What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বিয়ের পোশাকে গল্পকথন - দেশি কাপড়ে দেশি বিয়ে ২ (1 Viewer)

a0eDuxw.jpg


বাংলাদেশের বিয়ের বাজারের ৯৫ শতাংশ বিদেশিদের দখলে। একটু সম্পন্ন পরিবার হলেই বিয়ের শপিংয়ে ছুটতে হয় ভিনদেশে। আর যাঁরা দেশে কেনাকাটা করেন, তাঁরাও দেশি পণ্যে নৈব নৈব চ। এর মধ্যে কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা দেশি পণ্যে আস্থা রাখেন। আর কিছু ডিজাইনার আছেন, তাঁরা স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটেন দেশের কথা ভেবে। তাঁদের নিয়েই এই নাতিদীর্ঘ ধারাবাহিক। দ্বিতীয় পর্বে থাকছে তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনার আফসানা ফেরদৌসীর ব্র্যান্ড এএফ-এর বিয়ে সংগ্রহ।

বিয়ে। শব্দটা ছোট হলেও এর দ্যোতনা বিশদ। চার হাত এক করার কাজটা সহজ নয়। তার ওপর বাঙালির ক্ষেত্রে লাখ কথা না হলে তো বিয়েই হয় না। একটা বিষয় হলো, আগের দিনে প্রেম হয়েছে চুপিসারে। প্রেমের বিয়েও। কিন্তু এখন প্রেমের বিয়েই গড়ায় সামাজিক বিয়েতে। ফলে আয়োজনে থাকে সাজ সাজ রব; তা যে বিত্তের মানুষই হোন না কেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝক্কি পোহাতে হয় শপিংয়ে। অনেকখানি সময়ও নষ্ট হয়ে যায়। কারণ, বাঙালির বিয়ে তো আর সেই আগের মতো নেই। বরং পরদেশিদের মতো করে সবকিছু করতে গিয়ে নাভিশ্বাস ওঠে।

অন্যদিকে এই শপিং দেশে হবে, না বিদেশে, সেটাও নির্ভর করে বিত্তের মাপকাঠিতে। দেশের পণ্যও যে মানসম্পন্ন হতে পারে, যেটা আমরা মাথায় রাখি না। অথচ দেশের পণ্য কিনলে কিছু প্রান্তিক শিল্পীর উপকারে হয়। আর অর্থটা দেশেই থেকে যায়। এই ভাবনা থেকে কিছু মানুষ আগ্রহী হন। তাঁদের সংখ্যা নিতান্তই হাতেগোনা। কিন্তু তাঁরা আছেন। আর তাঁদের কথা মাথায় রেখেই তো কিছু ডিজাইনার পোশাক তৈরি করেন তাঁদের জীবনের স্মরণীয়তম দিনটির জন্য।

যাহোক, শপিং দেশেই হোক বা বিদেশে, গুরুত্ব বেশি থাকে পোশাকের বেলায়। অবশ্য ইদানীং বরের পোশাক নিয়েও বেশ আলোচনা হয়। তবে পোশাক কনেরই হোক বা বরের, সেটা দোকান থেকে পছন্দ করে কেনা হয়। অনেকে হয়তো বিদেশি ডিজাইনারের ড্রেসও কেনেন। এই পোশাক কেনায় বর বা কনের পছন্দ হয়তো থাকে, কিন্তু কতটা থাকে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন, আবেগের সম্পৃক্তি? কারণ, তাঁদের কথা ভেবে তো আর পোশাকটা তৈরি হয় না। যে বয়নশিল্পী বেনারসিটা বুনেছেন, সেটাতে ছিল নেহাতই তার পেটের দায় আর পরম্পরার শিল্পের প্রতি কিছুটা দায়বোধ। আবার যে দরজি লেহেঙ্গা বা শেরওয়ানি বানিয়েছেন, সেখানে ছিল মালিকের নির্দেশ। তাই পরিভাষায় যেটাকে বলা হয়ে থাকে পারসোনাল টাচ, সেটা কি থাকে কোথাও? কিন্তু থাকা তো সম্ভব। এ ছাড়া কিছু বিষয়, যা নেহাতই ব্যক্তিগত, কিন্তু সেসবের মধ্যে রয়েছে স্বপ্নপূরণের বুদবুদ।

SHtKkGY.jpg


আফসানা ফেরদৌসির বিয়ে পোশাকে কনে, ছবি: আফসানা ফেরদৌসি

আর এই ভাবনাই প্রেরণা হয়েছে আফসানা ফেরদৌসীর, বিয়ে সংগ্রহ নিয়ে কাজ করার। তাই তো শুরু করেছেন এক্সক্লুসিভ এএফ ওয়েডিং লাইন। এই তরুণ ডিজাইনার তাঁর ক্লায়েন্টদের বিয়ে সংগ্রহ তৈরির ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা নিয়ে কথা হচ্ছিল সম্প্রতি। তিনি বলছিলেন, বিয়ের পোশাক, বিশেষ করে কনের পোশাক, মানে মাপজোঁখ, ঠিকঠাক ফিটিং, কাপড়ের ভালো–মন্দ, নকশার বিশেষত্ব, দাম আর কনেকে মানাচ্ছে কি না ইত্যাদি এসবেই থেকে যায় সীমাবদ্ধ। অথচ এর বাইরেও তো রয়েছে অনেক কিছু বিষয়। যেটা কনের পরিজন কিংবা তিনি নিজেও কি অনুভব করেন?

