What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বিলম্বের ঘুমে জীবনীশক্তি ক্ষয় হয় (1 Viewer)

MK31JTw.jpg


যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক চার লাখ মানুষের ওপর গবেষণা করে দেখেছেন, যারা রাতে দেরি করে ঘুমাতে যান, সকালে ঘুম থেকে দেরি করে ওঠেন, তারা কোনো না কোনোভাবে নানান মানসিক রোগে আক্রান্ত। এমন তথ্য নিয়ে যুক্তরাজ্যে বেশ সাড়া পড়েছে, বিশেষ করে যুবসমাজের মধ্যে—যারা এ কাজটি প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছেন।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, পড়াশোনার কারণে হোক বা কাজের কারণে কিংবা নিছক আড্ডার কারণেই যারা বেশি রাতে ঘুমাতে যান, তাদের মধ্যে ৪ লাখ ৩৩ হাজার যুক্তরাজ্যবাসীর ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়।

গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৩ থেকে ৭০ বছর বয়সী যারা বেশি রাতে ঘুমান এবং সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন, তাদের মধ্যে যে সমস্যাগুলো দেখা যায়, সেগুলো হলো—

  • অকালমৃত্যুর ঝুঁকি
  • গড় আয়ু কমে যাওয়া: ৬.৫ বছর কম গড় আয়ু
  • বিভিন্ন মানসিক রোগ: ৯০ ভাগের
  • ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা: ৩০ ভাগ মানুষের
  • হজমশক্তিতে ব্যাঘাত
  • নার্ভাস সিস্টেমে জটিলতাঅন্ত্রের জটিলতা

যুক্তরাজ্যের এই গবেষণা রিপোর্টের ফলে সে দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এখন চাকরি নেওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে, রাতে কয়টায় ঘুমাতে যান এবং সকালে কয়টায় ঘুম থেকে ওঠেন?

UqUHxQ1.jpg


আমাদের দেহ ঘড়ি সূর্যের সময়ের সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত

যুক্তরাজ্যের এই অবস্থা আমাদের সমাজে এখন ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য। এখন গ্রামগঞ্জেও মধ্যরাতে চা পাওয়া যায়, অর্থাৎ চা খাওয়ার লোক থাকে মধ্যরাত পর্যন্ত। আর শহুরে মানুষের জীবনব্যবস্থা আরও বেশি রাত জাগানির্ভর। চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মানুষ অফিস বা কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরেন ৯টা থেকে ১০ টায়, নিম্ন আয়ের মানুষ আরও দেরিতে ফেরেন ঘরে। রাতে খাবারের রেস্টুরেন্ট বেশি ব্যস্ত থাকে। বিরিয়ানি খাওয়া নতুন প্রজন্ম রাত গভীর হলেই খেতে যায়। ঢাকা শহরে এখন অনেক রেস্টুরেন্ট পাড়ার মতো কিছু এলাকা গড়ে উঠেছে, সেখানে রাত ২টা–৩টা পর্যন্ত খাবার পাওয়া যায় এবং রীতিমতো ভিড় থাকে।

নতুন প্রজন্ম আরেকটি রোগে আক্রান্ত, তা হচ্ছে মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটারে বেশি রাত কাটানোর অভ্যাস। এটি যে কী পরিমাণে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা হয়তো আমরা এখন বুঝতে পারছি না। কিন্তু সময়ে যখন বুঝব, হয়তো তখন আর কিছুই করার থাকবে না। একটি ভঙ্গুর সমাজ, মানসিক রোগীভরা একটি সমাজ বিশাল সংখ্যায় রাষ্ট্রের কল্যাণ করা থেকে বঞ্চিত হয়ে উঠবে।

