What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

যে হীরা দীর্ঘদিন পড়ে ছিল পেপারওয়েট হিসেবে (1 Viewer)

SHvnF3z.jpg


ইতিহাসখ্যাত কোহিনুর হীরাটির ওজন ১০৫ দশমিক ৬ ক্যারেট। কিন্তু 'জ্যাকব হীরা'র ওজন ১৮৫ দশমিক ৭৫ ক্যারেট! জ্যাকব হীরা 'ভিক্টোরিয়া ডায়মন্ড', 'ইম্পিরিয়াল ডায়মন্ড', 'গ্রেট হোয়াইট ডায়মন্ড' নামেও পরিচিত। হীরাটি পাওয়া যায় দক্ষিণ আফ্রিকার কিম্বারলির খনিতে। সেখান থেকে ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডস হয়ে অবশেষে তা পৌঁছায় ভারতে। এই হীরার জন্ম থেকে এখন পর্যন্ত ভ্রমণটা বেশ কৌতূহলজাগানিয়া।

ভারতের হায়দরাবাদের শাসকদের 'নিজাম' হিসেবে সম্বোধন করা হতো। মীর মাহবুব আলী খান ছিলেন ষষ্ঠ নিজাম। তাঁর জন্ম ১৮৬৬ সালে। বাবা আফজাল-উদ-দৌলার মৃত্যুর পর মাত্র তিন বছর বয়সে মাহবুব আলী সিংহাসনে বসেন এবং ১৯১১ সাল পর্যন্ত হায়দরাবাদ রাজ্য শাসন করেন। দামি গয়না ও হীরার প্রতি তাঁর ছিল ভীষণ দুর্বলতা। গড়ে তুলেছিলেন রত্নভান্ডার। সেই সংগ্রহের একটি আলোচিত 'জ্যাকব হীরা'। বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ হীরা এটি। সেই হীরাই কিনা পেপারওয়েট হিসেবে পড়ে ছিল!

E3ouebI.jpg


মীর মাহবুব আলী খানের প্রতিকৃতি, গুগল আর্টস অ্যান্ড কালচার

হীরাটি কিম্বারলি থেকে আহরণ করা হয় ১৮৮৪ সালে। কর ফাঁকি দিকে সেটি গোপনে সেখান থেকে পাচার করে দেওয়া হয় ব্রিটেনে। পরে বিক্রি করা হয় লন্ডনের হ্যাটন গার্ডেনের রত্নবাজারে। ১৮৮৭ সালে লন্ডন থেকে হীরাটি যায় নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে। সেখানেই ঘষামাজা ও কাটা শেষে বেরিয়ে আসে এর মনোমুগ্ধকর রং, উজ্জ্বলতা ও আকৃতি। পরে ভারতের শিমলার ইহুদি রত্ন ব্যবসায়ী আলেকজান্ডার জ্যাকব এটি ষষ্ঠ নিজাম মীর মাহবুব আলী খানের কাছে বিক্রি করেন। এ জন্যই এই হীরার নাম হয়ে যায় জ্যাকব হীরা। যাহোক, এই বিক্রি নিয়েও কিন্তু মহাগোলমাল বাধে।

IMaK69d.jpg


আলেকজান্ডার জ্যাকব (বাঁয়ে) এবং অস্ট্রেলীয় লেখক–গবেষক জন জুবরিস্কির লেখা 'দ্য মিস্টেরিয়াস মিস্টার জ্যাকব: ডায়মন্ড মার্চেন্ট, ম্যাজিশিয়ান অ্যান্ড স্পাই' বইয়ের প্রচ্ছদ, সংগৃহীত

জ্যাকব জানতেন, মাহবুব আলী রত্ন ভালোবাসেন। ১৮৯১ সালের শুরুর দিকে তিনি হীরাটির কাচের রেপ্লিকা নিয়ে হায়দরাবাদে পৌঁছান। আসল হীরাটি তখন লন্ডনে। কাছের লোক অ্যালবার্ট আবিদের মাধ্যমে জ্যাকবের সঙ্গে দেখা করেন মীর মাহবুব আলী খান। রেপ্লিকা দেখেই হীরাটি কিনতে আগ্রহী হন তিনি। শেষে সিদ্ধান্ত হয়, মীর মাহবুব 'ভিক্টোরিয়া' কিনছেন ৪৬ লাখ রুপিতে। ২৩ লাখ রুপি জ্যাকবকে অগ্রিমও দেওয়া হয়। তখন জ্যাকবই পরামর্শ দেন মীর মাহবুব যেন হীরাটি পেপারওয়েট হিসেবে ব্যবহার করেন। তাতে নাকি তাঁর যশ আরও বাড়বে।

ওই বছরের ২১ জুলাই জ্যাকব আসল হীরাটি নিয়ে মীর মাহবুবের কাছে যান। কিন্তু মাহবুব হীরার আকার দেখে অসন্তুষ্ট হন। তাঁর কথা ছিল, রেপ্লিকার চেয়ে আসল হীরাটি অনেক ছোট। তাই তিনি হীরা কিনতে অস্বীকৃতি জানান এবং জ্যাকবকে বায়নার টাকা ফেরত দিতে বলেন। জ্যাকব তা না করে উল্টো বাকি টাকার জন্য কলকাতার হাইকোর্টে মামলা ঠুকে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৯১ সালের ৫ অক্টোবর আদালত মীর মাহবুবকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এতে অপমানিত বোধ করেন তিনি। পরে ক্রুদ্ধ মাহবুব হীরাটি জুতায় ঢুকিয়ে দেরাজে ভরে রাখেন।

AhR2hY9.jpg


মীর ওসমান আলী খানের প্রতিকৃতি, সংগৃহীত

১৯১১ সালে ক্ষমতায় আসেন মীর মাহবুব আলী খানের ছেলে শেষ নিজাম মীর ওসমান আলী খান। তিনি হীরাটি পেয়ে পেপারওয়েট হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। অন্য দিকে মামলায় লড়তে গিয়ে দেউলিয়া হয়ে যান আলেকজান্ডার ম্যালকম জ্যাকব। ১৯২১ সালে মুম্বাইয়ে তিনি মারা যান। মার্কিন লেখক এফ ম্যারিয়ন ক্রুফোর্ডের লেখা জ্যাকবের জীবনভিত্তিক উপন্যাসের নাম মিস্টার আইজ্যাকস। রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের নোবেলজয়ী উপন্যাস কিম-এর (১৯০১) লারগান সাহেব চরিত্রটি জ্যাকবের আদলে সৃষ্টি করা হয়েছিল। আর অস্ট্রেলীয় লেখক–গবেষক জন জুবরিস্কির লেখা দ্য মিস্টেরিয়াস মিস্টার জ্যাকব: ডায়মন্ড মার্চেন্ট, ম্যাজিশিয়ান অ্যান্ড স্পাই বইটি জ্যাকবকে নিয়ে লেখা।

ভারত সরকার ১৯৯৫ সালে মীর মাহবুবের ট্রাস্ট থেকে জ্যাকব হীরাসহ আরও কিছু মূল্যবান জিনিস ১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারে কিনে নেয়। হীরাটি এখন মুম্বাইয়ের রিজার্ভ ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষিত আছে। এই তো, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতেও নয়াদিল্লির জাতীয় জাদুঘরে হীরাটির প্রদর্শনী হয়ে গেল।

সূত্র: দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস ও ন্যাশনাল মিউজিয়াম (নয়াদিল্লি)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top