বস্তুত, আফসানা মনে করেন, একটি গল্পের উপক্রমনিকা তাৎপর্যপূর্ণ এবং সুন্দর হওয়া উচিত; যেখানে উঠে আসবে আপন কিছু গল্প। থাকতে পারে নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য; কিংবা এমন কিছু খুঁটিনাটি বিষয়, যা চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে জড়িত।
এসব বিষয় তো আছেই, এর সঙ্গে রয়েছে বাংলার ঐতিহ্য। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তাঁর ডিজাইনে সুচিশিল্প ব্যবহার করে আসছেন। বিয়ে সংগ্রহ তৈরিতেও তিনি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সুচিশিল্পকেই বেছে নিয়েছেন।

tj0cHp5.jpg


এখানে উল্লেখ প্রয়োজন, অন্তত দুই দশক আগে ভারতে অনুষ্ঠিত ব্রাইডাল শোতে আড়ংয়ের পক্ষে অংশ নিয়েছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার মাহিন খান। সেই সময়ে ওই কালেকশনের শাড়ি তৈরি হয়েছিল সিল্কের ওপর নকশি স্টিচের দৃষ্টিনন্দন জমিন অলংকরণে।

jg6mOLq.jpg


কাঁথাস্টিচে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে মোটিফ, ছবি: আফসানা ফেরদৌসি

এরপর এবার আবার সুচিশিল্পকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানেও কাঁথাস্টিচ ব্যবহার করে পোশাক তৈরি করছেন আফসানা। তিনিও বেছে নিয়েছেন সিল্ক।

গোলাপি সিল্কের কাপড়ে তৈরি করা হয়েছে লেহেঙ্গা আর টপ। সঙ্গে ওড়না। পোশাকজুড়ে রয়েছে কনের জীবনের গল্প। টুকরা টুকরা ঘটনা। আর এসবই নেওয়া হয়েছে বরের উদ্দেশে লেখা কনের একটি কবিতা থেকে। কবিতার শিরোনাম সেলাইয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে টপে। শহুরে জীবন, টুকরো–টাকরা ঘটনা, নানা কথা, নানা উপাদান, জীবনের খুঁটিনাটি—এসব যেমন রয়েছে কবিতাজুড়ে, তেমনি সেসবই রয়েছে কনের পোশাকের জমিনেও। মোটিফ হিসাবে; যেন নিজের চাওয়া-পাওয়া, ছোট ছোট সুখ আর নানা রঙের স্বপ্নগুলোই ধারণ করে আছেন কনে। অন্যভাবে দেখলে পুরো পোশাকেই রয়েছেন তিনি। যুগলজীবনের সূচনাদিনের স্মৃতিকে আয়েশ করে বলার মতো উপলক্ষ্য তৈরি হবে এই পোশাকের কারণে। পরের প্রজন্মকে তৃপ্তি নিয়ে বলাও যাবে এই পোশাক তৈরির গল্প।

qBvkLHi.jpg


পোশাকের সঙ্গে মানানসই মাস্ক ও বটুয়া, ছবি: আফসানা ফেরদৌসি

এবার আসা যাক পোশাক তৈরির অন্যান্য বিষয়ে। আফসানা বিয়ের পোশাকের সুচিকর্ম করিয়ে নিচ্ছেন যশোরের সুচিশিল্পীদের কাছ থেকে। এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত আছেন ছয়জন নারী সুচিশিল্পী। পোশাকের লেবেলসহ প্রতিটি উপকরণই হাতে তৈরি।
কেবল পোশাক নয়, এর সঙ্গে আরও দেওয়া হচ্ছে মানানসই মাস্ক ও বটুয়া; এ ছাড়া স্মৃতি সজীব করার মতো আছে আরও একটি জিনিস, সেটা হলো সিন্দুক। একসময় দেওয়া হতো লোহার বা কাঠের। আফসানা দিচ্ছেন কাঠের সিন্দুক। তিনি শুরু করেছেন কনের পোশাক দিয়ে। তবে এখন বর ও কনে উভয়ের পোশাকই তিনি তৈরি করছেন। অচিরেই তাঁর এই প্যাকেজে যুক্ত হবে জুতা আর গয়না।

আফসানার এই উদ্যোগ বিয়ের পোশাককে কোনো সন্দেহ নেই অন্যতর মাত্রা দেবে; উপরন্তু আরও বিশদে ভাবলে আমাদের লোক–ঐতিহ্য টিকে থাকবে; শিল্পীরা পাবেন পৃষ্ঠপোষকতা। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বর্তমান প্রেক্ষাপটে লোকজ ঐতিহ্য আর এর পরম্পরার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। এই প্রয়াসের মধ্যে দিয়ে বিয়ের পোশাক তৈরির প্রক্রিয়া তো বটেই, বিয়ে উৎসবও অর্থবহ হয়ে উঠবে। অনেকটা 'কাবুলিওয়ালা' গল্পের মিনির বাবার বক্তব্যের অনুসরণে বলতে হয়: মঙ্গল-আলোকে শুভ উৎসব উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

t7nxJlV.jpg


দেয়া হচ্ছে কাঠের সিন্দুকও, ছবি: আফসানা ফেরদৌসি

আর এভাবেই গল্প বুনতে চান আফসানা। বরকনের জীবনের গল্পে সাজাতে চান কাপড়ের জমিন। স্বতন্ত্র ডিজাইনের পোশাকে বিয়ের মঞ্চে একদিনের রাজা–রানিদের তিনি অনন্য করে তুলতে চান, যাতে ভিড় ঠেলে নয়, বরং ভিড়ের মধ্যে অন্যদের থেকে জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করা দম্পতিরা সত্যিকারেই আলাদা হয়ে উঠতে পারেন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top