আমাদের দেহে একটি ঘড়ি আছে, যা সূর্যের সময়ের সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত। সেই ঘড়ির সময় অনুসারে রাত আটটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত হজম করার চুল্লি সচল থাকে, তারপর আস্তে আস্তে নিভে যায়। গভীর রাতে খাবার খেলে সে খাবার শরীরের স্বয়ংক্রিয় হজম চুল্লি বন্ধ থাকার কারণে ঠিকমতো হজম না হয়ে পাকস্থলীতে পচতে থাকে। ফলাফল হলো স্বাস্থ্যহীনতা, ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হজমের গন্ডগোল থেকে ক্রনিক আইবিএসে রূপ নেওয়া, যার চিকিত্সা অনেক জটিল। লাইফস্টাইল পরিবর্তন ছাড়া এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ বন্ধ থাকে। এতে যারা আক্রান্ত হন, তাদের মানসিক বিপর্যয় ছাড়াও ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে জীবন যাপন করতে হয়।

রাতে আমাদের শরীর কোনো কিছু গ্রহণ করার কাজ করে না বরং ত্যাগ করার কাজ করে, যেমন রাত ১১টা থেকে লিভার তার কাছে জমে থাকা বর্জ্য বা টক্সিন অটো ডিটক্সিফিকেশন করতে থাকে। রাত এগারোটায় যদি আমরা ঘুমের মধ্যে না থাকি, তাহলে লিভার অটো ডিটক্সিফিকেশন করতে পারে না। এর ফলাফল হজমের গন্ডগোল এবং ত্বকের রং কালো হয়ে যাওয়া। তেমনি রাতে হার্ট, ফুসফুস, গলব্লাডার, পাকস্থলী, কিডনি অটো ডিটক্সিফিকেশন করতে থাকে। যদি আমরা রাতে না ঘুমাই, তখন শরীর অটো ডিটক্সিফিকেশন করতে পারে না। পরিণতিতে শরীরের টক্সিন না বেরিয়ে শরীরে থেকে যায়, যা আমাদের স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে। এতে শেষ পর্যন্ত শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের উপসর্গ তৈরি হয়, যার ফলে মৃত্যু হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়।

এ থেকে মুক্তি পেতে কী করবেন

সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে, সকালে ঘুম থেকে উঠে মুক্ত বাতাসে হাঁটলে নির্মল বায়ু পাওয়া যায়, যা সকালে ওজন স্তরে থাকে বলে হালকা থাকে। সে বায়ু থেকে শ্বাস নিলে শরীরে অক্সিজেন প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, শরীরের ভেতরে অক্সিজেন নিজেই অনেক বিচ্যুতি দূর করে দেয়। ভোরের আলো ভিটামিন ডি ভরা। সকালের সে সূর্যকিরণ শরীরে হাড় মজবুত করে, শরীরে কোনো ধরনের ব্যথা হয় না। সকালে হাঁটতে পারলে শরীরের সব অর্গান সচল হয়। কায়িক পরিশ্রম শরীরে কোনো ধরনের চর্বি জমতে দেয় না; ফলে ওজন বাড়ে না, ডায়াবেটিস হয় না, হার্টের সমস্যা হয় না, মস্তিষ্ক শক্তিশালী থাকে—কঠোর পরিশ্রমেও তা ঠিকমতো কাজ করে এবং স্মরণশক্তি অটুট থাকে। এ ছাড়া দিনে কর্মঘণ্টা বেড়ে যায় এবং রাতে ঘুম তাড়াতাড়ি ঘুমানো সম্ভব হয়।

KN0YgAd.jpg


ভোরের আলোয় ভিটামিন ডি থাকে

দেহঘড়ি ঠিক রাখুন

আমাদের দেহঘড়িকে সঠিক উপায়ে চলতে দেওয়ার জন্য সূর্যের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। রাত যেহেতু ঘুমানোর জন্য, তাই ঘুমাতে হবে রাতে, দিন জেগে থাকার জন্য; তাই জেগে থাকতে হবে, কর্মময় থাকতে হবে। এটিই সাধারণ সূত্র।

রাত জাগার অভ্যাস পরিবর্তন করে সকালে ঘুম থেকে উঠে কর্মময় হওয়ার অভ্যাস গড়লে শরীরও ভালো থাকবে এবং অনেক কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে। তাই রাতকে ঘুমানোর জন্য রেখে সকালে কর্মময় থাকুন।

লেখক: আলমগীর আলম | খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেসার বিশেষজ্ঞ
 

Users who are viewing this thread

Back
Top