমিও একটা স্কুটি ভাড়া করলাম তিন দিনের জন্য। ঘুরে বেড়াতে আর নেই মানা। ঘুরে বেড়াতে অবশ্য অনেকে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া নেন আর পকেট ভারী থাকলে ট্যাক্সি।

বাগান শহরটির জায়গায় জায়গায় মন্দির, প্যাগোডা, স্তূপ, মঠ ছড়িয়ে আছে। লাল, শুকনা খটখটে মাটিতে ঘাসের চিহ্ন পাওয়া যায় না তেমন। গাছপালাও খুব কম। এরই মধ্যে লাল ইটের তৈরি ছোট ছোট স্তূপ, প্যাগোডা আর উপাসনালয়। চোখ তুলে তাকালে মনে হবে, লাল রঙের মরুভূমির মাঝে দাঁড়িয়ে আছি। এই প্রাচীন শহরে বাড়িঘর নেই, মানে হেরিটেজ টাউন বলে আগের দিনে যেমন ছিল, তেমনই রাখা হয়েছে।

mR72B9d.jpg


টিলো মিনলো টেম্পলের সামনে লেখক

স্কুটি চালিয়ে, হাতে ম্যাপ নিয়ে চললাম টিলো মিনলো প্যাগোডার দিকে। আমি কোনো নতুন জায়গায় গেলে মুঠোফোন সংযোগ বর্জন করি। যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকা যায়, হলিডেতে এসে দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার মতো ব্যস্ত আমি নই। আর পথঘাটে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে পথ খুঁজে পাওয়ার আনন্দ একান্তই আমার নিজের।
অবশ্য ফেব্রুয়ারি মাসে যে ঠা ঠা রোদ দেখছি, তাতে সকালবেলায়ই ঘেমেনেয়ে একাকার। এর ওপর পথে কোনো সহৃদয় ব্যক্তির দেখা পাওয়া দৈব ঘটনা হতে পারে৷ কারণ, যত দূর চোখ যায় লাল মাটির শুকনা ফাঁকা জমি আর জায়গায় জায়গায় ডটেড স্তূপ ও মন্দির ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না। ম্যাপের ভরসায় রওনা দিলাম। মূল প্যাগোডাগুলো সবই এক থেকে দেড় কিলোমিটার পরপর।

টিলো মিনলো খুঁজে পেতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। বাগান হেরিটেজ টাউনের ভেতরে কোনো লোকালয় নেই। আশপাশের ছোট ছোট স্তূপের মধ্যে বড় একটা মন্দির সহজেই চোখে পড়ে। যদিও মন্দির প্রাঙ্গণে কিছু লেখা নেই, তবে বাইরে স্থানীয় আর বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা দেখে মনে হলো নেমে পড়ি।

ZcHNiGq.jpg


টিলো মিনলো প্যাগোডা কাছ থেকে

ঠিক জায়গায়ই এসেছি। আনুমানিক ১২১৫ সালে রাজা টিলো মিনলো এই মন্দির নির্মাণ করেন। উপাসনালয়টি বিখ্যাত এর ভেতরে উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিমমুখী চারটি ভিন্ন ভঙ্গিতে দাঁড়ানো গৌতম বুদ্ধের তাম্রনির্মিত মূর্তির জন্য। তিনতলা মন্দিরটি পাথর, ইট, সুরকি দিয়ে নির্মাণ করা হয়।

বাগানের মন্দিরগুলোর স্থাপত্যশৈলী প্রায় একই ধাঁচের। ইটরঙা চার কোনা ভবনের মাথায় ত্রিভুজাকৃতির মুকুট, যা দূর থেকে দেখতে পিরামিডের মতো। দেয়ালে অলংকরণ ফুলপাতার। মন্দির প্রাঙ্গণটি বেশ বড়। ভেতরে চারদিকে মুখ করে চার দেয়ালে দাঁড়িয়ে আছেন বিশালাকার গৌতম বুদ্ধ। ভক্তরা ফুল, মালা নৈবেদ্য দিয়ে যাচ্ছেন। নারী–পুরুষ সবার কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত প্যাঁচানো লুঙ্গি আর গায়ে শার্ট। লুঙ্গি এখানকার জাতীয় পোশাক।

আমাদের মানে ট্যুরিস্টদের পোশাক বাড়াবাড়ি রকমের ছোট হলে বা হাতকাটা জামা পরলে মন্দিরের বাইরে লুঙ্গি ধার নেওয়ার ব্যবস্থা আছে আর হাত ঢাকার জন্য স্কার্ফ।
মন্দিরের ভেতরে চারদিকে মুখ করে, চার এক্সপ্রেশনে শান্ত ভগবান গৌতম বুদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন কখনো দুহাত জোড় করে, কোথাও এক হাত তুলে বা কোনো প্রবেশ দ্বারের ভেতরে বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবছেন। এই উদাসীন বুদ্ধের সামনে একজন খুদে ভিক্ষুকে দেখলাম। বয়স পাঁচের বেশি হবে না।

uAKr7DD.jpg


টিলো মিনলো টেম্পলের ভেতরে ক্ষুদে ভিক্ষু ও তার বন্ধু

ভিক্ষুদের এক খণ্ড কাপড় লুঙ্গির মতো এবং এক খণ্ড কাপড় ওপরাংশ ঢাকার জন্য চাদরের মতো পরতে হয়। কিন্তু এই মিষ্টি ভিক্ষুর খয়েরি বসন সেলাই করা। এত ছোট বাচ্চা কাপড় সামলাতে পারবে না, তাই। চোখেমুখে একটুও ভিক্ষুসুলভ গাম্ভীর্য নেই, আরও বেশি উচ্ছ্বাস ছলকে ছলকে পড়ছে চোখমুখ থেকে। ইতিমধ্যে সে এই টেম্পলে মায়ের সঙ্গে পূজা দিতে আসা একটা বন্ধুও জোগাড় করে ফেলেছে। তারা গলাগলি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছবি তুলতে বলায় ফিক করে হেসে দিল।

মন্দিরের পাশের ভবনের দোতলা থেকে বাইরের জগৎ অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। নিচতলায় হস্তশিল্পের পসার নিয়ে বসেছেন শিল্পীরা।

gjy8cwr.jpg


বাগানের সূর্যাস্ত

বাগানের অল্প একটু দেখে আমার মনে হলো, বাগান নামটা বাংলায় হলে জায়গায় জায়গায় মন্দিরগুলো এর মাঝে ফুটে থাকা ফুল আর অসীম শূন্যতা এর প্রাণ, এই যেন এক বিশাল বাগান।

শূন্যতার আলাদা ভাষা আছে। হাওয়ায় দাগ কেটে কেটে হু হু বসন্তের বাতাসে অনর্গল বলে যায় নিজের গল্প।

* লেখক: ফাতিমা জাহান
 

Users who are viewing this thread

Back
Top