বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। দিনে অন্তত একবার ভাত না খেলে সারা দিনে খাওয়াই যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। চালে তৈরি ভাতজাতীয় আরও নানা ধরনের খাবারে আমাদের অভ্যাস রয়েছে। এরই মধ্যে খিচুড়ি, বিরিয়ানি, তেহারি, এমনকি ফ্রায়েড রাইসও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই খাবারগুলোর প্রধান উপকরণ চাল হলেও তা ভিন্ন ভিন্ন। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি চাল দিয়েই রান্না করা হয় এসব সুস্বাদু খাবার।
আমাদের দেশের নিজস্ব অনেক ধরনের সুগন্ধি চাল আছে। যেগুলোর মধ্যে আছে কাটারিভোগ, কালিজিরা, টিপিএল-৬২, চিনিগুঁড়া, চিনিআতপ, চিনিকানাই, বাদশাভোগ, বাংলামতী, বাসমতী, মদনভোগ, রাঁধুনিপাগল, বাঁশফুল, জটাবাঁশফুল, বিন্নাফুল, তুলসীমালা, তুলসীআতপ, তুলসীমণি, মধুমালা, খোরমা, সাককুর খোরমা, নুনিয়া, পশুশাইল, বিআর-৫ (দুলাভোগ), ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান-৩৭, ব্রি ধান-৩৮ ও ব্রি ধান-৫০।
২০০৮ সাল থেকে সরকারি উদ্যোগে কৃষকেরা নতুন একটি ধরনের সুগন্ধি চাল উৎপাদন করছেন, যার নাম 'বাংলামতী'। সুগন্ধি চালের মধ্যে বর্তমানে এই ধানের উৎপাদনই সবচেয়ে বেশি। এবার জেনে নিন কিছু সুগন্ধি চালের পুষ্টিগুণের চালচিত্র।
পুষ্টিগুণ
সাধারণত সব ধরনের চালের পুষ্টিগুণ প্রায় একই। তবে সাধারণ চালের চেয়ে সুগন্ধি চালের রান্না খেতে বেশি ভালো লাগে। কারণ, সুঘ্রাণযুক্ত চালে রান্না হয় নানা রকম মজার খাবার। সুগন্ধি চাল সাধারণত আগে থেকে সেদ্ধ করা হয় না। তাই আতপ চাল আর সেদ্ধ চালের মধ্যে একধরনের তুলনা করা যেতে পারে। প্রতি ১০০ গ্রাম সেদ্ধ চালের ভাত থেকে মিলবে ১২৩ গ্রাম ক্যালরি, ২৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ গ্রাম চর্বি ও ৩ গ্রাম প্রোটিন। অন্যদিকে আতপ চালের ১০০ গ্রাম থেকে পাবেন ১৪০ গ্রাম ক্যালরি, ৩১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২ গ্রাম ফ্যাট ও ৫ গ্রাম প্রোটিন।
সুতরাং বলা যায়, আতপ চালে সেদ্ধ চালের তুলনায় পুষ্টিগুণ বেশি। আরও একটি দিক থেকেও সেদ্ধ চালের চেয়ে আতপ চাল এগিয়ে। আতপ চাল ধান থাকা অবস্থায় অর্ধ সেদ্ধ করা হয় এবং এতে সব পুষ্টিগুণ ঠিক থাকে। কিন্তু সেদ্ধ চাল পানিতে দীর্ঘ সময় ভিজিয়ে রাখা হয় এবং সেদ্ধ করার কারণে পুষ্টিগুণ কমে যায়। তা ছাড়া বেঁচে যাওয়া পুষ্টিগুণের মধ্য থেকেও রান্নার সময় মাড় হিসেবে ফেলে দেওয়া পানীয় অংশের সঙ্গে ১৫ শতাংশ পুষ্টিগুণ বেরিয়ে যায়।
স্বাস্থ্যের জন্য আতপ চাল ভালো। এতে কম রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয় বাজারজাতকরণ করার জন্য। অপর দিকে সেদ্ধ চালকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে রাসায়নিক অনেক পদার্থ মেশানো হয়। যেমন চাল কেটে চিকন করা, ওষুধ মেশানো হয় পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করা জন্য। সবশেষে মোম দেওয়া হয় চকচকে ভাব আনার জন্য। হজমের ক্ষেত্রে আতপ চাল ভালো এবং সুস্বাদু। অল্পতেই পেট ভরে যায়।